সরকারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনে নামার পরিকল্পনা নিয়ে বিভিন্ন দলের সঙ্গে একের পর এক বৈঠক করলেও গত জুলাই থেকে রাজপথে কোনো কর্মসূচিতে অন্য দলের নেতাদের আমন্ত্রণ জানাচ্ছে না বিএনপি।
বিএনপির দাবি নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকার। এই দাবিতে ধীরে ধীরে রাজপথে কর্মসূচি বাড়াচ্ছে তারা। তবে এসব কর্মসূচিতে না জোটের শরিক, না সমমনা অন্য দল-কাউকে ডাকা হচ্ছে না।
গত ১২ অক্টোবর চট্টগ্রামের পলো গ্রাউন্ডে সমাবেশের মাধ্যমে বিএনপির ধারাবাহিক বিভাগীয় সমাবেশ শুরু হয়, যা শেষ হতে যাচ্ছে আগামী আগামী ১০ ডিসেম্বর রাজধানীতে সমাবেশের মধ্য দিয়ে।
সেই দিনটি ঘিরে বিএনপিতে উত্তেজনা আছে। এমন ঘোষণাও এসেছে যে, সেদিন থেকে দেশ চলবে বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নির্দেশে।
বিএনপির এমন ঘোষণাও আছে যে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে হটাতে পারলে তারা এককভাবে দেশ চালাবে না। তাদের সঙ্গে যারা থাকবে, সবাইকে নিয়ে হবে জাতীয় সরকার।
তবে ১০ ডিসেম্বরের সেই ‘মহা পরিকল্পনা’ নিয়েও সমমনা দলগুলোকে কিছু জানানো হচ্ছে না। বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনের ঘোষণা দেয়া নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না সেই কর্মসূচিতে যোগ দেয়ার আগ্রহ দেখালেও তাকে বিএনপি যেতে বলেনি।
যে দাবিতে বিএনপি এবার মাঠে নেমেছে, সেই দাবিতে ২০১৩ সালেও আন্দোলনে নামে দলটি, যা চলে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির ভোটের এক সপ্তাহ পর পর্যন্ত। তবে সে সময়ের তুলনায় এখনকার কর্মসূচিগুলোর পার্থক্য আছে।
তখন বিএনপি হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচিতে জোর দিয়েছে। কর্মসূচিতে নিজেদের পাশাপাশি শরিক দলের নেতা-কর্মীদের উপস্থিতি ছিল স্পষ্ট।
তবে এবার এখন পর্যন্ত সে পথে যাচ্ছে না তারা। সহিংস কর্মসূচির বদলে নেতা-কর্মীদের সম্পৃক্ত করতে বড় বড় সমাবেশ করছে।
গত জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহ থেকে এই কর্মসূচি শুরু হয়। শুরুর দিকের তুলনায় এখনকার কর্মসূচিগুলোতে নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের উপস্থিতি বাড়ছে।
২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করলেও সে সময়ের রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বাধীন সেই সরকারে বিএনপির প্রভাব ছিল স্পষ্ট। তবে ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি জরুরি অবস্থা জারির পর থেকে রাষ্ট্রক্ষমতায় নিয়ন্ত্রণ হারায় দলটি।
১৫ বছর ধরে ক্ষমতার বাইরে থাকার পাশাপাশি দুই দফা সরকারপতনের আন্দোলনে ব্যর্থতা এবং নিজেদের দাবি ‘ভুলে’ ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে যোগ দেয়া, দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার কারাদণ্ডসহ নানা ইস্যুতে নেতা-কর্মীরা গত কয়েক বছরে অনেকটাই নিষ্ক্রিয় হয়ে যায়। তাদের রাজনীতিতে ফিরিয়ে আনাই বিএনপির আপাতত লক্ষ্য।
যুগপৎ আন্দোলনের ঘোষণা দিয়ে একা একা কর্মসূচি পালনের বিষয়ে জানতে চাইলে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বিএনপি সাংগঠনিকভাবে কতটা স্ট্রং সেটা দেখানোর সময় এসেছে। আর সে কারণেই এককভাবে এই গণসমাবেশ করা হচ্ছে।
‘সাত-আটদিন মিটিং করে, কেন্দ্রীয় সব নেতাদের মতামত নিয়ে আমরা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছি যে আমরা একলা এই কর্মসূচি করব। আর বিএনপির শক্তি সম্পর্কে আইডিয়া আছে তো নাকি?’
বিএনপি নিজেদের শক্তিতে বলীয়মান, তাদের অন্য কারো থেকে শক্তি ধার করতে হবে না বলে- জানিয়ে স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য ইকবাল হাসান টুকু বলেন, ‘তারপরে যারা আমাদের সঙ্গে আসবে তাদের তো ওয়েলকাম জানাবই। এটা এক্সট্রা বেনিফিট। তাতে কোনো সমস্যা নেই। তবে প্রথমে নিজের ক্ষমতা দেখাতে হবে যেটাই বেনিফিট আছে বোনাস আকারে।’
তাহলে যুগপৎ আন্দোলনের কী হবে এমন প্রশ্নের জবাবে একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা বলেছেন, সেই বিষয়টি পরে স্পষ্ট করা হবে।
১০ ডিসেম্বর কী হবে যুগপৎ আন্দোলনের রূপরেখা আসবে?
দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা বলছেন, ১০ ডিসেম্বর চমক আছে। নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবি আদায়ে পরবর্তী আন্দোলনের দিক-নির্দেশনা আসবে ঢাকার এই গণসমাবেশ থেকে। সেখান থেকে যুগপৎ আন্দোলনের বিষয়ে পরিকল্পনা জানানো হতে পারে।
প্রথম দফায় ২৩টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ করে বিএনপি। গত ২৪ মে মাহমুদুর রহমান মান্নার নাগরিক ঐক্যের সঙ্গে বৈঠকের মধ্য দিয়ে প্রথম দফার সংলাপ শুরু হয়। যা ৩ আগস্ট গণঅধিকার পরিষদের সঙ্গে বৈঠকের মাধ্যমে শেষ হয়।
গত ২ অক্টোবর দ্বিতীয় দফা সংলাপ শুরু করে বিএনপি। যা এখনও চলছে।
বিএনপির এক নেতা নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ করে বলেন, ‘যুগপৎ আন্দোলনের রূপরেখা চূড়ান্ত। এখনও অব্দি এমনটায় প্রত্যাশা যে ১০ ডিসেম্বর ঢাকার সমাবেশের মঞ্চে এটি ঘোষণা হবে। সেদিন হয়ত এ বিষয়ে একমত পোষণ করা অন্যান্য দলের নেতারাও মঞ্চে থাকবেন, যদিও এটি এখনো চূড়ান্ত হয়নি।’
একাধিক নেতা জানিয়েছেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ডান, বাম ও মধ্যপন্থি ৩০ থেকে ৩৫টি দলকে এক সুতোয় গেঁথে সরকার পতন আন্দোলন মাঠে গড়াতে চায় বিএনপি।
বিএনপির ২০-দলীয় জোটের সব শরিকই যুগপৎ আন্দোলনের সঙ্গে একমত। জোটের বাইরে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি), নাগরিক ঐক্য, গণঅধিকার পরিষদ, গণসংহতি আন্দোলন, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, ন্যাশনাল পার্টি (ন্যাপ-ভাসানী), ডেমোক্রেটিক লীগ, ইসলামিক পার্টি, এনডিপি, পিপলস লীগ, বাংলাদেশ জাতীয় দল, মাইনরিটি জনতা পার্টি ও গণফোরামও (মন্টু) বিএনপির সঙ্গে আন্দোলনে যাওয়ার আগ্রহের কথা বলেছে।
আরও পড়ুন:নির্বাচনের সময় মন্ত্রণালয়গুলোর দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের (ইসি) হাতে থাকা উচিত বলে মন্তব্য করেছেন বস্ত্র ও পাট এবং নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম সাখাওয়াত হোসেন।
রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে শনিবার রিপোর্টার্স ফোরাম ফর ইলেকশন অ্যান্ড ডেমোক্রেসি (আরএফইডি) আয়োজিত ‘নির্বাচন কমিশনে কেমন সংস্কার চাই’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন। সেমিনারে প্রধান আলোচক ছিলেন নির্বাচন কমিশন সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার। এতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা অংশ নেন।
সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন যাদেরকে নিয়োগ দেয়, তাদের ক্ষেত্রে ইসি যে রিপোর্ট দেয়, সেটিই যেন চূড়ান্ত হয়। এটি জবাবদিহি নিশ্চিতে কাজ করতে হবে।
‘এ ক্ষেত্রে সরকার যেন হস্তক্ষেপ না করে। নির্বাচনের সময় মন্ত্রণালয়গুলোর ওপর খবরদারির ক্ষমতা ইসিকে দিতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘সার্বিকভাবে রাষ্ট্রের কাঠামো ভেঙে পড়েছিল। অনেক জায়গায় মাটির সঙ্গে মিশে গিয়েছিল। কাজেই দায়দায়িত্ব এখন থেকেই শুরু। অনেক রক্ত ঝরেছে।
‘৫০০ থেকে ৭০০ মানুষের চোখ নষ্ট হয়ে গেছে। তারা বলেছে, কোনো অসুবিধা নেই। কাজেই আমরা যদি ঠিক করতে না পারি, তাদের রক্তের সঙ্গে বেইমানি হবে।’
উপদেষ্টা বলেন, ‘ডিসিরা নির্বাচন করেন, এ কথা ঠিক নয়। আইনে ৩০০ আসনে ৩০০ রিটার্নিং অফিসার দেয়া যাবে। আবার ডিসিদের দিতে হবে, এমন কোনো কথা নেই।’
তিন ধাপে ইসি গঠন করা যেতে পারে মন্তব্য করে তিনি বলেন, তৃতীয় ধাপে পার্লামেন্ট থেকে চূড়ান্ত প্রস্তাব যাবে রাষ্ট্রপতির কাছে। প্রথম ধাপে সবার নামই প্রকাশ করা হবে।
সাবেক এ নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘দলের প্রার্থী হতে হলে দলের প্রাথমিক সদস্য পদে অন্তত তিন বছর থাকতে হবে। তৃণমূলে এক/দুই বছর থেকে প্রার্থী বাছাই প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে।
‘এ ছাড়া নারী প্রার্থী ৫০ জন বা ১০০ জন, যাই করেন, সেটা সরাসরি নির্বাচনে করেন। সংরক্ষিত আসনে নারীদের কোনো অংশগ্রহণ থাকে না, তবে এটা করবেন কি না, সেটা আপনারা রাজনৈতিক দলগুলো সিদ্ধান্ত নেবেন।’
সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক এবং নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘নির্বাচন একটা দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া। এটা এক দিনের বিষয় নয়। এখানে সহিংসতামুক্তভাবে প্রচারণা থেকে শুরু করে ভোট গণনা হয়। নির্বাচন প্রক্রিয়া সুষ্ঠু এবং গ্রহণযোগ্য হতে হবে। পুরো প্রক্রিয়া সঠিক হতে হবে।
‘যে নির্বাচন গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে কার্যকর করে না, সেটা সংবিধানের লঙ্ঘন। সরকার, প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সহায়তা না করলে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়।’
তিনি বলেন, ‘নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গুরুত্বপূর্ণ। রাজনৈতিক দল সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন না করলে নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু নির্বাচন করতে পারবে না। গণমাধ্যম, নাগরিক সমাজসহ আরও অংশীজনদের সঠিক ভূমিকা পালন করতে হবে।’
বদিউল আরও বলেন, ‘সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য রাজনৈতিক ঐকমত্য এবং রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন প্রয়োজন। নিরপেক্ষ, সততা, নিষ্ঠা ও পেশাদারত্বের সাথে দায়িত্ব পালন করবে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন।
‘নির্বাচন কমিশন নিয়োগের এখতিয়ার নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের নয়। এ সিদ্ধান্ত নেবে অন্তর্বর্তী সরকার।’
আরও পড়ুন:জঙ্গিবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার উত্থান এবং জনজীবনে সংকটের অভিযোগ করে তার দায়ে অন্তর্বর্তী সরকারের পদত্যাগের দাবি জানিয়েছে ইনসানিয়াত বিপ্লব বাংলাদেশ।
জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে শনিবার দুপুরে সমাবেশে সংগঠনটি এ দাবি জানায়।
বিক্ষোভ সমাবেশে লিখিত বক্তব্যে দলটির চেয়ারম্যান ইমাম হায়াত বলেন, ‘দেশে ধর্মের নামে অধর্ম, উগ্রবাদ, জঙ্গিবাদ মাথাচাড়া দিয়েছে। সাম্প্রদায়িক, সামাজিক, রাজনৈতিক ক্ষেত্রে জনগণের জানমালের নিরাপত্তাহীনতা তৈরি হয়েছে।
‘একই সঙ্গে অসহনীয়ভাবে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি ও জনজীবনে ব্যাপক সংকটের দায়ে অন্তর্বর্তী সরকারের পদত্যাগ দাবি করছি।’
তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্র হত্যা করেছিল। ওই সরকারের স্বৈরতন্ত্র থেকে মুক্তির জন্য দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছি। বিগত জুন, জুলাই এবং আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন প্রকৃত পক্ষে সব মানুষের আন্দোলন ছিল, তবে আন্দোলনে বিগত স্বৈরাচারের পতন হলেও জনগণের আন্দোলনের লক্ষ্য ও প্রত্যাশা ছিনতাই হয়ে গিয়েছে।’
ওই সময় আরও বক্তব্য দেন দলের মহাসচিব শেখ রায়হান, দলটির নেতা আবু আরেফ সরতাজ, এমদাদুল হক সাইফ, সুফি আহমেদ শাহ, হাফেজ ইলিয়াসসহ অনেকে।
আরও পড়ুন:শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে হিন্দু সম্প্রদায়ের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় ও পূজা পরিদর্শন করতে শনিবার বিকেলে ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে যাবেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানায়, বেলা তিনটায় প্রধান উপদেষ্টা ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে দুর্গাপূজা পরিদর্শন করতে যাবেন। তিনি সেখানে হিন্দু সম্প্রদায়ের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় অংশ নেবেন।
বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মনীন্দ্র কুমার নাথ প্রধান উপদেষ্টার মন্দির পরিদর্শনের বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেন।
প্রধান উপদেষ্টার আগমনকে কেন্দ্র করে ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির এলাকায় নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা গ্রহণ করা হয়েছে। এ লক্ষ্যে এসএসএফসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সেখানে কাজ করছে। সাধারণ মানুষের প্রবেশে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে।
রাজধানীর তাঁতীবাজারের একটি পূজামণ্ডপ এলাকায় ছিনতাইয়ের ঘটনায় তিনজনকে আটক করেছে পুলিশ।
ছিনতাইকালে ছুরিকাঘাতে আহত পাঁচজনকে চিকিৎসার জন্য মিটফোর্ড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান এক খুদেবার্তায় এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
খুদেবার্তায় বলা হয়, শুক্রবার রাত আটটার দিকে রাজধানীর তাঁতীবাজার এলাকার ১৭ নম্বর পূজামণ্ডপের পেছনে একদল ছিনতাইকারী মণ্ডপে আসা এক নারীর গলার চেইন ছিনতাইয়ের চেষ্টা করে। ওই সময় ওই নারীর চিৎকার শুনে আশেপাশের লোকজন ছুটে এলে ছিনতাইকারীরা চাকু দিয়ে তাদের এলোপাতাড়ি আঘাত করে। এতে ঘটনাস্থলে পাঁচজন আহত হন।
আহত পাঁচজনের মধ্যে কারও হাতে, কারও গলা, কারও বুকে আঘাত লাগে। পরবর্তী সময়ে স্থানীয় জনসাধারণের সহায়তায় পুলিশ তিন ছিনতাইকারীকে আটক করে।
আটককৃতদের কাছ থেকে একটি চাকু ও একটি চেইন এবং ঘটনাস্থল থেকে তরল পদার্থে ভরা একটি বোতল উদ্ধার করা হয়।
পুলিশের সহায়তায় আহত লোকজনকে মিটফোর্ড হাসপাতালে পাঠানো হয়।
আটককৃতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন বলে খুদেবার্তায় জানানো হয়।
আরও পড়ুন:দ্রুত নির্বাচনের লক্ষ্যে বিএনপি নির্বাচনমুখী সংস্কারগুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে চায় বলে জানিয়েছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ।
শহীদ নাজির উদ্দিন জেহাদের ৩৫তম শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে বৃহস্পতিবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে স্মরণসভায় তিনি এ কথা জানান।
৯০-র ডাকসু ও সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্য এ কর্মসূচির আয়োজন করে।
ওই সময় সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘বর্তমান সরকারের সংস্কারে মানুষের মধ্যে নির্বাচনের আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টাকে বলেছি নির্বাচনের রোডম্যাপ দিতে। নির্বাচনমুখী সংস্কারগুলো আগে বাস্তবায়ন করতে হবে।
‘একটা নির্বাচিত সরকার লাগবে। সংবিধানে বর্তমানে যেখানে যা কিছুই থাকুক না কেন, তা অকার্যকর।’ বিএনপির স্থায়ী কমিটির অন্যতম এ সদস্য বলেন, ‘গণপরিষদ গঠনের কথা অপ্রাসঙ্গিক। সুতরাং এই গণপরিষদের ভাবনা যারা বলছেন, তাদের আবারও ভাবা উচিত।’
তিনি আরও বলেন, ‘মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকারের জন্য পতিত ফ্যাসিবাদ কিছুদিন পরপর প্রতিবিপ্লবের স্বপ্ন দেখে। বিদেশে বসে দেশে অস্থিরতা চালাচ্ছেন শেখ হাসিনা, কিন্তু এটি সফল হবে না।’
আরও পড়ুন:আওয়ামী লীগ নেতা এবং সাবেক বন ও পরিবেশ মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরীর মুক্তি পাওয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
রাজধানীর খিলগাঁওয়ে বৃহস্পতিবার গুম-খুন হওয়া পরিবারের সদস্যদের উদ্যোগে সাবের হোসেনের বিচারের দাবিতে এক সমাবেশে তিনি এ প্রশ্ন তোলেন।
রিজভী বলেন, ‘ড. মুহাম্মদ ইউনূস অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান। উপদেষ্টা আসিফ নজরুল আমার অত্যন্ত ঘনিষ্ঠজন। তিনি আইন উপদেষ্টা থাকা অবস্থায় একজন খুনি কীভাবে জামিন পান? এই এলাকায় কী রকম জুলুম, নিপীড়ন, নির্যাতন চালিয়েছে।
‘কতজন হাত-পা হারিয়েছে। জনির মতো তরুণ ছেলে জীবন দিয়েছে। তাকে বাড়ি থেকে তুলে এই জায়গায় নিয়ে এসে ১৬টি গুলি করে হত্যা করেছে। সাবের হোসেন চৌধুরী এর জন্য দায়ী নন কি? তার নির্দেশেই (সাবের হোসেন চৌধুরী) ওই এলাকায় ১১ জন গুম, খুনের শিকার হয়েছে। এর দায় তিনি এড়াতে পারেন না।’
বিএনপির জ্যেষ্ঠ এ নেতা বলেন, ‘শেখ হাসিনা গণহত্যা চালিয়েছেন। তার সহযোগী এ সাবের হোসেন। তিনি তো শেখ হাসিনার চেতনায় লালিত।
‘তাদের আমলে কেউ গণতন্ত্রের পক্ষে টুঁ শব্দ করতে পারেনি। বিএনপির পক্ষে, খালেদা জিয়ার পক্ষে, তারেক রহমানের পক্ষে কথা বলতে পারেনি। এ জন্যই তিনি (সাবের হোসেন চৌধুরী) গুম, খুনের কর্মসূচি সফল করেছেন।’
ছাত্রদলের সাবেক এ সভাপতি বলেন, ‘এই অন্তর্বর্তী সরকারের আসিফ নজরুলের মতো মানুষ আছে। তারা থাকা অবস্থায় ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কীভাবে সাবের হোসেন চৌধুরী জামিনে মুক্তি পান। তাহলে এ সরকার কাকে প্রটেকশন দিচ্ছে?’
রিজভী আরও বলেন, ‘সাবের হোসেন চৌধুরী বিনা ভোটে বছরের পর বছর এমপি থেকেছেন। তার নির্দেশেই এতগুলো খুন, বিচার-বহির্ভূত হত্যা হয়েছে। তিনি যদি জামিনে মুক্তি পান, তাহলে যারা অর্থ কেলেঙ্কারিকে যেসব পুলিশ ক্রসফায়ার দিয়েছে, বাসা থেকে তুলে নিয়ে আঙুলের নখ তুলে ফেলেছে, মাথায় বন্দুক রেখে গুলি করে হত্যা করেছে, তারা তো কয়েক দিনের মধ্যে ছাড়া পেয়ে যাবে। এর উত্তর কী দেবেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।’
পরে সাবের চৌধুরীর গ্রেপ্তারের দাবিতে রুহুল কবির রিজভীর নেতৃত্বে বিক্ষোভ করেন নেতা-কর্মীরা। ওই সময় উপস্থিত ছিলেন বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য হাবিবুর রশিদ হাবিব, মহানগর বিএনপির নেতা ইউনূস মৃধা, সাবেক কাউন্সিলর লিটন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সহসভাপতি জাহিদুল কবির, যুবদলের মেহেবুব মাসুম শান্তসহ অনেকে।
আরও পড়ুন:ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে রোগীর স্বজনের কাছ থেকে টাকা চুরির অভিযোগে মাহফুজা আক্তার নিপা (২৬) ও মোহাম্মদ মইনুদ্দিন (৬৫) নামের দুজনকে আটক করেছে পুলিশ।
তাদের কাছ থেকে ১৩ হাজার ৫০০ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে।
মইনুদ্দিনের বাড়ি নোয়াখালীর কবিরহাট থানার সাগরপুর গ্রামে। আর নিপার বাড়ি নরসিংদীর রায়পুরা থানার অলিপুরার নবিয়াবাদ গ্রামে। দুজনই ঢাকার ডেমরা এলাকায় থাকেন।
হাসপাতালের নতুন ভবনের দ্বিতীয় তলায় বৃহস্পতিবার সকালে ব্লাড ব্যাংকের সামনে থেকে দুজনকে আটক করা হয়।
রোগীর স্বজন মোহাম্মদ নোমান হোসেন বলেন, ‘গত (বুধবার) রাত থেকেই অভিযুক্ত দুইজন হাসপাতালের দ্বিতীয় তলায় ঘোরাফেরা করছিলেন। আমার রোগীর রক্তের প্রয়োজনে ব্লাড ব্যাংকের সামনে গত রাত থেকে রক্তের জন্য অপেক্ষায় ছিলাম।
‘এ সময় অভিযুক্ত নারী ও ওই ব্যক্তি কৌশলে আমার কাছ থেকে ৭০ হাজার টাকা নিয়ে যায়। পরে আমি বিষয়টি বুঝতে পেরে ঢাকা মেডিক্যালের পুলিশ ক্যাম্প ইনচার্জকে জানাই। পরে তারা এসে ওই নারীসহ ওই ব্যক্তিকে পুলিশ ক্যাম্পে নিয়ে যায়।’
ঢামেক হাসপাতাল পুলিশ ক্যাম্প ইনচার্জ ও পরিদর্শক মোহাম্মদ ফারুক বলেন, ‘আমরা খবর পেয়ে হাসপাতালের নতুন ভবনের দ্বিতীয় তলার ব্লাড ব্যাংকের সামনে থেকে অভিযুক্ত ওই নারীসহ ওই ব্যক্তিকে আটক করে হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়িতে নিয়ে আসি। এ সময় তাদের কাছ থেকে নগদ ১৩ হাজার ৫০০ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে।
‘এরা সক্রিয় চোর ও দালাল চক্রের সদস্য। তাদের জিজ্ঞাসাবাদে অসংলগ্ন এবং সন্দেহজনক কথাবার্তা বলে তারা। তারা একবার স্বীকার করে ৪৫ হাজার টাকা নিয়েছে, কিন্তু তাদের কাছ থেকে মাত্র ১৩ হাজার ৫০০ টাকা আমরা উদ্ধার করেছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাকি টাকা হয়তো এই চোর চক্রের সদস্যদের মাধ্যমে তারা পাচার করে দিয়েছে। বিষয়টি শাহবাগ থানাকে অবগত করা হয়েছে।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য