বেলা ২টা। হাসপাতালের ফটক বন্ধ। তিনতলা সুরম্য ভবনটি পুরো ফাঁকা। কলাপসিবল গেটে অনেকক্ষণ ধাক্কা দেওয়ার পর পাশের চায়ের দোকান থেকে এগিয়ে এলেন একজন। শরিফ আহমদ নামের এই তরুণ এই হাসপাতালের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী।
হাসপাতালের ফটক বন্ধ কেন জানতে চাইলে তিনি জানান, কোনো রোগী ভর্তি নেই। ডাক্তার-নার্সরাও চলে গেছেন। তাই বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
প্রতিদিন দুপুর ১টায় হাসপাতালের ফটক বন্ধ করে দেওয়া হয় বলে জানান তিনি।
খাদিমপাড়া ৩১ শয্যা হাসপাতালে বুধবার গিয়ে দেখা যায় এমন চিত্র। সিলেট সদর উপজেলার খাদিমে ১৬ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই হাসপাতাল ২০১৬ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করেন। তবে উদ্বোধনের ছয় বছর পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত শুরু হয়নি হাসপাতালের পূর্ণাঙ্গ কার্যক্রম। ফলে সেবাবঞ্চিত হচ্ছেন এই এলাকার মানুষজন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হাসপাতালটিতে নেই ওষুধ, নেই রোগ নির্ণয়ের কোনো যন্ত্রপাতি। টেকনিশিয়ানও নেই। অ্যাম্বুলেন্স থাকলেও চালক নেই। চিকিৎসক-সেবিকাসহ লোকবলেরও সংকট রয়েছে। এ ছাড়া উদ্বোধনের ছয় বছরেও এই হাসপাতালে শুরু হয়নি ইনডোর সেবা কার্যক্রম। রোগী ভর্তির জন্য আর্থিক আর প্রশাসনিক অনুমোদনও পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
সিলেটের স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, খাদিমপাড়া ৩১ শয্যা হাসপাতালটি জেলা বা উপজেলা হাসপাতালের মতো নয়। বিশেষায়িত হাসপাতাল হিসেবে নির্মাণ করা হয়েছে। বিশেষায়িত হাসপাতালের জন্য আলাদা আর্থিক ও প্রশাসনিক অনুমোদন প্রয়োজন। তবে নানা জটিলতায় তা এখনও সম্ভব হয়নি।
বৃহস্পতিবার সকালে ফের খাদিম হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, বহির্বিভাগে ভিড় করে আছেন শতাধিক রোগী। টিকিট কেটে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে এসেছেন তারা।
তাদেরই একজন রহিমা বেগম। খাদিম দাসপাড়া এলাকার বাসিন্দা এই বৃদ্ধা বলেন, ‘ডাক্তারের কাছে এলেই বিভিন্ন টেস্ট লিখে দেন। কিন্তু এখানে রক্ত পরীক্ষাও করানো যায় না। এখানে কোনো ওষুধও পাওয়া যায় না। এসবের জন্য আমাদের শহরে যেতে হয়। অনেক সময় চিকিৎসকও পাওয়া যায় না।’
মনির হোসেন নামের আরেক রোগী বলেন, ‘হাসপাতাল বলা হলেও এটি আসলে অনেকটা ডাক্তারের চেম্বারের মতো। এখানে একটু কম পয়সায় ডাক্তার দেখানো যায়- এটুকুই লাভ। আর কোনো সুবিধা নেই।’
সিলেট সদর উপজেলায় কোনো সরকারি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নেই। এখানকার রোগীদের যেতে হয় সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। এই হাসপাতালের ওপর চাপ কমানো এবং সদর উপজেলাবাসীর চিকিৎসা নিশ্চিত করতে খাদিমনগর হাসপাতাল নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়। তবে হাসপাতাল নির্মিত হলেও তার সুফল পাচ্ছেন না উপজেলার বাসিন্দারা।
বৃহস্পতিবার হাসপাতালে গিয়ে কথা হয় প্রশাসনিক এক কর্মকর্তার সঙ্গে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি জানান, রাজনৈতিক বিবেচনায় সিলেট-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও প্রয়াত অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের উদ্যোগে এই হাসপাতালটি নির্মাণ করা হয়েছিল। নির্মাণের আগে অবকাঠামো ছাড়া আর কিছুর কথা চিন্তা করা হয়নি। কিন্তু হাসপাতালের জন্য আরও অনেক কিছুর প্রয়োজন হয়। এসবের কিছুই এখানে নেই।
হাসপাতালের সংকটের চিত্র তুলে ধরে এই কর্মকর্তা বলেন, এখানে কোনো ওষুধ নেই। আলট্রাসনোগ্রাম ছাড়া রোগ নির্ণয়ের আর কোনো যন্ত্র নেই। এমনকি রক্ত পরীক্ষাও করা যায় না। টেকনোলজিস্ট ও রেজিওলজিস্টের পদও শূন্য। অ্যাম্বুলেন্স থাকলেও চালক নেই। ফলে এটি ব্যবহার করা যায় না।
তিনি বলেন, অবকাঠামোগত সুবিধা এবং চিকিৎসক থাকার পরও আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র না থাকায় এখানে রোগী ভর্তি করা যায় না। মাঝে মাঝে দু-একজন ভর্তি হলেও তাদের সেবা দেয়া সম্ভব হয় না।
করোনাকালীন আইসোলেশন সেন্টার হিসেবে ঘোষণা করে এই হাসপাতালে করোনার উপসর্গ থাকা ও আক্রান্ত রোগীদের ভর্তি করা হয়। করোনার প্রকোপ কমার পর বন্ধ হয়ে যায় ইনডোরের কার্যক্রম।
হাসপাতালটিতে চিকিৎসকের পদ আছে ১০টি। এর মধ্যে কর্মরত আছেন ছয় জন। তত্ত্বাবধায়ক চিকিৎসকের পদটিও শূন্য রয়েছে। ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে রয়েছেন ডা. আব্দুল হারিছ।
তিনি বলেন, ‘লোকবল সংকট ও অর্থ ছাড় না পাওয়ায় হাসপাতালের পূর্ণাঙ্গ কার্যক্রম চালু করা যাচ্ছে না। চিকিৎসক নার্সের পাশাপাশি এখানে সব পদেই লোক সংকট রয়েছে। এখন পর্যন্ত হাসপাতালে কোনো পরিচ্ছন্নতা কর্মী নিয়োগ দেয়া হয়নি।’
আব্দুল হারিছ বলেন, ‘অনেক সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও আমরা সেবা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। মাঝে মাঝে ইনডোরেও কিছু রোগী ভর্তি থাকেন। তবে বহির্বিভাগের কার্যক্রম দুপুর ১টায় বন্ধ হয়ে যায়। ভর্তি রোগী না থাকলে তখন হাসপাতালের ফটকও বন্ধ করে দেয়া হয়।’
এই হাসপাতালের ব্যাপারে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সিলেটের পরিচালক হিমাংশু লাল রায় বলেন, ‘রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতির অংশ হিসেবে হাসপাতালটি নির্মিত হয়েছিল। রাজনীতিবিদরা যখন প্রতিশ্রুতি দেন, তখন কেবল ভবন নির্মাণের চিন্তা করেন। কিন্তু হাসপাতালের জন্য যে অর্থছাড় ও লোকবলের অনুমোদন করাতে হয়, তা তারা চিন্তা করেন না। ফলে অবকাঠামো নির্মিত হলেও বাকি প্রক্রিয়াগুলো সম্পন্ন না হওয়ায় হাসপাতাল দুটি চালু করা যাচ্ছে না।’
তিনি বলেন, ‘হাসপাতালের ইনডোর কার্যক্রম এখনও শুরু হয়নি। এ জন্য অর্থ ছাড়, লোকবল নিয়োগ প্রয়োজন। এ ছাড়া ইনডোরে ভর্তি রোগীর খাবারেরও জন্য অর্থ প্রয়োজন। এসব না পাওয়ায় ইনডোর কার্যক্রম চালু করা যাচ্ছে না।’
হাসপাতালের পূর্ণাঙ্গ কার্যক্রম চালুর প্রক্রিয়া চলছে জানিয়ে হিমাংশু বলেন, ‘এটি জেলা ও উপজেলা হাসপাতালের মতো নয়। এমন হলে নির্মাণের সঙ্গে সঙ্গে প্রশাসনিক ও অর্থছাড় পাওয়া যেত। হাসপাতাল পরিচালনায় একটি ব্যবস্থাপনা কমিটিও থাকত। কিন্তু এটি একটি বিশেষ ধরনের হাসপাতাল। ফলে এর অর্থছাড়, প্রশাসনিক অনুমোদন, লোকবল নিয়োগে কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে। নতুন করে পদ সৃষ্টি করতে হচ্ছে। তবে আমরা এ নিয়ে মন্ত্রাণলয়ে লিখেছি। আশা করছি দ্রুত এই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।’
এই হাসপাতাল চালু না হওয়ায় উপজেলাবাসী দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে জানিয়ে সিলেট সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আশফাক আহমদ বলেন, ‘ওসমানী হাসপাতালে ধারণক্ষমতার চেয়ে সব সময়ই চার-পাঁচ গুণ বেশি রোগী থাকেন। ফলে কাঙ্ক্ষিত সেবা পান না রোগীরা। এ ছাড়া সদর উপজেলাসহ আশপাশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে মুমূর্ষু রোগীদের ওসমানী হাসপাতালে অনেক সময় নিয়ে যাওয়াও সম্ভব হয় না। কিন্তু এই এলাকায় একটি হাসপাতাল হলেও তা থেকে লোকজন সেবা পাচ্ছেন না।’
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে ডাকাত সন্দেহে মাইকে ঘোষণা দিয়ে গ্রামবাসীর সংঘবদ্ধ পিটুনিতে নিহতদের পরিচয় মিলেছে। তাদের মরদেহগুলো মর্গে পাঠিয়েছে পুলিশ। তবে নিহতের কোনো স্বজন এখন পর্যন্ত তাদের খোঁজে আসেননি।
নিহতরা হলেন- আড়াইহাজার উপজেলার কালাপাহাড়িয়া ইউনিয়নের ঝাউকান্দী নিতাইটেক গ্রামের ৪৮ বছর বয়সী আব্দুল রহিম, একই উপজেলার জালাকান্দি গ্রামের ৩৫ বছর বয়সী নবী হোসেন ও সোনারগাঁ উপজেলার মুছারচর গ্রামের ৪০ বছর বয়সী জাকির হোসেন।
আরও এক জনের পরিচয় এখনও পাওয়া যায়নি। তার পরিচয় শনাক্ত করতে কাজ করছে পুলিশের তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
এছাড়া আহত অবস্থায় রাজধানীর জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন কেন্ত্রে (পঙ্গু হাসপাতাল) ভর্তি করা হয়েছে আড়াইহাজার উপজেলা জাঙ্গালিয়া গ্রামের ৪৫ বছর বয়সী মোহাম্মদ আলীকে।
পুলিশ জানায়, রোববার রাত একটার দিকে বাঘারী গ্রামের বিলের পাড়ে ৭/৮ জনের একটি দল ডাকাতির উদ্দেশ্যে অবস্থান নেয়। এ সময় স্থানীয়দের কয়েকজন তাদের দেখতে পেয়ে অন্যদের খবর দেন। পরে মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিলে গ্রামের মানুষ জড়ো হয়ে তাদের ঘিরে ফেলে। এ সময় ডাকাত দলের সদস্যরা পালানোর চেষ্টা করলে স্থানীয়রা তাদের ধরে পিটুনি দেয়।
এতে ঘটনাস্থলেই মারা যান তিনজন। অন্যরা বিলে ঝাঁপ দেন। পরে বিল থেকে উঠিয়ে আরও দুজনকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করা হয়।
খবর পেয়ে পুলিশ পৌঁছে হতাহতদের উদ্ধার করে। আহত দুজনকে হাসপাতালে নেয়ার পর আরও একজন মারা যান।
সংঘবদ্ধ পিটুনিতে নিহত চারজন ডাকাত দলের সদস্য বলে জানিয়েছেন সোনারগাঁ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শেখ বিল্লাল হোসেন।
তিনি বলেন, ‘নিহত তিনজনের পরিচয় মিলেছে, আরও একজনের পরিচয় শনাক্ত করতে সিআইডি কাজ করছে। যাদের পরিচয় পাওয়া গেছে, তাদের সবার নামেই মামলা আছে।’
মরদেহগুলো ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের লোকজন পাওয়া গেলে তাদের কাছে হস্তান্তর করা হবে বলে জানান নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা রাসেল।
ঘটনাস্থল থেকে তিনজনের মরদেহ উদ্ধার করে নারায়ণগঞ্জ সদর জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়। আর জাকিরের মরদেহ ঢামেকের মর্গে আছে বলে জানান তিনি।
এছাড়া নিহতের ঘটনায় থানায় মামলার পর পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান পুলিশের এ কর্মকর্তা।
এদিকে, বিকেল গড়িয়ে রাত হয়ে গেলেও নারায়ণগঞ্জ সদর হাসপাতালে নিহতদের কোনো স্বজন যোগাযোগ করেছে বলে জানা যায়নি। নিহত তিনজনের কোনো আত্মীয়-স্বজন তাদের খোঁজে বা মরদেহ বুঝে নিতে আসেননি বলে জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও পুলিশ।
পাবনায় চরমপন্থী দল সর্বহারা পার্টির সাবেক এক আঞ্চলিক নেতাকে গুলি করে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা।
রোববার রাত ১১টার দিকে সদর উপজেলার গয়েশপুর ইউনিয়নের মানিকনগর বাজার মোড়ে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত ৩৮ বছর বয়সী আব্দুর রাজ্জাক শেখ গয়েশপুর ইউনিয়নের হরিনারায়ণপুর গ্রামের মৃত আজিজুল শেখের ছেলে।
রাজ্জাক নিষিদ্ধ ঘোষিত চরমপন্থী সংগঠন সর্বহারা পার্টির আঞ্চলিক নেতা ছিলেন। ২০১৯ সালে পাবনা জেলা স্টেডিয়ামে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের কাছে অন্যান্য চরমপন্থীদের সঙ্গে আত্মসমর্পণ করেছিলেন তিনি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সন্ধ্যায় ইফতার করে তারাবির নামাজের পর চা খাওয়ার জন্য মানিকনগর বাজারে যান আব্দুর রাজ্জাক। এরপর ওখানকার একটি চায়ের দোকানে বসেছিলেন তিনি। এমন সময় দুটি মোটরসাইকেলে ৫-৬ জন মুখোশধারী যুবক এসে পরপর তিনটি গুলি করে পালিয়ে যায়। গুরুতর অবস্থায় স্থানীয়রা পাবনা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
পূর্ব বিরোধের জেরে তাকে হত্যা করা হয়েছে বলে ধারণা করছে পুলিশ।
পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাসুদ আলম বলেন, আব্দুর রাজ্জাক নিষিদ্ধ ঘোষিত চরমপন্থী সংগঠন সর্বহারা পার্টির নেতা ছিলেন। ২০১৯ সালে পাবনা জেলা স্টেডিয়ামে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামানের কাছে আত্মসমর্পণ করেছিলেন।
তিনি বলেন, ঘটনার পরপরই সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। মরদেহ উদ্ধার করে পাবনা জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। কে বা কারা তাকে হত্যা করেছে সেটি এখনো জানা সম্ভব হয়নি। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন:নানা অব্যবস্থাপনা ও সনদের মেয়াদ নবায়ন না করায় মেহেরপুরের গাংনীর হাসিনা প্রাইভেট হাসপাতাল অ্যান্ড সনো ডায়াগনস্টিক সেন্টারের স্বত্ত্বাধিকারী হাফিজুর রহমানকে এক বছর বিনাশ্রম কারাদণ্ড ও এক লাখ টাকা জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমান আদালত।
সোমবার দুপুরে ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী হাকিম ও গাংনী সহকারী কমিশনার (ভূমি) নাদির হোসেন শামীমের আদালত এ দণ্ড প্রদান করে। পরে দণ্ডিতকে পুলিশি প্রহরায় মেহেরপুর জেলা কারাগারে প্রেরণ করা হয়।
জানা গেছে, রোববার সন্ধ্যায় দেবীপুর গ্রামের সেলিম রেজার স্ত্রী পান্না খাতুনের প্রসব বেদনা শুরু হলে গাংনীর হাসিনা প্রাইভেট হাসপাতাল অ্যান্ড সনো ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়ে আসেন তার পরিবারের সদস্যরা।
স্বাভাবিক প্রক্রীয়ায় সন্তান প্রসব না হওয়ায় অপারেশনের সিন্ধান্ত নেয় হাসপাতাল কতৃর্পক্ষ। সেখানে ডাক্তার আবু সালেহ মো. ইমরান তার অপারেশন করেন। তবে অপারেশনের পর রোগীর অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে কুষ্টিয়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই প্রসুতির মৃত্যু হয়।
প্রসুতির মৃত্যুর পর ঘটনাটি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা, সিভিল সার্জন ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে (ইউএনও) জানায় তার পরিবার।
এরপর সোমবার দুপুরে গাংনী ইউএনও প্রীতম সাহা, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) নাদির হোসেন শামীম, মেহেরপুর সিভিল সার্জন মহিউদ্দীন, গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সুপ্রভা রাণী, আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার (আরএমও) আব্দুল আল মারুফ ওই হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারটি পরিদর্শনে যান।
সেখানে নানা অনিয়ম ও লাইসেন্স নবায়ন না করায় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯-এর ৫২ ধারায় হাসপাতালের স্বত্ত্বাধিকারী হাফিজুর রহমানকে এক বছর বিনাশ্রম কারাদণ্ড ও এক লাখ টাকা জরিমানা করে ভ্রাম্যমাণ আদালত। একইসঙ্গে প্রতিষ্ঠানটিকে সিলগালা করা হয়।
পরবর্তীতের দণ্ডিত হাফিজুর রহমানকে পুলিশের সহায়তায় মেহেরপুর জেলা কারাগারে প্রেরণ করা হয়।
চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলায় গত এক বছরে অবৈধভাবে প্রভাবশালীদের দখল করে রাখা প্রায় ৫০ কোটি টাকার খাস জমি উদ্ধার করা হয়েছে।
ভূমি অফিসের তথ্য বলছে, এতে কর্ণফুলী উপজেলার চারটি ইউনিয়নের পাঁচটি মৌজার মোট ১৮ একর ৩১ শতক সরকারি খাস জমি উদ্ধার করা হয়েছে। ওইসব জমি উদ্ধার করে তাতে লাল পতাকা টাঙিয়ে দেয়া হয়েছে।
চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামানের নির্দেশনায় এবং অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) তানভীর-আল-নাসীফের তত্ত্বাবধানে এসব অভিযান পরিচালনা করেন কর্ণফুলী উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) পিযুষ কুমার চৌধুরী।
অভিযান ও উপজেলা ভূমি অফিসের প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, কর্ণফুলী উপজেলায় বিগত ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত এবং চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত খাস জমিগুলো উদ্ধার করা হয়।
প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, কর্ণফুলীর জুলধা, ডাঙ্গারচর, চরলক্ষ্যা (বন্দর) মৌজার বি.এস ১ ও ২ নম্বর দাগে ২ দশমিক ১৬ একর বাঁধ ও নাল শ্রেণির জমি বি.এস. ১ নম্বর খাস খতিয়ানে সরকারের পক্ষে চূড়ান্ত জরিপ ছিল। সরকারি মালিকানাধীন ওই খাস জমি আগে পুকুর ছিল। কিন্তু পুকুরটি দখলে নিয়ে স্থানীয় প্রভাবশালীরা এতদিন মাছ চাষ করে আসছিল। পরে অভিযান চালিয়ে তা উদ্ধার করা হয়।
একইসঙ্গে জুলধা ইউনিয়নের ১ নম্বর খাস খতিয়ানভুক্ত ডাঙ্গারচর মৌজার বি.এস. ২৭৯০, ২৭৮৩, ২৭৮২, ২৭৭৩, ২৭৭৪, ২৭৭৭, ২৭৭৮ নম্বর নাল শ্রেণিভুক্ত দাগের মোট ১১ দশমিক ১৭ একর জমি উদ্ধার করা হয়। এই জমিতেও প্রভাবশালীরা পুকুর খনন করে খামার বাড়ি তৈরি করেছিলেন।
আরেক অভিযানে চরলক্ষ্যা ইউনিয়নের বন্দর মৌজার ১ নম্বর খাস খতিয়ানভুক্ত বি.এস ১২০৯৪, ১২০৯৫ ও ১২০৯৭ পুকুর ও নাল শ্রেণিভুক্ত দাগের মোট ১ দশমিক ৭৩ একর জমি উদ্ধার করা হয়।
বর্তমানে জমিটি অবৈধ দখলমুক্ত করে মাছের পোনা অবমুক্ত করে আখতারুজ্জামান চৌধুরী স্মৃতিপার্ক হিসেবে অর্ন্তভুক্ত করা হয়।
একই প্রক্রিয়ায় পরবর্তীতে বড়উঠান ইউনিয়নের বড়উঠান মৌজার ১ নম্বর খাস খতিয়ানভুক্ত খিলা ও পতিত শ্রেণিভূক্ত বি.এস. ১৫৫৭ ও ১৫৯১ নম্বর দাগের ১ দশমিক ৫৫ একর জমি উদ্ধার করা হয়। ওই জমিতে আগে অবৈধ স্থাপনাসহ মুরগির খামার ছিল। ওই জমি দখলমুক্ত করে সেখানে শিশুপার্ক গড়ে তোলা হয়েছে।
ধারাবাহিক অভিযানে চরলক্ষ্যায় ২৮ শতক, শিকলবাহা ইউনিয়নের শিকলবাহা মৌজার উপজেলা ভূমি অফিসের জন্য ৫৭ শতক ও সবশেষ ৮৫ শতক খাস জমি উদ্ধার করেন এসি ল্যান্ড পিযুষ কুমার চৌধুরী।
উদ্ধারকৃত মোট জমির পরিমাণ ১৮ একর ৩১ শতক বলে জানা যায়। এসব জমির বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় ৫০ কোটি টাকা।
জানতে চাইলে সহকারী কমিশনার (ভূমি) পিযুষ কুমার চৌধুরী বলেন, ‘এতদিন ধরে উদ্ধারকৃত জমিগুলো অবৈধ ব্যক্তিদের দখলে ছিলো। কেউ খামার গড়ে তুলেছিলো। কেউ পুকুর খনন করে মাছ চাষ করে আসছিল। পৃথক অভিযানে উল্লিখিত মৌজার এসব ভূমি উদ্ধার করা হয়। কিছু জমিতে শিশুপার্ক গড়ে তোলা হয়েছে। বাকি জমিতে তফসিল উল্লেখ করে সরকারের নামে সাইনবোর্ড ও লাল পতাকা টাঙানো হয়েছে।’
উদ্ধারকাজ পরিচালনাকালে এসি ল্যান্ডের সার্বিক সহযোগিতায় ছিলেন উপজেলা সার্ভেয়ার, কানুনগো ছাড়াও বড়উঠান, শিকলবাহা, চরলক্ষ্যা ও জুলধা ইউনিয়ন ভূমি অফিসের ভূমি সহকারী কর্মকর্তাসহ সিএমপি কর্ণফুলী থানার পুলিশ সদস্যরা।
প্রসঙ্গত, পাঁচটি ইউনিয়ন নিয়ে কর্ণফুলী উপজেলা গঠিত। এর মোট আয়তন ৫৫ দশমিক ৩৬ বর্গকিলোমিটার বা ২১ দশমিক ৩৭ বর্গমাইল।
আরও পড়ুন:ময়মনসিংহের ত্রিশালে পুলিশের তিন কর্মকর্তাকে কুপিয়ে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাভুক্ত আসামি ছিনিয়ে নেয়ার ঘটনা ঘটেছে।
রোববার রাত সাড়ে ১০টার দিকে উপজেলার ধানিখলা ইউনিয়নের শিমুলিয়াপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
আহত পুলিশ কর্মকর্তারা হলেন- ত্রিশাল থানার ৩০ বছর বয়সী উপ-পরিদর্শক (এসআই) ইসমাইল হোসেন, ৩৫ বছর বয়সী সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) গোলাম রসুল ও ৩৯ বছর বয়সী এএসআই রাকিব।
নিউজবাংলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করে ত্রিশাল থানার ওসি মো. কামাল হোসেন বলেন, ‘বেদেনা নামে ওয়ারেন্টভুক্ত এক আসামিকে ধরতে শিমুলিয়াপাড়া এলাকায় যান পুলিশের ওই তিন কর্মকর্তা। আসামিকে বাড়িতে পেয়ে গ্রেপ্তার করতে চাইলে তার ছেলে নাইম ও হারুন কর্মকর্তাদের এলোপাতাড়ি কুপিয়ে তার মাকে ছিনিয়ে নিয়ে যান। পরে থানা থেকে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে আহতদের উদ্ধার করে প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও পরে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ (মমেক) হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হয়।’
আসামি বেদেনাসহ এ ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তার করতে অভিযান চলছে বলেও জানিয়েছেন ওসি মো. কামাল হোসেন।
মমেক হাসপাতাল পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ এসআই মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর বলেন, ‘এএসআই রাকিবের পেটে, এসআই ইসমাইলের পিঠে ও এএসআই গোলাম রসুলের কনুইয়ে কোপানোর আঘাত রয়েছে। তাদের মধ্যে রাকিবের অবস্থা গুরুতর।’
আরও পড়ুন:উপকূলীয় বাসিন্দাদের জীবনমান দেখতে খুলনার কয়রা উপজেলায় সফর করবেন জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) শুভেচ্ছাদূত সুইডেনের রাজকন্যা ক্রাউন ভিক্টোরিয়া।
মঙ্গলবার এই সফরে যাবেন তিনি। খবর ইউএনবির
প্রিন্সেস ক্রাউন ভিক্টোরিয়ার ভ্রমণকে ঘিরে কয়রা উপজেলা প্রশাসন ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করছে। পুরো এলাকা নিরাপত্তার পাশাপাশি রাস্তাঘাট পরিষ্কার-পরিছন্ন করা হচ্ছে। তার পরিদর্শনের জায়গাগুলো পরিপাটি করা ও গোছানোর কাজ চলছে।
খুলনার জেলা প্রশাসক খন্দকার ইয়াছির আরেফীন বলেন, জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) শুভেচ্ছা দূত হিসেবে ১৮ থেকে ২১ মার্চ সুইডেনের ক্রাউন প্রিন্সেস ভিক্টোরিয়া বাংলাদেশে অবস্থান করবেন। এর মধ্যে ১৯ মার্চ তিনি বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণে সুন্দরবন সংলগ্ন উপকূলীয় অঞ্চল খুলনার কয়রা উপজেলা পরিদর্শন করবেন।
উপকূলীয় অঞ্চলে জলবায়ু পরিস্থিতি মোকাবিলায় স্থানীয়দের জীবনমান নিজ চোখে দেখা, লিঙ্গ সমতা, মহারাজপুর ও মহেশ্বরীপুর ইউনিয়ন পরিষদ ডিজিটালাইজেশনে রূপান্তর দেখা, মদিনাবাদ স্মার্ট পোস্ট সেন্টারের উদ্বোধন এবং ব্যবসায়িক খাতের ভূমিকার ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে এসডিজি বাস্তবায়নে অগ্রগতি এবং চলমান কয়রার দুর্যোগ কবলিত চ্যালেঞ্জগুলো পরিদর্শন করবেন প্রিন্সেস ভিক্টোরিয়া।
মহারাজপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. আব্দুল্লাহ আল মাহদুদ বলেন, সুইডেনের প্রিন্সেস ক্রাউন ভিক্টোরিয়া আমাদের পরিষদে আসবেন, এটা আমাদের জন্য অত্যন্ত গর্বের বিষয়। এ জন্য ইউনিয়ন পরিষদ চত্বর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করার পাশাপাশি সাজানো হচ্ছে।
কয়রা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মিজানুর রহমান বলেন, রাষ্ট্রীয় অতিথির কয়রায় আগমন উপলক্ষে ইতোমধ্যে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। পুলিশের পাশাপাশি, র্যাব, বিজিবি, সেনাবাহিনী, নৌ বাহিনী, বিমান বাহিনী, কোস্টগার্ড, গোয়েন্দা নজরদারিসহ সব নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
কয়রা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বিএম তারিক-উজ-জামান বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনায় রাষ্টীয় অতিথিকে বরণের জন্য সব প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।
পিরোজপুর সদরে দুটি মোটরসাইকেলের সংঘর্ষে মাদ্রাসার এক শিক্ষকসহ দুজন নিহত ও দুজন আহত হয়েছেন।
সদর উপজেলার শংকরপাশা ইউনিয়নের মল্লিকবাড়ির স্ট্যান্ডের সড়কে সোমবার সকাল সাড়ে আটটার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহত দুজন হলেন ঝালকাঠীর কাঠালিয়া উপজেলার নুর মোহাম্মাদের ছেলে মাসুম বিল্লাহ ও পিরোজপুরের ইন্দুরকানী উপজেলার উমেদপুর এলাকার মালেক শেখের ছেলে মো. হাসিব শেখ।
আহত আরোহীরা হলেন নুরু ও আরিফ, যাদের উন্নত চিকিৎসার জন্য খুলনা মেডিক্যাল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে জানা যায়, পিরোজপুর সদর উপজেলার শংকরপাশা ইউনিয়নের মল্লিকবাড়ির স্ট্যান্ডের সড়কে পিরোজপুর থেকে একটি বাইক পাড়েরহাটের দিকে যাচ্ছিল। ওই সময় ইন্দুরকানী থেকে পিরোজপুরে যাচ্ছিল আরেকটি বাইক। মল্লিকবাড়ি এলাকায় পথচারীকে সাইড দিতে গিয়ে এক বাইকের সঙ্গে অন্যটির সংঘর্ষ হয়।
পরে স্থানীয়রা দুই বাইকের চার আরোহীকে উদ্ধার করে পিরোজপুর জেলা হাসপাতালে নিয়ে যায়। হাসপাতালের চিকিৎসক দুজনকে মৃত বলে জানান।
পিরোজপুর জেলা হাসপাতালের চিকিৎসক স্বাগত হালদার বলেন, ‘দুজনকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়েছে। এ ছাড়া দুজনের অবস্থা গুরুতর অবস্থায় রয়েছে। আহত দুজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য খুমেক হাসপাতালে পাঠানো হয়।’
পিরোজপুর সদর থানার ওসি মো. আসিকুজ্জামান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়েছে। এ বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।’
মন্তব্য