নির্বাচনের এক বছর আগেই সমাবেশ করে শক্তি প্রদর্শনের রাজনীতিতে নেমেছে রাজনৈতিক দলগুলো। দেশের প্রধান দুটি দল এখনই বড় সমাবেশ করার প্রতিযোগিতায় নেমেছে।
বিষয়টিকে দেশের রাজনীতিতে ইতিবাচক মোড় হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকরা। তারা এই বলে সতর্ক করছেন যে, এভাবে শক্তি প্রদর্শন যাতে কোনোভাবে সংঘর্ষে রূপ না নেয়।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই সমাগমের মধ্য দিয়ে দেশের রাজনীতি নির্বাচনমুখী হচ্ছে, তবে সংঘর্ষের দিকে না গিয়ে দুই দলকেই সহনশীল হতে হবে।
রাজনীতিতে সমাবেশমুখিতার সূত্রপাত গত ৮ অক্টোবর বিএনপির কর্মসূচিকে ঘিরে। ওই দিন নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারসহ আরও দাবিতে প্রতি শনিবার বিভাগীয় শহরে সমাবেশের ঘোষণা দেয় বিএনপি।
প্রথম শনিবার চট্টগ্রামে সমাবেশ করে দলটি। এরপর দ্বিতীয় শনিবার ময়মনসিংহ, তৃতীয় শনিবার খুলনা, তার পরের শনিবার রংপুরে সমাবেশ করেছে দলটি। ৫ নভেম্বর বরিশালে সমাবেশ। আগামী ১০ ডিসেম্বর রাজধানীতেও বড় ধরনের সমাবেশের ঘোষণা আছে।
বিভাগীয় এ কর্মসূচিগুলো ছাড়াও বিএনপি, তার সহযোগী সংগঠনগুলো ঢাকায় যেসব সমাবেশ করছে, সেগুলোতে নেতা-কর্মীদের ব্যাপক সমাগম দেখা যাচ্ছে, যা দলটির গত কয়েক বছরের সমাবেশে দেখা যায়নি।
বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ রয়েছে, সরকার সাজানো পরিববহন ধর্মঘট ও পুলিশের ধরপাকড়ের মাধ্যমে বিএনপির সমাবেশগুলোতে লোকসমাগম কমানোর চেষ্টা করছে।
এদিকে বিএনপির জনসমাবেশের পাল্টা হিসেবে আওয়ামী লীগের সাম্প্রতিক কর্মসূচিগুলোতেও ব্যাপক লোকসমাগম হচ্ছে। আগে থেকে চলমান জেলা সম্মেলনগুলোতে শোডাউন দিচ্ছে ক্ষমতাসীনরা। আগামী জেলা সম্মেলনগুলোতে আরও বেশি লোকসমাগম করার ইঙ্গিতও মিলেছে দলের নেতাদের বক্তব্যে।
ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে ব্যাপক লোকসমাগম ঘটিয়ে কাউন্সিল অধিবেশনকে জনসভায় রূপ দেয়া হয়। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের অবশ্য রোববার বলেন, ‘আওয়ামী লীগ যে সাংগঠনিক কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে, তা বিএনপির কর্মসূচির পাল্টাপাল্টি নয়।’
ওই দিনই দলের এক সভায় সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, এখন থেকে প্রধানমন্ত্রী ও দলের সভাপতি প্রতি মাসে ঢাকার বাইরে দুটি করে কর্মসূচিতে যোগ দেবেন।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পাল্টাপাল্টি কোনো কর্মসূচি দেখানোর ব্যাপার না। আমরা যে কর্মসূচি করছি, তা তো নির্ধারিত এক মাস আগেই। আমাদের জেলা সম্মেলনগুলো এক থেকে দেড় মাস আগেই নির্ধারিত হয়েছে। আমাদের আরও ৩৮টি জেলা সম্মেলনের তারিখ দেয়া আছে। এসব সম্মেলনে ঢাকা জেলার সম্মেলনের চেয়েও বেশি লোকের জমায়েত হবে।’
আওয়ামী লীগের কর্মসূচিতে লোকসমাগমকে বিরোধের রাজনীতি কিংবা পাল্টাপাল্টি অবস্থান বলতে মোটেও রাজি নন দলের কার্যনির্বাহী কমিটির অন্যতম এ সদস্য।
বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, ‘কোনো বিরোধের রাজনীতি না। বিএনপিই তো বিরোধের কথা বলে, আমরা তো বলি না।
‘বিএনপির মিটিংয়ে কর্মীদের সঙ্গে সারা দেশের সন্ত্রাসীদেরও নিয়ে আসা হয়। আর আমাদের মিটিংয়ে নেতা-কর্মীরা আসেন।’
বিএনপির টানা কর্মসূচিতে সংঘর্ষের আশঙ্কা দেখছেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা কাউকে বাধা দেব না। আমরা তো সংঘর্ষের রাজনীতি করি না। আমরা আমাদের কর্মসূচি পালন করছি। পাল্টা কিছু করছি না, আমাদেরটা আমরা করছি।’
গত আগস্ট থেকে রাজনৈতিক কর্মসূচিতে লোকসমাগম করার ওপর বেশ গুরুত্ব দিয়ে আসছে সংসদের বাইরে মাঠের রাজনীতিতে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি।
আগস্ট থেকে দলটি শুধু তাদের নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনেই সমাবেশ করে। আর ১৭ আগস্ট পাল্টা সমাবেশ করে নিজেদের শক্তি দেখিয়ে দেয় আওয়ামী লীগ।
গত সেপ্টেম্বরে প্রায় পুরো মাসজুড়ে নয়াপল্টনে নেতা-কর্মীদের নিয়ে সমাবেশ করেছে বিএনপি। প্রায় প্রতিদিন নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করে নিজেদের শক্তির জানান দেয়ার ইঙ্গিত দেয় দলটির নেতারা। যদিও কয়েক বছর ধরেই শীর্ষ নেতাদের ছাড়া রাজনীতির মাঠে সরব থাকার চেষ্টা করছে দলটি।
গত ১ সেপ্টেম্বর দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে রাজনীতিতে একটি বড় ধরনের শোভাযাত্রা করে নিজেদের শক্তি জানান দেয় বিএনপি। সে দিন প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর শোভাযাত্রা শুরুর আগে এক সমাবেশে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘এ মিছিলের মধ্য দিয়ে বিএনপি দেশবাসীকে জানিয়ে দেবে বিএনপি এখন দেশের সবচেয়ে বড় দল।’
এরপর বিভিন্ন সমাবেশে নেতা-কর্মীদের জমায়েত করে মূলত নিজেদের শক্তির জানান দিয়ে আসছে দলটি। বিএনপি নেতাদের পক্ষ থেকে ‘খেলা হবে’ বলে যে ঘোষণা এসেছে, সেটি ছিল এই সমাগমের স্পষ্ট ইঙ্গিত।
এরপর গত ৮ অক্টোবর বিএনপির ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমান ১০ ডিসেম্বরকে সামনে এনে একটি ডেডলাইন দেন। সেদিন ব্যাপক লোকসমাগমের তাগিদ দেন নেতা-কর্মীদের। ওই দিনের পর আর সরকারের কথায় দেশ চলবে না বলেও বেশ জোরের সঙ্গে দাবি করেন আমান, যদিও তার এই বক্তব্যকে ধারণ করেনি দলের হাই কমান্ড। কারণ এটিকে ‘রাজনৈতিক কথার কথা’ বলে অনেকটা উড়িয়ে দিয়েছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
ডিসেম্বরের পর দলটির কর্মসূচি কেমন হবে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এ বিষয়ে আমরা এখনও সিদ্ধান্ত নিইনি। সিদ্ধান্ত নিলে পরবর্তী সময়ে জানানো হবে। আমাদের দলের মুখপাত্ররা গণমাধ্যমে জানাবেন।’
বিএনপির টানা কর্মসূচির কারণে দেশে সংঘর্ষের আশঙ্কা করছেন কি না জানতে চাইলে দলটির জ্যেষ্ঠ এ নেতা বলেন, ‘আমি জানি না। তোমরা সাংবাদিক, তোমরাই এ বিষয়ে গবেষণা করো, বের করো কী হবে?’
বিএনপির দেখাদেখি আওয়ামী লীগও নিজেদের সমাবেশে লোকসমাগম করেছে বলে কটাক্ষ করতে ছাড়েননি বিএনপি নেতারা।
গত ২৩ অক্টোবর নারায়ণগঞ্জ শহরের ইসদাইর ওসমানী পৌর স্টেডিয়ামে জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে ব্যাপক লোকসমাগমের মধ্য দিয়ে নিজেদের শক্তি দেখানো শুরু করে দলটি। সেই সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ‘আগামী ডিসেম্বরে আসল খেলা হবে’ বলে সাফ জানিয়ে দেন। বিএনপির সমাবেশের ছবি বড় করে দেখানো হচ্ছে বলেও অভিযোগ তোলেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক।
সর্বশেষ গত শনিবার ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে ব্যাপক লোকসমাগম করে ক্ষমতাসীন দল। রাজধানীর শেরেবাংলানগরে বাণিজ্য মেলার পুরোনো মাঠটি কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। সম্মেলনস্থল শেরেবাংলানগর হলেও জাতীয় সংসদের সামনে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ, আসাদ গেট, ফার্মগেট, মিরপুর, শ্যামলী– পুরো এলাকায়ই মানুষের ভিড় জমে। সম্মেলন শুরু হওয়ার পরও ছোট ছোট ভ্যান, বাস ও ট্রাকে করে নেতা-কর্মীরা সম্মেলনস্থলে আসেন।
একই দিন বিএনপিও রংপুর বিভাগীয় সমাবেশ করে। একই দিনে ভিন্ন জায়গায় দুই প্রধান দলের সমাবেশ কার্যত নিজ নিজ শক্তিমত্তা প্রদর্শনের উপলক্ষ হয়ে ওঠে। দুই দলের নেতাদের সেদিনের বক্তব্যেও প্রতিযোগিতার বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
ওই দিন সমাবেশে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আপনারা জানেন রংপুরে একটি সমাবেশ হচ্ছে। সেখানে তিন দিন আগে থেকে লোকজন নিয়ে গিয়ে স্টেজে শুয়ে আছেন, মাঠে শুয়ে আছেন, রাস্তায় শুয়ে আছেন। আর টাকার বস্তার ওপর শুয়ে আছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সম্মেলনের নামে টাকা আসছে, আর তারা টাকার ওপর শুয়ে আছেন।’
যা বলছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা
সমাবেশমুখী রাজনীতির বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সাব্বির আহমেদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর এই যে লোকসমাগম, তা রাজনীতিকে চাঙা করছে, তবে আমাদের রাজনীতিতে মানুষের অধিকারের বিষয়গুলো মিসিং।’
জনসমাগমের মধ্য দিয়ে দেশের রাজনীতি নির্বাচনমুখী হচ্ছে বলে মনে করেন এই গবেষক। তিনি বলেন, ‘এটি ইতিবাচক হলেও এটি নতুন মাত্রা বলে আমার কাছে মনে হয় না। নির্বাচনের দূরবর্তী হলেও সেটির সঙ্গে এই লোকসমাগমের একটি যোগ আছে।’
বিএনপি দীর্ঘদিন পর মাঠে নামার সুযোগ পেয়ে নিজেদের অস্তিত্ব জানান দিচ্ছে বলেও মনে করেন সাব্বির আহমেদ। তিনি বলেন, ‘যেভাবেই হোক স্পেস পেয়ে বিএনপি তো জনসমাগমের চেষ্টা করবেই, এটাই স্বাভাবিক। আওয়ামী লীগও ক্ষমতাসীন দল হওয়ায় পাল্টা লোক সমাগম করবেই।’
দুই দলের এই লোক সমাগমে ভয়ের কারণও দেখছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এ অধ্যাপক। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বিএনপি ও আওয়ামী লীগের সম্পর্ক এতই শত্রুভাবাপন্ন যে, এই লোক সমাগমের ফলে সংঘর্ষের আশঙ্কা দেখা দেয়।’
তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের মতো বড় দলে অনেক ক্ষেত্রে কেন্দ্রের কোনো কন্ট্রোল তৃণমূলের ওপরে থাকে না। কারণ আওয়ামী লীগের মধ্যে বহু দিকের লোক ঢুকে গেছে, যারা মনে করেন, বিএনপির সমাবেশে বাধা দিলে দলের কেন্দ্রের দৃষ্টি তার ওপর গিয়ে পড়বে। তখন সংঘর্ষ হতে পারে, তবে মূল সহিংসতা তৃণমূল থেকে আসতে পারে, যার সম্ভাবনা ধীরে ধীরে বাড়বে।’
এ বিষয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. শামসুল আলম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে জনসমাগমকে ঘিরে যে শক্তি প্রদর্শনের প্রতিযোগিতা চলছে, তাতে রাজনৈতিক দলগুলোকে আরও সহনশীল হতে হবে। তাদের কথাবার্তা যদি সংযত হয়, তাহলে আরও ভালো হয়।’
জনসমাগম নিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘রাজনীতিতে তো গণতান্ত্রিক দলগুলো এভাবেই সভা-সমাবেশ করে থাকে। দুই দল যতই সহনশীল হবে, ততই গণতান্ত্রিক স্থিরতা বিরাজ করবে।’
তার ভাষ্য, ‘বিএনপিকে তো এতদিন অনেক কিছুই করতে দেয়া হয়নি। এখন সুযোগ পেয়ে তারা তো সমাবেশ করবেই। সে ক্ষেত্রে সরকারি দলকে সহনশীলতা দেখাতে হবে।’
আরও পড়ুন:জাতীয় নির্বাচন এবং গণভোট একসঙ্গে করার বিষয়ে আবারও জোরালো মত দিয়েছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
গতকাল বুধবার নয়াপল্টনে সমসাময়িক বিষয় নিয়ে ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন তিনি।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট একসঙ্গে করা ছাড়া কোনো উপায় নেই। কারণ গণভোট আগে হলে জাতীয় নির্বাচনে বিলম্ব হবে। আর জনগণের নির্বাচিত সরকার দ্রুত না এলে সংকট আরো ঘনীভূত হবে বলেও মন্তব্য করেন বিএনপির এই সিনিয়র নেতা।
তিনি বলেন, আমি মনে করি যে যারা গণতান্ত্রিক সংগ্রামে অংশগ্রহণ করেছেন, তারা সবাই এমন এক জায়গায় উপনীত হবেন যাতে আমাদের পরবর্তী গণতন্ত্রের অভিযাত্রার পথে আমাদের যেন বিঘ্ন না ঘটে। তা না হলে কালো ঘোড়া প্রবেশ করতে পারে, কালো ঘোড়া ঢুকে যেতে পারে।
রিজভী বলেন, উন্নত দেশ দীর্ঘদিনের গণতন্ত্র চর্চার দেশেও এখন কথা উঠেছে, এই পদ্ধতিতে (পিআর) জনমতের ট্রু রিফ্লেকশন হয় না। এ নিয়ে সেইসব দেশে আলাপ-আলোচনা, বির্তক চলছে। আপনি জানেন যে, জাপান গণতন্ত্রের দিক থেকে অতি উন্নত একটি দেশ এবং সেখানেও ৩৭ শতাংশ পিআর পদ্ধতি চালু আছে। যেখানে সারাবিশ্বেই পিআর পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা চলছে, কোথাও পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়িত হয়নি, সেখানে হঠাৎ করে আমাদের এখানে কেনো চালু করতে চাইবেন?
তিনি বলেন, আমরা মনে করি, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে আপনি হঠাৎ করে পিআরের কথা বলেন, এতে জনমনে বিভ্রান্ত তৈরি করবে। আমি এ পর্যন্ত যত জরিপ দেখেছি, বিশেষ করে গণমাধ্যমে- সেখানে অধিকাংশ মানুষের আনুপাতিক হারে ভোট পদ্ধতি সম্পর্কে কোনো ধারণা নেই। অনেকেই কনফিউজড অবস্থায় আছেন।
বিএনপির সিনিয়র এ নেতা বলেন, বিশ্বের অধিকাংশ গণতান্ত্রিক দেশ যেগুলো অতি উন্নত গণতান্ত্রিক দেশ যেমন ব্রিটেন, আমেরিকা যদি আমরা বলি বা আরও অন্য দেশে প্রতিনিধি নির্বাচনের যে পদ্ধতিটা চালু আছে- সরাসরি প্রার্থীকে ভোট দেওয়া। আমাদের এখানে কী এমন ঘটনা ঘটলো যে পিআর উৎকৃষ্ট গণতন্ত্রের মডেল? এটা আমার মনে হয়, অবান্তর কথা তারা (জামায়াতে ইসলামী) বলছেন। এটা বলে একটা বিভ্রান্তি তৈরি করছেন অথবা তাদের অন্য কোনো মাস্টার প্ল্যান আছে কি না আমি জানি না।
আইনি ভিত্তি ছাড়া জুলাই সনদে সই করবে না বলে জানিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১১টার দিকে রাজধানীর বাংলামোটরে দলের অস্থায়ী কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আইনি ভিত্তি ছাড়া কোনো নাটকীয়তায় অংশ নেবে না এনসিপি।’
নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান কোনো ক্ষমতা পরিবর্তনের জন্য হয়নি। বরং একটি ফ্যাসিবাদী কাঠামো সংস্কারের জন্য হয়েছিল। সেই সূত্র ধরেই আমরা একটি নতুন বাংলাদেশের কথা বলেছিলাম।’
এনসিপি আহ্বায়ক বলেন, ‘জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ সনদ স্বাক্ষরের আগেই প্রকাশ করতে হবে। জনগণের সার্বভৌম অভিপ্রায়কে প্রাধান্য দিয়ে এ আদেশ প্রধান উপদেষ্টা জারি করবেন।’
তিনি বলেন, ‘স্বাক্ষরের আগেই সনদ বাস্তবায়ন আদেশের খসড়ায় দলগুলোর ঐক্যমত হতে হবে। এর ওপর ভিত্তি করেই আমরা জুলাই সনদে স্বাক্ষরের বিষয়টা বিবেচনা করব। আদেশের টেক্সটের খসড়া আমরা আগে দেখতে চাই। প্রধান উপদেষ্টা যেহেতু জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শক্তিতে সরকার গঠন করেছেন, সেই জায়গা থেকে সেটা প্রেসিডেন্ট নয় বরং সরকার প্রধান হিসেবে তিনি সেটি জারি করবেন।’
নাহিদ ইসলাম আরও বলেন, ‘গণভোট দ্বারা জনগণ সনদের পক্ষে ভোট দিলে পরের সংসদকে কনস্টিটিউট পাওয়ার দেওয়া হবে। সনদ অনুযায়ী সংবিধান সংস্কার করতে এই দাবির সঙ্গে মোটামুটি সবাই একমত। এটার সংশোধনী হবে কিনা আমাদের কাছে কিন্তু তা এখনও স্পষ্ট হয়নি।’ তিনি বলেন, ‘জুলাই সনদে ৮৪টি সংস্কারের বিষয়ে গণভোট হবে। এতে নোট অব ডিসেন্টের আলাদা কোনো কার্যকারিতা থাকবে না। গণভোটের প্রশ্ন কি হবে তা আগেই চূড়ান্ত করতে হবে।’
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদিব ও আহ্বায়ক জাবেদ রাসিনসহ কেন্দ্রীয় নেতারা।
স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি এসএম জিলানী বলেছেন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি মুক্তিযুদ্ধের দল, মুক্তিযোদ্ধাদের দল। আমরা এই আদর্শকে ধারণ করি, লালন করি। মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গনে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ রাতে পাক হানাদার বাহিনী নিরস্ত্র বাঙালীদের ওপর ঝাপিয়ে পড়েছিল, গণহত্যা চালিয়েছিল তখন একজন দেশপ্রেমিক সেনা অফিসার শহীদ জিয়াউর রহমান পাকিস্তানীদের এই নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে তিনি বলেছিলেন, ‘আমি বিদ্রোহ ঘোষণা করলাম পাকিস্তান সরকারের সাথে। আমি বিদ্রোহ ঘোষণা করলাম পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সাথে। বাংলাদেশ যদি স্বাধীন না হতো তাহলে কোর্ট মার্শালে জিয়াউর রহমানের ফাঁসি হতো এই বিদ্রোহ ঘোষণার কারণে। নিশ্চিত ফাঁসি জেনেও তিনি দেশ মাতৃকার জন্য বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিলেন। গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ার কাজি মন্টু কলেজ মাঠে আয়োজিত ‘সম্প্রীতি সমাবেশ’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
স্বাধীনতার ঘোষণা নিয়ে এসএম জিলানী বলেন, ইতিহাস থেকে জেনেছি, যখন কোনো দেশে স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হয় তখন সেই দেশে বিদ্যমান রাজনৈতিক দলের নেতা সে দেশের মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা দিয়ে থাকেন। স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে থাকেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য ছিল বাংলাদেশের মানুষের। কোনো রাজনৈতিক দলের নেতা সেদিন স্বাধীনতার ঘোষণা দেন নাই। বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ সেদিন দিকবেদিক নেতৃত্ব শূণ্যতায় ছিল। জিয়াউর রহমান অপেক্ষায় ছিলেন হয়তো স্বাধীনতার ঘোষণা কেউ দিবে। কিন্তু কোন রাজনৈতিক দলের নেতা যখন স্বাধীনতার ঘোষণা দিলেন না। জিয়াউর রহমান উপলব্ধি করলেন যদি স্বাধীনতার ঘোষণা না দেই তাহলে বাংলাদেশর মানুষ ঐক্যবদ্ধ হবে না। আর যদি বাংলাদেশের মানুষ ঐক্যবদ্ধ না হয় তাহলে স্বাধীনতা যুদ্ধে আমরা বিজয়ী হতে পারব না।
সমাবেশে কোটালীপাড়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি এস এম মহিউদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন গোপালগঞ্জ জেলা বিএনপির সদস্য সচিব কাজী আবুল খায়ের। অন্যদের মধ্যে আরো বক্তব্য রাখেন কোটালীপাড়া উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবুল বশার হাওলাদার, পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অলিউর রহমান হাওলাদার, মুক্তিযোদ্ধা মোদাচ্ছের ঠাকুরসহ জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়নের সিনিয়র নেতারা।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শেষ হয়েছে।
বুধবার (১৫ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ৯টা থেকে ভোটগ্রহণ শুরু হয়ে চলে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। এখন চলছে ভোট গণনার প্রস্তুতি। এ নির্বাচনে ভোট হয়েছে ব্যালট পেপারে। গণনা হচ্ছে ওএমআর (অপটিক্যাল মার্ক রিডার) পদ্ধতিতে। ভোট গণনা সরাসরি দেখানো হবে এলইডি স্ক্রিনের মাধ্যমে। এজন্য রয়েছে ১৪টি এলইডি স্ক্রিন।
চাকসু নির্বাচনের প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. মনির উদ্দিন বলেন, চাকসু নির্বাচনে হাতে লাগানো অমোচনীয় কালি উঠে যাওয়াসহ বিচ্ছিন্ন কিছু অভিযোগ ছাড়া নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে। উৎসবমুখর পরিবেশে ভোটগ্রহণ হয়েছে। বিকেল ৪টা পর্যন্ত ৬০ শতাংশ ভোট পড়েছে।
উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) প্রফেসর ড. মো. কামাল উদ্দিন বলেন, খুবই শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে চাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। শিক্ষার্থীদের আগ্রহ-উদ্দীপনা দেখে সত্যি ভালো লাগছে। আমাদের পর্যাপ্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং সিভিল প্রশাসনের লোকবল রয়েছে। ক্যাম্পাসকে নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা হয়েছে।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘ভোট দিলে বেহেশতে যাওয়া সহজ হবে, এমন প্রচারণা মানুষের সঙ্গে প্রতারণা।’
গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে জাতীয়তাবাদী ওলামা দল আয়োজিত কোরআন অবমাননা ও বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) কে নিয়ে কটূক্তির প্রতিবাদে আয়োজিত সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, জামায়াত ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিভ্রান্তিমূলক প্রচারণা চালাচ্ছে। তারা কিছু ছেলেপেলেকে দিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় মিথ্যাচার, কটূক্তি ও করুচিপূর্ণ কথা ছড়ানোর বাহিনী গড়ে তুলেছে। এরা মিথ্যাকে সাজিয়ে গুছিয়ে প্রচার করছে প্রতিনিয়ত।
তিনি আরও বলেন, ‘জামায়াত আওয়ামী লীগের লেজ ধরে চলতে ভালোবাসে, এখনো কেন যেন আওয়ামী লীগের ভোট নেওয়ার জন্য কায়দা কানুন করছে। শুধুমাত্র ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য ইসলামের মৌলিক নীতির বাইরে কথা বলছে তারা।’
সাধারণ মানুষ পিআর সম্পর্কে জানে না জানিয়ে রিজভী বলেন, ‘যারা নভেম্বরে গণভোটের কথা বলছেন তাদের কোনো মাস্টারপ্ল্যান আছে, তারা শর্ত দিয়ে বিভ্রান্ত করে জাতীয় নির্বাচনকে বিলম্বিত করতে চাচ্ছে।’
অন্তর্বর্তী সরকারের কয়েকজন উপদেষ্টার বিরুদ্ধে একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলের হয়ে ষড়যন্ত্র করার অভিযোগ তুলেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের।
গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর মৎস্য ভবনের সামনে জামায়াতে ইসলামীর ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখা আয়োজিত মানববন্ধনে এ অভিযোগ করেন তিনি।
তিনি বলেন, একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করতে হলে প্রশাসন ও উপদেষ্টা পর্যায়ে দলীয় প্রভাবমুক্ত পরিবেশ তৈরি করতে হবে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, কিছু উপদেষ্টা একটি দলের হয়ে কাজ করছেন। কারা কারা ষড়যন্ত্রে জড়িত, তাদের তালিকা ও রেকর্ড আমাদের কাছে রয়েছে।
তিনি আরো দাবি করেন, বর্তমানে ডিসি, এসপি ও ইউএনও নিয়োগে পক্ষপাতিত্ব করা হচ্ছে। একটি গোষ্ঠীকে সুবিধা দিতে এই নিয়োগ কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। এসব নিয়ন্ত্রণ করছে সরকারের কিছু উপদেষ্টা, যারা নিজেরা নিরপেক্ষ থাকার কথা বললেও, মূলত একটি দলের হয়ে ভূমিকা রাখছেন।
তাহের বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য এই ষড়যন্ত্র থামাতে হবে। প্রশাসনের ভেতর দলীয় প্রভাব ও গোপন মদদ থাকলে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হবে। যারা নির্বাচনের নামে নাটক করতে চায়, জনগণ তা মেনে নেবে না।
জামায়াতের পক্ষ থেকে আবারও গণভোটের দাবি তুলে তিনি বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে একটি গণভোট আয়োজন করতে হবে। এতে জনগণের ইচ্ছা ও বাস্তবতা পরিস্কার হবে। স্বচ্ছতা থাকলে ২১ দিনেই গণভোট সম্ভব।
তিনি আরও বলেন, একটি দল মুখে গণতন্ত্র ও সংস্কারের কথা বললেও ঐক্যমতের ক্ষেত্রে তারা অনুপস্থিত। জুলাই সনদের বাস্তবায়নের জন্য আমরা রাজপথে থাকব। প্রয়োজন হলে আরও বড় কর্মসূচিতে যাব।
জামায়াতের রাজনীতি নিয়ে নেতিবাচক প্রচারণার জবাবে তাহের বলেন, জামায়াত দখলবাজি করে না, চাঁদাবাজি করে না। আমরা জনগণের জন্য রাজনীতি করি। ক্ষমতায় গেলে কৃষকের ঋণ মামলাগুলো প্রত্যাহার করব। আমরা সুষ্ঠু ও ন্যায়ভিত্তিক বিচার চাই, যেন-তেন বিচার নয়।
তিনি সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, গণমানুষের দাবি মেনে নিতে হবে। গণভোট দিতে হবে। পিআর পদ্ধতি মানতে হবে। আর যারা খুন-গুমে জড়িত, তাদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।
জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ও পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনসহ পাঁচ দফা দাবিতে শেরপুরে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের মানব বন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বুধবার (১৫ অক্টোবর) সকালে শেরপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের প্রথম গেইটে এ মানব বন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
মানব বন্ধনে বক্তব্য রাখেন জেলা জামায়াতের আমির মাও: হাফিজুর রহমান, জেলা সেক্রেটারি নুরুজ্জামান বাদল, সাবেক নায়েবে আমির মাও: আব্দুল বাতেনসহ আরো অনেকে।
এসময় বক্তারা বলেন, পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন ও জুলাই সনদ বাস্তবায়ন করা ছাড়া এদেশে কোন নির্বাচন হতে দেয়া হবে না। তারা জামায়াত ঘোষিত পাঁচ দফা দাবি মেনে নেয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
মন্তব্য