সিলেটের পাথর কোয়ারিগুলো থেকে ছয় বছর ধরে বন্ধ রয়েছে পাথর উত্তোলন। পরিবেশ ধ্বংস ও ব্যাপক প্রাণহানির কারণে ২০১৬ সালে কোয়ারি থেকে পাথর উত্তোলন নিষিদ্ধ করে খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়। তবে কোয়ারি বন্ধ থাকায় কয়েক লাখ লোক বেকার হয়ে পড়েছেন দাবি করে আবার পাথর উত্তোলনের দাবি জানিয়ে আসছেন ব্যবসায়ীরা।
এমন দাবিতে আন্দোলনেও মাঠে নেমেছেন তারা। পাথর ব্যবসায়ীদের আন্দোলনে শরিক হয়েছে পরিবহন ব্যবসীয়ারাও। সম্প্রতি পাথর উত্তোলন শুরুর দাবিতে দুই ধর্মঘট পালন করেন পণ্য পরিবহন মালিক শ্রমিকরা। তাদের দাবি, পাথর উত্তোলন বন্ধ থাকায় বেকার হয়ে পড়েছেন এর সঙ্গে যুক্ত কয়েক লাখ লোক।
সিলেটের পাথর কোয়ারিগুলো পর্যটন এলাকা হিসেবেও পরিচিত। পাথর উত্তোলন বন্ধ থাকায় এসব এলাকায় পরিবেশ আবার ফিরতে শুরু করেছে এবং পর্যটক সমাগম বাড়ছে বলে দাবি পরিবেশ ও পর্যটন সংশ্লিষ্টদের। প্রাণ ও প্রকৃতি রক্ষায় পাথর উত্তোলনে অনুমিত না দেয়ার আহ্বান তাদের
এ অবস্থায় গত বুধবার সিলেট এসেছে খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের একটি উচ্চতর প্রতিনিধি দল। জানা গেছে, বৃহস্পতিবার থেকে তারা কোয়ারি এলাকাগুলো সরেজমিনে পরিদর্শন করে জরিপ করেন। সেই জরিপের প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পর মন্ত্রণালয় থেকে পাথর উত্তোলনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
হুমকিতে প্রাণ-প্রকৃতি
দেশের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার জাফলং। জাফলং দিয়ে বয়ে যাওয়া পিয়াইন নদী পাথর কোয়ারি হিসেবেও পরিচিত। নদী থেকে অপরিকিল্পিত ও যান্ত্রিকভাবে পাথর উত্তোলনের ফলে প্রকৃতিকন্যা হিসেবে পরিচিত জাফলং হারিয়েছে সৌন্দর্য। পরিণত হয়েছে ধ্বংসস্তুপে।
ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করতে ২০১২ সালে জাফলংয়ের পিয়াইন নদীসহ ১৫ কিলোমিটার এলাকাকে পরিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) ঘোষণা করা হয়। ২০১৫ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত এ-সংক্রান্ত গেজেটে বলা হয়, ‘অপরিকল্পিতভাবে যেখানে-সেখানে পাথর উত্তোলন ও নানাবিধ কার্যকলাপের ফলে সিলেটের জাফলং-ডাউকি নদীর প্রতিবেশ ব্যবস্থা সংকটাপন্ন, যা ভবিষ্যতে আরও সংকটাপন্ন হবে বলে প্রতীয়মান হয়েছে। আরও বলা হয়, ইসিএভুক্ত এলাকায় যান্ত্রিক বা ম্যানুয়াল কিংবা অন্য কোনো পদ্ধতিতে পাথরসহ অন্য যে কোনো খনিজ সম্পদ উত্তোলন নিষিদ্ধ।’
গোয়াইনঘাটের পার্শ্ববর্তী উপজেলা কোম্পানীগঞ্জ। এ উপজেলার ১৩৭ দশমিক ৫০ একর আয়তনের শাহ আরেফিন টিলার নিচে ছিল বড় বড় পাথরখণ্ড। এসব পাথর উত্তোলন করতে ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে সরকারি খাস খতিয়ানের বিশাল এই টিলার পুরাটাই। লালচে, বাদামি ও আঁঠালো মাটির এই টিলার পুরোটা খুঁড়ে তৈরি করা হয়েছে অসংখ্য গর্তের। গহীন একেকটা গর্ত। এখন ওই এলাকায় গেলে টিলার তো অস্তিত্ব পাওয়াই যায় না, উল্টো মনে হয় অসংখ্য পুকুর খুঁড়ে রেখেছে কেউ।
কেবল জাফলং আর শাহ আরেফিনা টিলা নয়, এমন চিত্র সিলেটের প্রায় সবগুলো পাথর কোয়ারি এলাকার। কেবল প্রকৃতি ধ্বংস নয়, ঝুঁকির্পূণভাবে পাথর তুলতে গিয়ে প্রাণহানিও ঘটেছে অসংখ্য। বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) হিসেব মতে, বেপরোয়া পাথর উত্তোলনে সিলেটে ২০০৫ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ১০৬ জন শ্রমিক নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন ৩৫ জন। এর মধ্যে শুধু শাহ আরেফিন টিলা থেকে পাথর তুলতে গিয়েই মাটিচাপায় মারা গেছেন অর্ধশতাধিক শ্রমিক।
পাথর উত্তোলনে নিষেধাজ্ঞা
সিলেটের কোয়ারিগুলো থেকে পাথর উত্তোলনে ব্যবহার করা হতো বিশাল একেকটি যন্ত্রের। বোমা মেশিন নামে পরিচিত এসব যন্ত্র মাটির অনেক গভীর থেকে পাথর তুলে আনত। ফলে যেসব এলাকায় এসব মেশিন দিয়ে পাথর তোলা হয়, সেসব স্থানে তৈরি হয় বড় বড় গর্তের। ভাঙন দেখা দেয় কোয়ারি তীরবর্তী এলাকায়। এতে বিপন্ন হয়ে পড়ে এসব এলাকার পরিবেশ। প্রাণ, পরিবেশ ও পর্যটন শিল্প রক্ষায় অপরিকল্পিতভাবে পাথর উত্তোলন বন্ধের দাবি জানানো হচ্ছিল দীর্ঘদিন ধরে।
এমন দাবি জানিয়ে উচ্চ আদালতে একটি রিট আবেদন করে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা)। তাদের রিটের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৪ সালে সিলেটের পাথর কোয়ারিগুলোতে যন্ত্রের ব্যবহার নিষিদ্ধ করে উচ্চ আদালত। আদালতের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও বন্ধ হচ্ছিল না বোমা মেশিন দিয়ে পাথর উত্তোলন। এ অবস্থায় ২০১৬ সালের ১ সেপ্টেম্বর প্রাণহানি ও পরিবেশের বিপর্যয় ঠেকাতে সিলেটের জাফলং, ভোলাগঞ্জ, শাহ আরেফিন টিলা, বিছনাকান্দি ও লোভছড়া- এই পাঁচ কোয়ারি থেকে পাথর উত্তোলন নিষিদ্ধ করে খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়। আর ২০২০ সালের ৮ জুন খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে সরকারিভাবে তালিকাভুক্ত সিলেটের আটটি পাথর কোয়ারির ইজারা স্থগিত করে এবং পাথর উত্তোলন বন্ধ করা হয়।
পাথর উত্তোলনের দাবিতে আন্দোলন
উত্তোলন নিষিদ্ধ হওয়ার পর থেকেই কোয়ারিগুলো চালু করার দাবি জানিয়ে আসছেন পাথর ব্যবসায়ীরা। এ দাবিতে আন্দোলনেও নেমেছেন তারা। ব্যবসায়ীদের আন্দোলনে শরিক হয়েছেন শ্রমিকরাও। পাথর ব্যবসায়ী-শ্রমিকদের আন্দোলনেও কাজ না হওয়ায় এবার এই দাবিতে আন্দোলনে নেমেছেন পণ্য পরিবহন ব্যবসায়ীরা। পাথর উত্তোলনের দাবিতে গত সোম ও মঙ্গলবার সিলেট বিভাগীয় ট্রাক, পিকআপ, কাভার্ড ভ্যান মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের ডাকে সিলেটে পণ্য পরিবহন ধর্মঘট পালন করা হয়।
এ প্রসঙ্গে সিলেট বিভাগীয় ট্রাক-পিকআপ-কাভার্ডভ্যান মালিক ঐক্য পরিষদ ও সিলেট জেলা ট্রাক মালিক গ্রুপের সভাপতি গোলাম হাদী ছয়ফুল বলেন, ‘সিলেটে কোনো শিল্পকারখানা নেই। এখানকার ট্রাক কেবল পাথর পরিবহনেই ব্যবহৃত হয়। পাথর উত্তোলন বন্ধ হওয়ায় ট্রাক মালিক ও শ্রমিকরা চরম বিপাকে পড়েছেন।’
তিনি বলেন, ‘সিলেটের ট্রাক মালিকদের প্রায় ৫০০ কোটি টাকা ব্যংক ঋণ রয়েছে। ট্রাক ভাড়া দিয়ে আয় করেই তারা ঋণের কিস্তি পরিশোধ করেন। এখন পাথর পরিবহন বন্ধ হওয়ায় মালিকরা ঋণের কিস্তিও পরিশোধ করতে পারছেন না। আর পরিবহন খাতের লক্ষাধিক শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছেন। পাথর উত্তোলন বন্ধ থাকায় জাফলং ও ভোলাগঞ্জ সড়কে বাস ও অটোরিকশার যাত্রীও কমে গেছে। ফলে তারাও সংকটে পড়েছেন। সবার স্বার্থ বিবেচনায়ই আমরা পাথর উত্তোলনের দাবি জানিয়েছি।’
এর আগে গত ৮ অক্টোবর পাথর উত্তোলনের দাবিতে জাফলংয়ে বিশাল শোডাউন করেন পাথর শ্রমিক ও ব্যবসায়ীরা। ওইদিন পাথর উত্তোলনের দাবিতে গোয়াইনঘাট শ্রমিক, ব্যবসায়ী ও সামাজিক সংগঠন ঐক্য পরিষদের ডাকে স্থানীয় মামার বাজার পয়েন্টে মানববন্ধন ও সমাবেশে সহস্রাধিক লোক অংশ নেন। সরকারি দলের নেতারাও এই সমাবেশের সঙ্গে একাত্মতা জানান।
নিজেদের দাবির প্রসঙ্গে পিয়াইন পাথর ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আব্দুল মালিক বলেন, ‘পাথর উত্তোলন বন্ধ থাকায় এই এলাকার মানুষেরা মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে। লক্ষাধিক শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছে। তাদের সবার কথা বিবেচনা করে পাথর উত্তোলনের অনুমতি দেয়া দরকার।’
সিলেট পাথর সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক আব্দুল জলিল বলেন, ‘প্রতি বছরই বর্ষা মৌসুমে ঢলের সাথে অনেক পাথর ভেসে আসে। এই পাথরগুলো না তোলার কারণে সীমান্তবর্তী নদীগুলো ভরাট হয়ে যাচ্ছে। ফলে সিলেটে ঘনঘন বন্যা দেখা দিচ্ছে।’
যন্ত্রের ব্যবহার না করে ও পরিবেশ সুরক্ষিত রেখেই পাথর উত্তোলনের অনুমতি দেওয়া প্রয়োজন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এখন কোয়ারিগুলো বন্ধ থাকায় বিদেশ থেকে পাথর আমদানি করতে হচ্ছে। এতে এই সঙ্কটকালেও রিজার্ভের উপর চাপ পড়ছে।’
‘চাপের মুখে’ পাথর উত্তোলনের অনুমতি না দেয়ার আহ্বান
তবে এমন আন্দোলন সত্ত্বেও পাথর উত্তোলনের অনুমতি না দেয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন সিলেটের ২০ নাগরিক। পরিবেশের সুরক্ষার জন্য সিলেটের কোয়ারিগুলো বন্ধ রাখার দাবি জানিয়েছেন তারা। গত ৩০ অক্টোবর গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এমন দাবি জানানো হয়।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বেলা) সিলেটের সমন্বয়ক শাহ শাহেদা আক্তার প্রেরিত এই বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, ২০০৫ সাল থেকে যান্ত্রিকভাবে পাথর উত্তোলনের ফলে সিলেটের পিয়াইন ও ডাউকি নদী তাদের সৌন্দর্য্য হারিয়েছে, ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পর্যটনশিল্প। বিধ্বংসী পাথর উত্তোলনের ফলে পিয়াইন ও ডাউকি নদীতে বিভিন্ন স্থানে পানি ঘোলা হয়ে যায় এবং নদীর বুকে বালুর স্তুপ ও ট্রাকের মিছিল নিয়মিত হয়ে পড়ে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, পাথর উত্তোলন বন্ধ থাকায় পিয়াইন ও ডাউকি নদীসহ পাথর মহাল হিসেবে পূর্বে ঘোষিত নদী ও ছড়ায় প্রাণ ও প্রকৃতি ফিরতে শুরু করেছে। পর্যটকের সংখ্যাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু পাথর উত্তোলনকারীরা নিজেদের বাণিজ্যিক স্বার্থে পরিবেশগতভাবে সংকটাপন্ন ঘোষিত পিয়াইন ও ডাউকি, ধলাই নদীসহ সিলেটের অন্যান্য স্থানে পাথর উত্তোলনের অনুমতি প্রদানে সরকারের উপর অনৈতিক চাপ সৃষ্টি করছে।
বিবৃতিদাতারা বলেন, পরিবেশ রক্ষা যেহেতু সরকারের সাংবিধানিক অধিকার, তাই আগামী প্রজন্মের স্বার্থে পিয়াইন, ডাউকি, ধলাই, রাংপানি নদী, বিছানাকান্দি, উৎমাছড়া, লোভাছড়া ও ভোলাগঞ্জ পাথর উত্তোলনকারীদের হাত থেকে রক্ষা করে সুরক্ষিত রাখতে হবে। অবৈধ চাপের মুখে নতি স্বীকার না করে আগামী প্রজন্মের জন্য পরিবেশ সুরক্ষা করতে হবে।
এদিকে, একই দাবিতে গত মঙ্গলবার সিলেটে সংবাদ সম্মেলন করে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা)।
পাথর উত্তোলনের শুরুর দাবিতে আন্দোলন প্রসঙ্গে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সিলেটের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল করিম বলেন, ‘পাথর উত্তোলনে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও পাথর আমদানিতে তো নিষেধাজ্ঞা নেই। তাছাড়া যখন নিষেধাজ্ঞা ছিল না, তখনও সিলেটের কোয়ারিগুলো থেকে সামান্য পরিমাণ পাথরই উত্তোলন হতো। বেশিরভাগই ভারত থেকে আমদানি করা হতো। আমদানি যেহেতু অব্যাহত রয়েছে, তাই পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়।’
তিনি বলেন, ‘অনুমতি পেলেই পাথরখেকো গোষ্ঠি ম্যানুয়েলি পাথর তুলবে না। বোমা মেশিন দিয়ে পাথর তোলা শুরু করবে। এখন নিষেধাজ্ঞা থাকা অবস্থায়ও অনেক জায়গায় বোমা মেশিন দিয়ে পাথর উত্তোলন করার অভিযোগ রয়েছে। তাই কোনো অবস্থাতেই আর পাথর উত্তোলনের অনুমতি দেওয়া যাবে না।’
যা বলছে প্রশাসন
পাথর উত্তোলনের দাবি প্রসঙ্গে সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান বলেন, ‘পরিবেশ ও পর্যটনের সার্থে সরকার পাথর উত্তোলন বন্ধ করেছে। এখন পাথর তোলার দাবি মেনে নেওয়ার সুযোগ নেই। তাদের দাবির প্রেক্ষিতে খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের একটি উচ্চপর্যায়ের দল গঠন করেছে। তারা সিলেটে এসেছেন।’
জেলা প্রশাসক বলেন, ‘এই দল সবগুলো কোয়ারির বর্তমান অবস্থা পর্যবেক্ষণ ও জরিপ করে প্রতিবেদন প্রদান করবেন। তাদের প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে মন্ত্রণালয় পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত নেবে।’
পরিবেশের সার্থে পাথর উত্তোলন শুরুর অনুমতি দেওয়া হবে না জানিয়ে সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার মোহাম্মদ মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘পরিবেশের কথা আমাদের সবার আগে বিবেচনা করতে হবে। তাই আমি পাথর উত্তোলন শুরুর পক্ষে নই।’
তিনি বলেন, ‘এখন সারা বিশ্বেই পর্যটন একটি সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র। বাংলাদেশেও পর্যটনখাতে প্রচুর সম্ভবনা আছে। পাথর উত্তোলন বন্ধ থাকায় যেসব শ্রমিকরা বেকার হরে পড়েছেন, তাদের পর্যটনখাতে নিয়ে আসার চেষ্টা করছি। অনেককে এ ব্যাপারে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। শ্রমিক-ব্যবসায়ীসহ স্থানীয়দেরকেও এ ব্যাপারে আন্তরিক হতে হবে।’
আরও পড়ুন:রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রস্তাবিত ইলেকট্রোরাল কলেজব্যবস্থাকে সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য বলে মন্তব্য করেছে বিএনপি। দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ‘জনগণের ভোটাধিকার হরণে এই ব্যবস্থাকে আরেকটি ছলচাতুরী হিসেবে দেখা হচ্ছে।’
গতকাল বুধবার বিকালে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এমন মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের জন্য কমিশনের যে প্রস্তাব তাতে একটা ইলেক্টোরাল কলেজ করা হবে। এবং প্রায় ওনাদের ভাষ্য অনুযায়ী ৭০ হাজারের মতো ভোটার থাকবে। ইউনিয়ন পর্যায় থেকে শুরু করে স্থানীয় সরকার পর্যায়ের প্রতিনিধিগণ এখানে ভোটার হবেন। এবং রাষ্ট্রপতিকে সৎ, দক্ষ ও অভিজ্ঞ একজন ব্যক্তিকে মনোনয়ন দেওয়ার জন্য ওখানে প্রস্তাব করা হয়েছে।
সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (এনসিসি) গঠনের প্রস্তাবে আগের মতোই একমত নয় বিএনপি।
এই কাউন্সিলের জবাবদিহি না থাকায় সমর্থন করে না বিএনপি। এই কাউন্সিলে আরেকটি ভারসাম্যহীন অবস্থা তৈরি হবে বলে মনে করি আমরা।’
স্বাধীন বিচারব্যবস্থার দাবি জানিয়ে সালাহউদ্দিন বলেন, ‘স্বাধীন বিচারব্যবস্থা হলে ভারসাম্যহীনতা দূর হবে, ফ্যাসিবাদ দমন করবে। প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার ভারসাম্য, অন্য সাংবিধানিক পদ, সংস্থা স্বাধীন করতে পারলে সমস্যা থাকবে না।’
বিএনপি মনে করে সুশাসন নিশ্চিত করতে ন্যায়পাল করা যেতে পারে। বিদ্যমান ব্যবস্থা বজায় রেখে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ হলে তাদের যোগ করা যেতে পারে, বলেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন আইন সংশোধন করা যেতে পারে। জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। বিএনপি মনে করে, দুদক ও মানবাধিকার কমিশনের মতো প্রতিষ্ঠান শক্তিশালী করতে বিদ্যমান আইনগুলো সংস্কারের প্রয়োজন।
সরকারিভাবে ওষুধ সরবরাহ না থাকায় ইউনিয়ন পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম ভেঙে পড়েছে। প্রায় সাত-আট মাস কেন্দ্রগুলোতে ওষুধ সরবরাহ বন্ধ থাকায় এতে তৃণমুলে বসবাসকারী অবহেলিত মানুষগুলো স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়বে। এমনটিই আশঙ্কা করছেন সচেতন মহল।
জানা গেছে, নড়াইল জেলার তিনটি উপজেলা ও একটি প্রশাসনিক থানা এলাকায় ৪০টি ইউনিয়ন পরিবারকেন্দ্র এবং মা ও শিশু কল্যাণকেন্দ্র রয়েছে। এর মধ্যে সিভিল সার্জন কর্তৃক সাতটি স্বাস্থ্যসেবাকেন্দ্র পরিচালিত হয় । বাকিগুলো পরিবার পরিকল্পনা কল্যাণ অধিদপ্তর থেকে পরিচালিত হয়ে থাকে।
সিভিল সার্জন কর্তৃক পরিচালিত স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলোর মধ্যে সদর উপজেলায় তিনটি, লোহাগড়া উপজেলায় তিনটি এবং কালিয়া উপজেলায় একটি। এসব স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসাসেবার ওপর গ্রামাঞ্চলের নিম্নআয়ের সাধারণ মানুষগুলো সুস্থ ও সবলভাবে বেচে থাকার জন্য অনেকটিই নির্ভর করে। এসব কেন্দ্রগুলোতে সরকারি ওষুধ সরবরাহ না থাকায় বিপাকে পড়েছেন সাধারণ মানুষ । কেন্দ্রগুলোতে ওষুধ সংকটের কথা স্বীকার করেছেন স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তা ।
গত মঙ্গলবার ও গতকাল বুধবার জেলার কয়েকটি স্বাস্থ্যসেবাকেন্দ্র ঘুরে দেখা গেছে, চিকিৎসাসেবা নিতে আসা গ্রামের অনেক মহিলা চিকিৎসকের কাছ থেকে চিকিৎসাপত্র নিয়ে খালি হাতে বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন। তাদের মুখখানা ছিল মলিন । আবার অনেক কেন্দ্র ছিল ফাকা। দায়িত্বপ্রাপ্ত মেডিকেল অফিসার একটি কক্ষে বসে গল্পে মেতে আছেন বন্ধুদের সঙ্গে। গত মঙ্গলবার সকাল ১১টায় সদর উপজেলার শাহাবাদ ইউনিয়ন পরিবার কল্যাণকেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেছে, কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার ডা. মো.আলাউদ্দীন কেন্দ্রের একটি কক্ষে চুপচাপ বসে আছেন । জানতে চাইলে তিনি বলেন, আগে আমাদের এখানে ২৫ রকমের ওষুধ বরাদ্দ ছিল। তখন ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম থেকে শিশু-নারী ও পুরুষ স্বাস্থ্যসেবা নিতে জড়ো হতেন। গত সাত-আট মাস হলো কোনো ওষুধ সরবরাহ নেই । ফলে কেন্দ্রে রোগীদের তেমন ভিড়ও নেই। শুধু পরিবার পরিকল্পনা কিছু সামগ্রী আছে তাই দিয়ে সেবা চলছে। তিনি বলেন, এখানে যেসব রোগী আসে তার বেশিরভাগ হচ্ছে শিশু ও নারী। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আগে প্রতিদিন ৬০ থেকে ৭০ জন রোগীকে সেবা দিয়েছি। বর্তমানে ১৫ থেকে ২০ জনের বেশি হয় না।
ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে ওষুধ সরবরাহ বন্ধ হলে তৃণমুলে সাধারণ মানুষ বিপদে এবং স্বাস্থ্যসেবা ঝুঁকিতে পড়বে বলে মনে করেন নড়াইল সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক মো.রবিউল ইসলাম।
তিনি বলেন, এ ব্যাপারে সরকারের দায়িত্বশীল ভূমিকা নিতে হবে। না হলে গ্রামের কৃষক শ্রেণির মানুষের জীবনের ছন্দ পতন ঘটবে। গতকাল বুধবার দুপুরে লোহাগড়া উপজেলার দিঘলিয়া ইউনিয়নের স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, কুমড়ি গ্রাম থেকে ছোট শিশুকে কোলে নিয়ে স্বাস্থ্যসেবা নিতে এসেছেন সালমা আক্তার । তার কোলের শিশুর সর্দি-কাশি দেখা দিয়েছে। তিনি বলেন, ‘আগে এহেনে ডাক্তার দেহালি ওষুধ দেতো। এহোনে দেচ্ছে না । কাগজে লেহে দিলি আমাগে বাজারের দুয়ানতে কিনে নিতি হচ্ছে। আমরা গরিব মানুষ। অত টায়া পয়সা নাই আমাগে। তিনি সরকারের উদ্দেশ্যে বলেন, সরকাররে কচ্ছি আগের মতো আমাগে মাগনা (বিনা টাকায়) ওষুধ দিতি হবে।’
কালিয়া উপজেলার পহরডাঙ্গা ইউনিয়নের মুলশ্রী গ্রামের দীপ্তি রানী মণ্ডল বুকে ব্যথা অনুভব করলে নিজের ওষুধ নিতে এসেছেন ইউনিয়ন স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে। তিনি বলেন, ‘এহেনের ডাক্তার সাদা কাগজে কী যেন লেহে দেলো। আর কলো এই কাগজ নিয়ে বাজারের দুয়ানেরতে অসুদ কিনতি হবে । কিরাম কতা হলো কওদিন বাপু । আমাগে যদি দুয়ানেরতে অসুদ কিনতি হবে তালি তুমরা এহানে বসে রইছো ক্যান ? আগেতো এমন কতা শুনিনি।’
জেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের উপপরিচালক আলিফ নূর বলেন, ‘পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্রগুলোতে ওষুধ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে প্রায় সাত থেকে আট মাস। যে কারণে সমাজের তৃণমূল পর্যায়ের মানুষ ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। তিনি দাবি করেন, ইউনিয়ন পর্যায়ের স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলো বন্ধের মধ্যেও খোলা ছিল । ওষুধ না পেলেও চিকিৎসাসেবা বন্ধ ছিল না । যারা গর্ভবতী মা তারা চেকআপের জন্য কেন্দ্রে আসছেন । তাদের প্রয়োজনীয় সেবাও দেওয়া হচ্ছে। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ইউনিয়ন স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে ওষুধ সরবরাহের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে জানানো হয়েছে। আশা করছি খুব দ্রুত সংকট মোচন হবে ।
কক্সবাজারের আলোচিত সাবেক এমপি জাফর আলম কে আদালতে শ্যোন অ্যারেস্ট দেখাতে চকরিয়া উপজেলা জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতে তোলা হয়েছে আজ।
জাফর আলম সর্বশেষ কক্সবাজার-১ আসনের এমপি এবং চকরিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ছিলেন।
বুধবার সকাল ৯টার পর পরই জেলা পুলিশের একটু প্রিজন ভ্যানে করে যৌথ বাহিনীর কড়া নিরাপত্তায় তাকে আদালতে আনা হয়।
তাকে আজ আদালতে তোলার খবরে চকরিয়া সিনিয়র জুডিশিয়াল মাজিস্ট্রেট আদালত চত্বর ও আশপাশের অন্তত অর্ধ কিলোমিটার এলাকায় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয় যৌথবাহিনীর পক্ষ থেকে।
আদালত সূত্র জানায়- বিগত ৫ আগষ্ট পরবর্তী চকরিয়া ও পেকুয়া থানায় দায়ের করা একাধিক হত্যাসহ বিশেষ ক্ষমতা আইনের মামলায় তাকে শ্যােন অ্যারেস্ট দেখানো হয় পুলিশের পক্ষ থেকে। সেসব মামলার শুনানি করা হয় আজ। এ সময় আদালতের বিচারক মো. আনোয়ারুল কবির শুনানী শেষে ৭ মামলায় সর্বমোট ১৮ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। তন্মধ্যে পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এসব মামলায় সর্বোচ্চ চারদিন ও সর্বনিম্ন ২ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।
মামলাগুলোর মধ্যে চকরিয়া থানার ৫টি ও পেকুয়া থানার ২টি মামলা রয়েছে।
আরও জানান- আদালতের শুনানী চলাকালে জাফর আলমের পক্ষে শুনানী করেন অসংখ্য আইনজীবী। এ সময় রাষ্ট্রপক্ষে তথা জাফর আলমের বিপক্ষে শুনানীতে অংশ নেন আদালতের এপিপি অ্যাডভোকেট মো. মঈন উদ্দিন। এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন এপিপি মঈন উদ্দিন-ই।
আদালতের শুনানী শেষে চকরিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের পক্ষ থেকে নেতাকর্মীরা জাফর আলমের মুক্তির দাবিতে সাড়ে দশটার দিকে একটি ঝটিকা মিছিল বের করেন।
এর আধাঘন্টা পর উপজেলা বিএনপির নেতাকর্মীরা জাফর আলমের উপযুক্ত শাস্তির দাবিতে পাল্টা মিছিল করে চকরিয়া সিনিয়র জুডিশিয়াল মাজিস্ট্রেট আদালত চত্বরে গিয়ে শেষ করেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার গোসাইপুর-জালশুকা সড়কের নির্মাণ কাজ ১১ মাসেও শেষ হয়নি। অথচ ঠিকাদারের শর্ত অনুসারে এ কাজ নয় মাসে শেষ করার কথা। অভিযোগ রয়েছে- ঠিকাদার লোকমান হোসেন এ সড়কের বক্সকাটিং করে ১১ মাস ধরে ফেলে রেখেছেন। তার স্বেচ্ছাচারিতা ও গাফিলতে এলাকাবাসী চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। উল্লেখ্য তিতাস নদীর উত্তর পাড়ে বড়াইল ইউনিয়নের একটি গ্রাম গোসাইপুর। গ্রামের পশ্চিম অংশে বাজার। বাজারের পূর্ব দিকে দিয়ে চলে গেছে গোসাইপুর-জালশুকা সড়কটি। এ বাজারের যাতায়াতের জন্য রাধানগর, চরগোসাইপুর, জালশুকা, বড়াইল, মেরাতুলী গ্রামের মানুষেরাও সড়কটি ব্যবহার করে।
গোসাইপুর বাজারের মুদি মালের ব্যবসায়ী মুক্তার হোসেন বলেন-"আমার গ্রামের বাড়ি জালশুকা । প্রতিদিন এ সড়কে বাজারে আসি। সড়কটি বর্ষাকালে বৃষ্টি হলেই পানি ও কাঁদা মিলে চলাচলে অযোগ্য হয়ে যায়"। বড়াইল ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আবুল বাসার বলেন-"পূর্ব অঞ্চলের জনগণের জন্য এই রাস্তাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। গোসাইপুর বাজার ও রাধানগর গ্রামের আব্দুর রাজ্জাক একাডেমি স্কুল অ্যান্ড কলেজে আসা-যাওয়ার একমাত্র সড়ক এটি। সড়কটির কাজ শেষ না হওয়ার কারণে জনগণের যাতায়াতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে"। গোসাইপুর গ্রামের সাবেক মেম্বার ডা. হুমায়ুন কবীর বলেন-"সড়কটি দীর্ঘদিন ধরেই অবহেলিত চলাচলে ভোগান্তির শেষ নেই। নির্মাণ কাজ করতে এসে ঠিকাদার আর কাজ করছেন না। এখন বর্ষার বৃষ্টির কারনে মোড়ে মোড়ে রাস্তা ভেঙে মাটি পড়ে যাচ্ছে। যাত্রীরা পা পিছলে পড়ে যাচ্ছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেতে পারে না শিক্ষার্থীরাও"। কাজ বন্ধ থাকার বিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যান জাকির হোসেন বলেন- "সড়কটি জনগুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় কাজটি দ্রুত শেষ করার জন্য ঠিকাদারকে আমি কয়েকবার তাগিদ দিয়েছি"। এ বিষয়ে ঠিকাদারের সাথে যোগাযোগ করেও তার কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুব হোসেন বলেন-"এ বিষয়ে খোঁজ খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে"। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাজীব চৌধুরী বলেন-"এই সড়কের কাজ বন্ধ থাকার বিষয়টি আমার জানা ছিল না। আমি দ্রুত সময়ে কাজ শুরু করার জন্য ঠিকাদারের সাথে যোগাযোগ করব"।
জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে সংযোগ সড়ক ও রাস্তা না থাকায় কাজে আসছে না প্রায় অর্ধকোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ব্রিজ। ফলে চলাচলে ভোগান্তি পোহাতে হয় ৫ গ্রামের প্রায় অর্ধলক্ষাধিক মানুষের। এমন ব্রিজের দেখা মিলেছে জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার সাতপোয়া ইউনিয়নের চর আদ্রা গ্রামের ফসলের মাঠে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের আওতায় গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে এই ব্রিজটি নির্মাণ করা হয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের আওতায় প্রায় অর্ধকোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয় ১৫ মিটার দৈর্ঘ্যের এই ব্রিজটি। ব্রিজ নির্মাণ করা হলেও এখন পর্যন্ত জনসাধারণের চলাচলের জন্য নির্মিত হয়নি সড়ক। ফলে কোনো কাজেই আসছে না সাতপোয়া ইউনিয়নের, চর রৌহা, আকন্দপাড়া, মাজারিয়া ও খামার মাগুরাসহ পার্শ্ববর্তী মাদারগঞ্জ উপজেলার আরও ২টি গ্রামের জনসাধারণসহ হাজারও মানুষের।
সংযোগ সড়ক না থাকায় প্রতিদিন এসব এলাকার ফসলের মাঠের আল দিয়ে দুর্ভোগের মধ্যে চলাচল করছেন স্থানীয়রা। ব্রিজটি নির্মাণের দীর্ঘদিন পার হলেও এটি এখনো জনগণের চলাচলের জন্য ব্যবহারযোগ্য হয়ে ওঠেনি। ব্রিজের দুই পাশে কাঁদা ও অসমতল জমির কারণে শিশু, বৃদ্ধ এমনকি সাধারণ পথচারীদেরও চলাচলে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত। এছাড়া কৃষকদের আবাদি ফসল আনা-নেওয়া বা শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে যাতায়াতেও হয়েছে চরম দুর্ভোগ।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধি হাসানুর কবীর স্বপন, মাসুদ রানা, চান মিয়া, ছমিরন বেওয়া বলেন, ব্রিজটি নির্মাণের খবরে আমরা এলাকাবাসীরা খুবই খুশি হয়েছিলাম। ভেবে ছিলাম আমাদের কয়েক গ্রামের দীর্ঘদিনের চলাচলের দুর্ভোগ লাঘব হবে। কিন্তু ব্রিজটি নির্মাণের এতদিন পার হলেও সড়ক না থাকায় এটি আমাদের কোনো কাজে আসছে না। আমরা দাবি জানাই অতি দ্রুত আমাদের চলাচলের সুবিধার্থে ব্রিজটির দুই পাশে সংযোগ সড়ক নির্মাণ করার জন্য কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
এ ব্যাপারে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা প্রকৌশলী শওকত জামিল বলেন, ব্রিজের নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। আমরা ইতোমধ্যেই ব্রিজটি ও সড়কের কথা জানতে পেরেছি। বিষয়টি নিয়ে উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলব। ওই এলাকার মানুষদের চলাচলের দুর্ভোগ লাঘবে মাটি কেটে রাস্তা উঁচু করে ব্রিজের সঙ্গে সংযোগ রাস্তা নির্মাণ করা হবে বলেও আশ্বাস দেন তিনি।
পালকি ছিল এক সময় গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য, বর-কনের বাহন। এটা ছাড়া বিয়ের কথা ভাবাই যেত না। সারা দেশের মতো রূপগঞ্জেও একই অবস্থা ছিল। কালের বির্বতনে চিরায়ত গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যের ধারক পালকি রূপগঞ্জে আজ আর চোখে পড়ে না। পালকি এখন মিউজিয়াম পিস হয়ে কালের সাক্ষী হয়ে আছে জাদুঘরে। বেহারাদের সুর করে সেই গ্রাম ঘুরে মাঠ-ঘাট-প্রান্তর পেরিয়ে গন্তব্যের কাছে দূর থেকে সেই ছয় বেহারাদের আর দেখা যাচ্ছে না। তাদের ছন্দিত লয়ে হাঁটার সঙ্গে সঙ্গে এ গাঁ থেকে ওগাঁয়ে নাইয়র, বিয়ের কনে বর কিংবা মান্যগন্য ব্যক্তিদের নিয়ে যাওয়ার এ চক্রবিহীন যান সম্ভবত তার অন্তিম যাত্রা করেছে। ছন্দের জাদুকর সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের ভাষায়, রবীন্দ্রনাথের কবিতায়, হেমন্তের গানে কিংবা ভুপেন হাজারিকার মাদল তালে চলা পালকি এখন ঐতিহ্যের খাতায় নাম লিখিয়েছে।
সেই ন্যাংটা পুঁটো ছেলেটা আর বলে না পালকি চলে পালকি চলে.....আদুল গাঁয়ে যাচ্ছে কারা হনহনিয়ে। রবি ঠাকুরের ‘বীর পুরুষ’ কবিতার খোকা তার মাকে পালকিতে নিয়ে যাওয়ার সময় ডাকাতদের সাথে লড়ে যখন ওরা আসে তেড়ে ‘হারে রে রে’ বলে। সেই ভীষণ যুদ্ধের বর্ণনাও দিতে পারে না মাকে। মাও বলতে পারে না, ভাগ্যেস খোকা ছিল তার সঙ্গে। দাদা তার সদ্য বিয়ে হওয়া দিদিকে আর বলে না, আর কটাঁ দিন থাক না দিদি, কেঁদে কেটে কঁকিয়ে, দুদিন বাদে তো নিয়েই যাবে পালকি করে সাজিয়ে। ‘মৈমনসিং গীতিকার’ দেওয়ানা মদিনা ও ছুটবে না পালকিতে আবের পাংখা নিয়ে আর পালকি বহরের সেই পরিচিত দৃশ্য এখন আর দেখা যায় না।
আধুনিক যোগাযোগের গোগ্রাসে পালকি হারিয়ে যাচ্ছে বিস্মৃতির অতল তলে প্রাচীন বাংলার এ বাহনটি। এক সময় গ্রাম-বাংলার হাটবাজারে পালকি সাজিয়ে রাখা হত। বিয়ের আনুষ্ঠানিকতার আগেই পালকিওয়ালাদের কাছে ছুটে যেতেন বরের লোকজন। পালকি কাঠ দিয়ে তৈরি করা হতো। ছয়জন মিলে পালকি বহন করতো। সামনে পেছনে দুজন ও মাঝখানে দুজন করে পালকি কাঁদে নিত। প্রথমে বরকে পালকিতে করে তার নিজ বাড়ি থেকে কনের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হতো। বিয়ের কার্যক্রম সম্পূর্ণ হওয়ার পর বর-কনেকে এক সঙ্গে আবার বরের বাড়িতে নিয়ে আসতো।
আসলে পালকি নামটির উৎপত্তি ফারসি ও সংস্কৃত উভয় ইন্দো ভারতীয় ভাষা থেকে আর সেই সঙ্গে ফরাসি থেকেও। পল্লীকবি জসিম উদ্দিন তাঁর স্মৃতি কথায় এ গাঁ থেকে ওগাঁয়ে যাওয়া বেহারাদের পালকি নিয়ে চলার যে বিবরণ দিয়েছেন তা আমাদের আবহমান গ্রামবাংলার ঐতিহ্যের অংশ। বিলুপ্ত এ পালকি এখন বিভিন্ন জাদুঘরে শোভা পাচ্ছে। বিয়ে বাড়িতে নব বর-বধুদের আনা নেয়ায় পালকি ব্যবহার করা হতো। চক্রযানের বিপ্লবে পালকির জায়গা দখল করে নিয়েছে আধুনিকতার এ যুগে প্রাইভেটকার, নোহা, বাস ও মাইক্রোবাস। হালের লাঙ্গল যেমন গ্রামেও অচল তেমনি ধনী গরিব নির্বিশেষে সকলের নানা অনুষ্ঠানে ব্যবহার করছে আধুনিক যান্ত্রিক যানবাহন। এসব যানের রমরমা ব্যবসাও এ কারণেই জমে ওঠেছে।
আধুনিকতার ছোঁয়ায় ইদানিং বর-কনের বাহনে যোগ হয়েছে হেলিকপ্টারও। রূপগঞ্জের মুড়াপাড়া এলাকা থেকে হেলিকপ্টারে করে বর যাত্রা গিয়েছেন সফিক মিয়া। হেলিকপ্টারে বর-কনে বহনের ঘটনা তখন পুরো এলাকায় বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। ছড়ায় বলা হতো বউ সাজবে কালকি, চড়বে সোনার পালকি! সোনার বরনী কন্যা এখন আর পালকিবদ্ধ পরিবেশে যাবে না, উঠবে আসল বা নকল ফুলের সাজানো এয়ারকন্ডিশন গাড়িতে।
মঙ্গলবার (১৭ জুন) ভোর সাড়ে চারটার দিকে পাবনা বাইপাস মহাসড়কের ইয়াকুব ফিলিং স্টেশন এর সামনে দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহত ট্রাকচালক সেলিম হোসেন (৩৮) মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার সাহারবাটি গ্রামের মৃত আব্দুল গনির ছেলে।
আহতরা হলেন- বাসের হেলপার তারেক (৩৫) ট্রাকের হেল্পার আলামিন (৩৫)। তাদের রাজশাহী মেডিকেল। কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
পাবনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুস সালাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, ট্রাকচালক সেলিম সুনামগঞ্জ থেকে পাথর ভর্তি করে মাওয়া যাচ্ছিলেন।অপরদিক পাবনা এক্সপ্রেস বাসটি ঢাকা থেকে পাবনা বাস টার্মিনালে যাত্রী নামিয়ে হেলপার আলামিন গাড়ি গ্যারেজ করার জন্য দ্রুতগতিতে গাড়ি চালিয়ে ইয়াকুব ফিলিং স্টেশনের সামনে পৌঁছালে ট্রাকের সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়।
স্থানীয় লোকজন ফায়ার সার্ভিসকে জানালে তাৎক্ষিনক ফায়ার সার্ভিসের একটি টিম আহত তিনজনকে উদ্ধার করে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ট্রাক চালক সেলিম কে মৃত ঘোষণা করেন।
অপরদিকে আহত ট্রাকের হেলপার ও বাসের হেলপারের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য তাদের রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের স্থানান্তর করা হয়।
পাবনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুস সালাম জানান, খবর পেয়ে পুলিশ নিহতের মরদেহ উদ্ধার করে সদর থানা হেফাজতে আনা হয়েছে। দুর্ঘটনাকবলিত ট্রাক ও বাসটি জব্দ করা হয়েছে। এ ঘটনায় কেউ অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
মন্তব্য