কেউ ধান শুকাচ্ছেন, কোথাও গরু-ছাগল চড়ে বেড়াচ্ছে। কোথাও জায়গাটা পরিত্যক্ত মনে করে সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত মাদকসেবীরা আসর বসায়। কুমিল্লায় বেশ কয়েকটি বধ্যভূমির চিত্র এটি।
মুক্তিযুদ্ধকালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর অত্যাচার ও হত্যাযজ্ঞের জ্বলন্ত সাক্ষী হয়ে আছে কুমিল্লার প্রায় অর্ধশত বধ্যভূমি। এর ৩৫টিই সংরক্ষণের কোনো উদ্যোগ নেই।
কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলার রসুলপুর বধ্যভূমি। এমন ডিসেম্বর মাসেই পাঁচ শতাধিক মুক্তিকামী মানুষকে ধরে এনে ব্রাশফায়ার করে হত্যা করে পাকিস্তানিরা। এই গণকবর থেকে বেঁচে ফেরা মুক্তিযোদ্ধা আবদুস সামাদ বলেন, ‘গণকবরের এই দশা দেখলে আমার কষ্ট হয়। আমরা কয়েক বন্ধু মিলে অ্যামবুশ করে বেশ কয়েকজন পাকিস্তানি সেনাকে গুলি করে হত্যা করি। অস্ত্র কম থাকায় সেদিন পুরেপুরি মিশন শেষ করতে পারি নাই। তবে আমরা দূর থেকে দেখেছি, লাইনে নর-নারীদের দাঁড় করিয়ে রেখে গুলি করে কীভাবে হত্যা করেছিল পাকিস্তানি হানাদারেরা। তারপর সেই লাশগুলো আধা কবর দেয়া হয়। রাতের বেলায় শিয়াল-কুকুরের খাবারে পরিণত হয়েছিল দেশের জন্য জীবন দেয়া মানুষগুলো।
‘আজ স্বাধীনতার অর্ধশত বছর পর কেউ তাদের মনে রাখে নাই। বছরে এক দুই দিন সবাই এসে ফুল দেয়। এগুলো দেখলে কষ্ট হয়। ইতিহাস বিকৃত হয়ে যাচ্ছে। এগুলো সংরক্ষণ না হলে আগামী প্রজন্ম কীভাবে জানবে এই দেশকে স্বাধীন করতে কত তাজা প্রাণ বিসর্জন দিতে হয়েছে?’
মুক্তিযুদ্ধের সময় কুমিল্লার প্রশাসনের কর্মকর্তা, পুলিশসহ নানা পেশার হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করে গণকবর দেয় পাক বাহিনী। ৫২ বছর পরেও এসব গণকবর ও বধ্যভূমির অধিকাংশ শনাক্ত কিংবা সংরক্ষণ করা হয়নি। অবহেলা-অনাদরে অধিকাংশ বধ্যভূমির স্থান ঝোপ-জঙ্গলে পরিণত হয়েছে। অনেকগুলোর চিহ্নও নেই, জানা নেই শহীদদের সংখ্যাও।
এমন আরেকটি গণকবর দেখা যায় কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলার ধনঞ্জয় গ্রামে। একই বাড়ির অন্তত ৩৫ জনকে ব্রাশফায়ার করে গণকবর দেয়া হয় এখানে। সেখানে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করে দায় সারা হয়েছে। বছরে একবার ফুলও জোটে না, স্মরণ করা হয় না সেসব মুক্তিকামী মানুষকে।
কুমিল্লা জেলা মুক্তিযোদ্ধা অফিস বলছে, ৩২টি বধ্যভূমি চিহ্নিত করে সেখানে ফলক উন্মোচন করা হয়েছে। বাকিগুলো সরকারি সহযোগিতা পেলে চিহ্নিত করা হবে। সংরক্ষণ ও সঠিক ইতিহাস তুলে না ধরার কারণে জেলাজুড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা এসব বধ্যভূমির ইতিহাস ও স্মৃতির কথা অজানা রয়ে গেছে নতুন প্রজন্মের বেশির ভাগ তরুণ-তরুণীর কাছে।
এ জেলার গণকবর ও বধ্যভূমিগুলোর অন্যতম সদর উপজেলার রসুলপুর বধ্যভূমি, রামমালা বধ্যভূমি, সদর দক্ষিণের জগতপুর গণকবর, চৌদ্দগ্রামে বেতিয়ারা গণকবর, নাঙ্গলকোট বধ্যভূমি, দেবিদ্বার বধ্যভূমি, লাকসামের বেলতলী বধ্যভূমি ও কৃষ্ণপুর ধনঞ্জয় বধ্যভূমি।
রসুলপুরে গিয়ে দেখা যায়, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ে বদ্ধভূমির ওপর উপড়ে পড়া একটি গাছ কেউ সরিয়ে নেয়নি। স্থানীয়রা বধ্যভূমির চত্বরে ধান শুকাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। স্থানীয়রা নাম না প্রকাশ করার শর্তে বলেন, ‘এখানে মাদকের আসর বসে প্রতিদিন। ডিসেম্বর মাস এলে দুই-একজন লোক শহর থেকে আসে। সারা বছর তো কারও কোনো খবর দেখি না।’
অযত্নে পড়ে আছে আরও বেশ কিছু গণকবর। তার মধ্যে আছে ময়নামতি, লাকসাম, মুদাফফরগঞ্জ, হারং, বেতিয়ারা কোটেশ্বরসহ অন্যান্য গণকবর।
ময়নামতি ক্যান্টনমেন্ট বধ্যভূমিতে বাঙালি অফিসার, সৈনিক, ছাত্র, শিক্ষক, কৃষক-শ্রমিক, সরকারি কর্মচারী, স্কুল-কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী, গৃহবধূ এবং মসজিদের ইমামকেও কবর দেয়া হয়েছিল। ভাষাসৈনিক ধীরেন্দ্রনাথ দত্তকে অমানুষিক নির্যাতনের পর এই ময়নামতি ক্যান্টনমেন্টেই হত্যা করে হানাদার বাহিনী। এ বধ্যভূমিতে মোট ১২টি গণসমাধি খনন করে ৭ হাজার নরকঙ্কাল পাওয়া যায়।
কুমিল্লার লাকসাম রেলওয়ে জংশনের দক্ষিণে কেবিন বরাবর পূর্ব দিকে একটি বধ্যভূমি আছে। কুমিল্লা জেলার দক্ষিণাংশ, বৃহত্তর নোয়াখালী এবং চাঁদপুরের বাঙালি যুবক-যুবতী, বৃদ্ধা, শিশুদের এখানে এনে হত্যা করে মাটিচাপা দেওয়া হতো। হাত-পা বেঁধে গুলি করা হতো। এরপর লাথি দিয়ে ফেলা হতো গর্তে। গুলি খাওয়ার পরেও যারা জীবিত থাকতেন, তাদেরকেও মৃত ব্যক্তিদের সঙ্গে মাটিচাপা দেওয়া হতো। এখানে বিভিন্ন জেলা থেকে ১০ হাজার বাঙালিকে হত্যার পর লাশ মাটিচাপা দেয় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী।
কুমিল্লার মুদাফফরগঞ্জে একদল রাজাকার ও পাকিস্তানি সেনা ৩৭ জন লোককে হত্যা করে। তারা একটি বাড়ি থেকে চার বালিকাকে ধরে এনে গণধর্ষণ করে। তিন-চার দিন পর তাদের মৃতদেহ পাশের একটি খালে ভাসতে দেখা যায়।কুমিল্লার চান্দিনার হাড়ং গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মান্নান ভূঁইয়ার বাড়ির পাশে তার এক খণ্ড জমি পাকিস্তানি সেনা ও তাদের দোসররা গণকবর হিসেবে ব্যবহার করত। হত্যার পর এখানে মাটিচাপা দিত লোকজনকে। আবদুল মান্নান ভূঁইয়ার মাকেও এখানে হত্যার পর এখানে মাটিচাপা দেয়া হয়। ১৮ জন মুক্তিযোদ্ধাকে এখানে গণকবর দেওয়া হয়েছে।
কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে বেতিয়ারা গণকবর। ১৯৭১ সালে ন্যাপ-কমিউনিস্ট পার্টি ও ছাত্র ইউনিয়নের যৌথ গেরিলা বাহিনীর ৯ জন বীর যোদ্ধা পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে সম্মুখযুদ্ধে শহীদ হন। এখানে ৯ জন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে কবর দেওয়া হয়। বেতিয়ারার শহীদদের সমাধিস্তম্ভ এখন আগের জায়গায় নেই। মহাসড়কের চার লেনের কাজ হওয়ায় সেটি মহাসড়ক থেকে একটু পাশে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
কুমিল্লা নগরীর রামমালা এলাকায় অবস্থিত সার্ভে ইনস্টিটিউটের ভিতরে পুকুরপাড়ে রয়েছে একটি বধ্যভূমি। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ ভোর ৬টার দিকে প্রথমে পাক হানাদার বাহিনী যখন রামমালা এলাকায় আক্রমণ চালায়, তখন ওই এলাকার অনেক মানুষ সার্ভে ইনস্টিটিউটের ভেতরে আশ্রয় নেয়। তখন পাকিস্তানি সেনারা ব্রাশফায়ার করে গণহারে সাধারণ মানুষ ও আনসারদের হত্যা করে। পরে গর্ত করে মরদেহগুলো গণকবর দেয় হানাদার বাহিনী। স্থানীয় সূত্র মতে, এই বধ্যভূমিতে রয়েছে কমপক্ষে ৫০০ লোকের সমাধি।
এসব গণকবরে বছরে একদিন বা দুদিন জেলা প্রশাসন উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে পুষ্পস্তবক অর্পণ কিংবা সভা সেমিনার হয়।এই আয়োজন করতে গিয়ে আগের দিন গণকবরে একটু ঝাড়ু দেয়া হয়। সারা বছর সেগুলো পড়ে থাকে অবহেলায়।
কেন গণকবরগুলোর এই অবস্থা– জানতে চাইলে কুমিল্লা মুক্তিযোদ্ধা জেলা কমান্ডার সফিউল আহমেদ বাবুল বলেন, ‘আমরা মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় বধ্যভূমিগুলো চিহ্নিত করার কাজ শুরু করেছি। সর্বশেষ শহরের রামমালা বধ্যভূমির সংরক্ষণের কাজ চলমান রয়েছে। সরকারি সহযোগিতা পেলে চিহ্নিত করা বধ্যভূমিগুলো সংরক্ষণ ও সীমানা প্রাচীর দেওয়া হবে।’
কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শামীম আলম বলেন, ‘আমি কুমিল্লায় সদ্য দায়িত্ব গ্রহণ করেছি। গণকবর সম্পর্কে নোট নিয়েছি। গণকবর নিয়ে যা কাজ করার দরকার সবই করব।’
আরও পড়ুন:প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘২০ ঘণ্টা বিমান ভ্রমণ করে আমেরিকা না গেলে কিচ্ছু আসে যায় না। পৃথিবীতে আরও অনেক মহাসাগর আছে, মহাদেশ আছে। সেসব জায়গায় যাবো, তাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করবো।
শনিবার ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের নবনির্মিত কার্যালয় উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
দেশে উৎপাদন বাড়ানোর ওপর আবারও জোর দিয়ে সরকার প্রধান বলেন, ‘আমরা নিজের পায়ে চলব। নিজের দেশকে গড়ে তুলব। কারও মুখাপেক্ষি হয়ে থাকব না। কে স্যাংশন দিল, কে ভিসা দিল না, তা নিয়ে মাথাব্যথা করে লাভ নেই।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘যারা ভোট চুরি করে, ভোট নিয়ে খেলে, জনগণের ভাগ্য নিয়ে খেলছে, তাদের দিকে, ওই সন্ত্রাসী দলের দিকে নজর দিন। কানাডার আদালত বিএনপিকে সন্ত্রাসী দল হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে। আর দুর্নীতির দায়ে আমেরিকাই তারেক জিয়াকে ভিসা দেয়নি। যদিও তারাই (বিএনপি) এখন আমেরিকার কাছে ধর্না দেয়।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের উৎপাদন বাড়াতে হবে। এক ইঞ্চি মাটিও যেন অনাবাদি না থাকে। শুধু ফসল নয়; মাছ চাষ, ডেইরি ফার্ম, হাঁস-মুরগি পালন, যার যে সুযোগ আছে তিনি তা-ই করবেন। বৃক্ষরোপণ করতে হবে।
‘মোদ্দা কথা, উৎপাদন বাড়াতে হবে। বিশ্বব্যাপী যে খাদ্য মন্দা চলছে, তা যেন আমাদের স্পর্শ করতে না পারে। তার জন্য আমাদের উর্বর মাটি ব্যবহার করতে হবে।’
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘দেশের জনগণ জানে নৌকায় ভোট দিলে ভাগ্যের উন্নয়ন হয়। দেশের স্কুল-কলেজ, মসজিদ-মাদ্রাসার উন্নয়ন হয়। নৌকায় ভোট দিয়ে তারা স্বাধীনতা পেয়েছে, উন্নত জীবন পেয়েছে, ডিজিটাল দেশ পেয়েছে।
‘জনগণের প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস আছে, তারা নৌকায় ভোট দেবে। কারণ আওয়ামী লীগ থাকলে সবার জন্য কাজ করে, সবার সেবা করে।
‘জনগণের জন্য কাজ করলে তারা এর মর্যাদা দেয়। সেভাবে জনগণের কাছে যেতে হবে।’
নেতাকর্মীদের জনগণের জন্য ত্যাগ স্বীকার করার আহ্বান জানান বঙ্গবন্ধু-কন্যা। তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ত্যাগ করতে এসেছে- এটা মাথায় রেখে কাজ করে যাচ্ছি। কোনো অশুভ শক্তি যাতে দেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে না পারে সেভাবে দেশের মানুষকে রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের ওপর বার বার আঘাত, হামলা হয়েছে। আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করার চেষ্টা হয়েছে। ইয়াহিয়া খান চেষ্টা করেছে, জিয়াউর রহমান চেষ্টা করেছে, এরশাদ-খালেদা জিয়াও চেষ্টা করেছে- আওয়ামী লীগকে কীভাবে ধ্বংস করা যায়।
‘আওয়ামী লীগ এদেশের মানুষের সংগঠন হিসেবে গড়ে উঠেছে। তাই এই সংগঠনকে কেউ ধ্বংস করতে পারেনি, পারবেও না। আওয়ামী লীগ শুধু একটি দল নয়, আওয়ামী লীগ ইনস্টিটিউটের মতো। আওয়ামী লীগ এদেশের মানুষের জন্য আন্দোলন-সংগ্রামে সবসময় ভূমিকা পালন করেছে।’
সরকারপ্রধান বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে মানুষের কল্যাণে কাজ করে সেটা আমরা প্রমাণ করেছি। আমরা যেসব কাজ করি, আওয়ামী লীগ যেসব পরিকল্পনা নেয়, প্রকল্প নেয়, তা সুপরিকল্পিতভাবেই করা হয়।
‘আমাদের মাটি, মানুষ, পরিবেশ, ভৌগোলিক অবস্থান, প্রাকৃতিক অবস্থা- সবকিছু বিবেচনা করেই আমরা প্রকল্প গ্রহণ করি। তার ফলে আমাদের প্রতিটি প্রকল্পই সাফল্য অর্জন করে। মানুষ তার সুফল পায়।’
তিনি বলেন, ‘২০০৮-এর বাংলাদেশ কী ছিল, এখন বাংলাদেশ কী অবস্থায় আছে- কেউ তুলনাটা বিবেচনা করলেই পরিবর্তনটা দেখতে পারবেন। একই দিনে ১০০ সড়ক উদ্বোধন করা- এটা কি কোনো সরকার আগে করেছে? পারেনি। কে পেরেছে? আওয়ামী লীগ।
‘আজকে আমরা বাংলাদেশে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছি, এখন আমাদের বেকারত্ব মাত্র ৩ শতাংশ। সেটাও থাকবে না। যদি কেউ উদ্যোগ নেয় সেও কাজ করতে পারবে। আমরা সেই ব্যবস্থাটাও করে দিয়েছি। আমাদের গ্রামের অর্থনীতি অনেক মজবুত। গ্রামের দারিদ্র্যের হার হ্রাস পেয়েছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘কৃষকদের আমরা সব ধরনের প্রণোদনা দিচ্ছি। দুই কোটি ১০ লাখ কৃষককে কার্ড দিয়েছি। ভর্তুকির টাকাটা তার ব্যাংকে চলে যায়। ১০ টাকা দিয়ে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলার সুযোগ আমরা করে দিয়েছি। এক কোটি ২ লাখ ৭০ হাজার ১৪৩ জন কৃষক পুরো বাংলাদেশে অ্যাকাউন্ট খুলেছে। এখন তারা সেখানে বসে টাকা পেয়ে যায়।
‘ধান কাটার মৌসুমে মানুষ পাওয়া যায় না, মজুরের দাম বেড়ে গেছে। আমি আহ্বান করেছি আমার ছাত্রলীগ, যুবলীগ, কৃষক লীগ, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মাঠে চলে গেছে। তারা কৃষকের ধান কেটে ঘরে পৌঁছে দিয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা বিদ্যুৎ শতভাগ দিতে পেরেছি। এখন তেলের দাম বেড়ে গেছে, গ্যাসের দাম বেড়ে গেছে, কয়লার দাম বেড়ে গেছে, কয়লাও পাওয়া যাচ্ছে না। আগে এক সময় যারা কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিরুদ্ধে প্রপাগান্ডা করেছিল, তারাই এখন কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র করছে। তার কারণে কয়লা কিনে আনতে সমস্যা হচ্ছে।
‘আমি জানি মানুষের অনেক কষ্ট হচ্ছে। আমরা লোডশেডিং একেবারে দূর করে দিয়েছিলাম। ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ যদি না হতো আর করোনা ভাইরাস যদি না দেখা দিতো, আজকে যদি বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা না দেখা দিতো, মুদ্রাস্ফীতি না দেখা দিতো, তাহলে মানুষের কষ্ট হতো না। আজকে আমরা ভেতরে যতই চেষ্টা করি, যে জিনিসটা বাইরে থেকে আনতে হচ্ছে। সেটা কষ্ট করে আমাদেরকে জোগাড় করতে হচ্ছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘কাতার ও ওমানের সঙ্গে আমাদের চুক্তি হয়ে গেছে। আরও কয়েকটি দেশের সঙ্গে করছি, যাতে গ্যাস কিনতে পারি। এই কষ্ট দূর করতে পারি।
‘একবার অভ্যাস হয়ে গেলে মানুষের কষ্ট বাড়ে। বিএনপি-জামায়াতের আমলে তো বিদ্যুৎ ছিলই না। তখন মানুষ হাহাকার করত। বিদ্যুৎ চাওয়ার কারণে কানসাটে খালেদা জিয়া গুলি করে মানুষ হত্যা করেছিলেন। সারের দাবি করেছিল বলে ১৮ জন কৃষককে হত্যা করছিলেন। শ্রমের মজুরি দাবি করেছিল বলে ২৭ জন শ্রমিককে রোজার সময় হত্যা করা হয়েছিল।’
ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বেনজীর আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ নেতারা বক্তব্য দেন।
আরও পড়ুন:শিশুদের জন্য নির্মাণ করা হবে ‘চিলড্রেন পার্ক’, যেখানে হাতে-কলমে শেখানো হবে সড়কে চলাচলের নিয়ম। রাজধানী ঢাকায় সড়ক দুর্ঘটনা রোধে এমন বেশ কিছু পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা)।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সঙ্গে যৌথভাবে এ প্রকল্পের কাজ শুরু করেছে জাইকা। ইতোমধ্যে স্কুল শিক্ষার্থীদের ট্রাফিক আইন শেখানোর কাজ শুরু করেছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।
তিন বছর মেয়াদী এ প্রকল্পের নাম দেয়া হয়েছে ‘ঢাকা রোড ট্রাফিক সেইফটি প্রজেক্ট (ডিআরএসপি)’।
শনিবার ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে প্রকল্পটির উদ্দেশ্য ও বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে জানান সংশ্লিষ্টরা।
ডিআরএসপির ম্যানেজার (কমিউনিকেশন অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস) সামনুন সুলতানা বলেন, ‘শুধু ঢাকা সিটি নয়, বাংলাদেশের কোথাও এমন চিলড্রেন পার্ক নেই। আমরা একটা চিলড্রেন পার্ক করতে চাচ্ছি যেখানে বাচ্চারা যাবে, ট্রাফিকের রুলস-রেগুলেশন সম্পর্কে জানবে।
‘আমরা ছোট পরিসরে শুরু করব, একটা শুরু করলে আরও অনেক করা যাবে। ট্রাফিক সিগন্যাল, জেব্রা ক্রসিং নিয়েও আমরা কাজ করব।’
সবার সহযোগিতা পেলে এটি নিয়ে আরও বড় পরিসরে যাওয়া সম্ভব বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
শিশু শিক্ষার্থীদের ট্রাফিক আইন শেখানোর ওপর জোর দিয়ে সামনুন বলেন, ‘আমাদের দেশের মানুষের মনোভাব পরিবর্তন করা দরকার। রাস্তা খালি আছে, আমরা সিগন্যাল না মেনে পার হয়ে যাই। এটার শুরু করতে হবে বাসা থেকে, স্কুল থেকে। শিক্ষার্থীরা ছোট, ওদের যেভাবে বুঝানো হবে, শেখানো হবে ধীরে ধীরে তারা তাতেই অভ্যস্ত হয়ে যাবে। এর ফলাফল আমরা হয়ত সঙ্গে সঙ্গে পাব না।
‘আমরা শিশুদের শেখাচ্ছি। ৫-১০ বছর পর সেটার ফলাফল পাব। তারা যখন নিজে ড্রাইভ করবে বা রোড ক্রস করবে, তখন যেন তারা শিক্ষাটা প্রয়োগ করতে পারে।’
এসময় জাপানের ট্রাফিক আইন শিক্ষার উদাহরণ টানেন এ কর্মকর্তা। তিনি বলেন, ‘ঠিক এভাবেই শুরু করেছিল জাপান। আজ থেকে ৩৭ বছর আগে জাপানে কিন্তু এত ভালো ট্রাফিক আইন বা রাস্তা ছিল না। অথচ, ট্রাফিক আইন মানায় এখন বিশ্বের অন্যতম দেশ তারা। ওরাও ওদের কার্যক্রম স্কুলপর্যায় থেকে শুরু করেছিল।’
ডিআরএসপি প্রকল্পের এক্সপার্ট টিমের ট্রান্সপোর্ট প্ল্যানার তেতসুশি ইরি (Tetsushi IRIE) বলেন, ‘ডিআরএসপি প্রজেক্টটি একত্রে বাস্তবায়ন করছে ডিএমপি ও জাইকা। এর অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে ঢাকা মহানগরীতে বসবাসকারী সাধারণ মানুষ ও যানবাহনের চালক-যাত্রীদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করা।’
এর আগেও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে বিভিন্ন ধরনের সচেতনতামূলক প্রোগাম করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন, ‘যানজট নিরসন ও দুর্ঘটনা প্রতিরোধে বিভিন্ন স্কুল এবং কলেজের শিক্ষার্থী ও জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করা হচ্ছে। জাইকা রোড সেফটি প্রজেক্ট বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কাজ করছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানুষকে সচেতনতামূলক কর্মকাণ্ডে তারা কীভাবে সস্পৃক্ত করছে ও সে দেশের মানুষের মনোভাব কীভাবে পরিবর্তন করছে, সেগুলো নিয়ে আরও ২ বছর কাজ করা হবে।
‘তিন বছর মেয়াদী এ প্রকল্পের মূল লক্ষ্য হচ্ছে ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় সর্বাত্মক সড়ক নিরাপত্তা ব্যবস্থা বাস্তবায়নে ডিএমপি’র সক্ষমতা বৃদ্ধিকরণ।’
২০২২ সালের মার্চ থেকে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা)-এর সহযোগিতায় ঢাকা মহানগর এলাকায় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মাধ্যমে ‘ঢাকা রোড ট্রাফিক সেফটি প্রজেক্ট (ডিআরএসপি)’ শীর্ষক কারিগরি সহায়তা প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হয়ে আসছে।
আরও পড়ুন:ভারতের ওড়িশার বালেশ্বরের বাহানাগা স্টেশনের কাছে ট্রেন দুর্ঘটনায় ক্রমশ বাড়ছে আহত ও নিহতের সংখ্যা। শুক্রবার সন্ধ্যায় সেখানে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে চেন্নাইগামী করমণ্ডল এক্সপ্রেস। একই সঙ্গে দুর্ঘটনা ঘটে হাওড়াগামী ব্যাঙ্গালুরু-হাওড়া যশবন্তপুর সুপার ফাস্ট এক্সপ্রেসও। দুর্ঘটনাগ্রস্ত ওই ট্রেনে ছিলেন বাংলাদেশের কয়েকজন যাত্রীও। দুর্ঘটনার পর থেকে এখন পর্যন্ত তাদের ব্যাপারে কোনো খোঁজ না পাওয়ায় বাড়ছে উদ্বেগ।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এই সময়ের খবরে বলা হয়, দুর্ঘটনায় মৃতের সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। নিহতদের মধ্যে অধিকাংশই পশ্চিমবঙ্গের অধিবাসী। তবে দুর্ঘটনায় এখনও পর্যন্ত বাংলাদেশের কারো নিহতের খবর পাওয়া যায়নি।
ভয়াবহ ওই ট্রেন দুর্ঘটনায় কয়েকজন বাংলাদেশি আহত হয়েছেন বলে বাংলাদেশ হাইকমিশন সূত্র জানিয়েছে। তবে দুর্ঘটনা কবলিত ট্রেনগুলোতে ঠিক কয়জন বাংলাদেশি যাত্রী ছিলেন ও তাদের মধ্যে কয়জন আহত হয়েছেন তা এখনও জানা যায়নি।
কলকাতায় বাংলাদেশের উপ-হাইকমিশনের বরাতে সংবাদমাধ্যমটি জানায়, স্থানীয় সাংবাদিকরা হাইকমিশনকে জানিয়েছে যে দুয়েকজন বাংলাদেশি সামান্য আহত হয়েছেন। তারা ওড়িশার সরো সরকারি হাসপাতাল ও বালেশ্বর জেলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তবে দুর্ঘটনার পর থেকে কয়েকজন নিখোঁজ রয়েছেন।
এর মধ্যে কলকাতার বাংলাদেশ উপ-হাইকমিশনের পক্ষ থেকে তিন জনের একটি দল দুর্ঘটনাস্থলে গিয়েছেন। দলটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন প্রথম সচিব (রাজনৈতিক) মারেফত তারিকুল ইসলাম।
কলকাতাস্থ উপ-হাইকমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আহতদের একাংশ কলকাতায় ফিরতে শুরু করেছেন।
দুর্ঘটনায় আহতদের মধ্যে রাজশাহীর বাসিন্দা ২৭ বছর বয়সী মো. রাসেলুজ্জামানকে সরো হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে তাকে বালেশ্বর জেলা হাসপাতালে নিয়ে স্থানান্তর করা হয়।
এ ছাড়াও গোপালগঞ্জের বাসিন্দা সাজ্জাদ আলীও আহত হয়েছেন বলে জানা গিয়েছে।
সে সঙ্গে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না একাধিক বাংলাদেশিকে। নিখোঁজদের মধ্যে পাবনার বাসিন্দা আসলাম শেখ, খুলনার বাসিন্দা রুপা বেগম খান এবং ঢাকার বাসিন্দা খালেদ বিন আওকাত ও ৩৫ বছর বয়সী মোক্তার হোসেন রয়েছেন।
দুর্ঘটনার পর একটি হটলাইন নম্বর (৯১৯০৩৮৩৫৩৫৩৩) চালু করে কলকাতাস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশন। দেশ থেকে অনেকেই ওই নম্বরে ফোন করে তাদের আত্মীয়-স্বজনদের খোঁজ নিচ্ছেন।
উপ-হাইকমিশন তাদের তালিকা তৈরি করছে। হাইকমিশনের দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে তালিকা ধরে তাদের খোঁজ নেবে।
আরও পড়ুন:ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের সহায়তার জন্য ৫০ হাজার মার্কিন ডলার অনুদানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বাংলাদেশ।
জাতিসংঘ সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিত এক সম্মেলনে ২০২৩ সালের জন্য ‘ইউনাইটেড নেশনস রিলিফ অ্যান্ড ওয়ার্কস এজেন্সি ফর প্যালেস্টাইন রিফিউজিস ইন দ্য নিয়ার ইস্ট (ইউএনআরডব্লিউএ)’-তে বাংলাদেশ ৫০ হাজার মার্কিন ডলার আর্থিক অনুদানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বলে শনিবার ঢাকায় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। খবর বাসসের
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ফিলিস্তিনি জনগণের ন্যায়সঙ্গত সংগ্রামের প্রতি বাংলাদেশের সরকার ও জনগণের দৃঢ় অঙ্গীকারের প্রতিফলনস্বরূপ ২০১৮ সাল থেকে ইউএনআরডব্লিউএ-তে অনুদান প্রদান করে আসছে বাংলাদেশ।
সম্মেলনটি আহ্বান করেন জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সভাপতি সাবা কোরেশী। এতে সদস্য দেশগুলোকে ফিলিস্তিনি শরণার্থী এবং তাদের জন্য নিবেদিত সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএর কার্যাবলীর বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে ব্রিফ করেন ইউএনআরডব্লিউএর কমিশনার জেনারেল।
জাতিসংঘে বাংলাদেশের উপ-স্থায়ী প্রতিনিধি ড. মো. মনোয়ার হোসেন বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে উপরোল্লিখিত আর্থিক সহযোগিতা প্রদানের ঘোষণা করেন। তার বক্তব্যে ইউএনআরডব্লিউএর চলমান তহবিল ঘাটতির বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি ‘টেকসই, অনুমানযোগ্য এবং পর্যাপ্ত’ তহবিল সুরক্ষার উপর গুরুত্বারোপ করেন।
তিনি বলেন, ‘ফিলিস্তিনিদের সমর্থনের জন্য অস্থায়ী ভিত্তিতে ইউএনআরডব্লিউএ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তবে শুধু আর্থিক সমর্থন প্রদান করা সমাধান নয়। এই সংকটের একমাত্র সমাধান হল ১৯৬৭-এর পূর্ববর্তী সীমানা অনুযায়ী দ্বি-রাষ্ট্র ভিত্তিক সমাধান অর্জনের মাধ্যমে ইসরাইলি অবৈধ দখল দারিত্বের অবসান ঘটানো।’
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের রেজুলেশনের মাধ্যমে ১৯৪৯ সালে ফিলিস্তিনি উদ্বাস্তুদের দুর্দশার ন্যায্য এবং স্থায়ী সমাধানের জন্য সহায়তা এবং সুরক্ষা প্রদানের জন্য একটি মানবিক এবং উন্নয়ন সংস্থা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ইউএনআরডব্লিউএ । বর্তমানে এই সংস্থায় শরণার্থী হিসাবে ৫৯ লক্ষ ফিলিস্তিনি নিবন্ধিত রয়েছে।
আরও পড়ুন:জ্বালানি সংকটে ৫ জুনের পর পটুয়াখালীর পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।
তিনি জানিয়েছেন, কয়লা আমদানি করতে আরও অন্তত ২০ থেকে ২৫ দিন সময় লাগবে।
সাভারের খাগান এলাকায় শনিবার দুপুরে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে নবায়নযোগ্য শক্তি গবেষণা ল্যাবরেটরি ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দিতে এসে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী এসব কথা জানান।
মন্ত্রী বলেন, ‘পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের একটি হাফ বন্ধ আছে এবং আমাদের সেকেন্ড হাফও আগামী ৫ জুনের পর বন্ধ হয়ে যাবে। কারণ এখানে কয়লার অভাব দেখা গেছে এবং এটা আসতে ২০-২৫ দিন লেগে যাবে আমাদের। এটা একটা বড় বিষয় কয়লার কারণের জন্য। আমাদের এখানে এলসি খুলতে দেরি হয়েছে। পাশাপাশি অন্যান্য বিষয়গুলোও ছিলো।
‘এখানে একটা বড় বিদ্যুৎ আমরা পাচ্ছি না সিস্টেমে। এ কারণে আমি মনে করি যে, কিছুটা জনদুর্ভোগ হচ্ছে। লোডশেডিং বেড়ে গেছে কয়েকটা বিদ্যুৎ কেন্দ্র কাজ না করাতে। তেলের ব্যাপারে আমরা আনার জন্য রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছি। এখন বেশির ভাগ গ্যাস আমরা ইন্ডাস্ট্রিতে ডাইভার্ট করছি।’
বিদ্যুৎ সরবরাহে বিঘ্ন ঘটায় দুঃখ প্রকাশ করে জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আবার আবহাওয়া অনেক গরম। ৩৮ ডিগ্রির ওপরে চলে গেছে। কোনো কোনো জায়গাতে ৪০-৪১ ডিগ্রি হয়ে গেছে। এই কারণে আমরা খুবই দুঃখিত এই বিষয়ে।
‘আমাদের এই মুহূর্তে কিছুটা লোডশেডিং চলছে এবং এটা কিছুদিন যাবে। জাতীয় গ্রিডে প্রায় দেড় হাজারের ওপরে ১৭০০ মেগাওয়াট লোডশেডিং চলছে।’
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ক্লাইমেট পার্লামেন্ট বাংলাদেশের আহ্বায়ক ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য নাহিম রাজ্জাক।
ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম লুৎফর রাহানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান ড. সবুর খান ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল অনুষদের ডিন ড. এম সামসুল আলম।
আরও পড়ুন:ভারতের ওড়িশার বালেশ্বরে শুক্রবার সন্ধ্যায় ট্রেন দুর্ঘটনায় ২৬১ জন নিহতের ঘটনায় গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শনিবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের প্রেস উইং থেকে পাঠানো এক বার্তায় এ শোক জানানো হয়।
বার্তা সংস্থা এশিয়ান নিউজ ইন্টারন্যাশনাল (এএনআই) জানায়, শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ট্রেন দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা ২৬১। আহত যাত্রীদের গোপালপুর, খান্তাপাড়া, বালেশ্বর, ভাদরাক ও সোরো এলাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এর আগে ওড়িশার মুখ্যসচিব প্রদীপ জেনার বরাত দিয়ে এনডিটিভি জানায়, দুই ট্রেনের পাশাপাশি দুর্ঘটনার শিকার হয় মালবাহী একটি ট্রেনও।
ভারতের সাম্প্রতিক ইতিহাসের অন্যতম প্রাণঘাতী এ দুর্ঘটনায় পড়ে বেঙ্গালুরু-হাওড়া সুপারফাস্ট এক্সপ্রেস, শালিমার-চেন্নাই সেন্ট্রাল করমন্ডল এক্সপ্রেস ও মালবাহী একটি ট্রেন।
ওড়িশার মুখ্যসচিব জানান, কলকাতা থেকে ২৫০ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং ওড়িশার রাজধানী ভুবনেশ্বর থেকে ১৭০ কিলোমিটার উত্তরে শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী নবিন পট্টনায়েক রাজ্যে এক দিনের শোক ঘোষণা করেছেন।
ভারতের রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব এক টুইটে বলেছেন, দুর্ঘটনায় প্রাণ হারানো প্রত্যেকের পরিবার পাবে ১০ লাখ রুপি। মারাত্মক আহত ব্যক্তিদের ২ লাখ রুপি এবং সামান্য আহত যাত্রীদের ৫০ হাজার রুপি করে দেয়া হবে।
দুর্ঘটনায় শোক প্রকাশ করে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি জানিয়েছেন, রেল মন্ত্রণালয় প্রদেয় অর্থের বাইরে প্রধানমন্ত্রীর জাতীয় ত্রাণ তহবিল (পিএমএনআরএফ) থেকে নিহত প্রত্যেকের পরিবারকে ২ লাখ রুপি করে এবং আহত ব্যক্তিদের ৫০ হাজার রুপি করে দেয়া হবে।
আরও পড়ুন:ঘূর্ণিঝড় মোখায় মিয়ানমারের ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য খাদ্য ও চিকিৎসাসহায়তা নিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর জাহাজ ‘সমুদ্র জয়’।
আন্তবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় মোখার আঘাতে মিয়ানমারে সরকারিভাবে ১৪৫ জন মারা যান। এর মধ্যে ১১৭ জনই মুসলিম রোহিঙ্গা গোষ্ঠীর সদস্য।
মোখায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় রাখাইন রাজ্য।
দুর্বল হওয়ার আগে মোখা প্রতি ঘণ্টায় ২০৯ কিলোমিটার (১৩০ মাইল) বেগে রাখাইন রাজ্যের সিটওয়ে শহরের কাছের স্থলভাগে আঘাত হানে।
এই ঘূর্ণিঝড়টি অন্তত এক দশকের মধ্যে দেশটির সবচেয়ে ধ্বংসাত্মক দুর্যোগ। এর ফলে আকস্মিক প্রবল বন্যা, বিদ্যুৎ বিভ্রাট, প্রবল বাতাসে ভবনের ছাদ ভেড়ে পড়া এবং সেলফোন টাওয়ারগুলো ভেঙে পড়ার মতো ঘটনা ঘটেছে।
ঝড়ের কবলে পড়া রোহিঙ্গারা বেশিরভাগই জনাকীর্ণ বাস্তুচ্যুত শিবিরে বসবাস করতেন। মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর নেতৃত্বে ২০১৭ সালের একটি নৃশংস ‘বিদ্রোহী বিরোধী অভিযানে’ তাদের বাড়িঘর হারানোর পরে তারা ওই স্থানে স্থানান্তরিত হয়েছিল।
মোখা আঘাত হানার পর ভারত, জাপান, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রসহ বেশ কয়েকটি দেশ আর্থিক বা বস্তুগত সহায়তা ঘোষণা করে।
ওই সময় ভারতীয় নৌবাহিনীর জাহাজ ত্রাণসামগ্রী নিয়ে মিয়ানমারে যায়। জাহাজগুলোতে জরুরি খাদ্যসামগ্রী, তাঁবু, প্রয়োজনীয় ওষুধ, পানির পাম্প, বহনযোগ্য জেনারেটর, জামাকাপড়, স্যানিটারি ও স্বাস্থ্যবিধি সামগ্রী ছিল।
ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তায় বাংলাদেশও নৌবাহিনীর জাহাজে ত্রাণসামগ্রী পৌঁছে দিচ্ছে।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য