৫১তম বিজয় দিবস সামনে রেখে জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বের বাজারে জ্বালানি ও পণ্যমূল্য কমলে দেশেও সমন্বয়ের অঙ্গীকার করেছেন। সেই সঙ্গে এটাও জানিয়েছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যমূল্য কমে আসছে।
আগে থেকে ধারণ করা ভাষণটি বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় প্রচার হয় দেশের সব সরকারি-বেসরকারি টেলিভিশন ও রেডিও চ্যানেলে।
জনগণকে বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা জানিয়ে শুরু করা এই ভাষণে গুরুত্ব পায় ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্ব পরিস্থিতি। উঠে আসে বিশ্ববাজারে পণ্যমূল বৃদ্ধি, দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, রিজার্ভ, ব্যাংক নিয়ে প্রচারে টাকা তুলে নেয়া ইত্যাদি পরিস্থিতি।
সেই সঙ্গে তার সরকারের আমলের উন্নয়নের বর্ণনা, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আন্দোলনে সহিংসতা, সেই সরকারের আমলের পরিস্থিতিও তুলে ধরেন সরকারপ্রধান। জনগণকে প্রশ্ন রাখেন তারা উন্নত মর্যাদাশীল জীবনের ধারাবাহিকতা চায় নাকি দুর্বৃত্তায়নের দুর্বিসহ জীবনে ফিরতে চায়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বৈশ্বিক কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধি পেয়েছিল। তা এখন অনেকটা স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। মূল্যস্ফীতিও হ্রাস পাচ্ছে। আমি আপনাদের আশ্বস্ত করতে চাই, বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলসহ কোনো জিনিসের দাম কমার সঙ্গে সঙ্গে আমরা তা সমন্বয় করব।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকার জনগণের সরকার। মানুষের কল্যাণের জন্যই কাজ করাই আমাদের মূল লক্ষ্য। মানুষের ভোগান্তি হোক, কষ্ট হোক- তা আমরা কখনোই চাই না।’
কৃষি উৎপাদন বাড়ানোর তাগিদও দেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘মাটিতে বীজ ফেললেই যেখানে গাছ জন্মে, ফল হয়, সেখানে বাইরে থেকে কৃষিপণ্য আমদানি করতে হবে কেন? আমি আপনাদের অনুরোধ করছি, এক ইঞ্চি জমিও পতিত রাখবেন না।’
পণ্যমূল্য কেন বেড়েছে
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ এবং পশ্চিমাদের অর্থনৈতিক অবরোধ এবং পাল্টা অবরোধের কারণে আমাদের মতো উন্নয়নশীল ও আমদানিনির্ভর দেশগুলো সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেল, ভোজ্য তেল, গম, চিনি, ভুট্টা, ডাল, রাসায়নিক সারসহ প্রায় সকল ভোগ্যপণ্যের দাম অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে।’
বিশ্ববাজারের পরিস্থিতির পাশাপাশি পরিবহন ব্যয় বৃদ্ধিও পণ্যমূল্য বৃদ্ধির একটি কারণ বলে জানান তিনি। বলেন, ‘সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। পরিবহন খরচ বহু গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। যে জাহাজ ভাড়া ছিল ৮০০ ডলার, তার ভাড়া এখন ৩ হাজার ৮০০ ডলার; যে গম টনপ্রতি ২০০ ডলারে পাওয়া যেত, তা ৬০০ ডলারে কিনতে হচ্ছে। আবার নিজস্ব চাহিদা মেটানোর জন্য কোনো কোনো দেশ বিনা নোটিশে পণ্য রপ্তানি বন্ধ করে দিচ্ছে।’
সাধারণ মানুষের কথা চিন্তা করে পৃথিবীর যেখানেই চাহিদার পণ্য পাওয়া যাচ্ছে এবং যত দামই হোক, সেখান থেকেই সরকার তা সংগ্রহ করছে বলেও জানান শেখ হাসিনা।
পণ্যমূল বাড়ার কারণে গরিবের কষ্ট কমাতে সরকারের কী পদক্ষেপ সেটিও উঠে আসে ভাষণে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা এক কোটি পরিবারকে টিসিবির ফেয়ার প্রাইজ কার্ড দিয়েছি। এই কার্ডের মাধ্যমে পরিবারগুলো ৩০ টাকা কেজি দরে চাল ও সাশ্রয়ীমূল্যে ভোজ্য তেল, ডাল ও চিনি সংগ্রহ করতে পারছেন।
‘৫০ লাখ পরিবার ১৫ টাকা কেজি দরে মাসে ৩০ কেজি চাল কিনতে পারছে। অসহায় মানুষদের ভিজিডি ও ভিজিএফ-এর মাধ্যমে ৩০ কেজি করে চাল প্রতি মাসে বিনা মূল্যে দেওয়া হচ্ছে।’
‘রিজার্ভ প্রয়োজনের চেয়ে বেশি’
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নিয়ে অনেকেই নানা মনগড়া মন্তব্য করছেন বলেও অভিযোগ করেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘তিন মাসের আমদানি খরচ মেটানোর মতো রিজার্ভ থাকলেই চলে। বর্তমানে আমাদের পাঁচ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর মতো বৈদেশিক মুদ্রা মজুত আছে।’
রিজার্ভ কেন বেড়েছিল এবং পরে তা কমে, তারও ব্যাখ্যা দেন সরকারপ্রধান। তিনি বলেন, ‘করোনাভাইরাসের মহামারির সময় সব ধরনের ভারী যন্ত্রপাতি আমদানি, বিদেশ ভ্রমণ এবং অন্যান্য পণ্য আমদানি অনেকটা বন্ধ ছিল। সে সময় আমাদের রিজার্ভ বৃদ্ধি পেয়ে ৪৮ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়।
‘এই বিপুল পরিমাণ অর্থ অলস অবস্থায় না রেখে সেখান থেকে কিছু পরিমাণ অর্থ দিয়ে আমরা একটা বিশেষ তহবিল গঠন করেছি। সেই তহবিলের অর্থ দ্বারা কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
‘সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে এই ঋণ দেয়া হচ্ছে ২ শতাংশ হার সুদে। ঘরের টাকা সুদসহ ঘরেই ফেরত আসছে। এ অর্থ যদি বিদেশি ব্যাংক থেকে ঋণ হিসেবে নেয়া হতো তাহলে ৪/৫ শতাংশ হারে সুদসহ ফেরত দিতে হতো। আর তা পরিশোধ করতে হতো রিজার্ভ থেকেই।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ হ্রাস পাওয়ার আরেকটি কারণ হচ্ছে আন্তর্জাতিক বাজার থেকে আমরা বেশি দামে জ্বালানি তেল, ভোজ্য তেল, গম, ডাল, ভুট্টাসহ অন্যান্য পণ্য ক্রয় করে স্বল্পমূল্যে সাধারণ মানুষের কাছে বিক্রি করছি।’
‘ব্যাংকের টাকা ঘরে এনে বিপদ বাড়াবেন না’
ব্যাংকে টাকা নেই বলে গুজব ছড়িয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করা হচ্ছে বলেও মনে করেন প্রধানমন্ত্রী। অযথা গুজবে কান না দেয়ার পরামর্শও দেন তিনি। বলেন, ‘বাংকে টাকার কোনো ঘাটতি নেই। উপার্জিত টাকা ঘরে রেখে নিজের বিপদ ডেকে আনবেন না।’
দেশে বিনিয়োগ, রেমিট্যান্সপ্রবাহ এবং আমদানি-রপ্তানি পরিস্থিতি সবকিছু স্বাভাবিক রয়েছে বলেও আশ্বস্ত করেন তিনি।
করোনা মহামারির পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ সারা বিশ্বে ‘ভয়ংকর অর্থনৈতিক যুদ্ধ’ শুরু হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘অর্থনৈতিক যুদ্ধের প্রভাব কোনো একক দেশের গণ্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না, ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বব্যাপী। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ-পরবর্তী অর্থনৈতিক অবরোধ-পাল্টা অবরোধ বিশ্ব অর্থনীতিকে বিপর্যস্ত করে তুলেছে।’
সংকটে ভয় না পাওয়ার পরামর্শও দেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘জনগণের সহায়তায় আমরা করোনাভাইরাস মহামারি সফলভাবে মোকাবিলা করেছি। বর্তমান বৈশ্বিক মন্দাও আমরা মোকাবিলা করব, ইনশা আল্লাহ। এ জন্য আপনাদের সহযোগিতা চাই।’
উন্নয়নের নতুন উচ্চতায় দেশ
২০০৯ সালের শুরুতে আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর দেশ আর্থসামাজিক উন্নয়নের এক নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে বলেও মনে করে প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আজকে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের কাতারে শামিল হতে পেরেছে। দেশ আজ খাদ্যশস্য-উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ।
‘চলতি বছর ৪ কোটি ৪ লাখ মেট্রিক টন চালসহ ৪ কোটি ৭২ লাখ মেট্রিক টন দানাদার শস্য উৎপাদিত হয়েছে। মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, সবজি, ফলসহ বিভিন্ন কৃষিপণ্য উৎপাদন ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে।
‘দারিদ্র্যের হার ৪০ শতাংশ থেকে ২০ শতাংশে নেমে এসেছে। মাথাপিছু আয় ৫৪৩ ডলার থেকে ২,৮২৪ ডলারে উন্নীত হয়েছে। সাক্ষরতার হার ৪৫ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ৭৫.২ শতাংশ।
‘মাতৃমৃত্যু এবং শিশুমৃত্যুর হার হ্রাস পেয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকার ধারাবাহিকভাবে সরকার পরিচালনায় আছে বলেই এসব অর্জন সম্ভব হয়েছে।’
গত জুনে পদ্মা সেতু এবং অক্টোবরে পায়রা সেতু, নভেম্বরে ২৫টি জেলায় একই দিনে ১০০টি সেতু উদ্বোধন, অনেকগুলো মহাসড়ক চার বা তার চেয়ে বেশি লেনে উন্নীত করার কথাও উঠে আসে ভাষণে।
চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল, ঢাকায় মেট্রোরেল এবং বিমানবন্দর-কুতুবখালী এক্সপ্রেসওয়ের একাংশ শিগগির খুলে দেয়া হবে বলেও জানান তিনি।
বলেন, ‘আমরা পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করছি এবং স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১ উৎক্ষেপণ করেছি।’
২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত-স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তোলার অঙ্গীকারও করেন সরকারপ্রধান।
১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে বয়স্কসহ প্রান্তিক মানুষের জন্য বিভিন্ন ভাতা চালু, দ্বিতীয়বার এসে ভাতাভোগীর সংখ্যা এবং টাকার বাড়ানো, অন্য প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য বাসস্থান, চিকিৎসা, শিক্ষাভাতা ও অন্যান্য সহায়তা দেয়ার কথাও তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। জানান, বিভিন্ন কর্মসূচিতে উপকৃত হচ্ছেন প্রায় সাড়ে চার কোটি মানুষ।
ভাষণে বিশেষভাবে উঠে এসে ভূমিহীন দেরকে বিনা মূল্যে ঘর প্রদানের কথা। বলেন, ‘মুজিববর্ষে আমরা ঘোষণা করেছি কোনো মানুষই আশ্রয়হীন থাকবে না।’
এ পর্যন্ত ৩৫ লাখ মানুষকে বিনা মূল্যে ঘর দিয়ে পুনর্বাসন করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
২ কোটি ৫৩ লাখ ছাত্র-ছাত্রীকে বৃত্তি ও উপবৃত্তি, মাধ্যমিক পর্যন্ত প্রতিবছর বিনা মূল্যে বই দেয়া, শতভাগ বিদ্যুতায়ন, সুপেয় পানি, স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশন ব্যবস্থা নিশ্চিত করা, গ্রামে গ্রামে ইন্টারনেট সংযোগ পৌঁছে দেয়ার কথাও বলেন শেখ হাসিনা। করোনা মহামারির সময় সময়োচিত পদক্ষেপে মানুষের জীবনের সঙ্গে অর্থনীতিকেও সচল রাখার সাফল্যও দাবি করেন প্রধানমন্ত্রী। জানান, আক্রান্তদের চিকিৎসায় বিভিন্ন হাসপাতালে বাড়ানো হয় ১৫ হাজার শয্যাসহ চিকিৎসা সুবিধা।
বিনা মূল্যে প্রায় ৩৪ কোটি টিকা দেয়া, এক যুগে ২২ হাজার ডাক্তার এবং ৪০ হাজার নার্স নিয়োগ, শিল্প উৎপাদন অব্যাহত রাখতে ২৮টি প্যাকেজের আওতায় ১ লাখ ৮৭ হাজার ৬৭৯ কোটি টাকার প্রণোদনা দিয়ে শ্রমিকদের বেতনভাতা নিশ্চিত করা, ৫০ লাখ প্রান্তিক মানুষকে দুই দফায় আড়াই হাজার টাকা করে নগদ সহায়তা বিতরণ, গরিবদের ঘরে বিনা মূল্যে খাদ্য পৌঁছে দেয়ার পদক্ষেপও উঠে আসে এই ভাষণে।
‘সাধারণ জনগণ কেন তাদের ভোট দিতে যাবেন?’
প্রধানমন্ত্রীর ভাষণে রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির কথাও উঠে আসে। তিনি বলেন, ‘বিএনপির শীর্ষ নেত্রী এতিমখানার অর্থ আত্মসাৎ মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত। আরেক শীর্ষ পলাতক নেতা অর্থ পাচার, দশ-ট্রাক অস্ত্র চোরাচালান ও একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় সাজাপ্রাপ্ত। সাধারণ জনগণ কেন তাদের ভোট দিতে যাবেন?
দেশের মানুষের ওপর আস্থা হারিয়ে বিএনপি-জামায়াত এখন বিদেশিদের কাছে দেশের বদনাম করার জন্য কিছু ভাড়াটিয়া লোক নিয়োগ করেছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি। বলেন, ‘পাচারকৃত অর্থ ব্যবহার করছে আর দেশের বদনাম করে বেড়াচ্ছে।’
বিএনপি ২০০৬ সালে ১ কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোটারসহ তালিকা করে নির্বাচনের চেষ্টা করে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বিএনপির দুর্নীতি, সন্ত্রাস ও দুঃশাসনের কারণে দেশে ২০০৭ সালে জরুরি অবস্থা জারি হয় এবং নির্বাচন বাতিল হয়ে যায়।’
২০০৮ সালের নির্বাচনে তিন শ আসনের মধ্যে বিএনপির ৩০টি আসন পাওয়ার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘একইভাবে ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনেও জনগণ বিএনপি-জামায়াত জোটকে ভোট দেয়নি। জনগণের দ্বারা প্রত্যাখাত হয়ে তারা এখন অগণতান্ত্রিক পথে ক্ষমতায় যাওয়ার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত।’
বঙ্গবন্ধুর খুনিদের সপরিবার হত্যা, জিয়াউর রহমানের ক্ষমতায় এসে স্বাধীনতাবিরোধীদের রাজনীতিতে ফেরার সুযোগ দেয়ার প্রসঙ্গও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘পুনর্বাসিত হয়ে এরা আবার হত্যা ও সন্ত্রাসের রাজনীতি শুরু করে।’
বিএনপির মদতে দেশে জঙ্গি সংগঠন গড়ে উঠে অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘২০০৪ সালের ২১ আগস্ট শীর্ষ নেতৃত্বের নির্দেশে গ্রেনেড হামলা করে আমাকে এবং আমার দলের শীর্ষ নেতাদের হত্যা করতে চেয়েছিল।’
২০১৩ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত জোটের আন্দোলনের কথু তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তাদের পেট্রোল বোমা হামলায় ৫০০ জন নিরীহ মানুষ নিহত হয় এবং ৩ হাজার ১৮০ জন দগ্ধ হয়। দগ্ধ শরীরের যন্ত্রণা আজও অনেকেই বয়ে বেড়াচ্ছেন।’
‘উন্নত জীবনের ধারাবাহিকতা না দুর্বিসহ জীবন?’
জনগণকে এই দুটির মধ্যে একটি বেছে নিতে হবে বলেও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘২০০৯ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত আছে। জনগণের ভোটের অধিকার নিশ্চিত রয়েছে। সে কারণেই আজ বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় থাকলে কোনোদিনই বাংলাদেশ এত উন্নতি করতে পারত না। উন্নয়নশীল দেশ হতে পারত না।
‘এখন দেশবাসী আপনাদেরই বেছে নিতে হবে আপনারা কী চান - উন্নত মর্যাদাশীল জীবনের ধারাবাহিকতা না বিএনপি-জামায়াত জোটের দুর্বৃত্তায়নের দুর্বিসহ জীবন?’
আরও পড়ুন:টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে যমুনা নদী থেকে জেলের জালে ধরা পড়েছে ৫৫ কেজি ওজনের একটি বাগাড় মাছ। পরে স্থানীয় বাজারে মাছটি ৭৫ হাজার টাকায় বিক্রি করেন বাবলু হালদার।
শনিবার দুপুরে উপজেলার গোবিন্দাসী বাজারে বাগাড় মাছটি বিক্রির জন্য আনেন বাবলু হালদার। এদিন সকালে সিরাজগঞ্জ জেলার বেলকুচি এলাকায় যমুনা নদী থেকে এক জেলের কাছ থেকে মাছটি কেনেন তিনি।
গোবিন্দাসী মাছ বাজার সমিতির সভাপতি বাবলু হালদার পরে গোবিন্দাসী বাজারে বাগাড় মাছটি ৭৫ হাজার টাকায় বিক্রি করেন। মাছটি কিনে নেন মধুপুর উপজেলার গারোবাজারের সুজন নামে এক ব্যক্তি।
ক্রেতা সুজন জানান, বিশাল আকৃতির বাগাড় মাছটি কিনে তারা কয়েকজন মিলে ভাগ করে নিয়েছেন।
বাবলু হালদার বলেন, ‘বেলকুচির যমুনা নদীতে এক জেলের জালে ধরা পড়ে মাছটি। বিক্রির উদ্দেশ্যেই সেখান থেকে মাছটি কিনে আনি আমি। পরে মাছটি ৭৫ হাজার টাকায় বিক্রি করেছি।’
চলতি বছরের জানুয়ারিতে সড়ক, রেল ও নৌপথে ৬৫০টি দুর্ঘটনায় ৬৪২ জন প্রাণ হারিয়েছে জানিয়ে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি বলেছে, বিগত মাসে যাত্রাপথে সবচেয়ে বেশি নিহত হয়েছেন মোটরসাইকেল বা বাইক আরোহীরা।
সংবাদমাধ্যমে শনিবার পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে কাজ করা বেসরকারি সংস্থাটি।
যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, জানুয়ারিতে ৫৯৩টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৫৮৫ জন নিহত ও ৮৯৯ জন আহত হয়েছে। এ ছাড়া রেলপথে ৪৪টি দুর্ঘটনায় ৪৬ প্রাণহানি ও ৭৮ জন আহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। নৌপথে ১৩ দুর্ঘটনায় ১১ জনের মৃত্যু, একজন আহত ও ছয়জন নিখোঁজ হয়।
সংস্থাটির দুর্ঘটনা মনিটরিং সেলের পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন অনুযায়ী, জানুয়ারিতে ২১৪টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান ২০৫ জন। এসব দুর্ঘটনায় আহত জন ১১৪ বাইক আরোহী।
দেশের জাতীয়, আঞ্চলিক সংবাদপত্র ও অনলাইন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের ভিত্তিতে এ প্রতিবেদন তৈরি করা হয়।
এতে দেখা যায়, ২০২২ সালের জানুয়ারির চেয়ে ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে সড়কে দুর্ঘটনা ৫.৩ শতাংশ এবং আহত ১০.০৪ শতাংশ বেড়েছে, তবে প্রাণহানি ৪.৬ শতাংশ কমেছে।
দুর্ঘটনার ধরন বিশ্লেষণে দেখা যায়, জানুয়ারিতে সংঘটিত দুর্ঘটনার ২৯.৫১ শতাংশ জাতীয় মহাসড়কে, ৩৮.৬১ শতাংশ আঞ্চলিক মহাসড়কে ও ২৪.৪৫ শতাংশ ফিডার রোডে হয়েছে।
সারা দেশে মোট দুর্ঘটনার ৫.২২ শতাংশ ঢাকা মহানগরীতে, ১.১৮ শতাংশ চট্টগ্রাম মহানগরীতে এবং ১.০১ শতাংশ রেলক্রসিংয়ে ঘটেছে।
গত মাসে সড়ক দুর্ঘটনা সবচেয়ে বেশি হয় ১৭ জানুয়ারি। ওই দিনে ৩৫টি সড়ক দুর্ঘটনায় ২০ জন নিহত ও ৩১ জন আহত হয়।
সবচেয়ে কম সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে ২ জানুয়ারি, যেদিন ১২টি সড়ক দুর্ঘটনায় ১০ জন নিহত ও ২১ জন আহত হয়।
যাত্রী কল্যাণ সমিতির পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, সড়ক দুর্ঘটনার উল্লেখযোগ্য কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে বেপরোয়া গতি, বিপজ্জনক ওভারটেকিং, ফিটনেসবিহীন যানবাহনের অবাধ চলাচল, যাত্রী ও পথচারীদের অসতর্কতা, চালকের অদক্ষতা, চালকের বেপরোয়া মনোভাব, চলন্ত অবস্থায় মোবাইল বা হেডফোন ব্যবহার, মাদক সেবন করে যানবাহন চালানো ইত্যাদি।
আরও পড়ুন:দেশের দুই জেলার ওপর দিয়ে শুক্রবার মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে গেলেও শনিবার কোথাও এমন পরিস্থিতি দেখা যায়নি।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের শনিবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসেও শৈত্যপ্রবাহের কোনো বার্তা দেয়া হয়নি।
রাষ্ট্রীয় সংস্থাটি রাতের তাপমাত্রা বাড়ার আভাস দিয়েছে, যার অর্থ হলো দেশজুড়ে কমতে পারে শীতের অনুভূতি।
পূর্বাভাসে সিনপটিক অবস্থা নিয়ে বলা হয়, উপমহাদেশীয় উচ্চতাপ বলয়ের বর্ধিতাংশ বিহার ও সংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে।
দিনভর আবহাওয়া কেমন থাকবে, তা নিয়ে পূর্বাভাসে জানানো হয়, অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারা দেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে।
কুয়াশা নিয়ে আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, শেষ রাত থেকে সকাল পর্যন্ত দেশের নদী অববাহিকার কোথাও কোথাও মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা এবং দেশের অন্যত্র কোথাও কোথাও হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে।
তাপমাত্রার বিষয়ে পূর্বাভাসে বলা হয়, সারা দেশে রাতের তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে। দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
পরবর্তী ৭২ ঘণ্টার আবহাওয়ার অবস্থা নিয়ে বলা হয়, এ সময়ের শেষের দিকে রাতের তাপমাত্রা আরও বাড়তে পারে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, শুক্রবার দেশের সর্বোচ্চ ৩০.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা ছিল কক্সবাজারের টেকনাফে। শনিবার দেশের সর্বনিম্ন ১০.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় চুয়াডাঙ্গায়।
আরও পড়ুন:জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ আব্দুল মুহিত সর্বসম্মতিক্রমে ২০২৩ সালের জন্য জাতিসংঘ শান্তি বিনির্মাণ কমিশনের (পিবিসি) সহ-সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি এর আগে ২০২২ সালে কমিশনের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।
সভাপতি হিসেবে বাংলাদেশের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর কমিশনের সদস্যরা ২০২৩ সালের জন্য ক্রোয়েশিয়াকে সভাপতি এবং বাংলাদেশ ও জার্মানিকে সহ-সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত করেন। বৃহস্পতিবার নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে রাষ্ট্রদূত মুহিত আনুষ্ঠানিকভাবে ক্রোয়েশিয়ার কাছে কমিশনের সভাপতির দায়িত্বভার হস্তান্তর করেন।
শুক্রবার ঢাকায় প্রাপ্ত এক সরকারি তথ্য বিবরণীতে এ সংবাদ জানানো হয়। এতে বলা হয়, অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রদূত কমিশনে সভাপতির দায়িত্ব পালনের সময় বাংলাদেশের প্রতি সদস্য রাষ্ট্রগুলোর সহযোগিতার জন্য ধন্যবাদ জানান। স্বাধীনতা-পরবর্তী সময় থেকে ক্রমান্বয়ে বাংলাদেশ জাতিসংঘের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।
বিশ্বের সর্বোচ্চ শান্তিরক্ষী দেশ হিসেবে বাংলাদেশ বিশ্বশান্তি রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে। মুহিত আগামীতে কমিশনের কাজে বাংলাদেশের পূর্ণ সমর্থন অব্যাহত রাখার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন।
দেশজুড়ে জানুয়ারিতে অনেকটা কমে আসা শীতের অনুভূতি ফের তীব্র হয়েছে কয়েকটি জেলায়।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বইছে দেশের সীমান্তবর্তী দুই জেলা কুড়িগ্রাম ও মৌলভীবাজারে।
কোনো অঞ্চলের তাপমাত্রা ৮ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে সেখানে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বইছে বলে জানায় আবহাওয়া অধিদপ্তর।
রাষ্ট্রীয় সংস্থাটির শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে সিনপটিক অবস্থা নিয়ে বলা হয়, শ্রীলঙ্কা ও সংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত নিম্নচাপটি দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে অগ্রসর ও দুর্বল হয়ে প্রথমে সুস্পষ্ট লঘুচাপ এবং পরবর্তী সময়ে লঘুচাপে পরিণত হয়ে গুরুত্বহীন হয়ে পড়েছে। উপমহাদেশীয় উচ্চতাপ বলয়ের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাংশ পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে।
দিনভর আবহাওয়া কেমন থাকবে, তা নিয়ে পূর্বাভাসে জানানো হয়, অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারা দেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে।
কুয়াশা নিয়ে আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, শেষ রাত থেকে সকাল পর্যন্ত দেশের নদী অববাহিকায় মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা এবং অন্য কোথাও কোথাও হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে।
শৈত্যপ্রবাহ নিয়ে বলা হয়, কুড়িগ্রাম ও মৌলভীবাজার জেলার ওপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে।
তাপমাত্রার বিষয়ে পূর্বাভাসে বলা হয়, সারা দেশে রাতের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে। দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
পরবর্তী ৭২ ঘণ্টার আবহাওয়ার অবস্থা নিয়ে অধিদপ্তর জানায়, তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেতে পারে
রাষ্ট্রীয় সংস্থাটি আরও জানায়, বৃহস্পতিবার দেশের সর্বোচ্চ ৩১ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা ছিল রাঙ্গামাটিতে। শুক্রবার দেশের সর্বনিম্ন ৯.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে।
আরও পড়ুন:কৃচ্ছ্র সাধনে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আহ্বানে সাড়া দিয়ে বিদ্যুৎ ও আপ্যায়ন খাতে খরচ প্রায় অর্ধেকে নামিয়ে আনা হয়েছে। জ্বালানি তেলে খরচ কমানো হয়েছে প্রায় ৪ ভাগের এক ভাগ। পাশাপাশি অন্যান্য খাতেও ব্যয় কমানো হয়েছে।
ব্যয় সংকোচনে এসব পদক্ষেপের সুবাদে ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের বাজেট বরাদ্দ থেকে ২৬ কোটি ৪৩ লাখ টাকা ফেরত দিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়।
গত বছরের জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ব্যয়ের হিসাব থেকে দেখা যায়, বিদ্যুৎ বিল কমেছে ৪৬ দশমিক ৮৪ শতাংশ, অকটেন ও ডিজেলের ব্যবহার কমানো হয়েছে ২৩ দশমিক ৩৪ শতাংশ এবং আপ্যায়ন খাতের ব্যয় কমানো হয়েছে ৪৫ দশমিক ৮৬ শতাংশ।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক (প্রশাসন) মো. আহসান কিবরিয়া সিদ্দিকি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মানুষকে করোনা ভ্যাকসিন দেয়ার সময় প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছিলেন কিছু খাতে ব্যয় সংকোচন করে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের বরাদ্দের কিছু টাকা বাঁচিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে দেয়া যায় কি না। ২০২০ সাল থেকে শুরু করেছি। প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে সাড়া দিয়ে তাৎক্ষণিকভাবেই ব্যয় কমানো শুরু হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘২০২২ সালে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে অর্থনৈতিক সংকট শুরু হলো এবং ঢেউটা বাংলাদেশ পর্যন্ত আসল। তখন আমরা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ব্যয় আরও কমানোর কাজ শুরু করলাম।
‘প্রথমত আমরা বিদ্যুতে হাত দিলাম। তারপরে পেট্রল এবং লুব্রিকেন্টের খাতে খুবই বৈজ্ঞানিক উপায়ে গাড়িগুলোকে একটু রেশনিং করে আমরা সেটাও কমিয়ে এনেছি। একইভাবে আপ্যায়ন খাতেও আমরা ব্যয় কমিয়ে নিয়ে এসেছি। আমরা যে আপ্যায়নের মেন্যুটি করেছি, সেটি খুবই সাদামাটা।’
বিভিন্ন খাতে বরাদ্দ কমিয়ে ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের বাজেট বরাদ্দ থেকে ২৬ কোটি ৪৩ লাখ টাকা ফেরত দেয়ার কথা জানিয়ে আহসান কিবরিয়া বলেন, ‘আমরা ২৬ কোটি ৪৩ লাখ টাকা সংসদীয় বাজেট থেকে অর্থ বিভাগের কাছে সমর্পণ করেছি। এ টাকা সরকারের কোষাগারে জমা হয়েছে। চলতি অর্থবছরের শেষের দিকে প্রধানমন্ত্রীর অফিসের ব্যয় আরও কমে আসবে।’
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০২২ সালের জুনে বিদ্যুৎ খাতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ব্যয় ছিল ২৩ লাখ ৮ হাজার ৮৩৮ টাকা। জুন থেকে ৭ দশমিক ৩০ শতাংশ কমিয়ে জুলাইয়ে খরচ হয় ২১ লাখ ৩৮ হাজার ৬২৫ টাকা। জুন থেকে খরচ ৩১ দশমিক ৮৪ শতাংশ কমিয়ে আগস্টের ব্যয় হয় ১৫ লাখ ৭৩ হাজার ৮১৩ টাকা। জুন থেকে খরচ ৪৬ দশমিক ৮৪ শতাংশ (প্রায় অর্ধেক) কমিয়ে সেপ্টেম্বরে বিদ্যুৎ খাতের ব্যয় দাঁড়ায় ১২ লাখ ২৭ হাজার ৩৫৩ টাকা।
২০২২ সালের জুনে পরিবহনের জন্য জ্বালানি খাতে অকটেন ও ডিজেলের ব্যবহার ছিল ৪১ হাজার ৪০২ লিটার। জুন থেকে ৪ হাজার ৪০০ লিটার (১০ দশমিক ৬৩ শতাংশ) কমিয়ে জুলাইয়ে জ্বালানি তেলের ব্যবহার হয় ৩৭ হাজার ২ লিটার। জুন থেকে ১৫ দশমিক ৮৫ শতাংশ কমিয়ে আগস্টে জ্বালানি তেলের ব্যবহার হয় ৩৪ হাজার ৮৪১ লিটার। আর জুন থেকে ৯ হাজার ৬৬৬ লিটার তেল (২৩ দশমিক ৩৪ শতাংশ) কমিয়ে সেপ্টেম্বরে তেলের ব্যবহার ৩১ হাজার ৭৩৬ লিটারে নামিয়ে আনা হয়।
জুনে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আপ্যায়ন ব্যয় ছিল ৩ লাখ ২১ হাজার ৬৬৫ টাকা। ওই মাস থেকে ১৬ দশমিক ৮১ শতাংশ খরচ কমিয়ে জুলাইয়ের আপ্যায়ন ব্যয় ২ লাখ ৬৭ হাজার ৫৭০ টাকায় নামিয়ে আনা হয়।
জুন থেকে ৩২ দশমিক ১০ শতাংশ কমিয়ে আগস্টের আপ্যায়ন ব্যয় ২ লাখ ১৮ হাজার ৪১০ টাকায় নামিয়ে আনা হয়। ওই মাস থেকে ৪৫ দশমিক ৮৬ শতাংশ খরচ কমিয়ে সেপ্টেম্বর আপ্যায়ন ব্যয় হয় ১ লাখ ৭৪ হাজার ১২০ টাকা।
আরও পড়ুন:মুজিবনগর বিশ্ববিদ্যালয় পাচ্ছে মেহেরপুর জেলা। বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে এ লক্ষ্যে একটি বিল পাস হয়েছে।
অধিবেশনে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি ‘মুজিবনগর বিশ্ববিদ্যালয়, মেহেরপুর বিল-২০২৩’ উত্থাপন করলে কণ্ঠভোটে তা পাস হয়।
স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদ অধিবেশনে বিলটি পাসের আগে জনমত যাচাই ও বাছাই কমিটিতে পাঠানোর প্রস্তাব উত্থাপন করেন বিরোধী দলীয় সদস্যরা। তাদের প্রস্তাবগুলো কণ্ঠভোটে নাকচ হয়ে যায়। এরপর বিলের ওপর আনীত সংশোধনী প্রস্তাবগুলো নিষ্পত্তি করেন স্পিকার।
১০ জানুয়ারি সংসদে বিলটি উত্থাপনের পর তা অধিকতর পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য সংশ্লিষ্ট সংসদীয় কমিটিতে পাঠানো হয়। বিলে বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন আদেশ-১৯৭৩ এর বিধানাবঈ পরিপালন করতে হবে। রাষ্ট্রপতি হবেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য।
আচার্য নির্ধারিত শর্তে স্বনামধন্য একজন শিক্ষাবিদকে চার বছরের জন্য উপাচার্য পদে নিয়োগ দেবেন। কোনো ব্যক্তি একাদিক্রমে বা অন্য কোনোভাবে উপাচার্য হিসেবে দুই মেয়াদের বেশি নিয়োগ লাভের যোগ্য হবেন না। আচার্য যেকোনো সময় উপাচার্যের নিয়োগ বাতিল করতে পারবেন।
বিলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কর্মচারীদের চাকরির শর্তাবলী নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো বেতনভোগী শিক্ষক ও কর্মচারী, সংসদ সদস্য বা স্থানীয় সরকারের কোনো পদে নির্বাচিত হতে প্রার্থী হতে চাইলে ওই নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিলের আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরি থেকে ইস্তফা দেবেন।
বিলে বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রয়োজনে আচার্যের অনুমোদন নিয়ে ‘বিজনেস ইনকিউবেটর’ প্রতিষ্ঠা করতে পারবে। বিজনেস ইনকিউবেটর হলো বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক স্থাপিত বা পরিচালিত কোনো বিজনেস ইনকিউবেটর, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে প্রাথমিক পর্যায়ে সব সহযোগিতা দেয়া এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক বা শিক্ষার্থী কর্তৃক কোনো উদ্ভাবন, মেধাস্বত্ব, আবিষ্কার বা প্রক্রিয়া, বাজারজাত এবং বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহারের জন্য সহযোগিতা প্রদান।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য