ফেনীর পরশুরামে সীমান্তের ওপারে পড়ে থাকা বাংলাদেশী কৃষকের মরদেহ ১৭ দিন পর গলিত অবস্থায় ফেরত দিয়েছে সেদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী- বিএসএফ।
বিলোনিয়া ইমিগ্রেশনে চেকপোস্ট দিয়ে মঙ্গলবার দুপুরে বিজিবি ও পুলিশের কাছে কৃষক মেজবাহার উদ্দিনের লাশ হস্তান্তর করে ভারতীয় বাহিনীটি।
ফেনীর পরশুরাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি সাইফুল ইসলাম এসব নিশ্চিত করেছেন।
মেজবাহর বাঁশপদুয়া উত্তরপাড়ার মফিজুর রহমানের ছেলে। গত ১৩ নভেম্বর বাঁশপদুয়া এলাকা থেকে বিএসএফ তাকে ধরে নিয়ে হত্যা করে বলে অভিযোগ তার স্ত্রী মরিয়ম আক্তারের।
তিনি এর আগে জানিয়েছিলেন, সেদিন বিকেলে সীমান্ত এলাকায় যান মেজবাহার। সেখানে বিএসএফের সদস্যরা তাকে আটক ও মারধর করে বলে স্থানীয় লোকজন দেখতে পান। কিছুক্ষণ পর গুলির আওয়াজ পাওয়া যায়। খবর পেয়ে মরিয়ম ও তার পরিচিতরা সেখানে গিয়ে খোঁজাখুঁজি করে মেজবাহরকে পাননি। এর তিন দিন পর সকালে গিয়ে কাঁটাতারের ওপারে মরদেহ পড়ে থাকতে দেখেন।
মরদেহ বুঝে নিতে মঙ্গলবার সীমান্তে আসেন মেজবাহারের স্ত্রী, তিন মেয়েসহ অন্য স্বজনরা।
স্ত্রী মরিয়ম গলিত মরদেহ দেখে বলেন, ‘লাশ দেখে চেনা যাচ্ছে না এটা কে? তারা লাশের সঙ্গেও অমানবিক আচরণ করেছে। লাশটা ঠিকমতো সংরক্ষণ করেনি। আমার স্বামীকে অন্যায়ভাবে বাংলাদেশ থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেছে।’
লাশ হস্তান্তর করতে আসেন সেদেশের ত্রিপুরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) পরিতোষ দাস। তবে ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন দেননি তিনি।
পরিতোষ জানান, লাশের মাথায় আঘাতে চিহ্ন রয়েছে। হত্যাকাণ্ডে বিএসএফের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেলে ভারতীয় আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
পরশুরাম থানার ওসি সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা লাশ গ্রহণ করেছি। ভারত লাশ উদ্ধারের সময় সেটি নষ্ট হয়ে যায়। যদি মেজবাহারের পরিবার ডিএনএ করার আবেদন করে, তাহলে রাষ্ট্র সেটি করবে।’
পরশুরাম পৌরসভার মেয়র নিজাম উদ্দিন চৌধুরী সাজেল বলেন, ‘নিহত মেজবাহারের পরিবার অত্যন্ত গরীব। সরকারের পক্ষ থেকে তাকে সহযোগিতা করা উচিত। এই হত্যাকাণ্ডের সঠিক বিচার হওয়া উচিত।’
আরও পড়ুন:রাজধানীর শুক্রাবাদের একটি বাসায় জমে থাকা গ্যাসের আগুনে স্বামী মোহাম্মদ টোটনের পর প্রাণ হারিয়েছেন তার স্ত্রী নিপা আক্তার।
শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (আইসিইউ) বুধবার রাত একটার দিকে মৃত্যু হয় ৩০ বছর বয়সী এ নারীর।
শুক্রাবাদের বাসাটিতে ২৮ সেপ্টেম্বর ভোররাত সাড়ে চারটার দিকে গ্যাসের আগুনে দগ্ধ হন পরিবারটির তিন সদস্য, যাদের ভর্তি করা হয় বার্ন ইনস্টিটিউটে।
নিপার মৃত্যুর মধ্য দিয়ে এ দুর্ঘটনায় প্রাণহানি বেড়ে দুজনে দাঁড়িয়েছে।
ইনস্টিটিউটের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) তরিকুল ইসলাম বৃহস্পতিবার জানান, শুক্রাবাদ থেকে একই পরিবারের তিন দগ্ধকে বার্ন ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় বুধবার রাতে নিপার মৃত্যু হয়, যার শরীরের ৩৫ শতাংশ পুড়ে গিয়েছিল।
তিনি আরও জানান, এর আগে হাসপাতালটিতে নিপার স্বামী টোটনের মৃত্যু হয়। বর্তমানে তাদের শিশু সন্তান ভর্তি রয়েছে, যার অবস্থাও আশঙ্কাজনক।
হাসপাতালে নিপার ভাই মানিক মিয়া জানান, তাদের গ্রামের বাড়ি নরসিংদীর রায়পুরা থানার কাচারিকান্দি গ্রামে। তার ভগ্নিপতি পরিবার নিয়ে শুক্রবাদের বাসাটিতে ভাড়া থাকতেন।
আরও পড়ুন:ঢাকার সাভার উপজেলার আশুলিয়ায় টানা ৫২ ঘণ্টা পর নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়ক অবরোধ প্রত্যাহার করেছেন সার্ভিস বেনিফিট ও ক্ষতিপূরণের দাবিতে আন্দোলনরত একটি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা।
মহাসড়ক থেকে বুধবার দুপুর ১টার দিকে আন্দোলনরত শ্রমিকরা সরে গেলে দীর্ঘ সময় পর যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
এর আগে গত সোমবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন বার্ডস গার্মেন্টসের কয়েক শত শ্রমিক।
শ্রমিকদের একজন বলেন, ‘গত তিন দিন ধরে সড়কে অবস্থান করে তারা আন্দোলন করেছেন, কিন্তু কোনো পক্ষই আমাদের সাথে কথা বলেনি।
‘আজ দুপুরে প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমাদের জানানো হয়, বার্ডস গ্রুপের মালিককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারের খবর পেয়ে সড়ক অবরোধ প্রত্যাহার করে শ্রমিকরা।’
গত ৩০ সেপ্টেম্বর লে-অফ করা বার্ডস গ্রুপের শ্রমিকদের সার্ভিস বেনিফিট ও ক্ষতিপূরণ দেয়ার দিন ধার্য করা ছিল, কিন্তু মালিকপক্ষ কোনো ধরনের পাওনাদি পরিশোধ না করে শ্রমিকদের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। এমনকি তিন মাস সময় চেয়ে কারখানার গেটে একটি নোটিশও প্রদান করে কারখানা কর্তৃপক্ষ।
সব শ্রমিক পাওনাদি পাওয়ার আশায় সকালে কারখানায় গেলে নোটিশে আরও তিন মাস সময় চাওয়ার বিষয়টি দেখতে পান শ্রমিকরা। ওই সময় উত্তেজিত হয়ে সব শ্রমিক নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের বুড়িরবাজার রোড এলাকা অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন।
অবরোধের টানা ৫৬ ঘণ্টা পর মালিককে গ্রেপ্তারের খবর পেয়ে সড়ক ছেড়ে দেন শ্রমিকরা।
আশুলিয়া থানার পরিদর্শক আবু বকর সিদ্দিক বলেন, ‘বার্ডস গ্রুপের মালিক ইঞ্জিনিয়ার মোস্তফা আনোয়ারকে আটক করা হয়েছে। এই খবর পাওয়ার পর দুপুর একটার দিকে সড়ক ছেড়ে দেন আন্দোলনরত শ্রমিকরা। পরে সড়কটিতে যান চলাচল শুরু হয়।’
আরও পড়ুন:হামলা মামলায় সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানকে জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
সুনামগঞ্জের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ফারহান সাদিকের আদালতে শুক্রবার সকাল সোয়া ১০টার দিকে হাজির করলে আদালত তাকে জেলহাজতে পাঠানোর আদেশ দেয়।
আদালত সংশ্লিষ্টরা জানান, সকালে এম এ মান্নানকে আদালতে হাজির করলে আসামিপক্ষের হয়ে আইনজীবী শফিকুল ইসলাম ও নুর আলম তার জামিন প্রার্থনা করেন। অন্যথায় অসুস্থ বিবেচনায় তাকে হাসপাতালে পাঠানোর আবেদন করেন তারা।
মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী মাসুক আলম বলেন, ‘আমরা তখন আদালতকে বলেছি, এটা দ্রুত বিচার আইনের মামলা। সংশ্লিষ্ট আদালতের বিচারকও অনুপস্থিত। শুনেছি পুলিশও রিমান্ড চাইবে। সুতরাং সংশ্লিষ্ট বিচারিক আদালতে সকল পক্ষের শুনানি হতে পারে।
‘বিচারক ফারহান সাদিক পরে এম এ মান্নানকে জেলহাজতে পাঠানোর আদেশ দেন। পরবর্তী সময়ে সংশ্লিষ্ট আদালতে শুনানি হবে বলে জানান।’
সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জের বাসভবন থেকে বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে এম এ মান্নানকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) আ ফ ম আনোয়ার হোসেন খানের নেতৃত্বে ৫০ থেকে ৬০ জন পুলিশ সদস্যের দল তাকে আটক করে সুনামগঞ্জ সদর থানায় নিয়ে আসে।
এসপি আনোয়ার সাংবাদিকদের জানান, গত ৪ আগস্ট সুনামগঞ্জ শহরে ছাত্র-জনতার ওপর হামলার ঘটনায় করা মামলার আসামি হিসেবে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
তিনি জানান, শুক্রবার এম এ মান্নানকে আদালতে হাজির করে রিমান্ড চাওয়া হবে। এ ঘটনাসহ ছাত্র-জনতার ওপর হামলার ঘটনায় তার যুক্ত থাকার বিষয়ে জানতে চাওয়া হবে।
গত ৪ আগস্ট ছাত্র-জনতার মিছিলে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের হামলার ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত দোয়ারাবাজার উপজেলার এরোয়াখাই গ্রামের জহুর আলীর ভাই হাফিজ আহমদ বাদী হয়ে ২ সেপ্টেম্বর ৯৯ জনের নাম উল্লেখসহ ২০০ জনকে আসামি করে মামলা করেন।
ওই মামলায় জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নুরুল হুদা মুকুট এক নম্বর ও এম এ মান্নানকে দুই নম্বর আসামি করা হয়েছে।
আরও পড়ুন:সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে অসহযোগ আন্দোলনের অংশ হিসেবে সোমবার ‘লংমার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি পালন করছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
পূর্বঘোষিত ‘লংমার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচির সময় পরিবর্তন করে সোমবার নির্ধারণ করে প্ল্যাটফর্মটি।
আন্দোলনের সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ সংবাদকর্মীদের এক হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে রোববার এ তথ্য জানান।
পরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে একই তথ্য দেন হাসনাত আবদুল্লাহ, সারজিস আলম, রিফাত রশিদসহ আরও কয়েকজন সমন্বয়ক।
এর আগে ‘লংমার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচির তারিখ ঘোষণা করা হয়েছিল ৬ আগস্ট, মঙ্গলবার। আর সোমবার ছিল ঢাকায় সমাবেশ আর সারা দেশে অবস্থান কর্মসূচি।
গতকাল বিকেল ৫টা ২০ মিনিটে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে কর্মসূচির তারিখ পরিবর্তনের বার্তা দেন আসিফ মাহমুদ।
বার্তায় বলা হয়, ‘‘বর্তমান পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে এক জরুরি সিদ্ধান্তে আমাদের ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি ৬ আগস্ট থেকে পরিবর্তন করে ৫ আগস্ট করা হলো। অর্থাৎ আগামীকালই (সোমবার) সারা দেশের ছাত্র-জনতাকে ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা করার আহ্বান জানাচ্ছি।’’
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘আজ অর্ধশতাধিক ছাত্র-জনতাকে খুন করা হয়েছে। চূড়ান্ত জবাব দেয়ার সময় এসে গেছে। বিশেষ করে আশপাশের জেলাগুলো থেকে সবাই ঢাকায় আসবেন এবং যারা পারবেন আজই ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয়ে যান। ঢাকায় এসে মুক্তিকামী ছাত্র-জনতা রাজপথগুলোতে অবস্থান নিন।’
এতে আরও বলা হয়, ‘এই ছাত্র-নাগরিক অভ্যুত্থানের চূড়ান্ত স্বাক্ষর রাখার সময় এসে গেছে। ইতিহাসের অংশ হতে ঢাকায় আসুন সকলে।
‘যে যেভাবে পারেন কালকের মধ্যে ঢাকায় চলে আসুন। ছাত্র-জনতা এক নতুন বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটাব।’
ঠাকুরগাঁও সদরে টাঙ্গন নদীতে গোসলে নেমে নিখোঁজ হওয়া কলেজছাত্রের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
মরদেহটি বুধবার সকাল ৯টার দিকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
ওই সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, জনপ্রতিনিধি, স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি ও ছাত্রের পরিবারের সদস্য ও স্বজনরা উপস্থিত ছিলেন।
প্রাণ হারানো রায়হান ইসলাম (১৬) ঠাকুরগাঁও পৌর শহরের মুজিবনগর গ্রামের শহিদের ছেলে।
উদ্ধারের তথ্য নিশ্চিত করে ঠাকুরগাঁও ফায়ার সার্ভিসের টিম লিডার রবিউল ইসলাম জানান, সকাল সাতটায় উদ্ধারকাজ শুরু করে রংপুর থেকে আসা ডুবরি দল ও ফায়ার সার্ভিস। প্রায় দুই ঘণ্টা উদ্ধারকাজ পরিচালনা করেন চার ডুবরি। এরই মধ্যে খবর আসে ঘটনাস্থল থেকে দুই কিলোমিটার দূরে ওই শিক্ষার্থীর মরদেহ ভেসে উঠেছে। পরে শাহপাড়ায় নদীর ঘাট সংলগ্ন এলাকা থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিস।
ছাত্রের পরিবার সূত্রে জানা যায়, সোমবার দুপুর দুইটার দিকে রায়হানসহ পাঁচ বন্ধু মিলে নদীতে গোসলে নামে। সে নিখোঁজ হওয়ার এক দিন অতিবাহিত হলেও তার পরিবারকে খবর দেয়নি বন্ধুরা। পরে জানতে পেরে পরিবারের পক্ষ থেকে ফায়ার সার্ভিসকে জানানো হয়।
ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে রংপুর বিভাগের ডুবরি দলকে খবর দেয়৷ ডুবরি দল এসে মরদেহ উদ্ধার করে।
আরও পড়ুন:কুড়িগ্রামে চলমান বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে শুক্রবার।
জেলায় ব্রহ্মপুত্র নদের পানি চিলমারী, নুনখাওয়া ও হাতিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এর ফলে প্লাবিত হয় নতুন নতুন এলাকা।
কুড়িগ্রামে এরই মধ্যে বন্যার পানি ঢুকে পড়েছে নদ-নদী তীরবর্তী ৪১ ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলের দুই শতাধিক গ্রামে। এতে বেসরকারি হিসাব অনুযায়ী, পানিবন্দি দেড় লাখ মানুষ।
জেলা প্রশাসনের হিসাব অনুযায়ী, দুর্যোগকবলিত মানুষের সংখ্যা ৬২ হাজার ২০০।
বন্যার পানিতে ঘরবাড়ি তলিয়ে যাওয়ায় দুর্ভোগে পড়েছেন মানুষজন। বানভাসি পরিবারগুলো বসতবাড়িতে বাঁশের মাচান, নৌকা ও কলাগাছের ভেলায় আশ্রয় নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে।
অনেক পরিবারে গত পাঁচ দিন ধরে চুলা জ্বলছে না। বন্যার পানিতে ভেসে যায় তাদের গৃহপালিত পশুপাখি। চারণভূমি তলিয়ে যাওয়ায় দেখা দেয় গো-খাদ্যের তীব্র সংকট।
বানভাসিদের অনেকেই গবাদি পশুসহ বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ও আশ্রয়কেন্দ্রে কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন।
জেলায় গ্রামাঞ্চলের কাঁচা-পাকা সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে। এমন পরিস্থিতিতে খাদ্য, বিশুদ্ধ খাবার পানি ও শুকনো খাবার এবং জ্বালানি সংকট দেখা দিয়েছে বানভাসিদের। স্যানিটেশন ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন তারা।
প্লাবিত যেসব অঞ্চল
জেলার ৯টি উপজেলাই বন্যা কবলিত। এর মধ্যে ব্রহ্মপুত্র নদের অববাহিকায় ছয়টি উপজেলা আক্রান্ত বেশি। ভারতের আসাম-মেঘালায় রাজ্যে ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়ে বাংলাদেশের কুড়িগ্রাম জেলায়।
ভারতের আসাম রাজ্যের ধুবড়ি জেলা হয়ে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করছে কুড়িগ্রাম জেলার উলিপুর,নাগেশ্বরী এবং রৌমারী উপজেলা দিয়ে।
ভারতের পাহাড়ি ঢল আর ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে ব্রহ্মপুত্র নদের তিনটি পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে করে কুড়িগ্রামের ছয়টি উপজেলার দেড় লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ার পাশাপাশি কয়েক হাজার ঘরবাড়ি নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে।
ব্রহ্মপুত্র নদের প্রবেশপথে যেসব ইউনিয়ন আক্রান্ত হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে নাগেশ্বরী উপজেলার কচাকাটা, নারায়ণপুর, নুনখাওয়া, কালিগঞ্জ, বল্লভের খাস ও কেদার।
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার ঘোগাদহ, যাত্রাপুর ও পাঁচগাছি প্লাবিত হয়েছে । উলিপুর উপজেলার সাহেবের আলগা, হাতিয়া প্লাবিত হয়।
চিলমারী উপজেলার রাণীগঞ্জ, অষ্টমিরচর, নয়ারচর, চিলমারী সদর ও রমনা এলাকায় বন্যার পানি ঢুকে পড়েছে।
রৌমারী উপজেলার দাঁতভাঙ্গা, রৌমারী সদর, বন্দবের, চরশৌলমারী ও যাদুরচর প্লাবিত হয়। এ ছাড়া রাজিবপুর উপজেলার কোদালকাটি, মোহনগঞ্জ, রাজিবপুর সদর ইউনিয়নের মানুষ বেশি আক্রন্ত হয়েছে।
কুড়িগ্রাম সদরের পাঁচগাছী ইউনিয়নের মিলপাড়া এলাকার আবদুল মতিন বলেন, ‘পানি হু হু করে বাড়ছে। ঘরেও পানি প্রবেশ করেছে। চিন্তাভাবনা করছি উঁচু স্থানে আশ্রয় নেয়ার।’
সদরের যাত্রাপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আবদুল গফুর বলেন, ‘আমার ইউনিয়নের অনেক চর ও দ্বীপ চর তলিয়ে গেছে। অনেক কষ্টে বসবাস করছে চরের মানুষ।
‘এ ছাড়াও কুড়িগ্রাম-যাত্রাপুর সড়কের দুটি স্থানে পানি ওঠায় যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। এ ইউনিয়নে পানিবন্দি মানুষের সংখ্যা ৩০ হাজারের বেশি।’
পানি উন্নয়ন বোর্ড কুড়িগ্রামের নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিবুল হাসান জানান, আগামী ৪৮ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্রসহ অন্যান্য নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকতে পারে। ব্রহ্মপুত্রের পানি তিনটি পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অন্যান্য নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার নিচে।
জেলা ত্রাণ ও পুর্নবাসন কর্মকর্তা আবদুল হাই সরকার জানান, এখন পর্যন্ত বানভাসিদের জন্য ৯ উপজেলায় ২৮২ টন চাল ও ২১ লাখ ৮৫ হাজার টাকা বিতরণের জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। মজুত আছে ৩৯৫ টন চাল, আট লাখ ৫০ হাজার টাকা ও ৫০০ প্যাকেট শুকনা খাবার। এগুলো পর্যায়ক্রমে বিতরণ করা হবে।
জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ জানান, সরকারের নির্দেশনায় স্থানীয় প্রশাসন বন্যার্তদের পাশে থেকে দুর্ভোগ কমাতে সব ধরনের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। শুক্রবার সকাল থেকে উলিপুর ও সদর উপজেলার বন্যাদুর্গত এলাকা পরিদর্শন এবং বন্যার্ত মানুষের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করেন রংপুর বিভাগীয় কমিশনার জাকির হোসেন।
তিনি জানান, জেলার ৯ উপজেলার সবগুলো বন্যা কবলিত। বন্যার্তদের জন্য ৪০৪টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এখন পর্যন্ত আশ্রয়কেন্দ্রে গেছেন এক হাজার ২৪৬ জন।
ডিসি আরও জানান, শুক্রবার ৯ উপজেলায় দুই হাজার ৮৫০টি পরিবারের মধ্যে ২৮ টন চাল বিতরণ করা হয়। এ ছাড়া শুকনা খাবার, তেল, ডালসহ প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীও বিতরণ করা হয়।
আরও পড়ুন:ভারত থেকে চোরাচালানের মাধ্যমে চিনি এনে দেশে বিক্রি চক্রে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে কিশোরগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি আনোয়ার হোসেন মোল্লা সুমন ও তার স্বজন নাজমুল হীরার বিরুদ্ধে। ইতোমধ্যেই বিষয়টি নজরে এসেছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের।
সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান বলেন, ‘কিশোরগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন মোল্লা সুমনের বিরুদ্ধে চিনি চোরাচালানে সম্পৃক্ততার অভিযোগটি আমাদের নজরে এসেছে। আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখছি। এ বিষয়ে তদন্ত সাপেক্ষে শিগগিরই সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
সম্প্রতি চোরাচালানের চিনিসহ একটি ট্রাক আটক করে পুলিশ। ট্রাকটি সুমন ও হীরার ঘনিষ্ঠ একজন আনেন বলে খবর চাউর হয়, মামলার আসামি করা হয় ছাত্রলীগের অন্য এক নেতাকে। ওই নেতার দাবি, চোরাই চিনিবোঝাই ট্রাক ধরিয়ে দিতে তিনি সহযোগিতা করেছেন।
তিনি বলেন, ‘সুমন নিজে বাঁচতে ও তার ভাগ্নে হীরাকে বাঁচাতে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে তাকে মামলায় আসামি করা হয়েছে।’
ভারতীয় অবৈধ চিনি বোঝাই ট্রাকটি আটকের পর চোরাকারবারীদের সঙ্গে জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি আনোয়ার হোসেন মোল্লা সুমন যেসব বার্তা আদান-প্রদান করেছেন, তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
বার্তা আদান-প্রদানের স্ক্রিনশটে দেখা যায়, সুমন নিয়মিত খোঁজ রাখছেন কয়টা গাড়ি শহরে প্রবেশ করেছে এবং তাকে কী পরিমাণ টাকা দিতে হবে।
একটি বার্তায় সুমন লেখেন, ‘কত করে কত দিনের দিছস?’ জবাবে তাকে বলা হয়, ‘ছয় দিনের ১০ করে।’ উত্তরে সুমন লেখেন, ‘তোরে না বলছি প্রতিদিন ১৫ করে দিতে?’ আরেকটি মেসেজে সুমন জানতে চেয়েছেন, ‘সকালে গাড়ি কয়টা এসেছে?’ জবাব আসে, ‘ওইদিকে ঝামেলা। কালকে দুইটা আসবে।’
এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন মোল্লা সুমনের সঙ্গে একবার ফোনে সংক্ষিপ্ত কথা হয়। চিনির ট্রাক আটকের ঘটনায় সে সময় তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পুলিশ যাদের সম্পৃক্ততা পেয়েছে, তাদের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। এ ঘটনায় যদি আমার কোনো সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়, তাহলে আমার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা গ্রহণ হবে। এতে তো কোনো সমস্যা নেই!’
ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের এই চোরাচালানে জড়িত থাকার বিষয়টি স্বীকার করে নিয়েছেন তিনি।
সুমন বলেন, ‘যারা চোরাই কারবারের জড়িত, তারা মূলত নামধারী ছাত্রলীগ। তারা কোনো পদ-পদবিতে না থাকায় সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়ারও সুযোগ থাকে না।’
স্ক্রিনশট ভাইরাল হলে পরবর্তীতে এ বিষয়ে তার বক্তব্য জানতে বার বার কল করা হলেও তিনি আর ফোন ধরেননি।
এ বিষয়ে জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি নাজমুল হীরার দাবি, মেসেজের স্ক্রিনশটগুলো সুমনের নয়।
তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন সফটওয়্যারের মাধ্যমে এগুলো বানানো যায়। তা ছাড়া মেসেজের কোথাও কি লেখা আছে যে, কীসের গাড়ি? বৈধ চিনির গাড়ি, নাকি অবৈধ চিনির গাড়ি?’
অনেক আগে থেকেই সুমন ও তার অনুসারীদের বিরুদ্ধে শহরের সিএনজি অটোরিকশা স্ট্যান্ড থেকে চাঁদা আদায়, টাকার বিনিময়ে উপজেলা কমিটির অনুমোদনসহ নানা অভিযোগ রয়েছে। আর এসব অভিযোগ এনেছেন ছাত্রলীগের স্থানীয় নেতা-কর্মীরাই।
দৃশ্যমান আয়ের উৎস না থাকলেও ছাত্রলীগের কমিটিতে নাম আসার পর সুমন বেশ বিত্তশালী হয়ে গেছেন। তার নির্মিত ডুপ্লেক্স বাড়িতে বিলাস আর খরচের ছাপ স্পষ্ট।
স্থানীয়রা জানান, শহরের একাধিক এলাকায় জমি কিনেছেন মোল্লা সুমন। এর একটি জমির দামই নাকি কোটি টাকার বেশি।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য