ফারদিন নূর পরশ আত্মহত্যা করেছেন বলে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) দাবির বিষয়ে পরিষ্কার হতে পারেননি বুয়েট শিক্ষার্থীরা।
বুয়েট শিক্ষার্থীদের একটি প্রতিনিধিদল বৃহস্পতিবার মিন্টো রোডে ডিবি কার্যালয়ে গিয়ে তথ্যপ্রমাণ ও সিসিটিভি ফুটেজ দেখার পর সাংবাদিকদের এ কথা জানান। ডিবিপ্রধান হারুন অর রশীদের উপস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিদলকে তথ্যপ্রমাণ দেখান গোয়েন্দা কর্মকর্তারা।
পরে শিক্ষার্থীরা সাংবাদিকদের বলেন, ডিবি যেসব আলামত উপস্থাপন করেছে সেগুলো আত্মহত্যা প্রমাণে যথেষ্ট নয়। তবে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশপ্রধানের দাবি, তথ্যপ্রমাণ দেখার পর তদন্ত নিয়ে সন্তোষ জানিয়েছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা।
ডিবি কার্যালয় থেকে বের হওয়ার পর এক শিক্ষার্থী সাংবাদিকদের বলেন, ‘ফারদিন মৃত্যুর ঘটনায় ডিবি আমাদের কিছু আলামত দেখিয়েছে। আমাদের সেগুলো প্রাসঙ্গিক মনে হয়েছে। তবে কিছু কিছু জায়গায় কিছু গ্যাপ রয়েছে। ডিবির পক্ষ থেকে আমাদের আশ্বস্ত করা হয়েছে এই গ্যাপগুলো নিয়ে তারা আরও কাজ করবেন।
‘তারা বলেছেন এ ঘটনায় শতভাগ তথ্যপ্রমাণ সরবারহ করা সম্ভব নয়, তবে সামনে আরও কাজ করবেন।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই শিক্ষার্থী বলেন, ‘একটা অন্যতম গ্যাপ হলো সুলতানা কামাল ব্রিজ পার হয়ে ফারদিন লেগুনা থেকে নেমেছিল, সে সময়ের কোনো ফুটেজ তারা (ডিবি) দেখাতে পারেনি। সে সময় ফারদিন একা ছিল নাকি সঙ্গে কেউ ছিল তা আমাদের দেখানো হয়নি।
‘একইভাবে ফারদিন যে হেঁটে ব্রিজে এসেছে সেটাও দেখা যায়নি। লেগুনা চালক ডিবির কাছে বলেছে ফারদিনের সঙ্গে আরও একজন লেগুনা থেকে নেমেছিল, আমরা ওই ব্যক্তির বিষয়ে কোনো তথ্য পাইনি।’
শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিদল জানায়, ডিবির পক্ষ থেকে যেসব আলামত দেখানো হয়েছে সেগুলো প্রাসঙ্গিক এবং তাদের তদন্তের ধরন ও আন্তরিকতায় তারা সন্তুষ্ট।
এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘ডিবি কিছু সম্পূরক তথ্যপ্রমাণ দেখিয়েছে যাতে ফারদিনের মৃত্যু আত্মহত্যা মনে হতে পারে, কিন্তু এসব তথ্যপ্রমাণে মোটিভ পরিষ্কার হয় না যে ফারদিন আত্মহত্যাই করেছে। মোটিভ পরিষ্কার না হওয়া পর্যন্ত আমরা নিশ্চিতভাবে আত্মহত্যা বলতে পারব না।’
সহপাঠীদের সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলেও জানায় শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিদল।
বুয়েট শিক্ষার্থীরা ‘সন্তুষ্ট’
বুয়েট শিক্ষার্থীরা ফারদিনের আত্মহত্যার বিষয়ে পরিষ্কার না হওয়ার কথা জানালেও ডিবি প্রধান মো. হারুন অর রশিদ পরে সাংবাদিকদের জানান শিক্ষার্থীরা সব দেখে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা সব তদন্ত শেষে একটা কথা বলি যে পরবর্তীতে মামলা সংশ্লিষ্ট কোনো আলামত পাওয়া গেলে তা পুনরুজ্জীবিত করা হবে, তদন্ত করা হবে। আমরা সেটাই বলেছি, এর বেশি কিছু নয়। ওনারা (শিক্ষার্থীরা) আমাদের গ্যাপ দেখাবেন কেন, আমরা তাদের সব বুঝিয়ে বলেছি।
‘কেউ যদি দরজা বন্ধ করে আত্মহত্যা করে সেটা তো আর কেউ দেখে না। তারা গ্যাপ বলতে জানতে চেয়েছেন, ফারদিন যে ব্রিজ থেকে লাফ দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন বা তাকে কেউ ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিল কিনা এটা কেউ দেখেছে কিনা। এখন ফারদিন যেহেতু সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে আত্মহত্যা করবেন তখন তো তিনি চাইবেন এটা যেন কেউ না দেখে। আমরা শুধু এটাই বলেছি পরবর্তীতে নতুন কিছু সামনে এলে খতিয়ে দেখা হবে।’
ফারদিনের আত্মহত্যার মোটিভ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘ফারদিনের মানসিক অবস্থার কথা আমরা আপনাদের বলেছি। এমনকি বুশরাকে নামিয়ে দিয়ে তিনি একা একা বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেরিয়েছেন, কোনো জায়গায় তার সঙ্গে কেউ ছিলেন না।
‘তিনি এটেম্পট নিয়েছিল বাবুবাজার ব্রিজের ওখানে, কিন্তু সেখানে অনেক লোক থাকায় ঝাঁপ দেননি। সেখান থেকে গেলেন জনসন রোড, সেখান থেকে গুলিস্তান, এরপর গেলেন যাত্রাবাড়ী, যাত্রাবাড়ী থেকে লেগুনায় করে সুলতানা কামাল ব্রিজের ওখানে গেছেন।’
হারুন অর রশিদ বলেন, ‘৩৮ দিন তদন্তের পর আমরা বলেছি এটা একটা সুইসাইডাল ঘটনা, কেউ তাকে মারেনি। আজকে বুয়েটের শিক্ষার্থীদের আমরা তিন ঘণ্টা ধরে সব তথ্যপ্রমাণ দেখিয়েছি। আমরা সব যুক্তি পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে উপস্থাপন করেছি। তাদের বুঝিয়েছি যে, এই এই কারণে ফারদিন আত্মহত্যা করেছেন।
‘গত দুই বছরে ফারদিনের মুঠোফোনের লোকেশন বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে তিনি আগে কখনও বাবুবাজার ব্রিজ বা সুলতানা কামাল ব্রিজে যাননি। দুই বছরে ৫২২টি নম্বরে ফারদিন কথা বলেছেন, তাদের সঙ্গেও আমরা কথা বলেছি।
‘এছাড়া ফারদিন মানুষের ৩০ বছরের বেশি বাঁচা উচিত নয় এমন মতাদর্শের দুই দার্শনিকের বই পড়তেন এবং তাদের মতাদর্শকে ধারণ করতেন। এসব বিষয় নিয়ে তিনি বন্ধুদের সঙ্গে নানান সময়ে আলোচনা করেছেন। তাছাড়া ফারদিন তার কয়েকজন বন্ধুকে বলেছিলেন যে কোনো এক শুক্রবারে কারও আত্মহত্যার খবর পওয়া যাবে। ফারদিন নিজেও শুক্রবারেই আত্মহত্যা করেছেন। এটাতে আমরা আরও নিশ্চিত হয়েছি।’
ডিবিপ্রধান বলেন, ‘সুরতহাল প্রতিবেদনে কোনো আঘাতের চিহ্ন না পাওয়া, ধস্তাধস্তির কোনো আলামত না পাওয়া, তার গায়ের জামার কোনো বোতাম পর্যন্ত ছেঁড়েনি, আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তিনি যে ব্রিজ থেকে লাফিয়ে পড়েছেন সেটাও ফুটেজে দেখা গেছে। তাছাড়া তার মোবাইল, টাকা, ঘড়ি সবই তার সঙ্গে ছিল।
‘এর বাইরে ফারদিন ছিলেন ইন্ট্রোভার্ট। তার রেজাল্ট ক্রমান্বয়ে খারাপ হচ্ছিল। এসব কিছু ফারদিন তার পরিবারে জানাননি। তার পরিবার তাকে বাসায় থাকতে বলতেন, কিন্তু তিনি বাসায় থাকতে চাইতেন না। সব কিছু মিলিয়ে আমরা বলেছি এটা আত্মহত্যার ঘটনা। এসব জানার পর বুয়েটের শিক্ষার্থীরাও আমাদের সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন যে এটা আত্মহত্যা।’
তিনি বলেন “ঘটনার রাতে (৪ নভেম্বর) বুশরাকে নামিয়ে দেয়ার পর ফারদিনের সঙ্গে বুশরার একবারই ম্যাসেজের মাধ্যমে কথা হয়েছিল। বুশরা জানতে চেয়েছিলেন, ফারদিন বাসায় পৌঁছেছেন কিনা। এর উত্তরে ফারদিন শুধু উত্তর দিয়েছিলেন ‘ইয়েস’।
“এ ঘটনায় বুশরার কোনো সম্পৃক্ততা আমরা পাইনি, এটা অভিযোগপত্রে উল্লেখ করব। এরপর বুশরাকে ছাড়া হবে কিনা সেটা আদালত সিদ্ধান্ত জানাবেন।”
এর আগের দিন বুয়েট শিক্ষার্থী ফারদিন নূর পরশ আত্মহত্যা করেছেন বলে সাংবাদিকদের জানান ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশপ্রধান হারুন অর রশীদ।
মিন্টো রোডে নিজ কার্যালয়ে তিনি বলেন, ‘সবকিছু জিজ্ঞাসাবাদ, ডাক্তার সাহেব যে কথাটা বলেছেন, ভিকটিমের কাপড়ে কোথাও ছেঁড়ার কোনো লক্ষণ আমরা পাইনি। তাকে যে মারপিট করা হয়েছে এমন কোনো চিহ্ন ছিল না। ধস্তাধস্তি বা আঘাতের চিহ্নও নেই।’
ঢাকার ডেমরার সুলতানা কামাল সেতু থেকে শীতলক্ষ্যা নদীতে ফারদিন লাফ দিয়ে আত্মহত্যা করেন বলেও জানান হারুন অর রশীদ।
একই দিন র্যাবের পক্ষ থেকেও জানানো হয়, সেতু থেকে লাফ দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন বুয়েট ছাত্র ফারদিন নূর পরশ।
ফারদিন ৪ নভেম্বর নিখোঁজ হওয়ার তিন দিন পর ৭ নভেম্বর সন্ধ্যায় নারায়ণগঞ্জে শীতলক্ষ্যা নদী থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে নৌ পুলিশ। বর্তমানে হত্যা মামলাটির তদন্ত করছে ডিবি। পাশাপাশি র্যাবসহ আরও কয়েকটি সংস্থা ছায়াতদন্ত করছে।
পুলিশি তদন্তে জানা যায়, নিখোঁজ হওয়ার দিন বিকেল থেকে রাত ১০টা নাগাদ বুশরাকে নিয়ে রাজধানীর কয়েকটি জায়গায় ঘোরাঘুরি করেন ফারদিন। এরপর রামপুরায় বুশরা যে মেসে থাকেন তার কাছাকাছি তাকে পৌঁছে দেন। এরপর আর ফারদিন বুয়েট ক্যাম্পাস বা নিজের বাসায় ফেরেননি।
ফারদিনের মরদেহ উদ্ধারের তিন দিনের মাথায় ১০ নভেম্বর আমাতুল্লাহ বুশরার নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যা ও পরিকল্পিতভাবে লাশ গোপন করার অভিযোগ এনে রামপুরা থানায় মামলা করেন তার বাবা কাজী নুরউদ্দিন রানা।
ওই দিনই বুশরাকে গ্রেপ্তার করে রামপুরা থানার পুলিশ। তাকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। বুশরা এখন কারাগারে আছেন।
আরও পড়ুন:দেশের অর্থনৈতিক বাস্তবতা ও বিচার ব্যবস্থার চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে একটি পৃথক বাণিজ্যিক আদালত ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব করেছেন প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ।
গতকাল রোববার সিলেটের দ্য গ্র্যান্ড সিলেট হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টে বাণিজ্যিক আদালত শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ প্রস্তাব দেন।
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট ও ইউএনডিপির যৌথ উদ্যোগে এ সেমিনারের আয়োজন করা হয়।
প্রধান বিচারপতি বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশে বাণিজ্যিক বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য কোনো পৃথক বিচারিক ফোরাম নেই। এখন কোটি কোটি টাকার বাণিজ্যিক বিরোধগুলো ছোটখাটো দেওয়ানি মামলার সঙ্গে একই সারিতে নিষ্পত্তি করতে হওয়ায় দ্রুত, কার্যকর বিচার প্রক্রিয়া ব্যাহত হচ্ছে। এটি আমাদের বিচারকদের প্রতি কোনো সমালোচনা নয়। তাদের নিষ্ঠা প্রশ্নাতীত। বরং এটি একটি কাঠামোগত অসংগতি। ফলে মামলার জট যেমন বাড়ছে, তেমনি ব্যবসায়িক সম্পর্ক ও বিনিয়োগ পরিবেশও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তিনি একটি পরিসংখ্যান তুলে ধরে বলেন, ২০২৫ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত শুধু অর্থঋণ আদালতে প্রায় ২৫ হাজারের বেশি মামলা অমীমাংসিত রয়ে গেছে।
পৃথক বাণিজ্যিক আদালত প্রতিষ্ঠা সংক্রান্ত সংস্কারের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটি কারও একক কোনো দাবি নয় বরং বাণিজ্যিক মামলাগুলো বিশেষায়িত আদালতে নির্দিষ্ট সময়সীমা ও কার্যকর রায়ের মাধ্যমে নিষ্পত্তি হওয়ার জন্য বৃহৎ বিনিয়োগকারী থেকে শুরু করে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা, দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারী সবাই দীর্ঘদিন যাবত বিভিন্ন সভা-সেমিনারে এই দাবি জানিয়ে আসছে।
প্রধান বিচারপতি বৈশ্বিক উদাহরণ তুলে ধরে বলেন, রুয়ান্ডা, ভারত ও পাকিস্তানের মতো দেশগুলো বাণিজ্যিক আদালত গড়ে তুলে একটি দক্ষ, স্বচ্ছ ও বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরি করেছে। তিনি বলেন, এসব দেশের অভিজ্ঞতাগুলো বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা বহন করে।
প্রধান বিচারপতি প্রস্তাবিত বাণিজ্যিক আদালত ব্যবস্থার সাতটি মূল স্তম্ভের কথা উল্লেখ করেন। সেগুলো হলো- স্পষ্ট ও একীভূত এখতিয়ার নির্ধারণ, আর্থিক সীমারেখা ও স্তরভিত্তিক কাঠামো, বাধ্যতামূলক কেস ম্যানেজমেন্ট ও কঠোর সময়সীমা, সমন্বিত মধ্যস্থতা ব্যবস্থা, প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার (যেমন, ই-ফাইলিং, ডিজিটাল ট্র্যাকিং, হাইব্রিড শুনানি), সবার জন্য ন্যায়সংগত প্রবেশাধিকার এবং জবাবদিহি ও কর্মক্ষমতা পর্যবেক্ষণ। তিনি জোর দিয়ে বলেন, বাণিজ্যিক আদালতের কার্যক্রম হবে পূর্ণাঙ্গভাবে কার্যকর, জবাবদিহিমূলক এবং বাণিজ্যের পরিবর্তনশীল চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
সেমিনারে সূচনা বক্তব্য দেন সিলেটের সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ শেখ আশফাকুর রহমান। হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি জাফর আহমেদের সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার, ইউএনডিপির আবাসিক প্রতিনিধি স্টিফান লিলার।
বহুল আলোচিত সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল আবার পেছানো হয়েছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মিনহাজুর রহমানের আদালত গতকাল সোমবার আগামী ১৪ সেপ্টেম্বর নতুন দিন ধার্য করেন।
এ পর্যন্ত এই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের সময়সীমা মোট ১২০ বার পিছিয়ে এসেছে।
২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি ঢাকার পশ্চিম রাজাবাজারের ভাড়া বাসায় সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি নির্মমভাবে খুন হন। ঘটনার সময় বাসায় তাদের সাড়ে চার বছরের ছেলে মাহির সরওয়ার মেঘ উপস্থিত ছিলেন। সাগর বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল মাছরাঙা এবং রুনি এটিএন বাংলায় কর্মরত ছিলেন।
এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় রুনির ভাই নওশের আলম শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা করেন। মামলার প্রধান আসামিরা হলেন — রফিকুল ইসলাম, বকুল মিয়া, মাসুম মিন্টু, কামরুল ইসলাম ওরফে অরুন, আবু সাঈদ, সাগর-রুনির বাড়ির দুই নিরাপত্তা রক্ষী পলাশ রুদ্র পাল ও এনায়েত আহমেদ এবং তাদের ‘বন্ধু’ তানভীর রহমান খান।
এদের মধ্যে তানভীর ও পলাশ জামিনে রয়েছেন, বাকিরা বর্তমানে কারাগারে আটক রয়েছেন।
তদন্ত প্রতিবেদন বারবার পিছিয়ে আসায় এ মামলার দ্রুত বিচার ও ন্যায়বিচার প্রত্যাশায় সংশ্লিষ্ট পক্ষের মাঝে উদ্বেগ বিরাজ করছে।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের প্রথম শহীদ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ হত্যা মামলায় পুলিশের সদস্যসহ ৩০ আসামির বিরুদ্ধে চার্জ গঠনের শুনানি আজ।
সোমবার (২৮ জুলাই) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২-এ এই শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে। ট্রাইব্যুনাল-২-এর চেয়ারম্যান বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বেঞ্চ আজ এই মামলার আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের বিষয়ে শুনানি করবেন বলে জানানো হয়েছে।
এর আগে, শুক্রবার (২৫ জুলাই) কড়া নিরাপত্তার মধ্যে ছয় আসামিকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।
এই ছয় আসামি হলেন— সাবেক সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) আমির হোসেন, সাবেক কনস্টেবল সুজন চন্দ্র রায়, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রক্টর শরীফুল ইসলাম, রাফিউল, আনোয়ার পারভেজ এবং নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের নেতা ইমরান চৌধুরী আশেক।
গত ১০ জুলাই পলাতক ২৬ আসামিকে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়ে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন আদালত।
এর আগে, ৩০ জুন আবু সাঈদ হত্যায় পুলিশের সদস্যসহ মোট ৩০ জনের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পান আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা।
আবু সাঈদ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন। বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী আন্দোলনের সময় ১৬ জুলাই বিকালে পুলিশের গুলিতে তিনি নিহত হন। আবু সাঈদ ছিলেন জুলাই আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত প্রথম শিক্ষার্থী।
সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ধানমণ্ডির বাসা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
ডিবির যুগ্ম কমিশনার (উত্তর) মোহাম্মদ রবিউল হোসেন ভূঁইয়া তার গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তবে কোন মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, সে বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য দিতে পারেননি এই পুলিশ কর্মকর্তা।
তিনি জানান, তথ্য এলে পরে বিস্তারিত জানানো হবে।
দেশের ১৯তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে ২০১০ সালে খায়রুল হক শপথ নেন। পরের বছর ৬৭ বছর পূর্ণ হওয়ায় তিনি অবসর গ্রহণ করেন।
২০১৩ সালে তাকে তিন বছরের জন্য আইন কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। এই মেয়াদ শেষে কয়েক দফা একই পদে পুনর্নিয়োগ দেওয়া হয় সাবেক এই বিচারপতিকে।
গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটলে ১৩ আগস্ট তিনি আইন কমিশন থেকে পদত্যাগ করেন। এরপর তাকে আর প্রকাশ্যে দেখা যাচ্ছিল না।
রাজধানীর উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে কোমলমতি ছাত্রছাত্রীসহ বহু হতাহতের ঘটনায় আজ বিচারিক কার্যক্রম শুরুর আগে এক মিনিট নীরবতা পালন করেছে দেশের সকল আদালত।
আজ সকালে প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন ৭ বিচারপতি আপিল বিভাগ তাদের বিচারিক কার্যক্রম শুরুর আগে দাঁড়িয়ে ১ মিনিট নীরবতা পালন করেন। এদিকে আজ হাইকোর্ট বিভাগের বিচারিক কার্যক্রম শুরুর আগেও এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
অন্যদিকে, প্রধান বিচারপতির আদেশক্রমে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল ড. আজিজ আহমদ ভূঞা স্বাক্ষরিত অধস্তন আদালতে নীরবতা সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে যে হৃদয়বিদারক এই দুর্ঘটনার প্রেক্ষিতে সরকার ২২ জুলাই সারা দেশে শোক দিবস ঘোষণা করেছে। দুর্ঘটনায় নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে দেশের সর্বস্তরের মানুষ শোক প্রকাশ করছেন। বিচার বিভাগীয় পর্যায়েও বিষয়টি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করা আবশ্যক। এমতাবস্থায়, এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় নিহতদের স্মরণে ও তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ২২ জুলাই দেশের সকল অধস্তন আদালত ও ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হবে। সেই সাথে দেশের সকল অধস্তন আদালত ও ট্রাইব্যুনালে বিচারিক কার্যক্রম শুরু হওয়ার আগে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হবে। এছাড়া ২২ জুলাই হতে ২৪ জুলাই পর্যন্ত সকল জেলা জজশীপ ও ম্যাজিস্ট্রেসিতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান স্থগিত রাখার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।
সারাদেশে মুজিব শতবর্ষ পালন ও শেখ মুজিবুর রহমানের ১০ হাজারের বেশি ম্যুরাল নির্মাণের আর্থিক হিসাব চেয়ে ৬৪ জেলায় চিঠি দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। অভিযোগ অনুসন্ধানে উপপরিচালকের নেতৃত্বে সাত সদস্যের একটি টিম অনুসন্ধানের দায়িত্ব পালন করছে।
গতকাল সোমবার রাজধানীর সেগুন বাগিচায় দুদকের উপপরিজালক আকতারুল ইসলাম ব্রিফিংয়ে চিঠির বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
দুদক জানায়, ৬৪ জেলা পরিষদ বরাবর পাঠানো চিঠিতে মুজিবর্ষ পালনে কত টাকা ব্যয় হয়েছে, ব্যয় করা মন্ত্রণালয়ের নাম, ব্যয়িত অর্থের পরিমাণ, ব্যয়ের সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তার নাম পরিচয় জানতে চাওয়া হয়েছে। এছাড়া, জেলায় কতগুলো এবং কোথায় ম্যুরাল তৈরি হয়েছে, ম্যুরাল নির্মাণে কত টাকা খরচ হয়েছে, ব্যয়ের সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তার পরিচয় জানতে চাওয়া হয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানাসহ অন্যদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করে শেখ মুজিবের জন্মশতবার্ষিকী ‘মুজিববর্ষ’ পালন ও শেখ মুজিবের ১০ হাজারেরও বেশি ম্যুরাল ও ভাস্কর্য নির্মাণ করে ওই অর্থ অপচয় ও ক্ষতিসাধন করার অভিযোগ রয়েছে। এসব অভিযোগের সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে রেকর্ডপত্র পর্যালোচনা করা একান্ত প্রয়োজন। তাই রেকর্ডপত্র দ্রুত দেয়ার জন্য অনুরোধ করা হলো।
বিভিন্ন দপ্তর থেকে পাওয়া তথ্যনুযায়ী, জুলাই অভ্যুত্থানে ক্ষমতা হারানোর আগে দেশে শেখ মুজিবুর রহমানের ১০ হাজারের বেশি ম্যুরাল, ভাস্কর্য ও প্রতিকৃতি স্থাপন করে আওয়ামী লীগ সরকার। টানা ১৫ বছর ধরেই ভাস্কর্য, ম্যুরাল ও প্রতিকৃতি তৈরির মহোৎসবে মেতে উঠেছিল দলটি। অভিযোগ রয়েছে, অপ্রয়োজনীয় ম্যুরাল ও ভাস্কর্য তৈরিতে ৪ হাজার কোটি টাকা পর্যন্ত ব্যয় হয়ে থাকতে পারে। শুধু তাই নয়, পুরো প্রকল্পই ছিল প্রশ্নবিদ্ধ।
সূত্র জানায়, জেলা পরিষদে পাঠানোর আগে একই চিঠি বাংলাদেশ বেতার, কৃষি গবেষণা কাউন্সিলেও পাঠানো হয়েছে।
গত বছরের আগস্টে ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর মুজিববর্ষ পালনে অর্থ অপচয় ও এ বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করা হবে বলে জানিয়েছিল দুদক।
র্যাবের মহাপরিচালক (ডিজি), অতিরিক্ত আইজিপি এ কে এম শহিদুর রহমান বলেছেন, মব ভায়োলেন্স বা মব সন্ত্রাস করে এ দেশের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত করা যাবে না। অপরাধী যেই হোক বা যে দলেরই হোক, আমরা তাদের আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করব।
শনিবার (১২ জুলাই) রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ (মিটফোর্ড) হাসপাতালের সামনে ঘটে যাওয়া ব্যবসায়ী হত্যাকাণ্ডে ব্যবস্থা গ্রহণের অগ্রগতিসহ আরও কয়েকটি ঘটনায় অপরাধীদের গ্রেপ্তার প্রসঙ্গে প্রেস ব্রিফিং করেন র্যাবের ডিজি। ব্রিফিংকালে তিনি এসব কথা বলেন।
এ কে এম শহিদুর রহমান বলেন, ‘র্যাব এবং দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যেকোনো ধরনের অপরাধ সংঘটনের সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তারের বিষয়ে তৎপর রয়েছে। দেশে বিগত কয়েক মাসে ঘটে যাওয়া অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের র্যাব গ্রেপ্তার করেছে। তাদের যেন শাস্তির ব্যবস্থা করা হয়, সে ব্যাপারে আমরা দ্রুত পদক্ষেপ নিচ্ছি। মব ভায়োলেন্স সৃষ্টির অপরাধে এ পর্যন্ত প্রায় ২০ জন অপরাধীকে র্যাব আইনের আওতায় নিয়ে এসেছে।’
‘গত ২ জুলাই লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম থানায় সন্ত্রাসী কর্তৃক মব সৃষ্টির মাধ্যমে পুলিশ সদস্যদের আহত করে আসামিদের ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে আমরা ৩ জন আসামিকে গ্রেপ্তার করেছি। এ ছাড়াও গত ৩ জুলাই কুমিল্লার মুরাদনগরে ট্রিপল মার্ডারের ঘটনায় একই পরিবারের মা ও দুই সন্তানের ওপর মব ভায়োলেন্সের অযাচিত ঘটনায় ৬ জন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’
সলিমুল্লাহ মেডিকেলের সামনে হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্ঘাটন ও জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে র্যাব কার্যক্রম শুরু করে। পরবর্তীতে ঘটনার সঙ্গে জড়িত এজাহারনামীয় ৪ নম্বর আসামি আলমগীর (২৮) এবং ৫ নম্বর আসামি মনির ওরফে লম্বা মনিরকে (৩২) আমরা গতকাল (শুক্রবার) রাজধানীর কেরানীগঞ্জ এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছি।’
‘এ ঘটনায় আমরা ছায়া তদন্ত করছি, আর পুরো বিষয়টি দেখছে ডিএমপির তদন্ত বিভাগ।’
র্যাবের এই অভিযান অব্যাহত থাকবে এবং অপরাধীদের গ্রেপ্তার করে শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে বলে জানান তিনি।
মন্তব্য