বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশকে পৃথিবীর সবচেয়ে আকর্ষণীয় জায়গা বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ৩০০ কোটি মানুষের বড় বাজার সুবিধা নিতে দেশি-বিদেশি উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশে বিনিয়োগে আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে মঙ্গলবার সকালে বাংলাদেশ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল: জাপানিজ অর্থনৈতিক অঞ্চলের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।
এদিন গণভবন প্রান্ত থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত ছিলেন তিনি।
দেশের তরুণদের উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলতে স্বল্প সুদে ঋণ দেয়াসহ সরকারের নেয়া পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমি তো মনে করি পৃথিবীর মধ্যে বাংলাদেশটা হচ্ছে বিনিয়োগের জন্য সব থেকে আকর্ষণীয় জায়গা। কারণ আমরা সব থেকে বেশি সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছি। এখানে অবকাঠামো উন্নয়ন, বিনিয়োগকারীদের সব ইউটিলিটিজ সার্ভিস প্রদানে ব্যবস্থা আমাদের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে করে দিচ্ছি।
‘বিনিয়োগবান্ধব আইন বা নীতিমালা করা হয়েছে। বিনিয়োগকারীদের প্রতিযোগিতামূলক প্রণোদনা প্রদান করা হচ্ছে। বিদ্যুৎ, জ্বালানি অবকাঠামোর বিস্তৃতি সাধন করা হচ্ছে। বিনিয়োগকারীদের বিভিন্ন সেবা-পরিষেবা অনুমোদনের জন্য ওয়ানস্টপ সার্ভিসও চালু করা হয়েছে। তারপরও এখানে কিছুটা কালক্ষেপণ হয়। সেগুলো যাতে না হয়, অচিরেই এ ধরনের সমস্যা দেখা দিলে আমরা সেটা সমাধান করে দেব।’
বাংলাদেশে ভৌগোলিক অবস্থানগত সুবিধার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ এমন একটা জায়গায় অবস্থান করছে যেখানে প্রাচ্য-পাশ্চাত্যের সেতুবন্ধন রচনা করতে পারে। সব থেকে বড় কথা হলো দক্ষিণ এশিয়া এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া সব থেকে ঘনবসতি পূর্ণ জায়গা।
‘আমরা নিজেদের দেশে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সক্ষম হয়েছি। তাদের কর্মসংস্থান বাড়াচ্ছি, তাদের পারচেজিং পাওয়ার বাড়ছে। তার ফলে আমাদের নিজস্ব একটা মার্কেট যেমন তৈরি হচ্ছে, পাশাপাশি দক্ষিণ এশিয়ায় আমরা আঞ্চলিক সহযোগিতা ও যোগাযোগের ব্যবস্থা নিয়েছি। যার ফলে দক্ষিণ এশিয়ার যে দেশগুলো সেখানে একটা বড় বাজার রয়েছে।
‘এর পাশাপাশি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, তাদের সঙ্গেও আমাদের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি করে দিচ্ছি। তাদের সঙ্গে আমাদের একটা চমৎকার সম্পর্ক রয়েছে। সেই অঞ্চলটায় যে বিশাল জনগোষ্ঠী এরাও কিন্তু একটা বিরাট মার্কেট। কাজেই বাংলাদেশে বিনিয়োগ করলে পরে আমাদের সমুদ্রপথ, আকাশপথ, রেলপথ সবগুলো ব্যবহার করে এই দক্ষিণ এশিয়া, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এবং সেই সঙ্গে আমাদের পশ্চিমা দেশগুলোতেও যোগাযোগের বিরাট সুযোগ সৃষ্টি হবে এবং পণ্য পরিবহনের সুযোগ সৃষ্টি হবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিনিয়োগের জন্য সব থেকে উত্তম জায়গাটা হচ্ছে বাংলাদেশ। তাই আমি আশা করি বিভিন্ন দেশ থেকে আমাদের দেশে বিনিয়োগ আসবে। আমাদের দেশের মানুষ নিজ দেশে বিনেয়াগ করতে আরও আগ্রহী হবে। সেটাই আমরা চাই।’
বাংলাদেশে বিনিয়োগে আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে বাংলাদেশ তিনশ কোটিরও বেশি মানুষের বাজার হতে পারে। বাংলাদেশে প্রায় ১৭ কোটি মানুষ আমাদের নিজেদেরই। আর পূর্ব দিকে ৫০ কোটি, উত্তর দিকে ১৫০ কোটি, পশ্চিমে ১০০ কোটি মানুষের বাজার বিদ্যমান।’
অর্থনৈতিক অঞ্চলে কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগার, পানি শোধনাগারসহ নানা ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্রতিটি প্রকল্প যারা করবেন বা ইন্ডাস্ট্রি করবেন তাদের নিজস্ব বর্জ্য শোধনাগারও থাকতে হবে। তা নইলে আপনাদের পণ্যটা বিদেশে রপ্তানি করা সম্ভব হবে না। সে ব্যবস্থাটাও রাখা আছে, কোনো বাধা নেই। একদিকে পরিবেশ রক্ষা, অপরদিকে ভূমি রক্ষা করে আমাদের দেশের মানুষের সার্বিক উন্নয়নে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।’
দেশে পরিকল্পিত শিল্পায়নের লক্ষ্যে ২০১০ সালে অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ গঠন করা হয় জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরি করার জন্য সমগ্র বাংলাদেশে সর্বপ্রথম হচ্ছে জমিগুলো সুনির্দিষ্ট করা। যে জমিতে খুব বেশি ফসল হয় না, সে ধরনের জমি আমরা বেছে নিয়েছি। দেশের ৬৪ জেলায় ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার পরিকল্পনা নিই। ইতোমধ্যে প্রায় ৯৭টি জায়গা সুনির্দিষ্ট করা হয়েছে। ২৬টির নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে। ১০টি সেখানে সম্পূর্ণ কার্যক্রম শুরু করেছে।’
পরিবেশবান্ধব শিল্পায়নের জন্য সব ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা অঞ্চলভিত্তিক শিল্পায়ন যদি করি বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের কর্মসংস্থান বাড়বে। আমাদের দেশে অঞ্চলভিত্তিক বিভিন্ন উৎপাদনও হয়। যে অঞ্চলে যা উৎপাদন হবে, সেগুলো আমরা প্রক্রিয়াজাত করতে পারব। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আসবে। আমরা ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল করেছি। আমাদের প্রজন্মের পর প্রজন্ম যখনই বড় হতে থাকবে, আমাদের যুব সমাজ বা তরুণ সমাজ তারা নিজেদের উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলতে পারবে।’
অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে নারীদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা রাখা হয়েছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন দেশের সঙ্গে আলোচনা করে একেকটা দেশের জন্য একেকটা অঞ্চল সম্পূর্ণ তাদের হাতে দিয়ে দেয়া, সেই ব্যবস্থাটাও আমরা রেখেছি। অর্থাৎ জিটুজি (সরকার থেকে সরকার) আলোচনার মাধ্যমে আমরা অর্থনৈতিক অঞ্চলে যাতে বিনিয়োগ হয়, সেই ব্যবস্থা নিয়েছি।’
এক হাজার একর জমির ওপর নির্মিত নারায়ণগঞ্জের এই অর্থনৈতিক অঞ্চলটি জাপান সরকারের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে তাদের দেয়া হয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। মেট্রোরেল, শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল, কক্সবাজারের মহেশখালীতে গভীর সমুদ্র বন্দর ও বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে বাংলাদেশকে জাপান সহযোগিতা করে যাচ্ছে বলেও তিনি জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এভাবে আমাদের অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ কাজ জাপান করে দিচ্ছে। এটা আমি বলব যে, আমাদের ৫০ বছরের যে বন্ধুত্ব তার নিদর্শন। জাপান সবসময় বাংলাদেশের জনগণের পাশে আছে। আমরাও সব সময় জাপানের সঙ্গে একটা চমৎকার সম্পর্ক রেখে যাচ্ছি। আমাদের এ বন্ধুত্ব অটুট।’
সব সময় বাংলাদেশের পাশে থাকার জন্য জাপানের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান প্রধানমন্ত্রী। গত তিন বছরে অনেক অবদান রাখায় ঢাকায় জাপানের বিদায়ী রাষ্ট্রদূতকে শুভকামনাও জানান তিনি।
অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগ নিয়ে ভারত, চীন, সৌদি আরব ও সিঙ্গাপুরের সঙ্গেও আলোচনা হচ্ছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘আরও অনেকগুলো দেশ আগ্রহ প্রকাশ করেছে। আমরা যারাই আসবে তাদের জন্য একটা অঞ্চল, যেভাবে তারা চায় তাদের দিয়ে দেব। যেভাবে তারা উন্নয়ন করতে চায়, সেভাবে করতে পারবে। বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আমরা বিশেষ সুবিধা দিয়ে যাচ্ছি। সেই সুবিধাগুলো তারা ভোগ করতে পারবে।
‘তা ছাড়া আমাদের চট্টগ্রাম পোর্ট, মোংলা পোর্ট, পায়রা পোর্ট এবং মাতারবাড়িতে ডিপ সি পোর্ট হচ্ছে। কাজেই সেখানে আমরা রেলের যোগাযোগ উন্নত করছি। নদীগুলো ড্রেজিং করে নদীপথের উন্নয়ন করে দিচ্ছি। কারণ নদীপথে সবচেয়ে স্বল্প খরচে মালামাল পরিবহন করা যায়। সেই সুযোগ আমরা সৃষ্টি করে দিচ্ছি। রাস্তাঘাটের ব্যাপক উন্নয়ন আমরা করে দিয়েছি। বাংলাদেশের সব অঞ্চলের সঙ্গে একটা সংযোগ আমরা সৃষ্টি করতে পেরেছি।’
বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশে সবচেয়ে চমৎকার পরিবেশ রয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘বিনিয়োগকারীদের আমরা আহ্বান জানাচ্ছি। যারা বাংলাদেশে আসছেন তারাও এখানে বিনিয়োগ করতে আগ্রহ প্রকাশ করছেন। এটা বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে আমি মনে করি।’
আরও পড়ুন:তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) দাম নভেম্বর মাসেও প্রায় একই রয়েছে। কেজিতে কমেছে ৭ পয়সা। মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে এই নতুন দাম কার্যকর হয়েছে।
বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) হিসাবে, নভেম্বর মাসে প্রতি কেজি এলপিজির দাম ১২১ টাকা ৩২ পয়সা থেকে কমে ১২১ টাকা ২৫ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে।
বিইআরসি নতুন দাম ঘোষণা করে বলেছে, ১২ কেজির এলপিজি সিলিন্ডারের দাম কমানো হয়েছে এক টাকা।
একজন খুচরা গ্রাহক এখন ১২ কেজির সিলিন্ডার এক হাজার ৪৫৫ টাকায় (ভ্যাটসহ) কিনতে পারবেন, যা আগে ছিল এক হাজার ৪৫৬ টাকা।
মঙ্গলবার ঢাকায় নিজস্ব কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বিইআরসি জানায়, অন্যান্য আকারের এলপিজি সিলিন্ডারের দাম সাড়ে পাঁচ কেজি থেকে কমিয়ে ৪৫ কেজি পর্যন্ত একই হারে কমবে।
বিইআরসির কর্মকর্তারা জানান, দেশের এলপিজি অপারেটররা সাধারণত সৌদি সিপির ভিত্তিতে মধ্যপ্রাচ্যের বাজার থেকে তাদের পণ্য আমদানি করে থাকে। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম উঠা-নামা না করায় স্থানীয় বাজারে এলপিজির দাম অপরিবর্তিতই থাকছে।
বিইআরসির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, অটো গ্যাসের (মোটরযানে ব্যবহৃত এলপিজি) দাম আগের ৬৬ টাকা ৮৪ পয়সা থেকে কমে ৬৬ টাকা ৮১ পয়সা (ভ্যাটসহ) হয়েছে।
রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন এলপি গ্যাস কোম্পানির বাজারজাত করা স্থানীয় এলপিজির দাম একই থাকবে। এর মার্কেট শেয়ার ৫ শতাংশের কম।
গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে স্থানীয় বাজারে এলপিজি ১২ কেজি সিলিন্ডারের সর্বোচ্চ দাম ছিল এক হাজার ৪৯৮ টাকা।
আরও পড়ুন:মালয়েশিয়ায় প্ল্যান্টেশন সেক্টরে বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। দেশটির সরকার প্ল্যান্টেশন সেক্টরের জন্য নির্বাচিত বাংলাদেশি কর্মীদের সে দেশে প্রবেশের সবশেষ সময়সীমা আগামী ২০২৫ সালের ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত নির্ধারণ করেছে।
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব গাজী মো. শাহেদ আনোয়ারের সই করা এক চিঠিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়েছে, মালয়েশিয়ায় প্ল্যান্টেশন সেক্টরে বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগের পরিপ্রেক্ষিতে মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার সভাপতিত্বে ২৬ অক্টোবর অনুষ্ঠিত সভায় নিম্নরূপ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
সিদ্ধান্তে জানানো হয়, কর্মী পাঠানোর জন্য মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশন থেকে চাহিদাপত্র সত্যায়নের শেষ তারিখ ৩১ ডিসেম্বর। আর জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি) থেকে বহির্গমন ছাড়পত্র নেয়ার শেষ তারিখ ১৫ জানুয়ারি, ২০২৫।
নির্দেশনা তুলে ধরে চিঠিতে বলা হয়েছে, রিক্রুটিং এজেন্টরা কর্মীদের কাছ থেকে সরকার নির্ধারিত সর্বোচ্চ অভিবাসন ব্যয় ৭৮ হাজার ৯৯০ টাকার অতিরিক্ত অর্থ নেবেন না। সব লেনদেন উপযুক্ত লিখিত দলিল, রসিদ বা ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে সম্পন্ন করবেন এবং অনুমোদিত রিক্রুটিং এজেন্ট ব্যতীত অন্য কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কর্মীদের লেনদেন না করার বিষয় নিশ্চিত করবেন।
এছাড়াও সংশ্লিষ্ট রিক্রুটিং এজেন্ট নির্ধারিত তারিখের আগে কর্মীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা, ভিসা, জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) বহির্গমন ছাড়পত্র এবং বিমান টিকিট, প্রাক-বহির্গমন ওরিয়েন্টেশনসহ সব প্রস্তুতি নিশ্চিত করবেন।
রিক্রুটিং এজেন্টরা যথাসময়ে চাকরির শর্ত, বেতন-ভাতা, অন্যান্য সুবিধা, চাকরির পরিবেশসহ সব বিষয়ে কর্মীকে সুস্পষ্টভাবে অবহিত করবেন।
আরও পড়ুন:রেমিট্যান্স প্রবাহে সুবাতাস বইছে। গত অক্টোবর মাসে দেশে ২ দশমিক ৩৯ বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিট্যান্স এসেছে। এর মধ্যে ৩১ অক্টোবর একদিনেই রেমিট্যান্স এসেছে ৯৮ মিলিয়ন ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত বাংলাদেশে রেমিট্যান্স প্রবাহ গত বছরের একই সময়ের তুলনায় উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে।
এই সময়ে মোট রেমিট্যান্স এসেছে ৮ হাজার ৯৩৮ মিলিয়ন ডলার; ২০২৩ সালের জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ছিল ৬ হাজার ৮৭৮ মিলিয়ন ডলার।
শুধু ২০২৪ সালের অক্টোবরেই রেমিট্যান্স প্রবাহ ২ হাজার ৩৯৫ মিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে, যা ২০২৩ সালের অক্টোবরে ছিল এক হাজার ৯৭১ মিলিয়ন ডলার।
বিদেশে বাংলাদেশি কর্মীর সংখ্যা বৃদ্ধি, উন্নত রেমিট্যান্স চ্যানেল এবং মৌসুমি প্রবাহ রেমিট্যান্স বৃদ্ধির অন্যতম কারণ।
অর্থনীতিবিদরা এসব পরিসংখ্যানের ইতিবাচক প্রভাব তুলে ধরে বলছেন, মজবুত রেমিট্যান্স প্রবাহ অভ্যন্তরীণ খরচ বাড়াতে পারে এবং দেশের জন্য বহিরাগত অর্থনৈতিক চাপের প্রভাব কমাতে তা সহায়ক হতে পারে।
স্থায়ী রেমিট্যান্স প্রবাহ দেশের অর্থনৈতিক অবস্থান শক্তিশালী করার চলমান প্রচেষ্টায় সহায়ক ভূমিকা রাখবে বলে আশাবাদী বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা।
আরও পড়ুন:বকেয়া ৮৫০ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ না করা হলে ৭ নভেম্বরের মধ্যে বিদ্যুৎ সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়া হবে বলে বাংলাদেশকে জানিয়েছে আদানি পাওয়ার। বকেয়া না পেয়ে প্রতিষ্ঠানটি ইতোমধ্যে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ অর্ধেকে নামিয়ে এনেছে।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অফ ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে এমন তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ৩১ অক্টোবর বকেয়া পরিশোধের নির্ধারিত সময়সীমা পার হওয়ার পর বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) কৃষি ব্যাংকের মাধ্যমে ১৭০ মিলিয়ন ডলারের ঋণপত্র খোলার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তিতে উল্লিখিত শর্ত পূরণ করেনি বিপিডিবি।
বকেয়া পরিশোধে বিলম্বের কারণে আদানি পাওয়ার ৩১ অক্টোবর থেকে বাংলাদেশে তাদের বিদ্যুৎ সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাওয়ার গ্রিড বাংলাদেশের তথ্য অনুযায়ী- ভারতের ঝাড়খণ্ডের গড্ডায় অবস্থিত এক হাজার ৪৯৬ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে আদানি গ্রুপ বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে। কিন্তু গত শুক্রবার দিনের বেলা আদানি গ্রুপ বিদ্যুৎকেন্দ্রটি থেকে মাত্র ৭২৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করেছে।
এদিকে পায়রা, রামপাল ও এসএস পাওয়ার ওয়ানসহ অন্যান্য বড় কারখানাতেও জ্বালানি সংকটের কারণে উৎপাদন কমে গেছে।
সূত্রের বরাত দিয়ে টাইমস অফ ইন্ডিয়া বলছে, ডলার সংকটের কারণে সময়মতো অর্থ পরিশোধে হিমশিম খাচ্ছে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহকারীদের মধ্যে আদানি গ্রুপই সবচেয়ে বড়। এরপর যথাক্রমে রয়েছে পায়রা (এক হাজার ২৪৪ মেগাওয়াট), রামপাল (এক হাজার ২৩৪ মেগাওয়াট) এবং এসএস পাওয়ার (এক হাজার ২২৪ মেগাওয়াট)।
পিজিসিবির তথ্য অনুযায়ী, বাগেরহাটের বাংলাদেশ-ভারত ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানির রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং এসএস পাওয়ারের বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি কয়লা সংকটের কারণে ইতোমধ্যে অর্ধেক ক্যাপাসিটি নিয়ে চলছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, অক্টোবরে চুক্তি অনুযায়ী আদানিকে ৯০ মিলিয়ন ডলার দিয়েছে বাংলাদেশ। কিন্তু আগের মাস গুলোতে ২০ থেকে ৫০ মিলিয়ন ডলার করে দিয়েছে। যেখানে প্রতিমাসে বিল বাবদ ৯০ থেকে ১০০ মিলিয়ন ডলার করে দেওয়ার চুক্তি রয়েছে। আদানির কাছ থেকে বাংলাদেশ প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ কেনে ১০ থেকে ১২ টাকায়। এরসঙ্গে ইন্দোনেশিয়া এবং অস্ট্রেলিয়া থেকে কয়লা কেনার বিষয়টি জড়িত।
এদিকে আদানি গ্রুপ এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করেনি। তবে কোম্পানিটির এক নির্বাহী কর্মকর্তা টাইমস অব ইন্ডিয়াকে আগে বলেছিলেন, তারা আশা করেছিলেন একটি সমাধান হবে। কিন্তু সময়মতো বিল না দেয়া এবং বিষয়টি পরিষ্কার না করায়, ভারতের সবচেয়ে বড় বেসরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্রটিকে কঠোর অবস্থান নিতে হয়। কারণ তাদের যেসব বিনিয়োগকারী আছে তাদেরও অর্থ পরিশোধ করতে হবে।
আরও পড়ুন:যুক্তরাষ্ট্রের গ্রিন বিল্ডিং কাউন্সিল (ইউএসজিবিসি) প্রদত্ত প্লাটিনাম লিড সনদ পেয়েছে বাংলাদেশের আরও একটি কারখানা।
ভবন নকশা, নির্মাণ ও পরিচালনায় টেকসই উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনাকারী সদস্যপদভিত্তিক অলাভজনক প্রতিষ্ঠান ইউএসজিবিসির তথ্য অনুযায়ী, গাজীপুরের টঙ্গীতে অবস্থিত পোশাক কারখানা কটন ফিল্ড বিডি লিমিটেড কারখানাটি ১১০ এর মধ্যে ৮৬ স্কোর করেছে।
বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএমইএ)-এর তথ্য অনুসারে, এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে এখন ২৩০টি লিডারশিপ ইন এনার্জি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল ডিজাইন (লিড) প্রত্যায়িত কারখানা রয়েছে, যার মধ্যে ৯২টি প্লাটিনাম স্ট্যাটাস এবং ১২৪টি গোল্ড স্ট্যাটাস অর্জন করেছে।
শুধু তাই নয়, বিশ্বের শীর্ষ ১০০টি সর্বোচ্চ রেটপ্রাপ্ত লিড সার্টিফায়েড কারখানার মধ্যে এখন বাংলাদেশেরই ৬২টি।
দেশ থেকে ১৭ বিলিয়ন ডলার সমপরিমাণ অর্থ পাচারের তথ্য জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। দুর্নীতিবিরোধী প্রতিষ্ঠানটি বলেছে, বিভিন্ন ঘটনার ভিত্তিতে ধারণা করা যায় যে বাংলাদেশ থেকে বছরে গড়ে ১২ থেকে ১৫ বিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ অর্থ বিভিন্ন দেশে পাচার করা হয়েছে।
রাজধানীর পল্টনে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) কার্যালয়ে শনিবার ‘পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার উপায়’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান এসব তথ্য জানান।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে মোট কী পরিমাণ অর্থ পাচার হয়েছে তা সুনির্দিষ্টভাবে জানা সম্ভব নয়। তবে ব্যাংকের মতো আনুষ্ঠানিক মাধ্যম ব্যবহার করে ১৭ বিলিয়ন ডলার সমপরিমাণ অর্থ পাচারের কথা জানা যায়।’
টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতার বলয় প্রতিষ্ঠা ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান দখলের মাধ্যমে অনিয়ম, দুর্নীতি ও অর্থ পাচার করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে রাজনীতি, আমলাতন্ত্র ও ব্যবসা- এই ত্রিমুখী আঁতাত মূল ভূমিকা পালন করেছে।
‘সব প্রতিষ্ঠানেই দীর্ঘ সময় ধরে দলীয়করণের চর্চা হয়েছে। গত ১৫-১৬ বছরে আমরা এর চূড়ান্ত রূপ দেখেছি। এতে আমলাতন্ত্রকে কর্তৃত্ব দিয়েছে রাজনৈতিক শক্তি আর তা বাস্তবায়নে ব্যবহার করা হয়েছে বিভিন্ন এজেন্সিকে। ফলে এসব জায়গায় কতটুকু পরিবর্তন আনা যাবে, তা গুরুত্বপূর্ণ।’
‘যে পরিবর্তন আসবে বলে আমরা আশা করছি তা যেন টেকসই হয়’, যোগ করেন তিনি।
পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার ক্ষেত্রে বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত একটি দৃষ্টান্ত আছে। সেটি হলো, সিঙ্গাপুর থেকে। দেশটি থেকে ২০০৭ সালে পাচার হওয়া অর্থ ফেরতের উদ্যোগ নেয়া হয় এবং পারস্পরিক আইনি সহায়তার মাধ্যমে ২০১৩ সালে ৯ দশমিক ৩ বিলিয়ন বা ৯৩০ কোটি ডলার ফেরত আনা সম্ভব হয়েছিল।
ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনা সম্ভব। তবে তা অনেক কঠিন ও দীর্ঘ প্রক্রিয়া। যেসব দেশে অর্থ পাচার করা হয়েছে, ওইসব দেশের সঙ্গে চুক্তির মাধ্যমে পাচার করা অর্থ ফেরত আনা যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে দেশগুলোর এ বিষয়ে সহযোগিতার মনোভাব গুরুত্বপূর্ণ।’
তিনি বলেন, ‘অর্থ পাচার বন্ধে সাপ্লাই (যে দেশ থেকে পাচার হয়) ও ডিমান্ড (যে দেশে পাচার হয়) উভয়ের মধ্যে সহযোগিতার পরিবেশ থাকতে হবে। পাচার হওয়া অর্থ ফেরতে সহযোগিতা করতে বিভিন্ন দেশে বিশেষজ্ঞদের সিন্ডিকেট আছে। সে কারণে আমরা একজন সাবেক মন্ত্রীর কয়েকটি দেশে কয়েক শ’ অ্যাপার্টমেন্টের বিষয়ে জানতে পারছি। কিন্তু এই ঘটনা বরফখণ্ডের চূড়ামাত্র, এমন পাচারকারী আরও অনেকে আছেন।’
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক আরও বলেন, ‘দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), সিআইডি, এনবিআর, অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিস, বিএফআইইউ- অর্থ পাচার বিষয়ে এসব প্রতিষ্ঠানের পরিষ্কার পথনকশা আছে। কিন্তু এসব প্রতিষ্ঠানে প্রয়োজনীয় সংস্কার আনতে হবে, শুধু মুখের কথায় কাজ হবে না। অর্থ পাচার রোধে বেশ কিছু আইনেরও প্রয়োজন আছে।’
আরও পড়ুন:সাধারণ মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ও মূল্য নিয়ন্ত্রণে চাল আমদানিতে সব ধরনের শুল্ক প্রত্যাহার করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এ লক্ষ্যে বৃহস্পতিবার রাজস্ব কর্তৃপক্ষ একটি সংবিধিবদ্ধ নিয়ন্ত্রণ আদেশ (এসআরও) জারি করেছে।
এর আগে খাদ্য অধিদপ্তর দেশের সামগ্রিক চালের মজুদ নিয়ে খাদ্য মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন জমা দেয়। বাংলাদেশ বাণিজ্য ও ট্যারিফ কমিশন (বিটিটিসি) চালের দাম পরিস্থিতি নিয়ে খাদ্য ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং এনবিআরকে আরেকটি প্রতিবেদন পাঠিয়েছে।
দু’টি প্রতিবেদনেই চালের ওপর সব ধরনের আমদানি শুল্ক প্রত্যাহারের সুপারিশ করা হয়েছে।
স্থানীয় চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে সহায়তার জন্য গত ২০ অক্টোবর এনবিআর আমদানি শুল্ক ৬২ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশ করে।
মন্তব্য