পরিবহন ধর্মঘটের ‘বাধা’ পেরিয়ে পাঁচ বিভাগে বড় ধরনের সমাবেশ শেষে বিএনপির লক্ষ্য এবার সিলেট। আগামী শনিবার দেশের উত্তর-পূর্বের প্রধান এই শহরটিতেও ব্যাপক জমায়েতের প্রস্তুতি নিচ্ছে দলটি।
প্রতিদিনই বিভাগের নানা জনপদে মিছিল, লিফলেট বিতরণ চলছে। প্রচার চলছে সামাজিক মাধ্যমেও। দলটির কেন্দ্রীয় নেতারাও সিলেটে অবস্থান করে সমাবেশের প্রস্তুতি সমন্বয় করছেন।
এক সপ্তাহ আগে থেকেই সমাবেশস্থল সিলেট আলিয়া মাদ্রাসা মঠে মঞ্চ নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। মাঠের আশপাশের এলাকা ছেয়ে গেছে নেতাদের ছবিসহ ব্যানার, পোস্টার, ফেস্টুন ও বিলবোর্ডে।
এর আগে চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, খুলনা, রংপুর ও বরিশালে হয়েছে বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশ। মধ্যাঞ্চলে ফরিদপুরেও হয়েছে জমায়েত। বন্দরনগরী ছাড়া প্রতিটি সমাবেশই হয়েছে পরিবহন ধর্মঘটের মধ্য দিয়ে। তবে তাতে জমায়েতে কোনো বিঘ্ন ঘটেনি। প্রতিটি সমাবেশই হয়েছে বিশাল। সিলেটের সমাবেশে ৪ লক্ষাধিক লোকের জমায়েতের চ্যালেঞ্জ নিয়েছেন নেতারা।
এখন পর্যন্ত সিলেটে ধর্মঘটের সিদ্ধান্ত না এলেও নেতা-কর্মীরা আশঙ্কা করছেন এবারও কোনো না কোনো অজুহাতে ধর্মঘট ডাকা হবে। সে জন্য প্রস্তুতিও নিয়ে রেখেছেন নেতা-কর্মীরা।
সমাবেশের জন্য ছয় কমিটি
বিএনপির এই ছয় কমিটির মধ্যে ‘আবাসন ব্যবস্থাপনা’ কমিটির আহ্বায়কের দায়িত্ব রয়েছেন দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী।
ব্যবস্থাপনা ও শৃঙ্খলা কমিটি’র আহ্বায়ক হিসেবে আছেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার আবদুল মুক্তাদির।
'প্রচার ও মিডিয়া কমিটি’র আহ্বায়ক জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী, ‘অভ্যর্থনা কমিটি’র আহ্বায়ক মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক আবদুল কাইয়ুম জালালী পংকী, ‘আপ্যায়ন কমিটি’র আহ্বায়ক মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি নাসিম হোসাইন এবং ‘দপ্তর কমিটি’র আহ্বায়ক করা হয়েছে মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক হুমায়ূন কবির শাহীনকে।
এসব কমিটিতে সিলেট বিভাগের কেন্দ্রীয় নেতা এবং বিএনপির জেলা, মহানগর, পৌরসভা, উপজেলা পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের পাশাপাশি বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতাদেরও সদস্য হিসেবে রাখা হয়েছে।
সার্বিক তত্ত্বাবধানে আছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী আবদুল মঈন খান এবং যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও বিএনপির নিখোঁজ নেতা এম ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহসিনা রুশদীর লুনা, এনামুল হক চৌধুরী ও খন্দকার আবদুল মুক্তাদির, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সাখাওয়াত হাসান জীবন ও সহসাংগঠনিক সম্পাদক কলিম উদ্দিন আহমদ মিলনও সার্বক্ষণিক তদারকিতে আছেন।
জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী বলেন, ‘গত শনিবার থেকে প্রতিটি কমিটি নিজেদের কাজ শুরু করেছে। কমিটির বাইরেও দলের সকল পর্যায়ের নেতা-কর্মী স্বতঃস্ফূর্তভাবে সমাবেশ সফলে কাজ করছেন।’
৪ লাখ লোকসমাগমের আশা
জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী বলেন, ‘সিলেটের সমাবেশে অন্তত ৪ লাখ মানুষের সমাগম হবে। যেভাবে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে তাতে জমায়েত আারও বেশিও হতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘কেবল সমাবেশ মাঠ নয়, ১৯ নভেম্বর পুরো সিলেট হবে মিছিলের নগর। মাঠের আশপাশের এলাকায় মানুষের ঢল নামবে।’
পরিবহন ধর্মঘট মাথায় রেখেই এই জমায়েতের আশা করা হচ্ছে জানিয়ে কাইয়ুম বলেন, ‘ধর্মঘট ডাকলেও কাজ হবে না। বিকল্প উপায়ে আমাদের নেতা-কর্মীরা সমাবেশে আসবেন। সে প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।’
বিএনপির একাধিক নেতা জানিয়েছেন, দুই-তিন দিন আগেই অনেকে সিলেটে চলে আসবেন। তাদের জন্য থাকা-খাওয়ারও ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
সমাবেশ সফলে প্রতিদিনই সিলেট নগরের পাশাপাশি বিভাগের প্রত্যন্ত এলাকায়ও প্রচার চালাচ্ছেন বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতারা। আগামী নির্বাচনে দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতারাও নিজেদের উদ্যোগে সমবেশে বড় শোডাউন দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
শনিবার বিকেলে নগরের কানিশাইল এলাকায় লিফলেট বিতরণ করেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার আবদুল মুক্তাদির। তিনি বলেন, ‘১৯ নভেম্বর আলিয়া মাদ্রাসা মাঠের গণসমাবেশ ইতিহাস সৃষ্টি করবে। গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে শুধু জাতীয়তাবাদী শক্তি নয়, গণতন্ত্রকামী সিলেটবাসীর মধ্যে প্রাণচাঞ্চল্যের সূচনা হয়েছে। সিলেটবাসী সকল বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করে গণসমাবেশ সফলে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে।’
বাধা নেই, তবে শঙ্কা আছে
সিলেটে এই সমাবেশ নিয়ে শুরুতেই দেখা দেয় বিপত্তি। নগরের আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে জমায়েতের কথা ছিল গত ২০ নভেম্বর। কিন্তু আলিয়া মাদ্রাসায় এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হয় ৬ নভেম্বর থেকে। আর তার দুই দিন আগে পরীক্ষাকেন্দ্রের আশপাশের ২০০ গজ এলাকায় জমায়েত নিষিদ্ধ করে সিলেট মহানগর পুলিশ।
ফলে বাধ্য হয়ে সমাবেশ এক দিন এগিয়ে আনে বিএনপি। ১৯ নভেম্বর এইচএসসি পরীক্ষা নেই বলে সেদিনই হবে জমায়েত।
তবে ৬ নভেম্বর সমাবেশ এগিয়ে আনার ঘোষণা দেয়ার রাতে ঘটে বিপত্তি। নগরের বড়বাজার এলাকার দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাতে খুন হন সিলেট জেলা বিএনপির সাবেক স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক আ ফ ম কামাল। প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল থেকে নগরের রিকাবীজারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি ভাঙচুর করেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা।
এতে বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন সিলেট আওয়ামী লীগের নেতারা। তারা পাল্টা মিছিল করে ছবি ভাঙচুরকারীদের গ্রেপ্তার করা না হলে বিএনপির সমাবেশ প্রতিহত করার ঘোষণা দেন।
এরপর ৮ নভেম্বর বিএনপির অজ্ঞাত ২৫০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন মহানগর আওয়ামী লীগের সদস্য জাহিদ সারোয়ার সবুজ।
দুই দলের এই পাল্টাপাল্টি অবস্থানে সমাবেশ নিয়ে শঙ্কা দেখা দেয়। তবে এখন পর্যন্ত প্রচারে কোনো বাধা আসেনি বলে জানিয়েছেন মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক আব্দুল কাইয়ুম জালালী পংকী।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘সমাবেশের প্রচার জোরেশোরেই চলছে। এখন পর্যন্ত প্রশাসন বা কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে আমাদের বাধা দেয়া হয়নি। তবে ২৫০ জনের বিরুদ্ধে মামলা নিয়ে আমরা শঙ্কিত।’
তিনি বলেন, ‘মামলার আসামিদের নাম উল্লেখ থাকলে আমরা জামিন নিতে পারতাম। কিন্তু কোনো আসামির নাম উল্লেখ করা হয়নি। এতে সমাবেশের আগে নেতা-কর্মীদের পুলিশ হয়রানি করতে পারে বলে আমরা মনে করছি।’
শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে বাধা দেবে না পুলিশ
মহানগর পুলিশের কমিশনার নিশারুল আরিফ বলেন, ‘বিএনপি যদি কোনো বিশ্খৃলা সৃষ্টি না করে, মানুষের জানমালের ক্ষতি এবং জনগণের চলাচলে বিঘ্ন না ঘটিয়ে তাদের কর্মসূচি পালন করে, তবে পুলিশ তাতে কোনো বাধা দেবে না। তবে রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে কোনো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করা হলে তা প্রতিহত করা হবে।’
বিএনপির ২৫০ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি ভাঙচুর করা হয়েছে এটা তো সত্য। তাই এ ঘটনায় মামলা হওয়াটাও স্বাভাবিক। তবে মামলায় নিরীহ কাউকে যাতে হয়রানি করা না হয় এ ব্যাপারে পুলিশ সতর্ক রয়েছে।’
আরও পড়ুন:কক্সবাজারের টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়নের শাহপরীর দ্বীপে ঘরে ঢুকে এক নারী ও তার মেয়েকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে।
গত সোমবারের ঘটনায় বৃহস্পতিবার টেকনাফ মডেল থানায় অভিযোগটি করেন ছেনুয়ারা বেগম নামের নারী।
লিখিত অভিযোগে বলা হয়, গত সোমবার রাত দুইটার দিকে শাহপরীর দ্বীপের পূর্ব উত্তরপাড়া এলাকার নুর মোহাম্মদের স্ত্রী ছেনুয়ারা বেগমের ঘরের দরজা ভেঙে আয়ুব খানের নেতৃত্বে ১০ থেকে ১৫ জন প্রবেশ করেন। তারা ছেনুয়ারা ও তার মেয়ের হাত-পা বেঁধে মুখে কাপড় ঢুকিয়ে এলোপাতাড়ি লাথি ও ঘুষি মারেন। একপর্যায়ে মা ও মেয়ে উভয়কে বিবস্ত্র করেন আইয়ুব ও তার লোকজন।
অভিযোগে আরও বলা হয়, হামলাকারীরা ভয়ভীতি প্রদর্শন করে স্বর্ণ ও টাকা ছিনিয়ে নিয়ে যান। যাওয়ার সময় তাদের বিরুদ্ধে নির্যাতনের বিষয়ে কাউকে জানানো হলে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে চলে যান৷
এ বিষয়ে ছেনুয়ারা বেগম বলেন, ‘সন্ত্রাসী আয়ুব খানের নেতৃত্বে ১০ থেকে ১৫ জন যুবক আমার বাড়িতে ভয়ভীতি দেখিয়ে প্রবেশ করে। পরে বাড়ি থেকে আমাকে জোরপূর্বক কয়েকজন লোক বের করে রশি দিয়ে বেঁধে রাখে এবং আমার মেয়েকে নির্যাতন করে স্বর্ণ ও টাকা নিয়ে যায়। তাদের বিরুদ্ধে ঘটে যাওয়া বিষয়ে কাউকে বললে মেরে ফেলা হবে বলে চলে যায়।’
থানায় অভিযোগের পর আয়ুব হুমকি দিয়েছে জানিয়ে ছেনুয়ারা বলেন, ‘সেই আয়ুব খান মোবাইল ফোনের মাধ্যমে বলে, মামলা হলে কী হবে? জামিন নিয়ে বাহির হয়ে আমাকে আর আমার মেয়েকে মেরে ফেলা হবে বলে প্রাণনাশের হুমকি-ধমকি দিচ্ছে। এ বিষয়ে আমি টেকনাফ মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ করেছি।’
এ বিষয়ে সাবরাং ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য রেজাউল করিম রেজু বলেন, ‘আমি বিষয়টি শুনেছি এবং সঠিক তদন্ত করে পুলিশকে সহযোগিতা করব।’
অভিযোগ তদন্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) মোহাম্মদ সোহেল বলেন, ‘আমি ঘটনার সত্যতা পেয়েছি এবং আমি মামলা করার জন্য ওসি বরাবর সুপারিশ করেছি।’
টেকনাফ মডেল থানার ওসি ওসমান গণি বলেন, ‘আরও গভীরভাবে তদন্ত করে দোষীদের গ্রেপ্তার করা হবে।’
আরও পড়ুন:মৌলভীবাজারে বিশেষ ক্ষমতা আইনে করা নাশকতা মামলায় জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাবেক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান মিজান ও জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক এমএ মুহিতসহ ১৪ নেতাকর্মীকে কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত।
বৃহস্পতিবার দুপুরে মৌলভীবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে হাজির হয়ে জামিন আবেদন করলে তা নামঞ্জুর করে বিচারক তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
উচ্চ আদালতের মঞ্জুরকৃত জামিন শেষ হওয়ায় তারা আদালতে হাজির হন।
মৌলভীবাজার মডেল থানায় ২০২৩ সালের নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে করা দুটি রাজনৈতিক মামলার ১৪ জন আসামি হাজির হলে আদালত তাদের সবার জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে প্রেরণ করে।
মামলার অন্যান্য আসামিরা হলেন- জেলা বিএনপির সহ-সাধারণ সম্পাদক মুহিতুর রহমান হেলাল, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মাহমুদুর রহমান, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলে সাবেক সভাপতি ও পৌর কাউন্সিলর স্বাগত কিশোর দাস চৌধুরী, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব আহমেদ আহাদ, যুবদলের এমএ নিশাদ, যুবদলের সিরাজুল ইসলাম পিরুন, স্বেচ্ছাসেবক দলের নুরুল ইসলাম, যুবদলের ওয়াহিদুর রহমান জুনেদ, স্বেচ্ছাসেবক দলের আব্দুল হান্নান, স্বেচ্ছাসেবক দলের রোহেল আহমেদ, স্বেচ্ছাসেবক দলের মামুনুর রশিদ ও যুবদলের জাহেদ আহমেদ।
মৌলভীবাজার জেলা আদালত পুলিশের পরিদর্শক মো. ইউনুছ মিয়া জানান, ২০২৩ সালে নাশকতার অভিযোগে করা মামলায় মৌলভীবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে হাজির হয়ে জামিন আবেদন করেন আসামিরা। আদালত শুনানি শেষে আবেদন নামঞ্জুর করে তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ি থানাধীন সাজেকে শ্রমিকবাহী ডাম্প ট্রাক খাদে পড়ে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৯ জনে দাঁড়িয়েছে।
বাঘাইছড়ি থানার সহকারী পুলিশ সুপার আবদুল আওয়াল বুধবার রাতে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, আহত শ্রমিকদের উদ্ধার করে খাগড়াছড়ি হাসপাতালে নেয়ার পর চিকিৎসক তিনজনকে মৃত বলে জানান।
এর আগে বিকেলে সাজেকের উদয়পুর সীমান্ত সড়কের ৯০ ডিগ্রি এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
পুলিশের ভাষ্য, খাগড়াছড়ি থেকে সাজেকের উদয়পুর সীমান্তবর্তী সড়ক নির্মাণের জন্য ডাম্প ট্রাকে ১৪ জন শ্রমিক জামান ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানির সেতুর কাজে যাচ্ছিলেন। পথে গাড়িটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পাহাড়ের ঢালে পড়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলে ছয়জনের মৃত্যু হয়।
বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শিরিন আক্তার সাংবাদিকদের জানান, যেখানে দুর্ঘটনাটি ঘটেছে, সেটি খুবই দুর্গম এলাকা। আহত শ্রমিকদের উদ্ধার করে খাগড়াছড়ি জেনারেল হাসপাতালে পাঠিয়েছে পুলিশ ও সেনাবাহিনী, তবে তাৎক্ষণিকভাবে কারও নাম-পরিচয় জানা যায়নি।
আরও পড়ুন:মৌলভীবাজার জেলার রাজনগর উপজেলায় ৭ (সাত) বছরের একটি শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে সৈয়দ সরাফত আলী নামের এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
পিবিআইয়ের পরিদর্শক রিপন চন্দ্র গোপের নেতৃত্বে একটি অভিযানিক দল বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে শ্রীমঙ্গল রেলওয়ে স্টেশন এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে।
৬০ বছর বয়সী সৈয়দ সরাফত আলী রাজনগর থানার করিমপুর চা বাগান এলাকার বাসিন্দা।
পিবিআই জানায়, শিশুটিকে বাঁশের বাঁশি বানিয়ে দেয়ার লোভ দেখিয়ে গত ১৪ এপ্রিল বেলা পৌনে দুইটার দিকে সৈয়দ সরাফত আলী তার বাড়ির পাশের বাঁশ ঝাড়ের নিচে নিয়ে যান। সেখানে তাকে মাটিতে ফেলে ধর্ষণ করেন। বিষয়টি নিয়ে এলাকায় আলোড়ন সৃষ্টি হলে তিনি আত্নগোপন করেন।
অসুস্থ অবস্থায় শিশুটিকে গত প্রথমে রাজনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরে মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল ভর্তি করে চিকিৎসা করানো হয়।
এ বিষয়ে শিশুটির বাবা বাদী হয়ে রাজনগর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন।
পিবিআই মৌলভীবাজার পুলিশ সুপার এহতেশামুল হক বলেন, ‘শিশু ধর্ষণের ঘটনায় অপরাধীর পার পাওয়ার সুযোগ নেই। আইনের আওতায় এনে তাদের বিচার করা হবে। মামলার খুঁটিনাটি বিষয় বিবেচনায় রেখে নিখুঁত তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করা হবে।’
আরও পড়ুন:চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে সোনামসজিদ স্থলবন্দরে দায়িত্ব পালনকালে রুহুল আমিন নামে এক ট্রাফিক ইন্সপেক্টরের মৃত্যু হয়েছে। তার বাড়ি যশোরের বেনাপোলে। বাবার নাম কোরবান আলী।
নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের অধীন সোনামসজিদ স্থলবন্দরে ট্রাফিক ইন্সপেক্টরের দায়িত্ব পালন করছিলেন তিনি।
শিবগঞ্জ থানার ওসি সাজ্জাদ হোসেন জানান, সোনামসজিদ স্থলবন্দরের পানামা পোর্ট লিংক লিমিটেডের মধ্যে ট্রাক পরিদর্শন শেষে দুপুর পৌনে ১টার অফিস কক্ষে ফিরে অসুস্থ হয়ে পড়েন রুহুল আমিন। সহকর্মীরা তাকে দ্রুত শিবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের সিভিল সার্জন এসএম মাহমুদুর রশিদ জানান, ট্রাফিক ইন্সপেক্টর রুহুল আমিন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনার আগেই মারা যান। হাসপাতালে যারা নিয়ে এসেছিলেন তারা বলেছেন যে তিনি তৃষ্ণার্ত ছিলেন, পানি খেতে চেয়েছিলেন।
তবে তার মৃত্যু যে হিট স্ট্রোকে হয়েছে এটা এখনই নিশ্চিত করে বলা যাবে না। অন্য কোনো রোগেও তার মৃত্যু হয়ে থাকতে পারে। তবে এখন যেহেতু প্রচণ্ড গরম চলছে তাই এটার প্রভাব থাকতে পারে।
সশস্ত্র বিদ্রোহীদের সঙ্গে যুদ্ধের মধ্যে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া মিয়ানমারের সেনা ও সীমান্তরক্ষী বাহিনীর ২৮৮ জন সদস্যকে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সকাল ৭টার দিকে কক্সবাজার শহরের নুনিয়াছড়া বিআইডব্লিটিএ জেটি ঘাট থেকে কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে তাদের টাগবোটে তুলে দেয়া হয়।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. ইয়ামিন হোসেন জানান, গভীর সাগরে নিয়ে যাওয়ার পর সেখানে অপেক্ষায় থাকা মিয়ানমার নৌবাহিনীর জাহাজ চিন ডুইনে তাদের তুলে দেয়া হবে।
বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া সেনা ও সীমান্তরক্ষীদের ফেরত নিতে মিয়ানমারের ওই জাহাজ বুধবারই বাংলাদেশের জলসীমায় পৌঁছায়। ওই জাহাজে করেই ১৭৩ জন বাংলাদেশি ফিরে এসেছেন। যারা বিভিন্নভাবে মিয়ানমারে আটকা পড়েছিলেন বা সাজা পেয়ে জেলখানায় ছিলেন।
মিয়ানমার নৌবাহিনীর ওই জাহাজে করে দেশটির ৫ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দলও বুধবার দুপুরে কক্সবাজার পৌঁছায়। পরে তারা বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি ১১ ব্যাটালিয়নে বিজিবি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যান। সেখানে পৌঁছানোর পর তারা মিয়ানমারের বিজিপি ও সেনা সদস্যদের যাচাই-বাছাইসহ অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করা হয়।
বিজিবি ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার ভোর সাড়ে ৪টার দিকে ১১টি বাসে করে মিয়ানমারের বিজিপি ও সেনা সদস্যদের কক্সবাজার শহরের বিআইডব্লিউটিএ জেটি ঘাটে নিয়ে আসা হয়।
সেখানে আনার পর ইমিগ্রেশন ও ডকুমেন্টেশনের আনুষ্ঠানিকতা সেরে শুরু হয় হস্তান্তর প্রক্রিয়া। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বিজিবি, জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ ও কোস্ট গার্ডের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বাংলাদেশশে মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতসহ দেশটির প্রতিনিধি দলের কাছে তাদের হস্তান্তর করেন।
এরপর সকাল ৭টার দিকে মিয়ানমারের সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের কর্ণফুলি টাগবোটে তুলে দেয়া হয়। কোস্ট গার্ডের একটি ট্রলার টাগবোটটিকে পাহারা দিয়ে গভীর সাগরে নিয়ে যায়।
দীর্ঘদিন ধরে মিয়ানমারে সেনাবাহিনী ও বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে সংঘর্ষ চলছে, যার আঁচ লেগেছে বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকাতেও। সীমান্তের ওপারের মর্টার শেল ও গুলি এসে এপারে হতাহতের ঘটনাও ঘটেছে।
ওই সংঘাতের মধ্যে পালিয়ে আসা মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী ও সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যসহ ৩৩০ জনকে প্রথম দফায় গত ১৬ ফেব্রুয়ারি ফেরত পাঠিয়েছিল সরকার।
তাদের মধ্যে মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড পুলিশ-বিজিপি ৩০২ জন, তাদের পরিবারের চার সদস্য, দুজন সেনা সদস্য, ১৮ জন ইমিগ্রেশন সদস্য এবং চারজন বেসামরিক নাগরিক ছিলেন।
এরপর বান্দরবান ও কক্সবাজার সীমান্ত নিয়ে কয়েক দফায় আরো ২৮৮ জন সীমান্তরক্ষী ও সেনা সদস্য এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নেন। এবার তাদের ফেরত পাঠানো হলো।
মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ে পদ্মা নদীতে বুধবার রাতের আঁধারে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের সময় দুটি ড্রেজার জব্দ করেছে নৌ-পুলিশ।
মাওয়া নৌ ফাঁড়ির ইনচার্জ মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, রাতের আঁধারে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের খবর পেয়ে উপজেলার মেদিনীমণ্ডল ইউনিয়নের যশিলদিয়ায় বুধবার রাত দেড়টার দিকে পদ্মা নদীতে অভিযান চালানো হয়। ওই সময় নিয়ম অমান্য করে বালু উত্তোলন করায় ওই দুটি ড্রেজার জব্দ করা হয়।
তিনি আরও জানান, ড্রেজার জব্দ করার সময় কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি। জব্দকৃত ড্রেজার দুটির বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মন্তব্য