ঋণগ্রহীতাদের নামের তালিকা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ওয়েব সাইটে প্রকাশের নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট।
চেক ডিজ-অনার মামলা না নিতে নির্দেশনা দিয়ে হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করা হয়েছে। ১৩ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায়ে বৃহস্পতিবার এ নির্দেশনা দিয়েছে আদালত।
এদিকে এ রায়ের কার্যকারিতা দুই মাসের জন্য স্থগিত করেছে আপিল বিভাগ। এ সময়ের মধ্যে নিয়মিত আপিল ফাইল করতে বলেছে সর্বোচ্চ আদালত।
এদিকে হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায়ে বলা হয়েছে, ব্যাংকের টাকা জনগণের টাকা। জনগণের টাকা আর্থিক প্রতিষ্ঠান বা ব্যাংক কাকে দিচ্ছে, তা জনগণের জানার অধিকার আছে। তাই প্রত্যেক ঋণ মঞ্জুরের সঙ্গে সঙ্গে মঞ্জুরের অনুমতিপত্র সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের ওয়েব সাইটে প্রকাশ করার নির্দেশ দেয়া হলো।
লিখিত রায়ে আদালত বলেছে, আর্থিক প্রতিষ্ঠান কর্তৃক ঋণের বিপরীতে জামানত হিসেবে গৃহীত চেক বিনিময়যোগ্য দলিল নয় হেতু এমনতর চেক প্রত্যাখ্যানের মোকদ্দমা গ্রহণে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হলো। যদি কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠান এমনতর চেক প্রত্যাখ্যানের মোকদ্দমা করে, তবে তা বিচারিক আদালত সরাসরি প্রত্যাখ্যান করবে।
দ্বিতীয়ত, আর্থিক প্রতিষ্ঠান কর্তৃক ঋণের বিপরীতে জামানত হিসেবে গৃহীত চেক থেকে উদ্ভূত চেক প্রত্যাখ্যানে ইতোমধ্যে দাখিল করা সব মোকদ্দমার কার্যক্রম এখতিয়ার বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতি নির্দেশনা প্রদান জরুরি বিধায় নির্দেশ প্রদান করা যাচ্ছে যে আর্থিক প্রতিষ্ঠান কর্তৃক প্রতিটি ঋণের বিপরীতে ইনস্যুরেন্স বাধ্যতামূলক করে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি অনতিবিলম্বে বাংলাদেশ ব্যাংক নির্দেশনা জারি করবে।
আর্থিক প্রতিষ্ঠান কর্তৃক সব ঋণ প্রদানে সর্বোচ্চ স্বচ্ছতা ও আধুনিকীকরণের পদক্ষেপ নেয়ার পরামর্শ প্রদান করবে এবং নিয়মিত বিরতিতে তা দেখাশোনা করবে।
আদালত বলে, বর্তমানে দেখা যাচ্ছে যে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো জাতীয় সংসদ কর্তৃক প্রণীত অর্থঋণ আদালত আইন, ২০০৩-কে পাশ কাটিয়ে ঋণগ্রহীতা থেকে তাদের খেয়ালখুশিমতো বেআইনিভাবে জামানতস্বরূপ ব্লাঙ্ক চেক গ্রহণ করছে। তাদের খেয়ালখুশিমতো ওই ব্লাঙ্ক চেকে টাকার অঙ্ক বসিয়ে চেক প্রত্যাখ্যান করে ঋণগ্রহীতার বিরুদ্ধে চেক প্রত্যাখ্যানের মোকদ্দমা করে সাধারণ জনগণকে বিশেষ করে কৃষক, ক্ষুদ্র এবং ছোট ব্যবসায়ীদের জেলে পাঠিয়েছে।
যেহেতু আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহকে অর্থঋণ আদালত আইন, ২০০৩ মোতাবেকই তার খেলাপি ঋণ তথা অনাদায়ী ঋণ আদায়ের পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে, সেহেতু ঋণগ্রহীতার বিরুদ্ধে খেলাপি ঋণ আদায়ে চেক প্রত্যাখ্যানের মোকদ্দমার কোনো সুযোগ নেই। তবে আর্থিক প্রতিষ্ঠান যদি তার নিজস্ব কোনো সম্পত্তি বিক্রি করে এবং বিনিময়ে সম্পত্তির ক্রেতা থেকে কোনো চেক গ্রহণ করে এবং পরে যদি সেই চেক প্রত্যাখ্যাত হয় তখন আর্থিক প্রতিষ্ঠান ওই চেক প্রত্যাখ্যানের বিরুদ্ধে চেকের মামলা করতে পারবে।
কিন্তু কোনোভাবেই ঋণ আদায়ের নিমিত্তে চেক জামানত হিসেবে গ্রহণ করে তা প্রত্যাখ্যানের মাধ্যমে চেক প্রত্যাখ্যানের মামলা করতে আইনত অধিকারী নয়। ফলে বাদী কর্তৃক অত্র চেক প্রত্যাখ্যানের মোকদ্দমা আইন ও বিধিবহির্ভূত বিধায় বাদীর মোকদ্দমাই বেআইনি।
আরও পড়ুন:নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলায় কিশোরীকে অপহরণের পর ধর্ষণের দায়ে দুই যুবককে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
জেলা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল আদালতের বিচারক নাজমুল হক শ্যামল মঙ্গলবার দুপুরে এ রায় ঘোষণা করেন।
সাজাপ্রাপ্তরা হলেন- জাফর ইসলাম রিজভী (৩৬) ও সজিব ভূঁইয়া বাবু (৩৬), তবে রায় ঘোষণার সময়ে আদালতে তারা অনুপস্থিত ছিলেন।
আদালত পুলিশের পরিদর্শক আসাদুজ্জামান জানান, ২০১২ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর রূপগঞ্জের পূবেরগাঁও এলাকা থেকে ওই কিশোরীকে জোরপূর্বক অপহরণ করে ধর্ষণ করেন আসামিরা। এরপর কিশোরীর পরিবারের কাছে মুক্তিপণ হিসেবে পাঁচ লাখ টাকা দাবি করেন তারা। এ ঘটনায় কিশোরীর বাবা রূপগঞ্জ থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট রকিবউদ্দিন আহমেদ বলেন, তদন্তকারী কর্মকর্তাসহ পাঁচজন সাক্ষীর সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে আদালত এ রায় ঘোষণা করেছেন। আসামিরা পলাতক থাকায় তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।
আরও পড়ুন:
প্রথম শ্রেণিতে ৪১ সহোদর ও জমজকে ভর্তি নিতে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজকে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
শিক্ষার্থীদের পক্ষে তাদের অভিভাবকের করা রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে মঙ্গলবার বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের এবং বিচারপতি মোহাম্মদ আলীর হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলসহ এ আদেশ দেন।
আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এবিএম আলতাফ হোসেন ও আইনজীবী শফিকুর রহমান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এবিএম আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার।
আইনজীবী এবিএম আলতাফ হোসেন জানান, বেসরকারি স্কুল, স্কুল অ্যান্ড কলেজ (মাধ্যমিক, নিম্ন মাধ্যমিক ও সংযুক্ত প্রাথমিক স্তর) শিক্ষার্থী ভর্তির নীতিমালা-২০২২ অনুসারে কোনো প্রতিষ্ঠানে আবেদনকারী শিক্ষার্থীর সহোদর/সহোদরা বা জমজ ভাই/বোন যদি আগে থেকে অধ্যয়নরত থাকে, সেসব সহোদর বা জমজকে সংশ্লিষ্ট ভর্তি কমিটি আবেদন যাচাই-বাছাই করে ভর্তির প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
এই বিধান অনুযায়ী, ৪১ জন সহোদর ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তির আবেদন করে, কিন্তু ১৬ জানুয়ারি শিক্ষা মন্ত্রণালয় একটি পরিপত্র দেয়। যেখানে বলা হয়, শুধুমাত্র ২০২৩ শিক্ষাবর্ষের জন্য কোনো প্রতিষ্ঠানে এন্ট্রি শ্রেণিসহ অন্য শ্রেণিতে মোট আসনের অতিরিক্ত ৫ শতাংশ শিক্ষার্থী সহোদর ও জমজ ভর্তির জন্য আবেদনকারীদের মধ্যে থেকে ভর্তি করাতে পারবে। এ বিধানের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট করা হয়। কারণ তারা যখন আবেদন করে, তখন ৫ শতাংশের বিধান ছিল না। এ কারণে আদালত এই ৪১ জনের ক্ষেত্রে ওই বিধান স্থগিত করে রুল জারি করেছেন। পাশাপাশি তাদের ভর্তি করাতে নির্দেশ দিয়েছেন।
ঢাকার বায়ু দূষণ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে হাইকোর্ট।
মঙ্গলবার বিচারপতি কেএম কামরুল কাদের ও বিচারপতি মোহাম্মদ আলীর হাইকোর্ট বেঞ্চ এই উদ্বেগ প্রকাশ করে।
এ সময় বায়ু দূষণ রোধে নেয়া পদক্ষেপ আগামী ৫ ফেব্রুয়ারি জানাতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি নির্দেশ দিয়ে হাইকোর্ট বলেছে, ‘আপনারা কি আমাদের মেরে ফেলবেন নাকি? নির্দেশনা বাস্তবায়নে বারবার আপনাদের ডাকতে হয়। আমরা নিজেরাই লজ্জা পাচ্ছি।’
আদালতের নির্দেশনার কথা জানিয়ে আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, আদালতের নির্দেশনা বাস্তবায়ন চেয়ে আমরা একটি আবেদন করেছিলাম। সেই আবেদনের শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট বেঞ্চ পরিবেশ অধিদপ্তর, সিটি করপোরেশনসহ সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের উদ্দেশে এ কথা বলেছে।
তিনি বলেন, তাদের উদ্দেশে আদালত বলেছে, ‘বায়ু দূষণরোধে আপনারা কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছেন না। বারবার নির্দেশ দেয়া হচ্ছে। আপনারা কি আমাদের সবাইকে ক্ষতিগ্রস্থ করতে চান?’
আদালতে পরিবেশ অধিদপ্তরের পক্ষে আইনজীবী আমাতুল করিম ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের পক্ষে সাঈদ আহমেদ রাজা উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকার বায়ু দূষণ রোধে উচ্চ আদালতের যে নয় দফা নির্দেশনা রয়েছে, তা বাস্তবায়নের নির্দেশনা চেয়ে সোমবার হাইকোর্টে আবেদন করেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। বায়ু দূষণরোধে ৯ দফা নির্দেশনা দিয়ে ২০২০ সালে রায় দেন উচ্চ আদালত।
আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, ‘আপনারা জানেন কয়েক দিন ধরে রিপোর্ট হচ্ছে, বিশ্বের সর্বোচ্চ বায়ু দূষণকারী শহর হচ্ছে ঢাকা। বায়ু দূষণে ঢাকার এই অবস্থান ধারাবাহিক হচ্ছে, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি। এটি যদি অব্যাহত থাকে তাহলে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়। যেটা দিল্লিতে করা হয়েছিল। কিন্তু আমাদের এখানে কারো কোনো খবর নাই।’
তিনি আরও বলেন, ‘এখন পর্যন্ত ঢাকা শহর বায়ু দূষণে এক নম্বরে আছে, অথচ কেউ কোনো পাত্তা দিচ্ছেন না। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা নিয়মিত এ বিষয়ে বলে যাচ্ছেন।’
আরও পড়ুন:বোনকে নিয়ে মিথ্যা রটানোর অভিযোগে ভাই শাহনেওয়াজ আহমেদ শিশিরের বিরুদ্ধে ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজের করা মামলার কার্যক্রম ছয় মাসের জন্য স্থগিত করেছে হাইকোর্ট।
একই সঙ্গে এ মামলাটি কেন বাতিল ঘোষণা করা হবেনা তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন আদালত।
মামলা বাতিল চেয়ে করা আবেদনের শুনানি নিয়ে মঙ্গলবার বিচারপতি মো. সেলিম ও বিচারপতি মো. রিয়াজ উদ্দিন খানের হাইকোর্ট বেঞ্চে আদেশ দেন।
আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী ব্যারিস্টার মনযুর রাব্বি, সঙ্গে ছিলেন এম আনিসুজ্জামান।
আদেশের বিষয়টি নিশ্চিত করে আইনজীবী মনযুর রাব্বি বলেন, ‘একই দিনে তুরিন আফরোজ এবং তার ভাই শাহনেওয়াজ থানায় জিডি করেন। কিন্তু পুলিশ ভাইয়ের জিডি না নিয়ে বোনের জিডি নিয়ে মামলা ফাইল করে, যা উদ্দেশ্য প্রণোদিত। এই বিবেচনায় মামলাটি বাতিলযোগ্য। আদালত আমাদের শুনানি নিয়ে মামলার কার্যক্রম স্থগিত করে রুল জারি করে।’
ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজের ভাই শাহনেওয়াজ আহমেদ শিশিরের বিরুদ্ধে ২০২১ সালের ৩১ অক্টোবর অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর নির্দেশ দেয় আদালত।
২০১৯ সালের ১৪ জুন বাস ভবনে জোরপূর্বক প্রবেশ করতে চাওয়ার জন্য এবং তুরিন আফরোজকে প্রাণনাশসহ নানারূপ অশালীন হুমকি দেয়ার কারণে উত্তরা পশ্চিম থানাতে নিজের মা ও ভাইয়ের বিরুদ্ধে একটি পাল্টা জিডি করেন তুরিন আফরোজ।
পরবর্তীতে তদন্তে ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজের করা জিডির সত্যতা প্রমাণিত হয়। এতে তদন্তকারী কর্মকর্তা ২০১৯ সালের ২২ সেপ্টেম্বর তুরিন আফরোজের মা ও ভাইয়ের বিরুদ্ধে উত্তরা পশ্চিম থানায় মামলা করেন। ঢাকার বিজ্ঞ মেট্রোপলিটান ম্যাজিস্ট্রেট মামলাটি আমলে নেয়। ২০২০ সালের ২৭ নভেম্বর আসামি শাহ নাওয়াজ শিশিরের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে।
এ মামলায় তিনি ২০২১ সালের ৫ ডিসেম্বর আদালতে আত্মসমর্পন করে জামিন নেন। এরপর মামলায় অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর নির্দেশ দেন বিচারিক আদালত। এদিকে মামলা বাতিল চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেন তুরিন আফরোজের ভাই শাহনেওয়াজ।
আরও পড়ুন:একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত পলাতক দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
সোমবার রাতে র্যাব-২ এর একটি দল রাজধানীর দক্ষিণখান ও আশুলিয়া এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন নকিব হোসেন আদিল সরকার ও মোখলেসুর রহমান মুকুল।
মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
তিনি বলেন, ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় ময়মনসিংহের ত্রিশালের কাকচর গ্রামের ইউনুছ আলী নামের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা নদী পারাপারে সহযোগী মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্য করতেন।
র্যাবের এই কর্মকর্তা জানান, মুক্তিযোদ্ধাদের নদী পারাপারে সহযোগিতার কারণে রাজাকার বাহিনীর সদস্যরা বীর মুক্তিযুদ্ধা ইউনুছ আলীকে রাজাকারদের ক্যাম্পে ধরে নিয়ে যায় এবং রাজাকার ক্যাম্পের টর্চার সেলে নির্যাতনের পর ১৫ আগস্ট সকালে তাকে গুলি করে হত্যা করে।
এ ঘটনায় শহীদ ইউনুস আলীর ছেলে ২০১৫ সালের ২৮ ডিসেম্বর ময়মনসিংহের বিচারিক আদালতে নকিব হোসেন আদিল সরকার ও মোখলেছুর রহমান মুকুলসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন। পরে আদালত বিচারিক কার্যক্রমের জন্য মামলাটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে পাঠায়।
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ২০১৭ সালে অভিযোগের তদন্ত শেষে তদন্ত সংস্থা নকিব হোসেন ও মোখলেছুরসহ ৯ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে মামলাটির তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে। গত ২৩ জানুয়ারি এ দুজনসহ ৭ জনকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেয় আদালত।
র্যাব জানায়, গ্রেপ্তার নকিব হোসেন ও মোখলেছুর ২০১৫ সালে মামলার তদন্ত কাজ শুরু হওয়ার পর থেকেই পলাতক ছিলেন। ২০১৭ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করলে তারা আত্মগোপনে চলে যান।
গ্রেপ্তার এড়াতে নাকিব রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় এবং মোখলেছুর আশুলিয়া ইপিজেড এলাকায় বিভিন্ন ভাড়া বাসায় বসবাস শুরু করেন। তারা দুইজনেই একাধিকবার বাসা পরিবর্তন করেন।
র্যাব আরও জানায়, এ সময় পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে তারা অন্যের রেজিস্ট্রেশন করা সিমকার্ড দিয়ে মোবাইল ফোনে ব্যবহার করতেন।
আরও পড়ুন:মানব পাচার আইনের মামলায় জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত নৃত্যশিল্পী ও কোরিওগ্রাফার ইভান শাহরিয়ার সোহাগের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন ফের পেছাল। প্রতিবেদন জমার জন্য আগামী ১৯ ফেব্রুয়ারি দিন ঠিক করেছে আদালত।
মঙ্গলবার ঢাকা মহানগর হাকিম মো. শাকিল আহাম্মদের আদালতে এ মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য দিন ধার্য ছিল। কিন্তু মামলার তদন্ত সংস্থা পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ-সিআইডি প্রতিবেদন দাখিল করতে না পারায় বিচারক নতুন দিন ধার্য করেন।
২০২০ সালের ১১ সেপ্টেম্বর রাতে রাজধানীর নিকেতন থেকে ইভানকে গ্রেপ্তার করে সিআইডি। দুবাই পুলিশের দেয়া তথ্যে মানব পাচারকারী চক্রের সদস্য আজম খান ও তার চার সহযোগীকে গ্রেপ্তারের পর তাদের দেয়া তথ্যে ইভানকে গ্রেপ্তার করা হয়।
সিআইডি সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ সালের ২ জুলাই চক্রের মূল হোতা আজম খানসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে মানব পাচার আইনে লালবাগ থানায় মামলা করেন সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার মৃণাল কান্তি শাহ।
মামলার নথিতে বলা হয়, এই চক্রটি মূলত দুবাইসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশের ড্যান্স বারে চাকরি দেয়ার কথা বলে নারী পাচার করত। দুবাইয়ে আজম খানের নিজস্ব হোটেল ও ড্যান্স বার আছে। দেশে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যারা নাচ-গান করেন তাদের বেশি আয়ের প্রলোভন দেখিয়ে পাচার করা হতো। সেখানে নিয়ে নৃত্যশিল্পীদের যৌনকর্মে বাধ্য করা হতো।
ইভান শাহরিয়ার সোহাগ নিজের নামে একটি প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করতেন। বিভিন্ন অনুষ্ঠানের নাচে অংশ নিত তার দল। ২০১৭ সালে নির্মিত ‘ধ্যাততেরেকি’ চলচ্চিত্রে নৃত্য পরিচালনার জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান তিনি।
আরও পড়ুন:দল হিসেবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীকে দেয়া নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের সার সংক্ষেপ প্রস্তুত করতে চূড়ান্তভাবে দুই মাস সময় দিয়েছে আপিল বিভাগ।
মঙ্গলবার প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীসহ তিন বিচারকের আপিল বেঞ্চ এ আদেশ দেয়।
আদালতে জামায়াতের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী জয়নুল আবেদীন তুহিন। আর রিটের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর।
তানিয়া আমীর বলেন, ‘মামলাটি শুনানি করার জন্য আমরা অনেকবার উদ্যোগ নিয়েছি। আদালত তাদের (জামায়াত) অনেকবার সময় দিয়েছে। তারা গড়িমসি করে রেডি করছে না। আজকে ফাইনাল আদেশ দিল আদালত। যদি আট সপ্তাহের মধ্যে ফাইল (আপিলের সার সংক্ষেপ) শুনানির জন্য রেডি না করে তাহলে ডিফল্ট (খারিজ) হয়ে যাবে।’
জামায়াতের আইনজীবী মতিউর রহমান আকন্দ বলেন, ‘আজকে আপিল বিভাগের কার্যতালিকায় বিষয়টি ছিল। আদালত আগামী দুই মাসের জন্য সময় দিয়েছে। এ দুই মাসের মধ্যে কনসাইজ স্টেটমেন্ট (আপিলের সার সংক্ষেপ) জমা দেয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছে। আর কোনো সময় দেবে না বলে উল্লেখ করেছে।’
তিনি বলেন, ‘আদালতের আদেশ অনুসারে মামলার শুনানিতে জামায়াতে ইসলামী অংশ নেবে। আশা করি জামায়াত নিবন্ধন ফিরে পাবে। আর দুই মাসের মধ্যে সার সংক্ষেপ প্রস্তুত করতে পারব।
‘আমাদের প্রধান আইনজীবী সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এজে মোহাম্মদ আলী। এ ছাড়া ব্যারিস্টার ইমরান সিদ্দিক ও এহসান সিদ্দিক আইনজীবী হিসেবে নিযুক্ত আছেন। তারা এ মামলাটি পরিচালনা করবেন।’
জামায়াতকে দেয়া নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নিবন্ধন ২০১৩ সালের ১ আগস্ট অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেয় বিচারপতি এম মোয়াজ্জাম হোসেন, বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি কাজী রেজা-উল-হকের হাইকোর্টের বৃহত্তর বেঞ্চ।
সে সময় সংক্ষিপ্ত রায়ে আদালত বলেছিল, এ নিবন্ধন দেয়া আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত। একই সঙ্গে আদালত জামায়াতকে আপিল করারও অনুমোদন দেয়।
তবে এ রায়ের স্থগিতাদেশ চেয়ে জামায়াতের করা আবেদন একই বছরের ৫ আগস্ট খারিজ করে দেন আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী। পরে ২ নভেম্বর পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হলে জামায়াতে ইসলামী আপিল করে।
এর আগে ২০০৯ সালের ২৭ জানুয়ারি হাইকোর্ট বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন কেন আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভুত এবং গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের ৯০বি (১) (বি) (২) ও ৯০ (সি) অনুচ্ছেদের লঙ্ঘন ঘোষণা করা হবে না- তা জানতে চেয়ে রুল জারি করে আদালত।
এ রুলের দীর্ঘ শুনানি শেষে ২০১৩ সালের ১২ জুন রায়ের জন্য অপেক্ষমান রাখে আদালত। পরে ওই বছরের ১ আগস্ট রায় দেন হাইকোর্ট।
২০০৮ সালের ৪ নভেম্বর জামায়াতকে সাময়িক নিবন্ধন দেয়া হয়। সে সময় সংবিধানে আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস, বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম ও রাষ্ট্র ধর্ম ইসলামের কথা ছিল।
বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের সেক্রেটারি জেনারেল সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরী, জাকের পার্টির মহাসচিব মুন্সি আবদুল লতিফ, সম্মিলিত ইসলামী জোটের প্রেসিডেন্ট মওলানা জিয়াউল হাসানসহ ২৫ জন জামায়াতের নিবন্ধনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০০৯ সালে রিট আবেদন করেন।
এর পরিপ্রেক্ষিতে বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক (পরে প্রধান বিচারপতি) ও বিচারপতি মো. আবদুল হাইয়ের হাইকোর্ট বেঞ্চ ২০০৯ সালের ২৭ জানুয়ারি রুল জারি করে।
রুল জারির পর ওই বছরের ডিসেম্বরে একবার, ২০১০ সালের জুলাই ও নভেম্বরে দুবার এবং ২০১২ সালের অক্টোবর ও নভেম্বরে দুবার তাদের গঠনতন্ত্র সংশোধন করে নির্বাচন কমিশনে জমা দেয়। এসব সংশোধনীতে দলের নাম ‘জামায়াতে ইসলামী, বাংলাদেশ’ পরিবর্তন করে ‘বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী’ করা হয়।
মন্তব্য