× হোম জাতীয় রাজধানী সারা দেশ অনুসন্ধান বিশেষ রাজনীতি আইন-অপরাধ ফলোআপ কৃষি বিজ্ঞান চাকরি-ক্যারিয়ার প্রযুক্তি উদ্যোগ আয়োজন ফোরাম অন্যান্য ঐতিহ্য বিনোদন সাহিত্য ইভেন্ট শিল্প উৎসব ধর্ম ট্রেন্ড রূপচর্চা টিপস ফুড অ্যান্ড ট্রাভেল সোশ্যাল মিডিয়া বিচিত্র সিটিজেন জার্নালিজম ব্যাংক পুঁজিবাজার বিমা বাজার অন্যান্য ট্রান্সজেন্ডার নারী পুরুষ নির্বাচন রেস অন্যান্য স্বপ্ন বাজেট আরব বিশ্ব পরিবেশ কী-কেন ১৫ আগস্ট আফগানিস্তান বিশ্লেষণ ইন্টারভিউ মুজিব শতবর্ষ ভিডিও ক্রিকেট প্রবাসী দক্ষিণ এশিয়া আমেরিকা ইউরোপ সিনেমা নাটক মিউজিক শোবিজ অন্যান্য ক্যাম্পাস পরীক্ষা শিক্ষক গবেষণা অন্যান্য কোভিড ১৯ শারীরিক স্বাস্থ্য মানসিক স্বাস্থ্য যৌনতা-প্রজনন অন্যান্য উদ্ভাবন আফ্রিকা ফুটবল ভাষান্তর অন্যান্য ব্লকচেইন অন্যান্য পডকাস্ট বাংলা কনভার্টার নামাজের সময়সূচি আমাদের সম্পর্কে যোগাযোগ প্রাইভেসি পলিসি

বাংলাদেশ
Fardins death due to blunt force injury to the head
google_news print-icon

মাথায় ভোঁতা অস্ত্রের আঘাতে ফারদিনের মৃত্যু

ফারদিন
ফারদিন নূর পরশ। ফাইল ছবি
নারায়ণগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. এ এফ এম মশিউর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ফারদিনের মাথায় ৪-৫টি এবং বুকের দুই পাশে ২-৩টি ভোঁতা দেশীয় অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের কারণেই তার মৃত্যু হয়।’

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র ফারদিন নূর পরশের মৃত্যু হয় মাথায় রক্তক্ষরণের কারণে। ভোঁতা কোনো দেশীয় অস্ত্র বা লাঠি দিয়ে তার মাথায় আঘাত করা হয় বলে মনে করছেন ময়নাতদন্তকারীরা।

নারায়ণগঞ্জ সদর জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক শেখ ফরহাদ হোসেনের উপস্থিতিতে ময়নাতদন্ত করেন ডা. মফিজ উদ্দিন। এসংক্রান্ত চূড়ান্ত প্রতিবেদন বৃহস্পতিবার জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ে জমা দেয়া হয়েছে।

বুয়েট ছাত্র ফারদিন নিখোঁজ হওয়ার তিন দিন পর ৭ নভেম্বর সন্ধ্যায় নারায়ণগঞ্জে শীতলক্ষ্যা নদী থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে নৌ পুলিশ। বর্তমানে হত্যা মামলাটির তদন্ত করছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। পাশাপাশি র‌্যাবসহ আরও কয়েকটি সংস্থা ছায়াতদন্ত করছে।

মৃতদেহের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনের একটি অনুলিপি পেয়েছে নিউজবাংলা। এতে বলা হয়, ফারদিনের মাথার সামনে, পেছনে, ডানে, বামে অর্থাৎ পুরো মাথায়ই আঘাতের কালশিটে দাগ রয়েছে। একইভাবে পাঁজরের ডান ও বাম পাশে কালশিটে দাগ রয়েছে।

মদনাতদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী ফারদিনের শরীরের কোনো হাঁড় ভাঙেনি। ফুসফুসে জমাট বাঁধা কিছুর উপস্থিতি পাওয়া গেছে।

এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. এ এফ এম মশিউর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ফারদিনের মাথায় ৪-৫টি এবং বুকের দুই পাশে ২-৩টি ভোঁতা দেশীয় অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের কারণেই তার মৃত্যু হয়।

‘তার পাকস্থলীতে খাবারের সঙ্গে অন্য কিছু ছিল কি না সেটা পুলিশ জানতে চেয়েছিল। এ জন্য আমরা কেমিক্যাল অ্যানালাইসিস ও ভিসেরা রিপোর্টের জন্য নমুনা পাঠিয়েছি।’

ফারদিন হত্যা মামলার তদন্ত কর্তৃপক্ষ ডিবি প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের বলেন, ‘ঘটনার রাত সোয়া ২টার দিকে যাত্রাবাড়ী মোড়ে ফারদিনকে দেখা গেছে। সাদা গেঞ্জি পরা অবস্থায় এক যুবক তাকে একটি লেগুনায় তুলে দেয়। ওই লেগুনায় আরও চারজন ছিল। লেগুনাটি তারাবোর দিকে নিয়ে যায়। ওই লেগুনার চালক ও সহযোগীদের নজরদারিতে রাখা হয়েছে।’

হারুন অর রশীদ বলেন, ‘ফারদিনের মৃত্যুর কারণ এখনও জানা যায়নি। কোথায় তাকে হত্যা করা হয়েছে, সে বিষয়ে এখনও নিশ্চিত তথ্য পাওয়া যায়নি।’

অন্যদিকে র‌্যাব কর্মকর্তাদের ধারণা, রূপগঞ্জের চনপাড়ায় খুন হন ফারদিন। মামলার সার্বিক তদন্তের বিষয়ে জানতে চাইলে র‌্যাবের গোয়েন্দা শাখার পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মশিউর রহমান গত রোববার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এটা একেবারেই ক্লুলেস একটা ঘটনা। অনেক প্রশ্নের উত্তরই মিলছে না। ফারদিনের মোবাইল ফোনের লাস্ট লোকেশন থেকে বডি পাওয়া গেছে বেশ দূরে। সেখানে কীভাবে গেল তা খতিয়ে দেখার পাশাপাশি সব কিছুই খুব সূক্ষ্মভাবে আমরা তদন্ত করছি।

‘আমরা খুব চেষ্টা করছি ফারদিনের লাস্ট লোকেশনে উপস্থিতি কীভাবে হলো সেটা জানার। কারণ আমরা রামপুরা থেকে ওর কেরানীগঞ্জ, যাত্রাবাড়ী, তারপর চনপাড়া যাওয়ার ফুটপ্রিন্ট পেয়েছি। এতগুলো জায়গা সে কেন ঘুরল এটা জানাটা জরুরি। আমরা কাজ করছি। আশা করি, সব প্রশ্নের উত্তর মিলবে।’

আরও পড়ুন:
তদন্তে কোথাও একটা ফাঁকি আছে: ফারদিনের বাবা
টাকার বস্তা খালি, গলার জোর কমে ডিফেন্সিভ মুডে ফখরুল: কাদের
ফারদিন হত্যায় গ্রেপ্তার বুশরার জামিন মেলেনি
দুদকের মামলায় চীনের নাগরিকসহ ৬ জনের কারাদণ্ড
বাগান থেকে যুবকের মরদেহ উদ্ধার

মন্তব্য

আরও পড়ুন

বাংলাদেশ
3 million rupees embezzled by Ansar members
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে কক্সবাজারে ঘুষ নিয়ে দায়িত্ব বণ্টন

আনসার সদস্যদের ঠকিয়ে ৩ কোটি টাকা আত্মসাৎ!

আনসার সদস্যদের ঠকিয়ে ৩ কোটি টাকা আত্মসাৎ! ঘুষ-অনিয়মের হোতা হিসেবে উঠে এসেছে কক্সবাজার জেলা আনসার ও ভিডিপি কমান্ড্যান্ট অম্লান জ্যোতির নাম। ছবি: সংগৃহীত
অভিযোগ ও অনুসন্ধানে জানা গেছে, কক্সবাজারের চারটি সংসদীয় আসনে ৮ উপজেলার মোট ৫৫৬টি ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তায় যেসব আনসার সদস্য ১২শ’ থেকে ১৫শ’ টাকা ঘুষ দিতে পেরেছেন তারাই নির্বাচনি দায়িত্ব পেয়েছেন। আবার দায়িত্ব পালন শেষে প্রত্যেককে সাড়ে ৭ হাজার টাকা করে দেয়ার কথা বলা হলেও দেয়া হয়েছে আড়াই থেকে তিন হাজার টাকা।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কক্সবাজার জেলায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত আনসার সদস্যদের দায়িত্ব দেয়ার ক্ষেত্রে ঘুষ নেয়া হয়েছে। আবার দায়িত্ব শেষে তাদেরকে নির্ধারিত ভাতার চেয়ে অনেক কম টাকা দেয়া হয়েছে। আর বিষয়টি আড়াল করতে ভাতা বিকাশের মাধ্যমে না দিয়ে হাতে হাতে দেয়া হয়েছে। এভাবে হাতিয়ে নেয়া হয়েছে প্রায় তিন কোটি টাকা।

কক্সবাজার জেলা আনসার ও ভিডিপি কমান্ড্যান্ট অম্লান জ্যোতির নেতৃত্বে এসব দুর্নীতি ও ঘুষ গ্রহণের ঘটনা ঘটেছে বলে ভুক্তভোগী আনসার সদস্যরা অভিযোগ করেন। তবে অভিযোগ করলে ভবিষ্যতে আর কোনো দায়িত্ব দেয়া হবে না- এমন হুমকির কারণে তারা নাম প্রকাশ করে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ করতে চাননি।

বিভিন্ন অভিযোগ ও অনুসন্ধানে জানা গেছে, জেলায় যেসব আনসার সদস্য ১২শ’ থেকে ১৫শ’ টাকা পর্যন্ত আগাম ঘুষ দিতে পেরেছেন তারাই নির্বাচনি দায়িত্ব পেয়েছেন। আবার দায়িত্ব পালন শেষে প্রত্যেককে সাড়ে ৭ হাজার টাকা করে দেয়ার কথা বলা হলেও দেয়া হয়েছে আড়াই থেকে তিন হাজার। কাউকে কাউকে চার হাজার টাকা দেয়া হয়েছে।

কক্সবাজার জেলার চারটি সংসদীয় আসনে ৮ উপজেলার মোট ৫৫৬টি ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তায় আনসার সদস্যদের দায়িত্ব বণ্টনে এসব অনিয়ম-দুর্নীতির ঘটনা ঘটেছে। ঘুষ না দেয়ায় অনেক দক্ষ আনসার সদস্যকেও রাখা হয়নি ডিউটি তালিকায়।

জেলা আনসার ও ভিডিপি কমান্ড্যান্ট অম্লান জ্যোতির স্বাক্ষরে দেয়া শতাধিক কেন্দ্রের ডিউটির তালিকা ও কমান্ড সার্টিফিকেট (সিসি) এই প্রতিবেদকের হাতে এসেছে। প্রতি কেন্দ্রে ১২ জন করে তালিকা তৈরি করে সিসি সম্পন্ন করা হয়। যাচাই করে দেখা যায়, সিসিতে উল্লিখিত প্রায় সব নাম, ঠিকানা ও মোবাইল বিকাশ নম্বর ভুয়া। ব্যক্তির নামের বিপরীতে বিকাশ নম্বর দেয়া হয়েছে অন্যজনের। একই ব্যক্তি বিকাশে টাকা তুলে নিয়েছেন একসঙ্গে ৪-৫ জনের।

অনুসন্ধান ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আইন-শৃঙ্খলার দায়িত্ব পালনের জন্য সরকার থেকে ভাতা হিসেবে কক্সবাজার জেলা আনসার ভিডিপিকে প্রতি কেন্দ্রের জন্য ৭৮ হাজার ৪৮০ টাকা করে ৫৫৬ কেন্দ্রের জন্য মোট ৪ কোটি ৩৬ লাখ ৩৪ হাজার ৮৮০ টাকা দেয়া হয়। টাকাটা দেয়া হয় জেলা কমান্ড্যান্ট অম্লান জ্যোতি নাগের ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে। আর উক্ত টাকা বিতরণে জেলা কমান্ড্যান্ট কোনো ধরনের সরকারি নির্দেশনা অনুসরণ করেননি।

আর এভাবে অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে এই অর্থ থেকে প্রায় তিন কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, এবার সরকারের পক্ষ থেকে স্পষ্ট নির্দেশনা ছিল দায়িত্ব পালনকারী পিসি, এপিসি ও আনসার সদস্য-সদস্যাদের ভাতার টাকা যেন যার যার ব্যক্তিগত বিকাশ, নগদ বা রকেট একাউন্টে পাঠিয়ে দেয়া হয়। কিন্তু তাদের বেশিরভাগকে টাকা দেয়া হয়েছে হাতে হাতে। দায় এড়ানোর জন্য খুব অল্পসংখ্যক আনসার সদস্যকে মোবাইল সার্ভিসের মাধ্যমে টাকা পাঠানো হয়েছে। বিকাশে টাকা প্রেরণে দায়িত্বপ্রাপ্ত বিকাশ এজেন্ট ও ৩৯ আনসার ব্যাটালিয়নের সদস্য খলিলুর রহমান কতজনের কাছে টাকা পাঠিয়েছেন তার সদুত্তর দিতে পারেননি।

এসবের পেছনে সহযোগী ছিলেন প্রতিটি উপজেলার আনসার ও ভিডিপি কর্মকর্তা, ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্বে থাকা উপজেলা প্রশিক্ষক ও ইউনিয়ন দলনেতা-নেত্রীরা। তাদের মাধ্যমে দায়িত্ব পালনে ইচ্ছুক সদস্যদের প্রতিজনের কাছ থেকে ১২শ’ থেকে ১৫শ’ টাকা করে ঘুষ আদায় করা হয়। কোথাও কোথাও পিসি এবং এপিসিরাও এই অনিয়মে অংশীদার হয়েছেন।

অভিযোগ উঠেছে, উত্তোলিত ঘুষের টাকা থেকে কেন্দ্রপ্রতি ছয় হাজার টাকা করে নির্বাচনের আগেই জেলা কমান্ড্যান্ট বরাবর পৌঁছে দেন উপজেলা আনসার ভিডিপি কর্মকর্তা ও দলনেতা-নেত্রীরা। নির্বাচনের পর পৌঁছে দেন কেন্দ্রপ্রতি আরও ছয় হাজার টাকা। দলনেতা-নেত্রীরা ঠিকাদারদের মতো কেন্দ্রগুলো ভাগবাটোয়ারা করে কিনে নেন। ফলে তাদের মর্জিমতো তৈরি করা হয় কমান্ড সার্টিফিকেট (সিসি)। যার কাছ থেকে ঘুষের টাকা পেয়েছেন তাকে রাখা হয়েছে তালিকায়।

ক্ষুব্ধ আনসার ও ভিডিপি সদস্যরা বলেন, ছয় থেকে সাত হাজার টাকা করে ভাতার প্রলোভন দেখিয়ে নাম অন্তর্ভুক্তির জন্য তাদের কাছ থেকে এক থেকে দেড় হাজার টাকা পর্যন্ত অগ্রিম নেয়া হয়েছে।

কক্সবাজার সদর উপজেলার ৮১ নম্বর কেন্দ্র ইসলামপুর ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসা কেন্দ্রের সিসি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, সিসিতে উল্লিখিত ভিডিপি পুরুষ সদস্য আব্দুল আলীমের নামের পাশে উপজেলা কোম্পানি কমান্ডার ইয়াছিন আরাফাতের বিকাশ নম্বর দেয়া আছে।

ইয়াছিন আরাফাতের মা জাহেদা বেগম ওই এলাকার সংরক্ষিত মহিলা ইউপি সদস্য এবং ভিডিপি দলনেত্রী হওয়ায় ব্যাপক অনিয়মের সুযোগ পেয়েছেন। এই সিসিতে উল্লিখিত নারী ভিডিপি সদস্যদের নির্বাচনের দিন দায়িত্ব পালন করতে দেখা যায়নি। অথচ তাদের নামে ভাতা তুলে নেয়া হয়েছে।

এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট উপজেলা আনসার অফিসার মোস্তফা গাজী ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বললেও উল্টো ইয়াছিনের পদ রক্ষায় তোড়জোড় শুরু করেন তিনি।

মহেশখালীতে হোয়ানক ইউনিয়নের বড়ছড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে (৪১ নম্বর কেন্দ্র) এপিসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন জালাল আহমেদ। তিনি জানান, সিসিতে উল্লিখিত বিকাশ নম্বরটি তার নয়। ফলে তিনি বিকাশে কোনো টাকা পাননি। দলনেতা আলমগীর তার হাতে চার হাজার টাকা বুঝিয়ে দেন।

তিনি আরও জানান, সিসিতে দলনেতা আলমগীর তার নিজের লোকের বিকাশ নাম্বার বসিয়ে দিয়ে রেখেছেন।

৩০ বছর ধরে আনসার বাহিনীতে চাকরি করা আমিনুল হক দায়িত্ব পালন করেছেন মহেশখালীর হিন্দুপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে। তিনি জানান, ঘুষের টাকা দিতে না পারায় তাকে সিসিতে নাম তালিকাভুক্ত করা হয়নি। আবার এপিসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করালেও প্রাপ্য ভাতার পূর্ণাঙ্গ অংশ দেয়া হয়নি।

এছাড়াও বিভিন্ন উপজেলা থেকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরও অনেক সদস্য জানিয়েছেন, তারা কেউ বিকাশে টাকা পাননি। হাতে হাতে টাকা দেয়া হয়েছে। তা-ও ন্যায্য টাকা বুঝে পাননি। তারা আড়াই থেকে তিন হাজার টাকার বেশি পাননি।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা আনসার ও ভিডিপি কমান্ড্যান্ট অম্লান জ্যোতি নাগ সব অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘সব টাকাই বিকাশের মাধ্যমে পেমেন্ট করা হয়েছে। সব তথ্য আমাদের সংগ্রহে রয়েছে। কেউ তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করলে আমরা তা দেখাব।’

তিনি বলেন, ‘কেউ যদি টাকা কম পেয়ে থাকে এবং তা নিয়ে অভিযোগ দেয় তাহলে আমরা ব্যবস্থা নেব। আমি দুর্নীতি বা ঘুষ গ্রহণ করেছি এমন কোনো প্রমাণ নেই। সব উপজেলায় কমিটি গঠন করে যাচাই করেও কোনো ধরনের অনিয়ম পাওয়া যায়নি।’

মন্তব্য

বাংলাদেশ
Petrol diesel price in India has been reduced by Rs

নির্বাচনের আগে পেট্রল ডিজেলের দাম কমাল ভারত

নির্বাচনের আগে পেট্রল ডিজেলের দাম কমাল ভারত ভারতের একটি পেট্রল পাম্পে গাড়িতে ভরা হচ্ছে জ্বালানি তেল। ছবি: এনডিটিভি
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে ভারতের পেট্রোলিয়াম ও প্রাকৃতিক গ্যাস মন্ত্রী হারদিপ সিং জানান, কেন্দ্রীয় সরকার পেট্রল ও ডিজেলের দাম দুই রুপি করে কমিয়েছে।

ভারতে লোকসভা নির্বাচনের কয়েক সপ্তাহ আগে বৃহস্পতিবার পেট্রল ও ডিজেলের দাম কমানোর ঘোষণা দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে ভারতের পেট্রোলিয়াম ও প্রাকৃতিক গ্যাস মন্ত্রী হারদিপ সিং জানান, কেন্দ্রীয় সরকার পেট্রল ও ডিজেলের দাম দুই রুপি করে কমিয়েছে।

এনডিটিভির প্রতিবেদনে জানানো হয়, জ্বালানি তেলের সমন্বয়কৃত এ মূল্য কার্যকর হয় শুক্রবার সকাল ছয়টা থেকে।

জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয়ের বিষয়ে মন্ত্রী হারদিপ সিং বলেন, ‘পেট্রল ও ডিজেলের দাম দুই রুপি কমিয়ে দেশের শ্রদ্ধেয় প্রধানমন্ত্রী মোদি আবার প্রমাণ করলেন, কোটি কোটি ভারতীয়র পরিবারের কল্যাণ ও সুবিধা দেখাই সবসময় তার লক্ষ্য।’

মন্ত্রী বলেন, ১৪ মার্চ ভারতে পেট্রলের লিটারপ্রতি গড় দাম ছিল ৯৪ রুপি, যেখানে ইতালিতে ১৬৮ দশমিক ০১ রুপি, ফ্রান্সে ১৬৬ দশমিক ৮৭ রুপি এবং জার্মানিতে ছিল ১৬৬ দশমিক ৮৭ রুপি।

এর আগে চলতি বছরের জানুয়ারিতে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হারদিপ সিং বলেছিলেন, অশোধিত তেলের বাজারে ব্যাপক অস্থিরতা থাকায় জ্বালানির দাম কমছে না নিকট ভবিষ্যতে।

ভারতে জ্বালানি তেলের হ্রাসকৃত মূল্যে নগরভেদে তারতম্য থাকবে। দেশটির পেট্রলিয়াম মন্ত্রণালয় জানায়, সমন্বয়কৃত মূল্য অনুযায়ী, দিল্লিতে প্রতি লিটার ডিজেলের দাম পড়বে ৮৭ দশমিক ৬২ রুপি, যা আগে ছিল ৮৯ দশমিক ৬২ রুপি।

অন্যদিকে ভারতের রাজধানী শহরে প্রতি লিটার পেট্রলের দাম পড়বে ৯৪ দশমিক ৭২ রুপি, যা আগে ছিল ৯৬ দশমিক ৭২ রুপি।

আরও পড়ুন:
মালদ্বীপ থেকে ভারতের সেনা প্রত্যাহার শুরু
বিতর্কিত নাগরিকত্ব আইন কার্যকর করল মোদি সরকার
সাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে আন্তর্জাতিক দরপত্রে ৫৫ কোম্পানিকে আমন্ত্রণ
ভারত থেকে পেঁয়াজ আসছে দুই-এক দিনের মধ্যে
সয়াবিনের লিটার ১৬৩ টাকার বেশি হলে কঠোর ব্যবস্থা: প্রতিমন্ত্রী

মন্তব্য

বাংলাদেশ
Police cars tested for fitness on highways are unfit

মহাসড়কে ফিটনেস পরীক্ষা করা পুলিশের গাড়িই ফিটনেসহীন

মহাসড়কে ফিটনেস পরীক্ষা করা পুলিশের গাড়িই ফিটনেসহীন ফিটনেসবিহীন এই গাড়িতে চড়েই মহাসড়কে চলাচল করা গাড়ির ফিটনেস পরীক্ষায় নামে ভৈরব হাইওয়ে থানা পুলিশ। ছবি: নিউজবাংলা
গাজীপুর হাইওয়ে রিজিয়নের পুলিশ সুপার মো. মোস্তাফিজুর রহমান মোবাইল ফোনে বলেন, ‘আমাদের হাইওয়ে থানাগুলোতে পুরনো গাড়ি রয়েছে। তবে সেই গাড়িগুলো পরির্বতনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্য সব হাইওয়ে থানায় আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর নতুন গাড়ি যুক্ত হবে।’

ফিটনেসবিহীন গাড়িতে চড়ে হাইওয়ে পুলিশ চেক করছে গাড়ির ফিটনেস। ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক ও ভৈরব-কিশোরগঞ্জ আঞ্চলিক সড়কসহ বিভিন্ন সড়কে ফিটনেসবিহীন যান চলাচল বন্ধে নিয়মিত টহলে যাচ্ছে ভৈরব হাইওয়ে থানা পুলিশ ফিটনেসবিহীন গাড়িতে চড়ে।

সরেজমিনে দেখা যায়, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে ভৈরবের শেষ প্রান্তে নরসিংদী জেলার মাহমুদাবাদ এলাকায় একটি লক্কড়-ঝক্কড় গাড়িতে টহল দিচ্ছেন ভৈরব হাইওয়ে থানার চার-পাঁচজন পুলিশ সদস্য।

গাড়িটির রং নষ্ট হয়ে গেছে। সামনের দুটি হেডলাইট থাকলেও ডান-বাঁমে মোড় নির্দেশক বাতি নেই। ইঞ্জিনের সামনের অংশ ভাঙা। কয়েক জায়গায় তার দিয়ে বাঁধা। কিছু অংশে ঝালাই দেয়া। সামনের দুই দরজা নড়বড়ে, লক ভাঙা। চলছেও খুব ধীরগতিতে।

মহাসড়কে ফিটনেস পরীক্ষা করা পুলিশের গাড়িই ফিটনেসহীন

পুলিশের ওই গাড়ির চালক তাজুল ইসলাম জানান, গাড়িটি অনেক পুরনো। মাঝেমধ্যেই পথে ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে যায়। তখন সবাই মিলে ধাক্কা দিয়ে চালু করতে হয়। এভাবেই প্রতিদিন মহাসড়কে টহল দিতে ঝুঁকি নিয়েই গাড়ি নিয়ে বের হতে হয় তাদের।

টহলে থাকা ভৈরব হাইওয়ে থানার এসআই আবু জাফর শামসুদ্দিন বলেন, ‘ঝুঁকি নিয়েই ফিটনেসবিহীন গাড়িতে চড়ে প্রতিদিন ডিউটিতে যেতে হয়। থানায় আরও দুটি গাড়ি আছে। তবে সে দুটিরও একই অবস্থা।’

ভৈরব হাইওয়ে থানার ওসি মো. সাজু মিঞা বলেন, ‘শুধু আমাদের থানার গাড়ির অবস্থা খারাপ তা নয়। দেশের অধিকাংশ হাইওয়ে থানার গাড়িরই বেহাল অবস্থা। ফিটনেসবিহীন গাড়িতেই চলতে হচ্ছে।

‘তবে দুটি গাড়ির বিষয়ে ঊধ্বর্তন কর্মকর্তাদের লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। আশা করছি আমাদের থানায় খুব দ্রুতই নতুন গাড়ি যুক্ত হবে।’

এ বিষয়ে গাজীপুর হাইওয়ে রিজিয়নের পুলিশ সুপার মো. মোস্তাফিজুর রহমান মোবাইল ফোনে বলেন, ‘আমাদের হাইওয়ে থানাগুলোতে পুরনো গাড়ি রয়েছে। তবে সেই গাড়িগুলো পরির্বতনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্য সব হাইওয়ে থানায় আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর নতুন গাড়ি যুক্ত হবে।’

মন্তব্য

বাংলাদেশ
Organized rape of schoolgirl OC took the side of the guilty?

স্কুলছাত্রীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ: অভিযুক্তদের পক্ষ নিয়েছেন ওসি?

স্কুলছাত্রীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ: অভিযুক্তদের পক্ষ নিয়েছেন ওসি? সংঘবদ্ধ ধর্ষণের হোতা হিসেবে অভিযুক্ত পারভেজ হোসেন (বাঁয়ে) ও বড়াইগ্রাম থানার ওসি শফিউল আজম খান। কোলাজ: নিউজবাংলা
ভুক্তভোগীর স্বজনদের অভিযোগ, মামলা না নিয়ে ওসি তাদের পাঠিয়ে দেন ইউপি চেয়ারম্যানের কাছে। শুধু তাই নয়, বিষয়টি মিমাংসা করে ফেলতে চেয়ারম্যানকে নির্দেশও দেন তিনি। পরে চেয়ারম্যান মিমাংসা করতে ব্যর্থ হলে আদালতের দারস্ত হন ভুক্তভোগীর স্বজনরা।

নাটোরের বড়াইগ্রামে দশম শ্রেণির এক স্কুলছাত্রীকে ছয়জন মিলে পালাক্রমে ধর্ষণ ও ঘটনার ভিডিও ধারণ করার ঘটনায় মাস পেরুলেও ধরা ছোঁয়ার বাইরে রয়েছে অভিযুক্তরা। ঘটনার পর থানায় মামলা করতে গেলেও তা না নেয়ার অভিযোগ উঠেছে বড়াইগ্রাম থানার ওসি শফিউল আজম খানের বিরুদ্ধে।

ভুক্তভোগীর স্বজনদের অভিযোগ, মামলা না নিয়ে ওসি তাদের পাঠিয়ে দেন ইউপি চেয়ারম্যানের কাছে। শুধু তাই নয়, বিষয়টি মিমাংসা করে ফেলতে চেয়ারম্যানকে নির্দেশও দেন তিনি।

পরে চেয়ারম্যান মিমাংসা করতে ব্যর্থ হলে আদালতের দারস্ত হন ভুক্তভোগীর স্বজনরা। আদালত বিষয়টি আমলে নিয়ে পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।

এ ঘটনায় অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি ও ওসি শফিউল আজম খানের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি করেছেন স্থানীয়রা।

স্থানীয়রা জানান, গত ২৭ জানুয়ারি বিকেলে পূর্ব পরিচয় থাকা বাগাতিপাড়ার দশম শ্রেণীর স্কুলশিক্ষার্থীকে কৌশলে ডেকে নেয় পাশ্বকর্তী বড়াইগ্রামের আটঘরিয়া গ্রামের পারভেজ হোসেন নামের এক যুবক। পথিমধ্যে নির্জন রাস্তায় পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী আগে থেকেই অপেক্ষমান পারভেজ ও তার পাঁচ বন্ধু সাগর, মোহন, প্রসনজিৎ, রতন ও কৃষ্ণ মিলে ভুক্তভোগীকে মুখ চেপে ধরে পাশের পেয়ারা বাগানে নিয়ে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। পরে ধর্ষণের ভিডিও ধারণ করে তা ছড়িয়ে দেয়াসহ ঘটনাটি জানাজানি হলে তাকে হত্যার হুমকি দিয়ে অভিযুক্তরা চলে যায়। পরবর্তীতে স্থানীয়রা মেয়েটিকে উদ্ধার করে বাড়িতে পৌঁছে দেন। গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় তাকে সদর হাসপাতালে চিকিৎসাও দেয়া হয়।

ভুক্তভোগীর স্বজনদের অভিযোগ, এ ঘটনায় বড়াইগ্রাম থানায় মামলা করতে গেলে ওসি শফিউল আজম খান মামলা না নিয়ে তাদের পাঠিয়ে দেন জোয়ারী ইউপি চেয়ারম্যান আলী আকবরের কাছে। ওসির কথামতো সেখানে কয়েক দফায় আপস-মিমাংসার চেষ্টা করা হয়। এরমধ্যে বারবার মিমাংসার আশ্বাস, ওসি ও প্রভাবশালীদের দৌরাত্ম্যে দিশেহারা হয়ে পড়ে ভুক্তভোগীর পরিবার। এভাবে কেটে যায় আরও কিছুদিন।

মামলা না নিয়ে আপস-মিমাংসায় ওসির অপতৎপরতার কথা উঠে আসে ভুক্তভোগীর স্বজন ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধির কথায়। তবে নিজের প্রতি সকল অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ওসি শফিউল।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে ভুক্তভোগীর বাবা বলেন, ‘থানায় গিয়ে আমার মেয়ের ওপর নির্মম নির্যাতনের কথা বলতেই ওসি বলেন- এটা কোনো বিষয়ই না। মামলা নেয়া যাবে না। আপনারা চলে যান।

‘ওসির এমন কথায় চিন্তায় পড়ে যাই। শেষে ওসির কথামতো চেয়ারম্যানের কাছে গেলাম। চেয়ারম্যানও কোনো সমাধান দিতে পারল না। শেষমেষ কোর্টে গিয়ে মামলা করি।’

ভুক্তভোগীর দুলাভাই বলেন, ‘মামলা করতে থানায় গেলে মামলা না নিয়ে বরং ধমক দিয়ে বের করে দেন ওসি।’

জোয়ারী ইউপি চেয়ারম্যান আলী আকবর বলেন, ‘ফোন করে ওসি আমাকে দুইপক্ষকে নিয়ে বসে ধর্ষণের বিষয়টি মিমাংসা করে দিতে বলেন। ওসির কথামতো বাদী-বিবাদী দুপক্ষকে নিয়ে কয়েক দফা বসেও বিষয়টি সামাধান করতে পারিনি। পরে ভুক্তভোগীর পরিবারকে আইনের আশ্রয় নিতে বলেছি।’

বড়াইগ্রাম থানার ওসি শফিউল আজম খান সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় কেউ থানায় মামলা করতে আসেনি। বারবার ভুক্তভোগীদের সঙ্গে যোগাযোগ করেও মামলা করাতে পারেনি পুলিশ।’

এ সময় চেয়ারম্যানকে দিয়ে আপস-মিমাংসার কথাও অস্বীকার করেন তিনি।

ঘটনার বিষয়ে জানতে সরেজমিনে গিয়ে অভিযুক্তদের কাউকেই পাওয়া যায়নি। গণমাধ্যমকর্মীদের উপস্থিতি টের পেয়ে গা ঢাকা দেন তাদের স্বজনরাও।

নাটোরের পুলিশ সুপার তারিকুল ইসলাম জানান, সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় মামলা না নেয়াসহ পুলিশের কারও কোনো গাফিলতি থাকলে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

গত ২২ ফেব্রুয়ারি ভুক্তভোগীর পরিবার আদালতের শরণাপন্ন হলে আদালত বিষয়টি আমলে নিয়ে পিবিআইকে তদন্ত করতে নির্দেশনা দিয়েছে।

এ ব্যাপারে পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার শরীফ উদ্দিন জানান, বুধবার আদালতের নির্দেশনার কপি হাতে পেয়েছেন। ইতোমধ্যে তদন্ত কার্যক্রমও শুরু হয়েছে।

আরও পড়ুন:
স্বামীকে জিম্মি করে অন্তঃসত্ত্বাকে ‘ধর্ষণ’: ৫ দিনেও গ্রেপ্তার নেই
খুবির ছাত্রীকে ধর্ষণের মামলায় যুবকের যাবজ্জীবন 
যৌন নিপীড়নে অভিযুক্ত জাবি শিক্ষক জনি বরখাস্ত
চোখে ঠোটে সুপার গ্লু লাগিয়ে গৃহবধূকে ‘ধর্ষণের মূল আসামি’ গ্রেপ্তার

মন্তব্য

বাংলাদেশ
The young woman who complained of rape is not the pressure of influential people or an arranged drama

ধর্ষণের অভিযোগকারী তরুণী নিরুদ্দেশ, প্রভাবশালীদের চাপ নাকি সাজানো নাটক!

ধর্ষণের অভিযোগকারী তরুণী নিরুদ্দেশ, প্রভাবশালীদের চাপ নাকি সাজানো নাটক! খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান এজাজ আহমেদ (বাঁয়ে); অভিযোগকারী তরুণী। ছবি কোলাজ: নিউজবাংলা
খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলা চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ, হাসপাতালে ভর্তি, সেখান থেকে অভিযোগকারীর লোকজনের মাধ্যমে অপহরণ এবং উদ্ধারের পর থানা থেকে বেরিয়েই নিরুদ্দেশ তরুণী। এদিকে ঘটনাক্রমের সঙ্গে অভিযোগেও মিলছে অসঙ্গতি। এ অবস্থায় প্রশ্ন উঠেছে- ওই তরুণী প্রভাবশালী মহলের চাপের মুখে আত্মগোপন করেছেন নাকি পুরো ঘটনাটাই সাজানো?

খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান এজাজ আহমেদের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ তোলা তরুণীর কোনো খোঁজ মিলছে না। প্রভাবশালীদের চাপে ওই তরুণী আত্মগোপনে রয়েছেন নাকি তার আনা অভিযোগগুলো সাজানো ছিলো তা নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। দেশ জুড়ে আলোচনার জন্ম দেয়া সংবেদনশীল এই অভিযোগ তদন্তে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও নারাজ।

ঘটনার শুরু শনিবার রাত ১১টা ১৫ মিনিটে। ওই সময়ে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ২৮ বছর বয়সী এক তরুণীকে নিয়ে আসেন তিন ব্যক্তি। তাদের মধ্যে ৬৫ বছর বয়সী গোলাম রসুল দাবি করেন, ওই তরুণী তার বোন। উপজেলা চেয়্যারম্যান এজাজ আহমেদ বিয়ের প্রলোভনে কয়েক বছর ধরে তার বোনকে ধর্ষণ করে আসছেন। এরই ধারাবাহিকতায় শনিবার রাতেও তাকে ধর্ষণ করা হয়েছে।

গোলাম রসুলের এমন বক্তব্যের বরাতে তাৎক্ষণিক এই খবর গণমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। তরুণীকে ভর্তি করা হয় হাসপাতালের ওয়ান-স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি)। তবে পরদিন রোববার সকাল থেকে আর দেখে মেলেনি ভাই পরিচয় দেয়া গোলাম রসুলের।

এই প্রতিবেদক ওই তরুণীর বাড়িতে গিয়ে আত্মীয়দের সঙ্গে কথা বলে নিশ্চিত হয়েছেন যে গোলাম রসুল নামে তাদের পরিচিত কেউ নেই। গোলাম রসুলের ছবি দেখালেও তারা কেউ চিনতে পারেননি।

মঙ্গলবার উপজেলা চেয়ারম্যানের পক্ষে ডুমুরিয়াতে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে দেখা মিলেছে গোলাম রসুলের। মানববন্ধনে দাঁড়িয়ে তিনি বলেন, ‘আমাকে ভুল বুঝিয়ে ওই তরুণীকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলা হয়েছিল। আমার নাম দিয়ে কৌশলে তাকে ভর্তি করানো হয়েছে। আমি এর জন্য ক্ষমা প্রার্থী। এর সুষ্ঠু বিচার চাই।’

ওই তরুণী যদি ধর্ষণের শিকার হন তা হলে পুলিশ বা পরিবারের সহায়তা না নিয়ে অপরিচিত এক ব্যক্তির মাধ্যমে কেন হাসপাতালে এলেন- এই প্রশ্নের কোনো উত্তরও মিলছে না। হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার মাত্র ১৪ মিনিট আগেও পরিবারের স্বজনদের সঙ্গে ওই তরুণী কথা বলেন। সে সময়ও তিনি ধর্ষণের ব্যাপারে কোনো তথ্য তাদেরকে জানাননি।

তরুণীর নানীর সঙ্গে কথা বলেছেন এই প্রতিবেদক। তিনি জানিয়েছেন, স্ত্রী মারা যাওয়ার পর এক প্রতিবেশী ওই তরুণীকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। তবে তরুণী রাজি না হওয়ায় ওই ব্যক্তি নানা সময়ে হয়রানি করেছেন। এক পর্যায়ে তরুণীর বিরুদ্ধে তিনটি ও তার মায়ের বিরুদ্ধে দুটি মামলাও করেছেন ওই ব্যক্তি। ওই মামলা নিষ্পত্তির ব্যাপারে আইনজীবীর সহায়তা নেয়ার জন্য তরুণী বিভিন্ন সময়ে উপজেলা চেয়ারম্যান এজাজ আহমেদের কাছে যেতেন।

শনিবারের ঘটনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সন্ধ্যার দিকে আমার নাতনী জানায় যে উপজেলা চেয়ারম্যানের অফিসে আইনজীবী এসেছে। মামলার বিষয়ে কথা বলতে এখনই শাহপুর বাজারে যেতে হবে। এই বলে সে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়।’

তরুণীর নানী জানান, রাত ১১টার দিকে উপজেলা চেয়ারম্যান পরিচয়ে এক ব্যক্তি প্রতিবেশী আব্দুলাহর কাছে মোবাইলে কল দিয়ে জানান যে ওই তরুণী এত রাতে একাকী বাড়ি ফিরতে পারবে না। রাতে উপজেলা চেয়ারম্যানের বাড়িতে ঘুমাবে।

তবে রাত ১২টার দিকে আরেক প্রতিবেশী এসে তাকে জানান, তার নাতনী খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। ওই খবর পেয়ে তরুণীর মা হাসপাতালের উদ্দেশে রওনা হন।

উপজেলা চেয়ারম্যান পরিচয়ে প্রতিবেশী আব্দুলাহর কাছে যে ফোন কলটি এসেছিল, তার রেকর্ড সংরক্ষিত আছে এই প্রতিবেদকের কাছে। বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ফোনের অপর প্রান্তের কণ্ঠটি উপজেলা চেয়ারম্যানের নয়। আর কলটি এসেছিল রাত ১১টা ১ মিনিটে। আর তরুণী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১১টা ১৫ মিনিটে।

যে স্থানে ধর্ষণের অভিযোগ তোলা হয়েছে, সেখান থেকে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের দূরত্ব ২০ কিলোমিটারের বেশি। এই সীমিত সময়ে ধর্ষণ ও হাসপাতালে পৌঁছানোও সম্ভব নয়।

এক ভিডিও সাক্ষাৎকারে দেখা গেছে- ওই তরুণী ধর্ষণের অভিযোগ তুলে বলছেন যে শাহপুর বাজারে উপজেলা চেয়ারম্যান তার ব্যক্তিগত কার্যালয়ে তাকে ওই রাতে ধর্ষণ করেন।

উপজেলা চেয়ারম্যানের ব্যক্তিগত কার্যালয় পরিদর্শন করেছেন এই প্রতিবেদক। শাহপুর বাজারে তিন শতাধিক দোকান রয়েছে। ওই বাজারের মাঝখানে দোতলা একটি ভবনের নিচতলায় চেয়ারম্যানের কার্যালয়। ওই কার্যালয়ের পাশে আরও প্রায় ২০টি দোকান রয়েছে। জনবহুল একটি স্থানে ধর্ষণের মতো ঘটনার পর আশপাশের দোকানদাররা জানার আগে অপরিচিত গোলাম রসুল কী করে ধর্ষণের ঘটনা জানলেন, সে প্রশ্নেরও উত্তর মিলছে না।

এছাড়া ওই তরুণীর মোবাইল কল বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, শনিবার তিনি তিনবার উপজেলা চেয়ারম্যান এজাজের সঙ্গে মোবাইলে কথা বলেছেন। দুপুর ১২টা ৩৩ মিনিটে একবার। এছাড়া রাত ৮টা ৩ মিনিট ও ৮টা ২৮ মিনিটের দিকে কথা বলেছেন।

তরুণীর বাড়ি থেকে এজাজের কার্যালয়ের দূরত্ব ১১ কিলোমিটার। তিনি প্রতিবেশী পীর আলির ভ্যানে করে বাড়ি থেকে শাহপুর বাজারে এসেছিলেন।

পীর আলি জানান, রাত সাড়ে ৮টার দিকে ওই তরুণীকে তিনি শাহপুর বাজারে পৌছে দেন। এরপর কী হয়েছে তা তিনি জানেন না।

অন্যদিকে তরুণীর শাহপুর বাজার থেকে হাসপাতালে পৌঁছাতে কমপক্ষে এক ঘণ্টা সময় লেগেছে। অর্থ্যাৎ সাড়ে ৮টার পর থেকে ১০টার মধ্যে তিনি কোথায় ছিলেন ও কাদের সঙ্গে দেখা করেছেন তার কোনো সুস্পষ্ট তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না।

অপহরণের পর বদলে গেল বক্তব্য

খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ওসিসিতে শনিবার রাতে ভর্তি হন ওই তরুণী। রোববার তাকে ছাড়পত্র দেয়া হবে- এই খবরে সেদিন দুপুর থেকেই ওসিসির সামনে দাঁড়িয়ে ছিল সাদা রঙের একটি মাইক্রোবাস। উপস্থিত ছিল উপজেলা চেয়্যারম্যানপন্থী ১০ থেকে ১২ ব্যক্তি। বিকেল ৫টায় ওই তরুণীকে ওসিসি থেকে ছাড়পত্র দিয়ে মা ও মামির কাছে হস্তান্তর করা হয়।

ওই সময়ে উপজেলা চেয়ারম্যানের চাচাতো ভাই রুদাঘরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. তৌহিদুজ্জামানের নেতৃত্বে অন্যরা টানাহেঁচড়া করে ওই তরুণীসহ তার মা ও মামিকে মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যান। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সেই ঘটনার ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। উপস্থিত ব্যক্তিরা মো. তৌহিদুজ্জামানকে ধরে পুলিশে হস্তান্তর করে।

এ ঘটনার পর মো. তৌহিদুজ্জামানকে নেয়া হয় খুলনা নগরীর সোনাডাঙ্গা থানায়। রাত পৌনে ১১টার দিকে সেই একই মাইক্রোবাসে করে তরুণীসহ তিনজনকে থানায় নিয়ে আসেন তুলে নেয়া ব্যক্তিরা স্বয়ং।

ওই সময়ে তরণীর বক্তব্য পাল্টে যায়। অপহরণ প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসা করলে প্রথমে তিনি বলেন, ‘আমাকে অপহরণ করা হয়নি। আমি আমার আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে গিয়েছিলাম।’

ডুমুরিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান গাজী এজাজ আহমেদের সঙ্গে সম্পর্ক কী জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এজাজ চেয়ারম্যানের সঙ্গে আমার ম্যালা দিনের সম্পর্ক। বিভিন্ন সময় সুবিধা-অসুবিধার জন্য তার কাছে যা‌ই।’

ধর্ষণের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি অসুস্থ, আমাকে সুযোগ দেন সুস্থ হওয়ার। তখন আপনারা জিজ্ঞাসাবাদ করেন। যদি উত্তর দিতে না পারি আমার বিরুদ্ধে লেখেন, কিছু বলব না।’

এই একই প্রশ্ন আবারও জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, ‘কোথা থেকে কী হয়েছে না হয়েছে, আমি কিছু বলতে পারি না।’

ওই রাতে থানা থেকে আবারও ওই গাড়িতে করে অতি দ্রুতগতিতে তাদেরকে ডুমুরিয়ার দিকে নিয়ে যাওয়া হয়। তারপর থেকেই নিরুদ্দেশ ওই তরুণী।

প্রভাবশালীদের চাপে ওই তরুণী আত্মগোপনে রয়েছেন নাকি ধর্ষণের অভিযোগটাই সাজানো ছিল- তা নিয়ে ধোঁয়াশা কাটছে না। যদিও ওই রাতে থানায় তিনি দাবি করেছেন, হাসপাতাল থেকে তারা যশোরের কেশবপুরে আত্মীয়ের বাড়িতে গিয়েছিলেন।

তদন্তে নারাজ পুলিশ

ডুমুরিয়া থানার ওসি সুকান্ত সাহা জানান, ধর্ষণ কিংবা অপহরণের অভিযোগে ওই তরুণী কোনো মামলা করেননি। অন্য কেউও থানায় এ সংক্রান্ত কোনো অভিযোগ দেননি। তাই তাদের কিছু করার নেই।

তবে ওসিসির দায়িত্বে থাকা খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডা. সুমন রায় বলেন, ‘রোববার ডুমুরিয়া থানার ওসি ওসিসিতে এসে ওই তরুণীর জবানবন্দি রেকর্ড করেছেন।

‘গাইনি ওয়ার্ডে তরুণীর শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে। তার যে সোয়াব (শ্লেষ্মা) সংগ্রহ করা হয়েছিল তা পরদিন ওসিসিতে মাইক্রো বায়োলজিক্যাল পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়। পরিহিত পায়জামাসহ কিছু জিনিস ডিএনএ প্রোফাইলিংয়ের জন্য সংরক্ষণ এবং বয়স নির্ধারণের জন্য এক্স-রে করা হয়। মাইক্রো বায়োলজিক্যাল রিপোর্ট পেতে এক সপ্তাহ থেকে ১০ দিন সময় লাগবে।’

মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার খুলনার সমন্বয়কারী অ্যাডভোকেট মো. মোমিনুল ইসলাম বলেন, ‘প্রশাসনের উচিত, বিষয়টিকে নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করে দেখা।’

আরও পড়ুন:
আমাকে অপহরণ করা হয়নি: খুলনার সেই তরুণী
খুমেক হাসপাতাল থেকে অপহৃত ‘ধর্ষণের শিকার’ তরুণী যশোরে উদ্ধার
উপজেলা চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ তোলা তরুণীকে হাসপাতাল থেকে ‘অপহরণ’
উপজেলা চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে কলেজছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ

মন্তব্য

বাংলাদেশ
Members social service in Souz land

সওজের জমিতে মেম্বারের ‘সমাজসেবা’

সওজের জমিতে মেম্বারের ‘সমাজসেবা’ দরিদ্র ব্যবসায়ীদের উচ্ছেদ করে অস্থায়ী দোকান ঘর তুলে দেয়া হচ্ছে বরাদ্দ। ছবি: নিউজবাংলা
সাবেক মেম্বার মিজানুর রহমান বলেন, ‘সড়ক ও জনপথের জমি দখল করে অনেকেই বিল্ডিং নির্মাণ করে ভাড়া দিয়েছে, কিন্তু আমরা সমাজসেবা করছি। মানুষ যাতে সেখানে ভালো করে ব্যবসা করতে পারে, তার জন্যই এ ব্যবস্থা।’

সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরের জমিতে প্লাস্টিকের ঘের দিয়ে কাপড়ের দোকান, ছাউনি দিয়ে জুতা পলিশ, টেবিল বসিয়ে চা বিস্কুটের দোকান করে বছরের পর বছর ধরে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন গরিব ব্যবসায়ীরা। এতে কখনও ভাড়া গুনতে হয়নি তাদের, কিন্তু হঠাৎ এ জায়গা দখলে নিয়ে টিনশেডের সারি সারি ছয়টি দোকানঘর নির্মাণ করেছে স্থানীয় প্রভাবশালী একটি মহল।

আরও ছয়টি ঘর নির্মাণ হবে বলে জানিয়েছেন এসব ব্যবসায়ী। দোকানঘরগুলো বরাদ্দ দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন তারা।

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার সালন্দর চৌধুরী হাট বাজার সংলগ্ন ঠাকুরগাঁও-পঞ্চগড় মহাসড়কের পাশে রোববার দুপুরে দেখা যায় এমন দৃশ্য। সড়ক ও জনপথের জমিতে সারি করে নতুন টিন ও কাঠ দিয়ে এসব স্থাপনা তৈরি করা হয়েছে।

জানতে চাইলে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী দেবেন বর্মন বলেন, ‘আমি যে ঘরটিতে ছিলাম, সেটি ইয়াসিন নামের এক ব্যক্তি বরাদ্দ নিয়েছেন। তিনি আমাকে এসে আমার ছাউনি নামাতে বলেন। আমি সেটা নামিয়ে নিয়েছি৷ এখন এ ঘরে ঠাঁই নিয়ে আছি।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ক্ষুদ্র কাপড় ব্যবসায়ী বলেন, ‘আমি দীর্ঘদিন ধরে এখানে প্লাস্টিকের ছাউনি দিয়ে কাপড় বিক্রি করি। হঠাৎ যারা ঘর নির্মাণ করছে, তারা এসে বলল, আমি যেন আমার ব্যবস্থা নেই। তাদের থেকে ঘর না নিলে হয়তো এখানে থাকতে দেবে না।’

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সহযোগীদের নিয়ে স্থানীয় সাবেক ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) সদস্য মিজানুর রহমান সড়কের এসব জায়গা দখল করে স্থাপনা তৈরি করেছেন।

মিজানুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সড়ক ও জনপথের জমি দখল করে অনেকেই বিল্ডিং নির্মাণ করে ভাড়া দিয়েছে, কিন্তু আমরা সমাজসেবা করছি। মানুষ যাতে সেখানে ভালো করে ব্যবসা করতে পারে, তার জন্যই এ ব্যবস্থা।’

এ সময় তিনি ছয়টি ঘর নির্মাণের কথা স্বীকার করেন, তবে এসব ঘর থেকে ভাড়া আদায়ের বিষয়টি অস্বীকার করেন তিনি। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে ফজলে রাব্বী চৌধুরী নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলতে বলেন।

ফজলে রাব্বী চৌধুরীকে খুঁজে বের করে তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ‘অফিসের কাজে ব্যস্ত আছেন’ জানিয়ে রবিউল ইসলাম নামের আরেকজনের সঙ্গে কথা বলতে বলেন।

রবিউল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘হাট ইজারাদার সাবেক মেম্বার মিজানুর রহমান এসব ঘর তুলেছেন।’

এটি সমাজসেবামূলক কাজ, নাকি দখল জানতে চাইলে তিনি দখলের কথা অকপটে স্বীকার করেন।

পরবর্তী সময়ে আবারও মিজানুর মেম্বারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘সবাই যেভাবে সড়কের জমি দখল করে দোকান ঘর করেছেন, আমরাও তাই করেছি।’

সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের কোনো অনুমতি আছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘কোনো অনুমতি নেয়া হয়নি।’

ওই সময় তিনি সড়কের দুই পাশে এসব স্থাপনা উচ্ছেদের বিষয়েও কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘সরকার যদি সব উচ্ছেদ করে দেয় তাহলে দিতে পারে।’

স্থানীয় সচেতন মহলের দাবি, সড়কের পাশে সরকারি জায়গায় যেসব গরিব মানুষ জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন, তাদের ওপর যেন জুলুম কেউ না চালান। কোনো প্রভাবশালী ব্যক্তি যেন সরকারি জায়গায় অবৈধ স্থাপনা না করতে পারেন এবং সেগুলো যেন উচ্ছেদ করা হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বলেন, ‘সমাজসেবার আড়ালে কারও অসৎ উদ্দেশ্য আছে কি না, তারও তদন্ত চাই আমরা।’

এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম বলেন, ‘স্থানীয়রা আমাকে এ বিষয়ে অবগত করেছেন। আমরা মাপজোক করে শিগগিরই বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’

আরও পড়ুন:
সরকারি খাল দখল করে মাছ চাষ
বিরোধপূর্ণ জমি দখলের অভিযানে ওয়ার্ড কাউন্সিলর
চলছে রেলের জমি দখলের মহোৎসব, নির্বিকার কর্তৃপক্ষ
ময়মনসিংহে জোর করে জমি দখলের অভিযোগ, প্রতিকার চেয়ে মানববন্ধন
মন্দিরের জায়গা দখলের অভিযোগ বিএনপি নেতা মীর নাছির ও তার ছেলের বিরুদ্ধে

মন্তব্য

বাংলাদেশ
Those who are in the five broker circle of sharing patients from DMK
সরেজমিন প্রতিবেদন

ঢামেক থেকে রোগী ভাগানোর ৫ দালাল চক্রে যারা, যেভাবে

ঢামেক থেকে রোগী ভাগানোর ৫ দালাল চক্রে যারা, যেভাবে উপরে বাঁ থেকে- হেদায়েতউল্লাহ, টুটুল ও হান্নান; নিচে বাঁ থেকে- ইমরান ইমন, সাবিত ও শুভ এবং রাশেদ। ছবি কোলাজ: নিউজবাংলা
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে বেসরকারি হাসপাতালে রোগী ভাগিয়ে নিতে তৎপর বেশ কয়েকটি দালাল চক্র। নিউজবাংলার অনুসন্ধানে এমন পাঁচটি চক্রের বিষয়ে নানা তথ্য মিলেছে। এর মধ্যে তিনটি চক্রের নেতৃত্ব দিচ্ছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক চার নেতা।

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল (ঢামেক) থেকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে বেসরকারি হাসপাতালে রোগী ভাগিয়ে নিতে বেশকিছু দালাল চক্র সক্রিয়। নিউজবাংলার এই প্রতিবেদক তাদের মধ্যে পাঁচটি দালাল চক্রের সন্ধান পেয়েছেন। এর মধ্যে তিনটি চক্রের নেতৃত্ব দিচ্ছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ছাত্রলীগের সাবেক চার নেতা।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ঢামেক থেকে বেসরকারি হাসপাতালে কোনো রোগী ভর্তি করাতে পারলে চক্রের সদস্যদের রোগীপ্রতি পার্সেন্টেজ দেয়া হয়। সে রোগীর কত বিল হয়, তার ওপর নির্ভর করে পার্সেন্টেজের পরিমাণ। এই পার্সেন্টেজ সর্বনিম্ন পরিমাণ ২০ শতাংশ থেকে সর্বোচ্চ ৪০ শতাংশ পর্যন্ত হয়ে থাকে। রোগী যতদিন ভর্তি থাকবেন, সে হিসাবেও টাকা নেয়ার সুযোগ আছে।

আবার চক্রের সদস্যের প্রস্তাব অনুযায়ী কোনো রোগীকে বেসরকারি হাসপাতালে নিতে না চাইলে স্বজনদের মারধরেরও শিকার হতে হয়।

ঢামেক হাসপাতালে দায়িত্বরত আনসারের প্লাটুন কমান্ডার (পিসি) উজ্জ্বল বেপারী ও ঢামেক পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ বাচ্চু মিয়া চক্রগুলোকে নিরাপত্তা দেয়ার বিনিময়ে মাসোহারা পান বলে অভিযোগ রয়েছে। তবে এ অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে দুজনই তা অস্বীকার করেন।

ঢামেক হাসপাতালে আসা যেসব রোগীর এনআইসিইউ বা আইসিইউ প্রয়োজন হয়, সেসব রোগীকে লক্ষ্য করেই পাঁচটি চক্র কাজ করে। সাধারণ রোগীরাও তাদের লক্ষ্যে পরিণত হন।

ঢামেক হাসপাতালের ভেতরে বিভিন্ন দেয়ালে ‘দালাল দেখলে ধরিয়ে দিন’ শীর্ষক যেসব স্টিলের প্লেট লাগানো হয়েছে, সেখানে থাকা যোগাযোগের নম্বরগুলো কালো কালি দিয়ে মুছে ফেলা হয়েছে। নির্বিঘ্নে দালালি চালিয়ে যেতে চক্রের সদস্যরাই নম্বরগুলো মুছে ফেলেছেন- এমন তথ্য জানা গেছে একাধিক সূত্রে।

পাঁচ চক্রের নেতৃত্বে যারা

নিউজবাংলার অনুসন্ধানে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, পাঁচটি চক্রের একটির নেতৃত্ব দেন শেখ স্বাধীন সাবিত ও ইয়ামিন রহমান শুভ। এর মধ্যে শেখ স্বাধীন সাবিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি।

একটি চক্রের নেতৃত্ব দেন হেদায়েত উল্লাহ সরকার ও কাজী রাশেদ। এর মধ্যে হেদায়েত ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ হল শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবং কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি। আর রাশেদ একই হল শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি এবং কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক উপ-সম্পাদক।

অন্য এক চক্রের নেতা ইমরান খান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি।

বাকি দুই চক্রের নেতৃত্বে যারা আছেন, তারা কেউই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নন এবং ছাত্রলীগের রাজনীতিতেও জড়িত নন। তারা হলেন হান্নান ও কাশেম। তাদের মধ্যে কাশেম ‘ট্যাক্সি কাশেম’ নামে হাসপাতাল এলাকায় পরিচিত।

অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে, সাবিত-শুভ ও হেদায়েত-রাশেদ চক্রটি সবচেয়ে বেশি সক্রিয় হাসপাতালের ২১১ ও ২১২ নম্বর ওয়ার্ডে। এ দুটি এনআইসিইউ ও গাইনি ওয়ার্ড। সার্বক্ষণিকই এ দুই ওয়ার্ডের সামনে চক্রের সদস্যদের অবস্থান থাকে। এ দুই ওয়ার্ডে বাকি তিন চক্রের কেউ কাজ করতে পারেন না। তবে পাঁচটি চক্রই কাজ করে হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে। চক্রের সদস্যদের সবাই কাজ করেন সন্ধ্যার পর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত। দিনের বেলা তাদের তৎপরতা তেমন একটা থাকে না।

যে চক্র যেসব হাসপাতালে রোগী পাঠায়

প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, শেখ স্বাধীন সাবিত ও ইয়ামিন রহমান শুভর নেতৃত্বে থাকা চক্রটি মেডিফেয়ার জেনারেল হাসপাতাল, ইউনিহেলথ, আহমেদ স্পেশালাইজড হাসপাতাল, প্রাইম ও ঢাকা হেলথ কেয়ার হাসপাতালে রোগী পাঠায়। এ চক্রের ছয় সদস্যের নাম জানা গেছে। তারা হলেন- জুয়েল, নিপু, মেহেদী, টুটুল, আল আমিন ও এসএম খলীল। তারা মাসিক ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা বেতনে সাবিত ও শুভর হয়ে কাজ করেন।

হেদায়েত ও রাশেদ একটি চক্রের হয়ে কাজ করেন। চক্রটি মেডিফেয়ার, সুপার স্পেশালিস্ট, প্রাইম এবং ঢাকা হেলথ কেয়ার হাসপাতালে রোগী পাঠায়। এ চক্রের হয়ে কাজ করেন আলমগীর, রিপন, নাদিম, মিরাজ ও হানিফ।

ইমরান খানের চক্রটি হসপিটাল টোয়েন্টি সেভেন ও বাংলাদেশ ক্রিটিক্যাল কেয়ারে রোগী পাঠায়। এ চক্রের সদস্যরা হলেন- ইব্রাহিম, নয়ন ও নাফিস। তবে ইমরান তাদের মাসিক ভিত্তিতে বেতন দেন না। রোগীভিত্তিক টাকা দেন। আর মাস শেষে প্রত্যেকের টাকার পরিমাণ ২০ থেকে ২২ হাজারে পৌঁছায়।

ট্যাক্সি কাশেমের নেতৃত্বাধীন চক্রটি আমার বাংলাদেশ, বাংলাদেশ ক্রিটিক্যাল কেয়ার, প্রাইম ও ক্রিসেন্ট হাসপাতালে রোগী পাঠায়। আর এ চক্রের অধীনে কাজ করে এরকম দুজনের তথ্য পাওয়া গেছে, যারা হলেন মনির ও বিল্লাল।

হান্নানের নেতৃত্বাধীন চক্রটি বিএনকে, এ ওয়ান, প্রাইম ও হেলথ কেয়ারে রোগী পাঠায়। এই চক্রে কাজ করা সদস্যরা হলেন- শরিফ, ইসমাইল, তুষার ও অপু।

হান্নানের নেতৃত্বাধীন চক্রটি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের আপ্যায়ন বিষয়ক সম্পাদক শেখ মুহাম্মদ তুনানের নাম ব্যবহার করে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে বলে খবর পাওয়া যায়।

চক্রের সদস্যদের হাসপাতালগুলোর মধ্যে মেডিফেয়ার অবস্থিত মোহাম্মদপুরের বাবর রোডে, ইউনিহেলথ পান্থপথ সিগন্যালে, আহমেদ স্পেশালাইজড চানখাঁরপুলে এবং প্রাইম ও ঢাকা হেলথ কেয়ার অবস্থিত শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের বিপরীত পাশে মুক্তিযোদ্ধা টাওয়ারের দুই ও তিনতলায়। সুপার স্পেশালিস্ট, হসপিটাল টোয়েন্টি সেভেন ও বাংলাদেশে ক্রিটিক্যাল কেয়ার অবস্থিত ধানমন্ডি ২৭ নম্বরে। বিএনকে হাসপাতাল রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সের পাশে। আমার বাংলাদেশ হাসপাতাল অবস্থিত শ্যামলি বাসস্ট্যান্ডের পাশে।

এসব হাসপাতালে যারা রোগী পাঠায় তাদের প্রত্যেকের নামে একটি কোড তৈরি হয়। যখনই কোনো একটি কোডের অধীনে সেই হাসপাতালে কোনো একজন রোগী ভর্তি হয় আর চিকিৎসা শেষে যখন সেই রোগী ওই হাসপাতাল ছাড়ে, তখন রোগীর সম্পূর্ণ বিলের ২০ থেকে ৪০ শতাংশ টাকা সংশ্লিষ্ট কোডের লোককে পরিশোধ করা হয়।

চক্রের সদস্যের ছদ্মবেশে হাসপাতালগুলোর সঙ্গে কথা বললে তারা জানায়, চক্রের নেতাদের নামে তাদের হাসপাতালে কোড আছে। এসব কোডের অধীনে তারা সেখানে রোগী পাঠান এবং রোগীভেদে তারা প্যাকেজ বা রোগী হাসপাতালে যতদিন থাকবে, এর প্রতিদিন হিসাবে টাকা পান।

চক্রের সদস্য ছদ্মবেশে জানতে চাইলে এওয়ান হাসপাতালের পরিচালক সাইয়েদ ইসলাম সাইফ বলেন, ‘কোনো আইসিইউ রোগী এনে দিতে পারলে রোগী ভর্তি হওয়ার পরপরই আপনি ১৮ হাজার টাকা পেয়ে যাবেন। এটা হলো প্যাকেজ সিস্টেম। আর পার ডে হিসেবে নিলে দৈনিক পাবেন ৫ হাজার টাকা।’

ছদ্মবেশে চক্রের কয়েকজন নেতাকে ফোন দিলে তারাও এই প্রতিবেদককে রোগী যতদিন ভর্তি থাকবে দিনপ্রতি ৪ হাজার টাকা করে দেয়ার প্রস্তাব দেন।

দালাল চক্রের সদস্যরা যেভাবে কাজ করে

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চক্রের কয়েকজন সদস্যের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে যখনই কোনো রোগী আসে, চক্রের সদস্যরা তাদের অনুসরণ করেন। তারা রোগীর স্বজন, হাসপাতালের ট্রলি ম্যান বা যে অ্যাম্বুলেন্সে করে রোগীকে আনা হয়েছে, সেই অ্যাম্বুলেন্সের চালকের সঙ্গে কথা বলে রোগীর রোগের ধরন জানার চেষ্টা করেন। কথা বলে রোগীর আইসিইউ প্রয়োজন হতে পারে এ রকম কোনো ধারণা পেলে তারা রোগীর স্বজনদের সঙ্গে থেকে তাদের বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করে তাদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলেন। এরপর তারা রোগীর সঙ্গে ডাক্তারের রুম পর্যন্ত যান। ডাক্তার যদি বলেনযে রোগীর আইসিইউ প্রয়োজন, তখন থেকেই তাদের বেসরকারি হাসপাতালে নেয়ার চেষ্টা শুরু হয়। এটিকে তাদের ভাষায় বলা হয় মার্কেটিং।

রোগীর অবস্থা গুরুতর হলে দালালরা ডাক্তারের রুম পর্যন্ত রোগীকে নিতে দিতে চান না। এর আগেই তারা রোগীর অবস্থা সম্পর্কে বিভিন্ন নেতিবাচক কথা বলে তারা তাদের কার্যক্রম শুরু করে দেন। যখনই কোন রোগী তাদের কথায় আশ্বস্ত হয়ে বেসরকারি হাসপাতালে যেতে সম্মত হন, তখনই চক্রের সদস্যরা সংশ্লিষ্ট হাসপাতালে ফোন দিয়ে রোগীর নাম এবং রোগীর বাবা বা মায়ের নাম জানিয়ে সেই রোগীকে তাদের চক্র প্রধানের নামে থাকা কোডে বুকিং দিতে বলেন।

অনেক সময় এক রোগীর জন্য কয়েকটি চক্রের সদস্যরা একসঙ্গে ফোন করেন। তখন যে চক্রের সদস্যরা আগে ফোন দেন, সংশ্লিষ্ট হাসপাতালের পক্ষ থেকে তাদের জানানো হয় ‘কল ক্লিয়ার’। আর যারা পরে ফোন দেন তাদের বলা হয় ‘কল বুকড’।

আর যে দুটি চক্র ঢাকা মেডিক্যালের ২১১ ও ২১২ নম্বর ওয়ার্ডে কাজ করে তাদের সদস্যরা এসব ওয়ার্ডের সামনে প্রায় সময় অবস্থান করেন। সেখানে থেকে তারা খেয়াল রাখেন কোনো রোগীর এনআইসিইউ বা আইসিইউ প্রয়োজন হচ্ছে কি না। আইসিইউ বা এনআইসিইউ প্রয়োজন হতে পারে এমন রোগীদের টার্গেটের পাশাপাশি অনেক সময় তারা যেসব রোগীর এসবের প্রয়োজন নেই তাদেরও টার্গেট করেন। তাদের শিশুদের জন্য এনআইসিইউ প্রয়োজন বা এনআইসিউতে না নিলে তাদের বাচ্চার সমস্যা হয়ে যাবেসহ বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখিয়ে তাদের বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন।

চক্রের সদস্যরা রোগীদের নির্দিষ্ট বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যেতে বিভিন্ন প্রতারণা, বিশেষ করে কম খরচে রোগীর চিকিৎসা করানো হবে বলে প্রতিশ্রুতি দেন। আর চিকিৎসা শেষে বিলের কাগজ দেখে কপালে হাত দিতে হয় রোগীর স্বজনদের।

প্রতিবাদ করলে রোগীর স্বজনদেরও করা হয় মারধর

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে সিট নেই এবং রোগীর জরুরি ভিত্তিতে এনআইসিইউ প্রয়োজন- এমনটা জানিয়ে দালাল চক্রের সদস্যরা এক রোগীকে বাইরে নিয়ে যেতে চাইলে এই ঘটনার প্রতিবাদ করায় সেই রোগীর স্বজনদেরও মারধর করেন সাবিত-শুভরা।

ভুক্তভোগী মোহাম্মদ রাসেল শান্ত বলেন, “২৬ ডিসেম্বর মধ্যরাতে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আমার ভাতিজার জন্ম হয়। কিছুক্ষণ পর এক লোক এসে নিজেকে হাসপাতালের লোক পরিচয় দিয়ে বলেন, ‘আমাদের এখানে সিট নেই। আপনারা এখানে ভর্তি হতে পারবেন না। বাচ্চাকে সুস্থ রাখতে চাইলে এখান থেকে দ্রুত নিয়ে যান।’ পাশেই মেডিফেয়ার নামে একটা হাসপাতাল আছে। সেখানে সব সুযোগ-সুবিধা পাবেন।’

আমরা জিজ্ঞেস করি, মেডিফেয়ারে নেয়ার বিষয়টা ডাক্তার বলেছেন কি না।

“তখন তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ’।’ এরপর আমরা তাকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যেতে চাইলে সে ডাক্তারের কাছে যেতে গড়িমসি করছিল। তখন আমরা বুঝতে পারি, সে দালাল।”

তিনি আরও বলেন, “এরপর ওই লোকটাকে আমরা ঢাকা মেডিক্যালের পুলিশ ফাঁড়িতে নিয়ে আসি। এ সময় সেখানে সাবিত (স্বাধীন সাবিত) ভাইও হাজির হয়। ছাত্রলীগ করার কারণে আমি ওনাকে চিনি। এরপর ফাঁড়ির ইনচার্জ বাচ্চু ভাই বিষয়টা ‘ভুল বোঝাবুঝি’ বলে সমাধান করে দিয়েছে।

“সমাধান করার পর যখন আমরা ফাঁড়ি থেকে বের হই তখন সাবিত ভাই তার লোকজনকে নিয়ে এসে আমাকে মারা শুরু করেন।”

ঘটনার সময় সেখানে শাহবাগ থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক খালেকও উপস্থিত ছিলেন। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ভুক্তভোগী যদি এই ঘটনায় মামলা করে তাহলে আমরা অবশ্যই অপরাধীদের গ্রেপ্তার করব। একটা বিষয় সমাধান হওয়ার পর তো তারা কারও গায়ে হাত তুলতে পারে না।’

অতিষ্ঠ অ্যাম্বুলেন্স চালকরাও

চক্রের সদস্যদের কথা অনুযায়ী কাজ না করলে খড়্গ নেমে আসে ঢাকা মেডিক্যালে থাকা বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স চালকদের ওপর। তাদের মারধরের শিকার হতে হয়। এসবের প্রতিবাদে কয়েক মাস আগে ধর্মঘটও ডাকেন অ্যাম্বুলেন্স চালকরা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক অ্যাম্বুলেন্স ড্রাইভার বলেন, ‘তাদের কাছে আমরা অসহায়। আমরা যখন ঢাকা মেডিক্যাল থেকে কোনো রোগীকে নিয়ে রোগীর চাহিদা অনুযায়ী কোনো সরকারি বা বেসরকারি হাসপাতালের উদ্দেশে রওনা হই, তখন এই সাবিত-ইমনরা এসে আমাদের বলে দেয় রোগী যেই হাসপাতালের কথা বলছে, সেই হাসপাতাল না, আমরা যেই হাসপাতালে বলব, সেই হাসপাতালে নিয়ে যাবি। অনেক সময় তারা আমাদের সাথে গাড়িতে উঠে বসে। আবার অনেক সময় তারা বাইক নিয়ে আমাদের গাড়ি ফলো করে।

‘তাদের কথা অনুযায়ী সেই হাসপাতালে না নিয়ে গেলে আমাদের মারধর করে। তাই আমরা বাধ্য হয়ে রোগীদের ওইসব হাসপাতালে নিয়ে যেতে বাধ্য হই। অনেক সময় তারা রোগীর সঙ্গে আমাদের অ্যাম্বুলেন্সে উঠে সারা রাস্তা রোগীদের উল্টাপাল্টা বুঝিয়ে তাদের হাসপাতালে নিয়ে যেতে রাজি করানোর চেষ্টা করে।’

ঢাকা মহানগর অ্যাম্বুলেন্স সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক বাবুল বলেন, ‘গরিব, অসহায় মানুষদের বেসরকারিতে ভর্তি করানোর জন্য তারা যে টানাহেঁচড়াটা করে, এগুলো অমানবিক। ছাত্রলীগের নাম দিয়ে এরা যা করছে এগুলো মানার মতো না।’

বাবুল বলেন, ‘এই সাবিত-ইমনদের কথা অনুযায়ী না চললে অনেক অ্যাম্বুলেন্স ড্রাইভারকে তাদের হাতে মারধরের শিকার হতে হয়েছে। এমনকি তারা আমাকেও একদিন মারছে।’

সেই ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বাবুল বলেন, ‘এক মাস আগে ঢাকা মেডিক্যাল থেকে বের হয়ে আমার অ্যাম্বুলেন্সে একজন রোগী ওঠে। উনি যাবেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে। এসময় দালাল চক্রের নেতা ইমন আমার অ্যাম্বুলেন্সে উঠতে চায়। আমি তাকে বলি- আমার অ্যাম্বুলেন্সে আপনাকে তুলবো না। আপনি রোগীর লোক না। উনারা যেখানে বলে সেখানেই আমি যাব।

‘এরপর কেন তাকে আমি এই কথা বললাম, এ জন্য আমার গায়ে হাত তুলেছে। পরে সাবিত-শুভসহ সবাই এসে আমাকে হেলমেট দিয়ে এলোপাতাড়ি মারা শুরু করেছে। এজন্য পরদিন আমি ধর্মঘট ডাকি। পরে তারা এসে ক্ষমা চায়।’

তিনি বলেন, ‘এদের জ্বালা-যন্ত্রণায় তিন দিন আগে আমরা নতুন নিয়ম করেছি, যেন গাড়ির সামনে কোন দালাল উঠে রোগীদের বিরক্ত করতে না পারে। যদিও কয়েক দিন আগে জোর করে এক অ্যাম্বুলেন্সে রোগীর সাথে উঠে যায় ইমন। এ জন্য নতুন নিয়ম অনুযায়ী শাস্তি হিসেবে ওই ড্রাইভারের অ্যাম্বুলেন্সকে ২৪ ঘণ্টা বসিয়ে রাখা হয়েছে এবং সেই ড্রাইভারকে ২ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।’

বাবুল বলেন, এই দালালরা হাসপাতালের ট্রলি ম্যানদের সাথেও কন্টাক্ট করে রাখছে। কোন রোগীর কন্ডিশন কী রকম ট্রলিম্যানরা ফোন দিয়ে তাদের এসব তথ্য জানায়।

দালাল চক্রের খপ্পরে পড়া ভুক্তভোগীদের ভাষ্য

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ২৬ ডিসেম্বর রাত আড়াইটার সময় দেখা যায়, এক যুবক একটি শিশুকে হাসপাতাল থেকে বের করে নিয়ে যাচ্ছেন। তার সঙ্গে ছিল সাবিত-শুভ গ্রুপের সদস্য টুটুল। তাদের পিছু পিছু যাওয়ার পর দেখা যায়, তারা জরুরি বিভাগের গেট থেকে একটি অটোরিকশা নিয়ে সেই শিশুকে চানখাঁরপুলের আহমেদ স্পেশালাইজড হাসপাতালে ভর্তি করান।

পরে জানা যায়, সেই যুবকটির নাম হৃদয়। তিনি শিশুটির বাবা। ১৫ জানুয়ারি নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘ওই হাসপাতালে এক দিন থাকার পর বুঝেছি যে আমি দালালের খপ্পরে পড়েছি।’

ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, “আমরা ঢাকা মেডিক্যালের ১০৯ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি ছিলাম। আমার বউয়ের বাচ্চা হওয়ার পর সেখানে থাকা এক বৃদ্ধ আমাকে বলে, ‘আপনার বাচ্চার নিউমোনিয়া। এ জন্য এনআইসিইউ প্রয়োজন।’ ভেবেছি সে হাসপাতালেরই কেউ। তার কথা শুনে আমরা এনআইসিউতে কথা বলার জন্য বের হলে আরেকজন আমাকে জিজ্ঞেস করে আমাদের এনআইসিউ প্রয়োজন কি না। আমরা ‘হ্যাঁ’ বললে সে আমাকে বলে, ‘ঢাকা মেডিক্যালে এনআইসিইউ আছে। কিন্তু এ জন্য পাঁচ হাজার টাকা প্রয়োজন।’ পরে আমি তার পরিচয় জানতে চাইলে সে স্বীকার করে সে বাইরের লোক।

“পরে তার সাথে বাগবিতণ্ডা করতে করতে আমি নিচে নেমে যাই। এ সময় তাকে একটা থাপ্পড় মারি। তখন সেখানে তার পক্ষের আরও অনেক লোক জড়ো হয়ে যায়। পরে ঝামেলা শেষ করে টুটুল নামের একজন এসে আমাকে বলে, ‘আপনাদের কী নিয়ে ঝামেলা হয়েছে। আমি বলি, এনআইসিইউ নিয়ে।’ এরপর সে আমাকে বলে, ‘আমার হাতে একটা হাসপাতাল আছে। সেখানে এনআইসিইউ আছে। আপনারা সেখানে যেতে পারেন।”

হৃদয় আরও বলেন, “তার কথামতো আমরা চানখাঁরপুলের আহমেদ স্পেশালাইজড হসপিটালে যাই। তবে সে আমাকে বলেনি, কত টাকা প্রয়োজন। ঢোকামাত্র হাসপাতালে ভর্তির জন্য আমার কাছ থেকে দেড় হাজার টাকা এবং আরেকটু পরেই ওষুধের কথা বলে আরও ১৪০০ টাকা নেয়। এরপর সেখানে আমার থাকার জায়গা না থাকায় বাচ্চাকে রেখে আমি বের হয়ে চলে আসি। পরের দিন সকালে গেলে হাসপাতাল থেকে আমাকে বলা হয়, ‘আপনার বাচ্চাকে দেখতে একজন ডাক্তার আসবে। তার জন্য এক হাজার টাকা ফি দিতে হবে।’ তখন থেকে আমার সন্দেহ শুরু হয়।

“এরপর আমি ডাক্তার দেখাব না জানালে তারা বলে, ‘তাহলে সাত হাজার টাকা জমা দিয়ে আসেন।’ এই টাকা কিসের জিজ্ঞেস করলে তারা বলে, ‘গতকাল মধ্যরাত থেকে পরদিন দুপুর ১২টা পর্যন্ত এনআইসিইউর ফি।’ এই কথা শুনে আমার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে। কারণ তারা আমাকে বলেনি, অর্ধ দিনেই এত টাকা আসবে।

“অনেক ঝগড়ার পর চার হাজার টাকা দিয়ে আমার বাচ্চাকে সেখান থেকে বের করে নিয়ে আসি। এরপর আমরা ফের ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করাই।’

২৬ ডিসেম্বর মধ্যরাতেই আহমেদ স্পেশালাইজড হাসপাতালেই দেখা মেলে আরেক রোগীর স্বজনের। সে সময় তিনি নেবুলাইজার লাগানো তার ছোট শিশুকে কোলে নিয়ে আহমেদ স্পেশালাইজড হাসপাতাল থেকে বের করে হেঁটে ঢাকা মেডিক্যালের দিকে যাচ্ছিলেন। এ সময় তার গতিরোধ করে তার সঙ্গে কথা বলতে দেখা যায় সাবিত-শুভ চক্রের সদস্য টুটুলকে।

এই রোগীর বাবা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের টুটুল নামের এই লোকটি এই হাসপাতালে ভালো ব্যবস্থা আছে বলে এখানে নিয়ে আসে। তার কথায় প্রভাবিত হয়ে আমরা চলে আসি, কিন্তু এসে দেখি, হাসপাতালের পর্যায়েও পড়ে না এটা। তাই আবার ঢাকা মেডিক্যালেই চলে যাচ্ছি।’

ভিডিও করায় হেনস্তার মুখে প্রতিবেদক

২৭ ডিসেম্বর মধ্যরাতে একটি চক্রের নেতা ইমরান খানকে অনুসরণ করতে গিয়ে দেখা যায়, তিনি হাসপাতালের নিচতলায় নিউরো সার্জারি ওয়ার্ডে আসা এক রোগীর সঙ্গে কথা বলছেন। এ সময় তার গতিবিধি এবং রোগীর সঙ্গে হওয়া তার কথোপকথন গোপন ক্যামেরায় ভিডিও করার চেষ্টা করলে তিনি বুঝে ফেলেন এবং নিজেকে হাসপাতালের লোক পরিচয় দিয়ে প্রতিবেদককে সেখান থেকে বের হয়ে যেতে বলেন।

পরে ওই রোগীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তিনি এসেছেন কুমিল্লা থেকে। ইমরান খানের ছবি দেখিয়ে তার সঙ্গে কী কথা হয়েছে জানতে চাইলে তিনি জানান, ঢাকা মেডিক্যালে সিট সংকট জানিয়ে ইমরান খান তাকে অন্য একটি হাসপাতালে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।

এর একটু পরেই দেখা যায়, সেই রোগী একটি অ্যাম্বুলেন্স করে হাসপাতাল ছাড়ছেন। তার সঙ্গে ইমরান খানকেও দেখা যায়।

এই ঘটনার ভিডিও করে প্রতিবেদক ভোর ৩টার দিকে হাসপাতাল থেকে বের হয়ে এলে তার পথরোধ করেন ফাঁড়ির এক কনস্টেবল। জ্যাকেটে নেমপ্লেট ঢাকা থাকায় তার নাম জানা যায়নি। এ সময় সেখানে উপস্থিত হন সাবিত, শুভ, তাদের অনুসারী টুটুল ও অন্য চক্রের নেতা ইমরান খানও। পুলিশ কনস্টেবল তাদের দেখিয়ে প্রতিবেদকের কাছে জানতে চান কেন তাদের অনুসরণ এবং ভিডিও করা হয়েছে। এ সময় তিনি প্রতিবেদকের মোবাইল য়োন কেড়ে নিয়ে ভিডিও ডিলিট করার চেষ্টা করেন।

যা বলছেন অভিযুক্তরা

রোগীকে বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে সাবিত-শুভ গ্রুপের সদস্য টুটুলকে ফোন করা হলে তিনি সাবিতের সঙ্গে কথা বলতে বলে ফোন কেটে দেন।

সব অভিযোগ অস্বীকার করে শেখ স্বাধীন সাবিত বলেন, ‘আমরা কোন হাসপাতালের মার্কেটিং (দালালি) করি না। আমি মেডিফেয়ার হাসপাতালের মালিক। আমার এখানে বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে রোগী আসে। আর ঢাকা মেডিক্যালে আমরা যাই না। সেখানে আমাদের হয়ে কাজ করে এরকম কোনো সদস্যও নেই।’

মেডিক্যালে আসার ছবি ও ভিডিও আছে জানালে তিনি বলেন, ‘ঠিক আছে। থাকলে আপনি পাবলিশ করে দেন।’

রোগীর স্বজন ও অ্যাম্বুলেন্সের চালককে মারধরের ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে সাবিত বলেন, ‘এসব বিষয়ে আমি কিছু জানি না। আপনার কাছে তথ্য থাকলে আপনি যা ইচ্ছা করেন। এটা নিয়ে আমার অতো বেশি মাথাব্যথা নেই।’

এ গ্রুপের আরেক সদস্য ইয়ামিন শুভ বলেন, ‘আমরা কোনো হাসপাতালে মার্কেটিং করি না। আপনার এগুলো প্রিপ্ল্যান্ড (পূর্বপরিকল্পিত) কথাবার্তা। এগুলো বাদ দেন।’

অন্য একটি চক্রের নেতা হেদায়েত সরকার বলেন, ‘প্রায় প্রতিটি হাসপাতালে আমাদের প্রতিনিধি আছে। তারা বেতনভুক্ত। তারা সেসব হাসপাতালে আমাদের হয়ে মার্কেটিং করবে। তবে হাসপাতালের কোনো কর্মচারী বা অন্য কেউ রোগী পাঠালে তাদের আমরা কমিশন দিই না। এসব কাজ করে মেডিফেয়ার বা আহমেদ স্পেশালাইজডের মতো হাসপাতালগুলো।’

এ চক্রের অন্য নেতা কাজী রাশেদ বলেন ভিন্ন কথা। তিনি বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালের ওয়ার্ড বয় বা অ্যাম্বুলেন্স ড্রাইভারদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখি, এটা সত্য। এদের মাধ্যমে যদি আমাদের হাসপাতালে কোনো রোগী আসে, তাদের আমরা পার ডে ভিত্তিতে বা এককালীন একটা পার্সেন্টেজ দেই। এই টাকাটা পপুলার বা ল্যাবএইডের মতো হাসপাতালও দেয়।

‘এখন এদের যদি আমরা টাকা না দেই, তারা তো আমাদের রোগী দেবে না। তাই এই টাকাটা দিতে হয়। তবে আমরা নিজেদের কোনো লোক হাসপাতালের ভেতরে রাখি না।’

তাহলে এ গ্রুপের সদস্য হানিফ, মিরাজ বা আলমগীর এরা কারা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এরা আমাদের হাসপাতালের কর্মচারী।’

তারা ঢাকা মেডিক্যালে কী করে জানতে চাইলে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।

আরেকটি চক্রের নেতা ইমরান খান বলেন, ‘এই অভিযোগগুলো হাস্যকর। এগুলো বলে কে আপনাদের? তবে এসব বিষয়ে সরাসরি কথা বলাই ভালো।’

অ্যাম্বুলেন্স চালককে মারধর বা রোগীদের কনভিন্স করতে তাদের অ্যাম্বুলেন্সের সামনের সিটে উঠে বসার চেষ্টার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এগুলো কোনো কিছুই হয় না।’

ইব্রাহিম, নাফিস ও নয়নের সঙ্গে সম্পর্ক জানতে চাইলে ইমরান বলেন, ‘এসব বিষয়ে আপনি জিজ্ঞেস করছেন কেন? এসব বিষয়ে সামনাসামনি কথা হবে।’

অন্য চক্রের নেতা হান্নান বলেন, ‘আমাদের হাসপাতালে এমনিতেই রোগী আসে। মার্কেটিংয়ের জন্য কেউ নেই। আর রোগী নিয়ে আসলে কাউকে টাকা দেয়া হয় না।’

অভিযোগের বিষয়ে আবুল কাশেম টিপু বলেন, “২০১৯ সাল পর্যন্ত আমি এই ব্যবসা করতাম। এখন ব্যবসা করে হেদায়েত-রাশেদ ও সাবিতরা। আমি এখন রাজনীতি করি। তবে আমার দুই ছোট ভাই মনির ও বিল্লাল, তাদেরকে আমি কিছু দিতে পারিনি। তারা মার্কেটিং করে মাসে এখন কয়েকটা ‘কল’ পায়।

“তবে এই ‘কল’ কোনোভাবেই দশটার উপরে না। এতে যদি কারও সমস্যা হয় আমাকে বলতে পারেন। আপনি বরং দেখেন এখানে কে রাঘববোয়াল আর কে রাঘববোয়াল না। হেদায়েত-রাশেদ- সাবিতদের মারামারিতে তারা (মনির-বিল্লাল) গত কয়েক মাস ধরে কোনো কলই পাচ্ছে না।”

কর্তৃপক্ষের ভাষ্য

ঢামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এই দালাল চক্রের ব্যাপারে আমরা অবহিত। আমরা তাদের উৎখাত করার চেষ্টা করছি। ইতোমধ্যে তাদের দুই সদস্যকে আমরা গ্রেপ্তারও করেছি। এই চক্রের নেতারা যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী, সেটাও আমরা অবহিত। এটি নিয়ে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং প্রক্টর মহোদয়ের সঙ্গে দেখা করার চিন্তা করছি।

‘স্যারদের আমরা অবহিত করেই এরপর এদের বিরুদ্ধে অ্যাকশনে যাব। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষার্থী এসব কাজে জড়িত থাকা লজ্জাজনক বিষয়।’

তিনি বলেন, ‘আমার হাসপাতালের আনসার, পুলিশ এবং ওয়ার্ড মাস্টারদের আমরা ইতোমধ্যে নির্দেশনা দিয়েছি- বিভিন্ন ল্যাবরেটরি বা বেসরকারি হাসপাতালের কোনো লোক যদি আমাদের হাসপাতালে আসে, তাদের ধরে যেন পুলিশে সোপর্দ করা হয়।’

পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ও আনসার প্লাটুনের কমান্ডারের বিরুদ্ধে আসা অভিযোগের বিষয়ে ঢামেক পরিচালক বলেন, ‘এ বিষয়টাও আমি শুনেছি। কিন্তু যেহেতু তারা সরকারি কর্মকর্তা, তাই সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া কিছুটা কঠিন।’

হাসপাতালের দেয়ালে দেয়ালে সাঁটানো ‘দালাল দেখলে ধরিয়ে দিন’ শীর্ষক প্লেটে থাকা নম্বর মুছে ফেলার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘সবেমাত্র দুই সপ্তাহ হয়েছে আমি দায়িত্ব নিয়েছি। তাই বিষয়টি সম্পর্কে আমি অবহিত নই। এটি আমি দেখব।’

আরও পড়ুন:
ঢামেক হাসপাতালের নতুন পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আসাদুজ্জামান
ঢামেকে রোগীকে জিম্মি করে টাকা দাবির অভিযোগ

মন্তব্য

p
উপরে