রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ বলেছেন, বিএনপির ঘোষিত ১০ দফা একাত্তরের পরাজিত শক্তি আর আগুন সন্ত্রাসের সঙ্গে জড়িতদেরকে রক্ষার দশ দফা।
মঙ্গলবার বিকেলে রাজশাহী নগরীর জয় বাংলা চত্বর (বাটার মোড়) এলাকায় বিজয় মিছিলের আগে এক পথ সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা রাজনৈতিক বক্তৃতার জবাব দেব বক্তৃতায়। আর আপনারা যদি লাঠি দিয়ে আঘাত দেন, আপনাদের সেই লাঠির জবাব আমরা লাঠিতে দেব।’
মহান বিজয়ের মাস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ নেতা আসাদুজ্জামান আসাদ বিজয় মিছিলের আহ্বান করেছিলেন। মিছিলে যোগ দিতে মঙ্গলবার বিকেলে রাজশাহী নগরীর বাটারমোড় এলাকায় জড়ো হতে থাকেন আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা। বিভিন্ন এলাকা থেকে খন্ড খন্ড মিছিল নিয়ে উপস্থিত হন তারা। শ্লোগানে মুখরিত হয় পুরো এলাকা।
বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে জয় বাংলা চত্বরে ট্রাকে ওঠে জনতার উদ্দেশে বক্তব্য দেন আসাদুজ্জামান আসাদ।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে বিএনপির কিছু কিছু নেতা ঘোষণা দিয়েছিলেন ১০ তারিখ নাকি সারা বাংলাদেশ দখলে নেবে। আমরা অপেক্ষায় ছিলাম। আমরা বলেছিলাম, বাংলার মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে শেখ হাসিনা যে কাজ করছে বাংলার মানুষ তার পক্ষেই থাকবে। ওরা বলেছিলো ওরা পল্টনেই সমাবেশ করবে। আমরা বলেছিলাম রাস্তা বন্ধ করে সমাবেশ করতে দেব না। ওরা চ্যালেঞ্জ করেছিল। আমরা সেই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেছিলাম। তারা সেই চ্যালেঞ্জে পরাজিত হয়ে গরুর হাটে সমাবেশ করতে হয়েছে।’
পথসমাবেশ শেষে একটি বিজয় মিছিল নগরীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে।
বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত ইনডেক্সধারী সব শিক্ষকই বদলির সুযোগ পাবেন বলে জানিয়েছেন শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ।
বুধবার বিকেলে এ তথ্য জানিয়ে তিনি বলেন, বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত শিক্ষকরা খুব শিগগির এমন সুখবর পাবেন।
ড. ওয়াহিদউদ্দিন বলেন, ‘বেসরকারি শিক্ষকদের শূন্যপদের বিপরীতে সর্বজনীন বদলি নিয়ে কাজ করছি। আজ বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করেছি। তারা জানিয়েছেন, সফটওয়্যারের মাধ্যমে সব শিক্ষককেই বদলি করা সম্ভব।’
শূন্যপদে বদলির প্রজ্ঞাপন জারিতে দেরির কারণ প্রসঙ্গে শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, ‘বেশ কিছু কারণে বেসরকারি শিক্ষকদের সর্বজনীন বদলির প্রজ্ঞাপন জারি করা সম্ভব হয়নি। প্রায় পাঁচ লাখ শিক্ষক-কর্মচারীকে বদলির আওতায় আনা খুব সহজ ব্যাপার নয়। আমরা বিষয়টি নিয়ে কাজ করছি। বিশেষজ্ঞ কমিটির মতামত পাওয়া গেছে।’
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, আগামী নির্বাচন অনেক কঠিন হবে। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ মাঠে থাকলে বা থাকতে পারলে নির্বাচন যতটা কঠিন হতো, তার চেয়েও আগামী নির্বাচন বেশি কঠিন হবে। এখানে অনেক ষড়যন্ত্র চলছে এবং অনেক অদৃশ্য শক্তি কাজ করছে।
বন্দর নগরী চট্টগ্রামে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে বুধবার ‘রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের ৩১ দফা ও জনসম্পৃক্তি’ বিষয়ে চট্টগ্রাম বিভাগীয় প্রশিক্ষণ কর্মশালার সমাপনী অধিবেশনে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
নেতাকর্মীদের উদ্দেশ করে তারেক রহমান বলেন, ‘কেউ যদি মনে করেন যে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ হিসেবে আমরা যাদের ভাবতাম তারা মাঠে নেই বা মাঠে দুর্বল, আল্লাহর ওয়াস্তে এ কথা মন থেকে সরিয়ে দিন।
‘বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল, আপনি যেহেতু এ দলের প্রতিনিধি, আপনার বিরুদ্ধে অনেক ষড়যন্ত্র চলছে। একটু ঠাণ্ডা মাথায় চিন্তা করুন। ছাত্রদল, যুবদল, মহিলা দল কিংবা স্বেচ্ছাসেবক দল- যা-ই হোন না কেন, আল্লাহর ওয়াস্তে এটা একটু চিন্তা করুন যে বহু ষড়যন্ত্র চলছে। এই ষড়যন্ত্রকে উপড়ে ফেলতে আমাদের ধৈর্য্যের পরিচয় দিতে হবে। আমাদের ধৈর্য্যশীল হতে হবে, আচরণ সেরকম হতে হবে।’
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘নিশিরাতের নির্বাচনে, ব্যালট চুরির নির্বাচনে আমরা বিশ্বাস করি না। আমরা বিশ্বাস করি জনগণের ম্যান্ডেটে। আমরা সেই নির্বাচনে বিশ্বাস করি, যেখানে মানুষ লাইনে দাঁড়িয়ে, স্বচ্ছভাবে, সুন্দরভাবে, নিরাপদে, নিরাপত্তার সঙ্গে ভোট দেবে।
‘সেটা অর্জন করতে হলে আপনাদের অনেক কিছুর পরিবর্তন করতে হবে। আপনাদের আচরণ, চলাফেরা, কথাবার্তা পরিবর্তন করতে হবে। বারে বারে আমি বলছি- আপনারা জনগণকে সঙ্গে রাখুন, জনগণের সঙ্গী হোন।’
তারেক রহমান বলেন, ‘আমরা কেউ ক্ষমতায় যাব না। আপনারা কেউ কিন্তু ক্ষমতায় যাবেন না। আপনারা মানুষের সমর্থন পেলে দেশ পরিচালনার সুযোগ পাবেন। মানুষ আপনাদের ক্ষমতা দেবে না, মানুষ আপনাদের দেশ পরিচালনার সুযোগ দেবে।
‘পার্থক্যটা বুঝতে হবে। ক্ষমতায় ছিল পলাতক স্বৈরাচার। ওরা জনসমর্থন নিয়ে দেশ পরিচালনার সুযোগ পায়নি। ক্ষমতা দখল করে ক্ষমতায় ছিল। আমরা দেশ পরিচালনার সুযোগ পেতে চাই জনগণের সমর্থন নিয়ে।’
বিএনপির এই দ্বিতীয় শীর্ষ নেতা বলেন, ‘দুর্নীতির মাধ্যমে ১৫ বছরে আমাদের দেশের ২৩৪ বিলিয়ন ডলার বিদেশে অবৈধভাবে পাচার হয়ে গেছে। ১৫ দিনের মধ্যেই তা আবিষ্কার করা গেছে। এর মানে ভেতরে আরও অনেক কিছু আছে। দেশের কয়েক বছরের বাজেটের সমান টাকা চলে গেছে।
‘পাচার হওয়া টাকা দেশে ফিরিয়ে আনতে হবে। মানি লন্ডারিংয়ের টাকা আন্তর্জাতিক ফোরামের সঙ্গে একটা সামঞ্জস্যের মাধ্যমে ফিরিয়ে আনার জন্য একটা ব্যবস্থা করতে হবে।
‘ইতোমধ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার লোকাল ফোরামের মাধ্যমে কথাবার্তা শুরু করেছে। আমরা অবজারভ করব, তারা সেটা কতটুকু করতে পারে। যদি পারে তাহলে ভালো, আমরা সেটাকে স্বাগত জানাবো। আর কী পারে সেটা দেখে জনগণ যদি আমাদের ভোট দিয়ে দেশসেবার সুযোগ দেন; তাহলে বিভিন্ন ফোরামের মাধ্যমে পাচার হওয়া টাকা ফেরত আনার বন্দোবস্ত করেই ছাড়ব।’
তারেক রহমান আরও বলেন, ‘অবশ্যই আমরা আন্তর্জাতিক ফোরামের সহযোগিতা নেব। তবে এর বাইরে আন্তর্জাতিকভাবে যে প্রাইভেট সংস্থাগুলো আছে; তাদের সঙ্গে আমরা কথা বলব। আমাদের দেশের সম্পদ (পাচার হওয়া টাকা) দেশের মানুষের সম্পদ যে এনে দিতে পারবে; আমরা তার সঙ্গেই কথা বলব, বসব।’
আরও পড়ুন:কক্সবাজারের সীমান্ত উপজেলা টেকনাফের পাহাড়ি এলাকা থেকে ফাঁকা গুলি ছুড়ে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে দুই কৃষককে অপহরণ করেছে অস্ত্রধারী পাহাড়ি সন্ত্রাসীরা। এ সময় সোহেল, কায়সার উদ্দিন ও মো. সাকিব নামে তিনজন গুলিবিদ্ধ হয়। এতে কম্বনিয়া পাড়া এলাকার বাসিন্দা।
বুধবার সকাল ১০টার দিকে উপজেলার হোয়াইক্যং ইউনিয়নের কম্বনিয়া পাড়া পাহাড়ি এলাকায় এই ঘটনা ঘটে।
অপহৃতরা হলেন- হোয়াইক্যং কম্বনিয়া পাড়ার বাসিন্দা আব্দুল মাবুদের ছেলে জাকির হোসেন ও ভুলু মিয়ার ছেলে জহির। ঘটনার খবর পেয়ে স্থানীয়রা দলবেঁধে পাহাড়ে অপহৃতদের উদ্ধার করতে গেলে ডাকাত দল তাদেরকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে।
এই অপহরণের সঙ্গে জড়িত উল্লেখ করে দুজনকে আটক করে স্থানীয়রা পুলিশে সোপর্দ করেছে বলে জানিয়েছেন টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন।
তিনি বলেন, অপহরণের শিকারদের উদ্ধার এবং ঘটনায় জড়িতদের ধরে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। আর আটক দু’জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দা সাইফুদ্দীন আল মোবারক বলেন, ‘পুলিশের একার পক্ষে গহীন পাহাড়ে অভিযান চালিয়ে অপহরণ রোধ করা সম্ভব নয়। টিম গঠন করে যৌথবাহিনী অভিযান চালালে অপহরণ রোধ করা সম্ভব হবে। তাই অপহরণ রোধে যৌথবাহিনী গঠন করে পাহাড়ে অভিযান চালানোর দাবি জানাচ্ছি আমরা।’
আরও পড়ুন:ভারতীয়দের বাধায় সিলেট বিভাগের তিন শুল্ক স্টেশন দিয়ে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ রয়েছে। অপরদিকে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের আপত্তিতে সিলেটের তামাবিল স্থলবন্দর দিয়ে পণ্য আমদানি হচ্ছে না। ফলে স্থবির হয়ে আছে এসব বন্দর ও শুল্ক স্টেশন।
জানা যায়, ভারতের আসাম রাজ্যের শ্রীভূমিতে (করিমগঞ্জ) সনাতনী ঐক্য মঞ্চ নামের একটি সংগঠনের বিক্ষোভের মুখে গত রোববার সিলেটের বিয়ানীবাজারের শেওলা স্থলবন্দর ও সোমবার জকিগঞ্জ শুল্ক স্টেশন দিয়ে পণ্য আমদানি-রপ্তানি বন্ধ হয়ে যায়। এর আগে ভারতীয়দের বিক্ষোভের কারণে গত ৩০ নভেম্বর থেকে মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার চাতলাপুর শুল্ক স্টেশন দিয়ে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ রয়েছে।
অন্যদিকে শুল্কায়ন জটিলতায় তামাবিল স্থলবন্দর দিয়ে পাথর ও চুনাপাথর আমদানি বন্ধ রেখেছেন ব্যবসায়ীরা।
আমদানিকারক সূত্র জানায়, বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের অভিযোগ ও ইসকন থেকে বহিষ্কৃত নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে গত রোববার ভারতের শ্রীভূমি জেলার সুতারকান্দি স্থলবন্দরে মিছিল নিয়ে জড়ো হয় কয়েক শ’ লোক। তারা সীমান্ত এলাকায় বিক্ষোভ করে। পরে ভারতীয় বিক্ষোভকারীরা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করলে সুতারকান্দি (বাংলাদেশের শেওলা) স্থলবন্দর দিয়ে পণ্য আমদানি-রপ্তানি বন্ধ হয়ে যায়।
সোমবার একই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় ভারতের করিমগঞ্জ শুল্ক স্টেশনে। ফলে সোমবার থেকে ওই স্টেশন দিয়েও আমদানি-রপ্তানি বন্ধ হয়ে যায়।
এদিকে পণ্য পরিমাপ সংক্রান্ত জটিলতায় গত মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে ভারতের ডাউকি স্থলবন্দর (বাংলাদেশের তামাবিল) দিয়ে পাথর-চুনাপাথর আমদানি বন্ধ করে দিয়েছেন বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা।
এই বন্দর দিয়ে পণ্য আমদানি করা ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, তামাবিল ও শেওলা স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে যে পাথর আমদানি করা হয় তা সরাসরি খনি থেকে ট্রাকে লোড করা হয়। ফলে পাথরের সঙ্গে মাটি ও বালি মিশ্রিত থাকে। আগে শুল্কায়নের পূর্বে বন্দর কর্তৃপক্ষ মাটি ও বালির ওজন বাদ দিয়ে পাথরের ওজন নির্ণয় করত। কিন্তু বর্তমানে স্থলবন্দরের নতুন কর্মকর্তারা মাটি ও বালির ওজন ছাড় না দেয়ায় লোকসান গুনতে হচ্ছে।
ওয়েট স্কেলে কড়াকড়ি ওজন নির্ণয়ের কারণে কয়লা-পাথর আমদানি থেকে বিরত রয়েছেন জানিয়ে ব্যবসায়ীরা বলেন, এ অবস্থায় আমদানি অব্যাহত রাখলে পাথরবাহী প্রতি ট্রাকে ন্যূনতম ১০ হাজার টাকা লোকসান গুনতে হবে। বিষয়টি নিয়ে কাস্টমস কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বললেও কোনো সুরাহা পাচ্ছেন না বলে জানান তারা।
তামাবিল কয়লা, পাথর ও চুনাপাথর আমদানিকারক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস উদ্দিন লিপু বলেন, ‘ওজন জটিলতায় আমরা পাথর আমদানি বন্ধ রেখেছি। লাখ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেও পাথর আমদানি করতে গিয়ে আমাদের লোকসান গুনতে হচ্ছে।
‘আমদানি বন্ধ থাকায় ওপারে ভারতে কয়লা-পাথরবাহী শত শত ট্রাক লাইনে দাঁড়িয়ে রয়েছে। এখন রপ্তানিকারকরা আমাদের কাছে পণ্যবাহী ট্রাকের ক্ষতিপূরণ দাবি করছে।’
তামাবিল কাস্টমসের রাজস্ব কর্মকর্তা তানভির হোসেন বলেন, ‘আমাদের কার্যক্রম স্বাভাবিক আছে। ব্যবসায়ীরা পাথর আমদানি বন্ধ রাখায় এমন পরিস্থিতি বিরাজ করছে। বিষয়টি আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।’
তামাবিল স্থলবন্দরের সহকারী পরিচালক মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কায় কয়লা-পাথর আমদানি বন্ধ রেখেছেন ব্যবসায়ীরা। আমরা কয়লা-পাথর ব্যবসায়ীদের সমস্যার বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নেবে।’
এদিকে ভারতীয়দের বাধায় অন্য সীমান্ত দিয়ে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ হওয়া প্রসঙ্গে সিলেট পাথর আমদানিকারক গ্রুপের সভাপতি আতিক হোসেন বলেন, ‘ইসকন ইস্যুতে ভারতের সুতারকান্দি ও করিমগঞ্জ বর্ডার দিয়ে সব ধরনের আমদানি-রপ্তানি বন্ধ রয়েছে। ভারতীয় লোকজনের বাধার মুখে ভারত থেকে বাংলাদেশে কিংবা বাংলাদেশ থেকে ভারতে পণ্যবাহী গাড়ি ঢুকতে পারছে না।’
তিনি জানান, মঙ্গলবার পর্যন্ত ভারতের সুতারকান্দিতে পাথরসহ বিভিন্ন পণ্যবাহী অন্তত দুশ’ ট্রাক এবং এপারে শেওলা শুল্ক স্টেশনে অর্ধশতাধিক ট্রাক আটকা পড়েছে। এছাড়া সিলেটের জকিগঞ্জের ওপারে ভারতের করিমগঞ্জে আটকা পড়েছে ফল ও কাঁচামাল বোঝাই অর্ধশতাধিক ট্রাক। পণ্য খালাস না হওয়ায় ট্রাকে ফলসহ কাঁচামাল নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
আমদানিকারকরা জানিয়েছেন, বর্ডারে পণ্য আটকা পড়ায় ব্যবসায়ীরা মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। প্রতিদিনই আমদানিকারকদের ব্যাংক ঋণের সুদ গুনতে হচ্ছে। এছাড়া পাথর ও চুনাপাথর আমদানি বন্ধ থাকায় লোড-আনালোড এবং স্থানীয় পাথরভাঙার কলগুলোর হাজার হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছেন।
বিয়ানীবাজারের শেওলা স্থলবন্দরের রাজস্ব কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘এই বন্দর দিয়ে মূলত কয়লা ও পাথর আমদানি হয়। আর রপ্তানি হয় ভোগ্যপণ্য, সিমেন্টসহ কিছু পণ্য। তবে ভারত সীমান্তে সমস্যার কারণে তিনদিন ধরে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ রয়েছে।’
এদিকে জকিগঞ্জ শুল্ক স্টেশনের রাজস্ব কর্মকর্তা মো. আরিফ উদ্দিন বলেন, ‘এই স্টেশন দিয়ে মূলত কমলাসহ কিছু ফলমূল আমদানি হয়। তবে সোমবার থেকে কোনো পণ্য আমদানি হয়নি।’
আরও পড়ুন:পার্বত্য শান্তি চুক্তির অনুষ্ঠানে আসা না আসা নিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের আঞ্চলিক দুটি দলের মধ্যে কয়েক দিন ধরে দফায় দফায় বন্দুকযুদ্ধ চলছে। উদ্ভূত পরিস্থিতির জেরে সাজেকে পাঁচ শতাধিক পর্যটক আটকা পড়েছেন।
মঙ্গলবার রাতে রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জোবায়দা আক্তার এক বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
পর্যটকদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে বুধবার একদিনের জন্য সাজেক ভ্রমণে নিরুসাহিত করেছে জেলা প্রশাসন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এলাকা নিয়ন্ত্রণে বিগত কয়েকদিন ধরে সাজেক ও মাচালং এলাকায় সন্তু লারমা জেএসএস ও প্রসীত দলের ইপিডিএফ দফায় দফায় গোলাগুলিতে জড়িয়েছে। তবে আঞ্চলিক এই দু’দলের মধ্যে বন্দুকযুদ্ধের ঘটনায় একজনের প্রাণহাণির খবর পাওয়া গেলেও দুর্গম এলাকা হওয়ায় প্রশাসনের কেউ তা নিশ্চিত করতে পারেনি।
সাজেকে আটকা পড়া গাড়িচালকরা বলেন, সকালে খাগড়াছড়ি থেকে ২৭টি গাড়ি সাজেকে গেছে। এই গাড়িগুলোতে করে আসা চার শতাধিক পর্যটক সাজেকে অবস্থান করছেন।
দুই আঞ্চলিক দলের মধ্যে গত কয়েকদিন ধরে গোলাগুলির ঘটনা ঘটছে। তবে মঙ্গলবার সকাল থেকে এই গোলাগুলির ঘটনা বেড়ে যায়। তাই পর্যটকদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে বিকেলে পর্যটকবাহী কোনো গাড়ি সাজেক থেকে খাগড়াছড়িতে আসেনি।
সাজেক রিসোর্ট মালিক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মতিজয় ত্রিপুরা জানান, সাজেক ও মাচালং সড়কের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের শীপপাড়া নামক এলাকায় এই গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। জায়গাটি পর্যটন কেন্দ্র থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে। এই গোলাগুলির ঘটনার কারণে কোনো গাড়ি ছেড়ে যায়নি। রাতে পাঁচ শতাধিক পর্যটক সাজেকে অবস্থান করছেন।
রাঙ্গামটির জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন খান জানান, দুই আঞ্চলিক দলের গোলাগুলির ঘটনায় পর্যটকদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে বুধবার একদিন সাজেকে পর্যটক ভ্রমণকে নিরুসাহিত করা হয়েছে। পরিস্থিতি বিবেচনা করে পরে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। যারা আছেন তাদেরকে নিরাপদে আজ ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
আরও পড়ুন:মাদারীপুরের ডাসারে ঘাস মারার ওষুধ খেয়ে নিতু সরকার (১৬) নামের স্কুলছাত্রীর মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করেছে তার পরিবার।
প্রাণ হারানো নিতুর বাড়ি উপজেলার নবগ্রাম এলাকার শশিকর গ্রামে।
সে রাজৈর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিল।
ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে মঙ্গলবার রাতে মৃত্যু হয় এ ছাত্রীর।
ছাত্রীর পরিবারের ভাষ্য, নিতু সরকার গত ২৭ নভেম্বর ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে অভিমান করে ঘরে থাকা ঘাস মারার ওষুধ পান করে। পরে পরিবারের লোকজন তাকে ঢাকার বেসরকারি হলি ফ্যামিলি হাসপাতালে ভর্তি করে। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
প্রতিবেশী সেন্টু বলেন, ‘নিতু ঘাস মারার ওষুধ খেয়ে মারা গেছে। তার লাশ ঢাকা থেকে থানায় নিয়ে আসা হয়েছে।’
এ বিষয়ে ডাসার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহামুদ-উল-হাসান বলেন, ‘আমরা শুনেছি নিতু সরকার কীটনাশক খেয়ে মারা গেছে। তার লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।’
আরও পড়ুন:ঘুষের টাকা ফেরত চাওয়ায় এক ডিলারকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) কিশোরগঞ্জের উপপরিচালকের (বীজ বিপণন) বিরুদ্ধে।
এ ঘটনায় বিএডিসির মহাব্যবস্থাপক (বীজ) বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ওই ডিলার। অভিযোগের একটি কপি এসেছে এ প্রতিবেদকের হাতে।
অভিযুক্ত কর্মকর্তার নাম একেএম মনিরুজ্জামান। এ ঘটনায় তার সঙ্গে সহকারী হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা (চলতি দায়িত্ব) ও গুদাম রক্ষক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) শুভ্রানিয়াম বৈষ্ণবকেও অভিযুক্ত করা হয়েছে। দুজনই বিএডিসি, কিশোরগঞ্জে কর্মরত।
মহাব্যস্থাপক (বীজ) মো. আবীর হোসেন মুঠোফোনে এ প্রতিবেদককে অভিযোগ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
কী আছে লিখিত অভিযোগে
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই ডিলার জানান, গত ৪ নভেম্বর বীজ উত্তোলনের জন্য গুদামে যান তিনি। গুদাম রক্ষক শুভ্রানিয়ামের কাছে গেলে হাতের ইশারায় অতিরিক্ত টাকা নিয়ে উপপরিচালকের (বীজ) কাছে যেতে বলেন। সেখানে গেলে উপপরিচালক জানান, বীজের বরাদ্দের সময় শেষ। এখন বীজ নিতে হলে প্রতি টনে দুই হাজার টাকা এবং মধুপুরের বীজ নিতে হলে প্রতি টনে ৩ হাজার টাকা অতিরিক্ত দিতে হবে। ডিলারশিপ টিকিয়ে রাখতে ৫ টন ব্রি ধান-২৯-এর (মধুপুর বীজ ধান) কথা বলেন। তখন কর্মকর্তা হিসাব করে ১৫ হাজার টাকা দিতে বললে দর কষাকষি করে ১২ হাজার টাকা দেন তিনি। ওই সময় ৮ টন ব্রি ধান-২৯ এবং অন্যান্য জাতের ৩.৮ টন ধানের মেমো করে বাড়িতে চলে যান তিনি।
ডিলারের ভাষ্য, পরের দিন গাড়ি পাঠানোর পর মধুপরের বীজ না দিয়ে ভিন্ন বীজ দেয়া হয় তাকে। পরে ১০ নভেম্বর মধুপুরের বীজের জন্য প্রদানকৃত অতিরিক্ত ১২ হাজার টাকা ফেরত নিতে আসেন তিনি। সে সময় উপপরিচালক একেএম মনিরুজ্জামান তাকে গুদাম রক্ষক শুভ্রানিয়াম বৈষ্ণবের কাছে যেতে বলেন। শুভ্রানিয়াম তখন পাঁচ হাজার টাকা ফেরত দেন ডিলারকে। বাকি টাকা চাওয়ার পর উপপরিচালক একেএম মনিরুজ্জামান ও গুদাম রক্ষক শুভ্রানিয়াম বৈষ্ণব মিলে মারধর করেন তাকে। পরে ২০ নভেম্বর মহাব্যবস্থাপক (বীজ) বরাবর লি়খিত অভিযোগ করেন ওই ডিলার, তবে মারধরের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন অভিযুক্তরা।
বিশেষ টোকেনের মাধ্যমে উৎকোচ নেয়ার অভিযোগ
উপপরিচালক একেএম মনিরুজ্জামানের বিরুদ্ধে বিশেষ টোকেনের মাধ্যমে উৎকোচ গ্রহণের অভিযোগও উঠেছে। বিশেষ এ টোকেন হাতে থাকলে সিরিয়াল ছাড়া পছন্দমতো বীজ সংগ্রহ করা যায়।
এ কর্মকর্তার স্বাক্ষরিত এমন একটি বিশেষ টোকেনের ছবি এসেছে এ প্রতিবেদকের হাতে। তাতে দেখা যায়, এক ডিলারকে ১০ টন ডায়মন্ড আলু বীজের একটি বিশেষ টোকেন দিয়েছেন তিনি। একসঙ্গে ১০ টন একজনকে দিলে সমালোচনায় পড়তে পারেন বলে দুইভাগে লিখে দিয়েছেন।
বিশেষ টোকেনপ্রাপ্ত ওই ডিলারের কাছ থেকেও মনিরুজ্জামান ৩০ হাজার টাকা নিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এসব টোকেনের মাধ্যমে আলু বীজের কেজিপ্রতি তিন থেকে ১০ টাকাও নিয়ে থাকেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
কৃষি অফিসের একটি সূত্র জানায়, এবার কিশোরগঞ্জে ৩৮৯ টন আলুর বরাদ্দ আসে।
কেজিপ্রতি অতিরিক্ত টাকা নিয়ে বীজ কম দেয়ার অভিযোগও রয়েছে মনিরুজ্জামানের বিরুদ্ধে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ডিলার জানান, যেখানে তারাই সঠিক দামে বীজ পান না, সেখানে কৃষকরা কীভাবে পাবে।
তাদের ভাষ্য, বাজার অস্থিতিশীল হওয়ার অন্তরালে এসব কর্মকর্তাই দায়ী।
‘অনিয়ম-দুর্নীতির মাস্টারমাইন্ড’ শুভ্রানিয়াম বৈষ্ণব
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ডিলারের অভিযোগ, টাকা ছাড়া কোনো কাজই করেন না সহকারী হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা শুভ্রানিয়াম বৈষ্ণব।
তারা জানান, এ অফিসে উপপরিচালককে অতিরিক্ত টাকা দেওয়ার পরও শুভ্রানিয়াম বৈষ্ণবকে আলাদা ম্যানেজ করতে হয়। তা না হলে সঠিক সময়ে কেউই বীজ পান না। উপপরিচালকের পর এ অফিসে সবচেয়ে প্রভাব বেশি কাটিয়ে চলেন শুভ্রানিয়াম বৈষ্ণব। তার হাতের ইশারা ছাড়া এক কেজি বীজ সংগ্রহ করা সম্ভব হয় না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কৃষি অফিসের একজন কর্মকর্তা জানান, শুভ্রানিয়াম বৈষ্ণবের হুমকি-ধমকি অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে সহকারী প্রশাসনিক কর্মকর্তা শিউলী আক্তার, সহকারী হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা আশরাফুল ইসলাম, অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর নুরুল আমিন, নিরাপত্তা প্রহরী জাকির হোসেন ও খায়রুল ইসলাম সম্মিলিতভাবে বিএডিসির সচিব বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
উল্লিখিত অভিযোগগুলো অস্বীকার করে শুভ্রানিয়াম বৈষ্ণব জানান, তিনি ষড়যন্ত্রের শিকার।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে বিএডিসির সচিব ড. কে এম মামুন উজ্জামানের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এসব বিষয়ে খোঁজ নিয়ে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
‘বিএডিসি একটি দোকান, উপপরিচালক মহাজন’
বিএডিসির সার্বিক বিষয়ে জানতে ভৈরবের এক পুরাতন ডিলারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘বিএডিসি অফিস তো নয়, যেন একটি দোকান। আর উপপরিচালক (ডিডি) এখানকার মহাজন। মহাজনের মতোই সবকিছু পরিচালনা এবং দরকষাকষি করে বীজ বিক্রি করেন তিনি। দোকানদার যেমন ইচ্ছামতো দোকান খোলেন আবার বন্ধ করেন, বিএডিসি অফিসও বর্তমানেও তেমনই।’
তিনি আরও বলেন, ‘অতিরিক্ত টাকা ছাড়া কোনো বীজ দেন না উপপরিচালক। তার আচরণে বেশির ভাগ ডিলারই ক্ষুদ্ধ। শুধু ডিলারশিপ টিকিয়ে রাখতে মুখ বুজে সহ্য করেন।’
বীজ বিপণন অফিসকে দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত করার অভিযোগ
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ডিলার অভিযোগ করেন, উপপরিচালক একেএম মনিরুজ্জামান এবং সহকারী হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা (চলতি দায়িত্ব) ও গুদাম রক্ষক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) শুভ্রানিয়াম বৈষ্ণব যৌথভাবে বীজ বিপণন অফিসকে দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত করেছেন। তারা দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে বীজ ডিলাররা বরাদ্দ অনুযায়ী বীজ বা অবীজ কোনোটাই উত্তোলন করতে পারেন না।
ডিলারদের ভাষ্য, অতিরিক্ত টাকা না পেলে দুই কর্মকর্তা বীজ বিক্রি করেন না। ঘুষ চাওয়ার প্রতিবাদ করলে ডিলারশিপ বাতিল করার হুমকি দেয়া হয়। ঘুষের টাকা ফেরত চাওয়ায় সম্প্রতি এক ডিলারকে মারধর করেছেন তিনি।
তারা জানান, অতিরিক্ত টাকা হাতে পেলে অধিক বীজের গেস্ট হাউসে বসে বিশেষ টোকেন দেন উপপরিচালক। পরে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেন গুদামরক্ষক।
বিএডিসি সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ২০২৪-২৫ বোরো মৌসুমে কিশোরগঞ্জ অঞ্চলে মোট বরাদ্দ আসে ৩ হাজার ২০০ টন বীজ। এ মৌসুমে ১ হাজার ৪৫০ টনের মতো বীজ বিক্রি হলেও অবিক্রিত রয়ে গেছে ১ হাজার ৭৫০ টন বীজ।
চলতি বোরো মৌসুমে ১ হাজার ৭৫০ টনের বেশি বীজ অবিক্রিত থাকায় সরকারের ২ কোটি ৬২ লাখ ৫০ হাজার টাকার লোকসান গোনার প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছে। বাধ্য হয়ে এ ধানবীজ এখন অবীজ হিসেবে বিক্রি করতে হবে। আর অবীজ (খাদ্য) হিসেবে বিক্রি করলে সরকারে প্রতি কেজিতে লোকসান হবে ১৫ থেকে ১৭ টাকা।
ডিলারদের অভিযোগ, পর্যাপ্ত পরিমাণ বীজ থাকা সত্ত্বেও প্রতি টনে তিন থেকে চার হাজার টাকা অতিরিক্ত না দিলে বীজ পান না তারা। এতে মাঠ পর্যায়ে বীজের দাম বেড়ে যাওয়ায় বিএডিসির বীজের প্রতি আগ্রহ হারাচ্ছেন কৃষকরা। ফলে প্রতি বছর হাজার হাজার টন বীজ অবিক্রিত থেকে যাচ্ছে। এতে প্রতি বছর সরকারের কোটি কোটি টাকা লোকসান হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ডিলার জানান, ২০২৪-২৫ মৌসুমে ভিত্তি ধানবীজের প্রতি টনে ৪ হাজার টাকা এবং মধুপুরের ধানবীজে ৩ হাজার টাকা এবং অন্যান্য যেকোনো জাতের বীজ নিতে হলে ১ হাজার টাকা অতিরিক্ত দিতে বাধ্য করেছেন উপপরিচালক একেএম মনিরুজ্জামান ও সহকারী হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা শুভ্রানিয়াম বৈষ্ণব। তাদের অতিরিক্ত চাহিদার কারণে ডিলাররা প্রয়োজনমতো ধানবীজ উত্তোলন করতে পারেন না। ফলে প্রতি বছর অনেক ধানবীজ অবিক্রিত থেকে যাচ্ছে। এই দুই কর্মকর্তা নিজেরা লাখ টাকা উপার্জন করতে গিয়ে সরকারের কোটি কোটি টাকা লোকসান করছেন।
অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ এবারই প্রথম নয়
বিএডিসি কিশোরগঞ্জ অফিস সূত্রে জানা যায়, ২০২৪-২০২৫ মৌসুমে যেমন অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে, তেমন অভিযোগ আগেও পাওয়া গেছে। অতীতেও একইভাবে অনিয়ম করেছেন উপপরিচালক। একইভাবে ২০২৩-২৪ বোরো মৌসুমে মোট বরাদ্দ ছিল ৩ হাজার ৪০০ টন। এর মধ্যে ১ হাজার ৬৬০ টনের মতো বীজ বিক্রি হয়। তখনও ১ হাজার ৭০০ টন বীজ অবিক্রিত থাকায় সরকারের লোকসান হয় ২ কোটি ৫৫ লক্ষ টাকা।
বিএডিসি সূত্র আরও জানায়, ওই সময়ে অবিক্রিত বোরো ধানবীজ পরে অবীজ(খাদ্য) হিসেবে বিক্রিতে ডিলারদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায় করা হয়।
ডিলাররা জানান, ১ হাজার ৭০০ টন অবীজ ধানের মধ্যে ডিলারদের জন্য বরাদ্দপ্রাপ্ত হিসেবে কোনো পরিমাণ ধান উত্তোলন করতে পারেননি। ব্রি ধান-২৮-এর চালের চাহিদা বেশি হওয়ায় প্রতি টনে ৪ হাজার টাকা করে ৩০০ টন ধান বিক্রি করেন। এখান থেকে অতিরিক্ত ১২ লাখ আদায় করেন উপপরিচালক। বাকি ধান প্রতি টনে এক থেকে দুই হাজার টাকা অতিরিক্ত নিয়ে বিক্রি করেন মনিরুজ্জামান।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কৃষি অফিসের একটি সূত্র জানায়, অবীজ বিক্রিতে মোটা অঙ্কের অতিরিক্ত টাকা আদায়ের সুযোগ রয়েছে এ কর্মকর্তার। তাই প্রতি বছর ইচ্ছাকৃতভাবেই বীজ অবিক্রিত রেখে দেয়ার পরিকল্পনা করেন তিনি।
অভিযুক্ত ও দায়িত্বশীল কর্মকর্তার ভাষ্য
এ বিষয়ে বিএডিসি কিশোরগঞ্জের উপপরিচালক (বীজ বিপণন) একে এম মনিরুজ্জামানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে সব অভিযোগ অস্বীকার বলেন, ‘বিভিন্ন সময়ে বীজ নিয়ে অনেক ডিলারদের চাহিদা থাকে। সবসময় সবার চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হয়ে ওঠে না।
‘তাই অনেকে বিভিন্ন অভিযোগ করতে পারে। এসব অভিযোগের সত্যতা নেই।’
বিএডিসির মহাব্যবস্থাপক (বীজ) আবীর হোসেন অভিযোগের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
তিনি মোবাইল ফোনে বলেন, ‘কিশোরগঞ্জ থেকে একটি লিখিত অভিযোগ এসেছে। বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য