কুমিল্লায় কোনো না কোনো পর্যায়ে অভিবাসনপ্রত্যাশীরা প্রতারণার শিকার হচ্ছে জানিয়ে কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিস বলেছে, জেলায় প্রতি বছর অন্তত ৫ হাজার মানুষ ফাঁদে পড়ছেন প্রতারকদের।
জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসের সহকারী পরিচালক দেবব্রত ঘোষ নিউজবাংলাকে জানান, প্রতি বছর কুমিল্লা থেকে গড়ে ৭০ হাজার মানুষ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে যান। এর মধ্যে অন্তত ৫ হাজার জন প্রতারণার শিকার হন।
তিনি জানান, শুধু প্রবাসে যাওয়া নিয়েই নয়, এর আগে পাসপোর্ট পেতে সবচেয়ে বেশি বিড়ম্বনার শিকার হন অভিবাসনপ্রত্যাশীরা। পাসপোর্ট তৈরি থেকে বিদেশ যাওয়া এবং দেশে ফিরে আসা পর্যন্ত ধাপে ধাপে প্রতারকদের ফাঁদে পড়লেও বেশিরভাগ সময় চুপ থাকেন তারা।
দেবব্রত আরও জানান, দালাল ছাড়া পাসপোর্ট তৈরি করতে পারেন না বেশিরভাগ অভিবাসনপ্রত্যাশী।
দালালের মাধ্যমে পাসপোর্ট করতে না চাওয়ায় চলতি বছর কুমিল্লার তিন সেবাগ্রহীতাকে আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের উপপরিচালক পেটান বলে অভিযোগ পাওয়া যায়।
কী বলছেন অভিবাসনপ্রত্যাশীরা
কুমিল্লা নগরীর চর্থা এলাকার ইদু মিয়ার ছেলে আরমান মিয়া জানান, ভিসা, মেডিক্যাল, বিমানের টিকিটসহ ৫ লাখ তুলে দেন চান্দিনা উপজেলার বাবুল মিয়ার হাতে। বাবুল মিয়ার জামাতা ওমানে লোক নেন। আত্মীয়তার সম্পর্ক থাকায় সহজেই বিশ্বাস করে এই লেনদেন করেন তিনি। পরে নির্দিষ্ট দিনে তিনি রওনা দেন।
আরমান আরও জানান, ওমানের মাসকাট বিমানবন্দরে তাকে আটকে দেয় পুলিশ। জাল ভিসার কারণে ফেরত আসেন তিনি। গত এক বছর আগে ঘটে যাওয়া এই প্রতারণার ঘানি টানছে তার পরিবার।
কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া থেকে পাসপোর্ট তৈরি করতে আসা হুমায়ুন কবির বলেন, ‘দালাল ছাড়া যদি পাসপোর্ট তৈরি করতে চান তাহলে আপনার আবেদন ফরমে শুধু ভুল থাকবে। দালালের মাধ্যমে যদি বেশি টাকা দিয়ে পাসপোর্ট তৈরি করেন, তাহলে ভুল হলেও সমস্যা নেই।
‘তা না হলে দিনের পর দিন এসে ধরনা দিলেও কাজ হবে না। তাই অতিরিক্ত দুই হাজার টাকা দিয়ে আবেদন করে সময়মতো পাসপোর্ট পেয়েছি।’
জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সালের অক্টোবর থেকে ২০২২ সালের নভেম্বর পর্যন্ত ৩ লাখ ৪৫ হাজার ৭৯৯ বিদেশগামী কর্মীর নিবন্ধন হয়েছে। তাদের মধ্যে ৩ লাখ ৩৪ হাজার ৬৩৫ পুরুষ ও ১১ হাজার ১৬৪ নারী রয়েছেন।
কেন প্রতারণার শিকার প্রবাসীরা
জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসের সহকারী পরিচালক দেবব্রত ঘোষ বলেন, যারা প্রতারণার শিকার হচ্ছেন, তাদের মধ্যে বেশিরভাগই আত্মীয়-স্বজন ও দালালদের মাধ্যমে বিদেশে যাচ্ছেন। কথা রাখছেন না সেই আত্মীয় ও দালালরা। এ ছাড়াও পর্যাপ্ত শিক্ষার অভাব রয়েছে। চটকদার বিজ্ঞাপনের ফাঁদে পড়ে প্রতারিত হচ্ছেন তারা।
কুমিল্লা র্যাব-১১-এর কোম্পানি কমান্ডার মেজর মোহাম্মদ সাকিব হোসেন বলেন, ‘গত দেড় বছরে আমরা শত শত পাসপোর্টসহ অনেক দালালকে গ্রেপ্তার করেছি।আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। এই দালালরা জেল থেকে বের হয়ে প্রতিনিয়ত নতুন কৌশলে পাসপোর্ট তৈরি করে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের নানানভাবে প্রতারণা করে, তবে র্যাবও এসব দালালদের গ্রেপ্তারে প্রতিনিয়ত অভিযান পরিচালনা করছে।
‘শুধু আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে প্রতারকদের প্রতারণা বন্ধ করা সম্ভব না। সেখানে অবশ্যই সবার সচেতনতা প্রয়োজন।’
প্রবাসীদের রক্ষায় কী ব্যবস্থা নিচ্ছে জনশক্তি অফিস
কুমিল্লা জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসের সহকারী পরিচালক দেবব্রত ঘোষ জানান, ২০২০ সালের আগস্ট থেকে ২০২২ সালের অক্টোবর পর্যন্ত জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়নে ৭০টি কর্মশালা, ৪৫টি হাট-বাজারে এবং ২২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রচারণা, নারীদের অংশগ্রহণে ২০টি উঠান বৈঠক করা হয়।
তিনি বলেন, কুমিল্লা কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে চলমান প্রাক-বহির্গমন ওরিয়েন্টেশন ক্লাসে আনুমানিক ৩৫ হাজার বিদেশগামীদের মধ্যে নিরাপদ অভিবাসন এবং রেমিট্যান্স ব্যবস্থাপনাবিষয়ক তথ্য প্রচার করা হয়।
সচেতন নাগরিকদের ভাষ্য
সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) কুমিল্লার সাবেক সভাপতি বদরুল হুদা জেনু বলেন, ‘প্রতারণা থেকে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের বাঁচাতে সরকারের ওইসব রিক্রুট এজেন্সিগুলোকে একেবারে বন্ধ করে দেয়া উচিত, যাদের লাইসেন্স নাই অথবা যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে।
‘এ ছাড়া প্রত্যন্ত অঞ্চলে গিয়ে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের বৈধভাবে প্রবাসে যাওয়ার জন্য প্রচারণা চালাতে হবে। পাশাপাশি জেলা সদরের কর্মসংস্থান ও জনশক্তি রপ্তানি অফিস ছাড়াও উপজেলা পর্যায়ে অফিস তৈরি করতে হবে।’
মানবাধিকার সংগঠক আলী আকবর মাসুম বলেন, ‘শুধু প্রতারণা ঠেকানো নয়, প্রবাসীরা যখন কর্মরত অবস্থায় মারা যান, তখন তাদের মরদেহ দেশে আনা এবং ক্ষতিপূরণ পাওয়া নিয়ে যথেষ্ট ভোগান্তি পোহাতে হয়। অফিসে অফিসে ধরনা দিতে হয় প্রবাসে মৃত্যুবরণ করা দেশের স্বজনদের। যদি দুর্ঘটনায় কোনো প্রবাসী মারা যান সে ক্ষেত্রে জনশক্তি অফিস থেকে লোকজন গিয়ে মারা যাওয়া প্রবাসীর বাড়ি থেকে সমস্ত তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা উচিত।’
তিনি আরও বলেন, ‘মৃত্যুর পর আর্থিক অনুদানের চেকগুলো স্বজনদের বাড়িতে গিয়ে দিয়ে আসা উচিত। এতে করে একজন রেমিট্যান্স যোদ্ধার প্রতি সম্মানও জানানো হবে। পাশাপাশি ভোগান্তিও কমবে।
‘কারণ একজন মানুষ পরিবার-পরিজন ছেড়ে প্রবাসে গেলে তার নাগরিকত্ব শেষ হয়ে যায় না। নাগরিক হিসেবে রাষ্ট্রীয় সব সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার অধিকার রাখেন প্রবাসীরাও।’
আরও পড়ুন:সুইজারল্যান্ডে অনুষ্ঠিত হলো বাঙালির ঐতিহ্যবাহী পিঠা উৎসব।
জেনেভার বাংলা পাঠশালায় রোববার সেখানে বসবাসরত বাঙালি পরিবারগুলোর অংশগ্রহণে উৎসবমুখর এ আয়োজনে হরেকরকম পিঠার পাশাপাশি ছিল চমৎকার সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
পুনর্গঠিত বাংলা সুইস কালচারাল অ্যাসোসিয়েশন (বিএসসিএ)-এর আয়োজনে, সভাপতি রিয়াজুল হক ফরহাদের নেতৃত্বে, সাধারণ সম্পাদক এহতেশামুল হকের সঞ্চালনায় এবং আরিনুল হক ও ফারানা হকের সার্বিক সহায়তায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সংগীত, আবৃত্তি ও নৃত্য পরিবেশন করে বাংলা পাঠশালার শিক্ষার্থী মাদিহা, নিতু, আফসার, দিলারা, সুনিষ্কা, বিভোর, রোদেলা এবং অতিথি শিল্পীরা।
জেনেভা বাংলা পাঠশালা ২০১৩ সাল থেকে প্রবাসী বাঙালি পরিবারের শিশুদের বাংলা ভাষার পাঠদানসহ নিয়মিত সাংস্কৃতিক শিক্ষা ও কার্যক্রমের আয়োজন করে আসছে। বাংলা পাঠশালার ১০ বছর পূর্তিতে মূল সংগঠন বাংলা সুইস কালচারাল অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ ও ভারতের বাংলাভাষীদের সমন্বয়ে নতুন রূপে পুনর্গঠিত হয়ে বছরব্যাপী বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করছে।
বাংলা পাঠশালার পরবর্তী আয়োজন ফেব্রুয়ারিতে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপন।
আরও পড়ুন:জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন জাপানের কানসাই আওয়ামী লীগ শাখা।
ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরের সামনে রোববার বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে এ শ্রদ্ধা জানান তারা।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন কানসাই আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম, উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য মারুফ হক খান, বজলুল করিম ও সালমান মাহমুদ সিদ্দিকী।
এর আগে বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের শহীদ সদস্যদের আত্মার শান্তি কামনা করে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস অঙ্গরাজ্যে পুলিশের গুলিতে এক বাংলাদেশি শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন। স্থানীয় সময় বুধবার বিকেলে অঙ্গরাজ্যের বোস্টনের ক্যামব্রিজ এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
নিহত ২০ বছর বয়সী সৈয়দ মোহাম্মদ আরিফ ফয়সাল ইউনিভার্সিটি অফ ম্যাসাচুসেটস এমহার্স্টের (ইউএমএএসএস) শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি পরিবারের সঙ্গে ক্যামব্রিজের পুটনাম স্ট্রিট হাউজিং কমপ্লেক্সে বসবাস করতেন।
বাংলাদেশে আরিফের বাবা ডা. এস এম মজিবুল্লাহর বাড়ি চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার দাঁতমারা এলাকায়। বছর দুয়েক আগে মা-বাবার সঙ্গে আমেরিকায় পাড়ি জমান আরিফ। তিনি মা-বাবার একমাত্র সন্তান।
স্থানীয় গণমাধ্যম ‘এনবিসি ১০ বোস্টন’-এর খবর অনুযায়ী, ঘটনাটি ঘটেছে ক্যামব্রিজের সিডনি স্ট্রিটে। ছুরি হাতে আরিফকে বাইরে দেখে পুলিশে খবর দেয় কেউ। পরে ঘটনাস্থলে পুলিশ গিয়ে আরিফকে গুলি করে।
মিডলসেক্স কাউন্টি ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি মারিয়ান রাইয়ান বলেন, ‘শুরুতে পুলিশের তাড়া খেয়ে দৌড়ে ওই এলাকার কয়েকটি ব্লক ঘোরেন আরিফ। গুলিবিদ্ধ হওয়ার আগে তিনি ছুরি নিয়ে পুলিশের দিকে অগ্রসর হওয়ার চেষ্টা করেছিলেন।
‘আরিফকে নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয় পুলিশ। এ সময় এক পুলিশ সদস্য তাকে লক্ষ্য করে গুলি করলে আহত হন আরিফ। পরে স্থানীয় হাসপাতালে নিলে সেখানে তার মৃত্যু হয়।’
এ ঘটনায় ক্যামব্রিজ মেয়র সুনবুল সিদ্দিকী ও সিটি ম্যানেজার ইয়ান হুয়াং যৌথ বিবৃতিতে গভীর দুঃখ প্রকাশ ও নিহতের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান।
ক্যামব্রিজ সিটির অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা এই বিবৃতিতে বলা হয়, ‘ক্যামব্রিজ সিটি ও পুলিশ ডিপার্টমেন্টের সহযোগিতায় ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি অফিস এই ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ ও স্বচ্ছ তদন্ত করবে। আমরা প্রকৃত ঘটনা যাচাই করব এবং এই ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে কমিউনিটির নিরাপত্তা নিশ্চিতে আমরা দায়বদ্ধ।
‘এই মর্মান্তিক প্রাণহানি সিটির সবাইকে প্রভাবিত করেছে। আগামী সপ্তাহের শুরুতে একটি কমিউনিটি মিটিংয়ের মাধ্যমে এ ঘটনা সম্পর্কে সব তথ্য অবহিত করা হবে।’
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রে পুলিশের গুলিতে এস এম আরিফ ফয়সালের মৃত্যুর ঘটনায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে বাংলাদেশে তার গ্রামের বাড়ি দাঁতমারা ইউনিয়নের হেঁয়াকো এলাকায়।
আরিফের নিকটাত্মীয় মাহমুদুল হাসান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আরিফের বাবা বাংলাদেশে গুণী চিকিৎসক ছিলেন। বছর দুয়েক আগে তারা সপরিবারে আমেরিকায় পাড়ি জমান। পরিবারের একমাত্র সন্তান আরিফ। পুলিশ দাবি করেছে যে আরিফের হাতে ছুরি ছিল। কিন্তু আমরা খবর নিয়ে জেনেছি, কোনো কারণ ছাড়াই পুলিশ তাকে গুলি করে হত্যা করেছে।’
প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্সে ভাটার মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রবাসীদেরকে হুন্ডির বদলে ব্যাংকিং চ্যানেল ব্যবহার করে অর্থ পাঠানোর আহ্বান জানিয়েছেন।
বুধবার প্রবাসী আওয়ামী লীগ নেতারা সরকারপ্রধানের সঙ্গে মতবিনিময় করতে গেলে তিনি এ আহ্বান জানান।
প্রবাসীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একটা অনুরোধ করব, যে এখন যারা রেমিট্যান্স পাঠায় যেন হুন্ডি না পাঠিয়ে সরাসরি ব্যাংকের মাধ্যমে যাতে পাঠায় সে ব্যবস্থাটা করা।’
করোনার সময় ২০২০ থেকে ২০২১ সালে রেমিট্যান্স প্রবাহ অনেকটাই বেড়ে গিয়ে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ তরতর করে বাড়লেও ২০২২ সাল খুব একটা ভালো যাচ্ছে না। রেমিট্যান্স কমছে, সেই সঙ্গে কমছে রিজার্ভ। এক বছরেরও কম সময়ে ৪৮ বিলিয়ন থেকে তা নেমে গেছে ৩২ বিলিয়নে। আর এ নিয়ে তৈরি হয়েছে উদ্বেগ।
সদ্য শেষ হওয়া ২০২২ সালে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থানকারী সোয়া কোটি প্রবাসী ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে সব মিলিয়ে ২ হাজার ১২৮ কোটি ৫৪ লাখ (২১.২৮ বিলিয়ন) ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। এই অঙ্ক আগের বছরের চেয়ে ৩ দশমিক ৫৬ শতাংশ কম।
তবে অন্য একটি পরিসংখ্যান জাগিয়েছে হতাশা। এই ২০২২ সালে অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে সাড়ে ১১ লাখ লোক কাজের জন্য বিভিন্ন দেশে গেছেন। যা আগের বছরের চেয়ে ৮৬ দশমিক ৩২ শতাংশ বেশি। ২০২১ সালে জনশক্তি রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৬ লাখ ১৭ হাজার ২০৯ জন।
অর্থাৎ আগের বছরের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ মানুষ বিদেশ গেলেও টাকা আসলো কম।
এর পেছনে হুন্ডিকে দায়ী করা হচ্ছে। জনশক্তি রপ্তানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিজের (বায়রা) সভাপতি আবুল বাশার।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘এই যে আমরা সাড়ে ১১ লাখ লোককে বিদেশে পাঠালাম, এটি একটি বিশাল বড় ঘটনা। কিন্তু দুঃখজনক হলো, জনশক্তি রপ্তানি বাড়লেও রেমিট্যান্স বাড়ছে না। এর প্রধান কারণ হচ্ছে হুন্ডি। করোনা মহামারির কারণে সব কিছু বন্ধ থাকায় বিশ্বব্যাপী অবৈধ হুন্ডি কর্মকাণ্ড বন্ধ ছিল। কিন্তু করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর থেকেই ফের হুন্ডি কর্মকাণ্ড চালু হয়েছে। ডলারের বাজারের অস্থিরতার কারণে সাম্প্রতিক সময়ে তা আরও বেড়ে গেছে।’
প্রধানমন্ত্রী রেমিট্যান্সের পাশাপাশি কথা বলেন বিনিয়োগ নিয়ে। তিনি প্রবাসীদের দেশে বিদেশি বিনিয়োগ নিয়ে আসার আহ্বানও জানান। বলেন, ‘বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আমরা তো যৌথ উদ্যোগে দিচ্ছি, এখন তো অর্থনৈতিক অঞ্চল করে দিচ্ছি। সেখানে কিন্তু যারা ব্যবসা বাণিজ্য করতে চায় তারা কিন্তু সেখানে বিনিয়োগ করতে পারে। সে জন্য পার্টনার খুঁজে নিয়ে আসলে আরও ভালো হয়। বিনিয়োগ যত আসবে তত ভালো।
‘দেশে বিদেশি বিনিয়োগ ভালোই আসছে। বাংলাদেশের দিকে সকলের দৃষ্টি। বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ছে।’
বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকট ও মূল্য বৃদ্ধির মধ্যেও বাংলাদেশের জন্য সরকারের আন্তরিকতার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘যত টাকা লাগুক, যেখান থেকে পারি খাবার জিনিস আমরা কিনে নিয়ে আসছি। ইউক্রেন যুদ্ধের জন্য আমাদের একটু সমস্যা। আর তা না হলে আমাদের কোন সমস্যা থাকার কথা না। … মানুষের খাওয়ার কষ্ট আমরা হতে দেবো না।
‘বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার ধাক্কা তো সব জায়গায় লেগেছে। বিশ্বব্যাপী মানুষের খুবই কষ্ট। মূল্যস্ফীতি বেড়ে গেছে। তবে আমাদের এই এখন কিছু মূল্যস্ফীতি কমেছে। একটু ভালোর দিকে। এবার ফসল ভালো হয়েছে। আর আল্লাহর রহমতে ফসল ভালো হয়েছে। আমনও খুব ভালো বাম্পার ফলন। এখন বোরো লাগানোর জন্য সবাই খুব ব্যস্ত।’
আরও পড়ুন:প্রবাসীদের বিভিন্ন সেবা গ্রহণ আরও সহজ করতে সরকার কাজ করছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। তিনি বলেন, ‘জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি কার্ড) জন্য প্রবাসীদের আর দেশে আসতে হবে না। বিদেশে বসেই প্রবাসীরা এনআইডি কার্ড পাবেন।
এ ছাড়া প্রবাসীদের সেবা বাড়াতে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল করার প্রস্তাব দিলেও তা এখনও পাস হয়নি। ট্রাইব্যুনাল হলে অনেক সমস্যার সহজেই সমাধান হবে।’
বৃহস্পতিবার দুপুরে সিলেটের একটি হোটেলে সিলেট কর অঞ্চল আয়োজিত সেরা করদাতাদের সম্মাননা ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রবাসীদের উদ্দেশে মন্ত্রী আরও বলেন, ‘প্রতিবছর ৩০ ডিসেম্বর প্রবাসী দিবস হিসেবে পালন করা হবে। ইতোমধ্যে মন্ত্রিসভা তা অনুমোদন দিয়েছে। এর মূল লক্ষ্য হবে প্রবাসীদের কথা শোনা ও তাদের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা।’
করদাতাদের উদ্দেশে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘দেশে ১৬ কোটি মানুষের মধ্যে মাত্র ৮-১০ শতাংশ কর দেন। এটা আমাদের জন্য লজ্জার বিষয়। দেশে করদাতার সংখ্যা কম। জনসংখ্যার তুলনায় মাত্র ৬ শতাংশ মানুষ কর দিচ্ছেন। অথচ নতুন আয়কর বাড়ানোর চেষ্টা কম। আবার আয়কর যারা দেন, তাদেরও বিরক্ত করা হয়।’
মন্ত্রী বলেন, ‘তিন লাখের ওপরে যারা লেনদেন করবেন, বাসাবাড়িতে ভাড়া আদায় করেন, তাদের ওপর ভ্যাট-ট্যাক্স আরোপ করা দরকার। কর না দিলে আমরা কোনো কিছুই প্রত্যাশা করতে পারি না। কর দেব না, অথচ সুবিধা নেব, এটা হতে পারে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোর দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাই সেখানে আহরিত রাজস্বের অধিকাংশই আসে আয়করের প্রত্যক্ষ কর থেকে। আমেরিকায় আয় ৩ হাজার ডলারের বেশি হলে প্রত্যেককে ট্যাক্স দিতে হয়। আর আইডি পেলেই ট্যাক্স রিটার্ন দিতে হবে।’
অনুষ্ঠানে সিলেট বিভাগের চার জেলা ও সিসিকের ৩৫ ব্যক্তিকে সেরা করদাতা সম্মাননা দেওয়া হয়।
সিলেট কর অঞ্চলের কমিশনার মো. আবুল কালাম আজাদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন সিলেট রেঞ্জের ডিআইজি মফিজ উদ্দিন আহমেদ পিপিএম, বাংলাদেশ ট্যাক্স ল-ইয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি অধ্যাপক মো. শফিকুর রহমান, সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি তাহমিন আহমদ প্রমুখ।
আরও পড়ুন:সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নতুন টার্মিনালের কাজে ধীরগতির ঘটনায় অসন্তোষ প্রকাশ করছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন।
বৃহস্পতিবার সকালে সিলেটে পৌঁছে তিনি বিমানবন্দরের উন্নয়নকাজের অগ্রগতি পরিদর্শন করেন। এ সময় কাজে ধীরগতি কেন, তা খতিয়ে দেখা হবে বলে জানান তিনি।
উন্নয়নকাজ পরিদর্শন শেষে ড. মোমেন বলেন, ‘বাংলাদেশে বিভিন্ন প্রকল্পের সময় বাড়ানো হয় অতিরিক্ত টাকা হাতিয়ে নেয়ার জন্য। বিদেশি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো সময়ের মধ্যেই কাজ শেষ করে। তবে সিলেট ওসমানী বিমানবন্দরে কেন তার ব্যতিক্রম হচ্ছে তার খোঁজ নেয়া হবে।’
এর আগে, ১২ মে ঢাকার দক্ষিণ কোরিয়া দূতাবাস ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইস্ট এশিয়া স্টাডি সেন্টারের আয়োজিত এক যৌথ সেমিনারে আব্দুল মোমেন সরকারি প্রকল্পে বেশি সময় ব্যয় হওয়ার বিষয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন।
তিনি বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশে যখন কোনো প্রকল্প শুরু করি, তা নির্ধারিত সময়ে শেষ হয় না। আমার কাছে অনেক উদাহরণ আছে। প্রকল্প তিন বছরে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও লেগেছে ১০ বছর। এই অতিরিক্ত সময়ের জন্য ব্যয় সমন্বয়ের কারণে সরকারের অতিরিক্ত খরচ হয়।’
একই বিষয়ে বছরের শুরুতে গত ২৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত একনেক সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অসন্তোষ প্রকাশ করে নির্ধারিত সময়ে সরকারি প্রকল্পের কাজ শেষ করার তাগিদ দেন।
আরও পড়ুন:সৌদি আরবে সড়ক দুর্ঘটনায় কবির হোসেন নামে বাংলাদেশি এক যুবক নিহত হয়েছেন।
শনিবার বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৬টার দিকে মদিনা শহরের ইয়ানবোতে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
৩৫ বছর বয়সী কবির ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার যশরা ইউনিয়নের বখুরা গ্রামের মো. ওয়ায়েজ উদ্দিনের ছেলে। তিনি মদিনায় গাড়ি চালাতেন।
নিহতের পরিবারের বরাত দিয়ে গফরগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ফারুক আহমেদ জানান, ১৫ বছর ধরে কবির সৌদি আরব থাকেন।
শনিবার সন্ধ্যায় সড়কের পাশে গাড়ি থামিয়ে কবির বসেছিলেন। এ সময় পেছন থেকে একটি গাড়ি ধাক্কা দিলে ঘটনাস্থলেই মারা যান তিনি। মরদেহ দেশে আনতে চেষ্টা চলছে।
নিহতের চাচাতো ভাই সোহেল মিয়া নিউজবাংলাকে বলেন, দেড় বছর আগে বাড়িতে এসেছিলেন কবির। কিছুদিনের মধ্যে আবারও দেশে আসার কথা ছিল তার। কিন্তু শনিবার রাতে তার মৃত্যুর খবর আসে।
মন্তব্য