রাস্তা সংস্কারের একই কাজকে পৃথক দুই প্রকল্পে দেখানোর ঘটনা ঘটেছে কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার ভিতরবন্দ ইউনিয়নে। সেখানে অতি দরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচির শ্রমিক দিয়ে রাস্তা সংস্কার করা হয়েছে। আবার সেটিকেই কাজের বিনিময়ে টাকা (কাবিটা) কর্মসূচির অংশ হিসেবে দেখানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
এ ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বানিয়ারভিটা ওয়াহেদ পুলিশের বাড়ি থেকে ভুটামারী পর্যন্ত রাস্তার সংস্কারকাজে এ জালিয়াতির ঘটনা ঘটেছে। এর মাধ্যমে চেয়ারম্যান শফিউল আলম ও প্যানেল চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম এ প্রকল্প থেকে ৩ লাখ ২৮ হাজার টাকা সরিয়ে নেয়ার প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বানিয়ারভিটায় মাটির রাস্তাটি চলাচলের উপযোগী হলেও সেখানে ৪০ দিনের কর্মসৃজন কর্মসূচির শ্রমিকরা সড়ক সংস্কারের কাজ করছেন। শ্রমিকরা এ প্রকল্পের আওতায় মজুরি পাবেন। অথচ এটিকে ইতোমধ্যে দেখানো হয়েছে কাবিটার কাজ হিসেবে। রাস্তা সংস্কারের একটি কাজকেই পৃথক দুই প্রকল্পে দেখানো হচ্ছে।
প্রকল্পে কর্মরত শ্রমিক মজিবর রহমান, নুর হোসেন, মানিক, আবেদ আলী ও কাঞ্চন জানান, তারা সবাই কর্মসৃজন প্রকল্পের শ্রমিক হিসেবে কাজ পেয়েছেন চেয়ারম্যানকে ৫০০ টাকা উৎকোচ দিয়ে। এখন শুনছেন এই মাটি কাটার রাস্তায় আবার কাবিটার কাজ হবে।
রাস্তার কাবিটা প্রকল্পের প্রকল্প চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘কাবিটার কাজ এখনও শুরু হয়নি। তবে ওই রাস্তায় ৪০ দিনের কর্মসৃজন কাজের আওতায় মাটির কাজ করা হচ্ছে।’ একই স্থানে দুই ধরনের প্রকল্পের কাজ কীভাবে হয়, জানতে চাইলে তিনি মন্তব্য করতে রাজি হননি।
নাগেশ্বরী উপজেলার ৯ নম্বর ভিতরবন্দ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শফিউল আলম শফির বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার ও অনিয়মের অভিযোগ পুরনো। নতুন করে ৪০ দিনের কর্মসৃজন কর্মসূচিতে তিনি আপন ভাই, আত্মীয় ও সচ্ছল ব্যক্তিদের তালিকাভুক্ত করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
১ নম্বর ওয়ার্ডে আপন ভাই রফিকুল ইসলামের কার্ড নং ১৭৭৯। তিনি প্রায় ৮ বিঘা জমির মালিক এবং তার নিজস্ব গভীর নলকূপ আছে। চেয়ারম্যানের ভাই বউ খোদেজা বেগমের কার্ড নং ১৭৯৩। চাচাতো ভাই ফকরুল ইসলাম ১৭৯৬ নং কার্ডধারী হলেও তিনি চাকরিজীবী। ভাতিজি রুজিনা খাতুনেরও কার্ড আছে।
এ ছাড়া তার আত্মীয় ফাতেমা বেগম, শরিফা বেগম, ইব্রাহীম আলী, মানিক মিয়া এবং আক্কাছ আলী কার্ড পেয়েছেন।
একইভাবে অনিয়মে জড়িয়েছেন ইউপি সদস্যরাও। সংরক্ষিত আসনের মহিলা সদস্য ফাতেমা বেগম তার স্বামী গোলাম রসুলকে তালিকাভুক্ত করেছেন। তার কার্ড নং ১৮১৫। ৬ নং ওয়ার্ড সদস্য ফেরদৌস আলী তার স্ত্রী নুরনাহার বেগমকে তালিকাভুক্ত করেছেন। নুরনাহার বেগমের কার্ড নং ১৯৭৪।
এই প্রকল্প এলাকার হতদরিদ্র আব্দুর রহমান, মাইদুল, মকছেদ আলী ও আব্দুল গফুর জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগে বলেন, অনিয়ম ও দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে চেয়ারম্যান শফিউল আলম তাদের ৪০ দিনের কর্মসৃজন কাজের তালিকা থেকে বাদ দিয়েছেন। ফলে তারা কাজ না পেয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। তারা আরও বলেন, একটি ভালো রাস্তায় নামমাত্র মাটি ফেলে সংস্কার দেখিয়ে সরকারের লাখ-লাখ টাকা অপচয় করা হচ্ছে।
১ নং সংরক্ষিত মহিলা আসনের সদস্য ফাতেমা বেগম বলেন, ‘১৮১৫ নং কার্ডধারী আমার স্বামী। গরিব, সে জন্য শ্রমিক হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছি।’
৬ নং ওয়ার্ড সদস্য ফেরদৌস আলী স্বীকার করেন, ১৯৭৪ নং কার্ডধারী নারী শ্রমিক তার স্ত্রী নুরনাহার বেগম। স্থানীয় একটি মসজিদের ইমামের বেতনের টাকা জোগাতে এ নাম দেয়া হয়েছে।
চেয়ারম্যান শফিউল আলম শফির বিরুদ্ধে ইউপি সদস্যদের অনাস্থার পরিপ্রেক্ষিতে নাগেশ্বরী উপজেলা প্রশাসনের নির্দেশে ভোটাভুটির আয়োজন করা হয় ইতিপূর্বে। ভোট গণনা করে ১১ এবং ২ ভোটে অনাস্থা প্রস্তাব পাস হয়। নাগেশ্বরী উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা শাহাদৎ হোসেন এ ফলাফল ঘোষণা করেন। জেলা প্রশাসক চিঠির মাধ্যমে গৃহীত অনাস্থা প্রস্তাবের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে প্রায় তিন মাস আগে চিঠি পাঠালেও আজও কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
ভিতরবন্দ ইউপি চেয়ারম্যান শফিউল আলম বলেন, ‘সব নিয়ম মেনেই ৪০ দিনের কর্মসৃজন প্রকল্পের শ্রমিক নিয়োগ করা হয়েছে। এখন দ্বিতীয় দফায় কাজ চলছে। প্রতি জন শ্রমিক প্রতিদিন ৪০০ টাকা করে পাবেন। শ্রমিকদের কাছ থেকে উৎকোচ নেয়ার অভিযোগ সঠিক নয়। এ ছাড়া অন্যান্য অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ পুরোপুরি মিথ্যা ও বানোয়াট।
‘একটি পক্ষ আমাকে চেয়ারম্যানের পদ থেকে অপসারণের জন্য দীর্ঘদিন থেকে ষড়যন্ত্র করে আসছে। ব্যর্থ হয়ে আবারও অভিযোগ করেছে। তদন্ত করলেই প্রকৃত সত্য বেরিয়ে আসবে।’
তিনি বলেন, ‘৬০ বছরের ঊর্ধ্বে যাদের বয়স, তাদের শ্রমিক হিসেবে তালিকাভুক্ত করার সুযোগ নেই। এ কারণে অভিযোগকারীরা তালিকাভুক্ত হতে পারেননি। যাদের আমার আত্মীয় বলা হয়েছে, তারা সবাই গরিব।’
কুড়িগ্রাম স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক মিনহাজুল ইসলাম (উপসচিব) অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, ‘রোববার নাগেশ্বরী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাকে (পিআইও) বিষয়টি তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ভিতরবন্দ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শফিউল আলমের বিরুদ্ধে ইউপি সদস্যদের আনা অনাস্থা প্রস্তাবের রিপোর্ট স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের প্রক্রিয়াধীন আছে।’
ইউপি চেয়ারম্যান শফিউল আলমের বিরুদ্ধে গত ঈদুল আজহায় তালিকাভুক্ত দুই হাজারের বেশি দুস্থ মানুষকে ভিজিএফের চাল না দিয়ে তা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। সেই তালিকায় মৃত ব্যক্তির নামে ভিজিএফের চাল বরাদ্দ, একই ব্যক্তির নাম একাধিকবার রাখা, একই পরিবারের একাধিক ব্যক্তিকে কার্ড প্রদানসহ সচ্ছল ব্যক্তিদের ভিজিএফ বরাদ্দ দেয়ার অভিযোগ ওঠে।
এসব বিষয়ে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ অভিযোগপত্র পেয়ে তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের প্রতিশ্রুতি দেন।
আরও পড়ুন:দাবদাহ আর বৃষ্টিহীনতায় পুড়ছে মাদারীপুরের পাটক্ষেত। বৈশাখের তপ্ত রোদে পাটক্ষেত নিয়ে বিপাকে পড়েছেন চাষিরা। পাটের জমিতে ঘন ঘন সেচ দেয়ায় যেমন উৎপাদন খরচ বাড়ছে, তেমনি খরায় জমির আগাছা পরিষ্কার করতে পারছেন না কৃষকরা।
এমনটা চলতে থাকলে উৎপাদন অনেকটা হুমকির মুখে পড়বে বলেও আশঙ্কা কৃষকদের।
সদর উপজেলার খোয়াজপুর ইউনিয়নের মধ্যচক এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দিনের তীব্র দাবদাহে পাট গাছ শুকিয়ে যাচ্ছে। ক্ষেতেই মরে যাচ্ছে পাট গাছ। কোথাও শুকিয়ে মাঠ ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। ফলে ঘন ঘন সেচ দিয়েও গাছের আশানুরূপ পরিবর্তন আনতে পারছেন না।
অনাবৃষ্টির কারণে পাট গাছের বৃদ্ধি না হওয়ায় জমিতে আগাছার পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে। সব মিলিয়ে উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পাচ্ছে দ্বিগুণ হারে।
কৃষকরা জানান, এবার প্রতি বিঘা পাট চাষ করতে খরচ হয়েছে ১৯ হাজার ৫০০ টাকার মতো। যা গতবারের চেয়ে অন্তত দুই হাজার বেশি। এরপরে গাছ শুকিয়ে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষার জন্য সেচ দিচ্ছেন তারা। ফলে আরও বাড়তে পারে উৎপাদন ব্যয়।
খোয়াজপুরের কৃষক আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘কয়েকদিনের প্রচণ্ড গরমে মাঠ ফেটে চৌচির। পাটগাছ শুকিয়ে যাচ্ছে। একটুখানি বড় হয়ে শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন চললে এবার পাট আবাদ ধসে পড়বে। অনেকেই সেচ দিলেও এক দুই দিন পরে আবার শুকিয়ে যায়। এতে মরার উপর খাড়ার ঘা হয়ে উঠছে।’
আর মাদারীপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, জেলায় এবার ৩৭ হাজার ৪০২ হেক্টর জমিতে পাট উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এরই মধ্যে অধিকাংশ জমিতে বপন কাজ শেষ হয়েছে এবং অনেক স্থানে চারা বড় হয়ে গেছে, কিন্তু রোগের কারণে পাটের ক্ষতি হওয়ায় চাষিদের বিকেলে পানি সেচ দেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন কৃষি কর্মকর্তারা।
এ ব্যাপারে কৃষি সম্প্রাসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক আবদুল মতিন বিশ্বাস বলেন, ‘এই গরমে পাটের কিছুটা ক্ষতি হচ্ছে সেটা অস্বীকার করার উপায় নেই, তবে কৃষকদের বলছি, যেন বিকেলে সেচের মাধ্যমে পাট গাছ জীবিত রাখে। এতে গাছ মরবে না।’
মাদারীপুর জেলায় অন্যতম অর্থকরী ফসল হিসেবে পাটের অবস্থান শীর্ষে। গত বছর পাটের মূল্য ভাল পাওয়ায় কৃষকরাও এবার বেশি জমিতে পাট চাষ করেছেন।
আরও পড়ুন:তীব্র থেকে অতি তীব্র মাত্রায় পাবনা জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে তাপপ্রবাহ। অসহনীয় দাবদাহে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। গত তিন-চার দিন তাপমাত্রা কিছুটা কমলেও শুক্রবার চলতি মৌসুমে জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে।
এদিন পাবনার ঈশ্বরদীতে ৪২ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে যা জেলায় চলতি মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড। বৃহস্পতিবার তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৪১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত রবিবার (২১ এপ্রিল) ঈশ্বরদীতে প্রথমবার ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়।
ঈশ্বরদী আবহাওয়া অফিসের সহকারী পর্যবেক্ষক নাজমুল হক রঞ্জন জানান, জেলার তাপমাত্রা আরও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
অতি তীব্র তাপদাহে পাবনার মানুষের দৈনন্দিন কাজ ব্যাহত হচ্ছে। বিশেষ করে কৃষক, রিকশাচালক, ভ্যানচালক, ইটভাটার শ্রমিকসহ দিনমজুরদের জন্য অসহ্য হয়ে পড়েছে। এছাড়াও তীব্র গরমে ডায়রিয়াসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশুসহ সব বয়সের মানুষ।
গাইবান্ধায় ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে খুন হয়েছেন আশরাফ আলী নামের এক রিকশাচালক। এ ঘটনায় অভিযুক্ত সাদেকুল ইসলামকে কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে সদর উপজেলার সুন্দরগঞ্জ-কুপতলা সড়কের ৭৫ নম্বর রেলগেট নামক এলাকায় এ ছিনতাই ও হত্যাকাণ্ড ঘটে। পরে শুক্রবার দুপুরে আদালতের মাধ্যমে সাদেকুলকে কারাগারে পাঠানো হয়।
৫০ বছর বয়সী রিকশাচালক আশরাফ আলী সদর উপজেলার খোলাহাটী ইউনিয়নের সাহার ভিটার গ্রামের মৃত ফয়জার রহমানের ছেলে। অন্যদিকে ছিনতাই ও হত্যায় অভিযুক্ত সাদেকুল ইসলাম কুপতলা ইউনিয়নের রামপ্রসাদ গ্রামের বাসিন্দা।
নিউজবাংলাকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন গাইবান্ধা সদর থানার ওসি মাসুদ রানা।
ওসি জানান, প্রতিদিনের মতোই বৃহস্পতিবার রাতে রিকশা নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন আশরাফ আলী। তিনি কুপতলা এলাকার ৭৫ নম্বর রেলগেটে পৌঁছালে আগে থেকে ওঁৎ পেতে থাকা সাদেকুল ইসলাম তার পথ রোধ করে ছুরি ধরে রিকশা এবং চাবি কেড়ে নিয়ে তাকে চলে যেতে বলেন। আশরাফ আলী এতে রাজি না হওয়ায় বিষয়টি নিয়ে প্রথমে উভয়ের মধ্যে ধস্তাধস্তি শুরু হয়। এক পর্যায়ে ক্ষিপ্ত সাদেকুল আশরাফ আলীর পেটে ছুরিকাঘাত করেন। পরে স্থানীয়রা তাকে চিকিৎসার জন্য গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ওসি বলেন, ‘এ ঘটনার পর অভিযান চালিয়ে ওই রাতেই অভিযুক্ত সাদেকুল ইসলামকে আটক করা হয়। একই সঙ্গে ঘটনাস্থল থেকে রিকশাটিও উদ্ধার করা হয়। পরে আজ (শুক্রবার) দুপুরে সাদেকুলকে একমাত্র আসামি করে থানায় একটি হত্যা মামলা করেন নিহতের স্ত্রী মনোয়ারা বেগম। মামলায় আসামিকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে দুপুরেই আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।’
পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার অগ্রণী ব্যাংকের কাশিনাথপুর শাখায় প্রায় সাড়ে ১০ কোটি টাকার অনিয়মের অভিযোগে শাখা ম্যানেজারসহ ৩ কর্মকর্তাকে আটকের পর কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত।
শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক আনোয়ার হোসেন সাগর। এদিন দুপুরে তাদের আদালতে প্রেরণ করে সাঁথিয়া থানা পুলিশ।
বিষয়টি নিশ্চিত করে আদালতের জিআরও এএসআই মাহবুবুর রহমান জানান, বিকেলে সাঁথিয়া থানা থেকে এনে তাদের আদালতে তোলা হয়। এ সময় কেউ তাদের জন্য জামিন আবেদন করেননি। ফলে আদালত তাদের জেলা কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
আটককৃতরা হলেন- অগ্রণী ব্যাংক কাশিনাথপুর শাখার ব্যবস্থাপক (সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার) সুজানগর উপজেলার দুর্গাপুর গ্রামের বাসিন্দা হারুন বিন সালাম, সিনিয়র অফিসার সাঁথিয়া উপজেলার কাশিনাথপুর এলাকার বাসিন্দা আবু জাফর এবং ক্যাশিয়ার বেড়া উপজেলার নতুন ভারেঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা সুব্রত চক্রবর্তী।
ব্যাংক কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, বৃহস্পতিবার সকালে অগ্রণী ব্যাংকের রাজশাহী বিভাগীয় অফিস থেকে ৫ সদস্যবিশিষ্ট অডিট টিম কাশিনাথপুর শাখায় অডিটে আসে। দিনভর অডিট করে তারা ১০ কোটি ১৩ লাখ ৬২ হাজার ৩৭৮ টাকা আর্থিক অনিয়ম পান। এ বিষয়ে সাঁথিয়া থানায় ওই শাখার ম্যানেজার (সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার) হারুন বিন সালাম, ক্যাশ অফিসার সুব্রত চক্রবর্তী ও সিনিয়র অফিসার আবু জাফরকে অভিযুক্ত করে অভিযোগ দিলে পুলিশ বৃহস্পতিবার রাতে তাদের তিনজনকে আটক করে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে সাঁথিয়া থানার ওসি আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘অডিটে অনিয়ম ধরা পড়লে তাদের আটক করে সাঁথিয়া থানা পুলিশকে খবর দেয় ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। পুলিশ গিয়ে তাদের আটক করে থানায় নিয়ে আসে। আজ (শুক্রবার) দুপুরে জিডির ভিত্তিতে আটককৃতদের আদালতে পাঠানো হয়। পরবর্তীতে বিষয়টি নিয়ে দুদক আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।’
আরও পড়ুন:দীর্ঘ এক যুগ বন্ধ থাকার পর পুনরায় শ্রীমঙ্গল-পাত্রখোলা সড়কে বাস পরিষেবা চালু করেছে শ্রীমঙ্গল-শমশেরনগর-কুলাউড়া বাস মালিক সমিতি।
বৃহস্পতিবার সকালে কমলগঞ্জ উপজেলার মাধবপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আসিদ আলী ও ইসলামপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সোলেমান মিয়াকে সঙ্গে নিয়ে বাস সার্ভিস উদ্বোধন করেন শ্রীমঙ্গল বাস মালিক সমিতি ও শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা।
প্রাথমিক পর্যায়ে এই রুটে ৫০ মিনিট পরপর ২৪টি বাস চলাচল করবে বলে সমিতির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত শ্রীমঙ্গল থেকে ভানুগাছ মাধবপুর সড়ক দিয়ে ইসলামপুর ইউনিয়নের কুরমা চা বাগান পর্যন্ত এ বাস চলাচল করবে।
কুরমা থেকে শ্রীমঙ্গল পর্যন্ত বাসভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ৬০ টাকা। এছাড়া পাত্রখোলা থেকে শ্রীমঙ্গল পর্যন্ত ৫০ টাকা, মাধবপুর থেকে শ্রীমঙ্গল পর্যন্ত ৪০ টাকা, কুরমা থেকে ভানুগাছ পর্যন্ত ৪০ টাকা, পাত্রখোলা থেকে ভানুগাছ পর্যন্ত ২৫ টাকা, মাধবপুর থেকে ভানুগাছ পর্যন্ত ১৫ টাকা এবং ভানুগাছ থেকে শ্রীমঙ্গল ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ২৫ টাকা।
বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় কুরমা নতুন বাস স্ট্যান্ডে বাস চলাচলের উদ্বোধন শেষে মতবিনিময় সভায় শ্রীমঙ্গল-শমসেরনগর-কুলাউড়া বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির সভাপতি মো. তসলিম চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও প্রকৌশলী যোগেশ্বর চন্দ্র সিংহের পরিচালনায় বক্তব্য রাখেন ইউপি চেয়ারম্যান সোলেমান মিয়া, সাংবাদিক আসাদুজ্জামান শাওন, ইউপি সদস্য আব্দুল্লাহ, নুরুল হক, বাস মালিক সমিতির সহ-সভাপতি দেলোয়ার হোসেন দুলাল, সাধারণ সম্পাদক ফজলুল হক, গ্রুপ সভাপতি কাসেম মিয়া ও আব্দুস সালাম প্রমুখ।
এর আগে মাধবপুর বাজারে বাস প্রবেশ করলে এলাকাবাসী বাস মালিক সমিতি ও শ্রমিক ইউনিয়নের নেতাদের ফুলেল শুভেচ্ছা জানান। এ সময় যাত্রীদের মানসম্পন্ন সেবা দিতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হবে বলে আশ্বস্ত করেন বাস মালিক সমিতি ও শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা।
এদিকে সিএনজি থেকে ভাড়া কম করে বাস সার্ভিস চালু হওয়ায় যাত্রীসহ স্কুল কলেজ শিক্ষার্থীরা বেজায় খুশি।
পঞ্চগড় সদর উপজেলায় চাওয়াই নদীতে গোসল করতে নেমে পানিতে ডুবে আলমি আক্তার ও ইসরাত জাহান সিফাত নামে দুই শিশুর মৃত্যু হয়েছে।
শুক্রবার দুপুরে জেলার সদর উপজেলার অমরখানা ইউনিয়নের চাওয়াই নদীর চৈতন্যপাড়া এলাকায় এই দুর্ঘটনা ঘটে।
১২ বছরের আলমি ওই এলাকার আব্দুল আজিজের মেয়ে এবং ৯ বছরের সিফাত সাইফুল ইসলামের মেয়ে। তারা দুজনে সম্পর্কে ফুফু-ভাতিজি।
স্থানীয়দের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, শুক্রবার দুপুরে আলমি ও সিফাত বাড়ির পাশে চাওয়াই নদীতে গোসল করতে যায়৷ গোসল করতে গিয়ে সিফাত পানিতে ডুবে যেতে থাকলে তাকে বাঁচাতে এগিয়ে যায় আলমি৷ পরে দুজনেই পানিতে ডুবে যায়। এ সময় নদীর পাড়ে থাকা অন্য আরেক শিশু ঘটনাটি দেখে দৌড়ে তাদের পরিবারের লোকজনকে খবর দিলে তারা দ্রুত ঘটনাস্থলে এসে মৃত অবস্থায় নদী থেকে দুজনের মরদেহ উদ্ধার করে।
খবর পেয়ে পুলিশ দুই শিশুর মরদেহের সুরতহাল করে।
পঞ্চগড় সদর থানার উপ-পরিদর্শক পলাশ চন্দ্র রায় বলেন, ‘দুই শিশুর মধ্যে একজন সাঁতার জানত, আরেকজন জানত না। একজন আরেকজনকে বাঁচাতে গিয়ে দুজনেই একসঙ্গে ডুবে মারা গেছে বলে জানিয়েছে স্থনীয়রা।’
মরদেহের সুরতহাল শেষে ইউপি চেয়ারম্যানের মাধ্যমে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানান এ কর্মকর্তা।
আরও পড়ুন:আনসার সদস্য তরিকুল ইসলাম। বাড়ি তার বাগেরহাট সদর উপজেলার খানপুর গ্রামে। বর্তমানে ঢাকার সুত্রাপুর থানায় কর্মরত।
৩৮ বছর বয়সী এ যুবকের নেশা বিয়ে করা। যেখানেই যান সেখানেই তিনি বিয়ে করেন। এ পর্যন্ত ৭টি বিয়ে করেছেন।
সর্বশেষ তিনি বিয়ে করেন ঝিনাইদহ শহরের পবহাটি এলাকার। ঢাকায় থাকাকালে সেঁজুতি নামের পবহাটির একটি মেয়ের সঙ্গে সপ্তমবারের মতো সংসার শুরু করেন তিনি।
তবে এর মানে এই নয় যে, তার আগের সব স্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন হয়েছে। বর্তমানে তৃতীয় স্ত্রী পারভীন তার গ্রামের বাড়িতে এবং ষষ্ঠ স্ত্রী রয়েছেন যশোরের বেনাপোলে। ২ স্ত্রীর ঘরে ২টি সন্তানও রয়েছে তরিকুলের।
সম্প্রতি সংসার জীবন নিয়ে বিপাকে পড়েছেন এই যুবক। স্বামীকে ফিরে পেতে আড়াই বছরের মেয়েকে নিয়ে ঝিনাইদহের পবহাটিতে আসেন ষষ্ঠ স্ত্রী হোসনে আরা আক্তার সাথী। তরিকুলকে স্বামী দাবি করলে সেখানে বেঁধে যায় রণক্ষেত্র। স্বামীকে নিয়ে সেঁজুতির সঙ্গে শুরু হয় তার কাড়াকাড়ি। কোনো উপায় না পেয়ে পালিয়ে যান আনসার সদস্য তরিকুল ইসলাম।
নিউজবাংলাকে সাথী জানান, বেনাপোল বন্দরে কর্মরত থাকা অবস্থায় নিজেকে এতিম পরিচয় দিয়ে তাকে বিয়ে করেন তরিকুল। ২০১৮ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর তাদের বিয়ের পর থেকে একসঙ্গেই ছিলেন দুজন। তবে ২০২২ সালে বদলি হয়ে ঢাকায় চলে যান তরিকুল। তার কিছুদিন পর থেকে সাথীর সঙ্গে তার সব ধরনের যোগাযোগ বন্ধ।
তিনি জানান, ঢাকায় বদলি হওয়ার পর থেকে তার ও তাদের সন্তানের কোনো খরচ পাঠাতেন না তরিকুল। এরই মধ্যে সেঁজুতির সঙ্গে তার ইমোতে পরিচয় হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ওই বছরের ডিসেম্বর মাসে সেঁজুতিকে বিয়ে করেন তিনি।
সাথী বলেন, ‘গত ঈদে আমার কাছে গিয়ে ৬ দিন ছিল। সেখানে আমাকে ভুলিয়ে আমার কাছ থেকে ৪০ হাজার টাকা নিয়ে চলে আসে। তারপর আবার সকল যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে। আমার আড়াই বছরের মেয়েটি বাবার জন্য সব সময় কান্নাকাটি করে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমার স্বামী ঝিনাইদহ আছে- এমন খবর পেয়ে আমরা ওই বাড়িতে গিয়েছিলাম। সেখানে আমাদের মারধর করে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে। আর এর মধ্যে আবার পালিয়েছে সে (তরিকুল)। আমি তরিকুল ও সেঁজুতির বিচার চাই।’
এ ব্যাপারে জানতে আনসার সদস্য তরিকুলের মোবাইল নম্বরে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য