দলের কারাবন্দি নেতাদের চিকিৎসা ব্যাহত হচ্ছে বলে দাবি করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত দপ্তর সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স। শুক্রবার নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলন তিনি এ দাবি করেন।
প্রিন্স বলেন, ‘মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহবায়ক আব্দুস সালাম, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীসহ বিএনপির কারাবন্দি শীর্ষ নেতারা দীর্ঘদিন ধরে উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, হৃদরোগসহ নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে দেশে-বিদেশে চিকিৎসা নিয়েছেন। অনেকে একাধিকবার ভয়াবহ করোনা রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন।
‘গায়েবি মামলায় কারাবন্দি বয়জ্যেষ্ঠ নেতাদের কারাবন্দি করায় তাদের চিকিৎসায় ব্যাঘাত ঘটছে। কারাগারে তারা সঠিক চিকিৎসা পাচ্ছেন না বলে জানিয়েছেন তাদের স্বজনরা।’
প্রিন্স বলেন, ‘হাজার হাজার নেতাকর্মীকে কারাবন্দি করায় বর্তমানে কারাগারে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। কারাবিধি অনুয়ায়ী অনেক নেতা ডিভিশন পাওয়ার অধিকারী হলেও অনেককে এখনও ডিভিশন দেওয়া হয়নি। কারাবন্দি নেতাদের সঙ্গে অমানবিক আচরণ করা হচ্ছে। তাদের ২৪ ঘণ্টা লক-আপে রাখা হচ্ছে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, মির্জা আব্বাস, আব্দুস সালাম, রুহুল কবির রিজভী, খায়রুল কবির খোকন, শামছুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, শহীদ উদ্দীন চৌধুরি এ্যানী, ফজলুল হক মিলন, মোস্তাক মিয়াসহ শীর্ষ নেতারা জামিন পাওয়ার অধিকারী হলেও সরকারের নির্দেশেই তাদের জামিন দেওয়া হচ্ছে না। আমি আবারও বিএনপি মহাসচিবসহ আটক সকল রাজবন্দীর মুক্তি দাবি করছি।’
তিনি বলেন, ‘আপনারা দেখেছেন গাজীপুরে মিথ্যা গায়েবি মামলায় কারাবন্দি বিএনপি নেতা আলী আজম খান মায়ের মৃত্যুর পর প্যারোলে মুক্তি পেয়ে জানাজার নামাজে অংশ নিতে গেলে তাকে ডান্ডাবেড়ি ও হাতকড়া পরানো হয়। তিনি এজাহারভুক্ত আসামি নন, এমনকি মামলার বাদী আল্লাহর কছম খেয়ে বলেছেন যে ওই ঘটনার তিনি কিছুই জানেন না। এমনকি এই মামলার বাদীও তিনি নন। পুলিশ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও গায়েবি মামলাটি দায়ের করেছে। তিনি কোনো দুর্ধর্ষ খুনের বা জঙ্গি মামলার আসামি নন।
‘বিচারাধীন এ ধরনের একটি গায়েবি মামলার আসামিকে ডান্ডাবেড়ি ও হাতকড়া পরানোর ঘটনা বেআইনি, নজিরবিহীন, সংবিধান বিরোধী ও মানবাধিকার পরিপন্থি, সরকারের ফ্যাসিবাদি চরিত্রের বহিঃপ্রকাশ। সরকারের এ ধরনের ঘৃন্য আচরণের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। এ ঘটনায় জড়িতদের শাস্তি দাবি করছি এবং অবিলম্বে আলী আজমের মুক্তি দাবি করছি।’
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে বিএনপির স্বনির্ভর বিষয়ক সম্পাদক শিরিন সুলতানা, সহ দপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু, সহ তথ্য বিষয়ক সম্পাদক আমিরুজ্জামান খান শিমুল ও দপ্তরে সংযুক্ত বিএনপি নির্বাহী কমিটির সদস্য আব্দুস সাত্তার পাটোয়ারী উপস্থিত ছিলেন।
দেশে গণতান্ত্রিক রাজনীতি ফিরিয়ে আনতে দ্রুত নির্বাচনের ব্যবস্থা নিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ।
রাজধানীর মিরপুরের পল্লবীতে বুধবার বিএনপির উদ্যোগে ডেঙ্গু প্রতিরোধে গণসচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণ-পূর্ব এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এই আহ্বান জানান।
অন্তর্বর্তী সরকারকে উদ্দেশ করে রিজভী বলেন, ‘কোথায় যেন একটা ঢিলেঢালা ভাব! এভাবে চলবে না। আপনাদের ভেতর থেকে যদি কেউ অন্য উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করতে চায়, তাহলে আমি বলে রাখতে চাই- আমরা আন্দোলন থেকে চূড়ান্ত ইস্তফা দেইনি। আমরা আন্দোলনী ঝড়ের আর্তনাদ আপনাদেরও শুনাব। যদি নিজেরা শুধরে না যান, যদি সংস্কার ও নির্বাচনের মধ্যে রহস্য থাকে তাহলে আপনাদের (অন্তর্বর্তী সরকার) প্রতিরোধের ঝড়ের নিনাদ শুনতে হবে। তাই সুষ্ঠু ধারায় গণতান্ত্রিক রাজনীতি ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে দ্রুত নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন।’
বিএনপি’র এই নেতা বলেন, ‘ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার বিএনপিসহ সমমনা রাজনৈতিক দল এবং দেশের সর্বস্তরের জনগণের সমর্থনের সরকার। এই সরকার যদি ব্যর্থ হয়, তাহলে গণতন্ত্র ও জনগণ ব্যর্থ হবে। শেখ হাসিনার মতো কুলাঙ্গারের যেন প্রত্যাবর্তন না হয়, এটাই জনগণ চায়।’
রিজভী বলেন, ‘বিএনপি একটি বৃহত্তর রাজনৈতিক দল। গত ১৬/১৭ বছর নিরন্তর সংগ্রামের মধ্য দিয়ে দলটি গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলন চাঙ্গা রেখেছে। এ কারণে পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনার রোষানলে পড়ে গুম-খুনের শিকার হতে হয়েছে অসংখ্য নেতাকর্মীকে। অনেককে হাত-পা ভেঙে পঙ্গুত্ব বরণে বাধ্য করেছে। অনেককে অন্ধ করে দিয়েছে শেখ হাসিনার পুলিশ! কিন্তু কেন যেন মনে হয়, কতিপয় উপদেষ্টা সেই বিএনপিকে একচোখে দেখার চেষ্টা করছেন।’
জনগণ ভোট দিতে উন্মুখ হয়ে আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার সফল হোক আমরা চাই। কিন্তু সফলতার নামে, সংস্কারের নামে নির্বাচন আয়োজন দীর্ঘায়িত করা হলে মানুষ তাদেরকে সন্দেহ করবে।’
বিএনপির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় নেতা নাজিম উদ্দীন আলম, সাইফুল আলম নীরব, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব আমিনুল হক, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য তাবিথ আউয়াল, যুবদল নেতা এস এম জাহাঙ্গীর, মেহবুব মাসুম শান্ত প্রমুখ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন:বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দৃষ্টান্ত উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বিএনপি ক্ষমতায় গেলে হিন্দুদের নির্যাতনের সব ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের মাধ্যমে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করবে।
দুর্গাপূজার প্রথম দিনে বুধবার ঢাকেশ্বরী মন্দিরের পূজামণ্ডপ পরিদর্শনকালে তিনি হিন্দু সম্প্রদায়ের আট দফার প্রতি বিএনপির সহমর্মিতা প্রকাশ করেন।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আপনারা যে আট দফা উল্লেখ করেছেন, আমরা তা বিবেচনা করছি। আট দফার মূল ইস্যুর প্রতি আমাদের পূর্ণ সহানুভূতি রয়েছে।
‘আমরা আপনাদের বলতে পারি যে অতীতে যেমন প্রতিটি সমস্যায় আপনাদের পাশে থেকেছি, ভবিষ্যতেও থাকব।’
আওয়ামী লীগের প্রতি পরোক্ষ ইঙ্গিত করে বিএনপির এই নেতা বলেন, দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ত্রাণকর্তা বলে দাবি করা একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলের সদস্যরা অতীতে তাদের ওপর যেসব নিপীড়ন হয়েছে তার সবগুলোর সঙ্গে জড়িত।
‘বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের জমি ও সম্পত্তি দখলের ঘটনার পেছনেও তারা (আওয়ামী লীগের লোকজন) ছিল। ভবিষ্যতে আমাদের দল সরকার গঠন করলে প্রতিটি ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা হবে।’
অনুষ্ঠানের শুরুতে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও দৈনিক কালবেলার সম্পাদক সন্তোষ শর্মা নিজ সম্প্রদায়ের আট দফা দাবি তুলে ধরে সংখ্যালঘুরা অন্যায় ও নির্যাতনের শিকার হলে বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর রাজনৈতিক পালাবদলকে খাটো করতে কিছু বিদেশি গণমাধ্যম পক্ষপাতদুষ্ট ও মিথ্যা প্রতিবেদন দিয়ে বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। আমি বলব না যে কিছুই হয়নি। তবে যেসব ঘটনা ঘটেছে তার মধ্যে কিছু ঘটনা সাম্প্রদায়িক নয়, রাজনৈতিক।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমরা ভয়াবহ দানবীয় শক্তিকে পরাজিত করে সম্ভাবনা সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছি। আমাদের একটা নতুন বাংলাদেশ নির্মাণের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে, যেখানে কোনো ভেদাভেদ থাকবে না, ধর্মান্ধতা থাকবে না, সাম্প্রদায়িকতা থাকবে না। এক বর্ণের সঙ্গে আরেক বর্ণের কোনো প্রতিশোধ-প্রতিহিংসা বা ঘৃণার কোনো রাজনীতি থাকবে না।’
তিনি বলেন, ‘পরিবর্তনের সুযোগ সবাইকে নিতে হবে। এই দেশটা কারও একার নয়। ১৯৭১ সালে আমরা স্বাধীনতা যুদ্ধ করেছিলাম…। সেই স্বাধীনতা যুদ্ধের মূল চেতনা ছিল সত্যিকার অর্থেই অসাম্প্রদায়িক, সম্পূর্ণ গণতান্ত্রিক একটা রাষ্ট্র, একটা সমাজ নির্মাণ করব। সেই লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি।’
বিএনপি মহাসচিব সাম্প্রতিক গণঅভ্যুত্থানে শাহাদাত বরণকারী দেড় হাজারের বেশি মানুষের প্রতি শ্রদ্ধা জানান এবং শহীদদের জন্য ক্ষতিপূরণ ও তাদের পরিবারকে সহায়তা দিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকে মির্জা ফখরুল হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের শারদীয় দুর্গাপূজার শুভেচ্ছা জানান।
তিনি বলেন, ‘আমার দলের পক্ষ থেকে, দলের চেয়ারপারসন ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। এই শারদীয় দুর্গাপূজা আপনাদের জীবনে অনাবিল আনন্দ নিয়ে আসুক, একটা সুন্দর ভবিষ্যৎ নির্মাণ করুক, সত্যিকার অর্থেই একটা সম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দৃষ্টান্ত হয়ে থাকুক এই কামনা করছি।’
আরও পড়ুন:উস্কানিমূলক বক্তব্য দেয়ার অভিযোগে করা মামলায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীকে খালাস দিয়েছে আদালত।
ঢাকার অতিরিক্ত মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. মাহবুবুল হকের আদালত বুধবার মামলাটি খারিজ করে তাদের খালাস দেয়।
এদিন মামলার ধার্য তারিখ ছিল। তবে এ নিয়ে মামলার বাদী এবি সিদ্দিক ২০ বার আদালতে অনুপস্থিত রয়েছেন। পরে আদালত মামলাটি গরহাজির দেখিয়ে খারিজ করে দেয় এবং আসামিদের বেখসুর খালাস দেয়।
দাঙ্গা ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে উস্কানিমূলক বক্তব্য দেয়ার অভিযোগ এনে ২০১৮ সালের ৬ আগস্ট এবি সিদ্দিকী বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। ২০২২ সালের ৯ জুন আদালত মামলাটি আমলে নেয়।
রাষ্ট্র সংস্কারে ৪১টি প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। এর মধ্যে অন্যতম বিচার বিভাগ সংস্কার, ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) বাতিল, পুলিশি আইন সংস্কার ও সরকারি চাকরিতে সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৩৫ বছর এবং অবসরের সময়সীমা ৬২ বছর করা।
গুলশানের হোটেল ওয়েস্টিনে বুধবার দুপুর ১২টার দিকে দলটির নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের এসব প্রস্তাব তুলে ধরেন।
ওই সময় দলটির আমির ডা. শফিকুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।
বক্তব্যের শুরুতেই ডা. আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, ‘জুলাই-আগস্টে যারা জীবন দিয়েছে আল্লাহ তাদের শহীদ হিসেবে কবুল করুন। আওয়ামী লীগ দেশকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেয়ার জন্য একনায়কতন্ত্র কায়েম করে। ক্ষমতা পাকাপোক্ত করার জন্য প্রশাসন, নির্বাহী বিভাগ, বিচার বিভাগ কুক্ষিগত করেছিল। হাজার হাজার মামলা দায়ের করে জুলুমের রাজনীতি কায়েম করেছিল।’
বিচার বিভাগকে নির্বাহী বিভাগ থেকে আলাদা কারার প্রস্তাব দিয়ে তাহের বলেন, ‘ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার স্বার্থে আইন সংস্কার করতে হবে। দেওয়ানি মামলা ৫ বছর ও ফৌজদারি মামলা ৩ বছরের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে হবে।’
জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা স্থায়ীভাবে অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানিয়ে জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘আওয়ামী লীগ নির্বাচনি ব্যবস্থাকে ধ্বংস করেছিল, কেয়ারটেকার সরকারব্যবস্থা বাতিল করেছিল। এখন এটি অন্তর্ভুক্ত করতে এবং ইভিএম বাতিল করতে হবে।’
পুলিশের আইন পরিবর্তন করার দাবি জানিয়ে জামায়াতের নায়েবে আমির বলেন, বদলি ও পদোন্নতির জন্য স্বাধীন কমিশন গঠন করতে হবে। কোনো সুপারিশের সুযোগ রাখা যাবে না। পুলিশ ট্রেনিংয়ের মধ্যে ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা রাখতে হবে। মারণাস্ত্রের ব্যবহার কমাতে হবে।
জামায়াত নেতা সরকারি চাকরির সুযোগ বৃদ্ধি নিয়েও কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘সরকারি চাকরিতে আবেদন বিনা মূল্যে করতে হবে। চাকরিতে বয়স সময়সীমা আগামী ২ বছরের জন্য ৩৫ ও পরবর্তীতে স্থায়ীভাবে ৩৩ বছর আর অবসরের বয়স হবে ৬২ বছর।’
সরকারি চাকরিতে প্রশ্নফাঁস বা দুর্নীতি করে যারা চাকরি পেয়েছে, তাদের নিয়োগ বাতিল করার দাবি জানায় জামায়াত। একই সঙ্গে দুদককে শক্তিশালী করে স্বাধীনভাবে কাজ করার ব্যবস্থার প্রস্তাব দেয় দলটি।
পরপর দুইবারের বেশি কেউ প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না এমন প্রস্তাব দিয়ে জামায়াতের পক্ষ থেকে বলা হয়, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে ক্ষমতার ব্যবহারে ভাগভাগি থাকতে হবে।
ওই সময় শিক্ষা ও দেশের বিনোদন খাত নিয়েও সংস্কারের কথা তুলে ধরা হয় জামায়াতের পক্ষ থেকে। এতে বলা হয়, সব শ্রেণিতে হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর বিষয় যুক্ত করতে হবে। নাটক, সিনেমা ও কন্টেন্ট ‘অশ্লীলতামুক্ত’ করতে হবে।
জামায়াতের প্রস্তাবে বলা হয়, চীন, নেপাল ও ভারতের সঙ্গে অভিন্ন নদী বিষয়ে আলোচনা এগিয়ে নিতে হবে। পররাষ্ট্র বিষয়ে সাম্য ও ন্যায্যতার ভিত্তিতে সম্পর্ক রাখতে হবে।
হজ ও ওমরার খরচ কমানোর জন্য কার্যকরী উদ্যেগ নেওয়ার কথাও বলা হয় প্রস্তাবে।
অনুষ্ঠানে জামায়াত আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেন, গণহত্যায় জড়িত যারা পালিয়ে গেছে, তাদের ফিরিয়ে এনে বিচার নিশ্চিত করতে হবে।
আগে নির্বাচন, না আগে সংস্কার, এমন প্রশ্নের জবাবে জামায়াত আমির বলেন, ‘দুটি রোডম্যাপ হবে। একটা সংস্কারের আর একটা নির্বাচনের, তবে সময় যেন অতি দীর্ঘ না হয়, আবার অতি সংক্ষিপ্ত না হয়।
‘দেশে অনেক রাজনৈতিক দল আছে। একটি বর্ণাঢ্য সংসদের জন্য জনগণকে কোনো ব্যক্তিকে না, দলকে ভোট দিতে হবে।’
আরও পড়ুন:পতিত স্বৈরাচারের কীটপতঙ্গ প্রশাসনের মধ্যে থাকলে তারা দেশকে বিপজ্জনক পরিস্থিতির দিকে নিয়ে যাবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেছেন, স্বৈরাচারের এসব কীটপতঙ্গ সরিয়ে গণতন্ত্রকামীদের পক্ষের মেধাবী লোকজন প্রশাসনে বসাতে হবে।
মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর গুলশানে বিএনপির উদ্যোগে ডেঙ্গু প্রতিরোধে গণসচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণের সময় সাংবাদিকদের তিনি একথা বলেন।
অন্তর্বর্তী সরকারকে উদ্দেশ করে রিজভী বলেন, ‘মানবতা অবশ্যই রাখবেন। কিন্তু যারা নিজেরা মানবতা দেখায়নি, যারা শেখ হাসিনাকে উদ্বুদ্ধ করেছে আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতাকে গুলি করতে, সেই স্বৈরাচারের কীটপতঙ্গ যদি প্রশাসনের মধ্যে থাকে, আপনাদের পদে পদে বাধা দেবে।
‘স্বৈরাচারের এসব কীটপতঙ্গকে অতি দ্রুত চিহ্নিত করে গণতন্ত্রকামী মানুষের পক্ষে যারা ছিল অথবা যারা নিরপেক্ষ ছিল তারা যে দলেরই সমর্থক হোক না কেন এসব মেধাবী লোকদের প্রশাসনের বিভিন্ন জায়গায় বসান।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘শেখ হাসিনার প্রত্যাবর্তন, পুনরুত্থান মানে দেশ হবে এক ভয়ংকর বধ্যভূমি। এই বধ্যভূমি যাতে তৈরি না হয় সেজন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে অবিলম্বে প্রয়োজনীয় সংস্কার করে অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের দিকে যেতে হবে।
‘সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে যে রাজনৈতিক দলই রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসবে তাদেরও অন্তরে সততার আলো নিয়ে খুব দ্রুতগতিতে কাজ করতে হবে। সেই পথ, সেই মত তৈরি করতে হবে ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারকে। অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য যে মাঠ দরকার, সেটি তাদের তৈরি করতে হবে।’
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তাপসী তাবাসসুম ঊর্মি প্রসঙ্গে রিজভী বলেন, ‘তিনি আবু সাঈদের মতো একজন মহিমান্বিত আত্মদানকারীকে বলছেন সন্ত্রাসী। তাকে বলছেন বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী। এদের মতো লোকজন প্রশাসনের বিভিন্ন জায়গায় আছে।
‘নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তো প্রশাসনের একটি অংশ; তাহলে আজকে সচিবালয় থেকে শুরু করে বিচারালয় থেকে শুরু করে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে কীভাবে এই স্বৈরাচারের দোসররা একটি বিপ্লবের সরকারকে ব্যর্থ করতে চাইবে, সেটা তো আমরা প্রত্যেকেই জানি।’
রিজভী বলেন, ‘প্রশাসনে যাদের নতুন প্রমোশন হচ্ছে তাদের উদ্দেশে বলতে চাই- আওয়ামী প্রশাসন জনগণের টাকা লুট করে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছে। আপনারা বঞ্চিত ছিলেন। আপনাদের চিহ্নিত করা হয়েছিল বিরোধী দলের লোক হিসেবে। এখন আপনারা যদি মনে করেন এতদিন বঞ্চিত ছিলাম এখন ভাগ-বাঁটোয়ারা করে সেটি পূরণ করব, তাহলে কিন্তু এই জাতি চিরদিনের জন্য অন্ধকারে চলে যাবে।’
বিএনপির স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম, নির্বাহী কমিটির সদস্য নাজিম উদ্দীন আলম, স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা ডা. জাহিদুল কবির প্রমুখ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন:শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে সনাতন ধর্মাবলম্বীসহ দেশের সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়েছে আওয়ামী লীগ।
দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে মঙ্গলবার দেয়া পোস্টে লেখা হয়, ‘আসন্ন শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে সনাতন ধর্মের মানুষসহ দেশের সবাইকে শুভেচ্ছা। সমস্ত ভয়ভীতি, হুমকি, চোখরাঙানি মোকাবিলা করে দেশের অতীত ঐতিহ্য রক্ষা করে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বাংলাদেশে দুর্গাপূজা পালিত হবে বলে আমরা আশা করছি।
‘এবারকার দুর্গাপূজা এসেছে বাংলাদেশে একটি ভীতিকর অরাজক পরিস্থিতির মধ্যে। সামগ্রিক পরিস্থিতি পূজার অনুকূলে না থাকায় অনেকেই এবার পূজা অনুষ্ঠান বাতিল করে দিয়েছে।’
পোস্টে উল্লেখ করা হয়, ‘সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কিছু জায়গায় প্রতিমা ভাঙচুরের মতো জঘন্য ঘটনা ঘটেছে, পূজা কমিটির কাছে লক্ষ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবি করেছে। পূজার সময়ে মাইক বাজানো যাবে না বলে হুঁশিয়ারি করেছে, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে নিষেধাজ্ঞা দিচ্ছে। এ রকম নানাবিধ ভয়ভীতির মধ্য দিয়ে অতিক্রম করতে হচ্ছে প্রতিটি সনাতন ধর্মের মানুষকে।
‘এগুলো ঘটছে প্রকাশ্য দিবালোকে প্রশাসনের সম্মুখেই। এগুলো দেখভাল করার মতো কেউ নেই। ফলে সনাতন ধর্মের মানুষেরা এক ধরনের আতঙ্কের মধ্যে অবস্থান করছে। আর এই আতঙ্কের প্রভাব সুদূরপ্রসারী। এ রকম পরিস্থিতিতে অনেকে জীবন বাঁচাতে দেশত্যাগে থেকে থেকে বাধ্য হচ্ছে।’
শুভেচ্ছা বার্তায় দাবি করা হয়, ‘এ দেশের হিন্দু সম্প্রদায় মনে করে পূজা চলার সময়ে মন্দির কিংবা পূজারি আক্রান্ত হতে পারে। ১৯৪৭-এর দেশবিভাগের প্রাক্কালে যে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছিল, এবারের ঘটনার মাত্রা তার চেয়েও ভয়াবহ। ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াতও ক্ষমতাসীন হয়ে এ দেশের সনাতন ধর্মের মানুষের ওপর হিংস্র আক্রমণ করেছিল। এবারের ঘটনা সেই ভয়াবহ দিনগুলোর কথাই স্মরণ করিয়ে দেয়।
‘সরকারের প্রত্যক্ষ মদদে এসব নারকীয় ঘটনা ঘটছে। আবার তারাই মন্দির পাহারা দেয়ার কথা বলছে। এটিও এ দেশের সনাতন ধর্মের মানুষের সঙ্গে এক ধরনের প্রহসন। বহুবিধ প্রতিকূল অবস্থা মোকাবিলা করে সনাতন ধর্মের মানুষ যারা এদেশে রয়ে গেছে তারা নিজেদের উদ্যোগেই পূজা করেছে। কখনো কোনো পাহারাদারের প্রয়োজন পড়েনি।’
পোস্টে আরও বলা হয়, ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সভাপতি বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বিশ্বাস করেন যে, ধর্ম যার যার, উৎসব সবার। আওয়ামী লীগ সর্বদা অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের অবিতর্কিত মূল্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধাশীল এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনির্মাণে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছে।
‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সব পর্যায়ের নেতা-কর্মীসহ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী প্রতিটি মানুষের প্রতি বাংলাদেশের ঐতিহ্যগত সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি অক্ষুণ্ন রাখতে এবং কাজ করার আহ্বান রইল।’
আরও পড়ুন:কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রামে ক্ষমতার পালাবদলের পর এক আওয়ামী লীগ নেতার লিজ নেয়া কোটি টাকার সরকারি জলমহাল দখল করে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে বাজিতপুর উপজেলা বিএনপির প্রভাবশালী এক নেতার বিরুদ্ধে।
জেলা শহরের একটি আবাসিক হোটেলে সোমবার বিকেলে কয়েকজন বিএনপি নেতাকে সঙ্গে নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে এমন অভিযোগ করেন অষ্টগ্রাম উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা মোস্তাক আহমেদ কমল।
ওই সময় বাজিতপুর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনির, হুমাইপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আবদুর রাশিদ ও সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আদেল উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে মোস্তাক আহমেদ কমল অভিযোগ করেন, তিনি অষ্টগ্রাম উপজেলার দেওঘর জলমহালটি এক বছরের জন্য ৭৩ লাখ ২৫ হাজার ৪৪১ টাকায় লিজ নেন। ভাটিনগর মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সভাপতি অনিতা রানীর নামে জলমহাল লিজ নেয়া হলেও সব টাকা পরিশোধ করেন আওয়ামী লীগ নেতা মোস্তাক আহমেদ কমল, তবে জলমহালটি পরিচালনা করছিলেন অনিতা রানীসহ ছয়জন মিলে।
কমলের অভিযোগ, হঠাৎ করে সরকার পতনের সুযোগ নিয়ে অনিতা রানী দাসের যোগসাজশে হুমাইপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও বাজিতপুর উপজেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি হেলাল খান জলমহালটি দখল করে নেন।
মিথ্যা মামলা দায়েরসহ নানাভাবে হুমকি দেয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন মোস্তাক আহমেদ কমল।
জলমহালের মালিকানা উদ্ধারে প্রশাসনের কাছে আবেদন করাসহ উপজেলা বিএনপির নেতাদের সহযোগিতা নেয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত বিএনপি নেতা হেলাল খানের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও সেগুলো রিসিভ না হওয়ায় তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি। এ ছাড়া অনিতা রানীর নম্বরটিও বন্ধ পাওয়া যায়।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য