একদিন পরই রোববার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনসভা চট্টগ্রামে। আর জনসভাকে ঘিরে বন্দরনগরী সেজেছে নতুন সাজে। বেশ কয়েক দিন আগে থেকে মাইকিং চলছে শহরের মোড়ে মোড়ে। ব্যানার-ফেস্টুন ও আলোকসজ্জায় ছেয়ে গেছে পুরো শহর। সড়ক বিভাজক থেকে শুরু করে সড়কের পাশের পুরোনো দেয়াল– সব কিছু ঘষামাজা করে পরিষ্কার করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানিয়ে নানা জায়গায় আঁকা হয়েছে গ্রাফিতি। এমনকি সভাস্থলের আশপাশের সড়কে পড়েছে নতুন ঢালাই। প্রস্তুত হয়েছে জনসভার মঞ্চও।
প্রধানমন্ত্রীর চট্টগ্রাম আগমনকে ঘিরে উৎসবের আমেজে আছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ-সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। সভার দিন, অর্থাৎ রোববার লাল-সবুজ টুপি-টিশার্ট পরে জেলার বিভিন্ন ইউনিট থেকে মিছিলে-মিছিলে সভায় যোগ দেবেন নেতা-কর্মীরা। প্রধানমন্ত্রীর জনসমাবেশ চট্টগ্রামে স্মরণকালের সবচেয়ে বড় সমাবেশ হবে বলে আশা নেতা-কর্মীদের।
নগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি খুরশেদুল আলম সুজন বলেন, ‘আমি সবার মতো এত লক্ষ লোক হবে, এত কোটি লোক হবে– এসব বলার পক্ষে না। চট্টগ্রামে প্রায় দেড় কোটির ওপর লোক আছে, সেখান থেকে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক লোক ইনশাআল্লাহ জনসভায় থাকবেন। আমরা আশা করছি, এটা চট্টগ্রামে স্মরণকালের সবচেয়ে বড় সমাবেশ হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ১০ বছর পর আসছেন। উনি খালিহাতে আসছেন না। চট্টগ্রামে একটা শক্তপোক্ত অবকাঠামো উনি প্রতিষ্ঠা করেছেন, সেটার মাধ্যমে আগামী দিনের চট্টগ্রাম দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় একটা শ্রেষ্ঠ কানেক্টিভিটি সেন্টারে পরিণত হতে যাচ্ছে। এটা সিঙ্গাপুরের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ।
‘এই যে বদলে যাওয়া চট্টগ্রাম, এগিয়ে যাওয়া চট্টগ্রাম, এটা হয়েছে শুধু মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায়। তাই চট্টগ্রামের মানুষ অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। ওনাকে বরণ করবেন, ওনার বক্তব্য শুনবেন। উনি চট্টগ্রামের জন্য আরও কী কী গুরুত্বপূর্ণ ব্যবস্থা গ্রহণ করেন, কী কী ঘোষণা দেন- এটা শোনার জন্য মানুষ অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। আগামীকাল সমাবেশে দলে দলে যোগদান করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে সম্মান জানাবে, তার বক্তব্য শুনবে।’
মহানগর আওয়ামী লীগের মতো প্রধানমন্ত্রীর জনসভাকে ঘিরে বিশেষ প্রস্তুতি আছে উত্তর ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগেরও। চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান বলেন, ‘আমাদের প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন, নেতা-কর্মীরা উজ্জীবিত। চট্টগ্রামের আনাচকানাচে ব্যানার-পোস্টারে ছেয়ে গেছে। মানুষের মধ্যে একটা উৎসাহ-উদ্দীপনা কাজ করছে। আমরা বিশ্বাস করি, এটা হবে স্মরণকালের সব রেকর্ড ভাঙা সমাবেশ।’
শুধু দক্ষিণ জেলা ইউনিট থেকে সমাবেশে আওয়ামী লীগের দেড় লাখ নেতা-কর্মী যোগ দেবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রত্যেক থানা থেকে আমাদের ১৫ থেকে ২০ হাজার লোক সমাবেশে যাবে। আমাদের ৮ থানা থেকে দেড় লাখের মতো লোক আসবে সমাবেশে।’
উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান আতা বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর চট্টগ্রাম আগমন উপলক্ষে আমাদের উত্তর জেলার সব ইউনিটের নেতা-কর্মীদের মধ্যে একটা উৎসবের আমেজ আসছে। তৃণমূল পর্যায়ে সভা-সমাবেশ ও নানাভাবে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছে সবাই। আমার উত্তর জেলা ইউনিট থেকে ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ নেতা-কর্মী সমাবেশে যাবে। সবাই প্রধানমন্ত্রীকে চট্টগ্রামে স্বাগত জানানোর জন্য মুখিয়ে আছে।’
আওয়ামী লীগ ছাড়াও ছাত্রলীগ, যুবলীগ, কৃষক লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ সব অঙ্গসংগঠনের নেতারা প্রধানমন্ত্রীর সমাবেশ উপলক্ষে নানাভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছেন। চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের কার্যনির্বাহী সদস্য মোসরাফুল হক চৌধুরী পাভেল বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ১০ বছর পর একটা জনসভায় আসছেন, আমাদের সবার আশা-আকাঙ্ক্ষা অনেক। ওনার আগমন উপলক্ষে আজ (শুক্রবার) আমরা সাইকেল শোভাযাত্রা করেছি। সিআরবি থেকে কয়েকটা থানা প্রদক্ষিণ করেছে এটি। নেত্রীর আগমন উপলক্ষে চট্টগ্রামের প্রতিটি থানা, ওয়ার্ডের নেতারা সবাই মিলে আমরা সিআরবি থেকে মিছিল সহকারে পলোগ্রাউন্ড মাঠে যোগ দিব। আমাদের চট্টগ্রামে যে মেগা প্রকল্পগুলো, যেগুলো নেত্রী আমাদের চট্টগ্রামকে উপহার দিয়েছেন, আমরা সেগুলো বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড ও ব্যানারের মাধ্যমে নেত্রীর সামনে উপস্থাপন করে নেত্রীকে ধন্যবাদ জানাব এবং নেত্রী আমাদের আবার কী দিয়ে যান, সেটার আশায় আমরা বসে আছি।’
জনসভার দিন সকালেই সভাস্থলে নেতা-কর্মীদের নিয়ে হাজির হবেন বলে জানান চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া দস্তগীর। তিনি বলেন, ‘মহানগরে আমাদের ৫০ হাজার নেতা-কর্মী আছে। আমরা সকালেই সবাইকে নিয়ে মিছিলসহ গিয়ে সভাস্থলের অগ্রভাগে উপস্থিত থাকব। চট্টগ্রামের প্রতি ওনার একটা আলাদা আন্তরিকতা আছে, উনি যতবারই এসেছেন চট্টগ্রামকে কিছু না কিছু উপহার দিয়ে গেছেন। এবারও ওনার আগমন উপলক্ষে সবার মধ্যে একটা উদ্দীপনা কাজ করছে। আমরা ওনাকে স্বাগত জানানোর অপেক্ষায় আছি।’
প্রস্তুত মঞ্চ
চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের এই জনসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা। জনসভা ঘিরে তৈরি করা হয়েছে চট্টগ্রামে এযাবৎকালের সবচেয়ে বড় মঞ্চ। পলোগ্রাউন্ড মাঠের পশ্চিম পাশে পূর্বমুখ করে ভূমি থেকে ছয় ফুট ওপরে তৈরি করা হয়েছে এই মঞ্চ। নৌকার আদলে তৈরি এই মঞ্চ লম্বায় ১৬০ ফুট। তবে এর মধ্যে মূল মঞ্চের দৈর্ঘ্য ৯০ ফুট ও প্রস্থ ৪০ ফুট। ৩ হাজার ৫০০ বর্গফুটের এই মঞ্চ চট্টগ্রামে এযাবৎকালের সবচেয়ে বড় মঞ্চ বলে দাবি এটি তৈরির দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান সাহাবুদ্দিন ডেকোরেশনের মালিক মো. শাহাবুদ্দিনের।
তিনি বলেন, ‘এটা দেশের সবচেয়ে বড় নৌকা। নৌকার আদলে এত বড় মঞ্চ আর তৈরি হয়নি। মঞ্চে অন্তত ২০০ লোক বসতে পারবে। এর দুই পাশে ৮০০ বর্গফুটের আরও দুটি মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে। এই দুটির একটিতে যেসব প্রকল্প উদ্বোধনের কথা, সেসবের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী। অন্যটিতে ভিআইপি অতিথিরা বসবেন। চট্টগ্রামের বড় বড় প্রোগ্রামগুলোর মঞ্চ আমরা তৈরি করি। এর আগে চট্টগ্রামের কোনো প্রোগ্রামে এত বড় মঞ্চ তৈরি করা হয়নি।’
তিনি জানান, মঞ্চের সামনে তিন স্তরের বাঁশের ব্যারিকেড থাকবে। যেন সেসব ভেদ করে কেউ সামনে যেতে না পারে। তা ছাড়া প্রবেশপথের চারদিকেও ব্যারিকেড দেয়া হচ্ছে।
৩০টি প্রকল্পের উদ্বোধন
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রামের জনসভায় এসে ৩০টি প্রকল্পের উদ্বোধন ও চারটি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন।
উদ্বোধনের অপেক্ষায় থাকা প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীন তিনটি প্রকল্প, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের অধীন ছয়টি, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের অধীনে ১৪টি, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের অধীনে দুটি, শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি, কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি ও চট্টগ্রাম বন্দরের একটি প্রকল্প।
এ ছাড়া নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের অধীনে চট্টগ্রামের মিরসরাই ও সন্দ্বীপ অংশে জেটিসহ আনুষঙ্গিক স্থাপনা নির্মাণ, আনোয়ারায় বাংলাদেশ মেরিন একাডেমির আধুনিকীকরণ, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীনে পাঁচলাইশ আবাসিক এলাকায় আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্পন্ন জাতিসংঘ সবুজ উদ্যান স্থাপন এবং বিদ্যুৎ বিভাগের অধীনে চট্টগ্রামে বিপিসি ভবন নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
নিরাপত্তায় সাড়ে ৭ হাজার পুলিশ
প্রধানমন্ত্রীর চট্টগ্রামের জনসভায় সাড়ে ৭ হাজার পুলিশ নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবে বলে জানিয়েছেন মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার কৃষ্ণপদ রায়। সম্প্রতি সভাস্থল পরিদর্শনে গিয়ে তিনি বলেন, ‘সর্বোচ্চ ফোর্স কখন মোতায়েন হবে, এটা আমরা পাবলিকলি ওপেন করি না। এ বিষয়ে আমাদের কাছে নির্দেশনা যেভাবে এসেছে এবং আমাদের যে পরিকল্পনা আছে, সেভাবেই কাজ করব। পুলিশ এখন থেকেই নিরাপত্তার কাজ করছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তাব্যবস্থা সমন্বয় করে স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স। তাদের তত্ত্বাবধানে এবং পরামর্শক্রমে পুলিশ বিভিন্ন জায়গায় মোতায়েন থাকবে।
‘এসএসএফ, পিজিএফ, সাদা পোশাকের পুলিশ, ইউনিফর্মের পুলিশ, গোয়েন্দা সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবেন। নিরাপত্তায় আর্চওয়ে, ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা, ড্রোনসহ প্রযুক্তিগত সব কিছু যুক্ত থাকবে। প্রযুক্তি ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে আমরা নিরাপত্তা পরিকল্পনা নিচ্ছি। শুধু পলোগ্রাউন্ডেই পুলিশ থাকবে না, পুরো শহর একটি নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলা হবে।’
জনসভার দিন, অর্থাৎ ৪ ডিসেম্বর সকাল ও বিকেল দুই শিফটে চলমান এইচএসসি পরীক্ষা রয়েছে। এই বিষয়ে পুলিশ কমিশনার বলেন, ‘যারা গাড়ি ও মিছিল নিয়ে জনসভায় আসবেন, তারা কোথায় গাড়ি থেকে নামবেন, মিছিল কোথায় থামবে– সেটি আমরা জানিয়ে দেব। একটি বিষয় হচ্ছে, জনসভার দিন সকাল এবং বিকেলের শিফটে পরীক্ষা আছে। দুই শিফটে ১ হাজার ৪০০ এর মতো করে পরীক্ষার্থী আছে। জনসভাস্থলের পাশেও একটি পরীক্ষাকেন্দ্র আছে।
'শব্দযন্ত্র এমনভাবে স্থাপন করা হবে, যাতে সেখানে কোনো সমস্যা না হয়। পরীক্ষার্থীরা যেন একটু আগেভাগে বাসা থেকে বের হন। এরপরও কেউ আটকে গেলে কিংবা সমস্যায় পড়লে ট্রিপল নাইনে ফোন করে আমাদের জানালে পুলিশ পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করবে। নগরবাসীর প্রতি অনুরোধ, হাতে অন্তত এক ঘণ্টা সময় নিয়ে যেন সবাই বাসা থেকে বের হন।’
আরও পড়ুন:ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের (টিআই) দুর্নীতি সূচকে বাংলাদেশকে এক ধাপ নামানোটা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে মন্তব্য করেছেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। আওয়ামী লীগের এই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক একইসঙ্গে বলেছেন, নির্বাচনের বছর বলে বিশ্ব বেনিয়াদের প্রেসক্রিপশনে এটা করা হয়েছে।
বুধবার দুপুরে রাজধানীর পান্থপথে বসুন্ধরা সিটি শপিং মলে বসুন্ধরা বিপণন কেন্দ্রে স্টার সিনেপ্লেক্সে ‘বীরকন্যা প্রীতিলতা’ চলচ্চিত্রের প্রিমিয়ার শো উদ্বোধন করেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। এর আগে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন তথ্যমন্ত্রী।
মঙ্গলবার প্রকাশিত টিআই’র বিশ্ব দুর্নীতি সূচক-২০২২ প্রতিবেদনে বাংলাদেশের এক ধাপ পিছিয়ে পড়া নিয়ে প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘অনেকেই বলছেন, এটা নির্বাচনের বছর হওয়ায় বিশ্ব বেনিয়াদের প্রেসক্রিপশনে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল এক পয়েন্ট কমিয়ে দিয়েছে। নির্বাচনের আগে তো আর কোনো প্রতিবেদন হবে না। আগামী বছর আবার জানুয়ারি বা ফেব্রুয়ারিতে যখন প্রতিবেদন হবে তখন নির্বাচন হয়ে যাবে।’
ইদানীং ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের কার্যক্রম অনেক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে উল্লেখ করে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘পদ্মা সেতু নিয়ে যখন মিথ্যা অভিযোগ উপস্থাপন করা হলো, তখন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল আগ বাড়িয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছে দুর্নীতি হয়েছে বলে। পরে দেখা গেল, দুর্নীতি তো হয়ইনি বরং কানাডার আদালতে বিশ্বব্যাংক হেরে গেছে।
‘বিশ্বব্যাংক আবার এসে প্রস্তাব করেছে যে তারা অর্থায়ন করতে চায়। আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তা নেননি। কিন্তু ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল তাদের বক্তব্যের জন্য ক্ষমা চায়নি।
‘এভাবে করোনার টিকা এবং আরও নানা বিষয়ের ওপর ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের নানা বক্তব্য ছিল, যেগুলো অনেকটাই মনে হয়েছে কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।’
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের মতো সিভিল সোসাইটি অর্গানাইজেশন থাকা এবং তাদের কার্যক্রমকে আমরা স্বাগত জানাই। কিন্তু তাদের কার্যক্রম যদি বিশ্ব বেনিয়াদের প্রেসক্রিপশনে হয় বা তাদের কারও কারও সহায়ক হিসেবে হয় কিংবা কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয় সেটা অত্যন্ত দুঃখজনক।
‘বিএনপির সময় পরপর পাঁচবার দুর্নীতিতে দেশ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। চারবার এককভাবে, একবার যুগ্মভাবে আফ্রিকার একটি দেশের সঙ্গে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুর্নীতি দমন করার জন্য জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করছেন। বাংলাদেশে দুর্নীতি কমেছে।’
বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি নিয়ে বিএনপির সমালোচনা প্রসঙ্গে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘মির্জা ফখরুল সাহেব তো শিক্ষক ছিলেন, ঢাকা কলেজে পড়াতেন। তাকে বলব, আগে পড়াতেন এখন সম্ভব হলে পড়তে হবে। কারণ ইউরোপের সব দেশে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে। আমেরিকাসহ সব উন্নত দেশে বিদ্যুতের মূল্য বেড়েছে। কারণ জ্বালানি তেল ও গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। এরপরও বাংলাদেশ সরকার হাজার হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিয়ে মানুষকে সাশ্রয়ী মূল্যে বিদ্যুৎ সরবরাহের চেষ্টা করে যাচ্ছে। ভর্তুকিরও তো একটা মাত্রা আছে। আমাদের অর্থনীতি তো টিকিয়ে রাখতে হবে। সে জন্য মূল্য সমন্বয় করা হয়েছে।’
আরও পড়ুন:বিএনপির আন্দোলন জোয়ার থেকে ভাটার দিকে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেছেন, ভুয়া জোট গঠন করা বিএনপির সবই ভুয়া। তাদের জনগণ বিশ্বাস করে না। তাই বিএনপির আন্দোলনের দৈর্ঘ্য কমে প্রস্থ বেড়ে যাচ্ছে।
বুধবার রাজধানীর যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তায় শহীদ শেখ রাসেল পার্কের সামনে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ আয়োজিত শান্তি সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বিএনপির ষড়যন্ত্রমূলক সমাবেশ প্রতিরোধ করা নয়, সতর্ক থাকবে আওয়ামী লীগ। দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ শান্তি সমাবেশ করে যাবে।’
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বক্তব্যের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘বিএনপির ছেড়ে দেয়া ৬টি আসনের উপনির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়েছে। গণতন্ত্রের বিজয় হয়েছে।
‘বিএনপির রাজনীতি ঘোমটা পরা রাজনীতি। ষড়যন্ত্রের রাজনীতি। বিএনপির আন্দোলনে সরকার ভয় পায়নি, উল্টো বিএনপিই ভয় পেয়েছে।
‘খেলা এখনও শুরু করিনি আমরা। তাতেই বিএনপি পথহারা পথিকের মতো দিশেহারা।’
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফীর সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ ও সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম।
দেশে অনির্বাচিত সরকার আসার পক্ষ নিয়ে বক্তব্য দেয়া তথাকথিত বুদ্ধিজীবীদের তীব্র সমালোচনা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বলেছেন, অনির্বাচিত সরকার আসলে মহাভারত অশুদ্ধ না হলেও সংবিধান অশুদ্ধ হয়।
বুধবার বিকেলে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে অমর একুশে বইমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমাদের দেশে খুব জ্ঞানী-বিজ্ঞানী আছেন। তাদের মুখে শুনলাম, দু-চার বছরের জন্য যদি অনির্বাচিত সরকার আসে, তাহলে তো মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যাবে না। কারা এগুলো বলেন, সেটা আপনারা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন।
‘অনির্বাচিত সরকার তো আপনারা দেখেছেন। এখানের ছাল ওখানে নিয়ে নানাভাবে দল করার চেষ্টা করেন, রাজনৈতিক নেতাদের খারাপভাবে উপস্থাপন করে অপকর্মের চেষ্টাও করেছেন।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মহাভারত অশুদ্ধ হবে না, অশুদ্ধ হবে আমাদের সংবিধান। লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে আমাদের স্বাধীনতা এবং তৎপরবর্তী বঙ্গবন্ধুর দেওয়া সংবিধান, অনির্বাচিত সরকার এলে সেটি অশুদ্ধ হবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমার মনে হয় যেন কিছু লোক আছে তাদের দেশের স্থিতিশীলতা ভালো লাগে না। তাই একটা স্থিতিশীল পরিবেশকে নষ্ট করার অনেক রকম চক্রান্ত হবে, এটাই স্বাভাবিক। যাই হোক, আমি জনগণের ওপর বিশ্বাস করি, জনগণের জন্য কাজ করি আর দেশের সেবা করা এটাই আমাদের লক্ষ্য।’
তিনি বলেন, ‘আমার কথাটা হচ্ছে, কারো যদি ক্ষমতায় যাওয়ার ইচ্ছে থাকে জনগণের কাতারে দাঁড়াবে, নির্বাচন করবে, ভোট করবে, জনগণ যাকে চাইবে তারা ক্ষমতায় আসবে।’
নির্বাচনী ব্যবস্থা শক্তিশালী করতে আওয়ামী লীগের অবদানের কথা তুলে ধরে দলটির সভাপতি বলেন, ‘নির্বাচনকে সুষ্ঠু করার জন্য আজকের ছবিসহ ভোটার তালিকা, স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স, আইডি কার্ড, এগুলো তো আমাদেরই প্রস্তাব এবং সেভাবে করা হয়েছে; যেন মানুষ স্বাধীনভাবে তার ভোট দিতে পারে, শান্তিপূর্ণভাবে তার অধিকারটা যেন প্রয়োগ করতে পারে।
‘আমরা সেটাই চাই, সেই ব্যবস্থাটা আমরা কিন্তু করেছি। গণতান্ত্রিক ধারা যাতে অব্যাহত থাকে, তার পদক্ষেপ আমরা নিয়েছি। আজকে গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত আছে বলেই আমরা দেশটাকে উন্নত করতে পেরেছি। পঞ্চদশ সংশোধনী করেছিলাম বলেই কিন্তু আজকে বাংলাদেশে স্থিতিশীলতা আছে, গণতান্ত্রিক ধারা আছে। আমাদের অনেক দুর্যোগ মোকাবিলা করতে হয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অগ্নি-সন্ত্রাস সাগরে পুড়িয়ে পুড়িয়ে মানুষ হত্যা এগুলো তো কোনো আন্দোলন হলো না। এগুলো মোকাবিলা করেও কখনো হেফাজতি আন্দোলন, কখনো হলি আর্টিজানের ধাক্কা, সরকার গঠন করার সাথে সাথে বিডিআরের ঘটনা, একটার পর একটা ঘটনা এসেছে; এর সাথে আবার প্রাকৃতিক দুর্যোগ। সবগুলো মোকাবিলা করেও আমাদের অর্থনীতির গতি আমরা সচল রাখতে সক্ষম হয়েছি। আর দেশে একটা স্থিতিশীলতা আছে।’
নির্বাচনে বিএনপির ভরাডুবি প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ‘তারা সিট পাবে কোথা থেকে? হ্যাঁ, আমরা কাজের মধ্য দিয়ে মানুষের সমর্থন আদায় করেছি, এটাতো আর আমাদের অপরাধ না। আমাদের তো প্রচেষ্টাই থাকবে জনগণের জন্য কাজ করা।’
বাস্তব সত্য জেনে মতামত দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনারা অনেক সময় অনেক কিছু শোনেন। আর ডিজিটাল বাংলাদেশ আমরা করেছি যেমন আমাদের সুফল বয়ে এনেছে আবার এর কিছু কুফলও আছে, সন্দেহ নেই। তো যাই দেখেন যাই শুনেন অন্ততপক্ষে বাস্তব চিত্রটা জেনে নিয়ে তারপর একটা মতামত দেবেন।’
আধুনিক প্রযুক্তির যুগেও বই উল্টে পড়ার মজাই আলাদা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এখন ডিজিটাল যুগ। ভাষা-সাহিত্য চর্চাও আমরা ডিজিটালাইজড করতে পারি। বইগুলো ডিজিটাল ভার্সনে করতে হবে। অডিও ভার্সনও করা যেতে পারে। প্রত্যেকটা সাহিত্যকর্ম অডিও ভার্সন করতে পারলে চলতে-ফিরতেও শোনা যাবে, পড়া যাবে। সেভাবে আধুনিক প্রযুক্তি নিয়ে আমাদের চলা উচিত। যদিও বই উল্টে পড়ার মজাই আলাদা।’
সরকারপ্রধান অনুবাদের ওপর গুরুত্ব বাড়াতে সংশ্লিষ্টদের আহবান জানান। তিনি বলেন, ‘২১ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। বাংলাকে সারাবিশ্বে আরও বিস্তৃত করতে হলে আমাদের সাতিত্যের বেশি বেশি অনুবাদ করতে হবে। তাই প্রতিবছর বের হওয়া উল্লেখযোগ্য বইগুলোর অনুবাদ করতে হবে।’
এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট এবং বাংলা একাডেমি উদ্যোগ নিতে পারে বলে মতামত তুলে ধরেন তিনি। পাশাপাশি শিশু সাহিত্যর প্রসারে কাজ করতে এবং জেলায় জেলায় বইমেলা-সাহিত্য মেলা চালিয়ে যাওওয়ার আহবান জানান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সাবেক এই ছাত্রী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, পাকিস্তানি শাসকরা আমাদের ওপর উর্দুকে চাপিয়ে দিতে চেয়েছিল, এর প্রতিবাদে ১৯৪৮ সালে ২ মার্চ সলিমউল্লাহ মুসলিম হলে সংগ্রাম শুরু হয়েছিল। একটা বিজাতীয় ভাষা, আবার সেটাকে যখন প্রতিবাদ করা হলো তখন বাংলা ভাষাকে আরবি বা উর্দু হরফে লেখার বাধ্যবাধকতা দেওয়া হলো। সেই অধ্যায় আমাদের দেখতে হয়েছে। আবার পরবর্তীকালে বলা হলো ল্যাটিন হরফে লিখতে হবে। বাঙালি কোনোটাই মানেনি। আমরা সেটা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি, সেটা নিয়ে এগিয়ে যাব।
বাংলা একাডেমির সভাপতি কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেনের সভাপতিত্বে বইমেলার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন সংস্কৃতিবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ, সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব আবুল মনসুর, পুস্তক প্রকাশক সমিতির সভাপতি আরিফুর রহমান ছোটন, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক মুহাম্মদ নূরুল হুদা।
আরও পড়ুন:চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কেউ অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি বা ব্যবহার করলে অপরাধ তাকে শাস্তি পেতে হবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক।বুধবার দুপুরে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের শিশু রোগ ইউনিট, ডায়ালাইসিস সেন্টারসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি এ কথা জানান।
মন্ত্রী বলেন, ‘নতুন ওষুধ আইনে অ্যান্টিবায়োটিকের যত্রতত্র ব্যবহার নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি বলা আছে। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কেউ অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি বা ব্যবহার করলে অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে৷ এতে শাস্তির বিষয়টিও আইনে রয়েছে৷ ’
ওষুধ আইন নিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘ওষুধ আইন নিয়ে সরকার গুরুত্ব সহকারে কাজ করছে। ইতোমধ্যে তা মন্ত্রিসভায় পাস হয়ে গেছে। আশা করছি এই সংসদ অধিবেশনে না হলেও আগামী অধিবেশনে আইনটি পাস হবে।’
বক্তব্যে মন্ত্রী সিলেটের স্বাস্থ্যসেবা উন্নয়নে সরকারের নানা পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন। পরে তিনি হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ড ঘুরে দেখেন এবং রোগী ও তাদের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলেন।
এ সময় আরও মধ্যে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. মাহবুবুর রহমান ভূঁইয়া প্রমুখ।
‘আপনাদের আন্দোলনের কী খবর? সবাই বলে ভুয়া। সরকার পতন, ১০ তারিখের লাল কার্ড, ৫৪ দল, বিএনপির ২৭ দফা, ১০ দফা, ১৪ দফা, অবশেষে পদযাত্রা। সবই ভুয়া। কেউ মারা গেলে যেমন নীরব পদযাত্রা হয়, আপনাদের পদযাত্রা অনেকটা সেরকম। এ দিয়ে সরকার পতনের স্বপ্ন ভুয়া।’
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বিএনপি নেতাদের উদ্দেশ করে এসব কথা বলেছেন।
দেশব্যাপী রাজধানীর তেজগাঁওয়ে তিব্বত কলোনি বাজার সংলগ্ন রাস্তায় মঙ্গলবার বিকেলে আয়োজিত শান্তি সমাবেশে বক্তব্য দেন ওবায়দুল কাদের। ‘বিএনপি-জামায়াতের নৈরাজ্য ও অগ্নি সন্ত্রাসের’ প্রতিবাদে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ এই শান্তি সমাবেশের আয়োজন করে।
বুধবার দেশের ৬টি আসনে উপনির্বাচন সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত হবে বলে উল্লেখ করেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক। তিনি বলেন, ‘মাগুরা মার্কা ফ্রি-স্টাইলে নির্বাচন আর হবে না। নির্বাচন নির্বাচনের মতোই হবে। আওয়ামী লীগের লোকদের সমর্থন দেয়ার সুযোগ আছে। আমরা সমর্থন দিয়েছি তার মানে এই নয় যে, নির্বাচন অন্যরকম হবে। মির্জা ফখরুল, বুধবারের নির্বাচন দেখুন।’
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘মানুষের শক্তি যখন কমে আসে তার মুখের বিষ তখন উগরে ওঠে। বিএনপির নেতাদের শক্তি কমে আসছে, দম ফুরিয়ে আসছে। দম ফুরিয়ে গেছে বলে লাফালাফি বন্ধ করে এখন নীরব পদযাত্রা।’
ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমানের সভাপতিত্বে সমাবেশে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল, মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এমএম মান্নান কচি প্রমুখ বক্তব্য দেন।
আরও পড়ুন:রাষ্ট্রপতি হতে চান জগদীশ বড়ুয়া পার্থ। দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) বারান্দায় ঘুরছেন কক্সবাজারের এই বাসিন্দা।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনের পাশে মঙ্গলবার দেখা গেছে তাকে। কয়েকদিন ধরে ঘুরলেও মনোনয়নপত্র কিনতে পারেননি তিনি। জগদীশ জানিয়েছেন, মনোনয়নপত্র পেতে প্রয়োজনে আইনি লড়াইয়ে যাবেন তিনি।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল ২৫ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন। তফসিল অনুযায়ী, এই নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিল করতে হবে ১২ ফেব্রুয়ারির মধ্যে। যাচাই-বাছাই হবে ১৩ ফেব্রুয়ারি। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন ১৪ ফেব্রুয়ারি। আর ভোটগ্রহণ হবে ১৯ ফেব্রুয়ারি।
জগদীশ বড়ুয়া পার্থ এই নির্বাচনে প্রার্থী হতে ২৫ জানুয়ারির পর থেকেই মনোনয়নপত্র কেনার জন্য ইসিতে ঘুরছেন। মঙ্গলবার পর্যন্ত তার আবেদনপত্র গৃহীত হয়নি।
সংবিধান অনুযায়ী, রাষ্ট্রপতি প্রার্থী হতে হলে বয়স ৩৫ বছরের বেশি হতে হবে। তার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার যোগ্যতা থাকতে হবে। এছাড়া থাকতে হবে একজন করে প্রস্তাবক ও সমর্থক।
আবেদনপত্র হাতে কাঁধে ব্যাগ নিয়ে জগদীশ বড়ুয়া বলেন, ‘আমাদের ২১তম রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। সে সুবাদে তফসিল ঘোষণা করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। কিন্তু দুর্ভাগ্য, এখানে ২৫ তারিখের পর বার বার আসছি। কিন্তু আমাকে মনোনয়ন ফরম দিচ্ছে না। তারা আমার আবেদন গ্রহণ করছে না। রাষ্ট্রপতি পদে আমি একজন প্রার্থী৷’
নিজেকে বাংলাদেশ মঙ্গল পার্টির চেয়ারম্যান পরিচয় দিয়ে জগদীশ দাবি করেন, তিনি এর আগে জেলা পরিষদ নির্বাচন করেছেন। ঢাকা-৮ আসনে সংসদ সদস্য পদেও নির্বাচন করেছেন।
নির্বাচন কমিশন থেকে অনলাইনে আবেদনের জন্য বলা হয়েছে উল্লেখ করে জগদীশ বলেন, ‘অনলাইনে গিয়ে দেখছি ভুয়া। তফসিলে যে টিঅ্যান্ডটি নম্বর দিয়েছে, সেই নম্বরে অনেক ফোন দিয়েছি। পাওয়া যায় না। আজকে আসছি আবেদন নিয়ে।’
এই মনোনয়নপ্রত্যাশী বলেন, ‘(নির্বাচন কমিশনের) জনসংযোগ শাখার (সহকারী পরিচালক) আশাদুল হককে কল দিলে তিনি বলেন বাইরে থাকেন। সবসময় মিটিংয়ে থাকেন। একবার বাইরের অভ্যর্থনা কক্ষে পাঠায়, একবার ভেতরের অভ্যর্থনা কক্ষে পাঠায়। এদিকে ফোনও রিসিভ করছে না তারা। রিসিভ করলে সমস্যা কোথায়? আমি কি নির্বাচিত হয়ে যাচ্ছি?’
প্রতিবেশী দেশ ভারতে দলিত সম্প্রদায় থেকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হওয়ার প্রসঙ্গ টেনে জগদীশ বলেন, ‘আমি বড়ুয়া সম্প্রদায়ের। এই বাঙালি জাতিকে রক্ষা করার জন্য মঙ্গল ধর্মের প্রবর্তক হিসেবে আমার অধিকার আছে ভালো কথা বলার। আমি নিজের জমি বিক্রি করে রাজনীতি করি। কারও ধার ধারি না।’
কতিপয় এমপির সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘দেশ স্বাধীনের পর থেকে তারা আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়ে গেছেন। সে রকম ভোট একটাও লাগবে না। আমাকে যে ভোট দেবে এরকম ভোট আমি দেখছি না।
‘এরা যদি রিসিভ না করে, তাহলে আমি হাইকোর্টে যাব। আমার আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলেছি, আমি মামলার পর্যায়ে যাব। যেমন হিরো আলম একতারা প্রতীক নিয়ে (বগুড়া-২ আসন) উপনির্বাচনে গেছে। ঠিক তেমনিভাবে আমি যাব।’
নিজেকে নির্বাচনপ্রিয় মানুষ উল্লেখ করে জগদীশ বলেন, ‘আমি ২০১১ সাল থেকে নির্বাচন করি। আইনি জটিলতা যেটা আছে, এজন্য অবশ্যই আমি লড়াই করব।’
নির্বাচনে নিজের তৈরি করা ইশতেহার তুলে ধরে জগদীশ বলেন, ‘বাংলাদেশে ১০ কোটি টাকার ওপরে যারা মালিক আছেন, তাদের টাকা বাজেয়াপ্ত করার কথা থাকবে আমার ইশতেহারে। বাংলাদেশে যত খাস জমি আছে, সেগুলো মাথাপিছু ৫ শতাংশ করে দান করব।’
ইসির জনসংযোগ শাখার সহকারী পরিচালক আশাদুল হক এ বিষয়ে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘উনি আমার কাছে এলে তো হবে না। এ জন্য নির্বাচনী কর্মকর্তা সিইসির দপ্তরে যেতে হবে। আমার কাছে চাইলে তো হবে না। আমার সঙ্গে ওনার দেখা হয়নি। আমি নির্বাচনী শাখায় যোগাযোগ করতে বলেছি।’
নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, ‘বিষয়টি আমার নলেজে নেই। কাল অফিসে গেলে খোঁজ নেব- কে বা কারা বাধার সৃষ্টি করেছে। তবে আইনগতভাবে কোনো বাধা নেই। আইন অনুযায়ী হলে যে কেউ মনোনয়ন ফরম কিনতে পারবেন।’
আরও পড়ুন:দম ফুরিয়ে যাওয়ায় বিএনপি হাঁটা শুরু করেছে বলে মন্তব্য করেছেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।
চট্টগ্রামে আরবান ট্রান্সপোর্টেশন মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন এবং মেট্রোরেলের প্রাক-সম্ভাব্যতা যাচাই কার্যক্রম শুরুর অনুষ্ঠানে মঙ্গলবার সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এমন মন্তব্য করেন।
হাছান মাহমুদ বলেন, ‘ বিএনপিতো আগে মিছিল করত। এখন মিছিলের পরিবর্তে হাঁটা শুরু করেছে। দম ফুরিয়ে গেছে সম্ভবত।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিএনপি যে পদযাত্রা শুরু করেছে, কারও কাছ থেকে নকল করছে সম্ভবত। আপনারা চোখ মেলে দেখুন, কারও কাছ থেকে নকল করছে কি না। তবে পদযাত্রা করুক আর যে যাত্রাই করুক, তাদের এই যাত্রায় তাদের কর্মীরাও নাই। জনগণ তো দূরের কথা, সাধারণ কর্মীরাও এই যাত্রায় শামিল হননি।’
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপি ২০১৩, ২০১৪ ও ২০১৫ সালে মানুষের ওপর পেট্রলবোমা নিক্ষেপ করেছে, জীবন্ত মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করেছে, মানুষের মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে। আবার জনগণের কাছে যদি যেতে হয়, তাহলে সেগুলোর জন্য মানুষের কাছে ক্ষমা চাইতে হবে।’
বিএনপির নির্বাচনে না আসলে এতে কোনো প্রভাব পড়বে কি না জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, ‘আমি আশা করি, তারা (বিএনপি) নির্বাচনে অংশ নেবে। আমরা চাই বিএনপিসহ সব রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুক। প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ সুন্দর ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে দেশের মানুষ আগামী দিনের সরকার পছন্দ করুক, সেটি আমরা চাই।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য