ক্ষমতাসীন সরকারকে সময় থাকতে কেটে পড়ার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
সরকারকে উদ্দেশ করে তিনি বলেছেন, ‘আব্বাস উদ্দীনের একটি গান আছে আগে জানলে তোর ভাঙা নৌকায় উঠতাম না। এই গান এখন সবাই গায়। ভালোয় ভালোয় কেটে পড়ুন, নয় তো ভয়ানক পরিণতি হবে।’
শনিবার কুমিল্লায় অনুষ্ঠিত বিএনপির সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন বিএনপি মহাসচিব।
তিনি বলেন, ‘ফ্যাসিবাদী, স্বৈরতান্ত্রিক সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে গিয়ে ভোলায়, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অনেক ভাই প্রাণ দিয়েছেন। তাদের খুনের বিচার, দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তি, ৩৫ হাজার মিথ্যা মামলার প্রত্যাহারের দাবিতে এই মহাসমাবেশ।’
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ছাত্রদল নেতা নয়নকে বিনা কারণে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে দাবি করে ফখরুল বলেন, ‘তার কোনো দোষ ছিল না। নয়নের বুকে প্রতিবাদের আগুন জ্বলেছিল। তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। গোটা দেশবাসী আজ মুক্তি চায়।’
সভাস্থলে উপস্থিত নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘২০১৪ সালে কেউ ভোট দিতে যায়নি। ২০১৮-তে আগের রাতেই ভোট চুরি করেছেন। তিনি নাকি আবার ক্ষমতায় যাবেন! যশোরের জনসভায় তিনি বলেছেন- আওয়ামী লীগ আসলে জনগণ শান্তি পায়।
‘আপনারা কি শান্তি পান?’
মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণা করে ফখরুল বলেন, ‘একটা গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ, একটি সুখী বাংলাদেশ দেখার জন্য দেশ স্বাধীন করেছিলাম। স্বাধীনতার ৫০ বছরে এসেও মানুষ আজ খাবারের জন্য দৌড়ায়।’
বর্তমান সরকার ইভিএম কারচুপির মাধ্যমে ক্ষমতা ধরে রাখতে চায় দাবি করে নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপি নেতা-কর্মীদের নামে অতীতের মতো গয়েবি মামলা দেয়ারও অভিযোগ করেন দলটির মহাসচিব।
তিনি বলেন, ‘এতে করে কি ১০ তারিখ সমাবেশ বন্ধ করতে পারবে? পারবে না।’
‘আমাদের কথা পরিষ্কার। আমরা জনগণকে সঙ্গে নিয়ে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করব।’
বরাবরের মতো বক্তব্যে রিজার্ভের বিষয়টিও সামনে আনেন ফখরুল। তিনি বলেন, ‘রিজার্ভ নিয়ে কথা বলে। রিজার্ভ খেয়ে ফেলেছে। চিবিয়ে খায়নি, গিলে ফেলেছে।
‘বিশেষজ্ঞরা বলছে আগামী তিন মাস ব্যয় বহন করার মতো রিজার্ভ নাই। তারা সব খেয়ে ফেলেছে। গত ১০ বছরে তারা ৮৬ লাখ কোটি টাকা পাচার করেছে।’
এমন কোনো দ্রব্য নাই যার দাম বাড়েনি। তাদের লোকদের টাকা বেড়েছে। শতকরা ৪২ জন লোক দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে।’
বক্তব্যের শেষ দিকে ফখরুল বলেন, ‘আমাদের নেতা ৮ হাজার মাইল দূর থেকে ডাক দিয়েছেন। টেক ব্যাক বাংলাদেশ।’
আরও পড়ুন:নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় সেপটিক ট্যাংকের ভেতর পড়ে এক শিশু মারা গেছে।
সদর উপজেলার কাশীপুর ইউনিয়নের উত্তর গোয়ালবন্দ ব্যাংককলোনী আবাসিক এলাকায় বৃহস্পতিবার বিকেলে এ ঘটনা ঘটে।
সাড়ে ৫ বছর বয়সী মুশফিকা আক্তার ওই এলাকার মো. খলিলের মেয়ে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে শিশুটি স্থানীয় একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছিল।
ফতুল্লা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রকিবুজ্জামান নিউজবাংলাকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
স্থানীয়দের বরাতে তিনি জানান, নির্মাণাধীন একটি ভবনের সেপটিক ট্যাংকের ঢাকনা খোলা থাকায় ভেতরে পড়ে যায় মুশফিকা আক্তার নামে ওই শিশু। শিশুটির মা তাকে ভেতর থেকে বের করে আনে। পরে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
নির্মাণাধীন ভবনটির মালিক মোরশেদা বেগম বলেন, ‘দুপুর আড়াইটার দিকেও তিনি সেপটিক ট্যাংকের ঢাকনা লাগানো দেখেছেন। কেউ ঢাকনাটি চুরি করে নিয়ে গেছে বলে ধারণা করছি। বিকেল ৪টার দিকে ঘর থেকে বেরিয়ে সেপটিক ট্যাংকের ঢাকনা খোলা দেখি। পরে ট্যাংকের ভেতর উঁকি দিয়ে বাচ্চা বয়সী কারও টুপি ও জুতা ভাসতে দেখি। পরে আশেপাশের লোকজনকে ডাক দেই।
‘আশেপাশের লোকজনের সঙ্গে কথা বলার সময় পাশের বাসা থেকে বাচ্চার মা বেরিয়ে আসে। পরে টর্চলাইটের আলো জ্বেলে বাচ্চাটিতে ভাসতে দেখা যায়।’
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, হৈ-চৈ শুনে শিশুটির মা ঘর থেকে বেরিয়ে আসেন। বাচ্চাটিকে বের করার পর তার মুখ সাদা হয়ে গেছে। পরে শিশুটির পেটে চাপ দিয়ে পানি বের করার চেষ্টা করা হয়। পরে মুমূর্ষু অবস্থায় শিশুটিকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
নারায়ণগঞ্জ সদর জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার এস কে ফরহাদ জানান, শিশুটির মরদেহ তার পরিবারের লোকজন নিয়ে গেছে। হাসপাতাল থেকে পুলিশকে ঘটনা জানানো হয়েছে।
ওসি রকিবুজ্জামান জানান, পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। শিশুর পরিবারের কাছ থেকে অভিযোগ পেলে মামলা হবে।
আরও পড়ুন:রাজশাহীতে একটি খাদ্যপণ্য প্রস্তুতকারী কোম্পানির মালিকের বাসায় দুই নির্মাণ শ্রমিককে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত কারখানা মালিকসহ চারজনকে আটক করেছে পুলিশ।
মহানগরীর বিসিক শিল্প এলাকার মডার্ণ ফুড নামের কোম্পানির মালিকের বাসায় বৃহস্পতিবার বিকেলে ঘটে এ ঘটনা।
প্রাণ হারানো শ্রমিকদের একজন রেজাউল ইসলাম। তিনি নওগাঁর মান্দা থানার সুগনিয়া গ্রামের বাসিন্দা বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। অপর শ্রমিকের পরিচয় জানা যায় নি।
বোয়ালিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাজহারুল ইসলাম নিউজবাংলাকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।
স্থানীয়দের বরাতে তিনি জানান, সপুরার মডার্ণ ফুডের মালিক আব্দুল মালেক হাজীর ছেলে মোহাম্মদ আব্দুল্লাহর কারখানা সংলগ্ন বাসায় রাজমিস্ত্রির কাজ করছিলেন দুই শ্রমিক। বৃহস্পতিবার দুপুরে ১০ লাখ টাকা চুরির অভিযোগে দুই শ্রমিককে খুঁটিতে বেঁধে লোহার রড ও লাঠি দিয়ে বেদম মারধর করা হয় সারা শরীরে।
চুরির স্বীকারোক্তি আদায়ে রাত সোয়া ৯টা পর্যন্ত দুই শ্রমিকের ওপর নির্যাতন চলে। নির্যাতনের সময় মোবাইল ফোনে ভিডিও ধারণ করা হয়। এমন দুটি ভিডিও পুলিশ উদ্ধার করেছে।
ওসি মাজহারুল জানান, গোপন তথ্যের ভিত্তিতে রাত সাড়ে ৯টার দিকে কারখানার সংলগ্ন মালিকের বাসায় অভিযান পরিচালনা করেন। এ সময় দুই শ্রমিককে মুমূর্ষু অবস্থায় দেখতে পেয়ে পুলিশ পিকআপ ভ্যানে তুলে তাদের দ্রুত রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেয়া হয়। এ সময় চিকিৎসকরা এক শ্রমিককে মৃত ঘোষণা করেন। আহত রেজাউলকে ৮ নম্বর ওয়ার্ডে পাঠানো হয়। কিন্তু ভর্তির কয়েক মিনিট পর তারও মৃত্যু হয়।
দুই শ্রমিককে উদ্ধারের সময় কারখানা মালিকের ছেলে আব্দুল্লাহ, আব্দুল্লাহর শ্বশুর মাসুম রেজা, শ্যালক মহিউদ্দিন রিয়াল ও ম্যানেজার এমরান হোসেনকে আটক করেছে পুলিশ । তাদের বোয়ালিয়া থানায় প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
ওসি বলেন, ‘ওই শ্রমিকদের পরিবারকে রাতেই খবর দেয়া হয়েছে। শুক্রবার সকালে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজের ফরেনসিক বিভাগে ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।’
আরও পড়ুন:কক্সবাজার শহরের পশ্চিম বাহারছড়া এলাকায় এক নারী এনজিও কর্মীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। তার নাম নিশাত আহমেদ।
বৃহস্পতিবার রাত ১১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কক্সবাজার সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রফিকুল ইসলাম।
নিশাত আহমেদ শহরের পশ্চিম বাহারছড়া এলাকার গফুর সওদাগরের বাড়িতে ভাড়া থাকতেন। তার গ্রামের বাড়ি চকরিয়ার ডুলাহাজারায়। তিনি আন্তর্জাতিক একটি এনজিও সংস্থায় সিকিউরিটি গার্ড হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
বাড়ির মালিক গফুর সওদাগর বলেন, ‘বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ৯টার দিকে বাসার দ্বিতীয় তলায় নিশাতের রুমের দিকে যায় আমার মেয়েরা। বরাবরের মতোই তার বাসার দরজা ভেড়ানো ছিল। ধাক্কা দিতেই দরোজা খুলে যায়। মেয়েরা তার দেহ ঝুলন্ত দেখতে পায়। তারপর ৯৯৯ নম্বরে ফোন করা হয়।’
ঘটনাস্থলে থাকা কক্সবাজার সদর মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) ইফতেখার উদ্দিন বলেন, ‘৯৯৯-এ ফোন পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে এসে এক তরুণীর ঝুলন্ত মরদেহ পেয়েছি। মরদেহ নামিয়ে ময়না তদন্তের জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে।’
কিশোরগঞ্জের বাজিতপুরে একটি সেতুর অভাবে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে দুটি ইউনিয়নের ৫০ হাজারের বেশি মানুষের। সেতুর অভাবে হাট-বাজার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও উপজেলা সদরে যেতে হলে নৌকাই একমাত্র ভরসা এখানকার বাসিন্দাদের। ফলে যোগাযোগ ও পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে নানা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন এ অঞ্চলের বাসিন্দারা।
উপজেলার মাইজচর ইউনিয়নে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলা সদরের সঙ্গে যোগাযোগের ক্ষেত্রে ঘোড়াউত্রা নদী পার হতে হয় ছোট ছোট নৌকা দিয়ে। বর্ষায় উত্তাল ঢেউয়ে অনেক সময় নৌকা ডুবে ঘটে দুর্ঘটনা আর শুকনো মৌসুমে কাঁদা-পানিতে ভিজে নৌকায় ওঠতে হয় তাদের।
এতে নিয়মিত বিদ্যালয়ে যেতে পারে না শিক্ষার্থীরা। উৎপাদিত কৃষি পণ্যের সঠিক মূল্যও পাচ্ছে না কৃষক। চরম ভোগান্তি পোহায় কয়েকশ শিক্ষার্থীসহ ৫০ হাজারের বেশি মানুষের। উপজেলা সদরের সঙ্গে যোগাযোগের একমাত্র পথ এ নদী। এই নদী পার হয়েই শিক্ষার্থীদের যেতে হয় উচ্চ শিক্ষার জন্য। স্বাস্থ্য সেবা নিতে ও সরকারি-বেসরকারি অফিস এবং বাজারেও যেতে হয় একই পথে। উপজেলার মাইজচর ইউনিয়নের লোকজন পার হন দিলালপুর ঘাট দিয়ে।
এ ছাড়াও পাশ্ববর্তী হুমাইপুর ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি গ্রামের মানুষ প্রতিদিন এ ঘাট দিয়ে পার হন। বর্ষা মৌসুমে বাড়ির ঘাট থেকে নৌকায় উঠতে পারলেও শুকনো মৌসুমে প্রায় দুই কিলোমিটার রাস্তা হেঁটে এসে নদী পার হতে হয় তাদের। জোয়ারের সময় নদীতে পানি বাড়লে ইঞ্জিনচালিত নৌকা তীরে ভিড়ে তবে পানি কমে গেলে বাধে বিপত্তি।
দিলালপুর আবদুল করিম উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী হেরা মনি বলেন, ‘বছরের অধিকাংশ সময় নদীতে অনেক পানি থাকে। এই সময়ে নদী পার হতে অনেক ভয় লাগে। অনেক সময় নৌকা দিয়ে নদী পার হতে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হতে হয়। শুকনো মৌসুমে পানি কমে গেলে নদী পার হতে গিয়ে কাঁদা লেপ্টে জামা কাপড় নষ্ট হয়ে যায়। এই অবস্থায় ওইদিন আর স্কুলে যাওয়ার সুযোগ থাকে না।’
বাজিতপুর উপজেলা ছাত্রলীগ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জায়েদ উল্লাহ ফুরকান বলেন, ‘এই নদীতে সেতু না থাকায় সারা বছর আমাদের খুবই কষ্ট করতে হয়। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে গেলে আমাদেরকেও এর অংশীদার করতে হবে। তাই সেতু নির্মাণের জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ চাই।’
দিলালপুর আবদুল করিম উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আ. কাইয়ুম জানান, মাইজচর ইউনিয়নের প্রায় দুই শতাধিক শিক্ষার্থী এই বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে। তারা প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করে বিদ্যালয়ে আসে। যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে অনেক শিক্ষার্থী ঝরে পড়েছে। ঘোড়াউত্রা নদীতে একটি সেতু নির্মিত হলে শিশুরাও বিদ্যালয়ে আসতে আগ্রহী হবে। ফলে পিছিয়ে থাকা এলাকাগুলোতেও শিক্ষার হার বাড়বে।
মাইজচর গ্রামের কৃষক হোসেন আলী বলেন, ‘এ ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে প্রচুর পরিমাণ সবজি উৎপাদন হয়। যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে এখানকার কৃষকেরা ন্যায্যমূল্য না পাওয়াতে সবজি উৎপাদনে নিরুৎসাহিত হচ্ছে। আমাদের বাপ-দাদার আমল থেকে হাজার হাজার মানুষ কষ্ট করছে। ঘোড়াউত্রা নদীতে একটি সেতু নির্মিত হলে কৃষকেরাও তাদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য পাবে। আমাদেরও কষ্ট দূর হবে।’
মাইজচর ইউনিয়নের বাসিন্দা জাহানারা বেগম বলেন, ‘একটা বিরিজের লাগি সারাডা জীবন কষ্ট কইরে গেলাম। অহনও করতাছি। বিরিজ আর অইলো না। আমরার দাবি এহানো একটা বিরিজ দরহার।’
মাইজচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তাবারক মিয়াজি বলেন, ‘উপজেলা সদর থেকে আমাদের ইউনিয়নটি একেবারেই বিচ্ছিন্ন। দেশ স্বাধীনের পর থেকে এই নদীতে সেতু নির্মাণের দাবি থাকলেও সেতু নির্মাণ হয়নি। এ নদী পার হতে গিয়ে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীসহ অনেকেই দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন। এ ছাড়াও কেউ অসুস্থ হলে সময়মতো চিকিৎসা করা সম্ভব হয় না। অনেক সময় নদী পার হওয়ার আগেই বিনা চিকিৎসায় মারা যায়।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই অবস্থায় আমাদের দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতে কিশোরগঞ্জ-৫ আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য মো. আফজল হোসেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছেন। কয়েকদিন আগে মন্ত্রণালয়ের প্রকল্প পরিচালক সেতু নির্মাণের এলাকা পরিদর্শন করেছেন।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে এলজিইডি মন্ত্রণালয়ের পল্লি সড়ক ও গুরুত্বপূর্ণ সেতু নির্মাণে সমীক্ষা প্রকল্পের পরিচালক নির্বাহী প্রকৌশলী মো. এবাদত আলী বলেন, ‘স্থানীয় প্রকৌশলী এবং জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে নিয়ে আমি সেতু নির্মাণের এলাকা পরিদর্শন করে এসেছি। শুধু আশ্বাস নয়, দ্রুত সময়ের মধ্যে ঘোড়াউত্রা নদীর উপর মাইজচর ও দিলালপুর সংযোগ সেতু নির্মিত হবে।’
আরও পড়ুন:বাগেরহাটের ফকিরহাটে অতিরিক্ত মুনাফার জন্য মজুদ করা ২০ হাজার টন চাল জব্দ করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্য্যাটালিয়ন (র্যাব)। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় উপজেলার লখপুর এলাকার এএমএম জুট মিলের গোডাউন থেকে এই চাল জব্দ করা হয়।
অবৈধ মজুদের অপরাধে গুদামের দায়িত্বে থাকা অলোক চক্রবর্ত্তী নামের এক ব্যক্তিকে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। সে সঙ্গে পরবর্তী নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত গুদামটিকে সিলগালা করে দেয়া হয়েছে।
বাগেরহাট জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার রুবাইয়া বিনতে কাশেম ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক হিসেবে এই আদেশ দেন। এ সময় র্যাব-৬ খুলনার কোম্পানি কমান্ডার মো. বদরুদ্দৌজা, বাগেরহাট জেলা কৃষি বিপণন কর্মকর্তা সুজাত হোসেন খান, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকাঈ পরিচালক আব্দুল্লাহ আল ইমরানসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।
র্যাব-৬ খুলনার কোম্পানি কমান্ডার মো. বদরুদ্দৌজা বলেন, ‘গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে গুদামে মজুদ করা বিপুল পরিমাণ চাল পাওয়া যায়। এই চালগুলো অতিরিক্ত দামে বিক্রির জন্য সেখানে রাখা হয়েছিল।’
তবে গুদামের দায়িত্বে থাকা অলোক চক্রবর্ত্তীর দাবি, জব্দ চালগুলো সরকারি গুদামে দেয়ার জন্য আমদানি করা হয়েছিল। কিন্তু চালগুলো নষ্ট হয়ে যাওয়ায় আর গুদামে দেয়া যায়নি। চালের পরিমাণ ১ হাজার ১৮৯ টন।’
জেলা কৃষি বিপনন কর্মকর্তা মো. সুজাত হোসেন খান বলেন, ‘খাদ্য অধিদপ্তরের চাহিদা অনুযায়ী এই চাল আমদানি করা হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীতে চালের মান খারাপ উল্লেখ করে চালগুলো আর সরকারি খাদ্য গুদামে দেয়নি চাল ব্যবসায়ী। আসলে এর মধ্যে মাত্র দুই-তিন বস্তা চাল খারাপ হতে পারে। বাকিগুলোর মান ভাল।
‘গুদামে ২০ হাজার টন চাল রয়েছে। জুট মিলে এত চাল থাকার কথা নয়। সব চাল ভালো থাকা সত্ত্বেও তারা নষ্ট বলে উল্লেখ করছে। মূলত অতিরিক্ত মুনাফার উদ্দেশ্যে এই বিপুল পরিমাণ চাল মজুদ করা হয়েছিল।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, চাল আমদানিকারক বৈধ কাগজপত্র ও খাদ্য বিভাগের নির্দেশনা নিয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করবেন। জেলা প্রশাসক তার কাগজপত্র, চালের পরিমাণ, স্থানীয় সাক্ষীদের বক্তব্য ও সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত দেবেন। আপাতত গুদামটি সিলগালা থাকবে।’
আরও পড়ুন:মানসিক চাপের কারণেই ভোটের আগে আত্মগোপনে ছিলেন বলে জানিয়েছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী আবু আসিফ আহমেদ।
স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে ঢাকা থেকে আশুগঞ্জে ফেরার পর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তিনি সাংবাদিকদের এমনটি জানান।
এক সময়কার বিএনপি নেতা আসিফ বলেন, নির্বাচনে নানা কারণে মানসিক চাপে ছিলাম। আর এই চাপ থেকে মুক্ত হতে নির্বাচন থেকে সরে গিয়েছিলাম। যেহেতু ২ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন শেষ হয়েছে, তাই বাড়িতে ফিরে এসেছি।
আবু আসিফের স্ত্রী মেহেরুন্নিসা মেহরিন জানান, ভয়ের কারণে তার স্বামী আত্মগোপনে ছিলেন । তাই তিনি নিজের ফোনটিও নিয়ে যাননি।
এর আগে আবু আসিফ নিজের রাজধানীর বসুন্ধরার বাসায় অবস্থান করছিলেন বলে জানান পুলিশ। বৃহস্পতিবার দুপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শাখাওয়াত হোসেন সাংবাদিকদের এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
পুলিশ সুপার জানান, আবু আসিফ আহমেদ নিখোঁজ থাকার বিষয়ে তার স্ত্রী থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছিলেন। এ বিষয়ে খোঁজ নিতে আশুগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি আসিফের সন্ধান পাওয়ার বিষয়টি তাকে নিশ্চিত করেন।
আরও পড়ুন:বগুড়ার উপনির্বাচনে আলোচিত স্বতন্ত্র প্রার্থী হিরো আলমের সংবাদ প্রকাশ করার জেরে দুই সাংবাদিককে মারধরের অভিযোগ উঠেছে এক যুবলীগ নেতার বিরুদ্ধে।
বুধবার রাতে সাড়ে ১১টার দিকে বগুড়া শহরের টেম্পল রোডের জেলা আওয়ামী লীগ অফিস-সংলগ্ন টাউন ক্লাবে এ ঘটনা ঘটে।
হামলার শিকার দুজন হলেন বগুড়া সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ও কালের কণ্ঠের জেলা প্রতিনিধি জে এম রউফ এবং স্থানীয় পত্রিকা দৈনিক বগুড়ার জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক জহুরুল ইসলাম।
মারধরের ঘটনার পর থেকে পালিয়ে আছেন বগুড়া জেলা যুবলীগের সহসভাপতি অভিযুক্ত শরিফুল ইসলাম শিপুল।
হামলার শিকার জে এম রউফ জানান, তিনি টাউন ক্লাবের অফিসে (ক্লাবের সাধারণ সম্পাদকের কক্ষে) বসে উপনির্বাচনে পরাজিত প্রার্থী আশরাফুল আলম ওরফে হিরো আলমের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে সংবাদ সম্মেলনের সংবাদ লিখছিলেন। ওই কক্ষে স্থানীয় সাংবাদিক প্রদীপ মহন্ত ও জহুরুল ইসলাম ছাড়াও তার আরও দুই বন্ধু উপস্থিত ছিলেন।
তিনি বলেন, রাত সাড়ে ১১টার দিকে যুবলীগ নেতা শিপুল মদ্যপ অবস্থায় সেখানে প্রবেশ করেন। এ সময় আমি হিরো আলমের সংবাদ সম্মেলনের ভিডিও অফিসের মেইলে পাঠিয়েছি বলে অফিসে ফোনে জানাচ্ছিলাম। এটি শুনেই ক্ষিপ্ত হয়ে অশালীন ভাষায় গালাগাল শুরু করেন শিপুল। তিনি আমাদের ওপর হামলা করেন।
জে এম রউফ বলেন, হামলার বিষয়ে শিপুলের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ করব। সেই প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে।
আরেক সাংবাদিক জহুরুল ইসলাম বলেন, ‘শিপুল মদ্যপ অবস্থায় এসেই অকথ্য ভাষায় কথা বলছিল। হিরো আলমের নিউজের কথা শুনেই আরও ক্ষিপ্ত হয়। প্রথমে তাকে অফিস থেকে বের করে দেয়া হয়। কিছুক্ষণ পরে আবার এসে মারপিট শুরু করে শিপুল। আমার জামার কলার দিয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে ধরেছিল।’
এ বিষয়ে জানতে শরিফুল ইসলাম শিপুলকে ফোন করা হলে তিনি তা ধরেননি।
জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম ডাবলু বলেন, শরিফুল ইসলাম শিপুল জেলার প্রস্তাবিত কমিটির সহসভাপতি। এখানে একটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে।
সাংবাদিকদের ওপর হামলার খবর পেয়ে রাতেই সদর থানা ও সদর ফাঁড়ি পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। কিন্তু ততক্ষণে শিপুল পালিয়ে যাওয়ায় তাকে আটক করা যায়নি বলে জানায় পুলিশ।
বগুড়া সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নূরে আলম সিদ্দিকী বলেন, পুলিশ বিষয়টি খুব গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে। এ ঘটনায় এখনও কোনো লিখিত অভিযোগ পাইনি। পেলে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এর আগে বুধবার বগুড়া-৪ ও বগুড়া-৬ আসনের উপনির্বাচনে ভোটে লড়েন হিরো আলম। এর মধ্যে ৮৩৪ ভোটে হেরে যান তিনি।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য