চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে একটি বেসরকারি ক্লিনিকে এক সঙ্গে ছয় সন্তানের জন্ম হয়েছে। তবে অপরিপক্ক হওয়ায় নবজাতকগুলো কিছুক্ষণ পরই মারা যায়।
উপজেলার নাজিরহাটে সেবা ক্লিনিক ও নার্সিং হোমে সোমবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে এই ঘটনা ঘটে।
বিষয়টি নিউজবাংলাকে নিশ্চিত করেছেন বেসরকারি ওই ক্লিনিকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. দিদারুল আলম।
তিনি জানান, তাসলিমা নামের প্রসূতি ক্লিনিকের চিকিৎসক উম্মে ফাতেমা তুজ জোহরার কাছে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। সোমবার দুপুরে প্রায় ৬ মাসের অন্তঃসত্ত্বা তাসলিমা অসুস্থ বোধ করায় ক্লিনিকে আসেন। চিকিৎসক ফাতেমা তুজ জোহরা তাকে পরীক্ষা করে ডেলিভারি হবে বলে জানান। ক্লিনিকেই সন্ধ্যা ৬টার দিকে তাসলিমা স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় একে একে ছয় সন্তানের জন্ম দেন। ১৫ মিনিটের মধ্যেই সন্তানরা মারা যায়।
দিদারুল বলেন, ‘মায়ের গর্ভে থাকার বয়স পূর্ণ না হওয়ায় সবগুলো সন্তানই অপরিপক্ক ছিল। যেখানে একজন স্বাভাবিক নবজাতকের ওজন আড়াই কেজির উপরে হয়, সেখানে তার প্রতিটি বাচ্চার ওজন ছিল ৩০০ থেকে ৪০০ গ্রামের মধ্যে। নরমাল ডেলিভারিতে জন্ম নেয়া সবগুলো বাচ্চাই জীবিত ছিল। তবে ১৫ মিনিটের মধ্যে সবগুলোই মারা গেছে।
‘অবশ্য এ ধরনের বাস্তবতার জন্য রোগীর পরিবারকে আগেই জানানো হয়েছিল। কারণ বাচ্চাগুলো ৬ মাসেরও কম সময় মায়ের গর্ভে ছিল, তাই স্বাভাবিকভাবেই অপরিপক্ক হওয়ায় কথা। ৭ মাস হলেও জীবিত রাখা সম্ভব হতো হয়ত।’
চিকিৎসক উম্মে ফাতেমা তুজ জোহরা বলেন, ‘উনি সন্তানসম্ভবা হওয়ার সাড়ে ৩ মাস পর আমার কাছে প্রথম আসেন। তখন আল্ট্রাসনোগ্রাফিতে ওনার গর্ভে ৬টা বেবি থাকার বিষয়টি জানতে পারি, ওনাকে জানাই। তখন তো আর কিছু করার ছিল না। গর্ভপাত করাটা তো অনৈতিক।
‘তাছাড়া বাচ্চার নিরপত্তার জন্য জরায়ুর মুখে সেলাই দেয়ার একটা নিয়ম আছে, বেশি বাচ্চা হওয়ায় সেটাও সম্ভব হয়নি। কারণ জরায়ুর মুখে সেলাই দিলে জরায়ু ফেটে যেতে পারে, তখন মায়ের জীবনও রিস্কে চলে যাবে।
‘তখন থেকেই উনি আমার কাছে নিয়মিত চেকআপ করাতেন। প্রতি মাসে দুই থেকে তিনবার আসতেন। এর মধ্যে আজকে বললেন যে ওনার খারাপ লাগতেছে। তখন আমি চেক করে দেখলাম যে জরায়ুর মুখ খুলে গেছে। আর বাচ্চাদের পজিশনও ঠিক নেই... সবগুলো বাচ্চাই জীবিত জন্মগ্রহণ করেছে। তবে অপরিপক্ক হওয়ায় বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি।’
আরও পড়ুন:কোটি কোটি কোষ দিয়ে গঠিত মানবদেহ। এসব কোষের কিছু কিছু অনিয়ন্ত্রিতভাবে বেড়ে দেহের অন্য স্থানগুলোতে ছড়িয়ে পড়লে যে রোগ হয়, সেটিই ক্যানসার হিসেবে পরিচিত। এ রোগের শুরু হতে পারে দেহের প্রায় সব প্রান্তে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মতে, বিশ্বজুড়ে মানুষের মৃত্যুর দ্বিতীয় বড় কারণ ক্যানসার, যে রোগে ২০১৮ সালে ৯৬ লাখের মতো প্রাণহানি হয়। অর্থাৎ সে বছর প্রতি ছয়জনের একজনের মৃত্যু হয় ক্যানসারে।
এ ব্যাধি নিয়ে সচেতনতা তৈরির অংশ হিসেবে প্রতি বছরের ৪ ফেব্রুয়ারি বিভিন্ন দেশে পালন হয় ‘বিশ্ব ক্যানসার দিবস’। গত বছরের মতো এবারও দিবসটির প্রতিপাদ্য ধরা হয় ‘ক্লোজ দ্য গ্যাপ’, যার সম্প্রসারিত অর্থ হলো ক্যানসার চিকিৎসায় ত্রুটি রাখা যাবে না।
এ দিবস শুরুর আলোচনা হয় ফ্রান্সের প্যারিসে ২০০০ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি আয়োজিত বিশ্ব ক্যানসার সম্মেলনে। সেদিনই প্রতি বছরের ৪ ফেব্রুয়ারিকে বিশ্ব ক্যানসার দিবস বা বিশ্ব ক্যানসার সচেতনতা দিবস বা বিশ্ব ক্যানসার প্রতিরোধ দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত হয়।
দিবসের এবারের প্রতিপাদ্য নিয়ে সাভারের এনাম মেডিক্যাল কলেজের সহযোগী অধ্যাপক মাহফুজুল আহমেদ রিয়াদ নিউজবাংলাকে বলেন, “এবারের প্রতিপাদ্য যে বিষয়গুলোকে নিয়ে করা হয়েছে সেগুলো হলো, প্রাথমিক পর্যায়ে এই রোগ শনাক্ত করা, চিকিৎসা শুরুর পর কোনো ত্রুটি না রাখা এবং ক্যানসার চিকিৎসার ক্ষেত্রে বিশ্বের সবার জন্য একই ধরনের ব্যবস্থাপনা রাখা। সমষ্টিগতভাবে এগুলোর মূল ভাব হলো ‘ক্লোজ দ্য কেয়ার গ্যাপ’।”
ক্যানসারকে মরণব্যাধি বলা হয়। সেটি কতটুকু সত্য, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আসলে সব রোগই মরণব্যাধি যদি না সঠিক সময়ে চিকিৎসা দেয়া হয়। ক্যানসারের কিছু চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য আছে। সেগুলোর ওপর ভিত্তি করে সঠিক সময়ে চিকিৎসা দিলে এই রোগ নিরাময় সম্ভব।
‘শুধু ব্রেইন ক্যানসারের একটি বৈশিষ্ট্য আছে যেটি হলে রোগী দুই বছরের বেশি বাঁচে না। সেটার নাম গ্লিওব্লাস্টোমা। তা ছাড়া অন্য সব সঠিক সময়ে চিকিৎসা দিলে ক্যানসার নিরাময় সম্ভব।’
তিনি আরও বলেন, ‘লাইফস্টাইলের সঙ্গে ক্যানসারের সম্পর্ক খুব। যেমন: ধূমপানে ফুসফুস ক্যানসার, কিডনি, শ্বাসনালির ক্যানসার হতে পারে। আবার স্থুলতার জন্য ব্রেস্ট ক্যানসার হয়ে থাকে।
‘বাংলাদেশে সে রকম সুনির্দিষ্ট পরিসংখ্যান না থাকলেও গ্লোবোক্যান বৈশ্বিক অবস্থা নিয়ে একটি পরিসংখ্যান প্রকাশ করে। সেই অনুযায়ী ২০২০ সালে ১ লাখ ৫৬ হাজার ৭৭৫ জন রোগী ক্যানসারে আক্রান্ত হয়। আর ১ লাখ ৮ হাজার ৯৯০ জন মারা যান।
‘২০২২ সালের আরেকটি পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, বাংলাদেশে মোট মৃত্যুর ১০ শতাংশের জন্য দায়ী ক্যানসার। ২০৩০ সালের মধ্যে সেটি ১৩ শতাংশে পৌঁছাতে পারে।’
ক্যানসারের কারণ
বিভিন্ন কারণে ক্যানসার হতে পারে।
১. জেনেটিক বা বংশগত কারণ।
২. ধূমপানের কারণে বিভিন্ন ধরনের ধরনের ক্যানসার হতে পারে। এর মধ্যে ফুসফুস ক্যানসার অন্যতম।
৩. তেজস্ক্রিয়তা ত্বকের ক্যানসার সৃষ্টি করতে পারে। যেমন: চেরনোবিল ও জাপানের নাগাসাকির পারমাণবিক বিস্ফোরণের অনেক বছর পরও সেখানে ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া যায়।
৪. কিডনি, পিত্তথলির পাথর ক্যানসার সৃষ্টির জন্য দায়ী হতে পারে।
৫. জরায়ুর সার্ভিক্স বা বোনের দীর্ঘ সংক্রমণ থেকে জরায়ু ও বোনের ক্যানসার হতে পারে।
৬. রাসায়নিক বা কেমিক্যাল এজেন্ট। যেমন: এনিলিন ডাই মূত্রথলির ক্যানসার সৃষ্টি করতে পারে।
৭. খাদ্যে ব্যবহৃত ফরমালিন পাকস্থলির ক্যানসার সৃষ্টি করতে পারে। একইভাবে চুলের কলব ত্বকের ক্যানসার সৃষ্টির জন্য দায়ী হতে পারে।
উপসর্গ
একেক ধরনের ক্যানসারের একেক উপসর্গ থাকে, তবে কিছু সাধারণ উপসর্গ রয়েছে।
১. দীর্ঘদিন ধরে শরীরের কোনো অংশের ছোট একটি টিউমারের হঠাৎ পরিবর্তন।
২. শরীরে কোনো চাকা হঠাৎ বড় হচ্ছে দেখলে সতর্ক হতে হবে। সেটি ক্যানসার কি না, তা নিশ্চিত হতে হবে।
৩. কাশি ভালো হতে না চাইলে এবং ৪ সপ্তাহের বেশি হয়ে গেলে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।
৪. হঠাৎ করে খাবারে অরুচি।
৫. মলদ্বার দিয়ে রক্তক্ষরণ।
৬. শরীরে ব্যথা ও শরীর দুর্বল হয়ে পড়া।
৭. মলত্যাগের অভ্যাসের হঠাৎ পরিবর্তন।
৮. নারীদের মেনোপোজের পর নতুন করে রক্তক্ষরণ।
প্রতিরোধ
এনাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক মাহফুজুল আহমেদ রিয়াদ বলেন, ‘অনেক ধরনের ক্যানসার প্রতিরোধযোগ্য নয়, তবুও নিয়ন্ত্রিত জীবনধারা ক্যানসার প্রতিরোধে সাহায্য করতে পারে। যেমন: তামাকজাত দ্রব্যের ব্যবহার থেকে বিরত থাকা, অ্যালকোহল গ্রহণ থেকে বিরত থাকা, অতিবেগুনি রশ্মি থেকে বাঁচতে সতর্কতা গ্রহণ (যার মধ্যে রয়েছে সানস্ক্রিন ব্যবহার করা এবং সুরক্ষামূলক পোশাক পরা)। নিয়মিতভাবে সুপারিশকৃত ক্যানসার শনাক্ত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ এবং এইচপিভির টিকা গ্রহণ।’
চিকিৎসা
মাহফুজুল আহমেদ রিয়াদের ভাষ্য, যেকোনো ধরনের টিউমার হলেই সেটি অপসারণ করতে হবে। টিউমারটি মৃদু এবং সম্পূর্ণভাবে ফেলে দেয়া হলে ভয় নেই। এ ক্ষেত্রে সেটি আবার হওয়ার সম্ভাবনাও থাকে না।
তিনি আরও বলেন, ‘বায়োপসিতে ক্যানসার ধরা পড়লে প্রথম কাজ রোগীর স্টেজিং করা ও সেই অনুযায়ী চিকিৎসা পদ্ধতি নির্বাচন করা। অনেক ক্ষেত্রেই সার্জারি করবার আগে কেমোথেরাপি এবং রেডিওথেরাপির ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কাজেই ক্যানসার শনাক্ত হলেই সর্বপ্রথম একজন ক্যানসার বিশেষজ্ঞের স্মরণাপন্ন হোন ও সঠিক চিকিৎসা নিন। মনে রাখবেন, ক্যানসার চিকিৎসার ক্ষেত্রে রোগীর ভূমিকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।’
নিপাহ ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়েছে দেশের ২৮টি জেলায়। এ পরিস্থিতিতে রাজধানীর ডিএনসিসি ডেডিকেটেড কোভিড হাসপাতালে ১০ বেডের নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্র (আইসিইউ) প্রস্তুত রাখতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাসপাতাল ও ক্লিনিক শাখার পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) ডা. শেখ দাউদ আদনান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে শুক্রবার এ নির্দেশ দেয়া হয়।।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বর্তমানে দেশের ২৮ জেলায় নিপাহ ভাইরাসের সংক্রমণ দেখা দেয়ায় ডিএনসিসি কোভিড-১৯ ডেডিকেটেড হাসপাতালে ১০ বেডের আইসোলেশন ওয়ার্ড এবং ১০ বেডের আইসিইউ প্রস্তুত রাখার জন্য অনুরোধ করা হলো।
২০০১ সালে দেশে প্রথম নিপাহ ভাইরাস শনাক্ত হয়। ২০২২ সাল পর্যন্ত সরকারিভাবে ৩২৫ জনের দেহে এই ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। আক্রান্তদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ২৩০ জনের। গত বছর নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত তিনজনের মধ্যে দুজই মারা গেছেন।
সম্প্রতি সচিবালয়ে নিপাহ ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানান, চলতি মৌসুমে এ পর্যন্ত আটজন নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের মধ্যে পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। এই ভাইরাসে মৃত্যুর হার শতকরা ৭০ শতাংশ।
১৯৯৯ সালে মালয়েশিয়ায় প্রথম নিপাহ ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা যায়। সংক্রমণের উৎস ছিল নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত অসুস্থ শূকর। নিপাহ ভাইরাস প্রাণী থেকে বিশেষ করে বাদুড় ও শূকর থেকে মানুষে সংক্রমিত হয়ে থাকে।
আক্রান্ত বাদুড় কোনো ফল খেলে বা খেজুরের রস পান করলে এটির লালা, প্রস্রাব বা অন্যান্য বর্জ্য দিয়ে সরাসরি সেই ফল বা খেজুরের রস দূষিত হয়ে যায়। কেউ সেই ফল বা কাঁচা খেজুরের রস পান করলে তিনি এই ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারেন। এ ছাড়া আক্রান্তের সরাসরি সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিও এতে আক্রান্ত হতে পারেন।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে শারীরিক প্রতিবন্ধী এক শিশুকে ফেলে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। বুধবার দুপুর থেকে শিশুটি হাসপাতালের পুরনো ভবনের ১১০ নম্বর ওয়ার্ড নার্সিং স্টেশনের পাশে বাথরুমের বারান্দায় ট্রলিতে পড়ে ছিল।
রাতে শিশুটিকে সেখান থেকে নিয়ে আসেন হাসপাতাল ক্যাম্প পুলিশ ও আনসার সদস্যরা। শিশুটির বয়স আনুমানিক ১০ বছর।
রাত সাড়ে ৯টার দিকে শিশুটিকে উদ্ধার করার পর ঢামেক হাসপাতালের পরিচালকের নির্দেশে ওয়ার্ড মাস্টার জিল্লুর রহমান ২০৮ নম্বর শিশু ওয়ার্ডে তার রেফারেন্সে ভর্তির ব্যবস্থা করেন।
ঢামেকে ডিউটিরত আনসার সদস্য (এপিসি) জামাল উদ্দিন বলেন, ‘দুপুর থেকে শিশুটি ওখানে ট্রলিতে পড়ে থাকার দৃশ্য আমাদের নজরে আসে। বার বার ঘুরে গিয়ে দেখি শিশুটির জন্য কেউ আসছে কী না।
পরে বুঝতে পারি প্রতিবন্ধী শিশুটিকে কেউ এখানে ফেলে চলে গেছে। রাত সাড়ে ৯টার দিকে বিষয়টি ঢামেক পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ বাচ্চু মিয়াকে জানাই। ঢাকা মেডিক্যাল হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজমুল হকের নির্দেশে পরে শিশুটিকে হাসপাতালে ভর্তি দেয়া হয়েছে।’
সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকদের কর্মক্ষেত্রেই আলাদা প্র্যাকটিসের সুযোগ দেয়া হচ্ছে; নির্দিষ্ট অফিস সময়ের বাইরে আলাদাভাবে সেখানেই চেম্বার করে তারা রোগী দেখতে পারবেন।
সব কিছু ঠিক থাকলে আগামী ১ মার্চ থেকে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
রোববার দুপুরে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে ইনস্টিটিউশনাল প্রাকটিস বিষয়ক সভায় তিনি আরও বলেন, ‘চিকিৎসকদের ডিউটি সময়ের বাইরে বিভিন্ন ক্লিনিক বা ফার্মেসিতে যেভাবে চেম্বার খুলে রোগী দেখতে হতো, সরকারি এই বিশেষ সুবিধার ফলে নিজ নিজ সরকারি কর্মস্থলেই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক চেম্বারে রোগী দেখতে পারবেন।
‘এ বিষয়ে চিকিৎসকসহ সংশ্লিষ্ট সবার মতামত নিয়েছে সরকার। কাজটি শুরু করতে দ্রুতই একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করা হচ্ছে। দেশের মানুষের জন্য এই কাজের শুরু হবে মহান স্বাধীনতার মাস মার্চের শুরু থেকেই। এতে লাখ লাখ মানুষ বিভিন্ন ক্লিনিক, ফার্মেসিতে ডাক্তার দেখানোর ভোগান্তি থেকে রেহাই পাবে।’
সভায় বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সভাপতি মোস্তাফা জালাল মহিউদ্দিন, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব আনোয়ার হোসেন হাওলাদার, স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব সাইফুল হাসান বাদল, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক এ বি এম খুরশীদ আলম, স্বাচিপ সভাপতি অধ্যাপক জামাল উদ্দিন চৌধুরী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক শারফুদ্দিন আহমেদ, সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এএইচএম এনায়েত হোসেন, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও নিউরো হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক কাজী দ্বীন মোহাম্মদ, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালকসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন।
গত এক সপ্তাহে চীনের হাসপাতালগুলোতে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রায় ১৩ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে। স্থানীয় সময় শনিবার দেশটির রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র (সিডিসি) এ তথ্য জানায়।
সংস্থাটি জানায়, গত ১৩ থেকে ১৯ জানুয়ারি পর্যন্ত চীনা হাসপাতালে শ্বাসযন্ত্র বন্ধ হয়ে ৬৮১ জন ও অন্যান্য রোগে ১১ হাজার ৯৭৭ জন মারা গেছেন। মৃতরা সবাই করোনা পজিটিভি ছিলেন।
সংস্থাটি আরও জানায়, চীনে এরইমধ্যে ৮০ শতাংশ মানুষই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন।
এ নিয়ে চীনা সিডিসির প্রধান মহামারি বিশেষজ্ঞ উ জুনিউ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম উইবোতে বলেন, চলমান চন্দ্র নববর্ষের ছুটিতে মানুষের ব্যাপক যাতায়াত মহামারি ছড়িয়ে দিতে পারে, কিছু এলাকায় সংক্রমণ বাড়াতে পারে, তবে অদূরবর্তী সময়ে দ্বিতীয় করোনার ঢেউ দেখার সম্ভাবনা নেই।
এর আগে চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশনের অধীনস্থ ব্যুরো অব মেডিকেল অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের প্রধান জিয়াও ইয়াহুই জানিয়েছিলেন যে, ডিসেম্বরের ৮ তারিখ থেকে জানুয়ারির ১২ তারিখ পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়ে ৫৯ হাজার ৯৩৮ জনের মৃত্যু হয়। মৃতদের ৯০ শতাংশের বয়স ৬৫ বছরের বেশি।
বিক্ষোভের মুখে গত মাসে কঠোর করোনা বিধি থেকে সরে আসে চীন। এর পর থেকেই দেশটিতে ভাইরাসটির সংক্রমণ বড় পরিসরে বাড়তে থাকে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, চীনে করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা আরও বেশি। কারণ দেশটি শুধু হাসপাতালে মারা যাওয়া করোনা রোগীদের সংখ্যাই প্রকাশ করছে।
আরও পড়ুন:
বাংলাদেশে প্রথমবার মতো ‘ব্রেন ডেড’ রোগীর শরীরের দুটি কিডনি প্রতিস্থাপন করা হয়েছে।
একটির ট্রান্সপ্লান্ট সার্জারি হয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে। অন্যটি করেছে ন্যাশনাল কিডনি ফাউন্ডেশন।
বুধবার রাতে ২০ বছর বয়সী সারা নামের এক নারীর শরীর থেকে কিডনি দুটি দুজন নারীর শরীরে প্রতিস্থাপন করা হয়।
বিষয়টি নিউজবাংলাকে নিশ্চিত করেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বিশ্ববিদ্যালয়ের মিডিয়া অ্যান্ড কমিউনিকেশন অফিসার সুব্রত মন্ডল।
হাসপাতালে অনেক ‘ব্রেন ডেড’ রোগী থাকেন, যাদের চিকিৎসা হয় নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ)। হৃৎপিণ্ড ও ফুসফুস ফ্লুইডের মাধ্যমে কৃত্রিমভাবে কিছুদিন চালু রাখা গেলেও তাদের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা থাকে না।
কিডনি প্রতিস্থাপনের এই প্রক্রিয়াকে ক্যাডাভেরিক কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট বলা হয়। এতে নেতৃত্ব দিয়েছেন বিএসএমএমইউর ইউরোলজি বিভাগের রেনাল ট্রান্সপ্লান্ট সার্জন অধ্যাপক হাবিবুর রহমান দুলাল।
বিকেলে এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে জানানো হবে বলে জানান সুব্রত।
আরও পড়ুন:ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালকে পাঁচ হাজার শয্যায় উন্নীত করার পরিকল্পনা আছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এর বাস্তবায়ন শুরু হবে শিগগিরই।
দেশের আরও ৪৫ উপজেলায় বুধবার বেলা ১১টার দিকে কমিউনিটি ভিশন কার্যক্রম উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।
জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে সরকারপ্রধান এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন। এর আগে আরও ৭০ উপজেলায় তিনি কমিউনিটি ভিশন কার্যক্রম উদ্বোধন করেছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা চিকিৎসা সেবার সঙ্গে গবেষণাও জোরদার করেছি। দেশের বড় বড় জেলাগুলোতে মেডিক্যাল করেছি। বিভাগগুলোতে মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় করে দেব। সেভাবে ব্যবস্থা নিচ্ছি। মেডিক্যাল কলেজগুলোতে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা বাড়ছে।’
অনুষ্ঠানে চোখের চিকিৎসাকে গুরুত্ব দেয়ার আহ্বান জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, ‘আই ভিশন সেন্টারগুলো আমরা উদ্বোধন করছি, তবে অন্যান্য সেবার সঙ্গে অবশ্যই চোখের চিকিৎসাকেও গুরুত্ব দিতে হবে। কারণ আমাদের এই উদ্যোগের ফলে এখন অনেক অন্ধ মানুষের চোখের আলো ফিরে এসেছে।
‘এর মাধ্যমে উপজেলাগুলোতে হাসপাতালেই সব ধরনের চোখের সমস্যায় রোগীরা সেবা নিতে পারবেন বলে আশা করছি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আগে ৭০টি এবং আজ ৪৫টি উপজেলায় এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করলাম। লোকজন যেন সহজে হাসপাতালে আসতে পারেন, সে জন্য রাস্তাঘাটের উন্নয়ন করে দিয়েছি।
‘আমরা চাই হাসপাতালগুলোতে রোগীর সেবা আরও যেন বৃদ্ধি পায়। এ ক্ষেত্রে সবাইকে সহায়তা করতে হবে।’
সরকার সফলভাবে করোনাভাইরাস মহামারি মোকাবিলা করেছে উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, ‘সময়মতো সঠিক পদক্ষেপ নেয়ায় করোনায় মৃত্যু কম হয়েছে। আমরা সাহস করে টিকা এনেছিলাম। বিনা মূল্যে মানুষকে টিকা দিয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘২০০৯ সালে দেশের হাসপাতালগুলোতে বেড ছিল ৩৮ হাজার। এটি ৬৭ হাজারে উন্নীত করা হয়েছে। চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটসহ প্রতিটি ইনস্টিটিউট আওয়ামী লীগের সময়ে প্রতিষ্ঠিত।
‘শিশু হাসপাতাল প্রতিটি বিভাগে হওয়া উচিত। শিশু চিকিৎসার ক্ষেত্রে ট্যাক্স তুলে নেয়া হয়েছে। বেসরকারি পর্যায়ে হাসপাতালের যন্ত্রপাতি কেনায় ট্যাক্স কমিয়ে দিয়েছি।’
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজকে ৫ হাজার শয্যায় উন্নীত করার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ ৫ হাজার শয্যায় উন্নীত করার পরিকল্পনা আছে। করোনা, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে শুরু করতে পারিনি, তবে শিগগিরই করে ফেলব।’
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব আনোয়ার হোসেন হাওলাদার, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদসহ অনেকে।
কমিউনিটি ভিশন সেন্টারের মাধ্যমে দেশের সাত বিভাগের ৩৯ জেলার ১৩৫ উপজেলায় সমন্বিত চক্ষু চিকিৎসাব্যবস্থা চালু হয়েছে। এতে দেশের প্রায় ৫ কোটি মানুষ উন্নত চক্ষু চিকিৎসা সেবার আওতায় আসবে।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য