ইউক্রেন ইস্যুতে বৈশ্বিক মেরুকরণের মাঝে তিন দিনের সফরে বাংলাদেশে আসছেন রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ।
বাংলাদেশ স্বাধীনের ৫১ বছরের মধ্যে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন বা এখনকার রাশিয়ার প্রতিনিধিত্বকারী সর্বোচ্চ পর্যায়ের নীতিনির্ধারকের হিসেবে তিনি ঢাকা আসছেন।
বর্তমান বিশ্বের ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় ল্যাভরভের সফরের বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন কূটনীতি বিশ্লেষকেরা।
তারা মনে করছেন, ইন্ডিয়ান ওশেন রিম অ্যাসোসিয়েশনের (আইওআরএ) মন্ত্রীপর্যায়ের বৈঠকে অংশ নেয়ার পাশাপাশি ল্যাভরভের ঢাকা সফরের অন্য গুরুত্বও রয়েছে।
বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, ইউক্রেন যুদ্ধ কেন্দ্র করে ছোট হয়েছে রাশিয়ার কূটনৈতিক জগত, এর সঙ্গে পশ্চিমা অবরোধে বিপুল চাপে পড়েছে দেশটির অর্থনীতি। এমন সময়ে বাংলাদেশ সফরে পুতিনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ঢাকার সঙ্গে সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ করার চেষ্টা করবেন। রাশিয়ার দুই বন্ধু দেশ ভারত ও চীনের মধ্যে সম্পর্কের শীতলতা দূর করার উদ্যোগও নিতে পারেন তিনি।
আইওআরএ সম্মেলনে যোগ দিতে ২৩ নভেম্বর বিকেলে তিন দিনের সফরে ঢাকায় পৌঁছাবেন রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী। বাংলাদেশ সফরের শুরুর দিনেই দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ে বৈঠক হবে। সফরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতও করবেন ল্যাভরভ।
কূটনীতি বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, আইওআরএ সম্মেলনে যোগ দেয়ার বাইরে রাশিয়ার বন্ধু খুঁজবেন ল্যাভরভ। কারণ, এই সম্মেলনে ১৪ দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী যোগ দিচ্ছেন। অতি সম্প্রতি ল্যাভরভ এই অঞ্চলের আরও কয়েকটি দেশ সফর করেছেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, নোটভারবালের মাধ্যমে ঢাকায় কয়েকটি বৈঠকসহ কিছু বিষয়ে নিশ্চয়তা চেয়েছে মস্কো। তাতে সায় দিয়েছে ঢাকা।
পররাষ্ট মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এ সম্মেলনে যোগ দিলে বাংলাদেশ ছাড়াও আইওআরএর অন্য সদস্য রাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠকের সুযোগ থাকবে রাশিয়ার। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে চাপে রয়েছে দেশটি। জাতিসংঘে রাশিয়ার বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রস্তাব আনছে পশ্চিমারা। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সদস্য দেশগুলোর বড় অংশ তাদের বিরুদ্ধে ভোট দিচ্ছে। ফলে বৈশ্বিক চাপ সামলাতে বিভিন্ন দেশে গিয়ে সম্পর্ক ঝালাই করে নিচ্ছে মস্কো।
‘নিজেদের বিচ্ছিন্ন না রেখে বৈশ্বিক ফোরামে রাশিয়ার পক্ষে ভোটও চাচ্ছে মস্কো। পক্ষে ভোট দেয়া সম্ভব হলে দেশগুলো যাতে ভোটদানে বিরত থাকে- তেমন আহ্বান জানাচ্ছে তারা। ফলে বাংলাদেশের কাছেও একই ধরনের আহ্বান থাকবে তাদের।’
মেরুকরণ নিয়ে ঢাকাও সতর্ক
রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ঢাকা সফরের ওপর পশ্চিমা দেশগুলোও নজর রাখছে। ফলে বিষয়টিতে সতর্ক অবস্থান রয়েছে বাংলাদেশের।
জানিয়েছেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন নিউজবাংলাকে জানান, ভূ-রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ মাথায় রেখেই রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে স্বাগত জানাবে ঢাকা।
তিনি বলেন, ‘অবশ্যই এখন যে মেরুকরণ চলছে সেটা তো আছে। তারপরেও রাশিয়ার সঙ্গে আমাদের ঐতিহ্যবাহী যে সম্পর্ক আছে, সেটার আলোকে আমরা তাকে স্বাগত জানাব। আমাদের পক্ষ থেকে যে অগ্রাধিকার ও চ্যালেঞ্জগুলো আছে সেগুলো আরও স্পষ্ট করে বলতে পারব।’
তিনি বলেন, ‘ইন্ডিয়ান ওশেন রিম অ্যাসোসিয়েশনে এই প্রথমবারের মতো তারা (রাশিয়া) অবজারভার দেশ হিসেবে অংশ নিচ্ছে। এখানে তারা কীভাবে অংশগ্রহণ করতে পারে সেটা তুলে ধরবে। সেটাই হয়তো তাদের একটি মূল লক্ষ্য। এই সংস্থা নিয়ে যদি তাদের কোনো বক্তব্য থাকে সেটি আমরা শুনব।
‘এছাড়া অফকোর্স পোলারাইজেশন যা আছে, তা তো আছেই। তারপরেও রাশিয়ার সঙ্গে আমাদের ঐতিহাসিক সম্পর্কের আলোকে আমরা তাকে সম্মান জানাব।’
মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ‘রাশিয়া নানাভাবে বিভিন্ন ইস্যুতে চাপের মধ্যে আছে। সুতরাং সের্গেই ল্যাভরভ এলে অবশ্যই তা নিয়ে আলোচনা হবে। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর (এম এ মোমেন) সঙ্গে দেখা হবে। সেখানে দ্বিপাক্ষিক বিষয়ে আলোচনা করার সুযোগ হবে। বর্তমান যে পরিস্থিতি, সেখানে জ্বালানি সংকটের মতো বিষয়ে কোনো ধরনের সম্ভাবনা আছে কিনা, তা নিয়ে আলোচনা হতে পারে।
‘নিষেধাজ্ঞা ও পাল্টা নিষেধাজ্ঞার ফলে আমাদের চলমান যে প্রকল্পগুলো আছে, সেগুলোর যাতে কোনো সমস্যা না হয়, তা নিয়ে আলোচনা হবে। এর সঙ্গে রোহিঙ্গা ইস্যুতে আমরা রাশিয়াকে আরও কাছে পেতে চাই। এছাড়া দ্বিপাক্ষিক বিভিন্ন বিষয়ে আমরা আলোচনা করব।’
পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘রাশিয়ার সঙ্গে আমাদের যে প্রজেক্ট আছে সেগুলো নিয়ে আলোচনা হবে। যেমন রূপপুর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প। সে প্রকল্পটি যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সে বিষয়েও আমরা কথা বলব।’
‘বন্ধু হলেও ভুল ভুলই, এমন বার্তা দিতে হবে’
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক ও সাবেক রাষ্ট্রদূত ওয়ালিউর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সের্গেই ল্যাভরভের ঢাকা আসাটা অবশ্যই বড় খবর। এমন একটি সময়ে তিনি আসছেন, যার আগেই তিনি জি-২০ সম্মেলনে অংশ নিতে বালি যাবেন।
‘১৯৭১ সালে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন আমাদের স্বাধীনতায় জন্য জাতিসঙ্ঘে পরপর দুইবার ভেটো দিয়েছিল। এটি আমাদের স্বাধীনতাকে ত্বরান্বিত করেছিল এবং পাকিস্তানকে সারেন্ডার করতে বাধ্য করেছিল। এটা আমাদের মনে রাখতে হবে। এই মূল্যায়নটা আমাদের করতে হবে।’
আন্তর্জাতিক সম্পর্কের এই বিশ্লেষক বলেন, ‘একইসঙ্গে এটাও বলতে হবে একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশ ইউক্রেনকে রাশিয়া যেভাবে আক্রমণ করল, আমি ব্যক্তিগতভাবে এটা মেনে নিতে পারি না। একটা বন্ধু দেশ হিসেবে রাশিয়াকে এটা অনানুষ্ঠানিকভাবে আমাদের বলা উচিত। কারণ, আমি মনে করি কোনো বন্ধু রাষ্ট্র যদি ভুল করে অপর বন্ধু রাষ্ট্রের উচিত তা ধরিয়ে দেয়া। জাতিসংঘেও আমাদের উচিত ছিল এই আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ভোট দেয়া।’
রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ঢাকা সফর নিয়ে বাংলাদেশের সামনে কোনো চ্যালেঞ্জ দেখছেন না তিনি। বর্ষীয়ান এই কূটনীতিক বলেন, ‘বরং তাদের বন্ধু হিসেবে আরও কাছে যাওয়ার এটা একটা অপরচুনিটি। আমাদের মনে রাখতে হবে রাষ্ট্র হিসেবে আমাদের স্থায়ী কোনো বন্ধুও নেই, শত্রুও নেই। কিন্তু আমাদের দেশের স্বার্থটি পার্মানেন্ট। এটাকেই সবার আগে প্রাধান্য দিতে হবে।’
‘যুদ্ধ বন্ধের তাগিদ দেয়া জরুরি’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে উদ্যোগ নেয়ার ওপর জোর দিচ্ছেন।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমার মনে হয় একটা সম্মেলন কেন্দ্র করে এই সফর হলেও আমাদের উচিত হবে যুদ্ধ কীভাবে বন্ধ করা যায় তা নিয়ে আলোচনায় জোর দেয়া। রাশিয়ার সঙ্গে আমাদের যে সম্পর্ক, তাতে তাদের সঙ্গে বন্ধুত্বের নতুন করে পরীক্ষা দেয়ার কিছু নেই।
‘তারা সেই ১৯৭১ সালের থেকেই তারা আমাদের সঙ্গে আছে। এছাড়া আমাদের কিছু চুক্তি আছে। পারমাণবিক চুক্তি আছে। তা নিয়েও আলোচনা হওয়া দরকার। আমাদের পররাষ্ট্রনীতি, সবার সঙ্গে বন্ধুত্বের বিষয়টি নিশ্চয়ই রাশিয়ার জানা আছে। তাই আমার মনে হয় না এ ক্ষেত্রে বড় কোনো পরিবর্তন আসবে।
‘এর বাইরে আমরা যেটা চাইব সেটা হলো, রাশিয়ার সঙ্গে মিয়ানমারের যেহেতু একটি ভালো সম্পর্ক হয়েছে, অ্যাটলিস্ট আমরা তারা যেন রোহিঙ্গা ইস্যুতে সক্রিয় হয়।’
তিনি বলেন, ‘মিয়ানমার ইদানিং রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক নতুন করে শক্ত করেছে, তাদের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা মস্কো ঘুরে এসেছেন। তাই সেই সুযোগটা আমাদের কাজে লাগাতে হবে।
‘রোহিঙ্গা ইস্যুতে আমরা সরাসরি রাশিয়ার মতামত জানতে চাইতে পারি। আবার রাশিয়াও হয়ত জানতে চাইবে জিওপলিটিক্সে আমাদের মতামত। সারা বিশ্ব এ ক্ষেত্রে পরিবর্তন আসায় রাশিয়ারও এখন বাংলাদেশকে প্রয়োজন। একই ভাবে আবার বাংলাদেশের প্রয়োজন রাশিয়াকে। তবে এই প্রয়োজনের ক্ষেত্রে অন্য দেশের সঙ্গে আমাদের যে সম্পর্ক তাও গুরুত্বপূর্ণ। রাশিয়াও সেটা জানে।’
আরও পড়ুন:কদিন ধরেই তীব্র গরম। দেশের কোথাও মাঝেমধ্যে বৃষ্টি হচ্ছে, তবে গরম অবশ্য কমছে না। আবহাওয়া আপাতত এমনই থাকবে।
শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে এ তথ্য দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, কুমিল্লা ও কিশোরগঞ্জ অঞ্চলসহ ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।
এতে বলা হয়, একই সঙ্গে কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলাবৃষ্টি হতে পারে। এ ছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।
অধিদপ্তর বলছে, রাজশাহী, পাবনা ও টাঙ্গাইল জেলাসহ খুলনা বিভাগের ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ এবং চাঁদপুর ও মৌলভীবাজার জেলাসহ ঢাকা ও রাজশাহী বিভাগের অবশিষ্টাংশ ও বরিশাল বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সারা দেশে দিনের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তি বৃদ্ধি পেতে পারে।
আবহাওয়ার সার্বিক পর্যবেক্ষণে বলা হয়, লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে।
আগামী পাঁচ দিনের পূর্বভাসে বলা হয়েছে, তাপপ্রবাহ প্রায় একই রকম থাকতে পারে। আবহাওয়ায় তেমন পরিবতর্তন আসবে না।
দেশে চলমান দাবদাহ শুক্রবার থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টা অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর।
রাষ্ট্রীয় সংস্থাটি শুক্রবার তাপপ্রবাহের সতর্কবার্তায় এ কথা জানায়।
আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক স্বাক্ষরিত সতর্কবার্তায় বলা হয়, ‘দেশের ওপর দিয়ে চলমান তাপপ্রবাহ আজ (১৯ এপ্রিল, ২০২৪) হতে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টা অব্যাহত থাকতে পারে এবং তাপমাত্রা আরও বৃদ্ধি পেতে পারে।
‘জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তি বৃদ্ধি পেতে পারে।’
৭২ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাস
আবহাওয়া অধিদপ্তর শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে সিনপটিক অবস্থা নিয়ে বলেছে, লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে রয়েছে।
তাপপ্রবাহ বা দাবদাহের বিষয়ে বলা হয়, বাগেরহাট, যশোর, চুয়াডাঙ্গা ও কুষ্টিয়া জেলার ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে দিনাজপুর, রাঙ্গামাটি, চাঁদপুর, খুলনা, সাতক্ষীরা, বরিশাল ও পটুয়াখালী জেলা এবং ঢাকা ও রাজশাহী বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এটি অব্যাহত থাকতে পারে।
আরও পড়ুন:প্রথম ধাপের উপজেলা নির্বাচনে মোট বৈধ প্রার্থী দাঁড়িয়েছে এক হাজর ৭৮৬ জন। মাঠ পর্যায় থেকে পাঠনো তথ্য একীভূত করার পর এ তথ্য জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ।
তিনি জানান, প্রথম ধাপে চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন এক হাজার ৮৯০ জন। এদের মধ্যে বাছাইয়ে ১০৪ জনের মনোনয়নপত্র বাতিল, আর বৈধতা পেয়েছে এক হাজার ৭৮৬ প্রার্থীর।
নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ১৮ থেকে ২০ এপ্রিল পর্যন্ত আপিল করা যাবে। আপিল নিষ্পত্তি ২১ এপ্রিল, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ২২ এপ্রিল। এরপর প্রতীক বরাদ্দ ২৩ এপ্রিল এবং ১৫০ উপজেলায় ভোটগ্রহণ হবে আগামী ৮ মে।
অপপ্রচার রোধে প্রশিক্ষণের প্রয়োজন হলে ভারতীয় প্রতিষ্ঠানের সহায়তা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত।
বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে প্রতিমন্ত্রীর নিজ দপ্তরে ভারতের হাইকমিশনার প্রণয় কুমার ভার্মার সৌজন্য সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।
আরাফাত বলেন, ‘অপপ্রচার রোধে ভারতের কিছু প্রতিষ্ঠান কাজ করে। তারা কীভাবে কাজ করে, তাদের অভিজ্ঞতা এবং প্রক্রিয়া-পদ্ধতি বিনিময় জানা-বোঝার চেষ্টা করব। এক্ষেত্রে কোনো প্রশিক্ষণের প্রয়োজন হলে আমরা তাদের কাছ থেকে সহায়তা নেব।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যে যেসব কো-অপারেশন আছে, সেসব নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বিশেষ করে বিটিভিতে দুই ঘণ্টার একটি চাংক নিয়ে আমরা আন্তর্জাতিক সংবাদ বিশ্লেষণ, চলমান ঘটনাপ্রবাহ এবং সংবাদ উপস্থাপনা শুরু করতে যাচ্ছি। সেক্ষেত্রে ভারতের যে সংবাদ সংস্থাগুলো আছে, বিশেষ করে এএনআইয়ের সঙ্গে কোলাবরেশন করা যায় কি না, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
‘যেহেতু বিটিভি ইন্ডিয়াতে দেখানো হয়, সেহেতু দুই ঘণ্টার এ চাংক আমরা ধীরে ধীরে দুই, তিন, চার ঘণ্টা পর্যন্ত বাড়াব। আমরা আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী করতে চাচ্ছি, যেখানে দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের খবর থাকবে। এর বাইরেও বিভিন্ন দেশের খবর থাকবে।’
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করব ভারতীয় দর্শকদের আকৃষ্ট করতে। এ ছাড়া ইন্ডিয়ান ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন নিয়ে ইনস্টিটিউশন আছে, তাদের সঙ্গে কোলাবরেশন করা, বিভিন্ন ধরনের প্রোগ্রাম ও ট্রেনিং করা।’
‘সম্প্রতি মুজিব শিরোনামের যে সিনেমাটি সহ-প্রযোজনা হয়েছে, এমন অন্য কোনো সিনেমায় সহ-প্রযোজনার সুযোগ আছে কি না তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে’- যোগ করেন প্রতিমন্ত্রী।
ভারতের সিনেমা যেহেতু বাংলাদেশের বাজারে চলে সেহেতু বাংলাদেশেরও ভালো মানের সিনেমা ভারতে চালানোর বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘দর্শককে জোর করে কিছু দেখানো যায় না। বাজারে কোনো জিনিসের চাহিদা থাকলে তা স্বয়ংক্রিয়ভাবেই যাবে-আসবে। সিনেমা যেহেতু প্রোডাক্ট, সেহেতু ভারতের বাজারে দর্শক থাকলে অবশ্যই যাবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘যে বিষয়গুলো নিয়ে আমাদের আরও কো-অপারেশনের সুযোগ আছে, সেসব নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি। আমি মনে করি- বাংলাদেশ এ বিষয়ে বেশি লাভবান হবে। কারণ ভারতের ফিল্মে, টেলিভিশনে বা অন্যান্য জায়গায় যে অভিজ্ঞতা আছে, তা আমরা যত বেশি নেয়ার চেষ্টা করা যায়। দেশের উন্নয়নের জন্য এসব জরুরি।’
আরও পড়ুন:সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি অর্জনে অবদান রাখতে এবং দেশকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলায় পরিণত করায় অবদান রাখতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সবকিছু করছে।
বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অফ ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস) মিলনায়তনে ‘ডিফেন্স ডিপ্লোমেসি: স্ট্র্যাটেজি ফর বাংলাদেশ’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সূত্র: ইউএনবি
সেনাপ্রধান বলেন, ‘মাতৃভূমিকে রক্ষা করা, দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা আমাদের কর্তব্য এবং আমরা তার জন্য প্রস্তুত আছি। আমরা সবকিছুই করছি।’
বঙ্গবন্ধুর পররাষ্ট্র নীতির বাণী ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এই পররাষ্ট্রনীতি বাস্তবায়নে আমরা সবকিছু করছি।’
জাতীয় নিরাপত্তা বজায় রেখে টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করে সেনাপ্রধান বলেন, ‘কূটনীতি যেকোনো ধরনের জাতীয় স্বার্থ অর্জনের প্রচেষ্টা ছাড়া আর কিছুই নয়।’
বেসামরিক শক্তির সহায়তায় সেনাবাহিনী কীভাবে দেশে গঠনমূলক কর্মকাণ্ড, দেশ-বিদেশে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা এবং অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছে সে কথাও উল্লেখ করেন তিনি।
সেনাপ্রধান বলেন, ‘যেখানেই সুযোগ আছে, তা প্রত্যক্ষ হোক বা পরোক্ষ, আমরা সুযোগ গ্রহণ করি এবং বাংলাদেশের স্বার্থে সবকিছু করি।’
সামরিক কূটনীতির কথা বলতে গিয়ে জেনারেল শফিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আরও সম্পদ ও বাজেট বরাদ্দ করে তাদের সক্ষমতা বাড়াতে হবে। আমরা জানি কীভাবে এটা করতে হয়। কিন্তু আমাদের এটা করার সামর্থ্য থাকা উচিত।’
মিয়ানমার ইস্যু প্রসঙ্গে সেনাপ্রধান বলেন, ‘মিয়ানমারের সামরিক নেতাদের কেউ কেউ আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার মুখোমুখি হচ্ছেন এবং এখানে নিজেদের সমস্যায় ফেলার ঝুঁকি রয়েছে।
‘এক বন্ধুকে খুশি করার জন্য আমরা আরেক বন্ধুর বিরোধিতা করতে পারি না। বেশকিছু বিষয় রয়েছে যা আমাদের খেয়াল করতে হবে। এসব ঘটনার প্রভাবও বিবেচনায় নেয়া হয়েছে। আমরা আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি এবং আমরা সঠিক পথেই রয়েছি।’
জেনারেল শফিউদ্দিন বলেন, দূর থেকে চালানো যায় এমন কিছু যানবাহন দেশেই তৈরি হচ্ছে যা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর জন্য বেশ উপকারে আসবে। আগে এসব যন্ত্রপাতি আমদানি করতে হতো। তাই এখন আমাদের প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হচ্ছে।’
সেনাপ্রধান বলেন, ‘বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কেবল যুদ্ধে লড়াই করাই শেখে না, বরং জাতীয় স্বার্থে কীভাবে যুদ্ধ প্রতিরোধ বা এড়াতে হয় তা-ও জানে। আমরা সঠিক পথেই আছি এবং আমরা আমাদের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হবো না।’
একইসঙ্গে তিনি বলেন, ‘দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা সামরিক বাহিনীর প্রধান দায়িত্ব। এটি তারা কখনও ভুলে যায় না এবং এ কাজে সবসময় তাদের প্রস্তুত থাকতে হবে।
‘উদ্দেশ্য রাতারাতি পরিবর্তন হতে পারে। কিন্তু সক্ষমতা রাতারাতি পরিবর্তন হয় না। আজ আপনি আমার বন্ধু, আগামীকাল বন্ধু না-ও হতে পারেন। কিন্তু জাতীয় স্বার্থ, মাতৃভূমি রক্ষায় আমাদের সক্ষমতা থাকতে হবে- পররাষ্ট্রনীতির এই আদেশ আমাদের সবার জন্য সমান।’
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বিআইআইএসএস চেয়ারম্যান রাষ্ট্রদূত এ এফ এম গওসোল আযম সরকার ও মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. আবু বকর সিদ্দিক খান।
আরও পড়ুন:বাংলাদেশের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড বাংলাদশের (বিজিবি) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি এলাকা পরিদর্শন করেছেন।
বিজিবি মহাপরিচালক বৃহস্পতিবার সকালে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ১১ বিজিবি ব্যাটালিয়ন সদর দপ্তরের কোয়ার্টার গার্ড পরিদর্শন শেষে বিজিবি কার্যালয় পরিদর্শন করেন। দুপুরে মিয়ানমারের রাখাইন থেকে পালিয়ে আসা বর্ডার গার্ড সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয় নেয়া প্রতিবেশী দেশটির জান্তা বাহিনীর সদস্যদের খোঁজখবর নেন তিনি।
পরে তিনি ১১ বিজিবির অধীন চাকঢালা বিওপি (বর্ডার অবজারবেশন পোস্ট) পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি মিয়ানমার থেকে জান্তা বাহিনীর সদস্যদের পালিয়ে আসার স্পটগুলো সম্পর্কে খোঁজখবর নেন। সীমান্তে বিজিবিকে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে নির্দেশ দেন।
পরিদর্শনকালে বিজিবি মহাপরিচালকের সঙ্গে ছিলেন কক্সবাজার রিজিয়ন কমন্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ মোরশেদ আলমসহ বিজিবি রামুর সেক্টর ও অধীনস্ত বিজিবি ব্যাটালিয়নে নাইক্ষ্যংছড়ি ১১ বিজিবি’র জোন কমন্ডার ও অধিনায়ক লে. কর্নেল সাহল আহমদ এসিসহ বিজিবির কর্মকর্তারা।
বান্দরবানে কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে যৌথ অভিযানে গ্রেপ্তার হওয়া ৫৩জনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত। রুমা থানার দুটি মামলায় বৃহস্পতিবার এই আদেশ দেয়া হয়। পাশাপাশি এক নারীকে জেল গেটে জিজ্ঞাসাবাদসহ মামলায় ৫৭জনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
বান্দরবান সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মোহাম্মদ নাজমুল হোছাইন বৃহস্পতিবার দুপুরে মামলার শুনানি শেষে এই আদেশ দেন।
আদালতে আসামি পক্ষে একাধিক আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন। আইনজীবীরা জানান, রুমা থানার জিআর মামলা নং- ৪ ও ৭ মামলায় পুলিশ আসামিদের আদালতে হাজির করে রিমান্ড চেয়ে আবেদন করে। আদালত উভয় পক্ষের শুনানি শেষে ৫৩জনের রিমান্ড মঞ্জুর করে। এর মধ্যে ৫২জনকে দু’দিন করে রিমান্ড এবং একজনকে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেয়া হয়।
এর আগে বান্দরবান জেলা কারাগার থেকে কঠোর নিরাপত্তায় ১৮জন নারী ও ৩৯জন পুরুষ বন্দিকে দুটি গাড়িতে করে আদালতে হাজির করা হয়। সম্প্রতি বান্দরবানের রুমায় সোনালী ব্যাংকে লুটের ঘটনায় তাদেরকে রুমা উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এদিকে বান্দরবানে চলমান যৌথ অভিযানে সন্দেহভাজন আরও একজনকে আটক করা হয়েছে। এ পর্যন্ত ৬৬জনকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
মন্তব্য