নয়াপল্টনে শনিবারের সমাবেশ করার অনুমতি না দিলে বিকল্প ও গ্রহণযোগ্য জায়গার প্রস্তাব আওয়ামী লীগ বা সরকারকে দিতে হবে বলে বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। বলা হয়েছে, যদি বিকল্প জায়গার প্রস্তাব করা না হয়, তাহলে নয়াপল্টনেই সমাবেশ হবে।
রাজধানীতে সমাবেশ করার মতো ফাঁকা জায়গাগুলো আওয়ামী লীগ সরকারই বন্ধ করেছে জানিয়ে দলটির সংবাদ সম্মেলনে এ-ও বলা হয়েছে যে ক্ষমতাসীন দল মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকারগুলো বন্ধ করতে চায়।
নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের দবিতে গত ১২ অক্টোবর থেকে বিএনপি বিভাগীয় শহরগুলোতে যে সমাবেশ করে আসছে, তার ধারাবাহিকতায় ১০ ডিসেম্বর রাজধানীতে যে সমাবেশ ডাকা হয়েছে, সেটি নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে ভেন্যু জটিলতায়।
বিএনপি নয়াপল্টনে এই সমাবেশ করতে চায়, কিন্তু সড়কে সমাবেশ করতে দিতে নারাজ সরকার। পুলিশ অনুমতি দিয়েছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে, তবে সেখানে যেতে চায় না বিরোধী দলটি। তারা নয়াপল্টনের বিকল্প হিসেবে আরামবাগ চাইলেও সেটিও কার্যত নাকচ করে দেয়া হয়েছে।
সমাবেশের তিন দিন বাকি থাকতে বিএনপি যে প্রচার চালাচ্ছে, সেই লিফলেটে সমাবেশস্থলের নামও উল্লেখ নেই।
এই অবস্থায় দলের পক্ষ থেকে বুধবার নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, ‘যদি সরকার মনে করে আমাদের (সমাবেশ) করতে দেবে না, আমরা আমাদের কর্মীদের বলেছি, আমাদের সমাবেশ হবে শান্তিপূর্ণ। এটা কোনো রকম লগি-বৈঠার মিটিং নয়, এটা কোনো মানুষ হত্যার মিটিং নয়, এটা কোনো অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করার মিটিং নয়। এটা হলো একটা শান্তিপূর্ণ মিটিং, জনগণের দাবি আদায়ের লক্ষ্যে। জনগণের ভোটাধিকার আদায়ের লক্ষ্যে, জনগণের পেটে ভাতের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে এই সমাবেশ।
‘বাধার সৃষ্টি করলে যদি কোনো পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়, তাহলে সরকার দায়ী থাকবে, এ কথা আমরা পরিষ্কার বলে দিতে চাই।’
এই সংবাদ সম্মেলনগুলো সাধারণত দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী করে থাকেন। তবে তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হওয়ায় তিনি এখন আত্মগোপনে।
আব্বাস বলেন, ‘আমরা প্রস্তাব দিয়েছি, বিকল্প প্রস্তাব আওয়ামী লীগকেই দিতে হবে। গ্রহণযোগ্য এবং বিকল্প প্রস্তাব আওয়ামী লীগ অথবা সরকারকেই দিতে হবে। অথবা আমাদের প্রস্তাবকে মেনে নিতে হবে, আমরা সভা করব।
‘আমাদের কার্যক্রম চলছে, আমাদের কার্যক্রম চলবে, এটা কেউ ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না। ঢাকায় সমাবেশ আমরা করব।'
সরকার যদি বিকল্প আর কোনো প্রস্তাব না দেয় তাহলে কী হবে- এমন প্রশ্নে আব্বাস বলেন, ‘যদি গ্রহণযোগ্য পছন্দনীয় জায়গা বের না করে তাহলে পল্টনই আমাদের পছন্দের জায়গা। পল্টনেই হবে সমাবেশ।’
পুলিশ বাধা দিলে কী হবে, জানতে চাইলে জবাব আসে, ‘পুলিশের কাজ পুলিশ করবে, আমাদের কাজ আমরা করব।
‘তবে পুলিশ যেন দলীয় না হয়ে যায়, পুলিশ যেন কোনো দলের হাতিয়ার না হয়ে যায়। তাদেরকে নিরপেক্ষ থাকতে হবে। তাদেরকে মনে রাখতে হবে তারা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের চাকরি করেন, আওয়ামী লীগের চাকরি তারা করে না।’
বিশৃঙ্খলা হলে দায় আওয়ামী লীগের
বিএনপির সমাবেশকে ঘিরে নয়াপল্টনে বোমাবাজির শঙ্কা নিয়ে একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদনেরও সমালোচনা করেন আব্বাস।
তিনি বলেন, ‘আজকের পত্রিকায় এসেছে, বিএনপি-জামায়াত বোমাবাজি করবে। আচ্ছা পৃথিবীর কোনো বিবেকবান মানুষ কী বলবে, আমার সভা আমরা করব, শান্তিপূর্ণ সভা করব, গত তিন মাস ধরে সভা করছি, শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করছি, কোনো ঝামেলা হয়নি, এখন আমরা বোমাবাজি করব?
‘আমরা বলতে চাই, যদি কোনো ধরনের ঘটনা ঘটে, এর জন্য সম্পূর্ণভাবে আওয়ামী লীগ দায়ী হবে। এটা আওয়ামী লীগ করছে। বোমাবাজির ঘটনা সৃষ্টি করছে, জন্ম দিয়েছে আওয়ামী লীগ। এখনও তারা সভা-সমাবেশ নষ্ট করার জন্য একই প্রক্রিয়া অবলম্বন করছে।’
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘আমাদের কর্মসূচি হবে শান্তিপূর্ণ। গণসমাবেশ ঘিরে একটি রিকশার টায়ার বার্স্ট হলেও দায় সরকারের।’
‘সড়কে সমাবেশ কেউ করতে না পারলে বিএনপিও করবে না’
এই অবস্থায় দলের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলনে এসে স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, পুলিশ যদি বলে কোনো দল সড়কে সমাবেশ করতে পারবে না, তাহলে তারা মেনে নেবেন। তবে আপাতত তাদের সমাবেশ নয়াপল্টনেই হবে।
তিনি বলেন, ‘বিএনপি সমাবেশ করলে সরকারের বক্তব্য হলো এটা বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হতে পারে। ছাত্রলীগের লোকেরা যখন মিটিং করে, তখন পুলিশ বলে দিচ্ছে এই রাস্তা থেকে এই রাস্তা, এই রাস্তা থেকে এই রাস্তা বন্ধ থাকবে। সেখানে কোনো রকম ঝামেলা হয় না।
‘আমরাও এ রকম চাই। আমরা যখন নয়াপল্টনে মিটিং করব, তখন পুলিশ দয়া করে কিছু রাস্তা, যেখান দিয়ে পাবলিক চলাচল করতে পারবে সেটা বলে দিক। বলে দিক, আপনারা এই রাস্তায় চলাচল করবেন, এই রাস্তা বন্ধ থাকবে। আইন সবার জন্য সমান হওয়া উচিত।
‘কিন্তু তারা সেটা না করে বিএনপির বেলায় করে এক রকম, আওয়ামী লীগের বেলায় করে আরেক রকম। ছাত্রলীগের বেলায় করে এক রকম, ছাত্রদলের বেলায় করে আরেক রকম। এমন তো হতে দেয়া যায় না।’
বিএনপি নেতা বলেন, ‘এমন যদি করা হয় যে, কেউ রাস্তায় মিটিং করতে পারবে না, আমরা এক শ ভাগ মেনে নেব। তবে সেই নিয়ম সবার জন্য হতে হবে। আপাতত আমরা আমাদের সমাবেশের জন্য যে আবেদন করেছি, সে আবেদনের স্থানটা ঠিক আছে। আমরা সেখানেই সমাবেশ করব।’
মাঠ তো আ.লীগই বন্ধ করেছে
সমাবেশের মাঠ হিসেবে ব্যবহার হতো, এমন ফাঁকা জায়গাগুলো আওয়ামী লীগের আমলেই বন্ধ হয়েছে বলেও জানান মির্জা আব্বাস।
পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে তাদের আলোচনার বিষয়ে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘অনেক নতুন নতুন কর্মকর্তা হয়েছে তো, ঢাকায় কোথায় কোথায় মাঠ আছে, কোথায় কোথায় মাঠ ছিল, এটা তারা জানে না। কোথায় কোথায় সভা করতে হবে, এটা তারা জানে না। আমাদের এমন এমন সব জায়গার কথা বলছে, যেখানে এক সময় মাঠ ছিল, এখন নাই।
‘উত্তরার কথা বলে, ওখানে তো মাঠই নেই এখন, মার্কেট হয়ে গেছে। ফুলবাড়ীয়াতে মাঠ ছিল, আমরা সেখানে মিটিং করেছি, এখন তো মাঠ নেই, মার্কেট হয়ে গেছে। আওয়ামী লীগই তো করেছে, আমরা তো করি নাই।’
আব্বাস বলেন, ‘জনসভা করার, কথা বলার যে অধিকারগুলো আছে, আছে সেটাকে বন্ধ করে দেয়ার জন্য সকল মাঠ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। ঐতিহাসিক পল্টন ময়দান, মুক্তাঙ্গন... ঐতিহাসিক পল্টন ময়দানে আমি ভাসানীর সভা দেখেছি, মরহুম শেখ মুজিবুর রহমানের সভা দেখেছি। এখানে আমাদের রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সভা দেখেছি, বহু সভা দেখেছি ছোটবেলা থেকে। বাবার সঙ্গে গিয়েছি মিটিংগুলোতে। এখন সেখানে সভা করার জায়গা নাই, আউটার স্টেডিয়াম করে ফেলেছেন।’
বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের সামনের গলিটি ২০টা বছর বন্ধ করে দেয়া হয়েছে উল্লেখ করে বিএনপি নেতা বলেন, ‘জনগণের অসুবিধা হয় না? আমরা যখন ছোট ছিলাম, গুলিস্তান মার্কেটে যেতাম শপিং করার জন্য। সেখানে ৩২টি মার্কেট, রাস্তা বন্ধ। তারা যা খুশি করবে, তাই বলব, দেশটা জনগণের, কারও পৈতৃক নয়।’
‘আমাদের মতো ঘুমাতে পারছে না আ.লীগের নেতা-কর্মীরাও’
বিএনপির সমাবেশকে সামনে রেখে পুলিশ দলের নেতা-কর্মীদের হয়রানি করছে বলেও অভিযোগ করেন আব্বাস। বলেন, ‘আমাদের কর্মীরা ঘুমাতে পারছে না বাসায় পুলিশের ভয়ে আতঙ্কে।
‘তারা সরকারের পেটোয়া বাহিনী, প্রাতিষ্ঠানিক বাহিনী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ব্যবহার করে নেতা-কর্মীদের হয়রানি করছে, তারা বাসায় থাকতে পারছে না, পালিয়ে বেড়াচ্ছে।
‘প্রতিদিন আমাদের নেতা-কর্মী গ্রেপ্তার হচ্ছে। গয়েশ্বর চন্দ্র রায়সহ নেতৃবৃন্দ কোর্ট থেকে এসেছেন। সেখানে আমাদের হাজার হাজার নেতা-কর্মীকে কোর্টে প্রডিউস করা হয়েছে। বিনা অপরাধে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, কোনো কারণ নেই।’
তবে ভয় আওয়ামী লীগের মধ্যেও ছড়িয়ে গেছে বলে মনে করেন তিনি। বলেন, এটি তাদের আন্দোলনের সার্থকতা।
‘আমাদের ছয় কম কর্মীকে গুলি করে হত্যা করেছে। আজকে একই রকম মিটিং করছি এবং লক্ষ্য করছি সরকার অহেতুক কেমন যেন একটা আতঙ্কিত অবস্থায় আছে। ... আওয়ামী লীগ রাতে ঘুমাতে পারছে না তাদের বাসায় ক্ষমতা চলে যাবে এই আতঙ্কে। এটা হলো আমাদের সার্থকতা। আমাদের সার্থকতা এখানেই যে তাদেরকেও আমরা নির্ঘুম করে দিতে পেরেছি। অনেক টেনশনে তারা আছে’-বলেন বিএনপি নেতা।
এই বাধা বিপত্তি ভীতি উপেক্ষা করেও বিএনপির নেতা-কর্মীরা সমাবেশে উপস্থিত হওয়ার চেষ্টা করছে উল্লেখ করে মির্জা আব্বাস তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানান। বলেন, ‘এটা তাদের দেশপ্রেমের একটা নিদর্শন।’
ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান, সদস্যসচিব আমিনুল হক, ঢাকা দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আবদুস সালাম, ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদও সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন:বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেল সেতু নির্মাণ কাজ নির্ধারিত সময়ের আগেই শেষ হবে। যে গতিতে কাজ চলছে তাতে ২০২৪ সালের আগস্টের নির্ধারিত সময়ের আগেই এটি ট্রেন চলাচলের জন্য খুলে দেয়া সম্ভব হবে।
রেলপথমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন সোমবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু নির্মাণ প্রকল্প কাজের অগ্রগতি পরিদর্শনের সময় সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।
মন্ত্রী বলেন, ‘৪ দশমিক ৮ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সেতুর মধ্যে ১ দশমিক ১৫ কিলোমিটার ইতোমধ্যে দৃশ্যমান। ১২টি পিলারের ওপর ১১টি স্প্যান বসে গেছে। পূর্ব প্রান্তের অগ্রগতি অনেক ভালো।
‘পশ্চিম প্রান্তে অগ্রগতি কিছুটা কম। তবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজের গতি বাড়িয়ে দিয়েছে। ফলে পুরো প্রকল্পটি নির্ধারিত সময়ের আগেই খুলে যাবে বলে আশা করছি।’
এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘সেতুতে ডুয়েল গেজ ডাবল লাইন থাকছে। এখানে ব্রডগেজে ১২০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চলবে এবং সেতু পার হতে সময় লাগবে ৫ মিনিট। বিদ্যমান বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে একটি ট্রেন পার হতে এখন প্রায় ৪০ মিনিট সময় লাগছে। সে হিসাবে অনেকটা সময় বেঁচে যাবে।
‘এই সেতুর মাধ্যমে ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ের যোগাযোগ স্থাপিত হবে। সে সুবাদে ভারত, নেপাল, ভুটানের সঙ্গে ট্রেন যোগাযোগ বাড়বে। অধিকসংখ্যক ট্রেন চালানো সম্ভব হওয়ায় অভ্যন্তরীণ রুটে ট্রেন ও বগি সংখ্যা বাড়ানো সম্ভব হবে। আন্তঃদেশীয় ট্রেনও অগ্রাধিকারে চালানো যাবে। ভারত থেকে সরাসরি মালবাহী ট্রেন চালানো সম্ভব হবে।
জাইকার অর্থায়নে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু নির্মিত হচ্ছে। এটির মোট প্রকল্প ব্যয় ১৬ হাজার ৭৮০ কোটি টাকা। সবশেষ এ বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত প্রকল্পের ভৌত কাঠামো নির্মাণ কাজের অগ্রগতি ৫৫ শতাংশ।
রেলপথ মন্ত্রীর এই পরিদর্শনের সময় স্থানীয় সংসদ সদস্য তানভীর হাসান, বাংলাদেশ রেলওয়ের অতিরিক্ত পরিচালক (অবকাঠামো) মো. শহিদুল ইসলাম, সংশ্লিষ্ট প্রকল্প পরিচালক আল ফাত্তাহ মো. মাসউদুর রহমানসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বিভিন্ন দাবিতে চট্টগ্রামসহ সারা দেশে ফেডারেশন অব বাংলাদেশ কাস্টমস ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরওয়ার্ডিং (সিএন্ডএফ) এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের ডাকা দুই দিনের কর্মবিরতি প্রত্যাহার করা হয়েছে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) যৌথ আলোচনা সভার মাধ্যমে ফেডারেশনের দাবি বাস্তবায়নের আশ্বাস দেয়ায় সোমবার বিকেল তিনটার দিকে কর্মবিরতি প্রত্যাহার করা হয়।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ কাস্টমস ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরওয়ার্ডিং (সিএন্ডএফ) এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য সচিব সুলতান হোসাইন খান।
তিনি বলেন, ‘আমাদের দাবি পূরণে এনবিআর চেয়ারম্যানের উপস্থিতিতে যৌথ আলোচনা সভার আশ্বাস দেয়ায় আমরা কর্মবিরতি সাময়িক স্থগিত করেছি। এখন ৭ ফেব্রুয়ারি আলোচনা সভার সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। ওইদিন আমাদের দাবিগুলো বাস্তবায়নের বিষয়ে আলোচনা হবে।’
এর আগে সোমবার সকাল নয়টা থেকে চট্টগ্রামসহ সারাদেশে দুই দিনের কর্মবিরতি শুরু করে সিএন্ডএফ এজেন্টরা। কাস্টমস এজেন্টস লাইসেন্সিং বিধিমালা-২০২০ ও পণ্য চালান শুল্কায়নে এইচএস কোড ও সিপিসি নির্ধারণে প্রণীত বিভিন্ন বিতর্কিত আইন বাতিলের দাবিতে দেশের নৌ, বিমান ও স্থল বন্দরগুলোতে এই কর্মবিরতির ডাক দেন তারা।
দুর্নীতির কারণে দেশের উন্নয়ন ৬০ ভাগ ব্যাহত হয়েছে- সিপিডির গবেষণা প্রতিবেদনের এই তথ্যের সঙ্গে একমত নন আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক।
উল্টো তিনি সিপিডির সমালোচনা করে বলেছেন, ‘একটি রাজনৈতিক শক্তিকে ক্ষমতায় বসাতে সংগঠনটি রাজনৈতিক লক্ষ্য নিয়ে এগুচ্ছে। এর মূল্য সিপিডিকে দিতে হবে।’
সচিবালয় সোমবার কৃষি পণ্য রপ্তানি নিয়ে এক সভার শুরুতে কৃষিমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘সিপিডি বলেছে যে দুর্নীতির কারণে দেশের উন্নয়ন ৬০ ভাগ ব্যাহত হয়েছে। এটা তো ব্যাখ্যা করার ব্যাপার, বিশ্লেষণ করার ব্যাপার। তাদের অর্থনীতিবিদরা বলছেন, আমরাও তো বলেছি। সিপিডির কাছে কী তথ্য আছে যে ২১৯ ডলারের পটাসিয়াম সরকার ১২শ’ ডলারে কিনেছে? আর ১২শ’ ডলারে কিনেছে বলেই বাংলাদেশের উৎপাদন কমেনি।’
আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘দুর্নীতি উধাও হয়ে গেছে, একদম দুধের মতো স্বচ্ছ- এমনটা আমরা কখনোই দাবি করিনি। আন্ডার ডেভেলপ কান্ট্রিতে দুর্নীতি কম-বেশি হবেই। বেকারত্ব অনেক বেশি, দারিদ্র্য অনেক বেশি।
‘দুর্নীতি পৃথিবীর সব দেশে আছে, আমেরিকাতেও আছে। বাংলাদেশ কি দুর্নীতিমুক্ত হয়ে গেছে? কম-বেশি তো দুর্নীতি আছে। কিন্তু আমরা যে প্রবৃদ্ধিটা ধরে রেখেছি এটি আপনারা কিভাবে দেখবেন? এটি কী করে হলো? এটি কি আমরা যাদুবলে বানিয়ে দিয়েছি?’
কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘সিপিডি রাজনৈতিক লক্ষ্য নিয়ে এ ধরনের অনেক স্টাডি করে। সিপিডি একটি রাজনৈতিক লক্ষ্য নিয়ে এগুচ্ছে এবং একটি রাজনৈতিক শক্তিকে তারা ক্ষমতায় আনতে চায়। তারা সিডিপির অংশীদার।
গবেষণার কী পদ্ধতি ছিল, কিভাবে তথ্য সংগ্রহ করেছে সেটি আমাদের দেখতে হবে। আমাদের সামনে সেটি দেখাতে হবে। তাহলে আমরা বুঝতে পারব সেটি সঠিক কিনা। তারা কোনো ধোয়া তুলসী পাতা না, নিরপেক্ষ না। সিপিডি অবশ্যই রাজনৈতিক লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে। এর মূল্য সিপিডিকে এদেশে দিতে হবে। জনগণ কাউকে ক্ষমা করবে না।’
আরও পড়ুন:ঢাকা ওয়াসা কর্মচারী বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিডেটের ১৩২ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী তাকসিম এ খানসহ নয় জনের বিরুদ্ধে করা মামলায় দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) আগামী ৪ এপ্রিল প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
মামলাটির প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দাখিলের জন্য সোমবার দিন ধার্য ছিল। এদিন ঢাকার মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ মো. আছাদুজ্জামান শুনানি শেষে দুর্নীতি দমন কমিশনকে অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করে আগামী ৪ এপ্রিল প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন।
এর আগে গত বছরের ১০ নভেম্বর ওয়াসা কর্মচারী বহুমুখী সমবায় সমিতির সম্পাদক মো. শাহাব উদ্দিন সরকার এ মামলাটি দায়ের করেন। শুনানি শেষে আদালত প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দাখিলের জন্য ৩০ জানুয়ারি দিন ঠিক করেছিল।
মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, ঢাকা ওয়াসা কর্মচারী বহুমুখী সমবায় সমিতি ২০১৭ সালের ১৬ জুলাই থেকে ২০১৮ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত ৯৯ কোটি ৬৫ লাখ ১৯ হাজার ১৭৩ টাকা ঢাকা ওয়াসা থেকে রাজস্ব আদায় কাজ বাবদ পায়। ২০১৮ সাল থেকে ২০১৯ অর্থবছরে একই কাজ বাবদ সমিতি আয় করে ৩৪ কোটি ১৮ লাখ ৫৭ হাজার ৭৯০ টাকা। এর মধ্যে ২০১৭ থেকে ২০১৮ অর্থবছরে সমিতির হিসাবে জমা হয় ১ কোটি ৭৯ লাখ ৫৯ হাজার ৫০৩ টাকা।
অবশিষ্ট ১৩২ কোটি ৪ লাখ ১৭ হাজার ৪৬০ টাকা ৬টি ব্যাংক থেকে বিভিন্ন চেকের মাধ্যমে আসামি তাকসিম এ খানের প্রত্যক্ষ মদদে ও নির্দেশে অপর আসামিরা টাকাগুলো উত্তোলন করে আত্মসাৎ করে।
আত্মসাতের বিষয়টি সমবায় অধিদপ্তরের অডিট রিপোর্টে প্রমাণিত হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। সমিতির গাড়িসহ স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি সমিতির হেফাজত থেকে প্রায় ২০০ কোটি টাকা সমমূল্যের সম্পদ চুরির অভিযোগও আনা হয়।
ঢাকা ওয়াসার এমডি ছাড়াও মামলার অপর আসামিরা হলেন, সংস্থাটির প্রকৌশলী শারমিন হক আমীর, সাবেক রাজস্ব পরিদর্শক মিঞা মো. মিজানুর রহমান, প্রকৌশলী মো. আখতারুজ্জামান, রাজস্ব পরিদর্শক মো. জাকির হোসেন, প্রকৌশলী মো. বদরুল আলম, জনতা ব্যাংকের সাবেক ডিজিএম শ্যামল বিশ্বাস, উপসচিব শেখ এনায়েত উল্লাহ ও উপ প্রধান হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা মো. সালেকুর রহমান। এছাড়া এ মামলায় অজ্ঞাতনামা আরও অনেককেই এ মামলায় আসামি করা হয়।
আরও পড়ুন:‘বাসের বাঙ্কার থেকে ব্যাগটা নামিয়ে পাশের ফুটপাতে রাখার সঙ্গে সঙ্গে এই লোক কোথা থেকে এসে একটা রসিদ ধরিয়ে বলে ৪০ টাকা দেন। কাগজটা পড়ে দেখি এটা কুলি মজুরির রসিদ। অথচ আমি কোনো কুলি ডাকিনি এবং আমার ব্যাগ অন্য কেউ বহনও করেনি।’
রাজধানীর মিরপুর মাজার রোড এলাকায় পূর্বাশা বাস কাউন্টারের সামনে কথাগুলো বলছিলেন মেহেরপুর থেকে আসা বাসযাত্রী সনু বিশ্বাস।
এই প্রতিবেদক তার আগে দেখতে পান যে রাফি ট্রেডার্স লেখা অ্যাপ্রন পরিহিত এক যুবক বাস যাত্রী সনু বিশ্বাসের সঙ্গে কী একটি বিষয় নিয়ে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়েছেন।
এগিয়ে গিয়ে কারণ জানতে চাইলে ওই যাত্রী বলেন, ‘আমি এসেছি মেহেরপুর থেকে। আমার ব্যাগ ছিল বাসের বাঙ্কারে। তেমন ভারি ব্যাগ নয় যে কুলি ডাকতে হবে। আমি নিজে বাঙ্কার থেকে ব্যাগ নামিয়েছি। এখন একটা সিএনটি অটোরিকশা ডেকে বাসায় চলে যাব। এর মাঝে তারা কোনো কারণ ছাড়াই এসে টাকা দাবি করছে।
‘আমি টাকা দেব না বললে সে আমার ব্যাগ আমাকেই নিতে দিচ্ছে না। এমনকি আমি যাওয়ার জন্য যেসব সিএনজি অটোরিকশ ডাকছি সে প্রতিটিকে ফিরিয়ে দিচ্ছে। এটা তো ওপেন চাঁদাবাজি ভাই। যে আমার ব্যাগ ধরেইনি, আমি কেন তাকে কুলি মজুরি দেব?’
এ বিষয়ে সোহেল নামে রাফি ট্রেডার্সের ওই কর্মীকে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘সিটি করপোরেশন থেকে আমরা এই এলাকা ইজারা নিয়েছি। এই এলাকার ফুটপাত আর রাস্তায় ব্যাগ রাখলে আমাদের টাকা দিতে হবে।’
এই ঘটনা রোববার দুপুরের। এর ঘণ্টাখানেক আগে একই স্থানে এমন চাঁদাবাজির শিকার হন খন্দকার বশির উদ্দিন মিলন নামে এক ব্যক্তি। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমার বাড়ি ঝিনাইদহ। সেখান থেকে পূর্বাশা পরিবহনের বাসে আমার পরিবার দুটি ব্যাগ পাঠিয়েছে। আমি সেই ব্যাগ নিতে এসেছি। বাস থেকে ব্যাগ নামিয়ে আমি সিএনজিতে উঠাতে গেলে এক লোক এসে হাতে রসিদ ধরিয়ে দিয়ে দুই ব্যাগ বাবদ ৮০ টাকা দাবি করে বসে।
‘আমি কোনো কুলিকে ডাকিনি। এমনকি আমার ব্যাগ তুলতে কেউ সাহায্যও করেনি। অথচ এই রাফি ট্রের্ডাসের লোক আমার কাছ থেকে জোর করে ৮০ টাকা নিয়ে গেল। প্রথমে আমি টাকা দেব না বললে সে আশপাশ থেকে আরও ৩-৪ জনকে ডেকে আমাকে মারতে আসে। পরে নিরুপায় হয়ে তাদের টাকা দিয়ে দিলাম।’
আরেক ভুক্তভোগী ইসহাক আলী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লেখেন, ‘মেয়রের নামে চাঁদাবাজি! ঢাকা শহরে ব্যাগ নিয়ে ঢুকতে মেয়রকে চাঁদা না দিয়ে শহরে ঢোকা যাবে না। আমি তাদেরকে চাঁদা না দিয়ে গাড়ি ভাড়া করার যতবার চেষ্টা করেছি ততবার সেই গাড়ি তারা ভাঙতে গিয়েছে। শেষ পর্যন্ত ব্যাগ প্রতি ৪০ টাকা হিসাবে দুইটা ব্যাগে ৮০ টাকা দিয়ে মাজার রোড থেকে বাসায় ফিরতে পেরেছি।’
রোববার ও আগের কয়েকদিন সরেজমিনে গাবতলী বাস টার্মিনাল এলাকায় সরেজমিনে ঘুরে এমন আরও অনেক যাত্রীর কাছ অভিন্ন অভিযোগ পাওয়া গেছে। তারা এসব বিষয়ে দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশের কাছে অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার পাননি বলে জানান।
আবার কুলি মজুরির নামে এই চাঁদা দিতে অস্বীকার করায় শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনাও ঘটে বলে জানালেন টার্মিনালের বিভিন্ন কাউন্টারে দায়িত্বরত কর্মীরা। তারা বলেন, ইজারা নেয়া প্রতিষ্ঠান রাফি ট্রেডার্সের কাছ আমরাও জিম্মি। আমাদেরও সব পরিষেবা বিল তাদের কাছেই জমা দিতে হয়।
ইজারাদাতা প্রতিষ্ঠান ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে কর্তৃপক্ষও কুলি মজুরির নামে রাফি ট্রেডার্সের এই চাঁদাবাজি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। জানে পুলিশ প্রশাসনও। তবে বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তারা।
আরও পড়ুন:রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার ট্রেন ও বাস স্টপেজগুলোতে যাত্রীর ব্যাগ-বোচকা নিয়ে কুলি-মজুরদের টানাটানি নতুন কিছু নয়। গাড়ি থেকে ব্যাগ নামিয়ে দেয়ার বিনিময়ে জবরদস্তি অতিরিক্ত টাকা আদায়ও গা-সওয়া হয়ে গেছে। তাই বলে বাস থেকে নিজের ব্যাগটা নামিয়ে রাস্তায় রাখলেই চাঁদা দিতে হবে!
রাজধানীর গাবতলী বাস টার্মিনাল এলাকায় প্রকাশ্যে এবং দোর্দণ্ড প্রতাপে এমন চাঁদাবাজি চলছে। গাবতলী টার্মিনাল হয়ে বাসে কোনো গন্তব্যে যেতে বা আসতে হাতে ব্যাগ থাকলেই চাঁদা না দিয়ে নিস্তার নেই।
রাজধানীর অন্যতম প্রবেশদ্বার গাবতলী হয়ে দেশের উত্তরবঙ্গ ও দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলে আসা-যাওয়া করা যাত্রীদের কাছ থেকে কুলি মজুরির নামে এই চাঁদাবাজি করে এই বাস টার্মিনালের ইজারাদার রাফি ট্রেডার্স।
বাড়তি ভাড়া আদায়, অতিরিক্ত যাত্রী বহন, সময়ক্ষেপণ, পরিবহনকর্মীদের আপত্তিকর আচরণে এমনিতেই দিশেহারা বাসযাত্রীরা। এবার তাতে মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দেখা দিয়েছে এই চাঁদাবাজি।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, গাবতলী এলাকায় বাসে উঠা-নামার পর যাত্রীদের ব্যাগ না ধরেই তাদের কাছ থেকে জোরজবস্তি ব্যাগ প্রতি ৪০ থেকে ১২০ টাকা পর্যন্ত আদায় করছে রাফি ট্রেডার্সের কর্মীরা। এ নিয়ে প্রতিদিনই যাত্রীদের সঙ্গে রাফি ট্রেডার্সের কর্মীদের বাকবিতণ্ডা হচ্ছে। ক্ষেত্রবিশেষে তা হাতাহাতিতেও গড়াচ্ছে।
গাবতলী বাস টার্মিনাল এলাকায় নিউজবাংলার সরেজমিন অনুসন্ধানে এই চাঁদাবাজির সত্যতা মিলেছে। ইজারাদার রাফি ট্রেডার্সের এক কর্মকর্তা প্রথমে এমন চাঁদাবাজির অভিযোগ অস্বীকার করলেও পরে এর সত্যতা স্বীকার করে এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেন।
তবে বাস্তবতা হলো, এই চাঁদাবাজদের কাছে পুলিশও যেন অসহায়। ওদের সঙ্গে পেরে না উঠে দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশের কর্মকর্তারা তাদের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়ে প্রতিকার চেয়েছেন।
রোববার দুপুরে মিরপুর মাজার রোড এলাকায় পূর্বাশা বাস কাউন্টারের সামনে গিয়ে চোখে পড়ল এক যাত্রীর সঙ্গে ইজারাদার রাফি ট্রেডার্সের অ্যাপ্রন পরা এক কর্মী তর্ক করছেন।
জানা গেল, সনু বিশ্বাস নামে ওই যাত্রী মেহেরপুর থেকে এসেছেন। তার কাছ থেকে জোর করে কুলি মজুরি বাবদ ৪০ টাকা আদায় করাকে কেন্দ্র করে এই বিতণ্ডা।
সনু বিশ্বাস বলেন, ‘আমি বাসের বাঙ্কার থেকে ব্যাগ নামানোর সঙ্গে সঙ্গে এই লোক কোথা থেকে এসে একটা রসিদ ধরিয়ে বলে, ৪০ টাকা দেন। পরে কাগজটা পড়ে দেখি এটা কুলি মজুরির রসিদ। অথচ আমি কোনো কুলি ডাকিনি এবং আমার ব্যাগ অন্য কেউ বহনও করেনি।’
এ বিষয়ে সোহেল নামে রাফি ট্রেডার্সের ওই কর্মীকে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘সিটি করপোরেশন থেকে আমরা এই এলাকা ইজারা নিয়েছি। এই এলাকার ফুটপাত আর রাস্তায় ব্যাগ রাখলে আমাদের টাকা দিতে হবে। আর আপনি ঝামেলা করতাছেন ক্যান? আপনি এইখান থ্যইক্যা যান।’
আপনার বস কে- এমন প্রশ্নের জবাবে সোহেল একটু দূরে দাঁড়িয়ে থাকা সুজন নামে একজনকে দেখিয়ে দেন। সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে এই চাঁদাবাজির বিষয়ে জানতে চাইলে সুজন বলে ওঠেন, ‘এসব রিপোর্ট করে আপনি আমাদের কিছুই করতে পারবেন না। ওই যে নাবিল বাস কাউন্টারের পাশে একটা চায়ের দোকান আছে। আপনার যা জানার সেটা আপনি ওই চায়ের দোকানদারের সঙ্গে কথা বলে জেনে নিন।’
এরপর ওই চায়ের দোকানদারের সঙ্গে কথা হয় নিউজবাংলার এই প্রতিবেদকের। তিনি নিজেকে শাহীন নামে পরিচয় দেন। চাঁদাবাজির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। গাবতলী বাস টার্মিনালের দ্বিতীয় তলায় আমাদের অফিস আছে। আপনি সেখানে গিয়ে কথা বলেন।’ গাবতলী বাস টার্মিনালের দ্বিতীয় তলায় রাফি ট্রেডার্সের অফিসে গিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি।
সনু বিশ্বাসের মতো আরও বেশ কয়েকজন বাস যাত্রী কুলি মজুরির নামে এভাবে গাবতলী বাস টার্মিনালে প্রকাশ্যে চাঁদাবাজির অভিযোগ করেন।
তাদের একজন খন্দকার বশির উদ্দিন মিলন নিউজবাংলাকে বলেন, পূর্বাশা পরিবহনের বাস থেকে ব্যাগ নামিয়ে সিএনজিতে উঠাতে গেলে এক লোক এসে রসিদ ধরিয়ে দিয়ে দুই ব্যাগ বাবদ ৮০ টাকা দাবি করে। অথচ আমি কোনো কুলিকে ডাকিনি। আমার ব্যাগ তুলতে কেউ সাহায্যও করেনি। অথচ এই রাফি ট্রের্ডাসের লোক আমার কাছ থেকে জোর করে ৮০ টাকা নিয়ে গেল।
ইসহাক আলী নামে আরেক ভুক্তভোগী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লেখেন, ‘মেয়রের নামে চাঁদাবাজি! শেষ পর্যন্ত ব্যাগ প্রতি ৪০ টাকা হিসাবে দুইটা ব্যাগে ৮০ টাকা দিয়ে মাজার রোড থেকে বাসায় ফিরতে পেরেছি।’
প্রতিদন লাখ লাখ টাকার চাঁদাবাজি
গাবতলী বাস টার্মিনালে এক কাউন্টারের একজন কর্মচারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এরা মাফিয়া কায়দায় এই বাস টার্মিনাল চালায়। কেউ এদের কিছু বলে না। বাস টার্মিনালসহ পর্বত সিনেমা হল থেকে মাজার রোড পর্যন্ত পুরা এলাকা এই রাফি ট্রেডার্সের লোকজনের নিয়ন্ত্রণে। এই এলাকায় কোনো যাত্রী ফুটপাত অথবা ফুটপাতের পাশে রাস্তায় কোনো ব্যাগ রাখলেই ওদেরকে টাকা দিতে হয়।
‘আমরা আমাদের কাউন্টারের ঘর ভাড়া, বিদ্যুৎ বিল, পরিচ্ছন্ন বিলসহ এ বাবদ সে বাবাদ সব টাকাই এদের হাতে দিই। অথচ এরা এই বাস টার্মিনাল পরিষ্কার কী করে সেটা আপনারাই দেখেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই টার্মিনালসহ সামনের রাস্তায় এদের একশ’র বেশি কর্মী থাকে সব সময়। এর মধ্যে রাফি ট্রের্ডাসের নাম লেখা ড্রেস পরে থাকে ৩০-৪০ জন। বাকিরা সাধারণ মানুষের মতো থাকে। এই ড্রেস পরা কর্মীরা যাত্রীদের কুলি মজুরি রসিদ ধরিয়ে দিয়ে চাঁদাবাজি করে। এরা যাত্রীদের ছোট ব্যাগে ৪০ টাকা আর বিদেশ থেকে আসা যাত্রীর ব্যাগ প্রতি নেয় ১২০ টাকা।
‘এরা লক্ষ্য রাখে যে যাত্রীদের ব্যাগে বিমানবন্দরের কোনো ট্যাগ লাগানো আছে কিনা। যদি থাকে তাহলে সেই যাত্রীর আর রক্ষা নেই। ব্যাগ প্রতি ১২০ টাকা আদায় করে ছাড়ে। কোনো যাত্রী টাকা দিতে না চাইলে সাধারণ মানুষের বেশে থাকা ওদের বাকি সদস্যরা গিয়ে যাত্রীদের সঙ্গে ঝামেলা বাধিয়ে দেয়। মাঝে মাঝে গায়ে হাত তুলে বসে।
‘অনেক সময় যাত্রীরা আমাদের কাছে অভিযোগ করে। কিন্তু আমাদের তো কিছু করার নেই। কিছু বললে তো আমরাই এখানে থাকতে পারব না।
আরেক কাউন্টারের এক কর্মীর সঙ্গে এই প্রতিবেদকের কথা হয়। তিনিও পরিচয় প্রকাশ না করার অনুরোধ করে বলেন, ‘রাফি ট্রেডার্সের ড্রেস পরা কর্মীরা নামে কুলি হলেও এদের কাউকে দিয়ে আপনি কোনো মালামাল উঠাতে পারবেন না। এই ৩০-৪০ জনের একেক জন ১০ হাজার টাকার উপরে চাঁদাবাজির করে আয় করে।
‘সব মিলিয়ে দিনে তারা ৩-৪ লাখ টাকার চাঁদাবাজি করে। এদের কাউকেই রাফি ট্রেডার্সের পক্ষ থেকে বেতন দেয়া হয় না। এরা চাঁদাবাজির কমিশন পায়। তাছাড়া এই টাকা পুলিশ প্রশাসন থেকে শুরু করে উপর মহলেও যায় বলে শুনেছি। তাই তারাও সব কিছু দেখে না দেখার ভান করে।’
রাফি ট্রেডার্সের এই চাঁদাবাজি নিয়ে মাজার রোড়ে কর্তব্যরত পুলিশ সার্জেন্ট রাফিউল ইসলাম রাফির সঙ্গে কথা হয় নিউজবাংলার। তিনি বলেন, ‘এই রাফি ট্রেডার্স ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসি) কাছ থেকে পুরো গাবতলী বাস টার্মিনাল এলাকা ইজারা নিয়েছে। আমরাও যাত্রীদের ব্যাগ বহন না করে জোর করে টাকা নেয়ার অভিযোগ পাই। এ বিষয়ে আমরা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সব জানিয়েছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘যাত্রীরা এভাবে একের পর এক হয়রানির শিকার হলেও কেউ এ বিষয়ে থানায় অভিযোগ করে না। তাই আমরা কিছু করতে পারি না। এরা টাকা দাবি করলে সাধারণ মানুষ ঝামেলা এড়াতে টাকা দিয়ে চলে যায়। আমাদেরও কিছু জানায় না।’
সাধারণ মানুষ মামলা না করলেও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য হিসেবে আপনারা কেন এই চাঁদাবাজি বন্ধ করছেন না?- এমন প্রশ্নে তিনি কোনও উত্তর দেননি।
গাবতলী বাস টার্মিনালের প্রধান কর্তৃপক্ষ ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের সহকারী ব্যবস্থাপক (গাবতলী বাস টার্মিনাল) মোহাম্মাদ জাহিদ হাসান। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি যাত্রীদের কাছ থেকে ইজারাদারদের বিরুদ্ধে অসংখ্য চাঁদাবাজির অভিযোগ পাই। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে গত বছরের ২০ ডিসেম্বর চিঠি দিয়ে সিটি করপোরেশনের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। এখন দেখি স্যারেরা কী সিদ্ধান্ত নেন।’
ডিএনসিসির এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘সিটি করপোরেশন থেকে রাফি ট্রেডার্সকে ইজারা দেয়ার সময় বেশকিছু শর্ত দেয়া হয়। তার মধ্যে ২২ নম্বর শর্ত- কোনো যাত্রী সামান্য মালামাল উঠানো বা নামানোর জন্য কুলির সাহায্য না চাইলে কোনো কুলি ওই মালামাল স্পর্শ করা বা মজুরি দাবি করতে পারবে না। ওরা এই শর্ত ভঙ্গ করেছে।’
ডিএনসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মাদ সেলিম রেজা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘রাফি ট্রেডার্সের বিরুদ্ধে আমরাও এই অভিযোগ পেয়েছি। এর আগেও আমরা তাদের সতর্ক করেছি। এখন আমরা তাদের পর্যবেক্ষণে রেখেছি।
‘এখনও যদি তারা এই কাজ করে তাহলে সিরিয়াসলি তাদের বিরুদ্ধে আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা নেব। গাবতলী বাস টার্মিনাল এলাকায় এ ধরনের কুলি মজুরির রসিদ দিয়ে চাঁদাবাজি করার কোনো সুযোগ নেই।’
ইজারাদার রাফি ট্রেডার্স যা বলছে
রাফি ট্রের্ডাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) লিয়াকত হোসেন সবুজ নামে এক ব্যক্তি। নিউজবাংলার পক্ষ থেকে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
তবে রাফি ট্রেডার্সের প্রজেক্ট ডিরেক্টর সাইফুল ইসলাম শ্রাবণ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এমন চাঁদাবাজি হাওয়ার তো কথা না। আমাদের এখানকার কর্মীরা কোনো যাত্রীর মালামাল বহন করা নিয়ে জোরজবরদস্তি করে না। এরকম করার নিয়মও এখানে নেই। যাদের কুলির প্রয়োজন হয় শুধু তাদের কাছ থেকেই আমাদের কর্মীরা টাকা নেয়।’
যাত্রীদের অভিযোগ, উত্তর সিটি করপোরেশনের চিঠিসহ নিউজবাংলার কাছে এই চাঁদাবাজি চলার বিষয়ে যথেষ্ট প্রমাণ আছে জানালে শ্রাবণ বলেন, ‘আসলে কি, এরকম দুই/একটা ঘটনা হয়তো ঘটতে পারে। ওরা লেবার মানুষ তো। অনেক কিছুই হয়তো ওরা করে ফেলে। এর আগেও আমরা ওদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছি। আমরা সব সময়ই ওদের মনিটরিংয়ে রাখি। তারপরও আমি খোঁজ নিচ্ছি, যদি এমন ঘটনা ঘটে তাহলে ব্যবস্থা নেব।’
আরও পড়ুন:আর্জেন্টিনার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সান্তিয়াগো আন্দ্রেস ক্যাফিয়েরো আগামী ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহে ঢাকা সফরে আসতে পারেন বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন।
সোমবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ কথা জানান তিনি।
মন্ত্রী বলেন, ‘আমি দাওয়াত দিয়েছিলাম আর্জেন্টিনার পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে। মেসির জয়লাভের পরে, বলেছিলাম বাংলাদেশের মানুষ তাকে অনেক পছন্দ করে, তাকে নিয়ে আসেন। এসে আমাদের এখানে একটা ইভেন্ট করেন। তিনি আসতে রাজি হয়েছেন।’
তিনি বলেন, ‘আশা করছি ২৬ কি ২৭ তারিখে তিনি আসবেন। আমরা সেটার অপেক্ষায় আছি, উনাকে অভ্যর্থনা জানাব। উনারা যদি এখানে মিশন বা কনস্যুলার অফিস খুলতে চান, সেটা প্লাস।’
আব্দুল মোমেন বলেন, ‘আর্জেন্টিনার সঙ্গে আমরা চাই ভালো সম্পর্ক। আমাদের একটা পরিকল্পনা ছিল ওখানে একটা মিশন খোলার, আর ব্রাজিলে খুলেছি। আমরা আগামীতে মিশন খুলতে পারব, ডিপেন্ডিং অন টাকাপয়সা এসব নিয়ে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা মিশন খুলতে কয়েকটা জিনিস দেখি, একটা হচ্ছে ওখানে আমার প্রবাসী বাঙালি কেমন, ওই দেশটা কত গুরুত্বপূর্ণ আর দেখি যে আমাদের রেমিটেন্স ওখান থেকে কেমন আসে। এ সমস্ত জিনিস আমাদের রয়েছে।
‘আমরা ইনশাল্লাহ আর্জেন্টিনায় আগামীতে কোনো এক সময় মিশন খুলতে পারব। আর্জেন্টিনা নীতিগতভাবে চায় বাংলাদেশে তারা একটা মিশন খুলবে, নীতিগতভাবে তারা সম্মত।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য