বর্ষীয়ান আওয়ামী লীগ নেতা সাজেদা চৌধুরীর মৃত্যুতে শূন্য হওয়া জাতীয় সংসদের উপনেতার পদে আবারও একজন নারীকেই নির্বাচিত করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ও জাতীয় সংসদ নেতা শেখ হাসিনা।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের জের ধরে সৃষ্ট বিশ্ব মন্দা মোকাবিলায় সবাইকে সাশ্রয়ী, মিতব্যয়ী হওয়ার পাশাপাশি উৎপাদন বাড়ানোর তাগিদ দিয়েছেন সরকারপ্রধান। বলেছেন, অনেক উন্নত দেশ নিজেদের অর্থনৈতিক মন্দার দেশ ঘোষণা দিলেও বাংলাদেশ দেয়নি। দেয়া লাগবে বলেও তিনি মনে করেন না।
ঢাকার ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে শুক্রবার সকালে বেগম রোকেয়া দিবস-২০২২ উদযাপন এবং বেগম রোকেয়া পদক-২০২২ প্রদান অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
বেগম রোকেয়ার দেখা স্বপ্ন অনেকাংশেই বাংলাদেশে পূরণ হয়েছে বলে মনে করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘পার্লামেন্টে স্পিকার, লিডার অফ দ্য হাউস, লিডার অফ দ্য অপজিশন, ডেপুটি লিডার- চারজনই মহিলা ছিলাম। দুর্ভাগ্যের বিষয়, আপনারা জানেন যে আমাদের ডেপুটি লিডার সাজেদা চৌধুরী কিছুদিন আগে মৃত্যুবরণ করেছেন। তবে এই শূন্যস্থানটা পূরণ আবার একজন নারীকে দিয়েই করব।’
এ কথা বলেই হেসে ওঠেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘না, আমাদের সবাই যোগ্য। আমি কাউকে অযোগ্য বলছি না। কিন্তু আমাদের এই সমাজটাকে তো উৎসাহিত করতে হবে, তুলে ধরতে হবে। সেটাই আমার লক্ষ্য, সেটাই করে যাচ্ছি।’
মন্দা আক্রান্ত হবে না বাংলাদেশ
করোনা মহামারি অভিঘাতের মধ্যে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, যুদ্ধের জের ধরে আমেরিকা-ইউরোপের নিষেধাজ্ঞা আরোপের কারণে মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘এটা শুধু আমাদের দেশে না। উন্নত দেশগুলো আরও খারাপ অবস্থায় আছে। সে জন্য আমি সবাইকে আহ্বান করেছি, যার যেখানে যতটুকু জায়গা আছে, যে যা পারেন উৎপাদন করুন। সাশ্রয় করেন, বিদ্যুৎ, পানি, তেল ব্যবহারে সবাই সাশ্রয়ী হোন। সবাই সঞ্চয়ী হোন, যেন আন্তর্জাতিক বিশ্বে অর্থনৈতিক মন্দার যে ধাক্কাটা এসেছে, সেই ধাক্কাটা যেন আমাদের দেশে না আসতে পারে। আমাদের নিজেদেরই সেই ব্যবস্থাটা নিতে হবে।’
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে মানুষের কষ্ট হচ্ছে বলেও স্বীকার করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘কিন্তু এটা তো আন্তর্জাতিক একটা অবস্থার কারণে। আমরা যদি আমাদের উৎপাদন ঠিক রাখি, নিজেদেরটা নিজেরা করব, কারও কাছে হাত পেতে চলব না, ভিক্ষা করে চলব না। জাতির পিতা বলেছেন, মাটি আর মানুষ আছে। এই মাটি-মানুষ দিয়েই আমরা দেশ গড়ব।
‘এই চিন্তা থেকে যদি আমরা প্রত্যেকে নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করি, সবাই যদি একটু মিতব্যয়ী হই, সাশ্রয়ী হই, ইনশাআল্লাহ আন্তর্জাতিকভাবে অনেক উন্নত দেশ এখন নিজেদের অর্থনৈতিক মন্দার দেশ ঘোষণা দিয়েছে, বাংলাদেশ আল্লাহর রহমতে এখনও দেয়নি, দেয়া লাগবে বলে আমি মনেও করি না। কারণ আমরা নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে চলব, এগিয়ে যাব।’
সংসারের কাজকেও সম্মান দিতে হবে
সংসারের কাজকে ছোট করে দেখার সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘নারী যখন সংসারে কাজ করে, সেই কাজটাও কিন্তু কম নয়। এটাও কিন্তু তার একটা কর্মক্ষেত্র। সেখানে এটা হয়তো তার নিজের সংসার। সেখান থেকে সে হয়তো বেতনটা নিচ্ছে না, কিন্তু শ্রমটা দিচ্ছে। সংসার পরিচালনা করছে। সংসারের খুঁটিনাটি অনেক কাজ, যে কাজে তাকে সারাদিন ব্যস্ত থাকতে হয়।’
সাংসারিক কাজকে শ্রম হিসেবে বিবেচনা করতে হবে জানিয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘আমাদের নারীরা যারা বাইরে কাজ না করে সংসারে কাজ করে, একটা সংসার গুছিয়ে সুন্দরভাবে করা এটাও কিন্তু অনেক কাজ। এটাও তাদের কর্মক্ষেত্রে হিসেবে এবং এটা তাদের একটা শ্রম হিসেবে বিবেচনা করতে হবে। অনেকে গবেষণা করেন, মেয়েরা কোথায় কোথায় কাজ করছে। এই জায়গাটা কিন্তু যেখানে দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রম করতে হয় সে জায়গটাকে কর্মক্ষেত্র হিসেবে গ্রহণ করা হয় না। আমার মনে হয় এটা ঠিক না। এটা গণ্য করা উচিত।’
কর্মজীবী নারীদের অফিস সামাল দিয়ে বাসায় ফিরেও সব কাজ করতে হয় বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘হয়তো দেখা গেল স্বামী-স্ত্রী একইসঙ্গে অফিস থেকে ফিরল। স্বামী টায়ার্ড চেয়ারে বসে গেছে। আর নারী ছুটল পাকের ঘরে, হয়তো চা বানাতে, রান্না করতে, বাচ্চাদের খাওয়াতে, বাচ্চাদের গোসল করাতে, বাচ্চাদের খবর নিতে। সেখানে আমি সব সময় বলব, এখানে যদি সবাই মিলে কাজটা ভাগ করে নেন তাহলে কিন্তু… এতে লজ্জারও কিছু নেই, কোনো কিছু না…।’
নিজ পরিবারের উদাহরণ টেনে শেখ হাসিনা বলেন, ‘কারণ আমি আমার পরিবারে দেখি, আমার ছেলেকে দেখেছি। আমার ছেলে, ছেলের বউ কাজ থেকে আসলেই আমার বউমা রান্না করে, আমার ছেলে ঘর পরিষ্কার করে। রান্নার পর চুলা পরিষ্কার করা, টেবিল পরিষ্কার করা, থালা-বাসন ধোয়ার কাজ আমার ছেলে নিজ হাতে করে। তারা কিন্তু ভাগ করে নেয়। বলে যে তাড়াতাড়ি করে ফেলে একসঙ্গে বসে তখন তারা টেলিভিশন দেখে। সমানভাবে কাজ করলে পরে এতে কোনো ক্ষতি নেই তো। বরং আরও একটু সময় পাওয়া যায়, পরিবারকে সময় দেয়া যায়। নিজের কাজটা নিজের সবারই করা উচিত বলে আমি মনে করি।’
নারীর অগ্রযাত্রায় সরকারের পদক্ষেপ
বেগম রোকেয়ার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তিনি যদি সেই অচলায়তন ভেঙে নিজে শিক্ষা গ্রহণ করে আমাদের মেয়েদের শিক্ষার ব্যবস্থা না করতেন তাহলে আজ আমরা যে যেখানে আছি কোথাও থাকতে পারতাম না। সেই যুগটা ছিল অত্যন্ত কঠিন একটা পর্দার যুগ।’
বিচার বিভাগসহ সেনা, নৌ, বিমানবাহিনী এবং বর্ডার গার্ডেও নারীদের অন্তর্ভুক্তি আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেই নিশ্চিত হয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘কোনো কোনো ক্ষেত্রে তো মনে হয় যেন ছেলেদের থেকেও আমাদের মেয়েরা বেশি স্মার্ট। না, ছেলেরা তো আমাদের অনেক স্মার্ট। এতে মন খারাপ করার কিছু নেই (হাসতে হাসতে)।’
প্রতিকূলতা ঠেলে প্রথম নারী সচিব এবং প্রথম নারী পুলিশ সুপারেরও নিয়োগ নিজ হাতে দিয়েছিলেন বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, ‘আমার সৌভাগ্য হলো, রৌশন আরা, যাকে আমি প্রথম এসপি করেছিলাম, প্রথম মুন্সিগঞ্জে দিলাম। মুন্সীগঞ্জে প্রথম ডিউটিতে যেয়েই সে ডাকাত ধরে ফেলল। সেই ডাকাত ধরার ছবি, একেবারে এক হাতে রিভলবার, আরেক হাতে ডাকাতকে ধরে রাখছে, নৌকার ওপর দাঁড়িয়ে। আমার তো গর্বে বুকটা ভরে গেল। দেখলেন তো আমাদের মেয়েরা কী পারে! এই ডাকাতকে আজ পর্যন্ত…কই এত পুরুষ…(হেসে ফেলেন প্রধানমন্ত্রী) আমার ভোট যাচ্ছে…’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমার কথাটা হচ্ছে সুযোগ সৃষ্টি করে না দিলে আসলে দায়িত্ব না দিলে দায়িত্ব পালন করে তার দক্ষতা দেখাবে কী করে? আর এটাও তো ঠিক, এটাও মনে রাখতে হবে, একটা সমাজের অর্ধেকই হচ্ছে নারী। কাজেই সেখানে নারী-পুরুষ যদি একইসঙ্গে সমানতালে একটা দেশকে উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিয়ে না যায় সেই দেশ তো মাথা তুলে দাঁড়াতে পারে না। তাহলে তো খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলতে হয়।’
পর্বতারোহণ, ফুটবল, ক্রিকেটসহ ক্রীড়া খাতের নানা শাখায় নারীদের অগ্রগতি নিয়েও কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
নারী ও শিশু নির্যাতন আইন প্রণয়ন করা হয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যারা মেয়েদের ওপর পাশবিক অত্যাচার করবে তাদের একেবারে ক্যাপিটাল পানিশমেন্ট দেয়া হবে। অ্যাসিড নিক্ষেপসহ এ দুটোর জন্য আমরা আইন করেছি। যদিও এই আইন আন্তর্জাতিকভাবে অনেকে আপত্তি করে। কিন্তু মেয়েদের সুরক্ষার জন্য এটা একান্তভাবে প্রয়োজন বলেই আমরা সেই আইন করে দিয়েছি।’
ডে-কেয়ার স্থাপন বাধ্যতামূলক
মাতৃত্বকালীন ছুটি বেতনসহ ছয় মাস করে দেয়া হয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘এখন থেকে যত প্রতিষ্ঠানই হোক সেখানে ডে-কেয়ার সেন্টারের ব্যবস্থা, এমনকি গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রি থেকে শুরু করে বড় বড় হোটেল, শপিং মল, সিনেমা হল-সব জায়গায় ডে-কেয়ার সেন্টার করাটা বাধ্যতামূলক করে দিতে হবে। সেই ব্যবস্থাটা আমরা করে দিয়েছি।’
তৃতীয় লিঙ্গকে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তৃতীয় লিঙ্গ-তারা তো কোনো অপরাধ করেনি। এরা তো বাবা-মায়েরই সন্তান। বাবা-মাকে ফেলে দিয়ে তাদের রাস্তায় চলে যেতে হবে কেন? তাদের জীবন-জীবিকার কিছু থাকবে না, এটা তো হতে পারে না। সেজন্য নারী অধিকার বলে অনেকেই আন্দোলন-সংগ্রাম করেছেন। কিন্তু কখনও এই শ্রেণিটির কথা কেউ ভাবেননি, চিন্তা করেননি। কিন্তু আমরা সংবিধানেই তাদের স্বীকৃতি দিয়েছি।
‘সেই সঙ্গে তারা তাদের বাবা-মায়ের সঙ্গেই থাকবে, তারা লেখাপড়া শিখবে, তারা চাকরি পাবে, তারা কাজ পাবে, তারা ট্রেনিং পাবে, তাদের একটা সুস্থ জীবন তারা পাবে। এমনকি প্রতিটি ফর্মে শুধু নারী-পুরুষ না, নারী-পুরুষ সেই সঙ্গে থার্ড জেন্ডার-সেটাও আমরা লাগিয়ে দিয়েছি।’
সম্পত্তিতেও তৃতীয় লিঙ্গের অধিকারের বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দেন সরকারপ্রধান। তিনি বলেন, ‘ইসলাম ধর্মে মেয়েদের সম্পদের অধিকার, মেয়েরা কিন্তু বাবার বাড়ির সম্পত্তির অধিকারও পায়, স্বামীর বাড়ির সম্পত্তির অধিকারও পায়। আবার সেই সঙ্গে তৃতীয় লিঙ্গ যারা, তারা যদি নিজেদের মেয়ে মনে করে থাকে মেয়ে যত অংশ পাবে তাই পাবে। যদি তারা ছেলে বা পুরুষালি, ছেলের যে অংশ পায়, তাই পাবে। সেটাও কিন্তু নির্দিষ্ট করা আছে, অন্তত আমাদের ইসলাম ধর্মে সেটা আছে, এইটুকু অন্তত আমি বলতে পারি। কাজেই সেভাবে আমরা তাদের স্বীকৃতি দিয়েছি।’
৫ নারী পেলেন রোকেয়া পদক
নারীর অগ্রযাত্রায় অসামান্য ভূমিকা রাখার স্বীকৃতি হিসেবে পাঁচ নারীকে দেয়া হয়েছে বেগম রোকেয়া পদক।
এ বছর নারী অধিকার প্রতিষ্ঠায় চট্টগ্রামের প্রফেসর কামরুন নাহার বেগম, নারীর আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রাখায় সাতক্ষীরার ফরিদা ইয়াসমিন (জন্মস্থান খুলনা), সাহিত্য ও সংস্কৃতির মাধ্যমে নারী জাগরণের ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রাখায় নড়াইলের ড. আফরোজা পারভীন, পল্লী উন্নয়নের ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রাখায় ঝিনাইদহের নাছিমা বেগম এবং নারী শিক্ষায় বিশেষ অবদান রাখায় ফরিদপুরের রহিমা খাতুন পদক পেয়েছেন।
পদক জয়ীদের প্রত্যেককে ১৮ ক্যারেট মানের ২৫ গ্রাম স্বর্ণ দিয়ে একটি পদক, পদকের রেপ্লিকা, চার লাখ টাকার চেক ও সম্মাননাপত্র দেয়া হয়।
সবার হাতে সম্মাননা তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী।
আরও পড়ুন:নওগাঁয় বাজারে উঠতে শুরু করেছে আম। বাজারে ক্ষীরসাপাত/হিমসাগর, নাক ফজলি, ল্যাংড়া/হাড়িভাঙ্গা ও আম্রপালি আম পাওয়া যাচ্ছে। তবে প্রশাসনের নিয়ম মানতে চান না ব্যবসায়িরা। ব্যবসায়িদের আগমন কম হওয়ায় ও সিন্ডিকেটের কারণে ন্যায্য দাম না পাওয়ায় হতাশ আম চাষীরা। এতে অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হতে হচ্ছে চাষীদের। প্রশাসনের নজরদারী বাড়ানোর দাবী চাষীদের।
জেলার সাপাহার উপজেলা সদরে বৃহৎ আমের বাজারে প্রায় ৩৫০টি আড়ৎ রয়েছে। এখন পর্যন্ত চালু হয়েছে ৮০-৯০ টি। যেখানে প্রতিদিন অন্তত ৮-১০ কোটি টাকার বাণিজ্য হচ্ছে। যা স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে ঢাকা সহ বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ হচ্ছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে- এ বছর জেলায় আম বাগানের পরিমাণ ৩০ হাজার ৩০০ হেক্টর। যা থেকে প্রায় ৪ লাখ টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। যা থেকে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকার অধিক বাণিজ্যের আশা।
বরেন্দ্র এলাকা হওয়ায় এ জেলার আম অত্যন্ত সুস্বাদু । ফলে দেশজুড়ে আমের বেশ কদর রয়েছে। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে ঢাকা সহ বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ হয়ে থাকে। দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর বাজারে আসতে শুরু করেছে আম। সাপাহার উপজেলা সদরে জিরো পয়েন্টে আমের বৃহৎ বাজার। আমের ভরা মৌসুমে জিরো পয়েন্ট থেকে গোডাউনপাড়া পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকাজুড়ে সড়কের এক পাশে বসে আমের বাজার। তবে মৌসুমের শুরুতে এক কিলোমিটার জুড়ে বাজার বসেছে। বাজারে ল্যাংড়া, খিরসা/ হিমসাগর, নাকফজলি, হাড়ি ভাংগা, আম্রপালি ও ব্যানানা ম্যাংগো পাওয়া যাচ্ছে।
চাষীরা বাগান থেকে আম পেড়ে সকাল থেকে ভ্যান, ভটভটি সহ বিভিন্ন যানবাহনে করে এ বাজারে বিক্রির জন্য নিয়ে আসছে। তবে ব্যবসায়িদের আনাগোনা কম থাকায় বেচাকেনা কম। বিক্রির জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হচ্ছে চাষীদের। আবার দামও তুলনামুলক কম। প্রতিমণ আম ল্যাংড়া ৮০০-১৫০০ টাকা, নাকফজলি ও খিরসা/ হিমসাগর ১২০০-১৬০০ টাকা, হাড়ি ভাংগা ১৫০০-২৫০০ টাকা, আম্রপালি ২২০০-২৮০০ টাকা এবং ব্যানানা ম্যাংগো ২৫০০-২৮০০ টাকা মন দরে বিক্রি হচ্ছে। এ বছর আম সংগ্রহের যে সময়সূচী নির্ধারণ করা হয়েছে তা কাজে আসছে না। প্রচন্ড গরমে আম পেঁকে ঝরে পড়ছে। এ কারণে সব ধরনের আম প্রায় ১০ দিন আগেই বাজারে চলে আসছে।
আম চাষীদের দীর্ঘ দিনের দাবী ছিল কেজি দরে আম বেচা-কেনা। দাবীর প্রেক্ষিতে গত ৫ জুন রাজশাহী বিভাগীয় পর্যায়ে কেজি দরে আম বেচাকেনা নিয়ে উপজেলা প্রশাসন, ব্যবসায়ী, আড়ৎদার ও আম চাষীদের নিয়ে আলোচনা হয়। কেজিদরে আম বেচাকেনার কথা থাকলেও বাস্তবে তার উল্টোচিত্র। ব্যবসায়িদের সিন্ডিকেটের কাছে হার মানছে চাষীরা। তারা ক্যারেট সহ ৫০-৫২ কেজিতে মণ হিসেবে আম বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে। কেজি দরে আম বেচা-কেনা করতে সাপাহার উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমের বাজারে সচেতনতামুলক মাইকিং করা হলেও বাস্তবে তা হচ্ছে না। প্রশাসনের দায়সারা ভাব মনে করছেন আম চাষীরা।
আম চাষীরা বলছেন, ‘মৌসুমের শুরু থেকে অনাবৃষ্টি ও প্রচন্ড খরা বিরাজ করছিল। গাছে মুকুলের পরিমান বেশি দেখা দিলেও আম আসার পরিমাণ ছিল কম। ভাল দাম পাওয়ার কথা থাকলেও তার উল্টোচিত্র। আম চাষীদের দীর্ঘদিনের দাবীর প্রেক্ষিতে কেজি দরে আম বেচা-কেনার সিদ্ধান্ত নেয় প্রশাসন। তবে কেজি দরে আম বেচাকেনা চালু হলে লাভবান হবেন চাষীরা।
উপজেলার কোরালডাঙ্গা গ্রামের আম চাষী আব্দুল মতিন বলেন, তিনবিঘা জমিতে আম্রপালি জাতের আমবাগান রয়েছে। প্রচন্ড গরমের কারণে গাছ থেকে আম ঝরে পড়ছে। বাধ্য হয়ে আম নামাতে হচ্ছে। কিন্তু বাজারে আমের দাম ভাল পাওয়া যাচ্ছে না। গত বছর মৌসুমের শুরুতে তিন হাজার টাকার ওপরে মণ বিক্রি হয়েছে। আর এ বছর দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা মণ। আবার ৫০-৫২ কেজিতে মণ হিসেবে বিক্রি করতে হচ্ছে। ব্যবসায়িরা কেজি দরে কিনতে চাচ্ছে না। তাই বাধ্য হয়ে আগের নিয়মে দিতে হচ্ছে।
সাপাহার গোডাউন পাড়ায় বরেন্দ্র এগ্রো পার্ক এর উদ্যোক্তা আম চাষী সোহেল রানা বলেন- কেজি দরে আম বেচাকেনা নিয়ে আম চাষীদের দীর্ঘ দিনের দাবীর প্রেক্ষিতে রাজশাহী বিভাগীয় পর্যায়ে সবার সম্মতিক্রমে এক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। কেজি দরে আম বেচাকেনার কথা থাকলেও বাস্তবে তার উল্টোচিত্র দেখা যাচ্ছে। তারা কেজি দরে আম কিনতে চাচ্ছেন না। আড়ৎদার ও ব্যবসায়িরা সিন্ডিকেট করে আম বেচা-কেনা বন্ধ করে দেয়। প্রশাসন শুধু মাইকিং করে দায় সারতে চাচ্ছেন। কেজি-দরে আম বেচাকেনা বাস্তবায়ন করতে প্রশাসনের সহযোগিতা প্রয়োজন। এটা বাস্তবায়ন হলে আম চাষীরা লাভবান হবে।
সাপাহার আড়ৎদার সমিতির সভাপতি শ্রী কার্তিক সাহা বলেন, ‘প্রশাসনের নিয়ম মানতে চান না ব্যবসায়িরা। কেজি দরে আম না কিনে ৫০-৫২ কেজিতে মণ হিসেবে কিনছেন তারা। ওজন বিভ্রান্ত হওয়ায় অনেক ব্যবসায়ি এখনো এ বাজারে আসছে না। এতে অর্থনৈতিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হতে হচ্ছে। আমের মণের ওজন নির্ধারণ করা না হলে ব্যবসায়িরা আসতে চাচ্ছে না। অন্য জেলাগুলোতে আগের নিয়মে আম বেচা-কেনা হচ্ছে। তিনি বলেন- কেজি দরে আম কেনা হলে বাছাই করে ভালগুলো কেনা হচ্ছে। এতে করে আম চাষীরা চিল্লাপাল্লা করছে। তারাও এ ঝামেলা চাননা বলেন গড় ৫০-৫২ কেজিতে মণ হিসেবে বিক্রি করছে।
নওগাঁর জেলা প্রশাসক মো. আব্দুল আউয়াল বলেন, ‘চলতি মাসের শুরুর দিকে রাজশাহী বিভাগীয় পর্যায়ে কেজি দরে আম বেচা-কেনা নিয়ে উপজেলা প্রশাসন, ব্যবসায়ী, আড়ৎদার ও আম চাষীদের সাথে আলোচনা হয়। ইতোমধ্যে জেলায় আম বেচাকেনা শুরু হয়েছে।’
ঈদুল আজহার আগে-পরে ১৫ দিনে সারা দেশে ৩৭৯টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এসব দুর্ঘটনায় ৩৯০ জন নিহত এবং ১১৮২ জন আহত হয়েছেন। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি এ তথ্য জানিয়েছে।
গতকাল সোমবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য উপস্থাপন করেন সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী।
প্রতিবেদনে তিনি বলেন, একই সময়ে রেলপথে ২৫টি দুর্ঘটনায় ২৫ জন নিহত ও ১২ জন আহত হয়েছেন। নৌ-পথে ১১টি দুর্ঘটনায় ১২ জন নিহত ও ৬ জন নিখোঁজ রয়েছেন। সড়ক, রেল ও নৌ-পথে সর্বমোট ৪১৫টি দুর্ঘটনায় ৪২৭ জন নিহত এবং ১১৯৪ জন আহত হয়েছেন।
মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, সড়কে দুর্ঘটনা ও যাতায়াতের ভোগান্তি কমিয়ে ঈদযাত্রা স্বস্তিদায়ক করতে হলে ঈদের আগে কমপক্ষে ৪ দিনের সরকারি ছুটি থাকা দরকার। ঈদের যাতায়াত ব্যবস্থাপনা নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রয়োজন। সবার আগে আমাদের গণপরিবহন ও ব্যবস্থাপনার সক্ষমতা বাড়াতে হবে, ছোট যানবাহন মহাসড়ক থেকে উচ্ছেদ করতে হবে। প্রশিক্ষিত দক্ষ চালক, ফিটনেসবিহীন যানবাহন বাতিল, মানসম্মত সড়কের পাশাপাশি আইনের সুশাসন নিশ্চিত করা জরুরি।
তিনি আরও বলেন, যাত্রী কল্যাণ সমিতির পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, দেশের সড়ক-মহাসড়কে বৃষ্টির কারণে ছোট-বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এসব গর্তে পড়ে কিছু যানবাহন দুর্ঘটনায় পতিত হয়েছে। ঈদের পরে বেশিরভাগ দুর্ঘটনা বিরামহীন ও বিশ্রামহীনভাবে যানবাহন চালাতে গিয়ে হয়েছে। ফলে এসব দুর্ঘটনায় সিংহভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় খাদে পড়ে ও দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাকের পেছনে লেগে দুর্ঘটনা বেশি ঘটেছে। অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য ও পথে পথে যাত্রী হয়রানি এবারের ঈদেও চরমে ছিল। গণপরিবহনগুলোতে ঈদকে কেন্দ্র করে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্যের কারণে বাসের ছাদে, ট্রেনের ছাদে, খোলা ট্রাকে, পণ্যবাহী পরিবহনে যাত্রী হয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দরিদ্র লোকজনদের বাড়ি যেতে হয়েছে।
দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল ও সংলগ্ন এলাকায় আবারও একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হয়েছে, যার বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। পাশাপাশি মৌসুমি বায়ু দেশের দক্ষিণাঞ্চলে সক্রিয়, অন্যান্য অঞ্চলে মোটামুটি সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে তা প্রবল অবস্থায় রয়েছে। এর প্রভাবে সারা দেশে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বাড়ার পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
আজ (মঙ্গলবার) সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণও হতে পারে।
এ ছাড়া আবহাওয়াবিদ মো. তরিফুল নেওয়াজ কবিরের সই করা পৃথক এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, আজ সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে যশোর, কুষ্টিয়া, ফরিদপুর, খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, নোয়াখালী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার অঞ্চলের ওপর দিয়ে দক্ষিণ অথবা দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে ঘণ্টায় ৪৫ থেকে ৬০ কিলোমিটার বেগে অস্থায়ীভাবে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রবৃষ্টি হতে পারে।
এসব এলাকার নদীবন্দরগুলোকে ১ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
আগামীকাল সকাল ৯টার মধ্যে সারা দেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে বলে বলেও নিয়মিত আবহাওয়া বুলেটিনে জানানো হয়েছে। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, তাপমাত্রা কমার এই ধারা আগামীকালও অব্যাহত থাকতে পারে এবং তার পরের অন্তত তিন দিন প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
অন্যদিকে, বৃষ্টিপাত নিয়ে আগামী তিন দিনের পূর্বাভাসে রাষ্ট্রীয় সংস্থাটি জানিয়েছে, বুধবার সকাল ৯টা থেকে পরের ২৪ ঘণ্টায় রংপুর, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং রাজশাহী ও ঢাকা বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেইসঙ্গে সারা দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে।
বৃহস্পতিবার এবং শুক্রবারও একই ধরনের আবহাওয়া থাকতে পারে। অর্থাৎ রংপুর, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং রাজশাহী ও ঢাকা বিভাগের অনেক জায়গায় দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। পাশাপাশি দেশের কিছু স্থানে মাঝারি ধরনের ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণের সম্ভাবনাও রয়েছে।
বৃষ্টিপাতের এই প্রবণতা শনিবার, এমনকি তার পরের পাঁচ দিনও অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।
বিতর্কিত তিন জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনে জড়িত সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার, নির্বাচন কমিশনারগণ ও নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সচিবদের ভূমিকা তদন্তে অবিলম্বে একটি কমিটি গঠনের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস।
আজ সোমবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের এক বৈঠকে এ সংক্রান্ত আলোচনা শেষে এ নির্দেশ দেন প্রধান উপদেষ্টা ও কমিশন প্রধান প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ, সদস্য ড. বদিউল আলম মজুমদার, ড. ইফতেখারুজ্জামান, সফর রাজ হোসেন ও ড. মোহাম্মদ আইয়ুব মিয়া। অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব সিরাজ উদ্দিন মিয়া ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার।
বৈঠকে কমিশন সদস্যগণ জুলাই সনদ তৈরির কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে প্রধান উপদেষ্টাকে অবহিত করেন। কমিশনের সহ-সভাপতি প্রফেসর আলী রীয়াজ বলেন, ‘বেশকিছু বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে। খুব শিগগিরই সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে সনদ চূড়ান্ত করে ফেলা সম্ভব হবে।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘সবাই জুলাই সনদের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। আমি আশা করি আগামী জুলাই মাসের মধ্যে আমরা এটি জাতির সামনে উপস্থাপন করতে পারব।’
বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা তাঁর লন্ডন সফরের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে বলেন, ‘লন্ডনে বাংলাদেশি কমিউনিটির যাদের সঙ্গেই দেখা হয়েছে তারা সংস্কার নিয়ে জানতে চেয়েছে। বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা খুব আগ্রহী। তারা বিস্তারিতভাবে ঐকমত্য কমিশনের কাজ নিয়ে আমার সঙ্গে আলোচনা করেছে, মতামত দিয়েছে। যেখানেই গেছি সেখানকার প্রবাসী বাংলাদেশিরা আমাকে জিজ্ঞেস করছেন, ‘আমরা আগামী নির্বাচনে ভোট দিতে পারব তো?’ আমাদের প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিতের জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে হবে। পোস্টাল ব্যালট এবং আর কী কী অপশন আছে সেগুলো নিয়ে ভাবতে হবে, সংশ্লিষ্টদের সাথে আলোচনায় বসতে হবে।’
বৈঠকে নির্বাচন কমিশন সংস্কার কমিশন প্রধান বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘সকল রাজনৈতিক একমত হয়েছে যে, অতীতের তিনটি বিতর্কিত নির্বাচন আয়োজনে কর্মকর্তাদের ভূমিকা তদন্ত ও জবাবদিহিতার আওতায় আনা প্রয়োজন।’
কীটনাশক ও বিষমুক্ত ফল, সবজি ও ফসল আবাদের লক্ষ্যে ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ায় প্রোগ্রাম অন এগ্রিকালচারাল অ্যান্ড রুরাল ট্রান্সফরমেশন ফর নিউট্রিশন, এন্টারপ্রেনরশিপ অ্যান্ড রেসিলিয়েন্স ইন বাংলাদেশ (পার্টনার) এর আওতায় পার্টনার কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হয়েছে।
গতকাল সোমবার (১৬ জুন) উপজেলা কৃষি বিভাগের আয়োজনে উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে এ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. আরিফুল ইসলামের সভাপতিত্বে এতে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খামারবাড়ি ময়মনসিংহের উপ-পরিচালক ড. মোছাঃ নাছরিন আক্তার বানু।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি ফসলি জমিতে কীটনাশক ব্যবহারে স্বাস্থ্য সুরক্ষায় শরীরে পিপিই ও মাস্ক পড়ে কীটনাশক স্প্রে করার বিষয়ে গুরুত্বরোপ ও নির্দেশনা প্রদান করেন।
ড. মোছাঃ নাছরিন আক্তার বানু বলেন, ফুলবাড়িয়া উপজেলার মাটি অনেক ভালো। ফসলি জমিতে আগাছা সরাতে হবে, তাহলে আবাদ আরও বেশি ভালো হবে। অতিরিক্ত রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহারে মানবদেহে মারাত্মক প্রভাব পড়ে।
এসময় তিনি আরও বলেন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কীটনাশক ও বিষমুক্ত ফল, সবজি ও ফসল উৎপাদনে বিশেষ কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। মাঠপর্যায়ে এ কার্যক্রম ইতিমধ্যেই ভালো সাড়া ফেলেছে।
এতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন, উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ নূর মোহাম্মদ। অন্যান্যদের মধ্যে আরও বক্তব্য রাখেন কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার আ র ম আতিকুর রহমান, বাকতা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ফজলুল হক মাখন, কালাদহ ইউনিয়নের নজরুল ইসলাম মাস্টার, কৃষক মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান, কৃষানী আকলিমা আক্তার প্রমুখ।
বাংলাদেশ বিমান বাহিনী মধ্য আফ্রিকা প্রজাতন্ত্রে (Central African Republic) নিয়োজিত জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে (MINUSCA), Bangladesh Armed Military Utility Helicopter Unit-5 (BANAMUHU-5) কন্টিনজেন্ট এর মোট ১২৫ জন সদস্য প্রতিস্থাপন করতে যাচ্ছে। বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চীফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন, বিবিপি, ওএসপি, জিইউপি, এনএসডব্লিউসি, পিএসসি সোমবার (১৬-৬-২০২৫) বিমান বাহিনী সদর দপ্তর-এ মধ্য আফ্রিকা প্রজাতন্ত্রগামী কন্টিনজেন্ট (BANAMUHU-6) এর সদস্যদের উদ্দেশ্যে দিক নির্দেশনামূলক বক্তব্য প্রদান করেন।
এসময় তিনি জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে সততা, পেশাদারিত্ব ও আন্তরিকতার সাথে অর্পিত দায়িত্ব পালন করে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী তথা দেশের সুনাম বয়ে আনার জন্য কন্টিনজেন্ট সদস্যদের প্রতি আহবান জানান। পরিশেষে তিনি মিশনের সাফল্য কামনায় আয়োজিত এক বিশেষ মোনাজাতে অংশগ্রহণ করেন।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মাঝে বিমান বাহিনীর প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসারগণ, ঢাকাস্থ বিমান ঘাঁটি দ্বয়ের এয়ার অধিনায়ক এবং বিমান সদর ও ঘাঁটির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
এখানে উল্লেখ্য যে, বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর সমরাস্ত্র ব্যবহারে সক্ষম এবং নাইটভিশন প্রযুক্তি সমৃদ্ধ ০৩ টি এমআই-১৭১ হেলিকপ্টার ও বিভিন্ন গ্রাউন্ড সাপোর্ট ইকুইপমেন্ট মধ্য আফ্রিকা প্রজাতন্ত্রে MINUSCA জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে নিযুক্ত রয়েছে। BANAMUHU-6 কন্টিনজেন্টের নেতৃত্বে থাকবেন এয়ার কমডোর ইমরানুর রহমান, বিইউপি, এএফডব্লিউসি, পিএসসি, জিডি(পি)। আগামী ১৯ জুন ২০২৫ তারিখে কন্টিনজেন্ট এর সদস্যগণ হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর, ঢাকা হতে মধ্য আফ্রিকা প্রজাতন্ত্রের উদ্দেশ্যে যাত্রা করবেন।
দ্বিতীয় মেয়াদে গত জানুয়ারিতে শপথ নেওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছিলেন, তিনি ‘সব যুদ্ধ বন্ধের’ পক্ষে থাকবেন এবং একজন ‘শান্তির দূত ও ঐক্য প্রতিষ্ঠাকারী’ হিসেবে নিজের উত্তরাধিকার রেখে যাবেন।
কিন্তু মাত্র ছয় মাসের মাথায় মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে ছোড়া শুরু হয়েছে ক্ষেপণাস্ত্র। গত শুক্রবার ভোরে ইরানে ইসরায়েলি হামলার পর মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে ছড়িয়ে পড়তে পারে—এমন এক সর্বাত্মক যুদ্ধের ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। আর শেষ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রকেও এটি সংঘাতে টেনে নিতে পারে।
ইসরায়েলের ওই হামলাকে ট্রাম্প প্রায় প্রকাশ্যেই সমর্থন জানিয়েছেন। ফলে নিজেকে শান্তির দূত হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার তার প্রতিশ্রুতিই এখন সবচেয়ে বড় পরীক্ষার সম্মুখীন।
ট্রাম্পের এ সমর্থন তার অনুগত রাজনৈতিক গোষ্ঠীকে, যাদের অনেকে ডানপিন্থি রাজনীতিক ও ভাষ্যকার, বিভক্ত করে ফেলেছে। তারা মনে করছেন, ইসরায়েলকে বিনা প্রশ্নে সমর্থন দেওয়া প্রকৃতপক্ষে ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতির পরিপন্থি। অথচ ট্রাম্পের মূল নির্বাচনী স্লোগান ছিল এটি।
আন্তর্জাতিক কূটনীতিবিষয়ক মার্কিন গবেষণাপ্রতিষ্ঠান কুইন্সি ইনস্টিটিউটের নির্বাহী সহসভাপতি ত্রিতা পারসি বলেন, ‘আমেরিকা ফার্স্ট ঘাঁটির (এ নীতির সমর্থক গোষ্ঠী) অনেক অংশে এখন প্রবল ক্ষোভ ও বিশ্বাসঘাতকতার অনুভূতি বিরাজ করছে। কারণ, তারা সত্যিকার অর্থেই যুক্তরাষ্ট্রকে আর কোনো যুদ্ধে জড়িয় পড়া বা তাতে সমর্থন দেওয়ার বিষয়টি দেখতে চায় না।’
ত্রিতা পারসি আরও বলেন, ‘তারা (এ গোষ্ঠী) এখন ইসরায়েল নিয়ে ব্যাপক সংশয়ের মধ্যে পড়েছে। তারা মনে করে, এ ধরনের যুদ্ধই রিপাবলিকান প্রেসিডেন্টদের ব্যর্থ ও তাদের দেশের অভ্যন্তরীণ অগ্রাধিকারগুলো ক্ষুণ্ন করেছে।’
ইরানে গত শুক্রবার ইসরায়েলি হামলার পর যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকজন রক্ষণশীল নেতাও এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তাঁদের মতে, যুক্তরাষ্ট্র যেন এমন কোনো যুদ্ধে না জড়ায়, যা তার স্বার্থ রক্ষা করবে না।
ট্রাম্পের ‘মেক আমেরিকা গ্রেট এগেইন’ (এমএজিএ) আন্দোলনের বড় মুখ ও প্রভাবশালী রক্ষণশীল ভাষ্যকার টাকার কার্লসন বলেন, ইসরায়েলের বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ‘যুদ্ধপিপাসু সরকার’কে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন দেওয়া উচিত নয়।
‘ইসরায়েল চাইলে যুদ্ধ করতেই পারে। ওটা স্বাধীন রাষ্ট্র। তারা যা খুশি করতে পারে। কিন্তু সেটা যেন যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন নিয়ে না হয়,’ গত শুক্রবার ‘টাকার কার্লসন নেটওয়ার্ক’–এর সকালের নিউজলেটারে লেখা হয়।
নিউজলেটারে আরও বলা হয়, ইরানের সঙ্গে (যুক্তরাষ্ট্রের) যুদ্ধ হলে তা ‘পরবর্তী প্রজন্মের সন্ত্রাসবাদের জন্ম দিতে পারে’ কিংবা একটি বিদেশি এজেন্ডার নামে হাজার হাজার মার্কিনের মৃত্যু ডেকে আনতে পারে।
‘এ কথা বলাই বাহুল্য যে এ ধরনের কোনো সম্ভাবনাই যুক্তরাষ্ট্রের জন্য লাভজনক হবে না। কিন্তু অন্য একটি পথও আছে: ইসরায়েলকে বাদ দাও। ওরা নিজেরা যুদ্ধ করুক,’ লেখা হয় নিউজলেটারে।
রিপাবলিকান সিনেটর র্যান্ড পলও ইরানের সঙ্গে যুদ্ধে জড়ানো নিয়ে সতর্ক করেছেন এবং ওয়াশিংটনের যুদ্ধ–সমর্থক রক্ষণশীলদের কঠোর সমালোচনা করেছেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে র্যান্ড পল লিখেছেন, ‘মার্কিন জনগণ যে যুদ্ধের শেষ নেই, তার ঘোরবিরোধী এবং ২০২৪ সালে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ভোট দিয়ে তাঁরা সেটাই দেখিয়েছেন।’
‘আমি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে অনুরোধ করব যেন তিনি তার অবস্থানে অটল থাকেন, যুক্তরাষ্ট্রকে অগ্রাধিকার দেন এবং অন্য দেশের মধ্যে চলা কোনো যুদ্ধে জড়িত না হন,’ বলেন র্যান্ড পল।
ডানপন্থী কংগ্রেস সদস্য মারজোরি টেলর গ্রিনও একটি বার্তায় ইঙ্গিত দিয়েছেন যে তিনি হামলার পক্ষে নন। এর আগেও তিনি ট্রাম্পকে সতর্ক করেছিলেন, তেহরান পারমাণবিক অস্ত্রের অধিকারী হচ্ছে—এমন ইসরায়েলি অভিযোগের ভিত্তিতে যেন ইরানে হামলা চালানো না হয়।
মারজোরি টেলর এক্সে লেখেন, ‘আমি শান্তির জন্য প্রার্থনা করছি। শান্তি। এটাই আমার আনুষ্ঠানিক অবস্থান।’
যদিও ইসরায়েলের সমর্থকেরা ইরানের সম্ভাব্য পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির হুমকির কথা উল্লেখ করে দেশটিতে হামলাকে যৌক্তিক বলে দাবি করছেন; তেহরান বরাবরই এ অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। এমনকি ট্রাম্পের গোয়েন্দাপ্রধান তুলসী গ্যাবার্ডও গত মার্চে এক সাক্ষ্যে বলেছেন, ‘আমাদের মূল্যায়ন অনুযায়ী, ইরান পারমাণবিক অস্ত্র বানাচ্ছে না।’
ইসরায়েলের একনিষ্ঠ সমর্থক হিসেবে পরিচিত রিপাবলিকান কর্মী ও ভাষ্যকার চার্লি কার্কও ইরানের সঙ্গে যুদ্ধে জড়ানো নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন।
নিজ পডকাস্টে কার্ক বলেন, ‘আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি, আমাদের ‘মেক আমেরিকা গ্রেট এগেইন’ ঘাঁটি কোনো যুদ্ধই চায় না। তারা যুক্তরাষ্ট্রের সম্পৃক্ততা চায় না (ইরান-ইসরায়েল সংঘাতে)। তারা চায় না যুক্তরাষ্ট্র এতে জড়িয়ে পড়ুক।’
গত শুক্রবার ইসরায়েল যখন ইরানের সামরিক ঘাঁটি, পারমাণবিক স্থাপনা ও আবাসিক এলাকায় বোমাবর্ষণ শুরু করে, তার কয়েক ঘণ্টা আগেই ট্রাম্প বলেছিলেন, তেহরানের সঙ্গে কূটনৈতিক সমঝোতায় পৌঁছাতে তিনি আগ্রহী।
গত বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প বলেন, ‘বিষয়টা খুবই সহজ। জটিল কিছু না। ইরান পারমাণবিক অস্ত্র রাখতে পারে না—এই একটাই কথা। তার বাইরে আমি চাই, তারা সফল হোক। আমরা সাহায্য করব।’
গতকাল রোববার ওমানে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ বিষয়ে ষষ্ঠ দফা আলোচনা হওয়ার কথা ছিল।
তবে শুক্রবার ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, তিনি আগেই ইসরায়েলের হামলার ব্যাপারে জানতেন। অবশ্য তিনি হামলা চালাতে ইসরায়েলকে নিষেধ করেছিলেন কি না, তা বলেননি। যদিও মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ইসরায়েলের হামলাকে ‘একতরফা’ বলেই উল্লেখ করেছেন।
অথচ ট্রাম্প ইরানের ওপর হামলার দায় চাপিয়ে বলেন, দেশটির পারমাণবিক কর্মসূচি বন্ধে একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর জন্য তার আহ্বানে ইরানের কর্মকর্তাদের সাড়া দেওয়া উচিত ছিল।
ট্রাম্প পরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লেখেন, ‘আমি আগেই বলেছিলাম, তাদের জন্য এটা হবে এমন কিছু, যা তারা কল্পনাও করতে পারেননি। যুক্তরাষ্ট্র তৈরি করে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী ও জীবনঘাতী সামরিক সরঞ্জাম—অনেক অনেক বেশি। আর ইসরায়েলের কাছে এর অনেক কিছুই আছে, আরও আসছে।’
ত্রিতা পারসি বলেন, শুরুতে ট্রাম্প ইরানের সঙ্গে সমঝোতা চেয়েছিলেন, কিন্তু তার চরম শর্ত—ইরানকে সম্পূর্ণভাবে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ বন্ধ করতে হবে—আলোচনায় অচলাবস্থা তৈরি করে।
‘এটা অনুমেয় ছিল যে এ চূড়ান্ত দাবির ফলে আলোচনা ব্যর্থ হবে। ইসরায়েল সেই ব্যর্থতাকে কাজে লাগিয়ে ট্রাম্পকে সামরিক পথ বেছে নিতে বাধ্য করেছে,’ বলেন ত্রিতা পারসি।
পারসি আরও বলেন, ‘গত সপ্তাহজুড়ে ট্রাম্প কূটনৈতিক উদ্যোগের পক্ষে কথা বললেও, তিনি জানতেন ইসরায়েলের হামলা আসন্ন। এভাবে তিনি সবাইকে ভুল বার্তা দিয়েছেন যে হামলা হবে আলোচনার পরে। অথচ সেটা আগেই হয়েছে।’
ইসরায়েলের হামলার পর কংগ্রেসে কিছুটা সমালোচনা হলেও বহু রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট এই হামলার পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। কিন্তু ট্রাম্পের ঘাঁটির একটি বড় অংশ, বিশেষ করে তরুণ ডানপনন্থিরা, ইসরায়েলকে অন্ধ সমর্থনের বিষয়ে প্রশ্ন তুলছেন।
গবেষণাপ্রতিষ্ঠান ক্যাটো ইনস্টিটিউটের প্রতিরক্ষা ও পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক বিশ্লেষক জন হফম্যান বলেন, ‘তারা (ডানপন্থিরা) রিপাবলিকান পার্টির একটি উল্লেখযোগ্য অংশের প্রতিনিধিত্ব করে, বিশেষত তরুণদের মধ্যে।’
হফম্যান আরও বলেন, ‘পিউ রিসার্চ সেন্টারের এক জরিপ বলছে, ৫০ বছরের নিচের অর্ধেক রিপাবলিকানই এখন ইসরায়েল সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা পোষণ করেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের জনগণ এই নিরন্তর যুদ্ধক্লান্তির মধ্যে হাঁপিয়ে উঠেছেন।’
বিশ্লেষকদের মতে, ইরানে ইসরায়েলি হামলার প্রতি ট্রাম্পের নমনীয় অবস্থান তাঁকে আবারও এমন একটি সংকটের মুখে ফেলেছে, যেটা একসময় বুশ প্রশাসনকে ফেলেছিল।
হফম্যান বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক এবং রিপাবলিকান পার্টির অভ্যন্তরে দীর্ঘদিন ধরে ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ কামনা করা প্রভাবশালীদের উপস্থিতি, যেমন লিন্ডসে গ্রাহাম—এসবই বড় ঝুঁকির সৃষ্টি করছে।’
‘এ পরিস্থিতি যুক্তরাষ্ট্রকে সরাসরি যুদ্ধে জড়িয়ে ফেলার আশঙ্কা অনেক বেশি,’ বলেন হফম্যান।
সূত্র: আল জাজিরা
মন্তব্য