বিএনপি কার্যালয় থেকে চাল, ডালসহ রান্নার উপকরণ ও রান্না করা খিচুড়ি উদ্ধারের বিষয়টি নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বলেছেন, চাল-ডাল দিয়ে খিচুড়ি খেয়ে সরকার হটানো যাবে না।
নয়াপল্টনে বুধবারের ঘটনা ‘বিএনপির টেস্ট কেস’ উল্লেখ করে নেতা-কর্মীদের সতর্ক করেন আওয়ামী লীগপ্রধান। সেই সঙ্গে বিএনপির বিষয়ে আরও কঠোর হওয়ার ইঙ্গিত দেন তিনি এই বলে যে ২০২২ পর্যন্ত অনেক সহ্য করেছেন। আর নয়।
১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশের তিন দিন আগে বুধবার নয়াপল্টনে দলটির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের ব্যাপক সংঘর্ষের পরদিন দলীয় নেতাদের সঙ্গে এক ভার্চ্যুয়াল আলোচনায় অংশ নেন শেখ হাসিনা।
আরও পড়ুন: বিএনপির কার্যালয় থেকে খিচুড়ি জব্দ
বৃহস্পতিবার দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর সভাপতি এবং ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়ররা যৌথ সভা করেন। তাতে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হন প্রধানমন্ত্রী।
বৃহস্পতিবার দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে আলোচনায় গণভবন থেকে ভার্চ্যুয়ালি অংশ নেন দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: বিটিভি
আগের দিন নয়াপল্টনে সংঘর্ষের পর বিএনপি কার্যালয় থেকে ১৭০ বস্তা চাল, ডাল, তেল মসলা এবং রান্না করা কয়েক ডেকচি খিচুড়ি উদ্ধার নিয়েও কথা বলেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘চাল-ডাল দিয়ে খিচুড়ি খেয়ে সরকার হটানো যাবে না। যে হাত দিয়ে মারতে আসবে, সেই হাত ভেঙে দিতে হবে।’
‘তারা সরকারকে উৎখাত করতে চায়। কিন্তু আওয়ামী লীগ দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। সত্যিকারের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছে। এ সরকার জনগণের সেবক। খিচুড়ি খাইয়ে সরকারের পতন ঘটানো সহজ নয়’- একই প্রসঙ্গে বলেন তিনি।
রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে পুলিশের সঙ্গে দলের নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষ। ছবি: নিউজবাংলা
বিএনপির বিরুদ্ধে কঠোর হওয়ার ইঙ্গিত
বিএনপির বিরুদ্ধে সরকার আরও কঠোর হবে ইঙ্গিত দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বারবার আঘাত করলে আমরা সহ্য করব না। আমরা ২০২২ পর্যন্ত সহ্য করেছি। এখন আর করব না। যে হাত দিয়ে আগুন দিতে আসবে, সে হাত দিয়ে তাদের পোড়াতে হবে। ওদের কিসের ক্ষমা। বসে বসে আর মার খাওয়া যাবে না। গণতন্ত্র তাদের মুখে মানায় না।
‘নেতা-কর্মীদের বলছি, সবাই প্রস্তুত থাকুন। মেহনতি মানুষের ওপর আঘাত করলে তাদের ক্ষমা নেই।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ভেসে আসেনি। আওয়ামী লীগ কারও পকেটের সংগঠন না। বিএনপির জন্ম জিয়াউর রহমানের পকেট থেকে। আওয়ামী লীগের জন্ম রাজপথে, জনগণের হাতে।’
নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের দাবিতে গত ১২ অক্টোবর থেকে বিএনপি ধারাবাহিকভাবে বিভাগীয় শহরগুলোতে যে সমাবেশ করছে তার অংশ হিসেবে আগামী শনিবার ঢাকায় জমায়েতের ঘোষণা দেয়া হয়েছে। তবে এই জনসভার স্থল নিয়ে তৈরি হয়েছে বিরোধ। বিএনপি সমাবেশটি করতে চায় নয়াপল্টনের দলীয় কার্যালয়ের সামনের সড়কে। তবে পুলিশ অনুমতি দিয়েছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে, যেখানে যেতে আপত্তি আছে দলটির।
বিএনপির পক্ষ থেকে এরপর মৌখিকভাবে আরামবাগে সমাবেশ করতে চেয়েছিল, তবে তাদের মৌখিকভাবেই সেই আবেদন নাকচ করেছে।
এরপর পুলিশের অনুমতি ছাড়াই সমাবেশ করার ঘোষণা দেয়ার পর বিএনপির নেতা-কর্মীরা মঙ্গলবার রাত থেকেই নয়াপল্টনে জড়ো হতে থাকে। বুধবার সকাল থেকে দুটি ট্রাকে অস্থায়ী মঞ্চ বানিয়ে চলছিল বক্তৃতাপর্ব। দুপুরের পর সামনের সড়কে ক্রমেই বাড়তে থাকে নেতা-কর্মীর ভিড়। পুলিশ তাদের সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করতেই শুরু হয় সংঘর্ষ।
পাল্টাপাল্টি ধাওয়া, ইটপাটকেল, কাঁদানে গ্যাস আর রাবার বুলেটে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় এলাকাটি। মৃত্যু হয় একজনের। পরে বিএনপি কার্যালয়ে হানা দিয়ে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। আটক করা হয় ১০ ডিসেম্বর থেকে বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নেতৃত্বে দেশ চালানোর ঘোষণা দেয়া আমান উল্লাহ আমান ও শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানিকেও। দিন শেষে আটকের সংখ্যাটি ছড়ায় ৩০০।
বিএনপি কার্যালয় থেকে জব্দ করা হয় ১৭০ বস্তা চালসহ রান্নার উপকরণ এবং কয়েক ডেকচি রান্না করা খিচুড়ি। ২৫ থেকে ৩০টি ককটেল উদ্ধার করে সেগুলো নিরাপদে বিস্ফোরণ করিয়ে নিষ্ক্রিয় করার কথাও জানানো হয়।
বুধবারের এই সংঘর্ষের দায় পুরোটাই বিএনপিকে দেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘তারা (নয়াপল্টনে বিএনপি) বিআরটিসির বাস পুড়িয়েছে। এটা তাদের টেস্ট ছিল। নেতা-কর্মীদের বলছি, সবাই প্রস্তুত থাকুন। মেহনতি মানুষের ওপর আঘাত করলে তাদের ক্ষমা নেই।’
‘ভোট চুরি নয়, আ.লীগে ভোট সংরক্ষণ করে’
আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ভোটে কারচুপির যে অভিযোগ বিএনপি গত কয়েক বছর ধরে করে আসছে, সেটিরও জবাব দেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘আওয়ামী লীগ জনগণের ভোট চুরি করে না। জনগণের ভোট জনগণের হাতে তুলে দেয়। বিএনপির স্বভাব তো যায় না। তারা ২০০১ সালে গ্যাস দেওয়ার প্রতিশ্রুতিতে ভোট চুরি করে ক্ষমতায় আসে।‘
বিএনপি ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের ওপর অত্যাচার নির্যাতন করেছিল অভিযোগ করে শেখ হাসিনা বলেন, তারা সেসবের প্রতিশোধ নেননি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সে সময় আমাদের নেতা-কর্মীদের ওপর অত্যাচার করা হয়েছে। এখানে নাসিম আছে, সাবের হোসেন চৌধুরীর ওপর যে অত্যাচার করা হয়, বিএনপি তো মনে করেছিল তারা মারা গেছে। বিএনপি আমাদের প্রতিটি নেতা-কর্মীর ওপর নির্যাতন করেছে।
‘২০০১ সালের নির্বাচনের পরে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের বাড়ি দখল করে পুকুর কেটে কলাগাছ লাগানো হয়েছিল। ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর আমরা প্রতিশোধ নিতে পারতাম, কিন্তু আমরা তা করিনি।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিএনপি ২০০১ সালে লবিস্ট নিয়োগ করেছিল। আমি, আমার বোন কোথায় টাকা রেখেছি খোঁজ করেছে। কিন্তু কিছুই পায়নি। আসলে তারা লুটে খেতে ক্ষমতায় এসেছিল কিন্তু আওয়ামী লীগ দিতে এসেছে।’
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যেদের মধ্যে সভায় অংশ নেন বেগম মতিয়া চৌধুরী, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান ও কামরুল ইসলাম।
যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকদের মধ্যে ছিলেন মাহবুব উল আলম হানিফ, হাছান মাহমুদ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম।
সাংগঠনিক সম্পাদকদের মধ্যে ছিলেন আহমদ হোসেন, বি এম মোজাম্মেল হক, এস এম কামাল হোসেন, মির্জা আজম, আফজাল হোসেন, সাখাওয়াত হোসেন শফিক।
আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক আব্দুস সবুর, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাশও সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন:দীর্ঘ ৩৬ বছর পর অনুষ্ঠিত হচ্ছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) নির্বাচন, হল ও হোস্টেল সংসদ নির্বাচন। এ নির্বাচনকে ঘিরে বুধবার সকাল থেকেই চবিতে ঈদের উৎসব বিরাজমান। শিক্ষার্থীরা দলে দলে শাটলে ও বাসে এসে সবুজের রাজ্য খ্যাত চবি ক্যাম্পাসে নামছেন। সকাল নয়টা থেকে ভোটগ্রহণ শুরু হয়ে এখনো চলমান রয়েছে। ভোট প্রদানের পর শিক্ষার্থীরা স্মার্টফোন হাতে ছবি, ভিডিও নিয়ে উল্লাসে মেতে ওঠেছেন। তবে এসব আনন্দের অংশ হতে পারেনি ২৪২ জন ভোটার।
দীর্ঘ ৩৬ বছর পর অনুষ্ঠিত হচ্ছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) নির্বাচন এবং হল ও হোস্টেল সংসদ নির্বাচন। এ নির্বাচনের কারণে বুধবার সকাল থেকেই চবি ক্যাম্পাসে উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে পড়ে। শাটল ট্রেন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে করে দলে দলে শিক্ষার্থীরা ছুটে আসেন সবুজে ঘেরা ক্যাম্পাসে।
সকাল ৯টা থেকে শুরু হওয়া ভোটগ্রহণ দুপুর পর্যন্ত উৎসবমুখর পরিবেশে চলতে থাকে। ভোট প্রদান শেষে শিক্ষার্থীরা স্মার্টফোনে ছবি ও ভিডিও ধারণ করে আনন্দ-উচ্ছ্বাস ভাগাভাগি করেন।
তবে এই আনন্দের অংশ হতে পারেননি ২৪২ জন শিক্ষার্থী, যারা বৈধ ছাত্র হয়েও ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।
চাকসু নির্বাচনে এবার ২৭ হাজার ৫০০ ভোটারের মধ্যে ২৪২ জন ভোটার রয়েছে পিএইচডি ও এমফিল গবেষক শিক্ষার্থী। যারা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন বলে একটি সূত্র জানিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়ায় নির্বাচন পরিচালনার সঙ্গেও তারা যুক্ত আছেন। এতে নৈতিকতার দিক থেকে ভোট প্রদান করতে পারবেন না তারা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক জানান, “চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট ২৭ হাজার ৫০০ ভোটারের মধ্যে ২৪২ জন পিএইচডি ও এমফিল পর্যায়ের শিক্ষার্থী। নিয়ম অনুযায়ী তারাও এবার ভোটার হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। ফলে এসব শিক্ষকদেরও ভোটার হিসেবে ধরা হয়েছে, যেহেতু তারা এখনো শিক্ষার্থী হিসেবে নিবন্ধিত।
তবে আমি নিজেও নির্বাচন পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত রয়েছি। ভোটকেন্দ্রের বাইরে নিরাপত্তা, হোস্টেল, হল ও প্রবেশপথসহ বিভিন্ন পয়েন্টে শিক্ষকরা দায়িত্ব পালন করছেন। তাই আমি মনে করি, ভোটার তালিকায় নাম থাকলেও আমাদের ভোট প্রদান করা নৈতিক হবে না। এ কারণেই সংশ্লিষ্ট সবাই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে আমি বিশ্বাস করি।”
২০ শতাংশ বাড়ি ভাড়ার দাবিতে দেশের বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের চলমান আন্দোলনে পুলিশের সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে রাজধানীর প্রেস ক্লাব এলাকায়। পুলিশের বাধার মুখে সেখান থেকে সরে তারা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অবস্থান নিয়েছেন।
রোববার (১২ অক্টোবর) দুপুরে সেখানে সরে গিয়ে ওই স্থান থেকেই তারা লাগাতার কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণ প্রত্যাশী জোটের সদস্য সচিব অধ্যক্ষ দেলাওয়ার হোসেন আজিজী বলেন, জনদুর্ভোগ এড়াতে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আমাদের লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি এখন থেকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে চলবে। প্রজ্ঞাপন জারি না হওয়া পর্যন্ত আমরা এখান থেকেই কর্মসূচি চালিয়ে যাব।
তিনি আরও বলেন, আমাদের শীর্ষ নেতারা এরইমধ্যে শহীদ মিনারে অবস্থান নিয়েছেন। যারা এখনো প্রেস ক্লাবে আছেন, তাদের অনুরোধ করছি মিছিলসহ শহীদ মিনারে চলে আসতে। আমরা এখান থেকেই আমাদের আন্দোলন পরিচালনা করব এবং বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে লাগাতার আন্দোলনকে সাজাবো ইনশাআল্লাহ।
অধ্যক্ষ আজিজী বলেন, আমরা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি—যতক্ষণ পর্যন্ত জাতীয়করণের প্রজ্ঞাপন জারি না হবে, আমরা শহীদ মিনার ছাড়ব না, ঢাকার রাজপথও ছাড়ব না। আলোচনার মাধ্যমে, সহযোগিতার মাধ্যমে প্রজ্ঞাপন নিয়েই বিজয়ী বেশে আমরা শ্রেণিকক্ষে ফিরব।
অন্যদিকে প্রেস ক্লাব এলাকা থেকে শিক্ষক নেতাদের সরাতে পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। এতে শিক্ষকরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। অনেকেই আবার প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টাও করেন। তবে এখন পর্যন্ত বড় ধরনের কোন সংঘর্ষের খবর পাওয়া যায়নি।
ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুক সোমবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে সিইসি এ এম এম নাসির উদ্দিনের সাথে বৈঠক করেন। ছবি: ফেসবুক
বাংলাদেশে আগামী বছর একটি অবাধ, সুষ্ঠু, বিশ্বাসযোগ্য এবং শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের জন্য যুক্তরাজ্যের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুক।
আজ সোমবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিনের সাথে বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।
সারাহ কুক বলেন, ‘যুক্তরাজ্য কয়েক মাস আগে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টার জাতীয় নির্বাচনের ঘোষণাকে স্বাগত জানায়। প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সাথে বৈঠকে খুব ভালো আলোচনা হয়েছে। আমাদের পক্ষ থেকে আগামী বছর বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু, বিশ্বাসযোগ্য এবং শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের জন্য যুক্তরাজ্যের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছি।'
তিনি বলেন, 'নির্বাচন কমিশন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এবং আমাদের আন্তর্জাতিক অংশীদারদের প্রচেষ্টার প্রশংসা করি। যুক্তরাজ্য বিশেষ করে জাতীয় নাগরিক শিক্ষা কর্মসূচির মাধ্যমে, বিশেষ করে দেশের দুর্বল গোষ্ঠীগুলির জন্য এবং ভোটগ্রহণ কর্মীদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনকে সহায়তা করছে। তাই আমাদের এজেন্ডা ছিল নির্বাচন কমিশনের সাথে যুক্তরাজ্যের সমর্থন নিয়ে আলোচনা করা। যেমনটি আমি বলেছি, জাতীয় নাগরিক শিক্ষা এবং ভোটগ্রহণ কর্মীদের প্রশিক্ষণের জন্যও আমরা কাজ করছি। এই বিষয়গুলো নিয়ে আজ নির্বাচন কমিশনের সাথে আলোচনা করেছি।'
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি বলেছি যে যুক্তরাজ্য আগামী বছর বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু, বিশ্বাসযোগ্য এবং শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে সমর্থন করছে।’
রাজধানীর উত্তরার কবি জসীমউদ্দীন রোডে যাত্রীবাহী বাসের ধাক্কায় এক মোটরবাইক চালক নিহত হয়েছেন। মোহাম্মদ আরমান মির্জা (২১) নামের ওই তরুণ কলেজ শিক্ষার্থী ছিলেন।
সোমবার ভোররাত ৪টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। পথচারীরা আহত আরমানকে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ভোর সাড়ে ৬ টার দিকে মারা যান।
নিহতের খালা নাজনীন আক্তার জানান, ‘খবর পেয়ে ঢাকা মেডিকেল জরুরি বিভাগে এসে আমার ভাগিনা আরমানের মরদেহ দেখতে পাই। সে আব্দুল্লাহপুরের নবাব হাবিবুল্লাহ কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেছে। গভীর রাতে আরমান মোটরবাইক চালিয়ে যাওয়ার সময় জসিম উদ্দিন রোডে বেপরোয়া গতির একটি বাসের ধাক্কায় গুরুতর আহত হয়।
তিনি আরও জানান, আরমানের বাড়ি চাঁদপুর জেলার হাজিগঞ্জ থানার পূর্ব হাতিআলা গ্রামে।
ঢামেক পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ পরিদর্শক মোহাম্মদ ফারুক বলেন, ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ ঢাকা মেডিকেল মর্গে রাখা হয়েছে। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট থানাকে জানানো হয়েছে।
উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় সৃষ্টিতব্য লঘূচাপের প্রভাবে রাজধানী ঢাকায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি এবং ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে। ইতোমধ্যে, রাত হতে রাজধানীতে বজ্রসহ মুষলধারে বৃষ্টির ফলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের বেশ কিছু এলাকায় অস্থায়ী জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের আওতাভুক্ত এলাকায় জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রতিটি ওয়ার্ডে ডিএসসিসির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের কর্মীরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এছাড়া, ওয়ার্ডভিত্তিক ইমার্জেন্সি রেসপন্স টিম (Emergency Response Team) কাজ করে চলেছে। গ্রীন রোড, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা, শান্তিনগর, বেইলি রোড, কাকরাইল, পল্টন, সাত মসজিদ রোড, ধানমণ্ডি এলাকার জলাবদ্ধতা ইতোমধ্যে সমাধান হয়েছে। তবে, পানি নির্গমনের আউটলেট অংশ এবং খাল-নদীর অংশের পানির লেভেল প্রায় একই হওয়ার ফলে পানি নিষ্কাশনের ধীরগতি বিদ্যমান থাকায় কিছু এলাকার পানি নামতে আরও কয়েক ঘণ্টা সময় লাগতে পারে। এ সব এলাকা থেকে অস্থায়ী পোর্টেবল পাম্পের মাধ্যমে দ্রুত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া, কমলাপুরে স্থাপিত হাই প্রেসার ভার্টিক্যাল পাম্পের মাধ্যমে দ্রুত পানি নামানোর কাজ চলমান রয়েছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষের ০১৭০৯৯০০৮৮৮ (01709900888) মাধ্যমে সার্বিক পরিস্থিতি তদারকি অব্যাহত রয়েছে।
রাজধানীতে গতকাল রাত থেকে শুরু হয়েছে ভারী বৃষ্টি। মধ্যরাত থেকে শুরু হওয়া অবিরাম বৃষ্টি আজ সোমবার সকালেও থামেনি। বৃষ্টির সঙ্গে ছিলো বজ্রপাতও। মুষলধারে হওয়া এই বৃষ্টিতে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে পানি জমেছে। ফলে সড়কে আটকে আছে গণপরিবহন। এতে সাতসকালেও ঘর থেকে কাজে বের হওয়া লোকজন পরেছেন ভোগান্তিতে।
এদিন সকাল সাড়ে ৭টার দিকে ধানমন্ডি, আসাদগেট, কলাবাগান, মোহাম্মদপুর, মিরপুর ১০, মিরপুর শেওড়াপাড়া, নিউমার্কেট, মগবাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় রাস্তায় পানি জমতে দেখা যায়। এসব এলাকায় কোথাও হাঁটুপানি পরিমাণ জমলেও আসাদগেট, মগবাজার, মিরপুরের শেওড়াপাড়ায় ছিল কোমরসমান পানি।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, রোববার দিবাগত রাত ১২টা থেকে সোমবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ৩৪ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে রাজধানীতে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, মৌসুমি বায়ুর অক্ষের বর্ধিতাংশ উত্তর প্রদেশ, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চল হয়ে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। এর একটি বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের ওপর মোটামুটি সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে মাঝারী অবস্থায় রয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে একটি লঘূচাপ সৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। পূর্ব মধ্যে বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন উত্তর বঙ্গোপসাগর এলাকায় আগামী ২৪ সেপ্টেম্বর আরেকটি লঘূচাপ সৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে এবং এটি ঘণীভূত হতে পারে।
এদিকে রাজধানীতে সকালে হঠাৎ বৃষ্টি হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন কর্মজীবী মানুষ। শ্যামলী থেকে তেজগাঁও সাতরাস্তায় আসতে গিয়ে আসাদগেট কোমরসমান পানিতে আটকা পড়েন ওবায়দুর রহমান। তিনি বলেন, সকালে বাসা থেকে অফিসে যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে বের হলেও বৃষ্টির কারণে সময়মত অফিসের জন্য বের হতে পারিনি। কোনোভাবে যাও বের হয়েছিলাম, তা পথের বিভিন্ন জায়গায় হাঁটুসমান থেকে কোমরসমান পানির জন্য আটকে থাকতে হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, রাস্তায় পানি জমে গণপরিবহন চলাচল বন্ধ হয়ে পরেছে। অফিসগামী লোকজনদের পরতে হয়েছে দুর্ভোগে।
এছাড়া শেওড়াপাড়া থেকে ফাহিম নামের এক তরুণ বলেন, বৃষ্টির কারণে গাড়ি পাচ্ছি না। রাস্তায় এত পরিমাণ পানি জমেছে যে, হেঁটে যাওয়ারও কোনো উপায় নেই। রিকশায়ও ভাড়া অনেক বেশি চাচ্ছে।
রোববার সন্ধ্যা ৬টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় এবং রংপুর, রাজশাহী ও ময়মনসিংহ বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারী ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সাথে ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কোথাও কোথাও মাঝারী ধরনের ভারী থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে।
সারাদেশে দিনের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।
প্রসঙ্গত, গতকয়েক দিন ধরেই রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় প্রচণ্ড ভ্যাপসা গরম ছিল। এ অবস্থায় গত শনিবার ও রোববার রাজধানীর আকাশ খানিকটা ঘোলাটে ছিল। তবে আজ সোমবার থেকে বৃষ্টি বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছিল।
রাজধানীর বনানীতে যাত্রা শুরু করলো ভ্রমণ ও পর্যটনভিত্তিক নতুন প্রতিষ্ঠান ট্রিপোলজি। শনিবার (২০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে জুই গার্ডেনে অবস্থিত ট্রিপোলজির অফিসে জমকালো আয়োজনের মধ্য দিয়ে এর উদ্বোধন করা হয়।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জনপ্রিয় অভিনেত্রী তাসনিয়া ফারিন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ট্রাভেল ব্লগার শিশির দেব। অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে আরও যোগ দেন ইউনিভার্সেল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা: আশীষ কুমার চক্রবর্ত্তী এবং কোরিওগ্রাফার গৌতম সাহা।
উদ্বোধনী আয়োজনে ছিল রিবন কাটিং, অফিসিয়াল ফটো সেশন এবং দর্শকদের জন্য বিশেষ মিট অ্যান্ড গ্রিট সেশন। অনুষ্ঠান ঘিরে ভ্রমণপ্রেমীদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ লক্ষ্য করা যায় এবং তারা বাংলাদেশের ভ্রমণ শিল্পে ট্রিপোলজির সম্ভাবনা নিয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
ট্রিপোলজির কো-ফাউন্ডার তাজরিন আখতার, আবু বক্কর সিদ্দিক ও তৌহিদুল ইসলাম জানান, তাদের লক্ষ্য হলো আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে বাংলাদেশে ট্রাভেল ইন্ডাস্ট্রিকে নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দেওয়া। কোম্পানির সিইও ইমতিয়াজ কাইসুল বলেন, “ট্রিপোলজি শুধুমাত্র একটি ট্রাভেল এজেন্সি নয়; আমরা চাই মানুষ যেন ভ্রমণের প্রতিটি ধাপে নিশ্চিন্ত সেবা পায়। ভিসা প্রসেসিং থেকে শুরু করে এয়ার টিকিট, হোটেল বুকিং ও হলিডে প্যাকেজ সবকিছুতেই আমরা সর্বোচ্চ পেশাদার মান নিশ্চিত করতে চাই।”
ট্রিপোলজি বর্তমানে প্রথম বিশ্বের দেশগুলোর ভিসা প্রসেসিংয়ে বিশেষ দক্ষতা অর্জন করেছে। পাশাপাশি সব ধরনের দেশি-বিদেশি হলিডে প্যাকেজ, এয়ার টিকিট, হোটেল বুকিং, থার্ড ওয়ার্ল্ড ভিসা প্রসেসিং ও স্টুডেন্ট ভিসা সংক্রান্ত সেবা দিচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারীরা আশা প্রকাশ করেন, ট্রিপোলজির উদ্যোগ বাংলাদেশের ভ্রমণশিল্পকে আরও গতিশীল করবে।
ঠিকানা: জুই গার্ডেন, হাউস ২/এ, লেভেল-৭, ব্লক এল, রোড ২/১, বনানী-১২১৩, ঢাকা।
মন্তব্য