জীবন ও জগতের নিগূঢ় তত্ত্বকে আঞ্চলিক শব্দের দ্যোতনায় সহজিয়া ভাষায় প্রকাশ করে অমর হয়ে আছেন মরমী সংগীত মহাজন দেওয়ান হাসন রাজা চৌধুরী। আভিজাত্যের গৈরিক পোশাকের সঙ্গে পৈতৃক নাম দেওয়ান হাসন রাজা চৌধুরী বদলে দিয়ে কেবল ‘হাসন রাজা’ নামেই তিনি সংগীতে মহান হয়ে আছেন। জমিদারি বাদ দিয়ে বৈরাগ্যের বেশে এ নাম নিয়েই সংগীত সাধনা করেছেন আমৃত্যু। তার রচিত গানের সংখ্যা প্রায় হাজারের অধিক।
আজ এই মরমী মহাজনের শততম মৃত্যুবার্ষিকী। সুনামগঞ্জের লক্ষণশ্রী পরগনায় ১৮৫৪ সালের ২১ ডিসেম্বর জন্ম নেয়া হাসন রাজা ১৯২২ খ্রিস্টাব্দের ৬ ডিসেম্বর মারা যান। হাসন রাজার শততম মৃত্যুবার্ষিকীতে তাকে পারিবারিক ও প্রশাসনিকভাবে স্মরণের কোনো উদ্যোগ নেই। বরং তার শততম মৃত্যুবার্ষিকীর বছরে তিলে তিলে গড়ে ওঠা পারিবারিক মিউজিয়ামটিও স্বজনদের দ্বন্দ্বে চিরতরে বন্ধ হয়ে গেছে। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সংস্কৃতিকর্মীসহ হাসন রাজার গানের অনুরাগীরা। বিশেষ করে তার প্রতি পরিবারের উদাসীনতায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেকে। এ ছাড়া যেসব শিল্পী তার গান গেয়ে পরিচিতি পেয়েছেন, তার শততম মৃত্যুবার্ষিকীতে তাদের নীরবতায়ও অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
হাসন রাজার সংগীতানুরাগী ও গবেষকরা জানান, হাসন রাজার বাবা দেওয়ান আলী রাজা চৌধুরী সিলেটের রামপাশা থেকে সুনামগঞ্জের লক্ষণশ্রীতে এসে বসবাস শুরু করেন। এখানেই হুরমত জাহান চৌধুরীর গর্ভে জন্ম নেন হাসন রাজা চৌধুরী। তার কবিত্ব লক্ষণশ্রীর পরিবেশেই বিকশিত হয়। ঘোড়া, কোড়া পাখি, নৌকায় হাসন রাজা বজরা ভাসিয়ে আনন্দে মাততেন। সৃষ্টির উন্মাদনায় বিভোর থাকতেন। কোড়া পাখি শিকার ছিল তার নেশা। বিষয়াসক্তহীন হাসন রাজা বৈরাগ্যের বেশে থাকতেই পছন্দ করতেন এবং এই পরিবেশেই সংগীত রচনা করতেন।
জেলার একাধিক গবেষকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মরমী কবি হাসন রাজাকে বলেছেন ‘গ্রাম্যকবি’ ও ‘সাধক কবি’। ১৯২৫ সালে কংগ্রেসের সভায় এবং পরবর্তী সময়ে ১৯৩০ সালে লন্ডনে হিবার্ট বক্তৃতায় হাসন রাজার গানে মানবদর্শন নিয়ে আলোচনা করেন রবীন্দ্রনাথ। ওই বক্তব্যে তিনি বলেছিলেন, ‘পূর্ববঙ্গের এক গ্রাম্য কবির গানে দর্শনের একটি বড় তত্ত্ব পাই। সেটি এই যে, ব্যক্তিস্বরূপের সহিত সম্বন্ধ সূত্রেই বিশ্বসত্য।’
জমিদার হয়েও বিষয়-আশয়ের প্রতি নিরাসক্ত হাসন রাজা গানে গানে মানবতাবাদের কথা বলেছেন। জীবনের কামনা, বাসনা এবং জগৎসৌন্দর্য ও জিজ্ঞাসার বর্ণনা রয়েছে তার গানে। তার গানে তুমুল আত্মজিজ্ঞাসা বিদ্যমান। সামাজিক অসঙ্গতি, ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধেও তার বাণী শাণিত হয়েছে। সব ধর্মের সমন্বয়ের কথা রয়েছে তার গানের ছত্রে। এখনো তার গানগুলো প্রাসঙ্গিক ও জনপ্রিয়। জাতীয়, স্থানীয় ও আন্তর্জাতিকভাবেও বাঙালিরা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তার গান পরিবেশন করেন থাকেন। তা ছাড়া অবিভক্ত ভারতের গোহাটি বিশ্ববিদ্যালয়ে একসময় হাসন রাজার গান পাঠ্য ছিল।
মরমী কবি হাসনরাজাকে নিয়ে সর্ব প্রথম মুরারি চাঁদ কলেজ (এমসি কলেজ) বার্ষিকীতে এই অঞ্চলের আরেক প্রতিভাধর ব্যক্তি প্রভাত কুমার শর্মা আলোচনা করেন। ‘হাছন উদাস’ গ্রন্থের দ্বিতীয় সংস্করণেও ভূমিকা লেখেন তিনি। হাসন রাজার গান শান্তিনিকেতনে নিজে গিয়ে রবীন্দ্রনাথের হাতে তুলে দিয়েছিলেন প্রভাত কুমার শর্মা। হাসন রাজার বৈশ্বিক পরিচিতি ও সৃষ্টি সারা বিশ্বে পৌঁছে দিতে দূতের কাজ করেছিলেন তিনি। পরে নিখিল ভারতের বিখ্যাত সংগীত মহাজন নির্মলেন্দু চৌধুরী হাসন রাজার গান পরিবেশন করেন। তারপর দুই বঙ্গের বিখ্যাত সংগীত মহাজনরা হাসন রাজার গান পরিবেশন করেন।
সুনামগঞ্জে প্রয়াত সাহিত্যিক আব্দুল হাই হাসন রাজাকে নিয়ে গত শতাব্দীতে লিখেছেন। সংগীতশিল্পী আব্দুল লতিফ ও সাব্বির আহমদ মিনুসহ স্থানীয় শিল্পীরা হাসন রাজার গান গেয়ে খ্যাতি পেয়েছেন। অমর কথাকার ও নাট্যকার হুমায়ূন আহমেদ তার একাধিক নাটকে হাসন রাজার গান ব্যবহার করেন। আশির দশক থেকে বিখ্যাত শিল্পী সেলিম চৌধুরী হাসন রাজার গান গেয়ে জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। এখনো এই প্রজন্মের অনেক শিল্পী হাসন রাজার গান গেয়ে নিজেদের পরিচিতি পেয়েছেন। কিন্তু হাসন রাজার গানের দর্শন ছড়িয়ে দিতে নীরব বলে মনে করেন অনেকে।
হাসন রাজার সৃষ্টি ও স্মৃতিকে ধরে রাখতে তার প্রপৌত্র দেওয়ান সামারিন রাজা চৌধুরী পারিবারিক মিউজিয়ামটিকে সমৃদ্ধ করায় হাত দেন এক দশক আগে। হাসন রাজার সৃষ্টি ও স্মৃতি তিনি জড়ো করেন। এতে দেশ-বিদেশের গুণীজনরা এসে মিউজিয়াম দেখে হাসন রাজার সৃষ্টির সান্নিধ্য লাভ করেন।
চলতি বছরের জুন মাসে পারিবারিক বিবাদের কারণে হাসন রাজার বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করা হয়েছে সেই মিউজিয়াম। যার ফলে এখন দেশ-বিদেশ থেকে আগত সুধীজন মিউজিয়াম থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তারা হাসন রাজার স্মৃতি দর্শন থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এ ছাড়া হাসন রাজা একাডেমি কাম শিল্পকলা একাডেমি নামে ২০০৮ সালে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় একটি ভবনের নামকরণ করলেও পরবর্তী সময়ে হাসন রাজা একাডেমি বাদ দিয়ে শুধু শিল্পকলা একাডেমি নামে প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তোলা হয়। এর মিলনায়তনের নামকরণ করা হয় হাসন রাজা মিলনায়তন।
হাসন রাজার প্রপৌত্র ও হাসন রাজা মিউজিয়ামের পরিচালক দেওয়ান সামারিন রাজা চৌধুরী বলেন, অনেক কষ্ট করে মিউজিয়ামটি সমৃদ্ধ করেছিলাম। কিন্তু হাসন রাজার বিশাল জমিদারির মধ্যে সেই মিউজিয়ামের জায়গা হয়নি। তার স্মৃতি ও সৃষ্টিকে আমাদের স্বজনরাই উপেক্ষা করছেন। তিলে তিলে গড়ে তোলা মিউজিয়ামটি উচ্ছেদ করে দিয়েছেন। এ ছাড়া সরকার হাসন রাজা একাডেমি নামে ভবন অনুমোদন দিলেও সেটিও প্রতিহিংসাবশত বাদ দিয়ে শিল্পকলা একাডেমি ভবন নামে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এভাবে এখনো হাসন রাজার প্রতি উদাসীনতা দেখা যায়। অথচ তার গান বাংলার সীমানা ছাড়িয়ে বৈশ্বিক হয়ে উঠেছে বহু আগেই।
গবেষক ইকবাল কাগজী বলেন, হাসন রাজা যুগসচেতন মরমী সাধক ছিলেন। সামাজিক ও ধর্মীয় অসঙ্গতির বিরুদ্ধে তিনি সব ধর্মের মিলনের গান গেয়েছেন। তার সেসব গান বাদ দিয়ে শিল্পীরা শুধু জনপ্রিয় কিছু গান পরিবেশন করেন। তার গানে মানবতাবাদের যে অমর সুর রয়েছে, সেটি ছড়িয়ে দিতে পারলে আমাদের প্রজন্ম উপকৃত হবে। তাই এই কাজ হাসন রাজার গানের শিল্পীরা করতে পারেন। কিন্তু শিল্পীরা নীরব।
অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ও বিশিষ্ট লেখক সৈয়দ মহিবুল ইসলাম বলেন, তার স্বজনরা হাসন রাজার পরিচয় দেন গর্ব ভরে। কিন্তু হাসন রাজার সৃষ্টি, জীবনদর্শন ও স্মৃতির সঙ্গে মানুষের পরিচিত করিয়ে দিতে উদাসীন তারা। তিনি হাসন গবেষক ও শিল্পীদের হাসন রাজাকে নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার আহ্বান জানান।
সুনামগঞ্জ জেলা কালচারাল অফিসার আহমেদ মঞ্জুরুল হক চৌধুরী পাভেল বলেন, হাসন রাজার মৃত্যু দিবসে এবার কোনো কর্মসূচি নেই। আমি ঢাকায় অফিসের কাজে থাকায় কোনো কর্মসূচি হচ্ছে না। তবে হাসন রাজার সম্মানে জেলা শিল্পকলা ভবনের একটি কক্ষের নামকরণ এবং শিল্পকলা একাডেমির প্রবেশপথে আমরা তার ভাস্কর্য গড়েছি।
আরও পড়ুন:‘আমি বাংলায় গান গাই’ গানের প্রখ্যাত শিল্পী প্রতুল মুখোপাধ্যায় আর নেই, যার বয়স হয়েছিল ৮৩ বছর।
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে শনিবার তার মৃত্যু হয়।
গত সপ্তাহ থেকেই এ শিল্পী হাসপাতালটির নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) ছিলেন। জানুয়ারিতে হাসপাতালে ভর্তি করানোর সময় তার নাক দিয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। তাই স্নায়ু এবং নাক-কান ও গলা বিশেষজ্ঞদের পর্যবেক্ষণে চিকিৎসা হয় তার।
ফেব্রুয়ারির শুরুতে হঠাৎ শ্বাসকষ্ট শুরু হলে চিকিৎসকেরা পরীক্ষা করে জানান, প্রতুলের হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। দ্রুত তাকে কার্ডিওলজি বিভাগে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে চিকিৎসা চলাকালে শিল্পীর ফুসফুসেও সংক্রমণ দেখা দেয়। দ্রুতই শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটতে থাকে।
প্রতুলের গাওয়া অন্যতম জনপ্রিয় গান হলো ‘আমি বাংলায় গান গাই’, ‘ডিঙ্গা ভাসাও সাগরে সাথী রে’। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও তার গানের গুণমুগ্ধ ছিলেন। মমতার তত্ত্বাবধানেই হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল তাকে।
বাংলাদেশের বরিশাল জেলায় ১৯৪২ সালে জন্মগ্রহণ করেছিলেন প্রতুল মুখোপাধ্যায়। বাবা ছিলেন সরকারি স্কুলের শিক্ষক। শৈশব থেকেই গান লিখে তাতে সুর দিয়ে গাওয়ার ঝোঁক ছিল তার।
প্রতুল মুখোপাধ্যায়কে পাদপ্রদীপের আলোয় আনে তার গাওয়া ‘আমি বাংলায় গান গাই’। এ ছাড়া সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের গল্প অবলম্বনে তৈরি ‘গোঁসাইবাগানের ভূত’ ছবির নেপথ্য শিল্পী ছিলেন তিনি।
তার মতে, সৃষ্টির মুহূর্তে লেখক-শিল্পীকে একা হতে হয়। তারপর সেই সৃষ্টিকে যদি মানুষের সঙ্গে মিলিয়ে দেওয়া যায়, কেবল তাহলেই সেই একাকিত্বের সার্থকতা। সেই একক সাধনা তখন সকলের হয়ে ওঠে।
আরও পড়ুন:ব্যান্ড তারকা শাফিন আহমেদ স্মরণে বর্ণাঢ্য এক লাইভ কনসার্টের আয়োজন করা হচ্ছে।
দেশীয় ব্যান্ডগুলো গানে গানে শ্রদ্ধা জানাবে সংগীতশিল্পীকে।
‘শাফিন আহমেদ: ইকোস অব আ লিজেন্ড’ শিরোনামের কনসার্টটি অনুষ্ঠিত হবে ১৩ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর তেজগাঁও লিঙ্ক রোডের আলোকিতে। সেখানে শাফিনের গাওয়া কালজয়ী গানগুলো শোনাবে তার সাবেক ব্যান্ড মাইলসের সদস্যরা।
এ ছাড়াও কনসার্টে পারফর্ম করবে দেশের প্রথম সারির ব্যান্ড ফিডব্যাক, দলছুট, আর্টসেল ও অ্যাভয়েড রাফা ও শাফিন আহমেদের ছেলে য়াজরাফ অজি।
গানের পাশাপাশি এ আয়োজনে আরও থাকছে শাফিন আহমেদের ঘটনাবহুল জীবন ও সংগীত ক্যারিয়ার নিয়ে নির্মিত একটি তথ্যচিত্রের প্রদর্শনী। এ ট্রিবিউট কনসার্টের আয়োজন করেছে ভেলভেট ইভেন্টস।
আয়োজকরা জানান, শুরুতে শাফিন আহমেদের জন্মদিন উপলক্ষে ১৪ ফেব্রুয়ারি কনসার্টের পরিকল্পনা করা হয়েছিল। কিন্তু পবিত্র শবে বরাতের কারণে তা এক দিন এগিয়ে ১৩ ফেব্রুয়ারি নির্ধারণ করা হয়েছে।
রাত ৯টায় শুরু হবে কনসার্ট। সন্ধ্যা ছয়টায় দর্শকের জন্য খুলে দেওয়া হবে ভেন্যুর দরজা।
এ কনসার্ট আয়োজন চলবে রাত ১২টা পর্যন্ত। দর্শক টিকিট কেটে আয়োজনটি উপভোগ করতে পারবেন।
গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে বেশ কয়েকটি কনসার্টের জন্য যুক্তরাষ্ট্র সফরে গিয়েছিলেন শাফিন আহমেদ। যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়াতে দ্বিতীয় কনসার্টের দিন হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। এরপর সেখান থেকে তাকে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া হয়।
দুই দিন লাইফ সাপোর্টে থাকার পর ২৪ জুলাই মারা যান শিল্পী কমল দাশগুপ্ত ও ফিরোজা বেগমের সন্তান শাফিন আহমেদ।
আরও পড়ুন:রাজধানীর একটি পাঁচ তারকা হোটেলে শুক্রবার ‘আমাদের সাবিনা ইয়াসমিন: আমি আছি থাকব’ অনুষ্ঠানে গান গাইতে গিয়ে মঞ্চে অুসুস্থ হয়ে পড়েন প্রখ্যাত কণ্ঠশিল্পী সাবিনা ইয়াসমিন।
অনুষ্ঠানটির এক বছরের বিরতির পরে মঞ্চ পবিরেবশনায় ফিরে এসেছিলেন তিনি।
বিষয়টি নিশ্চিত করে সংগীতশিল্পী দিঠি আনোয়ার বলেন,‘কিংবদন্তি এই সংগীতশিল্পী তার পরিবেশনা চলাকালে হঠাৎ অসুস্থ বোধ করেন এবং মঞ্চেই পড়ে যান। তাকে তাৎক্ষণিকভাবে ইউনাইটেড হাসপাতালের ইমার্জেন্সিতে নিয়ে যাওয়া হয় এবং এই মুহূর্তে তার চিকিৎসা চলছে। তবে তিনি এখন শঙ্কামুক্ত।’
দিঠি জানান, হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে দুই-এক দিনের মধ্যেই বাসায় ফিরবেন জনপ্রিয় এ গায়িকা।
গতকালের অনুষ্ঠানটিতে কিংবদন্তি গায়িকা দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর মঞ্চে ফিরে এসেছিলেন। কারণ তিনি সিঙ্গাপুরে তার নিয়মিত চিকিৎসার কারণে এক বছর ধরে এ ধরনের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেননি।
দৈনিক প্রথম আলোকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এ শিল্পী জানান, ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে তার অস্ত্রোপচার হয়েছে। এরপর চার মাসে ৩০ সেশন রেডিওথেরাপি দিতে হয়েছে।
এর আগে সর্বশেষ ২০২৩ সালের শেষের দিকে অস্ট্রেলিয়ার সিডনি, মেলবোর্ন ও ব্রিসবেনে বেশ কয়েকটি স্টেজ শো করেছেন সাবিনা ইয়াসমিন। এরপর তাকে আর মঞ্চে পারফর্ম করার জন্য পাওয়া যায়নি।
আয়োজকরা জানান, শনিবারও একই অনুষ্ঠানে পারফর্ম করার কথা ছিল সাবিনার। এরপর চট্টগ্রামে আরেকটি শোতে অংশ নেওয়ার কথা ছিল তার।
আরও পড়ুন:সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলার ১৯টি ইউনিয়নের শীতার্ত মানুষের মধ্যে শনিবার প্রায় দুই হাজার কম্বল বিতরণ করা হয়েছে।
বেলা ১১টার দিকে চালিতাডাংগা ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুর গ্রামে উপস্থিত হয়ে শীতার্তদের হাতে কম্বল তুলে দেন এলাকার সন্তান বিখ্যাত কণ্ঠশিল্পী রুমানা মোর্শেদ কনকচাঁপা।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কাজিপুর উপজেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি অ্যাডভোকেট রবিউল হাসান।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি রুমানা মোর্শেদ কনকচাঁপা বলেন, ‘একজন মানুষের জন্য একটি কম্বল সাধারণ ব্যাপার। তাদের জন্য এ শীতে কষ্ট লাগবের জন্য আরও কিছু করতে পারলে নিজেকে সান্ত্বনা দিতে পারতাম। সারা দেশের মতো সিরাজগঞ্জে শীতের শুরুতে যমুনা নদীর পাড়ের অবস্থিত গ্রামগুলো শীতে কাঁপছে। এ কারণে বেড়েছে গরিব, দুস্থ ও অসহায় মানুষের দুর্ভোগ।
‘এলাকার গরিব, দুস্থ ও অসহায় মানুষ শীতের তীব্রতায় কষ্ট পাচ্ছেন। তাই তাদের কষ্ট লাঘবের জন্য শীতবস্ত্র বিতরণ করা হচ্ছে। একজন মানুষ হয়ে আর একজন অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো সকলের নৈতিক দায়িত্ব।’
ওই সময় সমাজের সব বিত্তবান মানুষকে অসহায় শীতার্ত নারী-পুরুষদের সহযোগিতায় এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।
কম্বল পাওয়া মহেলা বেওয়া বলেন, ‘তীব্র শীত ও কনকনে ঠান্ডায় যখন কাহিল আমরা, এই সময়ে কম্বল আমাগো খুব উপকার করল। এই শীতে কম্বল গায়ে দিয়ে একটু আরামে ঘুমাতে পারব।
‘শীতে কম্বল দিয়ে অসহায় মানুষকে সহযোগিতা করছে আমাগো গ্রামের মেয়ে কণ্ঠশিল্পী কনকচাঁপা।’
ওই সময় উপস্থিত ছিলেন কাজিপুর উপজেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি সাজ্জাদুল রহমান বাবলু, সাবেক সাধারণ সম্পাদক লাল মিয়া, উপজেলা শ্রমিক দলের সাবেক সভাপতি জহুরুল ইসলাম খোকন, ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক লিয়াকত আলী, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সভাপতি ইমরুল কায়েস (সবুর), লক্ষ্মীপুর গ্রামের বিশিষ্ট সমাজসেবক ও শিক্ষানুরাগী কামরুল হাসান তরু, তার মেয়ে কামরুন্নাহার তনুসহ অনেকে।
আরও পড়ুন:একুশে পদকপ্রাপ্ত রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী পাপিয়া সারোয়ার মারা গেছেন।
রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে বৃহস্পতিবার সকাল আটটার দিকে তার মৃত্যু হয়।
বিষয়টি নিশ্চিত করেন পাপিয়া সারোয়ারের স্বামী সারওয়ার আলম।
তিনি জানান, শুক্রবার জুমার নামাজের পর জানাজা শেষে বনানী কবরস্থানে শিল্পীর দাফন সম্পন্ন হবে।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, কয়েক বছর ধরে ক্যানসারে ভুগছিলেন পাপিয়া। গত মাসে ঢাকার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। সর্বশেষ তেজগাঁওয়ের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে।
চিকিৎসকদের সব চেষ্টা ব্যর্থ করে চলে গেলেন গুণী এ শিল্পী, যার বয়স হয়েছিল ৭২ বছর। তিনি স্বামী ও দুই সন্তান রেখে গেছেন।
পাপিয়া সারোয়ার ১৯৫২ সালের ২১ নভেম্বর বরিশালে জন্মগ্রহণ করেন। ছোটবেলা থেকেই রবীন্দ্রসংগীত অনুরাগী পাপিয়া ষষ্ঠ শ্রেণিতে ছায়ানটে ভর্তি হন। পরে তিনি বুলবুল ললিতকলা একাডেমিতে ভর্তি হন।
বেতার ও টিভিতে ১৯৬৭ সাল থেকে তালিকাভুক্ত শিল্পী হিসেবে গান করেন পাপিয়া। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী ছিলেন।
১৯৭৩ সালে ভারত সরকারের বৃত্তি নিয়ে শান্তিনিকেতনে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে রবীন্দ্রসংগীতে ডিগ্রি নিতে ভারতে যান।
দীর্ঘ সংগীত ক্যারিয়ারে রবীন্দ্রসংগীতের জন্য কোটি শ্রোতার ভালোবাসা পেয়েছেন পাপিয়া সারোয়ার। তার ব্যতিক্রমী কণ্ঠ ও গায়কীর প্রশংসা ছিল সংগীতাঙ্গনে।
আধুনিক গানেও আছে তার সাফল্য। ‘নাই টেলিফোন নাইরে পিয়ন নাইরে টেলিগ্রাম’ গানটি তাকে আপামর বাংলা গানের শ্রোতাদের কাছে জনপ্রিয়তা দিয়েছে।
সংগীতবোদ্ধাদের মতে, আধুনিক গান বাছাইয়ে বেশ সচেতন ছিলেন বলে তার অ্যালবামের সংখ্যা কম। তার সর্বশেষ অ্যালবাম ‘আকাশপানে হাত বাড়ালাম’ প্রকাশ হয় ২০১৩ সালে।
পাপিয়া সারোয়ার ২০১৩ সালে বাংলা একাডেমি থেকে রবীন্দ্র পুরস্কার লাভ করেন। তিনি ২০১৫ সালে বাংলা একাডেমি ফেলোশিপ লাভ করেন। ২০২১ সালে পান একুশে পদক।
আরও পড়ুন:যুক্তরাষ্ট্রে দীর্ঘ প্রবাস জীবন শেষে রোববার দেশে ফিরছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও নামী সংগীতশিল্পী বেবী নাজনীন।
বিগত ১৬ বছরের আওয়ামী শাসনামলে পেশাগত কাজকর্মে বারবার বিভিন্নভাবে বাধাগ্রস্ত হয় বেবী নাজীনের সংগীতজীবন।
বাংলাদেশ বেতার-টিভি-মঞ্চ কোনো মাধ্যমেই বেবী নাজনীন স্বাচ্ছন্দ্যে কাজ করতে পারেননি। একপর্যায়ে দেশ ছাড়তেই বাধ্য হন তিনি।
দেশের মতো প্রবাসী বাংলাদেশিদের কাছেও সমাদৃত হন বেবী নাজনীন। দীর্ঘ প্রবাস জীবনে আমেরিকা, ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্যে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেছেন এ শিল্পী।
সাড়ে চার দশকের ক্যারিয়ারে আধুনিক সংগীতের অর্ধশতাধিক একক অডিও অ্যালবামসহ অসংখ্য দ্বৈত অডিও অ্যালবামে গান গেয়েছেন তিনি।
ভারতের জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী আশা ভোঁসলে, বাপ্পি লাহিড়ী, কুমার শানু, কবিতা কৃষ্ণমূর্তির সঙ্গেও একাধিক অডিও অ্যালবাম প্রকাশ হয়েছে তার।
বাংলাদেশ বেতার ও বাংলাদেশ টেলিভিশনের বিশেষ শ্রেণির তালিকাভুক্ত সংগীতশিল্পী বেবী নাজনীন দেশের চলচ্চিত্র, অডিও মাধ্যমে অসংখ্য জনপ্রিয় গান উপহার দেন।
আরও পড়ুন:রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যার প্রতিষ্ঠান ‘সুরের ধারা’র অনুকূলে ঢাকার লালমাটিয়ায় বন্দোবস্ত দেয়া খাসজমির অনুমতি বাতিল করা হয়েছে।
ভূমি মন্ত্রণালয়ের খাস জমি-১ অধিশাখার উপসচিব মো. আমিনুর রহমান স্বাক্ষরিত পত্রের মাধ্যমে এ বিষয়ে যথাযথ কার্যক্রম গ্রহণ করে ভূমি মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন পাঠাতে ঢাকার জেলা প্রশাসককে অনুরোধ করা হয়েছে।
পত্রে বলা হয়, এ জমি দীর্ঘমেয়াদি বন্দোবস্তে সুরের ধারার চেয়ারম্যান ও অধ্যক্ষ রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যার পক্ষে অনুমোদিত হয়েছিল। জমিটি ঢাকার মোহাম্মদপুর থানার রামচন্দ্রপুর মৌজায় অবস্থিত।
এতে উল্লেখ করা হয়, বাতিল হওয়া জমিটি খাস খতিয়ানভুক্ত, যার দাগ নম্বর সিএস ও এসএ-৬৯২, আরএস-১৮৯৫, সিটি-১১৬৬৭ এবং ১১৪১২। মোট জমির পরিমাণ শূন্য দশমিক পাঁচ এক দুই শূন্য একর। এ জমির সিএস ও আরএস রেকর্ডে ‘খাল’ হিসেবে শ্রেণিকরণ থাকার কারণে এ বন্দোবস্ত বাতিল করা হয়েছে।
মন্তব্য