সকালেই রাজশাহীতে বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশ। একটু আগেভাগেই সমাবেশ শুরু করতে চান আয়োজকরা। কারণ সমাবেশস্থলের পার্শ্ববর্তী ঈদগাহ মাঠ ইতোমধ্যেই পূর্ণ হয়ে গেছে নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের উপস্থিতিতে।
শুক্রবার রাত ১০টায় মাদ্রাসা মাঠের সামনের রাস্তা দিয়ে হাঁটারও সুযোগ নেই। মানুষে ঠাসা। সমাবেশস্থল ঘিরেও অসংখ্য মানুষ।
গত বুধবার থেকেই রাজশাহীতে নেতা-কর্মীরা আসতে শুরু করেছিলেন। তবে সমাবেশের আগের দিন তাদের ঢল নামে। দুপুরের পর বিভিন্ন জেলা থেকে মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা করেও অনেকেই সভাস্থলের পাশে হাজির হন।
বাস ধর্মঘট চলার কারণে ট্রেনের ওপরই বেশি নির্ভর করেছেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা।
গত তিন দিনে রাজশাহীতে যেসব ট্রেন ঢুকেছে সব ট্রেনেই ছিল উপচে পড়া ভিড়। শুক্রবার সন্ধ্যার পর যেসব ট্রেন রাজশাহী এসেছে সেগুলোতে পা ফেলারও ঠাঁই ছিল না। গাদাগাদি করে আসা এসব মানুষের বেশির ভাগেরই গন্তব্য ছিল সমাবেশ।
স্টেশন থেকে নেমেই দল বেঁধে হেঁটে স্লোগান দিতে দিতে সমাবেশস্থলের দিকে যাচ্ছেন তারা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সমাবেশের আগের রাতে উৎসবের আমেজ মাদ্রাসামাঠ এলাকাজুড়ে। খোশগল্প, ছোটাছুটি আর ক্ষণে ক্ষণে দলীয় স্লোগান দিয়ে সময় পার করছেন নেতা-কর্মীরা। কেউ তুলছেন সেলফি, কেউ ভিডিও। অনেককে ফেসবুক লাইভ করতেও দেখা গেছে। কখনও কখনও বসছে গানের আসর।
সকাল থেকেই সমাবেশ শুরুর পরিকল্পনা
সকাল থেকেই রাজশাহীর সমাবেশ শুরু করতে চান বিএনপি নেতারা। তারা দাবি করছেন, অনুমতি পেতে দেরি হওয়ার কারণে মঞ্চ প্রস্তুত হতে সময় লেগেছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু বলেন, ‘আমরা আগে থেকেই মঞ্চ তৈরির কাজ শুরু করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু ওই সময় পুলিশ আমাদের কাজ করতে দেয়নি। বৃহস্পতিবার থেকে কাজ শুরু হয়। এ কারণে কিছুটা সময় লেগেছে।’
দুলু বলেন, ‘আমরা সকাল ৯টা থেকে সমাবেশ শুরু করতে চাই। সকালেই আমরা সাবেশস্থলে প্রবেশ করতে চাই।’
ফাঁকা থাকবে খালেদা-তারেকের আসন
আয়োজকরা বলছেন, অনান্য বিভাগীয় সমাবেশের মতো রাজশাহীর মঞ্চেও ফাঁকা থাকবে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের আসন। শনিবার বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
দুলু বলেন, ‘শনিবার সকাল ৯টার দিকে মঞ্চে আসন গ্রহণ শুরু হবে। প্রতিবারের মতো এবারও সমাবেশ মঞ্চে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের জন্য একটি করে দুটি চেয়ার ফাঁকা রাখা হবে।’
নগরীর সব প্রবেশপথে পুলিশের চেকপোস্ট
বিএনপির রাজশাহী বিভাগীয় গণসমাবেশ ঘিরে কঠোর অবস্থানে রয়েছে পুলিশ। শহরের সব প্রবেশমুখে বসানো হয়েছে চেকপোস্ট। এ ছাড়া নগরীর গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলোতে থাকছে পুলিশের অবস্থান।
শুক্রবার বিকেল থেকেই মাদ্রাসা মাঠ ও আশপাশের এলাকার নিরাপত্তা আরও বাড়ানো হয়েছে। কয়েক দিন ধরে এখানে অল্প কিছু পুলিশ সদস্য অবস্থান করলেও বিকেল থেকে এই সংখ্যা কয়েক গুণ বেড়েছে।
সমাবেশ ঘিরে প্রায় দুই সপ্তাহজুড়েই রাজশাহী ও আশপাশের জেলাগুলোতে তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে বিএনপি। সমাবেশের আগমুহূর্তে তৎপরতা বাড়িয়েছে পুলিশও। নগরীর সবকটি প্রবেশপথে তল্লাশি চৌকি বসিয়েছে তারা।
নগরীর আমচত্বর, নওদাপাড়া, রেলগেট, কাশিয়াডাঙ্গা মোড়, তালাইমারী মোড়, কাটাখালী বাজার এবং বেলপুকুরে পুলিশের চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি করা হচ্ছে। বাইরে থেকে আসা যানবাহনগুলোতে তাদের বাড়তি নজরদারি।
মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার রফিকুল আলম বলেন, ‘সমাবেশকে কেন্দ্র করে কেউ যাতে সহিংস কিছু ঘটাতে না পারে, বিশৃঙ্খলা ঘটাতে না পারে, সে জন্য আমরা সতর্ক আছি। গোটা শহরেই নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। সাদা পোশাকেও মাঠে পুলিশ রয়েছে। গোয়েন্দা শাখার সদস্যরাও কাজ করছেন। সমাবেশে সার্বক্ষণিক নজর রাখতে মাদ্রাসা মাঠে বসানো হয়েছে সিসি ক্যামেরাও।
বাসের পর সিএনজি ধর্মঘট
রাজশাহীতে বাস ধর্মঘটের মাঝে শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে সড়কে ধর্মঘট শুরু করে সিএনজি ও থ্রি-হুইলার মালিকরাও। তারা বলছেন, অবাধ চলাচল ও হয়রানিমুক্ত রেজিস্ট্রেশনের দাবিতে তারা এই ধর্মঘট শুরু করেছেন।
সিএনজি টেম্পো মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক দিদার হোসেন ভুলু বলেন, ‘সরকার বৈধভাবে সিএনজি আমদানি করে। সেই সিএনজি বিক্রি করে সরকার লাভও করে। তবে আমাদের লাইসেন্স পেতে কেন ভোগান্তি হবে? মহাসড়ক বাদে আমাদের তো সব সড়কেই চলাচলে অনুমতি আছে, তবে কেন আমাদের হয়রানি করা হবে? আমরা আমাদের লাইসেন্স ও হয়রানি মুক্তির দাবিতে সকাল ৬টা থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘট ডেকেছি।’
ভুলু দাবি করেন, বিএনপির সমাবেশের সঙ্গে তাদের কোনো সম্পর্ক নেই।
এদিকে বাস বন্ধের পর সিএনজিচালিত টেম্পোর ওপরই ছিল যাত্রীদের ভিড়। শহরের ভেতরে অটোরিকশায় চলাচল করলেও রাজশাহীর উপজেলা পর্যায়ে বা আশপাশের জেলার সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যম ছিল সিএনজি। শুক্রবার সকাল থেকে সেই পরিবহনও বন্ধ থাকায় পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে রাজশাহী।
মির্জা ফখরুল রাজশাহী
বিভাগীয় গণসমাবেশে অংশ নিতে ইতোমধ্যেই রাজশাহী পৌঁছেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। শুক্রবার বিকেলে বিমানযোগে তিনি রাজশাহীর শাহ মখদুম বিমানবন্দরে পৌঁছান।
বিকেল ৫টায় বিমানবন্দরে পৌঁছালে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনুসহ স্থানীয় স্থানীয় নেতারা তাকে স্বাগত জানান। পরে তিনি রাজশাহীর কাজিহাটা এলাকার একটি হোটেলে যান।
আরও পড়ুন:বিএনপি নির্বাচন বানচাল করতে সফল হলে দেশে অগণতান্ত্রিক শক্তির উত্থান হতো বলে মন্তব্য করেছেন তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত।
মঙ্গলবার রাজধানীর মহাখালীতে সাউথ পয়েন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে ১৭ মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ আয়োজিত ইফতার সামগ্রী বিতরণ অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।
তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপি ৭ জানুয়ারি নির্বাচন বানচাল করতে চেয়েছিল। আওয়ামী লীগ এ দেশের জনগণকে নিয়ে তা ব্যর্থ করে দিয়েছে।
‘বিদেশি প্রভুদের তোষণ, অগ্নিসন্ত্রাস করে মানুষ পুড়িয়ে মারা এবং নির্বাচন বানচালের সংবিধানবিরোধী অপরাজনীতি ছেড়ে শুদ্ধ রাজনীতি চর্চায় ফিরে আসুন। গণতন্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন, নির্বাচনি প্রক্রিয়ায় রাজনীতি করুন।’
বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের সভাপতি শেখ ফজলে শামস পরশের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সিমিন হোসেন রিমি।
রমজানে আওয়ামী লীগ সাধারণ মানুষের মধ্যে ইফতার বিতরণ করছে উল্লেখ করে দলটির সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিরোধীরা ইফতার সামগ্রী বিতরণ না করে পার্টি করে নিজেরাই খাচ্ছে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০৪তম জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস উদযাপন উপলক্ষে সোমবার আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।
রাজধানীর তেজগাঁওয়ে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে আয়োজিত অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা রমজানে ইফতার পার্টি বন্ধের বিষয়টি উল্লেখ করে বলেন, ‘আজকে আমরা যেমন ইফতার পার্টি বন্ধ করেছি, না ইফতার পার্টি করব না, আমরা এই খাবার সাধারণ মানুষের মাঝে ইফতার বিলাব। আজকে অনেক জায়গায় বিলাচ্ছেন সবাই।
‘সারা বাংলাদেশের যে চিত্র, অনেক জায়গায় আমি দেখতে পাচ্ছি যে, একমাত্র আওয়ামী লীগ অথবা আমাদের সহযোগী সংগঠন ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ সবাই এবং আমাদের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা আজকে সাধারণ মানুষের মাঝে ইফতার বিলি করছেন।’
ওই সময় বিরোধীদের সমালোচনা করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘আর আমরা যখন ইফতার বিলি করি, তখন দেখি কী? আওয়ামী লীগ দেয়; দিতে জানে। আর সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়ায়। আর যারা প্রতিনিয়ত আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে হটাবে, উৎখাত করবে, নির্বাচন হতে দেবে না, মানুষ খুন করবে, তারা অগ্নিসন্ত্রাস করে, গাড়িতে, রেলে আগুন দেয়; মানুষকে পুড়িয়ে মারে। সেই মা, সন্তানসহ পুড়িয়ে মারে।
‘আর এখন আবার কী দেখবেন? তারা কিন্তু কোনো মানুষকে ইফতার দেয় না। নিজেরা ইফতার পার্টি খায়। তারা ইফতার পার্টি খায় আর ওই ইফতার পার্টিতে যেয়েও আল্লাহ-রসুলের নাম নেয়, আওয়ামী লীগের গিবত গায়।’
মানুষের পাশে দাঁড়ানো আওয়ামী লীগের অপরাধ কি না, সেই প্রশ্ন তুলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা খেয়েদেয়ে মাইক একটা লাগিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারকে উৎপাত করবেন। আওয়ামী লীগের অপরাধটা কী? এ দেশ স্বাধীন করেছে, সেটা অপরাধ?
‘আওয়ামী লীগের অপরাধটা কী? গরীব মানুষের পাশে দাঁড়ায়, দেশটা আজ উন্নত করেছে, সেটাই কী অপরাধ? তারা যে গণতন্ত্রের কথা বলে, আমরা কিন্তু গণতন্ত্র ফিরিয়ে এনেছি।’
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, “একসময় দেশের মানুষ ‘ভাতের ভ্যান’ ভাতের মাড় খেত। লবণ দিয়ে ভাতের মাড় খেতেও মানুষকে হিমশিম খেতে হতো, কিন্তু আওয়ামী লীগের আমলে ভাতের কষ্ট মানুষের নাই।”
আরও পড়ুন:কক্সবাজারের চকরিয়ায় পৌর যুবলীগের সভাপতি হাসানগীর ও যুবলীগ নেতা বেলাল উদ্দীন কামরানের ওপর সন্ত্রাসী হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে।
পৌর এলাকার ফায়ার সার্ভিস স্টেশন সংলগ্ন এলাকায় শনিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে এই হামলার ঘটনা ঘটে। এর প্রতিবাদে রোববার চকরিয়ায় উপজেলা যুবলীগ সভাপতি শহিদুল ইসলামের নেতৃত্বে বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। পরে মডেল প্রাইমারি স্কুল মাঠে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সালাউদ্দিন আহমেদ সিআইপি, চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক গিয়াসউদ্দিন চৌধুরী, সহ-সভাপতি সরওয়ার আলম, উপজেলা যুবলীগ সভাপতি শহিদুল ইসলাম, সোসাইটি বায়তুল মাওয়া শাহী জামে মসজিদের পরিচালনা কমিটির সভাপতি জাহাঙ্গীর হোছাইন ও আওয়ামী লীগ নেতা আলমগীর হোছাইন।
সংবাদ সম্মেলনে হাছানগীরের বড় ভাই আলমগীর হোছাইন বলেন, ‘আমার ভাই তারাবির নামাজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে একদল সন্ত্রাসী সালাম দিয়ে পথরোধ করে আচমকা এলোপাতাড়ি কুপিয়ে জখম করেছে। ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে অপরাধীদের আইনের আওতায় আনার জোর দাবি জানাচ্ছি।’
সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, সাবেক এমপি জাফর আলমের লালিত সন্ত্রাসীদের হাতে প্রতিনিয়ত লাঞ্ছিত হচ্ছেন বঙ্গবন্ধুর আদর্শের কর্মীরা। এরই ধারাবাহিকতায় চকরিয়া পৌর যুবলীগের সভাপতি হাছানগীর হোছাইনকে হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা করেছে চিহ্নিত কিছু সন্ত্রাসী।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের একাধিক নেতাকে পিটিয়ে আহত করেছে সাবেক সংসদ সদস্য জাফর আলমের কর্মীরা। এ নিয়ে একাধিক মামলাও রয়েছে চকরিয়া থানায়।
এ ঘটনায় চকরিয়া-পেকুয়া আসনের নবনির্বাচিত সংসদ সদস্য সৈয়দ মোহাম্মদ ইব্রাহিম নিন্দা জানিয়ে বলেন, ‘এমন ন্যক্কারজনক ঘটনা কখনোই কাম্য নয়। এসব সন্ত্রাসীকে দ্রুত আইনের আওতায় আনার অনুরোধ জানাচ্ছি।’
চকরিয়া থানার ওসি শেখ মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘চকরিয়া পৌর যুবলীগ সভাপতির ওপর হামলার ঘটনা শুনেছি। তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছিলো। এ ঘটনায় চকরিয়া থানায় একটি মামলা হয়েছে। আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।’
আরও পড়ুন:‘নেতা-কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষার জন্য বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের জুম অ্যাপের মাধ্যমে দেয়া বক্তব্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহার করে ডিপ ফেক প্রযুক্তি দিয়ে বিকৃত করা হয়েছে। একইভাবে দলের অন্য নেতাদেরও ডিপ ফেক ভিডিও বানানো হচ্ছে।’
বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী রোববার এসব কথা বলেন।
নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ডিপ ফেক ভিডিওটি সরকারপন্থী কয়েকটি অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ও গণমাধ্যমের মাধ্যমে ছড়িয়ে দেশ-বিদেশে বিএনপির শুভাকাঙ্ক্ষীদের কাছ থেকে চাঁদাবাজির কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে।
‘শুধু ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানই নযন, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়সহ অন্য সদস্যদেরও ডিপ ফেক ভিডিও তৈরি করা হচ্ছে।’
রিজভী বলেন, ‘বিএনপির আইটি বিভাগের তদন্তে দেখা গেছে, বিরোধী দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে আওয়ামী লীগের হয়ে কাজ করছে নাহিদ রেইন নামে এক প্রতারক। বিএনপি নেতাদের নামে চাঁদাবাজির অপরাধে অবিলম্বে নাহিদ রেইনকে গ্রেপ্তারের দাবি জানাচ্ছি।
‘আর এটা অত্যন্ত দুঃখের বিষয় যে প্রধান অপরাধীকে অনলাইন ও অফলাইনে সহায়তা করছে প্রভাবশালী এক বিদেশি।’
রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘৭ জানুয়ারি ডামি নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের অ্যাঙ্কর ও লোগো ব্যবহার করে তাদের মিথ্যা উন্নয়নের অসংখ্য ডিপ ফেক ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করেছে।
এছাড়া তারা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে যুক্তরাষ্ট্রের ঢাকা দূতাবাস সম্পর্কেও ডিপ ফেক ভিডিও তৈরি করেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ডিপ ফেক ভিডিওটির গুরুত্ব অনুধাবন করে ফিনান্সিয়াল টাইমসের সংবাদদাতা বেঞ্জামিন পার্কিন গত বছরের ১৪ ডিসেম্বর একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছেন। সেখানে তিনি দেখিয়েছেন যে কীভাবে এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে আওয়ামী লীগের একটি দুর্বৃত্ত চক্র ডিপ ফেক ভিডিও তৈরি করছে।’
আরও পড়ুন:বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সাজার স্থগিতাদেশ বাড়ানো এবং উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে নেয়ার অনুমতি চেয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়েছে।
খালেদা জিয়ার জীবন ঝুঁকিতে রয়েছে উল্লেখ করে এই আবেদন করেছেন তার ছোট ভাই শামীম ইস্কান্দার।
এর আগে ২০২৩ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর শর্তসাপেক্ষে খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিতের মেয়াদ আরও ছয় মাস বাড়ায় সরকার।
করোনা প্রাদুর্ভাবের মধ্যে ২০২০ সালের ২৫ মার্চ গুলশানের বাসায় অবস্থান এবং দেশত্যাগ না করার শর্তে সাজা স্থগিত করে নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে খালেদা জিয়াকে সাময়িক মুক্তি দেয় সরকার। এরপর থেকে পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রতি ছয় মাস অন্তর তার মুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হয়।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেয় বিচারিক আদালত। ওই বছরই আরেকটি দুর্নীতির মামলায় দোষী সাব্যস্ত হন তিনি।
দীর্ঘদিন ধরে লিভার সিরোসিস, আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, ফুসফুস, হার্ট, চোখের সমস্যাসহ নানা রোগে ভুগছেন ৭৮ বছর বয়সী সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া।
আরও পড়ুন:দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়েছে দাবি করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, এই নির্বাচন নিয়ে ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক ইনস্টিটিউট (এনডিআই) ও ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউটের (আইআরআই) দেয়া রিপোর্টে কিছু যায় আসে না।
রোববার জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০৪তম জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘এনডিআই ও আইআরআই যে রিপোর্ট দিয়েছে সেখানে তারা স্বীকার করে নিয়েছে যে অন্যান্য সময়ে যেসব নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে সেসবের তুলনায় এবার কম সহিংসতা হয়েছে।
‘আর নির্বাচনের মানের বিষয়ে তারা বলছে, বাংলাদেশে যেসব নির্বাচন ইতোপূর্বে হয়েছে বা আমাদের উপমহাদেশে যে নির্বাচন হয় সে তুলনায় এ নির্বাচনের মান অনেক উন্নত ছিল। একটি সুন্দর ও ভালো নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘এনডিআই ও আইআরআই কী বলল না বলল এতে কিছু আসে যায় না। তারা তাদের বক্তব্য উপস্থাপন করেছে। আমরা সেটা দেখছি। কিন্তু দেশে একটি সুন্দর, সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হয়েছে। সেখানে বিএনপিসহ তার মিত্ররা অংশগ্রহণ করেনি। বিএনপিসহ তাদের মিত্ররা শুধু নির্বাচন বর্জন নয়, নির্বাচন প্রতিহত করার ডাক দিয়েছে। মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করেছে। সুতরাং তাদের রিপোর্টে এসব বিষয় বা যারা এ নিয়ে বিভিন্ন সময়ে দেশ-বিদেশে বক্তব্য দেন তাদের এ বিষয়টাও অ্যাড্রেস করতে হবে।’
সরকার প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করছে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘এটা প্রত্যাখ্যান বা গ্রহণ করার বিষয় নয়। তারা প্রতিবেদন দিয়েছে, আমরা প্রতিবেদনটা দেখছি। আমাদের বন্ধু রাষ্ট্র বা অন্য কেউ যেসব পর্যবেক্ষণ দিচ্ছে সেগুলো আমরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছি।’
আরও পড়ুন:বাংলাদেশে ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচন সব মিলিয়ে গুণগত মানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারেনি বলে মত ব্যক্ত করেছে ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ইনস্টিটিউট (এনডিআই) ও ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউটের (আইআরআই) টেকনিক্যাল অ্যাসেসমেন্ট মিশন (টিএএম)।
যুক্তরাষ্ট্রের সংস্থা দুটি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, যাতে এমন অভিমত ব্যক্ত করা হয়েছে।
চলতি বছরের ৭ জানুয়ারির জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে, ভোট চলাকালীন ও পরে সম্ভাব্য নির্বাচনী সহিংসতার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য এনডিআই ও আইআরআই টেকনিক্যাল অ্যাসেসমেন্ট মিশনকে বাংলাদেশে পাঠানো হয়েছিল। নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রায় আড়াই মাস পর রোববার ১৭ মার্চ সংস্থা দুটি চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
প্রতিবেদনে বিভিন্ন ধরনের নির্বাচনি সহিংসতার বিষয়ভিত্তিক বিশ্লেষণ তুলে ধরা হয়েছে। পাশাপাশি ভবিষ্যতে নির্বাচনে সহিংসতার ঝুঁকি প্রশমন, আন্তর্জাতিক সহযোগিতা এবং বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে আইআরআই ও এনডিআইয়ের তুলনামূলক অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন, সরকারের নির্বাহী ও আইন বিভাগ, রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ এবং অন্যান্য অংশীজনের সুপারিশ প্রতিবেদনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, ৭ জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচনের আগে প্রচার ও নির্বাচনের দিনসহ অন্য সময়ে শারীরিক ও অনলাইন সহিংসতা কম হয়েছে।
এক্ষেত্রে সংস্থা দুটি আগের নির্বাচনগুলোর পরিস্থিতির সঙ্গে তুলনা করেছে। সহিংসতা কম হওয়ার কারণ হিসেবে তারা নির্বাচনি প্রতিযোগিতার অনুপস্থিতি এবং দেশের নিরাপত্তায় সরকারের বাড়তি নজরকে চিহ্নিত করেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, নির্বাচনি সহিংসতা মূলত দুটি প্রাথমিক রূপে দেখা দেয়। প্রথমটি প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ও সমর্থকদের মধ্যে এবং দ্বিতীয়টি বিরোধী দলের বয়কট প্রচেষ্টার মাধ্যমে।
প্রান্তিক গোষ্ঠী, বিশেষ করে নারী এবং হিন্দুরাও নির্বাচনি সহিংসতার শিকার হয়েছেন বলে প্রতিবেদনে বলা হয়।
মিশনটি প্রতিবেদনে বলেছে, ‘বাংলাদেশের আইনি কাঠামো লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা সম্পূর্ণরূপে মোকাবেলা করতে ব্যর্থ হয়েছে, বিশেষ করে নির্বাচনের প্রেক্ষাপটে।
‘নারী প্রার্থীরা মিশনকে জানিয়েছে, জনসমাগমে ও অনলাইনে তাদের অপমান ও হুমকির শিকার হতে হয়েছে। বিশেষ করে পুরুষ প্রতিপক্ষ ও তাদের সমর্থকদের কাছ থেকে। এছাড়া রাষ্ট্রীয় কর্মকর্তারা তাদের অভিযোগের ব্যাপারে কোনও সাড়া দেননি।’
প্রতিবেদনে বলা হয়, জানুয়ারির নির্বাচনের গুণগত মান ক্ষুণ্ন হয়েছে। এর কারণ হিসেবে শাসক দল ও বিরোধীদের সহিংসতা, প্রাক-নির্বাচনী পরিবেশ, রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে সহিংসতা, নাগরিক স্বাধীনতার সংকোচন এবং বাক-স্বাধীনতা ও সংগঠিত হওয়ার স্বাধীনতার অবনতির কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
নির্বাচনি সহিংসতা মোকাবেলায় সংস্থা দুটির পক্ষ থেকে ২৮টি সুপারিশ করা হয়েছে। এর মধ্যে নিরাপত্তা কর্মীদের জন্য আচরণবিধি প্রতিষ্ঠা, নির্বাচনি সহিংসতা সম্পর্কিত মামলাগুলো দ্রুত ও স্বাধীন বিচার এবং পর্যালোচনার জন্য আইনি কাঠামো, রাজনৈতিক নেতাদের দলে অহিংসতার সংস্কৃতি গড়ে তোলা, সংখ্যালঘু ও নারীদের বিরুদ্ধে সহিংসতায় দায়ীদের জবাবদিহির আওতায় আনার মতো বিষয়গুলো রয়েছে।
নির্বাচনের সময় সোশাল মিডিয়ার ঘটনাবলীও পর্যবেক্ষণ করেছেন মিশনের সদস্যরা।
তাদের মতে, নির্বাচনের সময় সোশাল মিডিয়ায় হিংসাত্মক বক্তব্য অব্যাহত ছিল। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি, উভয় দলের দিক থেকেই সোশাল মিডিয়ায় হিংসাত্মক বক্তব্য দেয়া হয়। তবে আওয়ামী লীগ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই বেশি আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু ছিলেন।
নির্বাচনে সংবাদমাধ্যমের ভূমিকা নিয়ে অংশীজনরা মিশনকে জানিয়েছেন, সরকারের প্রতিশোধের ভয়ে সংবাদমাধ্যম সেল্ফ সেন্সরশিপে ছিল। সাংবাদিকরা নির্বাচনি প্রচার ও বিক্ষোভের সময় ক্ষমতাসীন ও বিরোধী উভয় দলের সহিংসতার শিকার হয়েছেন।
নির্বাচনি নিরাপত্তার জন্য বাজেট বাড়ানোসহ নিরাপত্তা ব্যবস্থা তদারকিতে সরকারের সমন্বিত ইউনিট গঠনের বিষয়ও প্রতিবেদনে স্থান পেয়েছে।
একইসঙ্গে সংস্থা দুটির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে সুবিধা দিতে রাষ্ট্রের নিরাপত্তা পরিষেবা ও বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান অসমভাবে নির্বাচনি বিধি প্রয়োগ করেছে।
আর বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার ও বিরোধী রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড ব্যাহত করার জন্য সরকারের প্রচেষ্টা ন্যায়সঙ্গত ছিল না।
বাংলাদেশে অবস্থানকালে মিশনের সদস্যরা বিশ্লেষক, সরকারি কর্মকর্তা, নিরাপত্তা কর্মী, রাজনৈতিক দলের নেতা, সাংবাদিক, নাগরিক সমাজের সংগঠনসহ যুবক, নারী, প্রতিবন্ধী ব্যক্তি এবং ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের পাশাপাশি স্বীকৃত আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক মিশনের সঙ্গে বৈঠক করে।
প্রসঙ্গত, নির্বাচন চলাকালীন ও আগে-পরের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য বাংলাদেশে এসেছিলেন বেসরকারি সংস্থা আইআরআই ও এনডিআইর প্রতিনিধিরা। তারা সম্মিলিতভাবে গত ৩০ বছরে বিশ্বের ৫০টির বেশি দেশে দুই শতাধিক নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেছে।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য