সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংক লিমিটেডের সাবেক চেয়ারম্যান ও লকপুর গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান এস এম আমজাদ হোসেন ও তার সহযোগীদের কাছ থেকে ৩৩৮ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ আদায়ের মামলা করেছে জনতা ব্যাংক।
শতাধিক কোটি টাকা শুল্ক ফাঁকি ও ৪০ কোটি টাকা জরিমানা দাবি করে বন্ড লাইসেন্স বাতিলের পর এই মামলা করা হলো।
ব্যাংকে জালিয়াতি করে ২০ কোটি টাকা আত্মসাৎ এবং বিদেশে অর্থপাচারের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) একটি মামলাও আছে গোপনে বিদেশে চলে যাওয়া আমজাদ ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে।
খুলনার অর্থ ঋণ আদালতে গত ৩০ নভেম্বর জনতা ব্যাংকের খুলনা করপোরেট শাখা থেকে মামলা তিনটি করা হয়। এতে আমজাদ ছাড়াও তার স্ত্রী সুফিয়া আমজাদ এবং লকপুর গ্রুপের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানকে আসামি করা হয়েছে।
মামলা তিনটি আদালত নথিভুক্ত করে আসামিদের বিরুদ্ধে আগামী মার্চে আসামিদের বিষয়ে আদেশ দেয়ার কথা জানিয়েছেন বিচারক।
ইস্টার্ন পলিমারের খেলাপি ঋণ ১৫১ কোটি
মোংলা ইপিজেডে অবস্থিত এই কোম্পানিটি শতভাগ রপ্তানিমুখী প্রতিষ্ঠান। ২০১৩ সালের এপ্রিল থেকে জনতা ব্যাংকের সঙ্গে লেনদেনের মাধ্যমে চলত আমদানি ও রপ্তানি।
গত ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত কোম্পানিটির খেলাপি ঋণ ১৫১ কোটি ৮৪ লাখ ৫ হাজার ৬১৬ টাকা। বিদেশি পণ্য আমদানির জন্য এলসি মার্জিন ঋণসহ বিভিন্ন প্রকার ঋণ পরিশোধ না করায় এ মামলা করা হয়।
আসামিরা হলেন এমডি এস এম আমজাদ হোসেন এবং পরিচালক তার স্ত্রী বেগম সুফিয়া আমজাদ।
চলতি বছরের ৫ জানুয়ারি এবং ৭ এপ্রিল টাকা পরিশোধের তাগাদাপত্র দেয়া হয় আসামিদের। তারা সাড়া না দেয়ায় ব্যাংকের আইনজীবী ২০২২ সালের ১ অক্টোবর আইনি নোটিশ পাঠান।
এরপর ঋণ আদায়ে সম্পত্তি ও কারখানা নিলামের জন্য ২০ অক্টোবর একটি জাতীয় ও একটি স্থানীয় পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়। কিন্তু কোনো বিডার নিলামে অংশ না নেয়ায় জমি ও কারখানা বিক্রি করা সম্ভব হয়নি।
এই ১৫১ কোটি টাকার ঋণের বিপরীতে খুলনার রুপসার জাবুসা মৌজায় ৯ একর জলাভূমি বন্ধন দেখানো আছে। খুলনা সাব রেজিস্ট্রার দপ্তরে এই জলাভূমির দর দেখানো হয়েছে একর ৭৫ হাজার টাকা করে। এই হিসাবে ৯ একরের দাম আসে ৬ লাখ ৭৫ হাজার টাকা।
মুনস্টার পলিমারে খেলাপি ৯০ কোটি
মোংলা ইপিজেড অবস্থিত এই কোম্পানিটিও রপ্তানিমুখি। ২০১৭ সালে জনতা ব্যাংকের দিলখুশা শাখা থেকে তারা প্রথম ঋণ নেয়, পরে তা স্থানান্তর করা হয় খুলনা করপোরেট শাখায়।
গত ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানের কাছে ব্যাংকের পাওনা ৯০ কোটি ৮১ লাখ ৭৩ হাজার ৬৩৩ টাকা।
এই মামলাতেও আসামি আমজাদ হোসেন ও তার স্ত্রী সুফিয়া আমজাদ।
মামলায় বলা হয়, ব্যাংক টাকা আদায়ের গত ৬ জুন চূড়ান্ত তাগাদাপত্র এবং ১ অক্টোবর আইনি নোটিশ পাঠানো হয়। তবে কোনো সাড়া মেলেনি।
এরপর বন্ধকি সম্পত্তি বিক্রিতে ২০ অক্টোবর থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে জাতীয় এবং স্থানীয় পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়। সে নিলামেও কেউ অংশ নেয়নি।
বাংলাদেশ পলি প্রিন্টিং ইন্টারন্যাশনালের খেলাপি ঋণ ৯৫ কোটি টাকা
বাগেরহাট জেলার ফকিরহাট থানার নওয়াপাড়ার শ্যামবাগায় এই কারখানাটিও আমদানি-রপ্তানির সঙ্গে জড়িত। ২০১৪ সাল থেকে তাদের লেনদেন জনতা ব্যাংকের সঙ্গে।
২০২২ সালের ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত এ প্রতিষ্ঠানের কাছে খেলাপি ঋণ ৯৫ কোটি ৪৭ লাখ ২৯ হাজার ৭৫৩ টাকা।
এই মামলার আসামি হিসেবে আমজাদ হোসেন ও তার স্ত্রী ছাড়াও নাম আছে তাদের মালিকানাধীন বাগেরহাট সি ফুড ইন্ডাস্ট্রিজ, খুলনা প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং লিমিটেড, মেট্রো ব্রিক্স লিমিটেড, রুপসা ফিস অ্যান্ড অ্যালাইড ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড ও সাউদার্ন ফুডস লিমিটেডকেও।
২০২২ সালের ৬ জুন চূড়ান্ত পত্র এবং ১ অক্টোবর আইনি নোটিশ দেয়া হয়। এরপর ২০ সেপ্টেম্বর নিলামের দিন ঠিক করে দুটি পত্রিকায় দেয়া হয় নিলাম বিজ্ঞপ্তি। কিন্তু তাতে কেউ অংশ নেয়নি।
অস্বাভাবিক ঋণে তদন্ত কমিটি
৩৩৮ কোটি টাকা ঋণের বিপরীতে খুলনার রূপসায় ৮ দশমিক ১৪ একর, বটিয়াঘাটা থানার জিরোপয়েন্ট ৯ দশমিক ২৮ একর জলাভূমি এবং বাগেরহাটের ফকিরহাটে ৩ দশমিক ৩৩ একর জমি বন্ধক দেয়া হয়েছে।
স্থানীয় ভূমি অফিস এবং সাব রেজিস্ট্রার অফিসের সরকারি দর অনুযায়ী এসব জমির দাম ৫০ কোটি টাকার বেশি হবে না।
প্রতিষ্ঠানগুলোকে ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় থেকে দেয়া মঞ্জুরির অতিরিক্ত ঋণ দেয়ার ঘটনায় ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় থেকে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়।
এই কমিটি ২০২১ সালের ২৩ অক্টোবর জনতা ব্যাংকের খুলনা করপোরেট শাখার ডিজিএমকে ১১টি বিষয়ে অভিযুক্ত করে কারণ দর্শানোর নোটিশ জারি করে।
সে সময় ডিজিএম অরুণ প্রকাশ বিশ্বাস জবাব দেন, ‘এই জমি ছাড়া ফ্যাক্টরি যন্ত্রাংশ, উৎপাদিত পণ্যের প্লেজের ঋণ এবং এলসি মার্জিন ঋণসহ নানাবিধ ঋণ রয়েছে। এছাড়া জমির মূল্য আগামীতে বৃদ্ধি পেতে পারে।’
আরও অনিয়ম
লকপুরের বিরুদ্ধে অভিযোগের যেন শেষ নেই। চারটি প্রতিষ্ঠানের ১০৪ কোটি টাকা শুল্ক ফাঁকি দাবি করে আরও ৪০ কোটি টাকা অর্থদণ্ড করে বন্ড লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে।
আমজাদ হোসেনের সাউথ বাংলা ব্যাংকের চেয়ারম্যান থাকাকালে ২০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক।
এজাহারে বলা হয়, ব্যাংকের চেয়ারম্যানের দায়িত্বে থাকার সময় ক্ষমতার অপব্যবহার করে অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠানের নামে ভুয়া ঋণ সৃষ্টি করে ২০ কোটি ৬০ লাখ টাকা ব্যাংক থেকে উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেন আমজাদ হোসেনসহ অভিযুক্তরা। পরে ওই অর্থ যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও সিঙ্গাপুরে পাচার করা হয়।
দুদকের মামলার পরে নভেম্বর মাসে গোপনে বাংলাদেশ ছেড়ে যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান আমজাদ হোসেন। সঙ্গে যান স্ত্রী সুফিয়া আমজাদও।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে লকপুর গ্রুপের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (বর্তমান পরিচালকের দায়িত্বে) খান হাবিবুর রহমান বলেন, ‘মামলা বা ঋণ খেলাপির বিষয়ে আমি কিছু জানি না।’
আরও পড়ুন:প্রচ্ছায়া লিমিটেডের আট পরিচালকের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞার আদেশ দিয়েছেন ঢাকার একটি আদালত।
দেশ ত্যাগে যাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে তারা হচ্ছেন: প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক বুশরা সিদ্দিক, শেহতাজ মুন্নাসী খান, শহিদ উদ্দিন খান, শাহিন সিদ্দিক, শফিক আহমেদ শফিক, পারিজা পাইনাজ খান, নওরিন তাসমিয়া সিদ্দিক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারজানা আনজুম।
দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মো. জাকির হোসেন গালিব এই আদেশ দেন।
আবেদনে বলা হয়েছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তাঁর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, তাঁর ছোট বোন শেখ রেহানা ও তাঁর ছোট বোনের মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিকী ও অন্যান্যদের বিরুদ্ধে রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের নামে প্রায় ৫৯ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ সংক্রান্ত অভিযোগ অনুসন্ধানপূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের জন্য সাত সদস্য বিশিষ্ট অনুসন্ধান টিম গঠন করা হয়েছে।
প্রচ্ছায়া লিমিটেড নামীয় প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারহোল্ডারগণ যাতে সপরিবারে গোপনে দেশ ত্যাগ করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। তিনি দেশত্যাগ করে বিদেশে পালিয়ে গেলে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ রেকর্ডপত্র প্রাপ্তিতে ব্যাঘাত সৃষ্টি হবে। তাছাড়া সার্বিক অনুসন্ধানকাজে বিঘ্ন সৃষ্টিসহ সমূহ ক্ষতির কারণ রয়েছে। এজন্য অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে তাদের বিদেশ যাত্রা রোধে আদালতের আদেশ দেয়া একান্ত প্রয়োজন। আদালত আবেদন মঞ্জুর করে আদেশ দেন।
দুর্নীতির অভিযোগ থাকায় বাগেরহাট-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শেখ তন্ময়, খুলনা-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শেখ সালাউদ্দিন, তার ভাই শেখ সোহেল ও শেখ জালাল উদ্দিন রুবেলের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত।
আজ বৃহস্পতিবার দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার ঢাকার মেট্রোপলিটন সিনিয়র স্পেশাল জজ জাকির হোসেন গালিব এ আদেশ দেন।
দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা আকতারুল ইসলাম গণমাধ্যমকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এদিন দুদকের পক্ষে সংস্থাটির উপ-পরিচালক মো. মোস্তাফিজুর রহমান তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আবেদন করেন।
আবেদনে বলা হয়, বিগত সরকারের সাবেক মন্ত্রী ও বিভিন্ন নির্বাচনী এলাকার সংসদ সদস্যদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে অকল্পনীয় অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধানাধীন রয়েছে। অভিযোগ সংশ্লিষ্ট এই ব্যক্তিরা তাদের নামে অবৈধভাবে অর্জিত সম্পত্তি হস্তান্তর করে বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন মর্মে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়।
তারা বিদেশে পালিয়ে গেলে তদন্ত কার্যক্রম দীর্ঘায়িত বা ব্যাহত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অভিযোগটি সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া একান্ত প্রয়োজন।
শুনানি শেষে আদালত তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞার আদেশ দেন।
সাবেক ডিবি প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদের নামে রাজধানীর উত্তরায় থাকা একটি ফ্ল্যাট ও মোট ১৮ কাঠার তিনটি প্লট জব্দের আদেশ দিয়েছেন আদালত।
বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ জাকির হোসেন গালিব দুদকের আবেদন মঞ্জুর করে এ আদেশ দেন।
দুদকের আবেদন সূত্রে জানা যায়, হারুনের নামে থাকা পৃথক তিনটি প্লট রাজধানীর উত্তরায় অবস্থিত। এছাড়াও জব্দের আদেশ দেয়া ১৫৭০ বর্গফুটের ফ্ল্যাটটিও উত্তরার ১০ নম্বর সেক্টরে অবস্থিত।
এদিন হারুনের এসব সম্পদ জব্দের আবেদন করেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপপরিচালক মোহাম্মদ জয়নাল আবেদীন।
আবেদনে বলা হয়, ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতির মাধ্যমে সাবেক ডিবি প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদের বিরুদ্ধে দেশে-বিদেশে শত শত কোটি টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধানাধীন রয়েছে।
অনুসন্ধান চলাকালে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, তিনি এসব সম্পদ বিক্রয় বা হস্তান্তরের চেষ্টা করছেন। এজন্য সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে হারুনের এসব সম্পদ জব্দের আদেশ দেয়া প্রয়োজন।
এর আগে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি হারুন অর রশিদের ১০০ বিঘা জমি, পাঁচটি ভবন ও দুটি ফ্ল্যাট জব্দের আদেশ দেন আদালত। একই সঙ্গে তার নামে বিভিন্ন ব্যাংকের ১০টি হিসাবে থাকা ১ কোটি ২৬ লাখ ৯০ হাজার ৪৬৮ টাকা অবরুদ্ধের আদেশ দেয়া হয়।
পাশাপাশি এদিনই তার ভাই এবিএম শাহরিয়ারের ৩০ বিঘা জমি জব্দ, ১১টি ব্যাংক হিসাব এবং তিনটি কোম্পানির শেয়ার অবরুদ্ধের আদেশ দেন ঢাকার আদালত।
রাজধানীর বনানীতে প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম পারভেজ হত্যা মামলার এজহারনামীয় আরও দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আজ বুধবার তাদের গাইবান্ধা ও চট্টগ্রাম থেকে পৃথক অভিযানে গ্রেপ্তার করে র্যাব ও পুলিশ।
এর মধ্যে এজাহারনামীয় ১ নম্বর আসামি মো. মেহেরাজ ইসলামকে (২০) গাইবান্ধা থেকে গ্রেপ্তার করে র্যাব-১৩ এবং ৩ নম্বর আসামি মাহাথির হাসানকে (২০) চট্টগ্রাম থেকে গ্রেপ্তার করে বনানী থানা পুলিশ।
বিকেলে র্যাব সদর দপ্তর থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে মেহরাজ ইসলামকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়। এছাড়া বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রাসেল সারওয়ার মাহাথির হাসানের গ্রেপ্তারের বিষয়িটি দৈনিক বাংলাকে নিশ্চিত করেছেন।
র্যাব-১৩ এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও জ্যেষ্ঠ সহকারী পরিচালক (গণমাধ্যম) বিপ্লব কুমার গোস্বামী জানান, তথ্যপ্রযুক্তি ও গোয়েন্দা তথ্যে জনা যায়, পাভেজ হত্যা মামলার এজহারনামীয় ১ নম্বর আসামি মেহেরাজ ইসলাম গাইবান্ধায় অবস্থান করছে। পরে গতকাল বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে গাইবান্ধা সদরের ভবানীপুর গ্রামে অভিযান চলানো হয়। অভিযানে এরশাদ হোসেন নামে এক ব্যক্তির বাড়ি থেকে মেহরাজ ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এদিকে বনানী থানার ওসি মো. রাসেল সারওয়ার দৈনিক বাংলাকে বলেন, তথ্যপ্রযুক্তি ও গোয়েন্দা তথ্যে পারভেজ হত্যা মামলার ৩ নম্বর এজাহারনামীয় আসামি মাহাথির হাসানের অবস্থান শনাক্ত করা হয়। পরে গতকাল সকালে চট্টগ্রামের হালিশহর এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে বনানী থানায় আনা হয়েছে।
এর আগে গত রোববার রাতে পারভেজ হত্যা মামলায় তিন আসামিকে রাজধানীর মহাখালী ও আশপাশের এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তারা হলেন- আল কামাল শেখ ওরফে কামাল (১৯), আলভী হোসেন জুনায়েদ (১৯) এবং আল আমিন সানি (১৯)। তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৭ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।
এছাড়া গত সোমবার রাতে কুমিল্লার তিতাস উপজেলার মনাইরকান্দি গ্রাম থেকে হৃদয় মিয়াজি (২৩) নামে মামলার এজহারনামীয় আরেক আসামিকে গ্রেপ্তার করে র্যাব ১ ও র্যাব-১১ ব্যাটালিয়নের যৌথ দল। পরে গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে তাকে বনানী থানায় হস্তান্তর করা হয়। সব মিলিয়ে পারভেজ হত্যা মামলায় ৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত শনিবার (১৯ এপ্রিল) বিকেল প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে একটি দোকানে ইউনিভার্সিটি অব স্কলার্সের দুই ছাত্রী সিঙ্গারা খাচ্ছিলেন। একই সময় পারভেজ তার বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলার সময় হাসছিলেন। ইউনিভার্সিটি অব স্কলার্সের দুই ছাত্রীর অভিযোগ পারভেজ তাদের দেখে হাসছিলেন। তাদের মধ্যে একজন প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী পিয়াসের বান্ধবী। পরে বান্ধবীরা মুঠোফোনে খবর দিলে পিয়াস ও তার দুই বন্ধু মেহরাজ ও মাহথির এসে পারভেজের সঙ্গে তর্ক-বিতর্কে জড়ান। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি হয়। পরে বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়।
একপর্যায়ে দুই পক্ষকে নিয়ে বসে বিষয়টি মীমাংসার করে দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কিন্তু ক্যাম্পাস থেকে বের হওয়ার পর পারভেজকে একদল যুবক ছুরিকাঘাত করে। তার বুকে ছুরিকাঘাত করা হয়। পরে গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় পরদিন রোববার তার ভাই হুমায়ুন কবির প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও বহিরাগতসহ আট জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাত পরিচয় ২৫-৩০ জনের বিরুদ্ধে বনানী থানায় মামলা করেন।
রাজধানীসহ সারাদেশে পুলিশের বিশেষ অভিযানে গত ২৪ ঘন্টায় ১ হাজার ৬১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে মামলা ও ওয়ারেন্টভুক্ত ৯০৬ জন আসামি এবং অন্যান্য ঘটনায় ৭০৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে পুলিশ সদর দপ্তরের গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি) ইনামুল হক সাগর এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, এসব অভিযানে বিভিন্ন ধরণের অবৈধ অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধার করা অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে- ১টি দেশীয় পাইপগান, ১টি একনালা বন্দুক, ১ রাউন্ড কার্তুজের খোসা ও ২ রাউন্ড অকেজো কার্তুজ উদ্ধার করা হয়।
এর আগে গত সোমবার ২৪ ঘন্টায় সারাদেশে বিশেষ অভিযানে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল ১ হাজার ৬৩১ জনকে। তার মধ্যে মামলা ও ওয়ারেন্টভুক্ত ১ হাজার ১৩ জন আসামি এবং অন্যান্য ঘটনায় ৬১৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। তার আগে গত রোববার ২৪ ঘণ্টায় বিশেষ অভিযানে ১ হাজার ৫৩৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল।
দেশের বিভিন্ন স্থানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় এ ধরণের অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও জানিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর।
সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আসামিদের আপিল শুনানি আগামীকাল।
সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে দেখা যায় মামলাটি বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমান ও বিচারপতি মো. সগীর হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের একটি ডিভিশন বেঞ্চে বিষয়টি আগামীকাল বুধবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে মূলতবি/নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত শুনানির জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এর আগে প্রধান বিচারপতি আলোচিত এই মামলাটি নিষ্পত্তির জন্য এই হাইকোর্ট বেঞ্চে পাঠান।
২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান। এই ঘটনায় করা মামলার বিচার শেষে ২০২২ সালের ৩১ জানুয়ারি কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালত দুজনকে মৃত্যুদণ্ড, ছয়জনকে যাবজ্জীবন ও সাতজনকে খালাস দিয়ে রায় দিয়েছিলেন। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের তৎকালীন পরিদর্শক বরখাস্ত লিয়াকত আলী ও টেকনাফ থানার বরখাস্তকৃত ওসি প্রদীপ কুমার দাশ।
যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের বরখাস্ত উপ-পরিদর্শক (এসআই) নন্দ দুলাল রক্ষিত, সাগর দেব, রুবেল শর্মা, টেকনাফ থানায় পুলিশের করা মামলার সাক্ষী টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুরের মারিশবুনিয়া গ্রামের নুরুল আমিন, মো. নেজামুদ্দিন ও আয়াজ উদ্দিন।
বিচারিক আদালতের রায়ের পরে নিয়ম অনুসারে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের দণ্ডাদেশ অনুমোদনের জন্য ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে আসে। অন্যদিকে, দণ্ডিত আসামিরা আপিল ও জেল আপিল করেন।
সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলায় পুলিশের গোয়েন্দা শাখা ডিবিতে থাকা নথি আগুনে পড়ে গেছে বলে দাবি করা হয়েছে, সঠিক নয়।
মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগে নতুন উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান এমন তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় প্রচারিত সাগর-রুনি হত্যা মামলার নথিপত্র ডিবি হেফাজতে পুড়ে যাবার তথ্যটি সঠিক নয়।’
‘সাগর-রুনি হত্যা মামলার তদন্তের সময় আরও ছয় মাস বাড়ানো হয়েছে। এ নিয়ে কেউ কেউ ডিবির নথি পুড়ে যাওয়ার নিউজ করছেন, যা সঠিক না,’ যোগ করেন তিনি।
এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘আদালতে আগুনে এসব নথি পুড়ে যাওয়ার কথা বলা হয়নি। এডিশনাল অ্যাটর্নি জেনারেল আরশাদ রউফ বলেছেন, ডিবির অধিকাংশ অফিসার বদলি হওয়ায় পুরনো নথি খুঁজে পাওয়া সময়সাপেক্ষ।’
‘এ জন্য রাষ্ট্রপক্ষ নয় মাস সময় চাইলে বাদীপক্ষ তিন মাস সময়ের কথা বলেন। পরবর্তীতে আদালত ছয়মাস সময় দেন,’ যোগ করেন তিনি।
এরআগে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশ করা হয়েছে, সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলার ডিবিতে থাকা নথি আগুনে পুড়ে গেছে বলে হাইকোর্টকে জানিয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ।
অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আরসাদুর রউফ বলেন, ‘আমি এমন কোনো কথা কখনোই বলিনি। সাগর-রুনি হত্যা মামলার নথি পোড়েনি। আমি বলেছি, এটা পুরনো মামলা।’
মন্তব্য