বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের জোট ভেঙে গেছে বলে কুমিল্লার একটি ইউনিটের রুকন সম্মেলনে দলের আমির শফিকুল ইসলামের বক্তব্যের তিন মাসের মধ্যে রংপুর সিটি নির্বাচন নিয়ে দুই দলের দুই মেরুতে অবস্থানের প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে।
বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ না নেয়ার ঘোষণা থাকা বিএনপি এই ভোট বর্জন করলেও জামায়াতে ইসলামীর একজন নেতা মেয়র পদে প্রার্থী হয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনে জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল হওয়ায় দলটির পক্ষে দলীয় প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নেয়ার সুযোগ নেই। ফলে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভোটে অংশ নিতে হচ্ছে। তার পরও দলটির এই নেতার প্রার্থিতার বিষয়টি রাজনীতিতে ইঙ্গিতপূর্ণ হিসেবেই দেখা হচ্ছে।
১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সরকারবিরোধী আন্দোলনের একপর্যায়ে ১৯৯৯ সালে জোটবদ্ধ হয় জামায়াত ও বিএনপি। এর পর থেকে নির্বাচন, রাজনীতিতে বিএনপি যে পথে চলেছে, একই পথে চলেছে জামায়াতও। বিএনপি ভোট বর্জন করলে তাতে যায়নি জামায়াত। বিএনপি ভোটে গেলে গেছে তারাও।
তবে এই সম্পর্ক যে আগের মতো নেই, সেটি প্রকাশ পায় গত আগস্টের শেষে।
কুমিল্লা জামায়াতের একটি ইউনিটের রুকন সম্মেলনে অনলাইনে যুক্ত হয়ে দলের আমির শফিকুর ইসলাম জানান, বিএনপির সঙ্গে তাদের জোট ভেঙে গেছে।
সেদিন তিনি বলেন, ‘আমরা এতদিন একটা জোটের সঙ্গে ছিলাম। আপনারা শুনে হয়তো ভাবছেন কী হয়েছে এখন। হ্যাঁ, হয়ে গেছে।
‘২০০৬ সাল পর্যন্ত এই জোট দেশের জন্য উপকারী একটা জোট ছিল। ৬ সালের ২৮ অক্টোবর এই জোট তার দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছে। এবং সেদিন বাংলাদেশ পথ হারিয়েছে। তার পরে আর ফিরে আসেনি।’
তিনি বলেন, ‘আমরা বহু চিন্তা করে দেখেছি, এর পর থেকে এই জোট বাংলাদেশের জন্য আর উপকারী জোট নয়।’
জামায়াত আমির সেদিন আরও বলেন, ‘এই জোটের সঙ্গে বিভিন্ন দল যারা আছে, বিশেষ করে প্রধান দল এই জোটকে কার্যকর করার তাদের চিন্তা নাই। তাদের যদি চিন্তা না থাকে, তাহলে তা হবে না।
‘এই বিষয়টি এখন আমাদের কাছে স্পষ্ট, দিবালোকের মতো পরিষ্কার এবং তারা আমাদের সঙ্গে বসে এটা স্বীকার করেছে। …বছরের পর বছর এই ধরনের অকার্যকর জোট চলতে পারে না।…একটা জোটের সঙ্গে কি কেয়ামত পর্যন্ত থাকব?... কোনো অ্যালায়েন্স আপনারা করবেন না, বাস্তবতাও নাই, পারবেনও না।’
বিএনপির পক্ষ থেকে এই বক্তব্যের বিপরীতে কোনো জবাব দেয়া হয়নি। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, এ বিষয়ে তারা কিছুই বলবেন না। সাংবাদিকদের প্রশ্নে এও বলেছেন, কিছু না বলতে চাওয়া তার গণতান্ত্রিক অধিকার।
রংপুরে কাকে প্রার্থী করছে জামায়াত?
আগামী ২৭ ডিসেম্বরের ভোটে মেয়র পদে জাতীয় পার্টির গতবারের বিজয়ী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা, আওয়ামী লীগের হোসনে আরা ডালিয়ার মোকাবিলায় মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন রংপুর মহানগর আমির মাহবুবার রহমান বেলাল।
তফসিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষদিন ২৯ নভেম্বর। তবে এখন পর্যন্ত মেয়র পদে জমা পড়েছে ১৩টি আবেদন। তারা আগামী ৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত মনোনয়ন প্রত্যাহার করতে পারবেন। ফলে শেষ পর্যন্ত জামায়াত ভোটে থাকছে কি না, সেটি নিশ্চিত হতে হলে সেদিন পর্যন্ত অপেক্ষায় থাকতে হবে।
অতীতের নানা ভোটের পরিসংখ্যানে রংপুর শহরে জাতীয় পার্টির শক্তিকে চ্যালেঞ্জ জানানোর মতো আছে কেবল আওয়ামী লীগ। তবে জামায়াতে ইসলামীও নানা সময় উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ভোট পেয়ে আসছে।
২০১২ সালে সিটি করপোরেশনের প্রথম ভোট দলীয় প্রতীকে হয়নি। সেবার আওয়ামী লীগের সমর্থনে প্রার্থী হয়ে জেতেন প্রয়াত নেতা সরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টু। লড়াই হয় জাতীয় পার্টি সমর্থিত মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফার সঙ্গে।
ঝন্টু পান ১ লাখ ৬ হাজার ২৫৫ ভোট, মোস্তফা পান ৭৭ হাজার ৮০৫টি।
২০১৭ সালের দলীয় প্রতীকে দ্বিতীয় নির্বাচনে নৌকার ঝণ্টুকে উড়িয়ে দেন লাঙ্গলের মোস্তফা। আওয়ামী লীগ ভোট পায় ৬২ হাজার ৪০০, জাতীয় পার্টি পায় ১ লাখ ৬০ হাজার ৪৮৯ ভোট।
সেবার বিএনপি নেতা কাওসার জামান বাবলা স্বতন্ত্রের ব্যানারে অংশ নিয়ে ভোট পান ৩৫ হাজার ১৩৬ ভোট। তখন জোটের শরিক জামায়াত ভোটে অংশ না নিয়ে বাবলার পাশে থাকে।
এবারের ভোটে জাতীয় পার্টি ও আওয়ামী লীগে বিভেদ আছে। ঘোষিত প্রার্থীকে মেনে না নিয়ে দুই দলেরই একাধিক নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
জামায়াত নেতার বক্তব্য পাওয়া সহজ নয়
মনোনয়নপত্র জমা দিলেও জামায়াত নেতা আলী মাহবুবার রহমানের বক্তব্য পাওয়া সহজ নয়। তিনি তার ঘনিষ্ঠ কয়েকজন সাংবাদিকের সঙ্গেই কেবল কথা বলেন। তাদের মাধ্যমে যোগাযোগ করেই বক্তব্য পেয়েছে নিউজবাংলা। যদিও সব জিজ্ঞাসার জবাব মেলেনি।
সেই সাংবাদিককে তিনি বলেন, ‘এটা হলো লোকাল গভর্নমেন্ট, এখানে জনগণের সেবা দেয়া দরকার, উন্নয়নের দরকার। সেই লক্ষ্যে এখানে দলের অন্তর্ভুক্তিটা ক্ষতিকর। যখন দলীয় কোনো প্রার্থী এখানে নির্বাচিত হবেন, সঙ্গত কারণে দলীয় লোকজন সেখানে গিয়ে দাবি দাওয়া করবে, আবদার করবে, চাঁদা চাইবে। তাতে সিটি করপোরেশনের কাজ ব্যহত হবে, দুর্নীতির একটা রাস্তা খুলে যাবে।’
তিনি বলেন, ‘এজন্য আমি স্বতন্ত্র প্রার্থী। বিভিন্ন দল মতের সমর্থনে আছি। ব্যানার, পোস্টার, হ্যান্ডবিলে কোথাও দলের উল্লেখ নাই। আমি জনগণের মেয়ের হতে চাই। জনগণের কল্যাণে কাজ করতে চাই।’
এই ভোটে অংশ নেয়ার ক্ষেত্রে দলের সম্মতি আছে কি না-এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমি ইতোমধ্যে বলেছি, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলের কোনো প্রশ্ন নাই, দলের কোনো গুরুত্ব নাই, দলের প্রয়োজনও নাই। কারণ, এখানে আইন প্রণয়ন হবে না, সংবিধান রচনা হবে না, মন্ত্রিপরিষদ গঠনও হবে না।’
জামায়াতের মহানগর সেক্রেটারি আনোয়ারুর ইসলাম বলেন, ‘এমনটা না যে তারা (বিএনপি) আমাদেক ভোট করতে কইছে। কারণ, তাদের একটা আদর্শ আমাদের একটা আদর্শ।’
সরকারের সঙ্গে কোনো সমঝোতার ভিত্তিতে এই নির্বাচন কি না- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘সরকারের সঙ্গে আঁতাতের কোনো প্রশ্নই ওঠে না। আমরা দলীয় কোনো নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি না। কাজে এখানে কোনো কথাই আসে না যে আদর্শগত বা তাদের সঙ্গে আঁতাত করতে হবে।’
তবে নির্বাচন ও রাজনীতি নিয়ে কাজ করা বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা সুশাসনের জন্য নাগরিক বা সুজন এর রংপুর মহানগর কমিটির সভাপতি ফখরুল আনাম বেঞ্জু মনে করেন, জামায়াত নেতার ভোটে অংশগ্রহণ ইঙ্গিতবাহী। তিনি বলেন, ‘রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপির অনুপস্থিতি জামায়াতকে উৎসাহিত করল, যেটা বাংলাদেশের জন্য আরেকটা সংকেত বহন করে।
‘বিগত দিনে বিশেষ করে রংপুর শহরে তাদের কার্যক্রম ছিল না। এই ভোটের মাধ্যমে তারা সুসংগঠিত হতে চাইছে যা আগামী দিনে রংপুর অঞ্চলের রাজনীতিতে প্রভাব ফেলতে পারে।’
বিএনপি কী করবে?
রংপুর সিটির আগের দুটি নির্বাচনে বিএনপি নেতা কাওসার জামান বাবলা অংশ নিলেও এবার তাকে ফেরানোর চেষ্টা করছে দল।
জেলা বিএনপির এক শীর্ষ নেতা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বাবলা নির্বাচন করতে চান স্বতন্ত্রের ব্যানারে। কিন্তু আমরা তাকে না করে দিয়েছি। এখন পর্যন্ত নির্বাচনে অংশ না নেয়ার সিদ্ধান্তই আছে।
‘স্বতন্ত্রের ব্যানারে করুক আর যেভাবে করুক, ব্যক্তিটি তো বিএনপি নেতা। তিনি নির্বাচনে অংশ নিলে দল বড় সমালোচনার মধ্যে পড়ে যাবে।’
মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সামছুজ্জামান সামু নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা বলেই আসছি তত্ত্বাবধায়ক ছাড়া কোনো নির্বাচনে যাব না। আমরা এবং আমাদের দল সেই সিদ্ধান্তে আছি। আমরা কেউ এই সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাব না। কোনো নেতা যদি স্বতন্ত্রের নামে নির্বাচনে অংশ নেয় তাহলে দল তার বিরুদ্ধে কঠিন অ্যাকশনে যাবে।’
বিএনপি ভোটে না এলেও জামায়াত নেতার প্রার্থী হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে রংপুর মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব মাহফুজ উন নবী ডন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের বক্তব্য স্পষ্ট। এই সরকারের অধীনে জনগণের ভোটাধিকার নেই। নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া জাতীয় বা স্থানীয় কোনো নির্বাচনই এই সরকারের অধীনে যাব না, যাচ্ছি না। জামাত ভোট করছে সে বিষয়ে আমাদের সঙ্গে তাদের কোনো যোগযোগ নেই, হয়নি। সেটা তাদের বিষয়।’
গত আগস্টে জোট ছাড়ার বিষয়ে জামায়াত আমির যে বক্তব্য দিয়েছিলেন, তারপর রংপুর জামায়াতের এই আচরণে দুই দলের সম্পর্ক ছিন্নের প্রমাণ পাওয়া গেল কি না, এই প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমি আমার সংগঠনের বিষয়ে কথা বলতে পারি। অন্য সংগঠনের বিষয়ে কিছু জানি না। ভোট নিয়েও কোনো কথা হয়নি। জোটের বিষয়গুলো কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ আছেন বিষয়টি তারাই দেখেন।’
কেন্দ্রীয় বিএনপি কী বলছে
জামায়াত আমিরের জোট ছাড়ার বক্তব্যের পর রংপুরে বিএনপির সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে জামায়াতের প্রার্থী হওয়ার বিষয়ে নিউজবাংলা কথা বলেছে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খানের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘এমন কোনো তথ্য (রংপুরে জামায়াতের প্রার্থী দেয়া) আমার জানা নেই। আর স্বতন্ত্র হিসেবে দাঁড়ালে তিনি তো আর দলীয় পরিচয় বহন করছে না।’
স্বতন্ত্র প্রার্থী দলীয় পরিচয় বহন করে না বললেও দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে সিটি নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ায় নারায়ণগঞ্জে তৈমূর আলম খন্দকার ও কুমিল্লায় মনিরুল হক সাক্কুকে বহিষ্কার করেছে বিএনপি।
বিএনপির সঙ্গে জোট আর নেই বলে জামায়াতের আমিরের বক্তব্যের বিষয়ে নজরুল বলেন, ‘কথাবার্তা টুকটাক সবাই বলেন। আর জোট ছাড়ার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হলে সেটাতো আপনাদের দাওয়াত দিয়েই জানাব।’
আরও পড়ুন:নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন করোনা আক্রান্ত এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে।
করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত জেবল হক (৮০) কবিরহাট উপজেলার চাপরাশিরহাট ইউনিয়নের লামছি গ্রামের মৃত গনু মিয়ার ছেলে।
বুধবার (২ জুলাই) সকালে বিষয়টি নিশ্চিত করেন নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. রাজীব আহমেদ চৌধুরী। এর আগে, গতকাল মঙ্গলবার (১ জুলাই) রাত ১০টার দিকে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের করোনা ইউনিটে তার মৃত্যু হয়।
ডা. রাজীব আহমেদ চৌধুরী বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা আক্রান্ত হয়ে এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। গত মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে ওই বৃদ্ধ হাসপাতালে ভর্তি হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত ১০টার দিকে মারা যান তিনি। এদিকে গত ২৪ ঘন্টায় নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের এক জনের নমুনা পরীক্ষায় একজনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে।
এ বিষয়ে জেলা সিভিল সার্জন ডা.মরিয়ম সিমি বলেন, মারা যাওয়া ব্যক্তি সকালে হাসপাতালে ভর্তি হয়। দুপুরে তার করোনা শনাক্ত হওয়ার পর সেখানে রাতে তার মৃত্যু হয়। এখন পর্যন্ত নোয়াখালীতে মোট ৩ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। কিট সল্পতার কারণে উপজেলা পর্যায়ে করোনা টেস্ট এখনো শুরু করা হয়নি।
সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের নেতৃত্ব নিয়ে চলমান বিরোধের জেরে ক্লাবের সভাপতি আবুল কাশেমসহ সাংবাদিকদের উপর অতর্কিত হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে অন্তত ৩০ সাংবাদিক আহত হয়েছেন।
অভিযোগ উঠেছে, ক্লাবের কথিত সভাপতি মাদকাসক্ত আওয়ামী দোসর আবু সাঈদ ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুল বারীর নেতৃত্বে আল ইমরান ও অমিত ঘোষ বাপ্পাসহ ভাড়াটে সন্ত্রাসী ও মাদকাসক্তরা এই হামলা চালায়।
সোমবার (৩০ জুন) সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সামনে এই হামলায় ইন্ডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের সাংবাদিক ও প্রেসক্লাবের সভাপতি আবুল কাশেম, ভোরের আকাশের সাংবাদিক আমিনুর রহমান, ডিবিসি নিউজের সাংবাদিক বেলাল হোসেন, অনির্বানের সোহরাব হোসেনসহ অন্তত ৩০ সাংবাদিক গুরুতর আহত হয়েছেন।
হামলার শিকার সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সভাপতি আবুল কাশেম বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণভাবে প্রেসক্লাবে একটি সভা করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। ঠিক সেই মুহূর্তে আবু সাঈদ ও আব্দুল বারীর নেতৃত্বে আলিপুর থেকে আনা ভাড়াটে সন্ত্রাসী ও মাদকাসক্তরা আমাদের উপর পরিকল্পিতভাবে হামলা করে। তাদের হামলায় আমাদের অন্তত ৩০ জন সাংবাদিক ও সদস্য আহত হয়েছেন।
তিনি আরও অভিযোগ করেন, আবু সাঈদ ও আব্দুল বারী দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে প্রেসক্লাব দখল করে রেখেছেন এবং তাদের মতের বিরুদ্ধে গেলেই এভাবে হামলা ও নির্যাতন চালানো হয়।
এই ন্যাক্কারজনক হামলার ঘটনায় সাতক্ষীরার সাংবাদিক মহলে তীব্র ক্ষোভ ও উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। সাংবাদিকরা অবিলম্বে হামলাকারীদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার জোর দাবি জানিয়েছেন।
ঘটনার পর থেকে প্রেসক্লাব এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
কুমিল্লার দাউদকান্দি পৌরসভার ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে। বাজেট ঘোষণা করেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও দাউদকান্দি পৌর প্রশাসক রেদওয়ান ইসলাম।
সোমবার (৩০ জুন) দুপুরে পৌরসভা হলরুমে এ বাজেট ঘোষণা করা হয়। বাজেটে সর্বমোট আয় ৪২ কোটি ৯১ লাখ ৫৯ হাজার টাকা ও মোট ব্যয় ৩৬ কোটি ৭৪ হাজার টাকা প্রস্তাব করা হয়। পৌর প্রশাসক রেদওয়ান ইসলাম তার প্রস্তাবিত বাজেটে ২০২৫-২৬ অর্থ বছরে রাজস্ব খাত থেকে ১৩ কোটি ২৩ লাখ ৪১ হাজার ৩ শত ৩১ টাকা ও উন্নয়ন খাত থেকে ২৯ কোটি ৬৮ লাখ ১৮ হাজার ৪৫ টাকা আহরনের লক্ষমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে। বাজেটে উদ্ধৃত্ত ধরা হয়েছে ৬ কোটি ১৭ লাখ ২ হাজার ৩ শত ৭৮ টাকা।
এছাড়াও বাজেটে খাতওয়ারী ব্যয়ের হিসেবে দেখা যায় রাজস্ব খাতে ব্যয় ৯ কোটি ৫৯ লাখ ৫৭ হাজার টাকা এবং উন্নয়ন ব্যয় দুই কোটি ১৫ লাখ টাকা ধরা হয়েছে।
এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা.হাবিবুর রহমান,পৌরসভার নির্বাহী কর্মকর্তা তাজুল ইসলাম, হিসাবরক্ষক শাহাদাত হোসেনসহ পৌরসভার অন্যান্য কর্মকর্তারা।
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে মাদকাসক্ত হয়ে মাতলামি করার প্রতিবাদ করায় ইয়াছিন (৩৮) ও সিপন( ৩২) নামে দুই যুবক গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। আহতদের মধ্যে একজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং অপরজনকে রূপগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
শুক্রবার দিবাগত রাতে উপজেলার মুড়াপাড়া টঙ্গীরঘাট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
গুলিবিদ্ধ ইয়াছিন মুড়াপাড়ার হাউলিপাড়া এলাকার ইদু মিয়ার ছেলে এবং সিপন টঙ্গীরঘাট এলাকার আলাউদ্দিনের ছেলে।
রূপগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) তরিকুল ইসলাম জানান, রাত ১১টার দিকে ইয়াছিন তার স্ত্রীকে নিয়ে বিয়ের অনুষ্ঠান শেষে খালাতো বোনের বাড়ি যাচ্ছিলেন। পথে স্থানীয় সোহরাব নামের এক যুবক মাদকাসক্ত অবস্থায় তাদের উদ্দেশে গালিগালাজ করলে ইয়াছিন প্রতিবাদ করেন। পরে তিনি খালাতো ভাই সিপনকে নিয়ে স্থানীয় অহিদুল্লার বাড়িতে গিয়ে ঘটনার কথা জানান। সেখানেই সোহরাব ক্ষিপ্ত হয়ে পিস্তল দিয়ে তাদের লক্ষ্য করে গুলি চালায়। এতে ইয়াছিনের মাথায় ও সিপনের পায়ে গুলি লাগে।
তাদের প্রথমে স্থানীয় একটি বেসরকারি হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে সিপনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং ইয়াছিনকে রূপগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।
ঘটনার পরপরই পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে গুলির খোসা উদ্ধার করেছে এবং জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিনজনকে আটক করেছে। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
নোয়াখালীতে গ্রাম আদালত সম্পর্কে ব্যাপক সচরতা বৃদ্ধিতে স্থানীয় সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহের অংশ গ্রহণের সমন্বিত পরিকল্পনা বিষয়ক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
নোয়াখালী জেলা প্রশাসনের আয়োজনে বুধবার সকাল ১১ টার দিকে (২৫ জুন) জেলা প্রশাসকের কার্যালয় তৃতীয় তলায় মিনি কনফারেন্স হলরুমে কর্মশালায় উপস্থিত ছিলেন, নোয়াখালী জেলা প্রশাসক খন্দকার ইশতিয়াক আহমেদ, স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক জালাল উদ্দিন,নোয়াখালী অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ ইয়াসিন, গ্রাম আদালত নোয়াখালী ম্যানেজার আহসানুল্লাহ চৌধুরী মামুনসহ এনজিও প্রতিনিধি, সাংবাদিক, রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ,সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।
যশোরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের একটি বিচারাধীন মামলার নথি থেকে এজাহারের কপি রহস্যজনকভাবে গায়েব হয়ে গেছে। আদালতের নথি থেকে গুরুত্বপূর্ণ এই কাগজ হারিয়ে যাওয়ার ঘটনায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে আমলে নিয়ে মামলার বেঞ্চ সহকারী হুমায়ুন কবির ও আসামিপক্ষের আইনজীবী আহসান হাবিব মুকুলকে শোকজ করেছেন বিচারক। তাদের তিন কার্যদিবসের মধ্যে এ বিষয়ে ব্যাখা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আদালত সূত্র জানায়, ঘটনাটি ঘটে গত ২২ জুন যশোরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ প্রথম আদালতে। ওই দিন মামলাটির (এসসি-১৬৬৯/২০১৮) সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য নির্ধারিত ছিল। আদালতে আসামি, রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি ও আসামিপক্ষের আইনজীবী—সবাই উপস্থিত ছিলেন।
সাক্ষ্যগ্রহণ চলাকালে বিচারক মো. সালেহুজ্জামান মামলার নথি পর্যবেক্ষণ করে দেখতে পান, নথিতে মামলার এজাহারের কপি নেই। তাৎক্ষণিকভাবে তিনি আদালতের বেঞ্চ সহকারীকে বিষয়টি অবগত করলে তিনি জানান, সাক্ষ্য গ্রহণের আগে আইনজীবী আহসান হাবিব মুকুল তার কাছ থেকে নথি নিয়ে গিয়েছিলেন এবং এজাহার দেখে প্রয়োজনীয় তথ্য লিখে নিয়েছিলেন। এরপর তিনি আবার নথি বিচারকের কাছে জমা দেন।
এরপর এজলাসেই বিচারক আইনজীবীর কাছে জিজ্ঞাসা করলে তিনি এ বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে মন্তব্য করেন। ফলে বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়। জেলা আইনজীবী সমিতির নেতারাসহ সিনিয়র আইনজীবীরা এজলাসে হাজির হন। একপর্যায় বিচারক ওই দুইজনকে শোকজ করে আগামী ১৩ আগস্ট মামলার পরবর্তী দিন ধার্য করেন।
বেঞ্চ সহকারী হুমায়ুন কবির বলেন, ‘বিচারক এজলাসে ওঠার আগে আইনজীবী মামলার নথি নিয়েছিলেন। পরে ফেরত দেন। আমি নিজে নথিতে কোনো হেরফের করিনি। আইনজীবী কিংবা আইনজীবীর সহকারীর মাধ্যমে এই ঘটনা ঘটতে পারে।’
অন্যদিকে, আইনজীবী আহসান হাবিব মুকুল জানান, তিনি নথি নিয়েছিলেন ঠিকই, তবে বিচারক এজলাসে চলে আসায় তা যথাযথভাবে বেঞ্চ সহকারীর কাছে ফিরিয়ে দিয়েছেন। তিনি আসামির চালান কপি থেকে তথ্য নিয়েছেন। এজাহার সংক্রান্ত বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না বলেও দাবি করেন।
যশোর জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এম এ গফুর বলেন, ‘ঘটনাটি আমাদের নজরে এসেছে। একজন আইনজীবী এমন কাজ করতে পারেন না। আমরা বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে পর্যবেক্ষণ করছি।’
আদালত ও আইনজীবী সমিতি সূত্র আরও জানায়, আদালতে থাকা মামলার মুল কপি থেকে মামলার এজাহারের কপি সরিয়ে নিয়ে বাড়তি সুবিধা নেওয়ার সুযোগ নেই। এ ছাড়া এজাহার কপি হারিয়ে গেলেও মামলার বিচারের ক্ষেত্রে প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা নেই। কারণ ওই মামলার এজাহারের ফটোকপি রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলির কাছে সংরক্ষিত থাকে। এর বাইরেও অনেক মাধ্যমে মামলার এজাহারের কপি পাওয়ার সুযোগ রয়েছে।
তবে, মুল নথিতে এজাহারের কপি না থাকাটা সমীচীন নয়। এ বিষয়টি অবশ্যই খতিয়ে দেখা প্রয়োজন বলে জানায় সূত্র।
কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে সংবাদ প্রকাশের জের ধরে মিজানুর রহমান রিপন (৪৮) নামের এক স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মীকে মারধর ও লাঞ্চিতের ঘটনা ঘটেছে। মিজানুর রহমান রিপন ফিলিপনগর ইউনিয়নের ইসলামপুর গ্রামের আজাহার আলীর ছেলে।
গত রবিবার সন্ধার দিকে দৌলতপুর উপজেলা পরিষদ বাজারে এই ঘটনা ঘটে। মিজানুর রহমান রিপন ঢাকা থেকে প্রকাশিত দৈনিক আমর সংবাদ পত্রিকার দৌলতপুর উপজেলা প্রতিনিধি ও অনলাইন নিউজ পোর্টাল ডেইলি নিউজ বাংলার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক হিসেবে কাজ করে আসছেন। এঘটনায় ওই দিন রাতে ভূক্তভুগী নিজে বাদী হয়ে দৌলতপুর থানায় একটি লিখিত এজাহার দায়ের করেন।
এযাহার সূত্রে জানাযায়, গত ৮ জুন উপজেলার তারাগুনিয়া থানার মোড় এলাকার তারাগুনিয়া ক্লিনিকে আখি খাতুন (২২) নামের এক প্রশুতি মায়ের মৃত্যুর ঘটনায় তিনি সহ উপজেলার বেশ কয়েকজন গণমাধ্যম কর্মী সংবাদ প্রকাশ করে। তারি জের ধরে উপজেলা বাজারে থাকা সরকার নিষিদ্ধ ক্লিনিক বেবি নার্সিং হোম এর মালিক আহসান হাবিব কালুর ছোট ছেলে খালিদ হাসান আর্জু উপজেলা বাজারে তাকে মারধর করে।
এবিষয়ে মিজানুর রহমান নামের ওই গণমাধ্যম কর্মী বলেন, গতকাল বিকেলে আমি উপজেলা বাজারে বাড়ির দৈনন্দিন বাজার করছিলাম এসময় খালিদ হাসান আর্জু উপজেলা বাজারের বেবী ক্লিনিক মালিকের ছেলে আমার উপর হামলা চালায়। এসময় সে আমাকে বলে আমার হাসপাতালে যে ডাক্তার আসে সেই ডাক্তারের নামে তুরা নিউজ করেছিস বলে আমার উপর হামলা চালিয়ে বেদড়ক মারধর করে। এঘটনার পর আমি থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।
গণমাধ্যম কর্মীকে মারধরের বিষয়ে, দৌলতপুর উপজেলার একজন প্রবীন গণমাধ্যম কর্মী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, যে ধরনের ঘটনা ঘটেছে এটি কখনই কাম্য নয়। বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে ব্যাবস্থা নেওয়া উচিৎ।
এঘটনায় দৌলতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি নাজমুল হুদা জানান, এ ব্যাপারে অভিযোগ পেয়েছি, তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
অভিযুক্ত খালিদ হাসান আর্জু
মন্তব্য