রাজধানীর নয়াপল্টনে পুলিশ-বিএনপি নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষের পর ওই এলাকার সড়কজুড়ে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হচ্ছে। পুলিশ জানিয়েছে, বিএনপি কার্যালয়ের আশপাশের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তার বিষয় মাথায় রেখে ক্যামেরাগুলো বসানো হচ্ছে।
শুক্রবার সকালে নয়াপল্টনজুড়ে সিসিটিভি ক্যামেরা বসাতে দেখা গেছে। বৃহস্পতিবার রাত থেকে এই কাজ শুরু হয়েছে।
নাইটিঙ্গেল মোড় থেকে ফকিরাপুল মোড় পর্যন্ত সড়কের ল্যাম্পপোস্টে সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সিসিটিভি বসানোর দায়িত্বে থাকা একজন বলেন, ‘এই এলাকায় সিসিটিভি ক্যামেরা আগে থেকেই কিছু ছিল। সেগুলো চেক করা হচ্ছে। নতুন করে আরও কিছু সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো হচ্ছে।’
ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার (অপারেশন) বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, ‘ডিএমপির নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় এই সড়কজুড়ে সিসি ক্যামেরা বসানো হচ্ছে। বিএনপির কার্যালয়ের পাশাপাশি এখানে অনেক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান আছে, তাদের নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনায় ক্যামেরাগুলো স্থাপন করা হচ্ছে।’
সিসি ক্যামেরা লাগানোর পাশাপাশি নাইটিঙ্গেল মোড় ও ফকিরাপুল মোড়ের রাস্তায় ব্যারিকেড দিয়েছে পুলিশ। এ দুই মোড়ের মধ্যবর্তী জায়গায় কোনো যান চলাচল করতে দেয়া হচ্ছে না।
এই অংশে সব দোকানপাটও বন্ধ রয়েছে। ওই এলাকায় কোনো সাধারণ মানুষকে ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না। তাদের অন্য এলাকা দিয়ে যেতে বলা হচ্ছে।
নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের দাবিতে বিএনপির বিভাগীয় ধারাবাহিক সমাবেশের অংশ হিসেবে ১০ ডিসেম্বর যে সমাবেশটি ঢাকায় ডাকা হয়েছে, সেই সমাবেশ ঘিরে রাজনৈতিক উত্তাপের মধ্যে বুধবার নয়াপল্টন হয়ে ওঠে রণক্ষেত্র।
বিএনপি শনিবারের সমাবেশটি করতে চায় নয়াপল্টনের দলীয় কার্যালয়ের সামনে, কিন্তু পুলিশ অনুমতি দিয়েছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। সেখানে যেতে রাজি না হয়ে অনুমতি ছাড়াই সমাবেশ করার কথা জানায় বিরোধী দলটি। বুধবার সকাল থেকে সেখানে অস্থায়ী মঞ্চ বানিয়ে চলতে থাকে বক্তব্য। দুপুরের পর সামনের সড়কে অবস্থানকারী নেতা-কর্মীদের পুলিশ সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করলে শুরু হয় সংঘর্ষ।
বিএনপি কর্মীদের ইটপাটকেলের জবাবে পুলিশ ব্যবহার করে কাঁদানে গ্যাস আর রাবার বুলেট। একজনের প্রাণহানির পর ৩০০ জনকে করা হয় আটক, যাদের মধ্যে আছেন ১০ ডিসেম্বর থেকে বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নির্দেশে দেশ চালানোর ঘোষণা দেয়া আমান উল্লাহ আমান ও শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি। গ্রেপ্তার হন কেন্দ্রীয় নেতা রুহুল কবির রিজভী।
সন্ধ্যায় তালা ভেঙে কার্যালয়ে প্রবেশ করে পুলিশ। তল্লাশিতে ককটেল উদ্ধারের কথাও জানানো হয়। রাতে সেগুলোর বিস্ফোরণ ঘটানো হয়।
আরও পড়ুন:দেশের সরকারি-বেসরকারি স্কুলে প্রথম থেকে নবম শ্রেণিতে ভর্তির ডিজিটাল লটারি আগামী ১৭ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হবে।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর থেকে মঙ্গলবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের আওতাধীন ২০২৫ শিক্ষাবর্ষে সরকারি-বেসরকারি (মহানগরী ও জেলার সদর উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত) মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রথম শ্রেণি থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের ভর্তি প্রক্রিয়া ডিজিটাল লটারির মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।
ওই সিদ্ধান্তের আলোকে কেন্দ্রীয় ডিজিটাল লটারি প্রক্রিয়ার সঙ্গে অন্তর্ভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রথম শ্রেণি থেকে নবম শ্রেণিতে শিক্ষার্থী ভর্তির লক্ষ্যে সরকারি ও বেসরকারি (মহানগরী ও জেলার সদর উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত) মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নির্বাচন অনুষ্ঠান ১৭ ডিসেম্বর মঙ্গলবার সকাল ১০টায় সেগুনবাগিচায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে অনুষ্ঠিত হবে।
বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীতে গত ১৫ বছরে ৮০ থেকে ৯০ হাজার সদস্যকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে রাজনৈতিক পরিচয়ে। এসব নিয়োগের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট চাকরি প্রার্থীর চৌদ্দ গোষ্ঠীর রাজনৈতিক পরিচয় খুঁজে দেখা হয়েছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী সোমবার সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেছেন।
রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এই সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘গত ১৫ বছরে পুলিশ বাহিনীতে নিয়োগের আগে নানাভাবে তাদের তথ্য যাচাই করা হয়েছে। নিয়োগ প্রার্থী কোন দলের, তার বাবা কোন দলের, দাদা কোন দলের এবং আরও পূর্বপুরুষ কোন দলের তা খবর নেয়া হয়েছে। দুই লাখ পুলিশের মধ্যে ৮০ থেকে ৯০ হাজার পুলিশ সদস্য এভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েছেন।’
তিনি বলেন, ‘এই ৮০ থেকে ৯০ হাজার পুলিশ সদস্যকে তো বলতে পারি না গো হোম (বাসায় ফিরে যাও)। তবে যারা দুষ্টু, যারা পেশাদারত্বের বাইরে গিয়ে নানা অপকর্মে লিপ্ত হয়েছিলেন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।’
ডিএমপির এই শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, ‘পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে যখন পুলিশ ইনঅ্যাক্টিভ হয়ে পড়ে, তখন ঢাকা শহরে ডাকাতি, লুটপাট শুরু হয়। তখন ৮০ বছরের বৃদ্ধও লাঠি নিয়ে পাহারা দিয়েছেন। তখন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ ট্রমার মধ্যে পড়ে যায়। এরপর সদ্যবিদায়ী ডিএমপি কমিশনারসহ অন্যরা পুলিশকে সক্রিয় করতে কাজ শুরু করেন।’
ঢাকার ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার ওপর জোর দেয়া হয়েছে জানিয়ে ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘ঢাকা শহরের প্রধান সমস্যা ট্রাফিক। এই শহরে বিপুলসংখ্যক ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলাচল করছে। অটোরিকশা যদি বন্ধ না হয় তাহলে ঢাকা শহরের ঘর থেকে বের হলে আর হাঁটার জায়গা থাকবে না। মানুষের মুভমেন্ট বন্ধ হয়ে যাবে।’
তিনি বলেন, ‘ঢাকার ট্রাফিক ব্যবস্থা বিশৃঙ্খল অবস্থায় আছে। তবে ট্রাফিকে শৃঙ্খলা ফেরাতে ইতোমধ্যে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এর জন্য নগরবাসীর সহযোগিতা প্রয়োজন। বিগত সরকার অটোরিকশার অনুমতি দেয়ার কারণেই বাড়ছে অটোর সংখ্যা। অচিরেই এটি কমানো না গেলে ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখে পড়তে হবে নগরবাসীকে। এ বিষয়ে সরকারের সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ করেছি।’
রাজধানীতে ইদানীং ছিনতাইয়ের ঘটনা বেড়েছে উল্লেখ করে ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘নগরবাসীর কাছ থেকে ছিনতাইয়ের অনেক অভিযোগ আসছে। ছিনতাই প্রতিরোধে ডিবি ও থানা পুলিশকে সক্রিয় করা হয়েছে যাতে রোধ করা সম্ভব হয়।’
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ঢাকা মহানগর পুলিশ পেশাদারত্বের বাইরে গিয়ে কাজ করেছে বলে মন্তব্য করেন ডিএমপি কমিশনার। তিনি বলেন, এ ঘটনায় আমি ঢাকাসহ দেশবাসীর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি। ওই সময়ের অপেশাদার আচরণের কারণে বদলি ও দোষী সদস্যদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।’
আরও পড়ুন:এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে রোববার সকাল ৮টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় দেশে দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। এই সময়কালে ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৪৭৮ জন।
সোমবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ অ্যান্ড ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ডেঙ্গু জ্বরে নতুন করে আক্রান্তদের মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২৯৫ জন। আর ঢাকার বাইরের হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হয়েছেন আরও ১৮৩ জন ডেঙ্গু রোগী।
চলতি বছরে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত ৫৩১ জনের মৃত্যু হয়েছে, যাদের মধ্যে ৪৮ দশমিক ৪ শতাংশ পুরুষ ও ৫১ দশমিক ৬ শতাংশ নারী।
বিজ্ঞপ্তির তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন মোট ৯৬ হাজার ৭০৬ জন। তাদের মধ্যে ৬৩ দশমিক ১ শতাংশ পুরুষ এবং ৩৬ দশমিক ৯ শতাংশ নারী।
‘আজকের আমলাই ভবিষ্যতের রাজনীতিবিদ বা ব্যবসায়ী। তারা এখন নানা পরিচয়ে মানুষের সামনে হাজির হন, যা সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।’
নাগরিক প্ল্যাটফর্মের আহ্বায়ক ও সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীত ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য সোমবার নাগরিক সম্মেলনে এসব কথা বলেন।
‘সুশাসনের জন্য জনকেন্দ্রিক সংস্কার: সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর আকাঙ্ক্ষা’ শীর্ষক এই সম্মেলনের আয়োজন করে এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম, বাংলাদেশ।
বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) ৮ ও ৯ ডিসেম্বর জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি), বাংলাদেশ এবং সুইস এজেন্সি ফর ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড কো-অপারেশনের (এসডিসি) সহযোগিতায় এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
সম্মেলনে দেবপ্রিয় বলেন, ‘আজকে যিনি আমলা, কাল তিনি রাজনীতিবিদ, পরের দিন তিনি ব্যবসায়ী। এটাই তো সমস্যা হয়ে গেছে। ওনারা বহুরূপে এখন আমাদের সামনে আসেন। অনেক ক্ষেত্রে এই তিনটি একই হয়ে গেছে।’
সম্মেলনে অংশগ্রহণকারীদের উদ্দেশে প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে তিনি বলেন, ‘কে বেশি ক্ষমতাধর- আমলা, রাজনীতিবিদ নাকি ব্যবসায়ী?’
এই প্রশ্নের জবাবে অংশগ্রহণকারীরা সমন্বরে বলেন- আমলারা।
ড. দেবপ্রিয় বলেন, ‘আমরা সারা বাংলাদেশ ঘুরে আলোচনা করেছি। সেসব আলোচনায় আমলাদের সবচেয়ে বেশি শক্তিশালী হিসেবে বলা হয়েছে। কিন্তু সমস্যাটা হলো অন্য জায়গায়। অনেক ক্ষেত্রে এই তিন পরিচয় একই ব্যক্তির হয়ে গেছে।’
স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করতে একটি স্বাধীন কমিশন গঠনের পরামর্শ দেন তিনি। বলেন, স্বাধীন স্থানীয় সরকার কমিশন হলে সাধারণ অজুহাতে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের বরখাস্তের সংস্কৃতি রোধ করা যায় এবং স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য বাজেট বরাদ্দ দেয়া যায়।
সিপিডির এই সম্মানিত ফেলো রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচনি প্রতীক ব্যবহারের বিধান প্রত্যাহারের সুপারিশ করেন।
সিপিডির সম্মানীত ফেলো রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক রওনক জাহানের সভাপতিত্বে সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন সিপিডির আরেক সম্মানীত ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান, ইউএনডিপির আবাসিক প্রতিনিধি সোনালি দয়ারত্নে প্রমুখ।
আরও পড়ুন:আগামী বুধবার (১১ ডিসেম্বর) রাজধানীর নয়াপল্টন থেকে ভারতের আগরতলা অভিমুখে লং মার্চ করবে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও যুবদল।
সকাল আটটায় দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে এ লং মার্চ শুরু হবে।
নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে জাতীয়তাবাদী যুবদলের সভাপতি মোনায়েম মুন্না এ ঘোষণা দেন।
বাংলাদেশের দূতাবাসে হামলা, পতাকা অবমাননা, ভারতের মিডিয়ায় বাংলাদেশের বিরুদ্ধে চলমান তথ্যসন্ত্রাস এবং বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে অযাচিত হস্তক্ষেপ থেকে বিরত থাকার দাবিতে ঢাকা থেকে আগরতলা পর্যন্ত লং মার্চের ডাক দিয়েছে বিএনপির তিন সংগঠন।
এক বিবৃতিতে বাংলাদেশের সর্বস্তরের ছাত্র, যুবক এবং স্বেচ্ছাসেবী জনতাকে এই লং মার্চে অংশগ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে সংগঠন তিনটি।
বিবৃতিতে বলা হয়, গত ২ ডিসেম্বর ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলায় অবস্থিত বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে ভারতের হিন্দু সংঘর্ষ সমিতির সদস্যরা হামলা চালিয়েছে। এ সময় তারা বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা অবমাননা করেছে, মিশনের সম্পদ নষ্ট করেছে। ভারত সরকার চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে ভিয়েনা কনভেনশনের বাধ্যবাধকতা অনুযায়ী কূটনীতিকদের সুরক্ষা দিতে। এ ছাড়াও গত ২৮ নভেম্বরে কলকাতায়ও একই ধরনের সহিংস ঘটনা ঘটেছে।
এ ছাড়া ভারতের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কতিপয় নেতা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কূটনৈতিক শিষ্টাচার বহির্ভূত উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়েছেন। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেও বাংলাদেশে শান্তিরক্ষী বাহিনী পাঠানোর কথা বলে একদিকে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের অবমাননা করেছেন এবং অন্যদিকে আন্তর্জাতিক আইন সম্পর্কে নিজের অজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। জুলাই আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের পরে ভারতের মিডিয়া বাংলাদেশের বিরুদ্ধে লাগামহীন প্রোপাগান্ডা ছড়াচ্ছে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ভারত ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার পতনকে মেনে নিতে পারছে না। শেখ হাসিনার নির্দেশে দুই হাজারেরও বেশি ছাত্র-জনতাকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে, যাদের মধ্যে রয়েছে রিয়া গোপ, হৃদয় তারুয়া, রুদ্র সেন, দীপ্ত দে, শুভ শীল, তনয় দাসসহ আরও অনেক বীর শহীদ। ভারত গণহত্যাকারী শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দিয়েছে।
এতে উল্লেখ করা হয়, গণহত্যার দায়ে অভিযুক্ত আরও অনেক ব্যক্তি ভারতে আশ্রয় নিয়েছে। ভারত এখন বাংলাদেশি ক্রিমিনালদের আশ্রয়কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। তা ছাড়া বহিষ্কৃত ইসকন নেতা, বাংলাদেশের নাগরিক চিন্ময় দাশের গ্রেপ্তার, তদন্ত ও বিচার সম্পূর্ণ বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়, কিন্তু ভারতের বিভিন্ন পর্যায় থেকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে অযাচিত মন্তব্য করে বিশৃঙ্খল পরিবেশ সৃষ্টি করা হচ্ছে।
গত ৮ ডিসেম্বর ঢাকায় অবস্থিত ভারতীয় হাইকমিশনে বাংলাদেশের কূটনৈতিক মিশনে হামলা, পতাকা অবমাননা, ভারতের মিডিয়ায় বাংলাদেশের বিরুদ্ধে চলমান তথ্যসন্ত্রাস এবং বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে অযাচিত হস্তক্ষেপ থেকে বিরত থাকার দাবিতে স্মারকলিপি দেয় ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দল এবং যুবদল।
আরও পড়ুন:এডিস মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে একদিনে দেশে সাতজনের মৃত্যু হয়েছে। ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে একই সময়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৫৯৬ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর রোববার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে শনিবার সকাল ৮টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়া সাতজনের মধ্যে চারজন পুরুষ ও তিনজন নারী।
চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন মোট ৫২৯ জন। মোট আক্রান্ত হয়েছেন ৯৬ হাজার ২২৮ জন।
রাজধানীর বারিধারায় ভারতীয় হাইকমিশন অভিমুখী বিএনপির তিন সংগঠনের পদযাত্রা রামপুরা ব্রিজের কাছে আটকে দিয়েছে পুলিশ। পরে তিন সংগঠনের পক্ষে একটি প্রতিনিধি দল ভারতীয় হাইকমিশনে গিয়ে স্মারকলিপি দিয়েছে।
আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে মিছিলটি সামনে এগুতে বাধা দেয়া হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে রওনা হয়ে দুপুর ১২টা ৩৫ মিনিটে মিছিলটি রামপুরা ব্রিজে পৌঁছলে বিপুলসংখ্যক পুলিশ ব্যারিকেড দিয়ে অবরোধ করে। এ সময় তিন সংগঠনের নেতাদের সহযোগিতা করার আহ্বান জানায় পুলিশ।
পরে আন্দোলনকারীদের ছয় সদস্যের একটি প্রতিনিধি দলকে স্মারকলিপি দিতে ভারতীয় হাইকমিশনে যাওয়ার অনুমতি দেয়া হয়। প্রতিনিধি দলে ছিলেন- জাতীয়তাবাদী যুবদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি মোনায়েম মুন্না ও সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন, জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এম জিলানী ও সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসান এবং ছাত্রদল সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব ও সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন নাছির।
আগরতলায় বাংলাদেশ মিশনে হামলা ও বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা অবমাননার প্রতিবাদে রোববার সকালে ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশন অভিমুখে রোডমার্চ শুরু করে বিএনপির তিন সহযোগী সংগঠন। বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করতে ভারতীয় ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে এই কর্মসূচি আয়োজন করা হয়। বেলা সাড়ে ১১টায় নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে পদযাত্রা শুরু করেন বিএনপির তিন সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
পদযাত্রা শুরুর আগে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ও তিন সংগঠনের শীর্ষ নেতারা সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন। এতে ভারতের ক্ষমতাসীন দল ও গণমাধ্যম মিথ্যা এবং বিভ্রান্তিকর প্রচারণার মাধ্যমে বাংলাদেশে ধর্মীয় সম্প্রীতি বিনষ্ট করছে উল্লেখ করে এর নিন্দা জানান তারা।
রিজভী বলেন, শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে আনতে ভারতের ক্ষমতাসীন দল বর্তমানে যা করছে তা সরাসরি আগ্রাসন ছাড়া আর কিছুই নয়।
প্রতিবাদ মিছিল শুরুর আগে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘আপনারা (ভারত সরকার) বাংলাদেশের মানুষকে পছন্দ করেন না। আপনারা বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতার প্রতি শ্রদ্ধাশীল নন।’
রিজভী দ্ব্যর্থহীনভাবে বলেন, বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষ দিল্লির আধিপত্য প্রতিহত করতে প্রস্তুত।
তিনি বলেন, ‘আমরা জানি আকাশ ও সমুদ্র থেকে স্থল পর্যন্ত প্রতিটি ক্ষেত্রে আমাদের দেশকে সুরক্ষিত রাখতে কীভাবে অত্যাধুনিক সরঞ্জাম ব্যবহার করতে হয়। আমাদের স্মার্ট সামরিক বাহিনীতে যোগ্য সদস্য রয়েছে।’
সকাল সাড়ে ৯টা থেকে বিএনপির সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের বিএনপি কার্যালয়ের সামনে জড়ো হতে দেখা গেছে। রাজধানীর বিভিন্ন স্থান থেকে ছোট ছোট মিছিল আসতে থাকে। তারা ভারতীয় আধিপত্যবাদী মনোভাবের বিরুদ্ধে স্লোগান সংবলিত ব্যানার ও ফেস্টুন বহন করেন। বিক্ষোভকারীরা বাংলাদেশে ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগান দেন।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য