চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক এমপি আব্দুল ওদুদের বাসভবনের ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। এর পেছনে কৃষক লীগ নেতারা জড়িত বলে অভিযোগ আব্দুল ওদুদের।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার পুরাতন জেলখানা এলাকায় সোমবার রাতে এ ঘটনা ঘটে। সেখানে আব্দুল ওদুদের বাড়ি যে ভবনে, সে ভবনে বেসিক ব্যাংকের একটি শাখাও আছে।
সাবেক এমপি বলেন, ‘কৃষক লীগের সম্মেলনের দিন বিশৃঙ্খলা হয়েছিল। এরই জেরেই রাতে আমার বাসায় হামলার ঘটনা ঘটেছে। সিসিটিভি ফুটেজ দেখে আমরা নিশ্চিত হয়েছি, মেসবাহুল হক টুটুল নামে একজন এ ঘটনা ঘটিয়েছে, যাকে ঘোষিত কৃষক লীগের কমিটিতে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের পদ দেয়া হয়েছে।
‘কার আসকারা, কার ছত্রচ্ছায়ায় সে এ ঘটনা ঘটিয়েছে সেটি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসন খুঁজে বের করবে।’
তবে হামলার ঘটনা তদন্তে পুলিশের গাফিলতির অভিযোগ করেছেন তিনি।
ওদুদ বলেন, ‘পুলিশকে ঘটনার পর বিষয়টি জানানো হয়েছিল। তারা ঘটনাস্থল ঘুরে গেছে। আমাকে মামলা করতে বলছে, আমি মামলা করলে তারা কাজ করবে?
‘আমি একজন সাবেক এমপি। আমার নিরাপত্তার দায়িত্ব কি পুলিশের নয়?’
ওই ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে তিন যুবক মোটরসাইকেলে করে এসে আব্দুল ওদুদের বাড়ির সামনে থামে। পাঞ্জাবি পরা একজন কয়েক দফায় ইটপাটকেল ছুড়ে মারে ভবনের দিকে। এতে ভবনের সামনে কাচ ভেঙে পড়ে। এর পরপরই ওই যুবক মোটরসাইকেলে চড়ে বসলে তারা দ্রুত চলে যায়।
ওদুদের অভিযোগের বিষয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা কৃষক লীগের সদ্য ঘোষিত যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মেসবাহুল হক টুটুলের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলমগীর জাহান বলেন, ‘আমরা এখনও কোনো লিখিত অভিযোগ পাইনি। তারপরও আমরা কাজ করছি। সিসিটিভি ফুটেজে আমরা একজনকে দেখেছি। আমরা তার পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা করছি।’
আরও পড়ুন:সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে থাকা পুলিশ হত্যা মামলার আসামি আরাভ খান ওরফে রবিউল ইসলামের বিরুদ্ধে রেড নোটিশ জারির আবেদন গ্রহণের কথা শুনেছেন বলে জানিয়েছেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন।
চট্টগ্রামের এনায়েত বাজার পুলিশ ফাঁড়ির নবনির্মিত ভবন উদ্বোধন শেষে সোমবার দুপুরে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান তিনি।
পুলিশপ্রধান বলেন, ‘আরাভ খানের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহের জন্য ইন্টারপোলসহ বিভিন্ন জায়গায় যোগাযোগ শুরু করেছি। আমি কিছুক্ষণ আগে জানতে পেরেছি যে, তার যে নামে আমরা চার্জশিট দিয়েছি, ওই নামে রেড নোটিশ জারির একটা বিষয় (আবেদন/অনুরোধ) দিয়েছি। এটা বোধ হয় ইন্টারপোল গ্রহণ করেছে, এ রকম একটা খবর আমি পেয়েছি। এটা নিয়ে আমরা কাজ করছি, কীভাবে কাজ করছি সেটা সুস্পষ্টভাবে বলতে চাচ্ছি না তদন্তের স্বার্থে।’
তিনি আরও বলেন, ‘দেশ থেকে যদি কোনো আসামি পলায়ন করে বিদেশে চলে যায়, যখন আমরা তার সম্পর্কে মোটামুটি কিছু তথ্য পাই, তখন আমরা একটা রেড নোটিশ জারি করি। এটা ইন্টারপোল হেড কোয়ার্টারে যায়। আমি যেটা খবর পেয়েছি যে, এটা তারা অ্যাকসেপ্ট করেছে।’
এর আগে গত শনিবার পুলিশ কর্মকর্তা হত্যা মামলার ফেরারি আসামি আরাব খান ওরফে রবিউল ইসলামকে দেশে ফিরিয়ে আনতে আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলকে চিঠি দেয়ার খবর জানায় বাংলাদেশ পুলিশ।
ইন্টারপোল বাংলাদেশ ডেস্কের এক কর্মকর্তা ওই দিন বিকেলে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা এই বিষয়ে (আরাবকে দেশে ফেরানো) ব্যবস্থা নেয়ার জন্য ইন্টারপোলকে মেইল করেছি। তারা আমাদের দেয়া তথ্যগুলো যাচাই-বাছাই করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেবে।’
একই দিনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সাংবাদিকদের জানান, আরাবকে ফেরাতে ইন্টারপোলের সহায়তা চাওয়া হয়েছে।
পুলিশ কর্মকর্তা হত্যা মামলার পলাতক আসামি আরাবকে দেশে ফেরানোর উদ্যোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘ইন্টারপোলের সহায়তায় তাকে ফিরিয়ে আনতে সব ধরনের চেষ্টা চলছে। ইতোমধ্যে তাকে ধরতে ইন্টারপোলের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে।
‘আমরা অনেক কিছুই শুনেছি, জেনেছি। যেসব তথ্য আমাদের কাছে এসেছে, তা যাচাই-বাচাই করে বাদবাকি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
আরাবকে নিয়ে আলোচনার শুরু যেখান থেকে
আরাবের এই জুয়েলারি শপের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে নিমন্ত্রণ পান বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। এ নিয়ে সাকিব আল হাসানের ভিডিওবার্তার পর বিষয়টি নজরে আসে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখার (ডিবি)।
সে সময় ডিবি মতিঝিল বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেছিলেন, ‘পুলিশ পরিদর্শককে হত্যা মামলার চার্জশিট হয়েছে অনেক আগেই। রবিউল চার্জশিটভুক্ত পলাতক আসামি। জুয়েলারি শপ উদ্বোধনের ঘোষণার পর আইডেন্টিফাই করি, যে ব্যক্তি আরাব খান নামে আইডিটি পরিচালনা করছেন, তিনি পুলিশ পরিদর্শক মামুন এমরান খাঁন হত্যা মামলার আসামি রবিউল ইসলাম। তার ভারতীয় একটি পাসপোর্ট ও বাংলাদেশি পাসপোর্ট আমাদের কাছে রয়েছে।’
রবিউলকে ইন্টারপোলের সহায়তায় দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করার প্রক্রিয়া শুরু হবে বলে জানিয়েছিলেন ডিবি মতিঝিল বিভাগের উপকমিশনার রাজিব আল মাসুদ।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেছিলেন, ‘আমরা তাকে অনেক দিন ধরেই খুঁজছিলাম। দুবাইতে তিনি অবস্থান করছেন, এটা নিশ্চিত হওয়া গেছে। ফলে এখন আমরা ইন্টারপোলের মাধ্যমে তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা নেব।’
ফেরারি আসামি আরাব খানের মালিকানাধীন আরাব জুয়েলার্স উদ্বোধন হয় ১৫ মার্চ রাতে। দুবাইয়ে নিউ গোল্ড সোক হিন্দ প্লাজার ৫ নম্বর ভবনের ১৬ নম্বর দোকানটি আরাবের।
তার ফেসবুক প্রোফাইল ঘেঁটে দেখা যায়, সাকিব আল হাসানের পাশাপাশি পাকিস্তানের ক্রিকেটার মোহাম্মদ আমির, আফগানিস্তানের ক্রিকেটার হযরতউল্লাহ জাজাই, ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিকেটার এভিন লুইস, ইংল্যান্ডের বেনি হাওয়েল, শ্রীলঙ্কার ইসুরু উদানা, বাংলাদেশি লেখক সাদাত হোসাইন, অভিনেত্রী দীঘি, আলোচিত কনটেন্ট ক্রিয়েটর হিরো আলম, চলচ্চিত্র পরিচালক দেবাশীষ বিশ্বাস, কণ্ঠশিল্পী নোবেল, বেলাল খানসহ অনেকে জুয়েলারি শপ উদ্বোধন উপলক্ষে শুভেচ্ছাবার্তা দেন। তাদের একটি বড় অংশ দুবাইতে গিয়ে অনুষ্ঠানে অংশ নেন।
আরও পড়ুন:ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) পরবর্তী ২০২৩-২০২৪ শিক্ষাবর্ষে গুচ্ছ পদ্ধতি থেকে বেরিয়ে নিজস্ব প্রক্রিয়ায় ভর্তি পরীক্ষা নিতে চায় বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এইচ এম আলী হাসান।
১২৫ তম একাডেমিক কাউন্সিলের জরুরি সভায় রোববার সকাল ১১টার দিকে গুচ্ছে না যেতে মত দেন সদস্যরা।
সভায় উপস্থিত ছিলেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম, উপউপাচার্য অধ্যাপক ড. মাহবুবুর রহমান, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. আলমগীর হাসান ভূঁইয়া এবং বিভিন্ন বিভাগ ও অনুষদের ডীন, শিক্ষকসহ অন্তত ১৬০ জন।
এদিন সভায় একমাত্র এজেন্ডা ছিল গুচ্ছ ভর্তি প্রক্রিয়ায় ইবি অংশ নিবে কি না বিষয়টি চূড়ান্তকরণ। সভায় উপস্থিত সব শিক্ষক গুচ্ছের ভোগান্তি, সমস্যাগুলো তুলে ধরে নিজস্ব ভর্তি প্রক্রিয়ায় পরীক্ষা নেয়ার পক্ষে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।
এ বিষয়ে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. তপন কুমার জোদ্দার বলেন, ‘ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা গুচ্ছ থেকে বের হয়ে এসে নিজস্ব পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নিতে দাবি জানিয়ে আসছিলেন। উপাচার্য বরাবর লিখিত দাবিও জানানো হয়েছিল। রোববারের সভায় ভর্তি প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রতা, সমন্বয়হীনতা ও উচ্চশিক্ষার বৈষম্য ইত্যাদি কারণে গুচ্ছে থাকার বিপক্ষে মত দেন শিক্ষকরা।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা আগামী ৩০ জুনের মধ্যে ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি প্রক্রিয়া শেষ করে পহেলা জুলাই থেকে ক্লাস শুরু করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে অনুরোধ জানিয়েছি।’
উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম বলেন, ‘অল্প সময়ের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ভর্তি কমিটির সঙ্গে মিটিং ডেকে এটি বাস্তবায়নের জন্য কার্যক্রম শুরু করবেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘শিক্ষকরা সবাই গুচ্ছের বিপক্ষে মত দিয়েছেন। যেহেতু ভর্তি কার্যক্রম তারাই পরিচালনা করবেন তাই তাদের মত গ্রহণযোগ্যতা পাবে। সোমবার এ বিষয়ে ঢাকায় ইউজিসির সাধারণ সভা রয়েছে। আশা করি এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসবে।’
আরও পড়ুন:খুলনা নগরের টুটপাড়া এলাকা থেকে রোববার ভোর চারটার দিকে দুই ভাই বাড়ি থেকে বের হন। খুলনার রয়েল মোড় থেকে ইমাদ পরিবহনের বাসে ওঠেন। ছোট ভাই মো. ইশরাকুজ্জামান গোপালগঞ্জে নেমে যান গাড়ি থেকে। তবে গাড়িতে ছিলেন বড় ভাই মো. আশফাকুজ্জামান লিংকন। মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার কুতুবপুর এলাকার পদ্মাসেতুর এক্সপ্রেসওয়েতে বাস খাদে পড়ে তিনি নিহত হন।
দুই জনের মধ্য ছোট ভাই মো. ইশরাকুজ্জামান একটি বেসরকারি ব্যাংকের রাজবাড়ী শাখার ব্যবস্থাপক হিসেবে কর্মরত। নিহত ৪৫ বছর বয়সী আশফাকুজ্জামান লিংকন ছিলেন ঠিকাদার। এই দুই ভাইয়ের মধ্যে সম্পর্ক ছিল বন্ধুত্বের মতন। বড় ভাইয়ের মৃত্যুর পর তার মরদেহ নিয়ে বাড়িতে ফিরতে হয়েছে ছোট ভাইকে।
তাদের বাড়ি গোপালগঞ্জে হলেও দীর্ঘদিন ধরে তারা খুলনা নগরের টুটপাড়া এলাকায় ভাড়া বাড়িতে থাকেন। দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে সবার বড় আশফাকুজ্জামান। ছোট ভাই ও বোনের বিয়ে হয়ে গেলেও তিনি বিয়ে করেননি।
রোববার দুপুর ১২টার দিকে আশফাকুজ্জামানের মামারা নিশ্চিত হন সড়ক দুর্ঘটনায় আশফাকুজ্জামান নিহত হয়েছেন। রোববার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে আশফাকুজ্জামানের বাবা শাজাহান মোল্লাকে ছেলের মৃত্যুর খবর জানানো হয়।
রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে টুটপাড়ার নজরুল ইসলাম সড়কে আশফাকুজ্জামানদের বাড়ির সামনে গিয়ে দেখা যায় খাটিয়া প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে। গোসল করানোর জায়গাও প্রস্তুত। বাড়ির সামনের গলির মুখে মানুষের জটলা। তবে কেউ বাড়ির দিকে যাচ্ছেন না। এর কারণ জানা গেল তাদের বাড়ির মধ্যে প্রবেশ করে।
আশফাকুজ্জামানের মেজো মামা হুমায়ুন কবির বলেন, ‘মরদেহ নিয়ে রোববার বিকেল ৩টার দিকে খুলনার উদ্দেশে বের হয় আশফাকুজ্জামানের ছোট ভাই ইশরাকুজ্জামান। এশার নামাজের পর জানাজা শেষে টুটপাড়া কবরস্থানে আশফাকুজ্জামানকে দাফন করা হয়।’
আরও পড়ুন:কিশোরগঞ্জে এগারোসিন্দুর গোধূলি নামের ট্রেনে হামলা চালিয়েছে দুর্বৃত্তরা।
জেলার কটিয়াদী উপজেলার মানিকখালী এলাকায় রোববার রাত সাড়ে ১০টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
ওই সময় ট্রেনের জানালার কাচ ভেঙে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ ছাড়াও ট্রেনের গার্ড ব্রেকেও হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা।
এ ঘটনায় ট্রেনের সহকারী লোকোমোটিভ মাস্টার মো. কাওছার হোসেনসহ তিন থেকে চার যাত্রী আহত হয়েছেন।
ট্রেনের সহকারী লোকোমোটিভ মাস্টার মো. কাওছার হোসেন রোববার রাত ১১টা ৫৪ মিনিটে এ বিষয়ে তার ব্যক্তিগত ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে একটি পোস্ট দিয়েছেন।
সেই পোস্টে তিনি লিখেন, ‘আজ এগারোসিন্দুর গোধূলি (৭৪৯) কাজ করছি। সরারচর-মানিকখালী সেকশনে যে মেলা হয়, সেখানে স্টপেজের কোনো কন্ট্রোল অর্ডার নেই কিংবা কোনো স্টেশনের মাস্টার ইনফর্ম করেননি। সেকশনে কেন মেলা স্থানে দাঁড়াইলাম না, সে জন্য মানিকখালী স্টেশনে বৃষ্টির মতো পাথর মেরেছে একদল বে… পোলাপান, এলএম মো. মহসিন আলী ভাইয়ের কিছু হয়নি, কিন্তু আমার হাত কেটে গেছে। নিজেদের জীবন পাথর সন্ত্রাসীদের হাত থেকে রক্ষা করতে পেরেছি, তাই মহান আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি।
‘লোকোমোটিভের এল/এস উইন্ডো গ্লাস সম্পূর্ণরূপে, আর/এস লুকিং গ্লাস সম্পূর্ণরূপে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। হামলা শুধু লোকোমোটিভেই করে ক্ষান্ত হয়নি, আমির হোসেন ভাইয়ের গার্ড ব্রেকে তদ্রূপ হামলা চালিয়েছে।’
ফেসবুক স্ট্যাটাসের বিষয়টি নিশ্চিত করে ট্রেনের সহকারী লোকোমোটিভ মাস্টার মো. কাওছার হোসেন বলেন, ‘রোববার রাতে মানিকখালী স্টেশনের খানিকটা আগে মণ্ডলভোগ নামে একটি এলাকায় একটি মেলায় যাওয়ার জন্য ভৈরব ও কুলিয়ারচর স্টেশন প্রায় ২০০ থেকে ৩০০ যাত্রী ওঠে। তাদের দাবি ছিল মণ্ডলভোগ এলাকায় ট্রেন থামানোর, কিন্তু স্টেশন থেকে কোনো নির্দেশনা না থাকায় ট্রেন থামে মানিকখালী স্টেশনে।
‘ট্রেন থামার পরেই কিছু লোক নেমে যায় আর বাকিরা ট্রেনের চালকের রুমে এসে ভাঙচুর চালায়। আর ট্রেনের নিচে থাকা লোকজন বৃষ্টির মতো পাথর নিক্ষেপ করতে থাকেন। কোনো রকমে আমরা রক্ষা পাই। ট্রেনের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। কয়েকজন যাত্রীও আহত হয়েছেন, তবে তাদের নাম-পরিচয় পাওয়া যায়নি।’
কিশোরগঞ্জ রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ.কে.এম আমিনুল হক জানান, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। এ ঘটনায় কাউকে আটক করা যায়নি।
কিশোরগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশনের মাস্টার ইউসুফ জানান, চিকিৎসার কাজে তিনি ঢাকায় অবস্থান করছেন। ট্রেনে হামলার বিষয়টি শুনেছেন।
এ বিষয়ে থানায় কোনো অভিযোগ দিয়েছেন কি না এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এটা তো উৎসুক জনতা হামলা করেছে। আমরা তো ওইভাবে কাউকে চিনিও না, জানিও না। বিষয়টি নিয়ে পুলিশ কাজ করছে।’
আরও পড়ুন:মাদারীপুরে পদ্মা সেতুর এক্সপ্রেসওয়েতে রোববার সকালে ইমাদ পরিবহনের যাত্রীবাহী খাদে পড়ে ১৯ জন নিহতের ঘটনায় মামলা করেছে শিবচর হাইওয়ে থানা পুলিশ।
হাইওয়ে থানার সার্জেন্ট জয়ন্ত দাস রোববার রাত ২টার দিকে মামলাটি করেন, যাতে আসামি করা হয় বাসমালিককে।
শিবচর হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু নাইম মোফাজ্জেল জানান, ইমাদ পরিবহনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাব্বির হোসেনকে আসামি করে মামলাটি করা হয়। বাসটিতে অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন, বেপরোয়া গতি ও এর ফিটনেসের বিষয়টি মামলায় উল্লেখ করা হয়।
তিনি জানান, দুর্ঘটনায় চালক ও হেলপার নিহত হওয়ায় তাদের নামে মামলা করা হয়নি। সার্জেন্ট জয়ন্ত দাস মামলার বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
খুলনা থেকে যাত্রী বোঝাই করে ইমাদ পরিবহনের বাসটি রোববার সকালে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে আসে। এটি পদ্মা সেতুর আগে ঢাকা-খুলনা এক্সপ্রেসওয়েতে মাদারীপুরের শিবচরের কুতুবপুর সীমানা এলাকায় এলে সামনের চাকা ফেটে যায়। এতে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বাসটি নিচে পড়ে যায়।
ওই সময় দুমড়েমুচড়ে যায় বাসটি। এতে ঘটনাস্থলেই ১৪ জন নিহত হয়। পরে হাসপাতালে আরও পাঁচজনের মৃত্যু হয়।
আরও পড়ুন:আশা ছিল বড় চাকরি করে বাবা-মায়ের স্বপ্ন পূরণ করবেন। বাড়িতে বড় দালান বানিয়ে পরিবারকে সুখে রাখবেন। কিন্তু সেই আশা অধরাই থেকে গেল মাসুদ খানের।
পদ্মা সেতুর এক্সপ্রেসওয়ের শিবচরের কুতুবপুর এলাকার রোববার সকাল ৮টার দিকে দুর্ঘটনায় নিহত হন মাসুদ।
গোপালগঞ্জের আদমপুর গ্রামের আমজেদ আলী খানের মাস্টার্স পাস করা ছেলে ২৭ বছর বয়সী মাসুদ খান। তিনি ঢাকা কলেজ থেকে দর্শন বিভাগের মাস্টার্স পাস করেন।
নিহত মাসুদের পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত তিন দিন আগে ঢাকা থেকে মা-বাবা ও পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে বাড়িতে আসেন মাসুদ। রোববার খুব ভোরে ইমাদ পরিবহনে ঢাকা যাচ্ছিলেন। কিন্তু ঢাকা আর যাওয়া হলো না। বাস খাদে পড়ে সমাধি হলো একজন স্বপ্নবাজ তরুণের।
মরদেহ নিতে এসে মাসুদের বড় ভাই শফিক খান বারবার ভাইয়ের জন্য মূর্ছা যাচ্ছিলেন। কোনোভাবেই ভাইয়ের এমন করুণ মৃত্যু তিনি মেনে নিতে পারছেন না। কান্নায় ভেঙ্গে পড়ছেন শফিক খান।
মাসুদ খানের ভাই শফিক খান বলেন, ‘কথা ছিল বড় চাকরি করে পরিবারের দায়িত্ব নিবে মাসুদ। মাস্টার্স পাস করে ঢাকাতেই ছোটখাটো কম্পিউটারের কাজ করত। যা ইনকাম করতো তা দিয়ে নিজে চলে বাড়িতেও টাকা-পয়সা পাঠাত। আর মাঝে মাঝে বড় চাকরিতে যোগ দিতে পরীক্ষা দিত। অল্প দিনের মধ্যেই চাকরি পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেই চাকরি আর করা হলো না। কীভাবে এই শোক মেনে নিব। আমার প্রাণের ছোট ভাইকে আর পাব না, এটা মানতে পারছি না।’
মাসুদের বন্ধু শাকিব হোসেন বলেন, ‘আমরা একই গ্রামে ছোট থেকে বড় হয়েছি। মাসুদ আমার চেয়েও অনেক মেধাবী ছিল। সে মুকসেদপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এইচএসসি পাস করে ঢাকা কলেজে দর্শন বিভাগের অর্নাস ও মাস্টার্স শেষ করে। আমাকে মাঝে মাঝেই বলতো, বড় চাকরি করে বাবা-মায়ের স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু সেই চাকুরি আর তার করা হলো না। তার জন্য বুকটা ভেঙে চৌচির হয়ে যাচ্ছে।’
মাদারীপুরের পুলিশ সুপার মাসুদ আলম জানান, রোববার সকাল ৮টার দিকে খুলনা থেকে ছেড়ে আসা ইমাদ পরিবহনের একটি বাস পদ্মা সেতুর আগে এক্সপ্রেসওয়ের শিবচরের কুতুবপুর এলাকায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে যায়। এ সময় দুমড়ে-মুচড়ে যায় বাসটি। এ ঘটনায় নারীসহ ১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। মাদারীপুর জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ঘটনার তদন্তের জন্যে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
আরও পড়ুন:নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে হত্যা মামলার আসামিকে ধরতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে এক বৃদ্ধসহ দুজন হতাহতের ঘটনায় মামলা করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)
এ মামলায় পাঁচজনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে৷ এদের মধ্যে রয়েছেন নিহত আবুল কাশেমের ছেলে নজরুল ইসলাম, তার ৩ ভাতিজা ও নাতি। গত শুক্রবার ঘটনার পর মধ্যরাতে তাদের আটক করে র্যাব।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে-আবুল কাশেমের ছেলে নজরুল ইসলাম (৪০), তিনি পেশায় জামদানি কারিগর, তার তিন ভাতিজা জাহাঙ্গীর আলম (৪৫), আমানুল্লাহ (৪২) হযরত আলী এবং মো. রুবেল (২৫)।
রোববার বিকেলে নারায়ণগঞ্জের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রট সানজিদা সারোয়ারের আদালতে নিহত বৃদ্ধর ছেলেসহ পাঁচজনকে তোলা হয়। শুনানি শেষে বিচারক তাদের কারাগারে পাঠানো আদেশ দেন।
গত শনিবার মধ্যরাতে সোনারগাঁয়ের সাদিপুর ইউনিয়নের বরগাঁ গ্রামে হত্যা মামলার এক আসামিকে ধরতে গিয়ে র্যাবের অভিযানে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান ৬৫ বছরের এক বৃদ্ধ৷ গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে আছেন আরেক জন। র্যাবের দাবি, আসামিকে ছিনিয়ে নিয়ে তাদের ওপর হামলা চালায় স্থানীয় গ্রামবাসী৷ এ ঘটনায় ওই রাতেই পুনরায় অভিযান চালিয়ে ২ কিশোরসহ আটক করা হয় ২০ জনকে।
শনিবার সারাদিন র্যাব হেফাজতে থাকার পর সন্ধ্যা ৬টার দিকে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাদের জিম্মায় ছেড়ে দেওয়া হয় আটককৃত ১৫ জনকে৷ তবে র্যাবের ওপর হামলার অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয় বাকি পাঁচজনকে৷
সোনারগাঁ থানার পরিদর্শক আহসান উল্লাহ নিউজবাংলাকে বলেন, র্যাব মামলা করেছে, পুলিশ তদন্ত করবে। যারা এর সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে আইনের আওতায় আনা হবে। তবে বৃদ্ধর পরিবারের পক্ষ থেকে এখনও মামলা করেনি।
র্যাব-১১–এর অধিনায়ক তানভীর মাহমুদ পাশা বলেন, হত্যা মামলার আসামি ধরতে গেলে দুষ্কৃতিকারীররা ওই হামলা চালিয়ে ছিল। আমাদের চারজন আহত হওয়ার পর তাদের হাসপাতালে পাঠানো হয়। এ ঘটনায় ২০ জনকে আটক করা হয়েছিল। এদের মধ্যে ১৫ জনকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য