ঢাকার ধামরাইয়ে ভালুম আতাউর রহমান খান ডিগ্রি কলেজের শিক্ষক আমিনুল ইসলামের বিরুদ্ধে ছাত্রদের যৌন হয়রানির অভিযোগ অনেকদিনের। সম্প্রতি কয়েক ছাত্র উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে লিখিত অভিযোগ দিলে তদন্ত কমিটি করা হয়। অভিযোগের সত্যতার পাওয়ার প্রতিবেদন প্রায় এক মাস আগে জমাও দেয়া হয়।
এখনও আমিনুল ইসলাম নামে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নেয়ায় ছাত্ররা ক্ষুব্ধ।
নিউজবাংলার কাছে এই ক্ষোভ জানিয়েছেন ছাত্ররা।
ওই কলেজে গিয়ে মঙ্গলবার কথা হয় অভিযোগকারী ছাত্রদের সঙ্গে।
তাদের একজন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ওই স্যার মেয়েদের না শুধু ছেলেদের হয়রানি করেন। অনেক আগে থেকেই করে আসছেন।পড়ালেখার কথা চিন্তা করে কেউ মুখ খোলেনি।
‘আমরা যারা অভিযোগ করেছি, তারা পড়ালেখার কথা চিন্তা করে করিনি। কারণ আমরা কলেজ শেষ করার পর সেখান থেকে চলে আসলে তো আবার ওই শিক্ষক আমাদের ছোট ভাইদের সঙ্গেও একই কাজ করবে। এই কথা চিন্তা করেই আমরা অভিযোগ দিয়েছি প্রায় এক মাস হলো, এখনও কোনো বিচার হয় নাই।’
অভিযোগকারী আরেক ছাত্র বলেন, ‘আমিনুল স্যার আমাকে একদিন কন্ট্রোল রুমে ডেকে নিয়ে যায়, যৌন নির্যাতন করে। একথা কাউকে বললে আমাকে পরীক্ষা দিতে দিবে না এমন ভয় দেখায়।’
কলেজের আরেক ছাত্র বলেন, ‘স্যার বিভিন্ন সময় সিঁড়ি দিয়ে নামার সময় কৌশলে ছেলেদের স্পর্শকাতর স্থানে হাত দেয়। মেসেঞ্জারে বিভিন্ন হয়রানিমূলক কথা বলে। নগ্ন ছবি চায়। তার এমন নোংরা কাজে কলেজের পরিবেশ নষ্ট হয়ে গেছে। অনেক ছাত্র তার যৌন নির্যাতনের শিকার। অবিলম্বে আমরা তার প্রত্যাহার ও কঠিন শাস্তি দাবি করছি।’
ভালুম আতাউর রহমান খান ডিগ্রি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাইন উদ্দিন জানিয়েছেন, কলেজের ১০ জন ছাত্র আমিনুলের বিরুদ্ধে ইউএনও হোসাইন মোহাম্মদ হাই জকির কাছে অভিযোগ দেন। ইউএনও হোসাইন ওই কলেজেন গর্ভনিং বডির সভাপতিও।
অভিযোগ তদন্তে ৫ সদস্যের কমিটি করেন তিনি। কমিটিপ্রধান কলেজের আরেক প্রভাষক হাবিবুর রহমান হাবিব গত ৩ অক্টোবর প্রতিবেদন জমা দেন।
হাবিব নিউজবাংলাকে বলেন, ‘তদন্তে যা পেয়েছি সেটা তো ভাষায় প্রকাশ করা করা যায় না... ওই প্রভাষকের বিরুদ্ধে ভুক্তভোগীদের অভিযোগের সত্যতা পেয়েছি।’
তিনি জানান, প্রভাষক আমিনুল এখন আর কলেজে আসছেন না।
এ বিষয়ে জানতে আমিনুলকে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি তা রিসিভ করেননি। এসএমএস পাঠালেও উত্তর মেলেনি। পরে তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে।
অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলেও কেন এতদিনে ব্যবস্থা নেয়া হয়নি জানতে চাইলে অধ্যক্ষ মাইন উদ্দিন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এটা তো ইউএনও স্যারের কাছে অভিযোগ করছে। সেই এটার সিদ্ধান্ত নেবে। আমার কাছে তো অভিযোগ নাই। ইউএনও স্যার তো ব্যবস্থা নেবেই। এক সপ্তাহের মধ্যে এটার সিদ্ধান্ত দেবে।’
এ বিষয়ে ইউএনও হোসাইন মোহাম্মদ হাই জকি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এটি প্রক্রিয়াধীন আছে। শিগগিরি আপনারা ফল জানতে পারবেন।’
আরও পড়ুন:নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার উত্তর পাকুরীয়া গ্রামের এক নাবালিকা ছাত্রীকে ধর্ষণের চেষ্টা মামলায় এক মাদ্রাসা শিক্ষককে দশ বছর সশ্রম কারাদণ্ড ও পঞ্চাশ হাজার টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায়ে আরও এক মাস বিনাশ্রম কারাদণ্ড হয়েছে।
নওগাঁর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক জেলা ও দায়রা জজ মো. মেহেদী হাসান তালুকদার বুধবার এ রায় দেন। জরিমানার অর্থ ভুক্তভোগী ছাত্রীকে প্রদানের নির্দেশ দেন বিচারক।
দণ্ডাদেশ পাওয়া ওই শিক্ষকের নাম আবুল হাসান। ২৫ বছর বয়সী আবুল হাসান বদলগাছী উপজেলার উত্তর পাকুরীয়া গ্রামের বাসিন্দা ও একটি মাদ্রাসার আরবি বিষয়ের শিক্ষক।
আদালত সূত্র জানায়, ২০২১ সালের ২৯ মে সকাল ছয়টার সময় নয় বছর বয়সী ওই মেয়েটি একই গ্রামের আরবি শিক্ষক আবুল হাসানের বাড়িতে আরবি পড়তে যায়। সে সময় অন্যান্য ছাত্র-ছাত্রীরা না আসায় তাকে একা পেয়ে ভয় দেখিয়ে ধর্ষণের চেষ্টা করেন তিনি। পরবর্তীতে ভুক্তভোগীর মা বদলগাছী থানায় অভিযোগ করলে তদন্ত শেষে ঘটনার সত্যতা মেলায় আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। আদালত আট জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে বুধবার রায়ের জন্য দিন ধার্য করেন।
এদিন আসামির উপস্থিতিতে তাকে দেয়া সাজার রায় পড়ে শোনানো হয় এবং শেষে তাকে জেলা কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দেন বিচারক।
রাষ্ট্রপক্ষে বিশেষ কৌঁসুলি অ্যাডভোকেট আজিজুল হক ও আসামিপক্ষে অ্যাডভোকেট মামুনুর রশিদ মামলা পরিচালনা করেন। রায়ে রাষ্ট্রপক্ষ সন্তোষ প্রকাশ করে এবং আসামিপক্ষ উচ্চ আদালতে আপিল করার কথা জানায়।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক নিয়োগে তৃতীয় ধাপে ঢাকা-চট্টগ্রাম বিভাগের লিখিত পরীক্ষার প্রকাশিত ফল স্থগিত করা হয়েছে।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য অফিসার মাহবুবুর রহমান তুহিন স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে রোববার রাতে এ তথ্য জানানো হয়।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, প্রকাশিত ফলাফলে দুটি সেট কোডের উত্তরপত্র মূল্যায়নে কারিগরি ত্রুটি দেখা দিয়েছে। ফল পুনরায় মূল্যায়ন শুরু করেছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞ টিম। পুনঃমূল্যায়ন শেষে রোববার রাত ১২টার মধ্যেই সংশোধিত ফল প্রকাশ করা হবে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সহকারী শিক্ষক নিয়োগে ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের ফল রোববার দুপুরে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের এক স্মারকে প্রকাশ করা হয়। এতে উত্তীর্ণ হন ২৩ হাজার ৫৭ জন প্রার্থী। প্রকাশিত ফলাফলে মেঘনা ও যমুনা সেটের পরীক্ষার্থীদের উত্তরপত্র মূল্যায়নে কারিগরি ত্রুটি পরিলক্ষিত হয়েছে।
মেঘনা ও যমুনা সেটের পরীক্ষার্থীদের উত্তরপত্র আইআইসিটি, বুয়েটের কারিগরি টিম ইতোমধ্যে পুনঃমূল্যায়নের কাজ শুরু করেছে। রাত ১২টার মধ্যে মেঘনা ও যমুনা সেটের পরীক্ষার্থীদের উত্তরপত্র পুনঃমূল্যায়ন করে নিরীক্ষান্তে সংশোধিত ফল প্রকাশ করা হবে।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে রোববার দুপুরে প্রাথমিকের শিক্ষক নিয়োগের তৃতীয় ধাপের ফল প্রকাশ করা হয়। অনেক প্রার্থী ভালো পরীক্ষা দিয়েও ফল না পাওয়ার অভিযোগ তোলেন। অনেকে ফেসবুকে পোস্ট দেন। পরে মেঘনা ও যমুনা কোডের প্রার্থীরা গ্রুপ খুলে সেখানে কারা কারা ভালো পরীক্ষা দিয়েও ফল পাননি তা জানাতে থাকেন।
বিষয়টি গণমাধ্যমকর্মীরা প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিপদপ্তরের দৃষ্টিগোচর করলে দুই সেটের উত্তরপত্র পুনঃমূল্যায়নের সিদ্ধান্ত হয়।
আরও পড়ুন:থোকায় থোকায় ঝুলছে আঙুর। আর কয়েকদিন পর পেকে গেলে তা গাছ থেকে সংগ্রহ করে বাজারে বিক্রি করা হবে। বাতাসে দোল খাওয়া আঙুর বাগানের এমন দৃশ্য দেখা গেল কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার বলরামপুর গ্রামে।
ওই গ্রামের বাসিন্দা কাজী বিল্লাল হোসেন খোকন পেশায় কলেজ শিক্ষক। শখ করে করা আঙুর বাগানটি এখন তাকে স্বপ্ন দেখাচ্ছে বাণিজ্যিকভাবে আঙুর উৎপাদনের।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, চারপাশে বিস্তৃর্ণ ধানি জমি। তার মাঝেই উঁচু করে তৈরি করা হয়েছে বাঁশের মাচা। সেই মাচায় থোকায় থোকায় ঝুলছে গাঢ় সবুজ রঙের আঙুর।
বাগানে নিবিষ্ট চিত্তে গাছের পরিচর্যা করছিলেন বিল্লাল হোসেন। এ সংবাদ সগ্রাংহককে দেখে এগিয়ে আসেন তিনি। এরপর আগ্রহ নিয়ে ঘুরিয়ে দেখান তার শখের আঙুর বাগান।
বাগানের প্রতিটি কোণায় যত্নের ছাপ স্পষ্ট। শিক্ষকের হাতের ছোঁয়ায় আঙুর গাছগুলো সজীব ও সতেজ হয়ে বাগানে শোভা ছড়াচ্ছে।
বিল্লাল জানান, বছর দুই আগে শখ করে তার নার্সারিতে দুটি আঙুর চারা রোপণ করেন তিনি। সেবার গাছ দুটি থেকে তিনি প্রায় ১৮ কেজি আঙুর পেয়েছিলেন। তারপর ইউটিউব দেখে আঙুর বাগান করার উদ্যোগ নেন তিনি।
তিনি জানান, এ বছর ১৪ শতক জমিতে আঙুর বাগান করেছেন। মোটামুটি লাখ খানেক টাকা খরচ হয়েছে তার। তবে সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে এ বাগান থেকে অন্তত ৫ লাখ টাকার আঙুর তিনি বিক্রি করতে পারবেন।
শখের এ কৃষকের চিন্তা, আগামী বছর তিনি বাগানের পরিসর আরও বড় করবেন।
কুমিল্লা জেলার মাটিতে আঙুর চাষের উপযোগিতা আছে কি না তা এ মুর্হুতে বলা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছে কুমিল্লা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। তবে এ জেলার মাটি সব ধরনের ফল উৎপাদনে সহায়ক বলে জানান অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আইয়ুব মাহমুদ।
কৃষি বিভাগের অব্যাহত সহযোগিতা পেলে আঙুর চাষেও সফলতা আসবে বলে মনে করেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘আঙুর চাষে শিক্ষক খোকনের প্রচেষ্টা অন্যদের উৎসাহিত করবে। পাশাপাশি জেলায় ফলের চাহিদা পূরণে ভূমিকা রাখবে।’
বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ছাত্রীর সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কের দায়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) গণিত বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এ বি এস মাণিক মুনসীকে সাময়িক বরখাস্ত (সাসপেন্ড) করা হয়েছে। একইসঙ্গে তাকে কেন স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হবে না তা জানতে চেয়ে নোটিশ দেয়া হয়েছে।
এই ঘটনায় এর আগে তাকে বিভাগীয় সব কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছিল।
বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯৫তম সিন্ডিকেট সভায় এসব সিদ্ধান্ত নেয়া হয় বলে জানিয়েছেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম।
উপাচার্য জানান, গণিত বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাণিক মুনসীর বিরুদ্ধে নিজ বিভাগের ছাত্রীকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে যৌন হয়রানির অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। এজন্য সিন্ডিকেটে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। কেন তাকে স্থায়ীভাবে বরখাস্ত করা হবে না, সেই জবাব চাওয়ারও সিদ্ধান্ত হয়েছে।
সহকারী অধ্যাপক এ বি এস মাণিক মুনসী নিজ বিভাগের এক ছাত্রীকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে দীর্ঘ এক বছর শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করেন বলে অভিযোগ ওঠে। সে সঙ্গে ওই শিক্ষক তার নিজ স্ত্রীর সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদ হয়েছে জানিয়ে ওই ছাত্রীকে বিয়ে করারও আশ্বাস দেন।
অভিযুক্ত ওই শিক্ষকের কক্ষে তার সঙ্গে ওই শিক্ষার্থী থাকা অবস্থায় দীর্ঘ সময় দরজা বন্ধ দেখা যায়। বিষয়টি বিভাগের অন্য শিক্ষকদের নজরে এলে তা জানাজানি হয়। এরপর ওই নারী শিক্ষার্থী শিক্ষককে বিয়ে করতে বললে তিনি আপত্তি জানান।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বিভাগীয় চেয়ারম্যান বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন। পরে গণিত বিভাগের একাডেমিক সভায় সর্বসম্মতিক্রমে ২০২৩ সালের ৫ সেপ্টেম্বর অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে একাডেমিক কার্যক্রমে অব্যাহতির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সে সঙ্গে বিভাগের পক্ষ থেকে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে উপাচার্যের কাছে লিখিত আবেদন দেয়া হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তদন্ত কমিটি গঠন করে।
এদিকে ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন বিভাগের প্রভাষক আবু শাহেদ ইমন সাময়িক বহিষ্কারের পর তাকে দ্বিতীয়বার কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়েছে। তাকেও কেন স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হবে না তা জানতে চেয়েছে প্রশাসন।
এর আগে ২১ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯৪তম বিশেষ সিন্ডিকেট সভায় ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন বিভাগের এক ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগে প্রভাষক আবু শাহেদ ইমনকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়।
সিন্ডিকেট সভায় আইন বিভাগের শিক্ষার্থী ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকার আত্মহত্যার ঘটনায় তদন্ত কমিটি এখনও প্রতিবেদন জমা দেয়নি। এজন্য এ বিষয়ে সিন্ডিকেট সভায় কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
এর আগে ১৫ মার্চ রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সহকারী প্রক্টর এবং এক সহপাঠীর বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়ে ‘আত্মহত্যা’ করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৭-১৮ সেশনের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী ফাইরোজ সাদাফ অবন্তিকা।
এ ঘটনার পর বিশ্ববিদ্যালয় জুড়ে তুমুল আন্দোলন শুরু হয়। তখন শিক্ষার্থীরা অতীতে বিভিন্ন যৌন নিপীড়নের অভিযোগের বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে। এতে নড়েচড়ে বসে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
আরও পড়ুন:সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগের তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় ২৯ মার্চ। ইতোমধ্যে সেই পরীক্ষার উত্তরপত্র মূল্যায়ন শুরু হয়েছে। ঈদুল ফিতরের পর ফল প্রকাশ করা হবে।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের (ডিপিই) মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াত সোমবার এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, ‘তৃতীয় ধাপের পরীক্ষার উত্তরপত্র মূল্যায়ন শুরু হলেও ঈদের আগে খুব একটা সময় পাওয়া যাবে না। চলতি সপ্তাহ ছাড়া আগামী সপ্তাহে মাত্র দুদিন সময় পাওয়া যাবে। এ ছাড়া কয়েকটি জেলা থেকে উত্তরপত্র ঢাকায় পাঠাতে দেরি হবে।
‘ফলে ঈদের আগে ফল প্রকাশ করা সম্ভব হবে না। আশা করছি, ঈদের ছুটি শেষে অফিস খোলার পরপরই তৃতীয় ধাপের পরীক্ষার ফল প্রকাশ করতে পারব।’
প্রাথমিকে সহকারী শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় তৃতীয় ধাপে ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের জেলাগুলোতে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। দুই বিভাগের ৪১৪টি কেন্দ্রে একযোগে অনুষ্ঠিত লিখিত পরীক্ষায় প্রার্থী ছিলেন প্রায় সাড়ে ৩ লাখ।
এর আগে ২ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় ধাপে তিন বিভাগের ২২ জেলায় লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ২০ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় ধাপের লিখিত পরীক্ষার ফল ইতোমধ্যে প্রকাশ হয়েছে। তাতে উত্তীর্ণ হয়েছেন ২০ হাজার ৬৪৭ জন প্রার্থী।
তারও আগে গত বছরের ৮ ডিসেম্বর প্রথম ধাপে রংপুর, বরিশাল ও সিলেট বিভাগের জেলাগুলোতে লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম ধাপের লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন ৯ হাজার ৩৩৭ জন। মৌখিক পরীক্ষা শেষে প্রথম ধাপে ২ হাজার ৪৯৭ জনকে চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত করা হয়েছে।
আরও পড়ুন:ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটে (আইবিএ) প্রভাষক পদে নিয়োগ পেতে যাওয়া এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ ওঠায় ওই নিয়োগ আটকে গেছে। ইনস্টিউটটির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম বোর্ড অফ গভর্ন্যান্স এই নিয়োগ আটকে দিয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল বোর্ডের সভায় সভাপতিত্ব করেন। উপাচার্যের বাসভবন সংলগ্ন লাউঞ্জে সোমবার বিকেল ৩টায় এই বোর্ডের সভা অনুষ্ঠিত হয়।
যৌন হয়রানির অভিযোগ ওঠা ওই শিক্ষকের নাম সাজু সাহা। তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক। বিভাগেরই এক সাবেক ছাত্রী এই শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ তোলেন।
সম্প্রতি সাজু সাহা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ’র প্রভাষক পদের জন্য আবেদন করেছিলেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. সীতেশ চন্দ্র বাছারের সভাপতিত্বে হওয়া নিয়োগ বোর্ড সাজু সাহাসহ চারজনকে নিয়োগের জন্য মনোনীত করে।
সোমবার বিকেলে অনুষ্ঠিত বিজি (বোর্ড অফ গভর্ন্যান্স) বোর্ডে এটি পাস হওয়ার কথা ছিল। এর আগের দিন রোববার সাজু সাহার বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগের বিষয়টি সামনে এনে সংবাদ প্রকাশ করে নিউজবাংলা।
বিজি বোর্ডের সিদ্ধান্ত নিয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, ‘নিয়োগের সিদ্ধান্ত হয়নি। এটি এখন রিভিউ করার জন্য সিলেকশন বোর্ডে পাঠানো হয়েছে।’
সিলেকশন বোর্ডের প্রধান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. সীতেশ চন্দ্র বাছার বলেন, ‘বিষয়টি আজ বোর্ড অফ গভর্ন্যান্সে উঠেছিল। কিন্তু এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়নি। সেখান থেকে এটি আমাদের কাছে পাঠানো হয়েছে বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য।’
এর আগে রোববার নিউজবাংলায় প্রকাশিত সংবাদে ভুক্তভোগী সেই শিক্ষার্থীর বরাত দিয়ে বলা হয়, অধ্যাপক সাজু সাহা কাউন্সেলিং করানোর নামে তাকে নিপীড়ন করেছেন উল্লেখ করে সাবেক ওই ছাত্রী বলেন, ‘তিনি আমার গায়ে হাত দিয়েছেন। আমাকে তার সঙ্গে হুক-আপ করার প্রস্তাব দিয়েছেন। ওনার প্রস্তাব গ্রহণ করার জন্য রেস্টুরেন্টে আমার পা পর্যন্ত ধরতে চেয়েছেন। এসবের ট্রমায় আমি এক সেমিস্টার ক্লাসেও নিয়মিত হতে পারিনি।’
তিনি বলেন, ‘এসব আমি এতোদিন উপস্থাপন করার সাহস পাইনি। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইরুজ অবন্তিকার ঘটনার পর আমি এগুলো সামনে আনার সাহস পাই।’
সাবেক ওই ছাত্রী আরও বলেন, ‘সাজু সাহা ভয়ে আছেন আমার অভিযোগের ব্যাপারে। কারণ তিনি তো জানেন, তিনি আমার সাথে এসব করেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গেলেও উনি নিশ্চিত একই কাজ করবেন নারী শিক্ষার্থীদের সাথে। ওনার বিচার নিশ্চিত করেই ছাড়বো আমি, শুধু সময়ের অপেক্ষা।’
এদিকে সোমবার এই শিক্ষার্থী জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যান্টি সেক্সুয়াল হ্যারাসমেন্ট সেলে এই শিক্ষকের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। অপরদিকে এদিন দুপুরেই ওই শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে কোর্টে মামলা করেন অধ্যাপক সাজু সাহা।
আরও পড়ুন:বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) রাজনৈতিক সংগঠন ও এর কার্যক্রম নিষিদ্ধের রায় হাইকোর্ট স্থগিত করার পর নিজেরা বর্তমানে সংকটময় মুহূর্তে আছেন উল্লেখ করে এই সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষককে তাদের পাশে দাঁড়ানোর আর্জি জানিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
সোমবার সন্ধ্যায় বুয়েটের এম এ রশীদ প্রশাসনিক ভবনের সামনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এই অনুরোধ জানানো হয়। এ সময় সেখানে শতাধিক শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন। সবার পক্ষ হয়ে তিনজন শিক্ষার্থী লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন। তবে তারা নিজেদের নাম প্রকাশ করেননি।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ‘আমরা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের প্রতি পূর্ণ ভরসা এবং আস্থা রাখি। তাদের কাছ থেকেই আমরা শিক্ষা গ্রহণ করি, তারাই আমাদের প্রতিটি ক্লাসরুম, প্রতিটি ল্যাবের নায়ক। আমরা গত চার বছরে এমনটা কখনও অনুভব করিনি যে তারাও চান পুনরায় ছাত্ররাজনীতি প্রবেশ করে সেই অন্ধকার দিনগুলো ফিরে আসুক।’
লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, ‘শিক্ষকরা কখনোই আমাদের অকল্যাণ চাননি এবং কখনও চাইবেনও না। তারা সবসময় সব শিক্ষার্থীর পক্ষেই ছিলেন। আমরা আমাদের বুয়েটের সব শিক্ষকের কাছে আর্জি জানাচ্ছি- আপনারা এমন সংকটের মুহূর্তে আমাদের পাশে এসে দাঁড়ান।’
এর আগে সোমবার সকালে এক রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে বিচারপতি মো. খসরুজ্জামান ও বিচারপতি কে এম জাহিদ সারওয়ারের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ বুয়েটে রাজনৈতিক সংগঠন ও এর কার্যক্রম নিষিদ্ধের রায় স্থগিতের আদেশ দেন।
বুয়েটে সব রাজনৈতিক সংগঠন ও এর কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণার বিজ্ঞপ্তির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে বুয়েট শিক্ষার্থী ইমতিয়াজ হোসেন রিটটি করেন।
এ বিষয়ে লিখিত বক্তব্যে শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘আমরা বুয়েটের শিক্ষার্থীরা দেশের বিচার ব্যবস্থার প্রতি সম্পূর্ণ সম্মান ও আস্থা রাখি। আমরা বুয়েট প্রশাসনের কাছে দাবি রাখব- এ বিষয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মতামত বিচার বিভাগে যথাযথভাবে ভুলে ধরা হোক। ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি না থাকার আমাদের যে দাবি তার যৌক্তিকতা নিয়ে আমরা ঐক্যবদ্ধ এবং আমরা আমাদের সিদ্ধান্তে অটল।’
‘ছাত্র রাজনীতি আমাদের জন্য ভালো কিছু বয়ে আনেনি’
শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘যে ছাত্র রাজনীতি র্যাগিং কালচারকে প্রশ্রয় দেয়, ক্ষমতার অপব্যবহারের পথ খুলে দেয়, যার বলি হতে হয় নিরীহ ছাত্রদেরকে তা আমাদের জন্য ভালো কিছু কখনোই বয়ে আনেনি, আনবেও না। এর চরমতম মূল্য হিসেবে আমরা আমাদের কেমিকৌশল ৯৯-এর সাবেকুন্নাহার সনি আপু, যন্ত্রকৌশল ০৯-এর আরিফ রায়হান দ্বীপ ভাই এবং সবশেষ তড়িৎকৌশল ১৭-এর আবরার ফাহাদ ভাইকে হারিয়েছি।’
শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘ছাত্র রাজনীতিবিহীন বুয়েটের পরিবেশ ছিল সর্বোচ্চ নিরাপদ ও শিক্ষাবান্ধব। মৌলবাদী শক্তিকেও আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে রুখে দিতে পারি।’
‘অ্যালামনাইরাও ছাত্র রাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাসের পক্ষে’
লিখিত বক্তব্যে শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘দেশ ও বিদেশের নানা প্রান্ত থেকে আমাদের বুয়েটের অ্যালামনাইরাও ইতোমধ্যে আমাদের ক্যাম্পাস ছাত্র রাজনীতিমুক্ত রাখার মতামতের সঙ্গে দৃঢ়ভাবে একাত্মতা পোষণ করছেন এবং সোশ্যাল মিডিয়াতে নিজ নিজ জায়গা থেকে তারা আমাদের পক্ষে তাদের অবস্থান ব্যক্ত করছেন।’
উপাচার্যের প্রতি অনুরোধ
বুয়েটের উপাচার্য সত্যপ্রসাদ মজুমদারের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে লিখিত বক্তব্যে শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘আমরা আমাদের মাননীয় উপাচার্য স্যারের ওপর আস্থা পোষণ করি। তার সদিচ্ছা সবসময় আমাদের পক্ষে ছিল বলেই আমরা বিশ্বাস করি।
‘উপাচার্য স্যারের প্রতি আমাদের আর্জি, তিনি যেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষককে নিয়ে আপামর বুয়েট শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ছাত্র রাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাসের যে আকাঙ্ক্ষা তা সব আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পূরণ করেন।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য