নির্বাচনের এক বছর আগেই সমাবেশ করে শক্তি প্রদর্শনের রাজনীতিতে নেমেছে রাজনৈতিক দলগুলো। দেশের প্রধান দুটি দল এখনই বড় সমাবেশ করার প্রতিযোগিতায় নেমেছে।
বিষয়টিকে দেশের রাজনীতিতে ইতিবাচক মোড় হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকরা। তারা এই বলে সতর্ক করছেন যে, এভাবে শক্তি প্রদর্শন যাতে কোনোভাবে সংঘর্ষে রূপ না নেয়।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই সমাগমের মধ্য দিয়ে দেশের রাজনীতি নির্বাচনমুখী হচ্ছে, তবে সংঘর্ষের দিকে না গিয়ে দুই দলকেই সহনশীল হতে হবে।
রাজনীতিতে সমাবেশমুখিতার সূত্রপাত গত ৮ অক্টোবর বিএনপির কর্মসূচিকে ঘিরে। ওই দিন নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারসহ আরও দাবিতে প্রতি শনিবার বিভাগীয় শহরে সমাবেশের ঘোষণা দেয় বিএনপি।
প্রথম শনিবার চট্টগ্রামে সমাবেশ করে দলটি। এরপর দ্বিতীয় শনিবার ময়মনসিংহ, তৃতীয় শনিবার খুলনা, তার পরের শনিবার রংপুরে সমাবেশ করেছে দলটি। ৫ নভেম্বর বরিশালে সমাবেশ। আগামী ১০ ডিসেম্বর রাজধানীতেও বড় ধরনের সমাবেশের ঘোষণা আছে।
বিভাগীয় এ কর্মসূচিগুলো ছাড়াও বিএনপি, তার সহযোগী সংগঠনগুলো ঢাকায় যেসব সমাবেশ করছে, সেগুলোতে নেতা-কর্মীদের ব্যাপক সমাগম দেখা যাচ্ছে, যা দলটির গত কয়েক বছরের সমাবেশে দেখা যায়নি।
বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ রয়েছে, সরকার সাজানো পরিববহন ধর্মঘট ও পুলিশের ধরপাকড়ের মাধ্যমে বিএনপির সমাবেশগুলোতে লোকসমাগম কমানোর চেষ্টা করছে।
এদিকে বিএনপির জনসমাবেশের পাল্টা হিসেবে আওয়ামী লীগের সাম্প্রতিক কর্মসূচিগুলোতেও ব্যাপক লোকসমাগম হচ্ছে। আগে থেকে চলমান জেলা সম্মেলনগুলোতে শোডাউন দিচ্ছে ক্ষমতাসীনরা। আগামী জেলা সম্মেলনগুলোতে আরও বেশি লোকসমাগম করার ইঙ্গিতও মিলেছে দলের নেতাদের বক্তব্যে।
ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে ব্যাপক লোকসমাগম ঘটিয়ে কাউন্সিল অধিবেশনকে জনসভায় রূপ দেয়া হয়। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের অবশ্য রোববার বলেন, ‘আওয়ামী লীগ যে সাংগঠনিক কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে, তা বিএনপির কর্মসূচির পাল্টাপাল্টি নয়।’
ওই দিনই দলের এক সভায় সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, এখন থেকে প্রধানমন্ত্রী ও দলের সভাপতি প্রতি মাসে ঢাকার বাইরে দুটি করে কর্মসূচিতে যোগ দেবেন।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পাল্টাপাল্টি কোনো কর্মসূচি দেখানোর ব্যাপার না। আমরা যে কর্মসূচি করছি, তা তো নির্ধারিত এক মাস আগেই। আমাদের জেলা সম্মেলনগুলো এক থেকে দেড় মাস আগেই নির্ধারিত হয়েছে। আমাদের আরও ৩৮টি জেলা সম্মেলনের তারিখ দেয়া আছে। এসব সম্মেলনে ঢাকা জেলার সম্মেলনের চেয়েও বেশি লোকের জমায়েত হবে।’
আওয়ামী লীগের কর্মসূচিতে লোকসমাগমকে বিরোধের রাজনীতি কিংবা পাল্টাপাল্টি অবস্থান বলতে মোটেও রাজি নন দলের কার্যনির্বাহী কমিটির অন্যতম এ সদস্য।
বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, ‘কোনো বিরোধের রাজনীতি না। বিএনপিই তো বিরোধের কথা বলে, আমরা তো বলি না।
‘বিএনপির মিটিংয়ে কর্মীদের সঙ্গে সারা দেশের সন্ত্রাসীদেরও নিয়ে আসা হয়। আর আমাদের মিটিংয়ে নেতা-কর্মীরা আসেন।’
বিএনপির টানা কর্মসূচিতে সংঘর্ষের আশঙ্কা দেখছেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা কাউকে বাধা দেব না। আমরা তো সংঘর্ষের রাজনীতি করি না। আমরা আমাদের কর্মসূচি পালন করছি। পাল্টা কিছু করছি না, আমাদেরটা আমরা করছি।’
গত আগস্ট থেকে রাজনৈতিক কর্মসূচিতে লোকসমাগম করার ওপর বেশ গুরুত্ব দিয়ে আসছে সংসদের বাইরে মাঠের রাজনীতিতে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি।
আগস্ট থেকে দলটি শুধু তাদের নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনেই সমাবেশ করে। আর ১৭ আগস্ট পাল্টা সমাবেশ করে নিজেদের শক্তি দেখিয়ে দেয় আওয়ামী লীগ।
গত সেপ্টেম্বরে প্রায় পুরো মাসজুড়ে নয়াপল্টনে নেতা-কর্মীদের নিয়ে সমাবেশ করেছে বিএনপি। প্রায় প্রতিদিন নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করে নিজেদের শক্তির জানান দেয়ার ইঙ্গিত দেয় দলটির নেতারা। যদিও কয়েক বছর ধরেই শীর্ষ নেতাদের ছাড়া রাজনীতির মাঠে সরব থাকার চেষ্টা করছে দলটি।
গত ১ সেপ্টেম্বর দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে রাজনীতিতে একটি বড় ধরনের শোভাযাত্রা করে নিজেদের শক্তি জানান দেয় বিএনপি। সে দিন প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর শোভাযাত্রা শুরুর আগে এক সমাবেশে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘এ মিছিলের মধ্য দিয়ে বিএনপি দেশবাসীকে জানিয়ে দেবে বিএনপি এখন দেশের সবচেয়ে বড় দল।’
এরপর বিভিন্ন সমাবেশে নেতা-কর্মীদের জমায়েত করে মূলত নিজেদের শক্তির জানান দিয়ে আসছে দলটি। বিএনপি নেতাদের পক্ষ থেকে ‘খেলা হবে’ বলে যে ঘোষণা এসেছে, সেটি ছিল এই সমাগমের স্পষ্ট ইঙ্গিত।
এরপর গত ৮ অক্টোবর বিএনপির ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমান ১০ ডিসেম্বরকে সামনে এনে একটি ডেডলাইন দেন। সেদিন ব্যাপক লোকসমাগমের তাগিদ দেন নেতা-কর্মীদের। ওই দিনের পর আর সরকারের কথায় দেশ চলবে না বলেও বেশ জোরের সঙ্গে দাবি করেন আমান, যদিও তার এই বক্তব্যকে ধারণ করেনি দলের হাই কমান্ড। কারণ এটিকে ‘রাজনৈতিক কথার কথা’ বলে অনেকটা উড়িয়ে দিয়েছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
ডিসেম্বরের পর দলটির কর্মসূচি কেমন হবে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এ বিষয়ে আমরা এখনও সিদ্ধান্ত নিইনি। সিদ্ধান্ত নিলে পরবর্তী সময়ে জানানো হবে। আমাদের দলের মুখপাত্ররা গণমাধ্যমে জানাবেন।’
বিএনপির টানা কর্মসূচির কারণে দেশে সংঘর্ষের আশঙ্কা করছেন কি না জানতে চাইলে দলটির জ্যেষ্ঠ এ নেতা বলেন, ‘আমি জানি না। তোমরা সাংবাদিক, তোমরাই এ বিষয়ে গবেষণা করো, বের করো কী হবে?’
বিএনপির দেখাদেখি আওয়ামী লীগও নিজেদের সমাবেশে লোকসমাগম করেছে বলে কটাক্ষ করতে ছাড়েননি বিএনপি নেতারা।
গত ২৩ অক্টোবর নারায়ণগঞ্জ শহরের ইসদাইর ওসমানী পৌর স্টেডিয়ামে জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে ব্যাপক লোকসমাগমের মধ্য দিয়ে নিজেদের শক্তি দেখানো শুরু করে দলটি। সেই সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ‘আগামী ডিসেম্বরে আসল খেলা হবে’ বলে সাফ জানিয়ে দেন। বিএনপির সমাবেশের ছবি বড় করে দেখানো হচ্ছে বলেও অভিযোগ তোলেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক।
সর্বশেষ গত শনিবার ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে ব্যাপক লোকসমাগম করে ক্ষমতাসীন দল। রাজধানীর শেরেবাংলানগরে বাণিজ্য মেলার পুরোনো মাঠটি কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। সম্মেলনস্থল শেরেবাংলানগর হলেও জাতীয় সংসদের সামনে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ, আসাদ গেট, ফার্মগেট, মিরপুর, শ্যামলী– পুরো এলাকায়ই মানুষের ভিড় জমে। সম্মেলন শুরু হওয়ার পরও ছোট ছোট ভ্যান, বাস ও ট্রাকে করে নেতা-কর্মীরা সম্মেলনস্থলে আসেন।
একই দিন বিএনপিও রংপুর বিভাগীয় সমাবেশ করে। একই দিনে ভিন্ন জায়গায় দুই প্রধান দলের সমাবেশ কার্যত নিজ নিজ শক্তিমত্তা প্রদর্শনের উপলক্ষ হয়ে ওঠে। দুই দলের নেতাদের সেদিনের বক্তব্যেও প্রতিযোগিতার বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
ওই দিন সমাবেশে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আপনারা জানেন রংপুরে একটি সমাবেশ হচ্ছে। সেখানে তিন দিন আগে থেকে লোকজন নিয়ে গিয়ে স্টেজে শুয়ে আছেন, মাঠে শুয়ে আছেন, রাস্তায় শুয়ে আছেন। আর টাকার বস্তার ওপর শুয়ে আছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সম্মেলনের নামে টাকা আসছে, আর তারা টাকার ওপর শুয়ে আছেন।’
যা বলছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা
সমাবেশমুখী রাজনীতির বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সাব্বির আহমেদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর এই যে লোকসমাগম, তা রাজনীতিকে চাঙা করছে, তবে আমাদের রাজনীতিতে মানুষের অধিকারের বিষয়গুলো মিসিং।’
জনসমাগমের মধ্য দিয়ে দেশের রাজনীতি নির্বাচনমুখী হচ্ছে বলে মনে করেন এই গবেষক। তিনি বলেন, ‘এটি ইতিবাচক হলেও এটি নতুন মাত্রা বলে আমার কাছে মনে হয় না। নির্বাচনের দূরবর্তী হলেও সেটির সঙ্গে এই লোকসমাগমের একটি যোগ আছে।’
বিএনপি দীর্ঘদিন পর মাঠে নামার সুযোগ পেয়ে নিজেদের অস্তিত্ব জানান দিচ্ছে বলেও মনে করেন সাব্বির আহমেদ। তিনি বলেন, ‘যেভাবেই হোক স্পেস পেয়ে বিএনপি তো জনসমাগমের চেষ্টা করবেই, এটাই স্বাভাবিক। আওয়ামী লীগও ক্ষমতাসীন দল হওয়ায় পাল্টা লোক সমাগম করবেই।’
দুই দলের এই লোক সমাগমে ভয়ের কারণও দেখছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এ অধ্যাপক। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বিএনপি ও আওয়ামী লীগের সম্পর্ক এতই শত্রুভাবাপন্ন যে, এই লোক সমাগমের ফলে সংঘর্ষের আশঙ্কা দেখা দেয়।’
তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের মতো বড় দলে অনেক ক্ষেত্রে কেন্দ্রের কোনো কন্ট্রোল তৃণমূলের ওপরে থাকে না। কারণ আওয়ামী লীগের মধ্যে বহু দিকের লোক ঢুকে গেছে, যারা মনে করেন, বিএনপির সমাবেশে বাধা দিলে দলের কেন্দ্রের দৃষ্টি তার ওপর গিয়ে পড়বে। তখন সংঘর্ষ হতে পারে, তবে মূল সহিংসতা তৃণমূল থেকে আসতে পারে, যার সম্ভাবনা ধীরে ধীরে বাড়বে।’
এ বিষয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. শামসুল আলম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে জনসমাগমকে ঘিরে যে শক্তি প্রদর্শনের প্রতিযোগিতা চলছে, তাতে রাজনৈতিক দলগুলোকে আরও সহনশীল হতে হবে। তাদের কথাবার্তা যদি সংযত হয়, তাহলে আরও ভালো হয়।’
জনসমাগম নিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘রাজনীতিতে তো গণতান্ত্রিক দলগুলো এভাবেই সভা-সমাবেশ করে থাকে। দুই দল যতই সহনশীল হবে, ততই গণতান্ত্রিক স্থিরতা বিরাজ করবে।’
তার ভাষ্য, ‘বিএনপিকে তো এতদিন অনেক কিছুই করতে দেয়া হয়নি। এখন সুযোগ পেয়ে তারা তো সমাবেশ করবেই। সে ক্ষেত্রে সরকারি দলকে সহনশীলতা দেখাতে হবে।’
আরও পড়ুন:অসম্ভবকে সম্ভব করার এই গল্পটি প্রতিটি ছাত্রের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস। স্বপ্ন পূরণের পথে সাহস আর নিষ্ঠার কোনো বিকল্প নেই। মনে রাখতে হবে, কেবল বিজয়ের জন্য নয়, বরং একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়ার জন্যই লড়াই করতে হয়। সাফল্যের চূড়ায় পৌঁছাতে মেধা ও পরিশ্রমের কোনো বিকল্প নেই, আর সেই পথেই রচিত হয় নতুন ইতিহাস। এই ডাকসু নির্বাচন সেই ইতিহাসেরই একটি অংশ, যেখানে মেধা আর সততা পেয়েছে সর্বোচ্চ সম্মান।
দুর্ধর্ষ জয়, না অভিস্মরণীয় বিজয়! ডাকসুতে শিবিরের এই জয়কে আপনি কীভাবে ব্যাখ্যা করবেন? সাদিক কায়েম, এস এম ফরহাদ এবং মহিউদ্দিন খান তাদের প্রতিদ্বন্দ্বীদের চেয়ে দ্বিগুণের বেশি ভোট পেয়েছেন, মানে এক কথায় অলআউট উইন। জয়ের ব্যবধানটাই সবচেয়ে বড় চমক সৃষ্টি করেছে এখানে। ডাকসুর ইতিহাসে এমন ঘটনা খুব বেশি ঘটেনি। ভিপি পদে সাদিক কায়েম পেয়েছেন ১৪ হাজার ৪২ ভোট, ছাত্রদলের আবিদ পেয়েছেন ৫৬৫৮ ভোট, অর্থাৎ অর্ধেকেরও কম। জিএস পদে এস এম ফরহাদ পেয়েছেন ১০,৭৯৪ ভোট, অন্যদিকে ছাত্রদলের হামিম পেয়েছেন ৫২৮৩ ভোট। এখানেও রয়েছে দ্বিগুণ ব্যবধান। এজিএস পদে মহিউদ্দিন খান পেয়েছেন ৯৫০১ ভোট, অন্যদিকে তার প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্রদলের মায়েদ পেয়েছেন ৪২৫৪ ভোট। অর্থাৎ ৫২৪৭ ভোটের ব্যবধান রয়েছে এখানে। শিবিরের এই তিন নায়ক সম্পর্কে কিছুটা ধারণা দেওয়া যাক।
শুরুতেই আলোচনা করা যাক মহিউদ্দিন খান মহিকে। চোখে চশমা, পরনে পাঞ্জাবি আর চেহারায় ভদ্রতার ছাপ সুস্পষ্ট। শিক্ষার্থীরা তো বটেই, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যেও মহিউদ্দিনের জনপ্রিয়তা আছে। ভদ্রতার পাশাপাশি মেধাতেও যে কারো চেয়ে এগিয়ে তিনি। মহিউদ্দিন খান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের ১৮-১৯ সেশনের শিক্ষার্থী। তিনি অনার্সে ৩.৯৩ সিজিপিএ অর্জন করে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম এবং মাস্টার্সে ৪.০০ সিজিপিএ অর্জন করতে সক্ষম হন। এরপর তিনি মাস্টার্সের পূর্ণাঙ্গ ফলাফলে ৩.৯৭ সিজিপিএ পেয়ে প্রথম স্থান অর্জন করেন। তিনি বিজয় '৭১ হলের সাবেক শিক্ষার্থী। ছাত্র রাজনীতিতে দাপট বজায় রাখার জন্য হলে বছরের পর বছর সময় কাটানোর নজির আছে, সেখানে মহিউদ্দিন খান বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। স্নাতকোত্তর শেষ হওয়ার তিন দিনের মাথায় তিনি হল ছেড়ে দেন যা ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয় তখন। তাই এজিএস হিসেবে ডাকসু নির্বাচনে মহিউদ্দিন খানের এই জয়টা মোটেও অবাক করার মতো নয়।
এবার আসবে এস এম ফরহাদের নাম। দেখতে সে ছোটখাটো হলেও তার দায়িত্বটা বিশাল। একজন ডিবেটর হিসেবে তার বেশ খ্যাতি আছে। কখনো কখনো তিনি বাম রাজনীতির সমালোচনা করেছেন, আবার কখনো ছাত্রদলের ভুলগুলোকে ধরিয়ে দিয়েছেন। আবার প্রতিপক্ষের দিক থেকেও কেউ কেউ ফরহাদকে নিয়ে নানা সময় নানা আলোচনা ও সমালোচনা করেছেন। তিনি সেসব সমালোচনার সুস্পষ্ট জবাব দিয়েছেন তার দায়িত্বশীল আচরণের মাধ্যমে। ছাত্রলীগের সাথে তার অতীত সংশ্লিষ্টতা নিয়ে প্রচুর সমালোচনা আছে, কিন্তু ফরহাদের দাবি সেটা ছিল তার চৌকস কৌশল। তিনি নাকি পরিচয় লুকিয়ে শিবির করতেন। ফরহাদের যে রুমমেট তার সঙ্গে দীর্ঘ চার বছর থেকেছে, সেও ফরহাদের আসল রাজনৈতিক পরিচয় জানতো না। ২০০৪ সালের ৫ই আগস্টের পর ফরহাদের পরিচয় সামনে আসার পর, অন্য অনেকের মতো তার রুমমেটও অবাক হয়েছিল। ফরহাদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের ১৭-১৮ সেশনের এবং পাশাপাশি কবি জসীমউদ্দীন হলের আবাসিক শিক্ষার্থী। ডাকসু নির্বাচনের সময় ফরহাদকে তেমন প্রচারণা করতে দেখা যায়নি, অথচ তার জয় আল্লাহ সহজভাবে এনে দিয়েছেন।
সর্বশেষে আসবে এই ডাকসুর ইতিহাসের অন্যতম নাম, যার দ্বারা পুরো ডাকসু আগামী কয়েক বছর পরিচালিত হবে, তার নাম হলো সাদিক কায়েম। তিনি হলেন শিবিরের অন্যতম ফ্রন্টলাইনার। ডাকসুতে তিনি শিবিরের হয়ে প্রচার-প্রচারণা করেছেন সবচেয়ে বেশি। সাদিক কায়েমের প্রচারণা সবসময়ই ছিল একদম সাদামাটা। কিন্তু তার জয় আল্লাহ দিলেন অনেক বড়সড় করে। তিনি বর্তমান ডাকসুর ইতিহাসে শিবিরের প্রথম এবং একমাত্র ভিপি। মাঝরাতে গতকাল সবাই যখন বিজয় উল্লাসের অপেক্ষায়, সাদিক কায়েমকে তখন নামাজরত অবস্থায় একটি ভিডিও চিত্রে দেখা যায়। ভিপি হওয়ার আগেই আল্লাহর নাম স্মরণ করে সাদিক কায়েম বলেছিলেন, “ডাকসুর কাজ নেতা তৈরি করা নয়, বরং শিক্ষার্থীদের স্বার্থ হাসিল করা। এই স্বার্থগুলোর মধ্যে রয়েছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ: আবাসন সংকট দূর করা, শিক্ষার্থীদের খাবার এবং সুচিকিৎসা নিশ্চিত করা, এবং বিশেষ করে রেজিস্টার ভবনে শিক্ষার্থীদের অনেককালের ভোগান্তি থেকে চির বিদায় দেওয়া।” এবার মূলত সেসব বাস্তবিকতার চিত্র প্রমাণ করার পালা। তিনি শিক্ষার্থীদের পার্টটাইম চাকরির সুযোগ, আধুনিক লাইব্রেরি ব্যবস্থা, মসজিদের আধুনিকায়ন, শিক্ষার্থীদের জন্য আবাসনের প্রসারসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের সামগ্রিক সমস্যা সমাধানে কাজ করতে চান। শিক্ষাজীবনের প্রতিটি ধাপে সাদিক কায়েম অপূর্ব মেধার পরিচয় দিয়ে এসেছেন। সাদিক কায়েম যে এলাকা থেকে উঠে এসেছেন, সেখান থেকে খুব কম সংখ্যক ছেলে এ যাবৎ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে জায়গা করে নিতে পেরেছে। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায় খুব ভালোভাবে টিকে যান এবং একাধিক সংগঠনের প্রধান হিসেবে তিনি কাজ করেছেন। তার নেতৃত্বের গুণটা তার ভেতর আগে থেকেই আছে। এবার ভিপি হিসেবে তিনি কতটা সফল হবেন, তা সময় বলে দেবে।
জীবনে বড় কিছু অর্জন করতে হলে শুধু মেধা থাকলেই চলে না, তার সাথে দরকার দৃঢ় সংকল্প আর সততা। এই নির্বাচন প্রমাণ করলো যে, যখন মেধা আর সততার সমন্বয় ঘটে, তখন যেকোনো বাধা অতিক্রম করা সম্ভব। ছাত্র রাজনীতিকে কলঙ্কমুক্ত করে নতুন একটি উদাহরণ সৃষ্টি করার এই সুযোগ এসেছে, যা আগামী প্রজন্মের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে। বিজয় শুধু একটি পদের নয়, বরং লক্ষ লক্ষ শিক্ষার্থীর প্রত্যাশার। এই পথচলা যেন নতুন দিনের সূচনা করে।
সংক্ষিপ্ত জীবনী :
ডঃ তারনিমা ওয়ারদা আন্দালিব, বর্তমানে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে সহকারী অধ্যাপক এবং যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড ইমপ্যাক্ট গ্রুপে গ্লোবাল কনসালট্যান্ট ডিরেক্টর হিসেবে কর্মরত আছেন।
দাউদ ইব্রাহিম হাসান, বর্তমানে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় একজন রিসার্চ এসিস্ট্যান্ট হওয়ার পাশাপাশি ছাত্র প্রতিনিধি হিসেবে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য এবং যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে নিয়োজিত থাকার পাশাপাশি আইডিএলসি ফাইনান্স পিএলসিতে মার্কেটিং ডিপার্টমেন্টের একজন সদস্য হিসেবে নিয়োজিত আছেন।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তার সহধর্মিণী রাহাত আরা বেগমের চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরের উদ্দেশে ঢাকা ছেড়েছেন।
আজ সকালে বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে বিমানবন্দর ত্যাগ করেন তিনি।
বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান সাংবাদিকদের জানান, রাহাত আরা বেগমের চিকিৎসকের শিডিউল আগে থেকেই নেওয়া ছিল। সেই অনুযায়ী আজ তারা সিঙ্গাপুর গেছেন।
তিনি জানান, সকাল ৮টা ১০ মিনিটে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে তারা রওনা হন। তবে, চিকিৎসার জন্য তারা কতদিন সিঙ্গাপুরে থাকবেন, তা জানাননি শায়রুল।
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রসঙ্গে বিএনপির ভাইস ও সাবেক শিক্ষা উপমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম পিন্টু বলেনছেন- নির্বাচনটা বানচাল করার জন্য অনেকেই চেষ্টা করতেছেন। নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার জন্য চেষ্টা করতেছে, কিন্তু আপনাদের মনে রাখতে হবে একটি নির্বাচিত সরকার দেশকে সুশৃঙ্খল অবস্থায় নিয়ে আসতে পারে। নির্বাচন ছাড়া এ দেশের অবস্থা খারাপের দিকে যাবে।
বুধবার (২৮ আগস্ট) দুপুরে টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক-কর্মচারী ও এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ প্রাপ্তদের সংবর্ধনা এবং ক্রেস্ট প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির তিনি এসব কথা বলেন।
সাবেক শিক্ষা উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টু বলেন, নির্বাচন নিয়ে যারা চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র করুন না কেন এই বাংলাদেশের মানুষ অন্তত সচেতন। আমরা জনগণকে নিয়ে সেই ষড়যন্ত্র প্রতিহত করে যাতে সঠিক সময়ে নির্বাচন হয় এবং সরকারও নির্বাচনটা সঠিক সময়ে দিতে বদ্ধপরিকর। সে ব্যাপারে আমরা সচেতন থাকব এবং সক্রিয় থাকব।
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তাদের সাথে জোটের ব্যাপারে এখন কিছু বলা যাচ্ছে না।
এ সময় ভূঞাপুর বালিকা পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও উপজেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকে গোলাম মোস্তফার সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য রাখেন- বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান তরফদার। এতে অতিথি ছিলেন- উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সেলিমুজ্জামান তালুকদার সেলু, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. মনিরুজ্জামান প্রমুখ।
আগামী রমজানের আগেই দেশে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেছেন, এতে ষোলো বছর পর দেশের ভোটাররা ভোট দিতে পারবেন।
বুধবার (২৭ আগস্ট) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ৪৯তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বিএনপির পক্ষ থেকে তার সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন ও ফাতিহা পাঠ শেষে এ মন্তব্য করেন তিনি।
দেশের মানুষ এখনো নানাভাবে অধিকারবঞ্চিত উল্লেখ করে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘দেশীয় ও আন্তর্জাতিক চক্রান্তকারীদের দিক থেকে আমরা এক ভয়ঙ্কর ষড়যন্ত্রের মধ্যে বাস করছি। আমাদের আন্দোলনের চূড়ান্ত লক্ষ্য গণতন্ত্র এখনো প্রতিষ্ঠা পায়নি। তবে আমাদের বিশ্বাস খুবই দ্রুত রমজানের আগেই একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হবে, তাতে এ দেশের ভোটাররা ষোলো বছর ধরে যে ভোট দিতে পারেননি, এবার তারা সেই ভোট দিতে পারবেন।’
‘পাশাপাশি গণতন্ত্রের আরও বিভিন্ন শর্ত, যেমন: এ দেশের মানুষের মনে নিরাপত্তাবোধ তৈরি, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা— পূরণ করা সম্ভব হবে।’
তিনি বলেন, ‘আদালত হতে হবে অসহায় মানুষের শেষ ভরসার স্থল। সেই ধরনের একটি সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যেই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। আর এই লক্ষ্য পূরণে মানুষের অনুপ্রেরণা হচ্ছেন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম। তিনি ছিলেন মানবতা, প্রেম ও দ্রোহের কবি। ব্রিটিশবিরোধী সংগ্রাম, স্বাধীনতার লড়াই, নব্বইয়ের গণআন্দোলন এবং বছরখানেক আগে যে দুনিয়া কাঁপানো গণঅভ্যুত্থান হয়েছে, প্রতিটি জাতীয় অর্জন ও অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে যার গান ও কবিতা মানুষকে উদ্বুদ্ধ করেছে, দেশের জনগণকে উদ্বুদ্ধ করেছে, তার গান গাইতে গাইতে ও তার কবিতা আবৃত্তি করতে করতে আমরা রাজপথে নেমে আসতাম।’
রিজভী বলেন, ‘স্বৈরশাসনের তপ্ত বুলেটের সামনে নিঃশঙ্কচিত্তে দাঁড়াতেও দ্বিধা করিনি, কারণ আমাদের কণ্ঠে ছিল জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের গান ও কবিতা। যখনই এ দেশের মানুষ অধিকারহারা হয়, তখনই তাদের সংঘবদ্ধ ও ঐক্যবদ্ধ করে অত্যাচারীর শৃঙ্খল ভাঙার প্রত্যয় জেগে ওঠে যার কবিতা ও গানে, তিনি কাজী নজরুল ইসলাম।’
তিনি আরও বলেন, ‘ঔপনিবেশিক শক্তির বিরুদ্ধে তিনি (নজরুল) তার শানিত কলম চালাতে দ্বিধা করেননি। তার লেখা কবিতা, গান ও সৃষ্টির মধ্য দিয়ে যে চেতনা তিনি গোটা জাতিকে দিয়েছেন, তা ধারণ করেই আমরা দেশনেত্রী খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে সংগ্রাম করেছি, জুলাই আন্দোলনে যার চূড়ান্ত বহিঃপ্রকাশ হয়েছে।’
বাংলাদেশের রাষ্ট্রকাঠোমোতে দীর্ঘদিন ধরে বৈষম্য চলে আসছে জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘সেখানে রাতারাতি এগুলোর সমাধান সম্ভব হবে না। কিন্তু আমি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি, এই রাষ্ট্রকাঠামো বদলাতে হবে।
তিনি বলেছেন, ‘রাষ্ট্র কাঠামোর সংস্কারর চূড়ান্ত পর্যায়ে আমরা এখনো আসতে পরিনি। এমনকি নির্বাচন নিয়েও একই বিষয় আছে, যদিও জাতি এখন সেই দিকেই মনোনিবেশ করেছে। যে বিষয়গুলো নিয়ে আমরা দীর্ঘদিন সংগ্রাম ও লড়াই করেছি, এটা মুহূর্তের মধ্যে সমাধান হয়ে যাবে— এমনটা মনে করার কোনো কারণ নেই।’
শনিবার (২৩ আগস্ট) দুপুরে রাজধানীর প্রেসক্লাবে একটি সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ‘সামাজিক সুরক্ষা কতটুকু সু-রক্ষিত’ শিরোনামের এই সেমিনারের আয়োজন করে অর্পণ আলোক সংঘ নামের একটি সংগঠন।
এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন দৈনিক প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক সোহরাব হাসান, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক মুভমেন্টের চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ, বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য রেহানা আক্তার রানু ও পলিসি এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান ড. এম মাসরুর রিয়াজ। সেমিনারটির সঞ্চালনা করেন অর্পণ আলোক সংঘের চেয়ারম্যান বীথিকা বিনতে হোসাইন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা এখন রাষ্ট্র কাঠামো সংস্কারের কথা বলছি, একইসঙ্গে অর্থনৈতিক কাঠামোর কথাও বলছি। কিন্তু দীর্ঘদিনের সব অনাচার, অবিচার, নৈরাজ্য, দুর্নীতি ও স্বৈরাচার— সবকিছু কাটিয়ে একদিনে সুন্দর করে একটি রাষ্ট্র আমরা তৈরি করব, এটা মনে করার কোনো কারণ আছে বলে আমি মনে করি না।’
তিনি বলেন, ‘ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে নতুন একটি সুযোগ তৈরি হয়েছে। যে ৫২ বছরে একটা নিয়মিত ও শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের বিধান আমরা তৈরি করতে পারিনি, সেখানে আজ হঠাৎ করে মুহূর্তের মধ্যে আমরা সবকিছু ঠিক করতে পারব না। আমরা যারা রাজনীতি করছি, তারা চেষ্টা করছি। তবে বিচ্ছিন্নভাবে কিংবা জোড়াতালি দিয়ে কোনোকিছু করা যায় না। এর জন্য সুনির্দিষ্ট চিন্তাভাবনা ও লক্ষ্য প্রয়োজন। পাশাপাশি, রাজনৈতিক নেতাকর্মীদেরও আন্তরিকতা থাকতে হবে।’
এ সময়ে রাষ্ট্রকাঠামো সংস্কারের ওপর জোর দিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এটা আমি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি। এই কাঠামো বদলাতে হবে। কারণ, বেগুন গাছ লাগিয়ে আমরা কমলালেবু আশা করতে পারি না। কাজেই আমাদের সামনে একটা সুযোগ এসেছে, সেটা যদি কাজে লাগাতে পারি, বৈষম্যহীন একটা সমাজব্যবস্থার কাছাকাছি নিয়ে যেতে পারি, তাহলে হয়তো-বা অভ্যুত্থানের কিছুটা মূল্য আমরা পাব।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের সবকিছু নির্ধারণ করে আমলারা। সেখান থেকে সবকিছু নেমে আসে। একজন স্কুলশিক্ষককেও নিজের সমস্যা সমাধান করতে ঢাকায় আসতে হয়, যেটার কোনো প্রয়োজন নেই। এর জন্য তো জেলা পরিষদই যথেষ্ট হওয়ার কথা।’
‘কিন্তু ওই যে সিস্টেম। কারণ, তারা যদি ঢাকায় না আসেন, তাহলে ঘুষ আসবে কোথা থেকে? এখন স্কুলশিক্ষক থেকে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক— সব নিয়োগ হয় ঘুষের বিনিময়ে। যেই রাষ্ট্রকাঠামোতে এমন বৈষম্য চলতে থাকে, সেখানে রাতারাতি কিছু করে ফেলতে পারব না।’
অনুষ্ঠানে জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘মেহনিত মানুষের আন্দোলনের দাবি-দাওয়ার মঞ্চ হিসেবে আমরা নিজেদের গড়ে তোলার চেষ্টা করছি। ২০১৫ সালে গণসংহতি আন্দোলনকে একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে ঘোষণা করি। এ সময়ে বাংলাদেশের মানুষের লড়াই-সংগ্রামে যুক্ত থাকার চেষ্টা করেছি।’
‘রাষ্ট্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে জনগোষ্ঠীকে ঐক্যবদ্ধ রাখা; আমাদের লক্ষ্যও তাই।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের মধ্যে শ্রেণিগত পার্থক্য রয়েছে। সবচেয়ে বড় পার্থক্য ধনসম্পদে। গত ৫৪ বছরে যে দলগুলো ক্ষমতায় ছিল, তারা যে নীতি তৈরি করেছে, তাতে সংখ্যাগরিষ্ঠ খেটে খাওয়া মানুষ, নিপীড়িত জনগোষ্ঠী কিংবা লিঙ্গীয় পরিচয়ের মানুষ, তাদের জন্য সাম্য তো দূরের কথা, ন্যূনতম ভারসাম্যও তৈরি করতে পারেনি।’
‘এতে লুটপাট-নির্ভর একটি অর্থনৈতিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এখানে ধরে নেওয়া হয়, ক্ষমতা দিয়ে টাকা-পয়সা বানাবে।’
ববি হাজ্জাজ বলেন, ‘শেখ হাসিনার আমলে ব্যাংক লুট হয়ে সাফা হয়ে গেছে। কিন্তু গত পরশুদিন দেখলাম, ৯টি নন-ব্যাংকি ফিন্যানশিয়াল ইনস্টিটিউশন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এটা বিশাল ব্যাপার। কিন্তু হাসিনা চলে যাওয়ার পরও লুটপাট বন্ধ হয়ে যায়নি। গেল ১২ মাসে প্রায় একইভাবে ব্যাংকিং খাতে লুটপাট হয়েছে। এটি আমাদের প্রাতিষ্ঠানিক অবক্ষয়, যেগুলো হাসিনার আমলে বেশি হয়েছে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, এজন্য কোনো জবাবদিহিতা নেই।
তিনি আরও বলেন, ‘কোনো ব্যাংক থেকে একটি টাকা লুট হলেও বাংলাদেশের ব্যাংকের নজরদারি থাকে। লুট হবে, বাংলাদেশ ব্যাংক জানবে না— এটা হয় না। হাসিনার আমলে যে লুট হয়েছে, তা বাংলাদেশ ব্যাংক জানত। কিন্তু সেখানে যে কর্মকর্তাদের এই নজরদারি করার কথা ছিল, তাদের নামে কোনো নিউজ হয়নি, মামলা হয়নি। অর্থাৎ এই প্রতিষ্ঠানকে জবাবদিহিতার আওতায় নিয়ে আসা হয়নি।’
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেছেন, সাধারণ মানুষ ইসলামকে ক্ষমতায় দেখতে চায়। আমি নির্বাচনের ব্যাপারে খুবই সিরিয়াস। যদি জনগণ চায় তবে আমরাই সরকার গঠন করব।
তিনি বলেছেন, ইসলামী সমমনাদের এক মঞ্চে আনার বিষয়ে সবাই একমত। বড় বড় রাজনৈতিক নেতারা অনেক সময় পিআর বুঝেন না, কিন্তু সাধারণ মানুষ বিষয়টি ভালোভাবেই বোঝে। কুমিল্লা বিভাগ বাস্তবায়ন ও বিমানবন্দর চালুর বিষয়ে ইতোমধ্যে অগ্রগতি হয়েছে। শিগগিরই সুখবর আসবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
গতকাল শুক্রবার সকাল থেকে দিনব্যাপী কুমিল্লা ফানটাউনে জামায়াতে ইসলামী কুমিল্লা মহানগরীর ‘নির্বাচনী দায়িত্বশীল সমাবেশ’ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
ডা. তাহের বলেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী নির্বাচনে পিআর (প্রোপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন) পদ্ধতি চালুর জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করতে প্রস্তুত রয়েছে।
বিএনপির প্রতি ইঙ্গিত করে কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, প্রয়োজনে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আমলে হ্যাঁ/না ভোটের মতো পদ্ধতিও গ্রহণ করা হতে পারে।
অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন- কুমিল্লা মহানগরীর আমির ও কুমিল্লা ৬ সংসদীয় আসনে জামায়াত মনোনীত প্রার্থী কাজী দ্বীন মোহাম্মদ।
কুমিল্লা মহানগরীর দুরবস্থার প্রসঙ্গ টেনে ড. তাহের বলেন, আমি কান্দিরপাড় থেকে ডুলিপাড়া ফানটাউনে আসতে ৪৫ মিনিট সময় নিয়েছি। যেখানে স্বাভাবিক সময়ে ৫ মিনিটের বেশি লাগার কথা নয়।
সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি আবারও জোর দিয়ে বলেন, নির্বাচনে পিআর পদ্ধতি চালুর বিষয়ে জামায়াত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করতে আগ্রহী। প্রয়োজনে বিকল্প ফরম্যাটেও কাজ করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, কোনো দল যদি মনে করে আগামী নির্বাচনে নিশ্চিত জয়ী হবে তাহলে বোঝা যায় জেতার জন্য তারা কোনো একটা মেকানিজম করছে। একটি অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন বাংলাদেশকে সংকট থেকে বের করে আনতে পারবে। জনগণ যাকে চাইবে তারাই জয়ী হবে।
মহানগরীর সেক্রেটারি মাওলানা মাহবুবুর রহমান এবং সহকারী সেক্রেটারি মোহাম্মদ কামরুজ্জামান সোহেলের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন- মহানগরীর নায়েবে আমির অধ্যাপক এ কে এম এমদাদুল হক মামুন, যুব বিভাগের সভাপতি কাজী নজির আহমেদ, শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের মহানগর সভাপতি অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট নাছির উদ্দিন মোল্লা, মোতাহার আলী দিলাল, ভিপি মুজিবুর রহমান, কুসিক ৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর অধ্যক্ষ মোশাররফ হোসেন, অধ্যাপক এ জি এস শহিদুল্লাহ, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী মাওলানা দেলোয়ার হোসেন সবুজ প্রমুখ।
মন্তব্য