আগামীতে কে ক্ষমতায় আসবে, সে বিষয়ে সিদ্ধান্তের ভার জনগণের হাতে ছেড়ে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বুধবার সারা দেশে মানোন্নয়ন করা ১০০টি মহাসড়কের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ মত ব্যক্ত করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি জানি না, বাংলাদেশের মানুষ এরপরেও যারা বলে আওয়ামী লীগ দেশ ধ্বংস করে দিয়েছে, কিছুই নাকি করে নাই। দেশের মানুষ সেটা বিশ্বাস করবে কি না, সেটাই আমার প্রশ্ন। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ আর ২০০৯ থেকে ২০২২ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়। এর বাহিরে যারা ৩০ বছর ক্ষমতায় ছিল, তারা দেশের জন্য কী করেছে আর আওয়ামী লীগ সরকার কী করেছে? আমি আশা করি দেশবাসী অন্তত একটু সেটা বিবেচনা করে দেখবেন।
‘আমরা বিশ্বাস করি সাধারণ মানুষের উন্নয়নে। আমরা বিশ্বাস করি গণমানুষ যেন ভালো জীবনযাপন করতে পারে। কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা, মানুষের জীবনমান উন্নয়ন করা, মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, পুষ্টি সেবা নিশ্চিত করা, স্বাস্থ্য সেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়া, শিক্ষার প্রসার ঘটনো, প্রযুক্তি ব্যবহার করে জ্ঞান ও দক্ষতায় প্রতিটি বাঙালি যেন তৈরি হয়, সে লক্ষ্য নিয়ে আওয়ামী লীগ সরকার কাজ করে যাচ্ছে। আমরা এ দেশের মানুষকে একটু শান্তি, নিরাপত্তা ও উন্নয়ন নিশ্চিত করতে চাই। এটা আমরা বারবার প্রমাণ করেছি।’
তিনি বলেন, ‘মানি লন্ডারিং, অগ্নি সন্ত্রাসকারী, গ্রেনেড হামলাকারী, দেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলা এ ধরনের মানসিকতার কেউ যাতে দেশের…আর আমাদের স্বাধীনতা বিশ্বাস যারা করে না, যারা জয়বাংলা স্লোগান দিতে বিশ্বাস করে না, যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করে না, তারা এ দেশের কোনো উন্নতিও চায় না। সেই কথা সকলকে স্মরণ রাখতে হবে। কখন বাংলাদেশের মানুষ উন্নত জীবন পেল আর কখন তারা দুর্নীতির কবলে পড়ে নিজের জীবনমান ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়েছিল, এটা সকলকে স্মরণ করতে হবে।
‘জনগণকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে তারা কী চান। আমি শুধু এটুকু বলব, আওয়ামী লীগ জাতির পিতার হাতে গড়া সংগঠন। ক্ষমতায় আসলে জনগণের কল্যাণেই কাজ করে আর আমরা কাজ করেই যাব।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘যারা বলে আওয়ামী লীগ কিছুই করেনি, ধ্বংসই করেছে, তাদের প্রশ্ন করি, ১০০টি মহসড়কের নামের তালিকা আমরা বললাম। অধিকাংশ সড়ক একসময় আমরা তৈরি করেছি। এখন উন্নত করে দিলাম। আর নতুন সড়ক করে দিলাম।
‘একশ সেতু এক দিনে উদ্বোধন, ১০০ সড়ক এক দিনে উদ্বোধন, এটা অতীতে কেউ করতে পেরেছে? পারেনি। পারে আওয়ামী লীগই, এটাই প্রমাণিত সত্য।’
‘জুতা হাতে রাস্তায় চলতে হয় না’
বর্তমান সরকারের সময়ে সড়ক ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরে সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমার মনে হয় দেশের আর কোনো সড়কই বাকি নেই। এই ১০০টি সড়ক, যেগুলো আগে করা হয়েছিল, সেগুলোকে উন্নতমানের করা হলো।
‘খুব নিরাপদে সড়ক যাতায়াতে বড় সুবিধা হবে যেটা, অর্থনৈতিকভাবে এসব অঞ্চলের মানুষ লাভবান হবে। আমরা যখনই সরকারে এসেছি, যোগাযোগ ব্যবস্থার ওপর সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছি। পাশাপাশি শুধু সড়কই না; রেলপথ, আকাশপথ এবং নৌপথ সব ক্ষেত্রেই আমরা উন্নয়ন করে যাচ্ছি। উন্নয়নের যে মূল চাবিকাঠি, একটা হলো যোগাযোগ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় স্থানীয়ভাবে, অর্থাৎ উপজেলা, ইউনিয়ন, ওয়ার্ড পর্যন্ত রাস্তা নির্মাণ করা হচ্ছে। আবার ওয়ার্ড, ইউনিয়ন থেকে গ্রাম পর্যন্ত হাঁটা পথ নির্মাণ করা হচ্ছে। আগে মানুষ স্যান্ডেল বা জুতা হাতে করে রাস্তা দিয়ে চলত। এখন আর সেভাবে চলতে হয় না।
‘এখন স্যান্ডেল, জুতা পরার ক্ষমতাও যেমন হয়েছে, মাথাপিছু আয়ও যেমন বৃদ্ধি পেয়েছে, সঙ্গে সঙ্গে চলার সুযোগটাও হয়েছে। পাশাপাশি রিকশা, ভ্যান, সাইকেল, মোটরসাইকেল, গাড়ি সবই চলাচল করতে পারে। সমগ্র গ্রাম পর্যায়ে একটি যোগাযোগ নেটওয়ার্ক আমরা গড়ে তুলেছি।’
সড়ক নিরাপত্তায় প্রশিক্ষণ ও বিশ্রামাগারের তাগিদ
সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ড্রাইভার ও চালকদের প্রশিক্ষণের পাশাপাশি সাধারণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির তাগিদ দিয়েছেন সরকারপ্রধান।
তিনি বলেন, ‘এখানে কতগুলো কাজ করতে হবে। সড়কের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। এর জন্য ড্রাইভার ও হেলপারদের ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে ব্যাপকভাবে। সেই সঙ্গে সড়কপথে চলতে হলে কয়েকটি নিয়ম মেনে চলতে হবে। সেই সম্পর্কে একদম স্কুল থেকে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দিতে হবে।
‘সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে হবে। প্রয়োজনে প্রতিটি জায়গায় সাইনবোর্ড টানিয়ে, হাটে-ঘাটে প্রদর্শন করতে হবে। আর এখন তো সোশ্যাল মিডিয়া আছে, টেলিভিশন আছে। এগুলোর মাধ্যমে এটার ব্যাপক প্রচার করতে হবে। আমরা সেতু বা সড়ক করে দিচ্ছি, কিন্তু এগুলো রক্ষণাবেক্ষণ, যথাযথ ব্যবহার করা এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার বিষয়ে দৃষ্টি দিতে হবে। বাস-গাড়ি যেটাতেই চড়েন না কেন, কোনো কিছু রাস্তায় ছুড়ে ফেলবেন না। প্রত্যেকের কাছে ময়লা ফেলার ব্যাগ রাখবেন। তার ভেতরে ফেলবেন এবং জায়গামতো ফেলে দেবেন।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের যারা চালক, মহাসড়কগুলোতে তাদের জন্য বিশ্রামাগার তৈরি করা। অন্তত কয়েক কিলোমিটার চলার পর তারা যেন যথাযথ বিশ্রাম নিতে পারে, এ ব্যবস্থা রাখার বিষয়ে আমি এরই মধ্যে নির্দেশ দিয়েছি। কিছু কিছু জায়গায় করা হচ্ছে।
‘এটা হিসাব মতো কতক্ষণ একটানা চলতে পারে। দুই ঘণ্টা বা তিন ঘণ্টা, তারপরেই কিন্তু রেস্ট দরকার বা বিকল্প কাউকে রাখতে হবে। তাহলে এক্সিডেন্ট কমে যাবে।’
সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমাদের দেশের প্রায় সবাই ড্রাইভার ব্যবহার করেন। নিজেরা গাড়ি চালান না। সেই ড্রাইভার সময়মতো খাবার পানি বা বিশ্রাম পেল কি না, এটা গাড়ির মালিকদের খেয়াল রাখতে হবে। অনেক সময় ক্লান্ত হয়ে গেলে চোখ বন্ধ হয়ে যাবে আর এক্সিডেন্ট হবে। সেটা যাতে না হয় সেদিকে দৃষ্টি দিতে হবে।’
সড়ক দুর্ঘটনায় সংঘবদ্ধ পিটুনির মতো কোনো ঘটনা না ঘটাতে জনগনকে আহ্বান জানান সরকারপ্রধান। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আরেকটি বিষয় আমি বলব, একটি এক্সিডেন্ট হলো বা একটি মানুষ ধাক্কা খেয়ে পড়ে গেল, সেই ড্রাইভার কিন্তু আর গাড়ি থামায় না; ভয় পায়।
‘কারণ সঙ্গে সঙ্গে জনগণ দুর্ঘটনা কবলিতকে সাহায্য না করে ড্রাইভারকে মারতে থাকে। গণপিটুনিতে ড্রাইভার মারাও যায়। এই কাজটা দয়া করে কেউ করবেন না। কেউ ইচ্ছা করে মানুষ মারে না। যখন এক্সিডেন্ট হয়, এটা ড্রাইভারের জন্যও হতে পারে বা পথচারীর জন্য হতে পারে, কিন্তু আইন নিজের হাতে তুলে নেবেন না।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা যদি ধরেন থানায় দিয়ে দেন, পুলিশে দিয়ে দেন, বিচার হবে। আমরা সড়ক আইনও করেছি এটা বিচারের জন্য, কিন্তু গণপিটুনির জন্য যেটা হয়, এক্সিডেন্ট হলে ড্রাইভার ভয়ে পালাতে গিয়ে তার ওপর দিয়েই চলে গেল। অথচ মানুষটি কিন্তু বাঁচতেও পারত।
‘এই ভীতি থেকে ড্রাইভারকে মুক্ত করতে হবে। এটা জনগণের দায়িত্ব। ড্রাইভারকে পিটিয়ে মেরে ফেলে সমস্যার সমাধান হবে না। এ বিষয়ে প্রত্যেক মানুষকে সচেতন হতে হবে।’
আরও পড়ুন:ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কর্মপরিকল্পনা (রোডম্যাপ) আগামীকাল বৃহস্পতিবার ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ।
আজ বুধবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনের মিডিয়া সেন্টারে এক ব্রিফিংয়ে সচিব সাংবাদিকদের এ কথা জানান।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ইসি সচিব বলেন, ‘আমরা যে কর্মপরিকল্পনা (রোডম্যাপ) করেছি, সে কর্মপরিকল্পনাটা আপনাদের জানাবো। আমি ঢাকার বাইরে থাকায় একটু পিছিয়ে পড়েছি। এটা আমার টেবিলে এখন আছে। আগামীকাল পর্যন্ত একটু অপেক্ষা করেন।’
এদিকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিনের সভাপতিত্বে চার নির্বাচন কমিশনার ও ইসি সচিব আজ এক বৈঠকে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কর্মপরিকল্পনা (রোডম্যাপ) অনুমোদন করেছে কমিশন।
এখন যেকোনো সময় নির্বাচনের এই রোডম্যাপ আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করা হতে পারে বলে ইসির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে একজন নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘কর্মপরিকল্পনার সবকিছু চূড়ান্ত হয়ে গেছে। অনুমোদন হয়েছে, এখন শুধু টাইপিং চলছে।’
উল্লেখ্য জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে ইসির পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে দল নিবন্ধন, সীমানা নির্ধারণ, নির্বাচন পর্যবেক্ষক, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংস্কার, বিধিমালা ও নীতিমালা জারি, প্রবাসীদের জন্য আইটি সাপোর্টেড নিবন্ধন ও পোষ্টাল ব্যালট পদ্ধতি ও নির্বাচনী সরঞ্জাম কেনাকাটা বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়েছে রোডম্যাপে।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কর্মপরিকল্পনা (রোডম্যাপ) অনুমোদন করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
যে কোনো সময় এই নির্বাচনের রোডম্যাপ আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করতে পারে ইসি।
আজ বুধবার দুপুরে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন, চার নির্বাচন কমিশনার ও ইসি সচিব এ নিয়ে বৈঠকও করেছেন।
বৈঠকে কর্মপরিকল্পনার (রোডম্যাপ) অনুমোদন দিয়েছে কমিশন। এখন, যে কোনো সময় নির্বাচনের এই রোডম্যাপ আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করা হতে পারে বলে ইসি’র কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেন, ‘কর্মপরিকল্পনার সবকিছু চূড়ান্ত হয়ে গেছে। অনুমোদন হয়েছে, এখন শুধু টাইপিং চলছে।’
এদিকে সংসদীয় আসনের পুনঃনির্ধারিত সীমানার বিষয়ে ইসি’র শুনানি আজ বিকেলে শেষ হচ্ছে।
শুনানি শেষে বিকেলে সার্বিক বিষয় নিয়ে ইসি’র সিনিয়র সচিব আকতার আহমেদের ব্রিফিং করার কথা রয়েছে।
এ বিষয়ে ইসি সচিব আখতার আহমেদ বলেন, ‘আমরা ব্রিফিংয়ে আসব। তখন সীমানার শুনানির বিষয়টির পাশাপাশি এ বিষয়টিও (রোডম্যাপ) দেখা যাবে।’
এর আগে গত বৃহস্পতিবার ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের কর্মপরিকল্পনা নিয়ে চার নির্বাচন কমিশনার ও ইসি কর্মকর্তা বৈঠক করেন।
ওই দিন নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেছিলেন, বিস্তারিত কর্মপরিকল্পনার বিষয়ে ইসি সচিব ব্রিফ করবেন।
গত ১৮ আগস্ট ইসি’র সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ জানিয়ে ছিলেন, ‘একটা কর্মপরিকল্পনার (নির্বাচনী রোডম্যাপ) বিষয়ে বলেছিলাম, আমরা এই সপ্তাহে এটা করবো। কর্মপরিকল্পনার তো আমাদের আন্তঃঅনুবিভাগ সম্পর্কিত এবং অন্যান্য প্রাসঙ্গিক বিষয়গুলো নিয়ে। কর্মপরিকল্পনার ড্রাফ্ট করা হয়েছে। ড্রাফ্টটি এখন কমিশনে দিয়ে আমরা অ্যাপ্রুভ করবো।’
শ্রম আইন, ২০০৬ সংশোধনের লক্ষ্যে ত্রিপক্ষীয় পরামর্শ পরিষদ (টিসিসি)-এর ৮৯তম সভায় শ্রমিক, মালিক ও সরকারের মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। গত এক বছরের পর্যালোচনা ও সকল পক্ষের মতামতের ভিত্তিতে শ্রম আইন ২০০৬ সংশোধনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
আজ মঙ্গলবার ঢাকার এক হোটেলে অনুষ্ঠিত এ সভায় সভাপতিত্ব করেন শ্রম ও কর্মসংস্থান এবং নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন। তিনি বলেন, "শ্রমিক ও মালিক পক্ষের পরামর্শের ভিত্তিতে শ্রম আইন যুগোপযোগী করা হবে। এটি বাংলাদেশের শ্রমখাতের জন্য একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ হবে এবং আন্তর্জাতিক মানের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হবে।’
সভায় শ্রমিক ও মালিক পক্ষের প্রতিনিধিরা তাদের মতামত তুলে ধরেন। একটি সুসমন্বিত ও আন্তর্জাতিক মানের শ্রম আইন প্রণয়নের প্রয়োজনীয়তা উপস্থিত সকলেই করেন। অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত এ সভায় সংশোধিত শ্রম আইন দ্রুত সম্পন্ন করার তাগিদ দেওয়া হয়।
সভায় বিশেষ পর্যবেক্ষক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মার্কিন দূতাবাস, কানাডা হাই কমিশন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও)-এর প্রতিনিধিরা। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিশেষ দূত জনাব লুৎফে সিদ্দিকী।
এছাড়াও মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব, বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব লেবার স্টাডিজ (বিলস) এর নির্বাহী পরিচালক এবং শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রধান, বাংলাদেশ এমপ্লয়ার্স ফেডারেশন (বিইএফ)-এর সভাপতি, টিসিসি সদস্যবৃন্দের মধ্যে তাসলিমা আক্তার, কোহিনুর মাহমুদ, বাবুল আকতার , নাজমা আক্তার, রাজেকুজ্জামান রতন, এডভোকেট আতিকুর রহমান, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর এবং শ্রম অধিদপ্তরের কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
বিশ্লেষকদের মতে, এই সংশোধনী বাংলাদেশের শ্রমবাজারকে আরও গতিশীল ও আন্তর্জাতিক মানসম্মত করবে এবং শ্রমিক-মালিক সম্পর্কের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
সমাজকল্যাণ এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ বলেছেন, নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে সারাদেশে কুইক রেসপন্স টিম কাজ করছে।
আজ মঙ্গলবার রাজধানীর গুলশানে একটি হোটেলে জাগো নারী উন্নয়ন সংস্থা আয়োজিত প্রযুক্তি সুবিধাপ্রাপ্ত লিঙ্গ ভিত্তিক সহিংসতা মোকাবেলায় নীতিগত সুপারিশ শীর্ষক জাতীয় সংলাপ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপদেষ্টা একথা বলেন।
সমাজকল্যাণ উপদেষ্টা বলেন, সারাদেশে প্রযুক্তিগত সুবিধা নিয়ে বিভিন্ন স্থানে নারীদের সহিংসতার ঘটনা ঘটছে। এ সকল অপকর্ম প্রতিরোধে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের পরিচালিত কুইক রেসপন্স টিম কাজ করছে।
তিনি বলেন, বর্তমানে বাল্য বিয়ের সংজ্ঞা পাল্টে গেছে। এর মূল কারণ হচ্ছে মোবাইল নামক যন্ত্রটি। মোবাইল প্রযুক্তির অপব্যবহারের ফলে ছোট ছোট মেয়েরা প্রেমের ফাঁদে পড়ে নারী নির্যাতনের শিকার হচ্ছে।
মেয়েরা অবুঝ এজন্য অভিভাবকদেরকে এ বিষয়ে আরো সচেতন হতে হবে। যাতে অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়েরা প্রেমের ফাঁদে পড়ে নারী সহিংসতা শিকার না হয়।
উপদেষ্টা বলেন, জাগো নারী উন্নয়ন সংস্থা, নারী পক্ষ, হিউম্যান রাইটস বাংলাদেশ, সাইবার টিনস ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, বাংলাদেশ ইন্টারনেট গভর্নেন্স ফোরাম, বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড এন্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট), ব্র্যাকসহ বাইশটি সংগঠন আজ নারী নির্যাতন প্রতিরোধে একযোগে কাজ করছে। তিনি সবাইকে ধন্যবাদ জানান।
উপদেষ্টা বলেন এই ২২ টি সংগঠনের প্ল্যাটফর্মে যে সমস্ত শিক্ষিত তরুন যুবক যুবতীরা আছেন তাদেরকে টেকনোলজির মাধ্যমে নারী নির্যাতন প্রতিরোধে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে আসতে হবে।
তিনি বলেন ব্যক্তিগত এবং সামাজিক ও পরিবারের সচেতনতাই পারে একটি মেয়েকে নির্যাতন থেকে রক্ষা করতে। এজন্য সবাইকে আরো সচেতন হতে হবে।
ইলিশের উৎপাদন একদিকে কমছে, এতে প্রাকৃতিক কারণও রয়েছে। নদীর নাব্যতা কমে যাচ্ছে, মেঘনা নদীর অববাহিকায় দূষণের মাত্রা বেড়েছে। আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে বৃষ্টি না হলে ইলিশ মাছ ডিম পাড়তে পারে না। পাশাপাশি বিভিন্ন প্রকৃতিক কারণ ও তথাকথিত উন্নয়নের কারণে নদী ভরাট ও দখল হয়ে যাচ্ছে। এমন মন্তব্য করেছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আক্তার। বরিশাল ক্লাব প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত উপকূলীয় এলাকার মহিষের চারণভূমি ও উন্নয়নের সমস্যা এবং সাধন শীর্ষক জাতীয় কর্মশালা-২০২৫-এ প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, ইলিশ একটি মাইগ্রেটরি মাছ এটি সমুদ্র থেকে নদীতে আসে এবং আবার ফিরে যেতে হয়। কিন্তু বর্তমানে তা হচ্ছে না। সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো ঝাটকা নিধন। কোস্টগার্ড ও নৌবাহিনী অভিযান চালালেও এটি সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করা যায়নি। এছাড়া অবৈধ জালের ব্যবহার ইলিশের প্রাপ্যতা কমাচ্ছে। তবে এসবের বিরুদ্ধে আমরা কার্যকর ব্যবস্থা নিচ্ছি। আশা করছি খুব শীঘ্রই ইলিশের দাম নিয়ন্ত্রণে আসবে।
তিনি জানান,খুব শীঘ্রই ঢাকায় একটি মিটিং অনুষ্ঠিত হবে, যেখানে নদী থেকে মাছ ধরে হাত বদলের সিন্ডিকেট বন্ধ করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে। এ উদ্যোগের মাধ্যমে সাধারণ মানুষ সরাসরি বাজারে মাছ পাবে এবং সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণে আসবে।
ফরিদা আক্তার বলেন, উপকূল এলাকায় মহিষের চারণভূমি সংকুচিত হয়ে গেছে। আমরা গবেষণায় দেখেছি এর পেছনে নানা কারণ রয়েছে। বাড়িঘর তৈরি হচ্ছে, এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও নির্মিত হচ্ছে। আমাদের দেশে গরু, ছাগল ও মহিষ পালন অন্তত মানুষের খাদ্য ও জীবন রক্ষার জন্য জরুরি। চারণভূমি বিষয়ে আমরা দেখছি যে অনেক কিছু পরিকল্পনা বিহীনভাবে তৈরি হচ্ছে। এতে মহিষের মতো গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। তবে সঠিক নীতি ও ব্যবস্থা নিলে এটি দেশের খাদ্য নিরাপত্তায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন,পিকেএসএফ উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. ফজলে রাব্বি সাদেক আহমেদ, বরিশাল বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ড. মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান, জিজেইউএস নির্বাহী পরিচালক জাকির হোসেন মহিন। সভাপতিত্ব করেন প্রফেসর ড. ওমর ফারুক, প্রেসিডেন্ট।
বক্তারা বলেন, নদী ও সমুদ্রের টেকসই ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ইলিশ উৎপাদন বৃদ্ধি করা সম্ভব। মৎস্যজীবী, প্রশাসন ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান একত্রিতভাবে কাজ করলে মাছ চাষ ও সংরক্ষণ কার্যকর হবে।
এছাড়া তারা বলেন, উপকূলীয় এলাকায় মহিষ পালনের সম্ভাবনা অনেক, তবে জলবায়ু পরিবর্তন, চারণভূমির অভাব ও বাজার ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা খাতটির উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করছে। গবেষণা ও আধুনিক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে মহিষ পালনকে লাভজনক ও টেকসই খাতে রূপান্তর করা সম্ভব।
শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব এএইচএম সফিকুজ্জামান এর সভাপতিত্বে আজ রাজধানীর একটি হোটেলে আন্তর্জাতিক শ্রম মান বিষয়ক ত্রিপক্ষীয় কমিটির প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় শ্রম সচিব বলেন, বাংলাদেশ ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) ৩৬টি কনভেনশন ও একটি প্রটোকল অনুমোদন করেছে। আইএলও সংবিধান অনুযায়ী, অনুমোদিত ও অননুমোদিত উভয় ধরনের সনদের প্রয়োগ সংক্রান্ত প্রতিবেদন দাখিল করা সকল সদস্য রাষ্ট্রের জন্য বাধ্যতামূলক। এই কমিটি আইএলও কনভেনশন ১৪৪-এর বাধ্যবাধকতার আলোকে বাংলাদেশ কর্তৃক প্রস্তুতকৃত প্রতিবেদনে মালিকপক্ষ ও শ্রমিক সংগঠনগুলোর মতামত, পরামর্শ ও সুপারিশ নিশ্চিত করবে।
সচিব আরও উল্লেখ করেন যে, আইএলও এর ১১টি কনভেনশন (C-01, C-14, C-19, C-81, C-89, C-100, C-106, C-111, C-118, C-138, MLC-2006) নিয়ে আলোচনা করা হয়। এগুলোর মধ্যে C-81 (শ্রম পরিদর্শন), C-100 (নারী ও পুরুষের সমান পারিশ্রমিক), C-111 (কর্মসংস্থান ও পেশায় বৈষম্য) এবং C-138 (ন্যূনতম কাজের বয়স) বিষয়ক চূড়ান্ত প্রতিবেদন আইএলও সংবিধানের ২২ নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী বাধ্যতামূলকভাবে খুব দ্রুত আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার জেনেভাস্থ প্রধান কার্যালয়ে প্রেরণ করা হবে।
সভায় শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার প্রতিনিধি নিরান রাজমুঠান, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের এবং শ্রম অধিদপ্তরের কর্মকর্তা, ইমপ্লোয়ার্স ফেডারেশন এর প্রতিনিধি , ইন্ডাস্ট্রি অল বাংলাদেশ এর প্রতিনিধি , বেপজা প্রতিনিধি , NCCWE এর প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেছেন, গবাদিপশু পালন প্রোটিন ঘাটতি নিরসন, মানুষের জীবন-জীবিকা রক্ষা এবং জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তার জন্য অপরিহার্য। অথচ অপরিকল্পিত উন্নয়নের কারণে চারণভূমির হ্রাস হচ্ছে, ফলে মহিষের মতো মূল্যবান সম্পদ ক্ষতির মুখে পড়ছে।
আজ সকালে বরিশাল ক্লাবে অনুষ্ঠিত “উপকূলীয় এলাকার মহিষের চারণভূমি ও উন্নয়নের সমস্যা এবং সমাধান” শীর্ষক জাতীয় কর্মশালা ২০২৫-এ প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। কর্মশালার আয়োজন করে বাংলাদেশ বাফেলো এসোসিয়েশন, গ্রামীণ জন উন্নয়ন সংস্থা (জিজিইউএস) এবং কোস্টাল ভেট সোসাইটি।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা বলেন, সঠিক নীতি নির্ধারণ ও আন্তঃমন্ত্রণালয় সমন্বয়ের মাধ্যমে এখনো অনেক চরাঞ্চল রক্ষা করা সম্ভব। মহিষ পালন বাড়াতে পারলে জাতীয়ভাবে মাংস ও দুধ উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা যাবে।
প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা বলেন, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মহিষের চারণভূমি দ্রুত কমে যাচ্ছে। অপরিকল্পিত বাড়িঘর নির্মাণ এবং এমনকি সিরাজগঞ্জের শাহাজাদপুর উপজেলায় বৃহৎ গরুর বাথান ভরাট করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবিও উঠছে, যা অত্যন্ত দুঃখজনক। তিনি প্রশ্ন তোলেন, শুধু একটি ডিগ্রি অর্জনের উদ্দেশ্যে গরুর বাথান ধ্বংস করা দেশের সামগ্রিক কল্যাণে কতটা ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে? তিনি আরও বলেন, মহিষের স্বাস্থ্যসুরক্ষার বিষয় বিবেচনায় উপকূলীয় এলাকায় স্পিডবোটভিত্তিক ভেটেরিনারি ক্লিনিক স্থাপন করা প্রয়োজন।
কর্মশালায় বক্তারা বলেন, বর্তমানে গবাদিপশুর চারণভূমি কমে যাওয়া এবং খাদ্যের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় মহিষসহ অন্যান্য গবাদিপশুর সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে। এ পরিস্থিতি মোকাবেলায় স্থানীয় পর্যায়ে কার্যকর পরিকল্পনা গ্রহণ ও টেকসই চারণভূমি উন্নয়ন অপরিহার্য। পাশাপাশি মহিষের উৎপাদন বৃদ্ধি ও জাতীয়ভাবে মাংস ও দুধ উৎপাদন বাড়ানোর আহ্বান জানান তারা।
কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ বাফেলো এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট প্রফেসর ড. ওমর ফারুক।
সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ দপ্তরের পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) ডা. মো. মোস্তাফিজুর রহমান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) লুসিকান্ত হাজং, পিকেএসএফ-এর উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. ফজলে রাব্বি সাদেক আহমেদ, জিজিইউএস-এর নির্বাহী পরিচালক জাকির হোসেন মহিন। এছাড়া সরকারি ও বেসরকারি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ, স্হানীয় খামারীরা কর্মশালায় অংশ গ্রহণ করেন।
মন্তব্য