দেশে অনলাইন গেমস ডেভেলপার প্রতিষ্ঠান হিসেবে ২০১৯ সালে যাত্রা শুরু করে উল্কা গেমস প্রাইভেট লিমিটেড। অনলাইন গেমস ডেভেলপ করার কথা বলে ব্যবসায়িক অনুমোদন নিলেও তারা এর আড়ালে শুরু করে অনলাইন জুয়া।
ভারতের কর্ণাটকের গেইমিং প্রতিষ্ঠান মুনফ্রগ ল্যাবের সঙ্গে কাজ শুরু করে উল্কা গেমস। মুনফ্রগকে দেয়া হয় উল্কা গেমসের ৯৯.৯৯ শতাংশ শেয়ার। বাকি ০.০১ শতাংশ শেয়ার ছিল উল্কা গেমসের প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও জামিলুর রশিদের কাছে।
জামিলুর রশিদ ও তার সঙ্গীরা দেশের বাজারে 'তিন পাত্তি গোল্ড' নামক অনলাইন জুয়ার অ্যাপটি জনপ্রিয় করে তোলেন।
জামিলুর রশিদ র্যাবকে জানান, তিন পাত্তি গোল্ড খেলার জন্য সারা দেশে গেইমার রয়েছে ৯ লাখের বেশি। যাদের কাছে দিনে প্রায় ৩০ লাখ টাকার চিপস বিক্রি করা হতো। আর এই চিপস বিক্রির কাজটি করত দেশের বিভিন্ন প্রান্তের থাকা ১৪ জন লেভেল-১ ডিস্ট্রিবিউটর। তাদেরও সাব-ডিস্ট্রিবিউটর রয়েছে।
বিভিন্ন ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে চিপস বিক্রির টাকা ডিস্ট্রিবিউটরদের থেকে সংগ্রহ করা হতো।
উল্কা গেমসের সিইও জামিলুর রশিদসহ ছয়জনকে গ্রেপ্তারের পর সোমবার দুপুরে র্যাব জানায়, বর্তমানে উল্কা গেমসের ৪টি অ্যাকাউন্টে ৮০ কোটি টাকার বেশি আছে। এ ছাড়া গত দুই বছর তারা মুনফ্রগ ল্যাবকে ব্যাংকের মাধ্যমে ২৯ কোটি টাকা দিয়েছে।
উল্কা গেমসের ৩৬ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী ছিল। বেতন দেয়াসহ অফিস পরিচালনায় প্রতি মাসে প্রায় ৩০ লাখ টাকা খরচ হতো। এ ছাড়াও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বাৎসরিক বেতনের ৩০ থেকে ৯০ শতাংশ হারে বোনাস দিত প্রতিষ্ঠানটি। উল্কা গেমস প্রায় ২০০ কোটি টাকা দেশের বাইরে পাঠিয়েছে।
যেভাবে উল্কা গেমসের যাত্রা
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, ২০১৭ সালে ভারতের প্রতিষ্ঠান মুনফ্রগ ল্যাবের সঙ্গে পরিচয় হয় উল্কা গেমসের সিইও জামিলুর রশিদের। ২০১৮ সালে তিনি মুনফ্রগ ল্যাবের বাংলাদেশের প্রতিনিধি হিসেবে দেড় লক্ষাধিক টাকা বেতনে যুক্ত হন।
মুনফ্রগ ল্যাবের অনলাইন অ্যাপ তিন পাত্তি গোল্ডের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পাওয়ায় গেমটিকে আরও বৈধতা দেয়ার চেষ্টা করেন। কয়েকজন আইনজীবীর পরামর্শে সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে ২০১৯ সালের শুরুর দিকে জামিরুল রশিদ ‘উল্কা গেমস প্রা. লি.’ নামে একটি গেমিং ডেভেলপমেন্ট প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন নেন।
২০১৯ সালে মুনফ্রগের ০.০১ শতাংশ উল্কা গেমসকে দেয়ার মাধ্যমে দেশে গেমিং খাতে উন্নয়নের জন্য প্রায় দেড় কোটি টাকায় চুক্তিবদ্ধ হয়। দেশে গেইম ডেভেলপমেন্টের অনুমোদন থাকলেও অনলাইন জুয়া/ক্যাসিনোর অনুমোদন না থাকায় উল্কা গেমস বিভিন্ন ভুল তথ্য উপস্থাপন করে সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে আইনি বৈধতা নেয়ার ব্যবস্থা করে। এভাবেই তিন পাত্তি গোল্ড যাত্রা শুরু করে শহর নগরে ছড়িয়ে পড়ে।
উল্কা গেমসের যাত্রা গেমিং ডেভেলপমেন্টের উদ্দেশ্যে শুরু হলেও তারা বস্তুত গেম ডেভেলপমেন্ট না করে অনলাইন জুয়ার মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ দেশের বাইরে পাঠাচ্ছিল।
চিপস বিক্রি
তিন পাত্তি গোল্ড মূলত একটি অ্যাপ, যা মোবাইলে ডাউনলোড করে খেলা যায়। এই অ্যাপের সার্বিক নিয়ন্ত্রণ মুনফ্রগ ল্যাবের কাছে। অ্যাপে তিন পাত্তি গোল্ড ছাড়াও ‘রাখি’, ‘আন্দর বাহার’ ও ‘পোকার’ নামেও অনলাইন জুয়ার গেমস রয়েছে।
র্যাব জানায়, গেমসের রেজিস্ট্রেশনের পর একজন গ্রাহককে খেলার জন্য কিছু চিপস ফ্রি দেয়া হয়। পরে গেমস খেলার জন্য অর্থের বিনিময়ে চিপস কিনতে হয়। মূলত মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে গ্রাহকদের কাছ থেকে চিপস কেনার টাকা লেনদেন হয়।
প্রতিদিন প্রায় ৫০ হাজার কোটি চিপস বিক্রি হয় এবং প্রতি কোটি চিপস বিভিন্ন পর্যায়ে ৪৬-৬৫ টাকায় বিক্রি করা হয়। বিভিন্ন বট প্লেয়ার বা রোবট প্লেয়ারের মাধ্যমে মূল গেইমারদের কৌশলে হারিয়ে প্লেয়ারদের পরে আরও চিপস কিনতে উৎসাহিত করা হতো। এভাবে করে গেইমারদের হারিয়ে দিত উল্কা গেমসের হয়ে কাজ করা রোবটরূপী ব্যক্তিরা।
বাংলাদেশে তিন পাত্তি গোল্ডের চিপস বিক্রির কাজটি ১৪টি অফিশিয়াল ডিস্ট্রিবিউটর বা এজেন্টের মাধ্যমে পরিচালনা করা হয়। এসব ডিস্ট্রিবিউটরের সাব-ডিস্ট্রিবিউটর রয়েছে।
প্রাইভেট টেবিল অপশনের মাধ্যমে অন্য প্লেয়ার থেকেও চিপস কেনা যায়।
গেইমাদের সঙ্গে প্রতারণা এবং অনলাইন জুয়া পরিচালনার বড় দায় ভারতীয় প্রতিষ্ঠান মুনফ্রগ ল্যাবের বলে জানিয়েছে র্যাব। বাহিনীটির মুখপাত্র খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘বিদেশি প্রতিষ্ঠানটির ইনভলভমেন্ট অনেক বেশি।’
গ্রেপ্তার ছয়জনের পরিচয়
উল্কা গেমসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) জামিলুর রশিদ ছাড়াও ধরা পড়েছেন সায়মন হোসেন, রিদোয়ান আহমেদ, রাকিবুল আলম, মুনতাকিম আহমেদ ও কায়েস উদ্দিন আহম্মেদ।
জামিলুর রশিদ ঢাকার একটি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে প্রাচ্যের একটি দেশ থেকে ২০১২ সালে অর্থনীতিতে স্নাতক পাস করে দেশে ফিরে আসেন। ছোটকাল থেকেই মোবাইল গেমসে আগ্রহী ছিলেন তিনি।
২০১৫ সাল থেকে মোবাইল গেমস তৈরির কাজ শুরু করেন। হিরোজ অব '৭১ ও মুক্তি ক্যাম্প নামে দুটি গেমস তৈরির জন্য ২০১৭ সালে সরকারের কাছ থেকে ৩০ লাখ টাকা অনুদান পান।
২০১৭ সালে মুনফ্রগ ল্যাবের সঙ্গে পরিচয় হয় তার। পরের বছর গেমস ডিজাইন কনসালট্যান্ট ও বাংলাদেশে নিযুক্ত কর্মকর্তা হিসেবে মুনফ্রগ থেকে দেড় লক্ষাধিক টাকা বেতনে যুক্ত হন।
২০১৯ সালে উল্কা গেমস প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সিইও হিসেবে কাজ শুরু করে মুনফ্রগ থেকে মাসিক প্রায় ৪ লাখ টাকা বেতন পেতেন। এ ছাড়া বাৎসরিক আয়ের ৯০ থেকে ১০০ শতাংশ বোনাস পেতেন।
রিদোয়ান আহমেদ ঢাকার একটি কলেজ থেকে বিবিএ ও এমবিএ করে ২০১৬ সালে পোর্ট ব্লিস নামের একটি গেমিং প্রতিষ্ঠানের অ্যাডমিন অফিসার হিসেবে কাজ করতেন। তখন জামিলুর রশিদের সঙ্গে তার পরিচয়। ২০১৯ সালে ৪০ হাজার টাকা বেতনে তিনি উল্কা গেমসে যোগ দেন। প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠানের যাবতীয় কেনাকাটা, ভেন্ডর ম্যানেজমেন্ট, ইভেন্ট আয়োজনসহ অফিস পরিচালনার দায়িত্ব পালন করছিলেন। বর্তমানে তার বেতন এক লাখের বেশি।
কায়েস উদ্দিন একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মার্কেটিংয়ে বিবিএ পাস করে বিভিন্ন বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করেছেন। ২০২১ সালে তিনি উল্কা গেমসের হেড অব সেলস হিসেবে যোগ দেন। তার নেতৃত্ব ও নির্দেশনায় ডিস্ট্রিবিউটররা ভার্চ্যুয়াল চিপস বিক্রি, টার্গেট অনুযায়ী কার্যক্রম পরিচালনা করত। তিনি মাসে ২ লাখ টাকার বেশি বেতন পেতেন।
সায়মন হোসেন ঢাকার একটি কলেজ থেকে বিবিএ ও এমবিএ পাস করে ২০২০ সালে উল্কা গেমসে ৪০ হাজার টাকা বেতনে চাকরি শুরু করেন। তিনি প্রতিষ্ঠানটিতে প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা ছিলেন। মুনফ্রগের সঙ্গে প্রাতিষ্ঠানিক লেনদেনের দায়িত্বও পালন করে আসছিলেন। তার বেতন ছিল প্রায় এক লাখ টাকা।
রাকিবুল আলম একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিবিএ পাস করে ২০১৯ সালে উল্কা গেমসে ‘তিন পাত্তি গোল্ড’-এর চিপস বিক্রির পরিবেশক হিসেবে কাজ শুরু করেন। তিনি মাঠপর্যায়ে ‘কে অ্যান্ড কে এন্টারপ্রাইজ’-এর নামে গ্রাহকের কাছে ভার্চ্যুয়াল চিপস বিক্রি করতেন। প্রতি মাসে ২ থেকে ৩ কোটি টাকা বিক্রি ছিল।
মুনতাকিম আহমেদ বাংলাদেশে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে প্রাচ্যের একটি দেশ থেকে বিবিএ ও এমবিএ করে দেশে ফিরে বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন। ২০১৬ সাল থেকে ট্যাক্স ও ভ্যাটের কনসালট্যান্ট হিসেবে কাজ শুরু করেন। ২০১৯ সালে উল্কা গেমসের পরামর্শক হিসেবে যুক্ত হন। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন কৌশলে কর ফাঁকি দিয়ে ভার্চ্যুয়াল চিপস বিক্রির টাকা দেশের বাইরে পাঠানোর অভিযোগ আছে। উল্কা গেমসে তার তার বেতন দেড় লক্ষাধিক টাকা।
আরও পড়ুন:আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বরখাস্ত হওয়া দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপ-সহকারী পরিচালক শরীফ উদ্দিনকে চাকরিচ্যুতির আদেশ অবৈধ ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে জ্যেষ্ঠতা ও অন্যান্য সুবিধাসহ তাকে চাকরিতে পুনর্বহাল করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
হাইকোর্টের রায়ের অনুলিপি পাওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে এই আদেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে। এ বিষয়ে জারি করা রুল নিষ্পত্তি করে বুধবার (৯ জুলাই) বিচারপতি রেজাউল হাসান ও বিচারপতি বিশ্বজিৎ দেবনাথের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন।
তিন বছর আগে ২০২২ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি শরীফ উদ্দিনকে চাকরি থেকে অপসারণ করা হয়। কোনো ধরনের কারণ দর্শানো ছাড়াই কোনো কর্মীকে চাকরি থেকে অপসারণ-সংক্রান্ত দুদক কর্মচারী বিধিমালার ৫৪(২) বিধির বৈধতা নিয়ে ও চাকরিতে পুনর্বহালের নির্দেশনা চেয়ে একই বছরের ১৩ মার্চ শরীফ রিট করেন।
প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গত বছরের ৬ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট রুল দেন। রুলে দুদকের উপ-সহকারী পরিচালক পদ থেকে শরীফ উদ্দিনকে চাকরিচ্যুতির আদেশ কেন বেআইনি হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়। একই সঙ্গে বেতন, সব সুবিধাসহ তাকে চাকরিতে পুনর্বহাল করতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা-ও জানতে চাওয়া হয় রুলে। দুদকসহ বিবাদীদের রুলের জবাব দিতে বলা হয়।
রুলের ওপর গতকাল মঙ্গলবার শুনানি শেষে আদালত আজ রায়ের জন্য দিন রেখেছিলেন। রুল যথাযথ (অ্যাবসোলিউট) ঘোষণা করে আজ রায় দেওয়া হলো।
রায়ের সময় শরীফ উদ্দিন আদালতে উপস্থিত ছিলেন। আদালতে শরীফ উদ্দিনের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মো. সালাহ উদ্দীন দোলন, সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী মিয়া মোহাম্মদ ইশতিয়াক। দুদকের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আসিফ হাসান।
রায়ের পর জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সালাহ উদ্দীন দোলন বলেন, শরীফ উদ্দিনের চাকরিচ্যুতির আদেশ অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট। জ্যেষ্ঠতা ও সব সুযোগ-সুবিধাসহ তাঁকে চাকরিতে ৩০ দিনের মধ্যে পুনর্বহাল করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
দুদকের আইনজীবী আসিফ হাসান বলেন, রায়ের বিষয়টি দুদককে জানানো হবে। আপিল করবে কি না, সে বিষয়ে দুদক সিদ্ধান্ত নেবে।
নিজেদের রাজকীয় জীবনযাপন আর মাদকের অর্থ যোগাতে অনলাইনে প্রতারণায় নামেন তারা। লোভনীয় প্রতারণার জাল ফেলে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে করেন শত শত পরিবারকে নিঃস্ব। অবশেষে ধরা পড়লেন নড়াইল জেলা ডিবি পুলিশের হাতে। কেবল বিলাসী জীবনই না, তাদের রয়েছে অনলাইন গেমিং প্ল্যাটফর্মও।
সোমবার (৭ জুলাই) কালিয়া উপজেলার রঘুনাথপুর ও যাদবপুরে আটঘণ্টা অভিযান চালিয়ে এই প্রতারক চক্রের চার সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ সময় প্রতারণার কাজে ব্যবহার করা ৬টি মোবাইল ফোন ও সিম জব্দ করা হয়েছে।
গ্রেফতার হওয়া আসামিরা হলেন, উপজেলার রঘুনাথপুর গ্রামের শুকুর আলী মুন্সির ছেলে মুসাব্বির মুন্সি ছিপাতুল্যা (২৮), যাদবপুর গ্রামের শেখ বাহার উদ্দিনের দুই ছেলে নাজমুল হুসাইন (৩১) ও বাপ্পি হাসান অভি (২৭) এবং একই গ্রামের আফসার মীনার ছেলে রনি মীনা (৪১)।
ডিবি জানায়, অনলাইনে চমকপ্রদসব বিজ্ঞাপনের পরতে পরতে বুনে রাখা হয় প্রতারণার জাল। আর সেই জালে পা দিলেই নিঃস্ব হয় মানুষ। এমনই অনলাইন প্রতারক চক্রের সুচতুর সদস্যদের ধরতে অভিযানে নামে তারা।
দুটি মামলার সূত্র ধরে সোমবার দিনের আলো ফুটে ওঠার আগেই কালিয়া উপজেলার রঘুনাথপুরে হানা দেয় পুলিশ। তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে গ্রেফতার করা হয় মুসাব্বির মুন্সি ছিপাতুল্যাকে।
‘পরের গন্তব্য ছিল পার্শ্ববর্তী গ্রাম যাদবপুরে। নবনির্মিত একতলা ভবনে তখনও গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন দুই ভাই নাজমুল হুসাইন ও বাপ্পি হাসান অভি। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে সব প্রমাণ সরিয়ে ফেলার ব্যর্থ চেষ্টা করেন তাদের স্ত্রীরা। প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত মোবাইল ফোন, সিমসহ গ্রেফতার করা হয় দুই ভাইকে। একই এলাকা থেকে রনি মীনা নামে আরও এক অনলাইন প্রতারককে গ্রেফতার করা হয়,’ জানিয়েছে ডিবি।
গ্রেফতার ব্যক্তিরা জানান, অতিরিক্ত টাকা উপার্জনের আশায় অনলাইন প্রতারণাকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছে কালিয়া উপজেলার যাদবপুর, রঘুনাথপুর, চাঁদপুর, মহিষখোলাসহ আশপাশের অন্তত ১০ গ্রামের হাজারো পরিবার।
তারা আরও জানান, প্রতারণা করে হাতিয়ে নেয়া অর্থ পারিবারিক প্রয়োজন মেটানোর পাশাপাশি নিজেদের বিলাসী জীবন, মাদক ও অনলাইন গেমিং প্ল্যাটফর্মে খরচ করেন তারা।
প্রতারণার শিকার মাদারীপুরের নয়ন ঠিকাদার বলেন, ‘মোবাইল ফোনের বিজ্ঞাপন দেখে প্রথমে ৩০০ টাকা দিই। পরে তাদের ফাঁদে পড়ে ৩ হাজার টাকার ফোনের জন্য ২১ হাজার টাকা দিছি। আমার অসুস্থ মায়ের চিকিৎসার জন্য জমানো টাকা ছিল ওটা। কান্নাকাটি করছি, অনেকবার কল দিছি তাদের; আমার ফোন, টাকা–কোনোটাই দেইনি তারা।’
আরেক ভুক্তভোগী আহাদ বলেন, ‘একটা মোটরসাইকেলের জন্য কয়েক দফায় ১ লাখ ৯৫ হাজার টাকা তাদের দিছি। গাড়ি দেয়ার কথা বলে আমাকে এক মাস ধরে হয়রানি করছে। বাংলাদেশের আইনের বাইরেও যদি কোনো বিচার থাকে–প্রতারক চক্রের যেন কঠোর শাস্তি হয়।’
জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘জেলা পুলিশের অভিযানে অনলাইন প্রতারক চক্রের চার সদস্যকে সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ ২০২৫ ও প্রতারণা সংক্রান্ত মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, প্রতারক চক্রের সদস্যরা প্রথমে ফেসবুক পেজে লোভনীয় বিজ্ঞাপন দেয়। পরে পেজগুলো বুস্টিংয়ের মাধ্যমে বেশি মানুষের কাছে তাদের বিজ্ঞাপন পৌঁছে দেয়। আর দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কোম্পানির এজেন্টদের মাধ্যমে চড়া দামে অন্যের নামে রেজিস্ট্রেশন করা সিম কিনে সেগুলো দিয়ে ক্রেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে লেনদেন করে।
নিয়মিত অভিযানের মাধ্যমে এসব অনলাইন প্রতারক চক্র নির্মূলের আশ্বাসের পাশাপাশি অনলাইনে কেনাকাটার ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষকে আরও বেশি সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দেন।
জঙ্গি সন্দেহে তুলে নেওয়ার সাড়ে ৫ বছর পর জামিনে মুক্তি পেয়েছেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) দুই শিক্ষার্থী নুর মোহাম্মাদ অনিক এবং মোজাহিদুল ইসলাম।
সোমবার (৭ জুলাই) রাতে খুলনা জেলা কারাগার থেকে মুক্তি পান তারা। এর আগে গত সপ্তাহে উচ্চ আদালত তাদের জামিন মঞ্জুর করেন।
খুবি উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. রেজাউল করিমসহ বর্তমান প্রশাসনের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় অবশেষে বিস্ফোরক মামলাসহ ছয়টি মামলায় প্রায় সাড়ে পাঁচ বছর কারাভোগ শেষে জামিনে মুক্তি মিললো দুই শিক্ষার্থী অনিক ও মোজাহিদুলের।
জঙ্গি তৎপরতায় জড়িত থাকার অভিযোগ এনে করা মামলায় এই দুই শিক্ষার্থীর ৩০ বছরের সাজা হয়েছিল। তবে ছাত-জনতার অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বদলে যাওয়ার পর কারা অভ্যন্তরে তারা অনশন শুরু করেন। বিষয়টি জানতে পেরে তাদের আইনি সহায়তা দেওয়া শুরু করে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন অ্যাডভোকেট বেগম আক্তার জাহান রুকু। মামলা পরিচালনায় সার্বিক সহযোগিতা করে বিশ্ববিদ্যালয়ের লিগ্যাল সেল।
সহপাঠীরা জানান, ২০২০ সালের ৮ জানুয়ারি ওই দুই শিক্ষার্থীকে তুলে নিয়ে যান আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। ১৭ দিন অজানা স্থানে রেখে তাদের নির্যাতন করা হয়। পরে ২৫ জানুয়ারি তাদের বিস্ফোরক দ্রব্যসহ গ্রেপ্তার দেখায় পুলিশ। সেদিনই তাদের খুলনার কৃষক লীগ কার্যালয় ও আড়ংঘাটা থানার গাড়ির গ্যারেজে বোমা হামলা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। এরপর একে একে তাদের বিরুদ্ধে আরও চারটি মামলা করে পুলিশ। সেই থেকে গত পাঁচ বছর তারা কারাবন্দি ছিলেন।
অভ্যুত্থানের পরে তাদের মুক্তির দাবিতে খুবি ক্যাম্পাসে সংবাদ সম্মেলন করেন সহপাঠী, রুমমেট, শিক্ষক ও পরিবারের সদস্যরা।
গ্রেপ্তারের সময় অনিক মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগে এবং রাফি পরিসংখ্যান ডিসিপ্লিনে অধ্যয়নরত ছিলেন। তাদের গ্রেপ্তারের পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। ক্যাম্পাসে একাধিকবার মানববন্ধন, প্রতিবাদ ও সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করেন সহপাঠী, শিক্ষক ও তাদের পরিবারের সদস্যরা।
এ বিষয়ে অ্যাডভোকেট আকতার জাহান রুকু বলেন, ‘তাদের বিরুদ্ধে ছয়টি মামলা দেওয়া হয়। এর মধ্যে দুটি মামলায় খালাস, দুটিতে জামিন এবং সোনাডাঙ্গা থানার দুটি মামলায় সাজা দেওয়া হয়েছে। সাজা হওয়া দুটি মামলায় উচ্চ আদালতে জামিন চাওয়া হলে হাইকোর্ট সেটি মঞ্জুর করেন।’
তিনি আরও জানান, জামিন আদেশ আশুরার ছুটির কারণে কারাগারে পৌঁছাতে দেরি হয়। সোমবার আদেশ পৌঁছানোর পর সন্ধ্যায় তাদের মুক্তি দেওয়া হয়।
উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. রেজাউল করিম জানান, তাদের অনশনের বিষয়টি জানতে পেরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সমন্বয়কের সঙ্গে আলোচনা করা হয়। পরবর্তীতে কারাবন্দি দুই শিক্ষার্থীর জামিনের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে লিগ্যাল সেলের পরিচালক এস এম শাকিল রহমানকে নির্দেশনা দেওয়া হয়।
রাজধানীর বনানী থানার অস্ত্র আইনের মামলায় সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন ঢাকার একটি আদালত।
আজ তাকে কারাগার থেকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয়।
এরপর মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য তাকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা।
অপর দিকে তার আইনজীবী রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিনের আবেদন করেন।
উভয় পক্ষের শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মিনহাজুল ইসলাম তার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
মামলার এজাহারে বলা হয়, গত বছরের ২৫ আগস্ট জারিকৃত এক প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি হতে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত ব্যক্তিগত নিরাপত্তার জন্য প্রদত্ত সকল আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স স্থগিত করা হয়। স্থগিতকৃত লাইসেন্সভুক্ত আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদ ২০২৪ সালের ৩ সেপ্টেম্বরের মধ্যে জমা দানের নির্দেশ প্রদান করা হয়। এ তারিখের মধ্যে কোন অস্ত্র ও গোলাবারুদ থানায় জমা না দেওয়া হলে, তা অবৈধ অস্ত্র হিসেবে গণ্য করে অস্ত্র আইনে মামলা হবে বলে প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়।
তবে, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আসামি আনিসুল হক তার একটি আগ্নেয়াস্ত্র নিজে অথবা অন্য কোনো প্রতিনিধির মাধ্যমে বনানী থানায় বা অন্য কোন থানায় জমা দিয়েছেন কি-না, সে বিষয়ে তথ্য পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে তিনি থানাকে অবহিতও করেন নাই। তার অস্ত্রের লাইসেন্সে উল্লেখিত ঠিকানায় উপস্থিত হয়ে বাসায় কাউকে পাওয়া যায়নি। এ ঘটনায় গত ২৪ মে অস্ত্র আইনের ১৯(১) ধারায় আনিসুল হকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন বনানী থানার এসআই (নিরস্ত্র) মো. জানে আলম দুলাল।
উল্লেখ, গত ১৩ আগস্ট গোপন তথ্যের ভিত্তিতে নৌপথে পলায়নরত অবস্থায় রাজধানীর সদরঘাট এলাকা থেকে আইনমন্ত্রী আনিসুল হককে গ্রেফতার করা হয়।
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান চলাকালে গত ৫ আগস্ট রাজধানীর চানখাঁরপুলে গুলি করে ছয় জনকে হত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার অভিযোগ গঠন বিষয়ে দ্বিতীয় দিনের শুনানি শুরু হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সকালে বিচারপতি গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ আসামি পক্ষে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি চাওয়ার শুনানি শুরু হয়। ট্রাইব্যুনালে এই মামলায় গ্রেফতার চার আসামি হাজির রয়েছেন।
ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ গঠন সংক্রান্ত প্রথম কোন শুনানি শুরু হওয়ায়, সে দিনটিকে ঐতিহাসিক বলে উল্লেখ করেন চিফ প্রসিকিউটর।
এর আগে, এই মামলার পলাতক চার আসামিকে ট্রাইব্যুনালে হাজির হতে গত ৩ জুন পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের দেয়া হয়।
তবে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার পরেও পলাতক আসামীরা হাজির না হওয়ায়, তাদের পক্ষে রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী মো. কুতুবউদ্দিনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
এই মামলার অভিযোগে বলা হয়, রাজধানীর চানখাঁরপুল এলাকায় আসামিগণ কর্তৃক নিরস্ত্র ও শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকারীদের ওপর প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করা হয় এবং শহীদ শাহরিয়ার খান আনাস, শেখ মাহদি হাসান জুনায়েদ, শহীদ মো ইয়াকুব, শহীদ মো রাকিব হাওলাদার, শহীদ মো ইসমামুল হক ও শহীদ মানিক মিয়াকে গুলি করে হত্যা করা হয়।
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন নির্মূলে আওয়ামী লীগ সরকার, তার দলীয় ক্যাডার ও সরকারের অনুগত প্রশাসনসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতা বিরোধী অপরাধ সংগঠিত করে বলে একের পর এক অভিযোগ জমা পড়ে।
জাজ্বল্যমান এ সব অপরাধের বিচার এখন অনুষ্ঠিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে।
আদালত অবমাননার একটি মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (আইসিটি)। গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকার অপসারণের পর এটাই প্রথম কোনো আদালতের রায়, যাতে তাকে দণ্ডিত করা হয়েছে।
বুধবার (২ জুলাই) আইসিটির চেয়ারম্যান বিচারপতি গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল এ আদেশ দেন। ট্রাইব্যুনালের দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
একই মামলায় গাইবান্ধা জেলা ছাত্রলীগের তৎকালীন নেতা শাকিল আকন্দ বুলবুলকে দুই মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
এই ধরনের মামলায় পলাতক আসামির জন্য আইনজীবী নিয়োগের পূর্ব নজির না থাকলেও ন্যায়বিচারের স্বার্থে শেখ হাসিনার পক্ষে রাষ্ট্রীয় খরচে একজন আইনজীবী নিয়োগ দেওয়া হয়।
মামলার বিবরণ অনুযায়ী, গত বছরের ২৫ অক্টোবর শেখ হাসিনা ছাত্রলীগ নেতা শাকিলের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেন।
সেই অডিও ক্লিপে শেখ হাসিনাকে বলতে শোনা যায়, ‘২২৬ জনকে মারার লাইসেন্স পেয়ে গেছি’—যা বিচারব্যবস্থার প্রতি সরাসরি হুমকি হিসেবে বিবেচনা করে আদালত। পরে এই ঘটনায় আইসিটিতে মামলা করেন রাষ্ট্রপক্ষ।
গত ৩০ এপ্রিল এ-সংক্রান্ত শুনানিতে দুই আসামিকে ২৫ মে ট্রাইব্যুনালে হাজির হয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়। ধার্য তারিখে তারা হাজির হননি। কিংবা আইনজীবীর মাধ্যমেও ব্যাখ্যা দেননি। সেদিন ট্রাইব্যুনাল দুই আসামিকে সশরীর হাজির হয়ে অভিযোগের বিষয়ে জবাব দেওয়ার জন্য সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তি দিতে নির্দেশ দেন।
পরদিন দুটি সংবাদপত্রে এই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। বিজ্ঞপ্তিতে দুজনকে গত ৩ জুন ট্রাইব্যুনালে হাজির হয়ে অভিযোগের বিষয়ে জবাব দিতে বলা হয়। সেদিনও তারা হাজির হননি। পূর্ণাঙ্গ শুনানির জন্য ১৯ জুন তারিখ নির্ধারণ করেছিলেন ট্রাইব্যুনাল।
১৯ জুন এই মামলায় সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ ওয়াই মশিউজ্জামানকে অ্যামিকাস কিউরি (আদালতের আইনি সহায়তাকারী) হিসেবে নিয়োগ দেন ট্রাইব্যুনাল। মামলার পরবর্তী শুনানি ধার্য করা হয় ২৫ জুন।
২৫ জুন মামলায় প্রস্তুতি নিতে অ্যামিকাস কিউরি মশিউজ্জামানের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তাকে এক সপ্তাহ সময় দেন ট্রাইব্যুনাল। সেদিনই এই মামলার পরবর্তী শুনানির তারিখ ধার্য করা হয় ২ জুলাই। আজ দুই আসামিকে কারাদণ্ড দিয়ে রায় দিলেন ট্রাইব্যুনাল।
পদ্মা সেতু প্রকল্পে পরামর্শক নিয়োগে প্রাথমিকভাবে অনিয়ম-দুর্নীতির প্রমাণ পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান আব্দুল মোমেন।
মঙ্গলবার দুদকের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, ‘যথেষ্ট তথ্য প্রমাণ থাকার পরও এই মামলা পরিসমাপ্তি করা হয়। গেল জানুয়ারিতে শুরু হওয়া অনুসন্ধানে ইতোমধ্যে পদ্মা সেতুর পরামর্শক নিয়োগে প্রাথমিকভাবে অনিয়ম-দুর্নীতির প্রমাণও মিলেছে।’
দুদক চেয়ারম্যান বলেন, গায়ের জোরেই পদ্মা সেতু দুর্নীতি মামলায় আসামিদের অব্যাহতি দিয়েছিল তৎকালীন দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
সংস্থাটির চেয়ারম্যানের দাবি, বেশকিছু দুর্নীতির তথ্য মিলেছে। এই মামলায় আসামির অব্যাহতির পেছনে তৎকালীন কমিশনের দায় আছে কি না তাও খতিয়ে দেখার কথা জানান তিনি।
আব্দুল মোমেন বলেন, নতুন তদন্তে কারো সংশ্লিষ্টতা মিললে, তাদেরকেও আইনের আওতায় আনা হবে।
প্রসঙ্গত, পদ্মা সেতু পরামর্শক নিয়োগের বিষয়ে করা মামলা নিষ্পত্তির দীর্ঘ একযুগ পর; গত জানুয়ারি মাসে সেই মামলা পুনরায় অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় দুদক। গঠন করা হয় উচ্চ পর্যায়ে কমিটি।
জানা যায়, ২০১২ সালে পদ্মা সেতুতে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন নিয়ে টানাপড়েনের মধ্যে সাতজনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এনে মামলা করে দুদক। তবে ২০১৪ সালে অদৃশ্য কারণে মামলাটি পরিসমাপ্তি করে তৎকালীন বদিউজ্জামান ও শাহাবুদ্দিন চুপ্পু কমিশন।
মন্তব্য