১০ ডিসেম্বর রাজধানীতে বিএনপিকে সমাবেশের অনুমতি না দেয়ার ইঙ্গিত পাওয়া গেছে তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদের বক্তব্যে। তিনি বলেছেন, ‘গন্ডগোলের উদ্দেশ্যে কোনো সমাবেশ করার অনুমতি সরকার দিতে পারে না।’
নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের দাবিতে গত ৮ অক্টোবর থেকে প্রতি শনিবার বিভাগীয় শহরে সমাবেশ করে আসা বিএনপি ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে ঢাকায় জমায়েত করতে চায়।
নয়াপল্টনের এই সমাবেশকে ঘিরে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের নেতাদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি বক্তব্যের মধ্যে বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন মন্ত্রী।
এদিন জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি গুয়েন লুইসের তার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। পরে মন্ত্রী সাংবাদিকদের মুখোমুখি হলে প্রশ্ন রাখা হয় বিএনপির ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশ নিয়ে।
দলটিকে সমাবেশের অনুমতি দেয়া হবে কি না- এমন প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, ‘সরকার সমাবেশ করার অনুমতি দিতে পারে। কিন্তু গন্ডগোলের উদ্দেশ্যে কোনো সমাবেশের অনুমতি সরকার দিতে পারে না।’
বিএনপি নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে এই সমাবেশ করতে চায়। সেখানে ১০ লাখ মানুষের জমায়েতের আগাম ঘোষণার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ১০ লাখ মানুষ জমায়েতের মতো জায়গা নেই নয়াপল্টনে। তাই তাদের অন্য জায়গায় সমাবেশ করা উচিত।
এরপর তথ্যমন্ত্রী বিএনপিকে পূর্বাচলে সমাবেশ করার পরামর্শ দিয়ে বলেন, এত মানুষের জমায়েতের মতো আর কোনো জায়গা নেই ঢাকায়।
তবে বুধবার এক আলোচনায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ‘ঝামেলা না করে’ নয়াপল্টনে সমাবেশের অনুমতি দিতে পুলিশের প্রতি আহ্বান জানান।
এই সমাবেশ নিয়ে রাজনীতিতে বাড়তি উত্তাপ দেখা দেয় বিএনপি নেতা আমানউল্লাহ আমানের বক্তব্য। তিনি গত মাসে ঘোষণা দেন, ১০ ডিসেম্বর থেকে দেশ চলবে তাদের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও তার ছেলে তারেক রহমানের কথায়। যদিও পরে মির্জা ফখরুল জানান, ১০ ডিসেম্বর কোনো চূড়ান্ত কর্মসূচি নয়। তারা এমন কিছু ঘোষণা দেবেন না, যা জনজীবনকে ব্যাহত করে, তারপরেও ক্ষমতাসীন দলের নেতারা বিএনপিকে ‘হেফাজতের মতো দমন’, সেদিন ‘ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে পাহারা’ বসানোর ঘোষণা দিয়ে রেখেছেন।
পরদিন হাছান তার আগের দিনের বক্তব্যের পুনরাবৃত্তি করে বলেন, ‘প্রথমত. বিএনপির নয়া পল্টনের সামনে, তাদের অফিসের সামনে সমাবেশ করার উদ্দেশ্যটাই একটি হীন উদ্দেশ্য। বড় সমাবেশ কখনও রাস্তায় হয় না এবং রাস্তায় সমাবেশ করা অনুচিত। এতে জনগণের দুর্ভোগ হয়।
‘নয়া পল্টনের সামনে ৩০ থেকে ৫০ হাজার মানুষ ধরে। পুরো এক কিলোমিটার রাস্তাজুরেও যদি মানুষ বসে তাহলেও ৫০ হাজারের বেশি না। সেখানে তারা সমাবেশ করতে চায়। তার মানে হলো আসলে তারা জানে যে কত লোক হতে পারে। তাদের লোক যে ৩০ থেকে ৫০ হাজারের বেশি হবে না এটি তারা জানে। সেটিও যদি হয় তাহলে কোনোভাবেই একটি ব্যস্ত রাস্তা বন্ধ করে সমাবেশ করা উচিত নয়।
‘দ্বিতীয়ত, রাস্তায় সমাবেশ করলে গন্ডগোল করতে সুবিধা হয়। এই দুই উদ্দেশ্যে তারা সেখানে করতে চায়। সরকার তো গন্ডগোল করার অনুমতি কাউকে দিতে পারে না।’
আরও পড়ুন:
দেশে একটি ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে তরুণদের মনস্থির করা ও স্বপ্ন দেখার আহ্বান জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সূত্র: বাসস
রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে এনডিসি ও এফডব্লিউসি কোর্সের সদস্যদের উদ্দেশে বক্তব্যকালে ড. ইউনূস বলেন, ‘আমি বিশেষ করে তরুণদের তাদের মনস্থির করতে, চিন্তা করতে ও স্বপ্ন দেখতে উৎসাহিত করি। স্বপ্ন হল পরিবর্তনের সূচনা। স্বপ্ন দেখলে পরিবর্তন হবে। আপনি যদি স্বপ্ন না দেখেন তবে এটি কখনোই হবে না।’
তরুণদের দিকে ইঙ্গিত করে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘নিজেকে প্রশ্ন করুন- আমি বিশ্বের জন্য কী করতে পারি? আপনি কী করতে চান তা একবার বুঝতে পারলে তা করতে পারবেন। কারণ আপনার সেই ক্ষমতা রয়েছে।
‘বিশ্বের তরুণ প্রজন্ম এখন সমগ্র মানব ইতিহাসের সবচেয়ে শক্তিশালী প্রজন্ম। তারা যথেষ্ট স্মার্ট হওয়ার কারণে নয় বরং তাদের হাতে প্রচুর প্রযুক্তি রয়েছে বলে।’
প্রযুক্তিকে আলাদিনের চেরাগ উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আপনি যদি ছাত্র-বিপ্লবের দিকে তাকান, তবে এটি প্রযুক্তির বিষয়। তারা একে অপরের সঙ্গে খুব দ্রুত যোগাযোগ করতে পারত। তাদের কোনো কমান্ড কাঠামো ছিল না।’
ছাত্র নেতৃত্বাধীন বিপ্লব সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘দেশের তরুণ-যুবকরা রাজনীতিবিদ নয় এবং কোনো রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের চেষ্টাও তারা করছে না। তবে তারা নিজেদের জন্য একটি নতুন দেশ চায়। নতুন বাংলাদেশ দেখতে চায়।’
বিশ্ব শান্তির উল্লেখ করে ২০০৬ সালে শান্তিতে নোবেলজয়ী বলেন, বেশিরভাগ সময় মানুষ শান্তির নামে একে অপরকে হত্যা করে।
‘...কিন্তু আমরা প্রতিদিন, আমাদের সব উচ্চারণ ও সব দর্শনে নিজেদের প্রতিশ্রুতিবদ্ধ করি। আমরা শান্তি চাই। দেশের ভেতরে শান্তি, সব দেশের মধ্যে শান্তি এবং বিশ্বব্যাপী শান্তি।’
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘আমার কাছে অত্যন্ত হাস্যকর মনে হয় যে বিশ্বের প্রতিটি সরকারেরই একটি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় আছে, যা আক্ষরিক অর্থে যুদ্ধ মন্ত্রণালয়। কিন্তু কোনো শান্তি মন্ত্রণালয় নেই। যদি আপনার লক্ষ্য শান্তি হয়, তাহলে আপনার কি শান্তি মন্ত্রণালয় থাকা উচিত নয়?’
আক্রমণের বিরুদ্ধে জনগণকে নিজেদের রক্ষা করতে হবে- এটি পর্যবেক্ষণ করে অধ্যাপক ইউনূস বিশ্বের সরকারগুলোতে যুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি শান্তি মন্ত্রণালয় রাখার ওপর জোর দেন। প্রতিরক্ষা অ্যাটাশেসহ বৈদেশিক সম্পর্কে শান্তি অ্যাটাশে প্রবর্তনের পরামর্শ দেন তিনি।
প্রধান উপদেষ্টা তার বক্তব্যে এনডিসি ও এএফডব্লিউসি কোর্সের সদস্যদের শুভেচ্ছা জানান এবং তাদের সাফল্য কামনা করেন।
আরও পড়ুন:যুব সমাজের আগ্রহ ও চাওয়াকে অগ্রাধিকার দিয়ে মোবাইল কলরেট কমানো ও মেয়াদবিহীন ইন্টারনেট প্যাকেজ চালুর আহ্বান জানিয়েছেন উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম।
রোববার মোবাইল অপারেটর রবি ও গ্রামীণফোন লিমিটেডের প্রতিনিধিদের সঙ্গে পৃথক বৈঠকে এই আহ্বান জানান তিনি।
ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা বলেন, টেলিকমিনিকেশন খাতে উন্নতির জন্য সরকার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
‘অন্তর্বর্তী সরকার ট্রানজিশন পিরিয়ডের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। সরকার এই সময়টা সফলভাবে পার করতে পারলে দেশ ঘুরে দাঁড়াবে এবং সম্ভাবনার দরজা খুলে যাবে। আর যদি না হয় তাহলে দেশ পিছিয়ে যাবে।’
তিনি বলেন, ‘যেহেতু আন্দোলন হয়েছিল কর্মসংস্থানকে কেন্দ্র করে তাই কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান লক্ষ্য।’
উপদেষ্টা নাহিদ এ সময় জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নিহতদের পরিবারকে পুনর্বাসন এবং আহতদের চিকিৎসায় সহযোগিতার আহ্বান জানান।
পৃথক বৈঠকে রবি আজিয়াটা পিএসসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অফিসার মো. শাহেদুল আলম এবং গ্রামীণফোনের নতুন চিফ করপোরেট অ্যাফেয়ার্স অফিসার (সিসিএও) তানভীর মোহাম্মদসহ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন:দুই মন্ত্রণালয়ে নতুন সচিব নিয়োগ দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। রোববার তাদের নিয়োগ দিয়ে পৃথক প্রজ্ঞাপন জারি করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
প্রজ্ঞাপনের তথ্য অনুযায়ী- পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ইকবাল আবদুল্লাহ হারুনকে পদোন্নতি দিয়ে পরিকল্পনা বিভাগের সচিব হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
অন্যদিকে দুই বছরের চুক্তিতে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব পদে নিয়োগ পেয়েছেন সাবেক আমলা মমতাজ আহমেদ।
সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮-এর ৪৯ ধারা অনুযায়ী অন্য যেকোনো পেশা, ব্যবসা কিংবা সরকারি, আধা-সরকারি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান/সংগঠনের সঙ্গে কর্ম-সম্পর্ক পরিত্যাগের শর্তে মমতাজ আহমেদ এ নিয়োগ পেয়েছেন। যোগদানের তারিখ থেকে তার এই চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ কার্যকর হবে বলে প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে।
নতুন নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনে নাম চেয়েছে এ বিষয়ে গঠিত সার্চ (অনুসন্ধান) কমিটি। আগামী ৭ নভেম্বরের (বৃহস্পতিবার) মধ্যে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে নাম প্রস্তাব করার আহ্বান জানানো হয়েছে। সর্বোচ্চ পাঁচটি নাম প্রস্তাব করার সুযোগ থাকবে।
সুপ্রিম কোর্টে রোববার সার্চ কমিটির প্রথম বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বৈঠক শেষে সন্ধ্যায় সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে এসব তথ্য জানায় সার্চ কমিটি।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন, ২০২২’ অনুযায়ী প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্য নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগদানের জন্য যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের নাম রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ করতে গঠিত অনুসন্ধান কমিটি আগ্রহী ব্যক্তিদের কাছে নাম আহ্বান করছে।
রাজনৈতিক দল ও পেশাজীবী সংগঠন বা ব্যক্তি পর্যায় থেকে আগামী ৭ নভেম্বর বিকেল ৫টার মধ্যে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার পদে সুপারিশ করার জন্য সর্বোচ্চ পাঁচজনের নাম প্রস্তাব করতে পারবে।
পূর্ণাঙ্গ জীবন-বৃত্তান্তসহ প্রস্তাবিত নাম সরাসরি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে বা ই-মেইলে (([email protected])) পাঠানোর অনুরোধ জানানো হয়েছে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ অন্যান্য কমিশনার নিয়োগের মাধ্যমে নতুন কমিশন গঠনে রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ দিতে গত বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) সার্চ কমিটি গঠন করে সরকার।
নির্বাচন কমিশন গঠনে ছয় সদস্যবিশিষ্ট সার্চ কমিটির আহ্বায়ক আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী। কমিটিতে সদস্য হিসেবে রয়েছেন হাইকোর্টের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান। এই দু’জনকে মনোনীত করেছেন প্রধান বিচারপতি।
কমিটির অন্য চার সদস্যের মধ্যে রাষ্ট্রপতি মনোনীত দুজন বিশিষ্ট নাগরিক হলেন- বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশনের (পিএসসি) সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক জিন্নাতুন নেছা তাহমিদা বেগম ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক অধ্যাপক চৌধুরী রফিকুল আবরার।
এছাড়া আইন অনুযায়ী পদাধিকারবলে সদস্য হিসেবে আছেন বাংলাদেশের মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক মো. নূরুল ইসলাম এবং পিএসসির চেয়ারম্যান মোবাশ্বের মোনেম।
অনুসন্ধান কমিটি ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন, ২০২২’ মোতাবেক দায়িত্ব ও কার্যাবলি সম্পন্ন করবে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ অনুসন্ধান কমিটির কার্য সম্পাদনে প্রয়োজনীয় সাচিবিক সহায়তা দিচ্ছে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ দেয়ার উদ্দেশ্যে প্রতিটি শূন্যপদের বিপরীতে রাষ্ট্রপতির কাছে দুজন ব্যক্তির নাম সুপারিশ করবে অনুসন্ধান কমিটি।
আরও পড়ুন:আওয়ামী লীগ সরকার ও কোনো একটি বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী সংস্থার কাছে বাংলাদেশ জিম্মি হবে না বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
রাজধানীতে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রোববার সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।
শফিকুল আলম বলেন, ‘আদানি গ্রুপের বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধের খবরে সরকার মর্মাহত। এ পরিস্থিতির জন্য আওয়ামী লীগ সরকার দায়ী। তবে দেশে রেমিট্যান্সের গতি বেড়েছে। ফলে এখন সেন্ট্রাল রিজার্ভে হাত না দিয়েই আন্তর্জাতিক পেমেন্টগুলো করতে পারছি।
‘ভারতের আদানি গ্রুপের বকেয়া পেমেন্ট দেয়ার গতি বেড়েছে। সামনে আরও বাড়বে। তাদের পাওনা পরিশোধের সক্ষমতা সরকারের আছে।’
আগামী ৭ নভেম্বরের মধ্যে বকেয়া ৮৫০ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ না করা হলে বিদ্যুৎ সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়ার আদানি পাওয়ারের হুমকির পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের তরফ থেকে এমন বক্তব্য এলো।
এর আগে ৩১ অক্টোবর বকেয়া পরিশোধের নির্ধারিত সময়সীমা পার হওয়ার পর বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) কৃষি ব্যাংকের মাধ্যমে ১৭০ মিলিয়ন ডলারের ঋণপত্র খোলার চেষ্টা করে। কিন্তু বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তিতে উল্লিখিত শর্ত পূরণ করেনি বিপিডিবি।
এদিকে বকেয়া পরিশোধ না করায় বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ কমিয়ে দেয় ভারতের আদানি গ্রুপ।
ভারতের ঝাড়খণ্ডের গড্ডায় অবস্থিত এক হাজার ৪৯৬ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে আদানি গ্রুপ বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে। কিন্তু গত শুক্রবার দিনের বেলা আদানি গ্রুপ বিদ্যুৎকেন্দ্রটি থেকে মাত্র ৭২৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করে।
আদানির পাওনা প্রায় ১০ হাজার ৮৬ কোটি টাকা। এ ছাড়া দেশের কয়লাভিত্তিক বড় দুই বিদ্যুৎকেন্দ্র এস আলম ও রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রেও উৎপাদন কমেছে।
প্রেস সচিব আদানির হুমকির পরিপ্রেক্ষিতে বলেন, ‘বিদ্যুৎ আমদানির জন্য ভারতের আদানি গ্রুপ টাকা পায় এটা সত্য। তাদের পেমেন্ট দেয়ার ক্ষেত্রে গতি বাড়িয়েছি। আগের যে বিল বাকি আছে সেটার জন্য মূলত দায়ী পূর্ববর্তী আওয়ামী লীগ সরকার। তারা বিশাল ফাইল অফ ব্যাকলট রেখে গিয়েছিল।’
তিনি বলেন, ‘আদানি গ্রুপকে গত মাসে আমরা ৯৭ মিলিয়ন ডলার পেমেন্ট করেছি। এটা আগস্ট বা আগের মাসের চেয়ে দ্বিগুণ। আমাদের তরফ থেকে পেমেন্ট আরও দ্রুত করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। পেমেন্ট ৭০০ মিলিয়ন ডলার বাকি আছে। সেটিও দ্রুত সময়ের মধ্যে পরিশোধ করে দিতে পারব। আমরা কারও দ্বারা পাওয়ার হোস্টেজ (জ্বালানি নির্ভরতা) হবো না, স্বয়ংসম্পূর্ণ হবো।’
আওয়ামী লীগ সরকারের সময় বছরে ১৬ থেকে ১৮ বিলিয়ন ডলার বিদেশে পাচারের অভিযোগ প্রসঙ্গে প্রেস সচিব বলেন, ‘পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় টাকা পাচারের এক ধরনের প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছিল। সেই টাকা ফিরিয়ে আনতে সরকার কাজ করছে। কত টাকা পাচার হয়েছে তা বের করতে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করা হয়েছে। সেই কমিটির প্রতিবেদনে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যাবে।’
ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার ও অপূর্ব জাহাঙ্গীর উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন:বিগত সরকারের আমলে অধিকাংশ প্রকল্প অনুমোদনের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক প্রভাব ছিল বলে মন্তব্য করেছেন শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রধান ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। সে সময় উন্নয়নের নামে যে বয়ান সৃষ্টি করা হয়েছিল এর বিপক্ষে কেউ কিছু করতে গেলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পরিকল্পনা কমিশনের একনেক সম্মেলন কক্ষে রোববার জাতীয় শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন অর্থনীতিবিদ ও সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।
রোববার সরকারের ৮৫ জন উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তার সঙ্গে আলোচনা করেছে শ্বেতপত্র কমিটি। বৈঠকে ৩২ জন সচিব ও সিনিয়র সচিব উপস্থিত ছিলেন। সেই বৈঠকের পর সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রধান।
ড. দেবপ্রিয় বলেন, ‘উন্নয়ন বয়ানের পরিস্থিতি নিয়ে আজ আলোচনা হয়েছে। উন্নয়ন পরিস্থিতির পুরোটাই প্রশাসনের কাছে জিম্মি ছিল।
‘অনেক ক্ষেত্রে উন্নয়ন প্রশাসনের কর্মকর্তা, রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীদের ত্রিমুখী সংযোগের কারণে দুর্নীতি হয়েছে।’
বৈঠকে সুনির্দিষ্ট কিছু প্রকল্প যেমন হাইটেক পার্ক, কর্ণফুলী টানেল, জ্বালানি খাত, সামাজিক সুরক্ষা, রাজস্ব সংগ্রহ, বাংলাদেশ ব্যাংকের ভূমিকা, ব্যাংক ব্যবস্থায় সরকারের ভূমিকা ও রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের পরিচালক নিয়োগ নিয়েও কথা হয়েছে বলে জানান দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।
আরও পড়ুন:‘মেট্রো রেলে আগুন না দিলে কিংবা পুলিশ হত্যা না করা হলে এতো সহজে বিপ্লব অর্জন করা যেত না’ মন্তব্য করা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসিব আল ইসলামকে শো-কজ করা হয়েছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখ্য সংগঠক আব্দুল হান্নান মাসউদের সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে রোববার এ তথ্য জানা গেছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, হাসিব আল ইসলাম (সমন্বয়ক, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন) বেসরকারি টেলিভিশনের এক টক-শোতে মেট্রো রেলে অগ্নিসংযোগ ও পুলিশ নিয়ে আপত্তিকর বক্তব্য প্রদান করেছেন বলে জানা গেছে। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি করেছে।
এতে আরও বলা হয়, হাসিব আল ইসলামকে আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে তার আপত্তিকর মন্তব্যের যৌক্তিক ব্যাখ্যা প্রদানের নির্দেশ দেওয়া হলো।
প্রসঙ্গত, সম্প্রতি বেসরকারি টেলিভিশন ডিবিসির ‘প্রযত্নে বাংলাদেশ’ টক-শোতে অংশ নিয়ে হাসিব এমন মন্তব্য করেন। টক-শোতে হাসিব আল ইসলামের পাশাপাশি বিএনপি নেত্রী নিলুফার চৌধুরী মনি অংশগ্রহণ করেন।
মন্তব্য