গত তিনটি জাতীয় নির্বাচনের মতো আগামী জাতীয় নির্বাচনেও জয় আওয়ামী লীগেরই হবে বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিএনপি-জামায়াত জোট যেন কখনও আর ক্ষমতায় ফিরতে না পারে, সে জন্য জনমত গঠনেরও আহ্বান জানান তিনি।
আওয়ামী লীগপ্রধান বলেন, তার সরকার দ্রুত দেশের উন্নয়ন করেছে। যারা এ দেশের স্বাধীনতা চায়নি, তারা এটি মেনে নিতে পারছে না। এ কারণে সামাজিক মাধ্যমে অপপ্রচার চলছে। এর জবাব দিতে ছাত্রলীগকে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
আওয়ামী লীগই একমাত্র দল হিসেবে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করেছিল, এই বিষয়টিও স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন তিনি। প্রতিদ্বন্দ্বী দল বিএনপি জনগণের অধিকার হরণ করে গণতন্ত্রকে ক্যান্টনমেন্টে বন্দি করেছিল বলেও মন্তব্য করেন।
আওয়ামী লীগের ভাতৃপ্রতিম সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ৩০তম জাতীয় সম্মেলনের উদ্বোধন করে মঙ্গলবার এ কথা বলেন ছাত্রসংগঠনটির অভিভাবক।
নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে হচ্ছে এই সম্মেলন। সারা দেশ থেকে আসা প্রতিনিধিরা এই সম্মেলনে অংশ নিয়েছেন।
বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সম্মেলনস্থলে উপস্থিত হয়ে জাতীয় পতাকা ও ছাত্রলীগের পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে সম্মেলন উদ্বোধন করেন তিনি। এর আগে গাওয়া হয় জাতীয় সংগীত। বেলুন ও পায়রাও ওড়ান বঙ্গবন্ধুকন্যা।
আওয়ামী লীগপ্রধান তার দীর্ঘ বক্তব্যে সমসাময়িক রাজনৈতিক পরিস্থিতি, গত এক যুগে তার নেতৃত্বাধীন সরকারের নানা অর্জন ছাড়াও বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ক্ষমতায় এসে বিএনপির ভূমিকা, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে তাকে গ্রেপ্তারের কথা তুলে ধরেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আওয়ামী লীগ জনগণে বিশ্বাস করে, জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়েছে। আগামীতেও জনগণের ভোটের নির্বাচিত হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের ক্ষমতায় যেন আর কখনও বিএনপি-জামায়াত আসতে না পারে, সে জন্য জনমত গড়ে তুলতে হবে।’
গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে বলে একমাত্র দল হিসেবে আওয়ামী লীগই এদেশে সুষ্ঠুভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করেছিল উল্লেখ করে সরকারি দলের নেতা বলেন, ‘বিপরীতে একটি পক্ষ পিতাকে হত্যা করে দাবি করেছিল তারা গণতন্ত্র এনেছে। জনগণের অধিকার হরণ করে ক্যান্টনমেন্টে বন্দি করে রাখা কী ধরনের গণতন্ত্র?
‘আমাদের অনেক জ্ঞানী গুণী একই সুরে কথা বলেছেন। তারা বুদ্ধিজীবী নন, আসলে বুদ্ধি প্রতিবন্ধীজীবী।’
গুজব রুখতে ছাত্রলীগকে নির্দেশ
শেখ হাসিনা তার শাসনামলে দেশের বদলে যাওয়ার বর্ণনা দেন। যারা উন্নয়ন অস্বীকার করেন, সমালোচনা করেন তাদের। সামাজিক মাধ্যম সরকারবিরোধী অপপ্রচারে ছেয়ে গেছে উল্লেখ করে ছাত্রলীগকে সেগুলোর জবাব দেয়ার নির্দেশ দেন।
তিনি বলেন, ‘যারা এদেশে স্বাধীনতার চায়নি, তাড়াতাড়ি দেশের উন্নয়ন কখনো মেনে নেবে না। …সোশ্যাল মিডিয়ায় আমাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচারে ভরে গেছে। আমি ছাত্রলীগকে বলব, এর বিরুদ্ধে তোমরা বিএনপি ক্ষমতা থাকাকালীন যে কাজ করেছে সেগুলো তুলে ধরবে।
‘কিছু গুজব হচ্ছে কি, ব্যাংকে টাকা নেই। আমি একটা কথা স্পষ্ট জানতে চাই, আমি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর সঙ্গে কথা বলেছি, অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি। আমাদের কোন ব্যাংকে টাকার কোনো ঘাটতি নেই। গুজবে কেউ কান দেবেন না।
‘মানুষকে ভাঁওতাবাজি দিয়ে গুজব ছড়াতে চায়। সে দিকে সকলের বিশেষ দৃষ্টি রাখতে হবে।’
বাংলাদেশের খাবারের কোনো অভাব নেই উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্রচুর পরিমাণে খাবার আছে। প্রচুর আমন হয়েছে।’
তারপরেও উৎপাদনে মনযোগ দেয়ার তাগিদ দিয়েছেন তিনি। বলেন, ‘যেখানে যাদের জমি আছে, ফসল উৎপাদন করতে হবে। নিজে নিজেরা উৎপাদন করবেন যাতে খাদ্যে কোনো ঘাটতি না হয়।
‘বিদ্যুৎ, পানি গ্যাস ব্যবহারের প্রত্যেককে সাশ্রয়ী হতে হবে। ছাত্ররা হোস্টেলে থাকলেও প্রয়োজনের বাইরে বিদ্যুৎটা বন্ধ করতে হবে। বিশ্ব মন্দা যেন আমাদেরকে আঘাত করতে না পারে। সে জন্য সবাইকে দৃষ্টিতে হবে।’
উন্নয়নের বর্ণনা
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশ নাকি কিছুই হয়নি। বাংলাদেশ নাকি শেষ হয়ে গেছে। বাংলাদেশের ৬৬ ভাগ সাক্ষরতার উন্নতি করেছিলাম ৯৬ সালে ক্ষমতা আসার পরে। আজকে সাক্ষরতার হার ৭৫ ভাগে উন্নত করতে পেরেছি। দুই কোটি ৫৩ লাখ শিক্ষার্থীকে বৃত্তি দিয়ে যাচ্ছি।
‘দারিদ্র্যের হার ৪০ ভাগ ছিল। সেখানে ২০ ভাগে নামিয়ে এনেছি। করোনার সময় বিনা পয়সায় ভ্যাকসিন দিয়েছি। করোনা টেস্টে টাকা নেইনি। প্রায় ৩৫ লাখ মানুষকে টাকা পাঠিয়ে। অনলাইনে নগদ টাকা পাঠিয়েছি। ব্যবসা-বাণিজ্যের সুষ্ঠুভাবে চলে তার জন্য প্রণোদনা দিয়েছি। গার্মেন্টসে ঠিকমতো চলে তার জন্য প্রণোদনা দিয়েছি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশেই একমাত্র টানেল করেছে। এখন মেট্রো রেল হচ্ছে। কারিগরি শিক্ষার প্রসার করেছি, যাতে দক্ষ জনবল গড়ে ওঠে। বিনা পয়সায় বই দিচ্ছি। প্রত্যেকটা ক্ষেত্রে ছেলেমেয়েদের শিক্ষার জন্য সবচেয়ে গুরুত্ব দিচ্ছি। শিক্ষা ছাড়া কোন দেশ কখনো উন্নতি করতে পারে না। আমি ছাত্রদের বলব, যে যাই করুক না কেন লেখাপড়া শিখতে হবে। লেখাপড়ায় মনোযোগ দিতে হবে।
‘আমরা প্রযুক্তি ব্যবহারের সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি। শুধু পড়াশোনা করে চাকরি পেছনে না ছুটে যাতে নিজে কিছু করতে পারে সে ব্যবস্থাটাও করে দিয়েছি। বিশেষ প্রণোদনা দিয়েছি যাতে সকলের কিছু কাজ করতে পারে। কারিগরি শিক্ষা ৯৭.২ ভাগে উত্তীর্ণ করেছি। আমাদের যুব সমাজ আমাদের ভবিষ্যৎ। ৪১ এর সৈনিক হবে আজকের যুব সমাজ। ১০০ টা অর্থনৈতিক অঞ্চল আমরা করে দিয়েছি।’
ইতিমধ্যে ৩৫ লাখ মানুষকে বিনা পয়সায় ঘর দেখা হয়েছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘যদি কেউ ভূমিহীন থাকে, আমাকে নাম ঠিকানা দিলে ব্যবস্থা করে দেব।’
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে বন্দি হওয়ার সময়ই দেশের উন্নয়নের পরিকল্পনা করার কথাও বলেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমাকে বন্দি করল। সংসদ ভবনের একটি ভবনে সেখানে রাখা হলো। আমি সেখানে বসেই রূপকল্প একুশ প্রণয়ন করি।
‘বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশের পরিণত করব, আমি সেটা করতে পেরেছি। উন্নয়নশীল দেশের যে মর্যাদা পাব, সেই পরিকল্পনা করে রেখেছি আমরা। ২০৪১ সালে বাংলাদেশ হবে উন্নত দেশ।’
জিয়া-খালেদার কঠোর সমালোচনা
বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ক্ষমতায় আসা বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের সমালোচনাও করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘যুদ্ধাপরাধীদের রাজনীতি করার সুযোগ করে দিয়েছেন জিয়াউর রহমান। ইতিহাস বিকৃতি, জাতির পিতার ভাষণ নিষিদ্ধ, জয় বাংলার স্লোগান নিষিদ্ধ জিয়াউর রহমান করেছেন।
১৯৯৪ থেকে ৯৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি সরকারবিরোধী আন্দোলনের সময় সে সময়ের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার একটি উক্তির কথাও স্মরণ করেন তিনি।
সে সময় নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলনে থাকা আওয়ামী লীগকে দমনে ছাত্রদলই যথেষ্ট বলে মন্তব্য করেছিলেন বিএনপি নেত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘খালেদা জিয়া হুমকি দিয়েছিলেন, আওয়ামী লীগকে শিক্ষা দিতে ছাত্রদলই যথেষ্ট। তারা ছাত্রদের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়েছিল। আর আমি বই, খাতা-কলম তুলে দিয়েছিলাম।’
খালেদার পক্ষে যারা বলে, তারা বুদ্ধি প্রতিবন্ধীজীবী
যারা খালেদা জিয়ার পক্ষে বলেন, তাদেরকেও তীব্র ভাষায় আক্রমণ করেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘যারা ইমার্জেন্সি (জরুরি অবস্থা) এনেছিল, ফখরুদ্দীন, ইয়াজউদ্দিন, সবাইকে বিএনপি এনেছিল। তারা কিন্তু প্রথম আমাকে গ্রেপ্তার করেছিল, খালেদা জিয়াকে নয়। পরে খালেদাকে গ্রেপ্তার করেছে।
‘এতিমের টাকা মেরে দিয়েছে। এই কারণেই খালেদা জিয়া সাজাপ্রাপ্ত আসামি। যারা তার পক্ষে কথা বলে, তারা আসলে বুদ্ধিজীবী নয় বুদ্ধি প্রতিবন্ধীজীবী।
‘খালেদা জিয়াকে আমরা উৎখাত করেছি। এরশাদকে উৎখাত করেছি। জিয়াকে উৎখাত করতে পারতাম। কিন্তু তার আগেই সে মারা গেল।’
ছাত্রলীগের ভূয়সী প্রশংসা
শেখ হাসিনা তার ভাষণে ছাত্রলীগের ব্যাপক প্রশংসাও করেন। তিনি বলেন, ‘করোনা সংক্রমণের সময় একমাত্র ছাত্রলীগ রাজনৈতিক সংঘ হিসেবে কাজ করেছে। তাই ছাত্রলীগকে আমি ধন্যবাদ জানাই অভিনন্দন জানাই দুঃসময়ে কাজ করার জন্য।
‘সিলেটে বন্যা হলো, মানুষ কিছু করতে পারে না। আমি সেখানে বিমান বাহিনী, নৌ বাহিনী, পুলিশ-প্রশাসন সবাইকে কাজে লাগিয়েছি। সেখানে ছাত্রলীগ, যুবলীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ সবাইকে কাজে লাগিয়েছি।
‘ছাত্রলীগ মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। ছাত্রলীগ সবসময় অগণের ভূমিকা পালন করেছে। এদেশের স্বাধীনতা অর্জনের ছাত্রলীগের ভূমিকা অপরিসীম। দেশের প্রতিটি সংগ্রাম ও অর্জনে এর ভুমিকা আছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘জাতির পিতা সোনার বাংলা করার জন্য সোনার মানুষ চেয়েছিলেন। আমি আশা করি সেই সোনার মানুষ ছাত্রলীগ।’
বয়স ৭৩ হয়ে গেছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘যে কোনো সময় আমি অক্কা পেতে পারি। কিন্তু আমাদের বাকি প্রজন্মকে কাজ করতে হবে। সেভাবে গড়ে উঠতে হবে যেন তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে কেউ যেন মুছে ফেলতে না পারে, সেজন্য চেষ্টা করবে।
সম্মেলন উদ্বোধনের আনুষ্ঠানিকতা
এর আগে সকাল এগারোটা বিশ মিনিটে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ছাত্রলীগের সম্মেলনস্থলে এসে পৌঁছেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এরপর জাতীয় সংগীতের তালে তালে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন বঙ্গবন্ধুকন্যা।
বেলুন এবং পায়রা উড়িয়ে ছাত্রলীগের সম্মেলন উদ্বোধন করেন তিনি।
এ সময় ছাত্রলীগের সভাপতি সাধারণ সম্পাদক উত্তোলন করেন দলীয় পতাকা। আর জেলা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নিজ নিজ জেলার পতাকা উত্তোলন করেন।
এরপর প্রধানমন্ত্রীকে ফুলের শুভেচ্ছা দেন সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক অসীম কুমার বৈদ্য এবং সম্মেলনের নির্বাচন কমিশনার রেজাউল করিম সুমন।
পরে ছাত্রলীগ সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় এবং সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য প্রধানমন্ত্রীকে সম্মেলন স্মারক উপহার দেন।
এরপর সম্মেলন অভ্যর্থনা উপ কমিটির সদস্যরা প্রধানমন্ত্রীকে সম্মেলনের ব্যাজ পরিয়ে দেন। এরপর প্রধানমন্ত্রীকে উত্তরীয় পরিয়ে দেন সম্মেলন প্রস্তত কমিটির সদস্যরা।
এরপর ছাত্রলীগের সহসভাপতি সাইফ বাবুর নেতৃত্বে সাংস্কৃতিক উপ কমিটির সদস্যরা সাংস্কৃতিক পরিবেশনা উপস্থাপন করেন।
বিএসএল কমিউনিটি ওয়েবসাইটের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর ছাত্রলীগের প্রচার ও প্রকাশনা টিম প্রধানমন্ত্রীর হাতে জয় বাংলা ম্যাগাজিনের সম্মেলন স্মরণিকা তুলে দেন।
এরপর ছাত্রলীগ সভাপতি জয় এবং সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টচার্য বক্তব্য রাখেন।
আরও পড়ুন:জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় দফার দ্বিতীয় পর্বের আলোচনায় যোগ দেয়নি জামায়েতে ইসলামীর কোনো প্রতিনিধি। বিএনপি ও এনসিপির মাঝে জামায়াতের জন্য সংরক্ষিত আসনটি মধ্যাহ্নভোজের আগ পর্যন্ত ছিল ফাঁকা।
জামায়াতের আলোচনায় যোগ না দেয়ায় নানা রাজনৈতিক দল নানা মত দিয়েছেন। অনেকে বলছেন, কমিশনের বেশ কয়েকটি বিষয়ে জামায়াতের বনিবনা না হওয়ায় মঙ্গলবারের আলোচনায় তারা যোগ দেননি।
এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘কেন জামায়াত আলোচনায় যোগ দেয়নি সেই উত্তর কমিশনই ভালো দিতে পারবে।’
জামায়াতের আলোচনায় যোগ না দেয়া প্রসঙ্গে গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর বলেন, ‘আমরা যতদূর জানি জামায়াত আজকের বৈঠক প্রতীকী বয়কট করেছে। ঐকমত্য কমিশনের আজকের আলোচ্য বেশ কয়েকটি বিষয়ে জামায়াত হয়তো একমত হতে পারেনি। তাই আলোচনায় অংশ নেয়নি।’
জামায়াতের আলোচনায় যোগ না দেয়া প্রসঙ্গে ক্ষোভ প্রকাশ করে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব গাজী আতাউর রহমান বলেন, ‘গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক দল হিসেবে আজকের আলোচনায় জামায়াতের থাকা উচিত ছিল। তারা এই আলোচনা বয়কট করেছে কিনা সে বিষয়ে পরিষ্কার কিছু জানায়নি। যদি মধ্যাহ্নভোজের পরেও জামায়াত আলোচনায় না আসে তাহলে পুরো ব্যাপারটি বোঝা যাবে।’
ইসলামী আন্দোলনের এই নেতা বলেন, ‘আদর্শিক জায়গা থেকে আমরা বেশিরভাগ বিষয়েই একমত হয়েছি। কিন্তু নারীদের জন্য আলাদা করে সংরক্ষিত ১০০ আসন রাখার প্রয়োজন দেখি না। নারীর ক্ষমতায়ন আমরাও চাই, কিন্তু কোনো বৈষম্যমূলক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে না।’
বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল মনে করছে, নারী আসনসহ বেশ কয়েকটি বিষয়ে কমিশনের সঙ্গে মতানৈক্য হওয়ায় আলোচনার প্রথম পর্যায়ে জামায়াত যোগ দেয়নি।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে দ্বিতীয় ধাপের দ্বিতীয় পর্যায়ের সভার মধ্যাহ্নভোজের বিরতিতে সাংবাদিকদের বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, আগামী জাতীয় সংসদে ৫০টি স্থায়ী কমিটির মধ্যে চারটি বিরোধী দলের জন্য ধার্য হয়েছে এবং সব রাজনৈতিক দল এ বিষয়ে একমত।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের মঙ্গলবারের (১৭ জুন) সভায় চারটি গুরুত্বপূর্ণ সংসদীয় স্থায়ী কমিটি পাবলিক অ্যাকাউন্ট, প্রিভিলেজ, ইস্টিমেশন এবং পাবলিক আন্ডারটেকিং কমিটির সভাপতি পদ বিরোধী দল থেকে দেওয়ার সিদ্ধান্তে সবাই একমত বলে জানিয়েছে তিনি।
বাকি স্থায়ী কমিটি প্রসঙ্গে বিএনপির এ নেতা বলেন, ‘শুধু এই চারটি কমিটি না, সংখ্যাধিক্যের ভিত্তিতে বাকি কমিটিতেও আনুপাতিক হারে বিরোধীদলের জন্য নির্দিষ্ট জায়গা থাকবে।’
‘এছাড়া সংবিধানের ৭০ নং অনুচ্ছেদ যেখানে নিজ দলের বিরুদ্ধে ভোট দিলে সদস্য পদ বাতিলের বিধান আছে, সে বিষয়ে আস্থা ভোট এবং অর্থ বিল বাদে অন্য কোনো বিষয়ে ভোটদানে সংসদ সদস্যদের স্বাধীনতা প্রসঙ্গে সবাই একমত,’ বলেন তিনি।
তবে বিএনপির পক্ষ থেকে যুদ্ধ পরিস্থিতি এবং জাতীয় নিরাপত্তা এই দুই বিষয়েও দলের বিরুদ্ধে ভোট দেওয়া যাবে না এমন মত দেওয়া হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে সালাহউদ্দিন বলেন, ‘বিএনপির পক্ষ থেকে এই দুই বিষয়ে অটল থাকার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আমরা নির্বাচিত হলে ৭০নং অনুচ্ছেদে এ দুটি বিষয়ও যুক্ত করা হবে।’
নারীদের ১০০ সংরক্ষিত আসন প্রসঙ্গে সালাহউদ্দিন বলেন, ‘বেশিরভাগ রাজনৈতিক দলই এ বিষয়ে একমত। তবে নির্বাচন পদ্ধতি কেমন হবে তা নিয়ে মতানৈক্য আছে। আশা করছি, আজকের আলোচনা শেষে এ বিষয়ে সমাধানে আসা যাবে ‘
এছাড়া জুলাই সনদের পাশাপাশি প্রতিটি রাজনৈতিক দলের আলাদা আলাদা ইশতেহার গুরুত্ব পাবে বলে জানিয়েছেন বিএনপির এ নেতা।
এপ্রিল মাসকে জাতীয় নির্বাচনের জন্য উপযুক্ত সময় নয় উল্লেখ করে অন্তর্বর্তী সরকারকে সময়সূচি পুনঃবিবেচনা করার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, ‘অন্তবর্তী সরকার বাস্তবতার ভিত্তিতে এই বিষয়টি পুনঃবিবেচনা করবে।’
আজ মঙ্গলবার বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা এখনো (এপ্রিলের প্রথম দিকে নির্বাচন) নিয়ে দলীয় কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিনি। আমরা আশা করি, সরকার এই বিষয়টি বাস্তবতার আলোকে বিবেচনা করবে।’
অন্তবর্তী সরকার যে সময়ে জাতীয় নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ করেছে, তা সঠিক নয় বলেও দাবি এই বিএনপি নেতার।
ফখরুল বলেন, ‘আমরা প্রথম দিনই বলেছি যে, এই সময় নির্বাচনের জন্য ভালো নয়। রমজান মাস শেষ হবে, ঈদ হয়ে যাবে, তারপর কয়েকদিন পর নির্বাচন হবে। একটু ভাবুন, রমজান মাস জুড়ে প্রার্থী এবং রাজনৈতিক কর্মীরা কী ধরনের পরিস্থিতিতে পড়বেন।’
ফখরুল আরও বলেন, তিনি এখন থেকেই চিন্তিত যে প্রতিদিন ইফতার পার্টি আয়োজন করতে হবে, যা নির্বাচনী ব্যয় বাড়িয়ে দ্বিগুণ করবে।
তিনি রমজান মাসে নির্বাচনী প্রচারণা চালানোর অসুবিধাগুলো তুলে ধরে বলেন, বিশেষত তীব্র গরম এবং বৃষ্টিপাত বা ঝড়ের আশঙ্কা রয়েছে।
এছাড়া, তিনি উল্লেখ করেন, তীব্র গরমের কারণে নির্বাচনী সমাবেশের জন্য লোকজন জড়ো করা সম্ভব হবে না। ‘কর্মসূচিগুলো রাতের দিকে নিতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, অতীতে দুটি বিতর্কিত নির্বাচন ছাড়া বাংলাদেশে প্রায় সব জাতীয় নির্বাচন ডিসেম্বর বা জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
ফখরুল বলেন, ‘আমাদের দল বলেছে যে, ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন সম্ভব, এবং আমরা দৃঢ় বিশ্বাস করি যে এটি একটি বাস্তবসম্মত বিকল্প।’
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, বিএনপি যেকোনো সময় নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত, কারণ এটি নির্বাচনমুখী দল। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা বিপ্লবী দল না, আমরা জনগণের ভোটে ক্ষমতায় আসতে চাই।’
ফখরুল বিএনপির সংস্কার না করার যে অপপ্রচার ছড়ানো হচ্ছে, তা খণ্ডন করে বলেন, ‘এটা মিথ্যা প্রচারণা।’
তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, বিএনপি প্রথম দল হিসেবে ভিশন-২০৩০ কর্মসূচি তুলে ধরে এবং গণঅভ্যুত্থানের আগেই ৩১ দফা সংস্কারের খসড়া উপস্থাপন করেছিল।
ফখরুল সকল রাজনৈতিক দল, সংগঠন এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম কর্মীদের জাতিকে বিভক্ত না করার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, ‘দেশ একটি বিষয়ে ঐক্যবদ্ধ: আমরা গণতন্ত্রের পুনঃপ্রতিষ্ঠা চাই এবং আমরা চাই দেশটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় পরিচালিত হোক। আমরা ভোট দিতে চাই, আমাদের প্রতিনিধিদের নির্বাচন করতে চাই এবং সংস্কার দেখতে চাই। সুতরাং, অযথা বিভেদ সৃষ্টি করবেন না।’
ফখরুল সতর্ক করে বলেন, দেশে কোনো ধরনের বিভেদ সৃষ্টি হলে তা বিদেশি শক্তি এবং ষড়যন্ত্রকারীদের দেশের ক্ষতি করার সুযোগ করে দেবে।
প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মধ্যে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া বৈঠক রাজনীতিতে এই মুহূর্তে প্রধান ইভেন্ট বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, বর্তমান সময়ে এই বৈঠকের গুরুত্ব অনেক বেশি। জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবেও এই ইভেন্টের গুরুত্ব অনেক বেশি। তাদের সাক্ষাতের মাধ্যমে অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যেতে পারে বলে আশা প্রকাশ করেন মির্জা ফখরুল।
আজ মঙ্গলবার রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপার্সনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, এ বৈঠকের মাধ্যমে রাজনীতির নতুন ডাইমেনশন সৃষ্টি হতে পারে। অর্থাৎ অনেক কিছুর সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে। এখন এটা নির্ভর করবে আমাদের নেতারা সেটাকে কীভাবে নেবেন। বিএনপির পক্ষ থেকে তারেক রহমানকে সম্পূর্ণ এখতিয়ার দেওয়া হয়েছে সিদ্ধান্ত নেওয়ার। এই সাক্ষাৎকারে তার সাফল্য প্রার্থনা করছি।
বৈঠকের সুনির্দিষ্ট এজেন্ডা না থাকলেও আগামী নির্বাচনের তারিখ নিয়ে যে সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে তা এর মাধ্যমে সমাধান হতে পারে বলেও আশা প্রকাশ করেন মির্জা ফখরুল।
তিনি বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার একটি বিশেষ পরিস্থিতিতে ক্ষমতায় এসেছে। আমরা তাদের ক্ষমতায় বসিয়েছি। তাদের যথেষ্ট রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা নেই। তবে, তারা প্রত্যেকে নিজ-নিজ সেক্টরে যথেষ্ট অভিজ্ঞ।
আগামী জাতীয় নির্বাচন ২০২৬ সালের এপ্রিলের শুরুতে অনুষ্ঠিত হবে বলে জাতীর উদ্দেশ্যে দেওয়া এক ভাষণে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এই ঘোষণা গোটা জাতিকে হতাশ করেছে বলে অভিহিত করে চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচনের প্রস্তাব পুনর্ব্যক্ত করেছে বিএনপি।
শনিবার (৭ জুন) সকালে দেওয়া এক বিবৃতিতে এমন মন্তব্য করেছে দলটি।
বিবৃতিতে বিএনপি জানায়, ‘২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে ছাত্রসমাজ ও জনতার বিপুল ত্যাগের মধ্য দিয়ে জনগণের বিজয় অর্জিত হয়েছে। কিন্তু নির্বাচন আয়োজনের অযৌক্তিক বিলম্ব জনগণকে হতাশ ও ক্ষুব্ধ করেছে।’
এ সময় রমজান, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বা সমমানের পরীক্ষা এবং আবহাওয়া পরিস্থিতি ইত্যাদি বিবেচনায় নিয়ে চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তাব পুনর্ব্যক্ত করে বিএনপি।
এর আগে, শুক্রবার (৬ জুন) রাতে প্রধান উপদেষ্টার ভাষণের পর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে জরুরি ভার্চুয়াল বৈঠকে বসে বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম। বৈঠকের সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে শনিবার ভোরে বিবৃতিটি দেওয়া হয়।
বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টার ভাষণের বিষয়বস্তু বিস্তারিতভাবে পর্যালোচনা করা হয়। সেখানে এই ঘোষণা দীর্ঘ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে ভোটাধিকার পুনরুদ্ধারে সচেষ্ট জাতির আশা-আকাঙ্ক্ষাকে উপেক্ষা করেছে বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘প্রায় দেড় দশক ধরে ভোটের অধিকার থেকে বঞ্চিত এ দেশের জনগণ। বারবার গুম, হত্যা, কারাবরণ, হামলা ও নির্যাতনের শিকার হয়েও তারা ভোটের মাধ্যমে গণতন্ত্র পুনর্প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন।’
ঐকমত্য গঠনের কথা বললেও অন্তর্বর্তী সরকার একটি বিশেষ রাজনৈতিক গোষ্ঠীর দ্বারা প্রভাবিত হয়ে নিজেদের নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ করছে বলে মন্তব্য করেন বিএনপির নীতিনির্ধারকরা।
তারা বলেন, ‘এ কারণে বৈঠকে মনে করে এই সরকারের অধীনে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে কি না; তা নিয়ে জনগণ উদ্বিগ্ন হওয়াই স্বাভাবিক।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির ভাষ্যে, এপ্রিলের শুরুতে নির্বাচন দিলে তা আবহাওয়াজনিত জটিলতা ও রমজান মাসে প্রচার-প্রচারণা ও নির্বাচন-সংক্রান্ত কার্যক্রম পরিচালনায় প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করবে, যা পরবর্তীতে নির্বাচনের সময়সূচি পেছানোর অজুহাত হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে।
তারা বলেন, প্রধান উপদেষ্টার ভাষণে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন করা সম্ভব নয়— এমন কোনো সুস্পষ্ট যুক্তি উপস্থাপন করা হয়নি।
স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আরও বলা হয়, ঈদুল আজহা উপলক্ষে বাণী দেওয়ার কথা থাকলেও প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্য এক পর্যায়ে জাতির উদ্দেশ্য ভাষণে রূপ নেয়।
দীর্ঘ ওই ভাষণে অধ্যাপক ইউনূস নিজেই স্বীকার করেছেন বন্দর ও করিডর ইস্য অন্তবর্তী সরকারের তিনটি নির্দিষ্ট দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না।
এ ছাড়াও ওই ভাষণে ব্যবহৃত কিছু শব্দ রাজনৈতিক সৌজন্যের সীমা অতিক্রম করেছে বলেও ক্ষোভ প্রকাশ করেন বিএনপির নেতারা।
চোখের চিকিৎসা শেষে থাইল্যান্ড থেকে আজ শুক্রবার রাতে দেশে ফিরছেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি ব্যাংককের রুটনিন আই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী মির্জা ফখরুলের দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বিএনপি চেয়ারপারসনের মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান শুক্রবার দুপুরে বাসস’কে জানান, দলের মহাসচিব রাতে দেশে ফিরবেন।
তিনি আরও বলেন, ‘রাত ১১টায় ব্যাংকক থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হবেন মির্জা ফখরুল। তাকে বহনকারী ফ্লাইটটি রাত ১টা ২০ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করবে বলে আশা করা হচ্ছে।’
এর আগে, চোখের জটিলতাসহ অন্যান্য শারীরিক সমস্যার কারণে গত ১৩ মে রাত ২টা ৪৫ মিনিটে থাই এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে ব্যাংককের উদ্দেশ্যে ঢাকা ত্যাগ করেন মির্জা ফখরুল। সঙ্গে ছিলেন তার স্ত্রী রাহাত আরা বেগম।
নতুন অর্থবছরের (২০২৫-২৬) প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেটকে অকার্যকর ও গতানুগতিক এবং একতরফা বলে সমালোচনা করেছে বিএনপি। দলটি বলেছে, ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতি ও দরিদ্রতার মতো অর্থনৈতিক দীর্ঘস্থায়ী সমস্যাগুলো সমাধানে এবারের বাজেট সুর্নিদিষ্ট কৌশল দিতে ব্যর্থ হয়েছে।
বুধবার (৪ জুন) বাজেট নিয়ে দলের আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়ায় এসব কথা বলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘বিএনপি সব ধরনের সহায়তা দিয়ে আসছে অন্তর্বতী সরকারকে। আমরা আশা করেছিলাম যে অন্তর্বর্তী সরকার জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে জড়িত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে বাজেট তৈরি করবে, যাতে জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার ন্যূনতম স্তর তৈরি হয়।’
তিনি আরও বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তি, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি, ব্যবসায়ী নেতা ও যুব প্রতিনিধিদের নিকট থেকে মতামত নিতে পারত।
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘যদি এমনটি হতো, তাহলে বাজেট একটি সমন্বিত অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির প্রতীক হত। এটি দেশের বিভিন্ন অংশের কণ্ঠস্বর প্রতিফলিত করত। কিন্তু সেই সুযোগটি ব্যবহার করা হয়নি। ফলে, বাজেটটি একপেশে, অংশগ্রহণমূলক নয় এবং গতানুগতিক হয়ে গেছে। এতে নতুন চিন্তা-ভাবনার প্রতিফলন নেই।’
বর্তমান বিশেষ পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য বাজেট চূড়ান্ত করার আগে এই ধরনের আলোচনা আরও জরুরি ছিল, যেহেতু ২০২৫-২৬ অর্থবছরে একটি নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় আসবে।
প্রস্তাবিত বাজেটের উপর তাদের আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানাতে তাদের চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে এই প্রেস কনফারেন্স আয়োজন করে বিএনপি।
সোমবার (২ জুন) অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেট উপস্থাপন করেন। এটি জুলাই মাস থেকে কার্যকর হবে।
বাজেট সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার মানকে মাথায় রেখে তৈরি করা উচিত উল্লেখ করে আমীর খসরু বলেন, প্রস্তাবিত বাজেট সেই বৈষম্যমুক্ত সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিফলিত হয়নি, যার জন্য আন্দোলন করা হয়েছিল।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, বাজেটে চলমান অর্থনৈতিক সমস্যাগুলোর যেমন উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি, দরিদ্রতা বৃদ্ধি, কম বেসরকারি বিনিয়োগ এবং কর্মসংস্থানের কম সুযোগের স্পষ্ট সমাধান দেওয়া হয়নি।
বিএনপির এই নেতা বাজেটের সমালোচনা করে বলেন, বাজেটটি অপ্রয়োজনীয় এবং দুর্নীতিপ্রবণ প্রকল্পগুলোতে বেশি মনোযোগ দিয়েছে, অথচ শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কৃষি খাতের মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতে বরাদ্দ কমানো হয়েছে।
মন্তব্য