× হোম জাতীয় রাজধানী সারা দেশ অনুসন্ধান বিশেষ রাজনীতি আইন-অপরাধ ফলোআপ কৃষি বিজ্ঞান চাকরি-ক্যারিয়ার প্রযুক্তি উদ্যোগ আয়োজন ফোরাম অন্যান্য ঐতিহ্য বিনোদন সাহিত্য শিল্প ইভেন্ট উৎসব ধর্ম ট্রেন্ড রূপচর্চা টিপস ফুড অ্যান্ড ট্রাভেল সোশ্যাল মিডিয়া বিচিত্র সিটিজেন জার্নালিজম ব্যাংক পুঁজিবাজার বিমা বাজার অন্যান্য ট্রান্সজেন্ডার নারী পুরুষ নির্বাচন রেস অন্যান্য আফগানিস্তান ১৫ আগস্ট কী-কেন স্বপ্ন বাজেট আরব বিশ্ব পরিবেশ বিশ্লেষণ ইন্টারভিউ মুজিব শতবর্ষ ভিডিও যৌনতা-প্রজনন মানসিক স্বাস্থ্য অন্যান্য উদ্ভাবন প্রবাসী আফ্রিকা ক্রিকেট শারীরিক স্বাস্থ্য আমেরিকা দক্ষিণ এশিয়া সিনেমা নাটক মিউজিক শোবিজ অন্যান্য ক্যাম্পাস পরীক্ষা শিক্ষক গবেষণা অন্যান্য কোভিড ১৯ ইউরোপ ব্লকচেইন ভাষান্তর অন্যান্য ফুটবল অন্যান্য পডকাস্ট বাংলা কনভার্টার নামাজের সময়সূচি আমাদের সম্পর্কে যোগাযোগ প্রাইভেসি পলিসি

বাংলাদেশ
What is going to happen in Dhaka on December 10?
google_news print-icon

১০ ডিসেম্বর কী হতে যাচ্ছে ঢাকায়?

১০-ডিসেম্বর-কী-হতে-যাচ্ছে-ঢাকায়?-
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমানের একটি বক্তব্যের পর রাজনৈতিক অঙ্গনে ১০ ডিসেম্বর আলোচনার কেন্দ্রে চলে আসে। এর পর দিনটিকে ঘিরে পাল্টাপাল্টি উত্তেজনাকর বক্তব্য আসে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, অন্যান্য বিএনপি নেতাসহ প্রগতিশীল ও বামপন্থি নেতাদের কাছ থেকে। ছবি কোলাজ: নিউজবাংলা
একদিকে বিএনপি নেতাদের হুঁশিয়ারি, অন্যদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কঠোর বার্তা ১০ ডিসেম্বরকে আলোচনার কেন্দ্রে নিয়ে এসেছে। বিএনপি বলছে, এ দিন তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের রূপরেখা ও এটি মেনে নেয়ার আলটিমেটাম দেবে। দিনটি নিয়ে ক্ষমতাসীন দলের পক্ষ থেকেও প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে।

বাংলাদেশের রাজনীতিতে হঠাৎ করেই আলোচিত বিষয় হয়ে উঠেছে ১০ ডিসেম্বরের দিনটি। প্রায় দেড় যুগ ধরে ক্ষমতার বাইরে থাকা দল বিএনপি এ দিন তাদের ধারাবাহিক বিভাগীয় সমাবেশের ইতি টানবে ঢাকায় সমাবেশের মধ্য দিয়ে।

১০ ডিসেম্বরের এই সমাবেশে বিপুল লোকসমাগম করতে চায় বিএনপি। এ নিয়ে সরকারি দলের পক্ষ থেকেও পাড়া-মহল্লায় সতর্ক প্রহরাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি দেয়া হচ্ছে।

গত ১২ অক্টোবর চট্টগ্রাম থেকে শুরু হওয়া বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশে নেতা-কর্মীদের বিপুল সমাগম ঘটে, যা দলটির এত দিনকার রাজনৈতিক কর্মসূচিগুলোর তুলনায় ছিল ব্যতিক্রম। এরপর ২২ অক্টোবর খুলনা, ২৯ অক্টোবর রংপুর, ৫ নভেম্বর বরিশাল, ১২ নভেম্বর ফরিদপুর, ১৯ নভেম্বর সিলেটে ও ২৬ নভেম্বর কুমিল্লায় গণসমাবেশ করে বিএনপি। আগামী ৩ ডিসেম্বর রাজশাহীতে গণসমাবেশের পর ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় হবে মহাসমাবেশ।

দিনটি উপলক্ষে একদিকে বিএনপি নেতাদের হুঁশিয়ারি, অন্যদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কঠোর বার্তায় আমানউল্লাহ আমান বলেন, ‘১০ ডিসেম্বর থেকে দেশ চলবে খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমানের নির্দেশে।’

এ সমাবেশকে ঘিরে রাজধানীতে আওয়ামী লীগের পাল্টা কর্মসূচিসহ সতর্ক পাহারা বসানোর পরিকল্পনায় দিনটি ভিন্ন মাত্রা পাচ্ছে। অনেকে রাজনৈতিক সংঘাতের শঙ্কাও করছেন।

ফলে ১০ ডিসেম্বর এলেই ঢাকায় কী হতে যাচ্ছে, তা নিয়ে জনমনে কৌতূহল দেখা দিয়েছে।

১০ ডিসেম্বর তারা কী করতে যাচ্ছেন, জানতে চাওয়া হলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ঢাকায় সমাবেশ হবে, যেমনটা হয়েছে চট্টগ্রামে, যেমনটা হয়েছে সিলেটে। বিস্তারিত পলিসির অন্তর্ভুক্ত। সময়মতো জানতে পারবেন।’

দলীয় সূত্র জানায়, বিষয়টি নিয়ে শিগগিরই সংবাদ সম্মেলন করবে বিএনপি। সেখানে ১০ ডিসেম্বর ঢাকার গণসমাবেশ নিয়ে নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করবে বিএনপি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির এক সিনিয়র নেতা বলেন, ‘সমাবেশ শান্তিপূর্ণভাবেই হবে। তবে ঢাকা দেশের মূল কেন্দ্র। তাই এটা নিয়ে আওয়াজও বেশি। আর বাকি বিভাগে জনস্রোত দেখে সরকার ভয় পেয়েছে। তাদের মন্ত্রী-আমলারাই এটাকে রণক্ষেত্র বানিয়ে তুলছে। তবে বাধা এলে বিএনপি বসে থাকবে না, পিছুও হটবে না।’

পাল্টাপাল্টি হুঁশিয়ারি

খালেদা জিয়ার নির্দেশে দেশ চলা সংক্রান্ত আমানউল্লাহ আমানের বক্তব্যের ধারাবাহিক সুর শোনা যায় দলটির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানির কণ্ঠে। এ্যানি বলেন, ‘১০ ডিসেম্বর থেকেই সরকার আর কাজ করবে না। দেশ চলবে বিএনপির শীর্ষ নেতার কথায়।’

পরদিন দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক বলেন, ‘১০ ডিসেম্বর ঢাকায় সমাবেশ হবে ‘আটলান্টিক মহাসাগরের’ মতো। এই সমাবেশে খালেদা জিয়া যাবেন।’

এর আগে গত ২ অক্টোবর বিএনপির সঙ্গে সংলাপ শেষে কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম সাংবাদিকদের বলেন, ‘চমক আছে সামনে।’

বিএনপি ও তার সমমনা দলের নেতাদের এসব বক্তব্যকে সামনে এনে কথা বলা শুরু করেন ক্ষমতাসীন দলের মন্ত্রী-নেতারা। ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে ঢাকার প্রবেশমুখে সমাবেশ এবং পাড়া-মহল্লায় সতর্ক পাহারায় থাকার ঘোষণা দেয়া হয় ক্ষমতাসীন দলের পক্ষ থেকে।

‘১০ ডিসেম্বরের পর বিএনপিকে লালকার্ড দেখানো হবে’ বলে হুঁশিয়ার করে দেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। ৩১ অক্টেবর গাজীপুরে যুব মহিলা লীগের সম্মেলনে এই হুঁশিয়ারি দেন তিনি।

রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে ৪ নভেম্বর এক অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘১০ ডিসেম্বর বিএনপির আন্দোলনের পতন ঘণ্টা বাজবে।’

৫ নভেম্বর রাজধানীর বাড্ডায় আরেক অনুষ্ঠানে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বিএনপিকে আর ছাড় দেয়া হবে না। ডিসেম্বরে খেলা হবে, প্রস্তুত হয়ে যান।’

৩১ অক্টোবর বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে এক সভায় যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ বলেন, ‘বিএনপিকে মোকাবিলা করার জন্য যুবলীগ প্রস্তুত আছে। আগামী ১০ ডিসেম্বর রাজপথে থাকবে যুবলীগ।’

আওয়ামী লীগের এমন কঠোর হুঁশিয়ারি প্রসঙ্গে আমানউল্লাহ আমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কে কী বলল, সেটা এখন আমরা ভাবছি না, আমলে নিচ্ছি না। আমাদের আট বিভাগে ইতিমধ্যে সমাবেশ হয়ে গেছে। এগুলোতে আওয়ামী লীগ নানাভাবে বাধা দিয়েছে। গণপরিবহন বন্ধ করে দেয়া থেকে শুরু করে গ্রেপ্তার, মিথ্যা মামলাসহ সর্বাত্মক চেষ্টা করেছে। কিন্তু এসব উপেক্ষা করেই প্রতিটি বিভাগীয় সমাবেশে জনস্রোত দেখিয়েছি। ঢাকার সমাবেশের আগেও এমন নানা চাল চালতে পারেন। তবে সেসব উপেক্ষা করেই নয়াপল্টনে লাখো মানুষের সমাগম হবে।’

তবে ঢাকায় নয়াপল্টনে সমাবেশের অনুমোদন এখনো পায়নি দলটি। তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, বিএনপি চাইলে তাদের সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মহাসমাবেশ করার অনুমতি দেয়া হবে।

নয়াপল্টনে সমাবেশের অনুমতি না পেলে কী করবেন জানতে চাইলে দলটির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, ‘আমরা ডিএমপি কমিশনারকে সব কিছু বলে এসেছি। অনেক কিছু স্মরণ করিয়ে দিয়েছি। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের দেশের জন্য অবদানের কথাও স্মরণ করিয়ে দিয়ে আসছি। আশা করি সমাবেশের অনুমতি দিবেন। কোনো রাজনৈতিক দলের হুমকি, হুঁশিয়ারি আমরা তোয়াক্কা করি না।’

অনুমিত না পেলেও সমাবেশ করবেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অবশ্যই অনুমতি দেবে। আমরা সমাবেশ করব। সমাবেশে যাতে কেউ বিশৃঙ্খলা করতে না পারে, সে বিষয়ে পুলিশের সার্বিক সহযোগিতা চেয়েছি।’

বিএনপি কী করতে চায়?

১০ ডিসেম্বরের পরিকল্পনা নিয়ে বিএনপির সিনিয়র নেতা থেকে তৃণমূল পর্যায়ে একাধিক নেতা-কর্মীর সঙ্গে কথা বলেছে নিউজবাংলা।

বিএনপির নেতারা বলছেন, সারা দেশে বিভাগীয় পর্যায়ে যে গণসমাবেশ তারা করেছেন, তারই ধারাবাহিকতায় ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় গণসমাবেশ হবে। ৯টি বিভাগে সমাবেশের পর ঢাকায় তাদের শেষ গণসমাবেশ। এই সমাবেশ ঘিরে ঢাকা দখল বা অবরুদ্ধ করে সরকার পতনের ডাক দেওয়ার কোনো পরিকল্পনা তাদের নেই। শুধু বড় জনসমাবেশ করাই তাদের লক্ষ্য। একই সঙ্গে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আদায়ে আলটিমেটাম ও যুগপৎ আন্দোলনের রূপরেখা ঘোষণা হবে বলেও জানা যায়।

গত ১ অক্টোবর থেকে ৪ অক্টোবর পর্যন্ত অনুষ্ঠিত সভাগুলোতে দলের ১০ সাংগঠনিক বিভাগের নেতারা দলের শীর্ষ নেতৃত্বকে আন্দোলনের ধরন ও প্রক্রিয়া সম্পর্কে বিস্তারিত পরামর্শ দিয়েছেন।

এসব গণসমাবেশে বিএনপির স্থানীয় নেতারা দাবি আদায়ে কঠোর কর্মসূচি চেয়েছেন। সে ক্ষেত্রে পর্যায়ক্রমে কঠোর হওয়ার প্রস্তাব করেছেন তারা। পাশাপাশি ইস্যু হিসেবে জনসম্পৃক্ত বিষয়গুলোকে প্রাধান্য দেওয়ার জন্য শীর্ষ নেতৃত্বকে পরামর্শ দেন বিভাগের নেতারা।

বৈঠকে অংশ নেওয়া নেতাদের সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, প্রস্তাবিত কর্মসূচির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে: অবরোধ, লংমার্চ, জেলা থেকে জেলায় রোড মার্চ, ঢাকা থেকে বিভাগীয় শহরে রোড মার্চ, ৬৮ হাজার গ্রামে একই দিন গণমিছিল।

নেতদের প্রস্তাবে আরও রয়েছে, ১০ ডিসেম্বর থেকে লাগাতার কর্মসূচি প্রদান এবং সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবি।

হরতাল-অবরোধ নয়, জনস্রোত দেখানোই লক্ষ্য

বিএনপির গত দুই মাসের কর্মসূচিগুলোতে দলের নেতা-কর্মীদের উজ্জীবিত দেখা গেছে। সভা-সমাবেশগুলোতে উপস্থিতি দিন দিন বেড়েছে। আবার দলীয় নেতা-কর্মীর বাইরে সমাবেশস্থলে সাধারণ মানুষের উপস্থিতিও দেখা যাচ্ছে। বিশেষ করে, শহরকেন্দ্রিক সমাবেশগুলোতে রিকশাচালক থেকে শুরু করে সমাজের নিম্নস্তরের লোকজনের উপস্থিতি ছিল। বিএনপির সাম্প্রতিক কর্মসূচিতে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস এবং তেল-গ্যাস-জ্বালানির দাম কমানোর দাবি জানানো হয়।

১০ ডিসেম্বরের মহাসমাবেশকে ঘিরে ব্যাপক প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের আওতাভুক্ত সকল থানা ও ওয়ার্ডসহ সারা দেশ থেকে সর্বস্তরের নেতা-কর্মীদের এ মহাসমাবেশে জড়ো করে বড় ধরনের শোডাউনের চেষ্টা করছে দলটি।

সমাবেশে বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী জড়ো করতে দলের জেলা-উপজেলা পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। কেন্দ্র থেকে শুরু করে সারা দেশের সকল স্তরের বিএনপি নেতা-কর্মী নিজ নিজ অবস্থান থেকে প্রস্তুতি নিচ্ছে। কীভাবে বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মী ও সমর্থককে নিজ নিজ এলাকা থেকে মহাসমাবেশে উপস্থিত করানো যায়, সেই পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি নিচ্ছেন শীর্ষ নেতারা। এ জন্য আগেই দলটির সর্বস্তরে প্রস্তুতি কমিটি গঠন করা হয়েছে। লন্ডন থেকে তারেক রহমানও বিভিন্ন স্তরের নেতাদের সঙ্গে বিভিন্ন মাধ্যমে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।

বিএনপি সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, তারা এবার এমনভাবে আন্দোলন এগিয়ে নিতে চায়, যাতে সরকার চাপে পড়ে তাদের দাবি মেনে নেয়। তাই ২০১৩ সালের মতো এবারো তৃণমূল থেকে আন্দোলন জোরদারের কৌশল নিয়েছে দলটি।

ওই বছর ২৯ ডিসেম্বর যেভাবে সারা দেশ থেকে সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের ঢাকায় জড়ো করতে ‘রোড ফর ডেমোক্রেসি’ কর্মসূচির ডাক দিয়েছিল দলটি, একইভাবে তারা এবারো ১০ ডিসেম্বর ঢাকার মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে সারা দেশ থেকে নেতা-কর্মীদের জড়ো করতে চায়।

সূত্র জানায়, মহাসমাবেশের কয়েক দিন আগে ঢাকার বাইরে থেকে বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী জড়ো করতে ইতোমধ্যেই সংশ্লিষ্ট দলীয় নেতাদের প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন বিএনপি হাইকমান্ড। আগে আসা নেতাকর্মীদের মধ্যে যাদের ঢাকায় কোনো আত্মীয়স্বজন নেই, তাদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থাও করা হবে। এ জন্য রাজধানীর বিভিন্ন হোটেল, কমিউনিটি সেন্টার, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও নির্মীয়মাণ বিভিন্ন ভবন প্রস্তুত রাখা হয়েছে। আর রাজধানীতে বসবাসকারী বিএনপি নেতাদের বলা হয়েছে, নিজ নিজ নির্বাচনি এলাকা থেকে আসা নেতাকর্মীদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করতে।

দলের ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা এখন অব্দি শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করেছি। ঢাকার সমাবেশেও আমরা শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করতে চাই। জনগণের দাবিকে সামনে রেখেই আমাদের এসব কর্মসূচি। আর সেদিন আমাদের নতুন কর্মসূচি আসবে।’

নতুন কর্মসূচি কী আসবে—জানতে চাইলে দুদু বলেন, ‘আমাদের দলের স্থায়ী কমিটি এ বিষয়ে বৈঠক করবে। তারা আলোচনার মাধ্যমে কর্মসূচি নির্ধারণ করবে। তবে এটা বলা যায়, শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি আসবে; যদি সরকার কর্মসূচিকে ধ্বংসাত্মক পরিস্থিতির দিকে ঠেলে না দেয়।’

তবে সরকার যদি বাধা সৃষ্টি করে তবে তা মোকাবিলার জন্যেও প্রস্তুতি নিয়ে রাখছেন বলে জানান আরেক বিএনপি সিনিয়র নেতা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এ নেতা তিনি বলেন, ‘পথে-ঘাটে বাধা দিবে? আটকায় রাখবে। আমরা তো আর তামাশা দেখব না। বাধা উপেক্ষা করতে হবে। কেমন বাধা আসবে, সেটা পরিস্থিতি বিবেচনায় স্টেপ নিব। আর সে নিয়েও আমরা আগাম প্রস্তুতি নিচ্ছি।’

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আলটিমেটাম

আর এই মহাসমাবেশ থেকেই নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আদায়ে সরকারকে আলটিমেটাম দেবে দলটি। আলটিমেটাম অনুসারে দাবি না মানলে রাজপথে দুর্বার আন্দোলনের ঘোষণাও দেওয়া হবে। এ ছাড়া এই মহাসমাবেশ কর্মসূচি পালনের মাধ্যমেই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে মাঠ দখলের চেষ্টা করবে বিএনপি।

১০ ডিসেম্বরের মহাসমাবেশ থেকে কী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে এবং এই সমাবেশ থেকে দলের নেতাকর্মী, দেশের সাধারণ মানুষ ও সরকারকে বিএনপি কী বার্তা দেবে, তা ঠিক করতে বিএনপির সিনিয়র নেতারা এখনও কাজ করছেন বলে সূত্র জানায়। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে করতে ১০ ডিসেম্বরের মহাসমাবেশ থেকে মূলত একটি দাবিই উপস্থাপন করবে বিএনপি। আর এটি হচ্ছে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন।

এ ব্যাপারে সরকারকে আলটিমেটাম দেবে দলটি। আর এ আলটিমেটামের পক্ষে জনমত বৃদ্ধি করতে ও রাজপথে শক্তি প্রদর্শন করতে নতুন করে আরও কিছু ধারাবাহিক কর্মসূচি দেওয়ার চিন্তা করছে দলটির হাইকমান্ড।

গত মঙ্গলবার দলীয় এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিতে গিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, ১০ ডিসেম্বর থেকে এক দফার আন্দোলন শুরু হবে। এই ‘এক দফার আন্দোলন’ বলতে তিনি নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কথা বুঝিয়েছেন, যে সরকারের রূপরেখা মহাসমাবেশ থেকে ঘোষণা করা হবে। তিনি বলেন, ‘আমরা আন্দোলনে থাকলেও এখনও আসল ঘোষণা দেইনি, আসল ঘোষণা দেব ১০ ডিসেম্বর।’

এর আগে আরেক দলীয় কর্মসূচি পালন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বিএনপি মহাসচিব জানিয়েছিলেন, সময়মতো নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের রূপরেখা জানিয়ে দেওয়া হবে। ১৯৯৬ সালের সংবিধানের আলোকেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের রূপরেখা তৈরি করছে বিএনপি।

তিনি আরও বলেন, ‘ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি নিরঙ্কুশ আসনে বিজয়ী হয়ে ১৯৯৬ সালের ২৭ মার্চ নির্বাচনকালীন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তনে সংবিধানের সংশোধনী পাস করে। তাই আমাদের রূপরেখা তৈরি হবে সংবিধানের ওই সংশোধনীতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার যেমন ছিল, তারই আলোকে।’

যুগপৎ আন্দোলনের রূপরেখা ঘোষণা

১০ ডিসেম্বররের মহাসমাবেশ থেকে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে বিএনপির পক্ষ থেকে সরকারকে আলটিমেটাম দেওয়ার পর সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোও যুগপৎ আন্দোলন শুরু করবে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে টার্গেট করে সরকারকে চাপে ফেলতে এবার আটঘাট বেঁধে মাঠে নামতে চায় বিএনপির নেতৃত্বে ডান, বাম ও মধ্যপন্থি বেশকটি রাজনৈতিক দল। এ জন্য তাদের প্রস্তুতি প্রায় শেষ পর্যায়ে।

দলীয় সূত্রে জানা যায়, যুগপৎ এ আন্দোলন দেশের সব রাজনৈতিক দলের জন্য উন্মুক্ত থাকলেও কৌশলগত কারণে আপাতত ফ্রন্টলাইনে থাকছে না জামায়াত।

বিএনপির সঙ্গে গোপন সমঝোতার ভিত্তিতে জামায়াত এ কৌশল নিয়েছে বলে সূত্র জানায়। যুগপৎ আন্দোলনে মাঠে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি ও তাদের সমমনা দলগুলো।

এরই প্রস্তুতি হিসেবে ২ অক্টোবর থেকে শুরু হয় সমমনা দলগুলোর সঙ্গে বিএনপির দ্বিতীয় দফা সংলাপ। এ পর্যন্ত প্রায় ২০টি দলের সঙ্গে দ্বিতীয় দফা সংলাপ করেছে বিএনপি। এর আগে গত ২৪ মে থেকে সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে প্রথম দফা সংলাপ শুরু করে দলটি। প্রথম দফায় ২৩টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে দলের সিনিয়র নেতারা।

বিএনপির নেতারা বলছেন, তাদের লক্ষ্য ঢাকার সমাবেশের পর দ্বিতীয় ধাপের আন্দোলনে যাওয়া। এর মধ্যে অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনের কর্মকৌশলও ঠিক করা হবে। নির্দলীয় সরকারের রূপরেখা এবং নির্বাচনের পরে জাতীয় সরকারের কাঠামোও ঘোষণা করা হবে। মূলত ঢাকার সমাবেশ থেকেই এক দফার আন্দোলনে নামার ঘোষণা আসতে পারে বলে বিএনপির দায়িত্বশীল সূত্রগুলো থেকে জানা গেছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘১০ তারিখের পর জানতে পারবেন। সত্য মিথ্যা সামনে আসবে তখন। এখন আমরা খুবই ব্যস্ত সময় পার করছি।’

জামায়াতের সাথে জোট নিয়ে জানতে চাইলে ২০ দলীয় জোটের এই সমন্বয়ক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এত ব্যস্ততার মধ্যে এসব নিয়ে ভাবার সময় নেই। আমাদের দাবির কাতারে যারা এসে দাঁড়াবে, আমরা তাদের ওয়েলকাম জানাব।’

আরও পড়ুন:
ঝামেলা না করে নয়াপল্টন দিন: পুলিশকে ফখরুল
‘খুবই বিপদগ্রস্ত’ অর্থনীতিতে উদ্বিগ্ন দুদু
১০ ডিসেম্বরের ভয়ে ব্যাগ গোছাচ্ছেন আ.লীগ নেতারা: দাবি বিএনপির
খালেদা জিয়ার কাছে মাফ চান: আ.লীগকে বিএনপি নেতা

মন্তব্য

আরও পড়ুন

বাংলাদেশ
Another 120 people from Libya have been brought back home

লিবিয়া থেকে আরও ১২৩ জনকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছে

লিবিয়া থেকে আরও ১২৩ জনকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছে

লিবিয়া থেকে স্বেচ্ছায় দেশে ফেরার আগ্রহ প্রকাশ করা আরও ১২৩ অনিবন্ধিত বাংলাদেশি নাগরিককে গতকাল বৃহস্পতিবার দেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, এসব বাংলাদেশির সবাই বুরাক এয়ারের একটি বিশেষ চার্টার্ড ফ্লাইটে (ইউজেড ০২২২) সকাল ৯টা ৫০ মিনিটে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছান।

উল্লেখ্য, প্রত্যাগতদের অধিকাংশই মানবপাচারের শিকার। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে, ত্রিপোলিতে বাংলাদেশ দূতাবাস, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) সমন্বিত উদ্যোগে প্রত্যাবাসন কার্যক্রমটি বাস্তবায়িত হয়েছে।

দেশে ফেরার পর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং আইওএম-এর প্রতিনিধিরা তাদের স্বাগত জানান ।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অধিকাংশ বাংলাদেশি সমুদ্রপথে ইউরোপে পৌঁছানোর উদ্দেশে অনিবন্ধিতভাবে লিবিয়ায় প্রবেশ করেছিলেন। লিবিয়ায় অবস্থানকালে তাদের অনেকেই মানব পাচারকারীদের দ্বারা অপহরণ ও নির্যাতনের শিকার হন।

সরকারি কর্মকর্তারা এসব অভিবাসীকে পরামর্শ দেন, যেন তারা অন্যদের এই ধরনের বিপজ্জনক ও অবৈধ পথে বিদেশ গমনের ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতন করেন এবং ভবিষ্যতে এমন যাত্রা থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দেন।

পুনর্বাসন সহায়তার অংশ হিসেবে আইওএম প্রত্যেককে নগদ ৬ হাজার টাকা, জরুরি খাদ্য সহায়তা, প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা এবং প্রয়োজনে অস্থায়ী আবাসনের ব্যবস্থা করেছে।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, বর্তমানে লিবিয়ার বিভিন্ন বন্দিশিবিরে আটক থাকা অন্যান্য বাংলাদেশির নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনের কাজ চলছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, ত্রিপোলিতে বাংলাদেশ দূতাবাস, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং আইওএম যৌথভাবে এ বিষয়ে কাজ করে যাচ্ছে।

মন্তব্য

তদন্ত কমিশনের সংবাদ সম্মেলন

গুমের শিকার ব‍্যক্তিদের চার ধরনের পরিণতি হতো

গুমের শিকার ব‍্যক্তিদের চার ধরনের পরিণতি হতো

রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেই গুম করা হতো বলে জানিয়েছেন গুম সংক্রান্ত তদন্ত কমিটির সভাপতি বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী। গুমের শিকার ব্যক্তিদের সম্ভাব্য ৪ ধরনের পরিণতি হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর গুলশানে সংবাদ সম্মেলনে গুমসংক্রান্ত তদন্ত কমিটির সভাপতি এসব তথ্য জানান। কমিশনে দাখিল করা অভিযোগ বিশ্লেষণে এসব তথ্য দেন তিনি।

তিনি বলেন, গুমের শিকার ব্যক্তিদের সম্ভাব্য যে ৪ ধরনের পরিণতি হয়েছে, তা হলো: ১. গুমের শিকার ব্যক্তিকে হত্যা করা। ২. বিচারের আগেই মিডিয়ার সামনে উপস্থাপন করে জঙ্গি তকমা দিয়ে বাংলাদেশেই বিচারাধীন বা নতুন ফৌজদারি মামলায় গ্রেফতার দেখানো।৩. তাকে সীমান্ত দিয়ে ভারতে পাঠিয়ে সে দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের মাধ্যমে গ্রেপ্তারের ব্যবস্থা করা। ৪. ভাগ্য সুপ্রসন্ন হলে, অল্পসংখ্যক ক্ষেত্রে মামলা না দিয়ে ছেড়ে দেওয়া।

গুম কমিশনের ২য় অন্তর্বর্তী প্রতিবেদন গত ৪ জুন প্রধান উপদেষ্টা বরাবর জমা দেওয়ার পর আজ দুপুরে রাজধানীর গুলশানে গুম সংক্রান্ত কমিশন অফ ইনকোয়ারির কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে মইনুল ইসলাম চৌধুরী এ সব কথা বলেন।

গুম কমিশনের সভাপতি বলেন, বিগত কর্তৃত্ববাদী সরকারের আমলে বিরোধী রাজনৈতিক শক্তি এবং ভিন্ন মতাবলম্বীদের বিরুদ্ধে পদ্ধতিগত দমননীতির অংশ হিসেবে গুমকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছিল।

তিনি বলেন, ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পরেও বহু অপরাধী ও তাদের শুভাকাঙ্ক্ষীরা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার কেন্দ্রে থাকায় অনেক জোরালো প্রমাণ ও নিদর্শন ধ্বংস, অনেক ক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিক অসহযোগিতা, সাক্ষীদের ভয়ভীতি প্রদর্শনসহ নানারকম ভীতিকর ও আতঙ্কজনক পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। তবুও বহু ভুক্তভোগী জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তাদের অভিযোগ ও অভিজ্ঞতা জানিয়েছেন। তারা দেশীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে বিস্তারিতভাবে সে কাহিনি তুলে ধরেছেন।

গুম সংক্রান্ত কমিশন অফ ইনকোয়ারির সভাপতি আরো বলেন, বিগত সরকারের শাসনামলে গুম একটি সুশৃঙ্খল ও প্রাতিষ্ঠানিক রূপে ‘জঙ্গিবাদবিরোধী’ অভিযানের ছায়াতলে ইসলামি উগ্রবাদের হুমকিকে ব্যবহার করে রাজনৈতিক ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত করা, আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জন ও শাসন দীর্ঘায়িত করার উদ্দেশে পরিচালিত হয়েছিল। ভুক্তভোগীদের মধ্যে ছিলেন- মেধাবী শিক্ষার্থী, রাজনৈতিক কর্মী ও সাংবাদিক থেকে সাধারণ জনগণ।

মইনুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, এ প্রক্রিয়ায় তারা ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থাকে অস্ত্র বানিয়েছিল। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও নিরাপত্তা বাহিনীকে রাজনৈতিক প্রভাবাধীন করে এবং নির্যাতন ও গোপন আটকের সংস্কৃতি প্রাতিষ্ঠানিকভাবে চালু করেছিল। এমনকি সাধারণ নাগরিকদের বেআইনি পন্থায় বারবার ভারতীয় বাহিনীর হাতেও তুলে দেওয়া হয়েছিল।

কমিশন অফ ইনকোয়ারি অ্যাক্টের ধারা ১০ এ(১) ও (২) অনুযায়ী কমিশনে দাখিলকৃত ১৩১টি অভিযোগের বিষয়ে আইন মোতাবেক জিডি রেকর্ডপূর্বক ভিকটিমদের সন্ধান ও উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনার জন্য পুলিশ মহাপরিদর্শক বরাবর প্রেরণ করা হয়েছে।

তিনি বলেন, গোপন আটক কেন্দ্রের অস্তিত্ব এখন আর অস্বীকার করা যায় না। সকল ক্ষেত্রেই ভুক্তভোগীরা প্রায় একই ধরনের প্রক্রিয়ার শিকার হয়েছেন। পদ্ধতিগত নির্যাতন, সন্ত্রাসী হিসেবে প্রচার, একই ধরনের আইন অনুযায়ী অভিযোগ দায়ের ও একই ধরনের ভাষায় বর্ণনা। বিভিন্ন পটভূমি থেকে আসা ব্যক্তিদের অভিজ্ঞতার এই সামঞ্জস্য রাজনৈতিক উদ্দেশ্যকে স্পষ্ট করে।

তিনি বলেন, প্রতিবেদনে ১৯ শতাংশ ফেরত না আসা ১২ জন ভিকটিমের বিষয়ে অগ্রগতি তুলে ধরেছি, যাদের বিষয়ে প্রাথমিকভাবে অনুসন্ধান সম্পন্ন হয়েছে। তাদের গুমের জন্য কারা দায়ী, তা প্রাথমিকভাবে আমরা শনাক্ত করতে পেরেছি। চলমান অনুসন্ধানের স্বার্থে এই মুহূর্তে এর চেয়ে বেশি প্রকাশ করা সম্ভব হচ্ছে না।

ফিরে না আসা ভিকটিমদের বিষয়ে অপরাধী ও গুমের অপরাধ সংঘটনের স্থানসহ নানাবিধ বিষয়ে তথ্যের ঘাটতি বা পুরোনো কললিস্ট না পাওয়াসহ নানারকম বিলম্বঘটিত প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হলেও কমিশন আন্তরিকতার সঙ্গে অনুসন্ধান কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে বলেও জানান তিনি।

প্রতিবেদনে কমিশন সন্ত্রাসবিরোধী যে সব মামলায় অপব্যবহার হয়েছে, তা ন্যায় বিচারের মানদণ্ড বিবেচনায় নিয়ে দ্রুত নিষ্পত্তির ব্যবস্থা এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতনের সঙ্গে আলোচনার প্রেক্ষিতে মালয়েশিয়া-ইন্দোনেশিয়ার মতো উপযুক্ত কাউন্টার টেরোরিজম মেথড বের করার জন্য দুটি সুপারিশ করা হয়।

এ সময় গুম সংক্রান্ত কমিশন অফ ইনকোয়ারির সদস্য অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত বিচারক মো. ফরিদ আহমেদ শিবলী, মানবাধিকার কর্মী নূর খান, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কমিশনের সদস্য নাবিলা ইদ্রিস, মানবাধিকার কর্মী ও কমিশনের সদস্য সাজ্জাদ হোসেন উপস্থিত ছিলেন।

মন্তব্য

বাংলাদেশ
The accused in the murder case

আদালত থেকে পালাল হত্যা মামলার আসামি

আদালত থেকে পালাল হত্যা মামলার আসামি

ঢাকার তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতের এজলাস থেকে হাজতখানায় নেওয়ার পথে পুলিশকে মারধর করে পালিয়েছেন হত্যা মামলার এক আসামি।

আসামি শরিফুল ইসলাম (২২) দিনাজপুর জেলার নবাবগঞ্জ থানার হরিপুর গ্রামের মৃত শফিক আহম্মেদের ছেলে। তিনি রাজধানীর খিলগাঁও থানার জিসান হোসেন (১৪) হত্যা মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি। মামলাটি বর্তমানে সাক্ষ্যগ্রহণের পর্যায়ে রয়েছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১ টার পর সংশ্লিষ্ট আদালতের দায়িত্বে থাকা পুলিশ কনস্টেবল শহিদুল্লাহকে মারধর করে ছুটে পালিয়ে যান আসামি শরিফুল। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের হাজতখানার ইনচার্জ এসআই রিপন।

তিনি বলেন, আসামিকে আদালত থেকে হাজতখানায় নেওয়ার সময় পুলিশকে আঘাত করে তিনি পালিয়ে যায় আসামি শহিদুল।

ডিএমপির প্রসিকিশন বিভাগের এডিসি মাইন উদ্দিন বলেন, আসামির হাতে হাতকড়া পরানো ছিল। তিনি ধাতব কিছু দিয়ে হাতকড়া ঢিলা করে কৌশলে খুলে ফেলে। পরে পুলিশ কনস্টেবলের হাতে আঘাত করে পালিয়ে যায়।

তিনি বলেন, আমরা আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছি। কোতোয়ালি থানাকে জানানো হয়েছে আসামিকে গ্রেপ্তারের জন্য। তার বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি চলমান।

মন্তব্য

বাংলাদেশ
The 5th Annual Senate Meeting in the BUP

বিইউপিতে ১৭তম বার্ষিক সিনেট সভা অনুষ্ঠিত

বিইউপিতে ১৭তম বার্ষিক সিনেট সভা অনুষ্ঠিত

১৯ জুন ২০২৫ তারিখে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস (বিইউপি) এর ১৭তম বার্ষিক সিনেট সভা বিইউপির বিজয় অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন বিইউপির উপাচার্য ও সিনেট চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মোঃ মাহ্বুব-উল আলম, বিএসপি, এনডিসি, এএফডব্লিউসি, পিএসসি, এমফিল, পিএইচডি।

সভার শুরুতে বিইউপির উপাচার্য ও সিনেট চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মোঃ মাহ্বুব-উল আলম বিদায়ী সদস্যদের ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন এবং নবনিযুক্ত সদস্যদের স্বাগত জানান। পরে বিইউপির ট্রেজারার এয়ার কমডোর মোঃ রেজা এমদাদ খান, জিইউপি, বিইউপি, এনডিসি, পিএসসি, জিডি(পি), ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেট ১৩৪ কোটি ৮ লক্ষ টাকা ও ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরের ১৩৪ কোটি ৯৭ লক্ষ টাকার বাজেট উপস্থাপন করেন।

সিনেট সদস্যগণ ট্রেজারার এর বক্তৃতার ওপর আলোচনা করেন এবং সর্বসম্মতিক্রমে বাজেট প্রস্তাব অনুমোদন করেন। এছাড়াও সিনেট সভায় ১৭তম বার্ষিক প্রতিবেদন উপস্থাপিত ও সর্বসম্মতিক্রমে অনুমোদিত হয়। ১৭তম বার্ষিক সিনেট সভাটি সার্বিকভাবে সঞ্চালনা করেন বিইউপির রেজিস্ট্রার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোঃ রাব্বি আহসান, এনডিসি, পিএসসি।

সভায় সিনেট চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মাহ্বুব তাঁর বক্তব্যে বলেন, বিইউপি বয়সে নবীন হলেও এর শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও গবেষকগণের বিভিন্ন প্রতিযোগিতা, সেমিনার, ওয়ার্কশপ ও গবেষণা ভিত্তিক কার্যক্রমের অর্জনসমূহ জাতীয় আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে সুনাম বয়ে আনছে। যুগোপযোগী শিক্ষা প্রদান, গবেষণা ও উদ্ভাবনী কার্যক্রমে বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নিত হওয়ার লক্ষ্যে অত্র বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক একটি সুনির্দিষ্ট Academic Strategic Plan –২০৫০ প্রণয়ন করা হয়েছে।

Academic Strategic Plan এর মাধ্যমে পাঠ্যক্রমের আধুনিক মান নির্ধারণ, Outcome Based Education (OBE) কারিকুলাম প্রনয়ণ, গবেষণা, উদ্ভাবন, প্রকাশনা ও গবেষণা সহায়তার সক্ষমতা বৃদ্ধির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

মাননীয় উপাচার্য সকলকে অবহিত করেন যে বিইউপি’র গবেষণাভিত্তিক অগ্রযাত্রায় BUP Research Centre (BRC) অংঙ্গীভূত ফ্যাকাল্টি ও অধিভুক্ত প্রতিষ্ঠানসমূহে গবেষণা, উদ্ভাবন ও পরামর্শমূলক কার্যক্রমে গতিশীলতা আনার লক্ষ্যে কাজ করছে। 'Inspiring Innovation for Advancing Knowledge' শ্লোগানকে ধারণ করে, BUP Research Centre, গবেষকদের মানসম্মত গবেষণায় উৎসাহ দিচ্ছে এবং শিল্প-প্রতিষ্ঠান ও একাডেমিয়ার মধ্যে সংযোগ স্থাপনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

এছাড়াও তিনি উল্লেখ করেন, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক গবেষকদের গবেষণালব্ধ জ্ঞান প্রসারের উদ্দেশ্যে বিইউপি থেকে ৫টি জার্নাল প্রতিবছর নিয়মিত প্রকাশিত হচ্ছে যা সকলের মাঝে সমাদৃত। সিনেট চেয়ারম্যান আরও উল্লেখ করেন যে, শিক্ষার্থীদের শিক্ষার পাশাপাশি একজন সুশৃঙ্খল, নৈতিকতা সম্পন্ন সু-নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে বিইউপি বদ্ধপরিকর এবং সে লক্ষ্যে প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছে। এছাড়াও শিক্ষার্থীদের চারিত্রিক গুণাবলি ও আত্মিক উন্নয়নের লক্ষ্যে সকল প্রোগ্রামের পাঠ্যক্রমে নৈতিক শিক্ষা অন্তর্ভুক্ত করার মাধ্যমে Need Based Education - কেও গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা হচ্ছে। তিনি বলেন যে, আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষার্থীদের মানসম্মত কারিকুলাম ও শিক্ষা পরিবেশের পাশাপাশি বৈচিত্র‍্যময় সাংস্কৃতিক সান্নিধ্যের গুরুত্বকে সামনে রেখে বিইউপি'তে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তির প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এছাড়া, নবপ্রজন্মের মধ্যে নৈতিক মূল্যবোধ, সততা, চরিত্র গঠন ও সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা এবং দেশপ্রেম জাগ্রত করতে পড়াশোনার পাশাপাশি বাংলাদেশের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য, জাতীয় দিবসগুলোর তাৎপর্য ও মাহাত্ম্য তুলে ধরে বিইউপি’র বিভিন্ন আলোচনা সভা, সিম্পোজিয়াম, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজনের কথা উল্লেখ করেন।

এই সিনেট সভায় বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিব, বাংলাদেশ সশস্ত্রবাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা এবং বিইউপির উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

মন্তব্য

বাংলাদেশ
BNP does not support the electoral college in the presidential election

রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ইলেকট্রোরাল কলেজব্যবস্থা সমর্থন করে না বিএনপি

রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ইলেকট্রোরাল কলেজব্যবস্থা সমর্থন করে না বিএনপি

রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রস্তাবিত ইলেকট্রোরাল কলেজব্যবস্থাকে সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য বলে মন্তব্য করেছে বিএনপি। দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ‘জনগণের ভোটাধিকার হরণে এই ব্যবস্থাকে আরেকটি ছলচাতুরী হিসেবে দেখা হচ্ছে।’

গতকাল বুধবার বিকালে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এমন মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের জন্য কমিশনের যে প্রস্তাব তাতে একটা ইলেক্টোরাল কলেজ করা হবে। এবং প্রায় ওনাদের ভাষ্য অনুযায়ী ৭০ হাজারের মতো ভোটার থাকবে। ইউনিয়ন পর্যায় থেকে শুরু করে স্থানীয় সরকার পর্যায়ের প্রতিনিধিগণ এখানে ভোটার হবেন। এবং রাষ্ট্রপতিকে সৎ, দক্ষ ও অভিজ্ঞ একজন ব্যক্তিকে মনোনয়ন দেওয়ার জন্য ওখানে প্রস্তাব করা হয়েছে।

সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (এনসিসি) গঠনের প্রস্তাবে আগের মতোই একমত নয় বিএনপি।

এই কাউন্সিলের জবাবদিহি না থাকায় সমর্থন করে না বিএনপি। এই কাউন্সিলে আরেকটি ভারসাম্যহীন অবস্থা তৈরি হবে বলে মনে করি আমরা।’

স্বাধীন বিচারব্যবস্থার দাবি জানিয়ে সালাহউদ্দিন বলেন, ‘স্বাধীন বিচারব্যবস্থা হলে ভারসাম্যহীনতা দূর হবে, ফ্যাসিবাদ দমন করবে। প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার ভারসাম্য, অন্য সাংবিধানিক পদ, সংস্থা স্বাধীন করতে পারলে সমস্যা থাকবে না।’

বিএনপি মনে করে সুশাসন নিশ্চিত করতে ন্যায়পাল করা যেতে পারে। বিদ্যমান ব্যবস্থা বজায় রেখে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ হলে তাদের যোগ করা যেতে পারে, বলেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন আইন সংশোধন করা যেতে পারে। জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। বিএনপি মনে করে, দুদক ও মানবাধিকার কমিশনের মতো প্রতিষ্ঠান শক্তিশালী করতে বিদ্যমান আইনগুলো সংস্কারের প্রয়োজন।

মন্তব্য

বাংলাদেশ
Bhawal Chandipur Agrakhola road is like a death

ভাওয়াল-চন্ডিপুর-অগ্রখোলা সড়ক যেন মরণফাঁদ

চরম দুর্ভোগে এলাকাবাসী   
ভাওয়াল-চন্ডিপুর-অগ্রখোলা সড়ক যেন মরণফাঁদ

কেরানীগঞ্জের শাক্তা ও তারানগর ইউনিয়নের বুক চিরে চলা ভাওয়াল-চন্ডিপুর-অগ্রখোলা সড়কের বেহাল দশায় নিত্যদিন ভোগান্তিতে পড়ছে হাজারো মানুষ। দীর্ঘদিন ধরে সংস্কারের অভাবে সড়কজুড়ে এখন গর্ত আর ধুলাবালি। সামান্য বৃষ্টিতে কাদায় যানবাহন আটকে যায়, আর শুকনো মৌসুমে উড়ে ধূলোর ঝড়।

রাস্তাটির বেহাল অবস্থার কারণে প্রায় প্রতিদিনই দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন পথচারী ও যানবাহনের চালকরা। ছোট-বড় গর্তে হোঁচট খেয়ে পড়ে আহত হন অনেক পথচারী। অন্যদিকে, যানবাহন চলাচলের অযোগ্য এই সড়কে প্রতিনিয়তই নষ্ট হয়ে পড়ে ভ্যান, অটোরিকশা, ট্রাকসহ বিভিন্ন গাড়ি। আকিজ ফাউন্ডেশন স্কুল, মেকাইল মাদ্রাসা ও অগ্রখোলা কমিউনিটি হাসপাতালের সামনের অবস্থা এতটাই খারাপ যে মাঝে মাঝেই উল্টে যায় যাত্রী বোঝাই যানবাহন ।

সড়কের করুণ অবস্থার কারণে অনেক চালক ও পথচারী এখন পাশের বেলনা, কলাতিয়া ও নয়াবাজার হয়ে বিকল্প রাস্তায় যাতায়াত করছেন। এতে সময়, অর্থ ও দুর্ভোগ বাড়ছে।

এ সড়ক দিয়ে প্রতিদিন কেরানীগঞ্জ ছাড়াও নবাবগঞ্জ, দোহার, সিরাজদিখানসহ দক্ষিণবঙ্গের হাজার হাজার মানুষ মোহাম্মদপুর হয়ে রাজধানীতে প্রবেশ করে। অথচ বছরের পর বছর ধরে অবহেলায় পড়ে আছে সড়কটি।

স্থানীয় বাসিন্দা কবির হোসেন বলেন, ‘রাস্তাটার অবস্থা এমন যে, অটোরিকশা সিএনজিতে ওঠা মানেই কোমর ভাঙা। মাঝে মাঝেই যানবাহন পড়ে মানুষ আহত হয়। স্কুলের বাচ্চারা পর্যন্ত ভয়ে এই রাস্তায় যেতে চায় না। কোন এমপি-মন্ত্রী একবার এই রাস্তা দিয়ে গেলে বুঝত কষ্টটা কেমন।

একই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পণ্যবাহী ট্রাকচালক রাকিব হাওলাদার। তিনি বলেন, একবার গর্তে পড়লে গাড়ির যন্ত্রাংশ নষ্ট হয়ে যায়। ট্রাকে থাকা জিনিসপত্র পড়ে যায়, এভাবে থাকলে এই রাস্তা দিয়ে আর চলাচল করা সম্ভব নয়। এটি দ্রুত সংস্কার করা উচিত।

এ বিষয়ে কেরানীগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপ-প্রকৌশলী আব্দুল লতিফ বলেন, সড়কটি ইতোমধ্যে ডিপিপিতে অনুমোদন পেয়েছে। তাই এখন সংস্কার করা হচ্ছেনা। বছরের শেষ দিকে ২০ ফুট প্রশস্ত করে এবং আরও শক্তিশালী করে কাজ শুরু হবে। তখন রাস্তাটি আরো টেকসই হবে।

এদিকে এলাকাবাসীর দাবি, সংস্কার কাজ শুরুর আগ পর্যন্ত অন্তত গর্ত ভরাট করে সাময়িক চলাচলের উপযোগী করে তুলতে হবে। নইলে প্রতিদিন দুর্ঘটনার আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।

মন্তব্য

বাংলাদেশ
Twenty four bucks the family of four runs a family of four

আড়াইশ টাকা আয়ে চারজনের সংসার চালায় কিশোর তোফাজ্জল!

আড়াইশ টাকা আয়ে চারজনের সংসার চালায় কিশোর তোফাজ্জল!

একটা ভাঙাচোরা বাইসাইকেলই তার ভরসা। এ সাইকেল চালিয়ে ১৫ কিলোমিটার দুরের দুর্গম খাসিয়া পল্লীতে কাজ করে দুই-আড়াইশ টাকা রোজগার করে কিশোর তোফাজ্জল (১৪)। মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার সীমান্তবর্তী ৯নং ইসলামপুর ইউনিয়নের কাঁঠালকান্দী গ্রামের আলী আহমেদ (৬৫) এর ছেলে তোফাজ্জল হোসেন। পরিবারে সে একমাত্র উপার্জনক্ষম। বাবা হার্টের রোগী, বোন আয়েশা খাতুন (২৫) মানসিক ভারসাম্যহীন আর বয়োবৃদ্ধ দাদী সমিতা বিবি (৮২) দীর্ঘদিন ধরে শয্যাশায়ী।

তোফাজ্জল কান্নাজড়িত কন্ঠে এ প্রতিবেদককে বলেন, প্রতিদিনি সকালে ভাঙাচোরা একটি সাইকেল নিয়ে ১৫ কিলোমিটার দুরের খাসিয়া পল্লীতে কাজে যাই। সন্ধ্যায় ফিরি। যা রোজগার হয়, দুবেলাও খেতে পাইনা। এ দুনিয়ায় আল্লাহ ছাড়া আমাদের আর কেউ নাই। প্রতিবেশী ফজল মিয়া, আবু শহীদ এ পরিবারের দুরাবস্থার কথা জানিয়ে বলেন, প্রকৃতই তারা খুব অসহায় ও মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন। তিনজনই অসুস্থ। মাঝে মধ্যে আমরা যতটা সম্ভব সহযোগিতা করার চেষ্টা করি।

সরেজমিন তোফাজ্জলদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, সরকারি আবাসন প্রকল্পের ছোট্ট একটি ঘরে মেঝেয় জীর্ণ-শীর্ণ কাঁথায় শুয়ে আছেন সমিতা বিবি। অপুষ্টি আর ক্ষুধার যন্ত্রণায় ক্লান্ত। ঠিকমতো কথা বলতে পারছেন না। যা বললেন বোঝা গেলো, ডালভাত খেয়ে ঈদের দিন পার করেছি। ক্ষিদের জ্বালায় রাতে ঘুম আসে না। একরত্তি নাতি আর কিইবা করবে। তবু যা করছে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া। চাল ডাল আনলে ওষুধ আনতে পারে না। তবু প্রায়ই অনাহারে থাকতে হয়। ঈদে চান্দে প্রতিবেশীরা কেউ খাবার দেয়, কেউ সামান্য টাকা-পয়সা দেয়। এইভাবেই টিকে আছি।

স্থানীয়দের সহযোগিতাই একমাত্র ভরসা। মানুষের সাহায্যে দুমুঠো ভাত খেতে পারেন, যদি কেউ সাহায্যে না করে তাহলে না খেয়েই থাকতে হয়। তার বিলাপে চোখে জল চলে আসে। এ যেন দারিদ্র্যের এক করুণ চিত্র। এই অসহায় নারীর জীবন কাটছে অভাব আর কষ্টে। পা ভেঙে এক বছর ধরে শয্যাশায়ী। ছেলে আলী আহমেদও হার্টের রোগী। কোন কাজকর্ম করতে পারেন না। তাই ১৩/১৪ বছরের নাতি তোফাজ্জলের কাঁধেই সংসারের ভার। দুর্গম খাসিয়া পুঞ্জিতে কাজ করে দিনে আয় করে দুই-আড়াইশ টাকা মাত্র। এ টাকায় দুবেলা খাবার যোগানোই মুশকিল। তার ওপর অসুস্থ দাদি, বাবা আর মরার উপর খাঁড়ার ঘা মানসিক প্রতিবন্ধী বড় বোন আয়েশা খাতুন।

ইসলামপুর ইউনিয়নের স্থানীয় ইউপি সদস্য ফারুক আহমেদ জানান, একসময় তাদের মাথা গোঁজার ঠাঁই ছিলো না। কয়েক বছর আগে সরকারি আবাসন প্রকল্পের মাধ্যমে এ পরিবারের জন্য একটি ঘরের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তোফাজ্জলদের দুরাবস্থা জেনে অনেকে খাদ্য সামগ্রী দিয়ে তাদের সহায়তা করছেন। তবে বয়োবৃদ্ধ সমিতা বিবি ও মানসিক প্রতিবন্ধী আয়েশা খাতুনের সুচিকিৎসা ও তোফাজ্জলদের আত্মনির্ভরশীল হওয়ার ব্যবস্থা জরুরি।

মন্তব্য

p
উপরে