২০১৮ সালের ১ নভেম্বর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের হাতে অস্ত্র জমা দিয়ে আত্মসপমর্পণ করেছিলেন তইবুর রহমান। সুন্দরবনের বনদস্যু ছিলেন তিনি। এখন সে পথ ছাড়লেও বারবার যেতে হচ্ছে কারাগারে, নিয়মিত হাজির হতে হয় আদালতে।
তইবুরের বাড়ি খুলনার পাইকগাছা উপজেলায়। তিনি বলেন, ‘অস্ত্র ও গোলাবারুদ জমা দিয়েছি। সেই দিন থেকে আর কখনও খারাপ কাজে যাওয়ার চিন্তাও করিনি। আমাদের আলোর পথে ফিরিয়ে আনার জন্য প্রধানমন্ত্রী, স্বারাষ্ট্রমন্ত্রী ও র্যাবের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই।’
তিনি বলেন, ‘সরকার আমাদের আশ্বস্ত করেছিল, মামলাগুলো দ্রুত তুলে নেবে। তবে আত্মসর্পণ করার পরেও তিনটি মামলায় আমাকে তিন বার কারাগারে যেতে হয়েছে। আমি কারাগারে গেলে পরিবারের সদস্যরা খুবই দুশ্চিন্তায় থাকে। এলাকার মানুষও তখন হেয় করে। পুলিশে নিয়ে গেলে এলাকার মানুষ ভাবে, আমরা আবারও দস্যুতায় জড়িয়েছি। আমরা চাই দ্রুত মামলাগুলো নিস্পত্তি হোক। আমরা স্বাভাবিক জীবনযাপন করি।’
তইবুর জানান, তার দলে ৫ জন সদস্য ছিলেন। আত্মসপমর্পণ করার পরে সবাই সরকারের কাছ থেকে আর্থিক সহায়তা পেয়েছেন। এখন সবাই আয়বর্ধক কাজ করে ভালো আছে। শুধু আটকে মামলার জটে।
তইবুরের মতোই একই সমস্যায় অন্যারাও। মামলা চলার কারণে কয়েকটি সমস্যার কথা তুলছেন তারা। প্রথমত. মাসে কয়েকদিন আদালতে হাজিরা দিতে হয়। সেসব দিনে কাজ না করলে আয় হয় না। আবার আইনজীবীর পেছনে যাচ্ছে টাকা। দ্বিতীয়ত. মাঝেমধ্যে পুলিশ এলাকায় আসলে সামাজিকভাবে হেয় হতে হয়। মানুষ ভাবে তারা এখনও দস্যু জীবনে রয়ে গেছে। এটি তাদের স্বাভাবিক কর্মজীবনকে ব্যাহত করছে।
আত্মসমর্পণে মধ্যস্থতা করা র্যাব এবং প্রশাসন জানিয়েছে, হত্যা ও ধর্ষণ ছাড়া অন্য মামলাগুলো তুলে নেয়ার যে আশ্বাস দেয়া হয়েছিল, সেগুলো বাস্তবায়ন কাজ চলছে। সবার তথ্য যাচাইবাছাই করা হচ্ছে। দ্রুত মামলাগুলো নিষ্পত্তি হয়ে যাবে।
২০১৮ সালের দলের ৮ জন সদস্য নিয়ে আত্মসপমর্পণ করেছিলেন আনোয়ারুল। তিনি একটি দস্যু দলের সর্দার ছিলেন। বাড়ি কয়রা উপজেলায়।
তিনি বলেন, ‘আমার দলের সবাই সরকারের কাছ থেকে আর্থিক সহায়তা পেয়েছে। কেউ কেউ দোকান বা গবাদিপশু পেয়েছে। সবাই মোটামুটি ভালো আছে। তবে আর্থিক সহায়তার অনেক টাকা আমরা নষ্ট করে ফেলেছি মামলার জন্য। আদালতে মামলা পরিচালনার জন্য অনেক টাকার দরকার হয়। স্বাভাবিক জীবনে ফেরার পরে আমরা বেশি টাকা আয় করতে পারি না। একাধিক মামলা থাকায় আমরা হিমশিম খাচ্ছি। সরকারের প্রতি আমাদের অনুরোধ মামলাগুলো দ্রুত তুলে নেয়া হোক।’
কয়রা উপজেলার মোস্তফা নামের বলেন, ‘মামলাতে প্রত্যেক মাসে দুই থেকে তিন বার আদালতে হাজিরা দিতে হয়। আর্থিক সংকটের কারণে, অনেক সময়ে আমরা আদালতে যেতে পারি না। তখন জামিন বাতিল হয়। পুলিশ এসে ধরে নিয়ে যায়।’
রব্বানি নামে আত্মসমর্পণ করা আরেকজন বলেন, ‘আমি স্বাভাবিক জীবনে ফিরে ভ্যান চালিয়ে রোজগার করছি। বেশ ভালোই কাটছে। তবে একটাই সমস্যাই মামলা নিয়ে। সীমিত আয় দিয়ে আমাদের পক্ষে একাধিক মামলা চালানো সম্ভব হচ্ছে না। আমাদের অনেকের মামলার রায় দেয়ার সময় হয়ে গেছে। দ্রুত সেই সব মামলা নিস্পত্তি না হলে হয়তো আমাদের কারাগারে যেতে হবে। এই দুশ্চিন্তায় অনেকেই আছেন।’
দাদভাই বাহিনীর দ্বিতীয় প্রধান জাকির হোসেন বলেন, ‘স্বাভাবিক জীবনে ফেরার পর থেকে যে আর্থিক সহায়তা পেয়েছি, তা দিয়ে একটি নৌকা ও জাল তৈরি করেছিলাম। তা নদীতে ধরে যা আয় হয়, কোনো মতে সংসার চলে যাচ্ছে। তবে রাতে ঘুম হয়না মামলার চিন্তায়। ভাবি কখন বুঝি রায় হবে, আমাকে কারাগারে নিয়ে গেলে ছেলে মেয়েদের কে দেখবে?
‘এমনিতেই আমাদের অনেকে খারাপ নজরে দেখে, আবার কারাগারে গেলে মানুষ ভাববে আমরা আবারও দস্যুতায় জড়িয়েছি।’
সুন্দরবন উপকূলের বনজীবী ও মৎস্যজীবীরা জলদস্যু ও বনদস্যুদের হাতে জিম্মি ছিল। অবৈধভাবে গাছ কাটা, বন্যপ্রাণী হত্যা, অপহরণ, মুক্তিপণ না পেয়ে মানুষ হত্যা, ডাকাতি ও ট্রলার ছিনতাইসহ নানা রকমের অপরাধে জড়িত ছিল তারা।
২০১২ সালে র্যাব মহাপরিচালককে প্রধান সমন্বয়কারী করে সুন্দরবনে জলদস্যু দমনে টাস্কফোর্স গঠনের মাধ্যমে গোড়াপত্তন ঘটে জলদস্যু মুক্তকরণ প্রক্রিয়ার। ২০১২ সাল থেকে জোরালো অভিযানে কোণঠাসা হয়ে পড়ে জলদস্যুরা। ক্রমাগত অভিযানে ফেরারি জীবনের অবসান ঘটিয়ে আত্মসমর্পণের পথ বেছে নেয় তারা।
২০১৬ সালের ৩১ মে থেকে ২০১৮ সালের ১ নভেম্বর পর্যন্ত সুন্দরবনের ৩২টি দস্যু বাহিনীর ৩২৮ জন সদস্য, ৪৬২টি অস্ত্র ও ২২ হাজার ৫০৪ রাউন্ড গোলাবারুদসহ আত্মসমর্পণ করে।
২০১৮ সালের ১ নভেম্বর সুন্দরবনকে ‘দস্যুমুক্ত সুন্দরবন’ ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেই হিসাবে আজ ‘দস্যুমুক্ত সুন্দরবন’র চতুর্থ বর্ষপূর্তি।
প্রতিবছর সরাসরি সুন্দরবন থেকে সম্পদ আহরণ করে জীবিকা নির্বাহ করে উপকূলের প্রায় দুই লাখ মানুষ। প্রতিবছর আড়াই থেকে তিন লাখ পর্যটক সুন্দরবন ভ্রমণ করেন। গত চার বছর ধরে সুন্দরবনে কোনো ডাকাতির খবর পাওয়া যায়নি। পর্যটক, মাওয়ালী, বাওয়ালী, বনজীবী ও বন্যপ্রাণী এখন সবাই নিরাপদ। দস্যুমুক্ত সুন্দরবনের এ সাফল্য ধরে রেখেছে র্যাব।
র্যাব-৬ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোস্তাক আহমেদ বলেন, ‘সুন্দরবনকে দস্যুমুক্ত রাখতে র্যাব সব সময় তৎপর রয়েছে। দুবলার চরে র্যাবের একটি ক্যাম্প বানানোর কাজ চলছে। বনে এখন সম্পূর্ণ নিরাপদ।’
সাবেক বনদস্যুদের মামলার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ধর্ষণ ও হত্যা ছাড়া অন্য মামলা থেকে তাদের মুক্তি দেয়ার জন্য আমরা যাচাইবাছাই করছি। আশা করি সকলে দ্রুত মামলার জট থেকে মুক্তি পাবে।’
খুলনার জেলা প্রশাসক মনিরুজ্জমান তালুকদার বলেন, ‘যারা আত্মসমর্পণ করেছে, তাদের মামলাগুলো প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত রয়েছে। হত্যা ও ধর্ষণ ছাড়া অন্য মামলার তথ্যগুলো আমরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জানিয়ে দিয়েছি। এখন আইনি প্রক্রিয়া চলছে। দ্রুত হয়তো তাদের মামলা প্রত্যাহার হয়ে যাবে।’
সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার চিনাকান্দি সীমান্তে রোববার অভিযান চালিয়ে ২২ হাজার ৫৪০ কেজি ভারতীয় আপেল জব্দ করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।
বাহিনীটির সুনামগঞ্জ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এ কে এম জাকারিয়া কাদির স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বিজিবির সুনামগঞ্জ ব্যাটালিয়ন (২৮ বিজিবি) কর্তৃক দায়িত্বপূর্ণ বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার চিনাকান্দি সীমান্তে অভিযান পরিচালনা করে ১ কোটি ৩৬ লক্ষাধিক টাকা মূল্যের ২২ হাজার ৫৪০ কেজি ভারতীয় আপেলসহ দুটি ট্রাক জব্দ করা হয়েছে।
‘অদ্য ১৩ অক্টোবর, ২০২৪ তারিখ ১৫৩০ ঘটিকায় বিজিবির সুনামগঞ্জ ব্যাটালিয়নের (২৮ বিজিবি) অধীনস্থ চিনাকান্দি বিওপির (সীমান্ত চৌকি) কমান্ডার জেসিও সুবেদার ওবায়দুর রহমানের নেতৃত্বে বিজিবির একটি টহলদল গোপন তথ্যের ভিত্তিতে দায়িত্বপূর্ণ বিশ্বম্ভরপুর উপজেলাধীন ধনপুর ইউনিয়নের ঝিগাতলা নামক স্থানে চোরাচালানবিরোধী অভিযান পরিচালনা করে মালিকবিহীন ২২ হাজার ৫৪০ কেজি ভারতীয় আপেলসহ দুটি বড় ট্রাক জব্দ করতে সক্ষম হয়েছে।
‘জব্দকৃত মালামালের আনুমানিক সিজার মূল্য ১ কোটি ৩৬ লাখ ৩৫ হাজার টাকা। জব্দকৃত আপেল ও ট্রাক সুনামগঞ্জ কাস্টমস অফিসে জমা করার কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’
বিচারক নিয়োগ হলে চলতি সপ্তাহেই জুলাই-গণহত্যায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ও দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চাওয়া হবে বলে জানিয়েছেন অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম। একইসঙ্গে তিনি বলেছেন, শেখ হাসিনাসহ বিদেশে পলাতকদের ফিরিয়ে আনতে ইন্টারপোলের সহায়তা নেয়া হবে।
রোববার ধানমন্ডিতে ট্রাইব্যুনাল কার্যালয়ে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ কথা জানান আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের (আইসিটি) চিফ প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম।
তিনি বলেন, ‘জুলাই-গণহত্যার বিচারের জন্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ বিদেশে পলাতকদের ফিরিয়ে আনতে ইন্টারপোলের সহায়তা নেয়া হবে।
‘বিচারক নিয়োগ হলে এ সপ্তাহেই জুলাই-গণহত্যায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ও দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চাওয়া হবে।’
তিনি জানান, শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগ, ১৪ দলের নেতা ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাবেক শীর্ষ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এ পর্যন্ত গুম, হত্যা, গণহত্যাসহ ৬০টির বেশি অভিযোগ জমা পড়েছে।
তদন্ত সংস্থা ও প্রসিকিউশন টিম নিয়োগ হলেও বাকি রয়েছে বিচারক নিয়োগ। আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বৃহস্পতিবার (১০ অক্টোবর) জানিয়েছিলেন, চলতি সপ্তাহেই এজলাসে বসবেন বিচারকরা। শুরু হবে বিচার প্রক্রিয়া। এবার চিফ প্রসিকিউটরও একই কথা জানালেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গত জুলাই ও আগস্ট মাসে গণহত্যার অভিযোগ ওঠে। এসব অভিযোগের বিচার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে করার সিদ্ধান্ত নেয় অন্তর্বর্তী সরকার। এর অংশ হিসেবে নতুন প্রসিকিউশন টিম ও তদন্ত সংস্থা গঠিত হয়েছে। বিচারের জন্য আইন সংশোধন ও ভবন মেরামতের কাজও চলমান।
আরও পড়ুন:সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডে পতিত সরকারের প্রভাবশালী লোক জড়িত ছিল মর্মে প্রাথমিক তদন্তে নাম এসেছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির।
রোববার সুনামগঞ্জ পৌর শহরের পুরনো বাস স্টেশনের একটি হোটেলে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেন।
সাংবাদিক দম্পতি সাগর সারওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলায় বাদীপক্ষে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনিরকে ২৯ সেপ্টেম্বর নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
শিশির মনির বলেন, ‘ঘটনার ১২ বছর পর টাস্কফোর্স গঠন করে এটি তদন্তের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। রিপোর্ট প্রদানের জন্য সরকারকে ছয় মাস সময় দেয়া হয়েছে। এতে গণমাধ্যম, সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের নাম এসেছে। বেশকিছু সংবেদনশীল মানুষ এর সঙ্গে জড়িত বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা পাওয়া গেছে।
‘তদন্তটি এখন প্রপার ডাইমেনশনে আছে। মামলাটি যে জায়গায় গেছে এখন সরকার আর কোনো বাধা দিচ্ছে না। আপাতত কোনো বাধা নেই, উদ্দেশ্যের কোনো সংকট নেই, সরকারের আগ্রহের কোনো ঘাটতি নেই।’
তিনি আরও বলেন, ‘সাগর-রুনির মরদেহে দুই ব্যক্তির ডিএনএ পাওয়া গেছে। এখন এদের খোঁজা হচ্ছে। আশা করছি এই দুই ব্যক্তির তথ্যও আপনারা জানতে পারবেন।
‘শুধু সরকারের দায়িত্বে ছিলেন তা নয়, সরকারের পাশে থেকে যারা সহযোগিতা করেছেন তাদের মধ্যেও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নাম এসেছে। আপাতত তদন্ত চলা অবস্থায় সুনির্দিষ্ট ব্যক্তির নাম বলায় আইনগত বাধা আছে, তাই বলছি না। তবে ইন্ডিকেশন আছে, ইশারাই যথেষ্ট আমার মনে হয়।’
আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির আরও বলেন, ‘বেশ কয়েকটি রিপোর্ট আছে। সেগুলো পরীক্ষা করা হচ্ছে। আগামীকাল মিটিং আছে। সেই মিটিংয়ে হয়তো আরেকটু ক্লিয়ার হওয়া যাবে।’
মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন জেলা জামায়াতের নায়েবে আমির অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শামস উদ্দিন, জেলা জামায়াতের আমীর মোহাম্মদ তোফায়েল আহমদ, সুনামগঞ্জের প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ।
প্রসঙ্গত, ২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারের ভাড়া বাসায় খুন হন সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি। তাদের একমাত্র ছেলে পাঁচ বছর বয়সী মাহির সরওয়ার মেঘ সেই সময় বাসায় ছিল।
সাগর বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল মাছরাঙা টিভিতে এবং রুনি এটিএন বাংলায় কর্মরত ছিলেন। হত্যার ঘটনায় আলী রোমান শেরেবাংলা থানায় মামলা করেন।
মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য এ পর্যন্ত ১১১ বার সময় বাড়ানো হয়েছে। পরবর্তী শুনানির জন্য আগামী ১৫ অক্টোবর দিন ধার্য রয়েছে।
আরও পড়ুন:রাজধানীর অদূরে সাভারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শিক্ষার্থী হত্যার অভিযোগে দায়ের করা মামলায় উপজেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি শওকত হোসেনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
সাভার মডেল থানার ওসি জুয়েল মিয়া জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে শনিবার সন্ধ্যায় তেঁতুলঝোড়া ইউনিয়নের যাদুরচর গ্রাম থেকে শওকত হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
শওকত হোসেন সাভারের তেঁতুলঝোড়া ইউনিয়নের যাদুরচর গ্রামের মৃত আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে। তিনি সাভার উপজেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি। এছাড়াও তিনি সাভার উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও ভাকুর্তা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান লিয়াকত হোসেনের বড় ভাই।
শওকত হোসেনের বিরুদ্ধে ১৯ আগস্ট শিক্ষার্থী সাজ্জাদ হত্যার ঘটনায় হত্যা মামলা দায়ের করা হয়।
জাটকা সংরক্ষণ ও মা ইলিশ রক্ষায় শনিবার (১২ অক্টোবর) মধ্য রাত থেকে নদীতে মাছ ধরা বন্ধ হয় গেছে। তা চলবে ৩ নভেম্বর পর্যন্ত। আর ২২ দিনের এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করতে নদীতে অভিযান চালাচ্ছে মৎস্য বিভাগ।
লক্ষ্মীপুরের রামগতির আলেকজান্ডার থেকে চাঁদপুরের ষাটনল এলাকার একশ’ কিলোমিটার পর্যন্ত মেঘনা নদীতে সব ধরনের মাছ ধরা নিষিদ্ধ করেছে সরকার। এই একশ’ কিলোমিটার মেঘনা নদী এলাকাকে ইলিশের অভয়াশ্রম হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।
নিষেধাজ্ঞার এ সময়ে সব রকমের ইলিশ আহরণ, পরিবহন, সংরক্ষণ, বাজারজাতকরণ ও মজুদকরণ নিষিদ্ধ রয়েছে। এই জেলায় ৫২ হাজার জেলে রয়েছে। এদের মধ্যে নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা ৪৩ হাজার।
লক্ষ্মীপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. বিল্লাল হোসেন বলেন, ‘এই নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়ন করার জন্য নদীতে মৎস্য বিভাগ, উপজেলা-জেলা প্রশাসন, পুলিশ ও কোস্টগার্ডের সমন্বয়ে নদীতে অভিযান চলছে।
‘নিষেধাজ্ঞার ২২ দিন এমন অভিযান অব্যাহত থাকবে। এরপরও যারা আইন অমান্য করে নদীতে যাবে, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
জাটকা সংরক্ষণ ও মা ইলিশ রক্ষায় শনিবার মধ্য রাত থেকে নদীতে মাছ ধরা বন্ধ রয়েছে। তা চলবে আগামী ৩ নভেম্বর পর্যন্ত।
আরও পড়ুন:নাটোরের বড়াইগ্রামে জমিসংক্রান্ত বিরোধের জেরে রোববার তোরাব আলী (৪৮) নামে একজনকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে।
সকাল ৮টার দিকে উপজেলার নটাবাড়িয়া ওয়ারিশপাড়ায় এ ঘটনা ঘটে।
নিহত তোরাব একই এলাকার প্রয়াত সোলেমান আলীর ছেলে।
বড়াইগ্রাম থানার ওসি সিরাজুল ইসলাম জানান, দীর্ঘদিন ধরেই তোরাব আলীর সঙ্গে তার মামাতো ভাই সুলতান আহমেদ রানার জমি সংক্রান্ত বিরোধ চলে আসছিল। রোববার সকালে তোরাব আলী তার কলাবাগানে জমে থাকা পানি অপসারণের জন্য ড্রেন করার সময় রানা ও তার লোকজন বাধা দেয়। এ সময় তোরাবের সঙ্গে রানার কথাকাটিকাটি শুরু হয়। পরে রানা তার হাতে থাকা ধারালো হাঁসুয়া দিয়ে তোরাবকে কুপিয়ে আহত করে চলে যান।
খবর পেয়ে স্থানীয়রা তোরাবকে উদ্ধার করে পাশের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে চিকিৎসক তোরাবাকে মৃত বলে জানান।
ওসি আরও জানান, পুলিশ অভিযুক্তকে ধরতে অভিযান শুরু করেছে। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।
আরও পড়ুন:মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার শানঘাট গ্রামে শনিবার দুপুরে জমি নিয়ে বিরোধের জেরে আপন বোন এবং ভাইয়ের স্ত্রীকে কুপিয়ে হত্যা করেছেন একটি বেসরকারি সংস্থার (এনজিও) প্রধান।
কোপে আহত হন ওই ব্যক্তির ভাই ও আরেক বোন।
প্রাণ হারানো দুজন হলেন জোসনা খাতুন ও তার ভাইয়ের স্ত্রী জাকিউল ইলমা।
আহত দুজন হলেন জাহিদ হোসেন ও শামীমা খাতুন।
নিহত জাকিউল ইলমা গাংনী মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ছিলেন।
ইলমাসহ দুজনকে ধারালো অস্ত্র (রামদা) দিয়ে কুপিয়ে মারধরের শিকার হন মহিবুল ইসলাম ওহিদ, যিনি শানঘাট পল্লী উন্নয়ন সংস্থা নামের একটি এনজিওর নির্বাহী পরিচালক। খবর পেয়ে মেহেরপুর সদর থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে হাসপাতালে ভর্তি করে পুলিশ।
স্থানীয় লোকজন ও পুলিশের ভাষ্য, পারিবারিক জমি নিয়ে শানঘাট গ্রামের মহিবুল ইসলাম ওহিদের সঙ্গে তার অপর দুই ভাই ও তিন বোনের বিরোধ চলে আসছিল। ওহিদ একাই প্রায় দেড় একর জমির পুকুর দখল নিয়ে মাছ চাষ করে আসছিলেন। তিন ভাই এবং দুই বোন মিলে আজ সকাল থেকে পুকুর ভাগাভাগি নিয়ে আলোচনা করছিলেন। অপর বোন অনুপস্থিত ছিলেন।
আলোচনার একপর্যায়ে তাদের মধ্যে ঝগড়া বাধে। ওই সময় ধারালো অস্ত্র দিয়ে ওহিদ তার ভাই-বোনদের ওপর আক্রমণ করেন। এতে ঘটনাস্থলেই বোন জোসনা খাতুন ও বড় ভাইয়ের স্ত্রী জাকিউল ইলমা নিহত হন।
গুরুতর আহত অবস্থায় মহিবুলের ভাই জাহিদ হোসেন ও ছোট বোন শামীমাকে গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। তাদের শারীরিক অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় কুষ্টিয়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয় বলে জানান গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল মারুফ।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী জোসনা খাতুনের স্বামী কুদরত-ই-হাফিজ জানান, ভাই-বোনদের মধ্যে জমি ভাগাভাগি নিয়ে বিরোধ চলে আসছিল। মহিবুল ইসলাম ওহিদ বাড়ির পাশের ১ একর ২৮ শতক জমির একটি পুকুর দখল করে আছেন। ভাই-বোনদের ভাগ নির্ধারণ করার জন্য আজ সবাই মিলে আলোচনায় বসা হয়েছিল। এর একপর্যায়ে মহিবুল ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকেন। এতে ঘটনাস্থলেই দুজনের মৃত্যু হয়। আহত হন দুজন।
নিহতের প্রতিবেশীরা জানান, ভাই-বোনদের মধ্যে জমিজমার ভাগাভাগি নিয়ে দীর্ঘদিনের বিরোধ। এ নিয়ে এর আগেও একবার দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছিল। দুই পক্ষই আদালতে মামলা করেছিল। স্থানীয়ভাবে অনেকবার আলোচনায় বসা হলেও সমস্যা সমাধান হয়নি। দুই ভাই এবং তিন বোন এক পক্ষে এবং মহিবুল একাই তাদের প্রতিপক্ষ। কোনোমতেই মহিবুল তাদের সঙ্গে সমঝোতায় আসেননি।
দীর্ঘদিনের বিরোধের জের শেষ পর্যন্ত রক্তাক্ত হত্যাকাণ্ডের পথে গড়ায়।
এদিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে মরদেহ ময়নাতদন্তে পাঠানোর প্রক্রিয়া করছে পুলিশ।
দুজনকে হত্যাকারী মহিবুল ইসলাম ওহিদকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানান গাংনী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) তাজুল ইসলাম।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য