বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী ফারদিন নূর পরশের মৃত্যু ও তদন্ত নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন তার সহপাঠীরা। তার ‘আত্মহত্যা’ প্রশ্নে ডিবি ও র্যাবের কাছে জবাব খুঁজেছেন শিক্ষার্থীরা। অবশেষে ‘সন্তোষজনক’ জবাব পেয়ে প্রতিবাদ কর্মসূচি থেকে পিছু হটেছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা।
শনিবার সন্ধ্যায় বুয়েটের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এক সংবাদ সম্মেলনে বুয়েট শিক্ষার্থীরা জানান, আপাতত তারা প্রতিবাদ কর্মসূচি দিচ্ছেন না। ফারদিনের আত্মহত্যার বিষয়ে র্যাব ও ডিবি যেসব তথ্য-প্রমাণ দেখিয়েছে তাতে আর ‘প্রশ্ন করার সুযোগ নেই’ বলে মনে করছেন তারা।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) ও র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) যেসব তথ্যপ্রমাণ তাদের সামনে তুলে ধরেছে, সে ব্যাপারে বিস্তারিত জানান বুয়েট শিক্ষার্থীরা।
বুয়েট শিক্ষার্থীরা বলেন, ডিবি ও র্যাবের দেয়া তথ্য ও প্রমাণ নিয়ে আমরা পাঁচটা প্রশ্ন করেছি। এসব প্রশ্নের মোটামুটি সন্তোষজনক উত্তর আমরা পেয়েছি। আমাদের কাছে সেগুলো প্রাসঙ্গিক ও গ্রহণযোগ্য মনে হয়েছে। তারা যে তদন্ত করছে তা সন্তোষজনক। এখন আর সন্দেহ করার মতো তথ্য ও প্রশ্ন আমাদের কাছে নেই।
গত ৪ নভেম্বর বুয়েট শিক্ষার্থী ফারদিন নিখোঁজ হওয়ার তিন দিন পর নারায়ণগঞ্জে শীতলক্ষ্যা নদী থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে নৌ পুলিশ। এ বিষয়ে হত্যা মামলা হলে তা তদন্ত করছে ডিবি। পাশাপাশি র্যাবসহ আরও কয়েকটি সংস্থা ছায়াতদন্ত করছে।
তদন্তের শুরু থেকে বিষয়টিকে হত্যা বলে ধরে নেয়া হলেও গত বুধবার ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পক্ষ থেকে বলা হয়, হত্যা নয়, ফারদিন নূর পরশ আত্মহত্যা করেছেন। ডিবির এ দাবি নাকচ করে বুয়েট শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদ কর্মসূচির ঘোষণা দেন।
ডিবি ও র্যাব অফিস থেকে কিছু তথ্যপ্রমাণ যাচাইয়ের পর শনিবার সন্ধ্যায় এক সংবাদ সম্মেলনে বুয়েট শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি হয়ে চারজন কথা বলেন। তবে কেউই তাদের নাম-পরিচয় বলেননি।
শিক্ষার্থীরা বলেন, তদন্ত নিয়ে ডিবি আমাদের যেসব তথ্য-উপাত্ত দেখিয়েছে সে বিষয়ে আমরা পাঁচটি প্রশ্ন করেছি।
আমাদের প্রথম প্রশ্ন ছিল, ফারদিনের শরীরে অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন আছে বলে জানিয়েছিলেন চিকিৎসক। সেক্ষেত্রে এটি হত্যা না হয়ে আত্মহত্যার দিকে কীভাবে গেল?
জবাবে কর্মকর্তারা জানান, ময়নাতদন্তের সময় প্রাথমিকভাবে ডাক্তার শরীরে আঘাতের বিষয়ে কথা বলেন। পরে ডিবির সঙ্গে চিকিৎসকের কথা হয়েছে। তিনি বলেছেন, আঘাতের ধরনটা ছিল মাথার উপর অনেকটা কিল-ঘুষির মতো। এখানে কোনো কাটা চিহ্ন ছিল না। আঘাত ছিল রক্ত জমাট বাঁধার মতো। ভিকটিমের জামাকাপড় ছেঁড়া ছিল না, জামার সব বোতাম অক্ষত ছিল।
কেউ যদি সেতুর উপর থেকে নদীতে লাফ দেয় তাহলেও স্রোতের বা স্প্যানে আঘাতে বা পানিতে লাফ দেয়ার সময় অন্য আঘাতের কারণে এ ধরনের চিহ্ন হতে পারে। সুতরাং এই আঘাতের কারণে শতভাগ নিশ্চিত করে বলা সম্ভব নয় যে এটা আত্মহত্যা না।
শিক্ষার্থীদের দ্বিতীয় প্রশ্ন ছিল- ডিবির জব্দ করা সিসিটিভি ফুটেজে যাকে সেতু থেকে লাফ দিতে দেখা গেছে, তিনিই ফারদিন কিনা?
জবাবে ডিবি বলেছে, সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে ফারদিন যাত্রাবাড়ী থেকে একটা লেগুনায় উঠেছেন। লেগুনাটি তাকে সুলতানা কামাল ব্রিজের অপর পাড়ে নামিয়ে দেয়। লেগুনা ড্রাইভারের মোবাইল লোকেশন এবং ফারদিনের মোবাইল লোকেশন ক্রস চেক করে এটি কনফার্ম করা হয়েছে।
ফারদিনের মোবাইল লোকেশন এবং ব্রাউজিং ডেটা যাচাই করা হয়েছে। সে অনুসারে রাত ২টার পর ফারদিন বিভিন্ন ওয়েবসাইটে ঢুকেছেন। তারাবো ব্রিজ থেকে ফারদিন সুলতানা কামাল ব্রিজের মাঝামাঝি অংশে চলে যান। যে স্থান থেকে ঝাপ দেয়ার ফুটেজ পাওয়া গেছে, সেখানেই তার সবশেষ মোবাইল লোকেশন শনাক্ত হয়েছে।
একই মোমেন্টে অন্য আরেকজনের সেতু থেকে লাফ দেয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই ক্ষীণ। ঝাঁপ দেয়ার পরপরই তার মোবাইল অফ হয়ে যায়। এর ২০ মিনিট পর ফারদিনের হাতঘড়িও অফ হয়ে যায় বলে প্রমাণ মিলেছে। এসবের ভিত্তিতে ধারণা করা হচ্ছে, যে ব্যক্তি সেতু থেকে ঝাঁপ দিয়েছেন তিনিই ফারদিন।
তদন্তকারীদের কাছে শিক্ষার্থীদের তৃতীয় প্রশ্ন ছিল- ফারদিন সেদিন বিভিন্ন জায়গায় ঘুরেছেন, তার সলিড প্রমাণ কী আছে?
জবাবে ডিবির দাবি, সেদিন ছাড়াও ফারদিনের আগের গতিবিধি ও যোগাযোগ যাচাই করা হয়েছে প্রযুক্তির মাধ্যমে। সেদিন রাত ১০টা ৪৫ মিনিট থেকে ১১টা ৯ মিনিট পর্যন্ত ফারদিন বুয়েটের একজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলেন। তাদের কথোপকথন স্বাভাবিক ছিল। ওই সময় ফারদিনের অবস্থান ছিল জনসন রোডে। তিনি ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়ানোর সময়ও ফোনে কথা বলেছেন। তার কথার মধ্যে অস্বাভাবিক কিছু ছিল না বলে অন্যরা জানিয়েছেন।
রাত ১টা ৫৭ মিনিট থেকে পরবর্তী দুই মিনিট মেসেঞ্জারে এক বন্ধুর সঙ্গে কথা বলেন ফারদিন। সেই বন্ধুর চ্যাট যাচাই করা হয়েছে। সেখানেও অস্বাভাবিক কিছু পাওয়া যায়নি।
ফারদিনের অস্বাভাবিক ঘোরাঘুরি দেখে র্যাবের সন্দেহ ছিল, তিনি কারও কব্জায় আছেন। কিন্তু পরে মোবাইল ডেটা ও সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, তিনি স্বাধীনভাবেই ঘোরাঘুরি করেছেন।
ফারদিনের রাত ২টা ২৫ মিনিট থেকে পরবর্তী দশ মিনিটের ব্রাউজিং হিস্ট্রি শিক্ষার্থীদের দেখায় র্যাব। তিনি ফেসবুক, টুইটারসহ কয়েকটি ওয়েবসাইট ব্রাউজ করেন। শেষের দুই মিনিট তিনি ইউটিউবে একটি ক্লাসিক্যাল ইন্ডিয়ান গান শোনেন। এর ৩৫ সেকেন্ড পরই তাকে ব্রিজ থেকে ঝাঁপ দিতে দেখা যায়। তিনি জিম্মি থাকলে সেই মূহুর্তে ফেসবুক ব্রাউজিং বা গান শোনার কথা না।
শিক্ষার্থীদের চতুর্থ প্রশ্ন ছিল লেগুনা ড্রাইভারের তথ্য নিয়ে। সেতুতে নামা ব্যক্তিই ফারদিন, সেটি চালক কীভাবে নিশ্চিত হলেন?
উত্তরে ডিবি জানায়, লেগুনা ড্রাইভারকে আটকের আগে নজরদারির মধ্যে রাখা হয়েছিল। তার মধ্যে কোনো অস্বাভাবিক আচরণ পাওয়া যায়নি। ঘটনার দিন ঠিক কতোজন যাত্রী নিয়ে তিনি যাত্রা করেছিলেন, আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদে তিনি সঠিকভাবে তা বলতে পারেননি। কারণ, ঘটনা অনেকদিন আগের।
চালকের বক্তব্য অনুসারে, রাতে তিনি ৫/৬ জন যাত্রী নিয়ে যাত্রা করেছিলেন। তারাবো ব্রিজের পাড়ে ও বাজারের কাছে দুই জনকে নামিয়ে দেন। সেই দুই জনের একজন ফারদিন বলে ধরে নেয়া যায়। কারণ সময় ও ফারদিনের মোবাইলের অবস্থান সে দিকেই ইঙ্গিত করে।
শিক্ষার্থীদের পঞ্চম প্রশ্ন ছিল মাদক, চনপাড়া বস্তি, গাড়ির ফুটেজসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে। এসব সংবাদ ও তথ্যের ভিত্তি জানতে চান শিক্ষার্থীরা।
বুয়েট শিক্ষার্থীদের বক্তব্য, ‘আমরা মূলত ডিবির কাছে পঞ্চম পয়েন্ট নিয়ে প্রশ্ন করার সুযোগ পাইনি। এই বিষয়গুলো নিয়ে ডিবি থেকে আগে কিছু বলা হয়নি। র্যাবের কাছে যাওয়ার পর এইগুলো নিয়ে প্রশ্ন করার সুযোগ হয়।’
পঞ্চম প্রশ্নের জবাবে র্যাব জানায়, তারা তদন্ত শুরু করেছিল তিনটি বিষয়কে সামনে রেখে- পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড, দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যু অথবা আত্মহত্যা। সব দিক থেকে তথ্যপ্রমাণ যাচাই করা হয়েছে।
র্যাব কর্মকর্তারা বলেন, তদন্ত শুরু করার পর ফারদিনের রবি সিমের নম্বরটি ট্র্যাক করে এমন একটি লোকেশন পাওয়া যায় যেটির বেশিরভাগ এলাকা মূলত চনপাড়ার। সুলতানা কামাল ব্রিজের অংশবিশেষও এটিতে কাভার করে। যেহেতু চনপাড়ার অংশ বেশি তাই র্যাব চনপাড়া এলাকা টার্গেট করে। ওই সময় আটক চনপাড়ার কয়েকজন সন্ত্রাসী দাবি করে, তারা ফারদিনকে হত্যা করেছে। র্যাব ক্রস চেক এবং তদন্ত করে এ বিষয়ে কিছু না পেলে সুলতানা কামাল ব্রিজ সংলগ্ন এলাকার দিকে ফোকাস করা হয়।
গাড়ির ফুটেজ বিষয়ে র্যাব শিক্ষার্থীদের জানায়, জিজ্ঞাসাবাদে সন্ত্রাসীদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে ফুটেজ দেখেছে র্যাব। আগে এ বিষয়ে তথ্য ছিল না। আর সিএনজি অটোরিকশার একটি ফুটেজ গণমাধ্যমে এসেছে, সেটি সঠিক ছিল না।
সেই ফুটেজে যাকে ফারদিন বলে দাবি করা হয়েছে তাকে গেঞ্জি পরা অবস্থায় দেখা গেছে। কিন্তু মরদেহ উদ্ধারের সময় ফারদিনের পরনে শার্ট পাওয়া গেছে। ফারদিনের বাবা ফুটেজ দেখে র্যাব আর ডিবিকে আশ্বস্ত করেছেন সেটি ফারদিন নন। ফারদিনের মোবাইল লোকেশনের সঙ্গে সেই অটোরিকশার লোকেশন ম্যাচ করেনি।
চনপাড়ার একটি পক্ষ দাবি করেছিল, রাত ১১টায় চনপাড়া বস্তিতে একজনকে হত্যা করা হয়েছে, আর এটাই ফারদিন। র্যাব তদন্ত করে দেখতে পায়, সেই খুনটা হয়েছে রাত ১১টা নাগাদ। সে সময় ফারদিন রামপুরা থেকে জনসন রোড এলাকার দিকে যাচ্ছিলেন। দূরত্ব বিবেচনায় তার চনপাড়া যাওয়া সম্ভব ছিল না।
র্যাব এটিকে পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড ধরে যে তদন্ত করেছে, সেখানে গত এক বছরে ফারদিনের সঙ্গে যাদের যোগাযোগ হয়েছে তাদের সবার তথ্য যাচাই করা হয়েছে। সেখানে সন্দেহজনক কিছু পাওয়া যায়নি।
ফারদিনের আত্মহত্যা ইস্যুতে ৫ প্রশ্নের জবাব পেয়ে সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীরা বলেন, আপাতত ফারদিনের মৃত্যুর বিষয় নিয়ে আমাদের কোনো কর্মসূচি নেই। ফারদিনের পরিবার যদি যৌক্তিক দাবিতে কিছু করে,আমরা তাদের পাশে দাঁড়াব। তবে আমাদের কাছে এ বিষয়ে আর কোনো সন্দেহ বা প্রশ্ন করার মতো এলিমেন্ট নেই।
আরও পড়ুন:ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের অবাধ চলাচল এবং প্রবেশ নিয়ন্ত্রণে আগামী ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবসসহ চারদিন মেট্রো রেলের টিএসসি স্টেশন বন্ধ রাখার সুপারিশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
রোববার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক সাইফুদ্দিন আহমেদ সংবাদকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এ তথ্য জানান।
টিএসসি মেট্রো স্টেশন যে চারদিন বন্ধ রাখার সুপারিশ করা হয়েছে সেগুলো হলো- আগামী ১৬ ডিসেম্বর, ২৫ ডিসেম্বর, ৩১ ডিসেম্বর ও ১ জানুয়ারি।
প্রক্টর বলেন, ‘বহিরাগতদের অবাধ যাতায়াত নিয়ন্ত্রণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রবেশের ছয়টি পয়েন্ট চাইলেই আমরা বন্ধ করতে পারি। কিন্তু ঠিকই মেট্রো স্টেশন দিয়ে লোকজন চলে আসবে। তাই আমরা উল্লিখিত চারদিন মেট্রো রেলের টিএসসি স্টেশন বন্ধের সুপারিশ করেছি।’
তিনি বলেন, ‘দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার এক সভায় আমি উপস্থিত ছিলাম। সেখানে আমি ক্যাম্পাসের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে মেট্রো রেলের টিএসসি স্টেশন চারদিন বন্ধ রাখার জন্য সুপারিশ করেছি।’
ঢাবি প্রক্টর জানান, সুপারিশের পর যোগাযোগ সচিব তাৎক্ষণিক মেট্রো রেলের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে তাএই চারদিন স্টেশনটি বন্ধ রাখতে বলেছেন। আশা করি, এ বিষয়ে শিগগির মেট্রো রেলকে আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি পাঠানো হবে।
ডাকসু নির্বাচন
সংবাদকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে ডাকসু নির্বাচন নিয়েও কথা বলেন প্রক্টর সাইফুদ্দিন আহমেদ।
তিনি বলেন, ডাকসু নির্বাচনের প্রক্রিয়া এবং গঠনতন্ত্র বিষয়ে সুপারিশ করার জন্য গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটি কাজ শুরু করেছে। কমিটি বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী বছরের জানুয়ারির শেষে কিংবা ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে ডাকসু নির্বাচন হতে পারে।
আরও পড়ুন:প্রতিবার পহেলা জানুয়ারি প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের বই বিতরণ করা হলেও এবার তার ব্যত্যয় ঘটছে।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার জানিয়েছেন, জানুয়ারি মাসের মধ্যেই সব পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দেয়া হবে। প্রতিটি শ্রেণির বইয়ের কিছু অধ্যায় পরিমার্জন ও পরিবর্তন করার কারণে বই ছাপাতে দেরি হচ্ছে।
তিনি জানান, শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দিতে কিছুটা বিলম্ব হবে। এ কারণে এবার ১ জানুয়ারি বই উৎসব হবে না।
খুলনা বিভাগের বিভাগীয় পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে রোববার মতবিনিময় সভা শেষে এক প্রশ্নের জবাব সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান তিনি।
সভায় সভাপতিত্ব করেন বিভাগীয় কমিশনার মোহাম্মদ ফিরোজ সরকার।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মো. আতিকুর রহমান।
সভায় স্বাগত বক্তব্য দেন অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) হোসাইন শওকত।
উপদেষ্টা বলেন, ‘আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে পর্যায়ক্রমে সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মিড ডে মিল চালু হবে, যা আগামী বছরই প্রকল্প আকারে চালু হচ্ছে।’
ওই সময় তিনি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবকাঠামোসহ বিভিন্ন জায়গায় গুণগত পরিবর্তনেরও কথা জানান।
সভায় খুলনা বিভাগের ১০ জেলার জেলা প্রশাসক কিংবা তার প্রতিনিধি এবং বিভাগীয় পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরগুলোর কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন:বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত ইনডেক্সধারী সব শিক্ষকই বদলির সুযোগ পাবেন বলে জানিয়েছেন শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ।
বুধবার বিকেলে এ তথ্য জানিয়ে তিনি বলেন, বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত শিক্ষকরা খুব শিগগির এমন সুখবর পাবেন।
ড. ওয়াহিদউদ্দিন বলেন, ‘বেসরকারি শিক্ষকদের শূন্যপদের বিপরীতে সর্বজনীন বদলি নিয়ে কাজ করছি। আজ বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করেছি। তারা জানিয়েছেন, সফটওয়্যারের মাধ্যমে সব শিক্ষককেই বদলি করা সম্ভব।’
শূন্যপদে বদলির প্রজ্ঞাপন জারিতে দেরির কারণ প্রসঙ্গে শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, ‘বেশ কিছু কারণে বেসরকারি শিক্ষকদের সর্বজনীন বদলির প্রজ্ঞাপন জারি করা সম্ভব হয়নি। প্রায় পাঁচ লাখ শিক্ষক-কর্মচারীকে বদলির আওতায় আনা খুব সহজ ব্যাপার নয়। আমরা বিষয়টি নিয়ে কাজ করছি। বিশেষজ্ঞ কমিটির মতামত পাওয়া গেছে।’
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় এই মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
মতবিনিময়কালে শিক্ষার্থীরা প্রধান উপদেষ্টার কাছে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, নিহতদের রাষ্ট্রীয় খেতাব দেয়া, আহতদের সুচিকিৎসায় সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়া এবং জুলাই গণহত্যায় জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিতের ওপর জোর দিতে বলেন। এছাড়া গণমাধ্যম ও সোশ্যাল মিডিয়ায় সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চলছে উল্লেখ করে উদ্বেগ প্রকাশ করেন তারা।
প্রধান উপদেষ্টা শিক্ষার্থীদের বলেন, ‘খুচরাভাবে কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে আগে দেখা হয়েছে। আজকে অনেকের সঙ্গে দেখা হলো। ভালো হলো। তোমাদের কথা শুনতেই মূলত আজকে বসা। তোমরা সরকারের কাছে কী চাচ্ছো, আশাগুলো কী, পরামর্শ আছে কি না- এসব জানতে চাওয়া।’
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ করে ড. ইউনূস বলেন, ‘তোমরা রাষ্ট্রের অভিভাবক, তোমাদের কারণেই রাষ্ট্র। নিজেদের ভূমিকা ভুলে যেও না। অনেকে এখানে আছে, অনেকে নেই। যারা নেই, তারাও রাষ্ট্রের অভিভাবক। তোমাদের দায়িত্ব আছে রাষ্ট্র যেন ঠিক পথে চলে, যেন বিচ্যুত না হয়। এটুকু মনে রাখলে রাষ্ট্র ঠিক থাকবে। নিজের অভিভাবকত্ব ভুলে যেও না।’
দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ প্রসঙ্গে শিক্ষার্থীদের পরামর্শকে স্বাগত জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘দ্রব্যমূল্য ঠিক থাকতে হবে। সিন্ডিকেট নাকি কী- এ ধরনের ব্যাখ্যা আমরা চাই না। কতগুলো লোক বাজারমূল্য কব্জা করে রাখবে সেটা হতে পারে না। আমরা চেষ্টা করছি দ্রব্যমূল্য ঠিক রাখার। রমজানেও দ্রব্যমূল্য স্টেবল রাখার ব্যাপারে সর্বোচ্চ উদ্যোগ নিতে হবে। হঠাৎ করে যেন কোনো পরিস্থিতি না হয়।’
স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করার পরামর্শে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘স্থানীয় সরকার সংস্কারের জন্য কমিশন আছে। তারা পরামর্শ দেবে, আমরা কাজ করব। আমরা চাই স্থানীয় সরকারের কাছে ক্ষমতা ছেড়ে দেয়া। খুব কম জিনিস উচ্চ পর্যায়ে থাকবে। দুর্নীতিগ্রস্ত সিস্টেম, একবার একটা ফান্ড বানিয়ে দিলে কারা যেন খেয়ে ফেলে। সেজন্য সুশৃঙ্খলভাবে সঠিক ব্যবস্থা নিতে হবে, যেন স্থায়ী হয়।’
জুলাইয়ে শহীদদের রাষ্ট্রীয় সম্মান ও খেতাবের বিষয়ে শিক্ষার্থীদের পরামর্শে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা এটি নিয়ে কাজ করছি। জুলাইয়ে যারা শহীদ হয়েছে তাদের অবদান আমরা ভুলব না। তাদেরকে যথাযথ রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দেয়া হবে।’
শিক্ষাক্ষেত্রে সংস্কার প্রয়োজন- শিক্ষার্থীদের এমন পরামর্শের প্রসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘শিক্ষাব্যবস্থা পুরোপুরি ধ্বংস করে দিয়ে গেছে। যেন বাংলাদেশে কেউ শিক্ষিত না হয়ে উঠতে পারে, দক্ষ হয়ে উঠতে না পারে সেজন্য পরিকল্পিতভাবে এটা করা হয়েছে। বেকারত্ব তৈরি করা হয়েছে। উদ্যোক্তাদের জন্য উৎসাহব্যঞ্জক কিছু নেই। এটা আমদের ঠিক করতে হবে। তরুণদের দক্ষ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।’
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে নারী শিক্ষার্থীদের জন্য পর্যাপ্ত আবাসনের ব্যবস্থা করার পরামর্শ দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
প্রধান উপদেষ্টা এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমি যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হই তখন আমাদের অর্থনীতি বিভাগে নারী শিক্ষার্থী ছিল মাত্র চারজন। তোমরা বলছো, এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে নারী শিক্ষার্থী প্রায় ৫২ শতাংশ। এটি অত্যন্ত আনন্দের কথা। বিশ্ববিদ্যালয়ে যে রাজনৈতিক বলয়ের মধ্যে আগে সিট বণ্টন হতো সেই দাসপ্রথা এখন ভেঙে গেছে। শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হতে দেয়া যাবে না।’
মতবিনিময়ে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে বার বার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচার ও গণমাধ্যমে সরকারের কাজ সঠিকভাবে প্রচার না হওয়ার বিষয়টি উঠে আসে। শিক্ষার্থীদের এমন বক্তব্য প্রসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘যারা সোশ্যাল মিডিয়ায় কথা বলে তারা সরকারের বিরুদ্ধে সরব এটা ঠিক। সরকারের নিজের কোনো পত্রিকা নেই। আছে শুধু প্রেস উইং। তারা পত্রিকায় প্রেস রিলিজ পাঠায়। কেউ ছাপে, কেউ ছাপে না। কিংবা তাদের মনমতো শেষ পাতায় বা কোণায় ছোট করে দেয়।
‘প্রেস উইং ওদের মতো করে চেষ্টা করছে, কাজ করছে। সরকার কোনো গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ করবে না। সংবাদপত্র স্বাধীনভাবে কাজ করবে- এটাই আমাদের নীতি। আমরা এই নীতিতে থাকব। আমি বুঝতে পারছি তোমরা কিছুটা মনঃক্ষুণ্ণ। এটা আসলে কিছুটা মন খারাপ হওয়ার মতো যে সরকারের কাজ মানুষের কাছে পৌঁছাচ্ছে না।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘পুরো সিস্টেমটাই ধ্বংস করে দিয়ে গেছে। চারদিকে চুরি-চামারি, ব্যাংক কাজ করে না। কমিটি অর্থনীতির শ্বেতপত্র দিয়েছে। আমি বলেছি, এটা একটা ঐতিহাসিক দলিল। আমি মনে করি এটা প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানো উচিত। দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করার দায় আওয়ামী লীগের। তবে উন্নয়নের জোয়ার বয়ে যাচ্ছে বলে যারা ঘোষণা দিয়েছে তাদেরও ধরতে হবে।
‘যে ধ্বংসস্তূপ রেখে গেছে সেখান থেকে বের হওয়া কঠিন। যেদিকে হাত দেই সেদিকেই ভাঙাচোরা। এই ভাঙাচোরা পরিষ্কার করেই যাচ্ছি। কাজ শুরু করতে গিয়ে কঠিন পরিস্থিতিতে পড়তে হচ্ছে।’
শিক্ষার্থীরা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি পূর্ণ আস্থা ও সমর্থন জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টাকে সংস্কার কাজে সর্বোচ্চ সহযোগিতার আশ্বাস দেন। তারা জানান, দেশের মানুষ সরকারের পাশে আছে। এটি গণমানুষের সরকার। জনগণ চায় অন্তর্বর্তী সরকার যেন প্রয়োজনীয় সংস্কারের কাজটি সম্পন্ন করে।
প্রধান উপদেষ্টা শিক্ষার্থীদের বলেন, ‘দেশের মানুষ ছাত্রদের ওপর ভরসা করে। এই বিশ্বাস ধরে রেখো। হাতছাড়া করো না। তোমরা কখনোই আশাহত হবে না। তোমরা অসম্ভবকে সম্ভব করেছো। দেশ বদলিয়ে ফেলেছো। তোমরাই পারবে।
‘মানুষের আশা তোমাদের পূরণ করতে হবে। অন্তত সে পথে তোমাদের অগ্রসর হতে হবে। এক বিজয় করেছো, আরেক বিজয় আসবে। তোমরা বার বার আমাদের মনে করিয়ে দেবে যেন আমরাও সতর্ক হই, সজাগ হই।’
আরও পড়ুন:জঙ্গি তৎপরতায় জড়িত থাকার অভিযোগ এনে করা মামলায় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) দুই শিক্ষার্থীর ৩০ বছরের সাজা হয়েছিল। তবে ছাত-জনতার অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট প্রেক্ষাপট বদলে যাওয়ার পর কারা অভ্যন্তরে তারা অনশন শুরু করেন। বিষয়টি জানতে পেরে তাদেরকে আইনি সহায়তা দেয়া শুরু করে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়।
ইতোমধ্যে ওই দুই শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মোট পাঁচ মামলার মধ্যে দুটিতে জামিন মিলেছে। তবে এখনই মুক্তি মিলছে না তাদের। অন্যান্য মামলা থেকে জামিন পেলেই তারা কারামুক্ত হবেন বলে জানিয়েছেন আইনজীবী।
খুলনার মহানগর দায়রা জজ মো. শরীফ হোসেন হায়দার গত রোববার ওই দুই শিক্ষার্থীর জামিন আবেদন মঞ্জুর করেন। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন অ্যাডভোকেট বেগম আক্তার জাহান (রুকু)। মামলাটি পরিচালনায় সার্বিক সহযোগিতা করে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের লিগ্যাল সেল।
চার বছরেরও অধিক সময় ধরে কারাবন্দি ওই দু’জন হলেন- খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট ডিসিপ্লিনের ’১৭ ব্যাচের শিক্ষার্থী নুর মোহাম্মাদ অনিক ও পরিসংখ্যান ডিসিপ্লিনের ’১৭ ব্যাচের মো. মোজাহিদুল ইসলাম।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর খানজাহান আলী থানা কৃষক লীগ কার্যালয় ও ৫ ডিসেম্বর আড়ংঘাটা থানার গাড়ি রাখার গ্যারেজে বোমা বিস্ফোরণের মামলায় ২০২০ সালের ২৫ জানুয়ারি এই দুই শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার দেখায় পুলিশ। পরে সোনাডাঙ্গা থানায় বিস্ফোরক আইন এবং সন্ত্রাসবিরোধী আইনে আরও দুটি মামলা করা হয়। একই সময়ে ময়মনসিংহের কোতোয়ালি থানার একটি মামলায় তাদেরকে আসামি করা হয়।
মামলাগুলোর মধ্যে তাদের দু’জনকে সোনাডাঙ্গা থানার বিস্ফোরক আইনের মামলায় ২০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও এক লাখ টাকা জরিমানা এবং অনাদায়ে আরও ছয় মাসের কারাদণ্ড দেয় আদালত। সন্ত্রাসবিরোধী আইনের অপর মামলায় তাদের দুজনের ১০ বছরের সাজা হয়েছে।
এছাড়া খুলনার খানজাহান আলী ও আড়ংঘাটা থানা এবং ময়মনসিংহ জেলায় তাদের বিরুদ্ধে আরও তিনটি মামলা রয়েছে, যেগুলো আদালতে বিচারাধীন। এর মধ্যে খানজাহান আলী ও আড়ংঘাটা থানার মামলা দুটিতে তারা জামিন পেয়েছেন।
কারাবন্দী দুই শিক্ষার্থীর উদ্ধৃতি দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে চতুর্থ বর্ষের ছাত্র থাকাকালীন ২০২০ সালের ২৫ জানুয়ারি পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করে দীর্ঘ ১৭ দিন বগুড়া ডিবি হেফাজতে নিয়ে গুম করে নির্যাতন করে। পরে তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা-বানোয়াট মামলা দেয়া হয়েছে।
তারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিগত সরকারের দেশের স্বার্থবিরোধী কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করে জনমত গড়ে তোলার কারণে এ প্রহসনের মামলার শিকার হয়েছেন। তারা এখন মুক্তি চান। মুক্তি না পাওয়া পর্যন্ত তারা কারা অভ্যন্তরে অনশন চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. রেজাউল করিম জানান, তাদের অনশনের বিষয়টি জানতে পেরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সমন্বয়কের সঙ্গে আলোচনা করা হয়। পরবর্তীতে কারাবন্দি দুই শিক্ষার্থীর জামিনের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে লিগ্যাল সেলের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে নির্দেশনা দেয়া হয়। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে মামলা পরিচালনার জন্য সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট বেগম আক্তার জাহানকে নিযুক্ত করা হয়।
আইনজীবী গত ১ ডিসেম্বর জামিন শুনানিতে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার দুই শিক্ষার্থীর বর্তমান শারীরিক অসুস্থতার বিষয় তুলে ধরেন। পরে সার্বিক দিক বিবেচনা করে আদালত তাদের জামিন আবেদন মঞ্জুর করে।
বাবাকে না পেয়ে ১৪ বছরের এক শিশুকে অস্ত্র মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগ এনে কক্সবাজারের টেকনাফ থানার ওসি মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিনকে প্রত্যাহারের দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মানববন্ধন হয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া উখিয়া-টেকনাফের শিক্ষার্থীরা শনিবার ক্যাম্পাসে রাজু ভাস্কর্যে ‘ঢাকা ইউনিভার্সিটি স্টুডেন্ট অ্যাসোসিয়েশন অফ উখিয়া-টেকনাফ (ডুসাট)’ ব্যানারে এই কর্মসূচি পালন করেন।
মানববন্ধনে ডুসাটের সভাপতি জয়নাল আবেদিন বলেন, ‘টেকনাফ থানা পুলিশ ১৪ বছর বয়সী সপ্তম শ্রেণির এক ছাত্রকে অস্ত্র মামলায় কারাগারে পাঠিয়েছে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানা যায়, শিশুটির বাবাকে না পেয়ে তাকে অস্ত্র মামলায় ফাঁসানো হয়েছে।
‘আমরা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রশাসনের প্রতি সুষ্ঠু তদন্তের আহ্বান জানাচ্ছি। একইসঙ্গে টেকনাফ থানার ওসি মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিনের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ তদন্ত করে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে এবং তদন্তের স্বার্থে তাকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি।’
সাধারণ সম্পাদক রিয়াজ উদ্দিন বলেন, ‘উখিয়া-টেকনাফ প্রশাসনের মাধ্যমে বন্দুকযুদ্ধ নামে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড এবং পাহাড়, বন, নদী, খাল ও সরকারি খাস জমি দখলকারীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনতে হবে।
‘টেকনাফে নাফ নদে জেলেদের সমস্যার সমাধান করতে হবে। সর্বোপরি টেকনাফ-উখিয়ার শিক্ষার হার বৃদ্ধি করে, শিক্ষার মাধ্যমে পরিবর্তন আনার আহ্বান জানাচ্ছি আমরা।’
সংগঠনের আরেক সদস্য ফারজানা আক্তার বলেন, ‘আমরা আর শেখ হাসিনার ওসি প্রদীপের যুগে ফিরে যেতে চাই না। আমরা উখিয়া ও টেকনাফের মানুষের নিরাপত্তা চাই।’
মানববন্ধনে শিক্ষার্থীরা দশটি দাবি উত্থাপন করেন। সেগুলো হলো:
১. সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী রাফিকে অস্ত্র দিয়ে গ্রেপ্তারের বিষয়টি পুনরায় তদন্ত করতে হবে এবং তদন্তসাপেক্ষে তাকে মুক্তি দিতে হবে।
২. টেকনাফ থানার ওসি মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিনের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ তদন্ত করে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে এবং তদন্তের স্বার্থে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাকে প্রত্যাহার করতে হবে।
৩. উখিয়া ও টেকনাফে পুলিশ, র্যাব, বিজিবি এবং কোস্টগার্ডে সৎ ও দক্ষ কর্মকর্তাদের নিয়োগ দিতে হবে।
৪. সন্ত্রাস, মাদক, অপহরণ এবং চাঁদাবাজি নির্মূলে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।
৫. প্রশাসনের কার্যক্রম নিয়মিত পর্যবেক্ষণের আওতায় আনতে হবে এবং একজন অফিসার এক বছরের বেশি যেন দায়িত্বে না থাকেন তা নিশ্চিত করতে হবে।
৬. উখিয়া ও টেকনাফে আগে নিয়োজিত প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।
৭. উখিয়া ও টেকনাফের সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রশাসনের কার্যক্রম আরও জোরদার করতে হবে।
৮. প্রশাসনের কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ এলে দ্রুততম সময়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে হবে।
৯. রোহিঙ্গা সংকটের দ্রুত সমাধান করতে হবে।
১০. কাউন্সিলর একরামসহ বিচারবহির্ভূত সব হত্যাকাণ্ড তদন্তের উদ্যোগ নিতে হবে।
প্রসঙ্গত, গত ২৬ নভেম্বর কক্সবাজারের টেকনাফে সপ্তম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীকে ঘুম থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে অস্ত্র মামলায় গ্রেপ্তারের অভিযোগ ওঠে টেকনাফ থানার অফিসার ইনচার্জ গিয়াস উদ্দিনের বিরুদ্ধে। আদালত ওই শিশুর জামিন না-মঞ্জুর করে কারাগারে পাঠায়।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী তাউসিফুল করিম রাফি উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান (২) রেজাউল করিমের ছেলে এবং হ্নীলা উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী। এই ঘটনায় তার বাবাকেও আসামি করা হয়েছে।
আরও পড়ুন:আল্টিমেটামে বেঁধে দেয়া সময়ের মধ্যে পদত্যাগ না করায় বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) উপাচার্যের কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। তারা উপাচার্য কার্যালয়ের লোকজনকে বের করে দিয়ে দুটি কলাপসিবল গেট তালবদ্ধ করে রাখেন।
বৃহস্পতিবার বেলা আড়াইটার দিকে উপাচার্যের নামফলক তুলে দিয়ে কার্যালয়ে তালাবদ্ধ করে দেন শিক্ষার্থী। এ সময় তারা বলেন, ‘উপাচার্য পদত্যাগ না করা পর্যন্ত আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব।’
জুলাই-বিপ্লবের স্পিরিট ধারণ না করা এবং বার বার বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ পদে বিতর্কিত আওয়ামী দোসরদের পুনর্বাসন করার অভিযোগ তুলে বুধবার শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের পদত্যাগের দাবি তোলেন। এজন্য তারা বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত আল্টিমেটাম দেন।
বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার পর শিক্ষার্থীরা আবার আন্দোলনে নামেন এবং উপাচার্যের কার্যালয় তালাবদ্ধ করে দেন।
এদিকে উপাচার্য মঙ্গলবার রাত থেকেই ক্যাম্পাসের বাইরে রয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ রাখলেও সাংবাদিকদেরকে তিনি এড়িয়ে চলছেন।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী মো. মোকাব্বেল শেখ বলেন, ‘গতকাল সন্ধ্যা ৭টা থেকে আজ দুপুর ১২টা পর্যন্ত উপাচার্যের পদত্যাগের আল্টিমেটাম ছিলো। কিন্তু তিনি পদত্যাগ করেননি। আজকে আমরা তার কার্যালয় তালাবদ্ধ করেছি। দাবি আদায়ে এরপর ক্যাম্পাসে ক্রিয়াশীল সব সংগঠনের সমন্বয়ে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।’
রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থী রাকিব আহমেদ বলেন, ‘আল্টিমেটামে বেঁধে দেয়া সময়ের মধ্যে উপাচার্য পদত্যাগ না করায় তার কার্যালয় তালাবদ্ধ করেছি। তিনি দ্রুত পদত্যাগ না করলে এরপর আমরা উপাচার্যের বাংলো ঘেরাও করব।’
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের একজন ববি ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি রেজা শরিফ বলেন, ‘এই উপচার্য আওয়ামী দোসরদের পুর্নবাসনের চেষ্টা করে যাচ্ছেন। সবশেষ শিক্ষক-শিক্ষার্থী সবার বিরোধিতা সত্ত্বেও বিতর্কিত ব্যক্তিকে ট্রেজারার হিসেবে যোগদানে সহযোগিতা করেছে উপাচার্য।
‘এই উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো কাজই সময়মতো করেন না। তিনি তার নিজের গতিতে চলেন। যার ফলে শিক্ষার্থীরা সময়মতো পরীক্ষার রেজাল্ট পাচ্ছেন না, মেডিক্যালে গেলে ওষুধ মিলছে না। সার্বিক বিষয় মিলে আমরা উপাচার্যের পদত্যাগের আন্দোলন করছি। আজ আমরা সব শিক্ষার্থী মিলে উপাচার্যের কার্যালয় তালাবদ্ধ করেছি।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর এটিএম রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা তাদের দাবি আদায়ের লক্ষ্যে উপাচার্যের কার্যালয় তালাবদ্ধ করেছে। বিষয়টি আমরা অবগত আছি।’
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শুচিতা শরমিনকে মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।
মন্তব্য