পাবনার ইজাহার বাহিনীর অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন মালঞ্চি ইউনিয়নের কামারগাঁও গ্রামবাসী। বাবা ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি মোহন প্রামাণিকের ক্ষমতার দাপটে জমি দখল, চাঁদাবাজি, স্থানীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে আধিপত্য বিস্তার ও নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠাসহ নানা অপকর্মে যুক্ত থাকার অভিযোগ ইজাহারের বিরুদ্ধে। ভয়ে তার বিরুদ্ধে মুখ খুলতেও সাহস পায় না এলাকাবাসী।
স্থানীয়রা জানান, কামারগাঁও দাখিল মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটি নির্বাচন নিয়ে ইজাহারের কথামতো কাজ না হওয়ায় গত ২৬ অক্টোবর শিক্ষক আবু সাইদকে শ্রেণিকক্ষ থেকে বের করে এনে পিটিয়ে মাথা ফাটিয়ে দেয় সন্ত্রাসীরা। এ ঘটনায় পরদিন সদর থানায় ইজাহার, সোহেল, আকমল, মোতালেবের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাত ৩-৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন আবু সাইদ।
মাদ্রাসার সকল শিক্ষক সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাহমিনা আক্তার রেইনার কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে বিচার দাবি করেন। ইজাহার বাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়ে গণমাধ্যমে বক্তব্য দেন আবু সাইদ ও তার সহকর্মী শিক্ষকরা। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ঐ মাদ্রাসার শিক্ষক লুৎফর রহমানকেও মারধর করে ইজাহার বাহিনী। ঘটনার পর থেকে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন ওই মাদ্রাসার শিক্ষকরা।
এদিকে, মাদ্রাসা শিক্ষক আবু সাইদের উপর হামলার সংবাদ প্রকাশের পর ইজাহার বাহিনীর সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের ফিরিস্তি তুলে ধরে একের পর এক অভিযোগ জানাতে থাকেন স্থানীয়রা।
গত বুধবার সরেজমিনে কামারগাঁও গ্রামে গিয়ে এসব অভিযোগ জানা যায়। তবে, এসব বিষয়ে নাম প্রকাশ করে বক্তব্য দিতে রাজি হননি অধিকাংশ মানুষ। তারা জানান, অন্যায়ের প্রতিবাদ করলেই নেমে আসে ইজাহার বাহিনীর অত্যাচার। তার অত্যাচার থেকে রক্ষা পাননি আওয়ামী লীগের নেতারাও।
মালঞ্চি ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি আব্দুল হামিদ মাস্টার জানান, দীর্ঘ দিন তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত। দুঃসময়েও বিএনপি-জামাত অধ্যুষিত এলাকায় আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি।
কিছুদিন আগে তিনি পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়েন। তার দুই ছেলেও চাকরির জন্য বাড়ির বাইরে থাকে। এই সুযোগে ইজাহার বাহিনী কামারগাঁও বাজারে তার ২০ শতক জমি দখল করে নিয়েছে। প্রায় ৩৫ বছর আগে কেনা জমির জাল কাগজ তৈরি করে সেখানে ঘর তুলে নৌকা মার্কার সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দিয়েছে।
কোনোভাবেই তিনি জমি উদ্ধার করতে পারছেন না। নিরুপায় হয়ে তার স্ত্রী আদালতে মামলা করেছেন। এরপর থেকে মামলা তুলে নিতে প্রতিনিয়ত তাকে ভয়ভীতি দেখাচ্ছে ইজাহার ও তার দলবল।
আক্ষেপ করে আব্দুল হামিদ মাস্টার বলেন, ‘যে দলের জন্য সারা জীবন কষ্ট করে সংগঠন গোছালাম, সে দলের নামেই এখন অত্যাচারিত হতে হচ্ছে। আমি এর বিচার কার কাছে চাইব?’
স্থানীয় গ্রামবাসী আলতাফ খাঁ বলেন, ‘আমরা দীর্ঘ ৩৫ বছর ধরে দেখছি এই জমি ক্রয়সূত্রে হামিদ মাস্টার ভোগ দখল করে আসছেন। জমির পুকুর হামিদ মাস্টারের কাছ থেকে লিজ নিয়ে ইজাহারের পরিবারও মাছ চাষ করেছে। হঠাৎ করেই তারা দাবি করছে এ জমি তাদের। ক্ষমতার দাপটে মাটি ভরাট করে দোকান ঘর তৈরি করেছে। সেখানে নৌকা ঝুলিয়ে অপকর্ম জায়েজ করার চেষ্টাও চলছে।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কামারগাঁও গ্রামের একাধিক গ্রামবাসী জানান, মোহন প্রামাণিক ৯ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি হলেও তার ছেলে ইজাহারই সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করেন। সন্ত্রাসী বাহিনী গঠন করে ইজাহার এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে।
ইজাহার ও তার প্রধান সহযোগী সোহেলের ভয়ে এলাকার মানুষ আতঙ্কিত থাকে। নানা অজুহাতে তারা এলাকার মানুষের কাছে চাঁদাবাজি করে। মাদ্রাসা থেকেও নানাভাবে টাকা আদায় করে। নিয়োগ বাণিজ্য করতে তারা ম্যানেজিং কমিটিরই নিয়ন্ত্রণ নিতে চেষ্টা করছে। তাদের নামে মামলা হওয়ার পরেও প্রকাশ্যে তারা এলাকায় ঘুরে বেড়ায়।
মালঞ্চি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল আলিম বলেন, ‘ইজাহারের বাবা ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সভাপতি। কিন্তু ইজাহারের কোনো দলীয় পদ নেই। ফলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়ার সুযোগ নেই। তার বাবাকে অভিযোগ সম্পর্কে জানানো হয়েছে। মাদ্রাসায় হামলার ঘটনায় মামলা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে আইনশৃংখলা বাহিনী ব্যবস্থা নিচ্ছে।’
তবে, এলাকায় সন্ত্রাসী তৎপরতার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন মো. ইজাহার প্রামাণিক। তিনি বলেন, ‘আমি এলাকায় কারো জমি দখল করিনি। আমার চাচাতো ভাই জমি কিনে তার দখল নিয়েছে। সেই দোকানঘর তৈরি করেছে। আধিপত্য বিস্তার ও চাঁদাবাজির অভিযোগ সত্য নয়। মাদ্রাসা শিক্ষককেও মারধোরের অভিযোগ মিথ্যা।’
এ বিষয়ে পাবনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম জুয়েল বলেন, ‘মাদ্রাসা শিক্ষক মারপিটের ঘটনায় মামলা হয়েছে। জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। কামারগাঁও গ্রামে আব্দুল হামিদের জমি জোরপূর্বক দখল চেষ্টার অভিযোগ পেয়ে পুলিশ মাটি ভরাট কাজ বন্ধ করে দিয়েছিল। লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
আরও পড়ুন:প্রচ্ছায়া লিমিটেডের আট পরিচালকের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞার আদেশ দিয়েছেন ঢাকার একটি আদালত।
দেশ ত্যাগে যাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে তারা হচ্ছেন: প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক বুশরা সিদ্দিক, শেহতাজ মুন্নাসী খান, শহিদ উদ্দিন খান, শাহিন সিদ্দিক, শফিক আহমেদ শফিক, পারিজা পাইনাজ খান, নওরিন তাসমিয়া সিদ্দিক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারজানা আনজুম।
দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মো. জাকির হোসেন গালিব এই আদেশ দেন।
আবেদনে বলা হয়েছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তাঁর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, তাঁর ছোট বোন শেখ রেহানা ও তাঁর ছোট বোনের মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিকী ও অন্যান্যদের বিরুদ্ধে রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের নামে প্রায় ৫৯ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ সংক্রান্ত অভিযোগ অনুসন্ধানপূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের জন্য সাত সদস্য বিশিষ্ট অনুসন্ধান টিম গঠন করা হয়েছে।
প্রচ্ছায়া লিমিটেড নামীয় প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারহোল্ডারগণ যাতে সপরিবারে গোপনে দেশ ত্যাগ করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। তিনি দেশত্যাগ করে বিদেশে পালিয়ে গেলে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ রেকর্ডপত্র প্রাপ্তিতে ব্যাঘাত সৃষ্টি হবে। তাছাড়া সার্বিক অনুসন্ধানকাজে বিঘ্ন সৃষ্টিসহ সমূহ ক্ষতির কারণ রয়েছে। এজন্য অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে তাদের বিদেশ যাত্রা রোধে আদালতের আদেশ দেয়া একান্ত প্রয়োজন। আদালত আবেদন মঞ্জুর করে আদেশ দেন।
দুর্নীতির অভিযোগ থাকায় বাগেরহাট-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শেখ তন্ময়, খুলনা-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শেখ সালাউদ্দিন, তার ভাই শেখ সোহেল ও শেখ জালাল উদ্দিন রুবেলের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত।
আজ বৃহস্পতিবার দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার ঢাকার মেট্রোপলিটন সিনিয়র স্পেশাল জজ জাকির হোসেন গালিব এ আদেশ দেন।
দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা আকতারুল ইসলাম গণমাধ্যমকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এদিন দুদকের পক্ষে সংস্থাটির উপ-পরিচালক মো. মোস্তাফিজুর রহমান তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আবেদন করেন।
আবেদনে বলা হয়, বিগত সরকারের সাবেক মন্ত্রী ও বিভিন্ন নির্বাচনী এলাকার সংসদ সদস্যদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে অকল্পনীয় অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধানাধীন রয়েছে। অভিযোগ সংশ্লিষ্ট এই ব্যক্তিরা তাদের নামে অবৈধভাবে অর্জিত সম্পত্তি হস্তান্তর করে বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন মর্মে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়।
তারা বিদেশে পালিয়ে গেলে তদন্ত কার্যক্রম দীর্ঘায়িত বা ব্যাহত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অভিযোগটি সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া একান্ত প্রয়োজন।
শুনানি শেষে আদালত তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞার আদেশ দেন।
সাবেক ডিবি প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদের নামে রাজধানীর উত্তরায় থাকা একটি ফ্ল্যাট ও মোট ১৮ কাঠার তিনটি প্লট জব্দের আদেশ দিয়েছেন আদালত।
বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ জাকির হোসেন গালিব দুদকের আবেদন মঞ্জুর করে এ আদেশ দেন।
দুদকের আবেদন সূত্রে জানা যায়, হারুনের নামে থাকা পৃথক তিনটি প্লট রাজধানীর উত্তরায় অবস্থিত। এছাড়াও জব্দের আদেশ দেয়া ১৫৭০ বর্গফুটের ফ্ল্যাটটিও উত্তরার ১০ নম্বর সেক্টরে অবস্থিত।
এদিন হারুনের এসব সম্পদ জব্দের আবেদন করেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপপরিচালক মোহাম্মদ জয়নাল আবেদীন।
আবেদনে বলা হয়, ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতির মাধ্যমে সাবেক ডিবি প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদের বিরুদ্ধে দেশে-বিদেশে শত শত কোটি টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধানাধীন রয়েছে।
অনুসন্ধান চলাকালে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, তিনি এসব সম্পদ বিক্রয় বা হস্তান্তরের চেষ্টা করছেন। এজন্য সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে হারুনের এসব সম্পদ জব্দের আদেশ দেয়া প্রয়োজন।
এর আগে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি হারুন অর রশিদের ১০০ বিঘা জমি, পাঁচটি ভবন ও দুটি ফ্ল্যাট জব্দের আদেশ দেন আদালত। একই সঙ্গে তার নামে বিভিন্ন ব্যাংকের ১০টি হিসাবে থাকা ১ কোটি ২৬ লাখ ৯০ হাজার ৪৬৮ টাকা অবরুদ্ধের আদেশ দেয়া হয়।
পাশাপাশি এদিনই তার ভাই এবিএম শাহরিয়ারের ৩০ বিঘা জমি জব্দ, ১১টি ব্যাংক হিসাব এবং তিনটি কোম্পানির শেয়ার অবরুদ্ধের আদেশ দেন ঢাকার আদালত।
রাজধানীর বনানীতে প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম পারভেজ হত্যা মামলার এজহারনামীয় আরও দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আজ বুধবার তাদের গাইবান্ধা ও চট্টগ্রাম থেকে পৃথক অভিযানে গ্রেপ্তার করে র্যাব ও পুলিশ।
এর মধ্যে এজাহারনামীয় ১ নম্বর আসামি মো. মেহেরাজ ইসলামকে (২০) গাইবান্ধা থেকে গ্রেপ্তার করে র্যাব-১৩ এবং ৩ নম্বর আসামি মাহাথির হাসানকে (২০) চট্টগ্রাম থেকে গ্রেপ্তার করে বনানী থানা পুলিশ।
বিকেলে র্যাব সদর দপ্তর থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে মেহরাজ ইসলামকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়। এছাড়া বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রাসেল সারওয়ার মাহাথির হাসানের গ্রেপ্তারের বিষয়িটি দৈনিক বাংলাকে নিশ্চিত করেছেন।
র্যাব-১৩ এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও জ্যেষ্ঠ সহকারী পরিচালক (গণমাধ্যম) বিপ্লব কুমার গোস্বামী জানান, তথ্যপ্রযুক্তি ও গোয়েন্দা তথ্যে জনা যায়, পাভেজ হত্যা মামলার এজহারনামীয় ১ নম্বর আসামি মেহেরাজ ইসলাম গাইবান্ধায় অবস্থান করছে। পরে গতকাল বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে গাইবান্ধা সদরের ভবানীপুর গ্রামে অভিযান চলানো হয়। অভিযানে এরশাদ হোসেন নামে এক ব্যক্তির বাড়ি থেকে মেহরাজ ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এদিকে বনানী থানার ওসি মো. রাসেল সারওয়ার দৈনিক বাংলাকে বলেন, তথ্যপ্রযুক্তি ও গোয়েন্দা তথ্যে পারভেজ হত্যা মামলার ৩ নম্বর এজাহারনামীয় আসামি মাহাথির হাসানের অবস্থান শনাক্ত করা হয়। পরে গতকাল সকালে চট্টগ্রামের হালিশহর এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে বনানী থানায় আনা হয়েছে।
এর আগে গত রোববার রাতে পারভেজ হত্যা মামলায় তিন আসামিকে রাজধানীর মহাখালী ও আশপাশের এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তারা হলেন- আল কামাল শেখ ওরফে কামাল (১৯), আলভী হোসেন জুনায়েদ (১৯) এবং আল আমিন সানি (১৯)। তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৭ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।
এছাড়া গত সোমবার রাতে কুমিল্লার তিতাস উপজেলার মনাইরকান্দি গ্রাম থেকে হৃদয় মিয়াজি (২৩) নামে মামলার এজহারনামীয় আরেক আসামিকে গ্রেপ্তার করে র্যাব ১ ও র্যাব-১১ ব্যাটালিয়নের যৌথ দল। পরে গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে তাকে বনানী থানায় হস্তান্তর করা হয়। সব মিলিয়ে পারভেজ হত্যা মামলায় ৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত শনিবার (১৯ এপ্রিল) বিকেল প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে একটি দোকানে ইউনিভার্সিটি অব স্কলার্সের দুই ছাত্রী সিঙ্গারা খাচ্ছিলেন। একই সময় পারভেজ তার বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলার সময় হাসছিলেন। ইউনিভার্সিটি অব স্কলার্সের দুই ছাত্রীর অভিযোগ পারভেজ তাদের দেখে হাসছিলেন। তাদের মধ্যে একজন প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী পিয়াসের বান্ধবী। পরে বান্ধবীরা মুঠোফোনে খবর দিলে পিয়াস ও তার দুই বন্ধু মেহরাজ ও মাহথির এসে পারভেজের সঙ্গে তর্ক-বিতর্কে জড়ান। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি হয়। পরে বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়।
একপর্যায়ে দুই পক্ষকে নিয়ে বসে বিষয়টি মীমাংসার করে দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কিন্তু ক্যাম্পাস থেকে বের হওয়ার পর পারভেজকে একদল যুবক ছুরিকাঘাত করে। তার বুকে ছুরিকাঘাত করা হয়। পরে গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় পরদিন রোববার তার ভাই হুমায়ুন কবির প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও বহিরাগতসহ আট জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাত পরিচয় ২৫-৩০ জনের বিরুদ্ধে বনানী থানায় মামলা করেন।
রাজধানীসহ সারাদেশে পুলিশের বিশেষ অভিযানে গত ২৪ ঘন্টায় ১ হাজার ৬১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে মামলা ও ওয়ারেন্টভুক্ত ৯০৬ জন আসামি এবং অন্যান্য ঘটনায় ৭০৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে পুলিশ সদর দপ্তরের গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি) ইনামুল হক সাগর এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, এসব অভিযানে বিভিন্ন ধরণের অবৈধ অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধার করা অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে- ১টি দেশীয় পাইপগান, ১টি একনালা বন্দুক, ১ রাউন্ড কার্তুজের খোসা ও ২ রাউন্ড অকেজো কার্তুজ উদ্ধার করা হয়।
এর আগে গত সোমবার ২৪ ঘন্টায় সারাদেশে বিশেষ অভিযানে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল ১ হাজার ৬৩১ জনকে। তার মধ্যে মামলা ও ওয়ারেন্টভুক্ত ১ হাজার ১৩ জন আসামি এবং অন্যান্য ঘটনায় ৬১৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। তার আগে গত রোববার ২৪ ঘণ্টায় বিশেষ অভিযানে ১ হাজার ৫৩৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল।
দেশের বিভিন্ন স্থানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় এ ধরণের অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও জানিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর।
সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আসামিদের আপিল শুনানি আগামীকাল।
সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে দেখা যায় মামলাটি বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমান ও বিচারপতি মো. সগীর হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের একটি ডিভিশন বেঞ্চে বিষয়টি আগামীকাল বুধবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে মূলতবি/নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত শুনানির জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এর আগে প্রধান বিচারপতি আলোচিত এই মামলাটি নিষ্পত্তির জন্য এই হাইকোর্ট বেঞ্চে পাঠান।
২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান। এই ঘটনায় করা মামলার বিচার শেষে ২০২২ সালের ৩১ জানুয়ারি কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালত দুজনকে মৃত্যুদণ্ড, ছয়জনকে যাবজ্জীবন ও সাতজনকে খালাস দিয়ে রায় দিয়েছিলেন। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের তৎকালীন পরিদর্শক বরখাস্ত লিয়াকত আলী ও টেকনাফ থানার বরখাস্তকৃত ওসি প্রদীপ কুমার দাশ।
যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের বরখাস্ত উপ-পরিদর্শক (এসআই) নন্দ দুলাল রক্ষিত, সাগর দেব, রুবেল শর্মা, টেকনাফ থানায় পুলিশের করা মামলার সাক্ষী টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুরের মারিশবুনিয়া গ্রামের নুরুল আমিন, মো. নেজামুদ্দিন ও আয়াজ উদ্দিন।
বিচারিক আদালতের রায়ের পরে নিয়ম অনুসারে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের দণ্ডাদেশ অনুমোদনের জন্য ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে আসে। অন্যদিকে, দণ্ডিত আসামিরা আপিল ও জেল আপিল করেন।
সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলায় পুলিশের গোয়েন্দা শাখা ডিবিতে থাকা নথি আগুনে পড়ে গেছে বলে দাবি করা হয়েছে, সঠিক নয়।
মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগে নতুন উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান এমন তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় প্রচারিত সাগর-রুনি হত্যা মামলার নথিপত্র ডিবি হেফাজতে পুড়ে যাবার তথ্যটি সঠিক নয়।’
‘সাগর-রুনি হত্যা মামলার তদন্তের সময় আরও ছয় মাস বাড়ানো হয়েছে। এ নিয়ে কেউ কেউ ডিবির নথি পুড়ে যাওয়ার নিউজ করছেন, যা সঠিক না,’ যোগ করেন তিনি।
এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘আদালতে আগুনে এসব নথি পুড়ে যাওয়ার কথা বলা হয়নি। এডিশনাল অ্যাটর্নি জেনারেল আরশাদ রউফ বলেছেন, ডিবির অধিকাংশ অফিসার বদলি হওয়ায় পুরনো নথি খুঁজে পাওয়া সময়সাপেক্ষ।’
‘এ জন্য রাষ্ট্রপক্ষ নয় মাস সময় চাইলে বাদীপক্ষ তিন মাস সময়ের কথা বলেন। পরবর্তীতে আদালত ছয়মাস সময় দেন,’ যোগ করেন তিনি।
এরআগে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশ করা হয়েছে, সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলার ডিবিতে থাকা নথি আগুনে পুড়ে গেছে বলে হাইকোর্টকে জানিয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ।
অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আরসাদুর রউফ বলেন, ‘আমি এমন কোনো কথা কখনোই বলিনি। সাগর-রুনি হত্যা মামলার নথি পোড়েনি। আমি বলেছি, এটা পুরনো মামলা।’
মন্তব্য