জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক কৃষি খামারি দুরন্ত বিপ্লব বুড়িগঙ্গা পাড়ি দেয়ার সময় তার নৌকাকে ধাক্কা দেয়া মর্নিংসান-৫ লঞ্চের দুই চালকসহ (মাস্টার) ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখা।
মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের লালবাগ বিভাগের উপকমিশনার মশিউর রহমান এ তথ্য জানিয়েছেন।
ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে রোববার আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘দুরন্ত বিপ্লবকে হত্যা করা হয়নি, তিনি অবহেলাজনিত দুর্ঘটনায় মৃত্যুর শিকার।
‘গত ৭ নভেম্বর বুড়িগঙ্গা পার হওয়ার সময় মর্নিংসান-৫ লঞ্চের ধাক্কায় দুরন্ত বিপ্লবকে বহনকারী নৌকাটি উল্টে যায়। দুরন্ত বিপ্লব সাঁতারে দক্ষ না হওয়ায় বা সাঁতার না জানায় পানিতে তলিয়ে যান।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের তদন্তে হত্যার কোনো প্রমাণ পাইনি। দুরন্ত বিপ্লবের কোনো শত্রু পাওয়া যায়নি। অবহেলাজনিত দুর্ঘটনায় তিনি মারা গেছেন।’
এ ঘটনায় মর্নিংসান-৫-এর প্রথম মাস্টার হাফেজ মো. সাইদুর রহমান, দ্বিতীয় মাস্টার আলামিন, ইঞ্জিন ড্রাইভার মো. মাসুদ রানা, দ্বিতীয় ইঞ্জিন ড্রাইভার ইমন হোসেন, সুকানি মো. সালমান ও সুপারভাইজার মো. ইব্রাহীম খলিলকে গ্রেপ্তার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ।
কৃষি খামারি দুরন্ত বিপ্লব ৭ নভেম্বর নিখোঁজ হন। এর পাঁচ দিন পর নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় বুড়িগঙ্গা নদীতে ভাসমান অবস্থায় একটি মরদেহ পায় পুলিশ। সেদিন রাতে মরদেহটি বিপ্লবের বলে নিশ্চিত করেন তার স্বজনরা। পরদিন দুপুরে ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
আরও পড়ুন: বুড়িগঙ্গায় পাওয়া মরদেহ কৃষি খামারি দুরন্ত বিপ্লবের
ডিবির সংবাদ সম্মেলনে যা জানানো হলো
মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের লালবাগ বিভাগের উপকমিশনার মশিউর রহমান সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘দুরন্ত বিপ্লব গত ৭ নভেম্বর কেরানীগঞ্জ কোনাখোলা এলাকা থেকে জিঞ্জিরা সোয়ারীঘাট হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকার উদ্দেশে রওনা দেন। পথিমধ্যে তিনি নিখোঁজ হয়ে যান।
‘ওই ঘটনায় পিবিআই ও ডিবি লালবাগ বিভাগ ছায়া তদন্ত করেছে। আমরা ভিকটিমের আত্মীয়স্বজন, বন্ধুর স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলি। সংশ্লিষ্ট এলাকার লঞ্চ, নৌকা, খেয়াঘাটের ইজাদার ও মাঝিদের সঙ্গে কথা বলি। বিভিন্ন সিসিটিভি ফুটেজ ও তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় ভিকটিমের মুভমেন্ট সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করা হয়।’
তিনি বলেন, ‘মামলার ছায়া তদন্ত চলাকালে ডিবি লালবাগ বিভাগের একাধিক টিম ঢাকা মহানগরী এবং কেরানীগঞ্জের বিভিন্ন জায়গায় ধারাবাহিক অভিযান চালিয়ে বিপ্লবের মৃত্যুর ঘটনায় জড়িত মর্নিংসান-৫ লঞ্চের ৬ জন কর্মচারীকে গ্রেপ্তার করা হয়।’
ডিসি মশিউর রহমান বলেন, ‘ছায়া তদন্ত করতে গিয়ে আমরা নানাভাবে জানার চেষ্টা করেছি দুরন্তের মৃত্যু রাজনৈতিক কারণে, নাকি শত্রুতাজনিত। তবে আমরা কোনো শত্রুর সন্ধান পাইনি। আমরা জেনেছি তিনি নির্ঝঞ্ঝাট মানুষ। তার স্ত্রী থাকেন ইস্কাটনে, তিনি কেরানীগঞ্জে কোনাখোলা এলাকায় একাকী থাকতেন।
‘নিঃসঙ্গ জীবনযাপনের কারণে তিনি সোনামাটি অ্যাগ্রোফার্ম পরিচালনা করতেন। সেখানকার বিভিন্ন পণ্য প্রতিদিন ঢাকায় পাঠাতেন।’
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, নিখোঁজের দিন দুরন্ত বিপ্লব তার কর্মচারী হেলালকে সঙ্গে নিয়ে বিকেল ৪টা ৪৪ মিনিটের দিকে কুরিয়ার সার্ভিস বয় গোলাম রাব্বানীর কাছে কিছু সবজির প্যাকেট হস্তান্তর করেন। এরপর বিকেল ৪টা ৫৫ মিনিটের দিকে নূর ফিলিং স্টেশনের কাছাকাছি রাস্তায় ঢাকা থ ১১-৫৮৭৩ নম্বরের অটোরিকশায় ওঠেন।
৩-৪ জন যাত্রী নিয়ে চলা অটো ড্রাইভার বিল্লালের ভাষ্য অনুযায়ী, সন্ধ্যা ৫টা ১৫ থেকে ২০ মিনিটের দিকে বিপ্লবকে জিঞ্জিরা ঘাটে নামিয়ে দেয়া হয়।
সিসিটিভি ফুটেজ এবং ডিজিটাল মুভমেন্ট বিশ্লেষণ করে গোয়েন্দা পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে, জিঞ্জিরা ঘাট ও কামরাঙ্গীর চরের মুসলিমবাগ এলাকার নদীর পার এলাকায় বিপ্লবের সবশেষ অবস্থান ছিল। সেখানে অবস্থানকালেও তিনি কুরিয়ার সার্ভিস বয় গোলাম রাব্বানীর সঙ্গে সবজি পাঠানো নিয়ে কথা বলেন।
মশিউর রহমান বলেন, ‘জিঞ্জিরা ঘাট থেকে সোয়ারীঘাটে চলাচলকারী খেয়া নৌকার মাঝি শামসু মিয়ার তথ্য অনুযায়ী, মাগরিব নামাজের আগে-পরে পাঁচ জন যাত্রীকে নিয়ে তার নৌকা যাত্রা করে। মাঝ নদীতে এলে মর্নিংসান-৫ লঞ্চটি তার নৌকাকে ধাক্কা দেয়।
‘এতে নৌকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে তলিয়ে যায়। যাত্রীরা পানিতে নিমজ্জিত হন। কিছুক্ষণের মধ্যে অন্য নৌকা এসে কয়েক জনকে উদ্ধার করতে পারলেও একজন ডুবে যায়। ডুবে যাওয়া এই যাত্রীই দুবন্ত বিপ্লব বলে জানা যায়।’
অবহেলাজনিত দায়-এর কারণে লঞ্চের কর্মচারীদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে জানিয়ে ডিসি মশিউর রহমান বলেন, ‘দূর থেকেই লঞ্চ থেকে নৌকার গতিবিধি দেখার কথা। নৌকা যাচ্ছিল আড়াআড়িভাবে, লঞ্চ যাচ্ছিল সোজা। লঞ্চের তো নৌকাকে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার কথা ছিল। সেই মাপ তাদের জানার কথা।
‘নৌকা লঞ্চকে ধাক্কা দিতে পারে না, লঞ্চই নৌকাকে ধাক্কা দিয়েছে। গ্রেপ্তাররা সেটা স্বীকারও করেছে। ধাক্কা দিয়ে চলে যাওয়ার পর কিছু দূরে ইঞ্জিন বন্ধ করে তারা দেখেছেন কী ঘটনা ঘটেছে। তবে ততক্ষণে নৌকা তলিয়ে গেছে। নৌকাডুবিতেই যে তার (বিপ্লব) মৃত্যু হয়েছে তা তার জুতা উদ্ধার ও মোবাইল টাওয়ারে সবশেষ অবস্থান অনুযায়ী স্পষ্ট।’
গ্রেপ্তারদের লঞ্চ চালানোর অনুমোদন ছিল কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা এখনও বিআইডব্লিওটিএর কাছে জানতে পারিনি তাদের আদৌ অনুমোদন ছিল কিনা। তবে ২১ বছরের সুকানি সালমান পূর্ণবয়স্ক হলেও অভিজ্ঞতা তার কতোটুকু ছিল সেটা খতিয়ে দেখা হবে।’
ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক প্রাথমিকভাবে বলেছিলেন, দুরন্ত বিপ্লব হত্যাকাণ্ডের শিকার। এ বিষয়ক এক প্রশ্নের জবাবে মশিউর রহমান বলেন, ‘এই ধরনের কনক্লুশন দেয়ার দায়িত্ব চিকিৎসকের নয়। ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক বলতে পারেন না একটি ঘটনা হত্যা নাকি আত্মহত্যা। একজন ব্যক্তি ছাদ থেকে লাফিয়েও আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে মারা যেতে পারেন। দুরন্ত বিপ্লব নৌডুবিতে মারা যান, তিনি হয়ত সাঁতারে পটু ছিলেন না বা জানতেন না।
‘তার মরদেহ উদ্ধার করা হয় পাঁচদিন পর। এ সময়ের মধ্যে নিখোঁজের শুরু থেকে উদ্ধার পর্যন্ত যেকোনো পর্যায়ে আঘাতপ্রাপ্ত হতে পারেন। চিকিৎসক পরীক্ষা-নিরীক্ষার কথা বলতে পারেন, কিন্তু হুট করে বলতে পারেন না হত্যা বা অবহেলাজনিত মৃত্যু নাকি আত্মহত্যা।’
মরদেহ উদ্ধারের পর তৈরি হয় ধোঁয়াশা
দুরন্ত বিপ্লবের মরদেহ উদ্ধারের পর ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক নারায়ণগঞ্জ সদর জেনারেল হাসপাতালের মেডিক্যাল অফিসার মফিজ উদ্দিন প্রাথমিকভাবে জানান, বিপ্লবকে হত্যা করা হয়েছে। তার শরীরে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে।
আরও পড়ুন: জাবি ছাত্রলীগের সাবেক নেতা দুরন্ত বিপ্লবকে খুনের সন্দেহ
তবে বিপ্লব নিখোঁজের দিন সন্ধ্যায় বুড়িগঙ্গা নদীর সোয়ারীঘাট এলাকায় একটি নৌকাডুবির তথ্য জানায় দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার পুলিশ।
দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার (ওসি) শাহ জামান ১৩ নভেম্বর নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সোয়ারীঘাটের দিকে নৌকা থেকে একজনের পড়ে যাওয়ার কথা আমরা শুনেছি। জিঞ্জিরার বিপরীতে নদীতে ঘটনাটি ঘটে। ওনার (বিপ্লব) মোবাইল কললিস্ট ও নেটওয়ার্ক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, যেখানে ঘটনাটি ঘটে, সেখানেই ওনার অবস্থান ছিল।
‘বুড়িগঙ্গার এই অংশটায় নৌকা দিয়েই পারাপার হতে হয়। সোয়ারীঘাট, পানঘাট, আরও অনেকগুলো ঘাট রয়েছে ওখানে। তবে উনি নৌকা থেকে পড়েই মারা গেছেন, এমনটা আমরা এখনই বলছি না। আমরা তদন্ত করছি। তদন্ত শেষে নিশ্চিতভাবে মৃত্যুর কারণ বলা যাবে।’
আরও পড়ুন: দুরন্ত বিপ্লব নিখোঁজের দিন ‘নৌকা থেকে পড়ে যান’ একজন
বিষয়টি নিয়ে ছায়া তদন্তকারী সংস্থা পিবিআই-এর ঢাকা জেলার উপ পরিদর্শক সালেহ ইমরান শনিবার নিউজবাংলাকে জানান, দুরন্ত বিপ্লব নৌকাডুবিতেই প্রাণ হারিয়েছেন বলে তারা অনুসন্ধানে নিশ্চিত হয়েছেন।
আরও পড়ুন: দুরন্ত বিপ্লব খুন হননি, বুড়িগঙ্গায় ডুবে মৃত্যু
সালেহ ইমরান জানান, ৭ নভেম্বর বিকেল ৫টার পর কেরানীগঞ্জ থেকে বুড়িগঙ্গা পাড়ি দিয়ে সোয়ারীঘাট আসছিলেন বিপ্লব। ওই নৌকার মালিক ও মাঝি ছিলেন শামসু নামের একজন।
একই সময়ে ঢাকা-বরিশাল রুটের মর্নিংসান-৫ লঞ্চটি সোয়ারীঘাট থেকে সদরঘাটের উদ্দেশে যাত্রা করে।
উপ পরিদর্শক সালেহ ইমরান বলেন, ‘দুরন্ত বিপ্লবসহ আরও চারজনকে বহন করা শামসু মাঝির নৌকাটি নদীর দুই-তৃতীয়াংশ পাড়ি দেয়ার পর মর্নিংসান-৫ লঞ্চটির ডান পাশে ধাক্কা লাগে। এতে উল্টে যায় নৌকাটি।’
দুর্ঘটনার পর আশপাশের নৌকা গিয়ে চার যাত্রী ও শামসু মাঝিকে উদ্ধার করে। তবে নিখোঁজ হন এক যাত্রী।
দুর্ঘটনার পর শামসু মাঝি তার গ্রামের বাড়ি ফরিদপুরে পালিয়ে গেলেও তাকে সম্প্রতি আটক করেছে পিবিআই। ষাটোর্ধ শামসু মাঝি নদীতে ডুবে যাওয়া যাত্রীর যে বিবরণ দিয়েছেন তার সঙ্গে দুরন্ত বিপ্লবের মিল রয়েছে। এছাড়া, ডুবে যাওয়া নৌকার পাটাতনের নিচ থেকে বিপ্লবের জুতা উদ্ধারের কথা জানিয়েছে পিবিআই।
পিবিআই ঢাকা জেলার উপ পরিদর্শক সালেহ ইমরান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘দুরন্ত বিপ্লবের লাশ উদ্ধারের পরই আমরা ছায়া তদন্ত শুরু করি। যে নৌকায় তিনি নদী পার হচ্ছিলেন সেই নৌকার মাঝিকে আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। তিনি জানিয়েছেন, তার নৌকার পাঁচ যাত্রীর মধ্যে চার জনকে উদ্ধার করা হলেও দুরন্ত বিপ্লবকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।
‘আমরা শামসু মাঝির নৌকা থেকে দুরন্ত বিপ্লবের একটি জুতাও উদ্ধার করেছি। জুতাটি যে দুরন্ত বিপ্লবের তা তার বোন ও খামারের ম্যানেজার নিশ্চিত করেছেন। তিনি (বিপ্লব) সাঁতারও জানতেন না। নৌকাটি উল্টে যাওয়ার পর অন্যরা সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসার আগেই তিনি তলিয়ে যান। দুরন্ত বিপ্লবকে হত্যা করা হয়নি, তিনি ডুবে মারা গেছেন।’
ছাত্রলীগের সাবেক নেতা দুরন্ত বিপ্লব কয়েক বছর ধরে কেরানীগঞ্জে ‘সোনামাটি অ্যাগ্রো’ নামে একটি কৃষি খামার পরিচালনা করছিলেন। ৭ নভেম্বর বেলা ৩টার দিকে মায়ের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন তিনি। এ সময় তিনি জানান, ঢাকার মোহাম্মদপুরের মায়ের বাসায় তিনি আসছেন।
তবে মায়ের বাসায় আসেননি দুরন্ত বিপ্লব। তার কোনো সন্ধান না পেয়ে ৯ নভেম্বর দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে পরিবার। এরপর ১২ নভেম্বর তার ভাসমান দেহ উদ্ধার করা হয়।
দুরন্ত বিপ্লবের জুতা শনাক্ত করার বিষয়ে জানতে চাইলে তার ছোট বোন শাশ্বতী বিপ্লব শনিবার সন্ধ্যায় নিউজবাংলাকে বলেন, ‘দাদা (বিপ্লব) এ ধরনের জুতাই পরতেন। আগামীকাল (রোববার) ডিবি একটি সংবাদ সম্মেলন ডেকেছে। সেখানে তারা নৌকাডুবিতে মৃত্যুর কথাই জানাবে।’
প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনায় যেভাবে দুর্ঘটনা
বুড়িগঙ্গার আলোচিত খেয়াঘাটের দুই তীরে কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শীর খোঁজ পেয়েছে নিউজবাংলা। তারা জানান, ৭ নভেম্বর সন্ধ্যা সাড়ে ৫টার দিকে জিঞ্জিরার বটতলা ঘাট থেকে পাঁচ জন যাত্রী নিয়ে সোয়ারীঘাটের উদ্দেশে ছেড়ে যায় শামসু মাঝির নৌকা। তবে সোয়ারীঘাটে পৌঁছানোর আগেই লঞ্চের ধাক্কায় নৌকাটি তলিয়ে যায়।
বটতলা ঘাটের টোল আদায়কারী সিদ্দিকুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের ঘাটে শামসু নামের একজন মাঝি আছেন। উনি জিঞ্জিরার বটতলা ঘাট থেকে সেদিন পাঁচ জন যাত্রী নিয়ে সোয়ারীঘাটের দিকে যাচ্ছিলেন। তখন একটা লঞ্চ ব্যাক দিছে, লঞ্চের নিচে পইরা নৌকা ডুইবা গেছে। এইখান (বটতলা) দিয়া মাঝিরা গিয়ে যাত্রী ও মাঝিরে উদ্ধার করছে। আমি জিগাইলাম, সব লোক উঠছে, ওরা কইলো উঠছে।’
তিনি বলেন, ‘এখন শুনি এক লোকরে পায় নাই। এক লোক ডুইবা গেছে। মাঝিরা আমারে সত্য তথ্য দেয় নাই। সত্য দিলে আমি থানায় জানায়ে দিতাম। পুলিশ খবর দিতাম, ডুবারও খবর দিতাম। ওই দিনের পরে আর শামসু ঘাটে আহে নাই।’
দুরন্ত বিপ্লবের মরদেহ উদ্ধারের পর দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা পুলিশ শরীফ নামে একজন প্রত্যক্ষদর্শীর সন্ধান পায়। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সোয়ারীঘাটে একটা লঞ্চ ঘুরাইবার সময় একটা নৌকা ডুইবা গেছে। নৌকায় পাঁচ জন যাত্রী ছিল। পাঁচ জনের ভিতর চার জন উঠছে, একজনের শুধু হাত দেখা গেছে। আর কিছুই দেখা যায় নাই। চারজন নৌকা ধইরা বইসা ছিল। আর একজন তলাইয়া গেছে।’
অনুসন্ধানে জানা যায়, সোয়ারীঘাট বিআইডাব্লিউটিএ ল্যান্ডিং স্টেশন থেকে প্রতিদিন সন্ধ্যায় দুটি লঞ্চ সদরঘাটে গিয়ে নির্ধারিত গন্তব্যের উদ্দেশে ছেড়ে যায়। ৭ নভেম্বর সন্ধ্যায় প্রথমে মর্নিংসান-৫ ও পরে পারাবাত-১৫ লঞ্চটি সদরঘাট গিয়েছিল।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে পারাবাত-১৫ এর একজন কর্মচারী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের আগে মর্নিংসান-৫ ছাইড়া গেছে। এরপর আমরা গেছি। মর্নিংসান-৫ যাওয়ার সময় একটা নৌকারে ধাক্কা দেয়। ধাক্কা লাইগা নৌকাটা উল্টায়া যায়। দুই পার থাইকাই মাঝিরা আইসা যাত্রীগো উদ্ধার করে। আমরা লঞ্চ থাইকা এই ঘটনাটা দেখছি।’
দুরন্ত বিপ্লবের খেয়া ঘাটে যাওয়ার ছবি সিসিটিভি ক্যামেরায়
তদন্তকারীদের অনুসন্ধানে জানা গেছে ঘটনার দিন বিকেল ৪টা ৪৭ মিনিটে দুরন্ত বিপ্লব নিজের খামার থেকে ঢাকার উদ্দেশে বের হন। তার খামারের পাশের একটি পেট্রল পাম্পের সিসিটিভি ক্যামেরায় এ দৃশ্য ধরা পড়েছে।
সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, দুরন্ত বিপ্লবের পরনে ছিল পাঞ্জাবি ও প্যান্ট, পায়ে ছিল চামড়ার স্যান্ডেল। হেঁটেই তিনি কোনাখোলা মোড়ের অটোরিকশা স্ট্যান্ডে আসেন।
আরেকটি সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, দুরন্ত বিপ্লব অটোরিকশা স্ট্যান্ডে পৌঁছান ৪টা ৫৫ মিনিটে। এরপর বিল্লাল নামের একজনের অটোরিকশায় চড়ে জিঞ্জিরার বটতলা ঘাটে পৌঁছান। ঘাট এলাকার একটি সিসিটিভি ফুটেজে দুরন্ত বিপ্লবকে দেখা গেছে বিকেল ৫টা ২৭ মিনিটে। এ সময় তিনি একাই ছিলেন।
পিবিআই তদন্ত কর্মকর্তা সালেহ ইমরান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘দুরন্ত বিপ্লব ওখান থেকে শামসু মাঝির নৌকায় চড়েন। এরপর লঞ্চের ধাক্কায় তার নৌকাটি ডুবে যায়। নৌকার মাঝি আমাদেরকে বলেছেন, চার যাত্রীকে উদ্ধার করা সম্ভব হলেও একজন ডুবে যান।’
দুরন্ত বিপ্লবের শরীরে আঘাতের চিহ্ন থাকার বিষয়ে পিবিআই কর্মকর্তা ইমরান বলেন, ‘নৌকা থেকে পরে যাওয়ার পর উনি পাঁচদিন নদীতে ছিলেন। শত শত লঞ্চ, স্টিমার, নৌকা, বাল্কহেড নদীতে চলাচল করে। ভাসতে ভাসতে ৮-৯ কিলোমিটার যাওয়ার পথে এগুলোর সঙ্গে ধাক্কা লাগতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘খামার থেকে দুরন্ত বিপ্লব বের হওয়ার পর যেখানে তিনি গেছেন প্রতিটা স্পটে আমরা গিয়েছি। যে নৌকায় দুর্ঘটনা ঘটছে ওই নৌকার মাঝির স্টেটমেন্ট পেয়েছি। তার জুতা পেয়েছি। এসব থেকে স্পষ্ট তিনি হত্যার শিকার হননি। পানিতে ডুবে মারা গেছেন।’
আরও পড়ুন:সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের নতুন তিন বিচারক শপথ গ্রহণ করেছেন।
বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সুপ্রিম কোর্টের জাজেস লাউঞ্জে প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান তাদের শপথ পাঠ করান। খবর বাসসের
সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল মো. গোলাম রব্বানী পরিচালনায় শপথ অনুষ্ঠানে সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগের বিচারপতি, শপথ পাঠকারী তিন বিচারপতির পরিবারের সদস্য, অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন, সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন, সম্পাদক শাহ মঞ্জুরুল হক এবং সুপ্রিম কোর্ট রেজিস্ট্রিার কার্যালয়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বুধবার রাষ্ট্রপতি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ৯৫(১)-এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে সুপ্রিম কোর্ট, হাইকোর্ট বিভাগের তিন বিচারক ১) বিচারপতি মুহাম্মদ আবদুল হাফিজ ২) বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলাম ৩) বিচারপতি কাশেফা হোসেনকে আপিল বিভাগের বিচারক হিসেবে নিয়োগ প্রদান করেন।
মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ে পদ্মা নদীতে বুধবার রাতের আঁধারে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের সময় দুটি ড্রেজার জব্দ করেছে নৌ-পুলিশ।
মাওয়া নৌ ফাঁড়ির ইনচার্জ মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, রাতের আঁধারে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের খবর পেয়ে উপজেলার মেদিনীমণ্ডল ইউনিয়নের যশিলদিয়ায় বুধবার রাত দেড়টার দিকে পদ্মা নদীতে অভিযান চালানো হয়। ওই সময় নিয়ম অমান্য করে বালু উত্তোলন করায় ওই দুটি ড্রেজার জব্দ করা হয়।
তিনি আরও জানান, ড্রেজার জব্দ করার সময় কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি। জব্দকৃত ড্রেজার দুটির বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।
গাইবান্ধার পলাশবাড়ীতে সম্পত্তির লোভে মারধর করে আপন ভাতিজিকে হত্যার অভিযোগ উঠেছে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে।
উপজেলার মনোহরপুর ইউনিয়নের কুমুদপুর গ্রামে বুধবার দুপুরে এ ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নারীসহ তিনজনকে আট করেছে পলাশবাড়ী থানা পুলিশ।
প্রাণ হারানো তরুণীর নাম শারমিন আক্তার (২২), যিনি প্রয়াত শুক্কুর উদ্দিনের মেয়ে। বিয়ে বিচ্ছেদের পর শারমিন বাবার বাড়িতেই থাকতেন।
শারমিনের অভিযুক্ত চাচার নাম আবদুল খালেক।
তরুণীর পরিবার, স্থানীয় লোকজন ও পুলিশ জানায়, প্রায় এক বছর আগে পিতৃহারা শারমিনকে কৌশলে বিয়ে দেন তার চাচারা। বিয়ের পর তালাক হলে সমঝোতায় দেনমোহরের টাকা শারমিনকে না দিয়ে আত্মসাৎ করেন তার বড় চাচা আবদুল খালেক। সেই টাকা ও শারমিনের নামে থাকা জমি নিয়ে তাদের মধ্যে মনোমালিন্য চলছিল।
তারা আরও জানান, সম্পত্তি নিয়ে বুধবার বেলা ১১টার দিকে শারমিনের সঙ্গে তার চাচাদের বিরোধ বাধে। ওই সময় অভিযুক্তদের মারধরে গুরুতর আহত হন শারমিন। পরে আহত শারমিনকে অভিযুক্তরাই উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য গাইবান্ধার জেনারেল হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তাকে মৃত বলে জানান।
শারমিনের দুলাভাই রুহুল আমিন বলেন, ‘শারমিন ও শাম্মী আপন দুই বোন। আমার শ্বশুর (শারমিনের বাবা) মারা গেছেন। বাবা মারা যাওয়ার পর শারমিন আমার বাড়িতেই থাকত। পরে শারমিনের বাবলু নামের এক ফুফা ও তার জ্যাঠারা মিলে কৌশলে শারমিনকে আমার বাড়ি থেকে নিয়ে এসে বিয়ে দেন।
‘বিয়ের তিন-চার মাস পরই তালাক হয় শারমিনের। তখন থেকেই শারমিন আমার শাশুড়ির সাথে তার বাবার বাড়িতেই থাকত।’
শারমিনের মা এবং এ তরুণীর দুলাভাই রুহুল আমিনের অভিযোগ, শাম্মী ও শারমিনের নামে ৩২ শতাংশ জমি আছে। সেই জমি নেয়ার লোভে ক্ষিপ্ত হয়ে বিভিন্ন সময়ে ঝগড়া-বিবাদ, গালিগালাজসহ শারমিনকে মারধর করতেন তার চাচা আবদুল খালেক। এরই ধারাবাহিকতায় বুধবার শারমিনের কাছে জমি চেয়ে মারধর শুরু করেন তিনি। পরে আবদুল খালেকের ভাই আবদুল বারী, ভাতিজা রহমান ও ছকু নামের একজন মারধর করতে থাকেন। ওই সময় তাদের মারধরে শারমিন ঘটনাস্থলেই মারা যান।
মোবাইল ফোনে নিউজবাংলাকে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে পলাশবাড়ী থানার ওসি কেএম আজমিরুজ্জামান বলেন, ‘মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে। এ ঘটনায় নারীসহ তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে।
‘নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। মামলা হলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
ওই সময় এক প্রশ্নের জবাবে ওসি বলেন, ‘প্রাথমিক সুরতহালে নিহতের শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া গলাতে কোনো দাগ চোখে পড়েনি, তবে শ্বাসরোধের বিষয়টি ক্লিনিক্যালি পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়া নিশ্চিত বলা যাচ্ছে না।’
আরও পড়ুন:নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার উত্তর পাকুরীয়া গ্রামের এক নাবালিকা ছাত্রীকে ধর্ষণের চেষ্টা মামলায় এক মাদ্রাসা শিক্ষককে দশ বছর সশ্রম কারাদণ্ড ও পঞ্চাশ হাজার টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায়ে আরও এক মাস বিনাশ্রম কারাদণ্ড হয়েছে।
নওগাঁর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক জেলা ও দায়রা জজ মো. মেহেদী হাসান তালুকদার বুধবার এ রায় দেন। জরিমানার অর্থ ভুক্তভোগী ছাত্রীকে প্রদানের নির্দেশ দেন বিচারক।
দণ্ডাদেশ পাওয়া ওই শিক্ষকের নাম আবুল হাসান। ২৫ বছর বয়সী আবুল হাসান বদলগাছী উপজেলার উত্তর পাকুরীয়া গ্রামের বাসিন্দা ও একটি মাদ্রাসার আরবি বিষয়ের শিক্ষক।
আদালত সূত্র জানায়, ২০২১ সালের ২৯ মে সকাল ছয়টার সময় নয় বছর বয়সী ওই মেয়েটি একই গ্রামের আরবি শিক্ষক আবুল হাসানের বাড়িতে আরবি পড়তে যায়। সে সময় অন্যান্য ছাত্র-ছাত্রীরা না আসায় তাকে একা পেয়ে ভয় দেখিয়ে ধর্ষণের চেষ্টা করেন তিনি। পরবর্তীতে ভুক্তভোগীর মা বদলগাছী থানায় অভিযোগ করলে তদন্ত শেষে ঘটনার সত্যতা মেলায় আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। আদালত আট জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে বুধবার রায়ের জন্য দিন ধার্য করেন।
এদিন আসামির উপস্থিতিতে তাকে দেয়া সাজার রায় পড়ে শোনানো হয় এবং শেষে তাকে জেলা কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দেন বিচারক।
রাষ্ট্রপক্ষে বিশেষ কৌঁসুলি অ্যাডভোকেট আজিজুল হক ও আসামিপক্ষে অ্যাডভোকেট মামুনুর রশিদ মামলা পরিচালনা করেন। রায়ে রাষ্ট্রপক্ষ সন্তোষ প্রকাশ করে এবং আসামিপক্ষ উচ্চ আদালতে আপিল করার কথা জানায়।
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক জয় চৌধুরীর নেতৃত্বে গণমাধ্যমকর্মীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছেন সাংবাদিকরা।
টেলিভিশন ক্যামেরাম্যান জার্নালিস্ট এসোসিয়েশনের (টিসিএ) উদ্যোগে বুধবার দুপুরে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএফডিসি) সামনে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
মানববন্ধনে বক্তব্য দেন বিএফইউজে সভাপতি ওমর ফারুক, মহাসচিব দীপ আজাদ, ডিইউজে সভাপতি সাজ্জাদ আলম তপু ও সোহেল হায়দার চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম মুজতবা ধ্রুব, বাচসাস সভাপতি রাজু আলীম, সাধারণ সম্পাদক রিমন মাহফুজ, সাবেক সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান বাবু প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, সাংবাদিকরা নানা ক্ষেত্রে আজ নির্যাতিত। তারা পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে নানাভাবে বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন। চলচ্চিত্রে যারা অভিনয় করেন তাদেরকে আমরা মননশীল মনে করি। কিন্তু তারা যখন মাস্তানের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন, তখন তারা সমাজে কী বার্তা দেন?
নারকীয় এই হামলায় নেতৃত্ব দেয়া জয় চৌধুরী, শিবা শানু ও আলেকজান্ডার বোসহ হামলায় জড়িত সবাইকে শিল্পী সমিতির সদস্যপদ বাতিলসহ আইনের আওতায় আনার দাবি জানান বক্তারা।
মানববন্ধনে আরও অংশ নেন বিভিন্ন গণমাধ্যমে কর্মরত বিনোদন বিটের সাংবাদিকরা।
প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার বিকেলে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নবনির্বাচিত কমিটির শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান শেষে শিবা শানু, জয় চৌধুরী ও আলেকজান্ডার বোর নেতৃত্বে সাংবাদিকদের ওপর হামলা করা হয়। এতে প্রায় ২০ জন সাংবাদিক আহত হন। হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন চারজন।
তদন্ত কমিটি
এদিকে হামলার ঘটনা তদন্তে ১১ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এতে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি ও সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে পাঁচ জন করে রাখা হয়েছে। আর উপদেষ্টা হিসেবে আছেন প্রযোজক আরশাদ আদনান।
দশজনের তদন্ত কমিটিতে সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে লিমন আহমেদ, রাহাত সাইফুল, আহমেদ তৌকির, বুলবুল আহমেদ জয় ও আবুল কালাম এবং শিল্পী সমিতির পক্ষ থেকে মিশা সওদাগর, ডি এ তায়েব, নানাশাহ, রুবেল ও রত্না রয়েছেন।
আরও পড়ুন:পঞ্চগড়ের বোদা-দেবীগঞ্জ জাতীয় মহাসড়কে ট্রাক ও ট্রলির (ট্রাক্টর) মুখোমুখি সংঘর্ষে এক পথচারী নারীসহ দুইজন নিহত হয়েছেন। এই ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও চার জন।
বুধবার সকালে বোদা উপজেলার চন্দনবাড়ি ইউনিয়নের কলাপাড়া নামক স্থানে মহাসড়কে এ দুর্ঘটনাটি ঘটে।
নিহতরা হলেন- বোদা পৌরসভার সদ্দারপাড়া গ্রামের সাফিরের স্ত্রী ৬০ বছর বয়সী নুরজাহান ও একই উপজেলার মাজগ্রাম এলাকার মানিক ইসলামের ছেলে ২৫ বছর বয়সী জাহিদ ইসলাম।
বোদা থানার ওসি মোজাম্মেল হক দুজনের নিহত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে জানানো হয়, দেবীগঞ্জ থেকে পঞ্চগড়গামী একটি দ্রুতগামী ট্রাক ও বিপরীতমুখী একটি ট্রলির সংঘর্ষ হয়। এ সময় ঘটনাস্থলের পাশে থাকা এক পথচারী নারীকে গাড়িদুটি চাপা দিলে ঘটনাস্থলেই তিনি নিহত হন। দুর্ঘটনায় ট্রলির চালক জাহিদও ঘটনাস্থলে নিহত হন। এছাড়া স্থানীয়দের সহায়তায় আহতদের দ্রুত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠানো হয়। বর্তমানে তারা সেখানেই চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
মৌলভীবাজার জেলার জুড়ীতে আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে ঘোড়া প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী আলী হোসেনের ওপর সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে। বুধবার সকালে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে নির্বাচনি প্রচারণার সময় এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় জড়িত থাকার দায়ে একজনকে আটক করেছে পুলিশ।
হামলায় আহত চেয়ারম্যান প্রার্থী আলী হোসেনকে প্রথমে জুড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে সিলেট এমএজি ওসমানী হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে আহত আলী হোসেন বলেন, ‘কাপ-পিরিচ প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী কিশোর রায় চৌধুরী মনি ও পশ্চিম জুড়ী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আনফর আলীর নির্দেশে সাইদুল, মুহিব, সোহেলদের নেতৃত্বে আমার ওপর এই হামলা হয়েছে। এ সময় আমাকে অপহরণেরও চেষ্টা করা হয়।’
ভাইরাল হওয়া অপর এক ভিডিওতে চেয়ারম্যান প্রার্থী আলী হোসেনকে জোর করে গাড়িতে তোলার চেষ্টা করার দৃশ্য দেখা যায়।
স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, চেয়ারম্যান প্রার্থী আলী হোসেনসহ আরও তিনজন ঘোড়া প্রতীক চেয়েছিলেন। প্রতীক বরাদ্দের দিন বিষয়টি নিয়ে অনেক হট্টগোল হয়। একাধিক প্রার্থী হওয়ায় লটারির মাধ্যমে আলী হোসেন ঘোড়া প্রতীক পান। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে অপর চেয়ারম্যান প্রার্থী কিশোর রায় চৌধুরী মনি ও পশ্চিম জুড়ী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আনফর আলীর নির্দেশে এই সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটে।
হামলার বিষয়ে বক্তব্য জানতে কাপ-পিরিচ প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী কিশোর রায় চৌধুরী মনির মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দিলেও সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।
জুড়ী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) হুমায়ুন কবির বলেন, হামলার এ ঘটনায় একজনকে আটক করা হয়েছে। মামলা দায়েরের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য