× হোম জাতীয় রাজধানী সারা দেশ অনুসন্ধান বিশেষ রাজনীতি আইন-অপরাধ ফলোআপ কৃষি বিজ্ঞান চাকরি-ক্যারিয়ার প্রযুক্তি উদ্যোগ আয়োজন ফোরাম অন্যান্য ঐতিহ্য বিনোদন সাহিত্য ইভেন্ট শিল্প উৎসব ধর্ম ট্রেন্ড রূপচর্চা টিপস ফুড অ্যান্ড ট্রাভেল সোশ্যাল মিডিয়া বিচিত্র সিটিজেন জার্নালিজম ব্যাংক পুঁজিবাজার বিমা বাজার অন্যান্য ট্রান্সজেন্ডার নারী পুরুষ নির্বাচন রেস অন্যান্য স্বপ্ন বাজেট আরব বিশ্ব পরিবেশ কী-কেন ১৫ আগস্ট আফগানিস্তান বিশ্লেষণ ইন্টারভিউ মুজিব শতবর্ষ ভিডিও ক্রিকেট প্রবাসী দক্ষিণ এশিয়া আমেরিকা ইউরোপ সিনেমা নাটক মিউজিক শোবিজ অন্যান্য ক্যাম্পাস পরীক্ষা শিক্ষক গবেষণা অন্যান্য কোভিড ১৯ শারীরিক স্বাস্থ্য মানসিক স্বাস্থ্য যৌনতা-প্রজনন অন্যান্য উদ্ভাবন আফ্রিকা ফুটবল ভাষান্তর অন্যান্য ব্লকচেইন অন্যান্য পডকাস্ট বাংলা কনভার্টার নামাজের সময়সূচি আমাদের সম্পর্কে যোগাযোগ প্রাইভেসি পলিসি

বাংলাদেশ
How is the new committee of Chhatra League?
google_news print-icon

কেমন হলো ছাত্রলীগের নতুন কমিটি

কেমন-হলো-ছাত্রলীগের-নতুন-কমিটি
সাবেকদের সঙ্গে নিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান ছাত্রলীগের নবনির্বাচিত নেতারা। ছবি: ইয়াসিন কবির জয়/ ফোকাস বাংলা
নতুন কমিটি কেমন হয়েছে জানতে চাইলে ঢাবির বিজয় একাত্তর হল ছাত্রলীগের সভাপতি সজিবুর রহমান সজিব বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, দেশরত্ন শেখ হাসিনা যোগ্যদের থেকে অধিকতর যোগ্য নেতৃত্ব নিয়ে এসেছেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগে। সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক উভয়ের বিভিন্ন ইউনিটে নেতৃত্ব দেয়ার অভিজ্ঞতা রয়েছে এবং তারা যেকোনো প্রকার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সক্ষম।’

ছাত্রলীগের ৩০তম সম্মেলনের ১২ দিন পর মঙ্গলবার রাতে সংগঠনটির নতুন নেতাদের নাম ঘোষণা করেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

নতুন কমিটিতে ছাত্রলীগ সভাপতি হয়েছেন সাদ্দাম হোসেন। আর সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান।

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক কেন্দ্র ছাড়াও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি), ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতাদের নাম ঘোষণা করেন।

এবার কেন্দ্র ও ঢাবি ছাত্রলীগের নেতৃত্বে আসা চারজনের তিনজনই ডাকসুর নির্বাচিত ছাত্র প্রতিনিধি ছিলেন।

ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ছিলেন ডাকসুর সহসাধারণ সম্পাদক। ঢাবি ছাত্রলীগের সভাপতি মাজহারুল কবির শয়ন ডাকসুর সাহিত্য সম্পাদক আর সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত ডাকসুর সদস্য ছিলেন। শেখ ইনান ছিলেন না ডাকসুতে।

নতুন কমিটি বুধবার ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানিয়ে তাদের কার্যক্রম শুরু করে। আর বৃহস্পতিবার বিকেলে নতুন কমিটির শীর্ষ পদধারীরা বিদায়ী কমিটির নেতাদের নিয়ে ছাত্রলীগের সাংগঠনিক অভিভাবক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।

কেমন হলো ছাত্রলীগের নতুন কমিটি
ছাত্রলীগের নতুন কমিটি বুধবার ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানিয়ে তাদের কার্যক্রম শুরু করে। ছবি: ইয়াসিন কবির জয়/ফোকাস বাংলা

ছাত্রলীগের নতুন নেতৃত্ব পেয়ে সব পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা উচ্ছ্বসিত। কমিটি ঘোষণার রাতে ঢাবির বিভিন্ন হল ইউনিটের নেতা-কর্মীরা নতুন নেতাদের স্বাগত জানিয়ে আনন্দ মিছিল করেন।

কী বলছেন ছাত্রলীগ নেতারা

নতুন কমিটি কেমন হয়েছে জানতে চাইলে ঢাবির বিজয় একাত্তর হল ছাত্রলীগের সভাপতি সজিবুর রহমান সজিব বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, দেশরত্ন শেখ হাসিনা যোগ্যদের থেকে অধিকতর যোগ্য নেতৃত্ব নিয়ে এসেছেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগে। সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক উভয়ের বিভিন্ন ইউনিটে নেতৃত্ব দেয়ার অভিজ্ঞতা রয়েছে এবং তারা যেকোনো প্রকার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সক্ষম।

‘তাদের নেতৃত্বে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ আরও বেশি উদ্যমী ও গতিশীল হবে বলে আমার বিশ্বাস।’

একই হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আবু ইউনুস বলেন, ‘বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নেতৃত্বের ব্যাটন দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত ছাত্রনেতাদের হাতে উঠেছে। আমরা বিশ্বাস করি, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র ও ঘোষণাপত্রের আলোকে ছাত্রসমাজের কাঙ্ক্ষিত প্রত্যাশা পূরণে নতুন নেতৃত্বের পূর্ণ সক্ষমতা রয়েছে।’

ঢাবি ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাফওয়ান চৌধুরী বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা যে নেতৃত্ব আমাদের উপহার দিয়েছেন, তার মাধ্যমে তৃণমূল থেকে কেন্দ্র সকল পর্যায়ে প্রাণের সঞ্চার হয়েছে। নবনির্বাচিত নেতৃত্বের কাছে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে স্মার্ট ছাত্রলীগই আমাদের প্রত্যাশা।’

ঢাবি ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আশিকুর রহমান অমি বলেন, ‘জননেত্রী শেখ হাসিনা যে কমিটি দিয়েছে, সেই কমিটি অবশ্যই নান্দনিক এবং প্রগতিশীল। কেন্দ্র, ঢাবি এবং মহানগর ইউনিটগুলোতে পরীক্ষিত নেতারাই দায়িত্বে এসেছেন।’

তিনি বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ২০৪১ রূপকল্প বাস্তবায়ন এবং যে ডেল্টা প্ল্যান, সেটিকে সফল এবং স্বার্থক করার জন্য বর্তমান ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ভাই সবচেয়ে বেশি যোগ্য। আর সাধারণ সম্পাদক শেখ ইনান ভাই উনিও এর আগে যখন সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন, তখন দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন।’

অমি বলেন, ‘ছাত্রলীগের বর্তমান নেতৃত্ব কীভাবে শিক্ষার্থীসহ সব মহলের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকতে হয়, সেটি জানে। শিক্ষার্থীদের স্বার্থ নিয়ে তারা ইতোপূর্বে কাজও করেছে। এই কমিটিই সবচেয়ে বেশি শিক্ষার্থীবান্ধব।

‘বর্তমান কমিটি ছাত্রলীগের যে রাজনৈতিক দর্শন, সেই দর্শনের ওপর কাজ করবে বলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি। তাদের আগামীর কর্মপরিকল্পনা দেশরত্ন শেখ হাসিনার হাতকে আরও বেশি শক্তিশালী এবং মসৃণ করা। সর্বোপরি ছাত্রলীগকে আরও বেশি নান্দনিক করা।’

বিজয় একাত্তর হল ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল উদ্দীন বলেন, ‘ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটি সময় এবং যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে যে নতুনত্বের পথে বাংলাদেশ হাঁটছে, সেটার উপযোগী। জননেত্রী শেখ হাসিনার মিশন, ভিশন বাস্তবায়ন এবং উনি যে স্মার্ট বাংলাদেশ ঘোষণা দিয়েছেন, সেটার জন্য যে রকম দক্ষ, সৃজনশীল রাজনৈতিক কর্মী দরকার, বর্তমান নেতৃত্ব সেই ধরনের রাজনৈতিক জ্ঞানের প্রমাণ দেখিয়েছে।

‘আমি মনে করি তাদের হাত ধরে ছাত্রলীগের প্রতিটি ইউনিটে সৃজনশীল ও স্মার্ট নেতৃত্বের বিকাশ ঘটবে।’

অন্য ছাত্র সংগঠনের নেতাদের ভাষ্য

ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা বলেন, ‘ছাত্রলীগের নতুন কমিটিতে সভাপতির (সাদ্দাম হোসেন) দায়িত্বে এখন যিনি এসেছেন, তিনি একজন চিহ্নিত সন্ত্রাসী। ২০১৯ সালে ডাকসু ভবনে আমাদের ওপর যে হামলা হয়, সেই হামলায় তিনি নেতৃত্ব দিয়েছেন। সে সময় আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্ব নাসিম এবং নানক সাহেব এসে বলেছেন, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এই ঘটনার বিচার করা হবে, কিন্তু আমরা এখন দেখলাম, তাকে আরও পুরষ্কৃত করা হলো। আর যিনি সাধারণ সম্পাদক, তিনি ক্যাম্পাসের গণতান্ত্রিক আন্দোলনে বিভিন্নভাবে বাধা দিয়েছেন।

‘সর্বশেষ ৭ অক্টোবর রাজু ভাস্কর্যে আমাদের প্রোগ্রামে তিনি হামলা করেছেন, তবে আমার মতে, ছাত্রলীগে বর্তমানে যে নতুন নেতৃত্ব এসেছে, তারা অবশ্যই যারা নেতৃত্বের দৌড়ে প্রতিযোগিতায় ছিলেন, তাদের মধ্য থেকে তুলনামূলক যোগ্য।’

নতুন নেতাদের কাছে প্রত্যাশা জানতে চাইলে বিন ইয়ামিন বলেন, ‘তাদের প্রতি আমাদের প্রত্যাশা থাকবে অতীতে তারা যাই করেছেন, তা ভুলে গিয়ে ছাত্রলীগে নতুন ডাইমেনশন তারা দেবেন।’

ছাত্রদল সভাপতি রওনাকুল ইসলাম শ্রাবণ বলেন, ‘সাধারণ শিক্ষার্থীরা নতুন নেতৃত্বের কাছে যেই প্রত্যাশা করে, শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি হিসেবে আমরাও তাদের কাছে সেটি প্রত্যাশা করি, তবে ছাত্রলীগ শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের আন্দোলন করবে বা তাদের পাশে থাকবে, সেই প্রত্যাশা আমরা ছাত্রলীগের কাছে করি না।

‘কারণ আমরা ভালো করেই জানি ছাত্রলীগ তাদের মাদার সংগঠন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। তাদের সাংগঠনিক নেত্রী যাই বলবেন, সেটিই তারা করবেন। গণতান্ত্রিক স্টাইলে তাদের কাছে প্রত্যাশা করে আমরা এর আগে বহুবার প্রতারিত হয়েছি।’

শ্রাবণ বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব ক্যাম্পাসে ক্রিয়াশীল সব ছাত্র সংগঠনের সহাবস্থান নিশ্চিত এবং ডাকসু নির্বাচন দেয়ার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে নতুন কমিটির দ্রুত উদ্যোগ আমরা দেখতে চাই। এসব উদ্যোগ যদি তারা দেখাতে পারে, তাহলে আমরা তাদের কাছে প্রত্যাশা করব।’

নতুন কমিটি কেমন হয়েছে জানতে চাইলে শ্রাবণ বলেন, ‘ক্যাম্পাসে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতারা একসঙ্গে বসে আড্ডা দেয়া বা কথা বলার সেই রাজনৈতিক সৌজন্য এখন তো নেই। আমরা যদি একসঙ্গে আড্ডা বা ডিবেট করতে পারতাম, তাহলে তাদের সম্পর্কে আমাদের ব্যক্তিগত মন্তব্য করার সুযোগ থাকত।

‘যেহেতু তারা সেই সৌজন্য বা কালচার রাখেনি, তাই তাদের সম্পর্কে আমাদের জানাশোনা নেই। সুতরাং এই বিষয়ে মন্তব্য করারও সুযোগ নেই।’

ছাত্রলীগের সর্বশেষ কমিটির তুলনায় নতুন কমিটি ভালো হয়েছে বলে মনে করছেন বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের একাংশের সভাপতি ফয়েজ উল্যাহ।

তিনি বলেন, ‘ছাত্রলীগের বিগত কমিটিগুলো শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিল। এবার যারা কমিটিতে এসেছেন, তাদের অনেকেই আগে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন অধিকার আদায়ের আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন। তাদের কাছে প্রত্যাশা থাকবে, তারা যেন এই ধারা অব্যাহত রাখেন।’

আরও পড়ুন:
বগুড়ায় ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের হাতাহাতি
অনলাইন জুয়ারি সন্দেহে ছাত্রলীগ নেতাসহ ৬ জন পুলিশ হেফাজতে
জবি ছাত্রলীগ সভাপতির বিরুদ্ধে জমি দখলের অভিযোগ
বিচারকের স্বাক্ষর জালিয়াতি, ছাত্রলীগ নেতা গ্রেপ্তার
ঢাবিতে ৯ জনকে পিটিয়ে পুলিশে দেয়ার অভিযোগ, ছাত্রলীগের অস্বীকার

মন্তব্য

আরও পড়ুন

বাংলাদেশ
Fear of suffering on the roads of Sirajganj during the Eid journey

ঈদযাত্রায় সিরাজগঞ্জের সড়কে ভোগান্তির শঙ্কা

ঈদযাত্রায় সিরাজগঞ্জের সড়কে ভোগান্তির শঙ্কা মহাসড়কে সংস্কারকাজ যথাসময়ে শেষ না হলে ঈদযাত্রায় সিরাজগঞ্জে এসে ভোগান্তির শিকার হতে পারেন যাত্রীরা। ছবি: নিউজবাংলা
উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম মহাসড়ক। এ মহাসড়ক দিয়ে হাটিকুমরুল গোলচত্বর হয়ে উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গের ২২টি জেলার যানবাহন চলাচল করে। স্বাভাবিক সময়ে দিনে ২০ থেকে ২৫ হাজার যানবাহন চলাচল করলেও ঈদে এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় দুই থেকে তিন গুণ। অতিরিক্ত যানবাহনের চাপ আর রাস্তা প্রশস্তকরণ ও সংস্কারকাজে ধীরগতি থাকার কারণে সৃষ্টি হয় যানজট। আর এতে যাত্রীদের পোহাতে হয় দুর্ভোগ ও ভোগান্তি।

ঈদে প্রতি বছরই উত্তরবঙ্গের ঘরমুখো মানুষের চাপ থাকে সিরাজগঞ্জের মহাসড়কে। ব্যতিক্রম নয় এবারও, কিন্তু মহাসড়কে সংস্কারকাজ এখনও শেষ না হওয়ায় ঈদযাত্রায় ভোগান্তির শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম মহাসড়ক। এ মহাসড়ক দিয়ে হাটিকুমরুল গোলচত্বর হয়ে উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গের ২২টি জেলার যানবাহন চলাচল করে।

স্বাভাবিক সময়ে দিনে ২০ থেকে ২৫ হাজার যানবাহন চলাচল করলেও ঈদে এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় দুই থেকে তিন গুণ। অতিরিক্ত যানবাহনের চাপ আর রাস্তা প্রশস্তকরণ ও সংস্কারকাজে ধীরগতি থাকার কারণে সৃষ্টি হয় যানজট। আর এতে যাত্রীদের পোহাতে হয় দুর্ভোগ ও ভোগান্তি।

বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম থেকে হাটিকুমরুল হয়ে চান্দাইকোনা মহাসড়কে ৫০ কিলোমিটারজুড়ে ছোট-বড় মিলে ২০টি স্থান সংস্কারের জন্য প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ১৪টি ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে যানজটের বেশি আশঙ্কা রয়েছে। এমন বাস্তবতায় প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এ মহাসড়কের বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম পাড় থেকে চান্দাইকোনা পর্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ২০ রোজার মধ্যে এসব ঝুঁকিপূর্ণ স্থান সংস্কার করতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে তাগিদ দেয়া হয়েছে।

সরেজমিনে যা দেখা গেল

বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম থেকে হাটিকুমরুল হয়ে চান্দাইকোনা মহাসড়কে ৫০ কিলোমিটারজুড়ে বিভিন্ন অংশে খানাখন্দ রয়েছে। বেশ কিছু লেনের অবস্থা ভালো নয়। এ ছাড়াও নির্মাণাধীন ফোর লেনের অনেক স্থান এক লেনে গিয়ে মিলিত হওয়ায় তৈরি হয়েছে বাঁক। সেসব জায়গায় গাড়িগুলো স্বাভাবিক গতিতে চলতে পারছে না।

এ মহাসড়কে কোনাবাড়ী, ঝাঈল, গোলচত্বর ফুড ভিলেজ, নলকা, পাচলিয়া, মুলিবাড়ি, সয়দাবাদ, চান্দাইকোনা ব্রিজ, জমজম হোটেল, হাটিকুমরুল, ভুইয়াগাতী, সাহেবগঞ্জ সড়ক রয়েছে বেশ ঝুঁকিতে। এ ছাড়াও নবনির্মিত নলকা সেতুর উত্তরের লেন খুলে দিলেও ঢাকামুখী লেন বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।

ঢাকামুখী লেন বন্ধ করে দেয়ায় ঝুঁকিপূর্ণ পুরাতন সেতু দিয়েই চলাচল করছে যানবাহন। এতে যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।

কী বলছেন চালকরা

সিরাজগঞ্জে মহাসড়কে চলাচলকারী যানবাহনের কয়েকজন চালক বলছেন, সড়কের বেশ কিছু অংশ সংস্কার করলে যানজট নিরসন কিছুটা হলেও সম্ভব।

মহাসড়কে চলাচলকারী জয়পুরহাট থেকে ঢাকাগামী ট্রাকের চালক ওসমান জামান বলেন, ‘এই মহাসড়কে বেশ কিছু জায়গায় খানাখন্দে ভরা। গাড়ি নিয়ে চলার সময় আমাদের সমস্যায় পড়তে হয়।’

ঈদযাত্রায় সিরাজগঞ্জের সড়কে ভোগান্তির শঙ্কা

বাসচালক জামাল শেখ জানান, যানজট নিরসনের জন্য চালকদের সঠিকভাবে গাড়ি চালাতে হবে। পাশাপাশি ঈদের সময় প্রশাসনকে ভূমিকা রাখতে হবে।

বগুড়া থেকে আসা বাসচালক হুমায়ুন ইসলাম জানান, এক সড়ক থেকে অন্য সড়কে যাওয়ার সময় গাড়ি বাঁক নিতে হচ্ছে, যে কারণে গতি কমে আসছে। আর এই মহাসড়কে এক মিনিটের ধীরগতি হলেই পেছনে ৪০ থেকে ৫০টি গাড়ি আটকে পড়ে।

যে ব্যবস্থার কথা জানালেন সংশ্লিষ্টরা

ঈদকে সামনে রেখে যানজট মোকাবিলায় জেলা পুলিশ, সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন মহাসড়কে চলমান প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। বেশ কিছু স্থান নির্ধারণ করে তারা এরই মধ্যে সংস্কারকাজ শুরু করেছেন।

হেগো-মির আকতার জেভির প্রকল্প ম্যানেজার এখলাস উদ্দিন বলেন, ‘সংস্কারকাজ চলছে। আশা করছি আগামী ২০ রোজার মধ্যে কাজ শেষ হবে। তখন আশা করা যাচ্ছে এই সড়কে আর যানযট হবে না।

‘এ ছাড়াও যানজট রোধে এই সড়কের ৫টি ব্রিজ ঈদের আগেই খুলে দেয়া হবে।’

সিরাজগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার আরিফুর রহমান মন্ডল বলেন, ‘ঈদযাত্রায় যাত্রী দুর্ভোগ কমানোর জন্য সওজের সাসেক-২ প্রকল্পের কর্মকর্তা ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রকৌশলীদের সঙ্গে আলোচনা করে ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলো সংস্কারে তাগিদ দেয়া হয়েছে।

‘১৪টি অংশের প্রায় ২০টি স্থান তাদের নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলো সংস্কার হলে যানজটের সম্ভাবনা কমে যাবে।’

আরও পড়ুন:
সিরাজগঞ্জে আলাদা সড়ক দুর্ঘটনায় দুজন নিহত
কম্বল ফেরত দিলেন চেয়ারম্যানরা
প্রকৌশলীর মতে ক্ষতির অঙ্ক ১০ হাজার, পিবিআই বলল দুই লাখ
যমুনায় বিলীন স্পার বাঁধের ১২২ মিটার
ঈদযাত্রায় নিহত ৪৪০, আহত ৭৯১

মন্তব্য

বাংলাদেশ
Industrial oxygen going to medically endangered patients

ইন্ডাস্ট্রিয়াল অক্সিজেন যাচ্ছে মেডিক্যালে, ঝুঁকিতে রোগীরা

ইন্ডাস্ট্রিয়াল অক্সিজেন যাচ্ছে মেডিক্যালে, ঝুঁকিতে রোগীরা অক্সিজেনের সিলিন্ডার। ছবি: নিউজবাংলা
খুলনায় প্রতি ঘনমিটার (১ ঘনমিটার সমান ১ হাজার লিটার) মেডিক্যাল অক্সিজেনের মূল্য হলো ৫২-৫৫ টাকা। আর ইন্ডাস্ট্রিয়াল অক্সিজেনের মূল্য হলো তার অর্ধেক, প্রতি ঘনমিটার ২০-২৫ টাকা। মেডিক্যালের চেয়ে ইন্ডাস্ট্রিয়াল অক্সিজেনের দাম কম হওয়ায় হাসপাতালগুলোতে রোগীদের জন্য এই অক্সিজেন বিক্রি করা হচ্ছে।

সংকটাপন্ন রোগীদের জন্য খুলনার অধিকাংশ বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে ব্যবহার করা হচ্ছে অপরিশোধিত ইন্ডাস্ট্রিয়াল অক্সিজেন। মেডিক্যাল অক্সিজেনের থেকে দাম কম হওয়ায় অধিক লাভের আশায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জেনে বুঝেই রোগীদের এই অক্সিজেন দিচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কম বিশুদ্ধ ইন্ডাস্ট্রিয়াল অক্সিজেনে গ্রহণের ফলে রোগীদের শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিকল হয়ে যেতে পারে। এমনকি ঘটতে পারে মৃত্যুও।

খুলনা মহানগরীর কেডিএ অ্যাভিনিউ রোডের রাশিদা মেমোরিয়াল হাসপাতালে গত সোমবার গিয়ে দেখা যায়, এক ব্যক্তি সিলিন্ডারে করে অক্সিজেন নিয়ে এসেছেন। এটি কোনো কোম্পানির অক্সিজেন তার কোন তথ্য সিলিন্ডারের গায়ে লেখা ছিল না।

জানতে চাইলে আনোয়ার হোসেন নামের ওই ব্যক্তি বলেন, আমি নিজে অক্সিজেন বিক্রি করি না। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আমার সঙ্গে মৌখিক চুক্তি করে। তাদের ফাঁকা সিলিন্ডারগুলো আমি রিফিল করে নিয়ে আসি।

তিনি জানান, খুলনা নগরীর কয়লা ঘাট এলাকায় অবস্থিত ‘রকি অক্সিজেন’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান থেকে এই অক্সিজেন রিফিল করা হয়। শহরের এমন দশটি হাসপাতালে এই অক্সিজেন তারা সরবরাহ করেন।

রাশিদা মেমোরিয়াল হাসপাতালের পাশেই রয়েছে কেয়ার ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও হাসপাতাল। সেখানে গিয়েও দেখা যায়, সিলিন্ডারের গায়ে কোনো কোম্পানি ট্যাগ নেই।

নাম না প্রকাশ করার শর্তে এক কর্মকর্তা বলেন, কোথা থেকে হাসপাতালে বা ক্লিনিকগুলোতে অক্সিজেন আসে তা মালিকপক্ষ জানে না। কিছু ব্যক্তি আছেন যারা হাসপাতালে অক্সিজেন সরবরাহ করেন, তাদের সঙ্গে মৌখিক চুক্তি করলে নিয়মিত সিলিন্ডারগুলো রিফিল করে দিয়ে যান। তারা মেডিক্যাল অক্সিজেন দিলেন নাকি ইন্ডাস্ট্রিয়াল অক্সিজেন দিলেন তা কেউ খোঁজ নেন না। শহরের অধিকাংশ বেসরকারি হাসপাতালে এভাবেই চলছে।

খুলনায় প্রতি ঘনমিটার (১ ঘনমিটার সমান ১ হাজার লিটার) মেডিক্যাল অক্সিজেনের মূল্য হলো ৫২-৫৫ টাকা। আর ইন্ডাস্ট্রিয়াল অক্সিজেনের মূল্য হলো তার অর্ধেক, প্রতি ঘনমিটার ২০-২৫ টাকা। মেডিক্যালের চেয়ে ইন্ডাস্ট্রিয়াল অক্সিজেনের দাম কম হওয়ায় হাসপাতালগুলোতে রোগীদের জন্য এই অক্সিজেন বিক্রি করা হচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, খুলনাতে ছয়টি প্রতিষ্ঠান থেকে অক্সিজেন সরবরাহ করা হয়। এর মধ্যে তিন প্রতিষ্ঠানের বৈধ কাগজপত্র রয়েছে। যেগুলো হলো- খুলনা অক্সিজেন কোম্পানি, লিন্ডে বাংলাদেশ ও স্পেকট্রা অক্সিজেন লিমিটেড। খুলনা অক্সিজেন কোম্পানি নামের প্রতিষ্ঠানটি খুলনাতেই মেডিক্যাল অক্সিজেন উৎপাদন করে। অন্যদিকে লিন্ডে ও স্পেকট্রার খুলনাতে ডিপো রয়েছে।

এছাড়া বাকি তিনটি কোম্পানির কোন বৈধ কাগজপত্র নেই। যেগুলো হলো- মহানগরীর জয় বাংলার মোড়ে অবস্থিত এসবি অক্সিজেন, কয়লা ঘাট এলাকায় অবস্থিত রকি অক্সিজেন ও বাগেরহাট জেলার ফকিরহাটে গ্যাস এবং গিয়ার বাংলাদেশ।

খুলনার বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোতে সব থেকে বেশি অক্সিজেন সরবরাহ করে রকি অক্সিজেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তাদের শুধুমাত্র ফায়ার সার্ভিসের অনুমোদন রয়েছে। তবে ওষুধ প্রশাসন ও বিস্ফোরক অধিদপ্তরসহ অন্যান্য দপ্তরের কোনো অনুমোদন নেই।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ওই প্রতিষ্ঠানটি করা হয়েছে একেবারেই ঘনবসতিপূর্ণ এলাকার মধ্যে। তিন শ গজ দুরেই রকি ডক ইয়ার্ড। সেখানে প্রতিনিয়ত কাজ চলে জাহাজ নির্মাণের। অক্সিজেন কোম্পানির ঠিক বিপরীত পাশে এক শ’ গজ দূরেই একটি খাবার হোটেল। সেখানে তিন বেলা রান্নার কাজ চলে। দশ হাত দূরে রয়েছে একটি স’মিল। সেখানে স্বয়ংক্রিয় মেশিনে দিনরাত কাঠ চেরাই চলছে। এর কোনো একটি উৎস থেকে আগুনের অংশ যদি অক্সিজেন কোম্পানিতে লাগে তবে ঘটে যেতে পারে ভয়াবহ দুর্ঘটনা।

এ তুলনায় এসবি অক্সিজেন প্ল্যান্ট অনেকটাই নিরাপদ। এটির আশপাশে কোনো ঘনবসতি নেই । তবে কোনো অনুমতি ছাড়াই সিলিন্ডার রিফিল করছে প্রতিষ্ঠানটি

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে রকি অক্সিজেনের মালিক মো. খুরশিদ আলম বলেন, ‘আমার সব প্রতিষ্ঠানের অনুমতি রয়েছে। ফায়ার সার্ভিস, ওষুধ প্রশাসন, বিস্ফোরক অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন সংস্থার লাইসেন্স রয়েছে। যেখানে কোম্পানি করেছি সেখানে কোন ধরনের সমস্যা হওয়ার কথা নয়। ’

বিস্ফোরক পরিদপ্তর খুলনার পরিদর্শক ড. মো. আসাদুল ইসলাম বলেন, ‘মেডিকেল ও ইন্ড্রাস্ট্রিয়াল অক্সিজেনের কিছু কিছু উপাদানের মাত্রা একেবারেই ভিন্ন। ফলে দুটির উৎপাদন ও পরিশোধন পদ্ধতি ভিন্ন। মেডিক্যাল অক্সিজেন পরিশোধনে বিশুদ্ধতার মাত্রা থাকে ৯৯ দশমিক ৫ শতাংশের ওপরে। এতে দশমিক ৫ শতাংশের মধ্যে কার্বন ডাই অক্সাইড, কার্বন মনোক্সাইড ও পানির মিশ্রণ থাকে। আর ইন্ডাস্ট্রিয়াল অক্সিজেন পরিশোধনে বিশুদ্ধতার মাত্রা থাকে ৯০ শতাংশের নিচে । এই অক্সিজেনের সাথে বায়ুমন্ডলের অন্যান্য গ্যাসের মিশ্রণের মাত্রা থাকে বেশি। যা দিয়ে ভারি লোহা ও ধাতব পদার্থ গলিয়ে ফেলা ও কাটা হয়। এটা মানুষের শরীরে জন্য ক্ষতিকর। এসবি বা রকি অক্সিজেনের কোনো লাইসেন্স বা অনুমোদন নেই।’

খুলনার শহীদ শেখ আবু নাসের হাসপাতালের আইসিইউ বিভাগের মেডিকেল অফিসার ডা. তাহেরুল ইসলাম বলেন, ‘মেডিক্যাল অক্সিজেনের মধ্যে কার্বন ডাই অক্সাইড, কার্বন মনোক্সাইড ও পানির মিশ্রণের মাত্রা একেবারে কম বিধায় তা শরীরের জন্য সহনীয়। অন্যদিকে ইন্ডাস্ট্রিয়াল অক্সিজেনে বিশুদ্ধতার মাত্রা অনেক কম থাকে। অক্সিজেনের সঙ্গে মিশ্রিত বিভিন্ন ধরনের গ্যাস শরীরের রক্ত, ফুসফুস ও ব্রেইনসহ বিভিন্ন কোষকে ধীরে ধীরে ক্ষতিগ্রস্ত করে। তাই ইন্ডাস্ট্রিয়াল অক্সিজেন স্বাস্থ্যের জন্য চরম ঝুঁকিপূর্ণ।’

মন্তব্য

বাংলাদেশ
Eid shopping has accumulated on the sidewalk

ফুটপাতে জমে উঠেছে ঈদকেন্দ্রিক কেনাকাটা

ফুটপাতে জমে উঠেছে ঈদকেন্দ্রিক কেনাকাটা রাজধানীর একটি ফুটপাতে ক্রেতাদের ভিড়। ফাইল ছবি
রাজধানীর বেশ কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা যায়, অস্থায়ী দোকানগুলোতে কেউ চৌকি পেতে, কেউ কাঠের টেবিল বা ভ্যানের ওপর, কেউ হ্যাঙ্গারে ঝুলিয়ে, আবার কেউ চাদর বিছিয়ে বিভিন্ন ডিজাইনের পোশাকের সঙ্গে প্রসাধনী সামগ্রী সাজিয়ে রেখেছেন।

ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে রাজধানীর ফুটপাতগুলোতে জমে উঠেছে জামা, জুতাসহ বিভিন্ন পণ্য বেচাকেনা।

রাজধানীর বেশ কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা যায়, অস্থায়ী দোকানগুলোতে কেউ চৌকি পেতে, কেউ কাঠের টেবিল বা ভ্যানের ওপর, কেউ হ্যাঙ্গারে ঝুলিয়ে, আবার কেউ চাদর বিছিয়ে বিভিন্ন ডিজাইনের পোশাকের সঙ্গে প্রসাধনী সামগ্রী সাজিয়ে রেখেছেন।

ফার্মগেট ওভারব্রিজের সামনে ফুটপাতে দোকান সাজিয়ে বসা সেলিম মিয়া জানান, কিছুদিন আগে বেচা-বিক্রি কম থাকলেও এখন বেশ বেড়েছে।

স্থায়ীভাবে বসতে পারছেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা এই জায়গায় আগে থেকেই বসি। ঈদের জন্য কালেকশন বাড়াইছি। এখন পর্যন্ত কোনো সমস্যা হয় নাই।’

নীলক্ষেত ওভারব্রিজের নিচে নারীদের পোশাক নিয়ে বসা রইছ উদ্দিন বলেন, ‘আমাদের তো এই সময়টাতেই একটু আয় বেশি হয়, কিন্তু পুলিশ বললে আবার উঠতে হয়। বেচাকেনা অবশ্য খারাপ না।’

ঈদের আগের দিন পর্যন্ত বেচাকেনা চলে জানিয়ে রইছ বলেন, রাজধানীর ইসলামপুর, বঙ্গবাজার, সদরঘাটের বিভিন্ন পাইকারি বাজার থেকে পণ্য এনে ফুটপাতে বিক্রি করছেন।

মিরপুর ১০ নম্বর ফুটপাতে নিয়মিতই চলে কেনাবেচা। ঈদকে সামনে রেখে নতুন উদ্যমে নামেন বিক্রেতারা।

এখানে পোশাক কিনতে আসা নিলুফা বলেন, ‘আমি একটা গার্মেন্টসে চাকরি করি। কেনাকাটার জন্য ফুটপাতে বসা মার্কেটগুলোই আমাদের ভরসা।

‘বাচ্চাদের পোশাকসহ প্রায় সব ধরনের জিনিসই এখান থেকে কম দামে কিনতে পারি।’

এবার মোটামুটি কম দামেই সব পাচ্ছেন বলে জানান তিনি।

আরেক ক্রেতা আফতাব বলেন, ‘আমি একটি কোম্পানিতে অ্যাকাউন্টসে চাকরি করি। বাচ্চাদের জন্য জামা কিনতে এসেছি। বেতন-বোনাস পেলে সবার জন্যই কিনব।

‘প্রতি বছর এসব জায়গা থেকেই কিনি। ছেলে, মেয়ে ছাড়াও তো পরিবারের অনেকের জন্য কিনতে হয়।’

কী পাওয়া যায় ফুটপাতে

রাজধানীর ফার্মগেট ওভারব্রিজ, বলাকা সিনেমা হলের পাশে, নিউ মার্কেট, চাঁদনী চক মার্কেটের সামনে, ধানমন্ডি হকার্স মার্কেটের সামনে, মিরপুর-১০ নম্বর ওভারব্রিজের নিচে, মালিবাগ, রামপুরা, খিলগাঁও, গুলিস্তানের মতো জায়গার ফুটপাতে ক্রেতাদের বেশ ভিড় লক্ষ করা যায়।

এসব জায়গায় স্বল্প আয়ের মানুষ ঘুরে ঘুরে পছন্দের পোশাকটি কিনেন।

ফুটপাতে রয়েছে শিশুদের পোশাক, জুতা, মেয়েদের ওয়ান পিস, টপস, ফ্রক, ডিভাইডার টপস। এমনকি তুলনামূলক অনেক কম দামে পার্টি ড্রেসও পাওয়া যায়। পাশাপাশি রয়েছে প্রসাধনী।

অপেক্ষাকৃত কম দামে দুল, মালা, ক্লিপ, লিপস্টিক, নেইলপলিশের মতো কসমেটিক সামগ্রীও মেলে। দোকানগুলোতে ছেলেদের জন্য পাঞ্জাবি, শার্ট, প্যান্ট, টি-শার্ট পাওয়া যায়।

কোন পোশাকের দাম কত

বিভিন্ন ফুটপাত ঘুরে দেখা যায়, দোকানগুলোতে শিশুদের জন্য ডেনিম (জিন্স) প্যান্ট ১০০ থেকে ২৫০, অন্য প্যান্ট ৩০ থেকে ৬০, প্যান্ট ও গেঞ্জির সেট ১৫০ থেকে ২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। শিশুদের ফ্রক ও টপস ২৫০ থেকে ৪৫০, ওয়ান পিস ১৫০ থেকে ২২০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা যায়।

মেয়েদের থ্রি পিস ৩৫০ থেকে ৬৫০, টপস ও ওয়ান পিস ২৫০ থেকে ৩৫০, পার্টি ড্রেস ৭০০ থেকে ১ হাজার ২০০, স্যান্ডেল ও জুতা ১৫০ থেকে ৪৫০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা যায়।

আরও পড়ুন:
মিলাদুন্নবীতে বঙ্গভবনে মিলাদ মাহফিল
পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী উপলক্ষে মিলাদ-দোয়া
চট্টগ্রামে জশনে জুলুসে লাখো মানুষ
আজ ঈদে মিলাদুন্নবী
সাঈদীর জাকাত আত্মসাৎ মামলায় সাক্ষ্য দিলেন আইয়ুব আলী

মন্তব্য

বাংলাদেশ
National flag in paddy field in Sherpur map and memorial in vegetable field

ধান ক্ষেতে পতাকা, সবজি ক্ষেতে স্মৃতিসৌধ

ধান ক্ষেতে পতাকা, সবজি ক্ষেতে স্মৃতিসৌধ শেরপুরে ধান ক্ষেতে জাতীয় পতাকা, সবজি ক্ষেতে মানচিত্র ও স্মৃতিসৌধ। কোলাজ: নিউজবাংলা
শেরপুর কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ সাইফুল আজম খান বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ও দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ায় যেন সকলে সহযোগিতা করতে পারে সেজন্য এমন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।’

স্বাধীনতার মাসের গুরুত্ব সবার মধ্যে তুলে ধরতে এবং শিক্ষার্থীদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করতে শেরপুর কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের (এটিআই) ধান ক্ষেতে জাতীয় পতাকা এবং সবজির প্লটে মানচিত্র ও স্মৃতিসৌধ তৈরি করেছেন এটিআইয়ের ছাত্র ও শিক্ষকরা। এতে ছাত্র, শিক্ষক ও স্থানীয়রাও অনেক খুশি।

স্বাধীনতার মাসে এটিকে জনসাধারণের সামনে প্রদর্শন করার জন্য ২৪ মার্চ আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন জাতীয় সংসদের হুইপ বীর মুক্তিযোদ্ধা আতিউর রহমান আতিক এমপি।

এটিআইয়ের অধ্যক্ষ সাইফুল আজম খান বলেন, ‘শেরপুর কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের প্রায় ৪০ একর জমির বিশাল এলাকায় ধান ও সবজির প্রদর্শনী প্লট রয়েছে। স্বাধীনতার মাসের গুরুত্ব সবার মাঝে তুলে ধরতে ধান ও সবজির প্লটে সবার দৃষ্টি কাড়ে এমন এক বিশাল পতাকা, মানচিত্র ও স্মৃতিসৌধ করা হয়েছে।

‘ধান ক্ষেতের ক্যানভাসে ১৬০ ফিট দৈর্ঘ্য, ৯৬ ফুট প্রস্থ ও ৩২ ফুট বৃত্তের ব্যাসার্ধের জাতীয় পতাকা তৈরি করা হয়েছে। পতাকার সবুজ অংশ বঙ্গবন্ধু-১০০ ও হাইব্রিড এবং মাঝখানের লাল বৃত্তের অংশ দুলালি সুন্দরী ধানের চারা দিয়ে সাজানো হয়েছে। পতাকার সবুজ অংশ দিয়ে বুঝানো হয়েছে বাংলার প্রকৃতিকে আর মাঝখানে লাল বৃত্ত দিয়ে বুঝানো হয়েছে লক্ষ শহীদের রক্ত। এবং পাশেই সবজির প্লটে লাল শাক ও পাট শাকের চারা দিয়ে তৈরি করা হয়েছে বাংলাদেশের মানচিত্র ও স্মৃতিসৌধ। এতে আমাদের শিক্ষক ও ছাত্রদের অনেক কষ্ট করতে হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ও দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ায় যেন সকলে সহযোগিতা করতে পারে সেজন্য এমন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।’

কলেজ শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম জিহান বলেন, ‘আমাদের কলেজে এত সুন্দর একটি পতাকা, মানচিত্র ও স্মৃতিসৌধ করতে পেরে আমরা খুবই আনন্দিত। আমাদের অধ্যক্ষ স্যারের নির্দেশনায় স্বাধীনতার মাসকে সামনে রেখে এ কাজটি করেছি। এ কাজটির ফলে আমরা স্বাধীনতার গুরুত্ব সম্পর্কে জানতে পেরেছি।’

প্রতিষ্ঠানের সপ্তম বর্ষের শিক্ষার্থী প্রাপ্তি বলেন, ‘আমাদের স্যারদের সহযোগিতায় এমন সুন্দর কাজটি করেছি। কৃষির মাধ্যমে দেশকে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে সবার মাঝে। অনেকেই দেখতে আসছেন। এমন সৃজনশীল কাজ দেখে খুশি হচ্ছেন এবং আমাদের প্রশংসা করছেন।’

স্থানীয় কবি ও সাহিত্যিক আব্দুল আলীম বলেন, ‘কলেজের শিক্ষক ও ছাত্ররা মিলে এমন একটি কাজ করেছে যা সত্যিই প্রশংসার দাবিদার। এখানে আমাদের দেশকে জাতির সামনে তুলে ধরেছে তারা। আমাদের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে এভাবেই সকল কিছু করে দেখাতে হবে। কারণ প্রধানমন্ত্র‍ী দেশের জন্য অনেক কিছু করে যাচ্ছেন।’

মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও বঙ্গবন্ধুকে জানতে কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে শেরপুর জেলায় এটাই ব্যতিক্রমী ও প্রথম উদ্যোগ গ্রহণ করায় প্রশংসা জানিয়েছেন সরকার দলীয় হুইপ বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আতিউর রহমান আতিক।

তিনি বলেন, ‘আমাদের ছেলে-মেয়েদের সত্যিকারের ইতিহাস জানতে হবে। বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধকে জানাতে এখানে যে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে এতে আমি তাদেরকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশের সুফল পেয়েছি। এবার আমাদের স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে সবাইকে সহযোগিতা করতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের মতো আরও সবাইকে এ ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করার দরকার।’

আরও পড়ুন:
বাংলাদেশে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা পর্যবেক্ষণ করবে ৯ দেশ
মোহামেডানের টানা দ্বিতীয় জয়
জয় দিয়ে স্বাধীনতা কাপ শুরু শেখ জামালের
স্বাধীনতা কাপে আবাহনী ও মুক্তিযোদ্ধার জয়
মাঠজুড়ে ‘স্বাধীনতার নকশা’, আলোচনায় বেগুনি ধান

মন্তব্য

বাংলাদেশ
In Mymensingh the price of broiler rose by 80 rupees per kg in a month

ময়মনসিংহে এক মাসে কেজিতে ৮০ টাকা বাড়ল ব্রয়লারের দাম

ময়মনসিংহে এক মাসে কেজিতে ৮০ টাকা বাড়ল ব্রয়লারের দাম   ব্রয়লার মুরগির খামার। ছবি: নিউজবাংলা
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ময়মনসিংহের সহকারী পরিচালক নিশাত মেহের বলেন, ‘নিয়মিত বাজার মনিটরিং করা হচ্ছে। মনমতো দামে মুরগিসহ কোনো পণ্য বিক্রি করার প্রমাণ মিললে জরিমানার আওতায় আনা হবে।’

ময়মনসিংহ শহরের মেছুয়া বাজারে খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ২৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। রোজা শুরুর আগের দিন বৃহস্পতিবারও একই দামে বিক্রি হয়েছে মুরগি। বেশি দামে কিছুদিন আগে মুরগি কেনার কারণেই দাম কমাতে পারছেন না বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা।

এদিকে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে অসাধু ব্যবসায়ীরা উচ্চ দরে মুরগি বিক্রি করে পকেট ভারি করছেন বলে মনে করছেন ক্রেতারা।

আনোয়ার হোসেন নামের এক মুরগি বিক্রেতা নিউজবাংলাকে জানান, গত এক মাস আগে মুরগি ১৬০ টাকা কেজিতে বিক্রি করতে পেরেছেন। এরপর থেকেই মাসজুড়ে হু হু করে বেড়েছে দাম। পাইকারি পর্যায়ে দাম বেড়ে যাওয়ায় তারাও বাধ্য হয়ে বেশি দামে বিক্রি করছেন।

তিনি আরও জানান, বর্তমানে পাইকারিভাবে মুরগির দাম কিছুটা কমলেও তারা বাজারে আগের দামেই বিক্রি করছেন। কারণ মুরগিগুলো বেশিরভাগ ব্যবসায়ীদের কিছুদিন আগের কেনা ছিল। তবে কিছুদিনের মধ্যে দাম কমে আসবে বলে জানান তিনি।

আমিরুল ইসলাম নামের আরেকজন বিক্রেতা বলেন, ‘আমরা সিন্ডিকেট করে মুরগি বিক্রি করি না। কোনো বিক্রেতা কিছুদিন আগে মুরগি কিনেছেন আবার কেউ পরে। এজন্য একজনের সঙ্গে আরেকজনের দামটাও কিছুটা পার্থক্য হচ্ছে। যে যার মতো কিছুটা লাভ করে বিক্রি করছেন।‘

তবে ক্রেতারা বলছেন ভিন্ন কথা। তারা মুরগি ব্যবসায়ীদের খোঁড়া যুক্তি মানতে নারাজ।

মুরগি কেনা শেষে মইনুল হোসেন নামের এক ক্রেতা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘গোপনে বাজার মনিটরিং করতে একজন কর্মকর্তা এসেছিল। কিছুক্ষণ পর বাজারদর জানতে আরেকজন সাংবাদিক আসে। দুইজনকেই দাম কত জিজ্ঞেস করলে বিক্রেতা বলেছে ২১০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। অথচ আমার কাছ থেকে ২৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হয়েছে। যদি বাজারে নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান পরিচালনা না করে তাহলে ইচ্ছেমতো দামেই বিক্রি চলবে।’

নগরীর ঐতিহ্যবাহী শম্ভুগঞ্জ বাজারে গিয়ে দেখা যায়, সেখানেও ২৪০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে মুরগি। মুরগির দাম হাতের নাগালের বাইরে থাকায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন নিম্ন-মধ্যবিত্তরা। অনেকে মুরগি থেকে মুখ ফিরিয়ে মাছ কিংবা শুঁটকির বাজারে ছুটছেন।

মুরগির দাম এতো বেড়ে যাওয়ার কারণ খুঁজতে যাওয়া হয় জেলার গৌরীপুর উপজেলার ঢৌহাখলা ইউনিয়নের নন্দীগ্রামে। সেখানে কথা হয় খামারি শামসুল হকের সঙ্গে।

তিনি বলেন, ‘আমার খামারে ৫০০ মুরগির বাচ্চা ৬০ টাকা দরে কেনা ছিল। মুরগির বয়স এখন ২৬ দিন। ৩২ দিন হলে বাচ্চা বিক্রি করব। ৩২ দিনে প্রতি মুরগি গড়ে ১ হাজার ৭০০ গ্রাম ওজন হবে। তাহলে প্রতি কেজিতে উৎপাদন খরচ দাঁড়ায় ১৬০ টাকা। কিন্তু খুচরা পর্যায়ে বাজারে বিক্রি হচ্ছে মাত্রাতিরিক্ত দামে।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক খামারি বলেন, ‘মূলত মুরগির বাচ্চার সংকটের কারণেই ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়েছে। কোম্পানির মালিকরা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বাচ্চার কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে আমাদের মতো খামারিদের কাছ থেকে ভালো ব্যবসা করতে চাইছে। এগুলোও সংশ্লিষ্টদের তদারকি করা প্রয়োজন।’

রফিক মিয়া নামের আরেকজন খামারি বলেন, ‘খুচরা বাজারে মুরগির দাম মাত্রাতিরিক্ত বাড়লেও আমরা (খামারিরা) বেশি লাভবান হইনি। সুযোগকে কাজে লাগিয়েছে এক শ্রেণির অসাধু খুচরা বিক্রেতারাও। তারা সিন্ডিকেট করে কিছুদিনের জন্য হলেও নিজেদের পকেট ভারি করেছে।’

এ বিষয়ে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ময়মনসিংহের সহকারী পরিচালক নিশাত মেহের বলেন, ‘নিয়মিত বাজার মনিটরিং করা হচ্ছে। মনমতো দামে মুরগিসহ কোনো পণ্য বিক্রি করার প্রমাণ মিললে জরিমানার আওতায় আনা হবে।’

আরও পড়ুন:
বস্তায় আদা চাষ
নওগাঁয় বাজারে নতুন আলুর কেজি ২০০ টাকা
দাম কমছে ইলিশের
দামে কারসাজি: ইউনিলিভার, সিটি, প্যারাগন, কাজীর বিরুদ্ধে মামলা
৩০০ টাকা থেকে মরিচ এখন ৪০

মন্তব্য

বাংলাদেশ
The letter of the war days is the letter of the victory

যুদ্ধদিনের চিঠি, যুদ্ধজয়ের চিঠি

যুদ্ধদিনের চিঠি, যুদ্ধজয়ের চিঠি রণাঙ্গন থেকে মাকে লেখা শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা সোলেমানের শেষ চিঠি। ছবি: সংগৃহীত
একাত্তরে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বন্দি শিবির থেকে বীরাঙ্গনা ও রণাঙ্গন থেকে বীর মুক্তিযোদ্ধারা তাদের মা, অন্যান্য স্বজন ও বান্ধবীকে চিঠি লিখেছেন। তাদের সেসব লেখনীতে উঠে এসে হানাদারদের সীমাহীন বর্বরতা এবং প্রাণের বিনিময়ে হলেও দেশমাতৃকা স্বাধীন করার দৃঢ় প্রত্যয়। এসব চিঠি এখন মুক্তিযুদ্ধের অনন্য দলিল।

রিতা,

তুমি বোধহয় ভালই আছ। আর থাকবে নাই বা কেন। তুমি এখন এক স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র বাংলাদেশের নাগরিক হয়েছ। আমাদের দুঃখ-দুর্দশা হয়ত তোমার অজানা নেই। আমাদের অবস্থা যে কতদূর চরম তা তুমি কল্পনাও করতে পারবে না।

একদিন আমাদের বাড়ীতে একদল লোক এসে আমাদের কিছু জিনিসপত্রসমেত আমাকে একটি জিপে তুলে নিয়ে যায়। কোথায় যাচ্ছি তাও জানি না। কেবল শুনতে পাচ্ছি আমাদের পেছনেও কয়েকটি গাড়ি আসছে। পথে গাড়ির মধ্যেই অমানসিক অত্যাচার শুরু হল। শিবিরে জীপ পৌঁছাল এবং আমায় শিবিরে ঠেলে নামিয়ে দেওয়া হল। সেখানে দেখলাম আমার মতই আরও কয়েকজন মেয়ে রয়েছে।

কিছুক্ষণ পর একদল ‘পশু’ শিবিরে এসে আমাদের উপর অত্যাচার শুরু করে দিল। দিনের পর দিন সন্ধ্যায় আমাদের নিয়ে যওয়া হয় এবং ভোর ৪টার সময় ছেড়ে দিয়ে যাওয়া হয়। কোনরকম বাধা দিলে যে অত্যাচার শুরু হতো তা অবর্ণনীয়। রবারের চাবুক দিয়ে তারা আমাদের নির্দয়ভাবে পেটায়। এই আতঙ্কে আমরা চরম অসম্মানজনক জীবনযাপন করতে বাধ্য হই।

...আমাদের চিঠি লেখার অধিকারও নেই। খাদ্য পাওয়াও কষ্টকর। রেডক্রস যদি কোন খাবার দেয় তাহলে ঐসব ‘পশুরা’ এসে ছিনিয়ে নিয়ে যায়। দিনে একবার মাত্র আমাদের খাবার দেওয়া হয়। খাবার হলো দেড় পিস রুটি আর এক গ্লাসস পানি। দিনে মাত্র তিন গ্লাস পানি দেওয়া হয়।

এই অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে অনেক মেয়েই আত্মহত্যা করেছে। তাদের কবর অবধি দেওয়া হয় না। এসিড দিয়ে দেহ পুড়িয়ে দেওয়া হয়। যারা অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে তারা সাধারণত সন্তান জন্মাবার আগেই মারা যায়। কয়েকজন আবার সন্তানের জন্ম দিয়েই মারা যায়। আমিও অন্তঃসত্ত্বা। কিন্তু আমরা কি করতে পারি? বাঙালী মেয়ে জন্মানই পাপ। এই অত্যাচার সহ্য করে আমি এখনও বেঁচে আছি। তবে আধমরা হয়ে আছি। মুজিব ভাই কি আমাদের রক্ষা করবে না? আমাদের এই চরম দুঃখ-দুর্দশার কথা বঙ্গবন্ধুর কানে তুলো।

-শীলা

যুদ্ধদিনের চিঠি, যুদ্ধজয়ের চিঠি

পাকিস্তানি হানাদারের বন্দি শিবির থেকে লেখা এক নির্যাতিতা বাঙালির চিঠি এটি। বান্ধবী রিতার কাছে শীলা নামের এক বীরাঙ্গনার লেখা এই চিঠিতে উঠে এসেছে আমাদের স্বাধীনতার জন্য এ দেশের নারীদের অপরিসীম ত্যাগ আর হানাদার বাহিনীর নির্যাতনের চিত্র। দেশ তখন মুক্ত। তবু মুক্তি মেলেনি শীলাদের। নিজের মুক্তির জন্য এই নারীও তাই পথ চেয়ে আছেন সেই মহানায়কের, যার তর্জনীতে লুকিয়ে ছিলো বাঙালির স্বাধীনতা।

১৯৭২ সালের ২১ জুন সুনামগঞ্জ থেকে প্রকাশিত, গোলাম রব্বানী সম্পাদিত সাপ্তাহিক ‘বিন্দু বিন্দু রক্তে’ প্রকাশিত হয় এ চিঠি। কেবল নাম ব্যতীত চিঠিটির প্রেরক ও প্রাপকের আর কোনো পরিচয় উল্লেখ করা হয়নি।

প্রায় সমসাময়িক সময়ে সিলেট থেকে প্রকাশিত, আমীনুর রশীদ চৌধুরী সম্পাদিত সাপ্তাহিক ‘যুগভেরী’তে প্রকাশিত হয় স্বাধীনতা পরবর্তীকালেও পাকিস্তানি বন্দিশিবিরে আটক থাকা এক ব্যক্তির চিঠি। চিঠিটি লেখা হয়েছিল ১৯৭২ সালের ২৯ মার্চ। যুগভেরীতে এই পত্র লেখকের নাম ছাপানো হয়নি।

পিতার কাছে লেখা চিঠির শেষাংশে পত্র লেখক লিখেছেন, ‘... ধুপাদিঘীর পশ্চিমপাড়ে যাহা আছে এবং সেখানে যারা থাকে, যে হালে থাকে ঠিক সেভাবেই আছি। আর কাজ হচ্ছে- ওখানে তারা যে কাজ করে সেই কাজ। অনেকে আছি। এখানে যাদেরকে রাখা হয়েছে তাদের নামের পাশে লালকালি দিয়ে অনেক কিছু লেখা হচ্ছে। সবকিছু খুলিয়া লেখা সম্ভব নয়। কারণ তো বুঝতেই পারছেন। এখানে ১২০০-এর বেশী বিমান বাহিনীর লোক।’

উল্লেখ্য, পত্রে উল্লিখিত ধোপাদিঘির পশ্চিমপাড় বলতে কারাগার বুঝানো হয়েছে। এই স্থানে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগার-২ অবস্থিত।

যুদ্ধদিনের চিঠি, যুদ্ধজয়ের চিঠি

এ তো গেলো বন্দিশিবির থেকে লেখা নির্যাতিতদের চিঠি। যুদ্ধের ময়দান থেকেও অনেক মুক্তিযোদ্ধা অস্ত্র পাশে সরিয়ে কখনো কখনো হাতে তুলে নিয়েছিলেন কলম। প্রিয়জন আর সহযোদ্ধাদের কাছে নিজের, যুদ্ধের আর দেশের অবস্থা জানিয়ে লিখেছিলেন চিঠি।

সেসব চিঠিতে মুক্তিযোদ্ধাদের অবর্ণনীয় দুর্ভোগ, সর্বগ্রাসী অভাব, দালালদের দৌরাত্ম্য সত্ত্বেও বীর যোদ্ধাদের সাফল্য গাঁথা ও চূড়ান্ত জয়ের দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত হয়েছে। এসব টুকরো টুকরো আশা, হতাশা, সান্ত্বনা, প্রতীজ্ঞাই হয়ে ‌উঠেছে এখন মুক্তিযুদ্ধের দলিল।

মুক্তিযুদ্ধে সিলেট অঞ্চলের এক অনন্য যোদ্ধা সুলেমান হোসেন। ৪ নম্বর সেক্টরের হয়ে যুদ্ধ করেছেন তিনি। ১৯৭১ সালের ১০ ডিসেম্বর সিলেট শহরের ধুবড়ী হাওড়ের (অধুনা শাহজালাল উপশহর) কাছে প্যারাসুট দিয়ে হেলিকাপ্টার থেকে নামার পরই পাকিস্তানি সেনারা তাকে ঘিরে ফেলে। এরপর দীর্ঘক্ষণ ধরে চলা সম্মুখযুদ্ধ শেষে তিনি আহত অবস্থায় ধরা পড়েন। চূড়ান্ত বিজয়ের ঠিক আগ মূহূর্তে ১৪ ডিসেম্বর হানাদাররা তাকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করে।

দেশ স্বাধীন হওয়ার পর সিলেটের জিন্নাহ হলের নাম পাল্টে ‘শহীদ সুলেমান হল’ করা হয়। যুদ্ধচলাকালীন পরিবার-পরিজনকে বেশকিছু চিঠি লিখেছিলেন সুলেমান। চিঠিগুলোর বেশিরভাগই তার প্রবাসী বড় ভাইয়ের কাছে অর্থ সাহায্য চেয়ে লেখা।

একাত্তরের ১৬ এপ্রিল আসাম থেকে বড় ভাইকে লেখা সুলেমানের চিঠিতে ফুটে উঠেছে আর্থিক দৈন্য আর দুর্ভোগের চিত্র। চিঠির একাংশে সুলেমান লিখেছেন, ‘... বর্তমানে আমাদের মৃত্যুর দুইটি পথ খোলা আছে। একটি হইল বুলেট, অন্যটি হইল পেট।’

২৮ নভেম্বর একই ব্যক্তিকে লেখা আরেকটি পত্রে সুলেমান লিখেছেন, ‘...আমার বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয়। কারণ টাকাপয়সা আমার কাছে ঔষধের মতই হয়েছে। ...শীতের দাপটে রাতে ডিফেন্সে থাকা যায় না। কারণ শীতের একটি কাপড়ও আমার নেই।’

এসব প্রতিকূলতা সত্ত্বেও সুলেমান দেশকে স্বাধীনতা এনে দিতে ছিলেন দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। ৭ জুলাই প্রবাসী বড় ভাইকে লেখা এক চিঠিতে ফুটে উঠেছে সেই দৃঢ় প্রতিজ্ঞারই চিত্র।

সুলেমান লিখেন, ‘... বাংলাদেশের স্বাধীনতা কোন শক্তিই দমিয়ে রাখতে পারবে না। আমাদের বাংলার সাড়ে সাত কোটি মানুষ পরাধীনতার নাগপাশকে পদদলিত করিতে বদ্ধপরিকর। এতে যদি আমার বাংলাদেশ শ্মশানে পরিণত হয় তবু আমরা কিছু ছাড়ব না। বাংলা স্বাধীন ও শত্রুমুক্ত হবে সত্য, তবে কবে এবং কি অবস্থায় স্বাধীন হব সেটা বলা যায় না।

... পাঞ্জাবী বেনিয়ারা এবার বুঝে নিয়েছে যে তাহারা আর এখানে থাকতে পারবে না। আমরা জীবনের শেষ রক্তবিন্দু দিয়া মা-বোন ও মাতৃভূমির পবিত্রতা রক্ষা করিব।

...আমার সকল পণ প্রতিজ্ঞাকে কেউ নস্যাৎ করতে পারবে না। দালালদের খতম করার জন্য আমাদের গেরিলা বাহিনী শহরে প্রবেশ করেছে। দুই তিন সপ্তাহের মধ্যে দালালদের বংশ থাকিবে না। এরাই আমারে বড় শত্রু। যাক, জয় আমাদের হবেই। আমাদের জন্য চিন্তা করিবেন না। বাঁচিয়া থাকিলে দেখা হইবে।...’

তারিখ ও ঠিকানা উল্লেখ না করে মায়ের কাছে লেখা একটি চিঠিতে সুলেমান লিখেছেন, ‘... মা, আজকে আপনার সবচেয়ে বড় গৌরব যে আপনার ছেলে সত্যিকারের দেশসেবার উপায় পেয়েছে। সত্যিকারের দেশসেবা করে যদি প্রাণ বিসর্জন দিতে হয় সেটা ভাল। যাক, আমার জন্য চিন্তা করিবেন না। অদূর ভবিষ্যতেই দেখা হবে। আমাদের চূড়ান্ত লক্ষ্য অর্জনের আর বেশি বাকী নয়।...’

মাকে অদূর ভবিষ্যতেই দেখা হওয়ার আশ্বাস দিলেও আর কখনোই মায়ের সাথে দেখা হয়নি শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা সুলেমানের।

মুক্তিযুদ্ধে সাচনা বাজারে পাকিস্তানি বাংকার ধ্বংসের সময় শহীদ হন সিরাজুল ইসলাম। এর আগে সুনামগঞ্জে সুরমা নদীতে পাকিস্তানি সেনাদের পরিবহন বহরে গেরিলা আক্রমণ চালান তিনি। ১৯৭১ সালের ৩০ জুলাই সুনামগঞ্জের টেকেরঘাট থেকে নিজের পিতাকে লেখা একটি চিঠিতে উল্লেখ করেছেন নিজের ও দেশের অবস্থা আর অবস্থানের কথা।

সিরাজুল লিখেন, ‘... দেশের জন্য আমরা সকলেই জান কোরবান করিয়াছি। আমাদের জন্য ও দেশ স্বাধীন হইবার জন্য দোয়া করিবেন। আমি জীবনকে তুচ্ছ মনে করি। কারণ দেশ স্বাধীন না হইলে আমাদের জীবনের কএনা মূল্য থাকিবে না। তাই যুদ্ধকেই জীবনের পাথেয় হিসেবে নিলাম।

মৃত্যুর মুখে আছি। যেকোন সময় মৃত্যু হইতে পারে এবং মৃত্যুর জন্য সর্বদা প্রস্তুত। দোয়া করিবেন মৃত্যু হইলেও যেন দেশ স্বাধীন হয়। তখন দেখবেন লাখ লাখ ছেলে বাঙলার বুকে পুত্রহারাকে বাবা বলে ডাকবে। এই ডাকের অপেক্ষায় থাকুন।

দেশবাসী, স্বাধীন বাংলা কয়েমের জন্য দোয়া কর, মীর জাফরী করিও না। কারণ মুক্তি ফৌজ তোমাদের ক্ষমা করিবে না এবং বাঙলায় তোমাদের জায়গা দেবে না।

ছালাম, দেশবাসী সালাম।’

যুদ্ধদিনের চিঠি, যুদ্ধজয়ের চিঠি

সিলেট অঞ্চলের কিংবদন্তি গেরিলা মুক্তিযোদ্ধা জগৎজ্যোতি দাসের শহীদ হওয়ার ঘটনা আরও বেশি বিক্ষুব্ধ করে তুলেছিলো এ অঞ্চলের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের। জগৎজ্যোতির মৃত্যু সংবাদ জানিয়ে তার সহযোদ্ধা সানু মিয়া আরেক মুক্তিযোদ্ধা গৌরাঙ্গ দেশীকে একটি চিঠি লেখেন। সংক্ষিপ্ত এই চিঠিতে প্রতিভাত হয়েছে জ্যোতির প্রাণের বদলা নেয়ার দৃপ্ত শপথ।

‘দাদা,

এখানে এসে জ্যোতিকে পেয়েছিলাম। চারদিন হলো, সে আমাদের ছেড়ে চলে গেছে। তাঁর কাজ সে শেষ করেছে, এবার আমাদের পালা। জ্যোতিকে ম্লান হতে দেবো না, রক্তের প্রতিশোধ আমরা রক্তেই নেব।

ইতি

সানু মিয়া’

রক্তের বদলা নিয়েই বীর মুক্তিসেনারা সূর্যের লালটুকু ছিনিয়ে আনেন বাঙলার সবুজ জমিনে। বাংলাদেশের পতাকা হয়ে ওঠে টিয়ে পাখির মতো লাল আর সবুজ। যুদ্ধজয় ও বঙ্গবন্ধুর দেশে ফেরার পর সিলেটের মহিলা মুক্তিফৌজ গঠনের অন্যতম উদ্যেক্তা ও নারীনেত্রী প্রীতিরানী দাশ শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার অর্ঘ্য হিসেবে জাতির পিতাকে তাঁতের তৈরি একটি বস্ত্র উপহার পাঠান। এই উপহার পেয়ে প্রীতিরানীকে চিঠি লেখেন শেখ মুজিব।

১৯৭২ সালের ২১ নভেম্বর চিঠিটি বঙ্গবন্ধুর নিজ হাতে লেখা।

‘শ্রদ্ধেয়া প্রীতিরানী দাস

আমার আদাব গ্রহণ করবেন। তাঁতশিল্পের নিদর্শনস্বরূপ আপনার দেয়া উপহারখানা জেনারেল ওসমানী সাহেবের মারফত পেয়ে খুবই খুশি হয়েছি। শিল্প জগতে তাঁতশিল্প এক বিশেষ স্থান অধিকার করে আছে। বিশেষ করে বাংলাদেশের উন্নতমানের তাঁতশিল্প একটি গৌরবের বিষয়। দেশের ভাঙ্গা অর্থনীতিকে পুনরুজ্জীবিত করার প্রশ্নে আপনাদের ভূমিকা কোন অংশে কম নয়। সেহেতু আমাদের তাঁতশিল্পের ক্রমবিকাশ এবং বিশ্বের হস্তশিল্পাঙ্গনে এর সুপ্রতিষ্ঠিত স্থান আমার একমাত্র কাম্য।

সরকার এ ব্যাপারে পূর্ণ সহযোগীতা করে যাবে। দেশের বেকার সমস্যা দূরীকরণ এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নে আপনাদের প্রচেষ্টাকে আমি আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

ইতি

শেখ মুজিব”

[এই প্রতিবেদনে উল্লিখিত চিঠিগুলো সাপ্তাহিক ‘বিন্দু বিন্দু রক্ত’, সেই সময়ের সাপ্তাহিক ও বর্তমানে দৈনিক ‘যুগভেরী’ এবং গবেষক দীপংকর মোহান্ত সম্পাদিত ‘চিঠিপত্রে মুক্তিযুদ্ধ’ বই থেকে সংগৃহীত।]

আরও পড়ুন:
স্বাধীনতা কাপে আবাহনী ও মুক্তিযোদ্ধার জয়
মাঠজুড়ে ‘স্বাধীনতার নকশা’, আলোচনায় বেগুনি ধান
‘জয় বাংলার জয়োৎসবে’ উজ্জ্বল হাতিরঝিল
পুনে বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস উদযাপন
স্বাধীনতার মহোৎসব ও অনন্য বাংলাদেশ

মন্তব্য

বাংলাদেশ
Two associates of the Arab under surveillance

নজরদারিতে আরাবের ২ সহযোগী

নজরদারিতে আরাবের ২ সহযোগী আরাব খানের সহযোগী জসিম উদ্দিন নাহিদ ও শেফায়েত হোসেন জয়। কোলাজ: নিউজবাংলা
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, কক্সবাজার শহরের বাহারছড়ার বাসিন্দা ও জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মোশাররফ হোসেন দুলালের ছেলে জয় ও তার ভগ্নিপতি নাহিদের প্রতিমাসে দুবাই আসা-যাওয়া করেন। তাদের দৃশ্যমান কোনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান না থাকলেও হঠাৎ করে আলিশান গাড়িতে চলাফেরা, বিলাসবহুল জীবন যাপন এলাকার মানুষের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ।

ঢাকার পুলিশ পরিদর্শক মামুন ইমরান খান হত্যা মামলার আসামি দুবাইয়ের স্বর্ণ ব্যবসায়ী রবিউল ইসলাম ওরফে আরাব খান ওরফে আপনের বিশ্বস্ত দুই সহযোগীর ওপর নজর রাখছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

ওই দুজন কক্সবাজারে থাকেন। তারা সম্পর্কে শ্যালক-দুলাভাই। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে তাদের পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন আরাব। এ সংক্রান্ত ভিডিও এখন ছড়িয়ে পড়েছে।

আরাব যে দুজনকে পরিচয়ে করিয়ে দেন তারা হলেন কক্সবাজার শহরের বাহারছড়ার বাসিন্দা শেফায়েত হোসেন জয় ও জসিম উদ্দিন নাহিদ। তাদের ওপর নজর রাখা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানিয়েছে, বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।

একটি ভিডিওতে দেখা যায়, আরাব খান ওই দুই যুবককে পরিচয় করিয়ে দেন। তিনি ওই ভিডিওতে বলেন, জয় ও জসিম কক্সবাজারের মাফিয়া। জয় ‘কিলার’, নাহিদ আগামী নির্বাচনের ‘এমপি প্রার্থী’।

তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ২০২২ সালের ৮ জুলাই আরাব খানের তার ফেসবুক আইডি থেকে লাইভ ভিডিওটি পোস্ট করেন।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, কক্সবাজার শহরের বাহারছড়ার বাসিন্দা ও জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মোশাররফ হোসেন দুলালের ছেলে জয় ও তার ভগ্নিপতি নাহিদ প্রতিমাসে দুবাই আসা-যাওয়া করেন। তাদের দৃশ্যমান কোনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান না থাকলেও হঠাৎ করে আলিশান গাড়িতে চলাফেরা, বিলাসবহুল জীবন যাপন এলাকার মানুষের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, কয়েক বছর আগেও নাহিদ কক্সবাজারের রিগ্যাল প্যালেস নামের একটি আবাসিক হোটেলে ফ্রন্ট ডেস্ক ম্যানেজার পদে চাকরি করতেন। কিন্তু কয়েক বছরে তিনি রাজধানী ঢাকার অভিজাত এলাকায় দুটি ফ্ল্যাট কিনেছেন।

আরাব খানের সঙ্গে নাহিদ-জয়ের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশের পর তাদের নিয়ে এ প্রতিবেদকের কাছে আরও তথ্য দিয়েছেন ফেনীর আবু তৈয়ব রকি নামের ব্যবসায়ী।

ট্রাভেলিং এজেন্সির ব্যবসা করা এই ব্যক্তির অভিযোগ, কাতার বিশ্বকাপ দেখে ফেরার পথে প্রবাসে থাকা পরিবারের সদস্যদের ৬০ ভরি স্বর্ণ নিয়ে ফিরছিলেন ফেনীর চার বাসিন্দা। তাদের সঙ্গে যোগ দেন জয় ও নাহিদ। ঢাকার বিমানন্দরে নামার পর নাহিদ ও জয় তাদের রাজধানীর বসুন্ধরার ফ্ল্যাটে বিশ্রামের অজুহাতে নিয়ে যান। পরে তারা সেখান থেকে ওই স্বর্ণ নিয়ে সটকে পড়েন।

তিনি আরও জানান, যেসব বাংলাদেশি দুবাইতে স্বর্ণ কিনতে যান, নাহিদ ও জয় তাদের টার্গেট করেন। দেশে ফেরার পর সেই স্বর্ণ লুট করে তা বিক্রি করে দেন শ্যালক-দুলাভাই।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত নাহিদ ও জয়ের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তারা কল রিসিভ করেননি।

এ নিয়ে কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মাহফুজুল ইসলাম বলেন, ‘’সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অভিযুক্ত দুজনের নানা তথ্য এসেছে। এসব বিষয়ে পুলিশ কাজ শুরু করেছে। অভিযুক্ত দুজন পুলিশের নজরদারিতে রয়েছে।’

রেড নোটিশ

পুলিশ কর্মকর্তা হত্যা মামলার পলাতক আসামি সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে অবস্থানরত আরাব খান ওরফে রবিউল ইসলামের বিরুদ্ধে রেড নোটিশ জারি করেছে আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোল।

রেড নোটিশ পাওয়া বাংলাদেশিদের তালিকায় ছবিসহ যুক্ত করা হয়েছে তার নাম।

ইন্টারপোলের তালিকায় আরাব নামটি উল্লেখ করা হয়নি। সংস্থাটির ওয়েবসাইটে তার পূর্ণ নাম রবিউল ইসলাম ও ডাকনাম রবিউল লেখা হয়েছে। জন্মস্থান দেখানো হয়েছে বাগেরহাট; বয়স উল্লেখ করা হয়েছে ৩৫ বছর।

বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে আরাবের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ রয়েছে বলে জানিয়েছে ইন্টারপোল।

এর আগে ১৮ মার্চ পুলিশ কর্মকর্তা হত্যা মামলার ফেরারি আসামি আরাব খান ওরফে রবিউল ইসলামকে দেশে ফিরিয়ে আনতে আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলকে চিঠি দেয়ার খবর জানায় বাংলাদেশ পুলিশ।

ইন্টারপোল বাংলাদেশ ডেস্কের এক কর্মকর্তা ওই দিন বিকেলে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা এই বিষয়ে (আরাবকে দেশে ফেরানো) ব্যবস্থা নেয়ার জন্য ইন্টারপোলকে মেইল করেছি। তারা আমাদের দেয়া তথ্যগুলো যাচাই-বাছাই করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেবে।’

আরাবকে নিয়ে আলোচনার শুরু যেখান থেকে

পুলিশ পরিদর্শক মামুন এমরান খান হত্যা মামলার আসামি আরাব খান ওরফে রবিউল ইসলাম আলোচনায় আসেন মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহে। সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে গোল্ড জুয়েলারি শপ ‘আরাব জুয়েলার্স’ উদ্বোধন ঘোষণাকে কেন্দ্র করে এই আলোচনা শুরু হয়। শপটির লোগো বানানো হয় ৬০ কেজি স্বর্ণ দিয়ে।

আরাবের এই জুয়েলারি শপের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে নিমন্ত্রণ পান বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান, ইউটিউবার হিরো আলমসহ বেশ কয়েকজন। এ নিয়ে সাকিব আল হাসানের ভিডিও বার্তার পর বিষয়টি ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) নজরে আসে।

ফেরারি আসামি আরাব খানের মালিকানাধীন আরাব জুয়েলার্স উদ্বোধন হয় ১৫ মার্চ রাতে। দুবাইয়ে নিউ গোল্ড সোক হিন্দ প্লাজার ৫ নম্বর ভবনের ১৬ নম্বর দোকানটি তার। সাকিবসহ অন্যরা এই আয়োজনে অংশ নেন।

ডিবি মতিঝিল বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘পুলিশ পরিদর্শককে হত্যা মামলার চার্জশিট হয়েছে অনেক আগেই। রবিউল চার্জশিটভুক্ত পলাতক আসামি। জুয়েলারি শপ উদ্বোধনের ঘোষণার পর আমরা আইডেন্টিফাই করি, যে ব্যক্তি আরাব খান নামে আইডিটি পরিচালনা করছেন, তিনি পুলিশ পরিদর্শক মামুন এমরান খাঁন হত্যা মামলার আসামি রবিউল ইসলাম। তার ভারতীয় একটি পাসপোর্ট ও বাংলাদেশি পাসপোর্ট আমাদের কাছে রয়েছে।’

আরও পড়ুন:
আরাব খানকে আটকের খবর
আরাব খানের বিরুদ্ধে রেড নোটিশের খবর পেয়েছি: আইজিপি
আরাব নামে কাউকে চিনি না: বেনজীর
আরাবকে ফেরাতে ইন্টারপোলকে চিঠি
দুবাইয়ে খুনের আসামির বিষয়ে সাকিবকে কোন মাধ্যমে জানিয়েছিল পুলিশ

মন্তব্য

p
উপরে