যমুনা নদীতে নির্মীয়মাণ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতুর কাজ যথাসময়ে শেষ করার আশা প্রকাশ করেছে রেল মন্ত্রণালয়। ইতোমধ্যে এই রেল সেতুর ৪৭ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে বলে জানিয়েছে মন্ত্রণালয়৷
যমুনার টাঙ্গাইল ও সিরাজগঞ্জের দুই প্রান্তে বঙ্গবন্ধু সেতুর ৩০০ মিটার দূরে এ সেতুর নির্মাণকাজ চলছে।
বঙ্গবন্ধু সেতুর সমান্তরাল ডুয়েল গেজ ডাবল ট্র্যাকসহ প্রায় ৪ দশমিক ৮০ কিলোমিটার এই রেল সেতুর দুই পাশে ০.০৫ কিলোমিটার ভায়াডাক্ট, ৭ দশমিক ৬৭ কিলোমিটার রেলওয়ে এপ্রোচ এমব্যাংকমেন্ট এবং লুপ, সাইডিংসহ মোট ৩০ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণ করা হবে।
এই রেল সেতু চালু হলে ঢাকা ও উত্তরবঙ্গের ২২টি জেলার সঙ্গে ট্রেন চলাচল সহজ করবে। একই সঙ্গে আন্ত এশিয়া রেল যোগাযোগের গুরুত্বপূর্ণ করিডর হিসেবে কাজ করবে। এ রেলসেতু দেশের উত্তরবঙ্গের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করা হচ্ছে।
২০২০ সালের নভেম্বরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রেল সেতুটির ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করেন।
বিদ্যমান বঙ্গবন্ধু সেতুতে ট্রেন চালানো ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় পারাপারের সময় গতি অনেক কমিয়ে দেয়া হয়। সেতুর ওপর দিয়ে ব্রড গেজ পণ্যবাহী ট্রেন চলাচল নিষিদ্ধ রয়েছে। এ জন্য নতুন স্বতন্ত্র রেল সেতু নির্মাণ প্রক্রিয়া শুরু হয়। ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাপান সফরকালে সে দেশের সরকার এ প্রকল্পে অর্থায়নে সম্মত হয়। ২০১৭ সালের মার্চে পরামর্শক নিয়োগ করা হয়। ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে বিস্তারিত নকশা প্রণয়ন শেষ হয়।
রেল মন্ত্রণালয় নিউজবাংলাকে জানিয়েছে, বঙ্গবন্ধু রেল সেতুর ৪৭ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। এ প্রকল্পের মোট বরাদ্দ বেড়ে এখন ১৬ হাজার ৭৮০ কোটি ৯৬ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে। যার মধ্যে অর্থ ব্যয় হয়েছে ৬ হাজার ১৬৪ কোটি টাকা, যা মোট বরাদ্দের ৩৬ শতাংশ।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতুর প্রকল্প পরিচালক (পিডি) আল ফাত্তাহ মো. মাসুদুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু রেল সেতুর ৪৭ শতাংশ কাজ বাস্তবায়িত হয়েছে। লক্ষমাত্রা অনুসারে যাতে কাজটি সম্পন্ন হয়- এ জন্য কাজ করছি আমরা।’
তিনি বলেন, ‘এই রেল সেতুর কাজ করতে গিয়ে আমরা তেমন প্রতিকূলতার সম্মুখীন হইনি। তবে করোনা পরিস্থিতিতে আমাদের অনেক স্টাফ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হন। এ কারণে সে সময় কাজে কিছুটা দেরি হয়।’
২০২৪ সালের আগস্টের মধ্যে এ প্রকল্প শেষ হওয়ার কথা। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করা যাবে বলে আশাবাদী রেল মন্ত্রণালয়।
দেশের বৃহত্তম এ রেল সেতু তৈরির জন্য যা যা সরঞ্জাম প্রয়োজন ছিল তা আনা হয়েছে বলে জানান মাসুদুর রহমান। বলেন, ‘সেতু প্রকল্পের শুরুতে কিছুটা করোনা পরিস্থিতির কারণে দেরি হওয়ায় এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি শ্রমিক এ প্রকল্পে কাজ করছে।’
রেল সেতুটির ৫০টি পিয়ারের মধ্যে ২৪টি পিয়ারের কাজ শেষ হয়েছে বলে জানিয়েছে মন্ত্রণালয়। বাকিগুলোর কাজ চলছে। মোট ৪৯টি স্প্যানের মধ্যে ১৮টি প্রকল্প এলাকায় পৌঁছেছে।
এর আগে গত আগস্টে রেল মন্ত্রণালয়ের এক সভায় জানানো হয়েছিল, বর্তমানে বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে ৩৮টি ট্রেন চলাচল করে। নতুন রেল সেতু চালু হলে মালবাহীসহ ৬৮টি ট্রেন চলাচল করার পাশাপাশি বিভিন্ন দেশের সঙ্গে ট্রেন চলাচলের আন্তঃসংযোগ তৈরি হবে।
নির্মীয়মাণ বঙ্গবন্ধু রেলওয়ে সেতু দিয়ে সাধারণ ট্রেন ছাড়াও দ্রুতগতির (হাইস্পিড) ট্রেনও চালানোর উপযুক্ত করে নির্মাণ করা হচ্ছে। ফলে সেতুতে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ২৫০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চালানো যাবে। তবে শুরুতে (উদ্বোধনের এক বছর) সাধারণত ঘণ্টায় ১০০ থেকে ১২০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চলাচল করবে।
এর আগে গত মে মাসে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের অধীনে বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) উদ্যোগে প্রকল্প এলাকা সরেজমিন পরিদর্শন করে। পরে আইএমইডি প্রকল্পের নিবিড় পরিবীক্ষণ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু নির্মাণ প্রকল্পের বেশ কিছু দুর্বল দিক চিহ্নিত করা হয়েছে। তার মধ্যে প্রকল্পের কার্যক্রম যথাযথভাবে চিহ্নিত না করে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) অনুমোদন করা হয়।
২০১৬ সালের ডিসেম্বরে নেয়া প্রকল্পে চূড়ান্ত নকশা প্রণয়নসহ বঙ্গবন্ধু রেল সেতুর নির্মাণ ব্যয় ধরা হয় ৯ হাজার ৭৩৪ কোটি সাত লাখ টাকা। জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা) দেশের বৃহত্তম এ রেল সেতু নির্মাণে সাত হাজার ৭২৪ কোটি ৩৩ লাখ টাকা ঋণ দেয়ার কথা ছিল। প্রথম দফা ডিপিপি সংশোধনের পর সেতুর নির্মাণ ব্যয় ৭ হাজার ৪৭ কোটি টাকা বেড়ে ১৬ হাজার ৭৮০ কোটি ৯৬ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে।
রেল মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, প্রথমে প্রকল্পটি ৯০ মাসের মধ্যে বাস্তবায়নের সময় বেঁধে দেওয়া হয়। সে অনুযায়ী ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে প্রকল্পের কাজ শেষ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল। তবে কাজ শুরু করতে দেরি হওয়ায় প্রকল্পের মেয়াদ আরও ২৪ মাস বাড়িয়ে ২০২৫ সালের ডিসেম্বরে প্রকল্পের বাস্তবায়ণকাল নির্ধারণ করা হয়েছে। যার মধ্যে ১২ মাস ত্রুটি দায়বদ্ধতার সময়কাল ধরা হয়েছে।
জানা গেছে, বঙ্গবন্ধু সেতুর ৩০০ মিটার উজানে ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটার দীর্ঘ ডুয়েল গেজ ডাবল লাইন রেল সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে। এ জন্য পৃথকভাবে নদী শাসন করতে হচ্ছে না। যমুনা ইকো পার্কের পাশ দিয়ে এটা বিদ্যমান বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম অংশের রেলপথের সঙ্গে যুক্ত হবে। বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব এবং বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম স্টেশন ভবন আধুনিকীকরণসহ ইয়ার্ড রিমডেলিং নির্মাণ করা হবে। এ ছাড়া নির্মাণ করা হবে বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব এবং বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম স্টেশনের সিগন্যালিং ও টেলিকমিউনিকেশন ব্যবস্থার মডিফিকেশন, রেলওয়ে ব্রিজ মিউজিয়াম, সেতু রক্ষণাবেক্ষণ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অফিস ও আবাসনও।
রাজধানীর গুলশানের নদ্দায় বাসের ধাক্কায় নিহত অজ্ঞাত নারীর পরিচয় মিলেছে।
শুক্রবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে ওই নারীর ছেলেসহ স্বজনরা ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগের মর্গে এসে মরদেহটি শনাক্ত করেন।
নিহতের ৬৮ বছর বয়সী নারীর নাম সাহেরা খাতুন। তার স্বামী প্রয়াত জসীমউদ্দীন। তাদের বাসা বসুন্ধারা ভাটাড়ায়।
নিহত নারীর বড় ছেলে নাজিমুদ্দিন বলেন, আমার মা গত দুই দিন আগে আমার মেজো মামা নুরুজ্জামানের মধ্য বাড্ডার মোল্লাপাড়ার বাসায় যান চিকিৎসা করাতে। শুক্রবার সেখান থেকে বাসায় ফেরার পথে দুপুরে এই দুর্ঘটনাটি ঘটে।
তিনি বলেন, পরে তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসা শিক্ষার্থী জাহিদ হোসেন হৃদয় মায়ের ছবিটি তার ফেসবুক পেইজে আপলোড করলে আমরা সেখান থেকে জেনে হাসপাতালে এসে আমার মাকে শনাক্ত করি।
এর আগে এদিন বেলা সাড়ে তিনটার দিকে দুর্ঘটনায় আহত হন ওই এই নারী। মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে ঢামেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগের নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক রাত সাড়ে ৭টার দিকে তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ঢামেক পুলিশ ফাড়ির ইনচার্জ মোহাম্মদ বাচ্চু মিয়া নিউজবাংলাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, মৃত নারীর কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া একটি বড় ব্যাগে তার কিছু কাপড় এবং কতগুলো ওষুধ ও ১৫৩০ টাকা পাওয়া যায়।
বাচ্চু মিয়া জানান, ওই নারীর শরীরে কালো বোরকা ছিল। ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ জরুরি বিভাগ মর্গে রাখা হয়েছিল।
বৃদ্ধাকে ঢামেক হাসপাতালে নিয়ে আসা কয়েকজন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর একজন জাহিদ হোসেন হৃদয় জানান, বিকেলের দিকে গুলশানের নদ্দা কালাচাঁদপুরে এই বৃদ্ধা রাস্তা পারাপারের সময় রাজধানী পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাস তাকে ধাক্কা দিলে তিনি পড়ে যান।
তিনি বলেন, এরপর এই বৃদ্ধা উঠে দাঁড়ান। তবে দ্বিতীয়বারে আবার বাসটি তাকে ধাক্কা দিলে তখন তিনি রাস্তার ওপর লুটিয়ে পড়েন। আমরা দৌড় দিয়ে বাসটি ও চালককে আটক করি।
হৃদয় জানান, এর কিছুক্ষণ পরে গুলশান থানার উপপ্রদর্শক (এসআই) আলমগীর হোসেন ঘটনাস্থলে এসে পৌঁছান। পরে তিনি তাদের মাধ্যমে এই নারীকে ঢামেক হাসপাতালেল জরুরি বিভাগ পাঠান।
নাটোরে পৃথক দুই দুর্ঘটনায় পানিতে ডুবে চার শিশুর মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার নলডাঙ্গায় হালতি বিল ও সিংড়ায় বারনই নদীতে এই দুর্ঘটনা ঘটে।
হালতি বিলে ঘুরতে এসে নৌকা ডুবে মারা যায় দুই সহোদর ১১ বছরের সাদমান আব্দুল্লাহ ও ৯ বছরের আব্দুর রহমান। আর সিংড়ায় নদীতে ডুবে মারা গেছে ৫ বছরের ফাতেমা খাতুন ও ৯ বছরে বয়সী আব্দুস সবুর।
নৌকা ডুবে মারা যাওয়া দুই সহোদরের বাবার নাম আরিফুল ইসলাম। বাড়ি লালপুর উপজেলার আড়বাব এলাকায়।
নলডাঙ্গা থানার ওসি আবুল কালাম জানান, শুক্রবার সন্ধ্যায় হালতি বিলে পরিবার নিয়ে ঘুরতে আসেন আরিফুল ইসলাম। নৌকায় চড়ে বিলের মধ্যে বেড়ানোর সময় খোলাবাড়িয়া এলাকায় পল্লী বিদ্যুতের তারের সঙ্গে বেঁধে ১৭ জন যাত্রী নিয়ে নৌকাটি উল্টে যায়।
নৌকার অন্য যাত্রীরা সাঁতার কেটে পাড়ে উঠতে পারলেও দুই ভাই সাদমান আব্দুল্লাহ ও আব্দুর রহমান নিখোঁজ হয়।
খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে নাটোর ফায়ার সার্ভিসকে ঘটনা জানায়। পরে ফায়ার সার্ভিস সদস্যরা এসে দুই ভাইকে উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তাদেরকে মৃত ঘোষণা করেন।
বারনই নদীতে ডুবে ২ শিশুর মৃত্যু
এদিকে সিংড়া উপজেলার উলুপুর গ্রামে বারনই নদীতে অপর দুর্ঘটনাটি ঘটে শুক্রবার দুপুরের দিকে। তাদের মধ্যে ফাতেমা একই এলাকার সাইফুল ইসলামের মেয়ে। অপর শিশু সবুরের বাবার নাম সাহাদ ইসলাম।
সিংড়া থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) রফিকুল ইসলাম জানান, সম্পর্কে চাচাতো ভাই-বোন ফাতেমা ও সবুর দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে তাদের বাড়ি সংলগ্ন বারনই নদীতে গোসল করতে নামে। এক পর্যায়ে স্রোতের টানে ফাতেমাকে ডুবে যেতে দেখে সবুর তাকে বাঁচাতে যায়। এ সময় সে-ও পানিতে ডুবে যায়।
স্থানীয়রা ঘটনাটি দেখে নদীতে নেমে শিশু দুটিকে উদ্ধারের চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয়। পরে বিষয়টি পুলিশকে জানানো হয়। পুলিশের মাধ্যমে রাজশাহীর ফায়ার সার্ভিসের ডুবইর দলকে খবর দেয়া হয়। ডুবুরি দল এসে দীর্ঘ সময়ের চেষ্টায় বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে ঘটনাস্থলের কিছু দূর থেকে শিশু দুটির মরদেহ উদ্ধার করে।
আরও পড়ুন:কক্সবাজারের টেকনাফের সেন্টমার্টিন যাওয়ার পথে যাত্রীবাহী স্পিডবোট ডুবির ঘটনায় এক নারী নিহত হয়েছেন।
শাহপরীর দ্বীপে নাফ নদীর মোহনায় শুক্রবার দুপুরে এ দুর্ঘটনায় পড়ে স্পিডবোটটি।
নিহত ৫৫ বছর বয়সী ফিরোজা খাতুন সেন্টমার্টিন দ্বীপের ডেইলপাড়ার এলাকার বাসিন্দা ছিলেন এবং তিনি সেন্টমার্টিন ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক নারী সদস্য।
টেকনাফ উপজেলার ইউএনও আদনান চৌধুরী বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, ‘দুপুরে দ্বীপের বাসিন্দা নুরুল আলমের মালিকানাধীন স্পিডবোটটি ২১ জন যাত্রী নিয়ে যাওয়ার পথে নদীর মাঝামাঝি মোহনায় হঠাৎ তলা ফেটে সেটি ডুবে যায়। দুর্ঘটনার খবরে কোস্টগার্ড তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক ওই নারীকে মৃত ঘোষণা করেন। অবৈধভাবে এ রুটে চলাচলকারী স্পিডবোটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
টেকনাফ মডেল থানার ওসি মোহাম্মদ জোবাইর সৈয়দ বলেন, ‘নাফ নদীতে যাত্রীবাহী স্পিডবোট ডুবিতে সাবেক এক নারী ইউপি সদস্য নিহত হয়েছেন। আরও কয়েকজন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। বাকিদের বিষয়ে আমরা খোঁজ-খবর নিচ্ছি।’
মহাসড়কে ফেনীর ছাগলনাইয়ায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে বাসের ধাক্কায় সাবেক সেনা কর্মকর্তাসহ একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশার তিন আরোহী নিহত হয়েছেন।
শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে উপজেলার নিজকুঞ্জরা এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন সেনাবাহিনীর সাবেক সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার ও সেনা কল্যাণের চট্টগ্রাম শাখার কর্মকর্তা ৫৯ বছরের আবু তাহের, তার স্ত্রী ৪৮ বছলেরর সালমা আক্তার ও অজ্ঞাত আরেকজন।
নিহতের আবু তাহেরের ভাই ছাগলনাইয়ার ঘোপাল ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন দুর্ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, তার ভাই ও ভাইয়ের স্ত্রী চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের বাংলাবাজারে শ্বশুর বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে ফেরার পথে তারা নিহত হন।
সাদেক হোসেন আরও বলেন, বিপরীত দিক থেকে আসা শ্যামলী পরিবহনের একটি গাড়ি সিএনজিটিকে চাপা দিলে মারা যান তারা।
ফেনী ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের মেডিক্যাল অফিসার ডা. রুহুল মহসিন সুজন বলেন, মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘বাংলাদেশে আর কোনো নেতা নেই যাকে মানুষ বিশ্বাস করে। একমাত্র শেখ হাসিনা সেই নেতা, যাকে মানুষ বিশ্বাস করে। এ দেশে শেখ হাসিনা ছাড়া কোনো নির্বাচন হবে না।’
বঙ্গবন্ধু-কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৭তম জন্মদিন উপলক্ষে শুক্রবার আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এই আলোচনার আয়োজন করে আওয়ামী লীগ।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বাংলাদেশের রূপান্তরের রূপকার শেখ হাসিনা। সংকটকে সম্ভাবনায় রূপ দিয়েছেন যিনি তিনি আমাদের সাহস, স্বপ্নের বর্ণিল ঠিকানা। আমাদের পূর্ব পৃথিবীর সূর্য শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে নতুন নতুন উচ্চতা দিয়েছেন। বাংলাদেশকে নব নব মুকুটে সজ্জিত করেছেন। সি হ্যাজ মেড আস লুক ব্রাইটার। সি হ্যাজ প্রাউড আস…। সি হ্যাজ শো দ্য ওয়ে আউট অফ পোভার্টি।
‘ষড়যন্ত্র করে বাংলাদেশকে আবারও অন্ধকারে নিয়ে যাবেন তা আমরা হতে দেব না। ষড়যন্ত্র করে ওই নেতাকে বাদ দেবেন? শেখ হাসিনা ছাড়া নির্বাচন মানি না। আমরা সেটা হতে দেব না।’
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু হত্যার পর ৪৮ বছর চলে গেছে। যারা ষড়যন্ত্র করে তাদের কাছে জানতে চাই, পঁচাত্তরের পর শেখ হাসিনার মতো জনপ্রিয় নেতা এসেছে এ দেশে? গত ৪৮ বছরে সবচেয়ে সাহসী নেতা, সবচেয়ে দক্ষ প্রশাসক, সফল কূটনীতিক। কে তিনি? শেখ হাসিনা। এখনও বাংলাদেশের নম্বর ওয়ান পপুলার পলিটিশিয়ান শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ‘আমাদেরকে ভয় দেখিয়ে লাভ নেই। নিষেধাজ্ঞা, ভিসা নীতির ভয় দেখিয়ে লাভ নেই। মজার ব্যাপার হচ্ছে- নিষেধাজ্ঞা দেয় ওয়াশিংটন আর ভয় দেখান মির্জা ফখরুল। কী অদ্ভুত কাণ্ড!’
মির্জা ফখরুলকে উদ্দেশ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘৪৮ ঘণ্টা শেষ। আল্টিমেটাম শেষ। ফলাফল কী? ক্যাপ্টেন আমেরিকায়। ক্যাপ্টেন এলে জোরদার খেলা হবে। আমাদের গণতন্ত্র, আমাদের সংবিধান ঠিক করবে। আমাদের নির্বাচন, আমাদের সংবিধান ঠিক করবে। তত্ত্বাবধায়ক এখন লাশ। ওই লাশ আমাদের কাছে এনে লাভ নেই।’
সংসদ উপনেতা ও আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরীর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশারফ হোসেন, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, কর্নেল (অব.) ফারুক খান, ড. আব্দুর রাজ্জাক, শাজাহান খান, ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, কামরুল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, মাহবুব উল আলম হানিফ, ডা. দীপু মনি প্রমুখ।
আরও পড়ুন:প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার জন্মদিন উপলক্ষে মুন্সীগঞ্জে আয়োজিত অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যাওয়ার পথে নেতাকর্মীদের সঙ্গে স্থানীয় এমপির সমর্থকদের সংঘর্ষ হয়েছে। রক্তক্ষয়ী এই সংঘর্ষে কমপক্ষে ৫০জন আহত হয়েছে। তাদের মধ্যে গুরুতর আহত চারজনকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
শুক্রবার বিকেলে মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার হাটলক্ষ্মীগঞ্জ এলাকার লঞ্চঘাটে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। আহতের অধিকাংশের বাড়ি গজারিয়া উপজেলায় বলে জানা গেছে।
এদিকে সমর্থকদের এমন কর্মকাণ্ডের জন্য আয়োজিত জনসভা থেকে মুন্সীগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মৃণাল কান্তি দাসকে জেলায় অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও আহত কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিন উপলক্ষে মুন্সীগঞ্জ পৌরসভা শুক্রবার অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। ওই অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ৭৫টি ট্রলারে করে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা দুপুরে গজারিয়া উপজেলা থেকে সদর উপজেলার উদ্দেশে রওনা হন।
বিকেল ৫টার দিকে ট্রলারগুলো মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার হাটলক্ষ্মীগঞ্জ লঞ্চঘাট এলাকায় পৌঁছলে মুন্সীগঞ্জ পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মকবুল হোসেনের ভাই মনির হোসেনের সঙ্গে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। এতে উভয় পক্ষের বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী আহত হয়। আহতদের অধিকাংশই গজারিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মনসুর আহমেদ খান জিন্নাহর সমর্থক বলে জানা গেছে।
গজারিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, হামলার ঘটনার পর অনেকে গজারিয়ায় ফিরে এসেছেন। আহতদের মধ্যে ৩৩জন এখানে চিকিৎসা নিয়েছেন। তাদের ১১জনকে হাসপাতালে ভর্তি দেয়া হয়েছে। চারজনের আঘাত গুরুতর হওয়ায় ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। বাকিরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন।
গজারিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ছাড়াও মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল ও কয়েকটি বেসরকারি ক্লিনিকে বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী চিকিৎসা নিয়েছেন।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মনসুর আহমেদ খান জিন্নাহ বলেন, ‘অ্যাডভোকেট মৃণাল কান্তি দাস আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য হলেও তার অনুসারীরা অধিকাংশই বিএনপি সমর্থক।
‘আমরা প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিনের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যাচ্ছিলাম। সেখানে তার সমর্থকদের দিয়ে রাস্তায় মহড়া দেয়ার কী দরকার ছিল? তারা পরিকল্পিতভাবে হামলার ঘটনা ঘটিয়ে আওয়ামী লীগের ইমেজ নষ্ট করতে চেয়েছে। আমরা এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক বিচার চাই।’
মুন্সীগঞ্জ পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মকবুল হোসেন বলেন, ‘ট্রলারে করে গজারিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জিন্নাহর লোকজন শহরের হাটলক্ষ্মীগঞ্জ এলাকার লঞ্চঘাটের অদূরে বেড়িবাঁধে আসে। সেখানে আমার ছোট ভাইয়ের পায়ে ধাক্কা লাগে জিন্নাহর লোকজনের। এরপর তারা মিছিল নিয়ে অনুষ্ঠানস্থলে যাওয়ার পথিমধ্যে পুরাতন বাসস্ট্যান্ড এলাকায় দাঁড়িয়ে থাকা আমার বড় ভাই মনির হোসেনকে ও তার কয়েকজন সমর্থককে বেধড়ক মারধর করে। সব দোষ জিন্নাহর সমর্থকদের।’
সদর থানার ওসি আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘সংঘর্ষের খবর পেয়ে পুলিশ তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে ছুটে যায়। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে লাঠিচার্জ করে। এ সময় উভয় পক্ষের লোকজন সরে পড়ে। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। এ ঘটনায় কাউকে আটক করা হয়নি।’
রাজধানীর গুলশানের নদ্দা এলাকায় যাত্রীবাহী বাসের ধাক্কায় অজ্ঞাত এক বৃদ্ধা নিহত হয়েছেন।
শুক্রবার বেলা সাড়ে তিনটার দিকে দুর্ঘটনায় আহত হন আনুমানিক ৬৫ বছর বয়সী এই নারী। মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল (ঢামেক) কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক রাত সাড়ে ৭টার দিকে তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ঢামেক পুলিশ ফাড়ির ইনচার্জ মোহাম্মদ বাচ্চু মিয়া নিউজবাংলাকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, মৃত নারীর পরিচয় পাওয়া যায়নি। তবে তার কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া একটি বড় ব্যাগে তার কিছু কাপড় এবং কতগুলো ওষুধ ও ১৫৩০ টাকা পাওয়া গেছে।
বাচ্চু মিয়া জানান, ওই নারীর শরীরে কালো বোরক ছিল। ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ জরুরি বিভাগ মর্গে রাখা হয়েছে। বিষয়টি গুলশান থানায় জানানো হয়েছে।
বৃদ্ধাকে ঢামেক হাসপাতালে নিয়ে আসা কয়েকজন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর একজন জাহিদ হোসেন হৃদয় জানান, বিকেলের দিকে গুলশানের নদ্দা কালাচাঁদপুরে এই বৃদ্ধা রাস্তা পারাপারের সময় রাজধানী পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাস তাকে ধাক্কা দিলে তিনি পড়ে যান।
তিনি বলেন, এরপর এই বৃদ্ধা উঠে দাঁড়ান। তবে দ্বিতীয়বারে আবার বাসটি তাকে ধাক্কা দিলে তখন তিনি রাস্তার ওপর লুটিয়ে পড়েন। আমরা দৌড় দিয়ে বাসটি ও চালককে আটক করি।
হৃদয় জানান, এর কিছুক্ষণ পরে গুলশান থানার উপপ্রদর্শক (এসআই) আলমগীর হোসেন ঘটনাস্থলে এসে পৌঁছান। পরে তিনি তাদের মাধ্যমে এই নারীকে ঢামেক হাসপাতালেল জরুরি বিভাগ পাঠান।
মন্তব্য