বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী ফারদিন নূর পরশের মৃত্যু ও তদন্ত নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন তার সহপাঠীরা। তার ‘আত্মহত্যা’ প্রশ্নে ডিবি ও র্যাবের কাছে জবাব খুঁজেছেন শিক্ষার্থীরা। অবশেষে ‘সন্তোষজনক’ জবাব পেয়ে প্রতিবাদ কর্মসূচি থেকে পিছু হটেছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা।
শনিবার সন্ধ্যায় বুয়েটের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এক সংবাদ সম্মেলনে বুয়েট শিক্ষার্থীরা জানান, আপাতত তারা প্রতিবাদ কর্মসূচি দিচ্ছেন না। ফারদিনের আত্মহত্যার বিষয়ে র্যাব ও ডিবি যেসব তথ্য-প্রমাণ দেখিয়েছে তাতে আর ‘প্রশ্ন করার সুযোগ নেই’ বলে মনে করছেন তারা।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) ও র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) যেসব তথ্যপ্রমাণ তাদের সামনে তুলে ধরেছে, সে ব্যাপারে বিস্তারিত জানান বুয়েট শিক্ষার্থীরা।
বুয়েট শিক্ষার্থীরা বলেন, ডিবি ও র্যাবের দেয়া তথ্য ও প্রমাণ নিয়ে আমরা পাঁচটা প্রশ্ন করেছি। এসব প্রশ্নের মোটামুটি সন্তোষজনক উত্তর আমরা পেয়েছি। আমাদের কাছে সেগুলো প্রাসঙ্গিক ও গ্রহণযোগ্য মনে হয়েছে। তারা যে তদন্ত করছে তা সন্তোষজনক। এখন আর সন্দেহ করার মতো তথ্য ও প্রশ্ন আমাদের কাছে নেই।
গত ৪ নভেম্বর বুয়েট শিক্ষার্থী ফারদিন নিখোঁজ হওয়ার তিন দিন পর নারায়ণগঞ্জে শীতলক্ষ্যা নদী থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে নৌ পুলিশ। এ বিষয়ে হত্যা মামলা হলে তা তদন্ত করছে ডিবি। পাশাপাশি র্যাবসহ আরও কয়েকটি সংস্থা ছায়াতদন্ত করছে।
তদন্তের শুরু থেকে বিষয়টিকে হত্যা বলে ধরে নেয়া হলেও গত বুধবার ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পক্ষ থেকে বলা হয়, হত্যা নয়, ফারদিন নূর পরশ আত্মহত্যা করেছেন। ডিবির এ দাবি নাকচ করে বুয়েট শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদ কর্মসূচির ঘোষণা দেন।
ডিবি ও র্যাব অফিস থেকে কিছু তথ্যপ্রমাণ যাচাইয়ের পর শনিবার সন্ধ্যায় এক সংবাদ সম্মেলনে বুয়েট শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি হয়ে চারজন কথা বলেন। তবে কেউই তাদের নাম-পরিচয় বলেননি।
শিক্ষার্থীরা বলেন, তদন্ত নিয়ে ডিবি আমাদের যেসব তথ্য-উপাত্ত দেখিয়েছে সে বিষয়ে আমরা পাঁচটি প্রশ্ন করেছি।
আমাদের প্রথম প্রশ্ন ছিল, ফারদিনের শরীরে অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন আছে বলে জানিয়েছিলেন চিকিৎসক। সেক্ষেত্রে এটি হত্যা না হয়ে আত্মহত্যার দিকে কীভাবে গেল?
জবাবে কর্মকর্তারা জানান, ময়নাতদন্তের সময় প্রাথমিকভাবে ডাক্তার শরীরে আঘাতের বিষয়ে কথা বলেন। পরে ডিবির সঙ্গে চিকিৎসকের কথা হয়েছে। তিনি বলেছেন, আঘাতের ধরনটা ছিল মাথার উপর অনেকটা কিল-ঘুষির মতো। এখানে কোনো কাটা চিহ্ন ছিল না। আঘাত ছিল রক্ত জমাট বাঁধার মতো। ভিকটিমের জামাকাপড় ছেঁড়া ছিল না, জামার সব বোতাম অক্ষত ছিল।
কেউ যদি সেতুর উপর থেকে নদীতে লাফ দেয় তাহলেও স্রোতের বা স্প্যানে আঘাতে বা পানিতে লাফ দেয়ার সময় অন্য আঘাতের কারণে এ ধরনের চিহ্ন হতে পারে। সুতরাং এই আঘাতের কারণে শতভাগ নিশ্চিত করে বলা সম্ভব নয় যে এটা আত্মহত্যা না।
শিক্ষার্থীদের দ্বিতীয় প্রশ্ন ছিল- ডিবির জব্দ করা সিসিটিভি ফুটেজে যাকে সেতু থেকে লাফ দিতে দেখা গেছে, তিনিই ফারদিন কিনা?
জবাবে ডিবি বলেছে, সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে ফারদিন যাত্রাবাড়ী থেকে একটা লেগুনায় উঠেছেন। লেগুনাটি তাকে সুলতানা কামাল ব্রিজের অপর পাড়ে নামিয়ে দেয়। লেগুনা ড্রাইভারের মোবাইল লোকেশন এবং ফারদিনের মোবাইল লোকেশন ক্রস চেক করে এটি কনফার্ম করা হয়েছে।
ফারদিনের মোবাইল লোকেশন এবং ব্রাউজিং ডেটা যাচাই করা হয়েছে। সে অনুসারে রাত ২টার পর ফারদিন বিভিন্ন ওয়েবসাইটে ঢুকেছেন। তারাবো ব্রিজ থেকে ফারদিন সুলতানা কামাল ব্রিজের মাঝামাঝি অংশে চলে যান। যে স্থান থেকে ঝাপ দেয়ার ফুটেজ পাওয়া গেছে, সেখানেই তার সবশেষ মোবাইল লোকেশন শনাক্ত হয়েছে।
একই মোমেন্টে অন্য আরেকজনের সেতু থেকে লাফ দেয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই ক্ষীণ। ঝাঁপ দেয়ার পরপরই তার মোবাইল অফ হয়ে যায়। এর ২০ মিনিট পর ফারদিনের হাতঘড়িও অফ হয়ে যায় বলে প্রমাণ মিলেছে। এসবের ভিত্তিতে ধারণা করা হচ্ছে, যে ব্যক্তি সেতু থেকে ঝাঁপ দিয়েছেন তিনিই ফারদিন।
তদন্তকারীদের কাছে শিক্ষার্থীদের তৃতীয় প্রশ্ন ছিল- ফারদিন সেদিন বিভিন্ন জায়গায় ঘুরেছেন, তার সলিড প্রমাণ কী আছে?
জবাবে ডিবির দাবি, সেদিন ছাড়াও ফারদিনের আগের গতিবিধি ও যোগাযোগ যাচাই করা হয়েছে প্রযুক্তির মাধ্যমে। সেদিন রাত ১০টা ৪৫ মিনিট থেকে ১১টা ৯ মিনিট পর্যন্ত ফারদিন বুয়েটের একজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলেন। তাদের কথোপকথন স্বাভাবিক ছিল। ওই সময় ফারদিনের অবস্থান ছিল জনসন রোডে। তিনি ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়ানোর সময়ও ফোনে কথা বলেছেন। তার কথার মধ্যে অস্বাভাবিক কিছু ছিল না বলে অন্যরা জানিয়েছেন।
রাত ১টা ৫৭ মিনিট থেকে পরবর্তী দুই মিনিট মেসেঞ্জারে এক বন্ধুর সঙ্গে কথা বলেন ফারদিন। সেই বন্ধুর চ্যাট যাচাই করা হয়েছে। সেখানেও অস্বাভাবিক কিছু পাওয়া যায়নি।
ফারদিনের অস্বাভাবিক ঘোরাঘুরি দেখে র্যাবের সন্দেহ ছিল, তিনি কারও কব্জায় আছেন। কিন্তু পরে মোবাইল ডেটা ও সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, তিনি স্বাধীনভাবেই ঘোরাঘুরি করেছেন।
ফারদিনের রাত ২টা ২৫ মিনিট থেকে পরবর্তী দশ মিনিটের ব্রাউজিং হিস্ট্রি শিক্ষার্থীদের দেখায় র্যাব। তিনি ফেসবুক, টুইটারসহ কয়েকটি ওয়েবসাইট ব্রাউজ করেন। শেষের দুই মিনিট তিনি ইউটিউবে একটি ক্লাসিক্যাল ইন্ডিয়ান গান শোনেন। এর ৩৫ সেকেন্ড পরই তাকে ব্রিজ থেকে ঝাঁপ দিতে দেখা যায়। তিনি জিম্মি থাকলে সেই মূহুর্তে ফেসবুক ব্রাউজিং বা গান শোনার কথা না।
শিক্ষার্থীদের চতুর্থ প্রশ্ন ছিল লেগুনা ড্রাইভারের তথ্য নিয়ে। সেতুতে নামা ব্যক্তিই ফারদিন, সেটি চালক কীভাবে নিশ্চিত হলেন?
উত্তরে ডিবি জানায়, লেগুনা ড্রাইভারকে আটকের আগে নজরদারির মধ্যে রাখা হয়েছিল। তার মধ্যে কোনো অস্বাভাবিক আচরণ পাওয়া যায়নি। ঘটনার দিন ঠিক কতোজন যাত্রী নিয়ে তিনি যাত্রা করেছিলেন, আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদে তিনি সঠিকভাবে তা বলতে পারেননি। কারণ, ঘটনা অনেকদিন আগের।
চালকের বক্তব্য অনুসারে, রাতে তিনি ৫/৬ জন যাত্রী নিয়ে যাত্রা করেছিলেন। তারাবো ব্রিজের পাড়ে ও বাজারের কাছে দুই জনকে নামিয়ে দেন। সেই দুই জনের একজন ফারদিন বলে ধরে নেয়া যায়। কারণ সময় ও ফারদিনের মোবাইলের অবস্থান সে দিকেই ইঙ্গিত করে।
শিক্ষার্থীদের পঞ্চম প্রশ্ন ছিল মাদক, চনপাড়া বস্তি, গাড়ির ফুটেজসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে। এসব সংবাদ ও তথ্যের ভিত্তি জানতে চান শিক্ষার্থীরা।
বুয়েট শিক্ষার্থীদের বক্তব্য, ‘আমরা মূলত ডিবির কাছে পঞ্চম পয়েন্ট নিয়ে প্রশ্ন করার সুযোগ পাইনি। এই বিষয়গুলো নিয়ে ডিবি থেকে আগে কিছু বলা হয়নি। র্যাবের কাছে যাওয়ার পর এইগুলো নিয়ে প্রশ্ন করার সুযোগ হয়।’
পঞ্চম প্রশ্নের জবাবে র্যাব জানায়, তারা তদন্ত শুরু করেছিল তিনটি বিষয়কে সামনে রেখে- পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড, দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যু অথবা আত্মহত্যা। সব দিক থেকে তথ্যপ্রমাণ যাচাই করা হয়েছে।
র্যাব কর্মকর্তারা বলেন, তদন্ত শুরু করার পর ফারদিনের রবি সিমের নম্বরটি ট্র্যাক করে এমন একটি লোকেশন পাওয়া যায় যেটির বেশিরভাগ এলাকা মূলত চনপাড়ার। সুলতানা কামাল ব্রিজের অংশবিশেষও এটিতে কাভার করে। যেহেতু চনপাড়ার অংশ বেশি তাই র্যাব চনপাড়া এলাকা টার্গেট করে। ওই সময় আটক চনপাড়ার কয়েকজন সন্ত্রাসী দাবি করে, তারা ফারদিনকে হত্যা করেছে। র্যাব ক্রস চেক এবং তদন্ত করে এ বিষয়ে কিছু না পেলে সুলতানা কামাল ব্রিজ সংলগ্ন এলাকার দিকে ফোকাস করা হয়।
গাড়ির ফুটেজ বিষয়ে র্যাব শিক্ষার্থীদের জানায়, জিজ্ঞাসাবাদে সন্ত্রাসীদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে ফুটেজ দেখেছে র্যাব। আগে এ বিষয়ে তথ্য ছিল না। আর সিএনজি অটোরিকশার একটি ফুটেজ গণমাধ্যমে এসেছে, সেটি সঠিক ছিল না।
সেই ফুটেজে যাকে ফারদিন বলে দাবি করা হয়েছে তাকে গেঞ্জি পরা অবস্থায় দেখা গেছে। কিন্তু মরদেহ উদ্ধারের সময় ফারদিনের পরনে শার্ট পাওয়া গেছে। ফারদিনের বাবা ফুটেজ দেখে র্যাব আর ডিবিকে আশ্বস্ত করেছেন সেটি ফারদিন নন। ফারদিনের মোবাইল লোকেশনের সঙ্গে সেই অটোরিকশার লোকেশন ম্যাচ করেনি।
চনপাড়ার একটি পক্ষ দাবি করেছিল, রাত ১১টায় চনপাড়া বস্তিতে একজনকে হত্যা করা হয়েছে, আর এটাই ফারদিন। র্যাব তদন্ত করে দেখতে পায়, সেই খুনটা হয়েছে রাত ১১টা নাগাদ। সে সময় ফারদিন রামপুরা থেকে জনসন রোড এলাকার দিকে যাচ্ছিলেন। দূরত্ব বিবেচনায় তার চনপাড়া যাওয়া সম্ভব ছিল না।
র্যাব এটিকে পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড ধরে যে তদন্ত করেছে, সেখানে গত এক বছরে ফারদিনের সঙ্গে যাদের যোগাযোগ হয়েছে তাদের সবার তথ্য যাচাই করা হয়েছে। সেখানে সন্দেহজনক কিছু পাওয়া যায়নি।
ফারদিনের আত্মহত্যা ইস্যুতে ৫ প্রশ্নের জবাব পেয়ে সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীরা বলেন, আপাতত ফারদিনের মৃত্যুর বিষয় নিয়ে আমাদের কোনো কর্মসূচি নেই। ফারদিনের পরিবার যদি যৌক্তিক দাবিতে কিছু করে,আমরা তাদের পাশে দাঁড়াব। তবে আমাদের কাছে এ বিষয়ে আর কোনো সন্দেহ বা প্রশ্ন করার মতো এলিমেন্ট নেই।
আরও পড়ুন:কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অফ বাংলাদেশের (সিইউবি) প্রথম সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়েছে মঙ্গলবার। রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য ও রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।
অনুষ্ঠানে সমাবর্তন বক্তা ছিলেন শান্তিতে নোবেল বিজয়ী এবং শিশু অধিকার কর্মী কৈলাস সত্যার্থী।
রাষ্ট্রপতি তার বক্তব্যে বলেন, ‘এটিই হয়তো প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে আমার শেষ উপস্থিতি। দেশজ নাম ও ব্র্যান্ডকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিতে এবং গর্বের সঙ্গে নিজেদের পণ্যকে ধারণ করতে হবে।’
আবদুল হামিদ বলেন, ‘কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অফ বাংলাদেশের বোর্ড অফ ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান চৌধুরী নাফিজ সরাফাত বহু বছর সাফল্যের সঙ্গে কানাডায় নিজের ব্যবসা পরিচালনা করেছেন। এখন তিনি দেশে ফিরে বিভিন্ন খাতে বিপুল বিনিয়োগ করছেন। আমি প্রবাসী সব ব্যবসায়ীকে আহবান জানাই দেশে বিনিয়োগ করার জন্য।’
সমাবর্তন বক্তা নোবেল বিজয়ী কৈলাস সত্যার্থী শিক্ষার্থীদের অনুপ্রাণিত করে বলেন, ‘আপনাদের স্বপ্ন দেখতে হবে, নিজেকে আবিষ্কার করতে হবে। যে কোনো ভালো কাজের উদ্যোগ নিয়ে তা বাস্তবায়িত করতে হবে। হয়তো কোনো একদিন এই কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অফ বাংলাদেশেরই এক ছাত্র নোবেল বিজয়ী হবে। আমি সেদিন নিজে আসব বিজয় উৎসবে অংশ নিতে।’
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে শিক্ষা উপমন্ত্রী মুহিবুল হাসান চৌধুরী বলেন, ‘বর্তমান সরকার প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি অ্যাক্ট-২০১০, জাতীয় শিক্ষা নীতি-২০১০, উচ্চ শিক্ষা উন্নয়ন প্রকল্প, বাংলাদেশ রিসার্চ অ্যান্ড এডুকেশনসহ নানা শিক্ষাবান্ধব উদ্যোগ নিয়েছে। বাংলাদেশে শিক্ষার হার প্রশংসনীয়ভাবে বেড়েছে। আমরা এখন দক্ষ জনবল সরবরাহ করি। যারা এখন সারাবিশ্বেই তাদের কর্মদক্ষতার পরিচয় দিয়ে বিশ্বের বুকে স্থান করে নিচ্ছে।’
সমাবর্তন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ‘গেস্ট অফ অনার’ হিসেবে যোগদান করেন। তিনি কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অফ বাংলাদেশের উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করেন।
কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অফ বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা এবং বোর্ড অফ ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান ড. চৌধুরী নাফিজ সরাফাত তার বক্তব্যে বলেন, ‘কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অফ বাংলাদেশে রয়েছে আধুনিক সময়োপযোগী বিভিন্ন বিভাগ। শিক্ষার্থীদের উৎসাহ দিতে রয়েছে বৃত্তির সুযোগ। ইনফরমেশন সিস্টেমস অডিট অ্যান্ড কন্ট্রোল অ্যাসোসিয়েশনসহ বিভিন্ন ব্যবসায়িক ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ততা রয়েছে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের। এছাড়া কানাডাসহ বিভিন্ন দেশের বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টি।’
মালয়েশিয়ার বিনারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য যোসেফ আদাইকালাম, অ্যারো বিজনেস এবং জিই গ্যাস পাওয়ারের সিইও দিপেশ নন্দ বিশেষ বক্তা হিসেবে যোগ দেন সমাবর্তনে।
সমাবর্তনে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদের ৪৩০ জন গ্রাজুয়েট রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে ডিগ্রি গ্রহণ করেন। তাদের মধ্যে চারজন- সামিয়া বিনতে নাঈম, সুমাইয়া সুলতানা, ফারজানা বিন্ত মোহাম্মদ ও মো. সাখাওয়াত হোসেন স্বর্ণপদক পান।
আরও পড়ুন:শিক্ষা নিয়ে ব্যবসার মানসিকতা পরিহার করতে এই খাতের উদ্যোক্তাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত না করে জ্ঞান বিতরণ ও একবিংশ শতাব্দীর উপযোগী গ্রাজুয়েট তৈরির প্রতিষ্ঠানে পরিণত করার তাগিদ দিয়েছেন তিনি।
মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অফ বাংলাদেশ (সিইউবি)-এর প্রথম সমাবর্তনে প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি এ কথা বলেন।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আচার্য আবদুল হামিদ বলেন, ‘শিক্ষাকে নিয়ে ব্যবসা করার মন-মানসিকতা পরিহার করা সবার জন্যই মঙ্গল।’
উদ্যোক্তাদের উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘আইন ও বিধি-বিধান মেনে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করবেন। নিজেদের ইচ্ছে আর সুবিধামতো বিশ্ববিদ্যালয় চালানো যাবে না।
‘প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলো দাতব্য প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচালিত হোক সেটা চাই না। আবার এটাও চাই না যে শিক্ষাকে পণ্য বিবেচনা করে শিক্ষার নামে বিশ্ববিদ্যালয়কে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা হোক।’
দেশে বর্তমানে দেড় শতাধিক বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে উল্লেখ করে আবদুল হামিদ বলেন, ‘পত্রপত্রিকা খুললেই দেখা যায় কিছু কিছু বিশ্ববিদ্যালয় ডিগ্রির নামে সার্টিফিকেট বিতরণ করে চলেছে। অনেক বিশ্ববিদ্যালয় গ্রাজুয়েট তৈরির কারখানা খুলে বসেছে।
‘একবিংশ শতাব্দীতে বৈশ্বিক অগ্রযাত্রার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে, জাতির উন্নয়ন, উন্নত সমাজ গঠন এবং বিশ্বমানের গ্রাজুয়েট তৈরির লক্ষ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গুণগত মান, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি।
‘গুণগত মান ছাড়া উচ্চশিক্ষা মূল্যহীন। তাই, উচ্চ শিক্ষা যাতে কোনোভাবেই সার্টিফিকেট-সর্বস্ব না হয় তা নিশ্চিত করতে হবে।’
গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘দেশে উচ্চ শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। শিক্ষার সঙ্গে কর্মের সংযোগ ঘটাতে না পারলে ভবিষ্যতে হয়তোবা শিক্ষার্থীর অভাবে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দিতে হবে।
রাষ্ট্রপ্রধান বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত করার পাশাপাশি নিজস্ব ক্যাম্পাস ও অবকাঠামো নির্মাণে পদক্ষেপ নেয়ারও তাগিদ দেন।
স্নাতক ডিগ্রিধারীদের উদ্দেশে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘ভবিষ্যতে দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতি নিশ্চিতকরণে তোমাদেরকেই নেতৃত্ব দিতে হবে। তোমাদের হাত ধরেই এগিয়ে যাবে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ।
‘প্রত্যাশা করি, দেশের ইতিহাস-ঐতিহ্যকে লালন করে জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চায় সমৃদ্ধ হয়ে তোমরা সুনাগরিক হিসেবে গড়ে উঠবে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য বলেন, ‘শিক্ষার্থীদেরকে শুধু পাঠ্যপুস্তক অধ্যয়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেই চলবে না, পাঠ্য বিষয়ের সঙ্গে সঙ্গে বহির্জগতের জ্ঞান ভাণ্ডার থেকে জ্ঞান আহরণ করতে হবে।
‘নিজেকে কর্মবীর ও জ্ঞানী করে তোলাই হবে শিক্ষার মূল লক্ষ্য। উচ্চ চিন্তা ও সহজ জীবনাচরণ তোমাদের প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে তুলবে। সদাচরণ আর সদালাপ হচ্ছে শিক্ষা জীবনের ভূষণ।’
শিক্ষকদের উদ্দেশে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘আপনারা উন্নত জাতি তৈরির মহান কারিগর। আপনাদের হতে হবে নৈতিকভাবে বলিষ্ঠ চরিত্রের অধিকারী, নিরপেক্ষ, অকুতোভয় এবং সত্যবাদী।’
দেশের তরুণ প্রজন্মকে যুগোপযোগী শিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তুলতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার অনুরোধ জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে দেশ উন্নয়ন ও অগ্রগতির পথে এগিয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে আবদুল হামিদ বলেন, ‘স্বল্পোন্নত দেশ থেকে আমাদের গর্বের বাংলাদেশ এখন উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উন্নীত হয়েছে।
‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত করতে প্রযুক্তিভিত্তিক শিক্ষা বিস্তারের কোনো বিকল্প নেই।’
চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ন্যানো টেকনোলজি, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স-এর মতো বিষয়গুলোকে মাথায় রেখে যুগোপযোগী শিক্ষাক্রম প্রণয়নেরও নির্দেশ দেন রাষ্ট্রপতি।
সমাবর্তনে প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শান্তিতে নোবেল পুরস্কার জয়ী ও অধিকার কর্মী কৈলাস সত্যার্থী।
সমাবর্তন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অফ বাংলাদেশের বোর্ড অফ ট্রাস্টিজ-এর চেয়ারম্যান ড. চৌধুরী নাফিস সরাফাত, সিইউবি উপাচার্য প্রফেসর ড. এইচএম জহিরুল হক, বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র উপদেষ্টা প্রফেসর ড. শেখ মামুন খালেদ, উপদেষ্টা প্রফেসর ড. রিদওয়ানুল হক এবং মার্শাল (প্রফেসর সৈয়দ আখতার হোসেন) প্রমুখ বক্তব্য দেন।
আরও পড়ুন:শিক্ষক পদে ছাত্রলীগ কর্মীর চাকরি না হওয়ায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) উপাচার্যের কার্যালয়ে ভাঙচুর চালিয়েছে সংগঠনটির নেতা-কর্মীরা। একই সঙ্গে শাটল ট্রেন অবরোধ করে রেখেছে তারা।
চবির সিন্ডিকেট সভা চলাকালে সোমবার বিকাল চারটার দিকে ভাঙচুর চালানো হয়।
চবি শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি মঈনুল ইসলাম রাসেল বলেন, ‘ছাত্রলীগের স্বর্ণপদক প্রাপ্ত ছেলেকে চাকরি না দিয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলন নেতা ও জামাত-শিবির মদদপুষ্ট নিয়োগপ্রার্থীকে নেয়া হচ্ছে। আমাদের দাবি এদেরকে বাদ দিতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘যতক্ষণ পর্যন্ত জামাত-শিবির মদদপুষ্ট নিয়োগপ্রার্থীকে বাদ দেয়া হবে না ততক্ষণ পর্যন্ত ট্রেন অবরোধ থাকবে।’
চবির প্রক্টর ড. রবিউল হাসান ভূইয়া বলেন, ‘ভাঙচুর কেন হয়েছে সেটা তদন্ত সাপেক্ষে বুঝা যাবে। নিয়োগের বিষয়ে এক্সপার্ট বোর্ড যাদের ভালো মনে করছে তাদের নিয়েছে। শাটলের বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখছি।’
আরও পড়ুন:পাঠ্যবইয়ের ভুলভ্রান্তি সংশোধনের পাশাপাশি এর পেছনে কারও গাফিলতি ছিল কি না, তা খতিয়ে দেখতে দুটি কমিটি করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। শিগগিরই এ সংক্রান্ত আদেশ জারি করা হবে।
সোমবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র এসব তথ্য জানিয়েছে।
সূত্রটি জানায়, বিশেষজ্ঞ কমিটির প্রধান করা হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক এম ওয়াহিদুজ্জামানকে। বিভিন্ন বিষয়ভিত্তিক বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে এই কমিটি করা হয়েছে। পাঠ্যপুস্তকের বিভিন্ন ভুল পর্যালোচনা করে আগামী ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে কমিটি ভুল সংশোধন করবেন।
অন্যদিকে প্রশাসনিক কমিটির প্রধান করা হয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব খালেদা আক্তারকে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের নিয়ে এই কমিটি করা হয়েছে।
পাঠ্যপুস্তকে ভুলের পেছনে কারও গাফিলতি আছে কিনা সেটি খতিয়ে দেখবে এই কমিটি। আগামী ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে তাদের প্রতিবেদন দেয়ার কথা বলা হয়েছে।
এর আগে ২৪ জানুয়ারি রাজধানীতে সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি কমিটি গঠনের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘বইয়ে কী ধরনের ভুল বা বিতর্ক রয়েছে তা যাচাই-বাছাই করার জন্য দুটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি আমাদের রিপোর্ট দেবে, আমরা বই সংশোধন করব। পাশাপাশি ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার মতো কোনো বিষয় যেন না থাকে সে জন্য কাজ করব।’
আরও পড়ুন:জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে (জবি) দ্বাদশ বাংলাদেশ রসায়ন অলিম্পিয়াড ২০২১ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে অংশগ্রহণ করা দেশের বিভিন্ন কলেজের ৩৪০ জন শিক্ষার্থী থেকে সেরা ১০ জনকে পুরস্কৃত করা হয়েছে।
বাংলাদেশ রসায়ন সমিতি ও রসায়ন বিভাগের যৌথ আয়োজনে শনিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মিলনায়তনে এর মূল পর্বের সমাপনী অনুষ্ঠিত হয়েছে।
চলতি বছরের ১৪ জানুয়ারি অলিম্পিয়াড কার্যক্রমের প্রাইমারি রাউন্ডে ৩৪০ জন প্রতিযোগী অংশ নেন। তাদের মধ্যে থেকে মূল পর্বের জন্য ৯৯ জন নির্বাচিত হন। ফাইনাল রাউন্ডে পরীক্ষার মাধ্যমে বাছাই করে ১০ জনকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়।
তারা হলেন- নটরডেম কলেজের আর্জ কর, ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজের তামিম মো. রাঈদ, সরকারি তোলারাম কলেজের আহাদ ইসলাম তালুকদার, সোনারবাংলা কলেজের ইরফান আহমেদ, নটরডেম কলেজের সঞ্জয় কুমার, চট্রগ্রাম কলেজের নিলয় দেব, ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজের লিহান হায়দার, চট্টগ্রাম কলেজের আয়মান রাফী, শহীদ স্মৃতি সরকারি কলেজের নিশাত সুলতানা এবং বীরশ্রেষ্ঠ নুর মোহাম্মদ পাবলিক কলেজের অভিষেক মজুমদার।
পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে সেরা ১০ জনকে সার্টিফিকেট, ক্রেস্ট ও ক্যালকুলেটর উপহার দেয়া হয় এবং প্রথম স্থান অধিকারীর হাতে একটি ট্যাব তুলে দেয়া হয়। এই সেরা ১০ জনের মধ্য থেকে বাছাইকৃত প্রথম ৪ জনকে প্রশিক্ষণ দিয়ে সুইজারল্যান্ডে আন্তর্জাতিক রসায়ন অলিম্পিয়াডে পাঠানো হবে।
রসায়ন বিভাগের চেয়ারম্যান ও অলিম্পিয়াডের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. শামসুন নাহারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার অধ্যাপক ড. কামালউদ্দীন আহমদ, বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. শাহজাহান এবং বাংলাদেশ ক্যামিকেল সোসাইটির সভাপতি মো. রজিউর রহমান মল্লিক।
অলিম্পিয়াডের যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন অধ্যাপক ড. এ কে এম লুৎফর রহমান।
আরও পড়ুন:নিয়মিত জিমে যাওয়া ও পুষ্টিকর খাদ্যগ্রহণসহ স্বাস্থ্য রক্ষার সব নিয়ম মানার পরও শুকিয়ে যাচ্ছিলেন আবিদ ও সেজান (ছদ্মনাম)। অথচ তাদের বয়স যথাক্রমে ২২ ও ২৫ বছর। এক পর্যায়ে চিকিৎসকের স্মরণাপন্ন হয়ে তারা জানতে পারলেন কারণটা।
স্বাস্থ্য রক্ষার পাশাপাশি মাসলম্যান হওয়ার লক্ষ্য নিয়ে নিয়মিত জিমে যাওয়াটাই তাদের জন্য কাল হয়েছে। জিমে অতিরিক্ত স্টেরয়েড ব্যবহারের কারণে তারা লিভার এনজাইম ও হরমোনাল ইমব্যালেন্স-এর মতো জটিল রোগে আক্রান্ত হয়েছেন।
তাদের একজনের লিভার এনজাইমের মাত্রা অস্বাভাবিক পর্যায়ে চলে গেছে। আরেকজনের টেস্টোস্টেরন হরমোন উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে। সাধারণত এই বয়সে এমন শারীরিক জটিলতায় আক্রান্ত হওয়ার কথা নয়।
জিমে গিয়ে স্টেরয়েড সঠিক মাত্রায় এবং সঠিক বয়সে না নেয়ায় তাদের আচরণে অস্বাভাবিকতা চলে আসে। পরিবারের সদস্যরাও বিষয়টি ধরতে পারেন। কারণ জিম করেও তারা শুকিয়ে যাচ্ছিলেন। অবশেষে চিকিৎসার জন্য এই দুই তরুণকে ঢাকায় আনা হয়।
রাজধানীর গ্রীন ডায়াগনস্টিক সেন্টারের পরিচালক ডা. রায়হান শহীদুল্লাহ বলেন, এই দুই তরুণ এখনও পুরোপুরি রিকভার করে উঠতে পারেনি। আর এই শারীরিক সমস্যার চিকিৎসা দীর্ঘমেয়াদি ও ব্যয়বহুল।
ডা. রায়হান বলেন, ‘স্টেরয়েড সাধারণত দুই ধরনের হয়ে থাকে। একটি হলো চিকিৎসকরা বিভিন্ন রোগ বুঝে প্রেসক্রাইব করেন। আর জিমে যে স্টেরয়েড ব্যবহার করা হয় তা আর্টিফিসিয়াল বডি বিল্ডিংয়ের জন্য।
‘বাংলাদেশের ওষুধ প্রস্তুতকারী কোম্পানিগুলো এই স্টেরয়েড উৎপাদন করে না। এগুলোর বেশিরভাগই চীন থেকে আনা হয়। প্রতিবেশী ভারত থেকেও নিয়ে আসা হয়।’
তিনি বলেন, ‘এই স্টেরয়েড প্রেসক্রাইব করার কোনো অথেনটিসিটি নেই। সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে জিমে সাপ্লিমেন্ট দেয়া যায়। তবে কোনো চিকিৎসকই বডি বিল্ডিংয়ের জন্য স্টেরয়েড প্রেসক্রাইব করেন না। কারণ এর কোনো অনুমোদন নেই। এগুলোর বেশিরভাগই আন্ডারগ্রাউন্ড ড্রাগ।
‘কোনো ফার্মেসিতেও এটা পাবেন না। দুই-একটা পাওয়া গেলেও সেটা নির্দিষ্ট কোনো রোগ যেমন ব্রেইন ক্যান্সার, ব্রেস্ট ক্যান্সার- এসব ক্ষেত্রে হরমোন রিপ্লেসমেন্ট হিসেবে ব্যবহার করা হয়। আর এগুলো খুবই ব্যয়বহুল। আবার চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র কোনো ফার্মেসি বিক্রিও করবে না।’
পার্শপ্রতিক্রিয়া
স্টেরয়েডের প্রধান কাজ হলো মাসল বৃদ্ধি। জিমে নিয়মিত ব্যায়াম করে এক বছরে যেটুকু মাসল বাড়ানো যায় সেটা স্টেরয়েড ব্যবহার করে দুই বা তিন মাসেই করা সম্ভব। এর বড় পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হলো, শরীরে প্রাকৃতিকভাবে যে হরমোন তৈরি হয় সেটা স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
ছেলেদের ক্ষেত্রে দেখা গেল, টেস্টোস্টেরন হরমোন তৈরিই বন্ধ হয়ে গেল। তখন নানাভাবে এর বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে শরীরে। যদি মেইল হরমোন অর্থাৎ ছেলেদের হরমোনই তৈরি না হয় সে ক্ষেত্রে তো ওই মানুষটি পুরুষের মতো আচরণই করবে না। তখন প্রজনন ক্ষমতার ক্ষেত্রেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
এছাড়া পরিমাণ না বুঝে স্টেরয়েড ব্যবহারে লিভার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। হার্ট ফেইলিউরও হতে পারে। প্রতিবেশী দেশ ভারতে দেখা যায়, অনেক বডি বিল্ডার কম বয়সে হার্ট অ্যাটাকে মারা যাচ্ছে। স্টেরয়েডের অস্বাভাবিক ব্যবহার এর অন্যতম একটি কারণ।
তাহলে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া না জেনেই কি জিমে স্টেরয়েডের ব্যবহার হচ্ছে- এমন প্রশ্নে ডা. রায়হান শহীদুল্লাহ বলেন, ‘বছর দশেক আগেও মানুষ এ বিষয়ে তেমন একটা জানত না। অনেকে এগুলোকে সাপ্লিমেন্ট মনে করত। তিন/চার বছর ধরে মানুষ কিছুটা হলেও জানতে পারছে।
‘সঠিক নিয়মে জিম না করলে জয়েন্টে ইফেক্ট পড়তে পারে। লিগামেন্ট ছিঁড়ে যেতে পারে। এমনকি অপারেশন পর্যন্ত করতে হতে পারে।
‘তাই স্টেরয়েড নিলেও চার সপ্তাহ পর তা বন্ধ করে দিতে হবে। হরমোনাল ব্যালান্স আগের অবস্থায় ফিরে যাওয়ার জন্য ‘Post Cycle Therapy’ দিতে হয়।
অলি-গলিতে জিম, নেই প্রশিক্ষক
রাজধানী ঢাকা তো বটেই, দেশের বিভাগ, জেলা এমনকি উপজেলা সদর পর্যায়েও গড়িয়ে উঠেছে জিম। এর সঠিক পরিসংখ্যান স্বাস্থ্য খাত-সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষও জানে না।
ফিটনেস সেন্টার হিসেবে পরিচালিত এসব জিমে নেই সার্টিফিকেটধারী কোনো প্রশিক্ষক। ফলে এসব জায়গায় স্বাস্থ্য উদ্ধারের জন্য গিয়ে অনেকেই কাঙ্ক্ষিত সেবাটা পাচ্ছেন না। উপরন্তু মাত্রাজ্ঞান ছাড়া স্টেরয়েডের ব্যবহারে তারা আক্রান্ত হচ্ছেন জটিল রোগে।
ট্রেনিং-এর বিষয়ে মিস্টার বাংলাদেশ এবং ফিটনেস কোচ সাকিব নাজমুস নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি মালয়েশিয়া থেকে ছয় মাসের একটি ট্রেনিং নিয়েছি। সব জিমে ট্রেনার নেই, আবার জিম করতে করতে অভিজ্ঞতা হয়ে গেলে ট্রেনার হয়ে যায়। কিন্তু প্রাতিষ্ঠানিক কোনো শিক্ষা তাদের নেই। এর অবশ্য একটি বড় কারণ, জিমে ট্রেনিং দেয়ার মতো কোনো প্রতিষ্ঠানই দেশে নেই।’
তিনি বলেন, ‘স্টেরয়েড ব্যবহারে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া অবশ্যই থাকে। তবে সমস্যাটা হয় এটা দীর্ঘমেয়াদি ব্যবহার করলে। স্টেরয়েড ব্যবহার করতে সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য। সর্বোচ্চ ৫ মাস এর ব্যবহার করা যেতে পারে। আর মঞ্চে পারফর্ম করার মতো কোনো বিষয় যদি না থাকে তাহলে আমি সাজেস্ট করব স্টেরয়েড ব্যবহার থেকে দূরে থাকা। এর ব্যবহারকে আমি নিরুৎসাহিত করতে চাই।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি কখনোই স্টেরয়েড ব্যবহারের সাজেস্ট করি না, যদি না সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিটি প্রতিযোগিতায় যায়।
‘এটি সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য নিলে আবার রিমুভ করা যায়। এর জন্য কিছু মেডিসিন ও ইনজেকশন আছে। তবে সেটারও কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে। ওজন কমানো বা বাড়ানোর ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হলেও স্টেরয়েড আসলে কোনোভাবেই অনুমোদিত নয়।’
প্রতিরোধ
ডা. রায়হান বলেন ‘প্রতিটি জিমে সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন করা যেতে পারে। বাংলাদেশে বডি বিল্ডিংয়ের প্রচলন বেড়েছে। এ বিষয়ে স্বাস্থ্যগত সচেতনতা সৃষ্টিতে মিডিয়ারও একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকা দরকার। কারণ হুজুগে গা ভাসালে হবে না। এর নেতিবাচক প্রভাব সম্পর্কেও সবার জানা থাকা দরকার।
সবচেয়ে বড় কথা, যেহেতু স্টেরয়েডের ব্যবহার শরীরে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে, তাই জেনেশুনে কারও এটা ব্যবহার করা উচিত নয়। জিম চলবে শারীরিক সুস্থতার জন্য। মাসলম্যান বানানোটা এর উদ্দেশ্য হতে পারে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘কর্তৃপক্ষ, মিডিয়া, অভিভাবক- সবাইকে বুঝতে হবে স্টেরয়েড ব্যবহার করলেই স্বাস্থ্যবান থাকা যাবে না। বাহ্যিক দৃষ্টিতে হেলদি মনে হবে এটুকুই। তাই এটার ব্যবহার থেকে দূরে থাকাটাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ।’
যা বলছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর
দেশজুড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা জিমগুলোতে যথেচ্ছ ব্যবহার ও এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি সম্পর্কে দেশের স্বাস্থ্য খাতে সবচেয়ে বড় কর্তৃপক্ষ স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কোনো খোঁজখবর রাখে না।
নিউজবাংলার পক্ষ থেকে বিষয়টি নিয়ে অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে এমনটা জানা গেছে। একইসঙ্গে তারা বলেছেন, এখন থেকে বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হবে।
স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব আনোয়ার হোসেন হাওলাদার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘জিমে স্টেরয়েডের ব্যবহার হয় এটি আমি ভাবতেই পারি না। স্টেরয়েড সাধারণত চিকিৎসকরা বিশেষ কিছু রোগের চিকিৎসায় ব্যবহার করেন। মানুষের জীবন বাঁচানোর জন্য চিকিৎসককে যখন কোনো জটিল পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যেতে হয় তখন রোগীকে বাঁচানোর জন্য স্টেরয়েড দেয়া হয়।
বিষয়টি জানানোর জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে স্বাস্থ্য সচিব বলেন, ‘আমি জিমে খোঁজ নেব। এটি তো হতে পারে না। বডি বিল্ড ন্যাচারালি হয়। মাসল বিল্ড একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। সেটি তো হবেই, আর সেজন্য একটা নির্দিষ্ট টাইম লাগবে। তাড়াহুড়া করে বডি বিল্ড করার নামে ব্যবসা করবে, এটা তো মেনে নেয়া যাবে না। প্রপার চ্যানেলের মাধ্যমে আমি বিষয়টি দেখব।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ও এর অধিভুক্ত কলেজের ১১৪ শিক্ষার্থীকে স্থায়ী, সাময়িক ও বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কারের সুপারিশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা কমিটি। এর মধ্যে পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বন ও পরীক্ষকদের সঙ্গে অসদাচরণের দায়ে ১০৯ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাময়িক বহিষ্কারের সুপারিশ করা হয়েছে।
আর নানা কারণে আরও পাঁচজনকে বহিষ্কারের সুপারিশ করা হয়েছে। তাদের মধ্যে একজনকে স্থায়ী বহিষ্কারের সুপারিশ করা হয়। তবে এসব সুপারিশের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে সিন্ডিকেটে৷
বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা কমিটির এক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয় বলে গণমাধ্যমকে জানান প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানী।
স্থায়ীভাবে বহিষ্কারের সুপারিশ করা শিক্ষার্থীর নাম জীম নাজমুল। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টারদা সূর্যসেন হলের আবাসিক ছাত্র ছিলেন। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক নারীকে যৌন হয়রানির অভিযোগ প্রমাণ হওয়ায় তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক এই ব্যবস্থা নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা কমিটি।
বিভিন্ন মেয়াদে সাময়িক বহিষ্কার হওয়াদের বিরুদ্ধে পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বন, বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল্যবোধবিরোধী আচরণ ও অ্যালকোহল গ্রহণের অভিযোগ রয়েছে।
প্রক্টর ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা বোর্ডের সদস্যসচিব অধ্যাপক এ কে এম গোলাম রব্বানী বলেন, ‘নানা অভিযোগে ১১৪ জন শিক্ষার্থীকে বহিষ্কারের সুপারিশ করেছে শৃঙ্খলা বোর্ড৷ এর মধ্যে এক নারীকে লাঞ্ছিত করার ঘটনায় মাস্টারদা সূর্যসেন হলের ছাত্র জীম নাজমুলকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কারের সুপারিশ করা হয়েছে৷ এছাড়া দুজনকে দুই বছর ও অন্য দুজনকে এক বছরের জন্য বহিষ্কারের সুপারিশ করা হয়েছে৷’
শৃঙ্খলা কমিটির সভায় ৪৭টি এজেন্ডা ছিল জানিয়ে প্রক্টর বলেন, ‘পরীক্ষার হলে অসদুপায় অবলম্বন, কর্তব্যরত শিক্ষকদের সঙ্গে খারাপ আচরণ, জালিয়াতি, মাদক সেবন ও ইভটিজিংয়ের অভিযোগগুলোর ওপর গুরুত্ব দিয়ে সভায় সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। আরও কয়েকটি বিষয়ে অধিক তদন্ত ও প্রমাণসাপেক্ষে সামনের সভায় সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য