জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক কৃষি খামারি দুরন্ত বিপ্লব বুড়িগঙ্গা পাড়ি দেয়ার সময় তার নৌকাকে ধাক্কা দেয়া মর্নিংসান-৫ লঞ্চের দুই চালকসহ (মাস্টার) ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখা।
মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের লালবাগ বিভাগের উপকমিশনার মশিউর রহমান এ তথ্য জানিয়েছেন।
ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে রোববার আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘দুরন্ত বিপ্লবকে হত্যা করা হয়নি, তিনি অবহেলাজনিত দুর্ঘটনায় মৃত্যুর শিকার।
‘গত ৭ নভেম্বর বুড়িগঙ্গা পার হওয়ার সময় মর্নিংসান-৫ লঞ্চের ধাক্কায় দুরন্ত বিপ্লবকে বহনকারী নৌকাটি উল্টে যায়। দুরন্ত বিপ্লব সাঁতারে দক্ষ না হওয়ায় বা সাঁতার না জানায় পানিতে তলিয়ে যান।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের তদন্তে হত্যার কোনো প্রমাণ পাইনি। দুরন্ত বিপ্লবের কোনো শত্রু পাওয়া যায়নি। অবহেলাজনিত দুর্ঘটনায় তিনি মারা গেছেন।’
এ ঘটনায় মর্নিংসান-৫-এর প্রথম মাস্টার হাফেজ মো. সাইদুর রহমান, দ্বিতীয় মাস্টার আলামিন, ইঞ্জিন ড্রাইভার মো. মাসুদ রানা, দ্বিতীয় ইঞ্জিন ড্রাইভার ইমন হোসেন, সুকানি মো. সালমান ও সুপারভাইজার মো. ইব্রাহীম খলিলকে গ্রেপ্তার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ।
কৃষি খামারি দুরন্ত বিপ্লব ৭ নভেম্বর নিখোঁজ হন। এর পাঁচ দিন পর নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় বুড়িগঙ্গা নদীতে ভাসমান অবস্থায় একটি মরদেহ পায় পুলিশ। সেদিন রাতে মরদেহটি বিপ্লবের বলে নিশ্চিত করেন তার স্বজনরা। পরদিন দুপুরে ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
আরও পড়ুন: বুড়িগঙ্গায় পাওয়া মরদেহ কৃষি খামারি দুরন্ত বিপ্লবের
ডিবির সংবাদ সম্মেলনে যা জানানো হলো
মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের লালবাগ বিভাগের উপকমিশনার মশিউর রহমান সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘দুরন্ত বিপ্লব গত ৭ নভেম্বর কেরানীগঞ্জ কোনাখোলা এলাকা থেকে জিঞ্জিরা সোয়ারীঘাট হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকার উদ্দেশে রওনা দেন। পথিমধ্যে তিনি নিখোঁজ হয়ে যান।
‘ওই ঘটনায় পিবিআই ও ডিবি লালবাগ বিভাগ ছায়া তদন্ত করেছে। আমরা ভিকটিমের আত্মীয়স্বজন, বন্ধুর স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলি। সংশ্লিষ্ট এলাকার লঞ্চ, নৌকা, খেয়াঘাটের ইজাদার ও মাঝিদের সঙ্গে কথা বলি। বিভিন্ন সিসিটিভি ফুটেজ ও তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় ভিকটিমের মুভমেন্ট সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করা হয়।’
তিনি বলেন, ‘মামলার ছায়া তদন্ত চলাকালে ডিবি লালবাগ বিভাগের একাধিক টিম ঢাকা মহানগরী এবং কেরানীগঞ্জের বিভিন্ন জায়গায় ধারাবাহিক অভিযান চালিয়ে বিপ্লবের মৃত্যুর ঘটনায় জড়িত মর্নিংসান-৫ লঞ্চের ৬ জন কর্মচারীকে গ্রেপ্তার করা হয়।’
ডিসি মশিউর রহমান বলেন, ‘ছায়া তদন্ত করতে গিয়ে আমরা নানাভাবে জানার চেষ্টা করেছি দুরন্তের মৃত্যু রাজনৈতিক কারণে, নাকি শত্রুতাজনিত। তবে আমরা কোনো শত্রুর সন্ধান পাইনি। আমরা জেনেছি তিনি নির্ঝঞ্ঝাট মানুষ। তার স্ত্রী থাকেন ইস্কাটনে, তিনি কেরানীগঞ্জে কোনাখোলা এলাকায় একাকী থাকতেন।
‘নিঃসঙ্গ জীবনযাপনের কারণে তিনি সোনামাটি অ্যাগ্রোফার্ম পরিচালনা করতেন। সেখানকার বিভিন্ন পণ্য প্রতিদিন ঢাকায় পাঠাতেন।’
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, নিখোঁজের দিন দুরন্ত বিপ্লব তার কর্মচারী হেলালকে সঙ্গে নিয়ে বিকেল ৪টা ৪৪ মিনিটের দিকে কুরিয়ার সার্ভিস বয় গোলাম রাব্বানীর কাছে কিছু সবজির প্যাকেট হস্তান্তর করেন। এরপর বিকেল ৪টা ৫৫ মিনিটের দিকে নূর ফিলিং স্টেশনের কাছাকাছি রাস্তায় ঢাকা থ ১১-৫৮৭৩ নম্বরের অটোরিকশায় ওঠেন।
৩-৪ জন যাত্রী নিয়ে চলা অটো ড্রাইভার বিল্লালের ভাষ্য অনুযায়ী, সন্ধ্যা ৫টা ১৫ থেকে ২০ মিনিটের দিকে বিপ্লবকে জিঞ্জিরা ঘাটে নামিয়ে দেয়া হয়।
সিসিটিভি ফুটেজ এবং ডিজিটাল মুভমেন্ট বিশ্লেষণ করে গোয়েন্দা পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে, জিঞ্জিরা ঘাট ও কামরাঙ্গীর চরের মুসলিমবাগ এলাকার নদীর পার এলাকায় বিপ্লবের সবশেষ অবস্থান ছিল। সেখানে অবস্থানকালেও তিনি কুরিয়ার সার্ভিস বয় গোলাম রাব্বানীর সঙ্গে সবজি পাঠানো নিয়ে কথা বলেন।
মশিউর রহমান বলেন, ‘জিঞ্জিরা ঘাট থেকে সোয়ারীঘাটে চলাচলকারী খেয়া নৌকার মাঝি শামসু মিয়ার তথ্য অনুযায়ী, মাগরিব নামাজের আগে-পরে পাঁচ জন যাত্রীকে নিয়ে তার নৌকা যাত্রা করে। মাঝ নদীতে এলে মর্নিংসান-৫ লঞ্চটি তার নৌকাকে ধাক্কা দেয়।
‘এতে নৌকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে তলিয়ে যায়। যাত্রীরা পানিতে নিমজ্জিত হন। কিছুক্ষণের মধ্যে অন্য নৌকা এসে কয়েক জনকে উদ্ধার করতে পারলেও একজন ডুবে যায়। ডুবে যাওয়া এই যাত্রীই দুবন্ত বিপ্লব বলে জানা যায়।’
অবহেলাজনিত দায়-এর কারণে লঞ্চের কর্মচারীদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে জানিয়ে ডিসি মশিউর রহমান বলেন, ‘দূর থেকেই লঞ্চ থেকে নৌকার গতিবিধি দেখার কথা। নৌকা যাচ্ছিল আড়াআড়িভাবে, লঞ্চ যাচ্ছিল সোজা। লঞ্চের তো নৌকাকে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার কথা ছিল। সেই মাপ তাদের জানার কথা।
‘নৌকা লঞ্চকে ধাক্কা দিতে পারে না, লঞ্চই নৌকাকে ধাক্কা দিয়েছে। গ্রেপ্তাররা সেটা স্বীকারও করেছে। ধাক্কা দিয়ে চলে যাওয়ার পর কিছু দূরে ইঞ্জিন বন্ধ করে তারা দেখেছেন কী ঘটনা ঘটেছে। তবে ততক্ষণে নৌকা তলিয়ে গেছে। নৌকাডুবিতেই যে তার (বিপ্লব) মৃত্যু হয়েছে তা তার জুতা উদ্ধার ও মোবাইল টাওয়ারে সবশেষ অবস্থান অনুযায়ী স্পষ্ট।’
গ্রেপ্তারদের লঞ্চ চালানোর অনুমোদন ছিল কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা এখনও বিআইডব্লিওটিএর কাছে জানতে পারিনি তাদের আদৌ অনুমোদন ছিল কিনা। তবে ২১ বছরের সুকানি সালমান পূর্ণবয়স্ক হলেও অভিজ্ঞতা তার কতোটুকু ছিল সেটা খতিয়ে দেখা হবে।’
ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক প্রাথমিকভাবে বলেছিলেন, দুরন্ত বিপ্লব হত্যাকাণ্ডের শিকার। এ বিষয়ক এক প্রশ্নের জবাবে মশিউর রহমান বলেন, ‘এই ধরনের কনক্লুশন দেয়ার দায়িত্ব চিকিৎসকের নয়। ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক বলতে পারেন না একটি ঘটনা হত্যা নাকি আত্মহত্যা। একজন ব্যক্তি ছাদ থেকে লাফিয়েও আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে মারা যেতে পারেন। দুরন্ত বিপ্লব নৌডুবিতে মারা যান, তিনি হয়ত সাঁতারে পটু ছিলেন না বা জানতেন না।
‘তার মরদেহ উদ্ধার করা হয় পাঁচদিন পর। এ সময়ের মধ্যে নিখোঁজের শুরু থেকে উদ্ধার পর্যন্ত যেকোনো পর্যায়ে আঘাতপ্রাপ্ত হতে পারেন। চিকিৎসক পরীক্ষা-নিরীক্ষার কথা বলতে পারেন, কিন্তু হুট করে বলতে পারেন না হত্যা বা অবহেলাজনিত মৃত্যু নাকি আত্মহত্যা।’
মরদেহ উদ্ধারের পর তৈরি হয় ধোঁয়াশা
দুরন্ত বিপ্লবের মরদেহ উদ্ধারের পর ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক নারায়ণগঞ্জ সদর জেনারেল হাসপাতালের মেডিক্যাল অফিসার মফিজ উদ্দিন প্রাথমিকভাবে জানান, বিপ্লবকে হত্যা করা হয়েছে। তার শরীরে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে।
আরও পড়ুন: জাবি ছাত্রলীগের সাবেক নেতা দুরন্ত বিপ্লবকে খুনের সন্দেহ
তবে বিপ্লব নিখোঁজের দিন সন্ধ্যায় বুড়িগঙ্গা নদীর সোয়ারীঘাট এলাকায় একটি নৌকাডুবির তথ্য জানায় দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার পুলিশ।
দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার (ওসি) শাহ জামান ১৩ নভেম্বর নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সোয়ারীঘাটের দিকে নৌকা থেকে একজনের পড়ে যাওয়ার কথা আমরা শুনেছি। জিঞ্জিরার বিপরীতে নদীতে ঘটনাটি ঘটে। ওনার (বিপ্লব) মোবাইল কললিস্ট ও নেটওয়ার্ক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, যেখানে ঘটনাটি ঘটে, সেখানেই ওনার অবস্থান ছিল।
‘বুড়িগঙ্গার এই অংশটায় নৌকা দিয়েই পারাপার হতে হয়। সোয়ারীঘাট, পানঘাট, আরও অনেকগুলো ঘাট রয়েছে ওখানে। তবে উনি নৌকা থেকে পড়েই মারা গেছেন, এমনটা আমরা এখনই বলছি না। আমরা তদন্ত করছি। তদন্ত শেষে নিশ্চিতভাবে মৃত্যুর কারণ বলা যাবে।’
আরও পড়ুন: দুরন্ত বিপ্লব নিখোঁজের দিন ‘নৌকা থেকে পড়ে যান’ একজন
বিষয়টি নিয়ে ছায়া তদন্তকারী সংস্থা পিবিআই-এর ঢাকা জেলার উপ পরিদর্শক সালেহ ইমরান শনিবার নিউজবাংলাকে জানান, দুরন্ত বিপ্লব নৌকাডুবিতেই প্রাণ হারিয়েছেন বলে তারা অনুসন্ধানে নিশ্চিত হয়েছেন।
আরও পড়ুন: দুরন্ত বিপ্লব খুন হননি, বুড়িগঙ্গায় ডুবে মৃত্যু
সালেহ ইমরান জানান, ৭ নভেম্বর বিকেল ৫টার পর কেরানীগঞ্জ থেকে বুড়িগঙ্গা পাড়ি দিয়ে সোয়ারীঘাট আসছিলেন বিপ্লব। ওই নৌকার মালিক ও মাঝি ছিলেন শামসু নামের একজন।
একই সময়ে ঢাকা-বরিশাল রুটের মর্নিংসান-৫ লঞ্চটি সোয়ারীঘাট থেকে সদরঘাটের উদ্দেশে যাত্রা করে।
উপ পরিদর্শক সালেহ ইমরান বলেন, ‘দুরন্ত বিপ্লবসহ আরও চারজনকে বহন করা শামসু মাঝির নৌকাটি নদীর দুই-তৃতীয়াংশ পাড়ি দেয়ার পর মর্নিংসান-৫ লঞ্চটির ডান পাশে ধাক্কা লাগে। এতে উল্টে যায় নৌকাটি।’
দুর্ঘটনার পর আশপাশের নৌকা গিয়ে চার যাত্রী ও শামসু মাঝিকে উদ্ধার করে। তবে নিখোঁজ হন এক যাত্রী।
দুর্ঘটনার পর শামসু মাঝি তার গ্রামের বাড়ি ফরিদপুরে পালিয়ে গেলেও তাকে সম্প্রতি আটক করেছে পিবিআই। ষাটোর্ধ শামসু মাঝি নদীতে ডুবে যাওয়া যাত্রীর যে বিবরণ দিয়েছেন তার সঙ্গে দুরন্ত বিপ্লবের মিল রয়েছে। এছাড়া, ডুবে যাওয়া নৌকার পাটাতনের নিচ থেকে বিপ্লবের জুতা উদ্ধারের কথা জানিয়েছে পিবিআই।
পিবিআই ঢাকা জেলার উপ পরিদর্শক সালেহ ইমরান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘দুরন্ত বিপ্লবের লাশ উদ্ধারের পরই আমরা ছায়া তদন্ত শুরু করি। যে নৌকায় তিনি নদী পার হচ্ছিলেন সেই নৌকার মাঝিকে আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। তিনি জানিয়েছেন, তার নৌকার পাঁচ যাত্রীর মধ্যে চার জনকে উদ্ধার করা হলেও দুরন্ত বিপ্লবকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।
‘আমরা শামসু মাঝির নৌকা থেকে দুরন্ত বিপ্লবের একটি জুতাও উদ্ধার করেছি। জুতাটি যে দুরন্ত বিপ্লবের তা তার বোন ও খামারের ম্যানেজার নিশ্চিত করেছেন। তিনি (বিপ্লব) সাঁতারও জানতেন না। নৌকাটি উল্টে যাওয়ার পর অন্যরা সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসার আগেই তিনি তলিয়ে যান। দুরন্ত বিপ্লবকে হত্যা করা হয়নি, তিনি ডুবে মারা গেছেন।’
ছাত্রলীগের সাবেক নেতা দুরন্ত বিপ্লব কয়েক বছর ধরে কেরানীগঞ্জে ‘সোনামাটি অ্যাগ্রো’ নামে একটি কৃষি খামার পরিচালনা করছিলেন। ৭ নভেম্বর বেলা ৩টার দিকে মায়ের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন তিনি। এ সময় তিনি জানান, ঢাকার মোহাম্মদপুরের মায়ের বাসায় তিনি আসছেন।
তবে মায়ের বাসায় আসেননি দুরন্ত বিপ্লব। তার কোনো সন্ধান না পেয়ে ৯ নভেম্বর দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে পরিবার। এরপর ১২ নভেম্বর তার ভাসমান দেহ উদ্ধার করা হয়।
দুরন্ত বিপ্লবের জুতা শনাক্ত করার বিষয়ে জানতে চাইলে তার ছোট বোন শাশ্বতী বিপ্লব শনিবার সন্ধ্যায় নিউজবাংলাকে বলেন, ‘দাদা (বিপ্লব) এ ধরনের জুতাই পরতেন। আগামীকাল (রোববার) ডিবি একটি সংবাদ সম্মেলন ডেকেছে। সেখানে তারা নৌকাডুবিতে মৃত্যুর কথাই জানাবে।’
প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনায় যেভাবে দুর্ঘটনা
বুড়িগঙ্গার আলোচিত খেয়াঘাটের দুই তীরে কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শীর খোঁজ পেয়েছে নিউজবাংলা। তারা জানান, ৭ নভেম্বর সন্ধ্যা সাড়ে ৫টার দিকে জিঞ্জিরার বটতলা ঘাট থেকে পাঁচ জন যাত্রী নিয়ে সোয়ারীঘাটের উদ্দেশে ছেড়ে যায় শামসু মাঝির নৌকা। তবে সোয়ারীঘাটে পৌঁছানোর আগেই লঞ্চের ধাক্কায় নৌকাটি তলিয়ে যায়।
বটতলা ঘাটের টোল আদায়কারী সিদ্দিকুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের ঘাটে শামসু নামের একজন মাঝি আছেন। উনি জিঞ্জিরার বটতলা ঘাট থেকে সেদিন পাঁচ জন যাত্রী নিয়ে সোয়ারীঘাটের দিকে যাচ্ছিলেন। তখন একটা লঞ্চ ব্যাক দিছে, লঞ্চের নিচে পইরা নৌকা ডুইবা গেছে। এইখান (বটতলা) দিয়া মাঝিরা গিয়ে যাত্রী ও মাঝিরে উদ্ধার করছে। আমি জিগাইলাম, সব লোক উঠছে, ওরা কইলো উঠছে।’
তিনি বলেন, ‘এখন শুনি এক লোকরে পায় নাই। এক লোক ডুইবা গেছে। মাঝিরা আমারে সত্য তথ্য দেয় নাই। সত্য দিলে আমি থানায় জানায়ে দিতাম। পুলিশ খবর দিতাম, ডুবারও খবর দিতাম। ওই দিনের পরে আর শামসু ঘাটে আহে নাই।’
দুরন্ত বিপ্লবের মরদেহ উদ্ধারের পর দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা পুলিশ শরীফ নামে একজন প্রত্যক্ষদর্শীর সন্ধান পায়। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সোয়ারীঘাটে একটা লঞ্চ ঘুরাইবার সময় একটা নৌকা ডুইবা গেছে। নৌকায় পাঁচ জন যাত্রী ছিল। পাঁচ জনের ভিতর চার জন উঠছে, একজনের শুধু হাত দেখা গেছে। আর কিছুই দেখা যায় নাই। চারজন নৌকা ধইরা বইসা ছিল। আর একজন তলাইয়া গেছে।’
অনুসন্ধানে জানা যায়, সোয়ারীঘাট বিআইডাব্লিউটিএ ল্যান্ডিং স্টেশন থেকে প্রতিদিন সন্ধ্যায় দুটি লঞ্চ সদরঘাটে গিয়ে নির্ধারিত গন্তব্যের উদ্দেশে ছেড়ে যায়। ৭ নভেম্বর সন্ধ্যায় প্রথমে মর্নিংসান-৫ ও পরে পারাবাত-১৫ লঞ্চটি সদরঘাট গিয়েছিল।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে পারাবাত-১৫ এর একজন কর্মচারী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের আগে মর্নিংসান-৫ ছাইড়া গেছে। এরপর আমরা গেছি। মর্নিংসান-৫ যাওয়ার সময় একটা নৌকারে ধাক্কা দেয়। ধাক্কা লাইগা নৌকাটা উল্টায়া যায়। দুই পার থাইকাই মাঝিরা আইসা যাত্রীগো উদ্ধার করে। আমরা লঞ্চ থাইকা এই ঘটনাটা দেখছি।’
দুরন্ত বিপ্লবের খেয়া ঘাটে যাওয়ার ছবি সিসিটিভি ক্যামেরায়
তদন্তকারীদের অনুসন্ধানে জানা গেছে ঘটনার দিন বিকেল ৪টা ৪৭ মিনিটে দুরন্ত বিপ্লব নিজের খামার থেকে ঢাকার উদ্দেশে বের হন। তার খামারের পাশের একটি পেট্রল পাম্পের সিসিটিভি ক্যামেরায় এ দৃশ্য ধরা পড়েছে।
সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, দুরন্ত বিপ্লবের পরনে ছিল পাঞ্জাবি ও প্যান্ট, পায়ে ছিল চামড়ার স্যান্ডেল। হেঁটেই তিনি কোনাখোলা মোড়ের অটোরিকশা স্ট্যান্ডে আসেন।
আরেকটি সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, দুরন্ত বিপ্লব অটোরিকশা স্ট্যান্ডে পৌঁছান ৪টা ৫৫ মিনিটে। এরপর বিল্লাল নামের একজনের অটোরিকশায় চড়ে জিঞ্জিরার বটতলা ঘাটে পৌঁছান। ঘাট এলাকার একটি সিসিটিভি ফুটেজে দুরন্ত বিপ্লবকে দেখা গেছে বিকেল ৫টা ২৭ মিনিটে। এ সময় তিনি একাই ছিলেন।
পিবিআই তদন্ত কর্মকর্তা সালেহ ইমরান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘দুরন্ত বিপ্লব ওখান থেকে শামসু মাঝির নৌকায় চড়েন। এরপর লঞ্চের ধাক্কায় তার নৌকাটি ডুবে যায়। নৌকার মাঝি আমাদেরকে বলেছেন, চার যাত্রীকে উদ্ধার করা সম্ভব হলেও একজন ডুবে যান।’
দুরন্ত বিপ্লবের শরীরে আঘাতের চিহ্ন থাকার বিষয়ে পিবিআই কর্মকর্তা ইমরান বলেন, ‘নৌকা থেকে পরে যাওয়ার পর উনি পাঁচদিন নদীতে ছিলেন। শত শত লঞ্চ, স্টিমার, নৌকা, বাল্কহেড নদীতে চলাচল করে। ভাসতে ভাসতে ৮-৯ কিলোমিটার যাওয়ার পথে এগুলোর সঙ্গে ধাক্কা লাগতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘খামার থেকে দুরন্ত বিপ্লব বের হওয়ার পর যেখানে তিনি গেছেন প্রতিটা স্পটে আমরা গিয়েছি। যে নৌকায় দুর্ঘটনা ঘটছে ওই নৌকার মাঝির স্টেটমেন্ট পেয়েছি। তার জুতা পেয়েছি। এসব থেকে স্পষ্ট তিনি হত্যার শিকার হননি। পানিতে ডুবে মারা গেছেন।’
আরও পড়ুন:প্রচ্ছায়া লিমিটেডের আট পরিচালকের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞার আদেশ দিয়েছেন ঢাকার একটি আদালত।
দেশ ত্যাগে যাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে তারা হচ্ছেন: প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক বুশরা সিদ্দিক, শেহতাজ মুন্নাসী খান, শহিদ উদ্দিন খান, শাহিন সিদ্দিক, শফিক আহমেদ শফিক, পারিজা পাইনাজ খান, নওরিন তাসমিয়া সিদ্দিক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারজানা আনজুম।
দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মো. জাকির হোসেন গালিব এই আদেশ দেন।
আবেদনে বলা হয়েছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তাঁর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, তাঁর ছোট বোন শেখ রেহানা ও তাঁর ছোট বোনের মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিকী ও অন্যান্যদের বিরুদ্ধে রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের নামে প্রায় ৫৯ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ সংক্রান্ত অভিযোগ অনুসন্ধানপূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের জন্য সাত সদস্য বিশিষ্ট অনুসন্ধান টিম গঠন করা হয়েছে।
প্রচ্ছায়া লিমিটেড নামীয় প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারহোল্ডারগণ যাতে সপরিবারে গোপনে দেশ ত্যাগ করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। তিনি দেশত্যাগ করে বিদেশে পালিয়ে গেলে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ রেকর্ডপত্র প্রাপ্তিতে ব্যাঘাত সৃষ্টি হবে। তাছাড়া সার্বিক অনুসন্ধানকাজে বিঘ্ন সৃষ্টিসহ সমূহ ক্ষতির কারণ রয়েছে। এজন্য অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে তাদের বিদেশ যাত্রা রোধে আদালতের আদেশ দেয়া একান্ত প্রয়োজন। আদালত আবেদন মঞ্জুর করে আদেশ দেন।
দুর্নীতির অভিযোগ থাকায় বাগেরহাট-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শেখ তন্ময়, খুলনা-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শেখ সালাউদ্দিন, তার ভাই শেখ সোহেল ও শেখ জালাল উদ্দিন রুবেলের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত।
আজ বৃহস্পতিবার দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার ঢাকার মেট্রোপলিটন সিনিয়র স্পেশাল জজ জাকির হোসেন গালিব এ আদেশ দেন।
দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা আকতারুল ইসলাম গণমাধ্যমকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এদিন দুদকের পক্ষে সংস্থাটির উপ-পরিচালক মো. মোস্তাফিজুর রহমান তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আবেদন করেন।
আবেদনে বলা হয়, বিগত সরকারের সাবেক মন্ত্রী ও বিভিন্ন নির্বাচনী এলাকার সংসদ সদস্যদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে অকল্পনীয় অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধানাধীন রয়েছে। অভিযোগ সংশ্লিষ্ট এই ব্যক্তিরা তাদের নামে অবৈধভাবে অর্জিত সম্পত্তি হস্তান্তর করে বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন মর্মে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়।
তারা বিদেশে পালিয়ে গেলে তদন্ত কার্যক্রম দীর্ঘায়িত বা ব্যাহত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অভিযোগটি সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া একান্ত প্রয়োজন।
শুনানি শেষে আদালত তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞার আদেশ দেন।
সাবেক ডিবি প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদের নামে রাজধানীর উত্তরায় থাকা একটি ফ্ল্যাট ও মোট ১৮ কাঠার তিনটি প্লট জব্দের আদেশ দিয়েছেন আদালত।
বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ জাকির হোসেন গালিব দুদকের আবেদন মঞ্জুর করে এ আদেশ দেন।
দুদকের আবেদন সূত্রে জানা যায়, হারুনের নামে থাকা পৃথক তিনটি প্লট রাজধানীর উত্তরায় অবস্থিত। এছাড়াও জব্দের আদেশ দেয়া ১৫৭০ বর্গফুটের ফ্ল্যাটটিও উত্তরার ১০ নম্বর সেক্টরে অবস্থিত।
এদিন হারুনের এসব সম্পদ জব্দের আবেদন করেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপপরিচালক মোহাম্মদ জয়নাল আবেদীন।
আবেদনে বলা হয়, ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতির মাধ্যমে সাবেক ডিবি প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদের বিরুদ্ধে দেশে-বিদেশে শত শত কোটি টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধানাধীন রয়েছে।
অনুসন্ধান চলাকালে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, তিনি এসব সম্পদ বিক্রয় বা হস্তান্তরের চেষ্টা করছেন। এজন্য সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে হারুনের এসব সম্পদ জব্দের আদেশ দেয়া প্রয়োজন।
এর আগে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি হারুন অর রশিদের ১০০ বিঘা জমি, পাঁচটি ভবন ও দুটি ফ্ল্যাট জব্দের আদেশ দেন আদালত। একই সঙ্গে তার নামে বিভিন্ন ব্যাংকের ১০টি হিসাবে থাকা ১ কোটি ২৬ লাখ ৯০ হাজার ৪৬৮ টাকা অবরুদ্ধের আদেশ দেয়া হয়।
পাশাপাশি এদিনই তার ভাই এবিএম শাহরিয়ারের ৩০ বিঘা জমি জব্দ, ১১টি ব্যাংক হিসাব এবং তিনটি কোম্পানির শেয়ার অবরুদ্ধের আদেশ দেন ঢাকার আদালত।
রাজধানীর বনানীতে প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম পারভেজ হত্যা মামলার এজহারনামীয় আরও দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আজ বুধবার তাদের গাইবান্ধা ও চট্টগ্রাম থেকে পৃথক অভিযানে গ্রেপ্তার করে র্যাব ও পুলিশ।
এর মধ্যে এজাহারনামীয় ১ নম্বর আসামি মো. মেহেরাজ ইসলামকে (২০) গাইবান্ধা থেকে গ্রেপ্তার করে র্যাব-১৩ এবং ৩ নম্বর আসামি মাহাথির হাসানকে (২০) চট্টগ্রাম থেকে গ্রেপ্তার করে বনানী থানা পুলিশ।
বিকেলে র্যাব সদর দপ্তর থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে মেহরাজ ইসলামকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়। এছাড়া বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রাসেল সারওয়ার মাহাথির হাসানের গ্রেপ্তারের বিষয়িটি দৈনিক বাংলাকে নিশ্চিত করেছেন।
র্যাব-১৩ এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও জ্যেষ্ঠ সহকারী পরিচালক (গণমাধ্যম) বিপ্লব কুমার গোস্বামী জানান, তথ্যপ্রযুক্তি ও গোয়েন্দা তথ্যে জনা যায়, পাভেজ হত্যা মামলার এজহারনামীয় ১ নম্বর আসামি মেহেরাজ ইসলাম গাইবান্ধায় অবস্থান করছে। পরে গতকাল বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে গাইবান্ধা সদরের ভবানীপুর গ্রামে অভিযান চলানো হয়। অভিযানে এরশাদ হোসেন নামে এক ব্যক্তির বাড়ি থেকে মেহরাজ ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এদিকে বনানী থানার ওসি মো. রাসেল সারওয়ার দৈনিক বাংলাকে বলেন, তথ্যপ্রযুক্তি ও গোয়েন্দা তথ্যে পারভেজ হত্যা মামলার ৩ নম্বর এজাহারনামীয় আসামি মাহাথির হাসানের অবস্থান শনাক্ত করা হয়। পরে গতকাল সকালে চট্টগ্রামের হালিশহর এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে বনানী থানায় আনা হয়েছে।
এর আগে গত রোববার রাতে পারভেজ হত্যা মামলায় তিন আসামিকে রাজধানীর মহাখালী ও আশপাশের এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তারা হলেন- আল কামাল শেখ ওরফে কামাল (১৯), আলভী হোসেন জুনায়েদ (১৯) এবং আল আমিন সানি (১৯)। তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৭ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।
এছাড়া গত সোমবার রাতে কুমিল্লার তিতাস উপজেলার মনাইরকান্দি গ্রাম থেকে হৃদয় মিয়াজি (২৩) নামে মামলার এজহারনামীয় আরেক আসামিকে গ্রেপ্তার করে র্যাব ১ ও র্যাব-১১ ব্যাটালিয়নের যৌথ দল। পরে গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে তাকে বনানী থানায় হস্তান্তর করা হয়। সব মিলিয়ে পারভেজ হত্যা মামলায় ৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত শনিবার (১৯ এপ্রিল) বিকেল প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে একটি দোকানে ইউনিভার্সিটি অব স্কলার্সের দুই ছাত্রী সিঙ্গারা খাচ্ছিলেন। একই সময় পারভেজ তার বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলার সময় হাসছিলেন। ইউনিভার্সিটি অব স্কলার্সের দুই ছাত্রীর অভিযোগ পারভেজ তাদের দেখে হাসছিলেন। তাদের মধ্যে একজন প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী পিয়াসের বান্ধবী। পরে বান্ধবীরা মুঠোফোনে খবর দিলে পিয়াস ও তার দুই বন্ধু মেহরাজ ও মাহথির এসে পারভেজের সঙ্গে তর্ক-বিতর্কে জড়ান। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি হয়। পরে বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়।
একপর্যায়ে দুই পক্ষকে নিয়ে বসে বিষয়টি মীমাংসার করে দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কিন্তু ক্যাম্পাস থেকে বের হওয়ার পর পারভেজকে একদল যুবক ছুরিকাঘাত করে। তার বুকে ছুরিকাঘাত করা হয়। পরে গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় পরদিন রোববার তার ভাই হুমায়ুন কবির প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও বহিরাগতসহ আট জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাত পরিচয় ২৫-৩০ জনের বিরুদ্ধে বনানী থানায় মামলা করেন।
রাজধানীসহ সারাদেশে পুলিশের বিশেষ অভিযানে গত ২৪ ঘন্টায় ১ হাজার ৬১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে মামলা ও ওয়ারেন্টভুক্ত ৯০৬ জন আসামি এবং অন্যান্য ঘটনায় ৭০৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে পুলিশ সদর দপ্তরের গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি) ইনামুল হক সাগর এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, এসব অভিযানে বিভিন্ন ধরণের অবৈধ অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধার করা অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে- ১টি দেশীয় পাইপগান, ১টি একনালা বন্দুক, ১ রাউন্ড কার্তুজের খোসা ও ২ রাউন্ড অকেজো কার্তুজ উদ্ধার করা হয়।
এর আগে গত সোমবার ২৪ ঘন্টায় সারাদেশে বিশেষ অভিযানে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল ১ হাজার ৬৩১ জনকে। তার মধ্যে মামলা ও ওয়ারেন্টভুক্ত ১ হাজার ১৩ জন আসামি এবং অন্যান্য ঘটনায় ৬১৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। তার আগে গত রোববার ২৪ ঘণ্টায় বিশেষ অভিযানে ১ হাজার ৫৩৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল।
দেশের বিভিন্ন স্থানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় এ ধরণের অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও জানিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর।
সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আসামিদের আপিল শুনানি আগামীকাল।
সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে দেখা যায় মামলাটি বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমান ও বিচারপতি মো. সগীর হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের একটি ডিভিশন বেঞ্চে বিষয়টি আগামীকাল বুধবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে মূলতবি/নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত শুনানির জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এর আগে প্রধান বিচারপতি আলোচিত এই মামলাটি নিষ্পত্তির জন্য এই হাইকোর্ট বেঞ্চে পাঠান।
২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান। এই ঘটনায় করা মামলার বিচার শেষে ২০২২ সালের ৩১ জানুয়ারি কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালত দুজনকে মৃত্যুদণ্ড, ছয়জনকে যাবজ্জীবন ও সাতজনকে খালাস দিয়ে রায় দিয়েছিলেন। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের তৎকালীন পরিদর্শক বরখাস্ত লিয়াকত আলী ও টেকনাফ থানার বরখাস্তকৃত ওসি প্রদীপ কুমার দাশ।
যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের বরখাস্ত উপ-পরিদর্শক (এসআই) নন্দ দুলাল রক্ষিত, সাগর দেব, রুবেল শর্মা, টেকনাফ থানায় পুলিশের করা মামলার সাক্ষী টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুরের মারিশবুনিয়া গ্রামের নুরুল আমিন, মো. নেজামুদ্দিন ও আয়াজ উদ্দিন।
বিচারিক আদালতের রায়ের পরে নিয়ম অনুসারে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের দণ্ডাদেশ অনুমোদনের জন্য ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে আসে। অন্যদিকে, দণ্ডিত আসামিরা আপিল ও জেল আপিল করেন।
সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলায় পুলিশের গোয়েন্দা শাখা ডিবিতে থাকা নথি আগুনে পড়ে গেছে বলে দাবি করা হয়েছে, সঠিক নয়।
মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগে নতুন উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান এমন তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় প্রচারিত সাগর-রুনি হত্যা মামলার নথিপত্র ডিবি হেফাজতে পুড়ে যাবার তথ্যটি সঠিক নয়।’
‘সাগর-রুনি হত্যা মামলার তদন্তের সময় আরও ছয় মাস বাড়ানো হয়েছে। এ নিয়ে কেউ কেউ ডিবির নথি পুড়ে যাওয়ার নিউজ করছেন, যা সঠিক না,’ যোগ করেন তিনি।
এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘আদালতে আগুনে এসব নথি পুড়ে যাওয়ার কথা বলা হয়নি। এডিশনাল অ্যাটর্নি জেনারেল আরশাদ রউফ বলেছেন, ডিবির অধিকাংশ অফিসার বদলি হওয়ায় পুরনো নথি খুঁজে পাওয়া সময়সাপেক্ষ।’
‘এ জন্য রাষ্ট্রপক্ষ নয় মাস সময় চাইলে বাদীপক্ষ তিন মাস সময়ের কথা বলেন। পরবর্তীতে আদালত ছয়মাস সময় দেন,’ যোগ করেন তিনি।
এরআগে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশ করা হয়েছে, সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলার ডিবিতে থাকা নথি আগুনে পুড়ে গেছে বলে হাইকোর্টকে জানিয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ।
অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আরসাদুর রউফ বলেন, ‘আমি এমন কোনো কথা কখনোই বলিনি। সাগর-রুনি হত্যা মামলার নথি পোড়েনি। আমি বলেছি, এটা পুরনো মামলা।’
মন্তব্য