ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালত প্রাঙ্গণ থেকে দুই জঙ্গি পালিয়ে যেতে পারলেও তাদের সঙ্গে থাকা আরও দুজন পালাতে পারেননি। পালাতে ব্যর্থ দুই জঙ্গি হলেন মো. আরাফাত ও মো. সবুর।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনালে হাজির করে হাজতখানায় নেয়ার সময় চারজনের মধ্যে দুইজনকে ছিনিয়ে নেয়া হয়।
ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতের প্রধান ফটকের সামনে আগে থেকেই প্রস্তুত ছিল দুটি মোটরসাইকেল।
ফটকের কাছে পৌঁছাতেই হাতকড়া পরা চার জঙ্গি পুলিশ সদস্যদের মারধর শুরু করেন। এ সময় ব্যবহার করা হয় পিপার স্প্রে। একপর্যায়ে দুই জঙ্গি পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। তারা হলেন জাগৃতি প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী ফয়সল আরেফীন দীপন হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ড পাওয়া আসামি মইনুল হাসান শামীম ওরফে সামির ওরফে ইমরান এবং আবু সিদ্দিক সোহেল ওরফে সাকিব ওরফে সাজিদ ওরফে শাহাব।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মো. গোলাম ছারোয়ার খান জাকির সাংবাদিকদের বলেন, মোহাম্মদপুর থানার সন্ত্রাসবিরোধী আইনে করা একটি মামলার রোববার শুনানি ছিল। সেই মামলার আসামি ২০ জন, এর মধ্যে ৬ জন পলাতক, ১২ জন জেলহাজতে ও ২ জন জামিনে ছিলেন।
ওই মামলার শুনানি শেষে বের হওয়ার পর মূল ফটকের সামনে দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেয়া হয়।
আদালতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, মোহাম্মদপুর থানায় করা সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলাটিতে রোববার অভিযোগ গঠন হয়। এ জন্য জামিনে থাকা দুই আসামি হাজিরা দেন আদালতে। আর কাশিমপুর কারাগার থেকে প্রিজন ভ্যানে ১২ আসামিকে আনা হয়।
ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনালের বিচারক মজিবুর রহমান শুনানি শেষে ২০ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন। এরপর আসামিদের আদালতের হাজতখানায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল।
পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কোর্টের শুনানি শেষে প্রথমে চারজনকে নিচে নামিয়ে আনা হয়। দুটি হাতকড়া দিয়ে দুই-দুইজনকে আটকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। বাকি আসামিরা তখন ওপরে ছিলেন।’
তিনি বলেন, ‘চারজনের মধ্যে মইনুল হাসান ও আবু সিদ্দিককে জঙ্গিরা ছিনিয়ে নিয়ে যায়। তবে মো. আরাফাত ও মো. সবুরকে নিতে পারেনি। জঙ্গিরা পিপার স্প্রে ব্যবহার করে। এতে একজন সিকিউরিটি গার্ড, একজন পুলিশ সদস্যসহ কয়েকজন সাধারণ মানুষ আক্রন্ত হন।’
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আদালতের মূল ফটকের কাছে পোঁছানোমাত্র কয়েকজন দুর্বৃত্ত পুলিশের চোখে পিপার স্প্রে মেরে হাতকড়া পরানো চার আসামিকে ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে। পুলিশ সদস্যদের মারধরও করা হয়। এতে আহত হন পুলিশ সদস্য নুরে আজাদ। এরপর দুই আসামি একটি মোটরসাইকেলে চড়ে পালিয়ে যান, যেটির চালক ছিলেন আরেকজন।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মো. গোলাম ছারোয়ার খান জাকির বলেন, ছিনিয়ে নেয়া দুই জঙ্গিই দীপন হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ড পাওয়া আসামি। সাকিবুর অভিজিৎ হত্যা মামলারও মৃত্যুদণ্ড পাওয়া আসামি। তবে মোহাম্মদপুর থানায় করা আরেকটি মামলায় শুনানির জন্য তাদের আদালতে আনা হয়েছিল।
জঙ্গিদের মোটরসাইকেলে চড়ে পালিয়ে যাওয়ার একটি সিসিটিভি ফুটেজ পেয়েছে নিউজবাংলা। এতে দেখা যায়, ১ নম্বর রঘুনাথ দাস লেনের রায় সাহেবের বাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে দিয়ে দুপুর ১২টা ৫ মিনিটে লাল রঙের একটি বাইকে তিনজন পালিয়ে যান। তাদের পিছু পিছু আরও কয়েক যুবক দৌড়াচ্ছিলেন। তাদের মধ্যে একজনের হাতে হেলমেট, দুইজনের হাতে ব্যাগ ও দুইজন খালি হাতে ছিলেন।
আদালত প্রাঙ্গণের ভেতরের বই বিক্রেতা মো. নিজাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ঘটনার পরপরই একজন মেয়ে আমার দোকানের দিকে এসে বলে একটু পানি দেন। সে অনেক কাশছিল। তার সঙ্গে একটা বাচ্চা ছিল, সেই বাচ্চার মুখ আটকে রেখেছিল ওই মেয়ে।
‘মেয়েটি বারবার বলছিল, একটু পানি দেন স্প্রে মারছে। আমি এটা শুনে ঘটনাস্থলে দৌড়ে গেছি। সেখানে গিয়ে দেখি অনেক লোক গলি দিয়ে দৌড়াচ্ছে। এর কিছুক্ষণ পরে দেখলাম পুলিশ দুইজনকে ধরে নিয়ে আসছে।’
নিজাম বলেন, ‘গেটে যে সিকিউরিটি ছিলেন তাকে স্প্রে মারছে। আর যে পুলিশ তাদের নিয়ে যাচ্ছিল তাকে মেরে মুখ দিয়ে রক্ত বের করে দিয়ে হ্যান্ডকাপ পরেই দুই আসামি পালিয়ে গেছে।’
১ নম্বর রঘুনাথ দাস লেনের অ্যাডভোকেট মো. লুৎফর রহমানের চেম্বারের শিক্ষানবিশ আইনজীবী রাব্বুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আনুমানিক দুপুর ১২টার দিকে হঠাৎ করে দেখি কয়েকজন ছেলে দৌড়ে পালাচ্ছে। আমরা প্রথমে ভাবছি মোবাইল চুরি করে দৌড়াচ্ছে। পরে দেখি পেছনে পেছনে পুলিশ দৌড়াচ্ছে। তাদের মধ্যে এক পুলিশের মুখ দিয়ে রক্ত বেরোচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘জঙ্গিরা একটি অ্যান্টিকাটার ড্রেনে ফেলে পালিয়ে যায়। পরে পুলিশ সেটা জব্দ করে।’
ওই এলাকার কারকুন বাড়ি মসজিদের সামনে ভিক্ষা করছিলেন জোহরা বেগম। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কয়েকজনকে দেখি দৌড়ায় পালাচ্ছে। কিছু সময় পর দুজনকে ধরে নিয়ে যায় পুলিশ। বাকিরা মসজিদের সামনের রাস্তা দিয়ে পালিয়ে গেছে।’
রায় সাহেবের বাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনের মোড়ের মুদি দোকানি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বাইকে ছিল তিনজন। পেছনে ছিল পাঁচজন। তারা দ্রুত দক্ষিণ দিকে চলে যায়। পরে পেছন পেছন পুলিশ যেতে দেখা যায়।’
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের প্রধান হারুন অর রশিদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘এটা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। দুটি মোটরসাইকেলে ছয়জন এসে পুলিশের চোখে স্প্রে করে দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নিয়ে গেছে। তারা পুলিশের গায়ে হাত তুলেছে। স্প্রে করার কারণে পুলিশ সদস্যরা চোখে দেখতে পাননি।
‘ডিবি পুলিশ প্রত্যেকটা জায়গায় চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি করছে। আমরা সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পর্যালোচনা করছি। সবাই কাজ করছে। তাদের (পালিয়ে যাওয়া জঙ্গি) শিগগিরই গ্রেপ্তার করা হবে।’
আরও পড়ুন:আসন্ন ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অধিক সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হবে। উপজেলা ভেদে দুই থেকে চার প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হবে।
মঙ্গলবার সকালে নির্বাচন ভবনে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা শেষে সাংবাদিকদের এ কথা জানান নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিব মো. জাহাংগীর আলম।
ইসি সচিব বলেন, ষষ্ঠ উপজেলা নির্বাচন উপলক্ষে নির্বাচন সংশ্লিষ্ট দপ্তর, মন্ত্রণালয় সচিব, সিনিয়র সচিব ও দপ্তর প্রধানদের সঙ্গে সমন্বয় সভায় বসেছিল কমিশন। সভার মূল বিষয় ছিল, যার যেটা করণীয় সেটা সবাই সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে যেন যত্ন সহকারে করেন।
তিনি আরও বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীর বাহিনী ও জনপ্রশাসনের সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছেন তারা যাতে এই নির্বাচনটা দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের চেয়ে আরও সুন্দর ও স্বার্থকভাবে আয়োজন করেন, এই সব বিষয় নিয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত দেয়া হয়েছে।
ইসি সচিব জাহাংগীর আলম বলেন, উল্লেখযোগ্য সিদ্ধান্তের মধ্যে আমরা মূলত যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করে থাকি, এই নির্বাচনে তার চেয়ে অধিক পরিমাণে মোতায়েনের প্রচেষ্টা করা হবে। যেহেতু উপজেলা নির্বাচন চার ধাপে সম্পন্ন হবে, জেলা পর্যায়ে যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য ও জনপ্রশাসনের সদস্য রয়েছে, তারা ওখানেই ধাপে ধাপে দায়িত্ব পালন করবে। তারা বলেছে, তাদের জনবলের ঘাটতি হবে না।
জাহাংগীর আলম বলেন, উপজেলাভিত্তিক বিজিবি মোতায়েন করা হবে। উপজেলা ভেদে দুই থেকে চার প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন থাকবে। জনবলের সংখ্যা উপজেলাভিত্তিক বাড়িয়ে দেয়া হবে।
বড় দল আসবে না, এর প্রভাব ভোটে থাকবে কি-না, এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের যে গোয়েন্দা সংস্থা রয়েছে, তারা যে প্রতিবেদন দিয়েছে তাতে নির্বাচনে কোনো ধরনের সহিংসতা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে তারা উল্লেখ করেনি। দলীয় প্রতীক ছাড়া অনেক দল অংশ নিয়েছে তাই নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে। একই দলের একাধিক প্রার্থী রয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, যেসব দল নির্বাচন বর্জন করেছে তাদেরও কিছু কিছু অনুসারীরা এই নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। তাই কমিশন আশা করে নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে। এজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, ম্যাজিস্ট্রেট মোতায়েন থেকে শুরু করে সব কার্যক্রম নেয়া হবে যাতে নির্বাচনে ভোটাররা নির্বিঘ্নে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে তার পছন্দের ব্যক্তিকে ভোট দিয়ে সুষ্ঠুভাবে বাড়ি যেতে পারেন, যাতে নির্বাচনে তাদের মতামত প্রতিফলিত হয়।
অন্য এক প্রশ্নে ইসি সচিব বলেন, আইনিভাবে যার ভোটে অংশ নেয়ার যোগ্যতা রয়েছে তিনি ভোটে অংশ নিতে পারেন। এখানে কোনো আইনি বাধা নেই। সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দলীয় জনপ্রতিনিধি যারা আগে নির্বাচিত হয়েছেন, তাদের নিকট আত্মীয়দের নির্বাচনে অংশ নিতে নিষেধ করা হয়েছে। এটা তো আইন না, একটি দলীয় ও রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত।
তিনি বলেন, একটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্তকে নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তের সঙ্গে একত্রিত করার কোনো সুযোগ নেই। আমরা চাই অধিক সংখ্যক প্রার্থী আসবে। জনপ্রশাসন সমন্বিতভাবে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করবে। যত প্রার্থী আসবে স্থানীয় নির্বাচন তত সুষ্ঠু হবে বলে মনে করি।
কুমিল্লার বুড়িচং সীমান্তে ভারতের বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্সের (বিএসএফ) গুলিতে এক বাংলাদেশি যুবক আহত হয়েছেন।
উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের চড়ানল তেঁতুলতলা সীমান্তে সোমবার রাত ৮টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
আহত বিল্লাল হোসেন (২৮) রাজাপুর ইউনিয়নের লড়িবাগ এলাকার বাসিন্দা।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বিল্লাল হোসেন ভারত থেকে অবৈধ পথে চিনি ও অন্য পণ্য ওঠা-নামার শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। সোমবার রাত ৮টার দিকে তেঁতুলতলা সীমান্ত দিয়ে আসা চিনি নামানোর সময় বিএসএফের সদস্যরা গুলি করে তাকে। তার শরীরে ৩০টির মতো ছররা (ছোট গুলি) গুলি লাগে।
পরে বিল্লালকে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেয়া হয়। গুলিতে তার চোখ বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানান চিকিৎসক।
কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) কামরান হোসেন জানান, গুলিতে আহত ব্যক্তির বিরুদ্ধে থানায় কোনো মামলা নেই। সীমান্তের ঘটনা সম্পর্কে বিজিবি বলতে পারবে।
বিজিবির সংকুচাইল বিওপির কামান্ডার ফারুক কামাল জানান, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া তারা এ বিষয়ে কোনো বক্তব্য দিতে পারবেন না।
আরও পড়ুন:চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এক কেজি স্বর্ণসহ তিন যাত্রীকে আটক করা হয়েছে।
সোমবার সকালে এনএসআই ও কাস্টমস ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্টের সদস্যরা যৌথ অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করেন।
আটককৃতরা হলেন- কক্সবাজারের মোবারক আলী, চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার মো. নাজমুল হক ও চট্টগ্রামের সন্দ্বীপের আনোয়ার মোহাম্মদ শাহ।
চট্টগ্রাম বিমানবন্দরের পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন তসলিম আহমেদ জানান, ভোর ৬টা ৪৫ মিনিটে বাংলাদেশ বিমানের বিজি-১৪৮ ফ্লাইটটি দুবাই থেকে চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে অবতরণ করে। আটক তিনজন কাপড় ও কম্বলে করে এক কেজির বেশি ওজনের সোনা নিয়ে আসেন। তাদের সন্দেহজনক গতিবিধির কারণে এনএসআই ও সিআইআইডির সদস্যরা তাদের আটক করেন।
আটক তিনজনকে পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয় বলেও তিনি জানান।
নাটোরের সিংড়ায় নিজ ভাতিজিকে ধর্ষণের পর হত্যার মামলায় একজনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে আদালত।
নাটোরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মুহাম্মদ আব্দুর রহিম সোমবার দুপুরে এ রায় দেন।
দণ্ডপ্রাপ্ত শাহাদত একই উপজেলার দেওগাছা উত্তপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। তাকে মৃত্যুদণ্ডের পাশাপাশি ২০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দেয়া হয়েছে।
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের স্পেশাল পিপি আনিসুর রহমান জানান, ২০১৯ সালের ৪ আগস্ট ১৬ বছরের এক কিশোরী ও ছোট তার দুই ভাই-বোনকে বাড়িতে রেখে তাদের পরিবারের সদস্যরা পার্শ্ববর্তী পাকুয়া গ্রামে যায়। কিশোরীর ছোট দুই ভাই-বোন স্কুলে যাওয়ায় পর বাড়িতে কেউ না থাকায় তার আপন চাচা শাহাদত বাড়িতে প্রবেশ করেন। পরে অভিযুক্ত শাহাদত তার ভাতিজিকে ধর্ষণ করেন।
এ সময় কিশোরী সেই ঘটনা সবাইকে জানিয়ে দেয়ার কথা বললে শাহাদত তাকে শ্বাসরোধে হত্যা করেন।
তিনি জানান, নিহতের দুই ভাই-বোন স্কুল থেকে বাসায় ফিরে তার বোনকে মৃত দেখলে শাহাদত দৌড়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। ওই সময় এলাকাবাসী ধাওয়া দিয়ে শাহাদতকে ধরে সংঘবদ্ধ পিটুনি দিলে তিনি তার ভাতিজিকে ধর্ষণের পর হত্যার বিষয়টি স্বীকার করেন।
এ ঘটনায় নিহত কিশোরীর মা শাহাদতের নামে সিংড়া থানায় মামলা করেন। রায় ঘোষণার সময় সোমবার অভিযুক্ত শাহাদত আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন:নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) বাসভবনে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালনকালে আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে নিজের মাথায় গুলি করেছেন আফজাল হোসেন নামে এক আনসার সদস্য। তাকে উদ্ধার করে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
সোমবার বিকেল ৫টার দিকে বন্দরের মদনগঞ্জে উপজেলা কার্যালয়ের ভেতরে এ ঘটনা ঘটে। পরে মুমূর্ষু অবস্থায় সহকর্মী আনসার সদস্যরা আফজালকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসেন। সেখানে অপারেশন চলাকালীন সন্ধ্যা ৭টার দিকে মারা যান তিনি।
নিহতের সহকর্মী আনসার সদস্য মোহাম্মদ মিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘আজ (সোমবার) বিকেলে বন্দরের ইউএনও স্যারের ডিউটি চলাকালীন সে নিজের মাথায় শটগান ঠেকিয়ে গুলি করে। গুলিবিদ্ধ হয়ে সে মেঝেতে লুটিয়ে পড়ে। এ অবস্থায় আমরা তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যালে নিয়ে আসি।
‘আমরা জানতে পেরেছি যে সে আত্মহত্যা করেছে। তার বাবার নাম ওয়াহিদুর রহমান। গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামে।’
ঢামেক পুলিশ ক্যাম্পের ভারপ্রাপ্ত ইনচার্জ সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) মাসুদ মিয়া বন্দর থানার ওসির বরাত দিয়ে জানান, নিহত আনসার সদস্য বন্দর ইউএনওর গার্ড ছিলেন। ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ মর্গে রাখা হয়েছে।’
বন্দর থানার ওসি গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘আনসার সদস্য আফজাল হোসেন শটগান দিয়ে মাথায় গুলি চালিয়ে আত্মহত্যা করেছেন বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।’
পুলিশ জানায়, আফজাল বন্দর থানার ইউএন এম এ মুহাইমিন আল জিহানের দেহরক্ষী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। সোমবার বিকেলে উপজেলার ভেতরে দায়িত্ব পালনরত অবস্থায় তিনি তার অস্ত্র দিয়ে নিজের মাথায় পুলিশ করেন। গুলির শব্দ শুনে আশপাশের লোকজনসহ অন্য কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ছুটে আসেন। তাকে উদ্ধার করে প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হয়। তবে অবস্থার অবনতি দেখে চিকিৎসক তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠান।
ইউএনও এম এ মুহাইমিন আল জিহান সাংবাদিকদের বলেন, ‘আফজালের ডিউটি শুরুর আধ ঘণ্টা পর এ ঘটনা ঘটে। সে তার সার্ভিস শটগান দিয়ে নিজের মাথায় গুলি করে। ঘটনার সময় আমি আমার বাসভবনে ছিলাম না। খবর পেয়ে সেখানে গিয়ে দেখি রক্তাক্ত অবস্থায় সে পড়ে আছে।
‘দ্রুততার সঙ্গে তাকে প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও পরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে সেখানে তার মৃত্যু হয়। শটগানটি ও একটি গুলির খোসা জব্দ করা হয়েছে। বিষয়টি তদন্তের জন্য একটি কমিটি গঠন করা হবে।’
সাত বছর আগে সিরাজগঞ্জের চৌহালীতে ঘটে যাওয়া চাঞ্চল্যকর সুবর্ণা নামের ৮ বছর বয়সী এক শিশু হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
আটজন যুবক ও কিশোর মিলে পালাক্রমে ধর্ষণের পর গলায় ওড়না পেঁচিয়ে সুবর্ণাকে হত্যা করে বলে তদন্তে বেরিয়ে এসেছে।
ইতোমধ্যে এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত দুই জনকে গ্রেপ্তারও করেছে পুলিশ।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- চৌহালী উপজেলার দত্তকান্দি গ্রামের ২০ বছর বয়সী মো. সাব্বির হোসেন এবং একই গ্রামের ২১ বছর বয়সী মো. শাকিব খান।
সাব্বির ও সাকিব দুজনেই আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। তাদেরকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
সোমবার নিজ কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে রোমহর্ষক এ ঘটনার বিবরণ দেন পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার মো. রেজাউল করিম।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘২০১৭ সালের ২৭ মার্চ সকালে চৌহালী উপজেলার মধ্য শিমুলিয়ার চর থেকে সুবর্ণার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় সুবর্ণার বাবা মো. শুকুর আলী বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন। পুলিশ মামলাটি তদন্ত করে চূড়ান্ত রিপোর্ট দাখিল করলে বাদী আদালতে নারাজি আবেদন দেন। এরপর মামলাটি পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দেন আদালত।
‘২০২০ সালের ৪ ডিসেম্বর পিবিআই এসআই আশিকুর রহমানকে তদন্তের দায়িত্ব দেয়। তদন্তকালে তথ্যপ্রযুক্তি ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে গত ১৯ এপ্রিল ভিকটিমের ফুফাতো ভাই মো. সাব্বির হোসেনকে আটক করা হয়। তার দেয়া তথ্যে ওই দিনই দত্তকান্দি শোলে বাজার থেকে শাকিব খানকে আটক করা হয়।’
এর আগে এ ঘটনার নায়ক মিলন পাশাকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলেও তার কাছ থেকে সঠিক তথ্য পাওয়া যায়নি বলে জানান এ কর্মকর্তা।
তিনি আরও বলেন, ‘তবে গ্রেপ্তার সাব্বির ও শাকিব খানকে জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনার মূল রহস্য বেরিয়ে আসে।
‘জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, ২০১৭ সালের ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবসের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান দেখতে তারা দুজনসহ আরও ছয়জন দত্তকান্দি হাইস্কুল মাঠে যায়। সেখানে সুবর্ণাকে তার ফুফাতো ভাই সাব্বিরের সঙ্গে খেলতে দেখে। তখনই তারা সুবর্ণাকে ধর্ষণের পরিকল্পনা করে।
‘পরিকল্পনা অনুযায়ী মিলন পাশা ও সাকিবসহ বাকি আসামিরা সাব্বিরকে বলে তার মামাতো বোন সুবর্ণাকে মধ্যশিমুলিয়ার চরে নিয়ে যেতে। সন্ধ্যার পর সাব্বির ও শাকিব মিলে সুবর্ণাকে কৌশলে মধ্যশিমুলিয়ার চরে নিয়ে যায়। সেখানে আগে থেকেই বাকি আসামিরা অবস্থান করছিল। এরপর সুবর্ণার হাত-পা চেপে ধরে আটজন মিলে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। এক পর্যায়ে সুবর্ণা নিস্তেজ হয়ে যায়। তখন সে কাঁদতে কাঁদতে ঘটনাটি সবাইকে বলে দেয়ার কথা বলে। এ অবস্থায় আসামিরা নিজেদের বিপদের কথা চিন্তা করে তাকে হত্যার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা মোতাবেক সুবর্ণার গলায় তারই ওড়না পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে তাকে হত্যা করে। এরপর শরীরে মাটি ছিটিয়ে দিয়ে পালিয়ে যায়।’
পিবিআইয়ের এ কর্মকর্তা বলেন, ‘ওদিকে পরিবারের লোকজন চিন্তা করে, সুবর্ণা ওই স্কুলের পাশে তার ফুফুর বাড়িতেই আছে। এ জন্য শুরুতে তারা খোঁজাখুঁজিও করে নাই। পরদিন তার মরদেহ পাওয়া যায়।
‘পিবিআই তদন্তকালে সুরুতহাল রিপোর্ট ও ময়নাতদন্ত রিপোর্ট পর্যালোচনা করে দেখে সুবর্ণাকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে। এ ছাড়াও তার গোপনাঙ্গে রক্ত দেখে তা আলামত হিসেবে সংগ্রহ করা হয়। আলামতের ডিএনএ পরীক্ষায় তার পরণের পোশাকে সিমেনের (বীর্য) নমুনা পাওয়া যায়। এতেই নিশ্চিত হওয়া যায় যে, সুবর্ণাকে হত্যার আগে ধর্ষণ করা হয়েছে।’
এ ঘটনায় বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারের প্রক্রিয়া চলছে বলে জানান পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার।
চট্টগ্রামে হিটস্ট্রোকে এক যুবক মারা গেছেন। তার নাম শুকুর আলী। পুলিশ বলছে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট আসার পর জানা যাবে মৃত্যুর কারণ।
সোমবার নগরীতে চলাচল করা একটি টেম্পু কর্নেল হাট শ্যামলী বাস কাউন্টারের সামনে পৌঁছলে টেম্পুটি থামিয়ে সেখান থেকে নিস্তেজ অবস্থায় এক যাত্রীকে ধরাধরি করে নামিয়ে আনেন অন্য যাত্রীরা। পরে খবর দেয়া হয় পাহাড়তলী থানা পুলিশকে।
শুকুর আলী লক্ষ্মীপুর জেলার দালাল বাজারের হাজীবাড়ির মৃত মানিক মিস্ত্রির ছেলে। তিনি সীতাকুণ্ডে জলিলের সিডিএ এলাকার বুলু মেম্বারের ভাড়া ঘরে থাকতেন।
কর্নেল হাট শ্যামলী বাস কাউন্টারের বাবুল আহমদ বলেন, ‘ছেলেটি টেম্পুতে মনে হয় সিটি গেটের দিকে কোথাও যাচ্ছিল। গরমে নাকি হাসফাঁস করছিল। আমার কাউন্টারের সামনে এসে ছেলেটা নাকি অসুস্থ হয়ে পড়ে। ওরা কাউন্টারের সামনে গাড়ি ব্রেক করে নামিয়ে তাকে শুইয়ে দেয়। সেখানে পরক্ষণেই সে মারা যায়। পরে আমরা পুলিশে খবর দেই।’
পাহাড়তলী থানার ওসি মোহাম্মদ কেপায়েত উল্লাহ বলেন, ‘কর্নেল হাট এলাকায় এক যাত্রীর মৃত্যু খবর পেয়ে আমার অফিসার ঘটনাস্থলে যায়। পরে মরদেহ উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয়া হয়।
‘প্রথমে তার পরিচয় শনাক্ত করা যায়নি। ফেসবুকে বিষয়টি পোস্ট করার পর তার মামা আসেন। তার মা-বাবা কেউ বেঁচে নেই। বাড়ি লক্ষ্মীপুরে।’
মন্তব্য