রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে নির্ভয়ে ভোটকেন্দ্রে এসে পছন্দের প্রার্থীদের ভোট দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার রাশিদা সুলতানা। বলেছেন, এই ভোট অবাধ ও সুষ্ঠু করতে যা যা করার দরকার, তার সবই করবে নির্বাচন কমিশন।
বৃহস্পতিবার দুপুরে রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন উপলক্ষে রংপুর সরকারি কলেজ অডিটরিয়ামে প্রিসাইডিং কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে এসব কথা বলেন এই নির্বাচন কমিশনার।
২৭ ডিসেম্বর উত্তরের এই সিটি করপোরেশনে হতে যাচ্ছে ভোটের লড়াই। গতবারের বিজয়ী জাতীয় পার্টিকে চ্যালেঞ্জ করছে প্রথম নির্বাচনে জয় পাওয়া আওয়ামী লীগ। আরও সাত প্রার্থীও ভোটের মাঠে চালাচ্ছেন প্রচার।
জাতীয় পার্টির প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বলেছেন, ভোটে কোনো অনিয়ম হলে তারা তাৎক্ষণিক অ্যাকশন নেবেন।
গত ফেব্রুয়ারিতে দায়িত্ব নেয়া নির্বাচন কমিশনের অধীনে এখন পর্যন্ত যেসব ভোট হয়েছে, তার মধ্যে প্রায় সবগুলোই হয়েছে শান্তিপূর্ণ। গাইবান্ধার একটি আসনে উপনির্বাচনে কারচুপির প্রমাণ পেয়ে ভোট চলার সময় তাৎক্ষণিক নির্দেশে নির্বাচন স্থগিতের ঘোষণাও এসেছে। বাংলাদেশে কোনো নির্বাচন কমিশন প্রথমবারের মতো এই ক্ষমতার প্রয়োগ করল।
নির্বাচন কমিশনার রাশিদা বলেন, ‘নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে আইনের কাঠামোয় যা যা দরকার তার সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হবে। প্রয়োজনমতো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দায়িত্বে নিয়োজিত থাকবে।’
তিনি বলেন, ‘নির্বাচন চলাকালীন সময়ে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করবেন। এ সময় প্রশাসনের কেউ হস্তক্ষেপ কিংবা প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করলে আমরা নির্বাচন কমিশনকে জানাতে বলেছি। এ রকম কিছু ঘটলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
রংপুরে ভোট হতে যাচ্ছে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন বা ইভিএমে। এই বিষয়টি নিয়েও কথা বলেন নির্বাচন কমিশনার রাশেদা। বলেন, ‘ইভিএমের মাধ্যমে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব।’
রিটার্নিং কর্মকর্তা আবদুল বাতেন, রংপুর বিভাগীয় কমিশনার সাবিরুল ইসলাম, রংপুর মহানগর পুলিশের কমিশনার নুরে আলম মিনা, জেলা প্রশাসক চিত্রলেখা নাজনীনসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন:দেশের বড় বড় রাজনৈতিক দলগুলো যদি নির্বাচনে অংশ না নেয় তাহলে সে নির্বাচনকে পুরোপুরি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন বলা যাবে না বলে মনে করেন নির্বাচন কমিশনার (ইসি) মো. আলমগীর। তবে দেশের ইতিহাসে যতগুলো নির্বাচন হয়েছে কোনো নির্বাচনেই সবগুলো দল অংশ নেয়নি বলে জানান এই কমিশনার।
বুধবার রাজধানীর আগারগাওঁয়ে নির্বাচন ভবনে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে মো. আলমগীর এসব কথা বলেন।
সবগুলো দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলে সেটাকে তারা অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন বলবেন জানিয়ে নির্বাচন কমিশনার আলমগীর বলেন, ‘তবে বাস্তবতা হচ্ছে যে দেশের ইতিহাসে যতগুলো নির্বাচন হয়েছে কোনো নির্বাচেনেই সবগুলো দল অংশগ্রহণ করেনি। কাজেই সেই নির্বাচনগুলোকে অংশগ্রহণমূলক হয়নি বলা যাবে না।
‘আপনারা দেখবেন ৭০ সালের নির্বাচনে কিন্তু সব দল অংশ নেয়নি। কিছু কিছু দল সেই নির্বাচনের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছিল। কাজেই এক দুইটা রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ না করলেই যে অংশগ্রহণমূলক বলা যাবে না; একথা বলা যাবে না। তবে এটা ঠিক যে যেগেুলো বড়বড় রাজনৈতিক দল আছে, সে বড়বড় দলগুলো অংশগ্রহণমূলক না করে তাহলে পুরোপুরি অংশগ্রহণমূলক বলা যাবে না।’
সংসদীয় আসনের সীমানা নিয়ে ১৮৬ আবেদন পড়েছে উল্লেখ করে এই কমিশনার বলেন,‘ ১৮৬টা আবেদন পড়েছে। ১২৬টা আপত্তি খসড়ার বিপক্ষে, ৬০টি পড়েছে পক্ষে। পক্ষে-বিপক্ষে থাকলেও শুনানি। ঈদের আগে শুনানি হবে কি-না বলা যাচ্ছে না। জুনের মধ্যে আমরা সিদ্ধান্ত নেবো। শুনানি শুরু করার তারিখ এখনো হয়নি।’
বিএনপি মহাসচিব মির্জ ফখরুল ইসলাম আলমগীর চিঠির জবাবে দেবেন না, এখন কী করবেন- এমন প্রশ্নে এই কমিশনার বলেন, ‘আমরা কমিশন বৈঠকে আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবো। আমরা একটা সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করবো। এরপর আবার বসে সিদ্ধান্ত করবো। পরবর্তী পদক্ষেপ আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নেবো।’
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কী প্রার্থী হতে পারবেন- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘উনি নমিমেশন সাবমিট করলে রিটার্নিং কর্মকর্তা অবস্থা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবেন অবস্থা কী। কারণ এখন যে অবস্থা, আর তখনকার অবস্থা তো আলাদা হতে পার। এই মুহূর্তে তো বলা যাবে না।’
আরও পড়ুন:বিএনপি নেত্রী রুমিন ফারহানার ছেড়ে যাওয়া সংরক্ষিত নারী সংসদীয় আসনের উপ-নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হলেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদের সহ-সভাপতি আফরোজা হক রিনা।
জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনুর স্ত্রী আফজরোজা হক রিনা বর্তমানে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ও জাতীয় নারী জোটের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক।
ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, সোমবার বিকেল ৪টা পর্যন্ত এই উপ-নির্বাচনে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ সময় ছিল। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে মনোনয়ন প্রত্যাহার করে না নেয়ায় এবং আর কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী না থাকায় আফরোজা হক রিনাকে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী ঘোষণা করেন নির্বাচন কমিশনের (ইসি) যুগ্ম সচিব ও রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. আবদুল বাতেন।
আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতিতে আসনটি ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ পেলেও তা ১৪ দলের জোটের শরিককে দেয়া হল। একাদশ সংসদে জাসদের তিনজন সংসদ সদস্য রয়েছেন। এখন সংরক্ষিত একটি আসনও তাদের দখলে।
গত ১০ ডিসেম্বর বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশ থেকে দলটির ৭ সংসদ সদস্য পদত্যাগের ঘোষণা দেন। তাদের পদত্যাগের পর শূন্য হওয়া ছয় আসনে উপ-নির্বাচন হয় ১ ফেব্রুয়ারি ।
২৮ ফেব্রুয়ারি আওয়ামী লীগের প্যাডে ১৪ দলের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দেন আফরোজা হক রিনা। ২ মার্চ বাছাইয়ে মনোনয়নপত্রটি বৈধ হয়। ২০ মার্চ এই আসনের উপ-নির্বাচনে ভোট হওয়ার কথা ছিল।
আরও পড়ুন:বিএনপি নেত্রী রুমিন ফারহানার ছেড়ে যাওয়া সংরক্ষিত নারী সংসদীয় আসনের উপ-নির্বাচনে মনোনয়পত্র জমা দিযেছেন জাসদের সভাপতি ও সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর স্ত্রী আফরোজা হক রীনা।
এই নির্বাচনে জাসদের সহসভাপতি ও ১৪ দলীয় জোটের প্রার্থী রীনাকে সমর্থন দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।
মঙ্গলবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে রিটার্নিং কর্মকর্তা যুগ্মসচিব মো. আব্দুল বাতেনের কাছে মনোনয়নপত্র জমা দেন তিনি। তার সঙ্গে জাসদের সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার নেতৃত্বে নেতা-কর্মীরা ছিলেন।
ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, সংরক্ষিত আসনের এ উপনির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমার শেষ তারিখ ২৮ ফেব্রুয়ারি। মনোনয়নপত্র বাছাই ২ মার্চ। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন ৬ মার্চ। এরপর ২০ মার্চ ভোট হবে।
একক প্রার্থী হলে রীনা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হবেন। একাদশ সংসদে জাসদের তিনজন সংসদ সদস্য রয়েছেন। এখন সংরক্ষিত একটি আসনও তাদের হতে যাচ্ছে।
আফরোজা ১৯৫১ সালের ৫ অক্টোবর ঢাকার নবাবগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের সঙ্গে যুক্ত হন ইডেন কলেজে পড়ার সময়ে। ১৯৬৯ সালে ছাত্রী সংসদ নির্বাচনে সমাজসেবা সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৭৫ সালে সহযোদ্ধা ইনুকে বিয়ে করেন রীনা। ১৯৯৮ সালে জাসদের কাউন্সিলে প্রথমবারের মতো কেন্দ্রীয় কমিটিতে আসেন তিনি।
আরও পড়ুন:দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সংসদীয় আসনের সীমানা চূড়ান্ত করেছে কাজী হাবিবুল আউয়াল নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন (ইসি)। বিদায়ী নূরুল হুদা কমিশনের চূড়ান্ত করে যাওয়া সীমানাই সেখানে অক্ষুণ্ন রয়েছে। সেই খসড়া সীমানার ওপর সংশ্লিষ্ট এলাকার যেকোনো ব্যক্তি দাবি-আপত্তি জানানোর সময় পাবেন ২০ দিন।
রাজধানীর আগারগাওঁয়ে নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে রোববার নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর এসব কথা বলেন।
মো. আলমগীর বলেন, ‘কালকের মধ্যে গেজেট হয়ে যাবে। এখানে নতুন কিছুই নেই। ২০১৮ সালে যে সীমানা নির্ধারণ করা হয়েছিল, সেটাই অক্ষুণ্ন রয়েছে। শুধু প্রশাসনিক কারণে নামের পরিবর্তন হয়েছে অথবা প্রশাসনিক বিভক্তি যেগুলো হয়েছে, সেগুলো পুরনো নাম বাদ দিয়ে নতুন নাম দিয়ে করা হয়েছে। কোনো পরিবর্তন নেই। সম্ভবত পাঁচ-ছয়টা এ ধরনের হতে পারে। কমিশন অনুমোদন করেছে। এখন সচিব এটি গেজেট করবেন।’
পরিসংখ্যান ব্যুরোর জনশুমারির চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করতে আরও বছরখানেক সময় লাগবে বলে জানান এই কমিশনার। তিনি বলেন,‘ কিন্তু ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারির মধ্যে সংসদ নির্বাচন করতে হবে। তাই আমরা অপেক্ষা তো করতে পারছি না। তারা খসড়া যেটা দিয়েছে সেটা আমলে নিয়েছি। তবে প্রশাসনিক অখণ্ডতা এবং ভৌগলিক বিষয়টাকেই বেশি গুরুত্ব দিয়েছি।’
খসড়া সীমানার প্রসঙ্গ টেনে এই কমিশনার বলেন, ‘এটা প্রকাশ করার পর যদি জনপ্রতিনিধি বা স্থানীয় সমস্যা মনে করেন, ২০ দিন সময় দেব, তারা আবেদন করতে পারবেন। প্রত্যেকটি আবেদনই আমরা শুনানি করবো। তাদের বক্তব্য যদি সঠিক হয়, কেউ যদি বিরোধিতা না করেন এবং আমাদের কাছে যদি প্রতীয়মান হয় যে তাদের বক্তব্য যৌক্তিক, তখন হয়তো আমরা পরিবর্তন আনতে পারি। এছাড়া কোনো পরিবর্তন হবে না।’
অন্য এক প্রশ্নের জবাবে এই কমিশনার বলেন, ‘আগে একটা উপজেলা ছিল এখন দুইটা উপজেলা হয়েছে, এমন ক্ষেত্রে আমরা নতুন নাম অন্তর্ভুক্ত করেছি। আর কোনো পরিবর্তন আনিনি। কোনো রাজনীতিবিদ বা যে কেউ এই ক্ষেত্রে সীমানা পরিবর্তনের আবেদন করতে পারবেন।’
দেশের যে জনসংখ্যা এতে প্রতি আসনে পাঁচ লাখ ৫০ হাজার ভোটার জানিয়ে তিনি বলেন,‘ জনসংখ্যার হিসেবে যদি আসনের সীমানা করি তাহলে দেখা যাবে যেকোনো কোনো জেলায় একটা আসন হবে। আবার কোনো কোনো জেলা থেকে আসন কেটে এনে অন্য জেলায় দিতে হবে। যেমন ঢাকায় যদি পাঁচ লাখ ৫০ হাজারের ভিত্তিতে দিই, তাহলে আরও ১০টা আসন বাড়াতে হবে। গাজীপুরে পাঁচটা, চট্টগ্রামে দুইটা, খুলনায় মনে হয় দুইটা বাড়াতে হয়, রাজশাহীতে বাড়াতে হয়। এভাবে যদি সব শহরে চলে আসে আসন, তাহলে অন্য জেলায় তো আসন হারাবে। একজন সংসদ সদস্যের পক্ষে জনসংখ্যার আশা-আকাঙ্ক্ষার জন্য কাজ করবেন, কীভাবে করবেন। এজন্যই প্রশাসনিক ও ভৌগলিক অখণ্ডতাকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছি। আইনেও তাই বলা হয়েছে।’
আরও পড়ুন:যেসব বিষয় রাজনৈতিকভাবে সমাধানযোগ্য সেগুলোর সমাধান নির্বাচন কমিশনের (ইসি) কাছে প্রত্যাশা করাও সমীচীন নয় বলে মনে করেন নির্বাচন কমিশনার (ইসি) আহসান হাবিব খান। সাংবিধানিকভাবে নিজেদের দায়িত্ব যতটুকু তার শতভাগ তারা পালন করবেন বলে জানান তিনি।
রোববার সাংবাদিকদের কাছে দেয়া এক লিখিত বক্তব্যে ইসি আহসান হাবিব এসব কথা বলেন। এতে দায়িত্বের এক বছরে নিজেদের কাজের ফিরিস্তিও তুলে ধরা হয়।
আহসান হাবিব বলেন, ‘অংশগ্রহণমূলক, অবাধ, নিরপেক্ষ, সুষ্ঠাভাবে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন করতে আমরা কর্মপরিকল্পনা ধরে এগিয়ে যাচ্ছি। সব অংশীজনের সঙ্গে সংলাপ করেছি, তা অব্যাহত থাকবে। নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে যা করার সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা থাকবে।
‘কিন্তু রাজনৈতিকভাবে সমাধানযোগ্য কোনো বিষয় কমিশনের কাছে প্রত্যাশা করাও সমীচীন নয়। সাংবিধানিকভাবে আমাদের দায়িত্ব যতটুকু তার শতভাগ আমরা পালন করে যাবো।’
তিনি বলেন, ‘কত সময় পার হলো, প্রথম বছর গেল কিংবা শেষ বছর এলো-এটি আমার কাছে মুখ্য নয়। সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন করছি; এটা করেই যাবো। প্রতিটি কাজ স্বচ্ছতার সঙ্গেই করবো।
‘দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে যত নির্বাচন করেছি সবগুলোই আমরা সততার সাথে আন্তরিকভাবে করেছি এবং প্রত্যাশিত সফলতা অর্জন করেছি। আমাদের কাজের মূল্যায়ন সময়ই বলবে।’
ইসি আহসান হাবিব বলেন, ‘আলাদা কোনো চ্যালেঞ্জ নয়, প্রতিটি নির্বাচন যেভাবে সুন্দর ও গ্রহণযোগ্য করেছি; একইভাবে আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনও করবো ইনশাল্লাহ। প্রধান নির্বাচন কমিশনারও ইতোমধ্যে বলেছেন, দেশে-বিদেশে সবার কাছে অবাধ, নিরপেক্ষ ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন করতে আমরা বদ্ধ পরিকর।
‘আমরা কঠোর বার্তা দিতে পেরেছি নির্বাচন ব্যবস্থাপনায়; গাইবান্ধা উপনির্বাচন অনিয়মের কারণে বন্ধ করে দিয়েছিলাম। সিটি নির্বাচনগুলো সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হয়েছে। ভোটারদের আস্থা ফিরছে। সামনেও নির্বাচন রয়েছে। সংসদ নির্বাচনেও আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকবে সুন্দর নির্বাচনের।’
বিএনপির ছেড়ে দেয়া ছয় আসনের উপনির্বাচন প্রসঙ্গ টেনে এই কমিশনার বলেন, ‘প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক না হওয়ায় ও উপনির্বাচন নিয়ে আগ্রহ কম থাকায় ভোটার উপস্থিতি তুলনামূলক কম হয়েছে। এটা সব নির্বাচনের দৃষ্টান্ত নয়। প্রতিটি নির্বাচনে আমাদের কঠোর মনোভাব, স্বচ্ছতা ও সদিচ্ছার কোনো ঘাটতি ছিল না, আগামীতেও থাকবে না।’
তিনি বলেন, ‘আমি বরারবই বলেছি, দায়িত্ব নেয়ার পর বিভিন্ন বিষয়ে রাজনৈতিক বিভেদ আর প্রশ্নের মোকাবিলা করতে হয়েছে। সব দলের প্রতি আহ্বান অব্যাহত থাকবে, ভোটে অংশ নিন। কমিশনের একার পক্ষে সব সম্ভব হবে না; সবার সহযোগিতাও দরকার। আমাদের কর্মকাণ্ড দিয়ে প্রমাণ দিয়েছি, আস্থা অর্জনে এগিয়ে গেছি। উদ্দেশ্য একটাই- অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করা।'
ইসি আহসান হাবিব বলেন, ‘সর্বোচ্চ দেড় শ আসনে ইভিএমে ভোট করার পরিকল্পনা নিয়ে আমাদের কোনো সময় নষ্ট হয়নি; বরং জনসচেতনতা বেড়েছে। ইভিএমে সবগুলো নির্বাচন করেছি আমরা। সারা দেশেই ইভিএম নিয়ে ভোটারদের আগ্রহ ও সচেতনা তৈরি করতে পেরেছি। অর্থনৈতিক বাস্তবতা ও সবার প্রত্যাশা বিবেচনা করে
‘বড় পরিসরে ইভিএমে ভোট হচ্ছে না। তবে বিদ্যমান সচল ও কার্যক্ষম ইভিএম এর সর্বোচ্চ ব্যবহার করা হবে। এ নিয়ে অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের প্রত্যাশা পূরণ হয়েছে বলে মনে করি। এমন পরিস্থিতিতে সব দল নির্বাচনে অংশ নেবে এবং কমিশনকে সহায়তা করবে বলেই প্রত্যাশা আমাদের।'
তিনি বলেন, ‘অবাধ ও সুস্ঠু নির্বাচন গনতন্ত্রের মৌলিক বৈশিষ্ট্য এবং ভোট সকল নাগরিকের অধিকার। বর্তমান কমিশন এ লক্ষ্যেই কাজ করছে। সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণের মাধ্যমেই একটি অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন সম্ভব। বর্তমান কমিশন দায়িত্ব গ্রহণের পর হতে এই কর্তব্য পালনে সর্বদা সচেষ্ট।
‘দেশ ও জাতিকে একটি অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দেয়ার জন্য কমিশন বিএনপিসহ সব রাজনৈতিক দলকে নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য আন্তরিক আহ্বান জানিয়ে আসছে। কারণ কমিশন বিশ্বাস করে মূল ধারার রাজনৈতিক দল গুলির নির্বাচনে অংশগ্রহণের মাধ্যমই আসন্ন দ্বাদশ সংসদীয় নির্বাচনকে অর্থবহভাবে গ্রহণযোগ্য করা সম্ভব। কমিশন নির্বাচনের আগ পর্যন্ত সকল রাজনৈতিক দলকে নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য আন্তরিক আহ্বান জানাতে থাকবে।’
কাজ করলে কিছু না কিছু অনিচ্ছাকৃত ভুল বা আলোচনা বা সমালোচনা হতেই পারে জানিয়ে এই কমিশণার বলেন, ‘তবে যেসব বিতর্কের কথা বলা হচ্ছে সেগুলো উল্লেখযোগ্য কিছু নয়। দু একটি ক্ষেত্রে ভুল বোঝাবুঝি থেকে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছিল। তবে এসবে ইসির কাজে কোন প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেননি।’
আরও পড়ুন:
বাংলাদেশ কোনো হস্তক্ষেপ ছাড়া পক্ষপাতহীন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন দেখতে চায় আন্তর্জাতিক নির্বাচন পর্যবেক্ষণ সংস্থা ইলেকশন মনিটরিং ফোরাম (ইএমএফ)। পাশাপাশি নির্বাচের ব্যয় কমানোর বিষয়েও পরামর্শ দিয়েছে সংস্থাটি।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে বৃহস্পতিবার বৈঠক শেষে সংস্থাটির প্রতিনিধিদল এসব কথা জানান।
ইএমএফের সদস্য এবং নেপালের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ঝালা নাথ খানাল সাংবাদিকদের বলেন, 'কীভাবে খুব পক্ষপাতহীন এবং শান্তিপূর্ণ নির্বাচন করা যায়, এই দিক থেকে আমাদের অনেক কিছু করতে হবে। আমরা এই বিষয়টিও আলোচনা করেছি যে, নির্বাচন খুব ব্যয় বহুল হচ্ছে বিশ্বব্যাপী। কীভাবে এটি কমানো যায়, আমরা তা নিয়ে আমাদের মতামত আদান প্রদান করেছি।'
জার্মানভিত্তিক সংস্থা জিবিপি ইন্টারন্যাশনালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ভলকার ইউ. ফ্রেডরিচ বলেন, 'আমরা সিইসির কাছ থেকে নির্বাচন আয়োজন নিয়ে পরিকল্পনা শুনেছি। আমরা পারস্পারিক মতামত আদান-প্রদান করেছি। কোনোকিছুই পারফেক্ট নয়, এমনকি গণতন্ত্রও নয়।'
দেশের প্রধান বিরোধী দলের অংশগ্রহণের ওপর নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নির্ভর করবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে ফ্রেডরিচ বলেন, এখানে কোনো বাধ্যবাধকতা নেই যে, কোনো একটি দলকে অংশগ্রহণ করতেই হবে।
বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন-নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর, রাশেদা সুলতানা, আনিছুর রহমান এবং ইএমএফ সদস্য নেপালের কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য তাজ মোহাম্মদ মিয়া, সার্ক মানবাধিকার ফাউন্ডেশনের (ভারত) বিশেষ প্রতিনিধি মিসেস স্বপ্না, ইএমএফ চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবেদ আলী, ডুয়েট উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হাবিবুর রহমান, ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আবুল কালাম আজাদ প্রমুখ।
নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির অনড় অবস্থান দেশের জন্য বিপজ্জনক বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই আগামী কয়েকমাসে দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমঝোতা হবে বলেও আশা প্রকাশ করেছেন তিনি।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে বৃহস্পতিবার বিকেলে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ সংস্থা ইলেকশন মনিটরিং ফোরাম (ইএমএফ) প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক শেষে তিনি এসব কথা বলেন।
কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন,'আমরা আশাকরি আগামী কয়েকমাসের মধ্যে একটা রাজনৈতিক সমঝোতা হবে। আসছে নির্বাচনে সব দলই অংশগ্রহণ করবে। আমাদের বিভিন্ন দল থেকে বলা হয়েছে যে, তারাও সমঝোতা হবে বলে বিশ্বাস করে। আমরাও আশাবাদী অবাধ নিরপেক্ষ উৎসবমুখর পরিবেশে ফলপ্রসূভাবে নির্বাচনটি অনুষ্ঠিত হবে। '
নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে দুই দলের অনড় অবস্থান নিয়ে তিনি বলেন,' এটি দেশের জন্য খুব বিপজ্জনক। যদি নির্বাচনে এই অনড় অবস্থার কারণে কোনো বড় দল না আসে তাহলে মূল ফলাফলের ওপর একটা ঝুঁকি থাকবে। কোনো দল ফল মেনে না নিলে এটা নিয়ে অরাজকতা তৈরি হতে পারে। আমরা চাই না ওই ধরনের কোনো পরিস্থিতি। '
নির্বাচন আয়োজন নিয়ে কিছু চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে জানিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন,' আমরা সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন করতে হবে। বর্তমান সংবিধানে যেভাবে আছে আমাদের সেই অনুযায়ী চলতে হবে।'
ইএমএফ প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে সিইসি বলেন,'আসলে এটা ছিল অনেকটা অ্যাকাডেমিক আলোচনা। এখানে তারা আমাদের পরামর্শ দেন নাই। আমরাও পরামর্শ দিই নাই। আমরা গণতান্ত্রিক চ্যালেঞ্জ নিয়ে আলোচনা করেছি। নির্বাচনে অর্থ ব্যয় গরীব মানুষের পক্ষে সম্ভব হয় না। এই অর্থ ব্যয়টাকে যদি লিমিট করে আরও গণতান্ত্রিক করা যেত। যেটা খুব কঠিন।'
বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন-নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর, রাশেদা সুলতানা, আনিছুর রহমান এবং ইএমএফ সদস্য নেপালের কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য তাজ মোহাম্মদ মিয়া, সার্ক মানবাধিকার ফাউন্ডেশনের (ভারত) বিশেষ প্রতিনিধি মিসেস স্বপ্না, ইএমএফ চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবেদ আলী, ডুয়েট উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হাবিবুর রহমান, ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আবুল কালাম আজাদ প্রমুখ।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য