গত তিনটি জাতীয় নির্বাচনের মতো আগামী জাতীয় নির্বাচনেও জয় আওয়ামী লীগেরই হবে বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিএনপি-জামায়াত জোট যেন কখনও আর ক্ষমতায় ফিরতে না পারে, সে জন্য জনমত গঠনেরও আহ্বান জানান তিনি।
আওয়ামী লীগপ্রধান বলেন, তার সরকার দ্রুত দেশের উন্নয়ন করেছে। যারা এ দেশের স্বাধীনতা চায়নি, তারা এটি মেনে নিতে পারছে না। এ কারণে সামাজিক মাধ্যমে অপপ্রচার চলছে। এর জবাব দিতে ছাত্রলীগকে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
আওয়ামী লীগই একমাত্র দল হিসেবে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করেছিল, এই বিষয়টিও স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন তিনি। প্রতিদ্বন্দ্বী দল বিএনপি জনগণের অধিকার হরণ করে গণতন্ত্রকে ক্যান্টনমেন্টে বন্দি করেছিল বলেও মন্তব্য করেন।
আওয়ামী লীগের ভাতৃপ্রতিম সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ৩০তম জাতীয় সম্মেলনের উদ্বোধন করে মঙ্গলবার এ কথা বলেন ছাত্রসংগঠনটির অভিভাবক।
নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে হচ্ছে এই সম্মেলন। সারা দেশ থেকে আসা প্রতিনিধিরা এই সম্মেলনে অংশ নিয়েছেন।
বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সম্মেলনস্থলে উপস্থিত হয়ে জাতীয় পতাকা ও ছাত্রলীগের পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে সম্মেলন উদ্বোধন করেন তিনি। এর আগে গাওয়া হয় জাতীয় সংগীত। বেলুন ও পায়রাও ওড়ান বঙ্গবন্ধুকন্যা।
আওয়ামী লীগপ্রধান তার দীর্ঘ বক্তব্যে সমসাময়িক রাজনৈতিক পরিস্থিতি, গত এক যুগে তার নেতৃত্বাধীন সরকারের নানা অর্জন ছাড়াও বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ক্ষমতায় এসে বিএনপির ভূমিকা, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে তাকে গ্রেপ্তারের কথা তুলে ধরেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আওয়ামী লীগ জনগণে বিশ্বাস করে, জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়েছে। আগামীতেও জনগণের ভোটের নির্বাচিত হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের ক্ষমতায় যেন আর কখনও বিএনপি-জামায়াত আসতে না পারে, সে জন্য জনমত গড়ে তুলতে হবে।’
গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে বলে একমাত্র দল হিসেবে আওয়ামী লীগই এদেশে সুষ্ঠুভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করেছিল উল্লেখ করে সরকারি দলের নেতা বলেন, ‘বিপরীতে একটি পক্ষ পিতাকে হত্যা করে দাবি করেছিল তারা গণতন্ত্র এনেছে। জনগণের অধিকার হরণ করে ক্যান্টনমেন্টে বন্দি করে রাখা কী ধরনের গণতন্ত্র?
‘আমাদের অনেক জ্ঞানী গুণী একই সুরে কথা বলেছেন। তারা বুদ্ধিজীবী নন, আসলে বুদ্ধি প্রতিবন্ধীজীবী।’
গুজব রুখতে ছাত্রলীগকে নির্দেশ
শেখ হাসিনা তার শাসনামলে দেশের বদলে যাওয়ার বর্ণনা দেন। যারা উন্নয়ন অস্বীকার করেন, সমালোচনা করেন তাদের। সামাজিক মাধ্যম সরকারবিরোধী অপপ্রচারে ছেয়ে গেছে উল্লেখ করে ছাত্রলীগকে সেগুলোর জবাব দেয়ার নির্দেশ দেন।
তিনি বলেন, ‘যারা এদেশে স্বাধীনতার চায়নি, তাড়াতাড়ি দেশের উন্নয়ন কখনো মেনে নেবে না। …সোশ্যাল মিডিয়ায় আমাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচারে ভরে গেছে। আমি ছাত্রলীগকে বলব, এর বিরুদ্ধে তোমরা বিএনপি ক্ষমতা থাকাকালীন যে কাজ করেছে সেগুলো তুলে ধরবে।
‘কিছু গুজব হচ্ছে কি, ব্যাংকে টাকা নেই। আমি একটা কথা স্পষ্ট জানতে চাই, আমি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর সঙ্গে কথা বলেছি, অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি। আমাদের কোন ব্যাংকে টাকার কোনো ঘাটতি নেই। গুজবে কেউ কান দেবেন না।
‘মানুষকে ভাঁওতাবাজি দিয়ে গুজব ছড়াতে চায়। সে দিকে সকলের বিশেষ দৃষ্টি রাখতে হবে।’
বাংলাদেশের খাবারের কোনো অভাব নেই উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্রচুর পরিমাণে খাবার আছে। প্রচুর আমন হয়েছে।’
তারপরেও উৎপাদনে মনযোগ দেয়ার তাগিদ দিয়েছেন তিনি। বলেন, ‘যেখানে যাদের জমি আছে, ফসল উৎপাদন করতে হবে। নিজে নিজেরা উৎপাদন করবেন যাতে খাদ্যে কোনো ঘাটতি না হয়।
‘বিদ্যুৎ, পানি গ্যাস ব্যবহারের প্রত্যেককে সাশ্রয়ী হতে হবে। ছাত্ররা হোস্টেলে থাকলেও প্রয়োজনের বাইরে বিদ্যুৎটা বন্ধ করতে হবে। বিশ্ব মন্দা যেন আমাদেরকে আঘাত করতে না পারে। সে জন্য সবাইকে দৃষ্টিতে হবে।’
উন্নয়নের বর্ণনা
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশ নাকি কিছুই হয়নি। বাংলাদেশ নাকি শেষ হয়ে গেছে। বাংলাদেশের ৬৬ ভাগ সাক্ষরতার উন্নতি করেছিলাম ৯৬ সালে ক্ষমতা আসার পরে। আজকে সাক্ষরতার হার ৭৫ ভাগে উন্নত করতে পেরেছি। দুই কোটি ৫৩ লাখ শিক্ষার্থীকে বৃত্তি দিয়ে যাচ্ছি।
‘দারিদ্র্যের হার ৪০ ভাগ ছিল। সেখানে ২০ ভাগে নামিয়ে এনেছি। করোনার সময় বিনা পয়সায় ভ্যাকসিন দিয়েছি। করোনা টেস্টে টাকা নেইনি। প্রায় ৩৫ লাখ মানুষকে টাকা পাঠিয়ে। অনলাইনে নগদ টাকা পাঠিয়েছি। ব্যবসা-বাণিজ্যের সুষ্ঠুভাবে চলে তার জন্য প্রণোদনা দিয়েছি। গার্মেন্টসে ঠিকমতো চলে তার জন্য প্রণোদনা দিয়েছি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশেই একমাত্র টানেল করেছে। এখন মেট্রো রেল হচ্ছে। কারিগরি শিক্ষার প্রসার করেছি, যাতে দক্ষ জনবল গড়ে ওঠে। বিনা পয়সায় বই দিচ্ছি। প্রত্যেকটা ক্ষেত্রে ছেলেমেয়েদের শিক্ষার জন্য সবচেয়ে গুরুত্ব দিচ্ছি। শিক্ষা ছাড়া কোন দেশ কখনো উন্নতি করতে পারে না। আমি ছাত্রদের বলব, যে যাই করুক না কেন লেখাপড়া শিখতে হবে। লেখাপড়ায় মনোযোগ দিতে হবে।
‘আমরা প্রযুক্তি ব্যবহারের সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি। শুধু পড়াশোনা করে চাকরি পেছনে না ছুটে যাতে নিজে কিছু করতে পারে সে ব্যবস্থাটাও করে দিয়েছি। বিশেষ প্রণোদনা দিয়েছি যাতে সকলের কিছু কাজ করতে পারে। কারিগরি শিক্ষা ৯৭.২ ভাগে উত্তীর্ণ করেছি। আমাদের যুব সমাজ আমাদের ভবিষ্যৎ। ৪১ এর সৈনিক হবে আজকের যুব সমাজ। ১০০ টা অর্থনৈতিক অঞ্চল আমরা করে দিয়েছি।’
ইতিমধ্যে ৩৫ লাখ মানুষকে বিনা পয়সায় ঘর দেখা হয়েছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘যদি কেউ ভূমিহীন থাকে, আমাকে নাম ঠিকানা দিলে ব্যবস্থা করে দেব।’
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে বন্দি হওয়ার সময়ই দেশের উন্নয়নের পরিকল্পনা করার কথাও বলেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমাকে বন্দি করল। সংসদ ভবনের একটি ভবনে সেখানে রাখা হলো। আমি সেখানে বসেই রূপকল্প একুশ প্রণয়ন করি।
‘বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশের পরিণত করব, আমি সেটা করতে পেরেছি। উন্নয়নশীল দেশের যে মর্যাদা পাব, সেই পরিকল্পনা করে রেখেছি আমরা। ২০৪১ সালে বাংলাদেশ হবে উন্নত দেশ।’
জিয়া-খালেদার কঠোর সমালোচনা
বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ক্ষমতায় আসা বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের সমালোচনাও করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘যুদ্ধাপরাধীদের রাজনীতি করার সুযোগ করে দিয়েছেন জিয়াউর রহমান। ইতিহাস বিকৃতি, জাতির পিতার ভাষণ নিষিদ্ধ, জয় বাংলার স্লোগান নিষিদ্ধ জিয়াউর রহমান করেছেন।
১৯৯৪ থেকে ৯৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি সরকারবিরোধী আন্দোলনের সময় সে সময়ের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার একটি উক্তির কথাও স্মরণ করেন তিনি।
সে সময় নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলনে থাকা আওয়ামী লীগকে দমনে ছাত্রদলই যথেষ্ট বলে মন্তব্য করেছিলেন বিএনপি নেত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘খালেদা জিয়া হুমকি দিয়েছিলেন, আওয়ামী লীগকে শিক্ষা দিতে ছাত্রদলই যথেষ্ট। তারা ছাত্রদের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়েছিল। আর আমি বই, খাতা-কলম তুলে দিয়েছিলাম।’
খালেদার পক্ষে যারা বলে, তারা বুদ্ধি প্রতিবন্ধীজীবী
যারা খালেদা জিয়ার পক্ষে বলেন, তাদেরকেও তীব্র ভাষায় আক্রমণ করেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘যারা ইমার্জেন্সি (জরুরি অবস্থা) এনেছিল, ফখরুদ্দীন, ইয়াজউদ্দিন, সবাইকে বিএনপি এনেছিল। তারা কিন্তু প্রথম আমাকে গ্রেপ্তার করেছিল, খালেদা জিয়াকে নয়। পরে খালেদাকে গ্রেপ্তার করেছে।
‘এতিমের টাকা মেরে দিয়েছে। এই কারণেই খালেদা জিয়া সাজাপ্রাপ্ত আসামি। যারা তার পক্ষে কথা বলে, তারা আসলে বুদ্ধিজীবী নয় বুদ্ধি প্রতিবন্ধীজীবী।
‘খালেদা জিয়াকে আমরা উৎখাত করেছি। এরশাদকে উৎখাত করেছি। জিয়াকে উৎখাত করতে পারতাম। কিন্তু তার আগেই সে মারা গেল।’
ছাত্রলীগের ভূয়সী প্রশংসা
শেখ হাসিনা তার ভাষণে ছাত্রলীগের ব্যাপক প্রশংসাও করেন। তিনি বলেন, ‘করোনা সংক্রমণের সময় একমাত্র ছাত্রলীগ রাজনৈতিক সংঘ হিসেবে কাজ করেছে। তাই ছাত্রলীগকে আমি ধন্যবাদ জানাই অভিনন্দন জানাই দুঃসময়ে কাজ করার জন্য।
‘সিলেটে বন্যা হলো, মানুষ কিছু করতে পারে না। আমি সেখানে বিমান বাহিনী, নৌ বাহিনী, পুলিশ-প্রশাসন সবাইকে কাজে লাগিয়েছি। সেখানে ছাত্রলীগ, যুবলীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ সবাইকে কাজে লাগিয়েছি।
‘ছাত্রলীগ মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। ছাত্রলীগ সবসময় অগণের ভূমিকা পালন করেছে। এদেশের স্বাধীনতা অর্জনের ছাত্রলীগের ভূমিকা অপরিসীম। দেশের প্রতিটি সংগ্রাম ও অর্জনে এর ভুমিকা আছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘জাতির পিতা সোনার বাংলা করার জন্য সোনার মানুষ চেয়েছিলেন। আমি আশা করি সেই সোনার মানুষ ছাত্রলীগ।’
বয়স ৭৩ হয়ে গেছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘যে কোনো সময় আমি অক্কা পেতে পারি। কিন্তু আমাদের বাকি প্রজন্মকে কাজ করতে হবে। সেভাবে গড়ে উঠতে হবে যেন তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে কেউ যেন মুছে ফেলতে না পারে, সেজন্য চেষ্টা করবে।
সম্মেলন উদ্বোধনের আনুষ্ঠানিকতা
এর আগে সকাল এগারোটা বিশ মিনিটে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ছাত্রলীগের সম্মেলনস্থলে এসে পৌঁছেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এরপর জাতীয় সংগীতের তালে তালে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন বঙ্গবন্ধুকন্যা।
বেলুন এবং পায়রা উড়িয়ে ছাত্রলীগের সম্মেলন উদ্বোধন করেন তিনি।
এ সময় ছাত্রলীগের সভাপতি সাধারণ সম্পাদক উত্তোলন করেন দলীয় পতাকা। আর জেলা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নিজ নিজ জেলার পতাকা উত্তোলন করেন।
এরপর প্রধানমন্ত্রীকে ফুলের শুভেচ্ছা দেন সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক অসীম কুমার বৈদ্য এবং সম্মেলনের নির্বাচন কমিশনার রেজাউল করিম সুমন।
পরে ছাত্রলীগ সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় এবং সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য প্রধানমন্ত্রীকে সম্মেলন স্মারক উপহার দেন।
এরপর সম্মেলন অভ্যর্থনা উপ কমিটির সদস্যরা প্রধানমন্ত্রীকে সম্মেলনের ব্যাজ পরিয়ে দেন। এরপর প্রধানমন্ত্রীকে উত্তরীয় পরিয়ে দেন সম্মেলন প্রস্তত কমিটির সদস্যরা।
এরপর ছাত্রলীগের সহসভাপতি সাইফ বাবুর নেতৃত্বে সাংস্কৃতিক উপ কমিটির সদস্যরা সাংস্কৃতিক পরিবেশনা উপস্থাপন করেন।
বিএসএল কমিউনিটি ওয়েবসাইটের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর ছাত্রলীগের প্রচার ও প্রকাশনা টিম প্রধানমন্ত্রীর হাতে জয় বাংলা ম্যাগাজিনের সম্মেলন স্মরণিকা তুলে দেন।
এরপর ছাত্রলীগ সভাপতি জয় এবং সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টচার্য বক্তব্য রাখেন।
আরও পড়ুন:স্থানীয় সরকার নির্বাচন বর্জনের দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে প্রথম ধাপের উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করায় ৬৪ নেতাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে বিএনপি। পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে অংশ নেয়ায় ইতোমধ্যে পাঁচ নেতাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় সূত্রের উল্লেখ করে বার্তা সংস্থা ইউএনবি জানায়, নির্বাচনে অংশ নেয়া নেতাদের মধ্যে উপজেলা চেয়ারম্যান পদে ২৪ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ২১ জন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ১৯ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
দলটির জ্যেষ্ঠ নেতারা বলছেন, কারণ দর্শানো নোটিশের সন্তোষজনক জবাব দিতে ব্যর্থ হওয়া নেতাদের প্রাথমিক সদস্যপদসহ দলের সব পদ থেকে বহিষ্কার করা হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির একজন সহ-দপ্তর সম্পাদক জানান, মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত বিএনপির ৬৪ জন নেতাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়েছে।
এর আগে বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে যেকোনো নির্বাচনে অংশ না নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বিএনপির হাইকমান্ড।
এদিকে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে আসন্ন পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে অংশ নেয়ায় ইতোমধ্যে পাঁচ নেতাকে বহিষ্কার করেছে বিএনপি।
সংগঠনটির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, পৌরসভা নির্বাচনে অংশ নেয়ায় নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলা বিএনপির সভাপতি ফাহমিদ ফয়সল চৌধুরীকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
এছাড়া দিনাজপুরের বিরল উপজেলার সহ-সভাপতি সাদেক আলী, উত্তর চট্টগ্রামের চিকনন্দী ইউনিয়নের সহকারী আহ্বায়ক রাশেদ আলী মাহমুদ, কক্সবাজার জেলা বিএনপি নেতা জহুরুল আলম ও কক্সবাজার জেলা মৎস্যজীবী দলের নেতা এম হান্নান মিয়াকে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে অংশ নেয়ায় বহিষ্কার করা হয়েছে।
আরও পড়ুন:মৌলভীবাজার জেলার জুড়ীতে আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে ঘোড়া প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী আলী হোসেনের ওপর সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে। বুধবার সকালে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে নির্বাচনি প্রচারণার সময় এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় জড়িত থাকার দায়ে একজনকে আটক করেছে পুলিশ।
হামলায় আহত চেয়ারম্যান প্রার্থী আলী হোসেনকে প্রথমে জুড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে সিলেট এমএজি ওসমানী হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে আহত আলী হোসেন বলেন, ‘কাপ-পিরিচ প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী কিশোর রায় চৌধুরী মনি ও পশ্চিম জুড়ী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আনফর আলীর নির্দেশে সাইদুল, মুহিব, সোহেলদের নেতৃত্বে আমার ওপর এই হামলা হয়েছে। এ সময় আমাকে অপহরণেরও চেষ্টা করা হয়।’
ভাইরাল হওয়া অপর এক ভিডিওতে চেয়ারম্যান প্রার্থী আলী হোসেনকে জোর করে গাড়িতে তোলার চেষ্টা করার দৃশ্য দেখা যায়।
স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, চেয়ারম্যান প্রার্থী আলী হোসেনসহ আরও তিনজন ঘোড়া প্রতীক চেয়েছিলেন। প্রতীক বরাদ্দের দিন বিষয়টি নিয়ে অনেক হট্টগোল হয়। একাধিক প্রার্থী হওয়ায় লটারির মাধ্যমে আলী হোসেন ঘোড়া প্রতীক পান। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে অপর চেয়ারম্যান প্রার্থী কিশোর রায় চৌধুরী মনি ও পশ্চিম জুড়ী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আনফর আলীর নির্দেশে এই সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটে।
হামলার বিষয়ে বক্তব্য জানতে কাপ-পিরিচ প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী কিশোর রায় চৌধুরী মনির মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দিলেও সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।
জুড়ী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) হুমায়ুন কবির বলেন, হামলার এ ঘটনায় একজনকে আটক করা হয়েছে। মামলা দায়েরের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।
আরও পড়ুন:উপজেলা নির্বাচন থেকে মন্ত্রী ও এমপিদের স্বজনরা সরে না দাঁড়ালে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
রাজধানীর ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে বুধবার দলের সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ হুঁশিয়ারি দেন।
কাদের বলেন, ‘দলীয় সংসদ সদস্য এবং মন্ত্রীদের নিকটাত্মীয় এবং স্বজনদের প্রার্থী না হতে দলীয় যে নির্দেশনা, তা না মানলে সময়মতো সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। উপজেলা নির্বাচনের প্রথম পর্যায়ে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের সময় পেরিয়ে গেছে। এদের মধ্যে অনেকেই বলেছেন যে, আমরা বিষয়টি আরও আগে অবহিত হলে আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে সুবিধা হতো। তারপরও কেউ কেউ প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেছেন, কেউ কেউ করেননি।
‘নির্বাচন কমিশনে সময়সীমা শেষ হয়ে গেলে কেউ ইচ্ছা করলে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করতে পারেন। এ বিষয়টা চূড়ান্ত হতে নির্বাচন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। এখানে কেউ অমান্য করলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়ার সুযোগ আছে দলে; সময়মতো সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’
দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের বিষয়ে কাদের বলেন, ‘আমাদের দলে ডিসিপ্লিনারি অ্যাকশনের বিষয়টি আছে। দল যার যার কর্মকাণ্ড বিবেচনায় বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কৌশলে ডিসিপ্লিনারি অ্যাকশন নিয়ে থাকে। চূড়ান্ত পর্যায়ে যারা প্রত্যাহার করবে না, এ ব্যাপারে দলের সিদ্ধান্ত সময়মতো নেয়া হবে।’
চূড়ান্ত পর্যায়ে এসেও কেউ প্রার্থিতা প্রত্যাহার না করলে দল থেকে বহিষ্কার করা হবে কি না, এমন প্রশ্নে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘সাধারণ ক্ষমা একটা বিশেষ পরিস্থিতিতে দলীয় রণকৌশল। সেটা হতেই পারে। সেটা দলের সভাপতি নিতে পারেন। নির্বাচন হওয়া পর্যন্ত প্রার্থিতা প্রত্যাহারের সুযোগ আছে।’
বিএনপির সমাবেশের দিনে আওয়ামী লীগেরও সমাবেশ থাকে—সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বিএনপির সন্ত্রাস থেকে জনগণকে রক্ষায় কর্মসূচি দেয় আওয়ামী লীগ। বিএনপি একতরফা সমাবেশ করতে গেলে সন্ত্রাস, আগুন সন্ত্রাসের আশঙ্কা থেকেই যায়। জনগণের জানমাল রক্ষায় সরকারি দল হিসেবে আমাদের দায়িত্ব আছে।
‘আমরা মাঠে থাকলে তারা এসব অপকর্ম করতে মানসিকভাবে চাপে থাকবে। সে জন্য আমরা কর্মসূচি দিই। বিএনপির চোরাগোপ্তা হামলা প্রতিহত করতে জনগণের স্বার্থে আমাদের কর্মসূচি থাকা উচিত।’
আরও পড়ুন:দুই দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদার করতে থাইল্যান্ডের উদ্দেশে রওনা হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
থাই প্রধানমন্ত্রী স্রেথা থাভিসিনের আমন্ত্রণে ছয় দিনের সরকারি সফরে বুধবার সকালে ব্যাংককের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেন তিনি। খবর বাসসের
প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতা লেখক মো. নজরুল ইসলাম বলেন, প্রধানমন্ত্রী ও তার সফরসঙ্গীদের বহনকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইট সকাল ১০টা ১৩ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করে।
স্থানীয় সময় দুপুর ১টা ৩০ মিনিটে ব্যাংককের ডন মুয়াং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিমানটির অবতরণের কথা রয়েছে।
২৪ থেকে ২৯ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার থাইল্যান্ড সফর উপলক্ষে সোমবার তার মন্ত্রণালয়ে সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘এটি একটি দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় উভয় সফর।’
তিনি বলেন, এই সফর উভয় পক্ষের জন্যই তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ এতে দুই বন্ধুপ্রতিম দেশের (বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ড) মধ্যে সহযোগিতার নতুন জানালা উন্মোচিত হবে।
গত জানুয়ারিতে সরকার গঠনের পর এটিই প্রধানমন্ত্রীর প্রথম দ্বিপক্ষীয় সফর।
সফরকালে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী থাভিসিনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা করবেন এবং জাতিসংঘের এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কমিশনের (ইউএনএসক্যাপ) ৮০তম অধিবেশনে যোগ দেবেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ড দুই দেশের মধ্যে একটি মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির জন্য আলোচনার অভিপ্রায়পত্রসহ বেশ কিছু সহযোগিতার নথিতে স্বাক্ষর করবে।
বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ড সরকারী পাসপোর্টধারীদের জন্য ভিসা অব্যাহতি, শক্তি সহযোগিতার বিষয়ে একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) এবং সম্পর্ক সম্প্রসারণের জন্য পর্যটন খাতে সহযোগিতা এবং শুল্ক সংক্রান্ত পারস্পরিক সহযোগিতার বিষয়ে আরও দুটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করার সম্ভাবনা রয়েছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এই সফর বাণিজ্য সম্প্রসারণ এবং আমদানি-রপ্তানি বৃদ্ধির জন্য দুই দেশের মধ্যে সম্ভাব্য ‘মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি’ পর্যালোচনার সুযোগ তৈরি করবে।
সফরকালে হাছান বলেন, আসিয়ানের ‘সেক্টরাল ডায়ালগ পার্টনার’ হওয়ার জন্য বাংলাদেশের আবেদনের বিষয়টি ঢাকা জোরালোভাবে উত্থাপন করবে।
তিনি বলেন, মিয়ানমারের অভ্যন্তরে চলমান রাজনৈতিক সংঘাতের মধ্যে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় আরও সক্রিয় ভূমিকা পালনের জন্য বাংলাদেশ আসিয়ানের সদস্য হিসেবে থাইল্যান্ডের প্রতি তার তাগিদ পুনর্ব্যক্ত করবে।
তিনি বলেন, যেহেতু থাইল্যান্ড ও মিয়ানমার উভয়ই আসিয়ানভুক্ত, তাই রোহিঙ্গা ইস্যুটি যথাযথ গুরুত্বের সঙ্গে আলোচনা করা হবে।
হাছান বলেন, উচ্চ পর্যায়ের সফরে বিনিয়োগ, পর্যটন, জ্বালানি, স্থল ও সমুদ্র সংযোগের ক্ষেত্রে সহযোগিতার বিষয়েও আলোচনা হবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ড যৌথ কার্যক্রমের মাধ্যমে পর্যটন খাতের অপার সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে পারে এবং মানবসম্পদ উন্নয়ন, বৌদ্ধ সার্কিট কর্মসূচি প্রচারের পাশাপাশি ভ্রমণ ও অবকাশ শিল্পে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে দক্ষতা বিনিময় করতে পারে।
মন্ত্রী বলেন, পর্যটন শিল্পে এই সহযোগিতা উভয় দেশে উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে।
২৬ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রীকে আনুষ্ঠানিকভাবে থাই প্রধানমন্ত্রী থাভিসিন স্বাগত জানাবেন এবং তাকে একটি আনুষ্ঠানিক গার্ড অব অনার প্রদান করা হবে।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী থাভিসিনের সঙ্গে গভর্নমেন্ট হাউসে (প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়) একান্ত দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন, নথিতে স্বাক্ষরে উপস্থিত থাকবেন, একটি যৌথ সংবাদ সম্মেলনে অংশ নেবেন এবং এরপর সেখানে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সম্মানে থাই প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া একটি রাষ্ট্রীয় মধ্যাহ্নভোজে অংশ নেবেন।
সফরকালে, প্রধানমন্ত্রী রাজপ্রাসাদে থাইল্যান্ডের রাজা মহা ভাজিরালংকর্ন ফ্রা ভাজিরাক্লাওচাওয়ুহুয়া এবং রানী সুথিদা বজ্রসুধাবিমলালক্ষণের রাজকীয় দর্শকদের সঙ্গে থাকবেন।
প্রধানমন্ত্রী ২৫ এপ্রিল ইউএনএসক্যাপ-এর ৮০ তম অধিবেশনে যোগদান করবেন এবং সেখানে ভাষণ দেবেন।
একই দিনে জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি-জেনারেল এবং এসক্যাপের নির্বাহী সচিব আরমিদা সালসিয়াহ আলিসজাবানা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন।
‘লিভারেজিং ডিজিটাল ইনোভেশন ফর সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট ইন এশিয়া অ্যান্ড দ্য প্যাসিফিক’ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে ৮০তম অধিবেশনটি টেকসই উন্নয়নের জন্য ২০৩০ এজেন্ডা দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য ডিজিটাল উদ্ভাবনকে কাজে লাগাতে অঞ্চলব্যাপী সহযোগিতামূলক পদক্ষেপ জোরদার করার একটি সুযোগ হবে।
টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ডিজিটাল উদ্ভাবন কীভাবে আরও অন্তর্ভুক্তিমূলকভাবে অবদান রাখতে পারে তা নিয়ে আলোচনা করতে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের সরকারি নেতা ও মন্ত্রী এবং অন্যান্য মূল অংশীজনদের এই অধিবেশনে একত্রিত করা হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার প্রতিবেদন-২০২৩ বাংলাদেশে শেখ হাসিনা সরকারের ‘অবিচার ও নৃশংসতা’ ফাঁস করে দিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেদনে বিরোধী দলের নেতাদের গ্রেপ্তার ও তাদের শান্তিপূর্ণ সমাবেশে বাধাসহ বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির অবনতির বিষয়টি বস্তুনিষ্ঠভাবে তুলে ধরা হয়েছে।’
নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে রিজভী এসব কথা বলেন। সূত্র: ইউএনবি
বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ‘প্রতিবেদনে গুম, গুপ্তহত্যা ও নির্যাতনসহ বাংলাদেশে ভয়াবহ মানবাধিকার লঙ্ঘনে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তন করার নাগরিক অধিকার হরণ করা হয়েছে বলেও তাতে উল্লেখ করা হয়েছে।’
অবিচার ও নিষ্ঠুরতার দৃশ্যমান ঘটনাগুলোর মাধ্যমে প্রতিবেদনে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির আসল রূপ তুলে ধরা হয়েছে বলে দাবি করেন রিজভী।
রিজভী বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের ব্যুরো অফ ডেমোক্রেসি, হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড লেবারের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা রবার্ট এস গিলক্রিস্ট মানবাধিকার প্রতিবেদনটি নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতিকে উদ্বেগজনক বলে বর্ণনা করেছেন।
‘গিলক্রিস্ট সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, কারসাজির মাধ্যমে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘১/১১-এর রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের সময় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ১৫টি মামলা দেয়া হয়েছে আর খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দেয়া হয়েছিল মাত্র চারটি মামলা।
‘শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এসে বিচার বিভাগকে ব্যবহার করে খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে তড়িঘড়ি করে নিজের বিরুদ্ধে ১৫টি মামলা প্রত্যাহার করিয়েছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা অনেকবার এসব বিষয় নিয়ে কথা বলেছি। এবার তা যুক্তরাষ্ট্রের রিপোর্টেই উঠে এসেছে। মানুষ বিশ্বাস করত সরকারের রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার খালেদা জিয়া। এবার গণতান্ত্রিক বিশ্ব তাদের বস্তুনিষ্ঠ পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে তা তুলে ধরেছে।’
সোমবার ২০২৩ সালের মানবাধিকার প্রতিবেদন (এইচআরআর) প্রকাশ করে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর। একে বিশ্বব্যাপী মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনের একটি ‘বাস্তব ও বস্তুনিষ্ঠ’ রেকর্ড হিসেবে আখ্যায়িত করেছে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস।
১৯৮টি দেশ ও অঞ্চল নিয়ে ২০২৩ সালের মানবাধিকার প্রতিবেদনটি (এইচআরআর) তৈরি করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বাংলাদেশের অংশে বলা হয়, ‘বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুম, নির্যাতন, নির্বিচারে আটক, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর বিধিনিষেধ এবং শান্তিপূর্ণ সমাবেশের মতো মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য অনেক খবর পাওয়া গেছে।’
প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, ‘বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সরকার মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী ব্যক্তি বা নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের শনাক্ত করতে ও শাস্তি দিতে বিশ্বাসযোগ্য পদক্ষেপ নেয়নি।’
রিজভী বলেন, ‘বিএনপি দীর্ঘদিন ধরে সরকারের নিপীড়ন, নৃশংসতা, গুম, খুনসহ নানা অপকর্মের কথা বলে আসছে।
‘এখন আর লুকানোর কিছু নেই। শেখ হাসিনার সরকারের অবিচার, রক্তপাত ও নানা অপকর্মের ঘটনা ধীরে ধীরে গণতান্ত্রিক বিশ্বে বেরিয়ে আসছে। গোটা বিশ্ব এর নিন্দা করছে।’
আরও পড়ুন:জাতীয় সংসদের ঝিনাইদহ-১ শূন্য আসনে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ৫ জুন।
মঙ্গলবার নির্বাচন ভবনে ৩২তম কমিশন সভা শেষে সাংবাদিকদের এই তথ্য জানান নির্বাচন কমিশন সচিব মো. জাহাংগীর আলম।
তিনি বলেন, এই উপনির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ তারিখ ৭ মে। এছাড়া মনোনয়নপত্র বাছাই ৯ মে, বাছাইয়ের বিরুদ্ধে আপিল ১০ থেকে ১৪ মে ও আপিল নিষ্পত্তি ১৫ মে। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ১৬ মে এবং প্রতীক বরাদ্দ ১৭ মে।
এই সংসদীয় আসনের উপনির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করবেন খুলনা অঞ্চলের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা।
ঝিনাইদহ-১ আসন থেকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদে নির্বাচিত হন ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাই। থাইল্যান্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৬ মার্চ মারা যান তিনি। তার মৃত্যুতে আসনটি শূন্য হয়।
আসন্ন ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের চতুর্থ ধাপে ৫৫টি উপজেলায় ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে ৫ জুন। এর মধ্যে দুটি উপজেলায় ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটগ্রহণ করা হবে।
মঙ্গলবার নির্বাচনে ভবনে ৩২তম কমিশন সভা শেষে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান নির্বাচন কমিশন সচিব মো. জাহাংগীর আলম।
তিনি বলেন, মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় ৯ মে এবং বাছাই ১২ মে। মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের বিরুদ্ধে আপিল ১৩ থেকে ১৫ মে, আপিল নিষ্পত্তি ১৬ থেকে ১৮ মে। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ১৯ মে ও প্রতীক বরাদ্দ ২০ মে। আর ভোটগ্রহণ হবে ৫ জুন।
মন্তব্য