একটি দেশের আমদানি নিশ্চিত করতে যে পরিমাণ রিজার্ভ দরকার, বাংলাদেশে তার চেয়ে বেশি আছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই বিষয়টি নিয়ে বেশি চর্চা হচ্ছে বলে মনে করে তিনি খোঁচা দিয়ে বলেছেন, ‘এখন সবাই রিজার্ভ বিশেষজ্ঞ হয়ে গেছে।’
ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের পর কেবল বাংলাদেশে নয়, দেশে দেশেই বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমছে বলেও জানিয়েছেন সরকার প্রধান। বলেছেন, ব্যাংকে টাকা রাখা নিয়ে গুজব ছড়িয়ে মানুষের টাকাকেই বরং ঝুঁকিতে ফেলা হয়েছে। ব্যাংক থেকে তুলে নিয়ে চোরের হাতে তুলে দেয়ার উপক্রম হয়েছে।
শুক্রবার বিকেলে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সরকারপন্থি চিকিৎসকদের সংগঠন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ বা স্বাচিপের পঞ্চম জাতীয় সম্মেলনে অংশ নিয়ে তিনি এ কথা বলেন।
উদ্যানে পৌঁছে বেলুন উড়িয়ে সম্মেলন উদ্বোধন করেন আওয়ামী লীগ প্রধান। সঙ্গে ছিলেন সংগঠনের সভাপতি ইকবাল আর্সলান এবং মহাসচিব এম এ আজিজ। স্বাচিপের জনসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যোগদান ও আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা উপস্থিত হওয়ায় সম্মেলনস্থল রূপ নেয় জনসভায়।
এরপর দীর্ঘ বক্তব্যে তার সরকারের আমলের উন্নয়ন, বর্তমান অর্থনৈতিক সংকট, ক্রমহ্রাসমান রিজার্ভ পরিস্থিতি, ব্যাংকে টাকা রাখা নিয়ে গুজব প্রসঙ্গ, ইউক্রেন যুদ্ধ এবং আমেরিকার বিভিন্ন নীতি নিয়ে বক্তব্য উঠে আসে।
বিদেশি ঋণ নিয়েও আশ্বস্ত করেন শেখ হাসিনা। বলেন, ঋণ পরিশোধের সব পরিকল্পনাই করা আছে। তিনি বলেন, ‘আমরা যত ঋণ নেই, সময় মতো সব পরিশোধ করি। একমাত্র বাংলাদেশ কোনোদিন ডিফল্টার হয়নি। যত সমস্যা হোক, ঋণ বিতরণে এবং ঋণ পরিশোধ সবসময় ধরে রাখি।’
তার সরকারের শাসনামলে দেশের অগ্রগতির কথাও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘আমরা তৃতীয়বারে মতো এখন সরকারে। অন্তত এইটুকু দাবি করতে পারি, এই ১৪ বছরে বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়িয়েছে, উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে, আমাদের দেশের মানুষের অর্থনৈতিক উন্নতি হয়েছে।’
২০০১ সালে দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের দৃষ্টান্তও তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। বলেন, তার সরকার সবসময় রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা চায়, গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা চায়।
‘প্রয়োজনের চেয়ে বেশিই আছে রিজার্ভ’
এর মধ্যে শেখ হাসিনা সবচেয়ে বেশি কথা বলেন রিজার্ভ নিয়ে। সোয়া এক বছরের মধ্যে রিজার্ভ ১৪ বিলিয়ন কমে ৩৪ বিলিয়নের কোটায় নেমে আসার পর এ নিয়ে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর যে আক্রমণ শুরু হয়েছে, তারও জবাব দেন। বলেন, রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়নে তুলেছিল তার সরকারই। এরপর করোনার চিকিৎসা সরঞ্জাম ও ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বেশি দামে পণ্য কিনতে গিয়ে রিজার্ভ কমেছে।
এই বিষয়টি নিয়ে অতি চর্চা হচ্ছে বলেও মনে করেন সরকার প্রধান। বলেন, ‘কিছুদিন থেকে শুনলাম আমাদের দেশের সবাই রিজার্ভ সম্পর্কে এবং অর্থনীতি সম্পর্কে ভীষণভাবে পারদর্শী হয়ে গেছে। গ্রামে গ্রামে চায়ের দোকানে রিজার্ভ নিয়ে কথা। সেখানে আমার কথা হচ্ছে জাতির পিতা তো যাত্রা শুরু করেছেন শূন্য রিজার্ভ নিয়ে। তিনি এই দেশটাকে গড়ে তুলেছিলেন।’
করোনাকালে আমদানি-রপ্তানি, হুন্ডি, বিদেশ যাওয়া বন্ধ থাকায় দেশের রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয় বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু বিশ্ববাজারে জ্বালানি ও খাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে পরে তা কমে।
এখনও যে রিজার্ভ আছে, তা যথেষ্ট জানিয়ে তিনি বলেন, ‘রিজার্ভ রাখা লাগে কীসের জন্য? যদি কোনো দৈব-দুর্বিপাক হয়, আমার তিন মাসের খাবার যেন আমি আমদানি করতে পারি।…আমাদের খরচ হচ্ছে রিজার্ভ। এটাও ঠিক। আমি বলব, আমাদের এখন যে রিজার্ভ তাতে তিন মাস না আমরা পাঁচ মাসের আমদানি করতে পারি এই পরিমাণ অর্থ আমাদের কাছে আছে।’
আমদানি যেন করতে না হয়, সেজন্য দেশের মানুষকে, এক ইঞ্চি জমি ফেলে না রেখে উৎপাদন করার পরামর্শ দিয়েছেন বলেও জানান সরকারপ্রধান। বলেন, ‘নিজেরটা নিজে করে খান, নিজে সাশ্রয় করেন, নিজের খাদ্য নিজে যোগান দেন। আমরা কিন্তু তা করতে পারি। কারণ বাংলাদেশ মানুষ তা পারে।’
রিজার্ভ কমার সমস্যাটা কেবল বাংলাদেশের নয় বলেও জানান শেখ হাসিনা। বলেন, ‘শুধু আমাদের দেশে নয়, পৃথিবীর অনেক দেশেরই রিজার্ভ কমে গেছে। আমরা শ্রীলঙ্কাকে কিছু সহযোগিতা করেছি, আরও অনেক দেশ কিন্তু ওই সহযোগিতার পর আমাকে অনুরোধ করেছে। আমি নাম বলতে চাই না, কিন্তু আমি তাদের কাছে ক্ষমা চেয়েছি যে আমার পক্ষে দেয়া সম্ভব না। কারণ, এখন যেটুকু রিজার্ভ তা আমার দেশের জন্য প্রয়োজন, সেটা আমাকে রাখতে হবে।’
কেন কমেছে রিজার্ভ
এই ব্যাখ্যা প্রধানমন্ত্রী আগেও দিয়েছেন। আবার উল্লেখ করলেন। বলেন, বিশ্ব বাজারে জ্বালানি ও ভোজ্য তেলসহ পণ্যমূল্যের দাম যেমন বেড়েছে, তেমনি পরিবহন ব্যয়ও বেড়েছে। সেই ধাক্কাটা দেশেও লেগেছে।
তিনি বলেন, ‘কোভিড শেষ হলে আমাদের আমদানি বেড়েছে, রপ্তানি বেড়েছে, কাজ বেড়েছে।…এখন খাদ্য কেনা, যত দামই বাড়ুক।
‘ইউক্রেন থেকে আমরা গম কিনি, রাশিয়া থেকে গম কিনি। যুদ্ধকালীন সময়ে পাইনি। কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, কোন কোন জায়গায় পাওয়া যায়, যত বেশি দাম হোক… ২০০ ডলারে যে গম পাওয়া যেত ৬০০ ডলারে আমরা কিনে নিয়ে আসি।
‘ভোজ্য তেলেও একই অবস্থা। সেই ব্রাজিল থেকে শুরু করে পৃথিবীর যে দেশে পাওয়া যায়, যত দাম হোক, আমরা নিয়ে আসছি। মানুষের যেগুলো ভোগ্যপণ্য তার যেন কোনোরকম অসুবিধা না হয়, তার জন্য যথাযথ কাজ আমরা করে যাচ্ছি, মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছি।’
ভোগ্যপণ্যের কোনো অসুবিধা হবে না বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘ইউক্রেন থেকে, রাশিয়া থেকে আমরা আমদানি শুরু করেছি। যদিও স্যাংশনের কারণে ডলারে পেমেন্টের অসুবিধে। আমরা বিকল্প ব্যবস্থা কিভাবে করা যায়, তার জন্য ব্যবস্থা নিচ্ছি।’
করোনার টিকার কথাও উল্লেখ করেন তিনি। বলেন, ‘শুধু ভ্যাকসিনের মূল্য ধরলে তো হবে না। এর সঙ্গে সিরিঞ্জ কিনতে হয়েছে। আমাদের ইন্ডাস্ট্রি মাত্র এক কোটি সিরিঞ্জ তৈরি করতে পারে। তখন ছোট সিরিঞ্জ পাওয়া যাচ্ছিল না বিদেশে। বলে, একটু বড় সাইজ, পয়সা বেশি লাগবে। আমি বলি, লাগুক, আনতে হবে। যখন যেটা প্রয়োজন হয়েছে সোজা প্লেন পাঠিয়ে কোটি টাকা খরচ করে আমরা কিন্তু নিয়ে এসেছি, মানুষকে ভ্যাকসিন দিয়েছি।
‘ভ্যাকসিন রক্ষণাবেক্ষণ, ফ্রিজার কিনে সংরক্ষণ, পরিবহন ব্যয় গ্রাম থেকে শহরে তা নিয়ে যেতে অর্থ খরচ হয়েছে।’
বিনা খরচে করোনাপ্রতিরোধী টিকা দেয়ার কথাও স্মরণ করান শেখ হাসিনা। সবাইকে ভাইরাসটির বুস্টার ডোজ নেয়ার আহ্বানও জানান তিনি। চিকিৎসা সেবায় যারা জড়িত তাদের অবশ্যই নিতে হবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী মজার ছলে বলেন, ‘যে না নেবে, তাকে ফাইন করব।’
টাকা বাড়িতে রাখলে চোরে নেবে
ব্যাংকে রাখা অনিরাপদ বলে সামাজিক মাধ্যমে ছড়ানো গুজবে বিশ্বাস করে যারা টাকা তুলে ফেলছেন, তাদেরকে সতর্কও করেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘একটা গুজব ছড়াচ্ছে, টাকা ব্যাংকে নাই, টাকা পাবে না। সবাইকে টাকা ব্যাংক থেকে তুলে যাতে ঘরে রাখে।
‘ঘরে টাকা রেখে তো চোরকে সুযোগ করে দেয়া, তাই না? চোরের পোয়াবারো! তারা বেশ ভালোভাবে জানবে ওই বাড়িতে টাকা আছে, যাই চুরি করি। চোরের হাতে তুলে দেবেন নাকি ব্যাংকে টাকা থাকবে, টাকার মালিক যারা তাদের ওপরই নির্ভর করে।’
‘মন্দা তো উন্নত বিশ্বেও, দেশের অর্থনীতি গতিশীল’
বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে বিশ্বের অনেক উন্নত দেশও হিমশিম খাচ্ছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘সেখানে আমি সবাইকে আহ্বান করেছি যেন কৃচ্ছ্র্রতা সাধন করে। সবাইকে একটু সাশ্রয়ী হতে হবে। বিদ্যুৎ, পানি, বা খাদ্য কোনো কিছু যেন অপচয় না হয় সেদিকে বিশেষ দৃষ্টি দিতে সবাইকে অনুরোধ জানাচ্ছি।’
বাংলাদেশ তুলনামূলক ভালোই আছে বলেও মনে করেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, এখন পর্যন্ত আমরা আমাদের অর্থনৈতিক গতিশীলতা বা সক্ষমতা আমরা ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছি। যদিও আমাদের বিরুদ্ধে অনেক কথা বলা হয়।
‘খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা…বিশ্বব্যাপী, ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধ, তারওপর আমেরিকার স্যাংশন, ইউরোপের স্যাংশন, কাউন্টার স্যাংশন, যার ফলে আজকে প্রতিটি জিনিস আন্তর্জাতিক বাজারে অত্যাধিক মূল্য বৃদ্ধি হয়েছে।’
বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পাওয়ার বিষয়টি সামনে এনে সরকারপ্রধান বলেন, ‘চেষ্টা করে যাচ্ছি আমাদের উন্নয়নের ধারা যাতে অব্যাহত থাকে। সেজন্য আমাদের প্রচেষ্টা আছে। আমরা কিছু অগ্রগতিও পাচ্ছি।’
যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর সমালোচনা
মানবাধিকারের কথা বললেও বঙ্গবন্ধুর সাজাপ্রাপ্ত খুনিকে আশ্রয় দিয়ে রাখা এবং র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞার কথা তুলে যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর সমালোচনা করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার দৃষ্টিতে বিশ্বের এই পরাশক্তির নীতি দ্বিমুখি।
বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমেরিকায় এক খুনি রয়ে গেছে। তাকে বার বার আনার জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছি। যেহেতু তার ফাঁসির আদেশ হয়েছে, আমেরিকা সেই খুনিকে লালন পালন করছে।’
পরক্ষণেই যুক্তরাষ্ট্রের নীতির সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘অবশ্য আমেরিকার কারবারই এ রকম। এখানে যখন একজন ড্রাগ ডিলার, যখন ড্রাগসহ তাকে ধরতে গেছে পুলিশ তাদের ওপর হামলা করেছে, র্যাব ধরতে গেছে হামলা করেছে। ১৪টা মামলার আসামি এবং ড্রাগসহ ধরা পড়ে তার গ্রুপ পুলিশের ওপর গুলি করে, র্যাবের ওপর গুলি করে, তারপর সেও গুলি খায়, মারা যায়। তার জন্য আমাদের দেশের কিছু লোক বিভিন্ন জায়গায় তদবির করে বেড়ায়।
‘অথচ এই ড্রাগ ডিলারদের খোঁজ আনতে যেয়ে, ধরতে যেয়ে আমাদেরই একজন এয়ার ফোর্সের অফিসার, তাকে ড্রাগ ডিলাররা অপহরণ করে নিয়ে যায়, অত্যন্ত নির্মমভাবে তাকে মারে, হত্যা করে।
‘এ ব্যাপারে তাদের কিন্তু উদ্বেগ নেই, মানবাধিকার সংস্থাগুলোরও উদ্বেগ নেই বা যারা আমাদের ওপর স্যাংশন দেয়, আমেরিকা, তাদেরও কোনো উদ্বেগ নেই, কারও কোনো উদ্বেগ নেই। কেমন একটা অদ্ভুত বিশ্ব পরিস্থিতি, সেটাই আমার অবাক লাগে।’
দেশের উন্নয়নের বর্ণনা
২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর দেশের উন্নয়নে কী কী করেছেন, সে কথা আবারও তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।
বক্তব্যের মাঝে নেতা-কর্মীরা স্লোগান দিলে তাদের থামিয়ে তিনি বলেন, ‘স্লোগানটা একটু পরে। অনেক কথা বলার আছে, একটু বলে রাখি। শুনি, আমরা নাকি কিছুই করিনি। তাই যখন যে সেক্টরে যাচ্ছি, সেই সেক্টরে কী কাজ করেছি, একটু মানুষকে জানানো দরকার।
‘আসলে বাংলাদেশের মানুষ তো, ছয় ঋতুর দেশ। দুই মাস পর ঋতু বদলায়, পাখির ডাক বদলায়, পশু-পাখির কলকাকলি বদলায়, বাতাসের গতি বদলায়, মানুষের মনও বদলায়, আর যা কিছু করি ভুলে যায়। ভুলে যেন না যায়, মাঝে মাঝে একটু স্মরণ করাতে হয়।’
অন্য সব খাতের মতো আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে দেশের স্বাস্থ্যখাতে ব্যাপক পরিবর্তন এনেছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘এখন আমরা প্রতিটি বিভাগে একটি করে মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় আমরা প্রতিষ্ঠা করব। ইতিমধ্যে রাজশাহী, চট্টগ্রাম ও সিলেটে করেছি। পর্যায়ক্রমে প্রতিটি বিভাগে একটি করে মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় আমরা করে দিচ্ছি। প্রতিটি জেলায় আমরা মেডিক্যাল কলেজ করে দিচ্ছি।’
চিকিৎসা সেবা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলে জানান সরকারপ্রধান।
আরও পড়ুন:নাটোরের সিংড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে অপহরণ ও নির্যাতনের অভিযোগ ওঠার পর চেয়ারম্যান প্রার্থী ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লুৎফুল হাবীব রুবেলকে কারণ দর্শোনোর নোটিশ (শোকজ) দিয়েছে সিংড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ।
শুক্রবার দুপুরে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ওহিদুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক মো. জান্নাতুল ফেরদৌস স্বাক্ষরিত চিঠিতে কারণ দর্শানোর নোটিশ ইস্যু করা হয়।
নোটিশে বলা হয়, ‘গত ১৫ এপ্রিল নাটোর জেলা নির্বাচন কমিশন অফিসের সামনে আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী দেলোয়ার হোসেন পাশার মনোনয়নপত্র জমাদানে বাধা প্রদান, মারপিট ও অপহরণের ঘটনা যা বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রচারিত হয় এবং উক্ত ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার আসামি সুমনের ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে আপনার সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়, যা দলীয় আচরণবিধি পরিপন্থির সামিল।
‘এমতাবস্থায় কেন আপনার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, তার জবাব আগামী ৩ দিনের মধ্যে লিখিতভাবে জানানোর জন্য নির্দেশ প্রদান করা হলো।’
ওই সময়ের মধ্যে জবাব না দিলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে নোটিশে উল্লেখ করা হয়।
শোকজের বিষয়টি নিশ্চিত করে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম রমজান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এ ঘটনায় দলীয় তদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। দলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ীই তাকে শোকজ করা হয়েছে। শোকজের জবাবের প্রেক্ষিতে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপের মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন সোমবার বিকেলে সিংড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান প্রার্থী দেলোয়ার হোসেন পাশা অনলাইনে আবেদনের পর জেলা নির্বাচন কার্যালয়ে মনোনয়নপত্রের প্রতিলিপি জমা দিতে আসেন। সেখানে আগে থেকে ওঁৎ পেতে থাকা দুর্বৃত্তরা তাকে মারধর করে কালো মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যায়। পরে তাকে আবারও বেধড়ক মারধর করে বাড়ির সামনে ফেলে যায়। সেখান থেকে পরিবারের সদস্যরা তাকে সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে স্থানান্তরের পরামর্শ দেন।
এ ঘটনায় দেলোয়ার হোসেনের পরিবার লুৎফুল হাবীব রুবেল ও তার সমর্থকদের দায়ী করে আসছে। ইতোমধ্যে তাদের করা মামলায় গ্রেপ্তারকৃত সুমন নামের এক আসামি আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন যে, লুৎফুল হাবীব রুবেলের পক্ষ নিয়েই সুমনসহ অন্য আসামিরা দেলোয়ার হোসেন পাশাকে অপহরণ ও মারধর করেছেন।
এ ঘটনায় জড়িত থাকার প্রমাণ মেলায় রুবেলকে শোকজ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
লুৎফুল হাবীব রুবেল উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও শেরকোল ইউনিয়ন পরিষদের সদ্য পদত্যাগ করা চেয়ারম্যান। ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের সঙ্গে আত্মীয়তার সম্পর্ক রয়েছে তার। তিনি প্রতিমন্ত্রীর শ্যালক।
আরও পড়ুন:বিএনপির নেতাদের বক্তব্য সার্কাসের মতো মনে হয় বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ।
শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজধানীতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ-পিআইবির মহাপরিচালক একুশে পদকে ভূষিত সাংবাদিক জাফর ওয়াজেদ গ্রন্থিত ‘ভুবনজোড়া শেখ হাসিনার আসনখানি’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচনকালে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।
বিএনপি আবার বিদেশি দূতাবাসে ধরনা দিচ্ছে-সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে হাছান মাহমুদ বলেন, যে কোনো কিছুতেই বিদেশিদের কাছে ধরনা দেয়া বিএনপির সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দুর্বলতা। বাংলাদেশে ক্ষমতার উৎস জনগণের কাছে না গিয়ে বিদেশিদের কাছে গেলে বিদেশিরা তো বিএনপিকে কোলে করে ক্ষমতায় বসিয়ে দেবে না।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ জনগণের ক্ষমতায় বিশ্বাসী। জনগণই ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে নির্বাচিত করে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব দিয়েছে। ফলে বিএনপি নেতাদের বক্তব্য সার্কাসের মতো মনে হয়।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মৃত্যুঞ্জয়ী শেখ হাসিনা সব প্রতিবন্ধকতা উপড়ে ফেলে দেশ ও জাতিকে এগিয়ে নিয়ে চলেছেন। বারবার মৃত্যু উপত্যকা থেকে ফিরে বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা বিচলিত হননি, বরং আরো দৃপ্ত পদভারে জনগণের সংগ্রামের কাফেলাকে এগিয়ে নিয়েছেন, দেশকে বিশ্বের বুকে মর্যাদা ও সম্মানের আসনে আসীন করেছেন।
তিনি বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনার মতো নেতৃত্ব বর্তমান বিশ্বে বিরল। তিনি শুধু দেশেরই নন, তিনি আজ বিশ্বনেতা। যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক বলেছেন, শেখ হাসিনা শুধু তারই নন, তার সন্তানদেরও প্রেরণা। ভারতের প্রিয়াঙ্কা গান্ধী শেখ হাসিনাকে জড়িয়ে ধরে তাকে নিজের প্রেরণা বলে উল্লেখ করেছেন। ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত বলেছেন, আরব বিশ্বে একজন শেখ হাসিনা থাকলে হয়তো গাজায় যুদ্ধ বন্ধ করা যেতো।
হাছান বলেন, শুধু তাই নয়, যে কোনো বিশ্বসভায় বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা যোগ দিলে তিনিই মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হন।
মিয়ানমারের ২৮৫ জন সেনা ফেরত যাবে, ফিরবে ১৫০ জন বাংলাদেশি
এ সময় সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড পুলিশ ও সেনাবাহিনীর ২৮৫ জন সদস্যকে মিয়ানমারের জাহাজে নৌপথে ফেরত যাওয়ার ক্লিয়ারেন্স দেয়া হয়েছে।
তিনি জানান, ২২ এপ্রিল জাহাজে তাদের ফেরত নিতে সম্মত মিয়ানমার। এ ছাড়া মিয়ানমারে আটকে পড়া ১৫০ জন বাংলাদেশিও একই জাহাজে ফেরত আসবে। তবে জাহাজের যাত্রা সমুদ্র ও মিয়ানমারের পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পিআইবির কর্মকর্তা ও গণমাধ্যম প্রতিনিধিরা অনুষ্ঠানে অংশ নেন।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, দলের অনেক নেতাকর্মীকে সরকার কারাগারে নিক্ষেপ করে আলো-বাতাস থেকে বঞ্চিত করছে।
শুক্রবার বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াসহ কারাবন্দি নেতাদের মুক্তির দাবিতে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে জিয়া প্রজন্ম দল আয়োজিত অবস্থান কর্মসূচিতে রিজভী এ কথা বলেন। খবর ইউএনবির
তিনি আরও বলেন, বিনা কারণে মাসের পর মাস কারাগারে বন্দি থাকতে থাকতে কারাগারগুলো বিএনপির অনেক নেতা-কর্মীর স্থায়ী আবাসস্থলে পরিণত হয়েছে।
রিজভী বলেন, মহাসচিব, স্থায়ী কমিটির সদস্য, ভাইস চেয়ারম্যান, যুগ্ম মহাসচিবের মতো শীর্ষ নেতারা তিন-চার মাস ধরে কারাভোগ করে মুক্তি পেয়েছেন।
শেখ হাসিনার বিএনপি নেতাকর্মীদের কারাগারে পাঠানোর নীতি এখনো শেষ হয়নি বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী বিএনপিকে ভয় পান এবং জানেন যে তার পক্ষে কোনো জনসমর্থন নেই।
জনগণের সমর্থনহীন সরকার স্বৈরাচারী হয়ে যায় উল্লেখ করে রিজভী বলেন, জনগণ যখন অধিকারের জন্য আওয়াজ তোলে তখন তারা দমন করে।
এই বিএনপি নেতা বলেন, তারা দমন-পীড়নের সব উপায় অবলম্বন করে, যেমন- আটকে রাখা, নির্যাতনের জন্য আয়না ঘর তৈরি করা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ব্যবহার করে প্রতিপক্ষকে হত্যা করা এবং বিরোধী দলকে ঘায়েল করতে দলীয় ক্যাডারদের ব্যবহার করা।
তিনি দাবি করেন, ৭ জানুয়ারির ডামি নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ সরকার বিএনপির ২৫ থেকে ২৬ হাজার নেতা-কর্মীকে কারাগারে পাঠিয়েছে।
রিজভী আরও বলেন, বিএনপির বিপুল সংখ্যক নেতা-কর্মী এখনো কারাগারে রয়েছেন। আর কয়েকজন ৩ থেকে ৪ মাস কারাভোগের পর বের হতে পেরেছেন।
বিএনপির এত সদস্য কেন কারাগারে, তার কোনো সদুত্তর সরকারের কাছে আছে কি না জানতে চান রিজভী।
অবৈধভাবে অর্জিত রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্যই প্রধানমন্ত্রী এসব করছেন বলে অভিযোগ করেন বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ নেতা।
বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে কোনো মামলাই রাজনৈতিক নয় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, অগ্নিসংযোগ, গ্রেনেড হামলা, আগ্নেয়াস্ত্র চোরাচালান ও দুর্নীতির মতো সুনির্দিষ্ট ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্তরাই এ সংক্রান্ত মামলার আসামি হয়েছেন।
তিনি বলেন,“আজকে তারা (বিএনপি) সব জায়গায় কান্নাকাটি বলছে তাদের বিরুদ্ধে মামলা। তাদের জিজ্ঞেস করতে হবে মামলাগুলো কীসের মামলা? অগ্নিসন্ত্রাস, অস্ত্রপাচার, গ্রেনেড হামলাসহ বিভিন্ন অপরাধের মামলা। তারা অপরাধ করেছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। সেটাই তো বাস্তবতা।”
এসব মামলাগুলো দ্রুত শেষ করে এগুলোর শাস্তি দিয়ে দেয়া উচিত বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা শুক্রবার সকালে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে সহযোগী সংগঠন বাংলাদেশ কৃষক লীগের ৫২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে দেয়া ভাষণে এসব কথা বলেন। খবর বাসসের
২০১৩ ও ১৪ সালে নির্বাচন বানচালের জন্য এবং পরবর্তীতে বিএনপি-জামায়াতের আগুন সন্ত্রাস ও সহিংসতার প্রসংগ টেনে তিনি বলেন, তারা ৩ হাজার ৮০০ গাড়ি পুড়িয়েছে, বাস, লঞ্চ ও রেল পুড়িয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে মামলা হবে না তো কি হবে।
তিনি বলেন, ওদের বিরুদ্ধে কোনো মামলাইতো পলিটিক্যাল মামলা না, প্রত্যেকটা মামলা হচ্ছে অগ্নিসন্ত্রাসের মামলা। তারা মানুষ হত্যা করেছে আগুন দিয়ে। নির্বাচন ঠেকাতে যেয়ে তারা রেলে আগুন দিয়ে মা-শিশুকে পুড়িয়ে মেরেছে, যারা এগুলো করলো তাদের বিরুদ্ধে কি মামলা হবে না?
“যারা এগুলো করলো তাদের বিরুদ্ধে কি মামলা হবে না? তাদেরকে কি মানুষ পূজা করবে,” সে প্রশ্নও তোলেন তিনি।
বিএনপির নেতা-কর্মী গ্রেপ্তার সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কান্নাকাটি করে তারা সব জায়গায় বলছে এত লাখ লোক তাদের গ্রেপ্তার। সারা দেশে যত জেলখানা আছে সেগুলোর একটা ধারণ ক্ষমতা রয়েছে, তারা যত লক্ষ গ্রেপ্তার হয়েছে বলছে জেলখানাগুলোর তত ধারণ ক্ষমতা নেই।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, “তারা (বিএনপি) যেভাবে বলছে তাদের ৬০ লাখ লোক গ্রেপ্তার হয়েছ, ৬০ লাখ লোক ধারণ করার ক্ষমতাও নাই এসব জেলে। তারপরও যতটুকু ধারণ ক্ষমতা আছে সবই বিএনপির লোক এটাই তো তারা বলতে চাচ্ছে। তার মানে বাংলাদেশে যত অপরাধ সব অপরাধ করে বিএনপি।”
শেখ হাসিনা বলেন, তাদের ভাগ্য ভালো আমরা ক্ষমতায় আছি, আমরা তাদের মতো প্রতিশোধপরায়ণ না, তাই তারা এখনো কথা বলার সুযোগ পায়। তারা সারাদিন কথা বলে মাইক লাগিয়ে, তারপর বলবে কথা বলার সুযোগ পায় না।
বিরোধী দলে থাকার সময়কার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ অফিসেতো আমরা ঢুকতেই পারতাম না। কীভাবে তারা অত্যাচার করেছে আমাদের ওপর, আমরা তো তার কিছুই করি নাই। আমরা প্রতিশোধ নিতে ব্যস্ত থাকিনি। আমরা আমাদের সব শক্তি-মেধা কাজে লাগিয়েছি দেশের উন্নয়নে, দেশের মানুষের জন্য কাজ করতে।
শেখ হাসিনা বলেন, তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পদাংক অনুসরণ করে সমবায় ভিত্তিক কৃষি নিশ্চিত করে ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। তিনি দেশের প্রতি ইঞ্চি অনাবাদি জমি চাষের আওতায় আনার মাধ্যমে সার্বিক উৎপাদন বাড়ানোর জন্য তার আহবান পুনর্ব্যক্ত করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সমবায় ভিত্তিক কৃষি চালু করে জমির আইল দূর করে বিপুল পরিমাণ আবাদি জমি রক্ষা করা যেতে পারে। কৃষিতে গবেষণার পাশাপাশি কৃষিকে যান্ত্রিকীকরণের ওপরও গুরুত্বারোপ করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, “কৃষি গবেষণায় বাংলাদেশ সবচেয়ে সফল। আমাদের সাফল্যের ধারা অব্যাহত রাখতে হবে।”
প্রধানমন্ত্রী তার সরকারের উদ্যোগে কৃষিখাতের উন্নয়ন এবং খাদ্য সংরক্ষণ ব্যবস্থানার পদক্ষেপ সমূহের চুম্বকাংশ তুলে ধরে বলেন, “বাংলাদেশের কৃষি উন্নত হয়েছে, কারণ সরকার কৃষিখাতের গবেষণাকে অগ্রাধিকার দিয়েছে।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার কৃষি খাতে ২৬ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিচ্ছে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের বিভিন্ন সময়োপযোগী ও কার্যকর পদক্ষেপের ফলে দেশের খাদ্য উৎপাদন বেড়েছে।
তিনি বলেন, “একসময় যারা নুন-ভাত বা ডাল-ভাতের কথা ভাবতেন, তারা এখন মাছ-মাংস-ডিমের কথা ভাবেন। তাই যারা সরকারের সমালোচনা করেন, তাদের বিবেচনা করেই সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত যে, বাংলাদেশ উন্নত হয়েছে কি না।”
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে দলের কেন্দ্রীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকে শুভেচ্ছা জানান সংগঠনের সভাপতি কৃষিবিদ সমীর চন্দ ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক বিশ্বনাথ সরকার বিটু।
ঢাকায় নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুকের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বিএনপি নেতারা। ৭ জানুয়ারির জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনারের সঙ্গে এটাই বিএনপির নেতাদের প্রথম বৈঠক।
জানা যায়, বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে হাইকমিশনারের বারিধারার বাসায় যান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুলসহ দলের তিন নেতা। এ সময় হাইকমিশনের রাজনৈতিক শাখার দুজন কর্মকর্তাও উপস্থিত ছিলেন।
হাইকমিশনারের সঙ্গে প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে চলা বৈঠকের আলোচ্য বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানা যায়নি। তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) বৈঠকের কারণ উল্লেখ করে ব্রিটিশ হাইকমিশন লিখেছে, হাইকমিশনার সারাহ কুক আজ (বৃহস্পতিবার) বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) রাজনৈতিক কৌশল বুঝতে দলটির নেতাদের সঙ্গে দেখা করেছেন।
ওই লেখায় বিএনপি মহাসচিব ছাড়াও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদের সঙ্গে হাইকমিশনার সারাহ কুকের একটি ছবিও সংযুক্ত করা হয়েছে।
আওয়ামী লীগ তাদের নৌকা নিজেরাই ডুবিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান।
বিএনপির সহ-স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক হৃদরোগে আক্তান্ত ডা. পারভেজ রেজা কাকনের শারীরিক খোঁজ-খবর নিতে বৃহস্পতিবার রাজধানীর মগবাজারে গিয়ে সাংবাদিকদের কাছে এ মন্তব্য করেন তিনি। এ সময় তিনি অসুস্থ কাকনের শারীরিক ও পারিবারিক অবস্থার খোঁজখবর নেন।
উপজেলা নির্বাচন প্রসঙ্গে বিএনপির এই বর্ষীয়াণ নেতা বলেন, বাংলাদেশে অতীতে কখনোই স্থানীয় সরকার নির্বাচন দলীয় প্রতীকে হয়নি। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর তা দলীয় প্রতীকে শুরু করেছে।
‘৭ জানুয়ারির নির্বাচনে জনগণ আওয়ামী লীগকে বর্জনের পর তারা বুঝতে পেরেছে যে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করা হলে দেশের সামাজিক কাঠামোটা ভেঙে যাবে। তারা নিজেদের নৌকা নিজেরাই ডুবিয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ ছাড়া এবং এই সরকার ও তাদের সাজানো নির্বাচন কমিশনের অধীনে কোনো নির্বাচনে আমরা যাবো না। তবে গ্রাম-গঞ্জে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে কে যাবে কে যাবে না সেটা তো বিএনপি দলীয়ভাবে দেখতে পারে না।’
মঈন খান বলেন, বিরোধী দলকে দমনের জন্য সরকার হামলা-মামলাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে। তবে এসব করে ৭ জানুয়ারি প্রহসনের নির্বাচনেও তারা দেশের মানুষকে ভোট কেন্দ্রে নিতে পারেনি।
‘ভয় দেখিয়ে মানুষকে দমিয়ে রাখতে চায়। দেশের জনগণ সরকারের বিরুদ্ধে নীরব প্রতিবাদ করেছে। তারা ভোট কেন্দ্রে যায়নি। কারণ এই ভোটের ওপর তাদের আস্থা নেই।’
মঈন খান বলেন, ‘দল গোছানো ও সংগঠন পুনর্গঠন করা চলমান প্রক্রিয়া। রাজনীতি কোনো কাপড় নয় যে, সাজিয়ে গুছিয়ে আলনা বা আলমারিতে রাখা যায়। সরকারকে বলবো- প্রতিহিংসার রাজনীতি পরিহার করে আদর্শের রাজনীতিতে ফিরে আসুন। আমরা নিয়মতান্ত্রিকভাবে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমে দেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও জনগণের ভোটাধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা করবো, ইনশাআল্লাহ।’
আরও পড়ুন:আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মন্ত্রী-সংসদ সদস্যদের পরিবারের সদস্য ও আত্মীয়-স্বজনদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করতে কড়া নির্দেশনা দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।
বৃহস্পতিবার দলটির এক অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। এরপর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকদের মাধ্যমে তা বিভিন্ন জেলা-উপজেলা পর্যায়ে জানিয়ে দেয়া হয়।
বৈঠকে উপস্থিত থাকা নেতাদের একজন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আফজাল হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আন্তরিকভাবে চান উপজেলা নির্বাচন প্রভাবমুক্ত হোক। সে কারণে দল চায় যে মন্ত্রী-সংসদ সদস্যদের নিজ পরিবারের সদস্য ও আত্মীয়-স্বজনরা যেন এই নির্বাচনে অংশ না নেন।’
‘আজ (বৃহস্পতিবার) দলের একটি বৈঠকে সাধারণ সম্পাদক আমাদেরকে বিষয়টি জানান। আমরা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি এবং জেলা-উপজেলায় তা জানাতে শুরু করেছি।’
এবার স্বতন্ত্র মডেলে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এতে নিজ নিজ এলাকায় রাজনৈতিক বলয় নিজেদের কব্জায় রাখতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন আওয়ামী লীগের কিছু মন্ত্রী ও সংসদ সদস্য। দলের হাইকমান্ড এই নির্বাচনে কাউকে সমর্থন না দেয়ার নির্দেশনা দিলেও এসবে কান দিচ্ছেন না তারা।
কোনো কোনো সরকার দলীয় সংসদ সদস্যরা তাদের স্ত্রী, সন্তান ও আত্মীয়-স্বজনদের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার নেপথ্যে কলকাঠি নাড়ছেন। নিজ দলের প্রভাবশালীদের এমন হস্তক্ষেপে ইতোমধ্যে তৃণমূলে নানামুখী বিশৃঙ্খলা দেখা দিচ্ছে।
দীর্ঘদিন ধরে জেলা-উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ পদগুলো নিজেদের পরিবারের দখলে রাখার চেষ্টার পাশাপাশি উপজেলায় একচ্ছত্র আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন তারা। ভোটের মাঠে স্বজনদের জিতিয়ে আনতে নানামুখী কৌশল অবলম্বন শুরু হয়েছে। এতে তৃণমূলের সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভেঙে পড়তে শুরু করেছে। এ নিয়ে তৃণমূল আওয়ামী লীগে বিরাজ করছে চরম ক্ষোভ।
দলীয় সূত্র জানায়, দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক নেতারা ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর দুই সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী এবং একজন প্রভাবশালী সংসদ সদস্যের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের সন্তান বা নিকটাত্মীয়দের প্রার্থিতা থেকে সরে দাঁড়ানোর নির্দেশনা দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার থেকে দলটির দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদকেরা নিজ নিজ বিভাগের মন্ত্রী-সংসদ সদস্যদের দলের এই নির্দেশ জানাতে শুরু করেছেন।
ইতোমধ্যে অর্ধশতাধিক দলীয় ও দলীয় স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ দলের হাইকমান্ডের কাছে জমা পড়েছে। অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখা শুরু হয়েছে। কেউ কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অমান্য করলে তাদেরকে শো-কজ, সতর্কতা, তলবসহ বর্তমান দলীয় পদ থেকে বহিষ্কার করার চিন্তা-ভাবনা রয়েছে দলের হাইকমান্ডের।
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বলেন, ‘উপজেলা নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ ও উৎসবমুখর করার স্বার্থে মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদেরকে নিজ পরিবারের সদস্যদের প্রার্থী না করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।’
বিএনপি ৭ জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচন বর্জন করায় ওই নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক দেখাতে দলের নেতাদের স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে উৎসাহ দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। তখন সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া নিয়ে আওয়ামী লীগের তৃণমূলে বিরোধ তৈরি হয়।
জাতীয় নির্বাচনের মাস তিনেকের মাথায় উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য ও মন্ত্রীদের পছন্দের ব্যক্তিদের প্রার্থী করা নিয়ে দলীয় বিরোধ আরও বেড়ে যাচ্ছে। এর রেশ ইতোমধ্যে বিভিন্ন উপজেলায় পড়তে শুরু করেছে।
নোয়াখালীর সুবর্ণচরে নিজের ছেলেকে ভোট না দিলে উন্নয়ন কাজ না করার হুমকি দিয়েছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরী। নাটোরে প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলকের শ্যালক লুৎফুল হাবিবের বিরুদ্ধে প্রতিপক্ষ প্রার্থীকে অপহরণের অভিযোগ উঠেছে।
এসবের পরিপ্রেক্ষিতে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বৃহস্পতিবার দুপুরে ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনানুষ্ঠানিক বৈঠক করেন। বৈঠকে ওবায়দুল কাদের সাংগঠনিক সম্পাদক ও দপ্তরকে সারা দেশে মন্ত্রী–সংসদ সদস্যদের মধ্যে যাদের স্বজন ও পরিবারের সদস্য নির্বাচন করছেন, সেই তালিকা তৈরির নির্দেশ দেন।
প্রসঙ্গত, এবার চার পর্বে দেশের ৪৮১টি উপজেলা পরিষদের নির্বাচন হতে যাচ্ছে। প্রথম ধাপের ভোটগ্রহণ হবে ৮ মে। ইতোমধ্যে প্রথম ধাপে ১৫২টি ও দ্বিতীয় ধাপে দেশের ১৬১টি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এরপর ২১ মে হবে দ্বিতীয় ধাপের ভোটগ্রহণ।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য