বাংলাদেশের রাজনীতিতে হঠাৎ করেই আলোচিত বিষয় হয়ে উঠেছে ১০ ডিসেম্বরের দিনটি। প্রায় দেড় যুগ ধরে ক্ষমতার বাইরে থাকা দল বিএনপি এ দিন তাদের ধারাবাহিক বিভাগীয় সমাবেশের ইতি টানবে ঢাকায় সমাবেশের মধ্য দিয়ে।
১০ ডিসেম্বরের এই সমাবেশে বিপুল লোকসমাগম করতে চায় বিএনপি। এ নিয়ে সরকারি দলের পক্ষ থেকেও পাড়া-মহল্লায় সতর্ক প্রহরাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি দেয়া হচ্ছে।
গত ১২ অক্টোবর চট্টগ্রাম থেকে শুরু হওয়া বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশে নেতা-কর্মীদের বিপুল সমাগম ঘটে, যা দলটির এত দিনকার রাজনৈতিক কর্মসূচিগুলোর তুলনায় ছিল ব্যতিক্রম। এরপর ২২ অক্টোবর খুলনা, ২৯ অক্টোবর রংপুর, ৫ নভেম্বর বরিশাল, ১২ নভেম্বর ফরিদপুর, ১৯ নভেম্বর সিলেটে ও ২৬ নভেম্বর কুমিল্লায় গণসমাবেশ করে বিএনপি। আগামী ৩ ডিসেম্বর রাজশাহীতে গণসমাবেশের পর ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় হবে মহাসমাবেশ।
দিনটি উপলক্ষে একদিকে বিএনপি নেতাদের হুঁশিয়ারি, অন্যদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কঠোর বার্তায় আমানউল্লাহ আমান বলেন, ‘১০ ডিসেম্বর থেকে দেশ চলবে খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমানের নির্দেশে।’
এ সমাবেশকে ঘিরে রাজধানীতে আওয়ামী লীগের পাল্টা কর্মসূচিসহ সতর্ক পাহারা বসানোর পরিকল্পনায় দিনটি ভিন্ন মাত্রা পাচ্ছে। অনেকে রাজনৈতিক সংঘাতের শঙ্কাও করছেন।
ফলে ১০ ডিসেম্বর এলেই ঢাকায় কী হতে যাচ্ছে, তা নিয়ে জনমনে কৌতূহল দেখা দিয়েছে।
১০ ডিসেম্বর তারা কী করতে যাচ্ছেন, জানতে চাওয়া হলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ঢাকায় সমাবেশ হবে, যেমনটা হয়েছে চট্টগ্রামে, যেমনটা হয়েছে সিলেটে। বিস্তারিত পলিসির অন্তর্ভুক্ত। সময়মতো জানতে পারবেন।’
দলীয় সূত্র জানায়, বিষয়টি নিয়ে শিগগিরই সংবাদ সম্মেলন করবে বিএনপি। সেখানে ১০ ডিসেম্বর ঢাকার গণসমাবেশ নিয়ে নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করবে বিএনপি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির এক সিনিয়র নেতা বলেন, ‘সমাবেশ শান্তিপূর্ণভাবেই হবে। তবে ঢাকা দেশের মূল কেন্দ্র। তাই এটা নিয়ে আওয়াজও বেশি। আর বাকি বিভাগে জনস্রোত দেখে সরকার ভয় পেয়েছে। তাদের মন্ত্রী-আমলারাই এটাকে রণক্ষেত্র বানিয়ে তুলছে। তবে বাধা এলে বিএনপি বসে থাকবে না, পিছুও হটবে না।’
পাল্টাপাল্টি হুঁশিয়ারি
খালেদা জিয়ার নির্দেশে দেশ চলা সংক্রান্ত আমানউল্লাহ আমানের বক্তব্যের ধারাবাহিক সুর শোনা যায় দলটির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানির কণ্ঠে। এ্যানি বলেন, ‘১০ ডিসেম্বর থেকেই সরকার আর কাজ করবে না। দেশ চলবে বিএনপির শীর্ষ নেতার কথায়।’
পরদিন দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক বলেন, ‘১০ ডিসেম্বর ঢাকায় সমাবেশ হবে ‘আটলান্টিক মহাসাগরের’ মতো। এই সমাবেশে খালেদা জিয়া যাবেন।’
এর আগে গত ২ অক্টোবর বিএনপির সঙ্গে সংলাপ শেষে কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম সাংবাদিকদের বলেন, ‘চমক আছে সামনে।’
বিএনপি ও তার সমমনা দলের নেতাদের এসব বক্তব্যকে সামনে এনে কথা বলা শুরু করেন ক্ষমতাসীন দলের মন্ত্রী-নেতারা। ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে ঢাকার প্রবেশমুখে সমাবেশ এবং পাড়া-মহল্লায় সতর্ক পাহারায় থাকার ঘোষণা দেয়া হয় ক্ষমতাসীন দলের পক্ষ থেকে।
‘১০ ডিসেম্বরের পর বিএনপিকে লালকার্ড দেখানো হবে’ বলে হুঁশিয়ার করে দেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। ৩১ অক্টেবর গাজীপুরে যুব মহিলা লীগের সম্মেলনে এই হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে ৪ নভেম্বর এক অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘১০ ডিসেম্বর বিএনপির আন্দোলনের পতন ঘণ্টা বাজবে।’
৫ নভেম্বর রাজধানীর বাড্ডায় আরেক অনুষ্ঠানে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বিএনপিকে আর ছাড় দেয়া হবে না। ডিসেম্বরে খেলা হবে, প্রস্তুত হয়ে যান।’
৩১ অক্টোবর বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে এক সভায় যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ বলেন, ‘বিএনপিকে মোকাবিলা করার জন্য যুবলীগ প্রস্তুত আছে। আগামী ১০ ডিসেম্বর রাজপথে থাকবে যুবলীগ।’
আওয়ামী লীগের এমন কঠোর হুঁশিয়ারি প্রসঙ্গে আমানউল্লাহ আমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কে কী বলল, সেটা এখন আমরা ভাবছি না, আমলে নিচ্ছি না। আমাদের আট বিভাগে ইতিমধ্যে সমাবেশ হয়ে গেছে। এগুলোতে আওয়ামী লীগ নানাভাবে বাধা দিয়েছে। গণপরিবহন বন্ধ করে দেয়া থেকে শুরু করে গ্রেপ্তার, মিথ্যা মামলাসহ সর্বাত্মক চেষ্টা করেছে। কিন্তু এসব উপেক্ষা করেই প্রতিটি বিভাগীয় সমাবেশে জনস্রোত দেখিয়েছি। ঢাকার সমাবেশের আগেও এমন নানা চাল চালতে পারেন। তবে সেসব উপেক্ষা করেই নয়াপল্টনে লাখো মানুষের সমাগম হবে।’
তবে ঢাকায় নয়াপল্টনে সমাবেশের অনুমোদন এখনো পায়নি দলটি। তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, বিএনপি চাইলে তাদের সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মহাসমাবেশ করার অনুমতি দেয়া হবে।
নয়াপল্টনে সমাবেশের অনুমতি না পেলে কী করবেন জানতে চাইলে দলটির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, ‘আমরা ডিএমপি কমিশনারকে সব কিছু বলে এসেছি। অনেক কিছু স্মরণ করিয়ে দিয়েছি। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের দেশের জন্য অবদানের কথাও স্মরণ করিয়ে দিয়ে আসছি। আশা করি সমাবেশের অনুমতি দিবেন। কোনো রাজনৈতিক দলের হুমকি, হুঁশিয়ারি আমরা তোয়াক্কা করি না।’
অনুমিত না পেলেও সমাবেশ করবেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অবশ্যই অনুমতি দেবে। আমরা সমাবেশ করব। সমাবেশে যাতে কেউ বিশৃঙ্খলা করতে না পারে, সে বিষয়ে পুলিশের সার্বিক সহযোগিতা চেয়েছি।’
বিএনপি কী করতে চায়?
১০ ডিসেম্বরের পরিকল্পনা নিয়ে বিএনপির সিনিয়র নেতা থেকে তৃণমূল পর্যায়ে একাধিক নেতা-কর্মীর সঙ্গে কথা বলেছে নিউজবাংলা।
বিএনপির নেতারা বলছেন, সারা দেশে বিভাগীয় পর্যায়ে যে গণসমাবেশ তারা করেছেন, তারই ধারাবাহিকতায় ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় গণসমাবেশ হবে। ৯টি বিভাগে সমাবেশের পর ঢাকায় তাদের শেষ গণসমাবেশ। এই সমাবেশ ঘিরে ঢাকা দখল বা অবরুদ্ধ করে সরকার পতনের ডাক দেওয়ার কোনো পরিকল্পনা তাদের নেই। শুধু বড় জনসমাবেশ করাই তাদের লক্ষ্য। একই সঙ্গে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আদায়ে আলটিমেটাম ও যুগপৎ আন্দোলনের রূপরেখা ঘোষণা হবে বলেও জানা যায়।
গত ১ অক্টোবর থেকে ৪ অক্টোবর পর্যন্ত অনুষ্ঠিত সভাগুলোতে দলের ১০ সাংগঠনিক বিভাগের নেতারা দলের শীর্ষ নেতৃত্বকে আন্দোলনের ধরন ও প্রক্রিয়া সম্পর্কে বিস্তারিত পরামর্শ দিয়েছেন।
এসব গণসমাবেশে বিএনপির স্থানীয় নেতারা দাবি আদায়ে কঠোর কর্মসূচি চেয়েছেন। সে ক্ষেত্রে পর্যায়ক্রমে কঠোর হওয়ার প্রস্তাব করেছেন তারা। পাশাপাশি ইস্যু হিসেবে জনসম্পৃক্ত বিষয়গুলোকে প্রাধান্য দেওয়ার জন্য শীর্ষ নেতৃত্বকে পরামর্শ দেন বিভাগের নেতারা।
বৈঠকে অংশ নেওয়া নেতাদের সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, প্রস্তাবিত কর্মসূচির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে: অবরোধ, লংমার্চ, জেলা থেকে জেলায় রোড মার্চ, ঢাকা থেকে বিভাগীয় শহরে রোড মার্চ, ৬৮ হাজার গ্রামে একই দিন গণমিছিল।
নেতদের প্রস্তাবে আরও রয়েছে, ১০ ডিসেম্বর থেকে লাগাতার কর্মসূচি প্রদান এবং সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবি।
হরতাল-অবরোধ নয়, জনস্রোত দেখানোই লক্ষ্য
বিএনপির গত দুই মাসের কর্মসূচিগুলোতে দলের নেতা-কর্মীদের উজ্জীবিত দেখা গেছে। সভা-সমাবেশগুলোতে উপস্থিতি দিন দিন বেড়েছে। আবার দলীয় নেতা-কর্মীর বাইরে সমাবেশস্থলে সাধারণ মানুষের উপস্থিতিও দেখা যাচ্ছে। বিশেষ করে, শহরকেন্দ্রিক সমাবেশগুলোতে রিকশাচালক থেকে শুরু করে সমাজের নিম্নস্তরের লোকজনের উপস্থিতি ছিল। বিএনপির সাম্প্রতিক কর্মসূচিতে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস এবং তেল-গ্যাস-জ্বালানির দাম কমানোর দাবি জানানো হয়।
১০ ডিসেম্বরের মহাসমাবেশকে ঘিরে ব্যাপক প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের আওতাভুক্ত সকল থানা ও ওয়ার্ডসহ সারা দেশ থেকে সর্বস্তরের নেতা-কর্মীদের এ মহাসমাবেশে জড়ো করে বড় ধরনের শোডাউনের চেষ্টা করছে দলটি।
সমাবেশে বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী জড়ো করতে দলের জেলা-উপজেলা পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। কেন্দ্র থেকে শুরু করে সারা দেশের সকল স্তরের বিএনপি নেতা-কর্মী নিজ নিজ অবস্থান থেকে প্রস্তুতি নিচ্ছে। কীভাবে বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মী ও সমর্থককে নিজ নিজ এলাকা থেকে মহাসমাবেশে উপস্থিত করানো যায়, সেই পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি নিচ্ছেন শীর্ষ নেতারা। এ জন্য আগেই দলটির সর্বস্তরে প্রস্তুতি কমিটি গঠন করা হয়েছে। লন্ডন থেকে তারেক রহমানও বিভিন্ন স্তরের নেতাদের সঙ্গে বিভিন্ন মাধ্যমে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।
বিএনপি সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, তারা এবার এমনভাবে আন্দোলন এগিয়ে নিতে চায়, যাতে সরকার চাপে পড়ে তাদের দাবি মেনে নেয়। তাই ২০১৩ সালের মতো এবারো তৃণমূল থেকে আন্দোলন জোরদারের কৌশল নিয়েছে দলটি।
ওই বছর ২৯ ডিসেম্বর যেভাবে সারা দেশ থেকে সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের ঢাকায় জড়ো করতে ‘রোড ফর ডেমোক্রেসি’ কর্মসূচির ডাক দিয়েছিল দলটি, একইভাবে তারা এবারো ১০ ডিসেম্বর ঢাকার মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে সারা দেশ থেকে নেতা-কর্মীদের জড়ো করতে চায়।
সূত্র জানায়, মহাসমাবেশের কয়েক দিন আগে ঢাকার বাইরে থেকে বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী জড়ো করতে ইতোমধ্যেই সংশ্লিষ্ট দলীয় নেতাদের প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন বিএনপি হাইকমান্ড। আগে আসা নেতাকর্মীদের মধ্যে যাদের ঢাকায় কোনো আত্মীয়স্বজন নেই, তাদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থাও করা হবে। এ জন্য রাজধানীর বিভিন্ন হোটেল, কমিউনিটি সেন্টার, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও নির্মীয়মাণ বিভিন্ন ভবন প্রস্তুত রাখা হয়েছে। আর রাজধানীতে বসবাসকারী বিএনপি নেতাদের বলা হয়েছে, নিজ নিজ নির্বাচনি এলাকা থেকে আসা নেতাকর্মীদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করতে।
দলের ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা এখন অব্দি শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করেছি। ঢাকার সমাবেশেও আমরা শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করতে চাই। জনগণের দাবিকে সামনে রেখেই আমাদের এসব কর্মসূচি। আর সেদিন আমাদের নতুন কর্মসূচি আসবে।’
নতুন কর্মসূচি কী আসবে—জানতে চাইলে দুদু বলেন, ‘আমাদের দলের স্থায়ী কমিটি এ বিষয়ে বৈঠক করবে। তারা আলোচনার মাধ্যমে কর্মসূচি নির্ধারণ করবে। তবে এটা বলা যায়, শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি আসবে; যদি সরকার কর্মসূচিকে ধ্বংসাত্মক পরিস্থিতির দিকে ঠেলে না দেয়।’
তবে সরকার যদি বাধা সৃষ্টি করে তবে তা মোকাবিলার জন্যেও প্রস্তুতি নিয়ে রাখছেন বলে জানান আরেক বিএনপি সিনিয়র নেতা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এ নেতা তিনি বলেন, ‘পথে-ঘাটে বাধা দিবে? আটকায় রাখবে। আমরা তো আর তামাশা দেখব না। বাধা উপেক্ষা করতে হবে। কেমন বাধা আসবে, সেটা পরিস্থিতি বিবেচনায় স্টেপ নিব। আর সে নিয়েও আমরা আগাম প্রস্তুতি নিচ্ছি।’
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আলটিমেটাম
আর এই মহাসমাবেশ থেকেই নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আদায়ে সরকারকে আলটিমেটাম দেবে দলটি। আলটিমেটাম অনুসারে দাবি না মানলে রাজপথে দুর্বার আন্দোলনের ঘোষণাও দেওয়া হবে। এ ছাড়া এই মহাসমাবেশ কর্মসূচি পালনের মাধ্যমেই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে মাঠ দখলের চেষ্টা করবে বিএনপি।
১০ ডিসেম্বরের মহাসমাবেশ থেকে কী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে এবং এই সমাবেশ থেকে দলের নেতাকর্মী, দেশের সাধারণ মানুষ ও সরকারকে বিএনপি কী বার্তা দেবে, তা ঠিক করতে বিএনপির সিনিয়র নেতারা এখনও কাজ করছেন বলে সূত্র জানায়। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে করতে ১০ ডিসেম্বরের মহাসমাবেশ থেকে মূলত একটি দাবিই উপস্থাপন করবে বিএনপি। আর এটি হচ্ছে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন।
এ ব্যাপারে সরকারকে আলটিমেটাম দেবে দলটি। আর এ আলটিমেটামের পক্ষে জনমত বৃদ্ধি করতে ও রাজপথে শক্তি প্রদর্শন করতে নতুন করে আরও কিছু ধারাবাহিক কর্মসূচি দেওয়ার চিন্তা করছে দলটির হাইকমান্ড।
গত মঙ্গলবার দলীয় এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিতে গিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, ১০ ডিসেম্বর থেকে এক দফার আন্দোলন শুরু হবে। এই ‘এক দফার আন্দোলন’ বলতে তিনি নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কথা বুঝিয়েছেন, যে সরকারের রূপরেখা মহাসমাবেশ থেকে ঘোষণা করা হবে। তিনি বলেন, ‘আমরা আন্দোলনে থাকলেও এখনও আসল ঘোষণা দেইনি, আসল ঘোষণা দেব ১০ ডিসেম্বর।’
এর আগে আরেক দলীয় কর্মসূচি পালন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বিএনপি মহাসচিব জানিয়েছিলেন, সময়মতো নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের রূপরেখা জানিয়ে দেওয়া হবে। ১৯৯৬ সালের সংবিধানের আলোকেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের রূপরেখা তৈরি করছে বিএনপি।
তিনি আরও বলেন, ‘ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি নিরঙ্কুশ আসনে বিজয়ী হয়ে ১৯৯৬ সালের ২৭ মার্চ নির্বাচনকালীন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তনে সংবিধানের সংশোধনী পাস করে। তাই আমাদের রূপরেখা তৈরি হবে সংবিধানের ওই সংশোধনীতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার যেমন ছিল, তারই আলোকে।’
যুগপৎ আন্দোলনের রূপরেখা ঘোষণা
১০ ডিসেম্বররের মহাসমাবেশ থেকে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে বিএনপির পক্ষ থেকে সরকারকে আলটিমেটাম দেওয়ার পর সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোও যুগপৎ আন্দোলন শুরু করবে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে টার্গেট করে সরকারকে চাপে ফেলতে এবার আটঘাট বেঁধে মাঠে নামতে চায় বিএনপির নেতৃত্বে ডান, বাম ও মধ্যপন্থি বেশকটি রাজনৈতিক দল। এ জন্য তাদের প্রস্তুতি প্রায় শেষ পর্যায়ে।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, যুগপৎ এ আন্দোলন দেশের সব রাজনৈতিক দলের জন্য উন্মুক্ত থাকলেও কৌশলগত কারণে আপাতত ফ্রন্টলাইনে থাকছে না জামায়াত।
বিএনপির সঙ্গে গোপন সমঝোতার ভিত্তিতে জামায়াত এ কৌশল নিয়েছে বলে সূত্র জানায়। যুগপৎ আন্দোলনে মাঠে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি ও তাদের সমমনা দলগুলো।
এরই প্রস্তুতি হিসেবে ২ অক্টোবর থেকে শুরু হয় সমমনা দলগুলোর সঙ্গে বিএনপির দ্বিতীয় দফা সংলাপ। এ পর্যন্ত প্রায় ২০টি দলের সঙ্গে দ্বিতীয় দফা সংলাপ করেছে বিএনপি। এর আগে গত ২৪ মে থেকে সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে প্রথম দফা সংলাপ শুরু করে দলটি। প্রথম দফায় ২৩টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে দলের সিনিয়র নেতারা।
বিএনপির নেতারা বলছেন, তাদের লক্ষ্য ঢাকার সমাবেশের পর দ্বিতীয় ধাপের আন্দোলনে যাওয়া। এর মধ্যে অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনের কর্মকৌশলও ঠিক করা হবে। নির্দলীয় সরকারের রূপরেখা এবং নির্বাচনের পরে জাতীয় সরকারের কাঠামোও ঘোষণা করা হবে। মূলত ঢাকার সমাবেশ থেকেই এক দফার আন্দোলনে নামার ঘোষণা আসতে পারে বলে বিএনপির দায়িত্বশীল সূত্রগুলো থেকে জানা গেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘১০ তারিখের পর জানতে পারবেন। সত্য মিথ্যা সামনে আসবে তখন। এখন আমরা খুবই ব্যস্ত সময় পার করছি।’
জামায়াতের সাথে জোট নিয়ে জানতে চাইলে ২০ দলীয় জোটের এই সমন্বয়ক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এত ব্যস্ততার মধ্যে এসব নিয়ে ভাবার সময় নেই। আমাদের দাবির কাতারে যারা এসে দাঁড়াবে, আমরা তাদের ওয়েলকাম জানাব।’
আরও পড়ুন:২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার খালাসের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের করা লিভ টু আপিল আগামী রোববার শুনানির জন্য কার্যতালিকায় আসবে।
আসামি পক্ষের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির বলেন, আজ জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের বেঞ্চে শুনানির জন্য আপিলটি ছিলো। কিন্তু এই মামলায় হাইকোর্টের অথর জাজ বিচারপতি একেএম আসাদুজ্জামান আজ আপিল বিভাগের বেঞ্চে ছিলেন।
নিয়ম অনুযায়ী হাইকোর্টে রায় দানকারী বিচারপতি একই মামলা আপিল বেঞ্চে শুনানি গ্রহণ করতে পারেন না।
এজন্য আগামী রোববার পুনর্গঠিত বেঞ্চে আপিলটি শুনানির জন্য কার্যতালিকায় আসবে। আদালত বিষয়টিতে আজ নট টুডে আদেশ দিয়েছেন।
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট রাজধানীর গুলিস্তান এলাকায় আওয়ামী লীগের সমাবেশে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলায় ২৪ জন নিহত ও বহু মানুষ আহত হন। ওই গ্রেনেড হামলার ঘটনায় মতিঝিল থানায় হত্যা ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে দুটি মামলা হয়। ২০০৮ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় সিআইডি এই মামলার তদন্ত শেষে অভিযোগপত্র দিলে শুরু হয় বিচার।
তবে, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর এই মামলায় অধিকতর তদন্তে আসামির তালিকায় যুক্ত করা হয় বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ৩০ জনকে।
দীর্ঘ বিচারিক কার্যক্রম শেষে ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিন আলোচিত মামলার রায় দেন।
আলোচিত ওই রায়ে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর ও সাবেক শিক্ষা উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুসহ ১৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। বিচারিক আদালতে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত অপর আসামিরা হলেন- আব্দুস সালাম পিন্টুর ভাই মাওলানা তাজউদ্দিন, হুজি’র সাবেক আমির ও ইসলামিক ডেমোক্রেটিক পার্টির আহ্বায়ক মাওলানা শেখ আবদুস সালাম, কাশ্মীরি জঙ্গি আব্দুল মাজেদ ভাট, আবদুল মালেক ওরফে গোলাম মোস্তফা, মাওলানা শওকত ওসমান, মহিবুল্লাহ ওরফে মফিজুর রহমান, মাওলানা আবু সাঈদ ওরফে ডা. জাফর, আবুল কালাম আজাদ ওরফে বুলবুল, মো. জাহাঙ্গীর আলম, হাফেজ মাওলানা আবু তাহের, হোসাইন আহম্মেদ তামিম, মঈন উদ্দিন শেখ ওরফে মুফতি মঈন, মো. রফিকুল ইসলাম, মো. উজ্জল, এনএসআই-এর সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবদুর রহিম ও হানিফ পরিবহনের মালিক মোহাম্মদ হানিফ।
বিচারিক আদালতের রায়ে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ১৯ জনের যাবজ্জীবন ও ১১ জনের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড দেওয়া হয়। সে রায়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত অপর আসামীরা হলেন- খালেদা জিয়ার সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, বিএনপি’র সাবেক সংসদ সদস্য শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ, হুজি সদস্য হাফেজ মাওলানা ইয়াহিয়া, শাহাদাৎ উল্লাহ ওরফে জুয়েল, মাওলানা আবদুর রউফ, মাওলানা সাব্বির আহমেদ, আরিফ হাসান ওরফে সুমন, আবু বকর ওরফে হাফেজ সেলিম মাওলাদার, মো. আরিফুল ইসলাম, মহিবুল মুত্তাকিন ওরফে মুত্তাকিন, আনিসুল মুরছালিন ওরফে মুরছালিন, মো. খলিল ওরফে খলিলুর রহমান, জাহাঙ্গীর আলম বদর, মো. ইকবাল ওরফে ইকবাল হোসেন, লিটন ওরফে মাওলানা লিটন, মুফতি শফিকুর রহমান, মুফতি আব্দুল হাই ও রাতুল আহমেদ ওরফে রাতুল বাবু।
এছাড়া, বিচারিক আদালতের রায়ে পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজি) মো. আশরাফুল হুদা ও শহিদুল হক, বিএনপি চেয়ারপারসন ও তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ভাগ্নে লেফটেন্যান্ট কমান্ডার (অব.) সাইফুল ইসলাম ডিউক, লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) সাইফুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার, ডিজিএফআই-এর মেজর জেনারেল (অব.) এটিএম আমিন, ডিএমপি’র সাবেক উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) খান সাঈদ হাসান, আরেক সাবেক উপ-কমিশনার (পূর্ব) ওবায়দুর রহমান খান, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক খোদা বক্স চৌধুরী, সিআইডি’র সাবেক বিশেষ সুপার মো. রুহুল আমিন, সাবেক এএসপি আবদুর রশিদ ও সাবেক এএসপি মুন্সি আতিকুর রহমানকে দুই বছর করে কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ছয় মাস করে সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
এই মামলার আরেকটি ধারায় খোদা বক্স চৌধুরী, রুহুল আমিন, আবদুর রশিদ ও মুন্সি আতিকুর রহমানকে তিন বছর করে কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে ছয় মাস করে কারাদণ্ড দেন আদালত।
বিচারিক আদালতে এই রায়ের দেড় মাসের মাথায় ২০১৮ সালের ২৭ নভেম্বর মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্তদের ডেথ রেফারেন্সসহ মামলার নথি হাইকোর্টে আসে। ২০২২ সালের ৫ ডিসেম্বর থেকে ডেথ রেফারেন্স এবং আসামিদের আপিল ও জেল আপিল শুনানি শুরু হয়। বিচারপতি সহিদুল করিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চে শুনানি চলছিল।
তবে ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের পর হাইকোর্ট বেঞ্চ পুনর্গঠন হলে বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে ডেথ রেফারেন্স ও আপিল শুনানি হয়। শুনানি শেষে গত ১ ডিসেম্বর হাইকোর্ট এই মামলার সব আসামীকে খালাস দিয়ে রায় দেন। সে রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে লিভ টু আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ।
ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে।
ভূমিকম্পটি শুক্রবার দুপুর ১২টা ২০ মিনিটে অনুভূত হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউএসজিএসের ডেটা অনুযায়ী, ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল ছিল মিয়ানমারের সাগাইংয়ের ১৬ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে।
এ ভূমিকম্পে হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।
বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুত বৃহত্তম জনগোষ্ঠী রোহিঙ্গাদের সাহায্য কমে যাওয়ার ফলে সংকট আরও গভীর হওয়ার উদ্বেগের মধ্যে ট্রাম্প প্রশাসন বৃহস্পতিবার জানিয়েছে, তারা জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির মাধ্যমে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য ৭৩ মিলিয়ন (সাত কোটি ৩০ লাখ) ডলার নতুন আর্থিক সহায়তা দেবে।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস এক্সে একটি পোস্টে বলেন, ‘বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিওইএফ) মাধ্যমে এ খাদ্য ও পুষ্টি সহায়তা ১০ লাখেরও বেশি মানুষের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় খাদ্য ও পুষ্টি সহায়তা প্রদান করবে।
‘এটা গুরুত্বপূর্ণ যে, আমাদের আন্তর্জাতিক অংশীদাররা এ ধরনের জীবন রক্ষাকারী সহায়তার মাধ্যমে বোঝা ভাগ করে নেওয়ার সঙ্গে যুক্ত।’
সিনহুয়া জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং তার প্রশাসন ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ এজেন্ডার অংশ হিসেবে বিদেশি সহায়তায় ব্যাপক কাটছাঁট এবং ফেডারেল ব্যয় ব্যাপকভাবে হ্রাস এবং যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কিছু অংশ ভেঙে ফেলার বিস্তৃত প্রচেষ্টার মধ্যেই এ অনুদান দেওয়া হলো।
জাতিসংঘের দুটি সংস্থা সতর্ক করে দিয়েছিল যে, তহবিলের ঘাটতি গত আট বছর ধরে প্রতিবেশী মিয়ানমারে সহিংসতার কারণে পালিয়ে আসা বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের জন্য রেশনের পরিমাণ কমিয়ে দেবে।
রোহিঙ্গারা আশঙ্কা করছেন, তহবিল হ্রাসের ফলে ক্ষুধা পরিস্থিতির অবনতি হবে। গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্যসেবা এবং জ্বালানি হ্রাস পাবে।
পররাষ্ট্র দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্র রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সবচেয়ে বড় সহায়তা প্রদানকারী দেশ ছিল। প্রায় ২ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার সহায়তা দিয়ে আসছে দেশটি। কিন্তু জানুয়ারিতে ট্রাম্প দায়িত্ব নেওয়ার পর সাম্প্রতিক তহবিল স্থগিত করার ফলে কমপক্ষে পাঁচটি হাসপাতাল তাদের সেবা কমিয়ে ফেলতে বাধ্য হয়েছে।
ট্রাম্প ও বিলিয়নেয়ার মিত্র ইলন মাস্ক প্রধান মার্কিন বৈদেশিক সাহায্য সংস্থা ইউএসএআইডি বন্ধ করে দিয়েছেন এবং এর অবশিষ্টাংশগুলোকে পররাষ্ট্র দপ্তরের সঙ্গে একীভূত করেছেন। শত শত কর্মী এবং ঠিকাদারকে বরখাস্ত করেছেন এবং কোটি কোটি ডলারের পরিষেবা বন্ধ করে দিয়েছেন, যার ওপর বিশ্বজুড়ে লাখ লাখ মানুষ নির্ভরশীল।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ফেব্রুয়ারিতে সমস্ত জীবন রক্ষাকারী সহায়তা এবং এ ধরনের সহায়তা প্রদানের জন্য প্রয়োজনীয় যুক্তিসঙ্গত প্রশাসনিক খরচ মওকুফ করেছিলেন।
ওয়াশিংটন টাইমস জানায়, এ মাসের শুরুতে ইউএসএআইডি ভেঙে দেওয়ার তত্ত্বাবধানকারী ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তা রোহিঙ্গাদের জন্য পর্যায়ক্রমে সাহায্য বন্ধের প্রস্তাব করেছিলেন।
জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) বাংলাদেশের শরণার্থী শিবিরে বসবাসকারী রোহিঙ্গাদের জন্য খাদ্য সহায়তা হ্রাস করার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করেছে।
কক্সবাজার উপকূলের বিভিন্ন শিবিরের বাসিন্দারা এখন জনপ্রতি মাসিক ১২ ডলার করে খাদ্য বরাদ্দ পাবেন, যা আগের ১২ দশমিক ৫০ ডলার থেকে কম।
শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, ‘ডব্লিউএফপি একটি চিঠিতে এই সিদ্ধান্তের কথা আমাদের জানিয়েছে, যা ১ এপ্রিল থেকে কার্যকর হবে।’
তিনি আরও বলেন, ভাসানচরে বসবাসকারী রোহিঙ্গারা জনপ্রতি ১৩ ডলার করে পাবে, যা কক্সবাজারের তুলনায় এক ডলার বেশি।
বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের জন্য খাদ্য সহায়তা কমানোর পরিকল্পনা ডব্লিউএফপি পূর্বে জানানোর পর এ পরিবর্তন এসেছে।
গত ৫ মার্চ বাংলাদেশের শরণার্থী কমিশন ডব্লিউএফপি থেকে একটি চিঠি পায়, যেখানে বলা হয়, তহবিল সংকটের কারণে এপ্রিল থেকে রোহিঙ্গাদের জন্য মাসিক খাদ্য বরাদ্দ জনপ্রতি ১২ দশমিক ৫০ ডলার থেকে কমিয়ে ৬ ডলার করা হবে।
চিঠিতে শরণার্থীদের জন্য পর্যাপ্ত খাদ্য ব্যবস্থা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।
গত ১৪ মার্চ জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস বাংলাদেশের রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করেন।
তার সফরের সময় তাকে ছয় ডলারে রোহিঙ্গারা কী খাবার পাবে তার বিস্তারিত বিবরণ উপস্থাপন করা হয়েছিল। সে সময় অপর্যাপ্ত পরিমাণ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছিল।
আরও পড়ুন:গার্মেন্টসসহ বিভিন্ন শিল্পকারখানার শ্রমিকদের পাওনা বেতন-ভাতাসহ যৌক্তিক দাবির ব্যাপারে সরকার আন্তরিক ও একমত বলে জানিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বৃহস্পতিবার এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়, শ্রমিকদের যৌক্তিক দাবি বাস্তবায়নে সরকার কাজ করে যাচ্ছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘গার্মেন্টসসহ বিভিন্ন শিল্প কলকারখানার শ্রমিকদের পাওনা বেতন-ভাতাদিসহ যৌক্তিক দাবির ব্যাপারে সরকার অত্যন্ত আন্তরিক ও একমত। শ্রমিকদের যৌক্তিক দাবি বাস্তবায়নে সরকার কাজ করে যাচ্ছে এবং এ ব্যাপারে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। এ বিষয়ে মালিকপক্ষ ও বিজিএমইএকে নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে এবং তাদের কর্মকাণ্ড মনিটর করা হচ্ছে।’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘অন্যায্য ও অযৌক্তিক দাবির নামে গার্মেন্টস শিল্পে অস্থিরতা সৃষ্টি, অবরোধ করে যান চলাচল বন্ধ, নৈরাজ্য ও সহিংসতা কোনোভাবেই কাম্য নয় এবং তা কখনোই মেনে নেয়া হবে না।
‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তায় সরকার তা কঠোরভাবে প্রতিহত করবে। গার্মেন্টসসহ বিভিন্ন শিল্প কলকারখানায় সুষ্ঠু ও নিরাপদ পরিবেশ বজায় রাখা এবং দেশের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার স্বার্থে সরকার এ বিষয়ে মালিকপক্ষ ও শ্রমিকপক্ষ উভয়ের সহযোগিতা কামনা করছে।’
আরও পড়ুন:পরিবেশ, বন, জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, আন্তসীমান্ত বায়ুদূষণ মোকাবিলায় কার্যকর আঞ্চলিক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। বাংলাদেশের বায়ুদূষণের ৩০-৩৫ শতাংশ আসে প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে। তাই এ সমস্যা সমাধানে রাজনৈতিক আলোচনার গণ্ডি পেরিয়ে বাস্তব পদক্ষেপ ও আঞ্চলিক সহযোগিতা জরুরি।
তিনি দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোর কাঠমান্ডু রোডম্যাপ ও অন্যান্য সমঝোতার কথা উল্লেখ করে বলেন, এগুলো যথেষ্ট নয়, আরও জোরালো উদ্যোগ প্রয়োজন।
কলম্বিয়ার কার্টাগেনায় অনুষ্ঠিত ডব্লিউএইচওর দ্বিতীয় বৈশ্বিক সম্মেলনের বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া সাইড ইভেন্টে ভার্চুয়ালি অংশ নিয়ে বৃহস্পতিবার ভোরে পরিবেশ উপদেষ্টা এসব কথা বলেন।
ঢাকাস্থ বাসভবন থেকে সংযুক্ত হয়ে তিনি বাংলাদেশের বায়ুদূষণ সমস্যা, বিশেষ করে ঢাকার ভয়াবহ পরিস্থিতির কথা তুলে ধরেন।
উপদেষ্টা জানান, বাংলাদেশের বহুমাত্রিক বায়ুদূষণ সমস্যা মোকাবিলায় বায়ুমান নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা চূড়ান্ত করা হয়েছে, যা ডব্লিউএইচওর অন্তর্বর্তীকালীন লক্ষ্যমাত্রার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এ আইনি বিধিমালায় দূষণকারী খাতগুলোর জন্য নির্দিষ্ট মানদণ্ড নির্ধারণ করা হয়েছে এবং অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণের কাঠামো তৈরি করা হয়েছে।
তিনি জানান, ২০২৪ সালে চূড়ান্ত হওয়া জাতীয় বায়ুমান ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনার বাস্তবায়ন রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে পিছিয়ে ছিল, তবে এখন তা কার্যকরভাবে বাস্তবায়িত হচ্ছে। পরিকল্পনার লক্ষ্য হলো মানুষের দূষণজনিত ঝুঁকি কমানো ও পরিষ্কার বায়ুর দিন বৃদ্ধির মাধ্যমে জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করা।
পরিবেশ উপদেষ্টা আরও জানান, বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় বাংলাদেশ ক্লিন এয়ার প্রকল্প চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে, যা সরকারের অনুমোদন সাপেক্ষে শিগগিরই বাস্তবায়ন শুরু হবে। এ প্রকল্প নিয়ন্ত্রক কাঠামো শক্তিশালী করা, আইন প্রয়োগ জোরদার করা, শিল্প কারখানায় দূষণ পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা সম্প্রসারণ এবং গণপরিবহন খাত আধুনিকায়নের ওপর গুরুত্ব দেবে।
তিনি ঢাকার আশেপাশের এলাকাগুলোকে ইটভাটামুক্ত এলাকা হিসেবে ঘোষণা করার পরিকল্পনার কথা জানান, যেখানে ইটভাটা স্থাপন নিষিদ্ধ থাকবে।
এ ছাড়া ২০২৫ সালের মে থেকে পুরনো বাস ধাপে ধাপে তুলে দেওয়া হবে, যা পরিবেশ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ যৌথভাবে বাস্তবায়ন করবে।
তিনি বায়ুদূষণের অন্যতম প্রধান কারণ ধুলাবালি দূষণ রোধে ঢাকা শহরের খোলা সড়কগুলোতে সবুজায়নের উদ্যোগ এবং রাস্তা পরিস্কারে আরও শ্রমিক নিয়োগের পরিকল্পনার কথা জানান।
উপদেষ্টা জানান, অবৈধ ইটভাটা উচ্ছেদ অভিযানের ফলে এরই মধ্যে বায়ুমানের কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তবে এ অগ্রগতি ধরে রাখতে কঠোর নজরদারি ও খাতগুলোর আধুনিকায়ন জরুরি।
রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘বাংলাদেশে প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ মানুষ বায়ুদূষণের কারণে মারা যায় এবং ঢাকার মতো দূষিত শহরগুলোতে মানুষের গড় আয়ু ৫-৭ বছর কমে যাচ্ছে। এই সংকট আমাদের সবার জন্য, আমাদের শিশু, বাবা-মা এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য হুমকি। নিষ্ক্রিয়তার মূল্য অনেক বেশি। আমাদের এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমি আশাবাদী। কারণ আমি বিশ্বাস করি, এ সমস্যার সমাধান সম্ভব। প্রযুক্তি ও বিকল্প ব্যবস্থা আমাদের হাতে রয়েছে, শুধু প্রতিশ্রুতি ও বাস্তবায়ন দরকার।
‘বায়ুদূষণ শুধুই পরিবেশগত ইস্যু নয়, এটি মানবিক সংকট।’
সম্মেলনে দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের মন্ত্রী পর্যায়ের প্রতিনিধি, পরিবেশ ও জ্বালানি খাতের নীতিনির্ধারক, আন্তর্জাতিক ও উন্নয়ন সংস্থার প্রতিনিধি, গবেষক, স্থানীয় প্রশাসন, পরিবহন ও শিল্প খাতের বিশেষজ্ঞ এবং নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
তারা দক্ষিণ এশিয়ায় বায়ুদূষণ রোধে যৌথভাবে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দেন।
আরও পড়ুন:পবিত্র লাইলাতুল কদর বা শবে কদর বৃহস্পতিবার। এর অর্থ ‘অতিশয় সম্মানিত ও মহিমান্বিত রাত’ বা ‘পবিত্র রজনী’।
আজ সন্ধ্যার পর থেকে শুরু হবে কদরের রজনী।
যথাযোগ্য ধর্মীয় মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যের সঙ্গে সারা দেশে রাতটি পালন করা হবে।
মহান আল্লাহ লাইলাতুল কদরের রাতকে অনন্য মর্যাদা দিয়েছেন। হাজার মাসের ইবাদতের চেয়েও এ রাতের ইবাদত উত্তম।
এ রাতে আল্লাহর অশেষ রহমত ও নিয়ামত বর্ষণ করা হয়। নির্ধারণ করা হয় মানবজাতির ভাগ্য।
৬১০ সালে কদরের রাতেই মক্কার নূর পর্বতের হেরা গুহায় ধ্যানরত মহানবী হযরত মুহাম্মদের (সা.) কাছে সর্বপ্রথম সুরা আলাকের পাঁচ আয়াত নাজিল হয়। এরপর আল্লাহর নির্দেশে ফেরেশতা জিবরাইল (আ.)-এর বহনকৃত ওহির মাধ্যমে পরবর্তী ২৩ বছর ধরে মুহাম্মদ (সা.)-এর কাছে বিভিন্ন প্রয়োজনীয়তা এবং ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে নির্দিষ্ট আয়াত আকারে বিভিন্ন সুরা নাজিল করা হয়।
পবিত্র কুরআনে আল্লাহ ঘোষণা করেন, ‘নিশ্চয়ই আমি তা (কোরআন) অবতীর্ণ করেছি কদরের রাতে। আর কদরের রাত সম্বন্ধে তুমি কি জানো? কদরের রাত হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। সে রাতে ফেরেশতারা ও রুহ অবতীর্ণ হয় প্রত্যেক কাজে তাদের প্রতিপালকের অনুমতিক্রমে।
‘শান্তিই শান্তি, বিরাজ করে ঊষার আবির্ভাব পর্যন্ত। (সূরা আল- কদর, আয়াত ১-৫)।’
হাদিসে বর্ণিত আছে, মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) রমজান মাসের শেষ ১০ দিন ইতিকাফ করতেন এবং বলতেন, ‘তোমরা রমজানের শেষ ১০ রাতে লাইলাতুল কদর সন্ধান করো (বুখারি ও মুসলিম)।’
মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভের আশায় পবিত্র রাতটি ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে কাটিয়ে দেন। কামনা করেন মহান রবের অসীম রহমত, নাজাত, বরকত ও মাগফিরাত।
এরই ধারাবাহিকতায় আজ রাত থেকে পরের দিন ভোররাত পর্যন্ত মসজিদসহ বাসা-বাড়িতে এবাদত বন্দেগিতে মশগুল থাকবেন ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা। নফল নামাজ, পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত, জিকির-আসকার, দোয়া, মিলাদ মাহফিল ও আখেরি মোনাজাত করবেন তারা।
এই উপলক্ষে শুক্রবার সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। এ উপলক্ষে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমসহ দেশের সব মসজিদে রাতব্যাপী ওয়াজ মাহফিল, ধর্মীয় বয়ান ও আখেরি মোনাজাতের আয়োজন করা হয়েছে।
এ ছাড়া দেশের সব মসজিদেই তারাবির নামাজের পর থেকে ওয়াজ মাহফিল, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল ও বিশেষ মোনাজাতের আয়োজন থাকবে।
পবিত্র লাইলাতুল কদর/শবে কদর উপলক্ষে বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এবং বাংলাদেশ বেতার ও বেসরকারি রেডিওগুলো বিশেষ অনুষ্ঠানমালা সম্প্রচার করবে।
এ ছাড়া সংবাদপত্রগুলোতে বিশেষ নিবন্ধ প্রকাশ করা হবে।
এশীয় দেশগুলোকে উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ ও যৌথ সমৃদ্ধির জন্য সুস্পষ্ট রোডম্যাপ তৈরির আহ্বান জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
চীনের হাইনানে বৃহস্পতিবার বোয়াও ফোরাম ফর এশিয়া (বিএফএ) সম্মেলনে দেওয়া বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘পরিবর্তনশীল এ বিশ্বে এশীয় দেশগুলোর ভাগ্য পরস্পরের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত। আমাদের অবশ্যই একটি স্পষ্ট রোডম্যাপ তৈরি করতে হবে যা অভিন্ন ভবিষ্যৎ এবং যৌথ সমৃদ্ধির দিকে নিয়ে যাবে।’
আর্থিক সহযোগিতা প্রসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এশিয়াকে অবশ্যই একটি টেকসই অর্থায়ন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে এবং আঞ্চলিক উন্নয়ন ব্যাংক (এমডিবি) ও অনুরূপ প্রতিষ্ঠানগুলোর এ প্রচেষ্টায় নেতৃত্ব দেওয়া উচিত।
তিনি বলেন, ‘আমাদের এমন নির্ভরযোগ্য তহবিল দরকার যা আমাদের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা ও ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণ করবে।’
বাণিজ্য সহযোগিতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এশিয়া এখনও বিশ্বের অন্যতম কম সংযুক্ত অঞ্চল।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘এ দুর্বল সংযুক্তি বিনিয়োগ ও বাণিজ্যকে বাধাগ্রস্ত করছে। আমাদের অবশ্যই বাণিজ্য সহযোগিতা বাড়ানোর জন্য দ্রুত কাজ করতে হবে।’
খাদ্য ও কৃষি সহযোগিতা বিষয়ে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, এশীয় দেশগুলোকে অবশ্যই সম্পদ-সাশ্রয়ী কৃষিকে উৎসাহিত এবং খাদ্য নিরাপত্তার জন্য স্থানীয় উৎপাদন বাড়াতে হবে।
তিনি বলেন, ‘আমাদের আমদানির ওপর নির্ভরতা কমাতে হবে। স্বনির্ভরতা অর্জন করতে হবে। টেকসই প্রযুক্তিভিত্তিক কৃষি সমাধান ও জলবায়ুবান্ধব চাষাবাদের ক্ষেত্রে উদ্ভাবন বাড়ানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’
প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, এশিয়াকে অবশ্যই একটি শক্তিশালী প্রযুক্তি ইকোসিস্টেম গড়ে তুলতে হবে, যা পুনর্গঠনমূলক, সমবণ্টনমূলক এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক হবে।
তিনি বলেন,‘আমাদের জ্ঞান, তথ্য ভাগ করে নিতে হবে এবং প্রযুক্তি ইনকিউবেশন ও উদ্ভাবনে বিনিয়োগ করতে হবে। ডিজিটাল সমাধানে সহযোগিতা আমাদের অগ্রগতিকে ত্বরান্বিত করবে।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘পরিশেষে বলব আমাদের সম্মিলিত কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রে মেধা সম্পদ ও যুবশক্তিকে রাখতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের অবশ্যই একটি নতুন সভ্যতার ভিত্তি স্থাপন করতে হবে—একটি আত্মরক্ষা ও আত্মস্থায়ী সমাজ। আমাদের শূন্য-বর্জ্যের জীবনধারার ওপর ভিত্তি করে একটি পাল্টা সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে। ভোগ সীমিত রাখতে হবে মৌলিক প্রয়োজনের মধ্যে।
‘আমাদের অর্থনীতিকে সামাজিক ব্যবসার ওপর ভিত্তি করে গড়ে তুলতে হবে, যা ভবিষ্যতের ব্যবসায়িক কাঠামো হিসেবে উদ্ভাসিত হবে, যেখানে উদ্ভাবন, লক্ষ্য ও দায়িত্ববোধ একীভূত থাকবে।’
অধ্যাপক ইউনূস আরও বলেন, বোয়াও ফোরাম ও অন্যান্য অনুরূপ উদ্যোগগুলোকে যুবসমাজ ও উদ্যোক্তাদের মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করতে হবে, যেন আগামী প্রজন্মের জন্য এশিয়াকে আরও উন্নত করা যায়।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য