রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের সংবাদ সংগ্রহে ইচ্ছুক সাংবাদিকদের জন্য মোটরসাইকেল ব্যবহার করার জন্য কোনো পাশ দিচ্ছে না নির্বাচন কমিশন। আরোপ করা হয়েছে নানা বিধিনিষেধ।
গত ফেব্রুয়ারিতে বর্তমান কমিশন দায়িত্ব নেয়ার পর এই প্রথম এই ধরনের বিধিনিষেধ আরোপ করা হলো।
সরকার অনুমোদিত (নিবন্ধিত) অনলাইন নিউজপোর্টালে কর্মরত সাংবাদিকদের পর্যবেক্ষণ কার্ড ইস্যু করা হচ্ছে না। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ সাংবাদিক ও সাংবাদিক নেতারা।
কোনো সংবাদ কর্মী ভোট কেন্দ্রে ১০ মিনিটের বেশি অবস্থা করতে পারবে না জানিয়ে ১৩টি নির্দেশনা দিয়ে আদেশ জারি করা হয়েছে।
গত ১৮ ডিসেম্বর নির্বাচন কমিশনের পরিচালক (জনসংযোগ) এস এম আসাদুজ্জামান সাক্ষরিত এই প্রজ্ঞাপন জারি করে পত্রটি রিটার্নিং কর্মকর্তা আবদুল বাতেনকে পাঠানো হয়েছে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে বৈধ কার্ডধারী সাংবাদিক সরাসরি ভোট কেন্দ্রে প্রবেশ করে প্রিসাইডিং অফিসারকে জানিয়ে ভোটগ্রহণ কার্যক্রমের তথ্য সংগ্রহ, ছবি তোলা এবং ভিডিও ধারণ করতে পারবেন। তবে কোনোক্রমেই গোপন কক্ষের ছবি সংগ্রহ কিংবা ধারণ করতে পারবেন না।
একইসঙ্গে একাধিক মিডিয়ার সাংবাদিক একই ভোটকক্ষে প্রবেশ করতে পারবেন না এবং ১০ মিনিটের বেশি ভোটকেন্দ্র অবস্থান করতে পারবেন না। ভোটকক্ষে নির্বাচনী কর্মকর্তা, নির্বাচনী এজেন্ট বা ভোটারদের সাক্ষাৎকার নিতে পারবেন না।
ভোটকক্ষের ভেতর থেকে সরাসরি সম্প্রচার করতে পারবেন না। সরাসরি সম্প্রচার করতে হলে ভোটকক্ষ থেকে নিরাপদ দূরত্বে গিয়ে তা করতে হবে, কোনোক্রমেই ভোটগ্রহণ কার্যক্রমে বাধা সৃষ্টি করা যাবে না।
ভোট গণনার সরাসরি সম্প্রচার করতে পারবেন না জানিয়ে বলা হয়, ভোটকক্ষ থেকে ফেসবুকসহ কোনো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরাসরি সম্প্রচার করা যাবে না। কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ কার্যক্রম ব্যাহত হয় এমন সব কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে। ভোটকেন্দ্রে সাংবাদিকরা প্রিসাইডিং অফিসারের আইনানুগ নির্দেশ মেনে চলতে হবে।
নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাজে কোনোরূপ হস্তক্ষেপ করা যাবে না বলেও জানিয়ে দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, নির্বাচনী উপকরণ স্পর্শ বা অপসারণ করতে পারবেন না।
সংবাদ সংগ্রহের সময় প্রার্থী বা কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষে বা বিপক্ষে যে কোনো ধরনের প্রচারণা বা বিদ্বেষমূলক প্রচারণা থেকে বিরত থাকতে হবে এবং নির্বাচন অনুষ্ঠানে সহায়তার জন্য নির্বাচনি আইন ও বিধিবিধান মেনে চলবেন।
সংবাদ সংগ্রহে নির্বাচন কমিশনের এই নীতিমালা বা নির্দেশনার কয়েকটি বিষয় নিয়ে আপত্তি জানিয়েছেন সাংবাদিক ও সাংবাদিক নেতারা।
দৈনিক কালের কণ্ঠের ফটো সাংবাদিক গোলজার হোসেন আদর নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা তো মফস্বল সাংবাদিকতা করি। আমার তো প্রাইভেটকার নেই, আর ভোটের দিন প্রাইভেটকার বা মাইক্রোবাস ভাড়া নেয়ারও সামর্থ্য নেই। যাদের সামর্থ্য নেই, তারা কীভাবে ভোটের খবর সংগ্রহ করবেন? এটি কেন করা হয়েছে আমাদের জানা নেই।’
গাজী টেলিভিশনের সিনিয়র সাংবাদিক আজম পারভেজ বলেন, ‘আমি মোটরসাইকেলের পাশ নিতে গিয়েছি কিন্তু পরিপত্র দেখিয়ে বলেছে পাশ হবে না।’
তিনি বলেন, ‘ভোটের দিন একটি মাইক্রোবাস ভাড়া নিতে কমপক্ষে ৮ হাজার টাকা ভাড়া দিতে হবে। এই টাকা কোথায় পাব আমরা? অবাধ তথ্যের এই যুগে কমিশনকে এই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার আহবান জানাই আমি।’
রংপুর প্রেস ক্লাবের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন বাপ্পী বলেন, ‘সাংবাদিকদের মোটরসাইকেল ব্যবহারের অনুমতি দেয়া হচ্ছে না, এটা দুঃখজনক। এ ধরনের নীতিমালার নিন্দা জানাচ্ছি।’
তিনি বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের এসব নির্দেশনা স্বাধীন সাংবাদিকতায় এক ধরনের বাধা। আমি আশা করছি, কমিশন এ ধরনের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসবেন।’
বাংলাদেশ ফটো জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন রংপুর এর সেক্রেটারি মমিনুল ইসলাম রিপন বলেন, ‘১০ মিনিটের বেশি ভোটকেন্দ্রে অবস্থান করা যাবে না এ ধরনের নির্দেশনা এর আগে অন্য কোনো নির্বাচনে কখনও শুনিনি। আর এবারই প্রথম নির্বাচন কমিশন থেকে সাংবাদিকদের মোটরসাইকেল ব্যবহারে স্টিকার দেয়া হচ্ছে না।
‘আমরা যারা সংবাদ সংগ্রহের কাজে মোটরসাইকেল ব্যবহার করি তারা কীভাবে পেশাগত দায়িত্ব পালন করবে সেটাও তো ভেবে দেখার প্রয়োজন আছে।’
এ ব্যাপারে রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের দায়িত্বে থাকা রিটার্নিং কর্মকর্তা আবদুল বাতেন বলেন, ‘বিগত বিভিন্ন নির্বাচনের অভিজ্ঞতা থেকেই এবার সাংবাদিকদের মোটরসাইকেল ব্যবহারের অনুমতি বা কমিশন প্রদত্ত স্টিকার দেওয়া হচ্ছে না।
‘কারণ অনেক প্রার্থী ও কর্মী-সমর্থক সাংবাদিকদের মোটরসাইকেল ব্যবহার করে দ্রুত অপরাধ করে সটকে পড়েন, যা নির্বাচনের শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ব্যঘাত সৃষ্টি করে। তাছাড়া একটা সুষ্ঠু, সুন্দর, অবাধ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন করতে যা যা করা প্রয়োজন কমিশন সেই আলোকে নীতিমালা করেছে।’
আরও পড়ুন:আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিএনপির আন্দোলন চোরাবালিতে আটকে গেছে। তাদের আন্দোলনের সঙ্গে জনগণ নেই। ফলে সেই আন্দোলন সফল হবে না এবং হতেও পারে না।
বৃহস্পতিবার ফরিদপুর সার্কিট হাউস মিলনায়তনে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এসব কথা বলেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বিএনপি ঢাকঢোল পিটিয়ে আন্দোলন শুরু করে আর প্যানপ্যানানি দিয়ে শেষ করে। তারা দৌড়াতে দৌড়াতে পদযাত্রা তারপর মানববন্ধন করে দাঁড়িয়ে গেছে।
‘বিএনপির আন্দোলন ছিল শুধু তাদের নেতাকর্মীদের নিয়ে। এতে জনগণের কোনো সম্পৃক্ততা ছিল না। ফলে তারা গণআন্দোলন করতে পারেনি। এখন বিএনপির টার্গেট দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করা।
কাদের বলেন, ‘অবৈধ দলের অবৈধ মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম বড় বড় কথা বলেন। তার নিজ দলেই কোনো গণতন্ত্র নেই। অথচ তারা আমাদের গণতন্ত্রের সবক দেন। তাদের নেতা নেই। তারা দণ্ডিত ব্যক্তিকে নেতা বানান। তাও লন্ডনে পলাতক। যে লন্ডনে পলাতক রয়েছে তাকে বানিয়েছে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। যে দলের নেতা নেই সেই দল আন্দোলনেও ব্যর্থ, নির্বাচনেও ব্যর্থ।’
তিনি আরও বলেন, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান দুজনই দণ্ডিত। কাজেই বিএনপির এখন আর কিছুই করার নেই। তারা এখন দেশে নাশকতা করবে, বিশৃংখলা করবে, সন্ত্রাস করবে। সেজন্য আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সতর্ক থাকতে হবে। আমরা গায়ে পড়ে ঝগড়া করব না। কিন্তু আক্রান্ত হলে ছাড়ব না। আমাদের ওপর আক্রমণ হলে পাল্টা আক্রমণ করব।’
৭ মার্চের ভাষণ সাতটি ভাষায় উপস্থাপন
মতবিনিময় শেষে বিকেল সাড়ে ৩টায় ফরিদপুরে শেখ জামাল স্টেডিয়ামে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ সাতটি বিদেশি ভাষায় উপস্থাপনস্থলে যান।
ফরিদপুর জেলা প্রশাসনের আয়োজনে এ অনুষ্ঠানে ৭ মার্চের ভাষণটি স্প্যানিজ ভাষায় মোসা. তানভিন ইসলাম, চাইনিজ ভাষায় মো. মারুফ আহমেদ, ফারসি ভাষায় শেখ মো. নাজমুল ইসলাম, ফ্রেঞ্চ ভাষায় কৌশিক সাহা, হিন্দি ভাষায় শ্রেয়া তুলশিয়ান প্রীতি, আরবি ভাষায় সাইফুল ইসলাম সাব্বির ও ইংরেজি ভাষায় ফারহানা জামান উপস্থাপন করেন।
জেলা প্রশাসক মো. কামরুল আহসান তালুকদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ফরিদপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য শাহদাব আকবর লাবু, পুলিশ সুপার মো. শাহজাহান, জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি শামীম হক, সাধারণ সম্পাদক শাহ মো. ইশতিয়াক আরিফ, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক মোল্লা ও পৌর মেয়র অমিতাভ বোস।
অনুষ্ঠানে ৭টি ভাষায় বঙ্গবন্ধুর ভাষণ উপস্থাপনকারী এবং ৭ মার্চের ভাষণ প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করা হয়।
আরও পড়ুন:গাজীপুরে দাম্পত্য কলহের জেরে শিশুকে হত্যার পর মাটিচাপা দেয়ার অভিযোগে এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বুধবার গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
বৃহস্পতিবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান গাজীপুর মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ ইব্রাহিম খান।
গ্রেপ্তার তাহারুল মিয়া (৩৫) পেশায় একজন রাজমিস্ত্রী। তিনি রংপুরের পীরগঞ্জ থানার জামালপুর গ্রামের ইয়াসিন আলীর ছেলে।
পুলিশের ভাষ্য, গত ১৫ মার্চ বিকেলে মহানগরীর ইসলামপুর এলাকায় সদ্য ভরাট করা মাটিতে স্থানীয় লোকজন মৃত একটি শিশুর পা দেখতে পেয়ে জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এ ফোন দেন। ফোন পেয়ে বাসন থানা পুলিশ মাটি চাপা অবস্থায় ৬ বছরের শিশু সাখাওয়াতের মরদেহ উদ্ধার করে। পরে খবর পেয়ে শিশুর বাবা জাফর আলী ঘটনাস্থলে গিয়ে শিশুটির মরদেহ শনাক্ত করেন ও এ ঘটনায় বাসন থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার পর পুলিশ সিসিটিভির ফুটেজ বিশ্লেষণ ও তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় বুধবার গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ থেকে হত্যায় অভিযুক্ত তাহারুল মিয়াকে গ্রেপ্তার করে। এর আগে, গত ১৩ মার্চ বিকেলে শিশুটি অপহরণ হয়।
পুলিশ আরও জানায়, ভুক্তভোগী শিশুর চাচাতো বোন শারমিনের সঙ্গে দুই বছর আগে তাহারুলের বিয়ে হয়। বিয়ের পর তারা ভোগড়া পেয়ারা বাগান এলাকায় ভুক্তভোগী শিশুর পরিবারের পরিবারের সঙ্গে একই বাড়িতে ভাড়ায় বসবাস করতেন। স্ত্রী শারমিনের সঙ্গে দাম্পত্য কলহের জেরে তাহারুল গত ১৩ মার্চ বিকেলে শিশুটিকে অপহরণ করে ইসলামপুর এলাকায় নিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যার পর মাটি চাপা দিয়ে চলে যান। বৃহস্পতিবার দুপুরে তাহারুলকে আদালতে তোলা হলে বিচারক কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয়।
দুই ছাত্রীর মাকে অপদস্ত করার অভিযোগ ওঠার পর বগুড়ার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ রুবাইয়া ইয়াসমিনের বিচারিক ক্ষমতা কেড়ে নেয়া হয়েছে। তাকে বদলি করে মন্ত্রণালয়ে সংযুক্ত করা হয়েছে।
বদলি সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, বগুড়ার অতিরিক্তি জেলা জজ রুবাইয়া ইয়াসমিনকে বদলি করে আইন ও বিচার বিভাগে সংযুক্ত করা হয়েছে।
বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষ ঝাড়ু দেয়াকে কেন্দ্র করে বিচারকের অষ্টম শ্রেণি পড়ুয়া মেয়ের সঙ্গে সহপাঠীদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পাল্টাপাল্টি পোস্ট দেয়াকে কেন্দ্র করে এ ঘটনার সূত্রপাত।
বগুড়া সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, “এই বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে বগুড়ার জজ আদালতের এক বিচারকের মেয়ে। বিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী শিক্ষার্থীরা পালাক্রমে শ্রেণিকক্ষ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে থাকে। সোমবার ওই বিচারকের মেয়ের শ্রেণিকক্ষ ঝাড়ু দেয়ার কথা ছিল। তবে নিজেকে বিচারকের মেয়ে পরিচয় দিয়ে সে শ্রেণিকক্ষ ঝাড়ু দিতে অস্বীকার করে। এ নিয়ে সহপাঠীদের সঙ্গে তার বাকবিতণ্ডা হয়।
“ওই রাতেই বিচারকের মেয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম মাধ্যমে মেসেঞ্জারে তার সহপাঠীদের বস্তির মেয়ে উল্লেখ করে পোস্ট দেয়। সে পোস্টে উল্লেখ করে, ‘তোরা বস্তির মেয়ে। আমার মা জজ। তোদের মায়েদের বল আমার মায়ের মতো জজ হতে।’
“ওই পোস্টে বিচারকের মেয়ের চার সহপাঠী পাল্টা উত্তর দেয়। এ নিয়ে ওই বিচারক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রাবেয়া খাতুনকে মঙ্গলবার অভিভাবকদের ডাকতে বলেন। মঙ্গলবার সকাল ১১টার দিকে প্রধান শিক্ষকের ডাকে ওই ৪ শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা বিদ্যালয়ে আসেন। সে সময় ওই বিচারক শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে জেলে দেয়ার হুমকি দেন। এ সময় দুই অভিভাবককে ওই বিচারকের পা ধরে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করা হয়।”
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সহকারী শিক্ষিকা বলেন, ‘বিচারকের মেয়ে ও কিছু শিক্ষার্থী পাল্টাপাল্টি পোস্ট দেয়াকে কেন্দ্র করে প্রধান শিক্ষিকার কক্ষে বিচার বসানো হয়। এ সময় বিচারক শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের জেলে দেয়ার হুমকি দিলে দুইজন অভিভাবক নিজে থেকেই পা ধরে ক্ষমা চান। তাদেরকে কেউ বাধ্য করেনি বা পা ধরতে বলেনি।’
এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রাবেয়া খাতুন বলেন, ‘বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল। সরকারি চাকরিজীবীদের সন্তানদের সঙ্গে বেসরকারি চাকরিজীবী বা ব্যবসায়ীদের সন্তানদের মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্ব কাজ করে।
‘যতটুকু জেনেছি সোমবার বিচারকের মেয়ের ঝাড়ু দেয়ার কথা ছিল। তবে সে তিন মাস আগেই স্কুলে আসায় এই পরিবেশ হয়তো বুঝে উঠতে পারেনি। এজন্য সে ঝাড়ু দিতে প্রথমে অস্বীকার করলেও পরে কাজটি সম্পন্ন করে। এ সময় অন্য শিক্ষার্থীরা তাকে ক্রিটিসাইজ করে। এ নিয়ে দ্বন্দ্ব শুরু হয়।’
প্রধান শিক্ষক আরও বলেন, ‘এ কারণে কয়েকজন শিক্ষার্থী ও অভিভাবককে ডাকা হয়। তাদের সঙ্গে কথা বলা হয়। কিন্তু অভিভাবকদের মাফ চাওয়াকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীরা রাস্তা অবরোধ করে। অভিভাবকেরা ভয় পেয়ে এভাবে মাফ চেয়েছেন। তাদেরকে কেউ বাধ্য করেনি।’
এদিকে অভিভাবকদের লাঞ্ছনা ও শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধের খবর পেয়ে বগুড়ার জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) নিলুফা ইয়াসমিন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হেলেনা আকতার বিদ্যালয়ে আসেন। তারা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি সুরাহা করার আশ্বাস দেন।
একইসঙ্গে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) নিলুফা ইয়াসমিনকে তদন্ত করার জন্য নির্দেশ দেন জেলা প্রশাসক।
আরও পড়ুন:হবিগঞ্জের চুনারুঘাটে স্বামী-স্ত্রী ও তাদের এক সন্তানের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার বিকেলে উপজেলার আহম্মদাবাদ ইউনিয়নের কাজীশাইল গ্রামে এ ঘটনাটি ঘটে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে চুনারুঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রাশেদুল হক জানান, স্থানীয়দের মাধ্যমে খবর পেয়ে চুনারুঘাট থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে স্বামী, স্ত্রী ও এক সন্তানের মরদেহ উদ্ধার করেছে।
তিনি জানান, এর মধ্যে স্ত্রী ও সন্তানের মরদেহ ছিল ঘরে এবং স্বামীর মরদেহ গাছে ঝুলছিল। ধারণা করা হচ্ছে, স্ত্রী-সন্তানকে খুন করে নিজে আত্মহত্যা করেছেন।
সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে ১০১ রানে অলআউট হয়ে গেছে সফরকারী আয়ারল্যান্ড। ঘরের মাঠে ওয়ানডে সিরিজ জয়ে বাংলাদেশের প্রয়োজন ১০২ রান।
সিরিজ জয়ের লক্ষ্য নিয়ে ব্যাট হাতে নেমে বাংলাদেশ দল এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ২ ওভার ৪ বলে ২৩ রান তুলেছে। উদ্বোধনী জুটি হিসেবে ক্রিজে রয়েছেন অধিনায়ক তামিম ইকবাল ও লিটন দাস।
বৃহস্পতিবার বৃষ্টির কারণে নির্ধারিত সময়ের আধ ঘণ্টা পর এই ম্যাচের টস অনুষ্ঠিত হয়। টসে জিতে ব্যাটিং বেছে নেয় সফরকারীরা।
বল হাতে মাঠে নেমে স্বাগতিকরা শুরু থেকেই আইরিশ ব্যাটসম্যানদের চেপে ধরে। ইনিংসের পঞ্চম ওভারে ওপেনার স্টেফেন ডোহেনিকে উইকেটের পেছনে ক্যাচ বানিয়ে প্রথম আঘাত হানেন পেসার হাসান মাহমুদ। ডোহেনি ব্যক্তিগত ৮ রানে ফিরে যাওয়ার পর দলীয় ২৬ রানের মধ্যেই ৪ উইকেট হারায় আয়ারল্যান্ড। ডোহেনির পর অন্য ওপেনার পল স্টার্লিং ৭ রান করেন। চার নম্বরে নামা হ্যারি টেক্টর রানের খাতাই খুলতে পারেননি। একই ওভারে লেফ বিফোরের ফাঁদে ফেলে এই দুই ব্যাটারকে ফেরান এই বাংলাদেশি পেসার।
হাসান মাহমুদের উইকেট শিকারের উৎসবে এরপর শামিল হন তাসকিন আহমেদ। ইনিংসের দশম ওভারে তার বলে স্লিপে নাজমুল হোসেন শান্তর তালুবন্দি হন আইরিশ অধিনায়ক অ্যান্ডি বলবার্নি।
পাওয়ার প্লের মাঝে ৪ উইকেট হারানো আইরিশরা কিছুটা স্বস্তি পায় পঞ্চম উইকেটে উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান লরকান টাকার ও অলরাউন্ডার কার্টিস ক্যাম্ফারের জুটিতে। পঞ্চম উইকেটে এই জুটি থেকে আসে ৫৭ বলে ৪২ রান। তবে ১৯তম ওভারের শেষ দুই বলে টাকার (২৮) ও নতুন ক্রিজে আসা জর্জ ডকরেলকে (০) ফিরিয়ে আবারও আইরিশদের ব্যাকফুটে ঠেলে দেন ইবাদত হোসেন।
২২তম ওভারে ফের জোড়া উইকেট হারায় আয়ারল্যান্ড। এ যাত্রায় অ্যান্ডি ম্যাকব্রাইন (১) ও মার্ক এডেইরকে (০) ফেরান তাসকিন।
এক প্রান্ত আগলে ব্যাট করে যাওয়া ক্যাম্ফারকে (৩৬) ইনিংসে নিজের চতুর্থ শিকার বানান হাসান। আর নিজের নবম ওভারের প্রথম বলে গ্রাহাম হিউমকে লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলে পেয়ে যান ওয়ানডে ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো ৫ উইকেট। ৮ ওভার ১ বল করে এক মেডেনসহ ৩২ রানে ৫ উইকেট পান তিনি। বাকি পাঁচ উইকেট ভাগাভাগি করে অন্য দুই পেসার তাসকিন (১০-১-২৬-৩) ও ইবাদত (৬-০-২৯-২)।
দ্বিতীয় ওয়ানডে একাদশে একটি পরিবর্তন এনেছে স্বাগতিক বাংলাদেশ। ব্যাটার ইয়াসির আলির পরিবর্তে একাদশে সুযোগ হয়েছে অলরাউন্ডার মেহেদি হাসান মিরাজের। আয়ারল্যান্ড একাদশ অপরিবর্তিত দল নিয়েই মাঠে নেমেছে।
সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে আয়ারল্যান্ডকে ১৮৩ রানে হারায় বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ওয়ানডে বৃষ্টিতে পরিত্যক্ত হয়। প্রথম ওয়ানডেতে জয়ের সুবাদে সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে আছে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ ও আয়ারল্যান্ড এ পর্যন্ত ১২ ওয়ানডেতে মুখোমুখি হয়েছে। এর মধ্যে আটটিতে জিতেছে বাংলাদেশ। এর বিপরীতে দু’টিতে জয় পেয়েছে আয়ারল্যান্ড। বাকি ২টি ম্যাচ পরিত্যক্ত হয়।
বাংলাদেশ একাদশ: তামিম ইকবাল (অধিনায়ক), লিটন দাস, নাজমুল হোসেন শান্ত, মুশফিকুর রহিম, সাকিব আল হাসান, মেহেদি হাসান মিরাজ, তৌহিদ হৃদয়, তাসকিন আহমেদ, এবাদত হোসেন, নাসুম আহমেদ ও হাসান মাহমুদ।
আয়ারল্যান্ড একাদশ: অ্যান্ড্রু বলবির্নি (অধিনায়ক), পল স্টার্লিং, স্টেফেন ডোহেনি, হ্যারি টেক্টর, লরকান টাকার, ম্যাথিউ হামফ্রেস, জর্জ ডকরেল, কার্টিস ক্যাম্পার, অ্যান্ডি ম্যাকব্রিন, মার্ক অ্যাডায়ার ও গ্রাহাম হুম।
আরও পড়ুন:নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ মডেল মসজিদের একটি কক্ষে বিস্ফোরণের ঘটনায় বিস্ফোরকের আলামত পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে র্যাবের বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞ দল।
বুধবার রাতে র্যাবের বোমা নিষ্ক্রিয়কারী দলের উপপরিচালক মেজর মশিউরের নেতৃত্বে একটি দল অত্যাধুনিক স্ক্যানার যন্ত্র নিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে এ তথ্য জানান।
এর আগে মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে মসজিদের তৃতীয় তলার একটি কক্ষে এ ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার দুপুরে মসজিদের দায়িত্বে থাকা ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ফিল্ড সুপারভাইজার আবদুল হালিমকে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে নোয়াখালী মুখ্য বিচারিক আদালতে পাঠানো হয়েছে।
গ্রেপ্তার আবদুল হালিম খাগড়াছড়ি জেলার দিঘিনালা উপজেলার বাসিন্দা। তার ব্যাগ থেকেই বিস্ফোরণ হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
বেগমগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর জাহিদুল হক রনি জানান, ওই কক্ষে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ফিল্ড সুপারভাইজার আবদুল হালিমের রাখা ব্যাগ থেকে বিস্ফোরণটি হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।
পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে হালিম দাবি, তার ব্যাগের ভেতর বডি স্প্রের একটি বোতল ছিল। এছাড়া অন্য কিছু ছিল না। বডি স্প্রের বোতল থেকে এ ধরনের বিস্ফোরণ ঘটতে পারে কি না সেটিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এজন্য ফিল্ড সুপারভাইজারকে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে।
নোয়াখালীর পুলিশ সুপার (এসপি) মো. শহীদুল ইসলাম জানান, বুধবার রাতে র্যাবের বোমা নিষ্ক্রিয়কারী দলের সদস্যরা অত্যাধুনিক স্ক্যানার যন্ত্র নিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে কিছু আলামত নিয়ে গেছেন। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর একটি প্রতিবেদন দিবেন।
তিনি আরও জানান, বিস্ফোরণস্থলে কোনো বিস্ফোরকের আলামত পাওয়া যায়নি বলে প্রাথমিকভাবে জানিয়েছে র্যাবের ওই দল।
আরও পড়ুন:ময়মনসিংহের গৌরীপুরে ভয়াবহ আগুনে অর্ধশতাধিক দোকান পুড়ে ছাঁই হয়ে গেছে। এতে কয়েক কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি ব্যবসায়ীদের।
উপজেলার শ্যামগঞ্জ মধ্যবাজারে বুধবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
ফায়ারসার্ভিস ময়মনসিংহের বিভাগীয় উপপরিচালক মো. মতিয়ার রহমান নিউজবাংলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, ‘স্থানীয়দের কাছে খবর পেয়ে নেত্রকোণার পূর্বধলা ও ময়মনসিংহ ফায়ারসার্ভিসের ১২টি ইউনিট ঘটনাস্থলে এসে রাত ১টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে আগুন নিয়ন্ত্রণের আগেই ৫০টির বেশি দোকান পুড়ে যায়। সকালে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি এখনো ধোয়া বের হচ্ছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কয়েক কোটি টাকা হবে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।’
উপপরিচালক মো. মতিয়ার রহমান বলেন, ‘মুহূর্তের মধ্যে আগুন এক দোকান থেকে অন্য দোকানগুলোতে দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছিল। বাজারে রেস্তোরাঁর পাশাপাশি, হার্ডওয়্যারের দোকানসহ বিভিন্ন দোকান রয়েছে। তবে ঠিক কোন দোকানটি থেকে আগুনের সূত্রপাত্র হয়েছে তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।’
মন্তব্য