ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেছেন, অনেক হাসপাতালে টেস্ট বাণিজ্যের কথা শুনে থাকি। চিকিৎসকদের টেস্ট বাণিজ্য নয়, মানুষকে প্রকৃত সেবা দিতে হবে।
রাজধানীর উত্তরায় মেডিক্যাল কলেজ ফর উইমেন এন্ড হসপিটালে এক অনুষ্ঠানে বৃহস্পতিবার তিনি এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন প্রতিষ্ঠানটির এক্সিকিউটিভ চেয়ারম্যান ও সংসদ সদস্য মাহি বি চৌধুরী।
মেয়র বলেন, ‘রোগীকে প্রকৃত সেবা দেয়ার মাধ্যমে চিকিৎসকদের উদাহরণ সৃষ্টি করতে হবে। প্রয়োজনীয় টেস্ট করাতে হবে, তবে অপ্রয়োজনীয় টেস্ট পরিহার করতে হবে।
‘মানবসেবাই পরম ধর্ম। ডাক্তার হতে হলে অনেক পরিশ্রম করতে হয়। মেধাবী শিক্ষার্থীরাই ডাক্তার হয়। মানুষকে ভালোবেসে সুন্দর ব্যবহার করে তাদের সেবা দিতে হবে। প্রান্তিক জনগণের পরিশ্রম ও অবদানের ফলেই দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। স্বল্প খরচে তাদের সেবা নিশ্চিত করতে হবে।’
রাজধানীর উত্তরায় মেডিক্যাল কলেজ ফর উইমেন এন্ড হসপিটালে বৃহস্পতিবার দুপুরে ইন্টার্ণ চিকিৎসকদের শপথ গ্রহন অনুষ্ঠান হয়। সেখানে প্রধান অতিথি ছিলেন মেয়র আতিকুল ইসলাম। তিনি শিক্ষার্থীদের হাতে ক্রেস্ট তুলে দেন।
দেশের জনসংখ্যার ৩৫ দশমিক ৩ শতাংশ বা ৩ কোটি ৭৮ লাখ মানুষ ধূমপানসহ বিভিন্ন তামাকজাত দ্রব্যে আসক্ত। তামাকজনিত রোগে বছরে এক লাখ ৬১ হাজার লোক মারা যায় এবং তামাকজনিত রোগের চিকিৎসায় বছরে প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হয়। এ ছাড়া দেশের মোট মৃত্যুর ৬৭% শতাংশ অসংক্রামক রোগের কারণে হয়। এই অসংক্রামক রোগের পেছনে তামাকের ব্যবহার বহুলাংশে দায়ী।
বৃহস্পতিবার দুপুরে খুলনা সার্কিট হাউজ সম্মেলন কক্ষে ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন বাস্তবায়নে করণীয় বিষয়ে এক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনের মাধ্যমে এ সব তথ্য জানান জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলের কারিগরি উপদেষ্টা সৈয়দ মাহবুবুল আলম।
তিনি বলেন, “আইন অনুযায়ী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, ক্লিনিক, শিশুপার্ক ও খেলাধুলার স্থান থেকে এক শ মিটারের মধ্যে তামাকজাত দ্রব্য বিক্রি নিষেধ। তামাকজাত দ্রব্য অথবা সিগারেট ফেরি করে বা ভ্রাম্যমান দোকানের মাধ্যমে বিক্রি করা যাবে না। সিগারেটের বিজ্ঞাপন প্রচার ও নাটক-সিনেমার দৃশ্যে ধূমপান ও মাদক গ্রহণের দৃশ্য প্রদর্শন করা নিষিদ্ধ। পাবলিক প্লেস, গণপরিবহন, বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি দপ্তরে ‘ধূমপানমুক্ত এলাকা’ সাইন বোর্ড স্থাপনা না করলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আর্থিক জরিমানার মুখোমুখি করা হয়।
“ধূমপান মানে জেনেশুনে বিষপান। তামাকজাত দ্রব্য অথবা ধূমপানের ইতিবাচক কোনো প্রাপ্তি নেই বরং ক্ষতির অনেক দিক রয়েছে। ধূমপায়ী ব্যক্তি নিজে ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং আশপাশে থাকা মানুষদেরও ক্ষতি করে।”
কালের বিবর্তনে তামাকের ব্যবহারেও ভিন্নতা এসেছে বলে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘তামাক, জর্দা, হুক্কা, বিড়ি, সিগারেট পেরিয়ে তরল নিকোটিন বহনকারী ক্ষতিকর ই-সিগারেটের ব্যবহারও এখন দৃশ্যমান।’
এ সময় তামাক চাষ বন্ধের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করেন তিনি। বলেন, ‘তামাক চাষ কৃষি জমির উর্বরতা নষ্ট করে। সরকার ২০৪০ সালের মধ্যে বিড়ি, সিগারেট, জর্দার মতো তামাকজাত দ্রব্যের ব্যবহার পুরোপুরি বন্ধ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হলে দেশের মানুষ তামাকের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা পাবে।’
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলের সহযোগিতায় খুলনা বিভাগীয় প্রশাসন এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন বিভাগীয় কমিশনার মো. জিল্লুর রহমান চৌধুরী।
অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) মো. ফিরোজ শাহের সভাপতিত্বে সেমিনারে বিশেষ অতিথি ছিলেন খুলনার জেলা প্রশাসক খন্দকার ইয়াসির আরেফীন ও বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ের স্থানীয় সরকার দপ্তরের পরিচালক মো. হুসাইন শওকত।
সেমিনারে বিভাগীয় পর্যায়ের বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তা ও এনজিও প্রতিনিধিরা অংশ গ্রহণ করেন।
আরও পড়ুন:সারা দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে দুইজনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এ সময় ১৩৪ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো ডেঙ্গুবিষয়ক বিবৃতিতে বৃহস্পতিবার এ তথ্য জানানো হয়। বুধবারও ডেঙ্গুতে ২ জনের মৃত্যু হয় বলে জানিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
বিবৃতিতে বলা হয়, ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ১২২ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। একই সময়ে ঢাকার বাইরে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১২ জন ডেঙ্গু রোগী।
বর্তমানে সারা দেশে ৫০৬ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। তাদের মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ৪৩৭ ও ঢাকার বাইরের হাসপাতালগুলোতে ৬৯ জন।
এ বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে মোট ২১ জনের।
চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ২৩ নভেম্বর পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ২ হাজার ৮৫৪ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন। তাদের মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ২ হাজার ১১৯ জন ও ঢাকার বাইরে সারা দেশে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ৭৩৫ জন।
ডেঙ্গু থেকে সেরে উঠে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছেন ২ হাজার ৩২৭ জন। এর মধ্যে ঢাকায় ১ হাজার ৬৬৫ জন এবং ঢাকার বাইরে ৬৬২ জন।
আরও পড়ুন:করোনা ভাইরাসের নমুনা পরীক্ষা নিয়ে প্রতারণার মামলায় দণ্ডিত জেকেজি হেলথ কেয়ারের চেয়ারম্যান ডা. সাবরিনা শারমিন হোসেনকে জামিন দিয়েছে হাইকোর্ট।
এই জামিন আদেশের ফলে তার মুক্তিতে বাধা নেই বলে জানিয়েছেন তার আইনজীবী। তবে রাষ্ট্রপক্ষ জানিয়েছে যে আপিলের প্রস্তুতি চলছে।
সোমবার বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামান ও বিচারপতি শাহেদ নূরউদ্দিনের হাইকোর্ট বেঞ্চ ডা. সাবরিনাকে জামিন দেন।
আদালতে জামিন আবেদনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মাসুদুল হক। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সুজিত চ্যাটার্জি বাপ্পী।
আইনজীবী মাসুদুল হক পরে সাংবাদিকদের বলেন, বিচারিক আদালতের দণ্ডের বিরুদ্ধে দায়ের করা আপিল শুনানি না হওয়া পর্যন্ত জামিন দিয়েছে আদালত। একইসঙ্গে জামিন প্রশ্নে রুল জারি করা হয়েছে। এ মামলায় জামিন হওয়ায় এখন তার মুক্তিতে বাধা নেই। কারণ বাকি মামলাগুলোতে তিনি আগেই জামিন পেয়েছেন।
তবে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সুজিত চ্যাটার্জি বাপ্পী জানান, এ জামিন আদেশের বিরুদ্ধে আপিল দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।
ডা. সাবরিনা শারমিন ও প্রতিষ্ঠানটির সিইও আরিফুল চৌধুরীসহ আটজনকে তিনটি পৃথক অভিযোগে গত বছরের ১৯ জুলাই ১১ বছর করে কারাদণ্ড দেন ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তোফাজ্জল হোসেন।
রায়ে দণ্ডবিধির ৪২০ ধারায় প্রত্যেককে তিন বছর কারাদণ্ড ও তিন হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে তিন মাসের সশ্রম কারাদণ্ড, দণ্ডবিধির ৪৬৬ ধারায় প্রত্যেককে চার বছর কারাদণ্ড ও চার হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে চার মাসের সশ্রম কারাদণ্ড এবং দণ্ডবিধির ৪৭১ ধারায় প্রত্যেককে চার বছর কারাদণ্ড ও চার হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও চার মাসের সশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয়।
তিনটি ধারার সাজা পর পর কার্যকর হবে বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়। সে কারণে আসামিদেরকে ১১ বছর করেই সাজা খাটতে হবে। ওই রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্ট বিভাগে আপিল করেন সাবরিনা, সঙ্গে জামিন চেয়ে আবেদন করেন।
মামলা থেকে জানা যায়, করোনার ভুয়া সনদ দেয়া, জালিয়াতি ও প্রতারণার অভিযোগে আরিফুলসহ ছয়জনকে ২০২০ সালের ২৩ জুন গ্রেপ্তার করে তেজগাঁও থানা পুলিশ। গ্রেপ্তারের পর থানা হাজতে থাকা অবস্থায় আরিফুলের ক্যাডার বাহিনী ভাঙচুর ও থানায় হামলা করে পুলিশকে মারধর করে।
এ মামলায় ২০২০ সালের ৫ আগস্ট তাদের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন তদন্ত কর্মকর্তা। এরপর একই বছরের ২০ আগস্ট আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরুর নির্দেশ দেয় আদালত। বিচার শেষে আট আসামিকে সাজা দেয় বিচারিক আদালত।
আরও পড়ুন:গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে সারা দেশে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ১৪১ জন। চলতি বছর এখন পর্যন্ত এটাই একদিনে সর্বোচ্চ ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তির রেকর্ড।
শনিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, ২ জুন সকাল ৮টা থেকে ৩ জুন সকাল ৮টা পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপতালে ভর্তি হয়েছে ১৪১ জন।
একদিনে রেকর্ড সংখ্যক রোগী হাসপাতালে ভর্তি হলেও এ সময়ে কারও মৃত্যু হয়নি।
ঢাকার ভেতরে ভর্তি হয়েছেন ১২৮ জন ডেঙ্গু রোগী আর ঢাকার বাইরে ১৩ জন।
বর্তমানে দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছেন ৩৯৭ জন। তাদের মধ্যে ঢাকার হাসপাতালে ৩৪৫ জন আর ঢাকার বাইরে ৫২ জন।
চলতি বছরে এখন পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ২ হাজার ২৭৯ জন আর চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১ হাজার ৮৬৯ জন। চলতি বছর ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ১৩ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর আরও জানায়, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ডেঙ্গু শনাক্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন ৫৬৬ জন। তাদের মধ্যে মারা যান ৬ জন। এ ছাড়া ফেব্রুয়ারিতে ১৬৬ জন ভর্তি হন, মৃত্যু হয় তিনজনের। মার্চে কারও মৃত্যু না হলেও হাসপাতালে ভর্তি হন ১১১ জন। এপ্রিলে ভর্তি হন ১৪৩ জন আর মৃত্যু হয় দুজনের।
মে মাসে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১ হাজার ৩৬ জন আর চলতি মাসের প্রথম দুইদিনে কারও মৃত্যু না হলেও হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ২৫৭ জন। এর মধ্যে শুক্রবার একদিনে ১১২ রোগী ভর্তির তথ্য দিয়েছিল অধিদপ্তর।
বাংলাদেশে ২০০০ সালে প্রথম ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়। এরপর ২০১৯ সালে সবচেয়ে বেশি রোগী শনাক্ত হয় দেশে। সে বছরে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যা ছিল ১ লাখ ১ হাজার ৩৫৪ জন আর মৃত্যু হয় ১৭৯ জনের।
২০২০ সালে শুরু হয় করোনা, কমে আসে ডেঙ্গুর প্রকোপ। রোগী শনাক্ত হয় ১ হাজার ৪০৫ জন। তাদের মধ্যে মারা যান সাতজন। এ ছাড়া ২০২১ সালে শনাক্ত হয় ২৮ হাজার ৪২৯ জন, মৃত্যু হয় ১০৫ জনের। ২০২২ সালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন মোট ৬২ হাজার। মারা যান ২৮১ জন।
আরও পড়ুন:আসন্ন ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে স্বাস্থ্যসেবা খাতে ৩৮ হাজার ৫২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। বিদায়ী ২০২২-২৩ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ ছিল ৩৬ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকা। সে হিসাবে আগামী অর্থবছরের বাজেটে ৩ দশমিক ২২ শতাংশ বেশি বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে।
জাতীয় সংসদে বৃহস্পতিবার প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপনকালে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এ কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘বিগত বছরের মতো এবারও স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দেয়ার জন্য পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। সে লক্ষ্যে ওষুধ, চিকিৎসা পণ্য এবং কিছু স্বাস্থ্যসেবা পণ্য উৎপাদনের জন্য রেয়াতি হারে কাঁচামাল আমদানির বিদ্যমান সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করছি।’
জাতীয় সংসদে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার বাজেট পেশ করছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এটি অর্থমন্ত্রী হিসেবে তার পঞ্চম এবং বাংলাদেশ সরকারের ৫২তম জাতীয় বাজেট।
দেশের ইতিহাসে এবারের বাজেটই সবচেয়ে বড় আকারের। ১৯৭২-৭৩ অর্থবছরের জন্য তাজউদ্দীন আহমেদ প্রথম ৭৮৬ কোটি টাকার বাজেট উত্থাপন করেছিলেন।
দেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত ৯৫ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। তবে এই সময়ে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে কারও মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি।
এ নিয়ে চলতি বছরের প্রথম পাঁচ মাসে হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা অন্যান্য বছরের একই সময়ের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গছে। এর মধ্যে চলতি মাসে এক হাজার রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
বুধবার অধিদপ্তরের দেয়া বিজ্ঞপ্তি থেকে জানা গেছে, বুধবার সকাল ৮টা পর্যন্ত পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৯৫ জন। এর আগের ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে রোগী ভর্তি হন ৮৪ জন।
গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকার সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে ৮২ জন আর ঢাকার বাইরের হাসপাতালে ১৩ জন ভর্তি হয়েছেন। বর্তমানে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে দেশের সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে মোট ভর্তি রয়েছেন ২৮৩ জন। তাদের মধ্যে ঢাকার হাসপাতালে ২৪২ জন আর অন্যান্য বিভাগের হাসপাতালে ৪১ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন দুই হাজার ২২ জন। তাদের মধ্যে চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন এক হাজার ৭২৬ জন। মারা গেছেন ১৩ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, বছরের শুরুতে জানুয়ারি মাসে ডেঙ্গু শনাক্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন ৫৬৬ জন। তাদের মধ্যে মারা যান ছয়জন। এ ছাড়া ফেব্রুয়ারিতে ১৬৬ জন ভর্তি হন। তাদের মধ্যে মৃত্যু হয় তিনজনের। মার্চে কারও মৃত্যু না হলেও হাসপাতালে ভর্তি হয় ১১১ জন। এপ্রিলে ভর্তি হয় ১৪৩ জন, আর মৃত্যু হয় দুজনের। চলতি মাসে মৃত্যু হয়েছে দুজনের। আর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন এক হাজার ৩৬ জন।
দেশে ২০০০ সালে প্রথম ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়। এরপর ২০১৯ সালে সবচেয়ে বেশি রোগী শনাক্ত হয় দেশে। সে বছর হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যা ছিল এক লাখ ১ হাজার ৩৫৪ জন। তাদের মধ্যে মারা যান ১৭৯ জন। এ ছাড়া ২০২১ সালে শনাক্ত হয় ২৮ হাজার ৪২৯ জন, যাদের মধ্যে মৃত্যু হয় ১০৫ জনের। আর গত বছর ডেঙ্গু শনাক্ত হয় মোট ৬২ হাজার এবং মারা যান ২৮১ জন।
আরও পড়ুন:বর্ষা আসতে আরও বেশ কিছুদিন বাকি। কিন্তু বর্ষার রোগ হিসেবে পরিচিতি পাওয়া ডেঙ্গুর প্রকোপ ইতোমধ্যে বাড়তে শুরু করেছে। একইসঙ্গে হাসপাতালে বাড়ছে এই রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা।
সাধারণত জুন মাসের পর ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা দিলেও এ বছর মে মাস থেকেই এই রোগের প্রকোপ বেড়েছে। গত বছরের তুলনায় মে মাসেই চার থেকে পাঁচ গুণ বেশি ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। ডেঙ্গুর এই আগাম প্রকোপের নেপথ্যে বেশকিছু কারণ উল্লেখ করেছেন সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রের বিশেষজ্ঞরা।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ববিদ কবিরুল বাশার বলেন, ‘আগের বছর ডেঙ্গুর সিজনটা দেরিতে শুরু হয়েছিল। গত বছরের অক্টোবরে বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চসংখ্যক ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। এই ধারাটা নভেম্বর, ডিসেম্বর ও জানুয়ারি পর্যন্ত চলে এসেছে।
‘বর্তমান সময়ে এসে সারা বছরই ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা যাচ্ছে। এর নেপথ্য কারণ হিসেবে যা দেখেছি সেটি হলো রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় নগরায়নের বেশ কিছু পরিবর্তন হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত একদমই বৃষ্টিপাত থাকে না। আমরা বার বার বলে এসেছি যে বৃষ্টির সঙ্গে ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশার একটি সম্পর্ক থাকলেও এখন আর সেটি নেই। ডেঙ্গু এখন আর মৌসম বুঝে হবে না, এটি সারা বছরই বাংলাদেশে থাকবে। বহুতল ভবনগুলোতে পার্কিং স্পেস তৈরি করা হয়েছে। পার্কিংয়ের এই জায়গাতে গাড়ি ধোয়া-মোছা করা হয়। সেখানে যে পানি জমে তাতে আমরা এডিস মশার লার্ভা পাই।
‘একেকটি বহুতল ভবনের নির্মাণ কাজ ১০-১২ বছর ধরে চলে। নির্মাণাধীন সেসব ভবনের বেসমেন্টে আমরা এডিস মশা পাই। ঢাকায় যেসব জায়গায় পানির সংকট আছে, ওয়াসার পানির নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ নেই, সেসব এলাকায় ভবন মালিকরা সার্বক্ষণিক পানির সরবরাহ দেন না। এ অবস্থায় ওইসব ভবনের বাসিন্দারা পাত্রে পানি সংরক্ষণ করে রাখেন। সেখানেও আমরা এডিস মশা পাই।’
কবিরুল বাশার বলেন, ‘এডিস মশার এই যে তিনটি প্রজনন ক্ষেত্রের কথা বললাম সেগুলোর সঙ্গে বৃষ্টিপাতের কোনো সম্পর্ক নেই। এই ক্ষেত্রগুলো সারা বছর বিদ্যমান। বাংলাদেশের তাপমাত্রা সারা বছরই এডিস মশা প্রজননের উপযোগী। তাই বৃষ্টিহীন সময়েও স্থায়ী প্রজনন ক্ষেত্র থাকার কারণে আমাদের দেশে মৌসুম ছাড়াও ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা দিচ্ছে।
‘মে মাসে যখন বৃষ্টি হয়েছে তখন এডিস মশা নতুন প্রজনন ক্ষেত্র পেয়েছে। প্রকৃতিতে যেহেতু এডিস মশা ছিলোই, তাই এদের প্রজনন বৃদ্ধি পেয়েছে জ্যামিতিক হারে। তাই মে মাসেই ডেঙ্গুর প্রকোপ শুরু হয়ে গেছে, যেটা আমাদের দেশে আগে কখনোই ছিল না।’
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার (জাতীয় ম্যালেরিয়া নির্মূল ও এডিসবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি ও প্রোগ্রাম ম্যানেজার, ব্যান-ম্যাল এবং ডেঙ্গু রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা) ইকরামুল হক বলেন, ‘এডিস মশা বংশ বিস্তারের জন্য যে আবহাওয়া দরকার বাংলাদেশে এখন সেটিই বিরাজ করছে। বিগত ৫০ বছরের ইতিহাসে শীর্ষ তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে এ বছরের মার্চ-এপ্রিলে। বলা হচ্ছে, দেশের গড় যে তাপমাত্রা তার চেয়ে এক ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়লে ডেঙ্গু চার থেকে পাঁচ গুণ বাড়তে পারে।
‘গত বছরের তুলনায় এবার মে মাসেই ডেঙ্গু রোগী পাঁচ গুণ বাড়ার প্রথম কারণ আবহাওয়া পরিবর্তন। দ্বিতীয়ত, বাতাসে যে আর্দ্রতা থাকে, সেটি স্বাভাবিক অবস্থায় থাকে ৫০-৮০ শতাংশ। সেটা স্বাভাবিক অবস্থার চেয়ে ২৫-৩০ শতাংশে নেমে এসেছে। এটা এডিস মশার বংশবিস্তারের জন্য খুবই সহায়ক। অর্থাৎ আমাদের দেশের তাপমাত্রা এডিস মশার বংশবিস্তারের উপযোগী।
‘এই আবহাওয়া পরিবর্তনের প্রভাব শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বের সব উষ্ণ দেশেই পড়ছে। আর এর প্রভাবে সেসব দেশেও ডেঙ্গু রোগের প্রকোপ বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা সার্ভে করে দেখেছি, ঢাকা শহরে বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চলছে। সেসব নির্মাণস্থল এবং বিভিন্ন বিল্ডিংয়ে হঠাৎ বৃষ্টিতে পানি জমে থেকে এডিস মশার প্রজনন বাড়ছে।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য