বরগুনা থেকে ঢাকার পথে লঞ্চ ও বাস চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। ঢাকায় ১০ ডিসেম্বর হতে যাওয়া সমাবেশ ঘিরে আতঙ্কের কারণে বৃহস্পতিবার এই দুই পরিবহন বন্ধ রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন দুই পরিবহন সংশ্লিষ্টরা।
তবে বরিশাল বিভাগের অন্য সব জেলায় স্বাভাবিকভাবেই ঢাকার দিকে চলছে বাস ও লঞ্চ।
শিপিং লাইনসের বরগুনা ঘাটের পরিদর্শক এনায়েত হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বরগুনা থেকে ঢাকায় বৃহস্পতিবার লঞ্চ ছেড়ে যায়নি। মাত্র ৪ জন যাত্রী এসেছিলেন ঢাকায় যাওয়ার জন্য।
‘আসলে ঢাকায় বিএনপির সমাবেশকে ঘিরে উত্তেজনার কারণে যাত্রীরা ঢাকায় যাচ্ছে না। এ কারণেই আমরা লঞ্চ বন্ধ রেখেছি। বন্ধ রাখার কোনো সিদ্ধান্ত আমাকে জানানো হয়নি।’
তিনি জানান, বরগুনা থেকে ঢাকায় বন্ধ থাকলেও ঢাকা থেকে লঞ্চ আসছে।
পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি শাহাবুদ্দিন সাবু বলেন, ‘বাস বন্ধের জন্য কেন্দ্র থেকে কোনো ধরনের নির্দেশনা আসেনি। ঢাকায় চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে বাস মালিকেরা গাড়ি ভাঙচুর ও ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার শঙ্কায় রয়েছেন। এ কারণে নিরাপত্তার স্বার্থে বাস চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে।’
তিনি জানান, ১০ তারিখ সমাবেশ শেষ হওয়ার পর সন্ধ্যায় বরগুনা থেকে ঢাকার দিকে বাস চলাচল শুরু হবে।
বরিশাল জেলা বিএনপির নেতা-কর্মীরা জানিয়েছেন, তারা আগেই ঢাকা চলে এসেছেন।
জেলা বিএনপির সদস্য সচিব তারিকুজ্জামান টিটু বলেন, ‘এই মুহূর্তে আমরা নেতা-কর্মীদের নিয়ে ঢাকায় অবস্থান করছি। আমাদের জেলাসহ বিভিন্ন উপজেলা ও অন্যান্য ইউনিট থেকে প্রায় ৩ হাজার নেতা-কর্মী ঢাকায় জমায়েত হয়েছে।’
ঝালকাঠি থেকেও নেতা-কর্মীরা আগেভাগে ঢাকা চলে গেছেন বলে জানিয়েছেন জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম নুপুর।
পিরোজপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আলমগীর হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা জানি এই স্বৈরাচারী সরকার বিএনপির মহাসমাবেশে যেতে বাধা প্রদান করবে, তাই আমরা জেলা থেকে দুই দিন আগেই রওনা হয়েছি। আর বাকি যারা আসতে পারেনি তারাও যত কষ্টই হোক চলে আসবে। কোনো বাধাই আমাদের সমাবেশ আটকাতে পারবে না।’
ভোলা যুব দলের সাবেক যুগ্ম-সম্পাদক নাজিম উদ্দিন নিক্সন বলেন, ‘বরিশালসহ সারা দেশের বিভাগীয় সমাবেশ শান্তিপূর্ণভাবে সফল করতে ভূমিকা রেখেছে যুবদলের নেতা-কর্মীরা। আশা করি ঢাকার সমাবেশ সফল হবে।
‘যদিও পুলিশ আমাদের নেতা-কর্মীদের বিভিন্ন জায়গায় চেকপোস্ট বসিয়ে হয়রানি করছে। তাদের কাছে থাকা মোবাইল নিয়ে যাচ্ছে, আটক করছে। নেতা-কর্মীদের মামলার ভয় দেখাচ্ছে। কোনো ভয়ই দমাতে পারবে না বিএনপির নেতা-কর্মীদের।’
ভোলা জেলা বিএনপির আহবায়ক গোলাম নবী আলমগীর জানান, সমাবেশ সফল কতে তাদের কয়েক হাজার নেতা-কর্মীরা আগেই ঢাকা চলে গেছেন।
প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছেন বরগুনার রুদ্র রুহান, পিরোজপুরের ইমন চৌধুরী, ঝালকাঠির হাসনাইন তালুকদার দিবস ও ভোলার আদিল তপু।
আরও পড়ুন:শেখ হাসিনার সরকার গত ১৫ বছরে কীভাবে অর্থ পাচার করেছে তা পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। তিনি বলেছেন, আগামী প্রজন্ম যাতে এ সম্পর্কে জানতে পারে এবং সচেতন থাকতে পারে সেজন্য এসব তথ্য পাঠ্যপুস্তকে রাখা হবে।
রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রোববার সন্ধ্যায় এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান প্রেস সচিব।
শফিকুল আলম বলেন, আর্থিক খাতে অনিয়ম ও দুর্নীতি তদন্তে গঠিত শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি তিন মাসের অনুসন্ধান প্রতিবেদন আজ সকালে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে জমা দিয়েছে। প্রতিবেদনটি শিগগির জনসাধারণের জন্য প্রকাশ করা হবে।
তিনি বলেন, ক্ষমতা হারানোর কিছুদিন আগেও শেখ হাসিনা সরকার ৬০ হাজার কোটি টাকা ছাপিয়েছিল। মূলত এস আলমকে টাকা পাচারের সুযোগ করে দিতেই এতো পরিমাণ টাকা ছাপানো হয়েছিল।
পাচার হওয়া অর্থ ফেরানোর বিষয়ে প্রেস সচিব বলেন, এই মহাচুরির বিচার অবশ্যই হবে। পাশাপাশি পাচার হওয়া টাকা ফেরানোর চেষ্টা করবে সরকার। আমরা সর্বোচ্চভাবে এই চেষ্টা চালিয়ে যাব।
তিনি বলেন, টাকা চুরি করে কোথায় নিয়ে গেছে, সেটা বের করা এবং টাকা দেশে ফেরানোই সরকারের লক্ষ্য। পাচার হওয়া অর্থ বিদেশ থেকে ফেরত আনার জন্য এফবিআইসহ বিভিন্ন বিদেশি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলোচনা করছে সরকার।
শফিকুল আলম বলেন, শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির পরীক্ষা করা সাতটি প্রকল্পের প্রাথমিক ব্যয় ছিল এক লাখ ১৪ হাজার কোটি টাকা। অতিরিক্ত উপাদান যোগ করে, জমির দাম বেশি দেখিয়ে এবং ক্রয়ের ক্ষেত্রে হেরফের করে প্রকল্পের ব্যয় সংশোধন করে এক লাখ ৯৫ হাজার কোটি টাকা করা হয়। ব্যয়ের সুবিধা বিশ্লেষণ না করেই প্রকল্পের ব্যয় প্রায় ৭০ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে।
কমিটির সদস্য অধ্যাপক এ কে এনামুল হকের রেফারেন্স দিয়ে প্রেস সচিব বলেন, গত ১৫ বছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) সাত লাখ কোটি টাকার বেশি ব্যয় হয়েছে এবং এর ৪০ শতাংশ অর্থ আমলারা লুটপাট করেছেন।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার ডেপুটি প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার ও অপূর্ব জাহাঙ্গীর।
আরও পড়ুন:সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেছেন, দেশের ক্রান্তিলগ্নে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যরা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় দিন-রাত কাজ করছে। সামনে আরও কঠিন সময় আছে। সবাই মিলে কাজ করলে দেশকে এই ক্রান্তিলগ্ন থেকে উদ্ধার করা সম্ভব।
রোববার ঢাকা সেনানিবাসের আর্মি মাল্টিপারপাস কমপ্লেক্সে মুক্তিযোদ্ধা সেনা সদস্যদের সংবর্ধনা এবং সেনাবাহিনীর শান্তিকালীন পদক বিতরণ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
মুক্তিযোদ্ধা সেনা সদস্যদের কাছে দোয়া চেয়ে জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, ‘সামনে আরও সময় আছে। একটু কঠিন সময় পার করতে হবে আমাদের। আমরা যেন দেশ ও জাতিকে একটা ভালো জায়গায়, একটা নিরাপদ জায়গায় নিয়ে যেতে পারি সেজন্য দোয়া করবেন।’
স্বাধীনতাযুদ্ধে অংশগ্রহণ ও দেশ স্বাধীন হওয়ার পর সেনাবাহিনী গঠনে অবদান রাখায় মুক্তিযোদ্ধা সেনা সদস্যদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান সেনাবাহিনী প্রধান।
তিনি বলেন, ‘আপনাদের অবদানের ফলশ্রুতিতেই আজকের এই সেনাবাহিনী দাঁড়িয়ে আছে। সেনাবাহিনী দেশের ক্রান্তিকালে অনেক ভালো কাজ করে যাচ্ছে। দেশ এবং জাতি এই সেনাবাহিনীর কাছে কৃতজ্ঞ। দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার কাজে সেনাসদস্যরা দিন-রাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। তাছাড়াও দেশ ও জাতি গঠনের বিভিন্ন কাজে আমরা নিয়োজিত আছি।’
সেনাপ্রধান বলেন, ‘বিশ্বশান্তি রক্ষায় আমরা ইউএন মিশনে কাজ করে যাচ্ছি। ডিজাস্টার ও রিলিফে কাজ করে যাচ্ছি। আমরা পারদর্শিতা অর্জন করেছি। এটা সম্ভব হয়েছে আপনাদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টার ফলে। আপনারা যেভাবে আমাদের প্রশিক্ষিত করেছেন, যেভাবে মোটিভেটেড করেছেন, যেভাবে আমাদের দিকনির্দেশনা দিয়েছেন, তার ফলশ্রুতিতে সেনাবাহিনী আজ বর্তমান জায়গায় আছে। এর কৃতিত্ব, অবদান আপনাদের।’
শান্তিকালীন পদক বিজয়ীদের অভিনন্দন জানিয়ে সেনাপ্রধান বলেন, ‘আমরা সবাই মিলে যদি কাজ করি ইনশাআল্লাহ দেশকে এই ক্রান্তিলগ্ন থেকে উদ্ধার করতে সক্ষম হবো। একটা শান্ত, সুশৃঙ্খল ভবিষ্যতের দিকে যেতে সক্ষম হবো।’
২০২৩-২৪ অর্থবছরে শান্তিকালীন সময়ে বিভিন্ন বীরত্বপূর্ণ কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ ২৮ সেনা সদস্যকে পদক পরিয়ে দেন সেনাপ্রধান। তাদের মধ্যে পাঁচজন সেনাবাহিনী পদক, পাঁচজন অসামান্য সেবা পদক ও ১৮ জন বিশিষ্ট সেবা পদক অর্জন করেন।
অনুষ্ঠানে খেতাবপ্রাপ্ত ও মুক্তিযোদ্ধা সেনা সদস্য এবং তাদের নিকটাত্মীয়দের সঙ্গে কুশলাদি বিনিময় ও শুভেচ্ছা উপহার দেন জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান।
আরও পড়ুন:সিভিল সার্ভিস থেকে ‘ক্যাডার’ শব্দটি বাদ দেয়ার সুপারিশ করবে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন।
রোববার দুপুরে সচিবালয়ে কমিশনের ১২তম বৈঠক শেষে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোখলেস উর রহমান এ কথা জানান।
তিনি বলেন, ‘ক্যাডার শব্দটি নেতিবাচক হওয়ায় জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন এই সুপারিশ করবে। কমিশন অনেকগুলো সংস্কারের প্রস্তাব দেবে। ক্যাডার শব্দটি বাদ দিয়ে যার যে সার্ভিস যেমন- সিভিল সার্ভিস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন, সিভিল সার্ভিস হেলথ, সিভিল সার্ভিস অ্যাগ্রিকালচার- এ রকম। এটা আমাদের বড় সংস্কার।’
ডিসি শব্দের বিষয়ে মোখলেস উর রহমান বলেন, ‘জেলা প্রশাসক ব্রিটিশদের সৃষ্টি। এই শব্দের বাইরে আরও অনেক শব্দ আছে যেমন- কালেক্টর, ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট। এসব বিষয়ে সাধারণ মানুষ জানতে চায়। আমরা এসব নিয়ে সুপারিশ দেব। তবে সরকার সেটাই নেবে যেটা দেশের জনগণ চায়।’
জেলা প্রশাসক নাম পরিবর্তন হবে কি না- জানতে চাইলে সিনিয়র সচিব বলেন, ‘অনেকে বলেছেন জনপ্রশাসন না বলে জনসেবা বলা যায় কি না। জেলা প্রশাসক নামের বিকল্প বিষয়ে সাজেশন দেব, সরকার যেটা নেয়।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ট্যুর করতে গিয়ে যে জিনিসটা দেখলাম, মানুষ মনের কথা বলতে চেয়েছে। কয়েকটি অফিস সম্পর্কে মানুষের একেবারেই নেগেটিভ ধারণা। এগুলো আপনারা জানেন, আমি জানি, উল্লেখ করতে চাই না। তারপরও দু-একটার কথা বলতে হয়।
‘এসিল্যান্ড অফিস সম্পর্কে বাজে ধারণা, রেজিস্ট্রি অফিস সম্পর্কে খুবই বাজে ধারণা। রেজিস্ট্রি অফিসের দুর্নীতি এমন লেভেলে যে কোনো অভিযোগ নেই। শেয়ারিংটা খুবই সায়েন্টিফিক। কারও কোনো অভিযোগ নেই- দিচ্ছে এবং নিচ্ছে। বরং বলে আগের স্যারের চেয়ে আপনি কম নিচ্ছেন।’
প্রেস ক্লাবের আয়োজনে সাংবাদিকদের এবং এফবিসিসিআইয়ের আয়োজনে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মতবিনিময় হবে বলেও জানান জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব।
তিনি বলেন, ‘মানুষ পরিবর্তন চায়। আর সেই পরিবর্তনের জন্যই এই পরিবর্তিত সরকার এসেছে। আমরা সেটা নিয়ে কাজ করছি।’
ইতিমধ্যে এক লাখ মানুষ অনলাইনে কমিশনের প্রশ্নের জবাব দিয়েছে বলেও জানান তিনি।
আরও পড়ুন:চলতি বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মনন তৈরিতে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) অশেষ ভূমিকা রেখেছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
ঢাকায় সিপিডির ৩০ বছর পূর্তি উপলক্ষে রোববার আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ভিডিওবার্তায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
বার্তায় গণতান্ত্রিক, ন্যায়ভিত্তিক ও জবাবদিহিমূলক সমাজ প্রতিষ্ঠায় সিপিডি সবসময় সচেষ্ট থেকেছে বলে উল্লেখ করেন প্রধান উপদেষ্টা।
তিনি বলেন, ‘সাম্প্রতিক ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মনন সৃষ্টিতে সিপিডির গবেষণা ও জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম অশেষ ভূমিকা রেখেছে।’
বিগত ৩০ বছর ধরে নানামুখী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে সিপিডি দেশের মানুষের কাছে নির্ভরযোগ্য ও নির্ভীক প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিজেদের অবস্থান তৈরি করতে পেরেছে বলে মন্তব্য করেন অধ্যাপক ইউনূস।
তিনি বলেন, ‘এ কারণে প্রতিষ্ঠানটি সবসময় আমার কাছে বিশেষ তাৎপর্য বহন করে।’ বাংলাদেশ এখন গুরুত্বপূর্ণ সময় অতিক্রম করছে।
প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘আমি আশা করি সিপিডি অতীতের মতো বর্তমানে ও আগামীতে তার বুদ্ধিবৃত্তিক অবদান অব্যাহত রাখবে এবং দেশ ও দেশের মানুষের কল্যাণে অবদান রেখে যাবে।’
আরও পড়ুন:অর্থনীতিতে অনিয়ম ও দুর্নীতি তদন্তে গঠিত শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে।
বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে গঠিত কমিটি রোববার রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে আনু্ষ্ঠানিকভাবে এই প্রতিবেদন জমা দেয়।
প্রতিবেদন জমাদান পর্ব শেষে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বাসস-কে জানান, শ্বেতপত্র কমিটির প্রতিবেদনে দেশ থেকে অর্থপাচারের তথ্য উঠে এসেছে। তাতে বলা হয়েছে, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শাসনামলে প্রতিবছর গড়ে ১৬ বিলিয়ন ডলার বিদেশে পাচার হয়েছে।
তিনি বলেন, শ্বেতপত্র কমিটির প্রতিবেদনে অর্থনীতির প্রতিটি খাত ধরে ধরে আলাদা বিশ্লেষণ করে দেখানো হয়েছে- উন্নয়নের গল্প সাজাতে কিভাবে পরিসংখ্যানকে ম্যানিপুলেট করা হয়েছে। উন্নয়নের গল্প শোনানো হলেও ভেতরে ভেতরে চলেছে লুটতরাজের এক মহাযজ্ঞ।
প্রতিবেদন গ্রহণ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এই প্রতিবেদন আমাদের জন্য একটা ঐতিহাসিক দলিল। আর্থিক খাতে যে ধরনের ঘটনা ঘটেছে, তা ছিল একটা আতঙ্কের বিষয়। আমাদের সামনে এই ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু কেউ এটা নিয়ে কথা বলেননি।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ও ইউটিউবে গুজব ও উসকানিমূলক কনটেন্ট ছড়ানো বন্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশন।
এসব প্রচেষ্টা বর্তমান সামাজিক-রাজনৈতিক অস্থিরতা কমাতে এবং অর্থনীতিতে এর ক্ষতিকর প্রভাব কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে মনে করে সংগঠনটি।
এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সংগঠনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘গত ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে দেশি ও বিদেশি নানা উৎস থেকে যাচাইহীন ও উসকানিমূলক কনটেন্ট প্রচার হয়েছে। দেশের মধ্যে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টিতে এটি বড় ভূমিকা রেখেছে।
‘এর ফলে ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ডে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে এবং বিনিয়োগে বাধা সৃষ্টি হয়। ফলে অর্থনৈতিক উন্নতিও বাধাগ্রস্ত হয়েছে।’
মহিউদ্দিন বলেন, ‘প্রতিবেশী দেশগুলোর সংবাদমাধ্যম এবং বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত প্রবাসীসহ কিছু বিদেশি উৎস থেকে পাওয়া তথ্য প্রচারের উদ্দেশ্য ছিল উসকানি দেয়া এবং নাগরিকদের মধ্যে ভুল তথ্য ছড়িয়ে দেয়া।’
দেশের ডিজিটাল ও সাইবার নিরাপত্তা আইন সংশোধনে এ সময়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এ ধরনের কনটেন্ট প্রচার বন্ধ করে জাতীয় নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা সরকারের দায়িত্ব।’
আরও পড়ুন:শেখ হাসিনা ছাড়া কেউ দেশ চালাতে পারবে না অথবা দেশ উগ্রবাদীদের খপ্পরে পড়বে- কিছু মানুষ ভারতের ওই স্ক্রিপ্ট রূপায়ণের কাজে নেমেছে বলে মন্তব্য করেছেন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল। একইসঙ্গে তিনি ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান কোনোভাবেই যাতে ব্যর্থ না হয় সেজন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।
আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শনিবার বিকেলে জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘স্মৃতির মিনার: গণভ্যুত্থান-২০২৪’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
অন্তর্বর্তী সরকারের একশ দিন পূর্তি ও বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে শঈদ ছাত্র-জনতার প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের জন্য বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস) এই সভার আয়োজন করে।
আসিফ নজরুল বলেন, ‘আমাদের স্বপ্ন হচ্ছে বাংলাদেশকে একটা সত্যিকার অর্থে স্বাধীন, সার্বভৌম ও গর্বিত জাতি হিসেবে গড়ে তোলা। যে অর্থে ছেলেরা আত্মদান (শহিদ) করেছেন, যে অর্থে আত্মদান করেছেন সাধারণ মানুষ। আমরা যখন চলে যাবো, আমাদের মনে যেন আফসোস না থাকে, যে দায়িত্বটা নিয়েছি কাজটা করি নাই। সেজন্য সবাই দোয়া করবেন। সবাই যেন একসঙ্গে থাকি এবং যারা আত্মাহূতি দিয়েছেন, আহত হয়েছেন তাদের আত্মদানকে মূল্যয়ন করতে পারি।’
তিনি বলেন, ‘আমার যদি নিজেরা নিজেরা ঝগড়া-ঝাটি করি, কুৎসা রটাই, চরিত্র হনন করি, মিথ্যা তথ্য দেই তাহলে তো আমাদের ছাত্র-জনতার যে আত্মবলিদান তার প্রতি অশ্রদ্ধা জানানো হবে। কারও প্রতি অভিযোগ নয়, সবার প্রতি অনুরোধ- প্লিজ, সত্য জানার চেষ্টা করুন। মিথ্যা দোষারোপ পরাজিত ফ্যাসিস্টদের অস্ত্র ছিল। সেটা কেন আমরা বহন করবো। আমাদের অস্ত্র থাকবে সত্য ও ঐক্য। শোষণ ও বৈষম্যমুক্ত।’
আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘আমাদের কাজের সমালোচনা করবেন ঠিক আছে। কিন্তু যখন ব্যক্তিগত চরিত্র হনন করবেন তখন মনে হয় সমালোচনাটা অসৎ উদ্দেশ্যে করা, এই সরকারকে শক্তিহীন করা। আন্দোলনকারী মানুষের মাঝে অনৈক্য নিয়ে আসা, দেশকে অস্থিতিশীল করা, পরাজিত শক্তির হাতে অস্ত্র তুলে দেয়ার জন্য এগুলো করা হচ্ছে।’
ড. আসিফ নজরুল বলেন, ‘আমাদের একটি প্রতিবেশী দেশের স্ক্রিপ্ট আছে না? শেখ হাসিনা চলে গেলে দেশ আর কেউ চালাতে পারবে না। অথবা দেশ উগ্রবাদীদের খপ্পরে পড়বে। তার (শেখ হাসিনার) কোনো বিকল্প নেই। ওই ভারতীয় স্ক্রিপ্ট এখানে রূপায়িত করার কাজে নেমেছে কিছু মানুষ। না হলে তাদের কী স্বার্থ? বিগত প্রায় ১৬ বছরে আওয়ামী লীগ সরকার কী করেছে? আমাদের পরামর্শ দেন আমরা কী করবো।’
তিনি বলেন, ‘আমাদেরকে যদি আরও সমর্থন করেন, ঠিকমতো গাইড করুন। এই সরকার যদি সফল হয় তবেই ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার প্রত্যার্বতনের স্বপ্ন ধূলিসাৎ করতে পারব। জুলাই-আগস্টে যারা প্রাণ দিয়েছেন, তাদের অত্মদানের মিনিমাম একটা মূল্যায়ন করতে পারব। তাদের প্রত্যাশাকে এগিয়ে নিতে পারব।’
বাসস-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান সম্পাদক মাহবুব মোর্শেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব মোহাম্মদ শফিকুল আলম, লেখক-সম্পাদক রাখাল রাহা, কবি ও অ্যাক্টিভিস্ট ফেরদৌস আরা রুমী, বাসস-এর বিশেষ প্রতিনিধি ও পরিচালনা পরিষদের পরিচালক মো. ফজলুল হক ও নূরে আলম মাসুদ, গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খান বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন বাসস-এর বিশেষ প্রতিনিধি দিদারুল আলম।
আসিফ নজরুল বলেন, ‘খুবই দুঃখ ও অবাক লাগে যখন দেখি আজগুবি, ভিত্তিহীন, অকল্পনীয় তথ্য দিয়ে একজন আরেকজনের পেছনে লেগে আছে। একটা ভিডিওতে নাকি দাবি করা হয়েছে আগস্টের ৩-৪ তারিখ রাতে আমি ক্যান্টনমেন্টে ছিলাম। সেখানে আর্মি অফিসারদের নিয়ে ভারতের দালালদের সঙ্গে মিটিং করেছি। আমি অবাক হয়ে যাই। মানুষের কল্পনারও একটা সীমা থাকা উচিত।’
তিনি বলেন, ‘৩ আগস্ট রাতে মাহবুব মোর্শেদ (বর্তমানে বাসসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান সম্পাদক) সহ অন্যদের সঙ্গে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমাবেশ করে রাত ৯টা পর্যন্ত সেখানেই ছিলাম। তারপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার ফুলার রোডের অবসিক ভবনে এক শিক্ষকের বাসায় রাতে থেকেছি। আশঙ্কা ছিল- আমাকে মেরে ফেলবে, না হলে গ্রেপ্তার করবে।
‘আর ৪ আগস্ট সন্ধ্যার পর অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টদের একটি প্রোগ্রামে আমি অংশ নিয়েছি। যার অডিও আপনারা অনেকেই শুনেছেন। যেখানে আমি বলেছিলাম, আমাদেরকে মেরে ফেলতে পারে। কারণ, সবাই আমাদেরকে বলেছে পালিয়ে যেতে। তারপর সেদিন রাতেও ঢাবির ওই শিক্ষকের বাসায় ছিলাম। সবকিছুর একটা সীমা আছে।’
আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘আমাদের মধ্যে মতভেদ থাকবে। আমরা একজন আরেকজনের কাজের সমালোচনা করব। কিন্তু মিথ্যা কথা কেন বলব? মানুষজন আমাকে বলে আপনি ক্লিয়ার করেন (অভিযোগের বিষয়ে স্পষ্ট বক্তব্য দেন)। আমি বলি, আমি কী ক্লিয়ার করব? সত্যের কাছাকাছি থাকলে মানুষ প্রতিবাদ করে। আজগুবির একটা সীমা থাকা দরকার। অবশ্য এমনটি শুধু আমার ক্ষেত্রে নয়, সবার ক্ষেত্রেই কমবেশি হচ্ছে।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য