নয়াপল্টনে শনিবারের সমাবেশ করার অনুমতি না দিলে বিকল্প ও গ্রহণযোগ্য জায়গার প্রস্তাব আওয়ামী লীগ বা সরকারকে দিতে হবে বলে বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। বলা হয়েছে, যদি বিকল্প জায়গার প্রস্তাব করা না হয়, তাহলে নয়াপল্টনেই সমাবেশ হবে।
রাজধানীতে সমাবেশ করার মতো ফাঁকা জায়গাগুলো আওয়ামী লীগ সরকারই বন্ধ করেছে জানিয়ে দলটির সংবাদ সম্মেলনে এ-ও বলা হয়েছে যে ক্ষমতাসীন দল মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকারগুলো বন্ধ করতে চায়।
নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের দবিতে গত ১২ অক্টোবর থেকে বিএনপি বিভাগীয় শহরগুলোতে যে সমাবেশ করে আসছে, তার ধারাবাহিকতায় ১০ ডিসেম্বর রাজধানীতে যে সমাবেশ ডাকা হয়েছে, সেটি নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে ভেন্যু জটিলতায়।
বিএনপি নয়াপল্টনে এই সমাবেশ করতে চায়, কিন্তু সড়কে সমাবেশ করতে দিতে নারাজ সরকার। পুলিশ অনুমতি দিয়েছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে, তবে সেখানে যেতে চায় না বিরোধী দলটি। তারা নয়াপল্টনের বিকল্প হিসেবে আরামবাগ চাইলেও সেটিও কার্যত নাকচ করে দেয়া হয়েছে।
সমাবেশের তিন দিন বাকি থাকতে বিএনপি যে প্রচার চালাচ্ছে, সেই লিফলেটে সমাবেশস্থলের নামও উল্লেখ নেই।
এই অবস্থায় দলের পক্ষ থেকে বুধবার নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, ‘যদি সরকার মনে করে আমাদের (সমাবেশ) করতে দেবে না, আমরা আমাদের কর্মীদের বলেছি, আমাদের সমাবেশ হবে শান্তিপূর্ণ। এটা কোনো রকম লগি-বৈঠার মিটিং নয়, এটা কোনো মানুষ হত্যার মিটিং নয়, এটা কোনো অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করার মিটিং নয়। এটা হলো একটা শান্তিপূর্ণ মিটিং, জনগণের দাবি আদায়ের লক্ষ্যে। জনগণের ভোটাধিকার আদায়ের লক্ষ্যে, জনগণের পেটে ভাতের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে এই সমাবেশ।
‘বাধার সৃষ্টি করলে যদি কোনো পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়, তাহলে সরকার দায়ী থাকবে, এ কথা আমরা পরিষ্কার বলে দিতে চাই।’
এই সংবাদ সম্মেলনগুলো সাধারণত দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী করে থাকেন। তবে তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হওয়ায় তিনি এখন আত্মগোপনে।
আব্বাস বলেন, ‘আমরা প্রস্তাব দিয়েছি, বিকল্প প্রস্তাব আওয়ামী লীগকেই দিতে হবে। গ্রহণযোগ্য এবং বিকল্প প্রস্তাব আওয়ামী লীগ অথবা সরকারকেই দিতে হবে। অথবা আমাদের প্রস্তাবকে মেনে নিতে হবে, আমরা সভা করব।
‘আমাদের কার্যক্রম চলছে, আমাদের কার্যক্রম চলবে, এটা কেউ ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না। ঢাকায় সমাবেশ আমরা করব।'
সরকার যদি বিকল্প আর কোনো প্রস্তাব না দেয় তাহলে কী হবে- এমন প্রশ্নে আব্বাস বলেন, ‘যদি গ্রহণযোগ্য পছন্দনীয় জায়গা বের না করে তাহলে পল্টনই আমাদের পছন্দের জায়গা। পল্টনেই হবে সমাবেশ।’
পুলিশ বাধা দিলে কী হবে, জানতে চাইলে জবাব আসে, ‘পুলিশের কাজ পুলিশ করবে, আমাদের কাজ আমরা করব।
‘তবে পুলিশ যেন দলীয় না হয়ে যায়, পুলিশ যেন কোনো দলের হাতিয়ার না হয়ে যায়। তাদেরকে নিরপেক্ষ থাকতে হবে। তাদেরকে মনে রাখতে হবে তারা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের চাকরি করেন, আওয়ামী লীগের চাকরি তারা করে না।’
বিশৃঙ্খলা হলে দায় আওয়ামী লীগের
বিএনপির সমাবেশকে ঘিরে নয়াপল্টনে বোমাবাজির শঙ্কা নিয়ে একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদনেরও সমালোচনা করেন আব্বাস।
তিনি বলেন, ‘আজকের পত্রিকায় এসেছে, বিএনপি-জামায়াত বোমাবাজি করবে। আচ্ছা পৃথিবীর কোনো বিবেকবান মানুষ কী বলবে, আমার সভা আমরা করব, শান্তিপূর্ণ সভা করব, গত তিন মাস ধরে সভা করছি, শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করছি, কোনো ঝামেলা হয়নি, এখন আমরা বোমাবাজি করব?
‘আমরা বলতে চাই, যদি কোনো ধরনের ঘটনা ঘটে, এর জন্য সম্পূর্ণভাবে আওয়ামী লীগ দায়ী হবে। এটা আওয়ামী লীগ করছে। বোমাবাজির ঘটনা সৃষ্টি করছে, জন্ম দিয়েছে আওয়ামী লীগ। এখনও তারা সভা-সমাবেশ নষ্ট করার জন্য একই প্রক্রিয়া অবলম্বন করছে।’
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘আমাদের কর্মসূচি হবে শান্তিপূর্ণ। গণসমাবেশ ঘিরে একটি রিকশার টায়ার বার্স্ট হলেও দায় সরকারের।’
‘সড়কে সমাবেশ কেউ করতে না পারলে বিএনপিও করবে না’
এই অবস্থায় দলের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলনে এসে স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, পুলিশ যদি বলে কোনো দল সড়কে সমাবেশ করতে পারবে না, তাহলে তারা মেনে নেবেন। তবে আপাতত তাদের সমাবেশ নয়াপল্টনেই হবে।
তিনি বলেন, ‘বিএনপি সমাবেশ করলে সরকারের বক্তব্য হলো এটা বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হতে পারে। ছাত্রলীগের লোকেরা যখন মিটিং করে, তখন পুলিশ বলে দিচ্ছে এই রাস্তা থেকে এই রাস্তা, এই রাস্তা থেকে এই রাস্তা বন্ধ থাকবে। সেখানে কোনো রকম ঝামেলা হয় না।
‘আমরাও এ রকম চাই। আমরা যখন নয়াপল্টনে মিটিং করব, তখন পুলিশ দয়া করে কিছু রাস্তা, যেখান দিয়ে পাবলিক চলাচল করতে পারবে সেটা বলে দিক। বলে দিক, আপনারা এই রাস্তায় চলাচল করবেন, এই রাস্তা বন্ধ থাকবে। আইন সবার জন্য সমান হওয়া উচিত।
‘কিন্তু তারা সেটা না করে বিএনপির বেলায় করে এক রকম, আওয়ামী লীগের বেলায় করে আরেক রকম। ছাত্রলীগের বেলায় করে এক রকম, ছাত্রদলের বেলায় করে আরেক রকম। এমন তো হতে দেয়া যায় না।’
বিএনপি নেতা বলেন, ‘এমন যদি করা হয় যে, কেউ রাস্তায় মিটিং করতে পারবে না, আমরা এক শ ভাগ মেনে নেব। তবে সেই নিয়ম সবার জন্য হতে হবে। আপাতত আমরা আমাদের সমাবেশের জন্য যে আবেদন করেছি, সে আবেদনের স্থানটা ঠিক আছে। আমরা সেখানেই সমাবেশ করব।’
মাঠ তো আ.লীগই বন্ধ করেছে
সমাবেশের মাঠ হিসেবে ব্যবহার হতো, এমন ফাঁকা জায়গাগুলো আওয়ামী লীগের আমলেই বন্ধ হয়েছে বলেও জানান মির্জা আব্বাস।
পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে তাদের আলোচনার বিষয়ে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘অনেক নতুন নতুন কর্মকর্তা হয়েছে তো, ঢাকায় কোথায় কোথায় মাঠ আছে, কোথায় কোথায় মাঠ ছিল, এটা তারা জানে না। কোথায় কোথায় সভা করতে হবে, এটা তারা জানে না। আমাদের এমন এমন সব জায়গার কথা বলছে, যেখানে এক সময় মাঠ ছিল, এখন নাই।
‘উত্তরার কথা বলে, ওখানে তো মাঠই নেই এখন, মার্কেট হয়ে গেছে। ফুলবাড়ীয়াতে মাঠ ছিল, আমরা সেখানে মিটিং করেছি, এখন তো মাঠ নেই, মার্কেট হয়ে গেছে। আওয়ামী লীগই তো করেছে, আমরা তো করি নাই।’
আব্বাস বলেন, ‘জনসভা করার, কথা বলার যে অধিকারগুলো আছে, আছে সেটাকে বন্ধ করে দেয়ার জন্য সকল মাঠ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। ঐতিহাসিক পল্টন ময়দান, মুক্তাঙ্গন... ঐতিহাসিক পল্টন ময়দানে আমি ভাসানীর সভা দেখেছি, মরহুম শেখ মুজিবুর রহমানের সভা দেখেছি। এখানে আমাদের রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সভা দেখেছি, বহু সভা দেখেছি ছোটবেলা থেকে। বাবার সঙ্গে গিয়েছি মিটিংগুলোতে। এখন সেখানে সভা করার জায়গা নাই, আউটার স্টেডিয়াম করে ফেলেছেন।’
বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের সামনের গলিটি ২০টা বছর বন্ধ করে দেয়া হয়েছে উল্লেখ করে বিএনপি নেতা বলেন, ‘জনগণের অসুবিধা হয় না? আমরা যখন ছোট ছিলাম, গুলিস্তান মার্কেটে যেতাম শপিং করার জন্য। সেখানে ৩২টি মার্কেট, রাস্তা বন্ধ। তারা যা খুশি করবে, তাই বলব, দেশটা জনগণের, কারও পৈতৃক নয়।’
‘আমাদের মতো ঘুমাতে পারছে না আ.লীগের নেতা-কর্মীরাও’
বিএনপির সমাবেশকে সামনে রেখে পুলিশ দলের নেতা-কর্মীদের হয়রানি করছে বলেও অভিযোগ করেন আব্বাস। বলেন, ‘আমাদের কর্মীরা ঘুমাতে পারছে না বাসায় পুলিশের ভয়ে আতঙ্কে।
‘তারা সরকারের পেটোয়া বাহিনী, প্রাতিষ্ঠানিক বাহিনী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ব্যবহার করে নেতা-কর্মীদের হয়রানি করছে, তারা বাসায় থাকতে পারছে না, পালিয়ে বেড়াচ্ছে।
‘প্রতিদিন আমাদের নেতা-কর্মী গ্রেপ্তার হচ্ছে। গয়েশ্বর চন্দ্র রায়সহ নেতৃবৃন্দ কোর্ট থেকে এসেছেন। সেখানে আমাদের হাজার হাজার নেতা-কর্মীকে কোর্টে প্রডিউস করা হয়েছে। বিনা অপরাধে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, কোনো কারণ নেই।’
তবে ভয় আওয়ামী লীগের মধ্যেও ছড়িয়ে গেছে বলে মনে করেন তিনি। বলেন, এটি তাদের আন্দোলনের সার্থকতা।
‘আমাদের ছয় কম কর্মীকে গুলি করে হত্যা করেছে। আজকে একই রকম মিটিং করছি এবং লক্ষ্য করছি সরকার অহেতুক কেমন যেন একটা আতঙ্কিত অবস্থায় আছে। ... আওয়ামী লীগ রাতে ঘুমাতে পারছে না তাদের বাসায় ক্ষমতা চলে যাবে এই আতঙ্কে। এটা হলো আমাদের সার্থকতা। আমাদের সার্থকতা এখানেই যে তাদেরকেও আমরা নির্ঘুম করে দিতে পেরেছি। অনেক টেনশনে তারা আছে’-বলেন বিএনপি নেতা।
এই বাধা বিপত্তি ভীতি উপেক্ষা করেও বিএনপির নেতা-কর্মীরা সমাবেশে উপস্থিত হওয়ার চেষ্টা করছে উল্লেখ করে মির্জা আব্বাস তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানান। বলেন, ‘এটা তাদের দেশপ্রেমের একটা নিদর্শন।’
ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান, সদস্যসচিব আমিনুল হক, ঢাকা দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আবদুস সালাম, ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদও সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন:আজ ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫ তারিখ দুপুর ১২টায় বেবিচক সদরদপ্তরে বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) এর চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মোঃ মোস্তফা মাহমুদ সিদ্দিক, বিএসপি, জিইউপি, এনডিসি, এএফডব্লিউসি, এসিএসসি, পিএসসি (Air Vice Marshal Md Mostafa Mahmood Siddiq, BSP, GUP, ndc, afwc, acsc, psc) এর সাথে পাকিস্তান সিভিল এভিয়েশন অথরিটির মহাপরিচালক জনাব নাদির শাফি দার (Mr. Nadir Shafi Dar) এক সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন।
সাক্ষাৎকালে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে সরাসরি বিমান চলাচল পুনঃস্থাপন বিষয়ে ফলপ্রসূ মতবিনিময় হয় এবং উভয় পক্ষই এ বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেন। বৈঠকে ভবিষ্যতে বিমান চলাচল খাতে প্রযুক্তি ও অভিজ্ঞতা বিনিময়, সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং পারস্পরিক সহযোগিতার ক্ষেত্রগুলো আরও সুদৃঢ় করার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়।
উভয় পক্ষ আশা প্রকাশ করেন যে, বিমান চলাচল পুনঃস্থাপন হলে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য, পর্যটন ও জনগণের পারস্পরিক যোগাযোগ আরও বৃদ্ধি পাবে।
এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন বেবিচক এর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাবৃন্দ এবং PIA এর CEO ।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার জন্য প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস আজ বিকেল ৫টায় সাতটি রাজনৈতিক দল ও একটি সংগঠনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।
রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানিয়েছে, বৈঠকে অংশ নেন- এবি পার্টি, নাগরিক ঐক্য, গণসংহতি আন্দোলন, গণঅধিকার পরিষদ, এলডিপি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, জাতীয় গণফ্রন্ট এবং হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ।
এরআগে গত রোববার প্রধান উপদেষ্টা বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপি’র সঙ্গে বৈঠক করেন।
ধারাবাহিক এই বৈঠক আসন্ন নির্বাচনের প্রস্তুতিতে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হিসেবে দেখা হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-৩ গঠন করা হতে পারে বলে জানিয়েছেন আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল।
আজ সকালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের ভবন ও সংলগ্ন এলাকা পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি।
এ সময় আইন উপদেষ্টা বলেন, মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছি আমরা। বিগত সরকারের হত্যা, গুম, নির্যাতনসহ সব ধরনের অপরাধের বিচারের বিষয়ে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
আইন উপদেষ্টা বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ভবন সংলগ্ন টিনশেড ভবন খালি হয়ে গেলে আমরা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-৩ গঠন করতে পারি। এটি করা গেলে গুমসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক অপরাধের বিচার কাজ দ্রুত করা যাবে।
তিনি আরো বলেন, মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলা নিয়ে বেশ আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করছেন আমাদের বিচারকসহ প্রসিকিউশন ও তদন্ত টিম।
আইন উপদেষ্টা বলেন, দেশের ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের স্বার্থে আমাদের যে ন্যায়বিচার আছে, আইনের শাসন আছে ও মানবাধিকার আছে এটাকে প্রতিষ্ঠিত করার স্বার্থে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে এক হাজারেরও বেশি ছাত্র-জনতাকে হত্যা এবং হাজারও মানুষকে পঙ্গু করার ভয়াবহ মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার অপরিহার্য-অনিবার্য। সেই বিচারকার্যের প্রথম থেকেই আমরা অবিচল আছি। বিচারের যে গতি আছে সেটা নিয়েও আমরা সন্তুষ্ট আছি।
অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ভবন আজ পরিদর্শন করেন। এসময় তাদের সঙ্গে অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলামসহ অপর প্রসিকিউটররা উপস্থিত ছিলেন।
২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, এর দলীয় ক্যাডার ও সরকারের অনুগত প্রশাসনসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে একের পর এক অভিযোগ জমা পড়ে। দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এসব অপরাধের বিচার কাজ চলছে।
অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানে জনগণই মুখ্য ভূমিকা রাখবে বলে মন্তব্য করেছেন স্বরাষ্ট্র ও কৃষি উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মোঃ জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.)।
উপদেষ্টা আজ সিলেট জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে এক মতবিনিময় সভায় এ কথা বলেন।
মতবিনিময় সভায় সিলেট বিভাগের সকল জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব), বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড (বিজিবি), আনসার-ভিডিপি, কারা অধিদপ্তর, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর, ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর এবং কৃষি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন সিলেট জেলার বিভিন্ন দপ্তর ও সংস্থার কর্মকর্তাবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন।
উপদেষ্টা বলেন, একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের মাধ্যমে রাজনৈতিক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে জনগণের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নই বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান লক্ষ্য। তিনি বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু করতে মাঠ প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য শুধু নির্বাচন কমিশনের প্রস্তুতি যথেষ্ট নয়, মাঠ প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে যথাযথ প্রস্তুতি নিতে হবে। জনগণ যেন নির্ভয়ে নির্বাচন কেন্দ্রে উপস্থিত হয়ে ভোট প্রদান করতে পারে সেরকম পরিবেশ তৈরি করতে প্রশাসন এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে একযোগে কাজ করতে হবে। সকলের সহযোগিতায় সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভবপর হবে।
পুলিশসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়োগ ও পদায়ন সম্পর্কে উপদেষ্টা বলেন, এবার বিভিন্ন বাহিনীর নিয়োগ প্রক্রিয়া ও পদায়ন অনেক স্বচ্ছ হয়েছে। তাই সবাইকে নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে। মাদককে দেশের সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থার জন্য অন্যতম হুমকি উল্লেখ করে তিনি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে মাদক ব্যবসায়ীদের প্রতি জিরো টলারেন্স দেখানোর নির্দেশনা দেন। এছাড়া পরিবেশ রক্ষায় সিলেটের পাথরখেকোদের বিরুদ্ধে সবসময় সজাগ থাকার কথা বলেন।
দেশের সার্বিক অর্থনীতিতে কৃষির গুরুত্ব তুলে ধরে লেফটেন্যান্ট জেনারেল মোঃ জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.) বলেন, কৃষকরাই এদেশের খাদ্য নিরাপত্তার মূল কারিগর। তাই উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি কৃষকেরা যেন তাদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য পায় সেটি নিশ্চিত করতে হবে। উপদেষ্টা এসময় পতিত কৃষিজমিগুলো আবাদের আওতায় আনার জন্য সংশ্লিষ্টদের আহ্বান জানান।
সভায় উপস্থিত কর্মকর্তাবৃন্দ সিলেটের সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও এর চ্যালেঞ্জগুলো তুলে ধরে বিভিন্ন মতামত প্রদান করেন। উপদেষ্টা সকল চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় যৌক্তিক পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস প্রদান করেন। মতবিনিময় সভা শেষে উপদেষ্টা উপস্থিত সাংবাদিকদের ব্রিফিং করেন।
উপদেষ্টা এর আগে বিজিবি'র সিলেট সেক্টর হেডকোয়ার্টার্স এবং সিলেট পুলিশ লাইন পরিদর্শন করেন।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কর্মপরিকল্পনা (রোডম্যাপ) আগামীকাল বৃহস্পতিবার ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ।
আজ বুধবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনের মিডিয়া সেন্টারে এক ব্রিফিংয়ে সচিব সাংবাদিকদের এ কথা জানান।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ইসি সচিব বলেন, ‘আমরা যে কর্মপরিকল্পনা (রোডম্যাপ) করেছি, সে কর্মপরিকল্পনাটা আপনাদের জানাবো। আমি ঢাকার বাইরে থাকায় একটু পিছিয়ে পড়েছি। এটা আমার টেবিলে এখন আছে। আগামীকাল পর্যন্ত একটু অপেক্ষা করেন।’
এদিকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিনের সভাপতিত্বে চার নির্বাচন কমিশনার ও ইসি সচিব আজ এক বৈঠকে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কর্মপরিকল্পনা (রোডম্যাপ) অনুমোদন করেছে কমিশন।
এখন যেকোনো সময় নির্বাচনের এই রোডম্যাপ আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করা হতে পারে বলে ইসির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে একজন নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘কর্মপরিকল্পনার সবকিছু চূড়ান্ত হয়ে গেছে। অনুমোদন হয়েছে, এখন শুধু টাইপিং চলছে।’
উল্লেখ্য জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে ইসির পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে দল নিবন্ধন, সীমানা নির্ধারণ, নির্বাচন পর্যবেক্ষক, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংস্কার, বিধিমালা ও নীতিমালা জারি, প্রবাসীদের জন্য আইটি সাপোর্টেড নিবন্ধন ও পোষ্টাল ব্যালট পদ্ধতি ও নির্বাচনী সরঞ্জাম কেনাকাটা বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়েছে রোডম্যাপে।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কর্মপরিকল্পনা (রোডম্যাপ) অনুমোদন করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
যে কোনো সময় এই নির্বাচনের রোডম্যাপ আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করতে পারে ইসি।
আজ বুধবার দুপুরে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন, চার নির্বাচন কমিশনার ও ইসি সচিব এ নিয়ে বৈঠকও করেছেন।
বৈঠকে কর্মপরিকল্পনার (রোডম্যাপ) অনুমোদন দিয়েছে কমিশন। এখন, যে কোনো সময় নির্বাচনের এই রোডম্যাপ আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করা হতে পারে বলে ইসি’র কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেন, ‘কর্মপরিকল্পনার সবকিছু চূড়ান্ত হয়ে গেছে। অনুমোদন হয়েছে, এখন শুধু টাইপিং চলছে।’
এদিকে সংসদীয় আসনের পুনঃনির্ধারিত সীমানার বিষয়ে ইসি’র শুনানি আজ বিকেলে শেষ হচ্ছে।
শুনানি শেষে বিকেলে সার্বিক বিষয় নিয়ে ইসি’র সিনিয়র সচিব আকতার আহমেদের ব্রিফিং করার কথা রয়েছে।
এ বিষয়ে ইসি সচিব আখতার আহমেদ বলেন, ‘আমরা ব্রিফিংয়ে আসব। তখন সীমানার শুনানির বিষয়টির পাশাপাশি এ বিষয়টিও (রোডম্যাপ) দেখা যাবে।’
এর আগে গত বৃহস্পতিবার ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের কর্মপরিকল্পনা নিয়ে চার নির্বাচন কমিশনার ও ইসি কর্মকর্তা বৈঠক করেন।
ওই দিন নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেছিলেন, বিস্তারিত কর্মপরিকল্পনার বিষয়ে ইসি সচিব ব্রিফ করবেন।
গত ১৮ আগস্ট ইসি’র সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ জানিয়ে ছিলেন, ‘একটা কর্মপরিকল্পনার (নির্বাচনী রোডম্যাপ) বিষয়ে বলেছিলাম, আমরা এই সপ্তাহে এটা করবো। কর্মপরিকল্পনার তো আমাদের আন্তঃঅনুবিভাগ সম্পর্কিত এবং অন্যান্য প্রাসঙ্গিক বিষয়গুলো নিয়ে। কর্মপরিকল্পনার ড্রাফ্ট করা হয়েছে। ড্রাফ্টটি এখন কমিশনে দিয়ে আমরা অ্যাপ্রুভ করবো।’
শ্রম আইন, ২০০৬ সংশোধনের লক্ষ্যে ত্রিপক্ষীয় পরামর্শ পরিষদ (টিসিসি)-এর ৮৯তম সভায় শ্রমিক, মালিক ও সরকারের মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। গত এক বছরের পর্যালোচনা ও সকল পক্ষের মতামতের ভিত্তিতে শ্রম আইন ২০০৬ সংশোধনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
আজ মঙ্গলবার ঢাকার এক হোটেলে অনুষ্ঠিত এ সভায় সভাপতিত্ব করেন শ্রম ও কর্মসংস্থান এবং নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন। তিনি বলেন, "শ্রমিক ও মালিক পক্ষের পরামর্শের ভিত্তিতে শ্রম আইন যুগোপযোগী করা হবে। এটি বাংলাদেশের শ্রমখাতের জন্য একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ হবে এবং আন্তর্জাতিক মানের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হবে।’
সভায় শ্রমিক ও মালিক পক্ষের প্রতিনিধিরা তাদের মতামত তুলে ধরেন। একটি সুসমন্বিত ও আন্তর্জাতিক মানের শ্রম আইন প্রণয়নের প্রয়োজনীয়তা উপস্থিত সকলেই করেন। অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত এ সভায় সংশোধিত শ্রম আইন দ্রুত সম্পন্ন করার তাগিদ দেওয়া হয়।
সভায় বিশেষ পর্যবেক্ষক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মার্কিন দূতাবাস, কানাডা হাই কমিশন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও)-এর প্রতিনিধিরা। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিশেষ দূত জনাব লুৎফে সিদ্দিকী।
এছাড়াও মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব, বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব লেবার স্টাডিজ (বিলস) এর নির্বাহী পরিচালক এবং শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রধান, বাংলাদেশ এমপ্লয়ার্স ফেডারেশন (বিইএফ)-এর সভাপতি, টিসিসি সদস্যবৃন্দের মধ্যে তাসলিমা আক্তার, কোহিনুর মাহমুদ, বাবুল আকতার , নাজমা আক্তার, রাজেকুজ্জামান রতন, এডভোকেট আতিকুর রহমান, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর এবং শ্রম অধিদপ্তরের কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
বিশ্লেষকদের মতে, এই সংশোধনী বাংলাদেশের শ্রমবাজারকে আরও গতিশীল ও আন্তর্জাতিক মানসম্মত করবে এবং শ্রমিক-মালিক সম্পর্কের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
মন্তব্য