অনুমতি ছাড়াই নয়াপল্টনেই সমাবেশ করার বিষয়ে বিএনপির পক্ষ থেকে ঘোষণা আসার পর পুলিশের সঙ্গে নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষ শেষে ঢাকার পুলিশ কমিশনার দলটিকে সতর্ক করে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, আইন অমান্য করার চেষ্টা করা হলে তারা সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেবেন। সেই সঙ্গে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গেলে দলটিকে সব ধরনের নিরাপত্তা দেয়ার নিশ্চয়তা দিয়েছেন।
তিনি এও বলেছেন, জননিরাপত্তা ও জনদুর্ভোগের কথা চিন্তা করে নয়াপল্টন দলীয় কার্যালয়ের সামনে বিএনপিকে সামাবেশের অনুমতি দেয়া যাবে না।
আগামী ১০ ডিসেম্বর শনিবার বিএনপি ঘোষিত এই সমাবেশের স্থল নিয়ে রাজনীতিতে উত্তাপের মধ্যে বুধবার সন্ধ্যায় ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে জরুরি সংবাদ সম্মেলন আসেন ঢাকার পুলিশ প্রধান।
তিনি বলেন, ‘পল্টনের সামনে ১০ লাখ লোকের জায়গা হবে না। সর্বোচ্চ এক লাখ লোক পল্টনে দাঁড়াতে পারবে। বাকি ৯ লাখ লোক ঢাকা শহরের বিভিন্ন রাস্তায় ছড়িয়ে পড়বে। যার উপর বিএনপির কোনো নিয়ন্ত্রণ থাকবে না। এতে জনদূর্ভোগ ও জননিরাপত্তা জন্য তাদের পল্টনে সমাবেশ করতে দেয়া হবে না।’
‘একই সঙ্গে এই ১০ লাখ লোক ঢাকার সমস্ত রাস্তা দখল করলে ঢাকাবাসীর জন্য একটা চরম দুর্ভোগের বিষয় হবে’-বলেন তিনি।
‘আইন অমান্য করলে বিএনপির বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে’- দলটির প্রতি সতর্কবার্তাও দিয়ে রাখেন রাজধানীর পুলিশ প্রধান।
ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘আমরা গোয়েন্দা সংস্থা এবং মিডিয়ার মাধ্যমে জানতে পেরেছি বিএনপি ঢাকা শহরে ১০ লাখ লোক জামাতের মাধ্যমে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে। কাজেই পার্টি অফিসের সামনে জনদুর্ভোগ করে এবং ঢাকার আইনশৃঙ্খলা বিঘ্ন করে তাদেরকে সেখানে অনুমতি দেয়া যাবে না।’
তিনি বলেন, ‘আপনারা যে কোনো খোলা মাঠে যেতে পারেন বা অন্য কোনো প্রস্তাব দিতে পারেন। অন্য প্রস্তাব হিসেবে তাদেরকে বলা হয় ইজতেমা মাঠ আছে, সেখানে আপনারা ১০ লাখ লোক জমায়াত করতে পারবেন। পূর্বাচলে বাণিজ্য মেলার মাঠ আছে, সেখানে যেতে পারেন।’
ঢাকার পুলিশ প্রধান বলেন, ‘সার্বিক দিক বিবেচনা করে তাদেরকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুমতি দেয়া হয়। পরে মিডিয়ার মাধ্যমে জানতে পারি তারা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করতে আগ্রহী না। তারা পল্টন বা তার আশেপাশে কোন রাস্তায় করতে আগ্রহী।
‘এ প্রসঙ্গে আমাদের ডিএমপির সুস্পষ্ট বক্তব্য হচ্ছে, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বা এর মতো কোনো খোলা মাঠে সমাবেশ করতে হবে। আমরা জনদুর্ভোগ এবং জননিরাপত্তা বিষয়ে অগ্রাধিকার দিয়ে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
‘সোহরাওয়ার্দী আসুন, নিরাপত্তার দায়িত্ব আমার
বিএনপি সোহরাওয়ারাদীতে সমাবেশ করলে সার্বিক নিরাপত্তা দেয়ার আশ্বাসও দেন ডিএমপি কমিশনার।
তিনি বলেন, ‘উনারা এর আগেও সোহরাওয়ার্দীতে সমাবেশ করেছেন। উনারা সোহরাওয়ার্দীতে মিটিং করলে সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্ব আমার। আমি নিরাপত্তা দেবো। উনাদের নিরাপত্তার সামান্যতম কোনো ঘাটতি হবে না। কোনো প্রকার বাধা দেয়া হবে না।’
বুধবার সংঘর্ষের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আজকে অফিশিয়াল ডে, তারা নয়াপল্টনে রাস্তা দখল করে সমাবেশ করছে। গাড়ি চলাচলের বিঘ্ন ঘটিয়ে... কোনো সমাবেশ নাই, এটা তো আইনানুগ কাজ উনারা করেন নাই।’
ঢাকার প্রবেশমুখে চৌকি বসিয়ে যাত্রীদের নামিয়ে মোবাইল ফোনে বিএনপির কোনো ছবি বা নেতাদের নম্বর পেলে তাকে আটক করার বিষয়ে দলটির পক্ষ থেকে যে অভিযোগ এসেছে, সেটিরও জবাব দেন ডিএমপি প্রধান।
তিনি বলেন, ‘এ ধরনের কোনো তথ্য নেই। আমাদের নিয়মিত চেকপোস্ট চলছে। কারণ হলো, সামনে ১ থেকে ১৫ তারিখ একটা বিশেষ অভিযান ঘোষণা করেছি। এই মাসে ১৪ ডিসেম্বর, ১৬ ডিসেম্বর, ২৫ ডিসেম্বর আছে, বড় বড় ৫ টা প্রোগ্রাম আছে। কোনো নাশকতা যেন না ঘটে সেজন্য আমরা ঢাকার অভিমুখে চেকপোস্ট বসিয়েছি। কোনো যাত্রীর ঢাকা আসা আমরা বন্ধ করি নাই।’
অনুমতি ছাড়াই সমাবেশের ঘোষণা বিএনপির
নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের দাবিতে গত ১২ অক্টোবর থেকে বিএনপি ধারাবাহিকভাবে প্রতিটি বিভাগীয় শহরে সমাবেশ করে আসার পর আগামী ১০ ডিসেম্বর শনিবার রাজধানীতে জমায়েতের ঘোষণা দিয়েছে।
তবে এই সমাবেশের স্থল নিয়ে তৈরি হয়েছে বিরোধ। বিএনপি সমাবেশ করতে চায় নয়াপল্টনে। কিন্তু পুলিশ অনুমতি দিয়েছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। কিন্তু তারা সেখানে যাবে না।
পুলিশ জানিয়েছে, সড়কে সমাবেশ করা যাবে না। এরপর বিএনপি আরামবাগে সমাবেশ করার কথা জানায় মৌখিকভাবে। তবে সে আবেদন মৌখিকভাবেই নাকচ করা হয়।
সমাবেশ স্থলের কথা না জানিয়েই বিএনপি জনসভায় অংশ নেয়ার প্রচার চালাচ্ছিল। এর মধ্যে নেতা-কর্মীরা নয়াপল্টনে অবস্থানও নিতে থাকে।
বিএনপির পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলনে এসে স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস দুপুরের আগে বলেন, তারা যেখানে অনুমতি চেয়েছেন, সমাবেশ সেখানেই হবে। নয়াপল্টনের বিকল্প কোনো প্রস্তাব থাকলে সেটি দিতে হবে পুলিশ বা সরকারকেই।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘যদি গ্রহণযোগ্য পছন্দনীয় জায়গা বের না করে তাহলে পল্টনই আমাদের পছন্দের জায়গা। পল্টনেই হবে সমাবেশ।’
পুলিশ বাধা দিলে কী হবে, জানতে চাইলে জবাব আসে, ‘পুলিশের কাজ পুলিশ করবে, আমাদের কাজ আমরা করব।
আব্বাসের ঘোষণার পরপরই সংঘর্ষ
বিএনপির সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী পর্ষদের নেতার পক্ষ থেকে এই বক্তব্য আসার কিছুক্ষণ পরেই শুরু হয় সংঘর্ষ।
নেতা-কর্মীরাও নয়াপল্টন ঘিরে জমায়েত হচ্ছিল আগের রাত থেকেই। সেখানে দুটি ট্রাকে অস্থায়ী মঞ্চ করে সকাল থেকে চলছিল বক্তৃতা। জনসাধারণকে শনিবারের সমাবেশে যোগ দেয়ার আহ্বানের পাশাপাশি বিতরণ করা হচ্ছিল লিফলেট। এক পর্যায়ে নেতা-কর্মীদের চাপে নয়াপল্টনের সামনের সড়ক লোকে লোকারণ্য হয়ে যায়।
সকাল থেকে কার্যালয় ঘিরে ছিল শ খানেক পুলিশ। জড়ো হওয়া নেতা-কর্মীদের চাপে সামনের সড়কের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হলে দুপুরের দিকে তারা এসে হস্তক্ষেপ করে। তখন শুরু হয় ধাক্কাধাক্কি।
বিএনপির নেতা-কর্মীরা ছুড়তে থাকে ইটপাটকেল। পুলিশ কাঁদানে গ্যাস, রাবার বুলেট ছুড়ে দেয় জবাব।
মিনিট দশেক এই সংঘর্ষ চলে। বেলা আড়াইটার দিকে ঘটনাস্থলে আসে পুলিশের শ দুয়ের রিজার্ভ ফোর্স। আসে দুটি সাঁজোয়া গাড়িও। কাঁদানে গ্যাসের কয়েকটি ভ্যানও আসে সেখানে।
বিএনপি নেতা-কর্মীরা সড়কে অবস্থান নিয়ে সমাবেশ করতে থাকলে পুলিশ তাদের সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে। শুরু হয় সংঘর্ষ।
বাড়তি পুলিশ আসার পর বাহিনীটির সদস্যরা ব্যাপক আকারে কাঁদানে গ্যাস ও রাবার বুলেট ছুড়তে থাকেন। একপর্যায়ে বিএনপির নেতা-কর্মীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যান। কেউ কেউ দলীয় কার্যালয়ে ঢুকে পড়েন। সেখানেও কাঁদানে গ্যাস ছোড়া হয়।
সেখানে আহতদের মধ্যে একজনের মৃত্যু হয় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে।
পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হওয়ার পর বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি কার্যালয় থেকে বের হয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশ কার্যালয়ে যেতে চান। পুলিশই তাকে সঙ্গে নিয়ে যায় সেখান থেকে।
বেলা ৩টার দিকে আসেন সোয়াট সদস্যরা। এরপর শুরু হয় তাদের টহল। ততক্ষণে নেতা-কর্মীরা আর সড়কে ছিলেন না।
বিকেল চারটার দিকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর যান নয়াপল্টনে। তিনি পুলিশের আচরণের প্রতিবাদে কার্যালয়ের সামনের ফুটপাতে বসে যান। সঙ্গে ছিলেন ব্যক্তিগত সহকারী মোহাম্মদ ইউনুস।
বেলা পাঁচটার দিকে পুলিশ সদস্যরা বিএনপি কার্যালয়ে দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে। সেখানে অবস্থানকারী দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীকে গ্রেপ্তার করা হয়। গত ১ ডিসেম্বর তার বিরুদ্ধে জারি হয়েছিল গ্রেপ্তার পরোয়ানা।
রিজভী ছাড়াও আরও কয়েকজন নেতাকে আটকের কথা জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস উইং সদস্য শায়রুল কবির খান।
আরও পড়ুন:ঈদুল আজহায় টানা ছুটির মাঝে বৃষ্টি হওয়ায় ঢাকার বাতাস মোটামুটি স্বাস্থ্যকর ছিল। তবে গত কয়েকদিন ধরে বৃষ্টিহীন শুষ্ক পরিবেশ আর ক্রমেই রাজধানীর পুরনো ভিড় বাড়তে থাকায় দূষণও বাড়ছে সমান তালে।
রবিবার (১৫ জুন) সকাল ৯টার দিকে দেখা যায়, বিশ্বের দূষিত শহরগুলোর তালিকায় ফের শীর্ষস্থানগুলোতে জায়গা করে নিয়েছে ঢাকা। এ সময়ে ১৪২ একিউআই স্কোর নিয়ে বিশ্বের দ্বিতীয় দূষিত বাতাসের শহর ছিল বাংলাদেশের রাজধানী, সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য যা অস্বাস্থ্যকর।
এ সময় ১৫৩ স্কোর নিয়ে শীর্ষ দূষিত শহর ছিল ইন্দোনেশিয়ার মেদান। এ ছাড়া ১২৬ ও ১২৪ স্কোর নিয়ে ঢাকার পরেই ছিল যথাক্রমে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই ও মিসরের কায়রো।
কণা দূষণের একিউআই মান যদি ০ থেকে ৫০-এর মধ্যে থাকে, তবে তা ‘ভালো’ হিসেবে বিবেচিত হয়। ৫১ থেকে ১০০-এর মধ্যে হলে সেটি ‘মাঝারি’।
একিউআই স্কোর ১০১ থেকে ১৫০ হলে ‘সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর’ বলে গণ্য করা হয়। এই পর্যায়ে সংবেদনশীল ব্যক্তিদের দীর্ঘ সময় বাইরে পরিশ্রম না করার পরামর্শ দেওয়া হয়। এ ছাড়া ১৫১ থেকে ২০০ হলে তা ‘অস্বাস্থ্যকর’, ২০১ থেকে ৩০০ হলে ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ এবং ৩০১-এর বেশি হলে তা ‘বিপজ্জনক’ হিসেবে বিবেচিত হয়, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি সৃষ্টি করে।
বাংলাদেশে একিউআই সূচক নির্ধারিত হয় পাঁচ ধরনের দূষণের ভিত্তিতে— বস্তুকণা (পিএম১০ ও পিএম২.৫), নাইট্রোজেন ডাই-অক্সাইড (এনও₂), কার্বন মনো-অক্সাইড (সিও), সালফার ডাই-অক্সাইড (এসও₂) ও ওজোন।
ঢাকা দীর্ঘদিন ধরেই বায়ুদূষণজনিত সমস্যায় ভুগছে। শীতকালে এখানকার বায়ুমান সাধারণত সবচেয়ে খারাপ থাকে, আর বর্ষাকালে তুলনামূলকভাবে উন্নত হয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) জানিয়েছে, বায়ুদূষণের কারণে প্রতিবছর বিশ্বে আনুমানিক ৭০ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়। এসব মৃত্যুর প্রধান কারণ হলো স্ট্রোক, হৃদরোগ, দীর্ঘস্থায়ী শ্বাসকষ্ট (সিওপিডি), ফুসফুসের ক্যান্সার এবং শ্বাসযন্ত্রের তীব্র সংক্রমণ।
রাজধানীর উত্তরায় র্যাব পরিচয়ে মোবাইল আর্থিক সেবা প্রতিষ্ঠান ‘নগদের’ এক পরিবেশকের এক কোটি ছিনতাইয়ের অভিযোগ উঠেছে। শনিবার (১৪ জুন) সকাল ৮টা ৫২ মিনিটে উত্তরা ১৩ নম্বর সেক্টরের ১২ নম্বর সড়কে এই ঘটনা ঘটেছে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) সূত্র এমন তথ্য নিশ্চিত করেছে।
পুলিশ সূত্রে জানায়, ‘আব্দুল খালেক নয়ন নগদের একজন পরিবেশক। তিনি উত্তরা ১৩ নম্বর সেক্টরের একটি ফ্লাটে থাকেন। শনিবার সকালে তিনি তার চারজন এমপ্লয়িকে দুইটি মোটরসাইকেলযোগে বাসার পাশেই পরিবেশক অফিসে পাঠাচ্ছিলেন। সাথে এক কোটি টাকার বেশি ছিল।’
‘তাদের বহনকারী মোটরসাইকেল দুটি বারো নম্বর রোড ক্রস করে যখন তেরো নম্বর রোডে ঢুকছিল, তখন ওৎপেতে থাকা একটি কালো রংয়ের মাইক্রোবাস তাদের গতি রোধ করে। মাইক্রোবাস থেকে র্যাবের পোশাক পরিহিত তিন থেকে চারজন নেমে এসে টাকার ব্যাগ বহনকারী মোটরসাইকেল আরোহীদের ধাওয়া করে।’
পুলিশ আরও জানায়, এদের মধ্যে একজন আরোহী দৌড়ে পালিয়ে গেলেও তিনজনকে টাকার ব্যাগসহ তারা মাইক্রোবাসে তুলে নেয়। পরবর্তীতে তারা উত্তরা সতেরো নম্বর সেক্টরে নগদ মাইক্রোবাস থেকে তাদের ফেলে দিয়ে টাকার ব্যাগ সহ পালিয়ে যায়।
যোগাযোগ করা হলে উত্তরা ডিভিশনের ডেপুটি কমিশনার মইদুল ইসলাম ইউএনবিকে জানান, ‘ঘটনার পরপরই তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। সিসিটিভির ফোটেজ সংগ্রহ করেছেন। ছিনতাইকারীদের শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে।’
ঈদ উপলক্ষে লম্বা ছুটিতে বেশ কিছুদিন ধরে একপ্রকার ফাঁকা হয়ে গেছে শহর ঢাকা। সড়কগুলোতে নেই যানবাহনের চাপ; স্কুল-কলেজ, অফিস-আদালতও বন্ধ; রাস্তায় লোকজনও হাতেগোনা। এই অবস্থায় গত কয়েকদিন বৃষ্টি কমে গেলেও রাজধানীর বাতাসের মানে খুব বেশি অবনতি হয়নি।
বৃহস্পতিবার (১২ জুন) সকাল ১০টার দিকে ঢাকার বাতাসের একিউআই স্কোর ছিল মাত্র ৬৬। আর দূষিত শহরের তালিকায় ঢাকার অবস্থান আরও অবাক হওয়ার মতো। প্রতিনিয়ত বায়ুদূষণে শীর্ষ শহরগুলোর তালিকায় জায়গা করে নিলেও ঢাকার অবস্থান আজ ৫৫তম।
কণা দূষণের একিউআই মান যদি ০ থেকে ৫০-এর মধ্যে থাকে, তবে তা ‘ভালো’ হিসেবে বিবেচিত হয়। ৫১ থেকে ১০০-এর মধ্যে হলে সেটি ‘মাঝারি’। ঢাকার বাতাস আজ মাঝারি হলেও ‘ভালো’ থেকে খুব বেশি দূরে নয়।
এই সময়ে ৬৭ একিউআই স্কোর নিয়ে দূষিত শহরের তালিকার ৫২তম স্থানে ছিল স্পেনের বার্সেলোনা, ৫০তম স্থানে সুইজারল্যান্ডের বেয়ার্ন, ৬৮ স্কোর নিয়ে ৪৯তম স্থানে যুক্তরাষ্ট্রের সল্ট লেক সিটি, ৭০ ও ৭১ স্কোর নিয়ে ৪৪ ও ৪৩তম স্থানে নিউইয়র্ক ও ওয়াশিংটন ডিসি, ৭৩ স্কোর নিয়ে ৩৮তম স্থানে কানাডার টরেন্টো, ৮০ স্কোর নিয়ে ২৭তম দূষিত শহর শিকাগো, ৯৯ স্কোর নিয়ে ১৫তম স্থানে ইতালির রোম এবং ১২৮ স্কোর নিয়ে তালিকার সপ্তম স্থানে রয়েছে মিলান।
তবে ১৬৮ একিউইউ স্কোর নিয়ে এই সময়ে বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহর ছিল ভারতের দিল্লি। ১৬২, ১৫৬ ও ১৩৭ স্কোর নিয়ে এর পরের তিন দূষিত শহর যথাক্রমে ইরাকের বাগদাদ, পাকিস্তানের লাহোর ও সৌদি আরবের রিয়াদ।
একিউআই স্কোর ১০১ থেকে ১৫০ হলে ‘সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর’ বলে গণ্য করা হয়। এই পর্যায়ে সংবেদনশীল ব্যক্তিদের দীর্ঘ সময় বাইরে পরিশ্রম না করার পরামর্শ দেওয়া হয়। এ ছাড়া ১৫১ থেকে ২০০ হলে তা ‘অস্বাস্থ্যকর’, ২০১ থেকে ৩০০ হলে ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ এবং ৩০১-এর বেশি হলে তা ‘বিপজ্জনক’ হিসেবে বিবেচিত হয়, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি সৃষ্টি করে।
বাংলাদেশে একিউআই সূচক নির্ধারিত হয় পাঁচ ধরনের দূষণের ভিত্তিতে— বস্তুকণা (পিএম১০ ও পিএম২.৫), নাইট্রোজেন ডাই-অক্সাইড (এনও₂), কার্বন মনো-অক্সাইড (সিও), সালফার ডাই-অক্সাইড (এসও₂) ও ওজোন।
ঢাকা দীর্ঘদিন ধরেই বায়ুদূষণজনিত সমস্যায় ভুগছে। শীতকালে এখানকার বায়ুমান সাধারণত সবচেয়ে খারাপ থাকে, আর বর্ষাকালে তুলনামূলকভাবে উন্নত হয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) জানিয়েছে, বায়ুদূষণের কারণে প্রতিবছর বিশ্বে আনুমানিক ৭০ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়। এসব মৃত্যুর প্রধান কারণ হলো স্ট্রোক, হৃদরোগ, দীর্ঘস্থায়ী শ্বাসকষ্ট (সিওপিডি), ফুসফুসের ক্যান্সার এবং শ্বাসযন্ত্রের তীব্র সংক্রমণ।
এডিস মশার বিস্তার রোধে তাৎক্ষণিক ফল পেতে ১৪ জুন থেকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন(ডিএসসিসি) এলাকায় দ্বিগুণহারে কীটনাশক প্রয়োগের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
এডিস মশার বিস্তার রোধে করণীয় নির্ধারণ ও কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন ও করোনা প্রতিরোধে ডিএসসিসি প্রশাসক মো. শাহজাহান মিয়ার সভাপতিত্বে আজ রাজধানীর ওয়াসা ভবনের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত এক সভায় এই সিদ্ধান্ত হয়।
সভায় অ্যাডাল্টিসাইডিং কার্যক্রমে (ফগার মেশিন দ্বারা পরিচালিত) বর্তমানে ব্যবহৃত ৩০ লিটার কীটনাশকের পরিবর্তে দ্বিগুণ পরিমাণ অর্থাৎ ৬০ লিটার কীটনাশক প্রতিদিন ব্যবহারের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
এ ছাড়া অঞ্চলভিত্তিক ডেঙ্গু মনিটরিং টিম গঠন ও জনবল ঘাটতি পূরণে উদ্যোগসহ জনগুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।
সভায় মশক কর্মীদের সকাল ও বিকেলে নিয়মিত উপস্থিতি নিশ্চিত করা, সঠিক অনুপাতে কীটনাশক প্রয়োগ যাচাই, মোবাইল কোর্ট পরিচালনা এবং মশক কর্মী দ্বারা বাড়ির ভিতর, আঙিনা ও ছাদের জমানো পানিসহ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিতকরণে আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তাকে আহ্বায়ক এবং সহকারী স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে সদস্য সচিব করে অঞ্চল ভিত্তিক ডেঙ্গু মনিটরিং টিম গঠনের সিদ্ধান্ত হয়।
এছাড়া, ডেঙ্গু ও করোনা বিষয়ে ডিএসসিসি সহকারী স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. ফারিয়া ফয়েজকে ফোকাল পয়েন্ট কর্মকর্তা হিসেবে মনোনীত করা হয়।
সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী চলতি মাসের মধ্যে কীটতত্ত্ববিদদের সমন্বয়ে নগর ভবনে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে এবং প্রতিদিনের ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের হালনাগাদ তথ্য ডিএসসিসির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। মশক নিধনে জনবল ঘাটতি পূরণে নিয়োগ প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখাসহ ডেঙ্গু ও করোনা রোধে জনসচেতনতা বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
সভায় ডিএসসিসি প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. মো. জিল্লুর রহমান, সচিব মুহাম্মদ শফিকুল ইসলাম, প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা এয়ার কমডোর মো. মাহাবুবুর রহমান তালুকদার, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. নিশাত পারভীনসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানাধীন বিভিন্ন এলাকায় বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে বিভিন্ন অপরাধে জড়িত ৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে ডিএমপির মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ।
আজ মঙ্গলবার ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মোহাম্মদপুর জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) এ কে এম মেহেদী হাসান গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
গ্রেপ্তাররা হলেন- সেলিম (৪৫), রফিক (৪০), সাদ্দাম (৩০), উজ্জ্বল (৩২) ও শামীম (২৫)।
গতকাল সোমবার (৯জুন) মোহাম্মদপুর থানা এলাকার বিভিন্ন স্থানে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এদের মধ্যে রয়েছে ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি ১জন, মাদক মামলায় ১জন, দূস্যতার মামলায় ১জন এবং অন্যান্য মামলায় ২জন।
গ্রেপ্তার হওয়া আসামিদের আদালতে পাঠানো হয়েছে।
রাজধানীর পল্লবী থানার মিল্লাত ক্যাম্প এলাকায় পূর্বশত্রুতার জেরে এক যুবককে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার সকাল ৭টার দিকে পুলিশ খবর পেয়ে তার মরদেহ উদ্ধার করেছে।
নিহত ওই যুবকের নাম রাকিবুল হাসান সানি (২৯)। ভোর ৪টা থেকে ৫টার মধ্যেই এই হত্যাকাণ্ড ঘটে থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তার বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও মাদক চক্রে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে।
এ বিষয়ে পল্লবী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা সকাল সাতটার দিকে খবর পেয়ে মরদেহ উদ্ধার করেছি। পরে মরদেহ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে এবং পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ জানানো হবে।’
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মাদক বিক্রির আধিপত্য বিস্তার ও দ্বন্দ্বকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে হত্যা করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে রাতের আঁধারে হত্যাকারীরা কীভাবে ঘটনাটি ঘটিয়েছে; তা এখনও স্পষ্ট নয়।
নিহতের পরিবারের দাবি, সানি একজন অটোরিকশাচালক ছিলেন। পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ, গেল রমজান মাসেও একটি সংঘবদ্ধ সন্ত্রাসী চক্র তার ওপর হামলা চালিয়েছিল।
ঘটনার পর থেকে মিল্লাত ক্যাম্প এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে এবং এলাকায় পুলিশ ও সিআইডি সদস্যরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছেন।
গতকাল শনিবার পবিত্র ঈদুল আজহার দিনে বন্ধ থাকার পর আজ রোববার থেকে ফের চালু হয়েছে মেট্রোরেল। তবে মেট্রোতে কোরবানির পশুর চামড়া, কাঁচা বা রান্না করা মাংস পরিবহন করা যাবে না।
রোববার সকাল ৮টা থেকে মেট্রোরেল চলাচল শুরু হয়।
ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) সূত্রে জানা যায়, আজ (রোববার) প্রতি ৩০ মিনিট পরপর ট্রেন চলছে। আগামীকাল সোমবার থেকে মেট্রোরেল সরকারি ছুটির দিনের সময়সূচি অনুযায়ী চলাচল করবে।
গত মঙ্গলবার ডিএমটিসিএলের পরিচালক (প্রশাসন) এ কে এম খায়রুল আলমের স্বাক্ষর করা এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, মেট্রোরেলে কোরবানির পশুর চামড়া, কাঁচা বা রান্না করা মাংস পরিবহন করা যাবে না। মেট্রো স্টেশনের প্রতিটি গেটে যাত্রীদের যথাযথভাবে তল্লাশি করা হবে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, কোনো যাত্রীর কাছে কাঁচা বা রান্না করা মাংস পাওয়া গেলে তাৎক্ষণিক তার মেট্রো স্টেশনে প্রবেশ আটকে দেওয়া হবে। মেট্রোরেলের নিরাপত্তা কর্মীদের এসব নির্দেশনা কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করতেও বিজ্ঞপ্তিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
মন্তব্য