রাজধানীতে বিএনপির সমাবেশের আর বাকি দুই দিন। সময় যত ঘনিয়ে আসছে তত বাড়ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা। এর মধ্যে বুধবার নয়াপল্টনে বিএনপির সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের পর আরও কঠোর হয়েছে বাহিনী। সেখানে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় বন্ধ রেখে তল্লাশি চলেছে বৃহস্পতিবার দিনভর। পাশাপাশি ঢাকায় প্রবেশের সব পথে বসানো হয়েছে চেকপোস্ট।
১৫ দিনের জঙ্গি ও সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান আখ্যা দিয়ে পুলিশ চলতি মাসের প্রথম দিন থেকে রাজধানীজুড়ে অভিযান চালিয়ে আসছে। বাসাবাড়ি, হোটেলে তল্লাশি চালানো হচ্ছে প্রতিদিনই। এর মধ্যে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ঢাকার প্রবেশপথগুলোতে চেকপোস্ট বসিয়ে ব্যাপক তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ।
মানিকগঞ্জের সিংগাইরে ধল্লা শহীদ রফিক সেতু এলাকায় বৃহস্পতিবার সকাল থেকে পুলিশের পাশাপাশি চেকপোস্টে বৈঠা হাতে টহল দিতে দেখা গেছে কয়েকজনকে।
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান জানিয়েছেন, ১০ ডিসেম্বরে বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে রাজধানীতে নাশকতা এড়াতে তল্লাশি চলছে। লোকজনকে সতর্ক করতে আওয়ামী লীগের লোকজন বৈঠা হাতে চেকপোস্টে অবস্থান নিয়েছেন।
তবে পুলিশ এসব কথা নাকচ করে জানিয়েছে, জঙ্গি বিরোধী অভিযানের অংশ হিসেবে এই চেকপোস্ট।
সকাল থেকে চেকপোস্টে ঢাকামুখী গাড়িগুলো থামিয়ে চালক-যাত্রীদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। জেলা পুলিশ সুপার মুহাম্মদ গোলাম আজাদ খান বলেন, ‘বিএনপির সমাবেশ সামনে রেখে কোনো নিরাপত্তার জোরদার করা হয়নি। পুলিশ হেড কোয়ার্টারের নির্দেশনা অনুযায়ী মানিকগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে ১ ডিসেম্বর থেকে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত জঙ্গি, সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজের বিরুদ্ধে পুলিশের বিশেষ অভিযান চলছে।
‘মানিকগঞ্জের সিংগাইরের ধল্লা সেতু জেলার প্রবেশপথ হওয়ায় সেখানে নিরাপত্তা বেশি জোরদার করা হয়েছে।’
আওয়ামী লীগের লোকজনকে নিয়ে তল্লাশির বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেছেন।
ধল্লা ইউপির চেয়ারম্যান মো. জাহিদুর রহমান বলেন, ‘১০ ডিসেম্বর বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে বিএনপি ও তাদের অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা সারা দেশে নাশকতার পরিকল্পনা করেছে। তাদের সেই পরিকল্পনার বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। সে কারণে পুলিশের পাশাপাশি দলীয় লোকজনও মাঠে আছে এবং থাকবে।’
সিংগাইর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শহিদুর রহমান শহিদ বলেন, ‘বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ কঠোর অবস্থানে আছে। মানুষকে সতর্ক করতে এবং সাধারণ মানুষ যাতে ভয়ভীতি না পায় সে জন্য বৃহস্পতিবার সকালে সিংগাইরসহ বিভিন্ন এলাকায় লগি-বৈঠা নিয়ে রাস্তায় মিছিল করেছে।’
সাভারের আমিনবাজার ও মিরপুর-বেড়িবাঁধ সড়কের ধউর ব্রিজ এলাকায় বুধবার দুপুরের পর থেকেই বসানো হয়েছে চেকপোস্ট।
আমিনবাজার পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ উপপরিদর্শক (এসআই) হারুন উর রশিদ বলেন, ‘নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে ঢাকার প্রবেশমুখ আমিনবাজারে পুলিশ চেকপোস্টে নজরদারি করা হচ্ছে। দূরপাল্লার যানবাহন, বিশেষ করে দূরপাল্লার বাস, মাইক্রোবাস, প্রাইভেট কারগুলো তল্লাশি করা হচ্ছে। তবে কোনো যাত্রীকে হয়রানি করা হচ্ছে না।’
ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও ট্রাফিক) আব্দুল্লাহ হিল কাফি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ঢাকার প্রবেশমুখগুলোতে পুলিশের চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। সাভারের আমিনবাজার ও ধউর এলাকায় দুটি চেকপোস্টে কাজ করছেন পুলিশ সদস্যরা। রাজধানীর বাবুবাজার ও পোস্তগলা এলাকাতেও এই কার্যক্রম চলছে। তবে এখনও কেউ আটক হয়নি।’
চেকপোস্ট বসেছে ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায়। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সিদ্ধিরগঞ্জের সাইনবোর্ড, মৌচাক এলাকায় এবং সোনারগাঁয়ের মেঘনাঘাট টোলপ্লাজা এলাকায় পুলিশের দুটি চেকপোস্টে যানবাহন থামানো হয়।
ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ভুলতা এলাকায় চেকপোস্ট বসিয়েছে হাইওয়ে পুলিশ। রূপগঞ্জের কাঞ্চন সড়কেও চেকপোস্ট বসানো হয়েছে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নাজমুল হাসান নিউজবাংলাকে জানান, ঢাকায় প্রবেশমুখী মহাসড়কের পাশে পাঁচটি চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। আরও কয়েকটি বসানোর চেষ্টা চলছে বিভিন্ন থানা এলাকায়। এসব চেকপোস্টে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাভুক্ত আসামিদের খোঁজ করা হচ্ছে। পাশাপাশি নাশকতা ও বিশৃঙ্খলা রোধে তল্লাশি করা হচ্ছে।
কাঁচপুর হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কাশেম বলেন, ‘ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মেঘনাঘাট টোলপ্লাজা এলাকার ঢাকামুখী লেনে একটি চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। আরেকটি চেকপোস্ট বসানো হয়েছে ভুলতায়।
‘কোনো যানবাহনে অবৈধ মালামাল থাকতে পারে কিংবা অস্ত্র থাকতে পারে, তাই সকাল থেকে আমাদের তল্লাশি চলছে। তবে এখন পর্যন্ত আমরা কিছু পাইনি।’
নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) গোলাম মোস্তফা রাসেল বলেন, ‘চেকপোস্ট বসানো তো নতুন না, আমরা মাঝেমধ্যেই মহাসড়কে চেকপোস্ট বসিয়ে থাকি। সম্প্রতি ঢাকা আদালত চত্বর থেকে কিছু জঙ্গি পালিয়ে গিয়েছে। পাশাপাশি এই মাসে বিজয় দিবস, থার্টিফার্স্ট নাইটসহ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ইভেন্ট রয়েছে। সাধারণত যেকোনো ইভেন্ট থাকলেই আমরা নিরাপত্তাব্যবস্থা আরও জোরদার করার জন্য চেকপোস্ট বসিয়ে থাকি।’
সমাবেশে বিএনপি নেতা-কর্মীদের বাধা দেয়ার জন্য এই চেকপোস্ট বসানো হয়েছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা বিএনপির কোনো প্রোগ্রামে বাধা দিইনি। কেউ যদি নাশকতা করার পরিকল্পনা করে তাহলে তো সে পুলিশের তল্লাশি ভয় পাবেই। আমরা তো নির্দিষ্ট করে কোনো গাড়ি থেকে যাত্রী নামিয়ে দিচ্ছি কিংবা গাড়ি ফেরত পাঠিয়ে দিচ্ছি এমন তো না। এটা আমাদের রুটিনওয়ার্ক।’
গাজীপুরের টঙ্গীর তুরাগ নদের সেতু পেরিয়ে তল্লাশি চৌকি বসিয়েছে মেট্রোপলিটন পুলিশ। উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা থেকে ঢাকায় প্রবেশের পথ এটি। একই সঙ্গে জেলার বিভিন্ন এলাকায় বিএনপি নেতা-কর্মীদের বাড়িতে অভিযান চালানো হচ্ছে। গ্রেপ্তার আতঙ্কে অনেকেই বাড়ি ছেড়েছেন।
টঙ্গী সেতুর উত্তর অংশে টঙ্গী বাজার এলাকায় গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে বৃহস্পতিবার সকালে বসানো হয় তল্লাশি চৌকি। গাজীপুরের কালীগঞ্জের উলুখোলা থেকে আব্দুল্লাহপুর সড়কে দুইটি, আব্দুল্লাহপুর থেকে ঢাকা-আশুলিয়া সড়কের কামাড়পাড়া, বেরিবাঁধ এলাকায় বেশ কয়েকটি তল্লাশি চৌকি বসানো হয়েছে।
সকাল থেকেই এ পথে ঢাকামুখী সড়কে অন্যান্য দিনের চেয়ে দূরপাল্লাসহ গণপরিবহন অনেকটাই কম ছিল। তল্লাশি চৌকিগুলোতে ব্যক্তিগত গাড়ি, অটোরিকশা, মোটরসাইকেল থামিয়ে তল্লাশি করতে দেখা যায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে। পথচারীদের কাছেও পরিচয়পত্র চাইতে দেখা গেছে পুলিশ সদস্যদের।
ওষধ কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধি হাফিজুল ইসলাম বলেন, ‘টঙ্গী থেকে মোটরসাইকেলে রাইড শেয়ার নিয়ে ঢাকায় যেতে টঙ্গী বাজার এলাকায় পৌঁছালেই পুলিশ তল্লাশি করে। মোবাইল ফোনের ম্যাসেজ ও কললিস্টও ঘেঁটে দেখে।
‘এটা হয়রানি। আমি পরিচয় দেয়ার পরও তল্লাশি করেছে। মোবাইল নিয়ে মেসেজ দেখেছে।’
নেত্রকোণা থেকে ছেড়ে আসা শাহজালাল পরিবহনের একটি বাস আব্দুল্লাহপুর পৌঁছালে তাতে তল্লাশি করে পুলিশ। প্রায় ১০ মিনিট তল্লাশি শেষে হাইড্রলিক হর্ন (উচ্চ মাত্রার হর্ণ) থাকায় মামলা দেয়া হয়।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (অপরাধ, উত্তরা বিভাগ) বদরুল হাসান বলেন, ‘জনসাধারণের নিরাপত্তায় আমরা এখানে তল্লাশি করছি। কাউকে হয়রানি করার সুযোগ নেই। জনগণকে নিরাপত্তায় দেয়ার জন্য আমাদের এ সতর্কতা।
‘ধৈর্য্য ধরে এ সড়ক চলাচলকারী যাত্রীদের উচিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সহযোগিতা করা।’
চেকপোস্ট বসেছে মুন্সীগঞ্জের ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ে, ঢাকা-দোহার ও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কেও। এসব সড়ক দিয়ে গণপরিবহন চলাচল দিনশেষে অর্ধেকে নেমে এসেছে।
ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ের জেলার লৌহজং উপজেলার পদ্মা সেতু টোলপ্লাজার সামনে, শিমুলিয়া ও মাওয়া চৌরাস্তায় দিনভর বাস ও প্রাইভেটকারে তল্লাশি চালিয়েছে পুলিশ। একসঙ্গে ৪-৫ জন দেখলেই পুলিশের প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে যাত্রীদের।
লৌহজং উপজেলার পদ্মা সেতুর টোল সামনে যাত্রী আরমান মিয়া বলেন, ‘বাস চলাচল কম থাকায় হেঁটেই ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছি। আমার মতো অনেক যাত্রীর কপালে বাস জোটেনি।’
গজারিয়া উপজেলার ভবেরচর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় যাত্রী আবু জাফর বলেন, ‘গণপরিবহনের সংকটের কারণ ঘণ্টা ধরে বসে আছি। বাসের দেখা নেই। স্ত্রী ও একমাত্র সন্তানকে নিয়ে ঢাকায় যাচ্ছিলাম আত্মীয়ের বাসায়। এখন মনে হচ্ছে বাড়িতেই ফিরে যেতে হবে।’
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুমন দেব জানান, জেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি রক্ষায় ৩০ টি পয়েন্টে চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। আইনশৃৃঙ্খলা বাহিনীর ৯০০ সদস্য নিয়োজিত রয়েছেন। তবে চেকপোস্টগুলোতে কাউকে আটক করা হয়নি।
আরও পড়ুন:আজ ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫ তারিখ দুপুর ১২টায় বেবিচক সদরদপ্তরে বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) এর চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মোঃ মোস্তফা মাহমুদ সিদ্দিক, বিএসপি, জিইউপি, এনডিসি, এএফডব্লিউসি, এসিএসসি, পিএসসি (Air Vice Marshal Md Mostafa Mahmood Siddiq, BSP, GUP, ndc, afwc, acsc, psc) এর সাথে পাকিস্তান সিভিল এভিয়েশন অথরিটির মহাপরিচালক জনাব নাদির শাফি দার (Mr. Nadir Shafi Dar) এক সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন।
সাক্ষাৎকালে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে সরাসরি বিমান চলাচল পুনঃস্থাপন বিষয়ে ফলপ্রসূ মতবিনিময় হয় এবং উভয় পক্ষই এ বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেন। বৈঠকে ভবিষ্যতে বিমান চলাচল খাতে প্রযুক্তি ও অভিজ্ঞতা বিনিময়, সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং পারস্পরিক সহযোগিতার ক্ষেত্রগুলো আরও সুদৃঢ় করার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়।
উভয় পক্ষ আশা প্রকাশ করেন যে, বিমান চলাচল পুনঃস্থাপন হলে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য, পর্যটন ও জনগণের পারস্পরিক যোগাযোগ আরও বৃদ্ধি পাবে।
এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন বেবিচক এর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাবৃন্দ এবং PIA এর CEO ।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার জন্য প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস আজ বিকেল ৫টায় সাতটি রাজনৈতিক দল ও একটি সংগঠনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।
রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানিয়েছে, বৈঠকে অংশ নেন- এবি পার্টি, নাগরিক ঐক্য, গণসংহতি আন্দোলন, গণঅধিকার পরিষদ, এলডিপি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, জাতীয় গণফ্রন্ট এবং হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ।
এরআগে গত রোববার প্রধান উপদেষ্টা বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপি’র সঙ্গে বৈঠক করেন।
ধারাবাহিক এই বৈঠক আসন্ন নির্বাচনের প্রস্তুতিতে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হিসেবে দেখা হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-৩ গঠন করা হতে পারে বলে জানিয়েছেন আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল।
আজ সকালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের ভবন ও সংলগ্ন এলাকা পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি।
এ সময় আইন উপদেষ্টা বলেন, মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছি আমরা। বিগত সরকারের হত্যা, গুম, নির্যাতনসহ সব ধরনের অপরাধের বিচারের বিষয়ে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
আইন উপদেষ্টা বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ভবন সংলগ্ন টিনশেড ভবন খালি হয়ে গেলে আমরা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-৩ গঠন করতে পারি। এটি করা গেলে গুমসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক অপরাধের বিচার কাজ দ্রুত করা যাবে।
তিনি আরো বলেন, মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলা নিয়ে বেশ আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করছেন আমাদের বিচারকসহ প্রসিকিউশন ও তদন্ত টিম।
আইন উপদেষ্টা বলেন, দেশের ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের স্বার্থে আমাদের যে ন্যায়বিচার আছে, আইনের শাসন আছে ও মানবাধিকার আছে এটাকে প্রতিষ্ঠিত করার স্বার্থে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে এক হাজারেরও বেশি ছাত্র-জনতাকে হত্যা এবং হাজারও মানুষকে পঙ্গু করার ভয়াবহ মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার অপরিহার্য-অনিবার্য। সেই বিচারকার্যের প্রথম থেকেই আমরা অবিচল আছি। বিচারের যে গতি আছে সেটা নিয়েও আমরা সন্তুষ্ট আছি।
অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ভবন আজ পরিদর্শন করেন। এসময় তাদের সঙ্গে অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলামসহ অপর প্রসিকিউটররা উপস্থিত ছিলেন।
২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, এর দলীয় ক্যাডার ও সরকারের অনুগত প্রশাসনসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে একের পর এক অভিযোগ জমা পড়ে। দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এসব অপরাধের বিচার কাজ চলছে।
অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানে জনগণই মুখ্য ভূমিকা রাখবে বলে মন্তব্য করেছেন স্বরাষ্ট্র ও কৃষি উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মোঃ জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.)।
উপদেষ্টা আজ সিলেট জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে এক মতবিনিময় সভায় এ কথা বলেন।
মতবিনিময় সভায় সিলেট বিভাগের সকল জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব), বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড (বিজিবি), আনসার-ভিডিপি, কারা অধিদপ্তর, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর, ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর এবং কৃষি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন সিলেট জেলার বিভিন্ন দপ্তর ও সংস্থার কর্মকর্তাবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন।
উপদেষ্টা বলেন, একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের মাধ্যমে রাজনৈতিক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে জনগণের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নই বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান লক্ষ্য। তিনি বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু করতে মাঠ প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য শুধু নির্বাচন কমিশনের প্রস্তুতি যথেষ্ট নয়, মাঠ প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে যথাযথ প্রস্তুতি নিতে হবে। জনগণ যেন নির্ভয়ে নির্বাচন কেন্দ্রে উপস্থিত হয়ে ভোট প্রদান করতে পারে সেরকম পরিবেশ তৈরি করতে প্রশাসন এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে একযোগে কাজ করতে হবে। সকলের সহযোগিতায় সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভবপর হবে।
পুলিশসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়োগ ও পদায়ন সম্পর্কে উপদেষ্টা বলেন, এবার বিভিন্ন বাহিনীর নিয়োগ প্রক্রিয়া ও পদায়ন অনেক স্বচ্ছ হয়েছে। তাই সবাইকে নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে। মাদককে দেশের সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থার জন্য অন্যতম হুমকি উল্লেখ করে তিনি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে মাদক ব্যবসায়ীদের প্রতি জিরো টলারেন্স দেখানোর নির্দেশনা দেন। এছাড়া পরিবেশ রক্ষায় সিলেটের পাথরখেকোদের বিরুদ্ধে সবসময় সজাগ থাকার কথা বলেন।
দেশের সার্বিক অর্থনীতিতে কৃষির গুরুত্ব তুলে ধরে লেফটেন্যান্ট জেনারেল মোঃ জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.) বলেন, কৃষকরাই এদেশের খাদ্য নিরাপত্তার মূল কারিগর। তাই উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি কৃষকেরা যেন তাদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য পায় সেটি নিশ্চিত করতে হবে। উপদেষ্টা এসময় পতিত কৃষিজমিগুলো আবাদের আওতায় আনার জন্য সংশ্লিষ্টদের আহ্বান জানান।
সভায় উপস্থিত কর্মকর্তাবৃন্দ সিলেটের সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও এর চ্যালেঞ্জগুলো তুলে ধরে বিভিন্ন মতামত প্রদান করেন। উপদেষ্টা সকল চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় যৌক্তিক পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস প্রদান করেন। মতবিনিময় সভা শেষে উপদেষ্টা উপস্থিত সাংবাদিকদের ব্রিফিং করেন।
উপদেষ্টা এর আগে বিজিবি'র সিলেট সেক্টর হেডকোয়ার্টার্স এবং সিলেট পুলিশ লাইন পরিদর্শন করেন।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কর্মপরিকল্পনা (রোডম্যাপ) আগামীকাল বৃহস্পতিবার ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ।
আজ বুধবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনের মিডিয়া সেন্টারে এক ব্রিফিংয়ে সচিব সাংবাদিকদের এ কথা জানান।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ইসি সচিব বলেন, ‘আমরা যে কর্মপরিকল্পনা (রোডম্যাপ) করেছি, সে কর্মপরিকল্পনাটা আপনাদের জানাবো। আমি ঢাকার বাইরে থাকায় একটু পিছিয়ে পড়েছি। এটা আমার টেবিলে এখন আছে। আগামীকাল পর্যন্ত একটু অপেক্ষা করেন।’
এদিকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিনের সভাপতিত্বে চার নির্বাচন কমিশনার ও ইসি সচিব আজ এক বৈঠকে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কর্মপরিকল্পনা (রোডম্যাপ) অনুমোদন করেছে কমিশন।
এখন যেকোনো সময় নির্বাচনের এই রোডম্যাপ আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করা হতে পারে বলে ইসির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে একজন নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘কর্মপরিকল্পনার সবকিছু চূড়ান্ত হয়ে গেছে। অনুমোদন হয়েছে, এখন শুধু টাইপিং চলছে।’
উল্লেখ্য জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে ইসির পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে দল নিবন্ধন, সীমানা নির্ধারণ, নির্বাচন পর্যবেক্ষক, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংস্কার, বিধিমালা ও নীতিমালা জারি, প্রবাসীদের জন্য আইটি সাপোর্টেড নিবন্ধন ও পোষ্টাল ব্যালট পদ্ধতি ও নির্বাচনী সরঞ্জাম কেনাকাটা বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়েছে রোডম্যাপে।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কর্মপরিকল্পনা (রোডম্যাপ) অনুমোদন করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
যে কোনো সময় এই নির্বাচনের রোডম্যাপ আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করতে পারে ইসি।
আজ বুধবার দুপুরে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন, চার নির্বাচন কমিশনার ও ইসি সচিব এ নিয়ে বৈঠকও করেছেন।
বৈঠকে কর্মপরিকল্পনার (রোডম্যাপ) অনুমোদন দিয়েছে কমিশন। এখন, যে কোনো সময় নির্বাচনের এই রোডম্যাপ আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করা হতে পারে বলে ইসি’র কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেন, ‘কর্মপরিকল্পনার সবকিছু চূড়ান্ত হয়ে গেছে। অনুমোদন হয়েছে, এখন শুধু টাইপিং চলছে।’
এদিকে সংসদীয় আসনের পুনঃনির্ধারিত সীমানার বিষয়ে ইসি’র শুনানি আজ বিকেলে শেষ হচ্ছে।
শুনানি শেষে বিকেলে সার্বিক বিষয় নিয়ে ইসি’র সিনিয়র সচিব আকতার আহমেদের ব্রিফিং করার কথা রয়েছে।
এ বিষয়ে ইসি সচিব আখতার আহমেদ বলেন, ‘আমরা ব্রিফিংয়ে আসব। তখন সীমানার শুনানির বিষয়টির পাশাপাশি এ বিষয়টিও (রোডম্যাপ) দেখা যাবে।’
এর আগে গত বৃহস্পতিবার ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের কর্মপরিকল্পনা নিয়ে চার নির্বাচন কমিশনার ও ইসি কর্মকর্তা বৈঠক করেন।
ওই দিন নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেছিলেন, বিস্তারিত কর্মপরিকল্পনার বিষয়ে ইসি সচিব ব্রিফ করবেন।
গত ১৮ আগস্ট ইসি’র সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ জানিয়ে ছিলেন, ‘একটা কর্মপরিকল্পনার (নির্বাচনী রোডম্যাপ) বিষয়ে বলেছিলাম, আমরা এই সপ্তাহে এটা করবো। কর্মপরিকল্পনার তো আমাদের আন্তঃঅনুবিভাগ সম্পর্কিত এবং অন্যান্য প্রাসঙ্গিক বিষয়গুলো নিয়ে। কর্মপরিকল্পনার ড্রাফ্ট করা হয়েছে। ড্রাফ্টটি এখন কমিশনে দিয়ে আমরা অ্যাপ্রুভ করবো।’
শ্রম আইন, ২০০৬ সংশোধনের লক্ষ্যে ত্রিপক্ষীয় পরামর্শ পরিষদ (টিসিসি)-এর ৮৯তম সভায় শ্রমিক, মালিক ও সরকারের মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। গত এক বছরের পর্যালোচনা ও সকল পক্ষের মতামতের ভিত্তিতে শ্রম আইন ২০০৬ সংশোধনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
আজ মঙ্গলবার ঢাকার এক হোটেলে অনুষ্ঠিত এ সভায় সভাপতিত্ব করেন শ্রম ও কর্মসংস্থান এবং নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন। তিনি বলেন, "শ্রমিক ও মালিক পক্ষের পরামর্শের ভিত্তিতে শ্রম আইন যুগোপযোগী করা হবে। এটি বাংলাদেশের শ্রমখাতের জন্য একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ হবে এবং আন্তর্জাতিক মানের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হবে।’
সভায় শ্রমিক ও মালিক পক্ষের প্রতিনিধিরা তাদের মতামত তুলে ধরেন। একটি সুসমন্বিত ও আন্তর্জাতিক মানের শ্রম আইন প্রণয়নের প্রয়োজনীয়তা উপস্থিত সকলেই করেন। অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত এ সভায় সংশোধিত শ্রম আইন দ্রুত সম্পন্ন করার তাগিদ দেওয়া হয়।
সভায় বিশেষ পর্যবেক্ষক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মার্কিন দূতাবাস, কানাডা হাই কমিশন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও)-এর প্রতিনিধিরা। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিশেষ দূত জনাব লুৎফে সিদ্দিকী।
এছাড়াও মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব, বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব লেবার স্টাডিজ (বিলস) এর নির্বাহী পরিচালক এবং শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রধান, বাংলাদেশ এমপ্লয়ার্স ফেডারেশন (বিইএফ)-এর সভাপতি, টিসিসি সদস্যবৃন্দের মধ্যে তাসলিমা আক্তার, কোহিনুর মাহমুদ, বাবুল আকতার , নাজমা আক্তার, রাজেকুজ্জামান রতন, এডভোকেট আতিকুর রহমান, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর এবং শ্রম অধিদপ্তরের কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
বিশ্লেষকদের মতে, এই সংশোধনী বাংলাদেশের শ্রমবাজারকে আরও গতিশীল ও আন্তর্জাতিক মানসম্মত করবে এবং শ্রমিক-মালিক সম্পর্কের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
মন্তব্য