× হোম জাতীয় রাজধানী সারা দেশ অনুসন্ধান বিশেষ রাজনীতি আইন-অপরাধ ফলোআপ কৃষি বিজ্ঞান চাকরি-ক্যারিয়ার প্রযুক্তি উদ্যোগ আয়োজন ফোরাম অন্যান্য ঐতিহ্য বিনোদন সাহিত্য শিল্প ইভেন্ট উৎসব ধর্ম ট্রেন্ড রূপচর্চা টিপস ফুড অ্যান্ড ট্রাভেল সোশ্যাল মিডিয়া বিচিত্র সিটিজেন জার্নালিজম ব্যাংক পুঁজিবাজার বিমা বাজার অন্যান্য ট্রান্সজেন্ডার নারী পুরুষ নির্বাচন রেস অন্যান্য আফগানিস্তান ১৫ আগস্ট কী-কেন স্বপ্ন বাজেট আরব বিশ্ব পরিবেশ বিশ্লেষণ ইন্টারভিউ মুজিব শতবর্ষ ভিডিও যৌনতা-প্রজনন মানসিক স্বাস্থ্য অন্যান্য উদ্ভাবন প্রবাসী আফ্রিকা ক্রিকেট শারীরিক স্বাস্থ্য আমেরিকা দক্ষিণ এশিয়া সিনেমা নাটক মিউজিক শোবিজ অন্যান্য ক্যাম্পাস পরীক্ষা শিক্ষক গবেষণা অন্যান্য কোভিড ১৯ ইউরোপ ব্লকচেইন ভাষান্তর অন্যান্য ফুটবল অন্যান্য পডকাস্ট বাংলা কনভার্টার নামাজের সময়সূচি আমাদের সম্পর্কে যোগাযোগ প্রাইভেসি পলিসি

বাংলাদেশ
Arrested 6 including the driver of the launch that hit the Durant Biplab boat
google_news print-icon

দুরন্ত বিপ্লবের নৌকাকে ধাক্কা দেয়া লঞ্চের চালকসহ গ্রেপ্তার ৬

দুরন্ত বিপ্লব
দুরন্ত বিপ্লবের (বাঁয়ে) নৌকাকে ধাক্কা দেয়া মনিংসান-৫ লঞ্চের দুই চালকসহ ৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে ডিবি। ছবি: নিউজবাংলা
মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের লালবাগ বিভাগের উপকমিশনার মশিউর রহমান সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘দুরন্ত বিপ্লবকে হত্যা করা হয়নি, তিনি অবহেলাজনিত দুর্ঘটনায় মৃত্যুর শিকার। বুড়িগঙ্গা পার হওয়ার সময় মর্নিংসান-৫ লঞ্চের ধাক্কায় দুরন্ত বিপ্লবকে বহনকারী নৌকাটি উল্টে যায়। দুরন্ত বিপ্লব সাঁতারে দক্ষ না হওয়ায় বা সাঁতার না জানায় পানিতে তলিয়ে যান।’

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক কৃষি খামারি দুরন্ত বিপ্লব বুড়িগঙ্গা পাড়ি দেয়ার সময় তার নৌকাকে ধাক্কা দেয়া মর্নিংসান-৫ লঞ্চের দুই চালকসহ (মাস্টার) ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখা।

মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের লালবাগ বিভাগের উপকমিশনার মশিউর রহমান এ তথ্য জানিয়েছেন।

ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে রোববার আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘দুরন্ত বিপ্লবকে হত্যা করা হয়নি, তিনি অবহেলাজনিত দুর্ঘটনায় মৃত্যুর শিকার।

‘গত ৭ নভেম্বর বুড়িগঙ্গা পার হওয়ার সময় মর্নিংসান-৫ লঞ্চের ধাক্কায় দুরন্ত বিপ্লবকে বহনকারী নৌকাটি উল্টে যায়। দুরন্ত বিপ্লব সাঁতারে দক্ষ না হওয়ায় বা সাঁতার না জানায় পানিতে তলিয়ে যান।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের তদন্তে হত্যার কোনো প্রমাণ পাইনি। দুরন্ত বিপ্লবের কোনো শত্রু পাওয়া যায়নি। অবহেলাজনিত দুর্ঘটনায় তিনি মারা গেছেন।’

এ ঘটনায় মর্নিংসান-৫-এর প্রথম মাস্টার হাফেজ মো. সাইদুর রহমান, দ্বিতীয় মাস্টার আলামিন, ইঞ্জিন ড্রাইভার মো. মাসুদ রানা, দ্বিতীয় ইঞ্জিন ড্রাইভার ইমন হোসেন, সুকানি মো. সালমান ও সুপারভাইজার মো. ইব্রাহীম খলিলকে গ্রেপ্তার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ।

কৃষি খামারি দুরন্ত বিপ্লব ৭ নভেম্বর নিখোঁজ হন। এর পাঁচ দিন পর নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় বুড়িগঙ্গা নদীতে ভাসমান অবস্থায় একটি মরদেহ পায় পুলিশ। সেদিন রাতে মরদেহটি বিপ্লবের বলে নিশ্চিত করেন তার স্বজনরা। পরদিন দুপুরে ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

আরও পড়ুন: বুড়িগঙ্গায় পাওয়া মরদেহ কৃষি খামারি দুরন্ত বিপ্লবের

ডিবির সংবাদ সম্মেলনে যা জানানো হলো

মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের লালবাগ বিভাগের উপকমিশনার মশিউর রহমান সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘দুরন্ত বিপ্লব গত ৭ নভেম্বর কেরানীগঞ্জ কোনাখোলা এলাকা থেকে জিঞ্জিরা সোয়ারীঘাট হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকার উদ্দেশে রওনা দেন। পথিমধ্যে তিনি নিখোঁজ হয়ে যান।

‘ওই ঘটনায় পিবিআই ও ডিবি লালবাগ বিভাগ ছায়া তদন্ত করেছে। আমরা ভিকটিমের আত্মীয়স্বজন, বন্ধুর স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলি। সংশ্লিষ্ট এলাকার লঞ্চ, নৌকা, খেয়াঘাটের ইজাদার ও মাঝিদের সঙ্গে কথা বলি। বিভিন্ন সিসিটিভি ফুটেজ ও তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় ভিকটিমের মুভমেন্ট সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করা হয়।’

তিনি বলেন, ‘মামলার ছায়া তদন্ত চলাকালে ডিবি লালবাগ বিভাগের একাধিক টিম ঢাকা মহানগরী এবং কেরানীগঞ্জের বিভিন্ন জায়গায় ধারাবাহিক অভিযান চালিয়ে বিপ্লবের মৃত্যুর ঘটনায় জড়িত মর্নিংসান-৫ লঞ্চের ৬ জন কর্মচারীকে গ্রেপ্তার করা হয়।’

ডিসি মশিউর রহমান বলেন, ‘ছায়া তদন্ত করতে গিয়ে আমরা নানাভাবে জানার চেষ্টা করেছি দুরন্তের মৃত্যু রাজনৈতিক কারণে, নাকি শত্রুতাজনিত। তবে আমরা কোনো শত্রুর সন্ধান পাইনি। আমরা জেনেছি তিনি নির্ঝঞ্ঝাট মানুষ। তার স্ত্রী থাকেন ইস্কাটনে, তিনি কেরানীগঞ্জে কোনাখোলা এলাকায় একাকী থাকতেন।

‘নিঃসঙ্গ জীবনযাপনের কারণে তিনি সোনামাটি অ্যাগ্রোফার্ম পরিচালনা করতেন। সেখানকার বিভিন্ন পণ্য প্রতিদিন ঢাকায় পাঠাতেন।’

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, নিখোঁজের দিন দুরন্ত বিপ্লব তার কর্মচারী হেলালকে সঙ্গে নিয়ে বিকেল ৪টা ৪৪ মিনিটের দিকে কুরিয়ার সার্ভিস বয় গোলাম রাব্বানীর কাছে কিছু সবজির প্যাকেট হস্তান্তর করেন। এরপর বিকেল ৪টা ৫৫ মিনিটের দিকে নূর ফিলিং স্টেশনের কাছাকাছি রাস্তায় ঢাকা থ ১১-৫৮৭৩ নম্বরের অটোরিকশায় ওঠেন।

৩-৪ জন যাত্রী নিয়ে চলা অটো ড্রাইভার বিল্লালের ভাষ্য অনুযায়ী, সন্ধ্যা ৫টা ১৫ থেকে ২০ মিনিটের দিকে বিপ্লবকে জিঞ্জিরা ঘাটে নামিয়ে দেয়া হয়।

সিসিটিভি ফুটেজ এবং ডিজিটাল মুভমেন্ট বিশ্লেষণ করে গোয়েন্দা পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে, জিঞ্জিরা ঘাট ও কামরাঙ্গীর চরের মুসলিমবাগ এলাকার নদীর পার এলাকায় বিপ্লবের সবশেষ অবস্থান ছিল। সেখানে অবস্থানকালেও তিনি কুরিয়ার সার্ভিস বয় গোলাম রাব্বানীর সঙ্গে সবজি পাঠানো নিয়ে কথা বলেন।

মশিউর রহমান বলেন, ‘জিঞ্জিরা ঘাট থেকে সোয়ারীঘাটে চলাচলকারী খেয়া নৌকার মাঝি শামসু মিয়ার তথ্য অনুযায়ী, মাগরিব নামাজের আগে-পরে পাঁচ জন যাত্রীকে নিয়ে তার নৌকা যাত্রা করে। মাঝ নদীতে এলে মর্নিংসান-৫ লঞ্চটি তার নৌকাকে ধাক্কা দেয়।

‘এতে নৌকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে তলিয়ে যায়। যাত্রীরা পানিতে নিমজ্জিত হন। কিছুক্ষণের মধ্যে অন্য নৌকা এসে কয়েক জনকে উদ্ধার করতে পারলেও একজন ডুবে যায়। ডুবে যাওয়া এই যাত্রীই দুবন্ত বিপ্লব বলে জানা যায়।’

অবহেলাজনিত দায়-এর কারণে লঞ্চের কর্মচারীদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে জানিয়ে ডিসি মশিউর রহমান বলেন, ‘দূর থেকেই লঞ্চ থেকে নৌকার গতিবিধি দেখার কথা। নৌকা যাচ্ছিল আড়াআড়িভাবে, লঞ্চ যাচ্ছিল সোজা। লঞ্চের তো নৌকাকে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার কথা ছিল। সেই মাপ তাদের জানার কথা।

‘নৌকা লঞ্চকে ধাক্কা দিতে পারে না, লঞ্চই নৌকাকে ধাক্কা দিয়েছে। গ্রেপ্তাররা সেটা স্বীকারও করেছে। ধাক্কা দিয়ে চলে যাওয়ার পর কিছু দূরে ইঞ্জিন বন্ধ করে তারা দেখেছেন কী ঘটনা ঘটেছে। তবে ততক্ষণে নৌকা তলিয়ে গেছে। নৌকাডুবিতেই যে তার (বিপ্লব) মৃত্যু হয়েছে তা তার জুতা উদ্ধার ও মোবাইল টাওয়ারে সবশেষ অবস্থান অনুযায়ী স্পষ্ট।’

গ্রেপ্তারদের লঞ্চ চালানোর অনুমোদন ছিল কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা এখনও বিআইডব্লিওটিএর কাছে জানতে পারিনি তাদের আদৌ অনুমোদন ছিল কিনা। তবে ২১ বছরের সুকানি সালমান পূর্ণবয়স্ক হলেও অভিজ্ঞতা তার কতোটুকু ছিল সেটা খতিয়ে দেখা হবে।’

ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক প্রাথমিকভাবে বলেছিলেন, দুরন্ত বিপ্লব হত্যাকাণ্ডের শিকার। এ বিষয়ক এক প্রশ্নের জবাবে মশিউর রহমান বলেন, ‘এই ধরনের কনক্লুশন দেয়ার দায়িত্ব চিকিৎসকের নয়। ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক বলতে পারেন না একটি ঘটনা হত্যা নাকি আত্মহত্যা। একজন ব্যক্তি ছাদ থেকে লাফিয়েও আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে মারা যেতে পারেন। দুরন্ত বিপ্লব নৌডুবিতে মারা যান, তিনি হয়ত সাঁতারে পটু ছিলেন না বা জানতেন না।

‘তার মরদেহ উদ্ধার করা হয় পাঁচদিন পর। এ সময়ের মধ্যে নিখোঁজের শুরু থেকে উদ্ধার পর্যন্ত যেকোনো পর্যায়ে আঘাতপ্রাপ্ত হতে পারেন। চিকিৎসক পরীক্ষা-নিরীক্ষার কথা বলতে পারেন, কিন্তু হুট করে বলতে পারেন না হত্যা বা অবহেলাজনিত মৃত্যু নাকি আত্মহত্যা।’

দুরন্ত বিপ্লবের নৌকাকে ধাক্কা দেয়া লঞ্চের চালকসহ গ্রেপ্তার ৬
দুরন্ত বিপ্লবের নৌকাকে ধাক্কা দেয়া লঞ্চ মর্নিংসান-৫ (বাঁয়ে) এবং ডুবে যাওয়া নৌকা থেকে উদ্ধার বিপ্লবের জুতা

মরদেহ উদ্ধারের পর তৈরি হয় ধোঁয়াশা

দুরন্ত বিপ্লবের মরদেহ উদ্ধারের পর ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক নারায়ণগঞ্জ সদর জেনারেল হাসপাতালের মেডিক্যাল অফিসার মফিজ উদ্দিন প্রাথমিকভাবে জানান, বিপ্লবকে হত্যা করা হয়েছে। তার শরীরে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে।

আরও পড়ুন: জাবি ছাত্রলীগের সাবেক নেতা দুরন্ত বিপ্লবকে খুনের সন্দেহ

তবে বিপ্লব নিখোঁজের দিন সন্ধ্যায় বুড়িগঙ্গা নদীর সোয়ারীঘাট এলাকায় একটি নৌকাডুবির তথ্য জানায় দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার পুলিশ।

দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার (ওসি) শাহ জামান ১৩ নভেম্বর নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সোয়ারীঘাটের দিকে নৌকা থেকে একজনের পড়ে যাওয়ার কথা আমরা শুনেছি। জিঞ্জিরার বিপরীতে নদীতে ঘটনাটি ঘটে। ওনার (বিপ্লব) মোবাইল কললিস্ট ও নেটওয়ার্ক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, যেখানে ঘটনাটি ঘটে, সেখানেই ওনার অবস্থান ছিল।

‘বুড়িগঙ্গার এই অংশটায় নৌকা দিয়েই পারাপার হতে হয়। সোয়ারীঘাট, পানঘাট, আরও অনেকগুলো ঘাট রয়েছে ওখানে। তবে উনি নৌকা থেকে পড়েই মারা গেছেন, এমনটা আমরা এখনই বলছি না। আমরা তদন্ত করছি। তদন্ত শেষে নিশ্চিতভাবে মৃত্যুর কারণ বলা যাবে।’

আরও পড়ুন: দুরন্ত বিপ্লব নিখোঁজের দিন ‘নৌকা থেকে পড়ে যান’ একজন

বিষয়টি নিয়ে ছায়া তদন্তকারী সংস্থা পিবিআই-এর ঢাকা জেলার উপ পরিদর্শক সালেহ ইমরান শনিবার নিউজবাংলাকে জানান, দুরন্ত বিপ্লব নৌকাডুবিতেই প্রাণ হারিয়েছেন বলে তারা অনুসন্ধানে নিশ্চিত হয়েছেন।

আরও পড়ুন: দুরন্ত বিপ্লব খুন হননি, বুড়িগঙ্গায় ডুবে মৃত্যু

সালেহ ইমরান জানান, ৭ নভেম্বর বিকেল ৫টার পর কেরানীগঞ্জ থেকে বুড়িগঙ্গা পাড়ি দিয়ে সোয়ারীঘাট আসছিলেন বিপ্লব। ওই নৌকার মালিক ও মাঝি ছিলেন শামসু নামের একজন।

একই সময়ে ঢাকা-বরিশাল রুটের মর্নিংসান-৫ লঞ্চটি সোয়ারীঘাট থেকে সদরঘাটের উদ্দেশে যাত্রা করে।

উপ পরিদর্শক সালেহ ইমরান বলেন, ‘দুরন্ত বিপ্লবসহ আরও চারজনকে বহন করা শামসু মাঝির নৌকাটি নদীর দুই-তৃতীয়াংশ পাড়ি দেয়ার পর মর্নিংসান-৫ লঞ্চটির ডান পাশে ধাক্কা লাগে। এতে উল্টে যায় নৌকাটি।’

দুরন্ত বিপ্লবের নৌকাকে ধাক্কা দেয়া লঞ্চের চালকসহ গ্রেপ্তার ৬
ঘটনার দিন নিজের খামার থেকে রওনা দেয়ার পর একটি সিসিটিভি ক্যামেরায় দুরন্ত বিপ্লবের ছবি

দুর্ঘটনার পর আশপাশের নৌকা গিয়ে চার যাত্রী ও শামসু মাঝিকে উদ্ধার করে। তবে নিখোঁজ হন এক যাত্রী।

দুর্ঘটনার পর শামসু মাঝি তার গ্রামের বাড়ি ফরিদপুরে পালিয়ে গেলেও তাকে সম্প্রতি আটক করেছে পিবিআই। ষাটোর্ধ শামসু মাঝি নদীতে ডুবে যাওয়া যাত্রীর যে বিবরণ দিয়েছেন তার সঙ্গে দুরন্ত বিপ্লবের মিল রয়েছে। এছাড়া, ডুবে যাওয়া নৌকার পাটাতনের নিচ থেকে বিপ্লবের জুতা উদ্ধারের কথা জানিয়েছে পিবিআই।

পিবিআই ঢাকা জেলার উপ পরিদর্শক সালেহ ইমরান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘দুরন্ত বিপ্লবের লাশ উদ্ধারের পরই আমরা ছায়া তদন্ত শুরু করি। যে নৌকায় তিনি নদী পার হচ্ছিলেন সেই নৌকার মাঝিকে আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। তিনি জানিয়েছেন, তার নৌকার পাঁচ যাত্রীর মধ্যে চার জনকে উদ্ধার করা হলেও দুরন্ত বিপ্লবকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।

‘আমরা শামসু মাঝির নৌকা থেকে দুরন্ত বিপ্লবের একটি জুতাও উদ্ধার করেছি। জুতাটি যে দুরন্ত বিপ্লবের তা তার বোন ও খামারের ম্যানেজার নিশ্চিত করেছেন। তিনি (বিপ্লব) সাঁতারও জানতেন না। নৌকাটি উল্টে যাওয়ার পর অন্যরা সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসার আগেই তিনি তলিয়ে যান। দুরন্ত বিপ্লবকে হত্যা করা হয়নি, তিনি ডুবে মারা গেছেন।’

ছাত্রলীগের সাবেক নেতা দুরন্ত বিপ্লব কয়েক বছর ধরে কেরানীগঞ্জে ‘সোনামাটি অ্যাগ্রো’ নামে একটি কৃষি খামার পরিচালনা করছিলেন। ৭ নভেম্বর বেলা ৩টার দিকে মায়ের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন তিনি। এ সময় তিনি জানান, ঢাকার মোহাম্মদপুরের মায়ের বাসায় তিনি আসছেন।

তবে মায়ের বাসায় আসেননি দুরন্ত বিপ্লব। তার কোনো সন্ধান না পেয়ে ৯ নভেম্বর দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে পরিবার। এরপর ১২ নভেম্বর তার ভাসমান দেহ উদ্ধার করা হয়।

দুরন্ত বিপ্লবের নৌকাকে ধাক্কা দেয়া লঞ্চের চালকসহ গ্রেপ্তার ৬
খেয়াঘাটে পৌঁছাতে অটোরিকশায় চড়ার আগে দুরন্ত বিপ্লব

দুরন্ত বিপ্লবের জুতা শনাক্ত করার বিষয়ে জানতে চাইলে তার ছোট বোন শাশ্বতী বিপ্লব শনিবার সন্ধ্যায় নিউজবাংলাকে বলেন, ‘দাদা (বিপ্লব) এ ধরনের জুতাই পরতেন। আগামীকাল (রোববার) ডিবি একটি সংবাদ সম্মেলন ডেকেছে। সেখানে তারা নৌকাডুবিতে মৃত্যুর কথাই জানাবে।’

প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনায় যেভাবে দুর্ঘটনা

বুড়িগঙ্গার আলোচিত খেয়াঘাটের দুই তীরে কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শীর খোঁজ পেয়েছে নিউজবাংলা। তারা জানান, ৭ নভেম্বর সন্ধ্যা সাড়ে ৫টার দিকে জিঞ্জিরার বটতলা ঘাট থেকে পাঁচ জন যাত্রী নিয়ে সোয়ারীঘাটের উদ্দেশে ছেড়ে যায় শামসু মাঝির নৌকা। তবে সোয়ারীঘাটে পৌঁছানোর আগেই লঞ্চের ধাক্কায় নৌকাটি তলিয়ে যায়।

বটতলা ঘাটের টোল আদায়কারী সিদ্দিকুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের ঘাটে শামসু নামের একজন মাঝি আছেন। উনি জিঞ্জিরার বটতলা ঘাট থেকে সেদিন পাঁচ জন যাত্রী নিয়ে সোয়ারীঘাটের দিকে যাচ্ছিলেন। তখন একটা লঞ্চ ব্যাক দিছে, লঞ্চের নিচে পইরা নৌকা ডুইবা গেছে। এইখান (বটতলা) দিয়া মাঝিরা গিয়ে যাত্রী ও মাঝিরে উদ্ধার করছে। আমি জিগাইলাম, সব লোক উঠছে, ওরা কইলো উঠছে।’

তিনি বলেন, ‘এখন শুনি এক লোকরে পায় নাই। এক লোক ডুইবা গেছে। মাঝিরা আমারে সত্য তথ্য দেয় নাই। সত্য দিলে আমি থানায় জানায়ে দিতাম। পুলিশ খবর দিতাম, ডুবারও খবর দিতাম। ওই দিনের পরে আর শামসু ঘাটে আহে নাই।’

দুরন্ত বিপ্লবের মরদেহ উদ্ধারের পর দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা পুলিশ শরীফ নামে একজন প্রত্যক্ষদর্শীর সন্ধান পায়। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সোয়ারীঘাটে একটা লঞ্চ ঘুরাইবার সময় একটা নৌকা ডুইবা গেছে। নৌকায় পাঁচ জন যাত্রী ছিল। পাঁচ জনের ভিতর চার জন উঠছে, একজনের শুধু হাত দেখা গেছে। আর কিছুই দেখা যায় নাই। চারজন নৌকা ধইরা বইসা ছিল। আর একজন তলাইয়া গেছে।’

অনুসন্ধানে জানা যায়, সোয়ারীঘাট বিআইডাব্লিউটিএ ল্যান্ডিং স্টেশন থেকে প্রতিদিন সন্ধ্যায় দুটি লঞ্চ সদরঘাটে গিয়ে নির্ধারিত গন্তব্যের উদ্দেশে ছেড়ে যায়। ৭ নভেম্বর সন্ধ্যায় প্রথমে মর্নিংসান-৫ ও পরে পারাবাত-১৫ লঞ্চটি সদরঘাট গিয়েছিল।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে পারাবাত-১৫ এর একজন কর্মচারী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের আগে মর্নিংসান-৫ ছাইড়া গেছে। এরপর আমরা গেছি। মর্নিংসান-৫ যাওয়ার সময় একটা নৌকারে ধাক্কা দেয়। ধাক্কা লাইগা নৌকাটা উল্টায়া যায়। দুই পার থাইকাই মাঝিরা আইসা যাত্রীগো উদ্ধার করে। আমরা লঞ্চ থাইকা এই ঘটনাটা দেখছি।’

দুরন্ত বিপ্লবের নৌকাকে ধাক্কা দেয়া লঞ্চের চালকসহ গ্রেপ্তার ৬
খেয়াঘাটে নৌকায় চড়ার আগে দুরন্ত বিপ্লব

দুরন্ত বিপ্লবের খেয়া ঘাটে যাওয়ার ছবি সিসিটিভি ক্যামেরায়

তদন্তকারীদের অনুসন্ধানে জানা গেছে ঘটনার দিন বিকেল ৪টা ৪৭ মিনিটে দুরন্ত বিপ্লব নিজের খামার থেকে ঢাকার উদ্দেশে বের হন। তার খামারের পাশের একটি পেট্রল পাম্পের সিসিটিভি ক্যামেরায় এ দৃশ্য ধরা পড়েছে।

সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, দুরন্ত বিপ্লবের পরনে ছিল পাঞ্জাবি ও প্যান্ট, পায়ে ছিল চামড়ার স্যান্ডেল। হেঁটেই তিনি কোনাখোলা মোড়ের অটোরিকশা স্ট্যান্ডে আসেন।

আরেকটি সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, দুরন্ত বিপ্লব অটোরিকশা স্ট্যান্ডে পৌঁছান ৪টা ৫৫ মিনিটে। এরপর বিল্লাল নামের একজনের অটোরিকশায় চড়ে জিঞ্জিরার বটতলা ঘাটে পৌঁছান। ঘাট এলাকার একটি সিসিটিভি ফুটেজে দুরন্ত বিপ্লবকে দেখা গেছে বিকেল ৫টা ২৭ মিনিটে। এ সময় তিনি একাই ছিলেন।

পিবিআই তদন্ত কর্মকর্তা সালেহ ইমরান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘দুরন্ত বিপ্লব ওখান থেকে শামসু মাঝির নৌকায় চড়েন। এরপর লঞ্চের ধাক্কায় তার নৌকাটি ডুবে যায়। নৌকার মাঝি আমাদেরকে বলেছেন, চার যাত্রীকে উদ্ধার করা সম্ভব হলেও একজন ডুবে যান।’

দুরন্ত বিপ্লবের শরীরে আঘাতের চিহ্ন থাকার বিষয়ে পিবিআই কর্মকর্তা ইমরান বলেন, ‘নৌকা থেকে পরে যাওয়ার পর উনি পাঁচদিন নদীতে ছিলেন। শত শত লঞ্চ, স্টিমার, নৌকা, বাল্কহেড নদীতে চলাচল করে। ভাসতে ভাসতে ৮-৯ কিলোমিটার যাওয়ার পথে এগুলোর সঙ্গে ধাক্কা লাগতে পারে।’

তিনি বলেন, ‘খামার থেকে দুরন্ত বিপ্লব বের হওয়ার পর যেখানে তিনি গেছেন প্রতিটা স্পটে আমরা গিয়েছি। যে নৌকায় দুর্ঘটনা ঘটছে ওই নৌকার মাঝির স্টেটমেন্ট পেয়েছি। তার জুতা পেয়েছি। এসব থেকে স্পষ্ট তিনি হত্যার শিকার হননি। পানিতে ডুবে মারা গেছেন।’

আরও পড়ুন:
দুরন্ত বিপ্লব নিখোঁজের দিন ‘নৌকা থেকে পড়ে যান’ একজন
জাবি ছাত্রলীগের সাবেক নেতা দুরন্ত বিপ্লবকে খুনের সন্দেহ
বুড়িগঙ্গায় পাওয়া মরদেহ কৃষি খামারি দুরন্ত বিপ্লবের
বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী ঢাবি শাখার আহ্বায়ক কমিটি গঠিত
মাদক মামলার তদন্তে মিলল ২ বছর আগে নিখোঁজের দেহাবশেষ

মন্তব্য

আরও পড়ুন

বাংলাদেশ
The trial of Abu Saeeds murder began in the tribunal tearful father

আবু সাঈদ হত্যার বিচার শুরু, ট্রাইবুনালে অশ্রুসিক্ত বাবা

আবু সাঈদ হত্যার বিচার শুরু, ট্রাইবুনালে অশ্রুসিক্ত বাবা

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালীন রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ হত্যা মামলায় সূচনা বক্তব্য উপস্থাপনের মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার শুরু হলো।

বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এ আজ এই মামলায় সূচনা বক্তব্য উপস্থাপন করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।

এরপর আবু সাঈদকে গুলি করার দুটি ভিডিও ট্রাইব্যুনালে প্রদর্শন করা হয়। এ সময় ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত আবু সাঈদের বাবা মকবুল হোসেন মনিটরে ছেলেকে গুলির দৃশ্যের ভিডিও দেখে বার বার চোখ মুছছিলেন।

এরপর প্রসিকিউসনের আবেদনে আগামীকাল এই মামলায় প্রথম সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য করেন ট্রাইব্যুনাল।

গত ৩০ জুলাই প্রসিকিউসনের পক্ষে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম এই মামলায় অভিযোগ গঠনের প্রার্থনা করেন।

অন্যদিকে, আসামী পক্ষে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি চাওয়া হয়।

এরপর গত ৬ আগস্ট ট্রাইব্যুনাল এই মামলায় আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করে সূচনা বক্তব্য উপস্থাপনের জন্য ২৭ আগস্ট দিন ধার্য করেন।

এই মামলার যে ৩০ জনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ আনা হয়, তাদের মধ্যে গ্রেফতার ৬ জন আজ ট্রাইব্যুনালের কাঠগড়ায় হাজির ছিলেন।

এরা হলেন-বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রক্টর শরিফুল ইসলাম, সাবেক সহকারী রেজিস্ট্রার রাফিউল হাসান রাসেল, রেজিস্ট্রার কার্যালয়ের চুক্তিভিত্তিক সাবেক কর্মচারী মো. আনোয়ার পারভেজ, পুলিশের সাবেক সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) আমির হোসেন, সাবেক কনস্টেবল সুজন চন্দ্র রায় ও নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের নেতা ইমরান চৌধুরী ওরফে আকাশ।

আবু সাঈদ হত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গত ৩০ জুন ৩০ জনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আমলে নেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২।

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন যখন সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছিল, তখন ১৬ জুলাই দুপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে পার্ক মোড়ে গুলিবিদ্ধ হন আবু সাঈদ।

২৫ বছর বয়সী আবু সাঈদ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন।

তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোটা সংস্কার আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ছিলেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে নিরস্ত্র আবু সাঈদের পুলিশ কর্তৃক গুলিবিদ্ধ হওয়ার ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়লে, সারা দেশে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।

এই হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদেই সোচ্চার হন বহু মানুষ, যাতে আরও গতিশীল হয় কোটা সংস্কার আন্দোলন।

ওই আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট ভারতে পালিয়ে যান ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন নির্মূলে আওয়ামী লীগ সরকার, তার দলীয় ক্যাডার ও সরকারের অনুগত প্রশাসনসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংগঠিত করে বলে, একের পর এক অভিযোগ জমা পড়ে।

জাজ্জ্বল্যমান এসব অপরাধের বিচার এখন অনুষ্ঠিত হচ্ছে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে।

মন্তব্য

বাংলাদেশ
Transferred to 20 judges simultaneously

একযোগে ২৩০ বিচারককে বদলি

একযোগে ২৩০ বিচারককে বদলি

ঢাকাসহ ১৯ জেলায় ৪১ জন জেলা জজসহ একযোগে জেলা আদালতের ২৩০ বিচারককে বদলি করা হয়েছে। বদলি করা এসব বিচারকের মধ্যে রয়েছেন ৫৩ জন অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ, ৪০ জন যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ এবং ৯৬ জন সিনিয়র সহকারী জজ ও সহকারী জজ পর্যায়ের কর্মকর্তা।

গতকাল সোমবার আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগ থেকে পৃথক চারটি প্রজ্ঞাপনে তাদের বদলির আদেশ দেয়।

বদলি করা জেলা ও দায়রা জজদের আগামী ২৮ আগস্টের মধ্যে বর্তমান পদের দায়িত্বভার বুঝিয়ে দিয়ে নতুন কর্মস্থলে যোগ দিতে বলা হয়েছে।

মন্তব্য

বাংলাদেশ
The policeman accused of raping a woman policeman in the police jail

নারী পুলিশ সদস্যকে ধর্ষণের অভিযোগ অভিযুক্ত সেই পুলিশ সদস্য কারাগারে

নারী পুলিশ সদস্যকে ধর্ষণের অভিযোগ অভিযুক্ত সেই পুলিশ সদস্য কারাগারে

ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার দ্বিতীয়তলার নারী ব্যারাকে ঢুকে নারী পুলিশ সদস্যকে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠা একই থানায় কর্মরত সাফিউর রহমানকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গত ২১ আগস্ট একটি জাতীয় দৈনিকে সংবাদ প্রকাশের পর বিষয়টি আমলে নেয় বাংলাদেশ পুলিশ। পুলিশ সদর দপ্তরের পক্ষ থেকে বিশেষ তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ৫ দিন ধরে ঘুরে মামলা দায়ের করতে না পারা ভুক্তভোগীকে পুলিশ লাইন্স থেকে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় নিয়ে তাকে বাদী করে ধর্ষণ মামলা রুজু করানো হয়েছে। আর ওই মামলাতেই সাফিউরকে আটক দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। একইসঙ্গে ভুক্তভোগীর শারীরিক পরীক্ষা করানোর জন্য তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দ মোহাম্মদ আক্তার হোসেন। তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে ধর্ষণের অভিযোগের যাচাই-বাছাই শেষে অভিযুক্ত পুলিশ কনস্টেবল সাফিউরের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা দায়ের করা হয়েছে। ভুক্তভোগী নারী পুলিশ সদস্য নিজে বাদী হয়ে শুক্রবার মামলাটি দায়ের করেন। ওই মামলাতেই গত শুক্রবার রাতে সাফিউরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। শনিবার সকালে তাকে আদালতে চালান করা হয়। বিষয়টি আরও গভীরভাবে জানতে অভিযুক্ত পুলিশ কনস্টেবল সাফিউরের বিরুদ্ধে আদালতের কাছে ৫ দিনের রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছে। একইসঙ্গে ভুক্তভোগীর শারীরিক পরীক্ষার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। পুরো বিষয়টি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।

এর আগে ঢাকা জেলার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার দ্বিতীয়তলার নারী ব্যারাকে ঢুকে এক নারী পুলিশ সদস্যকে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে একই থানায় কর্মরত সাফিউর রহমান নামে আরেক পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে। শুধু তাই নয়, ওই ঘটনার ভিডিও ধারণ করে তা ছড়িয়ে দেয়ার ভয় দেখিয়ে গত ৬ মাস ধরে থানা ব্যারাকেই ওই নারী সদস্যকে ধর্ষণ করে ওই পুলিশ সদস্য। সবশেষ গত ১৫ আগস্ট রাত আড়াইটার দিকেও সাফিউর থানা ব্যারাকের ওই নারীর রুমে ঢুকে তাকে ধর্ষণ করে। এর প্রতিকার চেয়ে গত ৫ দিন ধরে ঘুরেও থানায় মামলা করতে না পেরে আত্মহত্যার চেষ্টা চালান ভুক্তভোগী নারী পুলিশ সদস্য। বিষয়টি নিয়ে সংবাদ প্রকাশের পর দেশজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়।

মন্তব্য

বাংলাদেশ
Chief Justice of the proposal to establish a separate commercial court

পৃথক বাণিজ্যিক আদালত প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব প্রধান বিচারপতির

পৃথক বাণিজ্যিক আদালত প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব প্রধান বিচারপতির

দেশের অর্থনৈতিক বাস্তবতা ও বিচার ব্যবস্থার চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে একটি পৃথক বাণিজ্যিক আদালত ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব করেছেন প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ।

গতকাল রোববার সিলেটের দ্য গ্র্যান্ড সিলেট হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টে বাণিজ্যিক আদালত শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ প্রস্তাব দেন।

বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট ও ইউএনডিপির যৌথ উদ্যোগে এ সেমিনারের আয়োজন করা হয়।

প্রধান বিচারপতি বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশে বাণিজ্যিক বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য কোনো পৃথক বিচারিক ফোরাম নেই। এখন কোটি কোটি টাকার বাণিজ্যিক বিরোধগুলো ছোটখাটো দেওয়ানি মামলার সঙ্গে একই সারিতে নিষ্পত্তি করতে হওয়ায় দ্রুত, কার্যকর বিচার প্রক্রিয়া ব্যাহত হচ্ছে। এটি আমাদের বিচারকদের প্রতি কোনো সমালোচনা নয়। তাদের নিষ্ঠা প্রশ্নাতীত। বরং এটি একটি কাঠামোগত অসংগতি। ফলে মামলার জট যেমন বাড়ছে, তেমনি ব্যবসায়িক সম্পর্ক ও বিনিয়োগ পরিবেশও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তিনি একটি পরিসংখ্যান তুলে ধরে বলেন, ২০২৫ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত শুধু অর্থঋণ আদালতে প্রায় ২৫ হাজারের বেশি মামলা অমীমাংসিত রয়ে গেছে।

পৃথক বাণিজ্যিক আদালত প্রতিষ্ঠা সংক্রান্ত সংস্কারের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটি কারও একক কোনো দাবি নয় বরং বাণিজ্যিক মামলাগুলো বিশেষায়িত আদালতে নির্দিষ্ট সময়সীমা ও কার্যকর রায়ের মাধ্যমে নিষ্পত্তি হওয়ার জন্য বৃহৎ বিনিয়োগকারী থেকে শুরু করে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা, দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারী সবাই দীর্ঘদিন যাবত বিভিন্ন সভা-সেমিনারে এই দাবি জানিয়ে আসছে।

প্রধান বিচারপতি বৈশ্বিক উদাহরণ তুলে ধরে বলেন, রুয়ান্ডা, ভারত ও পাকিস্তানের মতো দেশগুলো বাণিজ্যিক আদালত গড়ে তুলে একটি দক্ষ, স্বচ্ছ ও বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরি করেছে। তিনি বলেন, এসব দেশের অভিজ্ঞতাগুলো বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা বহন করে।

প্রধান বিচারপতি প্রস্তাবিত বাণিজ্যিক আদালত ব্যবস্থার সাতটি মূল স্তম্ভের কথা উল্লেখ করেন। সেগুলো হলো- স্পষ্ট ও একীভূত এখতিয়ার নির্ধারণ, আর্থিক সীমারেখা ও স্তরভিত্তিক কাঠামো, বাধ্যতামূলক কেস ম্যানেজমেন্ট ও কঠোর সময়সীমা, সমন্বিত মধ্যস্থতা ব্যবস্থা, প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার (যেমন, ই-ফাইলিং, ডিজিটাল ট্র্যাকিং, হাইব্রিড শুনানি), সবার জন্য ন্যায়সংগত প্রবেশাধিকার এবং জবাবদিহি ও কর্মক্ষমতা পর্যবেক্ষণ। তিনি জোর দিয়ে বলেন, বাণিজ্যিক আদালতের কার্যক্রম হবে পূর্ণাঙ্গভাবে কার্যকর, জবাবদিহিমূলক এবং বাণিজ্যের পরিবর্তনশীল চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

সেমিনারে সূচনা বক্তব্য দেন সিলেটের সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ শেখ আশফাকুর রহমান। হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি জাফর আহমেদের সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার, ইউএনডিপির আবাসিক প্রতিনিধি স্টিফান লিলার।

মন্তব্য

বাংলাদেশ
Sagar Rooney Murder Report Report is a record of 120 times

সাগর-রুনি হত্যা মামলা তদন্ত প্রতিবেদন ১২০ বার পেছানোর রেকর্ড

সাগর-রুনি হত্যা মামলা তদন্ত প্রতিবেদন ১২০ বার পেছানোর রেকর্ড

বহুল আলোচিত সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল আবার পেছানো হয়েছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মিনহাজুর রহমানের আদালত গতকাল সোমবার আগামী ১৪ সেপ্টেম্বর নতুন দিন ধার্য করেন।

এ পর্যন্ত এই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের সময়সীমা মোট ১২০ বার পিছিয়ে এসেছে।

২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি ঢাকার পশ্চিম রাজাবাজারের ভাড়া বাসায় সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি নির্মমভাবে খুন হন। ঘটনার সময় বাসায় তাদের সাড়ে চার বছরের ছেলে মাহির সরওয়ার মেঘ উপস্থিত ছিলেন। সাগর বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল মাছরাঙা এবং রুনি এটিএন বাংলায় কর্মরত ছিলেন।

এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় রুনির ভাই নওশের আলম শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা করেন। মামলার প্রধান আসামিরা হলেন — রফিকুল ইসলাম, বকুল মিয়া, মাসুম মিন্টু, কামরুল ইসলাম ওরফে অরুন, আবু সাঈদ, সাগর-রুনির বাড়ির দুই নিরাপত্তা রক্ষী পলাশ রুদ্র পাল ও এনায়েত আহমেদ এবং তাদের ‘বন্ধু’ তানভীর রহমান খান।

এদের মধ্যে তানভীর ও পলাশ জামিনে রয়েছেন, বাকিরা বর্তমানে কারাগারে আটক রয়েছেন।

তদন্ত প্রতিবেদন বারবার পিছিয়ে আসায় এ মামলার দ্রুত বিচার ও ন্যায়বিচার প্রত্যাশায় সংশ্লিষ্ট পক্ষের মাঝে উদ্বেগ বিরাজ করছে।

মন্তব্য

বাংলাদেশ
Abu Saeed Murder Hearing the charges against the accused today

আবু সাঈদ হত্যা: ৩০ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের শুনানি আজ

আবু সাঈদ হত্যা: ৩০ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের শুনানি আজ

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের প্রথম শহীদ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ হত্যা মামলায় পুলিশের সদস্যসহ ৩০ আসামির বিরুদ্ধে চার্জ গঠনের শুনানি আজ।

সোমবার (২৮ জুলাই) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২-এ এই শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে। ট্রাইব্যুনাল-২-এর চেয়ারম্যান বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বেঞ্চ আজ এই মামলার আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের বিষয়ে শুনানি করবেন বলে জানানো হয়েছে।

এর আগে, শুক্রবার (২৫ জুলাই) কড়া নিরাপত্তার মধ্যে ছয় আসামিকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।

এই ছয় আসামি হলেন— সাবেক সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) আমির হোসেন, সাবেক কনস্টেবল সুজন চন্দ্র রায়, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রক্টর শরীফুল ইসলাম, রাফিউল, আনোয়ার পারভেজ এবং নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের নেতা ইমরান চৌধুরী আশেক।

গত ১০ জুলাই পলাতক ২৬ আসামিকে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়ে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন আদালত।

এর আগে, ৩০ জুন আবু সাঈদ হত্যায় পুলিশের সদস্যসহ মোট ৩০ জনের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পান আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা।

আবু সাঈদ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন। বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী আন্দোলনের সময় ১৬ জুলাই বিকালে পুলিশের গুলিতে তিনি নিহত হন। আবু সাঈদ ছিলেন জুলাই আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত প্রথম শিক্ষার্থী।

মন্তব্য

বাংলাদেশ
Former Chief Justice ABM Khairul Haque arrested

সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক গ্রেপ্তার

সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক গ্রেপ্তার

সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ধানমণ্ডির বাসা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।

ডিবির যুগ্ম কমিশনার (উত্তর) মোহাম্মদ রবিউল হোসেন ভূঁইয়া তার গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তবে কোন মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, সে বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য দিতে পারেননি এই পুলিশ কর্মকর্তা।

তিনি জানান, তথ্য এলে পরে বিস্তারিত জানানো হবে।

দেশের ১৯তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে ২০১০ সালে খায়রুল হক শপথ নেন। পরের বছর ৬৭ বছর পূর্ণ হওয়ায় তিনি অবসর গ্রহণ করেন।

২০১৩ সালে তাকে তিন বছরের জন্য আইন কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। এই মেয়াদ শেষে কয়েক দফা একই পদে পুনর্নিয়োগ দেওয়া হয় সাবেক এই বিচারপতিকে।

গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটলে ১৩ আগস্ট তিনি আইন কমিশন থেকে পদত্যাগ করেন। এরপর তাকে আর প্রকাশ্যে দেখা যাচ্ছিল না।

মন্তব্য

p
উপরে