ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে খ্রিষ্ট ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব বড়দিনের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছে। শুরুতে প্রার্থনায় ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ বন্ধসহ করোনাভাইরাস থেকে মুক্তি কামনা করা হয়েছে।
রোববার সকালে রাজধানীর কাকরাইলে সেন্ট মেরি ক্যাথিড্রাল গির্জাসহ বিভিন্ন জায়গায় প্রার্থনার মধ্য দিয়ে বড়দিনের উৎসব উদযাপন শুরু হয়।
বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের খ্রিষ্ট ধর্মানুসারীরা আজ যথাযথ ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যে বড়দিন উদযাপন করছেন।
উৎসব উপলক্ষে রঙিন কাগজ, ফুল ও আলোর বিন্দু দিয়ে সাজানো হয়েছে ক্রিস্টমাস ট্রি এবং খ্রিষ্টান ধর্মের প্রবর্তক যিশুখ্রিষ্টের জন্মের স্থান প্রতীকী গোশালা।
খ্রিষ্ট ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব বড়দিনে কাকরাইলের সেন্ট মেরিস ক্যাথিড্রাল গির্জায় খ্রিষ্টান ধর্মের প্রবর্তক যিশুখ্রিষ্টের জন্মের স্থান প্রতীকী গোশালা ঘর। ছবি কোলাজ: আব্দুল জাব্বার খান/নিউজবাংলা
প্রার্থনা সভায় নানা বয়সী মানুষ মিলিত হয়েছেন।
প্রার্থনায় ফাদার প্যাট্রিক শিমন গমেজ বিশ্বের সব মানুষের শান্তি কামনায় প্রার্থনা করেন। এ সময় খ্রিষ্ট ধর্মাবলম্বীরা প্রার্থনায় অংশ নেন। প্রার্থনায় যিশুর মহিমাকীর্তন এবং শান্তি ও ন্যায়ের কথা বলা হয়।
প্রার্থনা শেষে ফাদার মিল্টন ডেনিস কোড়াইয়া সাংবাদিকদের বলেন, ‘বড়দিন আমাদের সব থেকে বড় উৎসব। দিনটি উপলক্ষে আমরা সবাইকে শুভেচ্ছা জানাই। আনন্দসহকারে দিনটি আমরা উদযাপন করছি। এই দিনে আমাদের প্রার্থনা হলো, সব মানুষ যেন সব মানুষকে ভালোবাসে। পৃথিবীতে যেন শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়। ইউক্রেন-রাশিয়ার মধ্যে যেন শান্তি বর্ষিত হয় সেই প্রার্থনা করি।’
তিনি বলেন, ‘আমরা সকলের শান্তি কামনা করি। যিশুর বাণী অনুসারে সকলে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করুক সেটাই প্রার্থনা করছি।’
উৎসব উপলক্ষে সংশ্লিষ্ট গির্জা কর্তৃপক্ষ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছে। ব্যাপক নিরাপত্তাব্যবস্থা নেয়া হয় রাজধানীসহ সারা দেশে।
প্রার্থনা শেষ হলে র্যাব মহাপরিচালকের পক্ষ থেকে উপহার হিসেবে ফুল ও কেক ফাদারের হাতে তুলে দেয়া হয়।
খ্রিষ্টধর্ম অনুযায়ী, এই দিনে খ্রিষ্টধর্মের প্রবর্তক যিশুখ্রিষ্ট বেথেলহেমে জন্মগ্রহণ করেন। খ্রিষ্ট ধর্মাবলম্বীরা বিশ্বাস করেন, ‘সৃষ্টিকর্তার মহিমা প্রচার এবং মানবজাতিকে সত্য ও ন্যায়ের পথে পরিচালিত করতে প্রভু যিশুর এই ধরায় আগমন ঘটেছিল। তাই অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের খ্রিষ্ট ধর্মানুসারীরাও যথাযথ ধর্মীয় আচার, আনন্দ-উৎসব ও প্রার্থনার মধ্য দিয়ে দিনটি উদযাপন করছেন।
আরও পড়ুন:জেরুজালেমে মুসলমানদের তৃতীয় পবিত্রতম স্থান আল-আকসা মসজিদে রমজানের প্রথম জুমার নামাজ আদায় করেছেন হাজার হাজার মুসল্লি।
বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়, এই অঞ্চলে ইসরায়েলের সঙ্গে ফিলিস্তিনের উত্তেজনার মধ্যেই শুক্রবার রমজান মাসের প্রথম জুমা আদায় করেন মুসল্লিরা।
মসজিদ প্রাঙ্গণের প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করছে জর্ডানীয় ওয়াকফ ইসলামিক অ্যাফেয়ার্স কাউন্সিল।
কাউন্সিলের প্রধান আজম আল খতিব বলেন, শুক্রবার আল-আকসা মসজিদ প্রাঙ্গণে শান্তিপূর্ণভাবে নামাজ হয় এবং পরিস্থিতি ভালো রয়েছে।
ইসরায়েলি কর্মকর্তারা বলেন, জুমায় ৮০ হাজার মুসল্লি অংশ নিয়েছেন। তবে জর্ডানীয় ওয়াকফ ইসলামিক অ্যাফেয়ার্স কাউন্সিল জানায়, এক লাখ মুসল্লি জুমার নামাজ আদায় করেছেন ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম পবিত্র মসজিদটিতে।
ইসরায়েলি পুলিশ জানায়, রমজানের প্রথম জুমার কথা বিবেচনায় এদিন শহরজুড়ে ২৩০০ পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
পশ্চিম তীরের নাবলুস শহর থেকে আল-আকসায় নামাজ পড়তে আসেন ৬২ বছরের আবুদ হাসান। তিনি বলেন, মুসলিমদের জন্য বছরের গুরুত্বপূর্ণ একটি মাস রমজান। তাই আল-আকসায় নামাজ আদায় করতে এসেছি।
শান্তিপূর্ণভাবে নামাজ আদায় করতে পেরে তিনি মহান আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
রমজানে সহিংসতা হ্রাসে চলতি মাসে ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলি প্রতিনিধি দল মিসরে বৈঠকে সম্মত হয়েছে। তবে পশ্চিমতীরে গত বৃহস্পতিবার রমজানের শুরুতেই ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে এক ফিলিস্তিনি যুবক নিহত হন। গত জানুয়ারি থেকে ইসরায়েলি বাহিনীর সঙ্গে সহিংসতায় ৮৭ ফিলিস্তিনি নিহত হন।
আরও পড়ুন:বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শুরু হয়েছে সিয়াম সাধনার মাস রমজান। এ মাসে ভোররাত থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার বর্জন করেন মুসলিমরা। সূর্য ডোবার সময়ের তারতম্যের কারণে দেশভেদে ইফতারের ক্ষণেও পার্থক্য লক্ষ করা যায়।
উত্তর গোলার্ধের দেশগুলোতে সূর্যোদয় দেরিতে হওয়ায় দীর্ঘ সময় ধরে রোজা রাখতে হয় মুসলিমদের। অন্যদিকে নিরক্ষরেখার দক্ষিণে অবস্থিত দেশগুলোতে রোজার সময় অপেক্ষাকৃত কম হয়।
ইসলামিক ফাইন্ডারের বরাত দিয়ে আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে দীর্ঘ সময় রোজা রাখতে হবে, এমন শহরের তালিকা দেয়া হয়েছে।
এতে বলা হয়, এবার ১৭ ঘণ্টা রোজা রাখতে হবে গ্রিনল্যান্ডের নুক, আইসল্যান্ডের রিকজাভিক, ফিনল্যান্ডের হেলসিংকি, সুইডেনের স্টকহোম, স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোতে। এ ছাড়া ১৬ ঘণ্টা রোজা রাখতে হবে নেদারল্যান্ডসের আমস্টারডাম, পোল্যান্ডের ওয়ারশ, যুক্তরাজ্যের লন্ডন, কাজাখস্তানের আস্তানা, বেলজিয়ামের ব্রাসেলসের মুসলিমদের। এ ছাড়া ১৫ ঘণ্টা রোজা রাখতে হবে ফ্রান্সের প্যারিস, সুইজারল্যান্ডের জুরিখ, রোমানিয়ার বুখারেস্ট, কানাডার অটোয়া, বুলগেরিয়ার সোফিয়া, ইতালির রোম, স্পেনের মাদ্রিদের মুসলিমদের।
বাংলাদেশের মুসলিমদের পানাহার ছাড়া থাকতে হচ্ছে প্রায় ১৪ ঘণ্টা।
বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শুরু হয়েছে সিয়াম সাধনার মাস রমজান। এ মাসে ভোররাতে সেহরি খেয়ে দিনভর পানাহার থেকে দূরে থাকেন মুসলিমরা। এ সময়ে কী কী কারণে রোজা ভেঙে যায় বা নষ্ট হয়ে যায়, তা নিয়ে জানার আগ্রহ আছে অনেকের।
ইসলামি প্রশ্নোত্তরভিত্তিক ওয়েবসাইট ইসলামকিউএ ডটইনফোর এক প্রশ্নোত্তরে এ নিয়ে বিস্তারিত জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়, ‘আল্লাহতায়ালা পরিপূর্ণ হেকমত অনুযায়ী রোজার বিধান জারি করেছেন। তিনি রোজাদারকে ভারসাম্য রক্ষা করে রোজা রাখার নির্দেশ দিয়েছেন একদিকে যাতে রোজা রাখার কারণে রোজাদারের শারীরিক কোনো ক্ষতি না হয়, অন্যদিকে সে যেন রোজা বিনষ্টকারী কোনো বিষয়ে লিপ্ত না হয়।’
প্রশ্নোত্তরে রোজা বিনষ্টের কারণ নিয়ে বলা হয়, ‘এ কারণে রোজা বিনষ্টকারী বিষয়গুলো দুই ভাগে বিভক্ত। কিছু রোজা বিনষ্টকারী বিষয় রয়েছে, যেগুলো শরীর থেকে কোনো কিছু নির্গত হওয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত। যেমন: সহবাস, ইচ্ছাকৃত বমি করা, হায়েজ (মাসিক ঋতুস্রাব) ও শিঙ্গা লাগানো। শরীর থেকে এগুলো নির্গত হওয়ার কারণে শরীর দুর্বল হয়। এ কারণে আল্লাহতায়ালা এগুলোকে রোজা ভঙ্গকারী বিষয় হিসেবে নির্ধারণ করেছেন যাতে করে এগুলো নির্গত হওয়ার দুর্বলতা ও রোজা রাখার দুর্বলতা উভয়টি একত্রিত না হয়। এমনটি ঘটলে রোজার মাধ্যমে রোজাদার ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং রোজা বা উপবাসের ক্ষেত্রে আর ভারসাম্য বজায় থাকবে না।
‘আর কিছু রোজা বিনষ্টকারী বিষয় আছে, যেগুলো শরীরে প্রবেশ করানোর সঙ্গে সম্পৃক্ত। যেমন: পানাহার। তাই রোজাদার যদি পানাহার করে, তাহলে যে উদ্দেশ্যে রোজার বিধান জারি করা হয়েছে সেটা বাস্তবায়িত হবে না।’ [মাজমুউল ফাতাওয়া ২৫/২৪৮]
কোরআনের সংশ্লিষ্ট আয়াত
ইসলামকিউএ ডটইনফোর প্রশ্নোত্তরে রোজা নিয়ে কোরআনের আয়াত তুলে ধরা হয়েছে। এতে বলা হয়, “আল্লাহতায়ালা নিম্নোক্ত আয়াতে রোজা বিনষ্টকারী বিষয়গুলোর মূলনীতি উল্লেখ করেছেন:
‘এখন তোমরা নিজ স্ত্রীদের সঙ্গে সহবাস করো এবং আল্লাহ তোমাদের জন্য যা কিছু লিখে রেখেছেন তা (সন্তান) তালাশ করো। আর পানাহার করো যতক্ষণ না কালো সুতা থেকে ভোরের শুভ্র সুতা পরিষ্কার ফুটে ওঠে...।’” [সূরা বাকারা, আয়াত: ১৮৭]
উত্তরে উল্লেখ করা হয়, ‘এ আয়াতে আল্লাহতায়ালা রোজা নষ্টকারী প্রধান বিষয়গুলো উল্লেখ করেছেন। সেগুলো হচ্ছে পানাহার ও সহবাস। আর রোজা নষ্টকারী অন্য বিষয়গুলো নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার হাদিসে উল্লেখ করেছেন।’
হাদিসে রোজা বিনষ্টকারী যেসব বিষয় এসেছে, সে বিষয়ে প্রশ্নোত্তরে বলা হয়, রোজা নষ্টকারী বিষয় ৭টি। সেগুলো হলো শারীরিক সম্পর্ক বা সহবাস, হস্তমৈথুন, পানাহার, যা কিছু পানাহারের স্থলাভিষিক্ত, শিঙ্গা লাগানো কিংবা এ জাতীয় অন্য কোনো কারণে রক্ত বের করা, ইচ্ছাকৃতভাবে বমি করা, নারীদের হায়েজ ও নিফাসের (কোনো নারীর জরায়ু থেকে সন্তান প্রসবের কারণে যে রক্ত বের হয়) রক্ত বের হওয়া।
শারীরিক সম্পর্কের বিষয়ে প্রশ্নোত্তরে বলা হয়, “এ বিষয়গুলোর মধ্যে প্রথম হচ্ছে সহবাস। এটি সবচেয়ে বড় রোজা নষ্টকারী বিষয় ও এতে লিপ্ত হলে সবচেয়ে বেশি গুনাহ হয়। যে ব্যক্তি রমজানের দিনের বেলা স্বেচ্ছায় স্ত্রী সহবাস করবে, অর্থাৎ দুই খতনার স্থানদ্বয়ের মিলন ঘটাবে এবং পুরুষাঙ্গের অগ্রভাগ যৌনাঙ্গের ভেতরে অদৃশ্য হয়ে যাবে, সে তার রোজা নষ্ট করল। এতে করে বীর্যপাত হোক কিংবা না হোক। তার ওপর তওবা করা, সেদিনের রোজা পূর্ণ করা, পরবর্তী সময়ে এ দিনের রোজা কাজা করা ও কঠিন কাফফারা আদায় করা ফরজ। এর দলিল হচ্ছে আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণিত হাদিস। তিনি বলেন, ‘এক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে বলল, ‘ইয়া রাসুলুল্লাহ, আমি ধ্বংস হয়েছি।’ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘কিসে তোমাকে ধ্বংস করল?’ সে বলল, ‘আমি রমজানে (দিনের বেলা) স্ত্রীর সঙ্গে সহবাস করে ফেলেছি।’ তিনি বললেন, ‘তুমি কি একটি ক্রীতদাস আজাদ করতে পারবে?’ সে বলল, ‘না।’ তিনি বললেন, ‘তাহলে লাগাতার দুই মাস রোজা রাখতে পারবে?’ সে বলল, ‘না।’ তিনি বললেন, ‘তাহলে ৬০ জন মিসকিনকে খাওয়াতে পারবে?’ সে বলল, ‘না’। [হাদিসটি সহিহ বুখারি (১৯৩৬) ও সহিহ মুসলিমে (১১১১) এসেছে]
স্ত্রী সহবাস ছাড়া অন্য কোনো কারণে কাফফারা আদায় করা ওয়াজিব হয় না।”
হস্তমৈথুনের বিষয়ে উত্তরে বলা হয়, “দ্বিতীয়: হস্তমৈথুন। হস্তমৈথুন বলতে বোঝায় হাত দিয়ে কিংবা অন্য কিছু দিয়ে বীর্যপাত করা। হস্তমৈথুন যে রোজা ভঙ্গকারী এর দলিল হচ্ছে হাদিসে কুদসিতে রোজাদার সম্পর্কে আল্লাহর বাণী: ‘সে আমার কারণে পানাহার ও যৌনকর্ম পরিহার করে।’ সুতরাং যে ব্যক্তি রমজানের দিনের বেলা হস্তমৈথুন করবে তার ওপর ফরজ হচ্ছে তওবা করা। সে দিনের বাকি সময় উপবাস থাকা এবং পরবর্তী সময়ে সে রোজাটির কাজা পালন করা। আর যদি এমন হয়, হস্তমৈথুন শুরু করেছে বটে, কিন্তু বীর্যপাতের আগে সে বিরত হয়েছে, তাহলে আল্লাহর কাছে তওবা করতে হবে; তার রোজা সহিহ। বীর্যপাত না করার কারণে তাকে রোজাটি কাজা করতে হবে না। রোজাদারের উচিত হচ্ছে যৌন উত্তেজনা সৃষ্টিকারী সবকিছু থেকে দূরে থাকা এবং সব কুচিন্তা থেকে নিজের মনকে প্রতিহত করা। আর যদি মজি (কাম রস) বের হয়, তাহলে অগ্রগণ্য মতানুযায়ী এটি রোজা ভঙ্গকারী নয়।’
পানাহারের বিষয়ে উত্তরে বলা হয়, “তৃতীয়: পানাহার। পানাহার বলতে বোঝাবে মুখ দিয়ে কোনো কিছু পাকস্থলীতে পৌঁছানো। অনুরূপভাবে নাক দিয়ে কোনো কিছু যদি পাকস্থলীতে পৌঁছানো হয়, সেটাও পানাহারের পর্যায়ভুক্ত। এ কারণে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তুমি ভালো করে নাকে পানি দাও যদি না তুমি রোজাদার হও।’ [সুনানে তিরমিজি (৭৮৮), আলবানি সহিহ তিরমিজিতে হাদিসটিকে সহিহ আখ্যায়িত করেছেন] সুতরাং নাক দিয়ে পাকস্থলীতে পানি প্রবেশ করানো যদি রোজাকে ক্ষতিগ্রস্ত না করত, তাহলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ভালো করে নাকে পানি দিতে নিষেধ করতেন না।”
পানাহারের স্থলাভিষিক্ত রোজা বিনষ্টকারী বিষয় নিয়ে উত্তরে বলা হয়, “চতুর্থ: যা কিছু পানাহারের স্থলাভিষিক্ত। এটি দুটি বিষয়কে অন্তর্ভুক্ত করে। ১. যদি রোজাদারের শরীরে রক্ত পুশ করা হয়। যেমন: আহত হয়ে রক্তক্ষরণের কারণে কারও শরীরে যদি রক্ত পুশ করা হয়, তাহলে সে ব্যক্তির রোজা ভেঙে যাবে। যেহেতু পানাহারের উদ্দেশ্য হচ্ছে রক্ত তৈরি। ২. খাদ্যের বিকল্প হিসেবে ইনজেকশন পুশ করা। কারণ এমন ইনজেকশন নিলে পানাহারের প্রয়োজন হয় না। [শাইখ উছাইমীনের ‘মাজালিসু শারহি রমাদান’, পৃষ্ঠা ৭০] তবে, যেসব ইনজেকশন পানাহারের স্থলাভিষিক্ত নয়; বরং চিকিৎসার জন্য দেয়া হয়, উদাহরণস্বরূপ ইনসুলিন, পেনিসিলিন কিংবা শরীর চাঙা করার জন্য দেয়া হয় কিংবা টিকা হিসেবে দেয়া হয়, এগুলো রোজা ভঙ্গ করবে না; চাই এসব ইনজেকশন মাংশপেশিতে দেয়া হোক কিংবা শিরাতে দেয়া হোক। [শাইখ মুহাম্মদ বিন ইব্রাহিমের ফতোয়াসমগ্র] তবে, সাবধানতাস্বরূপ এসব ইনজেকশন রাতে নেয়া যেতে পারে।
“কিডনি ডায়ালাইসিসের ক্ষেত্রে রোগীর শরীর থেকে রক্ত বের করে সে রক্ত পরিশোধন করে কিছু কেমিক্যাল ও খাদ্য উপাদান (যেমন: সুগার ও লবণ ইত্যাদি) যোগ করে সে রক্ত পুনরায় শরীরে পুশ করা হয়। এতে করে রোজা ভেঙে যাবে।”
শিঙ্গা লাগানো, কাপিং বা হিজামার বিষয়ে ইসলামকিউএ ডটইনফোর উত্তরে বলা হয়, “পঞ্চম: শিঙ্গা লাগানোর মাধ্যমে রক্ত বের করা। দলিল হচ্ছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণী, ‘যে ব্যক্তি শিঙ্গা লাগায় ও যার শিঙ্গা লাগানো হয় উভয়ের রোজা ভেঙে যাবে।’ [সুনানে আবু দাউদ (২৩৬৭), আলবানি সহিহ আবু দাউদ গ্রন্থে (২০৪৭) হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন]
“রক্ত দেয়াও শিঙ্গা লাগানোর পর্যায়ভুক্ত। কারণ রক্ত দেয়ার ফলে শরীরের ওপর শিঙ্গা লাগানোর মতো প্রভাব পড়ে। তাই রোজাদারের জন্য রক্ত দেয়া জায়েজ নেই, তবে যদি অনন্যোপায় হয়ে কোনো রোগীকে রক্ত দেয়া লাগে তাহলে রক্ত দেয়া জায়েজ হবে। রক্ত দানকারীর রোজা ভেঙে যাবে এবং সে দিনের রোজা কাজা করবে। [শাইখ উছাইমীনের ‘মাজালিসু শারহি রামাদান’ পৃষ্ঠা-৭১]
“কোনো কারণে যে ব্যক্তির রক্তক্ষরণ হচ্ছে, তার রোজা ভাঙবে না। কারণ রক্তক্ষরণ তার ইচ্ছাকৃত ছিল না। [স্থায়ী কমিটির ফতোয়াসমগ্র (১০/২৬৪)]
“আর দাঁত তোলা, ক্ষতস্থান ড্রেসিং করা কিংবা রক্ত পরীক্ষা করা ইত্যাদি কারণে রোজা ভাঙবে না। কারণ এগুলো শিঙ্গা লাগানোর পর্যায়ভুক্ত নয়। কারণ এগুলো দেহের ওপর শিঙ্গা লাগানোর মতো প্রভাব ফেলে না।”
রোজা ভঙ্গের ষষ্ঠ কারণ নিয়ে উত্তরে বলা হয়, ‘ষষ্ঠ: ইচ্ছাকৃতভাবে বমি করা। দলিল হচ্ছে ‘যে ব্যক্তির অনিচ্ছাকৃতভাবে বমি এসে যায়, তাকে উক্ত রোজা কাজা করতে হবে না, কিন্তু যে ব্যক্তি স্বেচ্ছায় বমি করল তাকে সে রোজা কাজা করতে হবে।”[সুনানে তিরমিজি (৭২০), আলবানি সহিহ তিরমিজি গ্রন্থে (৫৭৭) হাদিসটিকে সহিহ আখ্যায়িত করেছেন]
ইবনে মুনজির বলেন, ‘যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃত বমি করেছে আলেমদের ঐক্যবদ্ধ অভিমত (ইজমা) হচ্ছে তার রোজা ভেঙ্গে গেছে।’ [আল-মুগনী (৪/৩৬৮)]
যে ব্যক্তি মুখের ভেতরে হাত দিয়ে কিংবা পেট কচলিয়ে ইচ্ছাকৃতভাবে বমি করেছে কিংবা ইচ্ছাকৃতভাবে এমন কিছু শুকেছে কিংবা বারবার দেখেছে, যার একপর্যায়ে তার বমি এসে গেছে, তাকেও রোজা কাজা করতে হবে, তবে যদি কারও পেট ফেঁপে থাকে, তার জন্য বমি আটকে রাখা বাধ্যতামূলক নয়। কারণ এতে করে তার স্বাস্থ্যের ক্ষতি হবে।” [শাইখ উছাইমীনের মাজালিসু শাহরি রামাদান, পৃষ্ঠা ৭১]
মাসিক ঋতুস্রাবজনিত কারণে রোজা ভঙ্গের বিষয়ে বলা হয়, “সপ্তম: হায়েজ ও নিফাসের রক্ত নির্গত হওয়া। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যখন নারীদের হায়েজ হয়, তখন কি তারা নামাজ ও রোজা ত্যাগ করে না?’ [সহিহ বুখারি (৩০৪)]। তাই কোনো নারীর হায়েজ কিংবা নিফাসের রক্ত নির্গত হওয়া শুরু হলে তার রোজা ভেঙে যাবে, এমনকি সেটা সূর্যাস্তের সামান্য কিছু সময় পূর্বে হলেও। আর কোনো নারী যদি অনুভব করে যে, তার হায়েজ শুরু হতে যাচ্ছে, কিন্তু সূর্যাস্তের আগে পর্যন্ত রক্ত বের হয়নি তাহলে তার রোজা শুদ্ধ হবে এবং সেদিনের রোজা তাকে কাজা করতে হবে না।
আর হায়েজ ও নিফাসগ্রস্ত নারীর রক্ত যদি রাত থাকতে বন্ধ হয়ে যায় এবং সঙ্গে সঙ্গে তিনি রোজার নিয়ত করে নেন, তবে গোসল করার আগেই ফজর হয়ে যায়, সে ক্ষেত্রে আলেমদের মাজহাব হচ্ছে তার রোজা শুদ্ধ হবে।”
উত্তরে বলা হয়, ‘কোনো নারী যদি হায়েজ বন্ধকারী ওষুধ গ্রহণ করার ফলে তার হায়েজের রক্ত পড়া বন্ধ হয়ে যায় এবং জায়গাটি শুকিয়ে যায়, সে নারী রোজা রাখতে পারবে এবং তার রোজাটি আদায় হয়ে যাবে।’
শর্ত
প্রশ্নোত্তরে বলা হয়, ‘উল্লেখিত বিষয়গুলো হচ্ছে রোজা বিনষ্টকারী, তবে হায়েজ ও নিফাস ছাড়া অবশিষ্ট বিষয়গুলো রোজা ভঙ্গ করার জন্য তিনটি শর্ত পূর্ণ হতে হয়।
১. বিনষ্টকারী বিষয়টি ব্যক্তির গোচরীভূত থাকা। অর্থাৎ এ ব্যাপারে সে অজ্ঞ না হয়।
২. তার স্মরণে থাকা।
৩. জোর-জবরদস্তির শিকার না হয়ে স্বেচ্ছায় তাতে লিপ্ত হওয়া।’
আরও পড়ুন:বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে শুরু হয়ে গেছে সিয়াম সাধনার মাস রমজান। বাংলাদেশে শুক্রবার ভোররাতে সেহরি খেয়ে রোজা পালন শুরু করেছেন মুসলিমরা।
রোজার শুরুতে প্রতি বছরের মতো এবারও শুভেচ্ছা জানানো শুরু হয়েছে। বিভিন্ন ভাষায় সে শুভেচ্ছাবার্তা কীভাবে জানানো হয়, তা তুলে ধরা হয় আল জাজিরার প্রতিবেদনে।
এতে বলা হয়, ইংরেজিতে ‘রামাদান মুবারক’ বলে জানানো হয় রোজার শুভেচ্ছা। উজবেক ভাষায় সেটি ‘রমাজন ওয়ি মুবোরাক বোলসিন’।
থাই ভাষায় রমজানের শুভেচ্ছা জানানো হয় ‘রামাদন খালিম’ বলে। সেনেগাম্বিয়ান ভাষা ফুলায় বলা হয় ‘রমজান মুবারক’।
আরবিতে রমজান উপলক্ষে দেয়া শুভেচ্ছাবার্তায় বলা হয়, ‘রামাদান কারিম’। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অনারব দেশ তুরস্কে একই বার্তা দেয়া হয় ‘রমাজান এইনেজ মুবারেক ওলসুন’ বলে।
ফরাসি ভাষায় রমজানের শুভেচ্ছা জানাতে গিয়ে আরবির মতো বলা হয়, ‘রামাদান কারিম’। উর্দুতে শুভেচ্ছায় বলা হয় ‘রমজান মুবারক’। আফগানিস্তানের দাপ্তরিক ভাষা পশতুতে সেটি ‘রোজা মুবারিক শাহ’।
সোমালি ভাষায় রোজা শুরুর বার্তা দেয়া হয় ‘সুন ওয়ান আকসুন’ বলে। স্প্যানিশে সেটি ‘ফেলিজ রামাদান’।
বাংলাদেশিরা সাধারণত ‘রমজান মুবারক’ বলে শুভেচ্ছা জানান, তবে গত কয়েক বছর ধরে অনেকে আরবি উচ্চারণের সঙ্গে মিল রেখে রামাদানও বলছেন।
আরও পড়ুন:সিয়াম সাধনার মাস রমজানে ভোররাতে সেহরি খেয়ে সন্ধ্যা পর্যন্ত পানাহার বর্জন করেন মুসলিমরা। এ সময়ে পাকস্থলীসহ শরীরের অনেক গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ বিশ্রাম পায়। এতে করে শরীরে নানাবিধ ইতিবাচক প্রভাব পড়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়।
রোজার স্বাস্থ্যগত বিভিন্ন উপকারিতার কথা এক ভিডিওতে তুলে ধরেছেন মনোদৈহিক ও জীবনযাপনবিষয়ক রোগের থেরাপিস্ট এবং কোয়ান্টাম হার্ট ক্লাবের কোঅর্ডিনেটর ডা. মনিরুজ্জামান। পরামর্শগুলো তার ভাষায় উপস্থাপন করা হলো নিউজবাংলার পাঠকদের সামনে।
শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গের বিশ্রাম
রমজান আসল, রমজান চলে গেল। ৩০টি রোজা আমি রাখলামও। ৩০টি রোজার পরেও আমার ওজনের একটুও কম-বেশি হলো না। এইটুকু খোলা চোখে বলে দেয়া যায়, রোজা থেকে আমি কোনো কিছু ফায়দা নিতে পারলাম না। আমি ব্যর্থ হয়েছি রোজার মূল উদ্দেশ্য অর্জন করতে। বিজ্ঞান কী বলে?
সর্বপ্রথম ১৯৯৪ সালে মরক্কোর ক্যাসাব্লাঙ্কা শহরে সারা বিশ্ব থেকে বিজ্ঞানীরা একত্রিত হয়ে ৫০টিরও বেশি বৈজ্ঞানিক গবেষণাপত্র তারা উপস্থাপন করেন। সেই সম্মেলনের নাম ছিল হেলথ অ্যান্ড রামাদান; সুস্থতা এবং রমজান। সেই সেমিনারে বক্তারা বলেন, রমজানের ৩০টি রোজা আমাদের শরীরের জন্য একটা বিশাল অপরচুনিটি; একটা বিশাল সুযোগ। তারা এভাবে তুলনা করে বলছেন, একটা জটিল মেশিন থেকে যদি সারা বছর পূর্ণ সার্ভিস চান, তাহলে অবশ্যই মাঝে মাঝে তাকে কিছু সময়ের জন্য হলেও তাকে বিশ্রামে রাখতে হবে। তো আমাদের শরীরটাও একটা মেশিন। এর মধ্যে অসংখ্য গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্র রয়েছে; হার্ট, লাং, লিভার, কিডনি, মস্তিষ্ক, পরিপাকতন্ত্র…কত ধরনের হার্ড ডিস্ক। এইসব মেশিনপত্র থেকে যদি আপনি সারা বছর পুরো সার্ভিস চান, তাহলে তাকে বছরের একটি মাস বিশ্রাম দিতে হবে। তাহলে বাকি ১১টা মাস সে পূর্ণোদ্যমে কাজ করে আপনাকে পূর্ণ সাপোর্ট দিতে পারবে। আপনি তার থেকে পুরো আউটপুট পাবেন।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, আপনি যদি সঠিক পদ্ধতিতে রোজা রাখতে পারেন, তাহলে অবশ্যই আপনার বাড়তি ওজন কমবে। বাড়তি ওজন ঝেড়ে ফেলে আপনি একজন স্লিম, স্মার্ট মানুষে রূপান্তরিত হবেন। আর যদি রোজার পরেও আপনার বাড়তি ওজন থেকে যায়, এইটুকু পরিষ্কারভাবে বলা যায়, যে পদ্ধতিতে রোজা রাখার কথা ছিল, সেই পদ্ধতিতে রোজা রাখতে পারেন নাই; রোজা রাখা হয় নাই। ফলে আপনি আপনার ওজন কমাতে ব্যর্থ হয়েছেন।
মস্তিষ্ককে বুড়িয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা
আমেরিকার সরকারি সংস্থা ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেলথের (এনআইএইচ) একটি শাখা হচ্ছে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অন এজিং। সেখানকার প্রখ্যাত নিউরোসায়েন্টিস্ট ড. মার্ক ম্যাটসন এবং তার সহযোগীরা দীর্ঘ গবেষণা করেন ফাস্টিং নিয়ে। এরপর তারা পাবলিশ করেন এর ফলাফল। সেখানে তারা পরিষ্কার করে বলছেন যে, একজন মানুষ যদি মাঝে মাঝেই ফাস্টিং থাকে, নিজেকে সকল ধরনের খাবার এবং পানীয় থেকে বিরত রাখে, তবে তিনি তার ব্রেনের যে এজিং, সে এজিংটাকে প্রতিরোধ করতে পারবে। ব্রেনকে বুড়িয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করতে পারবে এবং বৃদ্ধ বয়সে এখন যে রোগগুলো খুব দেখা যাচ্ছে, বৃদ্ধ বয়সে এসে আমাদের স্মৃতিভ্রষ্ট হয়ে যাচ্ছে এবং যেসব রোগগুলোতে স্মৃতি হারিয়ে যাচ্ছে, সেই রোগগুলোকে বলা হয় আলঝেইমারস, ডিমেনশিয়া, হান্টিংটন, পারকিনসনের মতো রোগগুলো আপনি প্রতিরোধ করতে পারবেন।
রক্ত পরিশোধন
বিজ্ঞানীরা বলছেন, আমাদের রক্তে নানা রকম বর্জ্য পদার্থ এবং ক্ষতিকর পদার্থ ঘুরে বেড়ায়। এই রক্তকে পরিশোধন করার সবচেয়ে বড় অস্ত্র হচ্ছে রোজা।
কোষ পরিষ্কার
আমাদের শরীরে ৩০ ট্রিলিয়ন সেল বা কোষ আছে। এই কোষের ভিতরে প্রতিনিয়ত নানা রকম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান তৈরি হচ্ছে বিপাকক্রিয়ার ফলে এবং নানা ক্রিয়া-বিক্রিয়ার ফলে। শক্তি তৈরি হচ্ছে, হরমোন তৈরি হচ্ছে, এনজাইম তৈরি হচ্ছে। এগুলো তৈরির পাশাপাশি কিছু বর্জ্য পদার্থ বা টক্সিন তৈরি হচ্ছে। এইসব বর্জ্য পদার্থ বা টক্সিন দূর করার অন্যতম প্রধান উপায় হচ্ছে ফাস্টিং বা রোজা। এটা নিয়ে গবেষণা করে যিনি নোবেল প্রাইজ পান, তিনি হচ্ছেন ড. ইয়োশিনোরি ওহসুমি। তিনিসহ অন্য বিজ্ঞানীরা এটার নাম দিয়েছেন অটোফেজি। এটি (অটোফেজি) যখন ১২ ঘণ্টা থেকে ১৬ ঘণ্টা হবে, এটি চমৎকার কাজ করবে। এটি যখন ১৮ ঘণ্টা, ২০ ঘণ্টা, ২২ ঘণ্টা, ২৪ ঘণ্টা হবে এক্সিলেন্ট।
টাইপ টু ডায়াবেটিস রোধে সহায়ক
আমরা জানি টাইপ টু ডায়াবেটিসের মূল কারণ হচ্ছে ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স। সম্প্রতি দুটো গবেষণা বলছে, টাইপ টু ডায়াবেটিস রিভার্স করতে চাইলে সপ্তাহে অন্তত তিন দিন ২৪ ঘণ্টার ফাস্টিং করতে হবে। ২৪ ঘণ্টার ফাস্টিং কেউ যদি সপ্তাহে তিন দিন করেন, তবে তিনি টাইপ টু ডায়াবেটিস নিরাময় করতে সক্ষম হবেন। সেই সময় তার স্থূলতাও তার শরীর থেকে চলে যাবে।
দীর্ঘায়ু হওয়ায় সহায়তা
বিজ্ঞানীরা বলছেন, মাঝে মাঝে রোজা, উপবাস বা ফাস্টিং একজন মানুষের আয়ুষ্কাল বৃদ্ধি করে তাকে দীর্ঘজীবী করে। এই যে দেখেন না, হজরত শাহজালাল (র.) ১৫০ বছর বেঁচে ছিলেন। তিনি স্বল্পাহারি ছিলেন এবং প্রায়ই রোজা রাখতেন। তিনি এক বেলা খেতেন। এই যে ঢাকা থেকে কাছে সোনারগাঁয়ে ছিলেন বাবা লোকনাথ ব্রহ্মচারী। ১৬০ বছর বেঁচে ছিলেন। তিনিও স্বল্পাহারি ছিলেন। প্রায়ই উপবাস করতেন।
আমাদের প্রিয় মহানবী (সা.) সপ্তাহে দুই দিন রোজা রাখতেন; সোমবার এবং বৃহস্পতিবার। এ ছাড়াও তিনি প্রতি চান্দ্র মাসের ১৩, ১৪, ১৫ তারিখে রোজা রাখতেন।
রোজা রাখলে কী ঘটে শরীরে
রোজায় দীর্ঘ সময় পাকস্থলী খালি থাকায় নানা ধরনের প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যায় শরীর। ধাপে ধাপে সেটি কীভাবে হয়, তা প্রতিবেদনে তুলে ধরেছে সুস্থতা নিয়ে কাজ করা ওয়েবসাইট মাইন্ডবডিগ্রিন ডটকম।
প্রথম চার ঘণ্টা
খাওয়ার পর প্রথম চার ঘণ্টায় অভ্যন্তরীণ শক্তিকে কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন কর্মকাণ্ড সচল রাখার পাশাপাশি কোষ ও টিস্যুর বিকাশ ঘটায় শরীর। এ সময়ে দরকারি হরমোন ইনসুলিন উৎপন্ন করে অগ্ন্যাশয়। এর মধ্য দিয়ে রক্তে নিঃসৃত গ্লুকোজ ব্যবহারের পাশাপাশি পরবর্তী সময়ে ব্যবহারের জন্য কোষে বাড়তি শক্তিও মজুত করা যায়।
চার থেকে ১৬ ঘণ্টা
দেশভেদে সেহরি থেকে ইফতারের মধ্যকার সময়ে তারতম্য হয়। কোনো কোনো দেশে ১৬ ঘণ্টার বেশি সময় উপবাস থাকতে হয় রোজাদারদের।
১৬ ঘণ্টার মতো যারা রোজা রাখবেন, তাদের শারীরিক ক্রিয়ার দ্বিতীয় ধাপ শুরু হবে চতুর্থ ঘণ্টা থেকে। এ পর্যায়ে প্রয়োজনীয় শক্তি জোগাতে সঞ্চিত অতিরিক্ত পুষ্টি ব্যবহার করা শুরু করে শরীর।
কোষে থাকা শক্তি ফুরিয়ে গেলে শরীর নজর দেয় সঞ্চিত চর্বি বা ফ্যাটে। শরীর থেকে চর্বি নির্গমন এবং শক্তি জোগাতে এগুলো পুড়িয়ে ফেলার প্রক্রিয়াকে বলা হয় ‘কিটন বডিজ ফর এনার্জি’। এটি সাধারণত ঘটে ১৬তম ঘণ্টার কাছাকাছি সময়ে।
শরীর সঞ্চিত চর্বি পোড়ানোর পর্যায়ে কখন যাবে, সেটি নির্ভর করে রোজা বা উপবাস শুরুর আগে গ্রহণ করা খাদ্যের ধরনের ওপর। কেউ প্রচুর পরিমাণে শর্করা ও শ্বেতসার খাবার খেলে এ পর্যায় দেরিতে শুরু হবে। বিপরীতে কেউ চর্বি ও প্রোটিনজাতীয় খাবার খেলে আগেই সে পর্যায়ে পৌঁছাবে।
রোজা বা উপবাসের সবচেয়ে শক্তিশালী বৈশিষ্ট্যগুলোর একটি অটোফেজি। ১৬ ঘণ্টার আশপাশের সময়ে এটি শুরু হয়।
অটোফেজি হলো এমন এক প্রক্রিয়া যার মধ্য দিয়ে কোষে থাকা মৃত বা ক্ষতিগ্রস্ত বস্তুগুলো সরিয়ে দেয় শরীর। এসব বস্তু বার্ধক্য, ক্যানসার ও দীর্ঘমেয়াদি রোগের কারণ হতে পারে।
১৬ থেকে ২৪ ঘণ্টা
রোজার সময় ১৬ ঘণ্টার বেশি হলে কোষে থাকা গ্লুকোজ ও লিভারে থাকা গ্লাইকোজেন এবং পেশিগুলো দ্রুত ক্ষীণ হতে থাকে। ফলে শক্তি জোগাতে জমানো চর্বি গলাতে হয় শরীরকে।
এ পর্যায়ে এসে শরীরে শক্তির চাহিদার অনেক বেশি পরিবর্তন দেখা যায় না। রোজাদার বা উপবাসে থাকা ব্যক্তি তখনও জেগে থাকা, দৈনন্দিন কাজ করা, লোকজনের সঙ্গে লেনদেন করা কিংবা ব্যায়াম করতে পারেন। এ কারণে উল্লেখযোগ্য মাত্রার শক্তির দরকার হতে পারে।
১৬ ঘণ্টার পরে শরীরে এএমপিকে নামের আরেকটি রাসায়নিক উৎপন্ন হয়। এটি শরীরজুড়ে অটোফেজি আরও বাড়িয়ে দেয়।
আরও পড়ুন:পবিত্র রমজান মাসে কোনো দোকানদার ক্রেতার কাছে সরকার নির্ধারিত বাজারমূল্যের বেশি নিলে এবং তা প্রমাণ হলে সংশ্লিষ্ট দোকান বন্ধ করে দেয়া হবে।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলাম এই হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার দুপুরে মহাখালী কাঁচাবাজার পরিদর্শন এবং মূল্য তালিকা প্রদর্শনের ডিজিটাল ডিসপ্লে বোর্ড উদ্বোধনকালে তিনি এমন হুঁশিয়ারি দেন।
মূল্য তালিকা প্রদর্শনের ডিজিটাল ডিসপ্লে বোর্ড উদ্বোধনের আগে মেয়র ঢুকে পড়েন মহাখালী কাঁচাবাজারে। প্রথমে দুটি মুদি পণ্যের দোকানে এবং পরে একটি চালের দোকানে যান। সেখানে মূল্য তালিকা অনুযায়ী দোকানে পণ্যের দরদাম পরীক্ষা করেন। এ সময় তিনি দোকানদারদের হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, 'ডিসপ্লেতে প্রদর্শিত নির্ধারিত মূল্য তালিকার চেয়ে বেশি দাম নিলে দোকান বন্ধ করে দেব। কেউ ছাড় পাবেন না।'
ডিসপ্লে বোর্ড উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে মেয়র বলেন, ‘অন্যান্য দেশে রমজান বা অন্য কোনো উৎসব এলে ব্যবসায়ীরা ক্রেতাদের জন্য ছাড় দেন। আর আমাদের দেশের ব্যবসায়ীরা সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে অতিরিক্ত দামে পণ্য বিক্রি করেন। এটা খুবই লজ্জাজনক।
‘আমরা কাউন্সিলরকে আহ্বায়ক করে বাজার মনিটরিং কমিটি করে দিয়েছি। এছাড়া আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, কাউন্সিলররা মাঠে থাকবেন। কেউ বেশিমূল্য নিচ্ছে কি না তা জানতে আমরা মনিটরিং করব পুরো রমজান মাস।’
তিনি জানান, প্রতিদিন বিকেল ৩টায় পণ্যের দাম জানিয়ে কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে ডিএনসিসির মনিটরিং টিমের কাছে বিজ্ঞপ্তি পাঠানো হবে। সেই মূল্য পাওয়ার পর তা ডিজিটাল বোর্ডের মাধ্যমে সবার কাছে তুলে ধরা হবে।’
মহাখালী কাঁচাবাজারে ডিজিটাল ডিসপ্লে বোর্ড স্থাপন ও উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব রুহুল আমিন, ডিএনসিসির প্রধান প্রকৌশলী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহ. আমিরুল ইসলাম, সচিব মোহাম্মদ মাসুদ আলম ছিদ্দিক, প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা আ. ন. ম তরিকুল ইসলাম, অঞ্চল-৩ এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল বাকী, বাজার মনিটরিং কমিটির আহ্বায়ক ও ৩২ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সৈয়দ হাসান নূর ইসলামসহ অন্যান্য কাউন্সিলর এবং ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন:পবিত্র রমজানে রাজধানীতে যানজটের মাত্রা কমিয়ে আনতে ১৫টি নির্দেশনা দিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক বিভাগ। বৃহস্পতিবার ডিএমপির মিডিয়া শাখা থেকে নির্দেশনাগুলো জানানো হয়।
নির্দেশনাগুলোর বিষয়ে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মো. মুনিবুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘শহরকে যানজটমুক্ত রাখতে আমাদের পুলিশ সব সময় কাজ করে যাচ্ছে। রমজানে সাধারণ মানুষ যাতে নির্বিঘ্নে চলাফেরা করতে পারে সেজন্য সংশ্লিষ্ট সবার জন্য এই নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সবাইকে আইনে মেনে চলার অনুরোধ থাকছে। ট্রাফিক আইন অমান্য করলে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
নির্দেশনাগুলো হলো-
১. ঢাকা মহানগরীতে দূরপাল্লার ও আন্তঃজেলা বাস টার্মিনালের ভেতরের কোনো বাস সড়কে রেখে বা থামিয়ে যাত্রী উঠাবে না। সংশ্লিষ্ট বাসের প্রতিনিধিদের বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে।
২. ঢাকা মহানগরীতে আন্তঃজেলা ও দূরপাল্লার বাসগুলো টার্মিনাল সংলগ্ন প্রধান সড়কের অংশ দখল করে দাঁড়াবে না।
৩. ভ্রমণকালে ঢাকা মহানগরের প্রবেশ ও বের হওয়ার পথে গণপরিবহনগুলোকে শৃঙ্খলা মেনে চলতে হবে।
৪.ঢাকা মহানগরী থেকে ছেড়ে যাওয়া দূরপাল্লার যানবাহনকে অতিরিক্ত যাত্রী ও মালামাল বহন থেকে বিরত থাকতে হবে।
৫. আন্তঃজেলা পরিবহনের যাত্রী বা গমন প্রত্যাশীদের প্রধান সড়কে এসে অপেক্ষা বা দাঁড়িয়ে না থেকে টার্মিনালের ভেতরে অবস্থান করার জন্য আহ্বান জানানো হচ্ছে।
৬. ঢাকা মহানগরী থেকে দূরপাল্লার রুটপারমিটবিহীন বা অননুমোদিত রুটে কোনো বাস চলাচল করবে না। সংশ্লিষ্ট সবাই বিষয়টি কঠোরভাবে মেনে চলবেন এবং কর্তৃপক্ষকে সহায়তা করবেন।
৭. বাসে যাত্রীদের অপরিচিত কারও কাছ থেকে কিছু না খাওয়ার জন্য পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।
৮. সংশ্লিষ্ট যাত্রীরা অবশ্যই যানবাহনে টিকিট সঙ্গে রাখবেন।
৯. যাত্রীদের মালামাল নিজ হেফাজতে সাবধানে রাখবেন।
১০. কোনো যানবাহনই ছাদে ও অতিরিক্ত যাত্রী বহন করবে না।
১১. যাত্রী তোলার ক্ষেত্রে বাসের চালকরা এমন কোনো অসম প্রতিযোগিতায় অংশ নেবেন না যাতে সড়কে শৃঙ্খলায় বিঘ্ন ঘটে ও জীবনহানির আশঙ্কা থাকে।
১২. সকালে অফিসে গমনাগমনকারী প্রত্যেককে পর্যাপ্ত সময় হাতে নিয়ে বাসা থেকে রওনা হবেন।
১৩. ইফতারের আগে আগে বাসায় রওনা না দিয়ে পর্যাপ্ত সময় হাতে নিয়ে বাসার উদ্দেশে রওনা দেবেন।
১৪. স্বল্প দূরত্বে যাতায়াতের ক্ষেত্রে রিকশা, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, বাস ইত্যাদি বাহন ব্যবহার না করে হেঁটে চলাচল করবেন।
১৫. টার্মিনালভিত্তিক কাউন্টারগুলোতে ভাড়ার চার্ট প্রদর্শন করতে হবে।
মন্তব্য